সংসার সুখের হয় পুরুষের গুণে
পৃষ্ঠা ০১ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০১
সংসার সুখের হয় পুরুষের গুণে
জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই একটা কবিতা শুনেছি:
বলতে হয় শুনে শুনে বড় হয়েছি। (পড়ে পড়ে নয়) এক লাইনের কবিতা। আমার মনে হয় বাংলা ভাষী এমন কোনো নারী-পুরুষ নেই যিনি এই বিখ্যাত কবিতাটি জানেন না বা শোনেন নি। কার লেখা এই কবিতা? তা বোধ হয় কেউ জানে না, আর কেউ জানলেও জানতে পারে-আমি জানি না। কবিতাটি কোনো কাব্যগ্রন্থ কিংবা সাহিত্য পত্রিকায় না পড়লেও মা-খালা, চাচী-ফুফুদের সূচীশিল্প বাঁধানো ওয়াল মেটে পড়েছি। আর বিভিন্ন সময় নানা কথা প্রসঙ্গে কবিতাটি শুনেছি। পুরুষদের মুখেই এই বিখ্যাত কবিতা চরণটি বেশী উচ্চারিত হয় এবং শোভাও পায়।
সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে: আকারে কবিতাটি যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন গুরুত্বের পরিমাপে বৃহৎ। কবিতাটি এক চরণের হলেও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আর ভাবসম্প্রসারণে হাজার চরণ ছাড়িয়ে যেতে পারে। নারী সমাজকে মানসিক চাপে রাখার জন্য এর চেয়ে উৎকৃষ্ট আরো সাহিত্য কর্ম আছে বলে আমার জানা নেই। ধন্য কবিতা আর ধন্যবাদ সেই অজ্ঞাত অখ্যাত মহান কবিকে। আজ কবিতাটি Universal truth পর্যায় চলে গেছে। অবশ্য এর দ্বিতীয় চরণটি আমি উদ্ধার করতে পেরেছি। তাহলোঃ “সুযোগ্য পতি যদি থাকে তার সনে।” এই চরণটি ফালগুনী মুখোপাধ্যায়ের লেখা। তার একটা উপন্যাসে নায়িকাকে দিয়ে তিনি চরণটি বলিয়েছেন। যদিও দ্বিতীয় চরণটি তেমন একটা মার্কেট পায়নি।
পৃষ্ঠা:০২
‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে’ এই পংতিটি প্রথম কখন কোথায় শুনেছিলাম তা মনে নেই। তবে পংতিটি আমার কিশোরী মনে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। তাছাড়া দাদী ও মায়ের প্রভাবে ঠিক এমন একজন নারী হিসেবে দেখতে চাইলাম নিজেকে যে নারী তার নিজ গুণে গড়ে তুলবে একটি আদর্শ ও সুখী সংসার। পরবর্তীতে যখন ‘সংসার সাম্রাজ্যে’ প্রবেশ করে নিজ গুণে সংসারকে সুখী করতে হিমশিম খেতে লাগলাম। ঠিক তখনই মনে পড়ে দ্বিতীয় চরণটি “সুযোগ্য পতি যদি থাকে তার সনে”। পংতিটি পতিকে দেখলাম। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বুঝালাম। তিনি কখনো হাসলেন, কখনো মানলেন, আবার কখনো অবজ্ঞা করলেন। এরপর বহুদিন চলে গেছে,
অনেকের সংসারের সুখ-দুঃখ দেখেছি: অনেক সুন্দরী, গুণবতীর সংসার ভাংতেও দেখেছি। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে এই পরিণত বয়সে এসে পৌঁছেছি। এখন অনেক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ আমার এই মন মস্তিষ্ক। এখনও নবীনদের মুখে মাঝে মাঝে শুনি-‘সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে’। সাথে সাথে নবীনার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- “সুযোগ্য পতি যদি থাকে তার সনে।” কিন্তু আমার মনে হয় পংতি দুটো একেবারেই ভুলে ভরা-সঠিক কথা হলো- “সংসার সুখের হয় পুরুষের গুণে সুযোগ্য পত্নী যদি থাকে তার সনে।” না, আমি কবিতা লিখেই ছেড়ে দেব না। অবশ্যই আমার সাধ্যানুযায়ী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে এর সত্যতার প্রমাণ দেব। ইনশাল্লাহ।
একজন নারী এবং একজন পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে সংসারঃ মহান আল্লাহ সুবহানুতায়ালা তার দুনিয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন একটি সংসার বা পরিবার দিয়ে। “আমি পৃথিবীতে খলিফা পাঠাচ্ছি” বলে তিনি এক জোড়া মানুষ সৃষ্টি করেন। একজন পুরুষ এবং একজন নারী। সংসার গঠনে তারা পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী।
পৃষ্ঠা:০৩
আল্লাহর ভাষায় তারা পরস্পরের আজওয়ায। যার বাংলা অর্থ জোড়া, জুটি বা সাথী। মহান আল্লাহর বড় বড় নিদর্শনের মধ্যে ‘আজওয়ায’ একটি বড় নিদর্শন। আল্লাহ বলেন:وَالسَّمَاءِ بَنَيْنَهَا بِايْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ – وَالْأَرْضَ فَرَشْتُهَا فَنِعْمَ الْمَهْدُونَ. وَمِنْ كُلِّ شَيْ خَلَقْنَا زَوْجِينِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ – اننِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذير مبين . ” فَفِرُّوا إِلَى اللهِ . “আকাশকে আমি নিজের ক্ষমতায় বানিয়েছি আর আমি অবশ্যই মহা ক্ষমতাশালী। যমিনকে আমি বিছিয়ে দিয়েছি, আমি উত্তম সমতলকারী। আমি প্রত্যেক বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। যেন তোমরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ পার। অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও।” (সূরা জারিয়াত: ৪৭-৫০)وَمِنْ أَيْتِهِ أَنَّ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ .“তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে এটাও একটা যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য মহিলাদের জুটি সৃষ্টি করেছেন। যেনো তোমরা তাদের নিকট হতে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ও দয়া-মায়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। (সূরা রুম: ২১) • “তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন। আর পশুদের মধ্য থেকেও জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং এভাবে তোমাদের বংশ বিস্তার করছেন।” (সূরা শুরাঃ ১১) এসব আয়াত থেকে বুঝতে পারি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন, প্রাচীন, আদিম ও সব প্রথম যে সম্পর্ক সূত্রে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বেঁধেছেন তা হলো এই ‘আজওয়ায’ জোড়া বা জুটি। আমরা এ উপমহাদেশীয় ভাষায় বলি ‘স্বামী-স্ত্রী’। তাই তো এ সম্পর্কটা সবচেয়ে মধুর, প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক ছাড়া পৃথিবীটা অচল। যে সংসারে এই সম্পর্ক যত মজবুত-সেই সংসার তত সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ।
পৃষ্ঠা:০৪
এই সম্পর্কের কথা ভাবতে গেলে সত্যিই বিস্ময়ের সীমা থাকে না। ভিন দেশের দু’জন মানুষ। কেউ হয়তো কাউকে চেনেও না। অথচ বিয়ের মাধ্যমে জোড়া বা জুটি হয়ে যাওয়ার পর কি নিবীড়, কি গভীর হয় তাদের সম্পর্ক। দু’জনের চাওয়া পাওয়া সব এক হয়ে যায়। দুজনের একই সংসার, একই সন্তান।
সুখের সংসার :এতটি সুখী সংসারের বর্ণনা দিতে যেয়ে কবি কি সুন্দর করে বলেছেন- প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে স্বর্গ এসে দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়ে ঘরে। সত্যিই তাই- রাসূল (সঃ) বলেছেন-“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে। অর্থাৎ, দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তি নির্ভর করছে ভালোবাসার উপর। আর সুখি সংসার গড়ার মূলমন্ত্রই হলো ভালোবাসা। ভালোবাসা এক হৃদয় থেকে অন্য হৃদয়ে স্থান নেয়। ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় বিশ্বাস আর দায়িত্বানুভূতি। কোনো সংসারে যখন ভালোবাসা, বিশ্বাস আর দায়িত্বানুভুতি এই তিনটি পরিপূর্ণভাবে থাকে-তখন সংসারটি হয় সুখি সংসার। শান্তির নীড়।
সুখি সংসারের সুখি নাগরিকগণই গড়ে তুলতে পারে সুখি সমাজঃ সুখি সমাজেরই পরবর্তী রূপ সুখ সমূদ্ধে ভরপুর একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রে অলংকারে সজ্জিতা এক রূপসী নারী একা একা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গেলেও আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করার প্রয়োজন হয় না।
সুখি সংসার গঠনে পুরুষের দায়িত্ব: মেয়েরা যতই আমার সংসার, আমার সংসার বলুক না কেন আর পুরুষেরা যতোই তোমার সংসার তোমার সংসার বলুক না কেন-মূলতঃ সংসারটা পুরুষের। তাই সংসারের সুখ-শান্তিও নির্ভর করে পুরুষের উপর। যতক্ষণ পর্যন্ত সংসারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে ততক্ষণ সংসার নারীদেরই থাকে। আর যখনই সংসারে বিশৃংখলা দেখা দেয়, পুরুষটি বিগড়ে যায় তখনই সত্যটি বের হয়ে যায়। সংসার পুরুষের।
পৃষ্ঠা:০৫
সায়েমার বাসায় বেড়াতে গিয়ে দেখি খুব সুন্দর একটি মেহগিনি গাছের বাগান। তা প্রায় ৩০/৪০টা গাছ। দুই হাতে মুঠ করে ধরা যায় এই পরিমাণ মোটা। আমি বল্লাম “বাহ” বেশ সুন্দর বাগান তো তোমার।” সায়েমা হাসতে হাসতে বল্ল “আপা আমার মেয়েটা হওযার পর পরই এই গাছ লাগাইছি। মেয়ের বয়স তিন বছর গাছের বয়সও তিন বছর। আমার মেয়ের বয়স যখন বিশ বছর হবে তখন বিয়ে দেব। গাছের বয়সও তখন হবে বিশ বছর। বিশ বছরের গাছ তখন অনেক বড় হবে, তাই না আপা? গাছ বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দিতে পারবো।” মেয়ে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে কি যে অকৃত্রিম সরলতায় হাসতে হাসতে কথাগুলো বলেছিলো সায়েমা। অথচ কিছুদিন যেতে না যেতে জুটি ভেঙ্গে গেল। মনোমালিন্য চলছিল বেশ আগে থেকেই। কার দোষ জানি না। উভয় উভয়কে দোষারোপ করে। কিন্তু সুখ-দুঃখ মনোমালিন্য যাই থাক, সংসারটাকে সায়েমা নিজেরই মনে করেছিল। দশ বছরের সংসার, যা সে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিল। হ্যাঁ, দু’জনে মিলেই করেছিল। কিন্তু সব ছাড়তে হয়েছে নারীকে। সব ছেড়ে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে ভাইয়ের সংসারে। নারী এখানে বড়ই অসহায়। অতএব, সংসারটা যখন পুরুষেরই তখন তাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর, সুশৃংখল এক কথায় সুখি করার দায়িত্বও পুরুষের। অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ এই দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করে না। আর সমস্যাটা দেখা দেয় তখনই। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন-الرِّجَالُ قَوَّمُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ – فَا الصَّلِحْتُ قَنَتُتُ حَفِظْتُلِلْغَيْبِ بِمَا حَفَظَ الله “পুরুষ নারীর কর্তা (কাওয়াম), এজন্য আল্লাহ তাদের একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আর এজন্য পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে।” (সূরা নিসাঃ ৩৪) কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছে কাওয়াম। এমন এক ব্যক্তিকে কাওয়াম বা কাইয়েম বলা হয়, যে কোনো ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠানের বা ব্যবস্থাপনার যাবতীয় বিষয় সঠিকভাবে পরিচালনা, তার হেফাজত ও তত্ত্বাবধান এবং তার প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করার ব্যপারে দায়িত্বশীল হয়। (মাওলানা মওদুদী (রঃ)
