যুবক ভাইদের প্রতি বিশেষ
পৃ্ষ্ঠা ১ থেকে ১৫
পৃষ্ঠা:০১
যুবকদের বিজয়:সকল প্রশংসা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁরই সাহায্য কামনা করি, তাঁরই কাছে ক্ষমা চাই এবং আমরা আমাদের নফসের সকল অনিষ্টতা ও সকল কৃতকর্মের ভুল-ভ্রান্তি থেকে তাঁরই কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না। আর যাকে আল্লাহ গোমরাহীতে নিক্ষেপ করেন, কেউ তাকে হেদায়েত দান করতে পারে না। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বাণী-:الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ হে ঈমানদারগণ! (তোমরা) আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত তেমনিভাবে ভয় করতে থাক এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। আল ইমরান: ১০২]
পৃষ্ঠা:০২
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا:হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের দু’জন থেকে বিস্তার করেছেন অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা করে থাকো এবং আত্মীয় জ্ঞাতি বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক থাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (নিসা: ১):يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا . يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا .হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বলো। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করতে কিতাব এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করতে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে। (আল আহযাব। ৭০-৭১। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী- নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো দীনের ক্ষেত্রে নতুন আবিস্কৃত বিষয়, প্রত্যেক নতুন আবিষ্কৃত বিষয় বিদআত, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হলো জাহান্নাম। (সুনানে ইবনে মাজাহ : সহীহা ইকিতাব আল কায়্যিম رحمه الله যে সমস্ত কিতাব লিখেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম একটি কিতাব হলো ‘আল ফাওয়াইদ’। কিতাবটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যে মনে হচ্ছে, তিনি ৮০ বছরের একজন মানুষ এবং তিনি এক জায়গায় বসে তার
পৃষ্ঠা:০৩
জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করেছেন। এ কারণেই তিনি তার কিতাবের নাম দিয়েছেন ‘আল ফাওয়াইদ’ যার অর্থ ‘জ্ঞানগর্ভ তথা উপকারী প্রবন্ধের সংকলন।’ মূলত ইকিতাব আল কায়্যিম যে কিতাবগুলো লিখেছেন সেই কিতাবগুলো ইসলামের কল্যাণে লিখিত সর্বোত্তম কিতাবগুলোর অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে, ইকিতাব আল কায়্যিম হলেন সেই পরিপক্ক ফল যিনি ইবনে তাইমিয়্যাহ থেকে উদ্ভুত। ইবনে তাইমিয়্যাহ رحمه الله ব্যাপক জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার জন্য বিখ্যাত। তিনি জীবনের একটি বড় অংশ এক যুদ্ধ থেকে অন্য যুদ্ধে মুজাহিদ হিসেবে কাটিয়েছেন। যখন শামের শাসক তাতারদের মোকাবেলা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল এই বলে যে, ‘আমরা তাদের মোকাবেলা করতে অক্ষম’, তখন ইবনে তাইমিয়্যাহ رحمه الله নিজে ঐ যুদ্ধ পরিচালনায় সেনানায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন এবং বলেন- ‘আমরা অবশ্যই তাদের মোকাবেলা করবো।’ অবশেষে আল্লাহ তায়ালা ইবনে তাইমিয়্যাহ رحمه الله -এর দলকে বিজয় দান করেন। আমি বলি, ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ, পরিপত্ত্ব এবং উপযুক্ত এক মানুষকে পৃথিবীতে রেখে যান এবং সেই পরিপত্ত্ব ও উপযুক্ত মানুষটি হলেন ইকিতাব আল-কায়্যিম রহ.। ইকিতাব আল-কায়্যিম একাধারে আত্মার গভীরতা এবং ইবাদতের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি আল্লাহকেই সার্বক্ষণিক চিন্তা-চেতনায় রাখতেন। এ কারণে একবার তিনি যখন মক্কা অতিক্রম করছিলেন, তখন তিনি যে পরিমাণে আল্লাহর ইবাদত করতেন, তা দেখে মক্কার লোকেরা আশ্চর্যান্বিত হয়েছিল। ইবনে আল-কায়্যিম رحمه الله যে কিতাবগুলো লিখেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘আল ফাওয়াইদ।’ এছাড়াও তিনি তারবিয়্যাহ সংক্রান্ত কিতাবও লিখেছেন। যেমন- ‘মাদারিজ আস-সালিকিন শারাহ মানাযিল আস-সারিঈন ঈলা রব্ব-আল-আলামিন।’ তাঁর ফিকহ্ এবং উসূল সংক্রান্ত কিতাব ‘ঈ’লাম আল মুওয়াক্কিন আন রব্বাল আলামীন’ এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত, সিয়াম, হিজরত, যুদ্ধ, চিকিৎসা সম্পর্কিত কিতাব ‘যাআদ আল-মায়াদ ফি সিরাত খইর আল ঈবাদ।’ তাঁর অন্যান্য কিতাবগুলো হলো ‘আর রূহ, বাদাঈ আল ফাওয়াঈদ এবং আল জওয়াব আল কাফি ফি আস সুআল আন আদ দাওয়া আল শাফিঈ।’
পৃষ্ঠা:০৪
উপকারহীন দশটি বিষয়: আল ফাওয়াঈদ কিতাবের ১৬১-১৬২ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন- এমন দশটি বিষয় রয়েছে যাতে কোন উপকারিতাই নেই-
১. সেই জ্ঞান যা কাজে পরিণত করা হয় না।
২. সেই কাজ যাতে ইখলাস নেই এবং সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।
৩. সেই সম্পদ যা জমা করে রাখা হয় কিন্তু এর মালিক দুনিয়াতেও ভোগ করতে পারে না, আবার আখেরাতেও কোন পুরস্কার পায় না।
৪. সেই অন্তর যাতে আল্লাহর প্রতি ভালবাসা নেই: আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা নেই।
৫. সেই শরীর যা আল্লাহকে মান্য করে না, আল্লাহর পথে চলে না।
৬. আল্লাহর প্রতি সেই ভালবাসা যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি চাওয়া হয় না।
৭. সেই সময় যা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে পাপের কাফ্ফারা আদায়ে অথবা হালাল, সওয়াবপূর্ণ কাজ করার সুযোগ তালাশে ব্যয় হয় না।
৮. সেই অন্তর যা এমন কিছু নিয়ে ভাবে যেগুলো কোন উপকারেই আসে না।
৯. তাদের পক্ষ নিয়ে কাজ করা যারা আল্লাহর পথে চলতে সহায়তা করে না, আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে না কিংবা কোন উপকার সাধন করার ক্ষমতা রাখে না।
১০. এমন কাউকে ভয় করা যে কোন উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না, জীবন কিংবা মৃত্যু দিতে পারে না, আল্লাহর কর্তৃত্বাধীনে বাস করে বেঁচে থাকে এবং যার কপাল (ভাগ্য-ভাল-মন্দ) আল্লাহর ইখতিয়ারে।
পৃষ্ঠা:০৫
অন্তর এবং সময়ের অপব্যয়: আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দু’টি বিষয় তা হলো- অন্তরের অপচয় আর সময়ের অপব্যয়। অন্তরের অপচয় তখনই ঘটে যখন দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের জীবনের উপরে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং সময়ের অপব্যয় ঘটে তখনই যখন মানুষের মনে অসংখ্য আশা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। মূলত একজন মানুষ যখন নিজের মতানুসারে জীবন অতিবাহিত করে এবং অসংখ্য আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তখনই তার দ্বারা পাপকাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। অপর পক্ষে, কোন মানুষের পক্ষে ভাল কাজ তথা সওয়াবপূর্ণ কাজ করা তখনই সম্ভব হবে যখন সে সত্য সঠিক পথ তথা দীন ইসলাম অনুসারে নিজের জীবনকে গড়ে তুলবে এবং নিজেকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করানোর ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। সুতরাং তিনি এখানে উল্লেখ করেছেন যে, অন্তর এবং সময়ের অপব্যয়ের কারণে সকল পাপ কাজ সংঘটিত হয়। অন্তরের অপচয় তখনই ঘটে যখন দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়। আর অসংখ্য আকাশ কুসুম কল্পনা মানুষের অন্তরে দানা বাঁধলে সময়ের অপব্যয় ঘটে। নিজের অন্তরকে অনুসরণ করাই হলো শয়তানী কর্মের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। সত্য পথের অনুসরণ করা এবং আল্লাহর সামনে দন্ডায়মাণ হওয়ার জন্য প্রস্তুতি হলো সকল সৎকর্মের ভিত্তি।: فَأَمَّا مَنْ عَلَى وَأَثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا، فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى. وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَلَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى: যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস। পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস। [আন- নাযিআত। ৩৭-৪১) দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দিলে অন্তর কলুষিত হয় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মাণ হবার ভয় করে সে তার সময় অপচয়
পৃষ্ঠা:০৬
করে না। মোটকথা, নিজেকে সংশোধন করার ক্ষেত্রে দু’টি সুস্পষ্ট পথ হলো-: ১. আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মাণ হওয়াকে ভয় করা, যার ফলে তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সহায়তা করে।
২. সময়ের অপচয় না করা হলে অন্তর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। কেননা, মন যেমন চায় তেমন না চলে সত্য পথের অনুসরণ করলে অন্তর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-: إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ .
আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব, তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত খেয়াল-খুশিকে অনুসরণ করা হলো সকল অন্যায়ের মূল এবং সকল অপচয়ের মূলও হলো খেয়াল-খুশির অনুসরণ। সকল অশ্লীল-শয়তানী কাজের মূলমন্ত্র হলো খেয়াল খুশির অনুসরণ। প্রকৃতপক্ষে, যে ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশিকে অনুসরণ করে সে সত্য ধর্মকে এড়িয়ে চলে। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন-: وَاتَّبِعْ مَا يُوحَى إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتَّى يَحْكُمَ اللَّهُ وَهُوَ خَيْرٌ الحاكمين তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে তুমি তার অনুসরণ কর এবং ধৈর্যধারণ কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ ফয়সালা করেন এবং আল্লাহই সর্বোত্তম ফয়সালাকারী। [ইউনুস। ১০৯) খেয়াল খুশির অনুসরণ মানুষের মধ্যে তখনই গড়ে ওঠে, যখন মানুষের মাঝে ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’ এমন মনোভাব গড়ে ওঠে। অপরপক্ষে ধৈর্য- পরহেজ মানুষ খেয়াল-খুশি অনুসরণের প্রতিকূলে সর্বদাই অবস্থান করে। যেমন- যে ব্যক্তি তার জিহবাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, তাকে অবশ্যই অন্য কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানো থেকে বিরত থাকতে হবে। যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিশক্তিকে হেফাযত করতে চায় তাকে এদিক ওদিক ঘন ঘন তাকানোর
পৃষ্ঠা:০৭
অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। যে ব্যক্তি যিনা-ব্যভিচার পরিত্যাগ করতে চায়, সে ব্যক্তিকে অবশ্যই ঐ অশ্লীল ঘটনার দিকে ঠেলে দেয় এমন প্রত্যেকটি ঘটনা পরিত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ আমরা যদি সত্যদীন অনুসরণ করতে চাই, সকল অশালীন কাজের মূলে কুঠারাঘাত করতে চাই তাহলে আমাদের উচিত নিজেদের খেয়াল খুশি না চলা। এজন্যে আমাদের অনেক কাজ থেকে নিজেদেরকে পরহেয করে চলতে হবে। যে ব্যক্তি রমযান মাসে সিয়াম ভঙ্গ করে সে ব্যক্তি তার পাকস্থলীর চাহিদাই পূরণ করে; অপরপক্ষে সে যদি ধৈর্যধারণ করত অর্থাৎ সিয়াম রাখত, তাহলে ঐ ধৈর্য অবশ্যই পাকস্থলী তথা নফসের অনুসরণকে প্রতিহত করত। যে ব্যক্তি যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়ভাবে অটল থাকতে চায় তাকে অবশ্যই নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পালানোর প্রবণতা পরিত্যাগ করতে হবে। তাগুত সরকারের জেলে গিয়েও কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর প্রতি সবর করে, তাহলে তাকে কারাগারের বাইরে উন্মুক্ত দুনিয়ার প্রতি লোভ-লালসা ভালবাসা তথা আকর্ষণ পরিত্যাগ করতে হবে। ব্যক্তি তার দরিদ্রাবস্থায় সন্তুষ্ট থাকবে অবশ্যই যখন তার নফস তাকে যে কোন উপায়ে, এমনকি হারাম কাজ সম্পাদন করে হারাম টাকা উপার্জনের জন্য প্ররোচনা দেয়, তখন অবশ্যই ঐ ব্যক্তিকে নফসের খাসিয়াতের (অনুসরণের) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকল পাপ কাজের ভিত্তি হলো আশা- আকাঙ্ক্ষার অনুসরণ যা মানুষের সময়ের অপচয় ঘটায়। সময়ের অপব্যয় ঘটাতে ঘটাতে তোমার অজান্তেই তোমার কাছে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তনে আহবানকারী ফেরেশতা এসে বলবে- ‘এসো, সেই মহান রাজাধিরাজ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্তনের সময় হয়ে গিয়েছে।’ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- পাঁচটি বিষয় আসার পূর্বেই পাঁচটি বিষয় থেকে সুবিধা গ্রহণ করো। বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তারুণ্য-যৌবনাবস্থা থেকে সুবিধা গ্রহণ করো: অসুস্থ হওয়ার পূর্বেই সুস্বাস্থ্য থেকে সুবিধা গ্রহণ করো; দরিদ্রতা এসে যাবার আগেই সম্পদের সুব্যবহার করো; ব্যস্ততা এসে যাবার আগেই অবসর সময়কে কাজে লাগাও এবং মৃত্যু আসার আগেই ‘জীবন’ নামক নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করো। হাদীসটি আবদুল্লাহ বিন আক্যাস থেকে মুস্তাদরাদ-আল-হাকীম (৭৯২৭), বুখারী- মুসলিমের পর্ত সাপেক্ষে সহীহ বলেছেন। আদ-দাহাবী এবং নাসির উদ্দীন আলবানী’র সঙ্গে একমত ইকতেদা আল ইলম আল আমল: ১৭০/ তোমার তারুণ্যকে কাজে লাগাও, যৌবনাবস্থাকে কাজে লাগাও। কারণ এখন
পৃষ্ঠা:০৮
তুমি নফল সিয়াম পালন করতে সক্ষম হলেও যখন তুমি তোমার বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হবে তোমার প্রয়োজন হবে খাদ্য খাবার এবং প্রয়োজনীয় রসদ যোগানোর মাধ্যমে মাংস এবং হাড়কে পরিপুষ্ট রাখার। তাই তখন তুমি সিয়ামের কষ্ট প্রতিরোধ করতে পারবে না। বর্তমানে তোমরা যুবক; তোমরা মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে রুকু-সিজদাহ করতে পারো, যাতে রূকু-সিজদাহগুলো মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে তোমার জন্যে সাক্ষী হয়ে যায় এবং অন্ধকার গহীন কবরে তোমার সঙ্গী হয়। হে আমার ভাইয়েরা! যৌবনকাল হলো সংগ্রামের সময়। যৌবনকাল এমন একটি সময়, যে সময়ে আল্লাহর পথে সচেষ্ট হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করা যায়। এই সময়ে তোমার কাঁধে বেশি দায়িত্বের বোঝা চাপেনি। কারণ সম্ভবত তুমি একা অথবা তোমার একটি স্ত্রী এবং সন্তান আছে। আগামীতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তোমার দায়িত্ব আরও বাড়বে। দুনিয়ার সমস্যাগুলো তোমাকে ঘিরে ধরবে। তুমি তোমার পরিবার, সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজনের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবে। এসব কাজ করতে তোমার অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে যাবে। তাই তুমি এখন যুবক বয়সে রয়েছ, যে বয়সে তুমি নিজেকে সংগ্রামী এবং আত্মত্যাগী হিসেবে গড়ে তুলতে পার। আমি প্রায়ই মন্তব্য করে থাকি যে, আমি বিস্মিত হই সেসব যুবককে দেখে যারা খুব ভীতু। তাদের কী হয়েছে যে, তারা ভীতু? কী তাদেরকে ভীত-সন্তন্ত্র করে? যদি সে এই বয়সে ভীতু হয় তাহলে আগামীতে কী হবে? জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়ই হলো এই যৌবনকাল। যৌবনকাল হলো সেই সময় যে সময়ে মহান রাজাধিরাজ রাববুল আলামীনের সামনে উপস্থিত হবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। এ কারণেই আমরা যদি তাদেরকে দেখি যারা আল্লাহর দীনকে প্রথম বিজয়ী করেছিলেন, তাহলে আমরা দেখব তারা প্রত্যেকেই ছিলেন তরুণ। প্রকৃতপক্ষে, তাদের তিন-চতুর্থাংশ বা চার-পঞ্চমাংশের বয়স ছিল বিশ বছরের নিচে। তারা এমনটি করতে পেরেছিলেন; কারণ যৌবনকালই হলো আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা এবং আত্মত্যাগের সময়। সহীহাইনেশ উল্লেখ আছে যে, আবদুর রহমান বিন আউফ বর্ণনা করেছেন- বদরের ময়দানে আমি সামরিক বেশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমতাবস্থায় হঠাৎ ডানে এবং বামে দু’জন তরুণ দেখতে পেলাম যাদেরও বয়স বয়ঃসন্ধিকালের কিছুটা কম বা বেশি। তাদের উপস্থিতিতে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারলাম না। একটি তরুণ এগিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল- হে চাচা! আবু জাহেল কোথায়? আমিও তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তার কাছে তোমার কি দরকার? মনে
পৃষ্ঠা:০৯
মনে ভাবলাম, এই বালক জাহেলদের নেতা আবু জেহেলের কথা জিজ্ঞাসা করছে কেন? এরপর বালকটি উত্তর দিল- আমি শুনেছি, সে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ‘আমি যদি তাকে দেখতে পাই, আমার ছায়া তাকে অতিক্রম করবে না, যতক্ষণ না আমি তাকে হত্যা করি কিংবা সে আমাকে হত্যা করে। (আল-বুখারী (৩৯৮৮), মুসলিম (১৭৫২), আল-হাকীম (৩/৪২৫), আত-তাবারী তার তারিখ গ্রন্থে (২৪৫৪) এবং আল বায়হাকী-দালা’ইল আন্ নুবুওয়্যাহ (৩/৮৩) গ্রন্থে। তিনি বলেছেন- ‘আমি তার এ কথায় একদম অভিভূত হলাম!’ তারপর, অপর কিশোর বালক আমার কাছে আসল। সে-ও আমাকে জিজ্ঞাসা করল- হে চাচা! আবু জাহেল কেখায়? আমিও তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তার কাছে তোমার কী দরকার? বালকটি উত্তর দিল, আমি শুনেছি, সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনেক কষ্ট দিত, নির্যাতন করত। তাই আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ‘আমি যদি তাকে দেখতে পাই, আমার ছায়া তাকে অতিক্রম করবে না, যতক্ষণ না আমি তাকে হত্যা করি কিংবা সে আমাকে হত্যা করে। তারপর আমি প্রত্যক্ষ করলাম, ‘আবু জাহেল সামান্য দূরে লোকজনদের মাঝে বিচরণ করছে। আমি তাদেরকে বললাম, ঐ হলো সেই ব্যক্তি যাকে তোমরা খুঁজছো। এই কথা বলার পর আমি আকাঙ্ক্ষা করছিলাম আমি যদি এই তরুণদের মত উৎসাহী এবং উদ্যমী হতে পারতাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তারা ফিরে আসল এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রত্যাবর্তন করল।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছো? মুয়ায বিন আমর বিন ইল জামুহঝ বলল- আমি হত্যা করেছি। তার নাম হলো মুয়ায বিন আমর বিন জামু’ আল আনসারী আল খাবরার্থী আস সালামী। তিনি বায়াত আল আকাবাহ এবং বদর যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উসমান এ এর শাসনামলে ইন্তেকাল করেন। ইবনে হাজারের আল ইসাবাহ ফী তামিদব আস সাহাবা ৩/৪২৯/ এবং মুয়ায বিন আফরা বলল- আমি হত্যা করেছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন- তোমরা কি
