ওসিয়ত
পৃষ্ঠা ০১ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০১
নবী করীম (সা)-এর ওসীয়ত
[ হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রা)-এর উদ্দেশে ]
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের ওসীয়ত তাঁর চাচাতো ভাই আলী ইবন আবু তালিব (রা)-এর উদ্দেশে খালিদ ইব্ন জাফর ইবন মুহম্মদ (র)….. আলী ইব্ন আবূ তালিব (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী (রা) বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:
১. ‘হে আলী! মূসা (আ)-এর কাছে হারুন (আ)-এর মর্যাদা যেরূপ, আমার কাছেও তোমার মর্যাদা সেরূপ। তবে আমার পর আর কোন নবী নেই।’ আমি তোমাকে কিছু ওসীয়ত করি। যদি তুমি তা গ্রহণ কর, তবে তুমি বেঁচে থাকবে সুখী ও সৌভাগ্যবান হয়ে, আর তোমার মৃত্যু হবে শহীদ অবস্থায়। কিয়ামতের দিন তোমার প্রতিপালক তোমাকে পুনরুত্থান করবেন ফকীহ ও আলিম রূপে।
২. আলী। মু’মিনের আলামত তিনটি: ক. সালাত, খ. ইবাদতে রাত জাগা ও গ. দান-খয়রাত করা।
৩. আলী। মুনাফিকের আলামত তিনটি: ক. সে মানুষের সামনে সালাত আদায় করে মনোযোগী হয়ে, খ. একা সালাত আদায় করলে তখন সে অমনোযোগী হয়ে তড়িঘড়ি করে সালাত আদায় করে, গ মজলিসে আল্লাহকে স্মরণ করে কিন্তু নির্জনে তার প্রতিপালককে সে ভুলে যায়।
৪. আলী! যালেমের আলামত তিনটি: ক. শক্তি দিয়ে দুর্বলের উপর কর্তৃত্ব করে, খ. লোকের ধন-সম্পদ জোর করে ছিনিয়ে নেয় ও গ. খাদ্যবস্তুতে হালাল-হারামের পার্থক্য করে না।
৫. আলী। হিংসুকের আলামত তিনটিঃ ক. সামনে চাটুকারী করে, খ. পেছনে গীবত করে ও গ. দুঃখের সময় আনন্দিত হয়।
৬. আলী! মুনাফিকের আলামত তিনটি: ক. সে মিথ্যা বলে, খ. ওয়াদা ভঙ্গ করে ও গ. আমানতের খেয়ানত করে। আর উপদেশে তার কোন উপকার হয় না।
৭. আলী! অলসের কয়েকটি আলামত রয়েছেঃ ক. সে আল্লাহর ইবাদতে অলসতা করে, খ. সালাত এত বিলম্বে আদায় করে যে, তার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, গ. অপচয় ও ত্রুটি করে।
পৃষ্ঠা:০২
৮. আলী। তাওবাকারীর আলামত তিনটি: ক. হারাম থেকে পরহেয করা, খ. জ্ঞানানুষ্ঠানে ধৈর্য-ধারণ ও গ. সে কখনো পাপের দিকে ফিরে যায় না, যেমন দোহানো দুধ পুনঃ বাঁটে প্রবেশ করে না।
৯. আলী। জ্ঞানী লোকের আলামত তিনটি: ক. দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে করা, * খ. সহিষ্ণু হওয়া ও গ. বিপদাপদে ধৈর্যধারণ।
১০. আলী। ধৈর্যশীলগণের আলামত তিনটি: ক. যে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তার সাথে সে সম্পর্ক রক্ষা করে, খ, যে তাকে বঞ্চিত করে তাকে সে দান করে ও গ. যে তার প্রতি যুলুম করে সে তাকে অভিশাপ দেয় না।
১১. আলী! আহম্মকের আলামত তিনটি: ক. আল্লাহর ফরয ইবাদতে অবহেলা করা, খ. আল্লাহর যিকির ব্যতীত অতিরিক্ত কথা বলা ও গ. আল্লাহর বান্দাদের ত্রুটি বের করা।
১২. আলী। সৌভাগ্যবান ব্যক্তির আলামত তিনটিঃ ক. হালাল খাওয়া, খ. জ্ঞানীদের সঙ্গে বসা ও গ. পাঁচওয়াক্ত সালাত ইমামের সঙ্গে আদায় করা।
১৩. আলী। হতভাগ্য লোকের আলামত তিনটিঃ ক. হারাম খাওয়া, খ. ইলম থেকে দূরে থাকা ও গ. একা একা সালাত আদায় করা।
১৪. আলী। নিষ্ঠাবান ব্যক্তির আলামত তিনটি: ক. সে আল্লাহর ইবাদতে অগ্রগামী হয়, খ. আল্লাহ্ কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ ও বস্তু থেকে বিরত থাকে ও গ. যে তার সাথে দুর্ব্যবহার করে সে তার সাথে সদ্ব্যবহার করে।
১৫. আলী। মন্দ লোকের আলামত তিনটি: ক. সে আল্লাহর আনুগত্য ভুলে যায়, খ. আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেয় ও গ. যে তার উপকার করে সে তার অপকার করে।
১৬. আলী। সৎলোকের আলামত তিনটি: ক. সৎকাজের মাধ্যমে যে তার ও লোকের মধ্যকার সম্পর্ক ভাল করে, খ. পরহেযগারীর মাধ্যমে পাপ থেকে বেঁচে থাকে ও গ. নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যও তা পছন্দ করে।
১৭. আলী। মুত্তাকীর আলামত তিনটি: ক. সে অসৎ সঙ্গ বর্জন করে, খ. মিথ্যা বলে না ও গ. হারাম থেকে বাঁচার জন্য অনেক হালালকেও ত্যাগ করে।
১৮. আলী। ফাসিক ব্যক্তির আলামত তিনটি: ক. দুর্বলের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা, খ. অল্পতে তুষ্ট না হওয়া ও গ. উপদেশ থেকে উপকৃত না হওয়া।
১৯. আলী। সিদ্দীক বা সত্যবাদী ব্যক্তির আলামত তিনটি: ক. ইবাদত প্রকাশ না করা, খ. গোপনে সাদাকা করা ও গ. মুসীবত কারো কাছে প্রকাশ না করা।
২০. আলী। ফাসিক লোকের আলামত তিনটি ক. ফাসাদ পছন্দ করা, খ. আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেওয়া ও গ. সৎ কাজ ও সত্য পথ থেকে দূরে থাকা।
২১. আলী। নীচ লোকের আলামত তিনটি: ক. আল্লাহর নাফরমানী করা খ. প্রতিবেশীদের কষ্ট দেওয়া ও গ. উদ্ধত্য ও উচ্ছৃংখলতা পছন্দ করা।
পৃষ্ঠা:০৩
২২. আলী! অপমানিত লোকের আলামত তিনটি: ক. মিথ্যার প্রাচুর্য, খ. অসত্য শপথের আধিক্য ও গ. মানুষের কাছে নিজের প্রয়োজন প্রকাশ করা।
২৩. আলী! আবিদ ব্যক্তির আলামত তিনটি: ক. আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি অনুগত থাকা, খ. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রবৃত্তি দমন করা ও গ. আল্লাহর সামনে ইবাদতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো।
২৪. আলী। নিষ্ঠাবানগণের আলামত তিনটি: ক. সম্পদ অপছন্দ করা, খ. প্রশংসা অপছন্দ করা ও গ. হারামকে অপছন্দ করা।
২৫. আলী। জ্ঞানী ব্যক্তির আলামত তিনটি: ক. সত্য কথা বল্লা, খ. হারাম থেকে পরহেয করা ও.গ. লোকের সামনে বিনয়ী হওয়া।
২৬. আলী! দানশীল ব্যক্তির আলামত তিনটি: ক. ক্ষমতাবান হয়েও ক্ষমা করা, খ. যাকাত দেওয়া ও গ. সাদাকা দেওয়া ভালবাসা।
২৭. আলী। কৃপণের আলামত তিনটি: ক. কবরকে ভয় করা, খ. ভিক্ষুককে ভয় পাওয়া ও গ. যাকাত না দেওয়া।
২৮. আলী। ধৈর্যশীলদের আলামত তিনটি: ক. আল্লাহর ইবাদতে ধৈর্যধারণ, খ. আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত থাকার ধৈর্য ও গ. আল্লাহর আদেশ পালনে ধৈর্যধারণ
২৯. আলী। ফাসিক লোকের আলামত তিনটি: ক. আল্লাহর কৌশল ও আযাব থেকে নিশ্চিন্ত থাকা, খ. আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া ও গ. আল্লাহর নির্দেশ মেনে নিতে ভয় পাওয়া।
৩০. আলী। কিয়ামত দিবসে আল্লাহতা’আলা একদল লোককে জান্নাতের দিকে যেতে নির্দেশ দিবেন। তারা জান্নাতের দরজার কাছে পৌঁছার পর তাদেরকে জাহান্নামের দিকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। যখন সব দিক থেকে জাহান্নামের আগুন তাদের ঘিরে ফেলবে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জান্নাত দর্শনের পূর্বেই যদি জাহান্নামে প্রবেশ করাতেন। তখন মহান আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদের বেলায় এরূপই করতে ইচ্ছা করেছি। কারণ, তোমরা জীবন কাটিয়েছ হারামের মধ্যে, মরেছ পাপাবস্থায়, আমার বিরোধিতা করেছ কবীরা গুনাহ করে।
৩১. আলী! যে মুসলিমের সঙ্গে তোমার সাক্ষাত হয়, তাকে তুমি সালাম করবে। এতে আল্লাহ তা’আলা তোমার জন্য বিশটি নেকি লেখবেন, যখন তুমি দান করবে তখন তোমার কাছে যা আছে তন্মধ্য হতে যা উত্তম তা দান করবে। কারণ, তোমার হায়াতে যা দান করবে, তা তোমার জন্য তোমার মৃত্যুর পর দান করা থেকে অধিক উপকারী হবে।
৩২. আলী। দন্ত করবে না, আল্লাহ্ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। তোমার হৃদয়ে যেন ব্যথা থাকে কারণ, যার হৃদয় ব্যথিত তাকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন।
পৃষ্ঠা:০৪
৩৩. আলী। দান করে যে তা ফিরিয়ে নেয়, সে যেন বমি করে পুনরায় তা গলাধকরণ করে।
৩৪. আলী! কেউ যেন দান করে তা ফিরিয়ে না নেয়, তবে পিতা-মাতা সন্তানকে যে দান করেন তা ফিরিয়ে নিতে পারে।
৩৫. আলী। তুমি প্রফুল্ল থাকবে, আর মুখ কালা করে থেকো না।
৩৬. আলী। তুমি আল্লাহরই সন্তুটির জন্য কাজ করবে, যখন তুমি ব্যয় করবে তখন আল্লাহরই জন্য ব্যয় করবে কেননা দীনের কাজে লোক-দেখানো মনোভাব নিয়ে কাজ করা এমন, যেমন সঞ্চিত লাকড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা।
৩৭. আলী। তুমি খালেছ আল্লাহরই জন্য আমল করবে। কারণ, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে আমল করা হয় আল্লাহ্ সে আমলই পছন্দ করেন, আমার উম্মতের উপর দীনের কাজে লোক-দেখানো ভাবটি (রিয়া) অন্ধকার রাতে মসৃণ পাথরের উপর পিঁপড়ার বিচরণের চাইতেও সুদ্ধ ও গোপনীয়। রিয়া হলো ছোট কুফরী। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, “কাজেই যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে।”
৩৮. আলী। প্রতিটি নতুন দিন বলে থাকে যে, হে বনী আদম। আমি নতুন দিন, আমি তোমার প্রতি সাক্ষী। তাই তোমার কথা ও আমলের প্রতি তুমি লক্ষ্য রাখো। রাতও অনুরূপ বলে। তাই তুমি দিনে ও রাতে সৎকাজ করবে।
৩৯. আলী। কারো মধ্যে কোন দোষ থাকলেও তুমি কখনো কারো গীবত করবে না। কেননা, সব গোশতেই রক্ত থাকে। গীবতের কাফফারা হলো যার গীবত করা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৪০. আলী। যদি তোমাকে আল্লহ তা’আলা চারটি গুণ দিয়ে সম্মানিত করেন তবে দুনিয়ার অন্য কিছু না পেলেও এর জন্য তোমার আক্ষেপ করার কিছুই নেই। সে চারটি গুণ হলো: ক. সত্য কথা বলা, খ. আমানত রক্ষা করা, গ. নিজে অভাব ও কার্পণ্য মুক্ত হওয়া ও ঘ. হারাম থেকে উদর রক্ষা করা।
৪১. আলী। আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি হালাল রিফ অনুসন্ধান করবে, কারণ হালাল রিকের অনুসন্ধান করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয।
৪২. আলী। তুমি মৃতদের সাথে বসো না, কারণ, তারা মৃতদেরই স্মরণ করে। আলী (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত কারা? তিনি বললেন, ধনবানরা। আর দুনিয়াদার যারা দুনিয়া সঞ্চয়ের প্রতি এমন ঝুঁকে পড়ে যেমন ঝুঁকে পড়ে কোন মাতা তার সন্তানের দিকে। এয়াই ক্ষতিগ্রস্ত।
৪৩. আলী। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে সে কাফের হলেও, মেহমানের সাথে সৌজন্যাচরণ করবে যদিও সে কাফের হয়। পিতামাতার অনুগত থাকবে তারা কাফের হলেও, ভিক্ষুককে বঞ্চিত করবে না যদিও সে কাফের হয়।
৪৪. আলী। সব চাইতে বড় চোর সে যার থেকে শয়তান চুরির অংশ নেয়। আলী (বা) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। তা কি রূপে? তিনি বললেন, কেউ যদি . মাপে কম দেয়, তা এক মুষ্টি বা এক অঞ্জলি হলেও, তার সহচর শয়তান তার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেয়। এভাবেই শয়তানরা ওদের রিযক সংগ্রহ করে। আর যে কেউ সফর করে হারামের সন্ধানে, শয়তান তার সফরসঙ্গী ও সহযোগী হয়। সে সওয়ার হলে শয়তানও তার সাথে সওয়ার হয়। আর কেউ হারাম রিযক সঞ্চয় করলে শয়তান তা থেকে অংশ নেয়। আর কেউ স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের সময় বিসমিল্লাহ্ না পড়লে, শয়তান তার সন্তানে শরীক হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ واجلب عليهم بخيلك তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দিয়ে ওদের আক্রমণ কর এবং ওদের ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও। (১৭৪৬৪)
৪৫. আলী। যে হালাল রিফ আহার করলো সে তাঁর দীন স্বচ্ছ রাখলো, তার হৃদয় থাকে কোমল, আল্লাহর ভয়ে চক্ষু থাকে অশ্রুসজল এবং সে ব্যক্তির দু’আ কবুল হওয়াতে কোন বাধা থাকে না।
৪৬. আলী। যে সন্দেহ যুক্ত খাদ্য আহার করলো, তার দীনদারী সন্দেহযুক্ত হয়ে গেল এবং তার অন্তর হয়ে গেল অন্ধকারাচ্ছন্ন।
৪৭. আলী। যে হারাম খায় তার হৃদয় মরে যায়, তার দীনে ত্রুটি পয়দা হয়, তার অন্তর হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন, তার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যায়, তার দু’আ কবুলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং কমে যায় তার ইবাদত।
৪৮. আলী। আল্লাহ তা’আলা তাঁর যে বান্দার উপর অসন্তুষ্ট হন, তাকে হারাম রিক দেওয়া হয়, যদি আল্লাহর অসন্তুষ্টি আরো বেড়ে যায় তখন তার সাথে শয়তানকেও শরীক করে দেওয়া হয়, সে তাকে দুনিয়ার কাজে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে, সরিয়ে রাখে তাকে দীনের কাজ থেকে। শয়তান তাকে পাপ কাজে মশগুল রাখার জন্য বলে, আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।
৪৯. আলী। আল্লাহ্ তাঁর কোন বান্দাকে ভালবাসলে তখন তার দু’আ কবুল করতে বিলম্ব করেন। ফিরিশতাগণ তার জন্য সুপারিশ করে বলেন, ইয়া আল্লাহ। আপনার এ বান্দার দু’আ কবুল করে দিন। মহান আলাহ বলেন, আমার বান্দাকে আমার দয়ার উপর ছেড়ে দাও। তোমরা আমার চাইতে আমার বান্দার প্রতি অধিক দয়ালু নও। আমার বান্দার দু’আ ও কান্নাকাটি আমার ভাললাগে, আমি সম্যক জ্ঞত ও অবহিত।
৫০. আলী। যে লোকদের সত্য পথের দিকে আহবান করে এবং লোকেরা তার অনুসরণ করে, তখন সেও অনুসরণকারীদের আমলের সওয়াব পারে, অথচ অনুসরণকারীদের আমলের সওয়াবে কোন কমতি করা হবে না।
পৃষ্ঠা:০৫
৫১. আলী। কেট মানুষকে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজের দিকে আহবান করলে এবং তার কথায় সাড়া দিয়ে কেউ হারাম কাজ করলে সে পালের অংশ আহবায়কও বহন করবে অথচ তার আহবানে যারা পাপ করেছে ওদের শান্তি লাঘব করা হবে না।
