ওয়ান মিনিট ম্যানেজার
পৃ্ষ্ঠা ১ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০১
দ্য সার্চ: পৃথিবীটা বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। তুখোড় প্রতিভাবান এক তরুণ এই সময়ে খোঁজ করছিল এমন কোনো ম্যানেজারের, যে আজকের পরিবর্তনশীল সময়ে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন। এমন কাউকে সে খুঁজছে, যিনি অধীনস্তদের চাকরির সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনে সমন্বয় আনতে উৎসাহিত করেন। তাদের দুটো জীবনই যেন অর্থপূর্ণ আর উপভোগ্য হয়ে ওঠে সেদিকে নজর রাখেন। এমন কারো সঙ্গেই এই প্রতিভাবান তরুণটি কাজ করতে চায়, ভবিষ্যতে হয়ে উঠতে চায় এমনই একজন নেতা। অনেকগুলো বছর ধরে এই খোঁজ চালিয়ে গেল সে, খুঁজল পৃথিবীর নানা প্রান্তে। ছোট ছোট শহরে তো বটেই, পরাশক্তি হিসেবে চিহ্নিত কয়েকটি দেশের রাজধানী পর্যন্ত বাদ রইল না। অসংখ্য ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলল তরুণটি, দ্রুত পাল্টে যেতে থাকা পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এদের প্রত্যেকেই সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ম্যানেজারদের মধ্যে ছিলেন ব্যবস্থাপক, উদ্যোক্তা, সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট আর ফাউন্ডেশন ডিরেক্টরবৃন্দ, বড় বড় দোকানের, রেস্তোরাঁর, ব্যাংকের ম্যানেজাররাও বাদ গেলেন না, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। যত ধরনের অফিস আছে, কোনোটাতেই যাওয়া বাকি রাখল না তরুণ, বড় হোক আর ছোট, বিলাসবহুল হোক কিংবা সংকীর্ণ, জানালা থাকুক আর না থাকুক। সারা বিশ্বে কীভাবে মানুষকে ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে সেই দৃশ্য ধীরে ধীরে তার সামনে উন্মোচিত হলো। অধিকাংশ সময়ই, এই দৃশ্যটা তাকে মোটেও সন্তুষ্ট করতে পারল না।
পৃষ্ঠা:০২
তরুণ খেয়াল করল, অনেক ‘কড়া’ ম্যানেজার রয়েছেন, এদের প্রতিষ্ঠান প্রতিবারই জিতে যাচ্ছে, তবে হেরে যাচ্ছে সেখানে কাজ করা কর্মীগণ। কেউ কেউ মনে করেন এরাই ম্যানেজার হিসেবে শ্রেষ্ঠ, তবে বেশিরভাগ মানুষ এমন ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন। এই ‘কড়া’ লোকগুলোর অফিসে গিয়ে তরুণটি প্রশ্ন রেখেছিল, “নিজেকে কেমন ধারার ম্যানেজার বলে মনে করেন?” প্রায় একই উত্তর এলো তাদের থেকে, “আমি একজন বটম- লাইন ম্যানেজার, সব সিদ্ধান্ত আমি-ই নিয়ে থাকি।” তরুণটির কানে কিছু শব্দ বারবার এলো, ‘অদম্য।’ ‘বাস্তববাদী।’ “মুনাফার দিকে মনোযোগ রাখি সবার আগে।” ওরা জানাল, সারা জীবন ধরে এভাবেই ম্যানেজ করে আসছে তারা। পরিবর্তনের কোনো দরকার দেখেনি। তরুণটির সঙ্গে দেখা হলো অনেক ‘মিশুক’ ম্যানেজারের সঙ্গে, এদের সঙ্গে কাজ করা কর্মীরা সব সময়ই জিতে যায়, তবে হেরে যায় তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ কেউ এদের দারুণ ম্যানেজার মনে করেন, তবে অনেকেই জানালেন তাঁরা এই মতামতের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। একই প্রশ্ন এই মিশুক ম্যানেজারদের করা হলে তারা উত্তর দিল, “আমি সিদ্ধান্ত দিয়ে বসে না থেকে বাকিদের সঙ্গে অংশ নিতে ভালোবাসি।” এখানে শোনা গেল “পাশে থাকি।” “বিবেচনা করি।” “মানবতার পক্ষে।” ইত্যাদি শব্দমালা। এরাও জানালেন, আজীবন এমন ভাবেই ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তাঁরা। পরিবর্তনের কোনো কারণই দেখেন না। বলার সময় তাদের গলায় গর্বের ছাপটা শোনা গেল স্পষ্ট। তরুণ বুঝতে পারল এরা মানুষ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তারপরও, তার মন অশান্তই রইল। তরুণটি খেয়াল করল, সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সব ম্যানেজারই শ্রেফ দুভাবে কাজটা করে যাচ্ছেন। হয় তাঁরা মনোযোগের
পৃষ্ঠা:০৩
পুরোটাই দিচ্ছেন ফলাফলে, নয়তো কর্মীদের স্বার্থের দিকে। এদিকে ফলাফল-নির্ভর ম্যানেজারদের অনেকেই ‘স্বৈরাচারী’ বলে চিহ্নিত করছেন, আবার কর্মীদের প্রতি কোমল স্বভাবের ম্যানেজারদের কেউ কেউ ডাকছেন ‘গণতান্ত্রিক’ বলেন। সে খেয়াল করল, এই কড়া স্বৈরাচারী আর কোমল গণতান্ত্রিক ম্যানেজারদের দুই শ্রেণিই অংশবিশেষে কার্যকর। ‘এ যেন অনেকটা আধ-ম্যানেজার হওয়ার মতো একটা ব্যাপার।’ তরুণ ভাবল। বাড়ি ফিরল ক্লান্তি আর হতাশা নিয়ে। তার মনে হলো, অনেক অনেক দিন আগেই উচিত ছিল এই খোঁজ ছেড়ে দেওয়া। তবে দীর্ঘদিনের খোঁজাখুঁজির কল্যাণে একটা বাড়তি সুবিধা প্রতিভান সেই তরুণ পেয়েছিল। ও জানত, ঠিক কোন ধরনের ম্যানেজার সে খুঁজছে। ‘এমন কাউকে দরকার যিনি নিজের সঙ্গে অন্য কর্মীদের ব্যবস্থাপনা করেন এমনভাবে যেন কর্মীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানও লাভবান হতে পারে।’ সে ভাবল, ‘এই পরিবর্তনের জগতে এমন ম্যানেজাররাই তো সবচেয়ে কার্যকর হওয়ার কথা।’ কার্যকর এই ম্যানেজারের জন্য আবারও খোঁজ শুরু হলো তার। মাত্র কয়েকজনকে পাওয়া গেল এবার, তবে এদের কেউ তরুণকে নিজেদের সফলতার রহস্য ভেঙে বলতে রাজি হলেন না। তরুণ হতাশ হলো, আরও একবার। ঠিক যার খোঁজ করছিল তা হয়তো সে কখনোই পাবে না। এমন যখন পরিস্থিতি, জনৈক ম্যানেজারের নামে দারুণ সব তথ্য শুনতে পেল সে। আরও ভালো ব্যাপারটা হলো, এই ম্যানেজার কাছাকাছি এক শহরে থাকেন। তরুণ শুনল, এই ম্যানেজারের অধীনে মানুষ কাজ করতে ভালোবাসে! দিন শেষে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ওরা সবাই সফলতার দেখাও পায়। এই কানাঘুষো কি আসলেই সত্য? যদি তেমনটা হয়ে থাকে, তবুও কি এই ভদ্রলোক তার সঙ্গে নিজের সফলতার রহস্য শেয়ার
পৃষ্ঠা:০৪
করবেন? কৌতূহল থেকে বিশেষ এই ম্যানেজারের অ্যাসিস্ট্যান্টকে ফোন করল তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্টটি ম্যানেজারের সঙ্গে তাকে কথা বলিয়ে দিল। তরুণ প্রতিভাটি জানতে চাইল, কোন সময় দেখা করতে পারলে ম্যানেজার ভদ্রলোকের সুবিধে হয়? ম্যানেজার বললেন, “এই সপ্তাহের যে কোনো সপ্তাহে চলে আসতে পারেন। তবে বুধবার সকালে আসবেন না। আপনার সুবিধেমতো সময় ঠিক করে নিন।” ছেলেটি এবার বিভ্রান্ত হয়ে গেল। কোন ধরনের ম্যানেজারের হাতে এত অবসর সময় থাকে? বিষয়টা একই সঙ্গে তাকে মুগ্ধও করল অবশ্য। ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে তখনই বেরিয়ে পড়ল সে।
পৃষ্ঠা:০৫
দ্য নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার: ম্যানেজারের অফিসে পৌছে তরুণ খেয়াল করল, ভদ্রলোক জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে বসার জন্য অনুরোধ জানালেন তিনি। যোগ করলেন, “বলুন এবার, আপনার জন্য কী করতে পারি?” “আপনার ব্যাপারে চমৎকার সব কথা শুনেছি, স্যার। কীভাবে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বটা সামলান তা নিয়ে আমি আরও জানতে চাই।” “বেশ, শুনুন তবে। আমরা আসলে পরীক্ষিত পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে নতুন কিছু পন্থা যোগ করে নিয়েছি, এছাড়া আধুনিক দুনিয়ায় তাল মেলানো তো কঠিনই। সে যাকগে, ও ব্যাপারে আরও পরে কথা বলব আমরা, কেমন? একেবারে মৌলিক বিষয়গুলো থেকে শুরু করা যাক। “আমরা একসময় টপ-ডাউন ম্যানেজড কোম্পানি ছিলাম। আগে এমনটা যে কাজ করেনি, তা নয়- তবে আজকের দিনে এমন স্ট্রাকচার অনেক মন্থরগতির। কাজ করতে মানুষকে আলাদা করে উৎসাহিত করে না এই পদ্ধতি, থমকে দেয় আবিষ্কার। এদিকে ক্রেতাদের দেখুন, তারা চায় দ্রুত সেবা, আগের চেয়েও ভালো পণ্য। তাহলে সবাইকে নিজেদের প্রতিভাটুকুর মাধ্যমে অবদান রাখতে হবে, প্রতিষ্ঠানকে সফল করতে হলে এর বিকল্প নেই। শুধু এক এক্সিকিউটিভ অফিসেই নয়, গোটা . প্রতিষ্ঠানজুড়েই মস্তিষ্ক খাটানোর অভ্যাস দেখতে পাবেন আপনি এখন।” “গতিময়তাই যেহেতু আজকের সফলতা-জগতের মূলমন্ত্র, সঙ্গে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজনটাও চড়া। আগের মতো নির্দেশনা দাও- নিয়ন্ত্রণ করো ধারার ম্যানেজমেন্ট এখন আর তেমন কার্যকর নয়।” “সঙ্গে থেকে নেতৃত্বটা কীভাবে দেন আপনি?” প্রশ্ন করল তরুণ।
পৃষ্ঠা:০৬
“আমার টিমের সঙ্গে প্রতি বুধবার সকালে দেখা করি, এজন্যই আপনাকে আমি ঐ সময়টা দিতে পারিনি। এই মিটিংগুলোয় আমার দলের সবার রিভিউ শুনি, বিশ্লেষণ করি গত সপ্তাহে তারা কেমনটা অর্জন করেছে, কোন সব সমস্যার মুখে পড়েছে, কোন কোন অর্জন এখনও বাকি থেকে গেছে, এই অর্জনগুলোর জন্য তাদের বর্তমান পরিকল্পনা আর কর্মপদ্ধতি কী।” “এই সিদ্ধান্তগুলো তাহলে আপনি এবং আপনার টিম, দুপক্ষই নিয়ে থাকেন?” “অবশ্যই। এই মিটিংগুলো ডাকার উদ্দেশ্যই তো সবাইকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ানো যে তারা এর পর কী করবে।” “তবে তো আপনি একজন সহায়তাপ্রেমী ম্যানেজার, নন কি?” “ঠিক তাও নয়, ওদের কাজটা সহজ করে দেওয়ার চেষ্টা করি কেবল। তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে তার মধ্যে গিয়ে অংশ নেই না কখনো।” “তাহলে মিটিং ডাকার উদ্দেশ্যটা কি আপনার?” “আপনাকে মাত্রই তো বললাম সেটা।” তরুণ ছেলেটি এবার একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। এমন একটা ভুল করে ফেলার জন্য আক্ষেপ হলো তার। ম্যানেজার ভদ্রলোক কথা বলা থামালেন। বড় করে শ্বাস নিলেন তিনি, “আমরা এখানে ফলাফল আনার চেষ্টা করি। সবার প্রতিভাকে একীভূত করে বাড়ানোর চেষ্টা করি উৎপাদন।” “আচ্ছা, তাহলে আপনি মানুষ নয়, ফলাফলটার দিকেই মূল মনোযোগ দেন।” উঠে দাঁড়ালেন ম্যানেজার, পায়চারি শুরু করলেন। “দ্রুত সফলতা পাওয়ার জন্য ম্যানেজারকে অবশ্যই অধীনস্ত মানুষ আর ফলাফল, দুইয়ের দিকে সমান মনোযোগ দিতে হবে। মানুষগুলো কাজ না করলে ফলাফলটা আমরা কেমন করে পাব, বলুন? সেজন্য আমি আমার কর্মীদের ব্যাপারে যেমন ভাবি, তেমন ভাবি ফলাফল নিয়েও। কারণ, একটা ছাড়া আরেকটা সম্ভব নয়।”
পৃষ্ঠা:০৭
“এটা একবার দেখে যান,” নিজের কম্পিউটারের দিকে ঈঙ্গিত করলেন তিনি, “আমার কম্পিউটারের স্ক্রিন সেভার হিসেবে এটা সেট করে রেখেছি। বাস্তববাদী এই সত্য কথাটা যেন আমাকে এটা বারবার মনে করিয়ে দিতে পারে, তাই।”নিজেদের ব্যাপারে ভালো কিছু অনুভব করলেই কেবল একজন ভালো ফলাফল আনায় অবদান রাখতে পারে। কমবয়সি ছেলেটা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখছে, তার উদ্দেশে ম্যানেজারটি বললেন, “নিজেই চিন্তা করে দেখুন। আপনি কখন নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করেন? যখন আপনি নিজের কর্মক্ষমতা নিয়ে ভালো কিছু অনুভব করছেন তখন? নাকি অন্য কোনো পরিস্থিতে?” ব্যাপারটা বুঝতে পারল এবার তরুণ ছেলেটি, “যখন নিজের ব্যাপারে ভালো অনুভব করি, তখন, অবশ্যই।” “সেটাই। শুধু আপনি নন, মানুষ মাত্রই এমনটা অনুভব করে থাকেন।” “তাহলে,” তরুণ ছেলেটি ধরার চেষ্টা করছে এখনও, “অন্যদের ভালো কিছু অনুভব করানো উৎপাদনশীলতার পক্ষে কাজ করে?” “জি। সেই সঙ্গে মনে রাখবেন, উৎপাদনশীলতা কিন্তু স্রেফ কত বেশি কাজ করা হলো তা নয়, বরং কতটা দক্ষতার সাথে করা হলো, তাও এর সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে।” জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি, “এটা লক্ষ করুন।” তরুণ প্রতিভাবান ছেলেটি জানালার কাছে পৌঁছে গেলে তিনি নিচের এক রেস্তোরাঁ দেখিয়ে দিলেন, “দেখুন, এই রেস্তোরাঁয় কতজন খেতে ঢুকছে?” তরুণটি দেখল, মানুষ রেস্তোরাঁর বাইরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। “রেস্তোরাঁ খোলার জন্য খুব চমৎকার এক অবস্থান বলে ধারণা করছি।” বলল সে।
পৃষ্ঠা:০৮
ম্যানেজারটি হাসলেন, “সেটাই যদি ঘটনা হয়, তাহলে মাত্র দুই দরজা পর যে আরেকটা রেস্তোরাঁ আছে, ওটার দরজায় মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়াচ্ছে না কেন?” “কারণ, প্রথমটায় খাবার আর সেবার মান ভালো?” “হ্যাঁ, এটা খুব সহজে বোঝা যায়। মানুষকে মানসম্মত পণ্য আর সেবা না দিলে ব্যবসায় আপনি কখনোই বেশিদিন টিকতে পারবেন না। “তবে চোখের সামনে থাকা জিনিসটা ধরাও অনেক সময় কঠিন মনে হয়। এসব সফল ফলাফল আনার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হলো মানুষকে নিয়ে কাজ করা। ঐ রেস্তোরাঁর ভেতরে কাজ করা মানুষগুলোই এই সফলতার জন্ম দিয়েছে।” কৌতূহল আরও বেড়ে গেল তরুণটির। দুজনই বসে পড়ার পর জানতে চাইল, “আপনি তো এরই মধ্যে বলেছেন, সহায়তাপ্রেমী ম্যানেজার আপনি নন। তাহলে নিজেকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?” “ওরা আমাকে ডাকে নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার।” এখন তরুণের চেহারায় পরিষ্কার বিস্ময় ফুটে উঠেছে, “কী?” ভদ্রলোক এবার হেসে ফেললেন, “আসলে, নতুন নতুন পথে অল্প সময়ে দারুণ কিছু ফলাফল আনার জন্য আমরা কাজ করছি তো, তাই।” অসংখ্য ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললেও এভাবে কাউকে কথা বলতে সে আগে দেখেনি। এই লোক দারুণ ফলাফল আনতে পারে, অথচ সেজন্য বিশেষ সময় দেয় না? ভাবভঙ্গিতেই বাকিটা বুঝে নিলেন তিনি, “ঠিক বিশ্বাস করতে পারলেন না তো আমার কথা?” “স্বীকার করতেই হবে, এমনটা কল্পনা করাও আমার জন্য কঠিন।” আবার হাসলেন তিনি, “শুনুন, আমি কোন ধরনের ম্যানেজার তা যদি সত্যিই জানতে চান, তাহলে আমার টিমের দুই-একজনের সঙ্গে কথা বলছেন না কেন?” কম্পিউটারের দিকে ঘুরে একটা পাতা প্রিন্ট করে বের করে আনলেন তিনি, তালিকা দেখা গেল একটা। “এখানে আছে নাম, পজিশন আর ফোন নাম্বার, এই ছয়জন আমার কাছে রিপোর্ট করে।”
পৃষ্ঠা:০৯
“কোনজনের সঙ্গে আমি কথা বলব তাহলে।” “আপনার সিদ্ধান্ত। যে কোনো একটা নাম পছন্দ করতে পারেন, যার সাথে ইচ্ছে কথা বলেন। চাইলে সবার সঙ্গেও বলতে পারেন।” “মানে… আমি বলতে চাইছিলাম, কাকে দিয়ে শুরু করলে ভালো হবে?” “আগে যেমনটা বলেছিলাম, আমি অন্য কারো সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করি না।” দৃঢ়কণ্ঠে বললেন ম্যানেজার, “নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিন।” দীর্ঘ একটা সময়ের জন্য চুপ হয়ে গেলেন তিনি। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে সাক্ষাতপ্রার্থী যুবককে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন, “আপনি যে নেতৃত্ব দেওয়া কিংবা কর্মীদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবছেন, আমি এটাকে খুবই প্রশংসনীয় দৃষ্টিতে দেখি। “আমার টিমের সঙ্গে কথা বলার পর কোনো প্রশ্ন যদি মনে জেগে থাকে, ফিরে এসে আমার সঙ্গে দেখা করবেন।”আপনাকে আমি আসলে, ওয়ান মিনিট ম্যানেজমেন্টের ধারণাটা উপহার হিসেবে দিতে চাইছি। অনেক দিন আগে, কেউ একজন আমাকে এই উপহারটা দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষিতে বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন ঘটেছে নিঃসন্দেহে। যদি কোনোদিন ম্যানেজার হতে চান আপনি নিজেও, এই ব্যাপারটা বোঝা আপনার জন্য খুবই জরুরি।” “ধন্যবাদ আপনাকে,” তরুণ ছেলেটি বলল। অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কোর্টনির সঙ্গে দেখা করল সে, ম্যানেজারের অ্যাসিস্টেন্ট মেয়েটি। বলল, “আপনার চিন্তাময় অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা নেওয়া হয়ে গেছে আপনার।” তরুণ ছেলেটি এখনও সবকিছু হজম করার চেষ্টা করে যাচ্ছে, “আমার মনে হয় তা হয়েছে।” “আপনাকে কোনো উপায়ে সহযোগিতা করতে পারি?” মেয়েটি জানতে চাইল।
পৃষ্ঠা:১০
“তা পারেন। তিনি এই লিস্টটা আমাকে দিলেন, এঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাই আমি।” একবার তাকিয়ে তালিকাটা দেখল সে, “এদের মধ্যে তিনজন এখন তো শহরের বাইরে। তবে টেরেসা লী, পল ট্রেনেল আর জন লেভি আজ এখানে আছেন। আমি আগে থেকে ফোন করে রাখব, আপনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন তা নিশ্চিত করব।” “অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।” তরুণ ছেলেটি বলল।
পৃ্ষ্ঠা ১১ থেকে২০
পৃষ্ঠা:১১
প্রথম রহস্য: এক মিনিটের লক্ষ্যবস্তু: টেরেসা লীর অফিসে, চোখ থেকে রিডিং গ্লাস সরিয়ে তরুণের দিকে উষ্ম হাসি হাসলেন ভদ্রমহিলা। “শুনলাম আমাদের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন? দারুণ এক ব্যক্তিত্ব, তাই না?” “আমারও তেমনটাই মনে হলো।” “তিনি কি বলেছেন, তাঁর ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে?” “একদম তাই।” টেরেসা বললেন, “কী দারুণভাবে এটা কাজ করে তা বিশ্বাস করার মতো না। এখনও আমার অবাক লাগে, কাজটা কীভাবে করা লাগবে শিখে ফেলার পর থেকে তিনি আমার জন্য সময় আর দেন না বললেই চলে।” “তাই নাকি?” “আপনারও বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, দেখবেন। ইদানীং আমাদের দেখাই হয় না।” “তাহলে আপনি তাঁর থেকে তেমন কোনো সাহায্য পান না, বলতে চান?” তরুণ ছেলেটি জানতে চাইল। “চাকরিটা শুরু করার সময় যেমনটা পেতাম তার মতো নয় অন্তত। এখন তিনি একটা কাজ শুরুর সময় আমাদের দায়িত্বটা বুঝিয়ে দেন, এই সময় আমি আর তিনি মিলে আমাদের এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নেই।” “এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা? সেটা আবার কী জিনিস?”