পৃষ্ঠা:০৬
নারী-পুরুষের মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পুরুষকে ‘কাওয়াম’ নিযুক্ত করেছেন এবং এই ‘কাওয়াম’ এর দায়িত্ব পালন করার মতো দুটি যোগ্যতাও তাকে দান করেছেন: (১) তাকে নারীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। (২) পুরুষ নারীর জন্য নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। পুরুষের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন: স্ত্রীদের ওপর পুরুষদের একটা বিশেষ মর্যাদা আছে। (সূরা বাকরা: ২২৮) অর্থাৎ পুরুষ হচ্ছে নারীর অভিভাবক, কর্তা, পরিচালক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এই আয়াতে আল্লাহ পাক এ কথাও বলেছেন যে, “নারীদের জন্য ঠিক তেমনি ন্যায় সংগত অধিকার আছে, যেমন পুরুষদের অধিকার আছে তাদের উপর। এরপরও পুরুষদের তাদের উপর একটি মর্যাদা আছে। আর সবার উপরে রয়েছেন মহান আল্লাহ সর্বাধিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী, বিচক্ষণ ও জ্ঞানী।” (সূরা বাকারাঃ ২২৮) পুরুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে বলতে যা বুঝায় প্রধানত তা হলোঃ (১) পুরুষ নারীর চাইতে অধিক শক্তিশালী। (২) তুলনামূলকভাবে তার উচ্চতা ও ওজন বেশী। (৩) সে নারীর তুলনায় অধিক সাহসী। (৪) তার কণ্ঠস্বরে জোর বেশী। (৫) শারিরীক দুর্বলতার পাশাপাশি নারী-পুরুষের চেয়ে মানসিক দিক দিয়েও দুর্বল। (৬) বয়স্ক নারীদের মধ্যেও কিছু শিশুসুলভ আচরণ দেখা যায় যা পুরুষের মধ্যে নেই। (৭) নারীর কণ্ঠস্বর শিশু পুরুষের মতো। (৮) জীবন ধারনের জন্য অর্থ উপার্জনে পুরুষ নারীর চেয়ে বেশী উপযোগী। এমনি আরো বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা পুরুষকে মহান রাব্বুল আলামিন দান করেছেন। এখানে নারীর আপত্তি করার বা বিদ্রোহ করার কিছু নেই। যেসব নারী আল্লাহর বিধান মেনে নিতে আপত্তি করে, অবাধ্যতা দেখায় আমরা তাদের দলভুক্ত নই। আমরা মুসলিম (অনুগত) নারী। আমরা বলি, কুরআনের কথা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।
পৃষ্ঠা:০৭
পুরুষ তার এই যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্যগুলো যথাযোগ্য দক্ষতার সাথে সঠিক এবং ভারসাম্যভাবে প্রয়োগ করে একটি সুখি সংসার গঠন করতে পারে, যার জন্য মহান আল্লাহ তাকে এই গুণসমূহ দান করেছেন। কিন্তু পুরুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। সে সংসারের সুখ-শান্তির জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব দাবী করে নারীর কাছে। সে সতঃসিদ্ধ একটি বাণী তৈরি করে নিয়েছে: “সংসার সুখী হয় রমনীর গুণে” ফাঁকিবাজি আর কাকে বলে? ইসলাম পুরুষকে নারীর উপর মর্যাদা ও কর্তৃত্ব প্রদানের সাথে সাথে হুঁশিয়ার করেও দিয়েছে, যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না করে। সে যদি সঠিকভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) এর বিধান অনুযায়ী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে না পারে, তবে তাকে অবশ্যই এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট জবাবদিহী করতে. হবে। রাসূল (সঃ) বলেন-“পুরুষ তার স্ত্রী পরিজনের পরিচালক এবং এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহী করতে হবে।” (বোখারী)
নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন:আমাদের সমাজের অধিকাংশ পুরুষ নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে একেবারেই উদাসিন। তবে ক্ষমতার ব্যাপারে বড়ই সচেতন। সে যে মালিক, কর্তা, তার অনেক মর্যাদা একথা সে ভালো করেই জানে, সেই সাথে আরো মিথ্যা বানোয়াট কথাও জানে। যেমনঃ * “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত।” * স্বামীর অত্যাচারে বা মাইর পিটে যে স্থানে দাগ পড়ে বা যখম হয় সেই স্থানটুকু জান্নাতে যাবে।” এইসব কথাগুলো হাদীস নামেই তারা চালিয়ে দেয়। ইসলামের নামেই তারা ইসলামের বিরোধিতা করে। লাইসেন্স আছে রাইফেল নেই: আমার আব্বা একটা গল্প বলেছিলেন। কোন প্রেক্ষাপটে, কেন বলেছিলেন মনে নেই। শুধু গল্পটি মনে আছে-“এক শখের শিকারী ‘বডি গার্ড’ সাথে নিয়ে সুন্দর বনে গিয়েছিলেন বাঘ শিকার করতে। জঙ্গলে একটু ঘুরাফিরা করতেই বাঘের সামনে পড়ে যান। শিকারী বডি গার্ডের দিকে তাকিয়ে বল্লেন বন্দুক দাও।” বস্তি গার্ড ভীত কণ্ঠে বল্লঃ
পৃষ্ঠা:০৮
: “বন্দুক তো আনি নাই।” : বন্দুক আনো নাই? তাহলে কি আনছ? : বন্দুকের লাইসেন্স নিয়া আসছি।” : তাহলে “লাইসেন্স মেলে ধর বাঘের সামনে।” লাইসেন্স বাঘের সামনে ধরলে কি কাজ হয়? আমাদের সমাজের অবস্থাও তাই। ইসলাম আমাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দিয়েছে। তা সব রয়েছে আল-কুরআনে, হাদীসে এবং বই পুস্তকের পাতায় পাতায়। বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ নেই বল্লেই চলে। সেই যে বন্দুক ছাড়া লাইসেন্স থাকার মতো অবস্থা আমাদের। সুসাহিত্যিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ মোহতারাম আবদুস শহীদ নাসিম তার ইসলামের পারিবারিক জীবন গ্রন্থে স্বামীর দায়িত্ব-কর্তব্য ও স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন-
কুরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণ করে স্বামীর দায়িত্ব কর্তব্য এবং স্ত্রীর অধিকারে ছয়টি বিষয়। যা নিম্নরূপঃ
(১) সন্তুষ্টি সহকারে মোহর লাভের অধিকার। (২) ভরণ-পোষণ লাভের অধিকার। (ভরণ-পোষণ স্ত্রীর মর্যাদা ও স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী হবে।) (৩) সদ্ব্যবহার লাভের অধিকার। (৪) ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ লাভের অধিকার। (৫) স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষা করবে। (৬) স্বামী সর্ব প্রকার অনৈতিক উশৃংখলতা থেকে বিরত থাকবে এবং যৌনতার ব্যাপারে কেবল স্ত্রীর উপরই সন্তুষ্ট থাকবে। আমাদের সমাজের খুব কম পুরুষই তার উপর অর্পিত কর্তব্যসমূহ পালন করে আর খুব কম সংখ্যক নারীই এই অধিকার পায়। ১। সন্তুষ্টি সহকারে মোহর লাভের অধিকার: আমি মাঝে মাঝে বিভিন্ন মাহফিলে বোনদের (মা-খালারাও থাকে) জিজ্ঞেস করি তারা স্বামীদের কাছ থেকে মোহরানা পেয়েছেন কিনা? হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া প্রায় সব মহিলাই মোহরানা বঞ্চিত। অনেকের ধারণা মোহরানা আদায় করতে হয় না এটা কাবিননামায় এমনিই লিখতে হয়। অনেকে মনে করে তালাক হলে দিতে হয়। তালাক না হলে সারা জীবনেও মোহরানা পরিশোধের প্রয়োজন বোধ করে না অনেকে।
পৃষ্ঠা:০৯
অথচ স্বামী হিসাবে স্ত্রীর উপর তার যে অধিকার সৃষ্টি হয়েছে তা মোহয়ানার বিনিময়েই। মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা বলেনঃ”আর তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা মনের সন্তোষ সহকারে আদায় করো।” (সূরা নিসাঃ ৪)* “আর মোহরানা আদায়ের বিনিময়ে তোমাদের জন্য সম্ভ্রান্ত ঈমানদার নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদের কাছে কিতাব পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যকার সতী নারী হালাল করা হয়েছে।” (সূরা মাযেদা: ৫) আরো বলা হয়েছেঃ * “মোহরানা চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) পারস্পরিক সন্তোষের ভিত্তিতে যদি এর পরিমাণ কম বেশী করে নাও তাহলে এতে কোনো দোষ নেই।” (সূরা নিসা: ২৪) মোহরানা নারীদের অর্থনৈতিক অধিকার। বিয়ের অনুষ্ঠানে মোহর ধার্য করার সময় স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষই বেশ সোচ্চার থাকে। এত টাকার বেশী “মোহর করা যাবে না-না এত টাকার কমে হবে না”-বেশ বাকবিতন্ডা হয়। কিন্তু মহর আদায়ের ব্যাপারে কি এক অদৃশ্য কারণে উভয় পক্ষই নীরব হয়ে যায়। অথচ রাসূল (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মোহরানার বিনিময়ে কোনো নারীকে বিবাহ করলো এবং তা পরিশোধ না করার নিয়ত রাখলো-সে ব্যভিচারী। আর যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করলো, কিন্তু তা পরিশোধের ইচ্ছা না রাখলে সে চোর।” (কানযুল উম্মাল) একক দায়িত্ব: সংসারে নারীর কিছু একক দায়িত্ব রয়েছে, যা কঠিন শারিরীক এবং মানসিক শ্রম দিয়ে নারীকে পালন করতে হয়। অথচ এই শ্রমের বিনিময়ে নারীর নগদ কোনো অর্থোপার্জন হয় না। যেমন: গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, সন্তানকে দুধ খাওয়ানো, সন্তান প্রতিপালন, তাছাড়া পরিবারের অন্যান্যদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হয় নারীকেই। এতসব দায়িত্ব এককভাবে পালনের পর আয় রোজগারের দায়িত্ব তার উপরে অর্পণ করা মোটেও ইনসাফপূর্ণ নয়। অথচ জীবন ধারণের জন্য টাকা পয়সা খুবই প্রয়োজন, যা সব সময় অন্যের কাছে চাওয়া যায় না। নারীরও একটা পছন্দের জিনিস কিনতে ইচ্ছে হতে পারে। অনেক সময় সে কাউকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে। মা-বাবা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, ননদ, ভাসুর কিংবা স্বামীকেই একটা কিছু দিতে তার মন চায়। এজন্য নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা একান্তই প্রয়োজন। আর এ প্রয়োজন