পৃষ্ঠা:১০
তোমাদের তরবারী পরিষ্কার করে ফেলেছো? তারা বলল- না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- আমাকে দেখাও। উভয় তরবারীতে রক্ত দেখতে পেয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। আবদুর রহমান বিন আউক বলেন যে, মুয়ায বিন আফরাকে আবু জেহেলের পরিত্যক্ত জিনিস পত্র দেয়া হয়নি। কারণ তিনি পরবর্তীতে এ যুদ্ধে শহীদ হন। মিশকাত আল মাসাবীহ ২/৩৫২) মুয়াধ বিন আমর বিন জামুহ বলেছেন- আমি আবু জাহেলকে আমার লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে নিলাম এবং তার প্রতি মনোযোগ নিবন্ধ করে রাখলাম। তারপর যখন সুযোগ পেয়ে গেলাম, তখনই আক্রমণ করে বসলাম এবং এমনভাবে আঘাত করলাম যে, তার পা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এদিকে আমি যখন আবু জাহেলকে আঘাত করলাম অন্য দিকে তখন তার ছেলে ইকরামা আমার কাঁধে তরবারীর আঘাত করল এবং তাতে আমার হাত কেটে গিয়ে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে গেল এবং যুদ্ধের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। আমি ঝুলন্ত হাতটি পেছনে টেনে সাধারণভাবে যুদ্ধ করতে থাকলাম। কিন্তু হাতটি আমাকে খুবই কষ্ট দিতে লাগল। তাই আমি ঝুলন্ত হাতটির উপর আমার পা রেখে জোরে টান দিয়ে তা বিচ্ছিন্ন করে ফেললাম। এরপর আবু জাহেলের নিকট পৌঁছে যান মুয়ায বিন আফরা। তিনি তাকে এত জোরে আঘাত করেন যে, তার ফলে সে সেখানেই স্তুপে পরিণত হয়ে যায়। সে সময় শুধু তার শ্বাস-প্রশ্বাসটুকু অবশিষ্ট ছিল। [আয যাহাবীর নিয়ার আ’লাম আন- দুবালা ১/২৫০-২৫১। যখন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘কে আছ এমন যে দেখে আসবে আবু জাহেলের অবস্থা কি হল। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ তখন সৈন্যদের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে আবু জাহেলকে খুঁজে পেলেন। আবু জাহেল তখন মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিলো। এমতাবস্থায় আবদুল্লাহ বিন মাসউন তার বুকের উপর উঠে বসলেন। এরপর আবু জাহেল চোখ খুলে দেখলো আবদুল্লাহ বিন মাসউদ তার বুকের উপর। এতে আবু জাহেল অপমানবোধ করে বললো, তুমি মক্কায় রাখাল ছিলে না? ইবনে মাসউদ বললেন- হে আল্লাহর দুশমন, আমি অবশ্যই মক্কাতে রাখাল ছিলাম।
পৃষ্ঠা:১১
আবু জাহেল বললো- হে উটপালক! তুমি অনেক বড় স্থানে চড়ে বসেছো। এত বড় সম্মানিত উচ্চাসনে এর আগে কেউ বসেনি। ইবনে মাসউদ বললেন- আজকে কার দিন? আজকে কে বিজয়ী হয়েছে? আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ী হয়েছেন। বুখারী (৯৩৯৬১), মুসলিম (১৮০০), আবু দাউদ (২৭০৯), আহমদ ৩/১২৯,১৩৬/ এছাড়া আরও উক্তি আছে যেগুলোর সহীহ্ সূত্র পাওয়া যায় না। যেমন- এরপর আবু জাহেল বলল- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়ে দিও আমি যতক্ষণ আমার শেষ নিঃশ্বাস নিতে পারব ততক্ষণ আমি তাঁর শত্রু থেকে যাবো। সহীহ্ সূত্রে আরও কিছু ঘটনা পাওয়া যায়। যেমন- আবদুল্লাহ বিন মাসউদ যখন মক্কায় বসবাস করতেন, তখন আবু জাহেল তার কানে আঘাত করেছিল। তাই আবু জাহেলের বুকের উপর বসে ইবনে মাসউদ আবু জাহেলের মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলেন এবং এরপর আবু জাহেলের কানে একটি ছিদ্র করেন। ঐ ছিদ্রের ভেতর দিয়ে দড়ি ঢুকিয়ে তার মাথা টানতে টানতে নিয়ে আসেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতো, আবু জাহেলের মাথা ছিলো বৃহদাকার এবং ইবনে মাসউদ দুর্বল, জীর্ণ-শীর্ণ প্রকৃতির লোক। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আবু জাহেলের ছিন্ন মস্তক দেখতে পেলেন তখন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত সিজদায় পড়ে গেলেন এবং বললেন- যে সত্তার কোন শরীক নেই সেই মহান আল্লাহ তায়ালার নামে শপথ করে বলছি, প্রত্যেক উম্মাহর জন্য এক একটি ফেরাউন থাকে এবং এই ব্যক্তি হলো আমার উম্মাহর জন্য ফেরাউন। [আল হাইবামী তার ‘মাহুমা আয যাওয়াইদ (৩/৭৯)তে হাসান সূত্রে বর্ননা করেছেন। এই ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে বুখারী (৩৯৬১), আবু দাউদ (২৭৭২)-এ বর্ণিত) পরবর্তীতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দেখলেন আবু জাহেলের কানের ভেতরে রশি ঢুকানো তখন স্মরণ করলেন সেই দিনের কথা যেদিন আবু জাহেল ইবনে মাসউদের কানে আঘাত করেছিল। এরপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটা কানের জন্য একটা কান। আর মাথা হলো অতিরিক্ত। [ফাতহুল বারী। ৭/৩৪২-৩৫৪; শরাহ সহীহ মুসলিম: ১২/১৫৯-৬০/ আমি বলি, এই হলো আবু জাহেল- দুনিয়াতে যার অস্তিত্বকে নিঃশেষ করেছে দুই তরুণ। তরুণেরা এই কাজ করেছিলো তরুণাবস্থায়। তাদের বয়স সতের বছরের কাছাকাছি হবে। এর অর্থ দাঁড়ায় তারা খুব জোর হাই স্কুলের ছাত্র হবে।
পৃষ্ঠা:১২
এই বয়সেই তারা কুরাইশদের সম্রান্ত নেতা আবু জাহেলের মোকাবেলা করেছে এবং আবু জাহেলকে হত্যা করেছে। আর আবু জাহেলের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনে আনন্দেরও জোয়ার বইয়ে গিয়েছিল। আর কেউ যদি বদর, মুতা প্রভৃতি যুদ্ধের দিকে খেয়াল করেন তাহলে তরুণ ও যুবক ছাড়া কাউকে খুঁজে পাবেন না। দু’টি বিশ্বযুদ্ধেই ব্রিটেন এবং অন্যান্য শক্তিশালী জাতিরা বিভিন্ন বিপজ্জনক অভিযান পরিচালনার জন্য সতেরো, আঠারো, উনিশ বছরের তরুণদের উপর বেশি বিশ্বাস স্থাপন করতো। কেননা তরুণেরা যে কোন কাজ করতে সদা প্রস্তুত থাকে এবং কোন কাজের জন্য অনেক চিন্তাভাবনা করে না। চাইনিজরা তাদের আত্মঘাতী যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতো এবং এই অভিযান পরিচালনার জন্য তরুণদের উপর ভরসা করতে পরামর্শ দিতো এই বলে যে, যে সব অভিযানে নিজেকে বিপন্ন করার আশংকা থাকে সে সব অভিযানে পরিপক্ক বয়সের একটু বেশি বয়স বিশিষ্ট লোকদের দ্বারা পরিচালনা করা যাবে না। কারণ তারা সমগ্র * অভিযানকেই দেরী করিয়ে দিবে। তারা এমন অভিযানে থমকে দাঁড়ায় এবং নিজেরাই ভাবে, এমন আত্মঘাতী হামলায় ফলাফল কি হবে? অথবা এই আত্মঘাতী হামলায় আমাদের কি উপকার আসবে? এ ধরনের দর্শনই একজন মানুষকে আত্মোউৎসর্গ করার ক্ষেত্রে বিরত রাখে এবং যারা এমন থমকে দাঁড়ায় ও ভাবে, তাদের দ্বারা কোন বিজয় সম্ভব হয় না। বরং আবেগ-আপ্লুত অন্তর বিশিষ্ট লোকদের দ্বারাই বিজয় অর্জন সম্ভব হয়। আবেগ আপ্লুত অন্তর এবং উত্তেজিত অন্তরই আত্মোউৎসর্গে সহায়ক হয়। অপরপক্ষে, তথাকথিত (বাতিল) যুক্তি বিচার-বুদ্ধিই মানুষের মনকে বলে, ‘নিজেকে উৎসর্গ করো না, নিজেকে এমনভাবে বিলীন করে দিও না।’ এ ধরনের মানুষের অন্তর সাধারণত শান্ত, স্থির, নিশ্চল, নিষ্ক্রিয় এবং নিজেকে উৎসর্গ করার ব্যাপারে কোন প্রবণতার ইচ্ছা নেই। এমন দর্শনই তাকে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন করে। তাই যখন তার আবেগ, তার অনুভূতি তাকে বলে- আল্লাহর পথে সচেষ্ট হও, অর্থ ব্যয় করো। আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান দেবেন। তখন তার অন্তর তাকে বলে, ‘তোমার সম্পদ কমিও না।’ যদি তার অনুভূতি তাকে বলে, ‘নিজেকে উৎসর্গ করো।’ তখন তার অন্তর বলে, ‘তুমি বেঁচে থাকো; তাহলে এতে ইসলামের আরও অনেক উন্নতি হবে’ এবং আরও কত কি। এ কারণেই তুমি যদি বিভিন্ন ভাবুক, দার্শনিক ব্যক্তিদের জীবনী পর্যালোচনা কর, তাহলে দেখবে তাদেরও ধারণা কথাবার্তা সর্বদা আকাশছোঁয়া হয়ে থাকে; কিন্তু তাদের জীবন পড়ে থাকে পর্বতের পাদদেশে। অর্থাৎ তাদের চাওয়া-পাওয়া,
পৃষ্ঠা:১৩