পৃষ্ঠা:১২
এটা ওয়ান মিনিট ম্যানেজমেন্টের তিন রহস্যের একটা।” ” “তিন রহস্য?” প্রতিধ্বনি তুলল তরুণ, জানার আগ্রহ কেবলই বাড়ছে তার। “জি। ওয়ান মিনিট ম্যানেজমেন্টের প্রথম ধাপটাই হলো এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে যান, কর্মীদের গিয়ে প্রশ্ন করে দেখুন তারা কী করছে, একই প্রশ্নটা আবার তাদের বসকে গিয়ে করবেন। প্রায় সময়, আপনি দুটো ভিন্ন উত্তর পাবেন দুপক্ষের কাছে। “নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমার আগের কয়েক চাকরিতে আমার ধারণা অনুসারে দায়িত্বগুলো ছিল একরকম, আর আমার বসের মাথায় সেই চাকরির দায়িত্ব সম্পূর্ণ আলাদা রকমের। তারপর এমন কিছু না করার জন্য আমি ঝামেলায় পড়ে যেতাম যেই কাজটাকে আমার দায়িত্ব বলেই বুঝিনি আমি।” “আর এখানে? এমনটা কি হয়?” “না!” জোর দিয়ে বলে উঠলো টেরেসা, “এখানে তেমন কিছু হয় না। আমাদের ম্যানেজার এই বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য বসেন। আমাদের দায়িত্বগুলো নিয়ে ঠিকমতো আলোচনা করেন, বুঝিয়ে দেন কোন বিষয়গুলোর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে আমাদের।” “কিন্তু কাজটা তিনি কীভাবে করছেন?” “আগের যে কোনো পদ্ধতির থেকে অনেকটাই কার্যকর উপায়ে।” একটু হেসে টেরেসা বলল, “আসলে, এখন আমি তাঁকে নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার ডাকি কারণ তিনি যে পদ্ধতিগুলোয় কাজ করেন তারা সম্পূর্ণ নতুন, তবে আগের থেকেও বেশি কার্যকর।” “সেটা কেমন করে?” ব্যাখ্যা দিল সে, “উদাহরণস্বরূপ, আমাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে না দিয়ে, তিনি আমাদের কাজের গতিপ্রকৃতি বুঝে, একসঙ্গে মাঠে নেমে সবকিছুকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করেন। তারপর আমরা যখন
পৃষ্ঠা:১৩
সবচেয়ে জরুরি লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে আলাদা করে বাছাই করতে পারি, ওদের একটা পৃষ্ঠায় বিস্তারিত লেখা হয়।” “তাঁর ধারণা, একটা লক্ষ্যমাত্রা আর তার ব্যাখ্যা, কী করতে হবে, কত তারিখে করতে হবে-এগুলো লিখতে একটা বা দুটোর বেশি প্যারাগ্রাফের প্রয়োজন নেই। জিনিসটা এমন হওয়া উচিত যেন সহজে তাদের পড়া যায়, এক মিনিটের মধ্যে। “বারবার ঐ লক্ষ্যমাত্রার কাগজটা দেখলে সহজে আমরা বুঝতে পারি কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সহজে তা বোঝাও যায়, মনোযোগ ঠিক দিকে ধরে রাখা সহজ হয়। “টিমের সবাই মিলে যখন এই লক্ষ্যমাত্রাটা লিখে ফেলি, একটা কপি নিজের কাছে রেখে তাঁকে সেটা মেইল করে দেই। এতে করে দুপক্ষের কাছেই বিষয়গুলো পরিষ্কার থাকে, সময়ে সময়ে আমরা ঐ লক্ষ্যমাত্রার ওপর টিক দিয়ে অগ্রগতি ব্যাখ্যা করতে পারি।” “আপনারা যদি একটা লক্ষ্যমাত্রা লেখার জন্য একটা আস্ত পাতা ব্যবহার করেন, তাহলে সবার জন্য অনেকগুলো পাতা হয়ে যায় না?” “না, আমরা তো ৮০/২০ নীতিতে চলি। এর অর্থ হলো, আপনার ৮০ ফলাফল আসবে ২০ লক্ষ্যমাত্রা থেকে। এজন্য আমাদের দায়িত্বের মূল অংশগুলো হয় কম, তিনটা বা পাঁচটা লক্ষ্যমাত্রা বড়জোর। এখানে অবশ্য বলে রাখা দরকার, বিশেষ ধরনের প্রজেক্ট সামনে এলে আমরা বিশেষ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করি।“যেহেতু এক মিনিটের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা পড়ে ফেলা যায়, মাঝেমধ্যেই ওটা পড়ি আমরা। বোঝার চেষ্টা করি কোথাও বিচ্যুতি রয়ে গেল কি না। “আর বিচ্যুতি যদি পাই, তাহলে সেভাবে নিজেদের শুধরে নেই। এতে করে আমরা অল্প সময়েই সফলতা পেয়ে যাই।” তরুণ ছেলেটি ধরতে পারল বিষয়টা, “তাহলে আপনারা নিজেরাই খেয়াল করার চেষ্টা করেন যে আশানুরূপ কাজ হচ্ছে কি না। ম্যানেজার এসে বলার আগেই?”
পৃষ্ঠা:১৪
“হ্যাঁ।” “তাহলে বলা যায়, আপনি নিজেই নিজেকে ম্যানেজ করছেন।” “ঠিক তাই।” মাথা দোলালেন টেরেসা। যোগ করলেন, “আর এভাবে সবকিছু আরও সহজ হয়ে উঠছে। কারণ, আমরা জানি আমাদের কাজটা কি। আমাদের ম্যানেজার কেবল দেখিয়ে দিচ্ছেন ভালো কাজ কোনটাকে বলা যায়। অর্থাৎ, আমরা কী চাইছি সেটা একেবারেই স্পষ্ট। “তবে, আমাদের অনেকে দূর থেকে কাজ করেন। ম্যানেজার তো আর তাঁদের সঙ্গে বারবার দেখা করে কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেন না, তবে অন্য সব পদ্ধতিতে এই দায়িত্বটা তিনি পালন করে থাকেন।” “একটা উদাহরণ কি দিতে পারবেন?” “অবশ্যই,” টেরেসা বললেন, “আমার একটা লক্ষ্য হলো, সমস্যা খুঁজে বের করে সেটার জন্য এমন এক সমাধান নিয়ে আসা যেটা পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারবে। প্রথমদিকে যখন এখানে চাকরিটা নিলাম, ঘুরেফিরে কিছু সমস্যা বের করে এনেছি, তবে জানতাম না এদের ব্যাপারে কী করা উচিত। তাই তাঁকে ফোন করলাম। তিনি ফোন রিসিভ করার পর বললাম, ‘একটা সমস্যা বের করেছি।’ আর কিছু বলার আগেই তিনি আমাকে বললেন, ‘চমৎকার, এটার সমাধান দেওয়ার জন্যই আপনাকে চাকরিটা দেওয়া হয়েছে।’ তারপর অন্যপ্রান্তে আর কোনো শব্দ শুনলাম না, একেবারে পিনপতন নীরবতা। “আমি বুঝতে পারছিলাম না যে কী বলা উচিত। তোতলিয়ে তোতলিয়ে বললাম, ‘কিন্তু… কিন্তু, আসলে আমি বুঝতে পারছি না এই সমস্যাটা কীভাবে সমাধান করব’।” “টেরেসা,’ তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার কাজগুলোর মধ্যে একটা হলো সমস্যা খুঁজে বের করে নিজে থেকেই তার সমাধান নিয়ে আসা। কিন্তু যেহেতু আপনি এখনও নতুন, চলুন আলোচনা করা যাক। সমস্যাটা কি আমাকে বলতে পারেন’।”
পৃষ্ঠা:১৫
“তখন নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে আমি সমস্যাটা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আসলে আমি খুব ভালো বুঝাতে পারছিলাম না, নানা অপ্রাসঙ্গিক আলোচনাও করে ফেলছিলাম তখন। নার্ভাস লাগছিল, আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিলাম বারবার।” “আমার ম্যানেজার তখন জিনিসটা সহজ করে দিলেন। নরম গলায় বললেন, ‘শুধু বলুন লোকজন কোন কাজটা করছে, বা করছে না, যার জন্য সমস্যাটা হয়েছে’।” “এটা শুনে সমস্যাটার সত্যিকার রূপটুকু আমি আলাদা করে চিনতে পারলাম। ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতে পারলাম এবার।” “দারুণ, টেরেসা। এবার বলুন আপনি এই ব্যাপারে কী করতে চান?” “”আমি ঠিক করে জানি না।’ বলেছিলাম।” ‘তাহলে সেটা জেনে আমাকে ফোন দিয়েন।’ তিনি বললেন। “আমি আবার চুপ হয়ে গিয়েছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না কী বলব। তিনি দয়া করে নীরবতা ভাঙলেন আবার, ‘দেখুন, যদি আপনি না জানেন ব্যাপারটা নিয়ে কী করতে হবে, তাহলে সেটাকে এখনও সমস্যা বলা যায় না। বলা যায়, আপনি অভিযোগ করছেন কেবল। সমস্যা কেবল তখনই বলা সম্ভব, যদি যা ঘটছে, তা থেকে আপনি যেমনটা ঘটুক চান তার পার্থক্য চোখে দেখা যায়।’ “আমি খুব দ্রুত কাজ শিখে নিতে জানি। কাজেই হুট করে খেয়াল করলাম ঠিক কোন জিনিসটাকে সমাধান হিসেবে ঘটাতে চাইছি। সেটা তাঁকে বলার পর তিনি জানতে চাইলেন, কোন বিষয়টার জন্য বর্তমান অবস্থা থেকে আমার পরিকল্পিত অবস্থানে যাওয়া যাচ্ছে না?” “এরপর তিনি জানতে চাইলেন, ‘এবার এটাকে আপনি কীভাবে প্রয়োগ করতে চান?’ “”আমি অমুক করতে পারি,’ বললাম।” ‘যদি আপনি অমুক করেন, তাহলে কি আপনার মনমতো সমাধান চলে আসবে?’ পাল্টা জানতে চাইলেন তিনি।
পৃষ্ঠা:১৬
‘না,’ বলেছিলাম। ‘তাহলে সমাধান হিসেবে খুবই বাজে আপনার অমুক আইডিয়া। আর কী করা যেতে পারে এই বিষয়ে?’ জানতে চাইলেন তিনি। আমি তমুক করতে পারি।’ আরেকটা সমাধান দিলাম তখন। তমুক করলে কি যা চাইছেন তা ঘটবে?’ ভেবে বললাম, ‘না। ‘তাহলে তমুকও একটা ফালতু সমাধান। ভেবে দেখেন, আর কী করা যেতে পারে?’ কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে বললাম, ‘আমি আরেকটা কাজ করতে পারি, কিন্তু মনে হচ্ছে না ঐ কাজটা করলেও আমার মনমতো সমাধান পাওয়া যাবে। তাহলে এটাও একটা বাজে সমাধান। তাই তো?’ ‘ঠিক। এতক্ষণে লাইনে এসেছেন,’ ঠাট্টা করে বলেছিলেন তিনি, ‘তাহলে আর কী করা যেতে পারে?’ অনেকটাই স্বস্তি এসেছে তখন আমার মনে। বললাম, ‘এই সমাধানগুলোকে মিলিয়ে একটা কিছু চেষ্টা করা যেতে পারে।’ ‘হ্যাঁ, সেটা একটা ভালো চেষ্টা হবে বলে মনে হয়।’ তিনি বললেন। আরে, প্রথম সপ্তাহে অমুক, দ্বিতীয় সপ্তাহে তমুক আর তৃতীয় সপ্তাহে তৃতীয় সমাধানটা কাজে লাগালেই আমার ঝামেলা মিটে যাচ্ছে! দারুণ তো। ধন্যবাদ আপনাকে, আমার সমস্যাটা আপনি সমাধান করে দিয়েছেন।’ আমি নই,’ বাধা দিলেন তিনি, ‘আপনি নিজেই সমাধানটা করেছেন। আমি কেবল সঠিক প্রশ্নগুলো করেছি, যেগুলো আপনি ভবিষ্যতে নিজেই নিজেকে করতে পারবেন।’ “আমি বুঝতে পারছিলাম তিনি ঠিক কোন কাজটা করছেন। সমস্যা সমাধান করার পথটা তিনি দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন যেন আমি নিজেই সেটা করতে পারি।”
পৃষ্ঠা:১৭
“এটাকেই আপনি বলেছিলেন ভালো কাজ কোনটাকে বলা যায় তা দেখিয়ে দেওয়া?” “হ্যাঁ। আমার ম্যানেজার আমাকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিলেন ঠিক কীভাবে কাজটা করতে হবে যেন সেটা বুঝে করতে পারি, নিজেই করতে পারি। ফোন রাখার আগে তিনি বলেছিলেন, ‘টেরেসা, আপনি চমৎকার দেখাচ্ছেন। আগামীতে কোনো সমস্যা হলে এগুলো মনে রাখবেন’।” টেরেসা এখন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। যেন মাত্রই তিনি তাঁর ম্যানেজারের সঙ্গে প্রথম আলোচনা থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছেন। “আমার মনে আছে, পরে আমার মুখে হাসি চলে এসেছিল। তিনি যে কাজটা করছেন, তাতে করে ভবিষ্যতে তাঁকে আর নতুন করে আমাকে সময় দিতে হবে না।” “কারণ, এখন থেকে আপনি নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে পারবেন?” “হ্যাঁ। তিনি চান টিমের প্রত্যেকেই দ্রুত আর আগের থেকে ভালোমতো কাজ করাটা শিখে যাক।” “এবার বুঝতে পারলাম এই প্রতিষ্ঠান কেন বেশ দ্রুত কাজ করতে পারছে,” তরুণটি বলল, “কারণ, নিজে থেকে চিন্তা করে সমাধান দেওয়ার মতো মানুষের সংখ্যা এখানে বেশি। আচ্ছা, এতক্ষণ ধরে আমি যা যা শিখলাম তা একটা কাগজে লিখলে আপনি কি কিছু মনে করবেন?” “আমার তো মনে হয় এটা দারুণ একটা ব্যাপার হবে।” টেরেসা উত্তরে বললেন। কাজেই তরুণ ছেলেটি লিখতে শুরু করল-
পৃষ্ঠা:১৮
এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা: সারমর্ম: এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা কাজ করবে যখন আপনি-
১. একসঙ্গে কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবেন, তাদের সংক্ষেপে কিন্তু স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবেন। সহকর্মীদের দেখিয়ে দেবেন ‘ভালো কাজ’ বলতে কোনটাকে বলা হচ্ছে।
২. লক্ষ্যগুলো কী এবং তাদের শেষ তারিখ কবে, এগুলো একটি পৃষ্ঠায় লেখার জন্য সহকর্মীদের বলবেন।
৩. প্রতিদিন তারা যেন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলোর পর্যালোচনা করে তা নিশ্চিত করবেন, এতে করে বেশি সময়ও লাগবে না।
৪. যে কাজগুলো করা হচ্ছে, তার দিকে নজর দেওয়ার জন্য সহকর্মীদের থেকে দৈনিক এক মিনিট বরাদ্দ রাখবেন। লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে বর্তমান কাজগুলো খাপ খাচ্ছে কি না তা এভাবে দেখে নিতে হবে।
৫. যদি কাজের গতি লক্ষ্যগুলোর পক্ষে না থাকে, তবে কর্মীদের উৎসাহিত করবেন যেন তারা দ্রুত তাদের লক্ষ্যবস্তুটা ধরতে পারে। কাগজটা টেরেসাকে দেখাল তরুণ। “খুব গুছিয়ে সঠিকটাই লিখেছেন তো!” উৎসাহ দিলেন টেরেসা, “আপনি নতুন কিছু খুব দ্রুত শিখে নিতে পারেন।” “ধন্যবাদ।” ছেলেটা বলল, নিজের প্রতি ভালো একটা অনুভূতি কাজ করছিল তখন তার। “কিন্তু, এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যদি সফল ওয়ান মিনিট ম্যানেজার হওয়ার জন্য প্রথম রহস্য হয়, তাহলে বাকি দুটো কি, জানতে পারি?”