৫২. আলী। পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত আল্লাহ্ কোন সালাত কবুল করেন না, আর কোন হারাম মাল থেকে সাদাকা করা হলে আল্লাহ্ তা কখনো কবুল করেন না।
৫৩. আলী। হারাম থেকে উদয় পবিত্র না রাখলে এবং উপার্জন হালাল না হলে কারো তওবা কবুল করা হয় না।
৫৪. আলী। মৃত ব্যক্তিদের জন্য দান করবে, কারণ, আল্লাহ তা’আলা জীবিতদের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের কাছে দান-খয়রাতের সওয়াব পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু সংখ্যক ফিরিশতা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। তারা যখন দান-খয়রাতের সওয়াব বহন করে মৃত আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছে নিয়ে যান, তখন তারা অত্যন্ত আনন্দিত হন। এর পর তারা দুয়িাতে যে ধন-সম্পদ রেখে এসেছেন সে সবের কথা স্মরণ করে অনুতপ্ত ও দুঃখিত হন। তারা বলেন, ইয়া আল্লাহ্। যারা আমাদের জন্য দান করেছেন তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিন। যেমন জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন আপনি আমাদেরকে। আমরা অনুতপ্ত যে সম্পদ রেখে এসেছি সে সবের জন্য।
৫৫. আলী। তুমি আল্লাহর কাছ থেকে যা পাও, তাতে তুষ্ট থাক। কেননা, অভাবের চাইতে তিক্ত আর কিছু নেই।
৫৬. আলী। লজ্জাই দীন। লজ্জা হলো মাথা ও তৎসংশ্লিষ্ট সব কিছুর হিফাযত করা, উদর এবং উদরে যা সঞ্চিত হয় সে সবের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। ইবাদতের মূল হলো, আল্লাহর যিক্র রত থাকা, অন্য বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন।
৫৭. আলী। ছয়টি জিনিস শয়তানের প্রভাব প্রসূত। ক. হাই তোরা, খ. বমি করা, গ. পেট থেকে মুখের দিকে খাদ্যদ্রব্য বা পানীয়ের উদগীরণ, ঘ. নাক দিয়ে রক্ত ঝরা, ও. প্রথম বাবের হাঁচি ব্যতীত অপর সকল হাঁচি, চ. তন্দ্রা।
৫৮. আলী। তুমি রাতে সালাত আদায় করবে বকরী দোহন করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় পরিমাণ হলেও। কারণ, রাতে দু’রাকাআত সালাত আদায় করা উত্তম, দিনে মসজিদে গিয়ে হাজার রাকাআত সালাত আদায় করার চাইতে। যারা দিনে সালাত আদায় করে তাদের চাইতে রাতে যারা সালাত আদায় করে তাদের চেহারা হয় অতি রৌশন।
৫৯. আলী। যারা তাওবা করে তাদের জন্য বেশি বেশি এস্তেগফার পড়া মজবুত দুর্গস্বরূপ।
৬০. আলী। অপরাধী কোন দু’আ করলে আর আল্লাহ্ জানেন যে, এ দু’আ কবুল করা হলে এতে রয়েছে এদের অনিবার্য ধবংস, তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর ফেরেশতাগণকে বলেন, এ ব্যক্তি যা চায় তাকে তা দিয়ে দাও, এতেই নিহিত রয়েছে
পৃষ্ঠা:০৬
তার ধবংস। তোমরা তার আওয়াজ যাতে আমার কাছে না পৌঁছে, তার ব্যবস্থা গ্রহণ
৬১. আলী। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তাকে পুরস্কৃত করলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কোন বিপদে পড়লে ধৈর্য ধারণ করে, পাপ করলে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে ব্যক্তি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।।
৬২. আলী। অধিক নিদ্রা অন্তরকে মুর্দা করে ফেলে এবং বিস্মৃতির জন্য দেয়, আর অন্তর মরে যায় অতিরিক্ত হাসিতের। পাপ হৃদয়কে কঠিন করে দেয় এবং অধিক নিদ্রার জন্ম দেয়।
৬৩. আলী। তোমার প্রয়োজনে কারো কাছ থেকে চাইতে হলে দীপ্তমান চেহারার অধিকারী লোকের কাছে চাইবে। কারণ, এরূপ ব্যক্তির হৃদয় হয় উদার। আর তুমি চাইবে লজ্জাশীল লোকের কাছে। কারণ যাবতীয় কল্যাণ রয়েছে লজ্জাগুণের মধ্যে।
৬৪. আলী। যে ব্যক্তি ইজ্জত-সম্মান ও প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হালাল উপায়ে দুনিয়া উপার্জন করে, সে পুলসিরাতে বিদ্যুতের গতিতে অতিক্রম করবে। আর আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হারাম উপায়ে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে দুনিয়া উপার্জন করে, সে আল্লাহর কাছে যখন যাবে তখন আল্লাহ তার প্রতি নারায থাকবেন।
৬৫. আলী। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে হালাল উপার্জন থেকে আহার করাবে, আল্লাহ্ তার জন্য দশলাখ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন এবং অনুরূপ পাপ মোচন করবেন। ৬৬, আলী! আল্লাহ্ তা’আলা তার বান্দাদের ব্যাপারে যা ইচ্ছা ফায়সালা করেন। যে এতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যে অসন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
৬৭. আলী। তুমি সালাতে তাকবীর বলার সময় তোমার আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে রাখবে এবং তোমার উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে। আর যখন তুমি রুকুতে যাবে তখন তোমার উভয় হাত হাঁটুর উপর স্থাপন করবে। আর আঙ্গুলগুলোর মধ্যে ফাঁক রাখবে। আর সিজদা করার সময় তোমার উভয় হাত কাঁধ বরাবর রাখবে, তখন অঙ্গুলী মিলিয়ে রাখবে। তাকবীর বলার সময় তোমার ডান হাত বাঁ হাতের উপর নাভির নিচে রাখবে। আমি আসমানের ফেরেশতাগণকে এভাবে হাত রাখতে। দেখেছি, এতে রয়েছে আল্লাহর প্রতি বিনয়।
৬৮. আলী। তোমার মু’মিন ভাই-এর প্রয়োজন দ্রুত পূরণ কর। কারণ, এতে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার প্রয়োজন দ্রুত পূরণ করবেন।
৬৯. আলী। তোমার কাছে কেউ প্রয়োজন নিয়ে উপস্থিত হলে, তুমি মনে করবে যে, এর আগমন তোমার প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহ তা’আলা হয়তো তোমার গোনাহ মাফ করার ও প্রয়োজন পূরণ করার ইচ্ছা করেছেন।
পৃষ্ঠা:০৭
৭০. আলী। তোমার কাছে মেহমান এলে তুমি তাকে সম্মান করবে। কেননা, কারো কাছে মেহমান এলে তার রিযকও সে সঙ্গে নিয়ে আসে। আর যখন তিনি চলে যান, তখন তার সাথে মেযবানের পরিজনদের গোনাহও বহন করে নিয়ে যান এবং তা নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষের করেন।
৭১. আলী। ধন-সম্পদে তুমি তোমার নীচের স্তরের লোকের দিকে লক্ষ্য করবে। আর ইবাদত ও পরহেযগারীতে লক্ষ্য করবে তোমার চাইতে উপরের স্তরের লোকের দিকে। এতে তোমার ইয়াকীন ও ঈমান বৃদ্ধি পাবে।
৭২. আলী। তুমি মিথ্যা শপথ থেকে বিরত থাকবে। কারণ এতে পণ্য বিক্রনয় হয় কিন্তু রিযকের বরকত কমে যায়।
৭৩. আলী: তুমি নিপীড়িতের দু’আকে ভয় করবে। কেননা, আল্লাহ নিপীড়িতের দু’আ কবুল করেন, সে কাফের হলেও।
৭৪. আলী। আল্লাহর ভয়ে যার হৃদয় বিগলিত হয় না, তার কোন দীন নেই। আর যে পাপ থেকে বিরত থাকে না, তার জ্ঞান নেই। যার জ্ঞান নেই, তার ইবাদতও নেই। যার পরহেযগারী নেই, তার ইলম নেই। যার সত্যবাদিতা নেই, তার সৌজন্যবোধও নেই। যার পর্দাদারী নেই, তার আমানতদারীও নেই। যার তাওফীক নেই, তার তাওবাও নেই। যার লজ্জা নেই, তার বদান্যতাও নেই।
৭৫. আলী। দিনের প্রারম্ভে ও শেষে ঘুমাবে না। আর ঘুমাবে না উপুড় হয়ে, আর ঘুমাবে না মাগরিব ও এশার সালাতের পূর্বেও। আর অন্ধকার গৃহেও ঘুমাবে না এবং কিছু রৌদ্র ও কিছু ছায়াতেও ঘুমাবে না। গৃহদ্বারের চৌকাঠকে তকিয়ার মত ব্যবহার করবে না। চৌকাঠের উপর বসবে না, বাম হাতে পানাহার করবে না। বসাবস্থায় হাত চিবুকের নিচে স্থাপন করবে না। কোন কিছু দিয়ে দাঁত টুকরাবে না। কাজের উপর আহার করবে না। পাত্রের উল্টো পিঠে আহার করবে না। ডান পায়ের পূর্বে বাম পায়ে জুতো পরিধান করবে না। আর জুতো খোলার সময় বাম পায়ের আগে ডান পায়ের জুতো খোলবে না। রুটি দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে আহার করবে না, মাটি খেওনা। রাতে আয়না দেখবে না। সালাতের সময় পানির দিকে তাকাবে না। পেশাবের উপর দুষ্টু ফেলবে না। গোবর, বিষ্ঠা, কয়লা ও হাড় দিয়ে কুলুখ নিবে না। কামীছ উল্টো পরিধান করবে না। চাঁদ ও সূর্যের মুখোমুখি তোমার লজ্জাস্থান খোলবে না। দাঁত দিয়ে নখ কাটবে না। হাতে খাদ্যদ্রব্যের চর্বি রেখে ঘুমাবে না। এমন দু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে চলবে না যে দু’পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। গরম খাদ্যদ্রব্যে এবং গরম পানিতে ফুঁক দিবে না। সিজদার স্থানেও ফুঁক দিবে না। তুমি অন্য কোন লোকের লজ্জাস্থান দেখবে না, অন্য কোন লোকও তোমার লজ্জাস্থান দেখবে না। আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে কথা বলবে না। তোমা থেকে যা বের হয় (অর্থাৎ মলমূত্র) সে দিকে তাকাবে না। অপ্রয়োজনে লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে না। পিছনের দিকে বারবার ফিরে তাকাবে না। বন্ধুকে কষ্ট দিবে না। প্রতিবেশীকে দুঃখ
পৃষ্ঠা:০৮
দিবে না। তোমার সঙ্গে যারা উঠাবসা করে তাদের গীবত করবে না। দ্রুত চলবে না। সার্থীর সঙ্গে তর্ক করবে না, প্রশংসা করলে সংক্ষিপ্ত করবে এবং নিন্দা করলেও সংক্ষিপ্ত করবে। হাই তোলার সময় মুখে হাত দিবে। খাদ্যদ্রব্যের ঘ্রাণ শুকবে না। হারামের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখবে। তোমাকে উদ্দেশ করে কথা বলা হলে, তুমি তা বুঝতে চেষ্টা করবে। যদি তোমাকে কেউ গোশ্তবিহীন পায়ার (খালি হাডিড) আমন্ত্রণ জানায় তাও তুমি কবুল করবে। অন্ধকারে আহার করবে না, খাওয়ার সময় বড় বড় লোকমায় আহার করবে না। উদরপূর্তি করে আহার করবে না। নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে না। দুশমনের পিছে লেগো না। তোমার জীবিকার ফিকির গুপ্তভেদ প্রকাশ করবে না। অতিরিক্ত কথা বলবে না। বস্ত্র পরিধান করে গর্ব করবে না। আমানত ফেরত দিবে। মেহমানের সাথে সৌজন্যাচরণ করবে। প্রতিবেশীর হেফাযত করবে। মুসীবতে ধৈর্যধারণ করবে। ভাল কাজে ব্যয় করবে। কাল নাজাত পাবে দুই শ্রেণীর লোকঃ দানশীল ধনী ও প্রফুল্লচিত ফকীর।
৭৬. আলী। তুমি হবে আলিম অথবা শিক্ষার্থী অথবা শ্রোতা অথবা আমল করনেওয়ালা। চতুর্থজন হলে তুমি হালাক হয়ে যাবে। আলী (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহঃ চতুর্থজন কে? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যে নিজে ইলম রাখে না এবং কারো কাছ থেকে শিক্ষাও করে না। আলিমগণের কাছে দিয়ে শরীআতের আহকামের খোঁজ-খবর নেয় না। অজ্ঞদের মত কাজ করে। নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত, নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত, নিশ্চয় সে গধ্বংসপ্রাপ্ত।
৭৭. আলী। সে বন্ধু বড়ই মন্দ, যে তোমাকে কষ্টে ফেলে এবং তোমার গোপন ভেদ প্রকাশ করে দেয়। সে বন্ধুও মন্দ, যে বন্ধুর প্রতি হিংসা পোষণ করে। তুমি এমন খাদেম পছন্দ। করবে না, যে তোমার দোষ প্রকাশ করে, আর এমন স্ত্রীও পছন্দ করবে না, যে তালাক চায়। আর এমন প্রতিবেশীর উপরও সন্তুষ্ট থাকবে না, যে তোমার ভাল কাজ গোপন করে এবং ত্রুটি প্রচার করে।
৭৮. আলী। ওযূ পূর্ণরূপে করবে। কারণ, এ হলো ঈমানের অর্ধেক। ওযূতে পানির অপচয় করবে না।
৭৯. আলী। ওযু সমাপ্ত করার পর উভয় পা ধুয়ে একবার সূরা ‘ইন্নাআনযাল নাহু ফিলাইলাতিল- কাদর’ পাঠ করবে। তা করলে তোমার জন্য পঞ্চাশ বছরের সওয়াব লেখা হবে।
৮০. আলী। ওযু সমাপ্ত করার পর উভয় পা ধুয়ে নবী করীম (সা)-এর প্রতি দশবার দরূদ পড়বে। এরূপ করলে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার পেরেশানী। দুর করে দিবেন। আর তোমার দু’আ তিনি কবুল করবেন।
৮১. আলী। ওষু সমাপ্ত করার পর নতুন করে পানি নিয়ে তোমার উভয় হাত ing দিয়ে মাথা ও গর্দান মসেহ করবে এবং এ দু’আ পাঠ করবে
পৃষ্ঠা:০৯
سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا الله الله وحدك لا شريك لك أستغفرك وأتوب اليك ইয়া আল্লাহ্। আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। আপনি এক, আপনার কোন শরীক নেই, আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবাহ্ করছি। তারপর যমীনের দিকে তাকাবে এবং পাঠ করবে। أشهد أن محمداً عبدك ورسولك আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আপনার বান্দা এবং রাসুল। যে ব্যক্তি এ আমল করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তার সগীরাহ করীরাহ্ সব গুনাহ মাফ করে দিবেন।
৮২. আলী। সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের পর যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার মহান আল্লাহর যিক্ করবে, তার গুনাহ আসমানের নক্ষত্ররাজির সমসংখ্যক হলেও, আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামের শাস্তি দিতে লজ্জাবোধ করবেন।
৮৩. আলী। তুমি ফজরের সালাত আদায়ের পর সে স্থানে বসে থাকবে সূর্যোদয় পর্যন্ত। ফজরের সালাতের পর যে ব্যক্তি নিজ স্থানে বসে থাকে, তার জন্য আল্লাহ তা’আলা এক হজ্জ ও এক উমরার, একটি দাস আযাদ করার এবং আল্লাহর রাস্তায় এক হাজার দীনার সাদকা করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।
৮৪. আলী। তুমি সফরে থাক বা আবাসে ‘সালাতুয যোহা’ অবশ্যই আদায় করবে। কেননা, কিয়ামত দিবসে জান্নাতের উঁচু স্থান থেকে একজন ঘোষক এমর্মে ঘোষণা প্রচার করবেন যে, যাঁরা ‘সালাতুয যোহা’ আদায় করতেন তাঁরা কোথায়?