ধ্যান-ধারণার সাথে বাস্তব জীবনে তাদের প্রাপ্তির অনেক ব্যবধান রয়েছে। তাই তরুণাবস্থাকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আনাস বিন মালিক বলেন- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবীদের নিয়ে মদীনাতে আসলেন তখন আবু বকর ছাড়া কারও মাথায় সাদা চুল ছিল না; আর তিনিই দাড়িতে মেহেদী দিতেন। [আল বুখারী: ৩৯১৯ ও ৩৯২০, ফাত-আলবারী ৭/৩০২-৩০৩! তখন আবু বকরের বয়স ছিল ৫১ বছর এবং উমরের বয়স ছিল ৪১ বছর। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করেছিলেন তার নবুওয়াতের তের বছর পর। সুতরাং যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাওয়াত প্রচার করেছিলেন এবং আবু বকর যখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তখন তার বয়স ৩৮ বছর এবং অন্যদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আরও কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছিল। কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রত্যেক যুবককে একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন করবেন- ‘একজন বান্দার দুই পা ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের জায়গা থেকে নড়বে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে চারটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়- তার জীবন সম্বন্ধে এবং জীবনের প্রতি সে কেমন ব্যবহার করেছে তা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে; তার যৌবনকাল সম্পর্কে এবং কিভাবে কোন পথে তা ব্যয় করেছে; তার জ্ঞানের সদ্ব্যবহার করেছে কিনা সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে; সে কোন পথে অর্থোপার্জন করেছে এবং কোন পথে তা ব্যয় করেছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আত তিরমিযি ২৪১৭, আলবানী আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/১২৬-এ সহীহ বলেছেন, আস সিলসিলাহ আস সহীহা ৯৪৬০ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার জীবন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এরপরও তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে দ্বিতীয় প্রশ্নটি করবেন আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো- তার যৌবনাবস্থা সম্পর্কে। যদিও যৌবনকাল জীবনেরই একটি অংশ, তারপরও আল্লাহ তায়ালা যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আল্লাহ তায়ালা কি কোন চিন্তা-ভাবনা, কোন যুক্তি, কোন কারণ ছাড়াই অনেক কিছুর মধ্যে যৌবনকাল সম্পর্কে প্রশ্ন করার বিষয়টি বেছে নিলেন?: اللهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَهَيْبَةٌ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَهُوَ الْعَلِيمُ القَدِيرُ
পৃষ্ঠা:১৪
তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি; শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। আর রূম: ৫৪] অবশ্যই তোমরা এমন এক বয়সে উপনীত হয়েছো যে বয়সে শয়তান পড়াশোনা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অবিরাম আশা গঠনের মাধ্যমে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। যদি তোমাদেরকে বলা হয় সেই মহান রাজাধিরাজ আল্লাহকে ডাকো অথবা আল্লাহর পথে কিছুটা সময় ব্যয় কর। শয়তান তখন এই বলে তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে যে, ‘এখনই এমনটি করবে? তুমি এখন স্কুলে, কিছুদিন পর তুমি তোমার ডিগ্রি অর্জন করবে; সমাজে সম্মান বাড়বে। তুমি তখন আল্লাহ তায়ালার জন্য ভাল কাজ করতে পারবে।’ এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কথা হলো, তোমরা জানো না কবে তোমরা ডিগ্রি অর্জন করবে এবং তোমরা জানো না কবে তোমরা মারা যাবে এবং তোমরা জানো না কী অবস্থায় আল্লাহর সামনে তোমাকে দাঁড়াতে হবে (আখেরাতে)। এ কারণে এমন আকাশ কুসুম কল্পনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখো। দ্বিতীয়ত, তোমরা যদি এই বয়সেই আল্লাহর পথে সময় ব্যয় করার ব্যাপারে কৃপণ বা কঞ্জুস হও, তাহলে ভবিষ্যতে যে সময় আসছে সেই সময় তোমাকে আরও কঞ্জুস অথবা কৃপণে পরিণত করবে। প্রকৃতপক্ষে, যৌবন বয়সে যে ব্যক্তি নিজেকে ইসলামের রঙে রঙিন করেছে আর যে ব্যক্তি বৃদ্ধ বয়সে ইসলামে প্রবেশ করেছে এই দু’জনের মধ্যে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান। আসলেই এই দু’জনের মধ্যে বিদ্যমান কত বিশাল পার্থক্য। এর মূল কারণ হলো, এই বয়স থেকে ইসলামের নিয়ম-কানুন পালন করা অনেক সহজ। তুমি যদি যৌবনকালে ইসলামকে তোমার জীবনের একটি অংশ ধরে নাও, তাহলে তোমার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ, দেহ, শরীর, আত্মা তথা সমগ্র জীবনই ইসলামের একটি অংশ হয়ে দাঁড়াবে। বাস্তবে, তুমি ইসলামের একটি অংশে রূপান্তরিত হবে। একটি কচি গাছ এবং বড় বৃক্ষ দ্বারা উদাহরণ দিলে এটি আরও স্পষ্ট হবে। বড় বৃক্ষে প্রতিষ্ঠিত কাণ্ড, গুঁড়ি এবং শুকিয়ে যাওয়া বাকল বিদ্যমান। এ কারণে বড় বৃক্ষের শাখা-প্রশাখাগুলো যেসব দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সেসব দিক থেকে ঐ শাখা-প্রশাখাগুলোর দিক পরিবর্তন কষ্টসাধ্য। অপরপক্ষে, ছোট বৃক্ষের দিক সহজেই পরিবর্তন সাধ্য। কেননা, হাত দিয়ে নিজের সুবিধামত একে পরিবর্তন করা যায়।
পৃষ্ঠা:১৫
উপর্যুক্ত কারণে বিশ্বজাহানের রব মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সেই সব যুবককে যারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তাদেরকে কেয়ামতের দিন ছায়া প্রদান করবেন, যখন অন্য কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকবে না। সেদিন আল্লাহ তায়ালা সাত ব্যক্তিকে তার আরশের নীচে ছায়া প্রদান করবেন তার একজন হলো যুবক, যে আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করা অবস্থায় বেড়ে উঠেছে। [বুখারী। ১৪২৩, মুসলিম: ১০৩১, এর অংশ বিশেষ সত্য কথা বলতে কি, আমি নিজে লক্ষ্য করে দেখেছি, তরুণ-যৌবন অবস্থায় যারা ইসলামের দাওয়াত কবুল করে তারা সম্পূর্ণ আলাদা, তাদের থেকে যারা বৃদ্ধ বয়সে ইমলামের দাওয়াত কবুল করে। স্কুলে পড়ন্ত অবস্থায় যদি একজন ছাত্র ইসলাম এবং ইসলামের প্রতি আসক্ত হয়, তাহলে ঐ ছাত্র ইসলামের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। অপরপক্ষে, বৃদ্ধ ব্যক্তি যে সামাজিক অবস্থান, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ছেলেমেয়ে বিশেষ করে দুনিয়া যার মাথা বিগড়ে দিয়েছে, সেই ব্যক্তি যদি অনুতপ্ত হয়ে ইসলাম মেনে চলার সিদ্ধান্ত নেয়, সে শর্ত সাপেক্ষে ইসলাম মানার চেষ্টা করবে। তাই কেউ যদি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মন্ত্রী থাকে তাহলে সে ইসলাম গ্রহণের পরেও আগের মত সম্মানিত হওয়ার আশা করবে, সে ইসলাম গ্রহণের পরও তার সমপর্যায়ের লোকদের সাথে উঠাবসা করবে, যেমনটি সে পূর্বেও করক। তাই ইসলামের রঙে পুরোপুরি রঙিন হয়ে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা, দুনিয়ায় সম্মানিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, এমনকি অনেক জাহেলী রীতিনীতিসহ সে ইসলামে প্রবেশ করে। তার পক্ষে সমাজের লোকদের সাথে সঠিক পদ্ধতিতে মেলামেশা করা সহজ নয়। আল্লাহ তায়ালা যেমনভাবে ইসলামকে নাযিল করেছেন, যে আইন-কানুন দিয়েছেন তা সম্পর্কে অবহিত হওয়াও এমন ব্যক্তির জন্য সহজ নয়। এরপরও জাহেলি যুগের যেসব রীতিনীতিকে ইসলাম শিকড়সহ উপড়ে ফেলেছে সেসব রীতিনীতিই হয়তো তার জীবনে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ তার স্ত্রী বিভিন্ন পার্টিতে নাচ-গান করতে অভ্যস্ত, তার মেয়ে ছেলেদের সাথে বেড়াতে অভ্যন্ত, তার আত্মীয়-স্বজন তার সামনে মদ পানে অভ্যস্ত, তার অপর কন্যা তার বাড়িতে আগত পুরুষ অতিথিদের সাথে করমর্দন করে, তার বোন অতিথিদের সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর পর তাদের সামনে এক পায়ের উপর আর এক পা তুলে বসে থাকে, তাদের সাথে চা-কফি পান করে। এসব অবশ্যই পরিবর্তন করা দরকার, যদি সে ইসলামী জীবনধারায় নিজের জীবনকে অতিবাহিত করতে চায়। তাহলে
পৃ্ষ্ঠা ১৬ থেকে ৩০
পৃষ্ঠা:১৬