পৃষ্ঠা:১৯
মুচকি হাসল টেরেসা, নিজের ঘড়ির দিকে তাকাল একবার, “আপনি একটা কাজ করতে পারেন। পল ট্রেনেলকে গিয়ে প্রশ্নটা করুন। আমাদের আলোচনাটা শেষ হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা নয় কি আপনার?” ছেলেটি অবাক হলো, টেরেসা তার শিডিউল নিয়েও খোঁজ নিয়েছে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টা তাকে অভিভূত করল। দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে হাত মেলানোর সময় বলল, “ঠিক বলেছেন। আমাকে এতখানি সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।” “সুস্বাগতম আপনাকেও। সময় এখন আমার আছে। আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, আমি নিজেও একজন ওয়ান মিনিট ম্যানেজার হওয়ার পথে যাচ্ছি।” “অর্থাৎ, আপনি পরিবর্তন ধরতে পারেন। সেই অনুপাতে তিন রহস্য প্রয়োগ করতে পারেন?” “জি। পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।”
পৃষ্ঠা:২০
দ্বিতীয় রহস্য: এক মিনিটের প্রশংসা: টেরেসার অফিস থেকে বের হওয়ার প্রায় সাথে সাথে সদ্য জানা বিষয়গুলোর সাধারণত্বটা নতুন করে চোখে পড়ল তরুণের। ভেবে দেখল, যুক্তিপূর্ণ ছিল পদ্ধতিটা। আমি যদি নিজের দল সহ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নিশ্চিত হতে না পারি, কোন ধরনের পারফর্ম্যান্স এলে সেটার প্রশংসা করা হবে তা স্পষ্ট করে জানাতে না পারি, তাহলে কার্যকরী ম্যানেজার কী করে হব? পল ট্রেনেলের অফিসে গিয়ে অবাক হলো তরুণ, আরও বয়স্ক কাউকে আশা করেছিল সে। পলের বয়স বিশের শেষ থেকে ত্রিশের শুরুর মধ্যে কিছু একটা হবে। “আপনি তাহলে আমাদের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন? দারুণ এক ব্যাক্তিত্ব, কি বলেন?” তরুণ ছেলেটি এতক্ষণে এই শব্দমালার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে এসেছে, ‘দারুণ এক ব্যক্তিত্ব!’ “আমারও তেমনটাই মনে হলো।” “তিনি কীভাবে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন, সে ব্যাপারে কিছু বলেছেন?” “জি। তাঁর কথার কতখানি সত্য?” জানতে চাইল ছেলেটি, টেরেসার থেকে ভিন্ন কোনো উত্তর কি পাওয়া যাবে? উত্তেজনা নিয়ে ভাবল সে। “অবশ্যই সত্য। শেষ চাকরিটায় আমি এক মাইক্রো-ম্যানেজারের অধীনে কাজ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার ওরকম পদ্ধতিতে বিশ্বাস করেন না।” “তার মানে, আপনি তাঁর থেকে কোনো সহায়তাই পান না?”
পৃ্ষ্ঠা ২১থেকে৩০
পৃষ্ঠা:২১
“প্রথমে যেমনটা পেতাম, তেমন তো অবশ্যই পাই না। তখন আমি কাজ শিখছিলাম কেবল। এখন তিনি আমাকে আরও বেশি বিশ্বাস করেন। তবে নতুন কোনো কাজের দায়িত্ব হাতে এলে তিনি আমাকে অনেকখানি সময় দেন।” “জি, আমি আপনাদের এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারে এরই মধ্যে জেনেছি।” তাঁকে থামিয়ে বলল তরুণ। “আসলে, আমি এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারে বলছিলাম না। বলছিলাম এক মিনিটের প্রশংসার কথা।” “এক মিনিটের প্রশংসা? এটা কি দ্বিতীয় রহস্য?” “হ্যাঁ। সত্য বলতে কী, যখন এখানে কাজ নিলাম, আমার ম্যানেজার প্রথমেই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন যে তিনি কি করতে যাচ্ছেন।” “সেটা কী?” “তিনি বলেছিলেন সবকিছু অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে যদি আমি কেমনটা করছি সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট ফিডব্যাক দিতে পারেন। বলেছিলেন, এতে করে সফলতার দেখা পাওয়া আমার জন্য সহজ হয়ে আসবে। জানিয়ে দিয়েছিলেন, আমার মধ্যে প্রতিভা আছে, আর আমাকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখতে চান। সেই সঙ্গে চান আমি এখানে কাজ করাটা উপভোগ করি, হয়ে উঠি এখানে অবদান রাখতে পারা মানুষদের একজন। “তারপর তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি আমাকে খুবই নির্দিষ্ট কিছু শব্দমালায় জানিয়ে দেবেন আমি কেমনটা ভালো করছি, অথবা করছি না। সতর্ক করে দিয়েছিলেন, শুরুতে হয়তো ব্যাপারটা আমাদের কারো জন্যই খুব সুখকর হবে না।” “কেন?” “কারণ তিনি আমাকে দেখিয়ে দিলেন সাধারণত ম্যানেজাররা এমন কোনো পদ্ধতিতে চলেন না। তবে এটাও নিশ্চিত করেছিলেন, যদি আমার কাছে এই চাকরিতে সফলতাই মুখ্য হয়ে থাকে, তো এমন মত বিনিময়ের উপকারিতা আমি সময়ে ঠিকই বুঝতে পারব।”
পৃষ্ঠা:২২
“এই ব্যাপারে কোনো একটা উদাহরণ যদি দিতেন, তো বুঝতে সুবিধা হতো আমার।” “অবশ্যই,” উত্তর দিলেন পল, “যখন শুরুতে এখানে কাজ করতে এলাম, খেয়াল করলাম আমি আর আমার ম্যানেজার এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছি, তিনিও ঘন ঘন যোগাযোগ রাখছেন।” “এটা তিনি কীভাবে করছিলেন?” “দু’ভাবে। প্রথমত, তিনি আমার কার্যক্রমের দিকে নজর রাখতেন। সামনাসামনি সাক্ষাত আমাদের না হলেও, দূর থেকে বিভিন্ন ডাটার দিকে নজর দিলেই তিনি বুঝতে পারতেন আমি কেমন করছি। দ্বিতীয়ত: আমাকে বলেছিলেন নিজের কাজে উন্নতির ব্যাপারে একটা রিপোর্ট তাঁকে দিতে।” “ব্যাপারটা আপনার কেমন লেগেছিল?” “প্রথমে একটু অস্বস্তির তো ছিলই। তারপর মনে পড়ল তিনি বলেছিলেন সঠিক কোনো কাজ করার সময় আমাকে ধরে ফেলার জন্য এই নজরদারি।” “সঠিক কাজ করার সময় আপনাকে ধরে ফেলার জন্য?” বিস্ময়ে প্রতিধ্বনি তুলল তরুণ। “ঠিক তাই। এখানে একটা প্রবাদ আছে আমাদের। ম্যানেজাররা টিকে থাকেন তাঁর অধীনস্তদের ভেতর থেকে সর্বোচ্চটা বের করে আনার মাধ্যমে। সঠিক কিছু করার সময় তাদের ধরে ফেলায়।” কোনো ম্যানেজারকে এমন কিছু করতে তরুণটি কখনোই শোনেনি, অথচ কম ম্যানেজারের সঙ্গে তো আর সাক্ষাৎ হলো না। পল বলে যাচ্ছেন, “বেশিরভাগ সংস্থার ম্যানেজাররা তাদের অধীনস্তদের কোন জিনিসটা ধরায় ব্যস্ত থাকে, বলুন দেখি?” হেসে ফেলল তরুণ, “ভুল ধরায়।” “ঠিক!” হেসে ফেলল পল-ও। “ভুল-ঠিক মিলে গেল, যা হোক। আমরা এখানে কথাটা বলি ইতিবাচক ভাবে। ঠিক কিছু করার সময় তাকে ধরে ফেল, বিশেষ করে যখন সে নতুন একটা কাজ শুরু করতে যাচ্ছে।”
পৃষ্ঠা:২৩
তরুণ ছেলেটি কয়েকটা লাইন নিজের নোটে তুলে ফেলল। তারপর চোখ তুলে জানতে চাইল, “তাহলে? তিনি আপনাকে সঠিক কিছু করার সময় ধরে ফেলেন যখন, তারপর কী ঘটে?” “এক মিনিটের প্রশংসা করেন তিনি তখন।” হাসিমুখে জানালেন পল। “এটার অর্থটা ঠিক কী, বলুন তো।” “যখন তিনি বুঝতে পারেন আপনি একটা কাজ ঠিকমতো করতে পেরেছেন, নিজে থেকে এগিয়ে এসে বলেন ঠিক কোন কাজটা আপনি ঠিকমতো করেছেন, আর সেজন্য তিনি কেমন সন্তুষ্ট। তারপর এক মুহূর্তের জন্য তিনি থামেনও, যেন আপনি পুরো ব্যাপারটা অনুভব করতে পারেন। এই প্রশংসার মাধ্যমে তিনি আপনার ভবিষ্যতের ভালো কাজগুলো উসুল করার একটা পথ করে নেন।” “কোনো ম্যানেজারকে এমন করতে তো শুনিনি আগে!” তরুণটি বলল, “আপনাদের নিশ্চয় বেশ ভালো একটা অনুভূতি হয় এজন্য।” “তা তো অবশ্যই, কয়েকটা কারণ আছে ভালোলাগার। প্রথমত, কিছু ঠিকমতো করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশংসা পেয়ে যাচ্ছি।” সামনে ঝুঁকে বলল পল, “আমাকে তো আর কোনো পারফর্ম্যান্স রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না, বুঝতে পারছেন কী বলতে চাইছি?” “বুঝতে পারছি,” তরুণটি বলল, “কাজ কেমন করছি তা বোঝার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করা খুবই বাজে একটা ব্যাপার।” “সেটাই। দ্বিতীয়ত, যখন তিনি নির্দিষ্ট করে বলে দিচ্ছেন ঠিক কোন কাজটায় তিনি সন্তুষ্টি অনুভব করেছেন, তাই আমিও বুঝতে পারি আমার কার্যক্রম তাঁর জানা আছে। এই ব্যাপারে তিনি ঠিকঠাক খবর রাখছেন। তৃতীয়ত, তিনি খুব নিয়মিতই আমাকে এই আপডেট দিচ্ছেন।” “নিয়মিত?” আরও একবার প্রতিধ্বনি তুলল তরুণ। “হ্যাঁ। যখনই আমি ভালো কিছু করি, তিনি আমাকে ভালো কিছু বলেন। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সময় খারাপ যাচ্ছে হয়তো তখন, তাতে করে আমার প্রশংসাটুকু বন্ধ হয়ে যায় না। এমনও হয় যে তিনি
পৃষ্ঠা:২৪
অন্য কিছু নিয়ে খুবই বিরক্ত, তবে আমার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় সেই প্রভাব এখানে পড়ে না। তাঁর এই ব্যাপারটা আমি সত্যিই খুব পছন্দ করি।” “এইসব প্রশংসা ম্যানেজারের অনেক সময় নষ্ট করে ফেলে না?” “না। কেউ একজন ভালো কাজ করছে, আপনি তা লক্ষ করছেন, এটা বলার জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন নেই। এক মিনিটেরও কম সময় লাগে আসলে এর জন্য।” তরুণটি এবার বুঝতে পারল, “এজন্যই আপনারা এটাকে এক মিনিটের প্রশংসা বলছেন?” “ঠিক ধরেছেন।” পল উত্তর দিলেন। “তাহলে সব সময়ই তিনি আপনার সঠিক কিছু ধরে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন?” “না, অবশ্যই। শুরুর দিকে এমনটা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, আপনি এখানে নতুন চাকরি নিলেন, তখন। কিংবা কোনো নতুন প্রজেক্ট বা দায়িত্ব যখন পাচ্ছেন তখন। কিন্তু যখন পথটা আপনি চিনে ফেলবেন, তিনি আপনার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। তখন আর সহজে তাঁর দেখা মেলে না।” “তাই? এটা তো খারাপ লাগার মতো একটা ব্যাপার। এত মনযোগ পেলেন, তারপর হুট করে তা বন্ধ হয়ে যাওয়া।” “ঠিক তেমন নয় ব্যাপারটা, কারণ তখন আপনি আর তিনি দুজনেই ভালো কিছু কাজ হলে টের পাবেন। কাজে একটা অগ্রগতি চলে আসলে অনেক কিছুই থাকে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর মতো। যেমন বিক্রির পরিমাণ, খরচের হার, উৎপাদনের সময়সীমা ইত্যাদি।” “যা হোক,” বলে গেলেন পল, “আপনি নিজেই নিজের সঠিক কাজগুলো ধরতে পারা শিখে যাবেন। তখন নিজেই নিজের কাজের প্রশংসা করতে শুরু করবেন আপনি। আশা করবেন অদূর ভবিষ্যতে আবারও ম্যানেজারের থেকে প্রশংসাসূচক কিছু শুনতে পাবেন, আর মাঝে মধ্যে তা পাবেনও- এতে করে আরও ভালো কাজ করার জন্য আপনার মধ্যে উৎসাহটা চাঙ্গা থাকবে। আমার মনে পড়ে না আর
পৃষ্ঠা:২৫
কোনো কোম্পানির জন্য এত কাজ করেছি আমি, বা উপভোগ করেছি এতটা। এটা একটা বিস্ময়কর পদ্ধতি।“বলি, কেন? আমি যখন শুনছি তিনি আমার প্রশংসা করছেন, আমার মনে হচ্ছে এটা আমি অর্জন করেছি। দেখেছি এতে করে আমার আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়েছে, পরবর্তীতে খেয়াল করেছি আত্মবিশ্বাসের প্রবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।” “কেন এমনটা খেয়াল হলো আপনার?” “কারণ, যে আত্মবিশ্বাসটা আপনি অর্জন করে এনেছেন, সেটা থেকে আগামীর সব পরিবর্তনের মোকাবিলা করা সহজ হয়ে যায়। নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য, এগিয়ে থাকার জন্য, আত্মবিশ্বাসের বিকল্প নেই।” “এজন্যই কি তিনি সব সমস্যাগুলোর সমাধানে আপনাদের সিদ্ধান্তে নাক না গলিয়ে নিজে থেকে কাজ করায় উৎসাহ দিয়ে থাকেন?” “হ্যাঁ। সেই সঙ্গে এটা ম্যানেজারের সময়ও বাঁচায় অনেক। আমার টিমে যারা কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গেও একইভাবে কাজ করি আমি। ফলে তারাও অনেকটা দক্ষ হয়ে উঠেছে এসবে।””আমার মনে হচ্ছে একটা প্যাটার্ন চোখে পড়ছে এখানে। আপনারা এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে প্রশংসার একটা সংযোগ ঘটিয়েছেন, ফলাফল হিসেবে মানুষ তাদের সর্বোচ্চটা দিচ্ছে।” “একদম সঠিক পর্যবেক্ষণ।” “একটু সময় দিতে পারবেন, প্লিজ? আমি একটু লিখে নেই কীভাবে এই এক মিনিটের প্রশংসা করা যায়।” “অবশ্যই। সময় নিন।” পল বললেন। তরুণ ছেলেটি লিখে চলল।
পৃষ্ঠা:২৬
এক মিনিটের প্রশংসা: সারাংশ:এক মিনিটের প্রশংসা কার্যকরী হবে যখন আপনি:
প্রথম অর্ধ-মিনিট
১. যত দ্রুত সম্ভব প্রশংসা করবেন।
২. ঠিক কোন কাজটার জন্য প্রশংসা করছেন তা জানাবেন, নির্দিষ্টভাবে।
৩. যার প্রশংসা করছেন তাঁকে জানাবেন এই কাজটা আপনাকে কেমন ভালো অনুভব করাচ্ছে।
বিরতি
৪. ছোট্ট এক মুহূর্তের জন্য বিরতি দেবেন, যেন কর্মীটি ভালো অনুভব করার সুযোগ পায়।
দ্বিতীয় অর্ধ-মিনিট
৫. এমন কাজ আরও করার জন্য তাদের উৎসাহ দেবেন।
৬. তাদের প্রতি আপনার আত্মবিশ্বাসের ব্যাপারে জানাবেন স্পষ্টভাবে, তাদের সফলতাকে সমর্থন করবেন। “তাহলে এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা আর এক মিনিটের প্রশংসা হচ্ছে প্রথম আর দ্বিতীয় রহস্য। আমি কি জানতে পারি, তৃতীয় রহস্যটি কি?” চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন পল, “এটা বরং আপনি জন লেভির থেকে জানতে চান। আমার জানা মতে এরপর আপনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চলেছেন।”
পৃষ্ঠা:২৭
“তা করছি। আমাকে সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।” “এটা নিয়ে ভাববেন না। সময় এখন আমার অনেক আছে। আমি নিজেও একজন নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার হয়ে উঠছি।” মাথা দোলালো ছেলেটি। এই কথা সে এবারই প্রথম শুনছে না। বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে আসার পর গাছের সারির মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে এতক্ষণের আলোচনা নিয়ে ভাবল সে। আরও একবারের জন্য পুরো বিষয়টার সাধারণত্বটুকু চমকে দিল তাকে। কাউকে সঠিক কাজ করার সময় ধরে ফেলার কার্যকারিতা নিয়ে আপনি সন্দেহ পোষণ করবেন কী করে? এমন অভিজ্ঞতা তো সবারই আরাধ্য। কিন্তু এক মিনিটের প্রশংসা কি সত্যই কাজ করে? সন্দেহটুকু মন থেকে একেবারে সরাতে পারল না তরুণ। ওয়ান মিনিট ম্যানেজমেন্ট থেকে কি সত্যিই ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে? ফলাফল নিয়ে এই কৌতূহলটা বেড়েই চলল সময়ের সঙ্গে। কাজেই ফিরে চলল সে, অফিসে ঢুকে ম্যানেজারের অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে কথা বলে জন লেভির অ্যাপয়েন্টমেন্টটা পিছিয়ে পরের দিন সকালে করল। জানাল, তাঁর সঙ্গে কথা বলার আগে কিছু সময় প্রয়োজন। এই সময়ে তাকে আরও কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যারা এই কোম্পানির সবগুলো বিভাগের অগ্রগতি নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারবে। “জন বলেছেন আগামিকাল সকালে দেখা করতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।” কোর্টনি ফোনটা রেখে তাকে জানাল। ডাউনটাউনে করল পরের ফোনটা, ছেলেটির অনুরোধ রক্ষার স্বার্থে। নতুন আরেকজনের সঙ্গে এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হলো। এবার সে দেখা করতে যাবে লিজ অ্যাকুইনোর সঙ্গে। কোর্টনি বলল, “আমার বিশ্বাস আপনি তার থেকে সঠিক তথ্যগুলো পেয়ে যাবেন।” মেয়েটিকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তরুণটি লক্ষ করল ক্ষুধা পেয়েছে প্রচুর। রাস্তার অন্যপাশের একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকল সে, পরের মিটিংয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে সেই সঙ্গে।