৮৫. আলী। তুমি অবশ্যই জামাআতে সালাত আদায় করবে। কেননা, জামাআতে সালাত আদায় করতে যাওয়া আল্লাহর কাছে হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্যে গমন করার
৮৯. আলী। যে মু’মিনকে আল্লাহ্ তা’আলা ভালবাসেন, সে জমাআতে সালাত আদায় করতে চেষ্টা করেন। আর জমাআতে সালাত আদায় করা থেকে সেই দূরে থাকে, যে মুনাফিক এবং আল্লাহ্ যাকে অপছন্দ করেন।
৮৭. আলী। জমাআতে সালাত আদায় করা আল্লাহর কাছে দ্বিতীয় আসমানে ফেরেশতাগণের সালাত আদায় করার সমতুল্য। তুমি প্রথম কাতারে শামিল থাকতে চেষ্টা করবে।
৮৮. আলী। যে ব্যক্তি তাহারাত (পবিত্রতা অর্জন) বিনষ্ট করে, আল্লাহ তার দীন
পৃষ্ঠা:১০
বিনষ্ট করে দেন, আর যে তার সালাত নষ্ট করে এবং তড়িঘড়ি সালাত আদায় করে, আল্লাহ সে ব্যক্তিকে জাহান্নামের শেষ স্তরে নিক্ষেপ করবেন।
৮৯. আলী। জুমআর সালাতের জন্য যে গোসল করবে, তার এক জুমআ থেকে আর এক জুমআ পর্যন্ত গুনাহ আল্লাহ্ মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ্ রোশনী করে দেবেন তার কবরকে এবং তার মীযানকে ভারী করে দেবেন।
৯০. আলী: আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় বান্দা হলো, যে সিজদা করে সে বান্দা। যে পাঠ করে সিজদার পর- رب قد علمت نفسي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللهহে আমার প্রতিপালক। আমি আমার নিজের উপর অত্যাচার করেছি, আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি ব্যতীত পাপ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।
৯১. আলী। মদ্যপের সাথে বন্ধুত্ব করো না, কারণ, সে অভিশপ্ত। আর যে ব্যক্তি যাকাত দেয় না তার সাথে মেলামেশা করবে না, কারণ, তাকে আসমানে আল্লাহর দুশমন বলে ডাকা হয়। আর সুদখোরের সাথেও সম্পর্ক রাখবে না কারণ, সে হলো আল্লাহর প্রতিপক্ষ। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ فإن لم تفعلوا فأذنوا بحرب من الله ورسوله . যদি তোমরা (তা না করো অর্থাৎ সুদ) না ছাড়, তবে জেনে রাখো যে, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ; (২:১৭৯)।
৯২. আলী। যে রমযানের সওম পালন করে এবং হারাম থেকে পরহেয করে, দয়াল আল্লাহ্ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন। আর তার জন্য জান্নাত অবধারিত।
৯৩. আলী! যে ব্যক্তি রমযানের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সওম পালন করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য সারা বছরের সওম পালন করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।
৯৪. আলী। যে স্থানে মুসল্লিগণ সালাত আদায়ে রত তুমি সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কিরআত ও দু’আ পাঠ করবে না। কারণ, এতে তাদের সালাতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে।
৯৫. আলী। যখন সালাতের সময় হয় তখনই তুমি সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে। সতর্ক থাকবে, যেন শয়তান তোমাকে সালাত থেকে ফিরিয়ে না রাখে।
৯৬. আলী। জীবরাইল (আ) আকাঙক্ষা করলেন- যেন বনী আদমের মধ্যে সাতটি গুণ থাকে। ক. জুমআর সালাত ইমামের সঙ্গে আদায় করা, খ. উলামাগণের মজলিসে বসা, গ. পীড়িত লোকের খোঁজ-খবর নেওয়া, ঘ. জানাযার সাথে যাওয়া, ৪. পানি পান করানো, চ. বিবদমান দুই ব্যক্তির মধ্যে আপস-মীমাংসা।। করা, ছ. ইয়াতীমের প্রতি সহানুভূতি দেখান। আলী। তুমি এ গুণাবলীর প্রতি আগ্রহী হও।
পৃষ্ঠা ১১ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:১১
১৭. আলী। যে ব্যক্তি কোন মজুরকে কাজে লাগিয়ে তার পারিশ্রমিক পুরোপুরি আদায় করে না, আল্লাহ তার আমল বরবাদ করে দেবেন। আর আমি হব তার পক্ষে বাদী।
৯৮. আলী। ইয়াতীম কাঁদলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে, তখন আল্লাহ বলেন, জীবরাইল। ইয়াতীমকে যে কাঁদায়, তুমি তার জন্য জাহান্নামকে প্রশস্ত কর। আর যে ইয়াতীমের মুখে হাসি ফুটায়, তুমি তার জন্য জান্নাতকে প্রশস্ত কর।
৯৯, আলী। মানুষের মধ্যে জিহ্বার চাইতে উত্তম অঙ্গ আল্লাহ সৃষ্টি করেন নি, জিহ্বার কারণেই মানুষ জান্নাতে যাবে। আর জিহ্বার কারণেই মানুষ যাবে জাহান্নামে। তাই তুমি জিহ্বাকে বন্দী করে রাখবে। কারণ সে হলো আক্রমণকারী কুকুরের মত।
১০০. আলী। তুমি আইয়ামে বীষ-এর সওম পালন করবে প্রতি মাসে তিন দিন। তের, চৌদ্দ ও পনরই। যে তা পালন করবে সে যেন সারা বছর সওম পালন করল। আর এ সওম পালনকারীর মুখমণ্ডল হয় উজ্জ্বল।
১০১, আলী। استغفر لي ولوالدي ولجميع المؤمنين والمؤمنات والمسلمين والمُسْلِمَاتِ الأحياء منهم والأموات. ইয়া আল্লাহ। আমি আমার জন্য, আমার পিতামাতা, মু’মিন নারী-পুরুষ, মুসলিম নারী-পুরুষ এবং জীবিত ও মৃত সবার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যে ব্যক্তি প্রত্যহ একুশ বার এরূপ ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে গুলী বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করবেন। আলী। আকাশের সব ফেরেশতা তার জন্য দশলাখ বার ইস্তেগফার করবেন।
১০২. আলী। اللهم بارك لي في الموت وفيما بعد الموتহে আল্লাহ! আমার মৃত্যুতে বরকত দিন এবং মৃত্যুর পরের জীবনেও বরকত দিন! যে ব্যক্তি এ দু’আটি প্রত্যহ একুশবার পড়বে, পার্থিব জীবনে আল্লাহ তা’আলা তাকে যা যা দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন, সে সবের কোন হিসাব তার থেকে নিবেন না।
১০৩. আলী। সূর্যাস্তের পূর্বে যে ব্যক্তি আল্লাহু আকবার একুশবার পড়বে, আল্লাহ তার জন্য একশত আবেদ ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের একশত ব্যক্তির সওয়াব লিখবেন।
পৃষ্ঠা:১২
১০৪, আলী। الحمد لله قبل كل أحد والحمد الله بعد كل أحد ، يَبْقَى رَبَّنَا وَيَقْنَى كُلُّ أَحَدٍ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كل حال আল্লাহরই জন্য হাম্দ সব কিছুর পূর্বে, আল্লাহরই জন্য হামদ সব কিছুর পরে, আমাদের প্রতিপালক স্থায়ী থাকবেন আর সব ফানা হয়ে যাবে। সব অবস্থাতে আল্লাহরই হামদ বা প্রশংসা। যে বাক্তি এ দু’আ প্রত্যহ দশবার পাঠ করবে, আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিবেন এমন কি সে যদি কবীরা গুনাহকারীদের অন্তর্ভুক্তও হয়।
১০৫. আলী। যে কেউ চল্লিশ দিন যাবত প্রত্যুষে আলিমগণের মজলিসে না বসে তবে তার হৃদয় মরে যায়, সে হয়ে যায় কঠিন হৃদয়ের লোক-সে হত্যাও করতে পারে, পারে ব্যভিচার করতে এবং সে চুরির অপরাধও করতে পারে।
১০৬. আলী। আলিমের দুই রাকাআত সালাত জাহিলের দুই শত রাকাআত থেকে উত্তম।
১০৭. আলী। ইলমবিহীন আবেদের উদাহরণ হলো নিমক বিতরণকারীর ন্যায়, অথবা সাগরের পানি পরিমাপকারীর মত। হ্রাস-বৃদ্ধির কোন খবর সে রাখে না।
১০৮. আলী। তুমি ইলম হাসিল করবে তা চীন দেশে হলেও। কেননা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
১০৯. আলী। সালাম প্রচার করবে। আর রাতে সালাত আদায় করবে যখন লোকেরা নিদ্রামগ্ন থাকে। তুমি তা করলে, আল্লাহ্ তা’আলা প্রত্যহ তোমার দিকে সত্তরবার তাকাবেন আর যার দিকে আল্লাহ্ তাকান তাকে জাহান্নামের শান্তি তিনি দেবেন না।
১১০. আলী। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে সে কাফির হলেও। কারণ, যে ব্যক্তি প্রতিবেশীর প্রতি হিংসা পোষণ করে আল্লাহ্ তার রিযক কমিয়ে দেন, তার আয়ু ব্যয় হয় অসত্যের পথে।
১১১. আলী। হিংসা করবে না, হিংসা জাহান্নামে নিয়ে যায়।
১১২. আলী। গীবত থেকে দূরে থাকবে। কারণ, গীবত শারাব পান করার চাইতেও নিকৃষ্ট।
১১৩. আলী। মুসলিমগণের গোপনীয় বিষয়ের দিকে লক্ষ্য দিও না, কারণ যে এরূপ করে আল্লাহ্ তা’আলা তার অন্তর থেকে আখিরাতের ভয় এবং তার হৃদয় ও সিনা থেকে বিশ্বাস বের করে নেন। আর হৃদয়-মন দুশ্চিতা, অভাব-অনটন-এর ফিকির ও দুঃখ দিয়ে পূর্ণ করে দেন।
১১৪. আলী। তুমি নিজেকে মিথ্যা থেকে দূরে রাখবে, কেননা, এ হলো মুনাফিকদের চরিত্র।
পৃষ্ঠা:১৩
১১৫. আলী। চোগলখুরী থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করেছেন এসব ব্যক্তির উপর কৃপণ, বিয়াকারী, চোগলখোর, মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, যে যাকাত দেয় না ও এতে বাধা সৃষ্টি করে, সুদখোর, হারামখোর, জুয়ারী, কৃত্রিম কেশ সংযোগকারিণী, পশুর সাথে যে সঙ্গম করে এবং যে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়।।
১১৬. আলী। যে ব্যক্তি প্রতিবেশীকে পাপ কাজে বাধা দেয় না, সেও প্রতিবেশীর পাপ কাজে শরীক বলে গণ্য হবে।
১১৭. আলী। যে তার পরিজনকে সালাতের নির্দেশ দেয় না এবং তাদের হারাম খেতে নিষেধ করে না, তাকে সবার গুনাহের দায়িত্ব বহন করতে হবে।
১১৮. আলী। বয়োবৃদ্ধগণের সম্মান করবে, শিশুদের স্নেহ করবে। মুসাফিরের জন্য তুমি হবে দরদী ভাই-এর ন্যায়, বিধবাদের জন্য হবে ভালবাসাপূর্ণ স্বামীর ন্যায়, এরূপ করলে আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখবেন। তোমার প্রতি নিঃশ্বাসে একশত নেকী, প্রতিটি নেকীর বদলায় জান্নাতে একটি করে প্রাসাদ।
১১৯. আলী। মিসকিনদের সাথে বসবে, কেননা যে ব্যক্তি ধনবানকে সম্মান করে এবং গরীবকে তুচ্ছ মনে করে, ঊর্বজগতে তাকে আল্লাহর শত্রু বলে আখ্যায়িত করা হয়।
১২০. আলী। আল্লাহ্ তা’আলা ইবরাহীম (আ)-এর কাছে ওহী প্রেরণ করেছেন যে, তুমি আমার মেহমানের সম্মান করবে যেমন তোমার মেহমানকে সম্মান করে। থাকো। ইবরাহীম (আ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনার মেহমান কে? আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করলেন, আমার মেহমান সে যে লোকের কাছে নগণ্য।
১২১. আলী। তিন শ্রেণীর লোক আল্লাহর স্মরণ থেকে বঞ্চিত থাকে: ক. যারা অকারণে হাসে, খ. রাত জেগে ইবাদত না করে ঘুমায়, গ. যারা উদর পূর্তি করে আহার করে।
১২২. আলী। তিন শ্রেণীর লোক আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে: ক. যারা উদর পূর্তি করে আহার করে অথচ তারা জানে যে, তাদের প্রতিবেশী অনাহারে। রয়েছে, খ. যারা গোলামের প্রতি অত্যাচার করে ও ৭. যারা আপন বন্ধুর হাদিয়া (উপহার) প্রত্যাখ্যান করে।
১২৩. আলী। তুমি খোশামোদী হবে না এবং খোশামোদীর সাথে বসবেও না। কৃপণ হবে না এবং কৃপণের সাথে সংশ্রবও রাখবে না।
১২৪. আলী। তুমি দান করবে, দুনিয়াতে অল্পে তুষ্ট থাকবে, কেননা, যে এরূপ করবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ তা’আলা তার হাশর করবে নবীগণ (আ)-এর সঙ্গে। ১২৫. আলী। অন্ততপক্ষে মাসে একবার তোমার নখ কাটবে, কারণ, নখ বেড়ে গেলে এর নিচে শয়তান আশ্রয় নেয়।
নবী করীম (সা)-এর ওসীয়ত
হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর উদ্দেশে।
পৃষ্ঠা:১৪
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
মুহম্মদ ইবন ‘আতিয়্যা (র) মুগীরা ইবন যায়দ (র) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা একবার হযরত হাসান বসরী (র)-এর মজলিসে ছিলাম। এ সময় খোরাসানের এক ব্যক্তি আমাদের কাছে এলেন। হযরত হাসান বসরী (র) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: আপনি কে, কোথা থেকে এসেছেন, কি উদ্দেশ্যে এসেছেন? সে লোক বলল, আমি শীরায় নগরীর অধিবাসী। এসেছি ইলম হাসিল করার উদ্দেশ্যে। শুনেছি আপনি ইরাকের মহাজ্ঞানী ব্যক্তি। ইরাকীদের শায়খ, আর আপনার কাছে দীন-দুনিয়া ও আখিরাতের জ্ঞান ভাণ্ডার আছে। আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করি যেন আপনি আমার জন্য দীন-দুনিয়া ও আখিরাতের জ্ঞান খোরাসানের দুই পাতা একত্র করে দেন। হযরত হাসান বসরী (র) বললেন, তুমি দীন সম্পর্কীয় ইলম কামনা করছ। সে বিষয়ে আমার কাছে যা আছে তা হলো:
নবী করীম (সা)-এর ওসীয়ত
আবু হুরায়রা (রা)-এর উদ্দেশে
এরপর হযরত হাসান বসরী (র) একটি কিতাব বের করলেন এবং তা তাকে লিখিয়ে দিলেন। ওসীয়তের শুরুতে যা ছিল তা হলোঃ সালেমা ইবন মীম মকানে শামী থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, আবু কুওয়াহ হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সা)-এর কাছে আরয করলাম, ‘আমি রাতকে তিন অংশে ভাগ করে নিয়েছি-তার প্রথম তৃতীয়াংশে আমি ঘুমাই, দ্বিতীয়াংশে আমি যা আপনার কাছ থেকে শুনি সে সবের আলোচনা ও অধ্যয়ন করি। শেষ তৃতীয়াংশে সালাত আদায় করি। আমার আকাঙক্ষা হয় যে, আপনার কাছ থেকে শোনা হাদীসসমূহের কিছু কিছু হাদীস আমি ভুলে না বসি। তখন নবী করীম (সা) বললেন, তোমার জুব্বা বিছিয়ে দাও, আমি তার উপর বসি, তারপর তোমাকে আমি কিছু ওসীয়ত করব যাতে দীন-দুনিয়া ও আখিরাতের ইলম তোমাকে শিক্ষা দেব। এরপর তুমি তোমার জুব্বা পরিধান করে নিবে যাতে তোমার পিঠ ঢেকে যায়। এতে সে ইলম তোমার অন্তরে প্রবেশ করবে। আবু হুরায়রা। এরপর তুমি সে সব ইলম আর কখনো ভুলবে না। এরপর আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমার জন্য বিশেষ একটি দু’আ করুন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, ‘আল্লাহুমা হাব্বির আনা হুরাইরাতা ইলাল-মুমিনীনা
পৃষ্ঠা:১৫
ওয়া বাগিযহ ইলাল-মুনাফিকীন।’ ‘হে আল্লাহ। আবু হুরায়রাকে মুমিনগণের কাছে প্রিয় করে দিন এবং মুনাফিকদের কাছে অপ্রিয় করুন।’ তারপর নবী করীম (সা) বললেনঃ
১. আবু হুরায়রা! তুমি তোমার বিছানায় শয়ন করতে এলে তখন ডানপাশে শয়ন করবে এবং বলবে ‘বিসমিল্লাহ্, ওয়াল হামদু লিল্লাহ্’। (আল্লাহর নামে শয়ন করছি, সকল প্রশংসা আল্লাহরই।) এরূপ করলে ভোর পর্যন্ত ফেরেশতা তোমার হিফাযতের দায়িত্ব পালন করবেন।
২. আবু হুরায়রা। তুমি শয়নের সময় পড়বে-সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, ওয়াল- হামদু লিল্লাহ্ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৩ বার। আর একবার ‘ওয়ালাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ে একশ বার পূর্ণ করে নিবে। যে ব্যক্তি এ আমল করবে আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য সে ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, যে রাতে জাগ্রত থাকল ফজর পর্যন্ত দু’রাকাআত সালাতে।
৩. আবু হুরায়রা। তুমি শোয়ার সময় সূরা ওয়াস সামায়ি ওয়াত্ তোয়ারিক, (সূরা: ৮৬) ও সূরা আল্হাকুমুর তাকাসুরু (সূরা: ১০২) পাঠ করবে, এতে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার জন্য আসমানে নক্ষত্ররাজির পরিমাণ সওয়াব লিখবেন, আর তোমার সত্তরটি কবীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন।
৪. আবূ হুরায়রা। তুমি যখন পবিত্রতা অর্জন করতে ইচ্ছা কর এবং পানির জন্য হাত বাড়াও, তখন বলবে, ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি’ (আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি এবং সকল প্রশংসা আল্লাহরই)। এতে ফিরিশতাগণ তোমার আমলনামায় সূর্যাস্ত পর্যন্ত সওয়ার লিপিবদ্ধ করবেন।
৫. আবু হুরায়রা। তাহারতের সময় নাকে পানি দিয়ে ভালভাবে নাক পরিষ্কার করে নিবে কিন্তু তুমি যদি সওম অবস্থায় থাক, তবে নাকে পানি দিতে ও নাক পরিষ্কার করতে সতর্কতা অবলম্বন করবে।
৬. আবু হুরায়রা। আহার করার সময় তিন আঙুল দিয়ে আহার করবে, আর খাদ্যবস্তুর মাঝখান থেকে আহার করবে না, কারণ বরকত নাযিল হয় মাঝখানে।
৭. আবু হুরায়রা। আহারের পূর্বে হাত ধৌত করলে খাদ্যদ্রব্যে বরকত হয়, আর খাওয়ার পর হাত ধুলে জ্যোতি বৃদ্ধি পায় ও গুনাহ মাফ হয়, তুমি ছোট ছোট গ্রাসে আহার করবে, ভাল করে চিবিয়ে খাবে এবং পানি অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে পান করবে; বিরতিহীনভাবে এক ঢোকে গলাধকরণ করবে না।
৮. চোখে সুরমা লাগাবে বে-জোড়, তেল ব্যবহার করবে কখনো কখনো। ওযু-গোসলের সময় পানির অপচয় করবে না, অপচয় করলে দীর্ঘ হিসাবের সম্মুখীন
হতে হবে।
৯. আবু হুরায়রা। কোন মু’মিন যখন পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে পানি ব্যবহার করে, তখন হায়যাব নামে এক শয়তান তার বাঁ পাশে বসে তার মনে সন্দেহ সৃষ্টি
পৃষ্ঠা:১৬
করে, এমনকি পানি বেশি খরচ করার জন্য তার অন্তরে ওয়াসওয়াসার সঞ্চার করে, সাবধান। তুমি এ বিষয়ে শয়তানের অনুসরণ করবে না। কারণ, আমার উম্মতের সৎ ও আল্লাহ্ প্রেমিকগণ পবিত্রতা অর্জনে অপচয় করে না ভারা পানি কম খরচ করে; যেমন তেল ব্যবহার করা হয়।
১০. আবু হুরায়রা। তুমি সালাতের জন্য পবিত্রতা অর্জনে দু’মুদ (একমুদ ৬৮৮ তোলা ৪ মাশা পরিমাণ)-এর অতিরিক্ত পানি ব্যয় করবে না, পায়খানা পেশাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য অর্ধেক এবং অন্য সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য বাকি অর্ধেক ব্যয় করবে। আর গোসলের জন্য এক সা’ (২৭৩ তোলা পরিমাণ)-এর অতিরিক্ত পানি ব্যয় করবে না, তুমি পানির অপচয়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না, মহান আল্লাহ বলেন, ওয়ান্নান্স মুসরিফীনা হুমআসহাবুননার (অপচয়কারীরা তো জাহান্নামের অধিবাসী)। (৪০ মুমিনঃ ৪৩।)
১১. আবু হুরায়রা। প্রতি মাসে একবার নখ কাটবে, কারণ নখের নিচে শয়তান লুকিয়ে থাকে।
১২. আবু হুরায়রা। মাথার মধ্যভাগে টিকি রাখবে না, কারণ তা হয় শয়তানের বাসস্থান।
১৩. আবু হুরায়রা। তুমি পবিত্রতা অর্জন ও উভয় পা ধোয়ার পর ইন্না আনযালনাছ ফী লাইলাতিল কর (সূরাতুল কদর: ৯৭) পাঠ করবে।
১৪. আবু হুরায়রা। তুমি ডান হাতে আহার করার সময় বাঁ হাতে ঠেস দিয়ে বসবে না, কেননা তা হলো স্বেচ্ছাচারী ও অহংকারীদের কাজ।
১৫. আবু হুরায়রা। তুমি পবিত্রতা অর্জন ও দু’পা ধোয়া সমাপ্ত করলে ‘ইন্না আনযালনাহু ফীলাইলাতুল কদর’ (সূরাতুল কদর) পাঠ করবে, যে এরূপ করবে আল্লাহ্ তা’আলা তার প্রত্যেক ইবাদতে এক বছরের ইবাদত-দিনে সওম পালন ও রাতে ইবাদতে জাগরণ-এর সওয়াব দান করবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে মুক্ত রাখবেন।
১৬. আবু হুরায়রা। তুমি রাত ও দিনের প্রান্তে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কোন বান্দার প্রতি অনুগ্রহ করার ইচ্ছা করলে তাকে রাত ও দিনের প্রান্তে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার তৌফিক দান করেন।
১৭. আবু হুরায়রা। তুমি দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্ট ও সংকোচনে ভুগলে বেশি বেশি لا حول ولا قوة الا بالله العلي العظيم ‘লাহাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল ‘আলিয়িল আজীম’ (গুনাহ থেকে পরহেয করা ও ইবাদত করার তৌফিক মহান আল্লাহরই পক্ষ থেকে।) এ দু’আ পড়বে, এতে আল্লাহ তা’আলা তোমার দুঃখ-কষ্ট ও সংকট দূরীভূত করবেন এমন
পৃষ্ঠা:১৭
কি তুমি কাফিরদের কাছে বন্দী থাকলেও আল্লাহ তা’আলা তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করবেন।
১৮. আবু হুরায়রা। কোন কিছু ঘটে গেলে ‘যদি এটা না হতো’, আর কোন বিষয় না হয়ে থাকলে ‘যদি এটা হতো’, সাবধান। তুমি এ ধরনের উক্তি থেকে নিজকে বিরত রাখবে, কেননা এ হলো মুনাফিকদের উক্তি।
১৯. আবু হুরায়রা। তুমি অবশ্যই ‘সালাতুয যোহা’ (বা চাশতের সালাত) আদায় করবে, কারণ জান্নাতে একটি বিশেষ দরওয়াজা আছে যার নাম ‘বাবুযযাহা’ চাশতের সালাত আদায়কারিগণই এ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
২০. আবু হুরায়রা। -তুমি ‘সালাতুয যোহা’ আদায় করবে। যে দু’রাকাতে ‘সালাতু যোহা’ আদায় করে তাকে ‘যাকিরীন’ বা আল্লাহর স্বরণকারিগণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যে ছয় রাকাআত আদায় করে তাকে ‘ফায়যীন’ বা সফলকামিগণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর যে আট রাকাআত আদায় করে তাকে সাদিকীন বা সত্যবাদিগণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২১. আবু হুরায়রা। তুমি প্রতি মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে সওম পালন করবে, তা করলে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার আমলনামায় পূর্ণ বছরের সওয়াব লিখবেন। আবু হুরায়রাং জান্নাতে একটি দরওয়াজা আছে যার নাম ‘বাব-ই- বাইয়্যান’, ‘আইয়্যামে বীয’-এর সওম পালনকারিগণ সে দরওয়াজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
২২. আবু হুরায়রা। যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করে সে স্থানে বসে আল্লাহর যিকর করবে, সে শয়তানের উপর প্রবল থাকবে, তার উপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। আর তার আমলনামায় লেখা হবে এক হচ্ছ, এক উমরা ও একজন দাস আযাদ করার সওয়াব।
২৩. আবূ হুরায়রা। পেশাবের স্থানে ও নাপাক জায়গায় ফরয গোসল করবে না, চালনির উপর আহার করবে না, পাত্রকে উল্টিয়ে তার পিঠের উপর আহার করবে না। কারণ, এসব কর্ম বালা-মুসিবতের কারণ হয়। বালির উপর পেশাব করবে না এবং বন্ধ পানিতেও পেশাব করবে না, এতে দুঃখ-কষ্ট ও সংকট-এর সম্মুখীন হতে পার। সালাতে এদিক-সেদিক তাকাবে না, তা করলে শয়তান তোমার মুখমণ্ডলে হাত বুলিয়ে বলবে, যে আল্লাহর দীনের কাজে ব্যর্থ হলো তাকে ধন্যবাদ।
২৪. আবু হুরায়রা। হাই তোলার সময় মুখে হাত দিবে নতুবা শয়তান তোমার অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে। সূর্যের-সামনাসামনি তোমার সতর খুলবে না, কারণ এরূপ করলে সূর্য তাকে লানত করে। তিন বছর বয়সের ছেলেমেয়ের সামনে স্ত্রী সংগম করবে না, প্রতিটি চোখের থেকে তুমি সতরের হিফাযত করবে। কারণ আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সতর আবৃত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পৃষ্ঠা:১৮
২৫. আবূ হুরায়রা। কোন লোকের সতর তুমি যেন না দেখ এবং তোমার সতরও অন্য কেউ যেন দেখতে না পায়, কেননা যে সতর দেখে এবং যার সতর দেখা হলো তারা উভয়ই অভিশপ্ত লা’নতগ্রস্ত। কবরের উপর পদচারণ করবে না, কবরের উপর পদচারণ থেকে বিরত থাকলে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে জাহান্নামের আগুনে পদচারণ থেকে রক্ষা করবেন।
২৬. আবু হুরায়রা। মিথ্যা শপথ করবে না, কারণ মিথ্যা শপথের দরুন অনেক জনপদ ধ্বংস হয়ে যায়। অনেক জরায়ু হয় বাঁঝা এবং অনেক খান্দান নির্বংশ হয়ে যায়।
২৭. আবু হুরায়রা। আল্লাহর এমন এক ফেরেশতা আছেন যাঁর কানের লতির প্রশস্ততা পাঁচশ বছরের দূরত্ব পরিমাণ। আর তার দৈর্ঘ্য হলো দুলাখ সত্তর হাজার বছরের পথের দূরত্ব পরিমাণ। আর তার দৈর্ঘ্য হল দুলাখ সত্তর বছরের পথের দূরত্ব পরিমাণ। সে ফেরেশতা এমর্মে আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করেন: سبْحَانَكَ اللَّهُمَّ مِنْ عَظِيمٍ مَا أَعْلَمَكَ ‘সুবাহানাকা আল্লাহুম্মা মিন আযীমে মা আ’যামাকা’। (হে আল্লাহ, আপনি যাবতীয় ত্রুটি থেকে পবিত্র ও মুক্ত। আপনি মহামহিম, কতই না মহান।) আল্লাহ তা’আলা তাকে বলেন, কে আমার নামে মিথ্যা শপথ করে তাকে জিজ্ঞাসা কর।
২৮. আবূ হুরায়রা। কোন মুসলিম যখন মিথ্যা শপথ করে তখন মহান আল্লাহ বলেন-হে মাল’উন, তুমি কেন মিথ্যা শপথ করছ। তুমি ব্যতীত আর কে আমার নামে মিথ্যা শপথ করবে।