পৃষ্ঠা:১০
পূরনের জন্যই মোহরানা। অথচ এই মোহরানাটা নারীরা কমই পেয়ে থাকে। আমার বড় ভাসুরের বড় মেয়ে বিয়ের দশ বছর পর স্বামী মারা যায়। ছোট ছোট চারটি সন্তান। বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে থাকে। ওর বড় ভাসুর আর গ্রামের এক বৃদ্ধ দরজায় দাঁড়িয়ে বলে রহিমার মা। শোন, তোমার স্বামীকে এখন কবরে নামানো হবে, তোমার কোনো দায়দাবী থাকলে বিশেষ করে মোহরানা দাবী থাকলে মাফ করে দাও।” কথাটা শুনে চমকে উঠলো মেয়েটি। কান্না থেমে গেল তার। বল্ল- : “কি বলেন আপনারা?” “ওর মোহরানার দাবী মাফ করে দাও।” : “না, মোহরানার দাবী মাফ করব না” স্পষ্ট উত্তর দিল মেয়েটি। উপস্থিত লোকজন অবাক হয়ে গেল। সে কি, স্বামী মারা গেছে অথচ মেয়েটি মোহরানা মাফ করবে না? মেয়েটির মা অবাক হয়। মেয়েকে বুঝাতে লাগলো “এসব কি বলিস মা? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। জামাই মারা গেছে তার ওপর দাবী রেখে তোর লাভ কি?” মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে যা বল্ল তার মূল কথা হলো, মেয়েটির শ্বশুড় এখনো জীবিত। এতদিন তারা একান্নবর্তী পরিবারেই ছিল। স্বামীর নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই বল্লেই চলে। যা কিছু আছে সবই শ্বশুড়ের নামে। অতএব, শ্বশুড় যদি তার বাচ্চাদের না দেখে কিংবা জমি জমা কিছু না দেয় তাহলে তার কি উপায় হবে? এই এতিম বাচ্চাদের আমি কি করে বাঁচাবো? তখন গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব এবং অন্যান্য গণ্যমান্য লোকদের চাপে মেয়েটির শ্বশুড় মেয়েটির নামে তিন বিঘা জমি লিখে দেওয়ার অঙ্গীকার করে এবং পরবর্তীতে দিয়েও দেয়। সত্যি কথা বলতে কি আমাদের সমাজের পুরুষেরা স্ত্রীদের মোহরানা দিতে চায় না। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী-গরীব, সবার একই অবস্থা। ২। ভরণ-পোষণ লাভের অধিকার। (ভরণ-পোষণ ও স্ত্রীর মর্যাদা রক্ষা করা স্বামীর সামর্থ অনুযায়ী হবে)। স্ত্রীর এবং পরিবারে ছেলেমেয়ে, মা-বাবা সকলের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পুরুষের। ইসলাম যেসব কারণে স্ত্রীর উপর পুরুষকে মর্যাদা দিয়েছে তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে পুরুষ স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করবে। আর এটা তার সামর্থ অনুযায়ীই করবে।
পৃষ্ঠা ১১ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:১১
এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, لِيُنْفِقَ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ – وَمَنْ قَدِرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَلْيُنْفِقُ ممَّا النَّهُ اللهُ – لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا مَا أَنَّهَا – سَيَجْعَلُ الله بَعْدَ عُسْرِ يُسْرًا“যাকে অর্থ-সম্পদ দান করা হয়েছে তার কর্তব্য সে সেই হিসাবেই তার স্ত্রী-পরিজনের জন্য ব্যয় করবে। আর যার আয়-উপার্জন সীমিত সে ব্যক্তির উচিত সে হিসেবেই আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক থেকে ব্যয় করা। আল্লাহ প্রত্যেকের উপরই তার সামর্থ অনুযায়ী দায়িত্ব অর্পণ করে থাকেন। কষ্টের পর আল্লাহ অবশ্যই স্বস্তি দেবেন।” (সূরা তালাকঃ ৭)অর্থাৎ, সামর্থ অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ দায়িত্ব পালন করা পুরুষের জন্য ফরজ। এই কর্তব্যে ফাঁকি দিলে সে কঠিন গোনাহগার হবে। তার এই কাজে সহযোগিতা করতে নারী মোটেও বাধ্য না। যেমন পুরুষ বাধ্য না সন্তান গর্ভধারণ এবং প্রসবকালীন যন্ত্রণা সহ্য করতে। ৩। সদ্ব্যবহার লাভের অধিকারঃ নারী বা স্ত্রী পুরুষের নিকট হতে অবশ্যই সে সদ্ব্যবহার পাবে। এ ব্যাপারে আল্লাহর তরফ থেকে পুরুষদের প্রতি নির্দেশ “আর স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করো সদভাবে জীবন-যাপন করো।” (সূরা নিসা: ১৯)আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেছেন, “তারা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা হচ্ছ তাদের জন্য পোশাক।” (সূরা বাকারা: ১৮৭) রাসূল (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্ব উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোৎকৃষ্ট এবং যে নিজ পরিবারের সাথে স্নেহশীল আচরণ করে।” (তিরমিযী) ৪। ন্যায় ইনসাফপূর্ণ আচরণ লাভের অধিকার: সে স্বামীর নিকট ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ লাভ করবে। একাধিক স্ত্রী থাকলেই এই বিষয়টার বেশী প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা তো বলেছেন “কোনো একজন স্ত্রীর উপর এমনভাবে ঝুঁকে পড়ো না যাতে করে অন্যরা ঝুলন্ত হয়ে পরে।” (সূরা নিসা: ১২৯) আর এতটুকু ইনসাফ করতে পারার ব্যাপারে যদি আশংকা থাকে সে ক্ষেত্রে তাকে একাধিক স্ত্রী রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।
পৃষ্ঠা:১২
আল্লাহ বলেন,وإِنْ خِفْتُمُ الْأَتُقْسِطُوا فِي الْيَتْمَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ من النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلُثَ وَرُبَعَ – فَإِنْ خِفْتُمُ الْأَتَعْدِ لُوَافَوَاحِدَة أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ – ذَلِكَ أَدْنَى الَّا تَعُولُوا . “হ্যাঁ তোমাদের যদি স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ কাযেম করার ব্যাপারে আশংকা হয়, তবে কেবল একজন মাত্র স্ত্রী রাখবে।” (সূরা নিসাঃ ৩)৫। স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষা করবে: এখানে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের পোশাক বলা হয়েছে। পোশাক যেভাবে মানুষের শরীরের সাথে মিশে থাকে, তাকে ঢেকে রাখে বাইরের ক্ষতিকর বস্তু থেকে হেফাযত করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বামী-স্ত্রীর জন্য এই পোশাক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে তাই বুঝাতে চেয়েছেন। পোশাক ও শরীরের মাঝে যেমন সম্পর্ক, তেমনি হবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। তাদের মন-প্রাণ পরস্পরের সাথে মিলেমিশে থাকবে। একে অপরের গোপনীয়তা রক্ষা করবে। একজনের সুখ-দুঃখের প্রতি অপরজন লক্ষ্য রাখবে। এটাই হচ্ছে দাম্পত্য সম্পর্কের প্রাণ। ৬। স্বামী সর্ব প্রকার অনৈতিক উশৃঙ্খলতা থেকে বিরত থাকবে এবং যৌনতার ব্যাপারে কেবল স্ত্রীর উপরই সন্তুষ্ট থাকবে। “স্বামীর উপর স্ত্রীর আর একটা বড় অধিকার বা বলা যায় সবচেয়ে বড় অধিকার এই যে, স্বামী সর্ব প্রকার অনৈতিক উশৃংখলতা থেকে বিরত থাকবে এবং যৌন ব্যাপারে কেবল স্ত্রীর উপরই নির্ভর করবে। এই ছয়টি অধিকার যদি পুরুষ সঠিকভাবে পালন করে তাহলে আমাদের পরিবারগুলো শাস্তির ঠিকানা হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপ ও আফসোসের বিষয় হলো আমাদের পুরুষেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীদের উপরোক্ত অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করে যার ফলে পরিবারের শান্তি বিনষ্ট হয়।
নিম্নে নারীদের উপর নির্যাতনের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
(১) পরিবার থেকে এটাই দেখে এসেছে। (২) স্বার্থপরতা। (৩) মানসিক গুণের অভাব।(৪) ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে ধর্ম বিমুখতা।(৫) ক্ষমতার অপব্যবহার।
পৃষ্ঠা:১৩
১. পরিবার থেকে এটাই দেখে এসেছে। উপরোক্ত ত্রুটিগুলোর যে কোনো একটি কোন পুরুষ ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান একটি থাকলে তার দ্বারা শুধু নারী নির্যাতন না যে কোনো মানুষ বা প্রাণীর উপরও নির্যাতন করতে পারে। আর যদি এসব ত্রুটির দুই চারটি তার মধ্যে তাকে তাহলে সে তো মানুষ নামের অযোগ্য হয়ে যায়। অথচ আমাদের সমাজের বেশ কিছু পুরুষের মধ্যে এর সব কয়টিই দেখা যায়। আর সব কারণের বড় কারণ হলো আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা থেকে দূরে সরে যাওয়া। সমাজের দিকে তাকালে দুঃখ-বেদনায় বোবা হয়ে যেতে হয়। ছেলেমেয়ের সামনে মা-বাবার ঝগড়াঝাটি মারামারির পর্যায়ে চলে যায়। এই কিছুদিন আগেও পুরুষেরা এক তরফা অত্যাচার করেছে, নারীরা অত্যাচারিত হয়েছে। বর্তমানে নারীরা বেশ প্রতিবাদী হয়েছে। পুরুষদের বিভিন্নভাবে হেস্ত-ন্যাস্ত করতে শিখেছে-কিন্তু তাতে লাভ কি? শাস্তি কি ঘরে ফিরেছে? আমরা তো প্রতিশোধ চাই না। পুরুষকে প্রতিপক্ষ ভাবতে চাইনা, আমরা মুমিন নারী ও পুরুষ পরস্পর বন্ধু ও সহযোগী হয়ে একটি সুন্দর সংসার গড়তে চাই। যে সংসারে প্রতিটি সদস্যদের মধ্যে থাকবে বন্ধুত্ব প্রেম, সৌহার্দ। ভক্তি শ্রদ্ধা স্নেহ। প্রীতি ও প্রেমের পবিত্র বন্ধনে বাঁধা থাকবে প্রতিটি হৃদয়। কারো নামে কোনো নালিশ থাকবে না, অভিযোগ থাকবে না। কাউকে জব্দ করার মনোভাব কারো ভেতর থাকবে না। আমি জানিনা কিভাবে কেমন করে সেই পরিবেশ ফিরে আসবে? শুধু বুঝি সবাই মিলে চেষ্টা করলে, আল্লাহর রহমত হবে তেমনি একটা শান্তির নিবাস আমরা গড়তে পারব। আর এজন্যই আমার প্রথম দাওয়াত-আসুন আমরা আমাদের পরিবারটাকে ঝগড়া মুক্ত রাখি। আমরা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। আমাদের সন্তানেরা পারস্পরিক ভালোবাসা শিখুক। আমরা তখন গ্রামের বাড়িতে থাকি। পাশের বাড়ির আক্কাস চাচার বউ জরিনা চাচী আমার মাকে পিঠের কাপড় খুলে দেখাচ্ছে আর কেঁদে কেঁদে বলছে “দেখেন ভাবী। আমাকে কেমন কইরা মারছে। অন্যান্য লোকজনে না ধরলে আমারে মাইরাই ফালাইত আইজকা। আম্মা বল্লেন “তুমি কি দোষ করেছ?” : ও তো আমারে বিনা দোসেই মারে। আইজ অবশ্য দোস একটু হইছে বলে, দোসের বর্ণনা দিল তা এই রকম-ছোট ছোট তিনটা বাচ্চা। দুইটা অসুস্থ, জ্বর কয়েক দিন থেকে। কোল থেকে এক মূহুর্ত নামতে চায় না। রান্না করতে দেরী হয়ে গেছে। বাচ্চা কোলে নিয়েই জরিনা শাক তুলেছে, ডাল আর শাক রান্না করেছে। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে লবণ দিতে ভুলে গেছে।