দীনানুসারে উপর্যুক্ত বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আনা তার পক্ষে অনেক দুরূহ ব্যাপার হবে। তাকে অনেক কষ্টকর অসন্তোষজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এটাই হলো, যৌবন বয়সে সে যদি ইসলামী দাওয়ায় প্রবেশ করত, ইসলামকে জানত-চিনত তার সাথে বর্তমানে বৃদ্ধাবস্থায় ইসলাম গ্রহণের বিশাল পার্থক্য। সে যদি যৌবনকালে ইসলাম কবুল করত, তাহলে এখন এমন কষ্টকর সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না। যৌবনাবস্থায় ইসলাম গ্রহণ না করায় তাকে অনেক কষ্ট পেতে হচ্ছে। কিন্তু সে যদি যৌবনাবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করতো, তাহলে সে সত্যিকার মুসলিম মেয়ে ছাড়া বিবাহ করতো না; যেহেতু সে একজন মুসলিম। তাই ইসলামই হবে তার বিবাহের জন্য মূখ্যশর্ত। অপরপক্ষে যে ব্যক্তি তার জীবনের অধিকাংশ সময় ইসলামী জীবনধারায় কাটায়নি, সে ব্যক্তি এমন মেয়ে খুঁজতে পারে যে মেয়ের প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে অথবা সে কোন রাজকন্যা। কোন মন্ত্রীর মেয়ে কিংবা কোন ধনীর দুলালী। ঐ ব্যক্তি এমন মেয়েকে বিবাহ করবে এই কারণে, যাতে সে ঐ মেয়েকে অবলম্বন করে সমাজে উন্নতি লাভের সিঁড়িতে আরোহণ করতে পারে। ঐ ছেলে মেয়ের পরিবারের কথা লোকজনের সাথে বলে বেড়ায়, ‘আমি এখন অমুক মন্ত্রীর সাথে সংশ্লিষ্ট, আমি এখন তার পরিবারের অংশ। এইসব চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে যখন সে ইসলাম নামক মহাপরীক্ষার মধ্যে প্রবেশ করে, তখন তার কাছে ইসলাম অনেকটা মহাসঙ্কটের মত কঠোর মনে হয়। তাহলে সুদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি কি সে চালাতে পারবে? সে এঐ জমির ব্যাপারে কি করবে যা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেনা? সেসব দুনিয়াবী বন্ধু যারা ঐ জমি নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের সে কি করবে? এসব বিষয়ে তার আচরণ কেমন হবে? এগুলো হতে কি সে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, সে কি তার সঙ্গী-সাথীদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, সে কি নাইট পার্টি এবং নাচানাচি বন্ধ করে দেবে- সে কি পারবে সব খারাপ কিছু শেষ করতে? একজন ব্যক্তির পক্ষে একবারে সব খারাবীকে উৎখাত করে এক আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সময় হলো যৌবন। আমাকে বিশ্বাস করো, আমার ভাইয়েরা! আমি এমন কিছু লোকদের চিনি যারা বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর রহমতে সালাত-যাকাতের সাথে পরিচিত হয়েছে, আল্লাহর পথে চালিত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে একজন আমাকে বলেছে- আমি মনে করি আমি মুনাফেক হয়ে গিয়েছি। কেননা, সুদ ছাড়া আমি আমার কোম্পানি চালাতে পারি না। কারণ শত শত, হাজার হাজার অর্থ আমার প্রয়োজন হয় প্রতি মাসে। যখন
পৃষ্ঠা:১৭
আমি সালাত পড়ার জন্য উঠি, তখন আমি অন্তরে ব্যথা অনুভব করি এবং আমি এর থেকে মুক্ত হতে পারি না। একই সাথে আমি আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে চাই। তাই বৃদ্ধ বয়সে মহান আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে যাওয়া অতীব কষ্টের। আমার মনে পড়ে, আমরা আম্মানে একটি আলোচনার ব্যবস্থা করেছিলাম। ঐ আলোচনায় সমাজের উচ্চপদস্থ লোকেরা, কোম্পানী মালিকসহ অনেক সম্মানিত লোকেরা উপস্থিত ছিল। যেখানে একজন উপস্থিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি মনে করছেন যার বয়স ৪০-৫০ বছর কিন্তু জীবনে কোনদিন সিয়াম পালন করেনি।’ আমি তাকে বললাম, ‘হানাফীদের থেকে একটি ফতোয়া প্রচলিত আছে যে, কেউ যদি নির্দিষ্ট কাজের একটির জন্য কাযা আদায় করে, তাহলে ঐ ধরনের সকল কাজ যেগুলো সে আদায় করেনি তার কাযা আদায় হয়ে যাবে। তাই কেউ যদি ধারাবাহিকভাবে দুই মাস সিয়াম পালন করে, তাহলে সে জীবনে যত সিয়াম আদায় করেনি তার কাযা আদায় হয়ে যাবে। এ কথাটি অপর এক উপস্থিত ব্যক্তি খুব পছন্দ করে যার বয়স ছিল ৪০ বছর। সে কখনও সালাত আদায় কিংবা সিয়াম পালন করেনি এবং আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হতে চায়। তাদেরকে এই শিক্ষা দেয়ার পর কিছুদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখি। পরবর্তীতে আমি যে বাড়িতে এই শিক্ষাটি দিয়েছিলাম সে বাড়িতে যাই এবং যে ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল তাকে দেখে আশ্চার্যান্বিত হই। আমাকে দেখার পর ঐ প্রশ্নকারী আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি জানেন না? আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি জানব? সে বলল, আপনি যে ফতোয়াটি উল্লেখ করেছিলেন সেই ফতোয়াটি অমুক ব্যক্তি শুনেছিল এবং পরের দিন থেকে সে সালাত-সিয়াম আদায় করতে শুরু করে এবং ঐ ব্যক্তি ছিল একজন ব্যবসায়ী। সে জুলাইয়ের মাঝের দিকে এমনভাবে সিয়াম পালন করতে শুরু করে যে, এতে তার পরিবারের সদস্যরা তার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাই তারা অন্য আর এক আলেমের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে ঐ আলেম তাদেরকে বলে, যদি সে অনুতপ্ত হয়, তাহলে তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সে ততগুলো সিয়াম পালন করতে পারে। আমি তাকে বললাম ঐ ব্যবসায়ী লোক সম্বন্ধে আমি তো কিছুই জানি না। যে ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়েছিল সেই ব্যক্তি পরবর্তীতে আমাকে বলেছিল- ঐ মাসের মাঝামাঝি সময়ে লোকজন আমার কাছে আসত। আমি মনে করি, জুলাইয়ের
পৃষ্ঠা:১৮
তিন-চার দিনে আম্মানে এমন গরম পড়েছিল যে, আম্মানবাসী কখনও এমন উত্তাপ দেখেনি। ঐ ব্যক্তি ছিল ব্যবসায়ী এবং তার তিনটি দোকান ছিল। একটি ছিল আম্মানে, একটি মাউন্ট হুসাইনে এবং আরেকটি মাউন্ট আল-উবাইদায়। সে আমাকে আরও বলল- আমি যখন সিয়াম পালন করছিলাম তখন লোকজন আমার রেফ্রিজারেটর থেকে পানি নিতে আসছিল। সারাদিনে আমার মুখের ভেতরে আমার থুথু মধুর মত গাঢ় হয়েছিল। মূলত তার কাছে সিয়াম পালন এত কষ্টের ছিল। বর্তমানে সে দীনের যে কোন বিষয়ে অত্যন্ত কড়া। সে মহিলাদের বন্ত্রের দোকানের মালিক ছিল এবং ঐ দোকানে মহিলারা পোশাক ট্রায়াল দেয়ার জন্য আসত। তারা সেখানে বাইরের এবং ভেতরের পোশাকও ট্রায়াল দিত। এ কারণেই সে অনুভব করল- এ কাজ তার ইসলামী নিয়মানুসারে যাপিত জীবনের সাথে মিলে না। তাই সে মনস্থির করল, খুব শীঘ্রই এমন ব্যবসার সমাপ্তি ঘটানো দরকার। সে তিনটি দোকান থেকে মেয়েদের পোশাক সরিয়ে দোকানকে পবিত্র করল এবং অনেক পোশাক নিয়ে আমার কাছে এসে বলল- ঐ পোশাকগুলো গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে। এর বিনিময়ে সে কিছুই চায় না। শুধু চায় যে ব্যবসা মহিলাদের আকৃষ্ট করে তেমন ব্যবসার সমাপ্তি ঘটুক। এরপর সে এই ব্যবসার পর কার্পেট বিক্রির ব্যবসা শুরু করে এবং বলে, কার্পেটের দোকান মহিলাদের আকৃষ্ট করে না। কিছুদিন পর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম- এখন তোমার কেমন লাগছে? সে উত্তর দিল- আমি প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার অর্ডানিয়ান ডলার মূল্যের পোশাক বিক্রি করতাম যা আমেরিকান ডলারে ছয় থেকে সাত হাজার ডলারের সমান। এর মধ্যে অর্ধেক কিংবা এক তৃতীয়াংশই লাভ থাকত। যা হোক, এরপরও আমি এতে অসন্তুষ্ট থাকতাম। আমার কাছে মনেই হতো না আমি সম্পদশালী। বর্তমানে আমি আগের তুলনায় এক দশমাংশ বিক্রি করি এবং যে লাভ হয় তাতে আমি সন্তুষ্ট। আল্লাহ আমাকে রহমত করেছেন। আমি এই উদাহরণ একটা বিষয়ের পরিষ্কার ধারণা দেয়ার জন্য প্রয়োগ করলাম। বিষয়টি হলো, বৃদ্ধ বয়সে অনুতপ্ত হলে অনেক দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। এই ব্যক্তিকে সিয়াম পালন করার পর তার ব্যবসার দিকে নজর দিতে হয়েছে। তার ব্যবসাকে সংশোধন করার পর তার পরিবারে পরিবর্তন। আনার জন্য পরিবারের সদস্যদের সংশোধন করার জন্য এক সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। তার স্ত্রী-কন্যা কেউই লম্বা জামা পরত না। তারা আম্মানে অনেক আধুনিক জীবনযাপন করত এবং সে তার জীবনের অধিকাংশ সময় জার্মানীতে কাটিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, তার সাথে তার স্ত্রীর অনেক বাদানুবাদ হয়েছে, হয়েছে
পৃষ্ঠা:১৯
অনেক সমস্যা। তার স্ত্রীকে এমন কি এমন শর্তও দিতে হয়েছে, হয় ইসলাম মেনে আমার সাথে থাকো অথবা আমাকে ত্যাগ করে তোমার বাবার বাড়ি চলে যেতে পারো। অবশেষে ঐ ব্যক্তি তার স্ত্রীকে জয় করতে সক্ষম হন। আমি আগেই বলেছি, লোকটি ছিলেন অত্যন্ত জেদী এবং তার জেদ অনমনীয়ভাবে কাঠিন্যতার সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মাঝে বজায় রেখেছিল। যা হোক, এহেন সংগ্রামে ঐ ব্যক্তিকে অনেক চড়াই উত্রাই পার করতে হয়েছে।