২৯. আবূ হুরায়রা। মহামহিম আল্লাহ্ মূসা আলায়হিস সালামকে বললেন, হে মুসা। আমার ইজ্জত ও মহত্ত্বের কসম, তুমি আমার নামে মিথ্যা শপথ করলে আমি অবশ্যই তোমার জিহ্বা পুড়িয়ে দেব। তাকে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলব। মিথ্যা শপথের দরুন কিয়ামত পর্যন্ত তার বংশে দুর্ভাগ্য থাকবে। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) কাঁদলেন এবং বললেন, অচিরেই আমার উম্মতের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন মিথ্যা কসম ব্যতীত লোকের ব্যবসায়-বাণিজ্য চলবে না, এরাই ক্ষতিগ্রস্ত। যারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পরিজন ও ধন-সম্পদে ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকবে।
৩০. আবু হুরায়রা। মিথ্যা বলবে না, তুমি তাতে তোমার মুক্তি দেখলেও প্রকৃতপক্ষে তাতে নিহিত রয়েছে তোমার ধ্বংস। তুমি সত্য বলবে, তাতে তোমার ধ্বংস দেখলেও প্রকৃতপক্ষে এতে রয়েছে তোমার নাজাত।
৩১. আবু হুরায়রা। যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবে। যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে দান করবে। যে তোমার সঙ্গে কথা বলে না, তুমি তার সাথে কথা কলবে। যে তোমার সঙ্গে খিয়ানত করে এবং in তোমার অমঙ্গল কামনা করে, তুমি তার মঙ্গল কামনা করবে। নবীগণ (আ) এরূপই
পৃষ্ঠা:১৯
করেছেন। যে এরূপ ব্যবহার করবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য তিনশত তেরজন নবী-রাসুল (আ)-এর সাহচর্য লিপিবদ্ধ করবেন। ৩২. আবূ হুরায়রা। তুমি অধিক পরিমাণে আয়াতুল কুর্সী পাঠ করবে, কেননা। আল্লাহ্ তা’আলা তোমার জন্য তার প্রতিটি অক্ষরের পরিবর্তে চল্লিশ হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করবেন।
৩৩. আবূ হুরায়রা। সূরা ইয়াসীন (সূরা ৩৬) বেশি বেশি পাঠ করবে, যে ফজরে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে সে নিজে, তার পরিজন ও সন্তানরা সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর হিফাযতে থাকবে।
৩৪. আবূ হুরায়রা। তুমি যোগ্য পাত্রে করুণা করবে, নতুবা তুমি নিজেই করুণার
পাত্র হবে।
৩৫. আবু হুরায়রা। তোমার প্রতিবেশীকে না দিয়ে গোশত আহার করবে না, একটি টুকরা হাড় হলেও প্রতিবেশীকে দিবে। কেননা, যে তার প্রতিবেশীকে না দিয়ে গোশ্ত আহার করে, আল্লাহ তা’আলা তার বুদ্ধির দশভাগ হ্রাস করে দেন এবং তার উপার্জনের বরকত তুলে নেন, সে অধিক পরিশ্রম করবে, শ্রান্ত থাকবে কিন্তু জীবিকা পাবে সামান্য।
৩৬. আবু হুরায়রা। মানুষকে গালি দিও না, পরিণামে তারা তোমার পিতামাতাকে গালি দেবে।
৩৭. আবু হুরায়রা। তুমি যথাসাধ্য ভাল কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ লোকের সহযোগী হবে না।
৩৮. আবু হুরায়রা! দুর্নীতিপরায়ণ সমাজে একদিন ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা আল্লাহ্ তা’আলার কাছে ষাট বছরের ইবাদত অপেক্ষা অধিক উত্তম।
৩৯. আবু হুরায়রা। তুমি আমার উম্মতের মধ্যে শাসনভার লাভ করবে। তখন তোমার কাছে লোকজন বিচারপ্রার্থী হয়ে এলে তুমি মদ্যপের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না, কারণ আল্লাহ তার সাক্ষ্য বাতিল করে দেন। অন্ধ লোকের সাক্ষ্যও গ্রহন করবে না। জুমু’আর সালাত ত্যাগকারীর সাক্ষ্যও গ্রহণ করবে না। আর যে স্বেচ্ছায় সালাত ত্যাগ করে তার প্রতি লা’নত দাও সম্মুখে, পিছনে, জীবিতাবস্থায় ও মৃত্যুর পরও।
৪০. আবু হুরায়রা। মুহাম্মদের প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম, ইলমের মজলিসে একঘণ্টা বসা আল্লাহর কাছে চল্লিশ বছর ইবাদত অপেক্ষা অধিক প্রিয়।
৪১. আবু হুরায়রা। ইলম ছাড়া আমল ভগ্ন সদৃশ, যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচণ্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমার উম্মতের সামনে অচিরেই এমন সময় আসবে, যখন আলিম এ নিয়ে গর্ব করবে, তার কাছ থেকে হাদীসের ইলম শিখা হয়। (অর্থাৎ ইলমের চর্চা কমে যাওয়ার দরুন এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হবে)।
৪২. আবু হুরায়রা। আল্লাহর আরশের নিম্নদেশে স্বর্ণনির্মিত একটি শহর আছে, যার দরওয়াজায় লিখা আছে, যে ব্যক্তি কোন আলিমের সঙ্গে সাক্ষাত করলো, সে যেন
পৃষ্ঠা:২০
আল্লাহর নবীগণের (আ) সঙ্গে সাক্ষাত করলো। যে আমার আলিম বান্দ্যগণের সঙ্গে বসল, সে যেন নবীগণের মজলিসে বসল। যে আমার আলিমগণের উপকার করল এবং তাঁদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করল, সে যেন নবীগণের (আ) উপকার করল এবং তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করল।
৪৩. আবু হুরায়রা। যে ব্যক্তি কোন আলিমের একদিন সেবা করল, সে যেন অন্যলোকের সত্তর বছর সেবা করল।
৪৪. আবু হুরায়রা। চার শ্রেণীর লোকের উপর দীন নির্ভরশীল: ক. পরহেযগার আলিম, খ. দানশীল ধনী, গ. ধৈর্যশীল ফকীর, ঘ. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। তাদের মধ্যে বিকৃতি আসলে তখন মু’মিনগণ আর কাকে অনুসরণ করবে।
৪৫. আবূ হুরায়রা। আলিমের মৃত্যু হলে কিয়ামত পর্যন্ত এর জন্য ইসলামে ফাটল সৃষ্টি হয়, একজন আলিম একহাজার ইবাদতকারী অপেক্ষা ইবলীসের উপর অধিক ভারী। একদিনের তাওবাতে পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা কোন সম্প্রদায়ের উপর অনুগ্রহ করার ইচ্ছা করলে তাদের মধ্যে একজন আলিম ও উপদেশদাতা প্রেরণ করেন। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ إِنَّمَا أَنتَ مُنْذِرٌ ولِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ আপনি তো কেবল সতর্ককারী, আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথপ্রদর্শক। (১৩ রাদ’৪৭)। পথপ্রদর্শক অর্থ আলিম যিনি তাদের উপদেশ দেন এবং হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ্ তা’আলা কোন সম্প্রদায়ের মন্দ ইচ্ছা করলে তাদের আলিমের মৃত্যু ঘটান, এরপর তাদের উপর অবতীর্ণ হয় বালা-মুসীবত।
৪৬. আবূ হুরায়রা। তুমি নতুন কাপড় পরিধান করার সময় কিবলামুখী হয়ে বলবে। بسم الله والحمد لله (আল্লাহর নামে পরিধান করছি, সকল প্রশংসা আল্লাহরই।) এরপর দু’রাকাআত সালাত আদায় করে বলবে। الحمد اللَّهِ كَسَانِي هَذَا وَلَوْ شَاء الأَعْرَانِي (সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাকে এ কাপড় পরিধান করিয়েছেন, তিনি ইচ্ছা করলে আমাকে যন্ত্রহীন থাকতে হতো।) এ দু’আ পড়লে যতদিন এ কাপড় টিকে থাকবে, ততদিন ফেরেশতা তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
পৃষ্ঠা ২১ থেকে ৩৫
পৃষ্ঠা:২১
৪৭. আবূ হুরায়রা। জুতা পরার সময় প্রথমে ডান পায়ে পরবে এবং বের করার সময় প্রথমে বা পা থেকে বের করবে। কারণ, প্রত্যেক বস্তুর বিপরীত বস্তু রয়েছে, যেমন মসজিদের বিপরীত বস্তু হলো বিশ্রামাগার, কুরআনের বিপরীত বস্তু হলো কবিতা।
৪৮. আবু হুরায়রা। তুমি কবিদের সাথে মেলামেশা করবে না, কারণ আল্লাহ ভা’আলা বলেন: ومن النَّاسِ من يشترى لَهُوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ (মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে নেয়।। (৩১ লুকমানঃ ৬।) কারো উদর বমি, ও খুঁজে পূর্ণ হওয়া উত্তম, কবিতা দিয়ে পূর্ণ হওয়ার চাইতে। ইবলীস তার প্রভুর কাছে তাকে কিছু পড়তে দেওয়ার প্রর্থনা করল। আল্লাহ তা’আলা বললেন, কবিতা হলো তোমার কুরআন। কবিদের মজলিসে যারা বসে তারা হলো তোমার সাথী ও তোমার ভাই।
৪৯. যে ব্যক্তি প্রতিদিন কুরআনুল করীমের একশত আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার জন্য সে দিনে আল্লাহ্ তা’আলা আমার উম্মতের আমলের সমপরিমাণ আমল তুলবেন।
৫০. আবু হুরায়রা। যে দিনে একশবার ‘কুল হুয়াল্লাহ্ হুআহাদ’ (সূরা ইখলাস) পাঠ করবে, আসমানের সকল ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, আর আল্লাহ তা’আলা ও ফেরেশেতাগণের দু’আর মাঝে কোন আবরণ থাকে না। আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি স্বর্ণের ঘর কিংবা একটি নগর প্রস্তুত করবেন।
৫১. আবূ হুরায়রা। তুমি কোন জন্তুর উপর আরোহণ করতে চাইলে প্রথমে পাঠ করবে:بسم الله والحمد لله (আল্লাহর নামে আরোহণ করছি, আর সকল প্রশংসা আল্লাহরই।) এতে অবতরণ করা পর্যন্ত তুমি আল্লাহর সাহায্যে নিরাপদ থাকবে।
৫২. আবু হুরায়রা। কোন ইহুদী কিংবা নাসারাকে তুমি আগে সালাম করবে না। তারা তোমাকে সালাম দিলে তুমি তার জওয়াব দিবে। প্রতিবেশী হিসেবে তাদের যা হক রয়েছে তা তুমি ভালভাবে আদায় করবে, কারণ আল্লাহ্ তা’আলা প্রতিবেশীর হক সম্বন্ধে জিজ্ঞাস্য করবেন।
৫৩. আবূ হুরায়রা। তুমি জুমু’আর সালাতের জন্য গোসল করবে, বিকালের খাদ্যের বিনিময়ে পানি সংগ্রহ করতে হলেও। কারণ, প্রত্যেক নবী-রসূল (আ)-কেই আল্লাহ তা’আলা জুমু’আর গোসলের নির্দেশ দিয়েছেন। জুমু’আর গোসল আরেক জুমু’আ পর্যন্ত সময়ের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে থাকে।
পৃষ্ঠা:২২
৫৪. আবু হুরায়রা। মোচ ছোট করবে, তাতে ফিরিশতাগণ তোমার ওষ্ঠাধরকে ভালবাসবে।
৫৫. আবু হুরায়রা। তুমি যখন সালাতে দাঁড়াবে, তখন তোমার দৃষ্টি থাকবে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গার উপর, রুকুর সময় পায়ের উপর এবং তাশাহহুদ পড়ার সময় কোলের উপর।
৫৬. আবু হুরায়রা। তুমি খোশবু ব্যবহার করবে, এতে আল্লাহর ফিরিশতা তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
৫৭. আবূ হুরায়রা। তুমি আল্লাহর হয়ে যাও, আল্লাহ্ তোমার হয়ে যাবেন। তুমি আল্লাহকে ৩য় কর, আল্লাহ্ তার প্রতিদান তোমাকে দেবেন।
৫৮. আবু হুরায়রা। পরামর্শ করার দরুন কোন লোক ধ্বংস হয়নি, পরামর্শে রয়েছে সৎপথ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। যে পরামর্শ করে না সে লজ্জিত হয়, যে পরামর্শ না করে নিজের মত মত চলে সে পথভ্রষ্ট হয়। আর যে অহংকার করে সে বেইজ্জত
৫৯. আবূ হুরায়রা। ধৈর্য তোমাকে অর্ধেক পথ অতিক্রম করতে সাহায্য করবে এবং সালাত তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে।
৬০. আবু হুরায়রা। নাগর মোথা (এক প্রকার সুবাসিত মাসের মূল) ও কালিজিরা ব্যবহার করবে।
৬১ আবূ হুরায়রা। তুমি ধৈর্যধারণ করলে হবে তো তাই যা তোমার জন্য তাকদীরে নির্ধারিত আছে কিন্তু তুমি সওয়াবের অধিকারী হবে। আর তুমি অধৈর্য হলেও তাই হবে যা তোমার জন্য নির্ধারিত আছে কিন্তু তুমি হবে গুনাহগার।
৬২. আবু হুরায়রা। তোমার উপর তোমার পিতার অধিকার আছে, তাই তুমি অবশ্যই তার খিদমত করবে। আর যত্ন করবে মেহমানকে, কেননা তুমি ইবরাহীম (আ)-এর চাইতে অধিক মর্যাদাবান নও। আর বাদশাহর হক আদায় করবে, কারণ তাকে আল্লাহ্ তা’আলা জনগণ ও নগরের কর্তৃত্ব দান করেছেন। আল্লাহর উপর অহংকারী হবে না, কারণ যে ইলম হাসিল করতে লজ্জাবোধ করে সে আল্লাহর নিকট অহংকার করল এবং আল্লাহর দীনকে তুচ্ছ মনে করল, অহংকারী ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে না এবং নির্বোধ ব্যক্তি উপদেশ গ্রহণ করে না।
৬৩. আবু হুরায়রা। তুমি মাল সঞ্চয় করবে না, তুমি তা সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে না, কারণ আল্লাহ তা’আলা মালের মধ্যে চারটি খাসলাত রেখেছেন। ক. লালসা, খ. কৃপণতা, গ. অতি আকাংক্ষা, ঘ. নির্লজ্জতা।
৬৪. আবু হুরায়রা! এ উম্মতের চার শ্রেণীর লোক সকলের আগে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। ক. ধনবান চোর, খ. ফাসেক আলিম, গ. বৃদ্ধ ব্যভিচারী, ঘ. বিবাহিত যিনাকারী।
পৃষ্ঠা:২৩
৬৫. আবু হুরায়রা। চার শ্রেণীর লোক জান্নাতুন নাঈম’-এ সবার আগে প্রবেশ করবে। ক. পরহেযগার আলিম, খ. আল্লাহর পথের শিক্ষার্থী গ. আল্লাহর ইবাদতে মশগুল যুবক, ঘ. আল্লাহর আনুগত্যের পথে অর্থ ব্যয়কারী।
৬৬. আবু হুরায়রা। প্রত্যেক বস্তুর উচ্চতার নিদর্শন আছে, ইসলামের উচ্চমর্যাদার নির্দশন হলো বদান্যতা।
৬৭. আবু হুরায়রা। প্রত্যেক বস্তুর দীপ্তি আছে, ইসলামের দীপ্তি হলো চাশূতের সালাত।