পৃষ্ঠা:১৪
আম্মা, জরিনা চাচীর পিঠের ওপর লাল লাল মোটা দাগ দেখে বল্লেন “ইশ, তাই বলে এমনভাবে মারবে?” জরিনা বল্ল “ভাবী ও যখন প্রথমে দুই চাইর খাঞ্জর দিছে মনে মনে কইছি, মারুক অন্যায় যখন করছি। চুপ কইরাই রইছিলাম। এরপর লাটি বাইর কইরা যখন মারতে লাগল আর কইতে লাগল, রাজনের সুম মন থাকে কই, তরে আজ মাইরাই ফালামু। তখন চিল্লাইছি, অন্য বাড়ির মানুষ জনে আইসা ছাড়াইছে। আম্মা ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে আব্বাকে বল্লেন “একটা কথা হলো, তরকারীতে লবণ কম হয়েছে তাই এইভাবে মারবে?” আব্বা হাসিমুখে বল্লেন “আরে দোষ তো জরিনার। ও জেনেশুনে আক্কাসের সাথে বিয়েতে রাজি হয় কেন? মাইর তো খাবেই।” আমি আর মা তো অবাক আব্বার কথা শুনে। আর জরিনা চাচী চমকে আব্বার দিকে একটু তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেল্ল। আব্বা এবার জোরে হেসে উঠলেন। আমি আর মা কিছু না বুঝে আব্বার সাথে হাসতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে আব্বা তার হাসির কারণ বল্লেন-আব্বা আর আক্কাস চাচা এক বয়সী। প্রায় ত্রিশ বছর আগের কথা। আব্বার বয়স তখন নয় দশ বছর হবে জরিনা বেশ ছোট পাঁচ ছয় বছর, পাশাপাশি বাড়ির ছেলেমেয়ে। বৈশাখ মাস। আম বাগানে বসে সবাই খেলা করছে। আক্কাস আর জরিনা বর-বউ মাঝে। কেউ বড় ভাই, কেউ বড় বোন হয়েছে। কেউ রান্না করছে, কেউ বাজার করছে। সবাই ব্যস্ত মিছামিছি সংসারে। হঠাৎ কি নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হতেই আক্কাস জরিনাকে আম গাছের ডাল ভেঙ্গে মারতে শুরু করল। জরিনার চিৎকারে সবাই দৌড়ে এসে আক্কাসকে ধরল। আব্বা আক্কাসকে এক থাপ্পর দিয়ে বল্লেন-“একে মারছিস কেন?” আক্কাস বল্ল “আমার বউ আমি মারছি, তাতে তোমাগো কি? এই দ্যাখো, ওর কত বড় সাহস ও আমারে খামছে কি করছে।” সে দিন জরিনাও কম করেনি। আক্কাসরে দুই হাত দিয়ে খামছে হাতে মুখে রক্ত বের করে দিয়ে ছিল। তাহলে জরিনা তো জানে আক্কাস বউ মারে। সেই ছোট বেলাতেই জরিনা প্রমাণ পেয়েছে। তাহলে কেন জরিনা আক্কাসের সাথে বিয়েতে রাজি হল।” আমরা হাসতে লাগলাম। জরিনা চাচীও হাসল। এরপর বল্ল “ভাইজান সেই ছোট বেলায় আপনি ওরে কেমন শাসন করছিলেন, সেইভাবে আজকে ওরে একটু শাসন কইরা দেন।” চলে গেলো জরিনা। ছোট ছোট বাচ্চাদের টানে আর থাকতে পারল না। আমার আব্বা আক্কাস চাচাকে কিছু বলেছিলেন কিনা জানি না। কিন্তু এই
পৃষ্ঠা:১৫
আক্কাসরা ছোট বেলা থেকেই দেখেছে যে ওর বাবা ওর মাকে মারে। আশপাশের বহু লোককে তা দেখেছে। বউ মারা ওর কাছে কোনো ব্যাপারই না। ছোটবেলা থেকেই ওরা জানে বউকে মারা যায় বা মারতে হয়। আক্কাসরা অশিক্ষিত মানুষ, তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। শিক্ষিত সমাজে যখন দেখি নারীদের উপর চরম নির্যাতন তখন দুঃখে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে চায়। রাসূল (সঃ) বলেন “এটা খুবই লজ্জার ব্যাপার যে, কোনো ব্যক্তি দিনে স্ত্রীকে মারধর করে এবং রাতে তার সাথে শোয়।” (বুখারী, মুসলিম) রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “যারা স্ত্রীদের মারে তারা ভালো মানুষ নয়।” ২। স্বার্থপরতাঃ অতিরিক্ত স্বার্থপর এবং লোভী পুরুষেরা নারী নির্যাতন করে। আমাদের সমাজে যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যা, নির্যাতন যেন একটা গতানুগতিক বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কথা বলা. এবং লেখালেখির জন্য অনেক মহিলার সাথেই আমার আলাপচারিতা ও পরিচয় হয়েছে। তাদের সাথে প্রায়ই কথা হয় মোবাইল ফোনে, আবার অনেকে বাসায় আসেন। আর সে কথা তো কথা নয়, অভিযোগ। আর সব অভিযোগই যার যার স্বামীদের বিরুদ্ধে। তখন আমি তাদের উপদেশ দেই-‘নিজে ভাল হন, নিজে ভালো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ আসলে কথাটা ঠিক না। নিজে ঠিক হলেই সব সময় সব কিছু ঠিক হয়ে যায় না। আমি তৌহিদাকে কি উপদেশ বা শান্তনা দেব। ওর সমস্যার কি সমাধান দেব। ও যখন কেঁদে কেঁদে ওর কষ্টের কথাগুলো আমাকে বলত আমারও তখন কান্না পেত। ওর সাথে কথা বলে দেখেছি উপরে বর্ণিত ছয়টি অধিকার থেকেই সে বঞ্চিত। ওর বড় সমস্যা হলো ওর বাবা নেই। ভাইয়েরাও তেমন সচ্ছল নয়, যার যার পরিবার নিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছে। তাই বোন জামাইকে তারা যখন তখন এটা সেটা গিফ্ট দিতে পারে না। বড় অংকের কোনো টাকা পয়সাও দেয়নি বিয়ের সময়। এই অপরাধে প্রায়ই তৌহিদাকে একটু-আধটু কথা শুনতে হয়। সে একদিন প্রতিবাদ করছিল বলে ভীষণ মার খেতে হয়েছিল। ও প্রায়ই বলত “আপা আমার যাওয়ার জায়গা নেই তো, তাই আমার ওপর এত অত্যাচার। বাবা নেই, ভাইরা গরীব।
পৃষ্ঠা:১৬
আমি ওকে বল্লাম “কি যে বলো। আল্লাহর দুনিয়া কি ছোট নাকি? বেশী সমস্যা হলে তুমি আমার কাছে চলে এসো।” একদিন তৌহিদা আমাকে ফোনে বল্ল, “আপা আমি মায়ের কাছে চলে এসেছি, এখন কিভাবে আপনার কাছে। আসব।” আমি চমকে ওঠলাম। “ওকে বল্লাম, “ঠিক আছে মায়ের কাছে কয়েকদিন থাক, চিন্তা-ভাবনা করে আমি দিন কয়েক দিনের মধ্যে তোমাকে জানাচ্ছি।” আমি আমার মায়ের কাছে কথাটা বলতেই তিনি বল্লেন, “তুমি মেয়েটিকে আশ্বাস দিয়ে ভালো করোনি। তোমার পরিবারে তোমার বড় বড় ছেলেরা আছে, তোমার স্বামী আছে। কারো কাছে পরামর্শ না নিয়ে তুমি হুট করে একজন যুবতী মেয়েকে তোমার পরিবারে নিয়ে আসতে পার না। এরপর মেয়েটি বিবাহিতা। মেয়েটির স্বামী তোমার নামে আদালতে মামলা করতে পারে যে, তুমি তার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে নিয়ে এসেছো। এই অশান্তি তুমি কেন করবে? তোমার বয়স হয়েছে কিন্তু এখনও বাস্তবতা বোঝ না।” আমার উপর মা বেশ বিরক্তই হলেন। আমি বল্লাম “তৌহিদা এখনও ভালো করে ভেবে দেখো। তুমি যদি তোমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক রাখতে নাই চাও তাহলে এ ব্যাপারে তোমার গার্জিয়ানদের সাথে খোলাখুলি কথা বলো। দুইপক্ষ আলাপ-আলোচনা করে যেটা ভাল মনে কর, সিদ্ধান্ত নাও। তারপর আমার কাছে আসা না আসার চিন্তা করা যাবে। হুট করে চলে আসা ঠিক হবে না।” আমার কথায় তৌহিদা মনে হয় খুব হতাশ হলো। বুঝলাম সে খুব মন খারাপ করল। তারপর বড় একটা নিঃশ্বাসের সাথে ধীরে ধীরে বল্ল, “ঠিক আছে।” এরপর তৌহিদা আর কোনো দিনই আমাকে ফোন করেনি। এর মধ্যে আমি একবার ফোন করে জানতে পারি, তৌহিদা ওর মায়ের কাছেই আছে। আজ এই লিখতে বসে আবার তৌহিদাকে ফোন করলাম। এখনও মায়ের কাছেই আছে। সে ডিভোর্স নেওয়ার সিদ্ধান্তই ফাইনাল করেছে। আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া এজন্য যে ওদের কোনো সন্তান নেই। এসব ক্ষেত্রে সন্তান থাকলে নারী আর সন্তানদের দুর্ভোগের আর সীমা থাকে না। আমাদের সমাজে এমনি হাজার হাজার তৌহিদা আছে যাদের বাওয়ার কোন জায়গা নেই, নালিশের জায়গা নেই। মদীনার মত একটা নিরাপদ আশ্রয় স্থল যদি থাকত। সেখানে মক্কা থেকে নির্যাতিত নারীরা এসে আশ্রয় নিত। এই সব নারীদের জন্য একটা আশ্রয়স্থল আমাদের খুব প্রয়োজন।
পৃষ্ঠা:১৭
৩। মানসিক গুণাবলীর অভাব: এক শ্রেণীর মানুষের হাত-পা, অংগ-প্রত্যংগ মানুষের মতো হলেও তাদের অন্তরে মানবিক গুণের অভাব আছে। মানবিক গুণাবলী বলতে আমি উদারতার কথা বলছি। উদারতা প্রসংগে আল্লাহ সুবহানু তায়ালা বলেন-“যে ব্যক্তি তার নাফসকে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠাতে পারল সেই সফল কাম।” (সূরা তাগাবুন: ১৬) মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পুরুষদের বলেছেন, “তোমরা (পুরুষেরা) তাদের সাথে সত্ত্বাবে জীবন-যাপন করো। তারা (স্ত্রীরা) যদি তোমাদের মনের মতো না হয় তাহলে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো জিনিসকে অপছন্দ করো, কিন্তু আল্লাহ তোমাদের জন্য তার মধ্যে অফুরন্ত কল্যাণ রেখেছেন।” (সূরা নিসা : ১৯) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত “রাসূল (সঃ) বলেন” কোনো ঈমানদার পুরুষের পক্ষে কোনো ঈমানদার নারীকে ঘৃণা করা ঠিক হবেনা। কেননা ঈমানদার নারীর মধ্যে কোনো একটি বিষয় খারাপ থাকলেও বহু উত্তম গুণও থাকে।” (মুসলিম) আল্লাহ এবং তার রাসূল (সঃ) এর দিক নির্দেশনা মানুষকে উদার হতে শিখায়। ছোটখাট দোষত্রুটি নিয়ে অশান্তি করা যাবেনা। স্ত্রী তো আর অর্ডার দিয়ে তৈরি করা হয়নি যে, তার সব কাজ, সব কথাই ভালো লাগবে, পছন্দ হবে। সেখানে আপন ভাই-বোন পছন্দ মতো হয় না। নিজের সন্তানের সব আচরণ পছন্দ হয়না। আর স্ত্রী তো সম্পূর্ণ ভিন্ন দেশের, ভিন্ন পরিবেশের ও ভিন্ন পরিবারের একটি মেয়ে। তার সব আচরণ পছন্দ না হওয়ারই কথা। আর এজন্যই আল্লাহ এবং তার রাসূল (সঃ) উপরোক্ত উপদেশ দিয়েছেন। উদারতার বিপরীত হলো সংকীর্ণতা। এই সংকীর্ণতার একটি রূপই হলো সন্দেহ প্রবণতা। অনেক পরিবারই এই সন্দেহের আগুনে ছারখার হয়ে যায়। অবশ্য সন্দেহ একটা রোগ। আর এই রোগ তুলনামূলকভাবে নারীদের মধ্যেই বেশী। একটা উদাহরণ: একবার নওগাঁ শহর থেকে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে আসার জন্য রিক্সা পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে দেখি একটা ব্লুটার বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছে। আমি হাত তুলে দাড় করালাম। বলতে গেলে ব্লুটারটা একদম ফাঁকা। অল্প বয়সী দুটি ছেলে বসে আছে। একটি উদাহরণ, সম্ভবত ছেলেটি ফার্স্ট ইয়ার কিংবা সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। আমি উঠে বসলাম। কিছুদূর যেতেই দু’জন বয়স্ক