হে যুবক ভাইয়েরা: তোমাদের ক্ষেত্রে তোমাদের প্রতিটা বিষয় তোমাদের হাতের মুঠোয়। তুমি তোমার স্ত্রী নির্বাচন করে নিতে পারো, তোমার জীবনের পথ নির্বাচন করতে পারো। এমনকি তোমার চাকরিও আল্লাহর শরীয়াহ এবং সন্তুষ্টি অনুসারে নির্বাচন করতে পারো। তাই এখন থেকেই তোমার জীবনের সমস্ত সংযোগ ইসলামের সাথে জুড়ে দাও। তুমি যদি এমনটি কর, তাহলে ভবিষ্যতে তোমার কোন সমস্যাই হবে না। তাই তুমি যদি তোমার যৌবন বয়সের সুবিধা গ্রহণ কর, যৌবন বয়সকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পার, তাহলে ভবিষ্যতে বৃদ্ধ বয়সটা অনেক সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবে। তোমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইসলাম মেনে চলা, নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা তোমার পক্ষে অনেক কষ্টকর হবে। এ কারণেই উমর বলতেন- জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার আগে যা শেখার তা শিখে নাও। আব্দ-আল-মালিক বিন মারওয়ানকে মদীনার সবচেয়ে সাহসী আলেম মনে করা হতো। তিনি ফিকহ্, হাদীস এবং আরবি জানতেন। আমির আশ শাবী ফিকহ্ এবং হাদীসে পারদর্শিতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। যদিও তিনি কুরআন মুখস্তকারীদের একজন এবং আইব ভাষায় একজন দক্ষ ব্যক্তি ছিলেন, তবুও তিনি আবেদ-আল মালিক বিন মারওয়ানের সাথে প্রতিযোগিতা করে পারতেন না। যখন মারওয়ান মারা গেলেন, তখন খবর এসে পৌছালো যে, আশ-শাবীকে এখন নেতৃত্ব দিতে হবে, নেতৃত্বের দায়িত্ব বহন করতে হবে। এ খবর পাওয়ার পর, আশ-শাবী কুরআনকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কুরআনের দিকে তাকিয়ে বললেন- ‘বিদায়!’ সে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে আবেগাপ্লুত হয়ে কুরআনকে বিদায় জানালেন। কারণ তিনি জানতেন, নেতৃত্ব এবং নেতৃত্বের সাথে যে সমস্যা আসে তা অধ্যয়ন, তেলাওয়াত এবং মুখস্থ করা থেকে তাকে বিরত রাখবে।
পৃষ্ঠা:২০
হে আমার তরুণ ভাইয়েরা: তুমি তোমার জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়ে রয়েছো। এই সময়টাই হলো প্রচেষ্টার সময়, উদ্যোগী হবার সময়। এই সময়টাই হলো ইবাদত করার সময় এবং এই সময়টাই হলো দাওয়াহ দেবার সময়। এই সময়টাই হলো গতিময়তার সাথে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কর্মতৎপর হবার সময়। তাই এখন তোমার আবশ্যিক দায়িত্ব হলো ইসলামের দিকে ধাবিত হওয়া, ইসলামকে জানা, ইসলামকে বাস্তবায়ন করা, মেনে চলা এবং ইসলামের দিকে মানুষকে ডাকা। জ্ঞান আহরণ কর, আমলে পরিণত কর এবং তা প্রচার করো। যদি এই সুযোগ অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে এমন সুবর্ণ সুযোগের আর কখনও পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। ইউনিভার্সিটিতে কত অবসর সময় পাওয়া যায়, আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য প্রচুর সময় ইউনিভার্সিটিতে পাওয়া যায়। কত মজা। ইউনিভার্সিটি জীবনে আল্লাহর ইবাদত করা এবং জানা-অজানা সহকর্মী ও বন্ধুদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া কত আনন্দের!: فَذَكِّرْ إِنَّمَا أَنتَ مُذَكِّرٌ لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُسَيْطِرٍ: অতএব তুমি উপদেশ দাও, তুমি তো একজন উপদেশদাতা। তুমি তাদের কর্ম নিয়ন্ত্রক নও। [গাশিয়াহ। ২১-২২/ হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- পাঁচটি জিনিস এসে যাবার পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে উত্তমরূপে ব্যবহার করো। তার মধ্যে অন্যতম দুটি হলো- যৌবন বয়সকে সদ্ব্যবহার করো বুড়ো হয়ে যাবার আগে। তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও অসুস্থ হয়ে যাবার আগেই…। আজকে তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে পারছো এবং আগামীতে তুমি বসে ছাড়া সালাত আদায় করতে পারবে না। আজকে তুমি সিয়াম পালন করতে পারছো কিন্তু আগামীতে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে, সিয়াম পালন করতে পারবে না। তোমার সুস্থতার জন্য আল্লাহ তোমার কাছে মূল্য চান। আর সুস্বাস্থ্যের সেই মূল্য তথা ট্যাক্সই হলো ইবাদত, যা তোমার শরীর, তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংশোধন করবে এবং ধ্বংসের হাত থেকে তাদেরকে বাঁচাবে। তুমি যত ইবাদত করবে, তুমি তত উপকার লাভ করবে এবং ইবাদতের পরিমাণ বাড়ালে তোমার স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হবে না; বরং সুস্থতা বাড়বে এবং এর উৎকর্ষ সাধিত হবে।
পৃষ্ঠা:২১
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةٌ إِلَى قُوَّتِكُمْ: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো অতঃপর তাঁর কাছে তাওবা কর, অনুতপ্ত হও। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বারি বর্ষণ করছেন। তিনি তোমাদের আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বাড়িয়ে দিবেন। [খুন। ৫২) তাই আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করলে, তাঁর কাছে অনুতপ্ত হলে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটাই স্বাভাবিক, যেহেতু ইবাদত করলে শরীর এবং স্নায়ুগুলো শান্তি ও আরাম পায় এবং এগুলোই পরবর্তীতে শরীর গঠন করে। একজন আফগানী আমাকে জানালো যে, তার পিতার বয়স ১২০ বছর এবং এ বয়সেও তার একটি দাঁত পড়েনি। সে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করে, বিশেষ করে ফযর এবং এশা। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা তার দেহকে সংরক্ষণ করেছেন। ইিবনে রজব আল হাম্বলী বলেন- ‘কোন ব্যক্তি যদি যুবক বয়সে শক্তিশালী অবস্থায় আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয় তাহলে ঐ ব্যক্তির বৃদ্ধ বয়সে দুর্বল অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা তার যত্ন নেবেন। তার এই বৃদ্ধাবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালা তাকে ভাল এবণ শক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং বুদ্ধি দান করবেন। একজন আলেম একশ’ বছরেরও বেশি বেঁচেছিলেন। তিনি ছিলেন সুস্বাস্থ্য এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী। একদিন তিনি হঠাৎ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে লাফ দিয়ে উঠলেন। তাকে হঠাৎ লাফিয়ে উঠার কারণ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন- ‘আমি যুবক বয়সে আমার এই শারীরিক শক্তি খারাপ কাজ থেকে বিরত রেখেছিলাম এবং এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা আমার শক্তিকে বুড়ো বয়স পর্যন্ত সংরক্ষণ করেছেন। এর বিপরীত ঘটনাও জনা যায়। যেমন- একজন আলেম দেখলেন একজন ভিক্ষুক মানুষের কাছে ভিক্ষা করছে। তখন তিনি বললেন, ‘এই দুর্বল ব্যক্তিটি যৌবন বয়সে আল্লাহ তায়ালাকে অবজ্ঞা করেছে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালাও ঐ ব্যক্তির বৃদ্ধ বয়সে অবজ্ঞা করেছেন। [জামি’ আল-উলুম ওয়াল হিকাম: ১/১৮৬ আল্লাহর ব্যাপারে সচেতন হও, মনোযোগী হও এবং তিনিই তোমার যত্ন নেবেন। তাই ইবাদত হলো সেই জিনিস যা দেহকে রক্ষা করে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত শরীরও ভাল থাকে। আল্লাহর দিকে মনোযোগী হও এবং তিনি তোমার যত্ন নেবেন। [ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদীসের কিছু অংশ। ডিপ্রিমিয়ী (২৫১৬) আলবানী একে সহীহ বলেছেন- বীলাল আল-আল্লাহ। ৩১৬-৩১৯/
পৃষ্ঠা:২২
পাঁচটি জিনিস থেকে সুবিধা গ্রহণ করো, পাঁচটি জিনিস এসে যাবার পূর্বেই। যৌবন বয়স থেকে সুবিধা গ্রহণ করো বৃদ্ধ হয়ে যাবার পূর্বে, সুস্বাস্থ্য থেকে সুবিধা গ্রহণ করো অসুস্থ হয়ে যাবার পূর্বে এবং সম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাও দারিদ্রা এসে যাবার পূর্বেই…। কারণ আলী বিন আবি তালিব বলেন- আমি সেই কৃপণ লোককে দেখে বিস্মিত হই যে উপার্জিত সম্পদ থেকে নিজেকে দূরে রাখে এবং দরিদ্রতার সাথে জীবিকা নির্বাহ করে যা থেকে সে পালিয়ে বেড়াতে চেয়েছিল। এ ব্যক্তি দুনিয়ায় দরিদ্রাবস্থায় জীবনযাপন করে অথচ আখেরাতে তাকে হিসাব দিতে হবে ধনী ব্যক্তির মত। সে সম্পদ জমা করে সে সম্পদ দিয়ে তার সন্তানকে অ্যালকোহল কিনে দিয়েছে, গাড়ি কিনে দিয়েছে এবং মেয়েদের পেছনে ঘুরাঘুরির সুযোগ করে দিয়েছে। এ কারণে সে মুনকার নাকীরের এবং কবরের আযাবের ফেরেশতাদের লোহার হাতুড়ির নিচে পিষ্ট হবে। আর সে যত সম্পদের মালিক ছিল তার প্রতিটি কণার হিসাব আল্লাহ তায়ালার আদেশে ফেরেশতারা গ্রহণ করবেন।
একটি প্রতীকী গল্প: একটা গল্প প্রচলিত আছে যা নিছকই প্রতীকী গল্প কিন্তু তা আমাদের অনেক ভাববার খোরাক দেয়। গল্পটি হলো- একজন বিশাল সম্পদের অধিকারী একদা মারা গেলেন। তখন তার সন্তানেরা সিদ্ধান্ত নিল যে তারা তাদের পিতার কবরে সঙ্গী হওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে এক রাতের জন্য রেখে দেবে। তাই তারা দু’টি গর্ত খনন করল এবং একটির সাথে আরেকটির সংযোগ স্থাপন করল। তারা একটি গর্তে তাদের পিতাকে রাখল এবং অন্যটি ফাঁকা রাখল। এরপর তারা এই মৃতদেহের পাশে শুয়ে থাকতে পারে এমন সাহসী ব্যক্তিকে খোঁজা গুরু করলো। তারা এ কাজের জন্য এক চাকরকে পেয়েও গেল এবং তারা ঐ চাকরকে বলল, ‘তুমি যদি আমাদের বাবার কবরের পাশে এক রাত থাকো, তাহলে তোমাকে ও ামরা এক হাজার দিনার দেব। সে ভাবল, সে টাকাটা নেবে। যদি সে মারা যায় তাহলে তার সন্তানেরা ঐ টাকায় জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। আর যদি সে বেঁচে যায় তাহলে সে ঐ টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে পারবে। কথামতই কাজ হলো। রাতে আযাবের ফেরেশতারা কবরে আবির্ভূত হলো। এরপর তারা বলল, এখানে দু’জন লোক রয়েছে। একজন জীবিত, একজন মৃত। একজন এখানে এক রাত থাকবে এবং অপর জনকে চিরতরে এখানেই থাকতে হবে। তাই চলো যে কাল সকালে চলে যাবে তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি।