পৃষ্ঠা:২৮
ফলাফল পর্যবেক্ষণ: দুপুরের খাবারটা সেরে তরুণ ছেলেটি ডাউনটাউনে গিয়ে লিজ অ্যাকুইনোর সঙ্গে দেখা করল। প্রথমে ভদ্রতাসূচক আলোচনা হলো কিছু, কেন এখানে এসেছে তা জানাল তরুণটি। এরপর সরাসরি কাজের কথায় চলে এলো সে, “কোম্পানির ডাটাবেজ থেকে আমাকে বলতে পারেন এই কোম্পানির সবচেয়ে ভালো ম্যানেজমেন্ট কোন অপারেশনে হচ্ছে?” এক মুহূর্ত পরেই সে হেসে ফেলল। কারণ লিজ তখন বলছে, “খোঁজাখুঁজির কিছু নেই, সবচেয়ে ভালো ম্যানেজমেন্ট? সে তো নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারেরটা। আমাদের ফ্যাসিলিটির মধ্যে সবচেয়ে কর্মদক্ষ অপারেশনটা তাঁর তত্ত্বাবধায়নেই হচ্ছে। অনেকগুলো বছর ধরেই তিনি আর তাঁর দল তালিকার শীর্ষে আছেন, সেজন্য আমাকে কম্পিউটার ঘেঁটে বলতে হচ্ছে না। যত পরিবর্তনই আসুক দুনিয়ায়, তিনি ঠিক তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন। দারুণ এক ব্যক্তিত্ব, তাই না?” “অসাধারণ।” তরুণটি বলল, “তাঁর হাতে কি সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি আর যন্ত্রপাতি আছে?” “নাহ্।” লিজ বলল, “আপনি প্রশ্ন করায় মনে পড়ল, কোম্পানির সবচেয়ে পুরানো কিছু যন্ত্র তাঁদের ডিপার্টমেন্টেই আছে।” “ঠিক আছে। কিন্তু তিনি তো আর নিখুঁত হতে পারেন না।” তরুণ ছেলেটি বলল, এখনও সে নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারের পদ্ধতি নিয়ে সন্দিহান। “লোকজন তাঁর বিভাগ ছেড়ে চলে যায় না?” “তা তো যায়। নিয়মিত হারে কর্মীদের অনেকে তাঁর ডিভিশন ছেড়ে চলে যায়।”
পৃষ্ঠা:২৯
“এই তো!” উৎসাহিত হয়ে উঠলো তরুণটি। অবশেষে একটা খুঁত পাওয়া গেলো লোকটার!“নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারের বিভাগ থেকে বের হওয়ার পর তাদের সঙ্গে কী ঘটে?” “সাধারণত আমরা তাদেরকে নতুন কোনো অপারেশনের দায়িত্ব দেই।” লিজ উত্তরে বলল, “কর্মী বানিয়ে দেওয়ায় তাঁর জুড়ি নেই। ভালো কোনো ম্যানেজারের পদ খালি হলে সবার আগে তাঁকে ফোন করি আমরা। সব সময় কেউ না কেউ প্রস্তুত থাকেন তাঁর হাতে।” চমৎকৃত হলো সে আরেকবার। লিজকে তার সময়ের জন্য ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে এবার ভিন্ন এক উত্তর শুনল সে। “আমি খুশি হয়েছি যে আজকে এসেছেন আর সময় একটু বের করতে পেরেছি। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো এত ব্যস্ততা! যদি জানতাম তিনি কীভাবে এই সময়টা ম্যানেজ করেন। কোনো কোনোদিন ইচ্ছে করে তাঁর সঙ্গে একটু দেখা করি, তবে ঐ যে… সময় হয়ে ওঠে না।” মুচকি হেসে তরুণটি জানাল, “আমি যখন সবগুলো রহস্য জানতে পারব, আপনাকেও বলব। ম্যানেজার স্যার আমাকে রহস্যগুলো উপহার হিসেবেই খোলাসা করে দিচ্ছেন, আমার তরফ থেকে আপনার জন্য একই উপহার দিতে আপত্তি নেই।” “এটা খুবই দামি একটা উপহার হবে তাহলে,” চওড়া হাসল লিজ। ঘিঞ্জি অফিসটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে, “সাহায্য যেদিক থেকেই আসুক, আমার উপকার হবে অনেক।” মাথা নাড়তে নাড়তে লিজের অফিস থেকে বেরিয়ে এলো সে। ম্যানেজার লোকটাকে আসলেই দারুণ কাজের বলে মনে হচ্ছে এখন তার। সেদিন রাতে তরুণ ছেলেটি ঠিকমতো ঘুমাতে পারল না। সর্বশেষ রহস্যটি জানার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে মন।
পৃষ্ঠা:৩০
তৃতীয় রহস্য: এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা: পরদিন সকালে জন লেভির অফিসে গিয়েই শোনা লাগল, “দারুণ এক ব্যক্তিত্ব,” ইত্যাদি। তবে এতক্ষণে তরুণও বেশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, প্রভাবিত হয়েছে যথেষ্ট। কাজেই এবার সে বলতে পারল, “জি, দারুণ- ই তিনি।” জন বলে গেলেন, “তিনি দারুণ। এখানে কত্তগুলো বছর হলো আছেন, তবে সময়ের সঙ্গে তিনি সব সময়ই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। তিনি সবকিছুকে নতুনত্বের আবরণে মোড়ান, বিবর্তিত হয়ে আগের থেকেও দক্ষ হয়ে ওঠেন। “ইদানীং তিনি যে কাজটা একদম অন্যরকমভাবে করেন, কোনো কাজে আমরা ভুল করলে প্রতিক্রিয়ার ধরণটা।” “ভুল করলে?” অবাক হলো তরুণ, “আমি তো ভেবেছিলাম এখানে একটা মূলনীতি হলো কাউকে ঠিক কাজটা করার সময় ধরে ফেলা।” “ঠিক বলেছেন আপনিও, তবে আমি এখানে অনেকগুলো বছর ধরে কাজ করছি। আমি জানি এই অপারেশনটা কীভাবে হয়, আদ্যোপান্ত। এজন্য আমার সঙ্গে ম্যানেজার সাহেবকে তেমন সময় খরচ করতে হয় না। এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা বা প্রশংসার ঝামেলা আমার সঙ্গে নেই, আমিই বরং কোনো প্রজেক্টের শুরুতে লক্ষ্যমাত্রাগুলো লিখে নিয়ে যাই। তারপর দুজন মিলে তা নিয়ে আলোচনা করে ব্যাপারটা শেষ করি।” “আপনি কি একটা লক্ষ্য একপাতায় লিখে নিয়ে যান?”
পৃ্ষ্ঠা ৩১থেকে৪০
পৃষ্ঠা:৩১
“হ্যাঁ, এক বা দুই প্যারাগ্রাফের বেশি দীর্ঘায়িত করি না, যেন মিনিটখানেকের মধ্যেই পড়ে শেষ করা যায়।” বলে চললেন জন, “আমি আমার কাজটাকে খুবই পছন্দ করি, আর ভালোও পারি এই কাজ। নিজের ভালো কাজগুলোর জন্য নিজের প্রশংসার করার উপায়গুলো অনেক আগেই শিখেছি। ঠিক করে বললে আমার মনে হয়, নিজের প্রতি নিজে সন্তুষ্ট না হতে পারলে আর কে সন্তুষ্ট হবে?” দ্রুত যোগ করলেন তিনি, “অন্যদের কাজের প্রতিও আমার সহানুভূতি আছে।” “তাহলে আপনাকে তিনি প্রশংসাসূচক কিছুই বলেন না?” “মাঝেমধ্যে বলেন, তবে খুব ঘনঘন করার দরকার পড়ে না এমনটা। খুব ভালো কিছু যদি করি, হয়তো নিজে থেকেই আমি প্রশংসা চেয়ে নিব।” “আপনি এমনটা করার সাহস কেমন করে করেন?” অবাক হয়ে জানতে চাইল তরুণ ছেলেটি। “এটা অনেকটা বাজি ধরার মতো। ধরুন বাজি ধরলাম জিতব অথবা টায়-টায় করব, যেখানে লাভ-ক্ষতির কোনোটাই হবে না। যদি আমাকে প্রশংসা করে তার অর্থ জিতেই গেলাম। কিন্তু যদি না করেন, লভ-ক্ষতির কিছু হয়নি। চেয়ে বসার আগে আমার প্রশংসা করা হয়নি যেহেতু।” তরুণটি হেসে ফেলল, “ধারণাটা আমার পছন্দ হয়েছে। তবে কোনোকিছু ভুল করে ফেললে কী ঘটে?” “এই ব্যাপারে কী বলব… ভুল মাঝেমধ্যে হয়। আমি বা আমার টিমের অন্য কেউ যদি খুব বড় ধরনের কোনো ভুল করে ফেলে তবে আমি একটা এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা পাই।” “জি?” “এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা। এটা তৃতীয় রহস্যের নতুন এক ভার্সন। প্রশংসা করলেই সব সময় কাজ উদ্ধার হয় না আসলে। সেই সঙ্গে নতুন করে নির্দেশনা দেওয়ার ব্যাপার থাকতে হয়, তার মাধ্যমে ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
পৃষ্ঠা:৩২
“অন্য কেউ আমার ভুল ধরিয়ে দিলে আমার মোটেও ভালো লাগে না, ঠিক। তবে নতুন দিক-নির্দেশনা লক্ষ্যমাত্রায় পৌছানোর জন্য আমার খুবই উপকারে আসে। এতে করে আমার সাথে আমার প্রতিষ্ঠানও সফলতা পাচ্ছে। “অনেক আগে আমরাও এক টপ-ডাউন ম্যানেজমেন্টের কোম্পানি ছিলাম। তখন তৃতীয় রহস্যটিকে বলা হতো এক মিনিটের প্রচণ্ড ধমক। ঐ সময়ের জন্য তেমনটাই ছিল সবচেয়ে দরকারি। তবে সময়ের সঙ্গে আমাদের ম্যানেজার এটাকেও উপযুক্তভাবে পাল্টে নিয়েছেন।” “পাল্টে নিয়েছেন?” “অবশ্যই। আমাদের এখন অনেক অল্প সময়ে, অল্প পুঁজি নিয়েই আগের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যেতে হচ্ছে। আর মানুষও চায় নিজেদের কাজে আরও বেশি সন্তুষ্টি আর চায় তাদের আরও বেশি মূল্যায়ন করা হোক। “এখন সবার উচিত শিক্ষার্থীর ভূমিকায় চলে যাওয়া, কারণ পরিবর্তনটা আসছে খুব দ্রুত। আমি নিজে যদিওবা একজন এক্সপার্ট, আগামীকালই আমার জায়গাটা খালি হয়ে যেতে পারে। এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা আমাকে নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। কারণটা কি জানেন, এতে করে আমি বুঝতে পারি এখন কীভাবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে ফেলতে হবে।” “সেটা কী রকম?” “খুবই সাধারণ আসলে ব্যাপারটা।” “আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল আপনি এটা বলবেন,” তরুণটি যোগ না করে পারল না। হেসে ফেললেন জনও, বলে চললেন, “আমি কোনো ভুল করে ফেললে খুব দ্রুতই ম্যানেজার তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখান।” “তিনি কী করেন?” “প্রথমে তিনি নিশ্চিত করেন আমরা তাঁর বোঝানো লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে ঠিক ধারণা নিয়েছি কি না। যদি তিনিই আমাদের সঠিক ধারণা
পৃষ্ঠা:৩৩
দিতে ব্যর্থ হয়ে থাকেন তো সেই দায়িত্বের পুরোটা তিনিই নিয়ে থাকেন, নতুন করে লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারে আমাদের বুঝিয়ে দেন। “তারপর তিনি পুনঃনির্দেশনার দিকটিকে দুটো অংশে ভাগ করেন। প্রথম অর্ধে তিনি আমার ভুলের দিকে মনোযোগটা দেন মূলতঃ। তবে দ্বিতীয় অংশে তিনি আমার দিকেই বেশি মনোযোগ দেন।” “এমনটা তিনি কখন করেন বললেন?” নোট নিতে নিতে প্রশ্ন করল তরুণ। “যখনই তিনি খেয়াল করেন আমি ভুলটা করেছি। বিষয়টা তিনি আমাকে এসে জানান, আর আমরা দুজন মিলে তা শুধরে ফেলার উপায় নিয়ে কথা বলতে পারি তখন। তিনি খুবই নির্দিষ্টভাবে কাজটা করেন। “তারপর তিনি আমাকে স্পষ্টভাবে জানান এই ভুলের কারণে তার অনুভূতিটা কেমন হচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত চুপ করেও থাকেন তিনি, এতে করে আরও শক্ত করে চেপে বসে ব্যাপারটা আমার ওপর। এই এক মুহূর্তের নীরবতা অনেকটাই গুরুত্ব রাখে বলে আমার ধারণা।” “কেন?” “কারণ এই নীরবতার কারণে আমি নিজের ভুলটা সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন হয়ে উঠি, এটার প্রভাব হিসেবে আমার আর আমার প্রতিষ্ঠানের কী হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে পারি।” “কতক্ষণ ধরে চলে এই নীরবতা?” “কয়েক সেকেন্ডের বেশি কখনোই নয়, তবে যদি আপনি ঐ নীরবতা হজম করার অবস্থানে থাকেন তো মনে হতে পারে আরও অনেক বেশি সময় ধরে চলছে অমনটা।” বলে চললেন জন, “পুনঃনির্দেশনার দ্বিতীয়ার্ধে তিনি আমাকে মনে করিয়ে দেন এমন ভুল করার মতো লোক আমি নই, আমার ওপর সেই আত্মবিশ্বাস তাঁর আছে। পরিষ্কারভাবে বলে দেন এমন ভুল তিনি আমার থেকে দ্বিতীয়বার আশা করেন না, তিনি সত্যিই আমার সঙ্গে কাজ করতে চান।”
পৃষ্ঠা:৩৪
“শুনে তো মনে হচ্ছে এই পুনঃনির্দেশনার জন্য আপনাকে দুবার করে নিজের ভুলটা নিয়ে ভাবতে হয়।” মাথা দোলালেন জন, “তা হয়।” “এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনার মূল ব্যাপারগুলো আমাকে একবার বলবেন?” “নিশ্চয়। তিনি আমাকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেন আমি কোন জায়গায় ভুলটা করেছি। এতে করে আমি বুঝতে পারি তিনি আমাদের সবার ওপরের পদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি চান না আমি কিংবা আমার টিম ফালতু কাজের জন্য বাইরে পরিচিতি পাক। “যেহেতু, পুনঃনির্দেশনার ব্যাপারটা তিনি শেষ করেন তাঁর কাছে আমার আর আমার দলের মূল্যটা বলে, তাই অতটা নেতিবাচকভাবে নিতেও পারি না বিষয়টা। একারণে অযথা আত্মরক্ষা করার বদঅভ্যাসটা গড়ে ওঠেনি কখনো। অন্য কারও ঘাড়ে দোষটা চাপিয়ে নিজের ওপর থেকে দায়িত্ব সরিয়ে দেওয়ার চিন্তাও মাথায় আসেনি কোনোদিন। “সেই সঙ্গে তিনি যেহেতু লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে বুঝিয়ে না দিতে পারার দায়িত্বটা নিজেই নেন, আমরা বুঝতে পারি তিনি নিরপেক্ষ এক আচরণই করছেন। “পুনঃনির্দেশনার ব্যাপারটা যেহেতু মাত্র এক মিনিট নেয়, খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায় জিনিসটা। কিন্তু আপনার মনে থাকবে বিষয়টা, অবশ্যই। আর এটা ইতিবাচক এক ঢঙে শেষ হয় বলেই আপনি চেষ্টা করবেন দ্রুত লাইনে ফিরে আসতে।” “বুঝতে পারছি কীসের কথা বলছেন,” তরুণ ছেলেটি বলল, “আসলে আমিও তাঁকে একটা প্রশ্ন করে ফেলেছিলাম…” মাঝপথে বাধা দিলেন জন, “প্লিজ বলবেন না যে আপনি তাঁকে আপনার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছিলেন?” “ঠিক ঐটাই করেছিলাম রে ভাই,” লজ্জায় পড়ে গেল তরুণটি।
পৃষ্ঠা:৩৫
“তবে তো আপনিও জানেন কিছুটা বুঝতে পারছেন। এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা গ্রহীতার জায়গায় থাকার ঝাল একবার হজম করে এসেছেন দেখা যাচ্ছে। যদিও আপনারটা ছিল খুবই হালকা- পাতলা, এই যা।” “এখানে যারা অনেকদিন ধরে কাজ করছে তারা এই নিয়মটা জানে। নতুন কাউকে সব সময় হালকা ‘পুনঃনির্দেশনা’ দেওয়া হয়। বেশি দিলে নিরুৎসাহিত হয়ে কেটে পড়বে, তাই। মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের মধ্য থেকে সেরাটা বের করে আনাই আমাদের দায়িত্ব।” “হতে পারে আমারটা ‘হালকা’ ছিল, তবে আমার মনে হয় না আর জীবনে তাকে গিয়ে বলব এমন কিছু।” সেই সঙ্গে যোগ করল সে, “তিনি কি কখনোই ভুল করেন না? তাকে বড় বেশি নিখুঁত মনে হচ্ছে আমার।”“অবশ্যই তিনি ভুল করেন।” হেসে ফেললেন জন, “তিনিও তো মানুষ। তবে ভুল যদিও বা করেন, তিনি সবার আগে সেটা স্বীকারও করে নেন। “এমনকি, তাঁর কোনো ভুল চোখে পড়লে তা জানানোর জন্য তিনি আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। এমন কিছু ধরতে পারা খুবই দুর্লভ ঘটনা, তবে তিনিও স্পষ্টভাবে জানিয়ে রেখেছেন এমন করা হলে ভবিষ্যতে তিনি কম ভুল করবেন। সেজন্য ভুল চোখে পড়লে জানানোটাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এটা একটা কারণ যে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আমরা পছন্দ করি।“প্রায় সময় তিনি বেশ গম্ভীর, তবে মাঝেমধ্যে দারুণ কিছু কৌতুকও ছাড়েন। এটা আমাদের জন্য একটা স্বস্তি।“যেমন ধরুন, আমি ভুল করলে সেটা তিনি খপ করে ধরে ফেলেন। তবে মাঝেমধ্যে পুনঃনির্দেশনার দ্বিতীয় অংশটা তিনি আমাকে দেন না। তখন সেটা নিয়ে আমি কৌতুক করি।” “আপনি সত্যিই এমনটা করতে পারেন?”