পৃষ্ঠা:১৮
লোক উঠল। এইবার নেমে গেলাম। আমি স্কুটারে সাধারণত যাতায়ত করিনা। কারণ সামনাসামনি বসলে হাঁটুর সাথে হাঁটু লেগে যায়। যা হোক, পরে আমি কথাটা ‘নূর’ কে বল্লাম। নূর কিছু মনেও করল না মন্তব্যও করল না। কিন্তু ঘটনা যদি উল্টো হতো, ‘নূর’ যদি বলত অল্প বয়সী দুটি মেয়ে ছিল তাই উঠলাম, যখনই বয়স্ক দু’জন মহিলা উঠল আমি নেমে গেলাম।” তাহলে মনে হয় আমি ছাড়তাম না। অবশ্যই মন্তব্য করতাম, “ও যখন অল্প বয়সী মেয়ে দেখছ ওঠে পাশে যেয়ে বসেছ, আর যেই বয়স্ক মহিলা দেখেছ তাড়াতাড়ি নেমে পড়েছ। নামবাই তো…… ইত্যাদি কটাক্ষ করে আরো কি কি বলতাম তা আল্লাহই ভালো জানেন। অবশ্য বলার কারণও আছে, আমার বয়সী মহিলাদের কাছে এইসব যুবকদের সন্তান তুল্য মনে হয়। কিন্তু পুরুষদের ব্যাপারটা বোধ হয় সম্পূর্ণই ভিন্ন। যাহোক, পুরুষেরা যে মোটেও সন্দেহ করে না তা নয়। অনেক পুরুষই সন্দেহের যন্ত্রণায় নারীকে অতীষ্ট করে তোলে। সন্দেহ আর ভালোবাসা এক ঘরে বসবাস করতে পারে না। তাই ঘরটাকে সুখী সমৃদ্ধ করতে হলে সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪। ব্যক্তি জীবনে ধর্মবিমুখতাঃ ব্যক্তি জীবনে ধর্মবিমুখ পুরুষের দ্বারাই সমাজে নারী নির্যাতন সবচেয়ে বেশী হয়। যার অন্তরে আল্লাহর ভয় নেই, আখেরাতের জবাবদিহীতার অনুভূতি নেই, তার দ্বারা কি না সম্ভব? এই ধর্মবিমুখ মানুষগুলো স্ত্রীদের উপর নির্যাতন করে আবার ধর্মের উপরই দোষ চাপায়। এরা এমন জালেম যে শুধু স্ত্রীদের উপর না এরা সবার উপর জুলুম করে। এদের নির্যাতন পেকে মা-বোন, কন্যা কেউ বাদ যায় না। পুরুষেরা নিজেদের স্বার্থে ধর্মের নামে অনেক কথা বানিয়ে বলে। আর সমাজের অজ্ঞ লোকেরা সেই কথাও বিশ্বাস করে।আমার পরিচিত একটি পরিবার। সাত ভাই বোন। তিন ভাই চার বোন। মা-বাবা মারা গেছেন অনেক দিন আগে। ভাই-বোন সবার বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের সন্তানদেরও প্রায় সবার বিয়েশাদী হয়ে গেছে। এক বোন সম্প্রতি মারাও গেছেন। অথচ ভাইয়েরা আজও বোনদের সম্পত্তি দিয়ে দেয়নি। বর্তমানে বোনদের তুলনায় ভাইয়েরা সচ্ছল। বোনেরা আমাকে অনুরোধ করে বল্ল “তুমি একটু আমাদের ভাইদের বুঝাও, তুমি বল্লে মানতে পারে।” এক পর্যায়ে ভাইয়েরা বোনদের সম্পত্তি দিয়ে দিতে রাজী হলো। বল্ল “ঠিক আছে, জমি আমরাই কিনে রাখব, কিন্তু বর্তমান বাজারে যে মূল্য আছে তার চেয়ে কম মূল্য নিতে হবে।”
পৃষ্ঠা:১৯
প্রতিবেশী এক মুরুব্বী বল্ল “সে কি কথা, ভাইয়ের বাড়ির সম্পত্তি নেবে কেন? ভাইয়ের বাড়িতে মেয়েরা কোনো দিন বেড়াতে আসবে না, নাকি? সম্পত্তি নিলে আদর-যত্ন পাবে?” আমি একটু চুপ করে থেকে বল্লাম “বোনের বাড়িতে আপনারা কখনো বেড়াতে যান?”: “বেড়ানোর সময় তো পাইনা। তবু সময় সুযোগ পেলে যাই। বিয়ে-শাদী, দাওয়াত-টাওয়াতে।”এক ভাই কথাটা বল্লেন। বল্লাম “বোনেরা তখন আদর-যত্ন করে?”: “করে না মানে? কি যে আদর করে। কি দিয়ে কি খাওয়াবে কুলকিনারা পায় না।” উৎফুল্লচিত্তে মিষ্টি হাসি হেসে উত্তর দিলেন ভাই।: “কেন আদর করে? সম্পত্তি রেখে এসেছেন তার বাড়িতে?” অথচ আপনার বাড়ির আদর-যত্ন পেতে বোনকে সম্পত্তি রেখে যেতে হবে কেন? প্লীজ বোনদের ঠকাবেন না। তারা তো বেশী চায় না। তাদের পাওনাটা দিয়ে দেন, কম দেবেন কেন? এতদিন তাদের জমি আপনারা ভোগ করেছেন। একমুঠো আতপ চালও কোনোদিন দেননি। এখন অন্তত সঠিক মুল্যটা দিয়ে দেন।”তখন আমার এক আত্মীয় এক ব্যক্তি, লম্বা জুব্বা পরিহিত, তাবলিগি চেক রুমাল মাথায় জড়ানো, বুকের উপর ছড়ানো লম্বা দাড়ি। আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বল্ল, “শোনেন হদীস, কুরআন আমরাও কিছু জানি। গাঁও গেরামে বিচার ফয়সালা করি। হাদীসে আছে, “মেয়েরা বাপের সম্পত্তি পাবে, কিন্তু তারা সে সম্পত্তি নেবে না। আর যদি কেউ একান্তই নিতে চায় তবে প্রচলিত মূল্যের অর্ধেক দাম পাবে।”তা ঠিক, তা ঠিক” বলে” আশপাশের বেশ কয়েকজন তাকে সমর্থন করল। এই ভদ্রলোক আমাদের বেয়াই হন। বড় ভাসুরের ছেলের শ্বশুড়। বল্লাম “বেয়াই সাব এ রকম হাদীস বানানো ব্যবসা কতো দিন থেকে করছেন? আখেরাত যে আছে, তা কি একদম ভুলে গেলেন? আখেরাত তো একেবারে বরবাদ হয়ে যাবে এভাবে হাদীস তৈরি করলে।আমার কথা শেষ না হতেই ভাইটি বলে উঠল “শেনো ছোট বউ কথায় কথায় শুধু আখেরাত টানাটানি করো না তো। দুনিয়ার ব্যাপার নিয়ে সমস্যা হয়েছে, সেই সমাধান আগে করো।” অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। এরপর বল্লাম “ভাইজান দুনিয়ার কাজ-কর্মের উপরই আখেরাতের ভালো মন্দ, লাভ-ক্ষতি। আল্লাহর আইনে বোনরা পাবে ভাইদের অর্ধেক। না দিলে আখেরাতে
পৃষ্ঠা:২০
কঠিন শান্তি পাবেন। এই যে এখন সরকার আইন তৈরি করতেছে, ভাই-বোন সবাই সমান সমান পাবে। না দিলে সরকারের শাস্তি, তাই আপনাদের জন্য ভালো হবে।”মুখ বাঁকা করে ভাইজান বল্লেন “হ-কইলেই দিলাম আর কি?” এরাই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে বকতে পারে, মারতে পারে, তালাক দিতে পারে, খুনও করতে পারে। পত্রিকার পাতা খুল্লেই এদের ছবি আমরা দেখতে পাই। এই ধরনের পুরুষের সংসারে যে নারী বধু হয়ে তার সুখের আশা সুদুর পরাহত।৫। ক্ষমতার অপব্যবহার: কিছু তথাকথিত ধার্মিক লোক আছে যারা ধর্মের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংসারের সুখ-শান্তি বিনষ্ট করে। এরা স্বামীর হক আর স্ত্রীর কর্তব্য সংক্রান্ত এতো তথ্য জানে, যা কুরআন-হাদীসে নেই। এরা সত্য মিথ্যা সব একত্রিত করে স্ত্রীদের উপর প্রভুত্ব খাটাতে চায়। আর খাটায়ও। এরা নারীকে সেবাদাসী ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না। আর নিজেকে মনে করে স্বামী (?) স্বামী শব্দের অর্থ প্রভু। মালিক (বাংলা স্বামী শব্দের অর্থ প্রভু, কর্তা, চালক, রক্ষক, রক্ষাকর্তা, অধীশ্বর, অধিপতি, যার প্রতিটি শব্দ আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। এই “স্বামী” শব্দ দিয়ে কি করে একজন মানুষকে বুঝানো যেতে পারে? এই উপমহাদেশীয়রা বিশেষ করে হিন্দুরা, তাই মনে করে। বিয়ের পর পুরুষটি হিন্দু নারীর দেবতা হয়ে যায়। নারী তখন পুরুষটিকে সেজদা করে। আমাদের সমাজের কিছু পুরুষ তেমনি নারীদের প্রভু হতে চায়। কোনো মানুষকে স্বামী বলা রীতিমতো শিরক করা। স্বামী শব্দের আরবী করলে হয় রব। আমাদের বুঝতে হবে বিয়ের পর পুরুষটি নারীর রব হয়ে যাবে না-সে হবে বর। কুরআনের ভাষায় আজওয়াজ, জোড়া, জুটি বা সাথী। আল কুরআন পুরুষকে কাওয়াম, নেতা, পরিচালক কিংবা দায়িত্বশীলদের মর্যাদা বা দায়িত্ব দিয়েছে। একথা একশ বার স্বীকার করি। তাই বলে সে আমার খোদা না। তার অন্যায় ও জুলুম, নির্যাতন সব নারীকে মুখ বুজে মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বিয়ে হয়েছে বলে সে নারীর দন্ডমুন্ডের মালিক হয়ে যায়নি।অনেকে তো কোনো বিষয়ে স্ত্রীর পরামর্শ কিংবা অনুমতি নেওয়াকে মনে করে কাপুরুষতা। অথচ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) হুদায়বিয়ার সন্ধির সেই নাজুক পরিস্থিতিতে স্ত্রী উম্মে সালমার কাছে পরামর্শ চেয়েছিলেন। উম্মে সালমা পরামর্শ দিলেন আর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সেই অনুযায়ী কাজ করলেন। এতে তার শ্রেষ্ঠত্বের ঘাটতি হলো না, নবুয়তেরও কমতি হলো না।
পৃষ্ঠা ২১ থেকে ৩৪
পৃষ্ঠা:২১
আমাদের আলেম ওলামারা নারীদের হেদায়াত করার জন্যই যেন সর্বক্ষণ ব্যস্ত। তাদের ওয়াজ নসিহত তাদের লেখা কিতাবাদি সব প্রায় ঐ একই বিষয়ের উপর। পুরুষদের তারা উপদেশ কমই দেয়। সংসার সুখী রাখার জন্য তারা সব উপদেশ বিতরণ করে নারীকে। এইসব ওলামাদের কথা শুনলে কিংবা বই পুস্তক পড়লে মনে হয় আমাদের সমাজের পুরুষেরা সব বড় বড় সাহাবা। আর স্ত্রীরা যেন আফ্রিকার জংগল থেকে ধরে আনা জংলী। নারীদের তারা শেখায়-স্বামীর সাথে কিভাবে কথা বলবে? কিভাবে হাসবে? কিভাবে হাঁটবে? কিভাবে শোবে? কিভাবে তাকাবে? স্বামী রাগ করলে কি করবে, খুশী হলে কি করবে? তার মানে কিভাবে তারা দেবতাকে সন্তুষ্টি করবে? একজন বিখ্যাত আল্লাহওয়ালা লেখক তাঁর গ্রন্থে এক মহীয়সী রমনীর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি যেভাবে নারীকে অবমূল্যায়ন করেছেন তাতে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল। সেই ঘটনাটাই যখন অধ্যাপক মুহাম্মাদ ইউসুফ আলী সাহেবের মুমিনের পারিবারিক জীবন বইতে তুলে ধরেছেন মুসলিম নারীর মডেল হিসাবে। তখন এই লেখক বুজুর্গদের রুচিবোধের উপর আমার সন্দেহ হয়েছে। অথচ ঐ তথাকথিত নারীর সাথে সোনালী যুগের নারীদের কোনো মিলই নেই। কি করে এই নারী মোহাম্মাদ ইউসুফ আলী সাহেবদের কাছে মহীয়সী হিসেবে ধরা দিলেন তা আমার বুঝে আসে না। ঘটনা হলো: একজন নারী প্রতি রাতে এশার নামাজের পর খুব সাজসজ্জা করতো। সুন্দর পোশাক পরিধান করতো, হাতে-গলায় ও কানে অলংকার পরে, চোখে সুরমা লাগিয়ে স্বামীর কাছে হাজির হতো। তাকে জিজ্ঞেস করতো- “আমাকে আপনার প্রয়োজন আছে কি? যদি সে বলত হ্যাঁ আছে তাহলে সাথে সাথে তার কাছে শুয়ে পড়ত। আর যদি বলতো না, প্রয়োজন নেই। তাহলে সে বলতো তাহলে আমাকে অনুমতি দিন, আমি গিয়ে আপন প্রতিপালকের এবাদাতে মশগুল হই। স্বামীর অনুমতি লাভের পর সে পরিধেয় পোশাক ও অলংকারসমূহ খুলে ফেলে সাদা কাপড় পরে গোটা রাত নির্জন এবাদাতে কাটিয়ে দিত।”* উপরের কাহিনীটি আবার পড়েন। এরপর কুরআন হাদীস ও বিবেকের সাথে একটু মিলিয়ে দেখেন। গল্পটি পড়লে মনে হয় মহিলা বুঝি কোনো কৃতদাসী, কোনো আবেগ অনুভূতি, ভালোলাগা, ভালোবাসা তার মধ্যে নেই। বলা যেতে পারে কোনো উন্নতমানের রোবট। “আমাকে আপনার প্রয়োজন আছে কি?” তার স্বামীকে এই প্রশ্ন করার পর স্বামী যদি বলত আছে তাহলে সাথে সাথে সে শুয়ে পড়ত।” ছি! এই ঘটনার মধ্যে কোনো ভালোবাসা, প্রেম, ভক্তিশ্রদ্ধা কিছু নেই,
পৃষ্ঠা:২২