পৃষ্ঠা:২৩
তারা জিজ্ঞাসা করলো: কে তুমি? ব্যক্তি: আমার নাম অমুক। ফেরেশতা: তুমি জীবিকা অর্জনের জন্য কি কর? ব্যক্তি। আমি একজন ভৃত্য। আমি মানুষের জন্য বিভিন্ন রকম জিনিস বহন করি। ফেরেশতা। তুমি মানুষের জন্য জিনিসপত্র বহন করো? ঐ বহন কাজে তুমি কি ব্যবহার কর? ব্যক্তি: আমি আঁশ নির্মিত দড়ি ব্যবহার করি। ফেরেশতা তুমি কি নিশ্চিত এই ব্যাপারে যে, আঁশে বিশুদ্ধতা রয়েছে এবং এতে কোন ভেজাল নেই? দড়ি কিনতে যে দশ শিলিং ব্যয় হয়েছে তা কিভাবে উপার্জন করেছিলে? ব্যক্তি: আমি অমুক ব্যক্তির কাজ করে দিয়েছিলাম। ফেরেশতা: তুমি কিভাবে নিশ্চিত হলে ঐ ব্যক্তির এঐ অর্থ হালাল উপায়ে অর্জন করেছে, হারাম উপায়ে নয়। যাহোক, ফেরেশতারা এভাবে সূর্যাস্ত থেকে সকাল পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে দড়ি এবং তার কাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করল। জিজ্ঞাসাবাদের পর ঐ ব্যক্তি কবরস্থান ত্যাগ করল। এরপর মৃত ব্যক্তির সন্তানেরা ঐ ব্যক্তির কাছে আসল এবং কি ঘটল তা জিজ্ঞেস করল। ঐ ব্যক্তি তখন উত্তর দিল- তোমার পিতার কেয়ামত পর্যন্ত কোন শান্তি হবে না। তারা জিজ্ঞেস করল- কেন? সে তখন উত্তর দিল, ফেরেশতারা আমাকে এই দড়ি নিয়েই সারা রাত প্রশ্ন করেছে। আমি এটা কোথায় পেয়েছি, এটা নিয়ে কোথায় যাই প্রভৃতি। তাই তোমার পিতার কি হবে, যার অনেক বাগান, রাজ প্রাসাদ… রয়েছে? কখন ফেরেশতারা তার জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করবে? সত্যি কথা বলতে, এটা নিছক একটা প্রতীকী চরিত্র। এর গভীর অর্থ রয়েছে যা মানসপটে গভীর চিন্তার খোরাক যোগায়। জবাবদিহিতা খুব শিগগিরই করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাবদিহিতা খুব শিগগিরই করতে হবে। এই ব্যাপারটি হালকা নয়। তাই এখন থেকেই তোমার সঞ্চয় প্রস্তুত কর এবং আল্লাহ তায়ালার সামনে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুতি
পৃষ্ঠা:২৪
গ্রহণ করো। জেনে রেখো, আগামীকালই তুমি আল্লাহ তায়ালার সামনে হাজির হবে। তোমাকে প্রত্যেকটা কাজের হিসাব দিতে হবে।: وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنْقَلَبٍ يَنْقَلِبُونَ: যারা খারাপ কাজ (জুলুম) করে তারা শিগগিরই জানতে পারবে কোন স্থানে তারা প্রত্যাবর্তন করবে। শুআরা। ২২১।
হে আমার যুবক ভাইয়েরা: আমি তোমাদের কতবার বললাম, তোমরা তোমাদের জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়ে রয়েছো এবং এই সময়েই তোমাকে ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, তা আমলে পরিণত করতে হবে এবং তা প্রচার করতে হবে! এটা আসলে খুবই সহজ- শেখা, পালন করা, শেখানো। তুমি যদি তা এই সময়ে না করে সুযোগ হাতছাড়া করো তাহলে এই সুযোগ আর কোনদিন আসবে না। অবসর সময় আসলেই অপ্রতিস্থাপনযোগ্য। তুমি আর কখনই এত অবসর সময় পাবে না। তাই এর সুবিধা গ্রহণ করো। অবাঞ্ছিত কল্পনা এবং অন্তরের অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকো। অবাঞ্ছিত আকাশ কুসুম কল্পনা তোমার সময় অপচয় করবে আর অন্তরের অনুসরণ তোমার হৃদয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর আমি তোমাদেরকে পরামর্শ দিই, প্রতিদিন পবিত্র কুরআন পড়তে। আমি তোমাদের পরামর্শ দিই প্রতিদিন কমপক্ষে হাফ পারা করে কুরআন শরীফ পড়ার জন্য, যাতে দুই মাসে একবার খতম করতে পারো। আমি তোমাদেরকে আরও পরামর্শ দিই সকাল-সন্ধ্যায় বিভন্ন যিকির, প্রার্থনা, দোয়া, দরূদ, সালাতে নিজেদেরকে অভ্যস্ত করে নিতে। যিকির, দোয়া-দরূদ ফযরের সালাতের পরও পড়তে পারো এবং ফযর এবং এশার সালাত জামাতের সাথে মসজিদে আদায় করো। কেউ যদি এশার সালাত জামাতের সঙ্গে আদায় করে সে যেন অর্ধেক রাত ইবাদত করল এবং সে যদি আবার ফযরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করে তাহলে সে পূর্ণ রাত সালাত পড়ার সওয়াব পাবে। মুসলিম। ৬৫৬ এবং আত- ডিরমিণী: ২২১। তিরমিযীতে আরও একটি হাদীস আছে- কেউ যদি ফযরের সালাত জামাতের সাথে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে এবং এরপর দু’রাকআত দোহার সালাত পড়ে সে পূর্ণ হজ এবং ওমরাহ’র সওয়াব পাবে। সে
পৃষ্ঠা:২৫
হজ এবং ওমরাহ’র পূর্ণ সওয়াব পাবে, সে হজ এবং ওমরাহ’র পূর্ণ সওয়াব পাবে। আত-তিরমিযী। ৫৮৬ এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন আত-তা’লিক আর রাগীব: ১/১৬৪-১৬৫। তাই ফযরের সালাত মসজিদে আদায় কর। এরপর কুরআন পড়, সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর ক্ষমা অন্বেষণ করো, এরপর দোহার নামায পড়ো এবং ইউনিভার্সিটিতে যাও। তোমাদের ক্লাসের পড়া দিনে দিনেই করে ফেলবে, কোনটিই ফেলে রাখবে না। আকাশ-কুসুম অবাঞ্ছিত অসংখ্য কল্পনা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো যা তোমার সময়ের অপচয় ঘটায়। দিনে দিনে সব কিছুর প্রস্তুতি গ্রহণ করো। মনে রেখো, তোমার জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডের হিসাব তোমাকে দুঃখ-দুর্দশায় নিমজ্জিত করবে। তাই ফযরের সালাত, কুরআন তেলাওয়াত, ইস্তিগফার, জামাতে নামায, সপ্তাহে দু’দিন সিয়াম, বিদ্যালয়ে ভাল- সঠিক পথের অনুসারী বন্ধুদের সাথে চলা আল্লাহর দাওয়াহ, ইসলামের দাওয়াহ পরিপূর্ণ করতে সহায়তা করবে। [ইবনে জামাআহ বলেন- ‘একজন জ্ঞানী ছাত্র যাকে সে উপকার করতে পারবে এবং যার কাছ থেকে উপকার নিতে পারবে এমন ব্যক্তি ছাড়া কারও সাথে মিশবে না। এমন কোন ব্যক্তি যে ঐ জানের ছাত্রের সময় অপচয় করবে, তাকে উপকার করবে না, তার থেকে উপকার গ্রহণ করবে না এবং তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করবে না, যদি বন্ধুত্বের প্রস্তাব করে তাহলে ঐ জ্ঞানের ছাত্র তার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার আগেই বিনম্রভাবে বন্ধুত্বের ইতি টানবে। কেননা, যখন কোন কিছু গড়ে ওঠে, প্রতিষ্ঠিত হয় তা পরিবর্তন করা অনেক কষ্টের। একটি কথা ফুকাই কেরামদের মুখে সব সময়ই শোনা যায়- ‘কোন কিছু গ্রহণে অস্বীকৃতি কোন কিছু অপসারণ করার থেকে সহজ। তার যদি বন্ধু দরকারই হয় তাহলে ঐ বন্ধুকে অবশ্যই সঠিক পথের অনুসারী, ধর্মনিষ্ঠ, সৎ, সতর্ক, বুদ্ধিমান, উপকারে ভরপুর, ক্ষতিকর দিক নেই বললেই চলে, কোন কিছু মেনে নেয়াতে দক্ষ, সাংঘর্ষিক নয়, কোন কিছু ভুলে গেলে স্মরণ করে দেয়া, স্মরণ করিয়ে দিলে সহায়তা করা, দরকারে সহায়তা করা এবং দুঃখের সময় সাথী হওয়া প্রভৃতি শুণের অধিকারী হতে হবে। তানথিয়াত আস-সামি ওয়াল মুতাকালিম পৃষ্ঠা- ৮৩/ আল্লাহর কাছে তোমার মাধ্যমে একজন মানুষকে পথ দেখানো তোমার জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উট (অনেক দামী সম্পদ) অপেক্ষা উত্তম। ২৮ আল বুখারী। ৪২১০) এবং আল্লাহর কাছে তুমি পরিপূর্ণরূপে দায়বদ্ধ যে, তুমি আল্লাহর দীনকে প্রচার করবে, যেহেতু আল্লাহ তোমাকে মুসলিম হিসেবে সৃষ্টি করেছেন মানব গোষ্ঠীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে তোমার স্থান দিয়েছেন।
পৃষ্ঠা:২৬
تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ: তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান কর, অসৎ কাজ নিষেধ কর এবং আল্লাহর উপর ঈমান আন। হিমরান। ১১০)
যুবক ভাইদের পুনরুজ্জীবিত করা: হে তরুণ যুবক ভাইয়েরা! বর্তমান সময়ে আমরা পেশোয়ারের জমিনে থেকে উম্মাহর হৃদয়ে জিহাদের আকীদাকে শক্তিশালী করে যুবক ভাইদের পুনরুজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাদেরকে ইখলাসের সাথে কাজ করার তাওফিক দান করুন। উম্মাহর অবস্থার প্রতি তাকিয়ে দেখলাম যে, তারা সব জায়গায় আজ মৃত। আর এ মৃত থেকে উত্তোলন করতে সক্ষম যুবকরাই, সাহায্যকারী আল্লাহ। তাই আমরা বললাম, আফগানিস্তানই হোক ইসলামী বিশ্ব প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের সূচনাভূমি। আমরা বলে আসছি, হে লোক সকল! পূর্বসূরী, মুহাদ্দিসীন, মুফতিইয়ীন ও মুফাসসিরীন সবার কথা মতে আফগানিস্তানের জিহাদে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন। এ ব্যাপারে আমরা একটি ফতোয়াও লিপিবদ্ধ করেছি ‘মুসলিম দেশ শত্রুমুক্ত করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরযে আইন’ নামে। এ ফতোয়াটি আমি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার কথা-: أَنْ دَفَعَ الْعَدُةِ الصَّائِلِ الَّذِي يُفْسِدُ الدِّيْنَ وَالدُّنْيَا لَيْسَ أَوْ جَبَ بَعْدَ الإِيْمَانَ مِنْ دَفْعِهِ: ‘দীন ও দুনিয়ার ক্ষতিকারক হানাদার শত্রুকে হটানোই ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ’-এর উপর ভিত্তি করে লিখেছি। অতএব, মুসলমানদের প্রথম কাজ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র স্বীকৃতি দেয়া। এরপর হানাদার শত্রুকে হটানো। এ ফতোয়া আমি বড় বড় আলেমগণের নিকট পেশ করেছি। সর্বপ্রথম যার কাছে পেশ করেছি তিনি হলেন পিতৃতুল্য শায়খ আবদুল আযিয বিন বায। তিনি এ ফতোয়াকে সমর্থন করেন। ফতোয়ার বক্তব্যটি দীর্ঘ ছিল। তাই শায়খ বললেন, একে সংক্ষিপ্ত কর যাতে আমি এতে একটি ভূমিকা লিখে দিয়ে প্রচার করতে পারি। এরপর আমি সংক্ষিপ্ত করেছি। কিন্তু হজ নিয়ে শায়খের কর্মব্যস্ততার কারণে তার কাছে তা পেশ