পৃষ্ঠা:৩৬
“মানে, তার আগে অবশ্যই আমি একটু সময় নেই। এই সময়ের মধ্যে ভেবে দেখি ঠিক কোন জায়গায় ভুলটা করেছি, কীভাবে তা শুধরে নিতে হবে ইত্যাদি। “এই তো সেদিন, উনাকে ফোন করে বললাম যে নিজের ভুলটা আমি বুঝতে পেরেছি। এমনটা আর কখনোই ঘটবে না। তারপর বলেই ফেললাম, পুনঃনির্দেশনার আশ্বস্ত করার অংশটা তিনি সেদিন বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। ওটা এখন বললে আমি একটু ভালো বোধ করতাম।” “তারপর? তিনি কী বললেন?” “হাসলেন। ক্ষমা চেয়ে বললেন তিনি আসলে বলতে চেয়েছিলেন এখনও আমার ওপর ভরসা আর আত্মবিশ্বাস তাঁর আছে। আমার সত্যিই ভালো লেগেছিল শুনে।” “আমার বেশ চমকপ্রদ লাগছে বিষয়টা।” তরুণটি স্বীকার না করে পারল না। “হ্যাঁ, উনার রসিকতাবোধ আমাদের জন্য তো উপকারি বটেই, উনার জন্যও জরুরি। আমাদের তিনিই শিখিয়েছেন কোনো ভুল করে ফেললে সেটা নিয়ে নিজেরা হাসাহসি করে ওটা ভুলে যেতে, আরও ভালো কাজ করতে।” “দারুণ তো! আপনারা এটা করতে শিখলেন কী করে?” “নিজে কোনো ভুল করে ফেলার পর তাঁকে এমনটা করতে দেখে।” মছেলেটি বুঝতে পারল এমন ম্যানেজার কেমন মূল্যবান হয়ে উঠতে পারেন। “আমি খেয়াল করলাম তৃতীয় রহস্যটি ওয়ান মিনিট সিস্টেমের প্যাটার্নের মধ্যেই পড়ছে। লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার কারণে আপনারা বুঝতে পারছেন কোন বিষয়গুলোর ওপর মনোযোগ দিতে হবে। প্রশংসা করার কারণে আপনাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে, সেজন্য সফলতাও পাচ্ছেন দ্রুত। সেই সঙ্গে পুনঃনির্দেশনার ব্যাপারটা আপনাদের
পৃষ্ঠা:৩৭
ভুলগুলোকে চোখের সামনে নিয়ে আসছে। এই তিনে মিলে কর্মীদের ভালো একটা অনুভূতি দিচ্ছে, ফলে ফলাফলটাও আসছে আশানুরূপ। “কিন্তু লক্ষ্য নির্ধারণ, প্রশংসা আর পুনঃনির্দেশনার মিশ্রণ এমন দারুণ ফলাফল কীভাবে আনছে তাই বুঝতে পারলাম না।” “এই প্রশ্নটা সরাসরি আমাদের নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারকেই করবেন আপনি।” উঠে দাঁড়ালেন জন, দেখা করতে আসা ছেলেটিকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। এই সময়টা তাকে দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে সে-ও ভুলল না। মুচকি হাসলেন জন, “আমার মনে হয়, এর উত্তরে আমি কী বলব তা এরই মধ্যে আপনার জানা আছে।” দুজনেই হেসে ফেলল এবার। তরুণ ছেলেটির মনে হলো সে তাদেরই একজন, বহিরাগত কেউ নয়। এতে করে বেশ ভালো লাগল তার। হল রুমে বের হয়ে সে খেয়াল করল অতি অল্প সময়েই কত বেশি তথ্য তাকে জন লেভি দিয়েছেন। নোটখাতায় কিছু তথ্য লিখে ফেলল সে। এতে করে এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা ব্যবহার করা তার জন্য সুবিধের হবে।
পৃষ্ঠা:৩৮
যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা: কাজে দেবে যখন-
প্রথম অর্ধ-মিনিট
১. যত দ্রুত সম্ভব কর্মীদের নতুন নির্দেশনা দিতে হবে।
২. প্রথমেই প্রমাণিত তথ্য নিয়ে কাজ করতে হবে, সেই সঙ্গে ভুলটির বিশ্লেষণ করতে হবে সুনির্দিষ্টভাবে।
৩. ভুলটি করার ব্যাপারে কিংবা এর ফলাফল সম্পর্কে আপনার চিন্তাধারা কেমন তা মুখে বলতে হবে।
বিরতি
৪. কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ হয়ে যেতে হবে, যেন বাকিরা উপলব্ধি করতে পারে কেমন ভুলটা করেছে।
দ্বিতীয় অর্ধ-মিনিট
৫. কর্মীদের মনে করিয়ে দিতে হবে তারা এই ভুলটা করার মতো অযোগ্য না, ব্যক্তি হিসেবে তাদের ওপর এখনও আপনি ভরসা রাখছেন।
৬. তাদের কাজের ওপর আপনার আস্থা এখনও বজায় আছে, সফলতাগুলোকে এখনও সমর্থন জানাতে আপনি প্রস্তুত।
৭. ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে, পুনঃনির্দেশনা দেওয়া শেষ হলেই এই বিরূপ আচরণটা শেষ হয়ে যাবে।
পৃষ্ঠা:৩৯
এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনার তাৎপর্য ছেলেটি বুঝত বলে মনে হয় না, তবে এমন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তো তাকেও যেতে হয়েছে। যদিও জানে তার ওপর পুনঃনির্দেশনার ধাক্কাটা অল্পের ওপর দিয়ে গেছে, তার পরও আরেকটা পুনঃনির্দেশনা শোনার শখ তার মিটে গেছে। কিন্তু সে জানে, ভুল সবাই করতে পারে। এমন এক ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে এলে বড় কোনো ভুল যদি সে করে ফেলে, তাহলে তাকে বড় ধরনের পুনঃনির্দেশনা হজমও করতে হবে। অথচ ভাবনাটা তাকে চিন্তায় ফেলে দিল না, কারণ সে এটাও জানে এমন কিছু ঘটলে তা ন্যায়সংগত পথেই হবে। ম্যানেজারের অফিসে ফিরে যাওয়ার সময় ওয়ান মিনিট ম্যানেজমেন্টের চমকপ্রদ দিকগুলো নিয়ে সে ভাবছিল। এই পদ্ধতিটা নতুন পৃথিবীর জন্য কেমন করে বদলে দেওয়া হয়েছে তা সত্যই বিস্ময়কর। এই তিন রহস্য বুঝতে তরুণের বিশেষ সমস্যা হলো না। এমনই তো হওয়ার কথা। কিন্তু যেটা সে বুঝতে পারেনি, এই পদ্ধতিটা কাজ করছে কীভাবে? এখনও নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার কী করে কোম্পানির সবচেয়ে বেশি উৎপাদন নিয়ে আসা, সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত ম্যানেজার হয়ে রয়েছেন কি করে?
পৃষ্ঠা:৪০
দ্য নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারের ব্যাখ্যা: ম্যানেজারের অফিসে ফিরে আসার সাথে সাথে কোর্টনি জানাল, “আপনি তার সঙ্গে আবার দেখা করতে আসবেন বলেই স্যার ধারণা – করেছিলেন।”ঘরের ভেতর ঢুকে তরুণটি আরও একবার লক্ষ করল কেমন গুছানো আর খোলামেলা এই অফিসটি। উষ্ণ হাসিতে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন ম্যানেজার, “কেমন জানতে পারলেন ঘোরাফেরা করে?” “অনেক, অনেক কিছুই।” “বলুন তাহলে, নতুন কী আবিষ্কার করলেন?”“জানলাম কেন আপনাকে নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার বলে ডাকা হয়, কারণ সফলতার প্রতিটা রহস্য আপনি সময়ের সঙ্গে পাল্টে ফেলতে সক্ষম। আপনি নিজের দলের সবাইকে নিয়ে এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন, নিশ্চিত করেন প্রত্যেকে কোন দায়িত্বটুকুর জন্য জবাবদিহিতা করবে, জানিয়ে দেন ভালো কাজ বলা হবে কেমন কাজকে। “তারপর আরও আছে, আপনি কর্মীদের সঠিক কাজ করার সময় ধরে ফেলেন। তখন এক মিনিটের জন্য তাদের প্রশংসায় ভাসান। আবার কাউকে কোনো ভুল করতে দেখলে এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা দেন।” “সব মিলিয়ে আপনার কেমন মনে হলো?” “আমার যেটা অবাক লেগেছে তা হলো, কত অল্প সময়ে এই সবগুলো কাজ করে ফেলা যাচ্ছে! কিন্তু কাজ করছে পদ্ধতিটা, এটাই বিস্ময়।” একটু নড়েচড়ে বসল ছেলেটা, “জানি না এই প্রশ্নটা করে
পৃ্ষ্ঠা ৪১থেকে৫০
পৃষ্ঠা:৪১
অভদ্রতা করে ফেলব কি না, কিন্তু আপনি কি সত্যিই মনে করেন ম্যানেজার হিসেবে আপনার যে দায়িত্ব তা এই এক মিনিটের কাজকর্মেই শেষ করে ফেলতে পারছেন?”হেসে ফেললেন ম্যানেজার, “অবশ্যই না। কিন্তু এর মাধ্যমে আমি অনেক জটিল কাজকে সহজে করে ফেলতে পারছি। মাঝে মাঝে এক মিনিটই লক্ষ্যমাত্রার দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট। অথবা, অন্যদের মূল্যায়ন করার জন্য এর বেশি সময়ের দরকার নেই। এই তিন পদ্ধতিতে আমাদের মোট কাজের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ হয়তো হয়ে যাচ্ছে, তবে এতে করে আমাদের বাকি ৮০% কাজ সফলভাবে শেষ করা সহজ হয়ে যায়। এটা সেই পুরানো ৮০/২০ সূত্র।” একটু থেমে জানতে চাইলেন ম্যানেজার, “আর কী খেয়াল করলেন আপনি!”“এখানে যারা কাজ করছে, তাদের প্রত্যেকেই নিজের কাজটাকে দারুণ উপভোগ করে। সেই সঙ্গে আপনিও ওদের সহযোগিতা করে অসাধারণ সব ফলাফল আনার ক্ষেত্রে সবাই মিলে ভূমিকা রাখেন। আমার অন্তত এটুকু ধারণা হয়েছে, এতে করে আপনি সন্তুষ্ট থাকতে পারছেন।”ম্যানেজারের গলায় এবার আশ্বাসের ছোঁয়া, “আমার মনে হয় আপনিও সন্তুষ্ট হতেন।”“হয়তো। কিন্তু আমার মনে হয় এই রহস্য তিনটা কেন কাজ করছে তা জানতে পারলে আমার জন্য বিষয়টা বোঝা সহজ হয়ে উঠত।” “অবশ্যই, এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য আসলে। কোনোকিছু কীভাবে কাজ করছে তা যখন আমরা বুঝতে পারি, সেটা গ্রহণ করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে ওঠে। তবেই না আমরা তা ব্যবহার করায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। “আসুন, আপনাকে একটা জিনিস দেখাই। এটা আমি প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দেই।”
পৃষ্ঠা:৪২
কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে আরও একবার এগিয়ে যেতে হলো তরুণ ছেলেটিকে। ওখানে স্ক্রিনসেভার হিসেবে ঝুলছে একটা বাক্য, “যে মুহূর্তটা আমি কর্মীদের ওপর বিনিয়োগ করছি সেটাই আমার খরচ করা শ্রেষ্ঠ সময়।” “কোম্পানিগুলোর প্রায় সবগুলোই তাদের বিনিয়োগের পুরোটা করতে চায় কর্মীদের বেতন-ভাতার ওপর। মানুষকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ নগণ্য। এটাকে একরকম আয়রনিকই বলা চলে। তাছাড়া দেখুন, কোম্পানিগুলো কী করছে? তাদের সব খরচের খাত হিসেবে তারা বিনিয়োগ করছে বিল্ডিংগুলোয়, প্রযুক্তিতে, যন্ত্রপাতির ওপর। মানুষের ওপর বিনিয়োগ কোথায়?” “এমন করে তো কখনো ভেবে দেখিনি।” তরুণ ছেলেটি স্বীকার করল, “কিন্তু আপনার কথায় যুক্তি আছে। ফলাফলটা যেহেতু দিন শেষে নিয়ে আসছে এই মানুষগুলোই, কাজেই তাদের ওপর বিনিয়োগ করাটাই সবচেয়ে বেশি কার্যকর আর যুক্তিযুক্ত হওয়ার কথা।” “সেটাই। যখন আমি চাকরি করতে প্রথম ঢুকেছিলাম, তখন কেউ যদি এভাবে আমার ওপর বিনিয়োগ করত!” ম্যানেজার এবার আরও এক রহস্য উন্মোচন করলেন যেন। “মানে?” প্রশ্ন রাখলো তরুণ। “যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমি এর আগে কাজ করেছি, কোনোবারই আমি জানতাম না ঠিক কী করার জন্য এখানে আমি আছি। কেউ আমাকে সেটা বলার দরকার বোধ করেনি। যদি তখন আপনি আমাকে প্রশ্ন করতেন নিজের কাজটা কেমন করছি আমি? উত্তরে হয়তো বলতাম, ‘ঠিক করে বলতে পারব না,’ নয়তো, ‘মনে হয় তো ভালোই করছি।’ তারপর আমাকে প্রশ্ন করতেন, ‘কেন আপনার এমনটা মনে হলো?’ আমি উত্তরে বলতাম, ‘কারণ শেষ কয়েকদিন ধরে বসের ঝাড়ি খাইনি।’ অথবা, ‘খুব খারাপ কোনো খবর আমার কানে আসেনি।’ ব্যাপারটা খেয়াল করুন, আমার মূল প্রণোদনা হলো শাস্তি এড়ানো।”
পৃষ্ঠা:৪৩
ছেলেটা বলল, “এখন বুঝতে পারছি আপনি কেন অন্যদের তুলনায় ভিন্নভাবে ম্যানেজ করছেন সবকিছু। কিন্তু এখনও আমার কাছে তিন রহস্যের কার্যকারিতার যুক্তিটা স্পষ্ট হলো না। “যেমন ধরুন, এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করাটা কীভাবে ফলাফলে ভূমিকা রাখছে?”