শুধু পশুসুলভ একটা জৈবিক চাহিদার ইঙ্গিত রয়েছে। প্রাণহীন মানুষকে যেমন মানুষ বলে না, বলে লাশ তেমনি ভালোলাগা ভালোবাসা ছাড়া শুধু জৈবিক চাহিদা নিবৃত্তির জন্য যে দাম্পত্য জীবন, তা দাম্পত্য জীবন না, তার নাম দাম্পত্য জীবনের লাশ এরপর তার স্বামীর ‘প্রয়োজন নেই’ শুনে মহিলা তার সাজ-সজ্জা সব খুলে ফেলে সাদা মোটা কাপড় পরিধান করে আপন রবের ইবাদাতে মশগুল হতো। ব্যাস। আজকের মতো তার স্বামীর হক আদায় শেষ। কি অরুচিকর আর অস্বাভাবিক কথা। তারপর মহিলার সাজ-সজ্জা খুলতে হবে কেন? সাজ-সজ্জাসহ আল্লাহর ইবাদাত করা যাবে না কেন? অথচ আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা বলেন, قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَتُ مِنَ الرِّزْقِ قُلْ هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَوةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَومَ الْقِيمَةِ كَذلِكَ نُفَصِّلُ الْأَيْتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ “তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো কে হারাম করেছে? আর আল্লাহর দেয়া পবিত্র জিনিসগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে? বলো দুনিয়ার জীবনেও এ সমস্ত জিনিস ঈমানদারদের জন্য। আর কিয়ামতের দিনে এগুলো তো একান্তভাবে তাদেরইে জন্য হবে। এভাবে যারা জ্ঞানের অধিকারী তাদের জন্য আমার কথাগুলো আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণনা করে থাকি।” (সূরা আরাফঃ ৩২) আচ্ছা এই ধরনের ইবাদতের কাহিনী কি আমরা উম্মাহাতুল মুমিনীন ও মহিলা সাহাবীদের জীবনে দেখি? এই তথাকথিত মহীয়সী নারী কি ওম্মাহাতুল মুমিনীন (রাসূল (সঃ) এর স্ত্রীগণ) আর মহিলা সাহাবীদের চেয়েও মহীয়সী হয়ে গেছেন? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সাজ-সজ্জা করা সার্বক্ষণিক সুন্নত। মুমিন নারী কখনও সাজ-সজ্জা করে পর পুরুষকে দেখাতে যায় না। বরং অনেক মুমিন (পুরুষ) বা ঈমানদার কিংবা আল্লাহওয়ালা নামে পরিচিত ব্যক্তি (পুরুষকে) দেখেছি তারা পর্দা করে না……..। গায়রে মহরম নারীদের সাথে এসিমুখে, খুশি মনে মহিলাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কথা বলে। ঝাড়ফুঁক দেয়। চোখে ফুঁ দেয়। অনেকে যুবতী মেয়েদের কুরআন পড়ানোর জন্য সরাসরি নিজেও বেপর্দা হয়, অপরকেও বেপর্দা করে। এই বিষয়টা এসব আল্লাহওয়ালারা একেবারেই গুরুত্ব দেয় না।
পৃষ্ঠা:২৩
স্বামীর ক্ষমতা কতোখানি তা বোঝানোর জন্য একটা হাদীসের অংশবিশেষের ব্যাপক প্রচার। মনে হয় এই হাদীসটি জানেনা এমন মানুষই খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাদীসটি হলো-“স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল ইবাদাত করা যাবে না।”মূল হাদীসটি এই রকম “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত” একদা একজন স্ত্রীলোক এসে রাসূল (সঃ)-কে বল্লেন, “হে আল্লাহর রাসূল আমার স্বামী ছাফওয়ানবিন মুয়াত্তাল আমাকে মারেন যখন আমি নামাজ পড়ি। আমি যখন রোজা রাখি আমাকে রোজা ভাঙ্গতে বাধ্য করে। আর তিনি সূর্য ওঠা ব্যতিত ফজরের নামাজ পড়েন না।” তখন সাফওয়ান রাসূল (সঃ)-এর নিকটে ছিল। তিনি তাকে স্ত্রীর অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সাফওয়ান বল্লেন, “নামাজের সময় তাকে জোর করে নামাজ থেকে সরিয়ে দেই এবং মাঝে মাঝে মারি। কারণ প্রত্যেক রাকাতে দুটি করে সূরা পড়ে এবং রাকাত দীর্ঘ করে। জোর করে রোজা ভাঙ্গায়ে দেই এর মানে সে ফরজ রোজার পরে একাধারে রোজা থাকে। আমি একজন যুবক মানুষ। তাই মাঝে মধ্যে আমি তার রোজা ভাংতে বাধ্য করি। রাসূল (সঃ) বল্লেন, “তুমি ফজর নামাজে দেরী কর তা কেন?” সাফওয়ান বল্লেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি ঐ গোত্রের লোক যারা অনেক রাত পর্যন্ত মানুষের বাগানে পানি সেচের কাজ করে। অনেক রাতে ঘুমাই। আজান শুনতে পাইনা। সকাল হয়ে যায়।”রাসূল (সঃ) বল্লেন, “ঘুম ভাংলেই তুমি নামাজ পড়ে নেবে।” আর মহিলাকে বল্লেন-প্রত্যেক রাকাত নামাজের জন্য একটি একটি করে সুরাই যথেষ্ট। আর তোমার সাথীর অনুমতি ছাড়া তুমি নফল রোজা করবে না।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ) এবার লক্ষ্য করেন, ঐ মহিলার প্রেক্ষাপট আর আমাদের প্রেক্ষাপট কি এক? আর একটা ভূয়া হাদীস, পুরুষেরা খুব মানে “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত।” মূলত এটা কোনো হাদীসই না। অথচ “সমাজে সেই পুরুষ উত্তম যে তার স্ত্রীর বিবেচনায় উত্তম।” এই সহীহ হাদীসটি খুব অল্প পুরুষই জানেন। আর যারা জানেন তারাও এর গুরুত্ব দেয় না। সত্যিই পুরুষকে যতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বিভিন্নভাবে তারা সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। যেমন-
পৃষ্ঠা:২৪
(১) যুক্তি ছাড়া গায়ের জোরে কথা বলে। (২) কথায় কথায় স্ত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করে।(৩) অপমান অপদস্ত করে।যুক্তি ছাড়া কথাগুলো শুনলে সত্যি দুঃখ লাগে। যেমন ছেলেমেয়ে অন্যায় করলেই একদল পুরুষ ছেলেমেয়ের মায়ের উপর চড়াও হয়-তোমার আঙ্কারা পেয়েই ছেলেমেয়ে নষ্ট হলো। মা-ই মেয়েটাকে নষ্ট করল।ছেলেমেয়ের জন্য বকাঝকা, এমনকি মার খেতে দেখেছি অনেক মহিলাকে। অনেক সময় তো সংসারের যে কোনো সমস্যা বা অসুবিধা দেখা দিলেই কর্তা পুরুষটি বলে ওঠেন “সব সমস্যা তোমার জন্য। তুমি সংসার করার অযোগ্য একজন মহিলা। আমার মতো পুরুষ পাইছ তাই সংসার করে গেলা নইলে………..।” এমনি আরো কতো ধরনের অপমানকর কথা যে, এরা বলে তার ইয়াত্তা নেই। আর একদল পুরুষ আছেন যারা একা একা বন্ধু এবং বন্ধুদের স্ত্রীদের সাথে আড্ডা দিতে খুব পছন্দ করে। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়-সাথে বন্ধুর বোন এমনকি বন্ধুর স্ত্রীও থাকে। কিন্তু নিজের স্ত্রীকে সাথে নেয় না। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কোথাও বেড়াতেও যায় না। নিজের স্ত্রীর চেয়ে অন্যের স্ত্রীকে বেশী বুদ্ধিমতী ও স্মার্ট মনে করে। বন্ধুর স্ত্রীর রান্না ভালো, কথা ভালো, ব্যবহার ভালো, আরো অনেক গুণ তাদের নজরে পরে। অবশ্যই সমাজে এমন অনেক পুরুষ মানুষ আছেন যাদের কাছে নিজের স্ত্রীই উত্তম। যদিও তাদের সংখ্যায় কম। আর এদের সংসারই সুখী সংসার। সত্যি কথা বলতে কি, পুরুষদের আমি খুব ভালোবাসী। আমার প্রিয় মানুষেরা প্রায় সবাই পুরুষ। আমার আব্বা, আমার হাসবেন্ট পুরুষ, আমার সন্তানেরা পুরুষ। ছোটবেলা আমি কোনো দিন পুতুল খেলিনি, রান্নাবাটি খেলিনি, তবে ঘুড়ি উড়ানো, ডাংগুটি, গোল্লা ছুট এসব খেলেছি। অবশ্যই তা ছেলেদের সাথে। আর সব চেয়ে বড় কথা-আমার প্রিয়তম নবীজিও পুরুষ। পুরুষদের ভালোবাসী বলেই তাদের ত্রুটিগুলো তুলে ধরলাম। রাসূল (সঃ)-এর দিক নির্দেশন অনুযায়ী তারা যেনো নিজেদের কর্মকান্ড শুধরে নিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তির পথ সুগম করে নেয়। এছাড়া যে আর উপায় নেই।
পৃষ্ঠা:২৫
সুযোগ্য পত্নী: এক হাতে যেমন তালি বাজে না, তেমনি একক প্রচেষ্টায় ‘সুখ’কেও ধরা যায় না। তাই তো বলেছি: “সংসার সুখী হয় পুরুষের গুণে সুযোগ্য পত্নী যদি থাকে তার মনে।” অতি বাস্তব কথা হলো পত্নী সুযোগ্য না হলে পুরুষের সকল প্রকার শান্তি প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় রূপ নিতে বাধ্য। সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করার মতো কয়েকটি আচরণ যা মেয়েরা করে থাকে। যেমনঃ (১) ঘ্যানর ঘ্যানর করা। (২) সন্দেহ করা। (৩) শশুর-শাশুড়ি এবং অন্যান্যদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা। (৪) কথায় কথায় নালিশ করা। (৫) শশুড় বাড়ির বদনাম বাবা মাযের কাছে করা। (৬) সামান্য কথায় উত্তেজিত হওয়া। (৭) অশ্লীল ও কটুবাক্য প্রয়োগ করা। (৮) সংকীর্ণ মন মানসিকতা। (৯) স্বার্থপরতা। (১০) বাপের বাড়ি থেকে কিছু আনলে তা নিয়ে বাহাদুরী করা এবং হাসব্যান্টকে খোঁটা দেওয়া। ১। ঘ্যানর ঘ্যানর করা: এমন একটা বাজে অভ্যাস যা প্রায় মেয়েদের মধ্যেই দেখি। পারিবারিক শান্তি বিনষ্ট করার জন্য এর চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই। মহিলারা যে কথাটি নিয়ে বেশী ঘ্যানর ঘ্যানর করে, তাহলো “তুমি আমাকে সময় দাও না, একটুও সময় দাওনা। কি করে আমার দিন কাটে সে খবর তুমি রাখ? তুমি সারাদিন থাক তোমার টাকা ইনকামের ধান্ধায় আমার দিকে তোমার নজরই নেই। আমাকে তুমি ভালোইবাসনা। আমি ভালো মেয়ে বলে তোমার সংসার করলাম। আর কোনো মেয়ে হলে কবে চলে যেতো………।” এভাবে আরো অনেক কথা-যার কোনো প্রয়োজন নেই, দাম নেই, যা অনেক মহিলারাই বলে থাকে। সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য এই ঘ্যানর ঘ্যানর এর বিরাট ভূমিকা।
পৃষ্ঠা:২৬