৬৮. আবু হুরায়রা। প্রত্যেক বস্তুর উজ্জ্বলতা রয়েছে, ইসলামের উজ্জ্বলতা হলো সাদাকাহ্। প্রত্যেক বস্তুর সৌন্দর্য আছে, ইসলামের সৌন্দর্য হলো তাওবা। যার ইলম নেই তার তাওবাও নেই। যার আগ্রহ নেই তার ইলম নেই। যার বদান্যতা নেই তার সাদাকা নেই। যার পরহেযগারী নেই তার ইবাদতও নেই। ফরয হওয়া সত্ত্বেও যে যাকাত দেয় না, তার সালাতও কবুল হয় না। আল্লাহ যা দেন তাতে যার পরিতুষ্টি নেই, তার ইয়াকীন নেই।
৬৯ আবু হুরায়রা। যে ব্যক্তি শনিবারে নখ কাটবে আল্লাহ তা’আলা তার পেরেশানী দূর করে দিেেবন। যে রোববারে নখ কাটবে আল্লাহ্ তা’আলা তার অন্তরের কঠোরতা দূর করে দিবেন। যে সোমবারে নখ কাটবে আল্লাহ্ তা’আলা তার স্বরণশক্তি ও মেধা বাড়িয়ে দিবেন। আর যে মঙ্গলবারে নখ কাটবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে আরোগ্য দান করবেন। আর যে বুধবারে নখ কাটবে সে যাবতীয় রোগ ও ব্যথা থেকে মুক্তি লাভ করবে। যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার নখ কাটবে আল্লাহ্ তা’আলা তার কঠিন কাজ সহজ করে দিবেন এবং ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। জুমু’আর দিন নখ কাটলে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ইয়াকীনের (দৃঢ় বিশ্বাস)-এর দৌলত দান করবেন এবং আর ঋণ থাকলে তার ধারণাতীত স্থান থেকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন।
৭০. আবু হুরায়রা। যদি তুমি আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আমার সঙ্গে মুসাফাহ্য করতে চাও, তবে প্রতিদিন আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করবে।
৭১. আবু হুরায়রা। আল্লাহর কৌশল সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থেকো না, তুমি চিরসুস্থতা ও প্রচুর রিযক কামনা করলে তবে আল্লাহর সাহায্য চাইবে। যদি আসমান ও যমীনের অধিবাসিগণ তোমার কোন উপকার করতে চায় কিন্তু আল্লাহ্ না চাইলে তবে তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না। আর তারা সবাই সম্মিলিতভাবে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় কিন্তু আল্লাহ্ না চাইলে তবে তারা তোমার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না।
৭২. আবু হুরায়রা। যে মানুষের গীবত করে না, আল্লাহ্ তা’আলা তাকে মানুষের কাছে প্রিয় করে দেন। আর যে তার দাসদাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করে আল্লাহ্ তাকে তার শত্রুদের উপর বিজয়ী করেন।
পৃষ্ঠা:২৪
৭৩. আবু হুরায়রা। কোন পাপকে ছোট মনে করবে না। কারণ, তুমি জান না, কোন পাপের দরুন আল্লাহ্ তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আর কোন নেক কাজকে ক্ষুদ্র মনে করবে না, কারণ তুমি জান না কোন নেক কাজের দরুন আল্লাহ্ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান।
৭৪. আবু হুরায়রা। তোমার কোন পুত্র সন্তান কিংবা কন্যা সন্তানে জন্ম হলে তার ডান কানে আযান ও বাঁ কানে ইকামত বলবে, এতে শয়তান সে সন্তানের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
৭৫. আবূ হুরায়রা। তুমি বাঘ দেখলে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এরপর বলবে: اللهُ أَكْبَرُ وَاعْزُّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ আল্লাহ মহান, তিনি সবার চাইতে পরাক্রমশালী। এতে আল্লাহ্ তোমাকে তার ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন।
৭৬. আবু হুরায়রা। পিঁয়াজ, রসুন রান্না ছাড়া কাঁচা আহার করবে না।
৭৭. আবু হুরায়রা। তুমি তরকারিসহ কোন কিছু আহার করলে তোমার হাত ও ওষ্ঠাধর ধুয়ে নিবে, কারণ তীর তার লক্ষ্যবস্তুর দিকে যেমন দ্রুত পৌছায়, শয়তান ওষ্ঠাধরের দিকে তদপেক্ষা অধিক দ্রুত পৌছে।
৭৮. আবূ হুরায়রা! যথাসাধ্য প্রত্যহ মিসওয়াক করবে, এতে ক্লান্ত হবে না, কারণ মিসওয়াক করে তুমি যে সালাত আদায় করবে, তা মিসওয়াকবিহীন আদায় করা সালাতের চাইতে সত্তর গুণ উত্তম।
৭৯. আবু হুরায়রা। যে ব্যক্তি প্রতিদিন একুশটি লাল, কিসমিস আহার করবে, মৃত্যুর ব্যাধি ছাড়া তার অন্য রোগ হবে না।
৮০. আবূ হুরায়রা। যে ব্যক্তি প্রত্যহ খালিপেটে দশটি খেজুর আহার করবে, তার পেটের সব ক্রিমি ও পোকা বের হয়ে যাবে।
৮১. আবু হুরায়রা। তুমি মিষ্টি আনার আহার করবে, এতে স্মরণশক্তি বাড়বে।
৮২. আবু হুরায়রা। চল্লিশ দিন গোশত খাওয়া বাদ দিলে তাতে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয় এবং হৃদয় মরে যায়।
৮৩. আবু হুরায়রা। তোমার মোচ কেটে ফেলবে, তাতে ফেরেশতাগণ তোমার ওষ্ঠাধরকে ভালবাসবে।
৮৪. আবু হুরায়রা। তুমি খোশবু ব্যবহার করবে, কারণ যতক্ষণ তোমার দেহে খোশবু থাকবে ততক্ষণ ফেরেশতা তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
৮৫ আবু হুরায়রা। লোক-দেখানো না হলে রাতের এক রাকাআত সালাত দিনের হাজার রাকাআত সালাত অপেক্ষা অধিক উত্তম।
পৃষ্ঠা:২৫
৮৬. আবূ হুরায়রা। রাতে সালাত আদায়কারীর চেহারা দুনিয়া ও আখিরাতে অন্যান্য লোকের চাইতে অধিক সুন্দর ও উজ্জ্বল হবে।
৮৭. আবু হুরায়রা। তোমার পরিজনদের সালাতের নির্দেশ দিবে। এতে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের রিস্কের দরজা খুলে দিবেন।
৮৮. আবু হুরায়রা। বারি বর্ষণের সময় দু’রাকাআত সালাত আদায় করবে, সেদিন আকাশ থেকে যত ফোঁটা বৃষ্টি বর্ষিত হবে তার প্রত্যেক ফোঁটার বদলে তোমার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।
৮৯. আবূ হুরায়রা! সকাল হলে তুমি সন্ধ্যার চিন্তা করবে না এবং সন্ধ্যা হলে সকালের চিন্তা করবে না।
৯০. আবু হুরায়রা। আল্লাহ তা’আলা মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন: সৃষ্টি করেছেন জাহান্নাম, মৃত্যু ও জাহান্নামকে বিশ্ববাসীদের জন্য করেছেন নিদর্শন। মৃত্যু না থাকলে প্রত্যেক ব্যক্তিই খোদায়ী দাবি করত। আর জাহান্নাম সৃষ্টি না করলে বিশ্বের কেউ আল্লাহকে সিজদা করত না।।
৯১. আবু হুরায়রা। মৃত্যুর কঠিন সময় বা সাকারাত উপস্থিত হলে তার সামনে কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করতে থাকবে, কারণ কলেমায়ে শাহাদাত সকল পাপ মোচন করে দেয়। আবু হুরায়রা বলেন, এতো হলো যার মৃত্যু সন্নিকট তার জন্য, কিন্তু জীবিতদের জন্য এ কলেমার কি ফযীলত। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, কলেমায়ে শাহাদাত জীবিতদের পাশ আরো অধিক মোচন করে।
৯২ আবু হুরায়রা। তুমি সকাল-সন্ধ্যা তোমার ইসলামকে তাজদীদ বা পুনর্জীবিত করবে এ কলেমার ধারা: لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد يحيي ويميت وهو حى لا يـ الخير وهو على كل شيء قدير. ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, বাজা তাঁরই, তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা, তিনি জীবনদান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই, সকল কল্যাণ তাঁরই হাতে, তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ যে ব্যক্তি এ কলেমা দশবার পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য মু’মিন ক্রীতদাস আযাদ করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। والحمد لله رب العالمين وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وعترته أجمعين – تمت الوصية المباركة بعون الله تعالى وحسن توفيقه في اليوم الاثنين سلخ شهر المحرم الحرام سنة خمس وثلاثين ومائة ألف على يد الفقير الحقير الحاج شيخ محمد المولوى ابن على الشيخ في زاوية المولوية بعيش كلاش غفر لهما وَعَلَى عَنْهُما
পৃষ্ঠা:২৬
পরিচিতি: হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রা)
নাম-আলী হায়দর, উপনাম-আবু তোরাব ও আবুল হাসান, উপাধি- ফাতিহ-এ- খায়বর ও আসাদুল্লাহ-খায়বর বিজয়ী ও আল্লাহর বাঘ। বংশে কুরাইশী হাশেমী। রাসুলুল্লাহ (সা)-এর চাচাতো ভাই, নাবালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর একজন। উসমান যুননুরাইন (রা)-এর পর উত্থাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। সায়্যিদাতুন নিসা হযরত ফাতিমা (রা)-এর স্বামী। হাসান ও হুসাইন (রা)-এর পিতা। চতুর্থ খলীফা, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বংশধারার আমীন। তিনি নবী করীম (সা)-এর স্নেহ ও তারবিয়তে লালিত-পালিত হওয়ার গৌরবের অধিকারী। তাঁর সাহস ও বীরত্ব ছিল অসাধারণ। বীরত্বের প্রতীকস্বরূপ নবী করীম (সা) তাঁর খাস তরবারি আলী (রা)-কে প্রদান করেন যার নাম ছিল যুলফিকার। নবী করীম (সা) মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরতকালে আলী (রা)-কে তাঁর আপন শয্যায় রেখে যান। তাঁকে অভয় দিয়ে বলেন: তোমাকে তাঁরা কোন কষ্ট দিবে না। খায়বার যুদ্ধে তাঁর হাতে পতাকা তুলে দেন। সূরা বারাআতে অবতীর্ণ ঘোষণা প্রচারের দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পণ করেন। তাঁর সম্পর্কেই মহানবী (সা)-এর এ উক্তিঃلا سيف الا ذو الفقار ولا في الأعلى যুলফিকার ব্যতীত তরবারি নেই এবং আলী ব্যতীত যুবক নেই। হযরত আলীর পিতা আবু তালিব মৃত্যুর সময় ওসীয়ত করেছিলেন, তোমরা মুহাম্মদের অনুসরণ করবে, তাঁর সহযোগিতা করবে, তিনি সোজা ও সরল পথ প্রদর্শন করেন। হযরত আলী (রা) ঈমান আনার পর পিতাকে অবহিত করলেন, আব্বা। আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর রাসূলের প্রতিও। রাসূল (সা) আল্লাহর কাছ থেকে যা প্রাপ্ত হয়েছেন আমি তা বিশ্বাস করে তাঁর অনুসরণ করছি। আবু তালিব বললেন, তিনি কল্যাণের দিকেই আহবান করে থাকেন, তুমি সব সময় তাঁর সঙ্গে থাকবে। হযরত আলী যখন ঈমান আনলেন তখন তাঁর বয়স ছিল দশ বছর। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সালাত আদায় করতে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি করছেন। নবী করীম (সা) বললেন, আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশে সালাত আদায় করছি। আলী (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, জগতসমূহের প্রতিপালকের পরিচয় কি? নবী করীম (সা) বললেন, তিনি এক ইলাহ, তাঁর কোন শরীক নেই, সৃষ্টি ও আধিপত্য তাঁরই, তিনিই
পৃষ্ঠা:২৭
জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আলী তা শুনে বিনা দ্বিধায় ঈমান আনলেন। হযরত আলী মুর্তযা (রা) সব সময় নবী করীম (সা)-এর অনুসরণ করতেন, যাবতীয় কাজে তাঁকে সহযোগিতা করতেন। নবী করীম (সা) তাঁকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, মূসা (আ)-এর কাছে হারুন (আ)-এর যে মর্যাদা আমার কাছেও তোমার সে মর্যাদা, তবে আমার পর আর কোন নবী নেই। খায়বর বিজয় খুব দুরূহ ব্যাপার ছিল। নবী করীম (সা) বললেন, আমি কাল পতাকা এমন ব্যক্তিকে প্রদান করবো, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাঁকে ভালবাসেন। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর হাতেই বিজয় প্রদান করবেন। পরদিন রাসূলুল্লাহ্ (সা) জিজ্ঞাসা করলেন, আলী ইবন আবু তালিব কোথায়? তিনি এলেন, নবী করীম (সা) তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিলেন এবং বললেন, তুমি এ পতাকা নিয়ে অগ্রসর হও-যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা তোমার হাতে বিজয় দান করবেন। খায়বর দুর্গের বিরাট দরজা তিনি একাই হাতে তুলে নিলেন। যে দরজা সাতজনে চেষ্টা করেও ওঠাতে পারেননি। দুনিয়ার সম্পদের প্রতি তাঁর কোন মোহ ছিল না। তিনি একবার বলেছিলেন, হে দুনিয়া। তুমি আমা থেকে দূরে থাক, হে দুনিয়া। তুমি অন্য কাউকে আকৃষ্ট কর, আমাকে নয়। তিনি বলতেন, তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হবে না। হযরত উমর ইবন আবদুল আযীয (র) হযরত আলী (রা) সম্পর্কে বলেন, দুনিয়ার প্রতি সবচেয়ে অনাসক্ত ব্যক্তি হলেন আলী (রা)। হযরত হাসান বসরী (র) বলেন, আল্লাহ্ অনুগ্রহ করুন আলীর প্রতি, তিনি ছিলেন এ উম্মতের সবচেয়ে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত ব্যক্তি। হযরত আলী (রা) মোটা কাপড় পরিধান করতেন এবং তিনি বলতেন, মোটা বস্তু অহংকার থেকে আমাকে মুক্ত রাখবে এবং সালাতে বিনম্র ও মনোযোগী হতে আমাকে সহায়তা করবে। তারপর তিনি বললেন, মানুষের জন্য এ হলো উত্তম নমুনা, যাতে তারা অপচয় না করে। এরপর তিনি কুরআন মজীদের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন,للمتقين تلك এ হলো আখিরাতের সে আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না, শুভ পরিণাম মুত্তাকীদেরই। জন্য। (২৮ কাসাস: ৮৩)। নবী করীম (সা) হযরত আলী (রা)-কে এত বেশি ভালবাসতেন যে, তিনি আলী মূর্তযার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ শোনা পছন্দ করতেন না। তিনি একবার বললেন, হে লোকসকল! তোমরা আলীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করবে না, আলী আল্লাহর পথে খুবই কঠোর, তিনি অভিযোগের উর্ধে।