পৃষ্ঠা:৪৪
এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা কেন কাজ করে: “তাহলে আপনি জানতে চান, এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা কেন কাজ করে?” ম্যানেজার যেন তরুণের প্রশ্নটারই প্রতিধ্বনি তুললেন, “বেশ।” উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে শুরু করলেন তিনি।“তাহলে আপনাকে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক, এতে করে আপনার জন্য বোঝাটা সহজ হবে। এর আগে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আমি অসংখ্য হতাশামগ্ন কর্মী দেখেছি। অনেকগুলো বছর ধরে এদের দেখতে হয়েছে আমাকে। কিন্তু অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের কাউকে হতাশ বলে মনে হয়নি আমার। “অনেকগুলো বছর আগের কথা অবশ্য, একদিন রাতে আমি বোলিং খেলতে গেছি ক্লাবে, দেখলাম আমার আগের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা কিছু ঝামেলাবাজ কর্মকর্তা সেখানে আছে। সহজ একটা কাজ করতে গিয়েও এরা প্রচুর ঘোল খায় এবং খাওয়ায় সবাইকে। ঝামেলাবাজদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যেটা, সেটাকে দেখলাম বোলিং করতে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপর আচমকা সে খুশিতে লাফাতে শুরু করল, নানারকম আনন্দধ্বনিও বেরিয়ে আসছিল তার মুখ থেকে। তার আনন্দের কারণটা কী বলে মনে হয় আপনার?” “নিশ্চয় সে সবগুলো পিন ফেলে দিতে পেরেছিল?” “ঠিক ধরেছেন একদম। কিন্তু সে বা তার মতো আর যারা আছে, এরা কেউ কেন অফিসের সময়টায় এমন উত্তেজনা নিয়ে কাজ করতে পারে না?” একটু ভাবল তরুণ, তারপর উত্তরটা করল। “কারণ, ওরা তো অফিসের কাজের সময় জানে না পিনগুলো কোথায় আছে, অথবা
পৃষ্ঠা:৪৫
কীসের দিকে তাক করছে তাদের বোলিং বল। বুঝতে পেরেছি আমি এখন ব্যাপারটা। ওরা যদি পিনগুলো দেখতেই না পায়, তবে কতক্ষণই বা আর বোলিং করতে ভালো লাগবে?” “সঠিক পর্যবেক্ষণ।” ওয়ান মিনিট ম্যানেজার বললেন, “আমার মনে হয়েছে প্রায় সব ম্যানেজার যদিও বা মনে করেন কর্মীদের ঠিকমতো দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন, আসলে তখনো কর্মীদের অনেকেই ব্যাপারটা ঠিকমতো বুঝে ওঠেনি।” “ক্ষতিটা খেয়াল করুন, যখন আপনি স্রেফ মনে করছেন কর্মীরা সবটুকু ঠিকমতো জানে, অথচ তারা তা জানে না, এতে করে একটা অকার্যকর বোলিং গেম খেলার মতো ঘটনা ঘটছে। আপনি পিনগুলো সব দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বোলার এসে দেখছে পিনের সামনে চাদর ঝোলানো। এতে করে বোলিং করার পর সে শব্দ ঠিকই শুনছে, তবে পিন কয়টা পড়ল তা বুঝতে পারছে না। এজন্যই আসলে আপনি যখন তাকে গিয়ে প্রশ্ন করবেন, ‘কেমন করছেন?’ উত্তরে সে বলবে, ‘ জানি না তো ঠিক। তবে ভালো লাগছে।’ এই হচ্ছে গিয়ে অবস্থা। “বলা যায় এটা অনেকটা রাতের বেলায় গলফ খেলার মতো। আমার অনেক বন্ধু গলফ খেলাই ছেড়ে দিয়েছে। জানতে চেয়েছিলাম এমনটা করার কারণ কী। ওরা জানিয়েছিল, কোর্সগুলোয় ভিড় খুব বেশি। তাই বলেছিলাম, তাহলে রাতে খেললেই পার। ওরা হেসে ফেলেছিল। রাতে খেলা যায় নাকি তাই! দেখাই তো যাবে না বলটাকে মেরে কোনদিকে পাঠাতে হবে। “অনেকটা টিম স্পোর্টসের মতোও বলা যায়। দুই দলকে লড়াই করতে দেখতে মানুষের ভালো লাগে। কিন্তু যদি তাদের কারো কোনো স্কোর করার সুযোগ না থাকে, কতক্ষণ দেখবে দর্শক?” “তা তো বটেই। কিন্তু এমনটা কেন হয়?” তরুণ ছেলেটি জানতে চাইল। “কারণ, মানুষের কাজে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলো ফলাফলের সঙ্গে তার কাজের সম্পর্কটা বুঝতে পারা। তারা জানতে চায়, কেমনটা করছে নিজেরা।
পৃষ্ঠা:৪৬
“আরও বড় একটা কথা আমাদের এখানে প্রচলিত আছে, চাইলে আপনি নোট করে নিতে পারেন। কথাটা গুরুত্বপূর্ণ: প্রতিক্রিয়া জানতে পারাই বিজয়ীর মূল অনুপ্রেরণা। কারণ, প্রতিক্রিয়া জানার মাধ্যমেই আমরা এগিয়ে যেতে পারি। “দুঃখের ব্যাপারটা কি জানেন? অনেক ম্যানেজার ফলাফলের সঙ্গে কাজের সম্পর্কটা জানানোর গুরুত্বটা বোঝেন। অথচ তাঁরা তৃতীয় আরেক উপায়ে বোলিং গেম শুরু করেন তারপর। অর্থাৎ, আগের মতোই পিনের সামনে চাদর মেলে দেওয়া হয়, তবে এখানে ম্যানেজার নিজে দাঁড়ান চাদরের পেছনে। কর্মীদের কেউ বোলিং করার পর যখন শব্দ হয়, তিনি আঙুল তুলে দেখান। দুটো আঙুল তুলে হয়তো বোঝান, ‘হ্যাঁ, দুটো ফেলেছ তুমি।’ কিন্তু, ঘটনা হলো, ম্যানেজাররা সাধারণত আপনাকে বলবেন না যে আপনি দুটো পিন ফেলতে পেরেছেন। তারা বলবে…” “…আপনি আটটা পিন মিস করেছেন!” উত্তেজনা নিয়ে বলল তরুণ। “একদম ঠিক ধরেছেন!” উচ্ছ্বাসভরা কন্ঠে বললেন ম্যানেজার। “আমি সব সময় যে প্রশ্নটা করি, কেন ম্যানেজার সাহেব চাদরটা সরিয়ে দিচ্ছেন না একেবারে? তাহলে দুই পক্ষই জানতে পারলেন কে কেমন করছেন। উত্তরটা হলো, তিনি বিরাট ব্যবসায়ী ঐতিহ্য পারফর্ম্যান্স রিভিউ জুজুর জন্য অপেক্ষা করছেন।” “পারফর্ম্যান্স রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা?” “অবশ্য, দেখুন, কর্মীরা কখন জানতে পারেন যে তাদের কাজগুলোর কোন অংশটা ভুল ছিল? পারফর্ম্যান্স রিভিউয়ের পর পর। তাই না? “তারপর যখন সেই মানুষটাকে বলা হয় আপনি প্রমোশনের জন্য মনোনীত হননি, বা বোনাস পাওয়ার আশা এবার ছেড়ে দিন, লোকটার মনের অবস্থা কেমন হয় চিন্তা করুন। এমন কিছু শোনার কতক্ষণের মধ্যে তারা অন্য কোনো চাকরি না নেওয়ার জন্য আক্ষেপ করে?” “এর উত্তর আমি জানি,” কৌতুকময় কণ্ঠে বলল তরুণ, “এক মিনিট!”
পৃষ্ঠা:৪৭
ম্যানেজারও হাসলেন। “কিন্তু ম্যানেজাররা তাদের কর্মীদের এমন অত্যাচার কেন করেন, বলুন তো?” “যেন ম্যানেজার হিসেবে তাদের সফল মনে হয়, তাই।” “সেটা কীভাবে?” “ঐ ম্যানেজার যদি তার অধীনস্ত সবাইকে পারফর্ম্যান্স রিভিউয়ে টপ মার্কস দেয়, তার বসেরা কী মনে করবে?” “এই লোক ভালো আর খারাপ পারফর্ম্যান্সের পার্থক্য বোঝে না।” “তেমনটাই মনে করার কথা, তাই না?” ম্যানেজার উত্তর দিলেন, “নিজেকে ম্যানেজার হিসেবে দারুণ কিছু প্রমাণ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু মানুষকে ভুল করার সময় ধরে ফেলতে হবে। তাহলে আপনি কিছু বিজেতা পাবেন, কিছু পাবেন হারু পার্টি। বাকিদের দেখাবেন মধ্যম শ্রেণিতে। “আমার ছেলের সঙ্গে একবার স্কুলে গিয়েছিলাম। ওদের ভূগোলের ম্যাডামকে দেখলাম ক্লাস ফাইভের ক্লাসে একটা পরীক্ষা নিচ্ছেন। উনাকে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, সবাইকে ম্যাপ বের করে পরীক্ষা দিতে দিচ্ছেন না কেন তিনি? উত্তরে মহিলা বলেছিলেন, ‘তাহলে তো সবাই ১০০ পাবে।’ উনার কথা শুনে মনে হয়েছিল সবাই এ+ পেলে সেটা খুবই খারাপ কিছু হবে!” “সবাই নিজেদের হাতের কাছে যা আছে তা ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ফলাফল নিয়ে আসতে নাও পারে। এতে করে সবাই হয়তো এ+ পাবে না, তবে সবাই জিততে পারে। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করলে সমস্যা কোথায়?” ম্যানেজার বলে চললেন, “আমার মনে পড়ে একবার একটা বইয়ে পড়েছিলাম, আইনস্টাইনকে তার ফোন নম্বর জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সেই উত্তর দিতে পারেননি। তখন সবাই নিজের ফোন নাম্বার মুখস্থ করে রাখতে জানত অন্তত।
পৃষ্ঠা:৪৮
“তিনি বলেছিলেন, অপ্রয়োজনীয় তথ্য তিনি মাথার মধ্যে জমা করে রাখেন না। ফোন নাম্বারটা তাঁকে বলতে হয়েছিল ফোনবুক ঘেঁটে। কিন্তু দেখুন, আজকের দিনে কেউ যদি নিজের ফোন নম্বর বলার জন্য ফোনবুক ঘাঁটে, তাকে আমরা কী বলব? জিনিয়াস না বোকাচন্দ্র?” হেসে ফেলল তরুণ, “বোকাচন্দ্রই বলব বটে।” “অবশ্যই। আমিও তাই বলতাম মনে হয়। কিন্তু আমরা দুজনই এক্ষেত্রে ভুল বলে প্রমাণিত হতাম, তাই না?” মাথা দুলিয়ে তার মতে সায় দিল তরুণ ছেলেটি। “আমাদের মধ্যে যে কেউ ভুল করতে পারে।” ম্যানেজার বললেন, নিজের কম্পিউটারে আরেকটা জিনিস দেখতে ডাকলেন তিনি, “এটা দেখে যান।” “সবাই সম্ভাব্য প্রতিভা। কেউ কেউ বোকা সেজে থাকে, তাদের বাহ্যিক অবস্থা দেখে ভুল বুঝবেন না।” “বুঝতেই পারছেন,” ম্যানেজার বলে গেলেন, “ম্যানেজার হিসেবে আসলে আপনার সামনে তিনটা পথ খোলা আছে। প্রথমত, আপনি প্রতিভাদের ভাড়া করতে পারেন। তাদের খুঁজে বের করা কঠিন, সেই সঙ্গে তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য টাকাই খরচ হয় বেশি। আবার, দ্বিতীয়ত, আপনি যদি প্রতিভাদের খুঁজে না পান, তবে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কাউকে আপনি খুঁজে বের করতে পারেন। তারপর নিয়মমাফিক তাদের সহযোগিতা করবেন যেন তারাই বিজয়ী হয়ে উঠতে পারে।” “আর যদি আপনি প্রথম দুটোর কোনোটাই করতে না চান, তাহলে খোলা থাকে তিন নম্বর পথটাই। আমি এখনও অবাক হয়ে খেয়াল করি কত শত ম্যানেজার এই দুই পথে না হেঁটে তৃতীয় পথটাই বেছে নেন! সেটা হলো দোয়া করা।”
পৃষ্ঠা:৪৯
“দোয়া করা?” নিঃশব্দে হাসলেন ম্যানেজার, “এটা স্রেফ কৌতুক করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যদি আপনি খুব ভালো মতো ভাবেন, ওরা এই দোয়া প্রতিদিন করে যাচ্ছে, ‘খোদা, এই নতুন লোকটাকে দিয়ে যেন কাজ হয়। খোদা’!” হেসে ফেলল তরুণও, “কিন্তু আপনি যদি বিজয়ী প্রতিভাদেরই ভাড়া করেন, তাহলে ওয়ান মিনিট ম্যানেজার হওয়াও তো সহজ হয়ে যায় অনেক?” “তা তো নিশ্চয়।” মুচকি হাসল ম্যানেজার, “প্রতিভাবান আর বিজয়ীদের ডেকে এনে একবার এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রাটা বুঝিয়ে দিলেই তারা বাকিটা সেরে ফেলবে।” “জন লেভির সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, তাঁর সঙ্গে আপনাকে এটুকুও করতে হয় না।” “ঠিকই ধরেছেন। তাঁর সঙ্গে আর দেখা-সাক্ষাতের দরকারই পড়ে না, এমন এক অবস্থা। তবে ঘটনা হলো, বিজেতা বা সম্ভাব্য বিজেতা, সবাইকেই এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রার মাধ্যমে উৎপাদনশীল মানসিকতায় আনা সম্ভব।” “কিন্তু যে-ই এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তুত করে থাকুন না কেন, কাজ শেষ করার তারিখসহ মাত্র এক পাতায় লিখে একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা কি সবার জন্যই জরুরি?” “অবশ্যই।” “কিন্তু কেন?” “এতে করে মানুষ দ্রুত তাদের লক্ষ্যমাত্রাটা দেখে নিতে পারবে, সেই সঙ্গে কাজের সঙ্গে লক্ষ্যটা মিলিয়ে নিতে পারবে।” “আমার মনে হয় আপনারা কেবল মূল লক্ষ্যমাত্রা আর দায়িত্বগুলোই লিখেন। তার সঙ্গে চলে আসা আনুসঙ্গিক বিষয়গুলো এড়িয়ে যান।”
পৃষ্ঠা:৫০
“হ্যাঁ। কারণ, আমি চাই না কোথাও একশ একটা লক্ষ্য লিখে ড্রয়ারে চাপা দিয়ে রাখা হোক। তারপর বছরে একবার বের করে পারফর্ম্যান্স রিভিউ করা হোক তা দিয়ে। আমাদের কর্মীদের সবাই তাদের রিমাইন্ডারগুলো চোখের সামনেই রাখতে পছন্দ করে, আপনি মনে হয় খেয়াল করে থাকবেন।” একটা কার্ড তুলে তার দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি। ওতে লেখা হয়েছে- এক মিনিটের জন্য লক্ষ্যগুলো দেখুন, তারপর খেয়াল করুন আপনি কি করছেন। মিলিয়ে নিন লক্ষ্যচ্যুত হয়েছেন কি না। শব্দগুলোর সাধারণত্ব তরুণকে মুগ্ধ করল। “আমি কি এই কার্ডের একটা প্রতিলিপি সঙ্গে রাখতে পারি?” “অবশ্যই।” অনুমতি দিলেন ম্যানেজার। মাত্র শেখা বিষয়গুলো নিয়ে নোট নিতে নিতে বলল সে, “এত অল্প সময়ে ওয়ান মিনিট ম্যানেজমেন্টের সবকিছু মনে রাখাটা একটু কঠিনই। এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আরও কথা বলতে পারলে ভালো লাগত, কিন্তু আমরা কি এখন এক মিনিট প্রশংসার কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে পারি?” “মানে, আপনি জানতে চান তারা কীভাবে কাজ করে, এইতো?” “বলতে চাইছিলাম, সবাই তো চায় তাদের প্রশংসা করা হোক। কিন্তু কয়েকটা দিন পার হয়ে যাওয়ার পর ওরা কেন মনে করে না প্রশংসাগুলো আসলে মিথ্যে?” প্রশ্নটার উত্তর এলো ম্যানেজারের তরফ থেকে, “এটা নির্ভর করছে প্রশংসাকারীর ওপর। প্রশংসা যদি ভালো কাজের প্রেক্ষিতেই হয় এবং আন্তরিক, তাহলে তেমনটা মনে করার কথা নয় কারো।
পৃ্ষ্ঠা ৫১থেকে৬০
পৃষ্ঠা:৫১
এক মিনিটের প্রশংসা কেন কাজ করে: “এক মিনিটের প্রশংসা কেন কাজ করে কয়েকটা উদাহরণের মাধ্যমে আপনাকে ক্লিয়ার করা যাক,” ম্যনেজার বললেন। “আমার তেমনটা জানতে ভালোই লাগবে।” তরুণটি সায় দিল। “একটা উদাহরণ হতে পারে যখন বাবা-মা সন্তানদের হাঁটা শেখানোর চেষ্টা করেন। যখন একটা ছেলেকে দাঁড় করিয়ে আপনি বলবেন ‘হাঁটো তো বাবু,’ তারপর সে পড়ে যাওয়ার পর তাকে আপনি ধমকে উঠে বলবেন, ‘বলেছিলাম হাঁটতে, পড়লে কেন?’ “না, তেমনটা আপনি বলবেন না। বরং তাকে প্রথমদিন হোঁচট খেতে দেখে আপনি উত্তেজিত হয়ে বলবেন, ‘দাঁড়িয়েছে, বাবু দাঁড়িয়েছে!’ তারপর বাচ্চাটাকে তুলে ধরে আপনি ঠিকই চুমু খান, আদর করেন। পরদিন বাচ্চাটা দাঁড়ানোর পর হয়তো এক পা এগোতে পড়ে যায়, তবে তারপরও আপনি তাকে নিয়ে প্রবল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। “অবশেষে বাচ্চাটা যখন বুঝতে পারে সে ভালোই কাজ করছে, তখন আগের থেকে বেশি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। একদিন সত্যিই সে হাঁটতে শিখে যায়। “এমনটাই ঘটে যখন আপনি তাকে কথা বলানোর চেষ্টা করেন। ধরা যাক আপনি আপনার বাচ্চাকে দিয়ে ‘আমাকে এক গ্লাস পানি দিন তো,’ বলাতে চাইলেন। কিন্তু বাচ্চাটা ঐ বাক্যের পুরোটা বলতে শেখার। আগে যদি আপনি তাকে পানি খেতে না দেন, তাহলে সে পিপাসায় মরে যাবে না?
পৃষ্ঠা:৫২
“কাজেই আপনি তাকে বলানো শেখান “পানি, পানি।” কিন্তু একদিন বাচ্চাটা বলতে পারে ঠিকই, তবে বলে, ‘পালি!’ আপনি লাফিয়ে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে আরও একবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। দাদিকে ফোন করিয়ে বাচ্চার মুখের কাছে ফোন ধরেন যেন সে শোনাতে পারে, ‘পালি, পালি!’ সেটা তো আর পানি হলো না, কিন্তু কাছাকাছি কিছু একটা তো হলো।” “কিন্তু আপনি একুশ বছরের কোনো ছেলের থেকে রেস্তোরাঁয় ঢুকে এক গ্লাস ‘পালি’ চাওয়া আশা করতে পারেন না। কাজেই একটা সময় পর্যন্ত আপনি ‘পালি’ বলা গ্রহণ করলেও, একসময় তাকে প্লিজ বলাটা শেখাবেন। “এই উদাহরণগুলো আসলে দেখাচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা, যেটা আবার খুবই স্বাভাবিক, সহজাত। প্রথমে আপনি কাউকে সঠিক কিছু করতে ধরে ফেলে উচ্ছেসিত প্রশংসা করবেন, তারপর একদিন পাবেন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল।” “তাহলে এটা ঘটানোর উপায় হলো কাউকে সঠিক কিছুর কাছাকাছি করার সময় ধরে ফেলা। তারপর একদিন তারা ঠিক ঠিক সেই কাজটা করতে শিখে ফেলে।” “ঠিকটাই ধরেছেন,” ম্যানেজার বললেন, “কিছু লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে ফেললে ফলাফল অর্জন করা আরও সহজ হয়ে ওঠে। “কিন্তু কাজের সময় দেখবেন, যারা কাজ উদ্ধার করে দিতে পারবে তাদের ঘনঘন উৎসাহ দেওয়ার দরকার নেই। কারণ ভালো কাজ যারা জানে, তারা নিজেরাই বুঝতে পারে ভালো কাজ কোনটা। কিন্তু যারা প্রশংসা আর উৎসাহ ছাড়া নিজেদের কাজের সঠিকত্ব বুঝতে পারে না তাদের জন্য এই টোটকা বেশ কাজের।” তরুণ ছেলেটি জানতে চাইল, “এজন্য কোনো নতুন কর্মী কাজে যোগ দিলে তাদের ঘনঘন প্রশংসা করেন? অথবা প্রজেক্টের কাজ শুরু হলে অভিজ্ঞদেরও যোগাযোগের মধ্যে রাখেন?”