২। সন্দেহ করা: কিছতেই সন্দেহ করা মূলত একটি রোগ। অনেক নারী-পুরুষই এই রোগে আক্রান্ত। তবে আমার মনে হয় পুরুষের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। আমার এই ধারণাটা ভুলও হতে পারে। আমি মহিলা মহিলাদের সাথে মিশি, মহিলাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনি, মহিলাদের কর্মকান্ড দেখি। তাই আমার ধারণা হয়েছে মহিলারা সন্দেহ প্রবণ বেশি। এমনটি পুরুষদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তা যার মধ্যেই এ রোগ থাকুক না কেন-এটা খুবই খারাপ রোগ। এ রোগ যাদের মধ্যে থাকে তারা নিজেরাও সুখি হয় না, অপরকেও সুখি হতে দেয় না। সন্দেহ একটা আগুন তুল্য। এ আগুনে আমি কতো সোনার সংসার পুড়তে দেখেছি। এ রকম অভিযোগ কতো যে শুনেছি-আপা আমার মনে হয় সে (তার স্বামী) অন্য কোনো মহিলার প্রতি আসক্ত। আবার অনেক জায়গায় দেখা যায় সন্দেহ ঠিকই আছে। আমার তো মনে হয় সন্দেহ করে জেতার চেয়ে সন্দেহ না করে ঠকা ভালো। কারণ স্বামী যদি অন্যায় কিংবা খারাপ কাজ কিছু করে তার জন্য মহান আল্লাহর কাছেই তারই জবাব দিতে হবে। আমার দাদু খুব সুন্দর করে বলতেন, “যে যতখানি পানিতে নামবে তার ততখানি ভিজবে।” একান্ত জঘন্য ধরনের কিছু করলে আর সেই কাজ অব্যাহতভাবে চলতে থাকলে তার সাথে সম্পর্ক না রাখাই ভালো। সে রাস্তা আল্লাহ সুবহানু তায়ালা তো রাস্তা খোলাই রেখেছেন। ঝগড়াঝাটি, কোন্দল, ফাসাদ করে তার সাথে ঝুলে থাকার কোনো মানে নেই। বিয়ে হয়েছে বলেই যে সে মনের মতো মানুষ হয়ে যাবে এমন তো কথা নেই। বিয়ের পর আপনার সামনে তিনটি রাস্তা খোলা আছে। মানুষটিকে ভালোবেসে, তার মা-বাবা ভাইবোনকে ভালোবেসে, তার দৈনন্দিন জীবনের সাথে খাপ খাওয়ায়ে নিয়ে তাকে মনের মতো করে গড়ে নিন। তা যদি না পারেন, তবে নাইবা সে মনের মতো হলো, মনের মতো সবাই হয় নাকি? সন্তান মাযের মনের মতো হয় না, আপন ভাইবোন মনের মতো হয় না। আর ভিন্ন পরিবেশের ভিন্ন পরিবারের অনেক সময় ভিন্ন দেশের দুটি মানুষ কি করে মনের মতো হবে। থাক না যে যার মতো, কিছু Sacrifice, কিছু Compromise করে একটা মাঝামাঝি পর্যায়ে চলে আসেন। কয় দিনের দুনিয়া? আখেরাতের কামিয়াবির কথা ভেবে, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটু মেনে নিলেই আর সমস্যা থাকে না।যারা এটাও মানতে পারবেন না, তারা আলাদা হয়ে যান। খামাখা কেন অশান্তি বাড়াবেন।
পৃষ্ঠা:২৭
৩। শশুড় শাশুড়ির সাথে ভালো সম্পর্ক না রাখা: অনেক বউদেরই আমি এই কাজটি করতে দেখি। শশুড়-শাশুড়িকে তারা আপন করে নিতে পারে না। তাদেরকে একটা উটকো ঝামেলা মনে করে। তাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে, প্রত্যেকের বোঝা উচিত। একদিন তাদেরকেও ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ব্যক্তির ন্যায় হতে হবে। ছেলে যদি মা বাবাকে সম্মান-সমীহ করে-ছেলের বউও সেই বাবা মাকে সম্মান-সমীহ করতে বাধ্য।দীর্ঘদিন পর আজিজার সাথে দেখা হলো। খুব হাসিখুশি মেয়েটা। বল্লাম, “কেমন আছ আজিজা? কবে আসছ?: “ভালো আছি খালাম্মা। আমি তো এখানেই থাকি।” হাসিমুখে বল্ল আজিজা।ঃ “এখানে মানে? শশুড় বাড়ি থাক না?” : “না খালাম্মা, আমি প্রায় এক বছর হয়ে গেলো এখানে থাকি। মায়ের বাড়ির পাশেই বাসা ভাড়া নিয়েছি।” একটু চুপ করে থেকে বল্লাম, “তোমার শশুড়-শাশুড়ির একটা মাত্র ছেলে। তাদের রেখে এখানে থাকাটা কি তোমার ঠিক হচ্ছে?” আজিজা বল্ল, “খালাম্মা সে দিন আমার শাশুড়ি মন খারাপ করে বলছে, ‘আমার ছেলেটাকে ভুলায়ে ভুলায়ে তুমি নিয়ে গেলা আজিজা।’ তখন আমি বলেছি, ‘মা, আমার বাবা-মা এর জন্য আমার মনটা খুব কাঁদে তাই আপনার ছেলেকে ভুলায়ে ভুলায়ে নিয়ে এসেছি। আপনার জন্য আপনার ছেলে মন কাঁদে না কেন? সে আমাকে ভুলায়ে ভুলায়ে এখানে রাখতে পারে না? আমি পরের মেয়ে আমি বলতেই পারি। আপনার ছেলে কেন আপনাকে ফেলে চলে আসে? কি বলেন খালাম্মা, ঠিক বলেছি না?” বিজয়নীর মতো হাসতে থাকে আজিজা। বল্লাম “তোমার শাশুড়ি তখন কি বল্ল?”: “কি আর বলবে? চুপ করে থাকল। শাশুড়িকে জব্দ করতে পেরে আজিজা বেশ আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে বলেই মনে হলো।” আর এক মা দুই ছেলে নিয়ে ঢাকাতেই থাকতেন। বড় ছেলে বাংলা লিংকে ভালো চাকুরী করে, ছোট ছেলে ভার্সিটিতে পড়ে। দেখেশুনে সুন্দরী এক মেয়েকে বউ করে আনে ছেলেটির মা। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই সুন্দরী বউটি মুখ
পৃষ্ঠা:২৮
গম্ভীর করে একদিন শাশুড়িকে বল্ল “মা আপনি দেশের বাড়িতে থাকেন। এখানে থাকলে আপনার সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।” শাশুড়ি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল পুত্র বধূর অনিন্দ সুন্দর মুখের দিকে। ছেলেটি একথা জানতে পেরে মায়ের হাত ধরে কাঁদলো আর বল্ল “মা তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না, তুমি এখানেই থাক।” কিন্তু কয়েক দিন পরে বউটি বগুড়ায় বাপের বাড়ি চলে গেল। ছেলে আনতে গেলে জনাল “তোমার মা যতো দিন ঢাকার বাসায় থাকবে ততদিন আমি যাব না।” বাধ্য হয়ে শাশুড়ি চলে এসেছে। বউটি তার বাসায় এসেছে। মাঝে মাঝে স্বামীর সাথে ঝগড়াঝাটি হয়, এরপর ভালোই আছে। এসব অল্প বয়স্ক শাশুড়িরা বউদের কাছে যেন অসহায়। অথচ ছেলে কোলে নিয়েই মায়েরা লাল টুকটুকে বউদের স্বপ্ন দেখে।
৪। কথায় কথায় নালিশ করা: সামান্য ব্যাপারে হাসব্যান্টদের কাছে নালিশ করা কিছু মেয়েদের বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাসটি সংসারের শান্তি বিনষ্ট করার ব্যাপারে বিরাট অবদান রাখে।
৫। শশুড় বাড়ির বদনাম বাবা মায়ের কাছে করা: শশুড় বাড়ির লোকজনের কিংবা স্বামীর বদনাম মা-বাবার কাছে বলার মতো বড় বোকামী আর হয় না। অথচ অনেক মেয়েই এই কাজটি করে। আমার দাদী লেখাপড়া জানতেন না অথচ কি যে বুদ্ধিমতী ছিলেন। কথাচ্ছলে বিভিন্ন উপদেশ তিনি দিতেন আমাকে। দাদীই একদিন আমাকে বলেছিলেন, “শোন বুবু স্বামীর বদনাম, শ্বশুড় বাড়ির লোকজনের বদনাম কোনো দিন বাবা মাযের কাছে কিংবা নিজের আত্মীয়-স্বজনের কাছে বলবা না। এরাই সুযোগ পেয়ে একদিন তোমাকে খোঁটা দিয়ে দেবে। সুযোগ পেলে মা-ও মেয়েকে ছাড়ে না।” কথাটা যে কতো বড় সত্যি। সেদিন এক মেয়ে খুব দুঃখ করে বল্ল, “আপা আমার মা আমার স্বামীকে একদম দেখতে পারেনা অথচ মাই পছন্দ করে আমাকে বিয়ে দিয়েছে।” বল্লাম “পছন্দ করে তোমাকে বিয়ে দিয়েছে তাহলে অপছন্দ করে কবে থেকে?” মেয়েটি বল্ল, “তিন বছর হলো আমার বিয়ে হয়েছে। প্রথম দু’বছর মা তো ভালো ব্যবহারই করত কিন্তু বছরখানেক হলো মা ওকে দেখতেই পারে না।”
পৃষ্ঠা:২৯
পরে খবর নিয়ে জানলাম বিয়ের পর থেকে মেয়েটি ওর স্বামী আর শাশুড়ি সম্পর্কে মায়ের কাছে এত নালিশ করত, তাদের খারাপ ব্যবহারের এত ফিরিস্তি পেশ করত যে, মেয়েটির মা তখন মেয়ের কষ্টে কাঁদতেন। এমনকি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন যে, মেয়েকে আর দেবেন না। ছাড়ায়ে নেবেন।কিন্তু ইদানিং স্বামী-শাশুড়ি সবার সাথে মেয়েটির মোটামুটি মিলমিশ হয়ে গেছে। কিন্তু মায়ের মন থেকে অসন্তুষ্টি দূর করতে পারেনি।
৬। সামান্য কথায় উত্তেজিত হওয়া: কিছু মহিলা আছেন যারা সামান্য কথায় রেগে যান। এটি খুব খারাপ স্বভাব। এই স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে। রাগের সময় তারা এমন কিছু আচরণ করে ফেলে কিংবা এমন কিছু করে যার জন্য পরে আফসোস করতে হয়। অনেকেই বলে “আপা আমার খুব রাগ। রাগের সময় ভালো মন্দ জ্ঞান থাকে না পরে অবশ্য খুব খারাপ লাগে।”রাগ কমানো আসলে চেষ্টার ব্যাপার, তবে অসাধ্য কোনো কাজ নয়। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তা না হলে সংসারের শান্তি নষ্ট হবে। একদা এক সাহাবী রাসূল (সঃ)-এর নিকট উপদেশ চেয়েছিলেন, আল্লাহর রাসূল তাকে পর পর তিনবার বলেছিলেন, “তুমি রাগ করবে না।”
৭। অশ্লীল এবং কটুবাক্য প্রয়োগ করা: অনেক মহিলাকে দেখেছি কথায় কথায় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে। অশ্লীল ভাষীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা কবীরা গুনাহ। অনেকে ইতর প্রাণীর নাম উচ্চারণ করে এর বাচ্চা তার বাচ্চা বলে গালাগালি করে। মহান রাব্বুল আলামীন জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘সেখানে কেউ কোনো বাজে অশ্লীল কথা শুনবে না।’ তার মানে জান্নাতীরা অশ্লীল কথা বলে না। অশ্লীল ভাষা জাহান্নামীদের ভাষা। কটু ভাষা প্রয়োগ করাও অত্যন্ত খারাপ কাজ। এই কটুভাষা প্রয়োগকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানু তায়ালা বলেনঃوَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لَمَزَةٍ .”ধ্বংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সামনাসামনি লোকদের উপর কটু বাক্য প্রয়োগ করে এবং পেছনে নিন্দা করে বেড়ায়।” (সূরা হুমাজা: ১)
পৃষ্ঠা:৩০
অর্থাৎ, কটু বাক্য প্রয়োগকারীদের উপর আল্লাহ লানত করেছেন। আল্লাহ যাদের লানত করেন দুনিয়া ও আখেরাতে তারা কিছুতেই শান্তি পেতে পারে না।
৮। সংকীর্ণ মন-মানষিকতা: উদারতার বিপরীত হলো সংকীর্ণতা। যাকে বলে ছোট মনের অধিকারী। আসলে মনটাকে বড় করতে হবে। আর তার প্রমাণ পাওয়া যাবে আচার-ব্যবহারে। লেন-দেনে, কথা-বার্তায়। ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া। স্বার্থপরতা, কৃপণতা, সবই সংকীর্ণ মন-মানসিকতার বিভিন্ন রূপ।
৯। স্বার্থপরতা: নিজের স্বার্থ নাকি পাগলেও বোঝে। তা বুঝুক। আমরা তো আর পাগল না-আমাদের কাছে স্বার্থপরতা যেন এত প্রকট হয়ে ধরা না পরে যাকে দৃষ্টিকটু বলে।
১০। বাপের বাড়ি থেকে কিছু আসলে তা নিয়ে অহংকার করা এবং হাসব্যান্টকে খোঁটা দেওয়া: কোনো মেয়েই এই কাজটা কোনো অবস্থাতেই করা উচিত নয়। বিশেষ করে মুসলিম নারী তো একাজ করতেই পারে না। অথচ অনেক মেয়েই এই বিষয়টা নিয়ে সমস্যা করে। প্রথম কথা হলো তাকে বাপের বাড়ি থেকে কিছু আনতে কে বলেছিল? নিশ্চয়ই বিয়ে হয় না বলে তার বাবা মেয়ের সাথে কিছু অর্থ-সম্পদ দিয়েছে। তা নিয়ে দেমাগ অহংকারের কিছু নেই। বরং কিছু দিয়ে খোঁটা দিলে তাকে রাসূল (সঃ) সেই কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন যে কুকুর বমি করে আবার তা খায়। অতএব, যেসব নারী বাপের বাড়ি থেকে কিছু এনে তার আবার উল্লেখ করে তার অবস্থা তো ঐ কুকুরের মতো। হাসব্যান্ট যদি গরীব হয় তাকে সংসার চালাতে সাহায্য করলে দ্বিগুণ সওয়াব। নিজের সন্তানদের জন্য খরচ করলেও দ্বিগুণ সওয়াব। হযরত খাদিজা (রাঃ) তার বিপুল সম্পত্তি সবটাই উজার করে দিয়েছিলেন স্বামীকে। অনেকে হয়ত বলতে পারেন খাদিজা (রাঃ) তো আল্লার রাসূলকে দিয়েছিলেন। মোটেও তা নয়। নবুয়ত পাওয়ার অনেক আগেই তিনি তার সমুদয় সম্পদ স্বামীকে উপঢৌকন দিয়েছিলেন। জীবনে কোনে দিন তার উল্লেখ করেন নি। আমাদের সমাজে যেসব মেয়েরা বাপের বাড়ি থেকে সম্পদ এনেছেন-খাদিজা (রাঃ) এর তুলনায় তা কতটুকু?