পৃষ্ঠা:২৮
নবী করীম (সা)-এর ওফাতের পর হযরত আলী (রা) তার গোসল দেওয়াতে শরীক ছিলেন। হযরত আবু বকর (রা) ও হযরত উমর (রা) আলী (রা)-এর কাছে জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেন, শরয়ী ফায়সালা জেনে নিতেন। একবার হযরত উমর (রা) তাঁর একটি সিদ্ধান্তের প্রশংসা ও গুরুত্ব বর্ণনা করে মন্তব্য করলেন আলী না হলে উমর হালাক হয়ে যেত। হযরত উসমান (রা)-এর শাহাদতের পর হযরত আলী (রা) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দারুল খিলাফত কুফায় স্থানান্তর করেন। খিলাফতের দায়িত্ব পালনের সময়ও তিনি সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি রাষ্ট্রীয় তহবিলের মাল হকদারদের মধ্যে সমতাবে বণ্টন করে দিতেন। তিনি বলতেন, ধনবানদের কার্পণ্যের কারণেই অভাবগ্রস্ত লোকেরা কষ্ট পায়। তাঁর খিলাফতকাল হলো তিনদিন কম পাঁচ বছর। এ সময়ে তাঁকে ইসলামের শত্রুদের সৃষ্ট অনেক ফিতনা-ফাসাদের মুকাবিলা করতে হয় এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তিনি খারিজী সম্প্রদায়ের আবদুর রহমান ইবন মুলজিমের হাতে শহীদ হন। হযরত উসমান (রা)-এর শাহাদতের পর নিজেদের মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং অনেক রক্তপাত হয়। মহানবী (সা) একবার হযরত আলী (রা)-কে বলেছিলেন, আলী। তুমি জান, পূর্ববর্তীদের সবচেয়ে অধিক হতভাগ্য লোককে। আলী বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। নবী করীম (সা) বললেন, সে ব্যক্তি বড় হতভাগা যে সালিহ্ (আ)-এর উটনীর পা কর্তন করেছিল। মহানবী (সা) বললেন, আলী তুমি জান, পরবর্তীদের মধ্যে সবচাইতে অধিক হতভাগ্য লোক কে? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক জ্ঞাত। নবী করীম (সা) বললেন, সবচেয়ে অধিক হতভাগ্য ব্যক্তি হলো তোমার হত্যাকারী। তিনি হত্যাকারী সম্পর্কে নির্দেশ দেন যে, তার খাওয়া-দাওয়া ও থাকার সুব্যবস্থা করবে, আমি এ আঘাত থেকে রক্ষা পেয়ে বেঁচে থাকলে আমিই তার অর্ষিক হকদার, তার থেকে প্রতিশোধ নেই বা তাকে ক্ষমা করে দেই। আর আমার মৃত্যু হলে তোমরা তাকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে। আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তার বিচারপ্রার্থী হব। আর তোমরা অপরাধী ছাড়া অন্য কাউকে হত্যা করবে না। কারণ আল্লাহ তা’আলা সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। অন্তিমকালের এ নির্দেশ থেকে হযরত আলী (রা)-এর ন্যায়পরায়ণতা সহজে অনুমান করা যায়। তিনি ক্রোধের সময়ও সীমালংঘন করা পছন্দ করতেন না। তাঁরাই আদর্শ। তারাই ইসলামের ও মহানবী (সা) -এর সত্যিকার অনুসারী ছিলেন। তাঁদের এ সুন্দর চরিত্রের দরুন ইসলাম সারা বিশ্বে বিস্তারলাভ করে। একবার হযরত আলী (রা) কুফার মসজিদে ফজরের সালাত আদায়ের পর মসজিদের সাহানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসলেন এবং অপেক্ষমাণ লোকদের উদ্দেশ করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাহাবীগণকে দেখেছি। তাঁদের মত আজ আর
পৃষ্ঠা:২৯
কাউকে দেখছি না। তাঁরা ভোরে উঠলে তাঁদের চোখে দৃষ্ট হতো সিজদা ও কুরআন তিলাওয়াতে রাত জাগরণের নিদর্শন। তাঁরা আল্লাহর যিক্র করলে বাতাসে গাছ যেমন আন্দোলিত হয় তাঁদের শরীরও তেমন আন্দোলিত হতো। চোখের অশ্রুতে তাঁদের কাপড় সিক্ত হয়ে যেত। হযরত আলী মুর্তযা (রা) ছিলেন ওহী লেখক। ইমাম আহামদ ইবন হাম্বল (র) বলেন, হযরত আলীর প্রশংসায় যে পরিমাণ হাদীস পাওয়া যায় আর কারো প্রশংসায় সে পরিমাণ হাদীস পাওয়া যায় না। হযরত হাসান বসরী (র) বলেন, হযরত আলীর দৃঢ়তা, তাঁর জ্ঞান ও আমল-এর উৎস হলো আল-কুরআন। তাই তিনি কুরআনুল করীমের সুশোভিত উদ্যানে ও স্পষ্ট নিদর্শনাবলীতে অবস্থান করতেন। হযরত আলী মূর্তযা (রা) একবার বলেন, আল্লাহর কিতাব থেকে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর, জিজ্ঞাসা কর যত ইচ্ছা। আল্লাহর কসম, আল্লাহর কিতাবে এমন কোন আয়াত নাই, যা রাতে অবতীর্ণ হয়েছে, না দিনে অবতীর্ণ হয়েছে আমি তা ভালরূপে জ্ঞাত নই। তিনি তাঁর এক ওসীয়তে বলেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ। আমি তোমাদের ওসীয়ত করছি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনের, কেননা আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাদের তাকওয়ার কথা বলেছেন আর তাকওয়ার দ্বারা সহজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আল্লাহর কাছে তাকওয়ার উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়, তোমরা নির্দেশিত হয়েছ তাকওয়ার প্রতি এবং তোমাদের সৃষ্টি হলো ইহসান বা নিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ্ তা’আলা যে সব কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সাবধান করেছেন এবং শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন, তোমরা সে সব কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। আর তোমাদের মধ্যে যেন আল্লাহর ভীতি থাকে যা শাস্তিস্বরূপ নয়। তোমরা লোক-দেখানো ও শুনানো মনোভাব ব্যতীত আমল করবে, কারণ যে লোক-দেখানো বা শুনানোর জন্য আমল করবে আল্লাহর জন্য নয়-আল্লাহ তা’আলা তাকে তার সে আমলের দিকে সোপর্দ করবে আর যে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমল করবে আল্লাহ্ তা’আলা তার অভিভাবক হবেন এবং তার নিয়তের জন্য তাকে অতিরিক্ত মর্যাদা দান করবেন। আল্লাহর আযাবকে ভয় কর, কারণ তিনি তোমাদের বেহুদা সৃষ্টি করেননি এবং তোমাদের আমলসমূহ অনর্থক। ছেড়ে দিবেন না। তিনি তোমাদের আমল, নিদর্শন, তোমাদের সব কিছুই নির্ধারিত করেছেন, তোমাদের আয়ুষ্কাল লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তাই পার্থিব জীবন যেন তোমাদের প্ররোচিত না করে, কারণ সে ছলনাকারী প্রবঞ্চক। আর প্ররোচিত হয় সে-ই যে তার ধোঁকায় পড়ে। আর আখিরাতই হলো স্থায়ী আবাস।
পৃষ্ঠা:৩০
পরিচিতিঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা)
স্বরণশক্তির কিংবদন্তী, হাদীসে রাসূলের একনিষ্ঠ সাধক হযরত আবূ হুরায়রা (রা)। যেসব সাহাবী (রা)-এর অক্লান্ত সাধনা ও প্রয়াসে হাদীসে রাসূল (সা) আমাদের মধ্যে আজও সংরক্ষিত, তাঁদের মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা (রা) অন্যতম। যতদিন হাদীস শরীফের চর্চা থাকবে ততদিন এ মহামনীষী সাহাবীর নামের চর্চাও থাকবে। ধন্য তাঁর কীর্তি, অমর তাঁর জীবন সাধনা। তিনি দাওস গোত্রের লোক, এ গোত্রের আবাস ছিল ইয়ামনে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল ‘আবদ-এ-শামস’ কিংবা ‘আবদ-এ-আমর’-যার অর্থ সূর্যের বান্দা কিংবা ‘আমর-এর বান্দা। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় আবদুল্লাহ অথবা আবদুর রহমান। যার মানে, আল্লাহর বান্দা বা রাহমানের বান্দা। তাঁর উপনাম আবু হুরায়রা বা বিড়ালের বাপ। এ উপনামেই তিনি মুসলিম জাহানে পরিচিত। বিড়ালের বাপ বা বিড়ালওয়ালা উপনামে খ্যাত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, আমার একটি ছোট বিড়াল ছিল। আমি ছাগল চরাতে গেলে বিড়ালটিও সাথে নিয়ে যেতাম। বিড়ালের সাথে আমার এ ঘনিষ্ঠতা দেখে লোকে আমাকে আবু হুরায়রা নামে ডাকতে শুরু করেন এবং ক্রমশ আমার এ উপনামটিই প্রসিদ্ধি লাভ করতে। থাকে। খয়বরে যখন নবী করীম (সা) যুদ্ধরত, তখন আবু হুরায়রা সেখানে তাঁর কাছে হাযির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় তাঁর মাতা ও তাঁর গোত্রের অনেক লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। এরপর থেকে তিনি সর্বদা নবী করীম (সা)-এর খিদমতে ও সাহচর্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং হাদীসসমূহ কণ্ঠস্থ করার অক্লান্ত সাধনায় দিনরাত ব্যস্ত থাকেন। তাঁর থেকে যত সংখ্যক হাদীস বর্ণিত আছে; এককভাবে অন্য কোন সাহাবী থেকে তত হাদীস বর্ণিত হয়নি। ইলমে হাদীসের জন্য হযরত আবু হুরায়রা (রা)-কে অনেক ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজে বলেন, আমাকে অনেক ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি কোন কোন সময় নবী করীম (সা)-এর মিম্বর শরীফ ও উদ্বুল মুমিনীন সিদ্দীকা আয়েশা (রা)-এর হুজরার মধ্যবর্তী স্থানটুকু অতিক্রম করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়তাম। কেউ কেউ আমাকে রোগী মনে করে তাঁর পা দিয়ে আমার গর্দান চেপে রাখতো। অথচ আমার কোন রোগ ছিল না, আমার ছিল ক্ষুধা।
পৃষ্ঠা:৩১
হাদীসে রাসূল কণ্ঠস্থ করা এবং নবী করীম (সা)-এর সাহচর্য লাভের উদ্দেশ্যে তিনি যে কোন প্রকার এ্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতেন। ভাল আহার, উত্তম পোশাক ও আবাসের প্রতি তাঁর কোন আকর্ষণ ছিল না। তাঁর লক্ষ্য ছিল হাদীস সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং রাসূলে করীম (সা)-এর সাহচর্য। ইলমে হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য অর্জনের অনেক কারণ রয়েছে। ১. জ্ঞান পিপাসা, ২. অশেষ ত্যাগ স্বীকার, ৩. নবী করীম (সা)-এর চার বছরের সাহচর্যতা, ৪. স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য নবী করীম (সা)-এর বিশেষ দু’আ ইত্যাদি। তিনি নিজেও আল্লাহর কাছে দু’আ করতেন। ‘ইয়া আল্লাহ্। আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন, আমাকে আপনার ও আপনার রাসূলের মুহাব্বত দান করুন। ‘ইয়া আল্লাহং আপনি আমাকে এরূপ জ্ঞান দান করুন যা আমি কখনো ভুলে না যাই। পার্থিব সম্পর্কে মুক্ত থেকে জ্ঞান সাধনায় সর্বক্ষণ নিজেকে নিয়োজিত রাখা সকলের পক্ষে সম্ভব ছিল না, যা হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। তিনি নিজে বলেন, মুহাজির ও আনসারী সাহাবীগণের কারো ব্যবসায়- বাণিজ্যে, কারো ক্ষেত ফসলের কাজ ছিল। আমার সে সবের কিছু ছিল না, কাজেই আমার মত হাদীস সংরক্ষণ তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, যে হাদীস একবার আমার শ্রুতিগোচর হতো তা আমি আর কখনো ভুলতাম না। একবার মরওয়ান তাঁর শাহী আসনের নিচে তাঁর লেখককে লুকিয়ে রেখে হযরত আবু হুরায়রা (রা)-কে তাঁর কাছে তশরীফ আনতে অনুরোধ জানালেন, তিনি আসার পর তাঁকে হাদীস বর্ণনা করতে বলা হলো, আবূ হুরায়রা যখন বর্ণনা আরম্ভ করলেন তখন শাহী কাতেব তা হুবহু লিপিবদ্ধ করতে লাগল। লিপিবদ্ধ হাদীসগুলো যত্নসহকারে সংরক্ষিত রাখা হলো, এরপর একবছর অতিবাহিত হলে পুনরায় যখন হযরত আবু হুরায়রাকে সে সব হাদীস বর্ণনার অনুরোধ জানানো হলো, তখন তিনি হুবহু সব হাদীস পুনরায় বর্ণনা করলেন। এরূপই তাঁর স্মরণ শক্তি। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন উমর। (রা) একজন শীর্ষস্থানীয় হাদীস বর্ণনাকরী সাহাবী। তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা) সম্পর্কে বলেন, আবু হুরায়রা আমাদের মধ্যে একজন অন্যতম হাদীস বিশারদ। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা) সে ভাগ্যবান সাহাবী, রাসূলে করীম (সা) হিজরত করে মদীনা শরীফ পৌঁছার পর যাঁর ঘরে অবস্থান করেছিলেন। তিনি স্বয়ং আবূ হুরায়রা (রা)-এর কাছে হাদীস জিজ্ঞাসা করতেন এবং বলতেন, আমি নিজের স্মরণ শক্তির উপর ততটুকু নির্ভর করতে পারি না, যতটুকু নির্ভর করতে পারি আনু হুরায়রার স্মরণ শক্তির উপর। তিনি আরো বলেন, আমি নিজে হাদীস বর্ণনা করার চেয়ে আবু হুরায়রা থেকে হাদীস বর্ণনা করা অধিক পছন্দ করি।