পৃষ্ঠা:৫৩
“ঠিক তাই। বেশিরভাগ মানেজার কর্মীদের প্রশংসা করেন কখন? যখন তারা একেবারে ঠিক ঠিক একটা কাজ করে ফেলতে পারে। তার আগে পর্যন্ত মুখটা বন্ধ রাখেন তারা, এতে করে সম্ভাব্য অনেক সফল নেতৃত্ব হারিয়ে যায়। আর এমনটা ঘটে কারণ ম্যানেজাররা চেষ্টা করে তাদের কর্মীদের ভুল কিছু করার সময় ধরে ফেলতে। এতে করে আদতে তো চূড়ান্ত ফলাফলটা আসতেই দেরি হচ্ছে।” “মনে তো হচ্ছে না এমন করে খুব কার্যকর কিছু ঘটানো সম্ভব।” তরুণ বলল। “সেটাই তো ঘটে।” “দুঃখের বিষয়টা হলো প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই নতুন, কাজ না বোঝা মানুষগুলোর সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করে। এরা ঠিকই স্বাগতম জানিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে তাদের ঢোকায়, তারপর ছেড়ে দেয় একলা। ভালো কিছু করলে প্রশংসা তো করেই না, উল্টো কিছু একটা করার চেষ্টা করলে তাদের হাত-পা আরও বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করে। “এটা অবশ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটা ভালো পদ্ধতি বলে অনেকগুলো বছর ধরে স্বীকৃত ছিল। আমি একে বলি কাউকে একা ছেড়ে হাত-পা বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি। আপনি একটা লোককে একাকী ছেড়ে দেন, সে একটা দারুণ কাজ করে দেখাবে সেই আশাতেও থাকেন। তারপর সেই লোক যদি কাজটা ঠিকমতো করতে না পারে, তাকে ধমকে দেন আরও।” “এই লোকগুলোর ভবিষ্যৎ কী?” “এদের তো দেখেছেন আপনি, এই কাজে নেমে নিশ্চয় অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে ঘুরেছেন। এতে করে আপনার ধারণা হওয়ার কথা, ও ধরনের মানুষগুলো চেষ্টা করে যত সম্ভব কম কাজ করতে।” হেসে ফেলল তরুণ, “ঠিকই বলেছেন, এমন লোককে দেখেছি আমিও। আর এমন ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে করতে ওরা একসময় নিজেদের কাজটা উপভোগ করতে ভুলে যায়।”
পৃষ্ঠা:৫৪
একমত হলেন ম্যানেজারও, “একদম ঠিকই ধরেছেন। ওরা কিন্তু তারা যা করছে তাতেও খুব একটা মনোযোগ দেয় না। ওরা কেউ পছন্দই করে না তাদের কাজটা।” ছেলেটি বলল, “এখন বুঝতে পারছি এক মিনিটের প্রশংসা কেন কাজ করছে, এর বদলে ধমক দিলে সেটা মোটেও কাজ করত না।” যোগ করল সে, “মজার একটা উদাহরণ মনে পড়ল আমার এই মাত্র। আমার বন্ধুরা সেদিন নতুন কুকুর পুষতে শুরু করেছে, কুকুরটাকে বাসাতেই ট্রেইন করার নতুন এক উপায়ের কথা বলল আমাকে, জানতে চাইল আমার ধারণা কী এ ব্যাপারে।” “আমার তো এখন ভয় করছে প্রশ্নটা করতেই,” ম্যানেজার বললেন, “ওদের পদ্ধতিটা কী ছিল?” “ওরা বলল কুকুরটা যেদিন ওদের কার্পেটের ওপর বাথরুম করে ফেলল, তাকে ধরে ওরা ঐ নোংরার মধ্যে নাক ঘষিয়ে পত্রিকা গুটিয়ে পাছায় শক্ত এক বাড়ি মেরে জানালা দিয়ে লনে ছুঁড়ে ফেলেছিল। বার্তাটা স্পষ্ট, বাড়িতে তোমার কাজ কী, থাকবে ঐ লনে।” হাসলেন ম্যানেজার, “তারপর?” “ওরা জানতে চাইল এমন প্রশিক্ষণেত্র পর কী ঘটতে পারে? আমি হাসলাম, কারণ জানতাম এর পর কী ঘটতে যাচ্ছে। হলোও তাই। তিনদিন পর কুকুরটা ঘরের মধ্যে ঢুকেছিল, কার্পেটের মধ্যে কাজ সেরে সে চুপচাপ লাফিয়ে পালিয়েছিল ওখান থেকে। কারণ, কাজটা করে ফেলার পর সে বিপদটা বুঝতে পেরেছিল পরিষ্কার। এলাকা ত্যাগ করতে হবে, তেমনটা সে টের পাচ্ছিল।” উচ্চৈঃস্বরে একমত পোষণ করলেন ম্যানেজার। “এটা তো দারুণ একটা গল্প। নতুন কেউ, যে কিছু শেখার চেষ্টা করছে তাকে শাস্তি দিলে কোনো সমাধান হয় না। অনভিজ্ঞদের শাস্তি না দিয়ে আমার মনে হয় তাদের পুনঃনির্দেশনা দেওয়াটাই বেশি কাজ দেয়। এতে করে এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে পরিষ্কার একটা
পৃষ্ঠা:৫৫
ধারণা আনা সম্ভব। তার ফলাফল হিসেবে তারা বুঝতে পারে ভালো কাজ কোনটাকে বলা হবে।” তরুণ ছেলেটি জানতে চাইল, “তাহলে আপনি নতুন করে নির্দেশনা দেওয়ার পর আরও একবার তারা ঠিক কিছু করে ফেলার সময় ধরে ফেলতে চান?” “ঠিক তাই। শুরুতে আপনাকে তক্কে তক্কে থাকতে হবে কখন এক মিনিটের প্রশংসা ছুড়ে ওদের আরও কার্যকর করে তোলা যায়।” সরাসরি তরুণের চোখের দিকে তাকালেন ম্যানেজার, “আপনি বেশ দ্রুত শিখে নিচ্ছেন সবকিছু, শেখায় বেশ আগ্রহও আছে আপনার মধ্যে। এমন কাউকে আমার রহস্যগুলো শেয়ার করছি ভেবে ভালো লাগছে।” দুজনই হেসে ফেলল এবার। এক মিনিটের প্রশংসা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চিনতে পেরেছে ছেলেটা। “পুনঃনির্দেশনা পাওয়ার থেকে বরং আমি এক মিনিটের প্রশংসাই চাইব।” ছেলেটি বলল, “এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা আর প্রশংসা কেন কাজ করে তা পরিষ্কার বুঝতে পারছি। যুক্তিযুক্তও বটে ব্যাপারটা।” ম্যানেজারের উদ্দেশে মুখ তুলে তাকাল ছেলেটা, “কিন্তু এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা কাজ করছে কীভাবে?”
পৃষ্ঠা:৫৬
এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা কেন কাজ করে: ম্যানেজারটি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, “এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা যে কাজ করে, তার পেছনে কয়েকটা কারণ আছে। শুরু করা যায় যেটা দিয়ে, অল্প কাজের ওপর তারা প্রতিক্রিয়াটা জানতে পারছে। এতে করে সমস্যাটা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি ধরতে পারছেন। অনেক ম্যানেজার তাদের হতাশার ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখে। একদম জমে জমে পাহাড় হওয়ার পর উগরে দেয় সবটা। “কিন্তু পারফর্ম্যান্স রিভিউ নেওয়া যখন শুরু হয়, এমন ম্যানেজাররা ক্ষেপে থাকেন কারণ জমা পড়তে পড়তে তাদের রাগ উঠেছে তুঙ্গে। মুখ খুললে পুরোটা ধুয়ে শেষ না করে তিনি থামতে পারেন না তখন আর।” “কর্মীদের প্রত্যেকে গত কয়েক মাসে কী কী ভুল করেছে একটা একটা করে বলতে থাকেন তারা তখন।” দীর্ঘশ্বাস ফেলল তরুণ, “আপনার কথা খুবই সত্য। এমন আচরণ মাঝেমধ্যে বাসার ভেতরও পেতে হয় আমাদের।” “হ্যাঁ, বাবা-মায়েদের অনেকেই, বা স্বামী-স্ত্রীরা এমনটা প্রায়ই করে থাকেন। ফলাফল হিসেবে তারা যেটা চাইছেন সেটা কখনো পান না। এতে করে কি হয় জানেন? যাকে আপনি ধমক দিচ্ছেন, সে অস্বীকার করতে থাকে। আমি এমনটা করিনি, তমনটা করিনি। প্রতিরক্ষামূলক একটা অবস্থান যে সে নিচ্ছে, এর ফলে কিন্তু নিজের দায়টা সে স্বীকার করছে না। এটা একাকী-ছেড়ে-হাত-পা-বেঁধে- দেওয়ার পদ্ধতিতে যোগাযোগের একটা ভাষা।” নড়ে বসলেন ম্যানেজার, “কিন্তু যদি সেই ম্যানেজাররা আরও আগেই এই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করত, তাহলে একজন মানুষের
পৃষ্ঠা:৫৭
একটা ভুল নিয়ে তারা একবারে কাজ করতে পারত। এজন্য আমার মনে হয় পারফর্ম্যান্স রিভিউ জিনিসটা হওয়া উচিত এক চলমান প্রক্রিয়া। বছরে একবার করার মতো ঘটনা এটা না।” “তাহলে এজন্যই এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা কাজ করছে? কারণ এতে করে ম্যানেজার তাঁর অধীনস্ত কারো কাজকে একবার একবার করে মোকাবিলা করছেন। আর এজন্যই যে মানুষটিকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, সে মনোযোগ দিয়ে এই নতুন নির্দেশনা শুনছে।” . “হ্যাঁ। আপনার কর্মীদের ভেতর থেকে বাজে অভ্যাসগুলো বিদায় করে দিয়ে তাদের মধ্যে থাকা দারুণ মানুষগুলোকে প্রতিষ্ঠানেই রেখে দিতে পারলে সেটা ভালো না? সেজন্য তাদের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে, ব্যক্তিগত আক্রমণ করে ফায়দা বিশেষ হবে না।” “এজন্য আপনার এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনার শেষ অর্ধ-মিনিটে মানুষটির প্রশংসা করা হয়?” “অবশ্যই। পুনঃনির্দেশনার উদ্দেশ্য তো আর মানুষগুলোকে গ্লানিতে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া নয়, বরং তাদের গড়ে তোলা। কারণ আমাদের নিজের প্রতি নিজের ধারণা যদি আক্রমণের শিকার হয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আমরা প্রতিরক্ষার চেষ্টা করি। এতে করে যদি তথ্য আর উপাত্ত অস্বীকার করতে হয়, তাও আমরা অস্বীকার করি। মানুষ প্রতিরক্ষার মনোভাবে চলে গেলে শিক্ষা নিতে পারে না।” “এজন্য আপনি পুনঃনির্দেশনা দেওয়ার সময় ব্যক্তি থেকে তাদের আচরণ আলাদা করে ফেলেন? নিশ্চিত করেন যে কেবলমাত্র ভুলটুকুর ওপরই আপনার বক্তব্য। ব্যক্তিগত আক্রমণ তা নয়। যখন তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়ে যায় আপনি জানেন সে তার ভুল সম্পর্কে ঠিক ঠিক জানে। এমন নির্দেশনার পর কোনো সহকর্মীর সঙ্গে গিয়ে সে আপনার নামে বদনাম করার কথাও ভাববে না। এমন না করে যদি বছর শেষে তাকে ইচ্ছেমতো ধুয়ে দিতেন, তাহলে লোকটা কিন্তু নিজের ভুলের দায়িত্ব কিছুই নিতো না। দিন শেষে ম্যানেজার ব্যাটা হয়ে যেত ভিলেন।”
পৃষ্ঠা:৫৮
ছেলেটার মাথায় নতুন একটা প্রশ্ন এসেছে, করে ফেলল, “আপনি কেন শুরুর আধেক মিনিটে প্রশংসা করে তারপর সমালোচনা করেন না?”“এভাবে ব্যাপারটা কাজ করে না। এর পেছনেও কয়েকটা কারণ আছে। কিছু কিছু মানুষ মনে করেন আমি ম্যানেজার হিসেবে মিশুক এবং কড়া। কিন্তু আপনার কথায় খেয়াল করলাম, আমি আসলে কড়া এবং মিশুক।” “কড়া এবং মিশুক?” প্রতিধ্বনি তুলল তরুণ ছেলেটি। “হ্যাঁ, ক্রম ঠিক রাখতে হবে এখানে। এই ক্রমে কাজটা করলেই ফলাফল পাওয়া যায়, কয়েক হাজার বছর ধরে পরীক্ষিত সত্য এটা। চীনের এক প্রাচীন গল্প আছে, ওখান থেকে ভালো বোঝানো যাবে বিষয়টা।” গল্পটা বলতে শুরু করলেন ম্যানেজার, “অনেক কাল আগের কথা, চীনের সম্রাট এক নতুন সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে নিয়োগ দিলেন। পদমর্যাদায় তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী। সম্রাট বললেন, ‘চলো আমরা কাজ ভাগাভাগি করে নেই। তুমি সব শাস্তি ইত্যাদি দিবে। আর আমি সব পুরস্কার দিব।’ প্রধানমন্ত্রী একমত হলেন, ‘বেশ তো। আমি শান্তি দেওয়ার দায়িত্বটা নিচ্ছি, পুরস্কৃত করার দায়িত্বটা আপনারই রইল’।” “গল্পটা আমার পছন্দ হবে বলে মনে হচ্ছে।” “পছন্দ আপনার হবে,” একমত হলেন ম্যানেজার, মুখে এক ঝলক হাসি ফুটে উঠেছে তাঁর, সম্রাট খেয়াল করলেন কি, তিনি কাউকে কিছু করতে বললে তারা কাজটা কখনো করে, কখনো করে না। কিন্তু মন্ত্রী কাউকে কিছু বললে চটপট হয়ে যায় সে কাজ। “সম্রাট মন্ত্রীকে আবারও ডাকলেন, বললেন, ‘অনেকদিন তো শাস্তি দিয়ে বেড়ালে। এবার কাজটা আমাকে দাও। আমি করি। তুমি বরং পুরস্কারের দায়িত্বটাই দেখ।’ মন্ত্রী রাজি হলো। সম্রাট এবার শুরু করলেন শান্তি দেওয়া। মানুষ অবাক হয়ে বলল, ‘এই বুড়োর আবার কী গোলমাল হলো? এমন করছে কেন সে?’ সম্রাটকে সিংহাসনচ্যুত করল জনতা।
পৃষ্ঠা:৫৯
“নতুন সম্রাট তো দরকার। জনগণ বলল, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো আগের থেকে অনেক শুধরেছেন, উনাকে দিয়েই হবে।’ তারা সেজন্য বেছে নিল প্রধানমন্ত্রীকে।” “এটা কি সত্য গল্প?” জানতে চাইল তরুণ। “কে জানে,” হেসে ফেললেন ম্যানেজার, “যা হোক, আমি এটুকু জানি যে প্রথমে আপনি যদি আচরণের প্রতি শক্ত হয়ে পরে ব্যক্তির প্রতি নরম হন, তাহলে কাজে দেয় ভালো।” “বর্তমান যুগের একটা উদাহরণ দিতে পারবেন, যেখানে আপনার এই এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা পদ্ধতি কাজ করে? ব্যবসায়িক জগতের বাইরে কোথাও?” “নিশ্চয়। দেশের সবখানে ক্রীড়াভিত্তিক কোচদের প্রত্যেকেই এমন পুনঃনির্দেশনা দেন তাদের খেলোয়াড়দের। এভাবে তাঁরা খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্স আরও ভালো করে তোলেন। উদাহরণ দেই, আমার সঙ্গে বিখ্যাত এক কলেজ বাস্কেটবল কোচের কথা হয়েছিল। তিনি জানালেন, এই এক পদ্ধতি ব্যবহার করেই তিনি চ্যাম্পিয়নশিপ দল গঠন করে থাকেন।” “কীভাবে?” “তিনি বললেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় গুরুত্বপূর্ণ এক খেলায় এত খারাপ খেলছিল, খুব দ্রুত সে খেলায় ফিরে না আসতে পারলে ঐ ম্যাচ হারতে হতো নিশ্চিতভাবে। কাজেই তাকে তিনি বেঞ্চে বসিয়েদিলেন।” “সেরা খেলোয়াড়কে বেঞ্চে বসালেন? এরকম একটা ম্যাচে তাকে বের করার ঝুঁকি তিনি কী করে নিলেন?” “বের করতে না হলেই খুশি হতেন তিনি নিশ্চয়। কিন্তু সেরা খেলোয়াড় তার সেরাটা না খেলতে পারলে দল ঐ ম্যাচে এমনিতেও হারত। চ্যাম্পিয়নশিপে বাদ পড়ে যেত নিঃসন্দেহে। তো, এই খেলোয়াড় বেঞ্চে বসার পর তার ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কোচ, ‘দেখো তুমি সহজ সব শট মিস করছ। রিবাউন্ডগুলো ধরতে পারছ না, ডিফেন্সের সময় এত আস্তে নড়াচড়া করলে তো হবে
পৃষ্ঠা:৬০
না। তোমার ওপর আমার মেজাজটা খারাপ হচ্ছে কেন জানো? দেখে মনে হচ্ছে তুমি চেষ্টাটাও করছ না।’ এটা বলে কোচ এক মুহূর্তের জন্য থেমেছিলেন। তারপর যোগ করলেন, ‘তুমি এরচেয়ে অনেক ভালো খেলতে পার। এখন তোমার একটা বিরতি দরকার। যতক্ষণ না মনে করছ তোমার সহজাত খেলাটা খেলতে পারবে, বিশ্রাম নাও।’ “মনে হলো কয়েক যুগ পর খেলোয়াড়টি উঠে দাঁড়িয়েছিল। কোচের কাছে গিয়ে বলল, ‘আমি প্রস্তুত, কোচ’।” “কোচ বলেছিলেন, ‘তবে নামো, দেখাও আমাকে তোমার দৌড়।’ “নামার পর বিদ্যুৎগতিতে খেলা শুরু করেছিল সেরা খেলোয়াড়। বল ছুটে গেলেই ঝাঁপিয়ে ধরছিল সে, রিবাউন্ডগুলো খপাখপ ধরে ফেলছিল, সহজাত সব শট নিচ্ছিল আর সবদিনের মতো। তাকে খেলায় এমন উজ্জীবিত হয়ে উঠতে দেখে দলের বাকিরাও তুমুল আগ্রহ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল সেদিন। ফলাফল, খেলাটা জিতেছিল তারা।” “তাহলে মূল ব্যাপারটা দাঁড়াল,” তরুণ ছেলেটি যোগ করল, “জন লেভি আমাকে যেমনটা শিখিয়েছিলেন, ঐ কোচ ভদ্রলোক ঠিক ঠিক তাই করেছিলেন। প্রথমে তাদের ভুলটা দেখিয়ে দেওয়া, তারপর নিজে সেজন্য কেমন বোধ করছেন তা জানানো, এবং সবশেষে নিশ্চিত করা খেলোয়াড়টি এর থেকে ভালো কাজ দেখাতে পারবে সে ব্যাপারে তাঁর বিশ্বাস আছে।” “অর্থাৎ, তাদের কাজকর্ম তেমন ভালো না হলেও, তারা ভালো?” “একদম তাই। আপনি খেয়াল করে দেখুন, অন্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় কারও কাজ করার দক্ষতার সময় তার মূল্যটা গুলিয়ে ফেলা উচিত হবে না। আসলে মূল্যায়ন করা দরকার ঐ মানুষটাকে, কারণ মানুষটাই তার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।” “শুধু অধীনস্ত নয়, এটা আমাদের নিজেদের জন্যও প্রযোজ্য অবশ্য।” “আপনি যদি এতটুকু বুঝতে পারেন, তাহলে এটা দেখুন।” কম্পিউটারের স্ক্রিনে আরেকটা লেখা তুলে ধরলেন তিনি, “সফল পুনঃনির্দেশনা দেওয়ার জন্য দরকারি অংশটা ধরতে পারবেন।”