পৃষ্ঠা:৩১
সত্যি কথা বলতে কি দুনিয়ার শান্তি বজায় রাখতে না পারলে আখেরাতের শান্তি পাওয়া যাবে না। তাই যে কোনো মুল্যে দুনিয়ার শান্তি বজায় রাখতে হবে। কতোটুকু সময় আর আছি? আসুন খাদিজার মতো, ফাতিমার মতো, আয়েশার মতো সব সম্পদ, সব শ্রম, সব মেধা দিয়ে ইহকাল এবং পরকালে গড়ে তুলি শান্তির আবাসভূমি। তবে একথা সত্যি নারী-পুরুষ দুইজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কখোনোই একটি সুখের নীড় গড়ে উঠতে পারে না।
তবে এক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষের ভূমিকা অধিক : যেহেতু আল্লাহ সুবহানু তায়ালা তাকে কাওয়াম বা কর্তৃত্বশীল করেছেন এবং সে উপযোগী শারিরীক ও মানসিক শক্তিও দিয়েছেন। কিন্তু যোগ্যতা যথাযথভাবে প্রয়োগ না করে শুধু গায়ের জোরে স্বেচ্ছাচারী এবং স্বৈরাচারী আচরণ করলে, দুনিয়ার শাস্তি থেকে সে থাকবে লক্ষ যোজন দূরে আর আখেরাতের শান্তি থেকে থাকবে চিরজনমের মতো মাহরুম। আর একটা ব্যাপারে-অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্ত্রীরা পুরুষদের একটু বেশী এবং ভালো জিনিস খাওয়ানোর চেষ্টা করে। একথা হয়ত অনেক ক্ষেত্রে পুরষেরা জানেই না। একবার হঠাৎ করেই বাপের বাড়ি বেড়াতে গেছি। যেয়ে দেখি মা নেই বাসায়। আমার মেঝ বোন অসুস্থ্য। ২/৩ দিন হলো মা সেখানে গেছে। খুলনায় বিকেল বেলা আমার ছোট, ভাইয়ের স্ত্রী আব্বাকে এক গ্লাস দুধ দিয়ে গেল। আব্বা দুধের গ্লাসে এক চুমুক দিয়েই বল্লেন, “বুঝলাম না কিছু। তোর মা বাড়ি থেকে যাওয়ার পরে শাহিদা কি দুধে পানি দেওয়া শুরু করল?” আমি বল্লাম, “কি যে বলেন না, শাহিদা ফুপুআম্মা কি দুধে পানি দেওয়ার মতো মানুষ?” শাহিদা ফুপুআম্মা আব্বার মামাতো বোন। বেশ কয়েকটা গাভী পোষেন। সেখান থেকে প্রতিদিন এক কেজি দুধ দেন আমাদের।” আব্বা আর এক ঢোক খেয়ে দুধের গ্লাসটা আমার হাতে দিতে দিতে বল্লেন, “খেয়ে দেখ তো, এ একটা দুধ হলো? আগে তো এমন ছিল না।”
পৃষ্ঠা:৩২
পরদিন সকালেই মা বাসায় এলেন। যথারীতি বিকেলে এক গ্লাস দুধ এনে দিলেন। আব্বা এক চুমুক খেয়েই আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেন, “এই দ্যাখ, কালকেও তো দুধ খেয়েছিলি-আজ একটু খেয়ে দ্যাখ। কালকের সাথে আজকের দুধের কোনো তুলনা হয়?আব্বা তার গ্লাস থেকে জোর করে আমাকে এক চুমুক খাওয়ালেন। সত্যি কালকের তুলনায় আজকের দুধ অনেক ভালো। মা বল্লেন, “কি হয়েছে?”আমি বল্লাম, “মা আব্বা তো বলছে আপনি বাসায় না থাকলে নাকি শাহিদা ফুপুআম্মা দুধে পানি দেয়।” মা বল্লেন, “ছিঃ ছিঃ ছিঃ এ কথা তোর আব্বা শাহিদাকেও বলেছে। সে বেচারী তো আমাকে ধরে বলছে, ভাবী দেখেন তো ভাই কি সব বলে?” আসলে ব্যাপার কি জানিস? উপর থেকে দুধ ঢেলে নিতে নিতে নিচের দুধ বেশি পাতলা হয়ে যায়। নিচের দুধের সাধও তেমন থাকে না। আমি তো দুধ জ্বাল দিয়ে আগেই সরশুদ্ধ একটা মগে ঢেলে তুলে রাখি। তারপর সবাই খায়। একথা তো বউমাকে আমি বলে যাই নি। বউমা সবাইকে দিয়ে দিয়ে বিকেলে তোর আব্বাকে যখন দিয়েছে তখন স্বাভাবিক ভাবেই দুধ পাতলা হয়ে গেছে।”মেয়েদের এমনি অনেক সেবা-যত্ন ও ছোটখাট ত্যাগের কথা যে পুরুষেরা কোনোদিন বুঝতেও পারে না। এই যে আমার মা উপর থেকে দুধের সরসহ তুলে রেখে আমার বাবাকে খাওয়ান, তা যদি ঘটনাচক্রে এভাবে বের হয়ে না যেত-তাহলে আমার বাবা কিংবা আমরা কোন দিনই জানতাম না।আমার জানামতে ৯৯% মহিলা যার যার জীবন সাথীকে তাদের পছন্দের খাবার খাওয়াতে পছন্দ করে। তারা জানে যে তাদের স্বামীরা কি পছন্দ করে। কিন্তু স্ত্রীরা কি পছন্দ করে তা বোধ হয় কম পুরুষেই জানে। (আমার আবার সমস্যা আছে। আমি এ ধরনের কিছু লিখলেই আমাকে অনেকে সরাসরি আক্রমণ করে। বলে আপা আপনার স্বামী বোধ হয় এই রকম তাই এই সব কথা লিখেছেন? না আমার স্বামী ১% এর মধ্যে।) বৃদ্ধা আবেজান বিবির কাছে তার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা শুনতে চেয়েছিলাম। বল্ল, “সব ভুইলা গেছি গো, বুবু-তবে একদিনের একটা কথা মনে
পৃষ্ঠা:৩৩
আছে। আমাদের আর্থিক অবস্থা তো তেমন একটা ভালো ছিল না। এই চলে গেছে মোটামুটি। একদিন বিলের মইধ্যে বড়সি ফালাইয়া বড় একটা কৈ মাছ ধইরা নিয়া আইছে আমার সোয়ামী ফজলু মিয়া। পুরান কৈ। যেমন মোটা তেমন বড়। মাছটা দেইখা খুব খুশি হইলাম। পাশের বাড়ির কফিল চাচায় ডাক দিয়া কইল “কি রে ফজু মাছটা বেঁচবি নি?”তোমার দাদা (ফজলু মিয়া) কিছু কওনের আগেই আমি কইলাম “না চাচাজান মাছটা বেঁচবনা। আমরা তো কিনা খাইতে পারি না গরিব মানুষ। আল্লায় যখন দিছে ওডা আমরাই খাই। আপনি তো বাজার থিকা কিনবার পারেন।” কফিল চাচা আর কিছু না বইলা চইলা গেল। কিন্তু ফজু মিয়া আমার উপর ক্ষেইপা উঠল। বল্ল, “তুই মানা করলি ক্যান মাছটা আমি দশ টাকায় বেঁচপার পারতাম।” আমার কাছে দশটা টাকা ছিল। আমি সেই টাকা ফজু মিয়ারে দিয়া মসলা পাতি বাটা-কোটা করলাম। বল্লাম “মাছটা আমি কিন্না নিলাম………।”কিন্তু ফজু মিয়া কি করল জান বুবু? বলে, একটু চুপ করে থেকে বক্স, “আমার দশ টাকাও নিল, মাছটাও বেইচা দিল। কত বড় বড় কথা তুইলা গেছি অথচ এই কথাডা ভুলবার পারি নাই। আমার বান্ধবী জাকিয়া বল্ল, “দাদু ফজু দাদাকে আপনি মাফ করে দেন।” মাফ করা না করার কি আছে? সে যে কোনো অপরাধ করছে এটা তার কোনো দিন মনে হয় নাই। আমি ও মনে করি নাই। তবে ভীষণ কষ্ট পাইছিলাম।” বড় একটা নিঃশ্বাসের সাথে বল্ল কথাটা আবেজান বিবি। আর একটা ঘটনা। এই ভদ্র মহিলা আবেজান বিবির মতো গরীব না অশিক্ষিতও না। তার হাসব্যান্টও শিক্ষিত মানুষ। ভদ্র মহিলার নাম নাহার। নাহার বল্লেন, “আমার বড় ছেলে তখন এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। বন্ধুর সাথে একদিন পাখি শিকার করতে যেয়ে ছয়টা ঘুঘু শিকার করে নিয়ে এলো। দেখে খুব খুশি হয়ে গেলাম। অনেক আগে ছোটবেলায় একবার খেয়েছিলাম ঘুঘু পাখির গোশত। খুব টেষ্টি। কোটা বাহার পর এক কেজির মতো গোশত হলো, খুব সুন্দর করে ভুনা করে রান্না করলাম।
পৃষ্ঠা:৩৪
তারপর ভাত তরকারী টেবিলে রেখে আমি গোসল করতে গেলাম। গোছল করে চুল আঁচড়িয়ে খ্যবার টেবিলের সামনে এসেই থমকে দাঁড়ালাম। তোমার আংকেল বাহির থেকে এসেই খেতে বসেছে এবং আমি আসতে আসতে তার খাওয়া হয়ে গেছে। ডাল আছে ভাজি আছে, তার কিছুই না খেয়ে পুরা গোস্তটুকু খেয়ে নিয়েছে। খাওয়ার ব্যাপার নিয়ে আমার তেমন একটা লোভ ছিল না, কিন্তু সেইদিন সত্যি আমি কষ্ট পেয়েছিলাম। আজও মনে হলে কষ্ট পাই।” ভদ্র মহিলার বলার ভঙ্গিতে আমারও কষ্ট হলো। এই যে অবিবেচকের মতো কাজ। এমন কাজ যারা করে তাদের নিয়ে সুখি সংসার গড়া সম্ভব না। সুখী সংসার কাকে বলে তা আমাদের বোঝা উচিত। যে সংসারের প্রত্যেকটি সদস্য সুখী। পরস্পরের প্রতি যাদের কোনো নালিশ নেই। সেই সংসারটি সুখি। কিন্তু সংসারের কাওয়াম বা পরিচালক যদি অবিবেচক, স্বার্থপর। হয়, সেই সংসারে কি করে সুখ আসবে? জানিনা, আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তা বলতে পারলাম কিনা।আল্লাহ সুবহানু তায়ালা আমাদের সঠিক কথাটি সহজভাবে বোঝার তৌফিক দান করুন। আমীন। সুম্মা আমীন!!
সমাপ্ত