পৃষ্ঠা:৩২
নবী করীম (সা) আবূ হুরায়রা (রা)-কে ইলমের ভাণ্ডার বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাফেজ যাহাবী (র)ও বলেন, আবু হুরায়রা হলেন জ্ঞানভাণ্ডার, ফতওয়া দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের অন্যতম। হাফেজ ইব্ন হাজর (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) তাঁর সমসাময়িক হাদীস বর্ণনাকারিগণের মধ্যে অন্যতম হাফেজ-এ-হাদীস ছিলেন। সাহাবীগণের মধ্যে তাঁর মত এত অধিক সংখ্যক হাদীস আর কেউ সংগ্রহ করতে পারেন নি। ইমাম শাফেয়ী (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) তাঁর যুগে হাফেজ-এ-হাদীসগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ছিলেন।
আহলে বায়তে রাসূল (সা)-এর প্রতি আবু হুরায়রা (রা)-এর মুহাব্বত
হযরত আবু হুরায়রা (রা) যেমন নবী করীম (সা)-কে অধিক ভালবাসতেন তেমনি নবী করীম (সা)-এর বংশধরগণের প্রতিও তাঁর ছিল অগাধ ভালবাসা। একবার তিনি সায়্যিদুনা হযরত হাসান (রা)-এর কাছে গিয়ে বললেন, আপনার পিঠের উপরের যে স্থানে নবী করীম (সা) চুম্বন করেছিলেন আমার বাসনা যে, আমি সে স্থানে চুমু খাই। হযরত হাসান (রা) তাঁর বাসনা পূর্ণ করার জন্য সে স্থান থেকে কাপড় সরিয়ে নিলেন। আর হযরত আবূ হুরায়রা (রা) তাঁর বাসনা পূর্ণ করলেন। হযরত হাসান (রা)-এর ওফাত হলে আবু হুরায়রা (রা) কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, হে লোক সকল। রাসুলুল্লাহ (সা)-এর প্রিয়জন আজ এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। তাই তোমরা যত ইচ্ছা কেঁদে নাও। হক কথা বলা হযরত আবু হুরায়রা (রা) নিঃসংকোচে হক কথা বলতেন। একবার মদীনার আমীর মারওয়ানের বাসভবনে ঘরের দেয়ালে প্রাণীর চিত্র টাঙ্গানো দেখে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক সীমালংঘনকারী আর কে হবে? যে আমার সৃষ্ট জীবের অনুরূপ সৃষ্টি করতে চায়, এরূপ সৃষ্টি করতে পারবে বলে যদি কেউ মনে করে তবে সে যেন একটি অণু সৃষ্টি করে, সে যেন একটি যব অথবা যে কোন প্রকার একটি শস্য তৈরি করে। একবার এক মহিলার জামা থেকে সুগন্ধ ছড়াচ্ছিল। হযরত আবু হুরায়রা (রা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি মসজিদ থেকে এলেন? মহিলা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, মসজিদের গমনের উদ্দেশ্যেই কি সুগন্ধি ব্যবহার করেছিলেন? মহিলা বললেন, হ্যাঁ। আবূ হুরায়রা (রা) তখন বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন মহিলা যদি মসজিদে গমনের উদ্দেশ্যে সুগন্ধি ব্যবহার করে তবে তা ধুয়েমুছে না ফেলা পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না।
পৃষ্ঠা:৩৩
রাজনৈতিক জীবন
প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রা)-এর সময় তিনি কোন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেননি। এ সময় তিনি হাদীস প্রচারে সময় ব্যয় করেন। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রা) তাঁকে বাহরাইন-এর প্রশাসক নিযুক্ত করেন। তৃতীয় খলীফা হযরত ‘উসমান (রা)-এর খিলাফতকালে তাঁর কোন রাজনৈতিক তৎপরতা ছিল না, তবে তিনি তৃতীয় খলীফার সংকটকালে তাঁকে সহযোগিতা প্রদান করেন। ইবাদত-বন্দেগী তিনি রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত ও হাদীস অধ্যয়ন করতেন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও রাত জাগাতে উদ্বুদ্ধ করতেন। রাতকে তিন ভাগে ভাগ করে পালাক্রমে একে অপরকে ইবাদত করতে জাগিয়ে দিতেন। তিনি নিয়মিত চাশতের সালাত ও আইয়্যামে বীযের সওম পালন করতেন। ওফাত হিজরী ৫৭ সাল। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পবিত্র মদীনার আমীরসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁকে দেখতে আসতেন। অসুস্থতার সময় আখিরাতের সফরের কথা ভেবে কাঁদতেন এবং বলতেন, আমার এ কাঁদা দুনিয়ার মায়ার কারণে নয়, আমি কাঁদছি আখিরাতের সফরের সীমাহীনতা এবং সম্বলহীন অবস্থায় সফরের কথা চিন্তা করে। জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে আমার অবস্থিতি। আমি জানি না, এ স্থান থেকে কোথায় আমাকে যেতে হয়। হযরত আবু সালমা তাঁকে দেখতে এলে তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর আরোগ্যের জন্য দু’আ করলেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) তা শুনে বললেন, ইয়া আল্লাহ্। আমাকে দুনিয়াতে আর রেখো না। তারপর বললেন, আবু সালমা। সেদিন খুব দূরে নয়, যেদিন মানুষ মৃত্যুকে স্বর্ণভাণ্ডারের চাইতেও অধিক মূল্যবান মনে করবে। তুমি যদি তখন জীবিত থাক তবে দেখতে পাবে, কোন এক লোক একটি কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় বলছে, হায়। কবরটিতে যদি আমার স্থান হতো। ৭৮ বছর বয়সে ৫৭ হিজরীতে তাঁর ওফাত হয়। জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি বললেন, আরবের প্রাচীন প্রথামত আমার কবরের উপর যেন তাঁবু টাঙ্গানো না হয় এবং আমার দাফন-কাফন যেন তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করা হয়। কারণ আমি যদি পুণ্যবান হই তাহলে অনতিবিলম্বে আমার প্রতিপালকের সাক্ষাত লাভে সাফল্য লাভ করবো। আর পাপী হলে অতিসত্বর তোমাদের কাঁধের উপর থেকে। বোঝা হাল্কা করে নিবে।
পৃষ্ঠা:৩৪
‘রিসালা’ গ্রন্থের সংকলকের পরিচিতি
‘রিসালা’ গ্রন্থের সংকলকের নাম: ইমাম আবুল ফবল আবদুর রহমান ইবন আবু বকর (কামালুদ্দীন) ইবন মুহাম্মদ জালালুদ্দীন আত্ তোলুনী। আল খুযায়রী আশ শাফিয়ী। তিনি আল্লামা আবুল ফসল আবদুর রহমান সুষ্কৃতী (র) নামে সমধিক পরিচিত। জন্মঃ রজব, ৮৪৯ হিজরী, ৩রা অক্টোবর, ১৪৪৫ ইংরেজী, জন্মস্থান: কায়রো। ওফাত: ১৮ জুমাদাল উলা, ৯১১ হিজরী, ১৭ অক্টোবর, ১৫০৫ ইংরেজী। স্থান: আর রওযা। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থের রচয়িতা। ন’ পুরুষ পূর্ব থেকে তাঁর পূর্বপুরুষগণ মিসরের ‘উস ইউথ’ নামক নগরে বসবাস আরম্ভ করেন। তাঁর পিতা কায়রোতে অবস্থিত ‘আশ শায়খুনিয়া’ মাদ্রাসায় ফিক্হ্ন বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বয়স যখন মাত্র ৫/৬ বছর তখন তাঁর পিতা ইন্তিকাল করেন। তাঁর পিতার এক সূফী বন্ধু তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁকে নিজ সন্তানের মত লালন-পালন করেন। আট বছর বয়সে তিনি কালামে পাক হেফজ করেন। তাঁর স্মরণ শক্তি ছিল অতি তীক্ষ্ণ। এরপর আল্লামা নওবী (র) রচিত ‘উমদাতুল আহকাম’ ও ইবন মালিক (র) রচিত ‘আলফিয়া’ এবং ‘মিনহাজ’ গ্রন্থাদি মুখস্থ করে নেন এবং তৎকালীন প্রখ্যাত ওস্তাদগণকে শুনিয়ে তাদের থেকে ইযাযত বা অনুমতি হাসিল করেন। তিনি মিসরের তৎকালীন প্রখ্যাত ওস্তাদ ও শায়খগণের কাছ থেকে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, আরবী ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, দর্শন, অলংকার শাস্ত্র, চিকিৎসা শাস্ত্র প্রভৃতি জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় শিক্ষা ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। এরপর ৮৬৯ হিজরীতে তিনি পবিত্র হজ্জ আদায় করেন। হজ্জের সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কায়রোতে ইসলামী আইন বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর শায়খুনিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপকের পদ অলংকৃত করেন, যেখানে পূর্বে তাঁর পিতা অধ্যাপনা করতেন। ৮৯১ হিজরীতে এর চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মাদ্রাসা ‘আল বায়বারেসিয়া’তে শিক্ষক নিযুক্ত হন। ৯০৬ হিজরীতে তিনি এ পদ থেকে অব্যাহতি লাভ করেন। তারপর জাযীরা-এ-নীলের ‘আর রওযা’ নামক স্থানে নির্জন বাস আরম্ভ করেন। সেখানে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন এবং সেখানেই তাঁর ওফাত হয়। তিনি ১৭ বছর বয়স থেকেই কিতাবাদি রচনার কাজ আরম্ভ করেন। হাদীস, তাফসীর,
পৃষ্ঠা:৩৫
ফিকহ, আরবী ভাষা সাহিত্য, অলংকার শাস্ত্র, সীরাতুন্নবী ইতিহাস, প্রভৃতি অনেক বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাদি রচনা করেন। আল্লামা সুতী রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ছয়শতের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর হস্তলিখিত অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। পাশ্চাত্য গবেষকগণও তাঁর রচিত গ্রন্থাদি নিয়ে গবেষণা করেছেন। ইমাম সুয়ূতী রচিত গ্রন্থাদি বহু দেশে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। তন্মধ্যে কায়রো, ইস্তাম্বুল, হায়দরাবাদ, বোম্বে, লাক্ষ্ণৌ, কলিকাতা, দিল্লী, ফাম, লীডন, দেমাশক, নিউইয়র্ক প্রভৃতি শহর উল্লেখযোগ্য। আল্লামা সুয়ূতী রচিত ‘তাফসীরে জালালাইন’ যার অর্ধেক তিনি রচনা করেছেন,বহুদিন থেকে আমাদের এ অঞ্চলের মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাঁর তাফসীর গ্রন্থ ‘আদদুররুল মানসূর’, শানে নুযুল সম্পর্কিত কিতাব ‘লুবাবুন নুকুল’ এবং উসুলে তাফসীরে তাঁর ‘আল ইতকান’ গ্রন্থ অনেক খ্যাতি লাভ করেছে। এছাড়া ইমে হাদীসে ‘জামউল জাওয়ামে’, ‘আল লাআলিউল মাসনু’আ ফিল আহাদিসিল মাওযু’আ’, মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)-এর ফিকহ গ্রন্থ ‘তানভিরুল হাওয়ালেক ফী শরহে মুয়াত্তা মালিক’, রিজাল শাস্ত্রে ‘ইসআফুল মুয়াত্তা বি রিজালিল মুয়াত্তা’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ। তাছাড়া ‘আল বুদুরুস সাফিরা ফী উমূরিল আখিরাত’, ‘হুসনুল মুহামিয়া ফী আখবারে মিসর ওয়াল কাহিরা’, ‘নাজমুল ‘ইকইয়ান ফী আ’ইয়ানিল আ’ইয়ান’, ‘আনমূযাজুল লাবীব ফী খাসায়িসিল হাবীব’, ‘আল আয়াতুল কুবরা ফী শরহি কিস্স্সাতিল ইসরা’, প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা সম্ভার। ‘রিসালাতুল ইমামিস সুষ্কৃতী’ তার রচিত কয়েকটি রিসালার সমষ্টি, তন্মধ্যে ওসীয়তুন নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম লি ইবনে ‘আগ্নিহি ‘আলী ইবন আবি তালিব ও ওসীয়জুন নবী (সা) লি আবী হুরায়রা’ও অন্তর্ভুক্ত। এ দু’খানা ওসীয়তনামা বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য বাংলা ভাষায় এই প্রথম অনুবাদ করা হলো। আল্লামা সুয়ূতী (র) তাঁর রচিত গ্রন্থাদির মাধ্যমে অসংখ্য পাঠককে হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি তাঁর গ্রন্থাদির মাধ্যমে অমর হয়ে রয়েছেন।