পৃ্ষ্ঠা ৬১থেকে৭১
পৃষ্ঠা:৬১
আমাদের আচরণটাই আমরা নই। বরং সেই আচরণের ব্যবস্থাপক আমরা।
তরুণটি বলল, “এখন মনে হচ্ছে পুনঃনির্দেশনার পেছনে আন্তরিকতা আর শ্রদ্ধা মিশে আছে।” “আপনি বিষয়টা খেয়াল করলেন দেখে ভালো লাগলো। যাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন, তাকে শ্রদ্ধা করতে পারলে ফলাফলটা ভালো হয়।” পরের প্রশ্নটা করতে দ্বিধা করল তরুণ, “আচ্ছা, একটা ব্যাপার বলতেই হচ্ছে। এক মিনিটের প্রশংসা আর পুনঃনির্দেশনা বেশ কার্যকর তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে চাইলে এটাকে এভাবে দেখা যায় না, আপনি নিজের কাজটা তুলে নেওয়ার জন্য কর্মীদের সঙ্গে ছলনার আশ্রয় নিচ্ছেন?” “এটা একটা দারুণ প্রশ্ন। ছলনার আশ্রয় নিলে, বা আপনার মুখের কথা আর মনের কথা আলাদা হলে বলতে হবে কাজটা আপনি ঠিকমতো করছেন না। এমন আচরণ একদিন না একদিন বুমেরাংয়ের মতো ফিরে আসে, আপনার জন্য ক্ষতির কারণই হবে শেষতক। আপনার কাজ হলো মানুষকে নিজের ব্যবস্থাপনা করার দায়িত্বটা নিতে শেখানো, দায়িত্বটা যেন তারা একই সঙ্গে উপভোগ করে তার ব্যবস্থা করা। আপনার অনুপস্থিতিতেও যেন তারা সফলতা পায় সেই ব্যবস্থা করাটাই আপনার কাজ। সেজন্য আপনার উচিত আপনার নিজস্ব উদ্দেশ্যটা মানুষকে জানানো, কোনো রকম দেরি না করে।” “জীবনে আর সব দিকের মতোই ধরুন ব্যাপারটা। কিছু পদ্ধতি কাজ করে, কিছু পদ্ধতি কাজ করে না। মানুষকে সত্যটা ঝটপট জানিয়ে দেওয়াটাই সবার জন্য ভালো। আপনি হয়তো খেয়াল করে থাকবেন, মিথ্যে কথা বলে মানুষের সঙ্গে কাজ করে সফল হওয়া যায় না।”
পৃষ্ঠা:৬২
“এখন বুঝতে পারছি আপনার ব্যবস্থাপনার মূল শক্তিটা কোথায়।” তরুণটি বলল, “আপনি সহকর্মীদের ব্যাপারে বেশ আন্তরিক।” “অবশ্যই। আর সেই সঙ্গে, ফলাফলের প্রতিও আমার আন্তরিকতা একই রকম।” তরুণটি এতক্ষণে প্রথমবারের মতো খেয়াল করল ফলাফলের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা কত কাছের। প্রথম দেখা হওয়ার পর এই ম্যানেজারটিকে তার কতই না গম্ভীর মনে হয়েছিল। মনে হলো ম্যানেজার ভদ্রলোক তার মনের কথাও পড়তে পারছেন। বললেন, “কখনো কখনো আন্তরিকতা থেকেও কঠোর হতে হয়। কঠোর হতে হয় মানুষের কাজের ওপর, মানুষটির ওপর নয়। কারণ দেখুন, ভুল করাটা সমস্যা নয়। সেই ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়াটা হলো সমস্যা।” তরুণটি জানতে চাইল, “যদি কেউ একই ভুল বারবার করতে থাকে? পুনঃনির্দেশনা দেওয়ার পরও?” “বেশ, তবে আমি আপনাকে একটা পাল্টা প্রশ্ন করি। এমনটা হতে দেখলে সেই ম্যানেজারের কেমন বোধ করার কথা?” “ভালো লাগার কথা না নিশ্চয়। বিরক্ত তিনি হবেন, রেগেও যাবেন খুব সম্ভব।” “ঠিক ধরেছেন। সেজন্য এমন একটা সময় আপনার নিজেরই একটু বিরতি নেওয়া দরকার যেন আবেগের তাড়নায় কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে না ফেলেন। “এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যটা হলো মানুষ যেন শিখতে পারে। কিন্তু কেউ যদি একটা কাজ শিখতে পারে, তারপর সেটা করেও দেখাতে পারে কিন্তু তাদের আচরণে ‘এভাবে কাজ হয় না’ মনোভাব ধরা পড়ে, সেটা কিন্তু পুরো প্রতিষ্ঠানের জন্যই ক্ষতির। এমন এক লোককে দলের মধ্যে রাখাটা উচিত হবে কি না তা নিয়ে আপনাকে আবারও ভাবতে হবে।”
পৃষ্ঠা:৬৩
এবার বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয়ে এলো তরুণের কাছে। নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারকে বেশ পছন্দ হয়ে গেল তার। মানুষ কেন তার সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসে এখন তা স্পষ্ট। এই ম্যানেজারের জন্য তারা কাজ করে না, বরং তারা কাজ করে তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। ছেলেটি বলল, “লক্ষ্যমাত্রা আর তাদের ফলাফলের সঙ্গে এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা, প্রশংসা আর পুনঃনির্দেশনার সম্পর্কটা কোথায় তা নিয়ে আমি কিছু নোট নিয়েছি, পরে যেন মনে থাকে তাই। আপনার কাছে বিষয়টা আগ্রহ জাগানোর মতো হতে পারে।” নোট থেকে কয়েকটা পেজ খুলে দেখাল সে। লক্ষ্যমাত্রার থেকেই আচরণের শুরু হয়। এর প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে আগামির আচরণ নির্ভর করে। “ভালো লিখেছেন তো।” ম্যানেজারটি উৎসাহই দিলেন। “তেমনটাই মনে হচ্ছে সত্যি আপনার?” আরও একবার প্রশংসাটা শোনার আশায় বলল সে। “দেখুন, ইয়ং ম্যান,” হালকা গলায় বললেন ম্যানেজার, “জীবনে আমার ভূমিকা জীবস্ত টেপ-রেকর্ডারের না। এক কথা বার বার বলার মতো সময় আমার হাতে নেই।” ছেলেটি ভেবেছিল আরও একবার তার প্রশংসা করা হবে, তার বদলে নিজেকে এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনার শিকার হতে দেখল সে। হতাশার ছাপটা মুখে ফুটে উঠতে দিল না অবশ্য সে। স্বাভাবিক অভিব্যক্তি নিয়েই জানতে চাইল, “কী বললেন?” এক সেকেন্ডের জন্য একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইল তারা, তারপর ফেটে পড়ল হাসিতে। “আপনাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে,” ম্যানেজারটি বললেন, “এখানে চাকরি করতে কেমন লাগবে আপনার?”
পৃষ্ঠা:৬৪
বিস্ময় চোখে নিয়ে তাকিয়ে থাকলো ছেলেটি, “মানে, আপনার অধীনে কাজ করব?” উত্তেজনা নিয়ে জানতে চাইল সে। “না, আমি বলতে চাইছি নিজের জন্য কাজ করবেন আপনি। আমার টিমের আর সবাই যেভাবে কাজ করে। এখানে কেউ কারও জন্য কাজ করে বলে আমি মনে করি না। মানুষ নিজের জন্যই কাজ করতে পছন্দ করে, অন্তরের অন্তস্থলে সবার এমনটাই চাওয়া। “আমাদের এখানে যারা কাজ করছেন, একে অন্যের সহকর্মীর মতোই তাঁরা। একসঙ্গে আমরা চেষ্টা করি আগের থেকে উন্নত হয়ে উঠতে। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করি যেন তারা আগের থেকে ভালো কাজ বুঝতে পারে, এতে করে দিনশেষে নিজেদের কাজটা আমরা সবাই উপভোগ করি, জীবনটাও। আর অবশ্যই, এই প্রতিষ্ঠানটিও আমাদের কাজ থেকে বেশ লাভবান হচ্ছে।” এর থেকে বেশি আর কী চাওয়ার থাকতে পারে ছেলেটির? “এখানে কাজ করতে আমার অসম্ভব ভালো লাগবে।” উত্তরটা দিল সে। কাজেই, কাজটা নিল সে। সময় গড়াল, এমন এক দুর্দান্ত মনোভাবের ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে ব্যক্তিগতভাবেও বেশ লাভবান হলো ছেলেটি। একদিন, অবশ্যম্ভাবী ঘটনাটা ঘটে গেল।
পৃষ্ঠা:৬৫
আরও একজন নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার: সে নিজেও হয়ে উঠলো একজন নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার।তার চিন্তাধারা আর কথাবার্তা তেমন হয়ে উঠলো বলে নয়, বরং একজন নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারের মতোই নেতৃত্ব দেওয়া আরব্যবস্থাপনা শিখে ফেলেছিল সে। সবকিছুকে সহজভাবে পরিচালনা করল সে।এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করল।এক মিনিটের প্রশংসায় অধীনস্তদের ভাসাল।এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা দিল সময়মতো।ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোই করল সে, সহজ সত্যগুলো বলল, হাসল, হাসাল। কাজ করল, উপভোগও করল।সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়টা হলো, নিজেই শুধু ব্যবস্থাপনা করে সে যায়নি, বরং অন্যদেরকেও সৃজনশীল হয়ে ওঠার, নতুন কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করে তুলল। পকেট-সাইজের এক গেম প্ল্যানও বানিয়েছিল সে, মানুষ এটা পড়ে খুব সহজে নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজার হয়ে উঠতে যেন পারে।
পৃষ্ঠা:৬৬
নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারের গেম প্ল্যান আরম্ভ: চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য কি করতে যাচ্ছেন তা সহকর্মীদের জানান এক মিনিটের লক্ষ্যমাত্রাগুলোলক্ষ্যমাত্রাগুলো ঠিক করুন। ভালো কাজের সংজ্ঞা ঠিক করুন।. এক পাতায় একটার বেশি লক্ষ্য নিয়ে লিখবেন না লক্ষ্যমাত্রা থেকে বিচ্যুতি ঘটছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে বিবেচনা করুন সহকর্মীরা কী করছে সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে উৎসাহিত করুন, যেন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তা কতখানি যাচ্ছে সেটা মিলিয়ে নিতে পারে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে বিচ্যুত হলে তাদের নির্দেশনা দিতে সহায়তা করুন, যেন বিজয় অর্জন করা যায়।
পৃষ্ঠা:৬৭
লক্ষ্যমাত্রা কিংবা তার অংশবিশেষ সঠিকভাবে অর্জিত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বিজয়ের দেখা পেয়েছেন পরাজিত হয়েছেন জেতার জন্য আপনার প্রয়োজন- এক মিনিটের পুনঃনির্দেশনা দিন এক মিনিটের প্রশংসা আচরণটির প্রশংসা করুন। প্রশংসা করতে কালবিলম্ব করবেন না। নির্দিষ্ট করে বলুন কোন আচরণের জন্য এমন্টা করা হচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য থেমে তা উপলব্ধি করার সুযোগ সহকর্মীকে করে দিন। এমন ভালো কাজ আরও করে যাওয়ার জন্য তাদের উৎসাহ দিয়ে যান। নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আলোচনা করে একমত হয়ে উঠুন। যা ঘটেছে তা নিশ্চিত করে বলুন। ভুলটা ব্যাখ্যা করুন। তাৎক্ষণিকভাবে বলুন এই ভুল আপনাকে কেমন অনুভব করিয়েছে। এক মুহূর্তের জন্য থেমে ব্যাপারটা সহকর্মীদের উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিন। তাদের মনে করিয়ে দিন, এমন ভুল করার থেকেও – ভালো কাজ করার ক্ষমতা তাদের আছে। এর কারণে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
পৃষ্ঠা:৬৮
দ্য ওয়ান মিনিট ম্যানেজার। ৮৫ তোলা হচ্ছে না। ব্যাপারটা শেষ হয়ে গেলে এই বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা না বলা। আগের তুলনায় ভালো পারফর্ম্যান্সের দিকে ধাবিত হোন। আরও সফলতার দিকে ধাবিত হোন।
পৃষ্ঠা:৬৯
আপনার জন্য উপহার
অনেকগুলো বছর পর, ছেলেটির মনে পড়ল সে প্রথম ওয়ান মিনিট ম্যানেজারের ব্যাপারে যেদিন শুনেছিল সেদিনের কথা। মনে হলো যেন অনেকগুলো বছর আগের কথা। এখন তার প্রতিষ্ঠানের দরকারগুলো পাল্টে গেছে। আগের থেকে কর্মতৎপরতা বেড়েছে অনেক, সাড়া দেওয়ার দায়িত্বগুলো পালন করতে হয় আগের থেকেও অনেকটা দ্রুত। বিশেষ সেই ম্যানেজারটি তাকে অকাতরে সময় আর জ্ঞান বিতরণ করেছিল এককালে, সেজন্য সে আজ সত্যই কৃতজ্ঞ। এই জ্ঞান তার উপকারে এসেছে শেষটায়। নিজে যা শিখেছিল তা অন্যকে শেখাবে এই প্রতিজ্ঞাও তখন সে করেছিল, কথাটা আজ পর্যন্ত মনে রেখেছে সে। নিজের লেখা নোটগুলোর কপি করে নিজের দলের সবাইকে একটা করে রাখতে দিয়েছিল তারই প্রেক্ষিতে। তারা এই নোট পড়েছিল, জানিয়েছিল তিন রহস্য জানার পর সত্যিকারের পার্থ্যক্য গড়তে সুবিধা হয়েছে তাদের। প্রশংসার সঙ্গে সঠিক মিশ্রণে পুনঃনির্দেশনা মিশিয়ে দিলে কেমন কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায় সেটা তারা লক্ষ করেছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। সহকর্মীদের কেউ কেউ জানিয়েছে এই তিন রহস্যের প্রয়োগ তারা বিজেদের বাড়ির মধ্যেও করে দেখেছে, ঘরের মানুষদের সঠিক কাজ করার সময় ধরে ফেলার চর্চাও তাদের কেউ কেউ এনেছিল। লিজ অ্যাকুইনো একদিন এসে বলল, “তিন রহস্যের ব্যাপারে আমাকে বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমার হাতে এখন আগের থেকে অনেক বেশি সময় থাকে।”
পৃষ্ঠা:৭০
“সেজন্য আসলে ধন্যবান্টা পাওয়ার কথা আমাদের নিউ ওয়ান মিনিট ম্যানেজারের।” নিজের ডেস্কে বসে সে লক্ষ করল, দারুণ ভাগ্যবান সে। এখন তার হাতে কাজ কিংবা পরিকল্পনা করার জন্য আগের থেকে অনেক বেশি সময় আছে। কাজের বাইরে আরও কিছু ব্যাপারে নিয়ে তার অগ্রহ ছিল। সেসব দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্যও হাতে এখন আছে অঢেল সময়। এমনকি অবসর কাটানোর মতো সময়ও সে এখন যথেষ্ট পায়। অন্য কোনো ম্যানেজারের থেকে কম উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটানোর জন্য নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয় সে। দলের বাকিরা এত ভালো কাজ করছে, জনবল নিয়ে খুব কম সমস্যাই তাদের বিভাগকে সামলাতে হয়। ছুটি না নিয়ে উধাও হয়ে থাকা কর্মী এখানে নেই, অসুখের দোহাই দিয়েও কেউ অফিস কামাই করে না। অতীতের দিকে ফিরে তাকিয়ে সে নিজের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। কখনো ভাগ্যিস সে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেনি, তিন রহস্যের ব্যাপারে জানার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করেছে। দলের বাকিদের সামনে সরল স্বীকারোক্তিও দিয়েছে সে, “মানুষকে ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত করার অভ্যাসটা আমার খুবই নতুন। মাঝে মধ্যে পুনঃনির্দেশনা দেওয়ার পর আমার এমন কিছু বলতে মনে নাও থাকতে পারে।” একজন বলে বসল, “অন্তত চেষ্টা করতে পারেন, তাতেই চলবে।” তার দিকে তাকিয়ে উষ্ণ হাসি দিয়েছিল সে। খুব সহজাত ভঙ্গিতে অধীনস্তদের প্রশ্ন করেছিল, এমন ম্যানেজারের অধীনে তারা কাজ করতে চায় কি না। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছিল, সব সময় ঠিকভাবে কাজটা সে নাও করতে পারে। এর ফলে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় অর্জন করতে পেরেছিল সে। কর্মীরা সবাই জানত তাদের সঙ্গে এই ম্যানেজারটি সৎ। এখানেই গড়ে উঠেছিল পার্থক্যটা।
পৃষ্ঠা:৭১
অন্যদের জন্য উপহার: ভাবনার জগতে ডুবে ছিল সে। কাজেই সেটা বেজে উঠতে চমকে উঠলো সে। শুনল তার অ্যাসিস্ট্যান্ট বলছে, “শুভ সকাল, স্যার। এর ফোন করেছে, অল্পবয়স। জানতে চাইছে আপনার সঙ্গে পর্যন বলতে পারবে কি না। আমাদের এখানে ব্যবস্থাপনার নিকটা কীভাবে সামলাই তা জানার খুব ইচ্ছে নাকি তার।” “তার সঙ্গে কথা বলতে পারলে আমার ভালোই লাগবে।” বলল সে। কিছুক্ষণ পরই ঝলমলে এক তরুণার সঙ্গে দেখা চলো তার। মেয়েটির উদ্দেশ্যে সে বলেছিল, “নেতৃত্ব দেওয়ার জিহ্বা ব্যা ব্যাপারে নিজে যা শিখেছি তা আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে পারছে বলে বন্ধে সম্মানিতই বোধ করব।” বসার জন্য তাকে অনুরোধ করল তারপর। তরুণী বসে পড়লে প্রথমেই বলল, “আমি একটা মাত্র অনুরোধ করব।” “কী সেটা?” জানতে চাইল মেয়েটি। “খুবই সহজ একটা কাজ।” শুরু করল সে, “যদি আপনার কাছে এই তথ্যগুলোকে উপকারী মনে হয়, তাহলে…” “অন্যদের কাছে হুড়িয়ে দেবেন বার্তাটা।”