পৃষ্ঠা:২৭
করতে সক্ষম হইনি। এরপর আমারও আর সুযোগ হয়নি। তবে আমি ফতোয়াটি অনেক আলেমকে পড়ে শুনিয়েছি এবং এর প্রতি তাদের সমর্থনের উপর স্বাক্ষরও গ্রহণ করেছি। অনেক উৎসাহী যুবক আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু আমরা বলেছি, বর্তমানে এখানে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের মুখোমুখি। এ কাজ এ ভূখণ্ডে দীন প্রতিষ্ঠারই কাজ। এ ব্যাপারে পৃথিবীতে পুনরায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার ব্যাপার। এটা সুবর্ণ ও স্বর্ণালী সুযোগ। তাই আমাদেরকে এ কেন্দ্রে থাকতে দাও। আর তোমরাও এতে শরিক হও। এ সুযোগ হয়তো নাও পেতে পারো। এ কেন্দ্র আফগান জিহাদের পরিচর্যা কেন্দ্র। তাই আমরা এখানে দলপ্রীতি, নেতাপ্রীতি, মতবিরোধ ও আঞ্চলিক গোঁড়ামি থেকে মুক্ত থাকতে চাই। আফগানরা যে বিরোধ ও কষ্টের সম্মুখীন তাদের জন্য যথেষ্ট। তোমরা এখানে আবার নতুন কষ্ট নিয়ে আগমন করো না, তাদের মাথার উপর নতুন বোঝা তুলে দিও না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা জানেন, প্রথম পদক্ষেপ থেকে এ পর্যন্ত এ পবিত্র জিহাদের সেবা ছাড়া আমাদের আগমনের আর কোন উদ্দেশ্য নেই। অতঃপর কিছু যুবক এসে এখানে জড়ো হল। আমাদের সবার হৃদয় এক ব্যক্তির হৃদয়ের মত। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, একবার শহীদ আবদুল্লাহ মুহাইব পেশোয়ার থেকে ইসলামাবাদে আসলেন। তখন আমার নিকট কতিপয় ভাই উপস্থিত থাকায় আমি তাকে সময় দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম। আমি একমাত্র আপনাকে দেখার আগ্রহ পূরণের জন্যেই এখানে এসেছি। আপনাকে দেখলাম। এরপর তিনি পেশোয়ারে ফিরে যান। কিছুদিন যাবার পর যুবক ভাইদের নিয়ে আমাদের কাজের অগ্রগতি অনেক দূর এগিয়ে গেল।
শক্তি দিয়েই লঙ্ঘিত হবে পথ: জাতি গঠিত হয় বীর দ্বারা। সম্মান ও প্রভাবের খুঁটি হচ্ছে এ বীরগণ। সত্যকে মানুষ তখনই দেখতে পায় যখন মিথ্যার সাথে সত্যের যুদ্ধ বাঁধে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিকমাত ও সদোপদেশ দ্বারা লোকদেরকে ইসলামে প্রবেশ করানোর কত চেষ্টা করেছেন? মক্কাতে তিনি দীর্ঘ তের বছর অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করে যে দাওয়াতের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন, তাতে কতজন লোক মুসলমান হয়েছে? একশ’র সামান্য বেশি মাত্র। কিন্তু যেদিন তিনি অস্ত্র
পৃষ্ঠা:২৮
নিয়ে প্রবেশ করে মক্কার কাফেরদের দন্ত চূর্ণ করে দিলেন, সেদিন থেকে মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করে। মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমানদের সংখ্যা ছিল দশ হাজার। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের সময় এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ত্রিশ হাজারে। বিশাল এ পার্থক্য মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে। মক্কা বিজয় হয়েছিল নবম হিজরীর জমাদি-উস-সানীতে এবং তাবুক অভিযান হয়ে ছিল ঐ বছরের রামাদানে। অর্থাৎ মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ইসলামের বাহিনী তিনগুণ বেড়ে গেল। সপ্তম হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র চৌদ্দশ’। এ সন্ধির ফলে মানুষ যখন বুঝতে পারল মক্কার নেতারা ইসলামের শক্তি স্বীকার করে নিয়েছে, তখন মানুষ ইসলামের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করল। অতঃপর মক্কা বিজয়ের সময় তথা দু’বছরের কম সময়ের ব্যবধানে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে দশ হাজারে উপনীত হয়। তাই আমি বলি, শক্তিই মানুষকে আল্লাহর দীনে দলে দলে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আগে ঈমান ও তাওবার মাধ্যমে আমাদেরকে শক্তি অর্জন করতে হবে। এরপর যখন আমাদের এ শক্তির আলোতে বাতিলের অন্ধকার দূরীভূত হতে শুরু করবে, তখন আল্লাহর দীনের জন্য মানুষের দৃষ্টি খুলে যাবে এবং তারা এসে তাতে দলে দলে প্রবেশ করবে। তাই হযরত উমর রা. যখন সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা আল্লাহর কথা-: أفواجا إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ، وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ: ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেল তখন আপনি মানুষকে আল্লাহর দীনে দলে দলে প্রবেশ করতে দেখছেন’ এর থেকে কি বুঝলেন? তখন হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের ঘোষণা বুঝেছি। কারণ, ইসলামের শক্তি কুফরের প্রভাবের উপর বিজয় লাভ করেছে। ফলে মানুষ আল্লাহর দীনে দলে দলে প্রবেশ করেছে। আর এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দায়িত্ব পালনও শেষ হল। অতঃপর তিনি প্রভুর কাছে চলে গেলেন।
পৃষ্ঠা:২৯
মিথ্যার পরাজয়
আল্লাহ তায়ালা বলেন-: أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَأَلَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَابِيا وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعِ رَبَدَّ مِثْلُهُ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاء وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللهُ الْأَمْثَالَ: তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। এরপর তা নদীসমূহ দিয়ে পরিমাণ মত প্রবাহিত হয়। অতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসে। আর মানুষ অলঙ্কার অথবা যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও অনুরূপ ফেনা শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে রয়ে যায়। আল্লাহ এমনিভাবেই দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন। [রা’দ: ১৭] সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের এ চিরাচরিত নিয়মটা কখনো লুপ্ত হওয়ার নয়। সত্য স্থির, তার শেকড় মাটির গভীরে। আর মিথ্যা অস্থির, ফেনার ন্যায় দ্রুত অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ আরো বলেন-: أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ تُؤْتِي أَكُلُهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا وَيَضْرِبُ اللهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ . وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتَقَتْ مِنْ فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِنْ قرارٍ: আপনি কি জানেন না, আল্লাহ কীভাবে কালেমা তাইয়িবার (ভাল কথা) উদাহরণ দিয়েছেন? কালেমা তাইয়িবা হচ্ছে একটি ভাল গাছের মতো, যার শেকড় মজবুত ও মাথা
পৃষ্ঠা:৩০
আকাশে। সেটা তার প্রভুর হুকুমে সব সময় তার ফল দিয়ে যাচ্ছে। আর আল্লাহ উদাহরণ এজন্য পেশ করেন, যাতে মানুষ তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। আর কালিমা খবীছার (খারাপ কথা) উদাহরণ হচ্ছে একটি খারাপ গাছ, যাকে মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং তার কোন দৃঢ়তা নেই। আল্লাহ মজবুত কথার দ্বারা মুমিনদেরকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে দৃঢ়পদ রাখেন এবং অপরাধীদের পথচ্যুত করেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন। ইব্রাহীম। ২৪-২৭/
সত্য মূলসম্পন্ন ও সুদৃঢ়: দুনিয়ার জীবনে সত্য সুদৃঢ়, প্রকৃতির সাথে লাগসই ও পৃথিবীর নিয়ম নীতির অনুকূলে চলাচলকারী। কারণ, যিনি সত্য পাঠিয়েছেন, তিনি সত্য। তিনি মানুষের প্রকৃতিকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তার পক্ষে দুনিয়ার প্রাকৃতিক নিয়ম নীতির অনুকূলে চলা সম্ভব হয়। সত্যের সাথে প্রকৃতির কোন সংঘর্ষ নেই। আর সত্যের প্রকৃতি হচ্ছে, সব সময় মিথ্যার উপর বিজয়ী থাকে। ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে মিথ্যার পরাজয় সুস্পষ্টরূপে দেখতে পাই। মুসলিম উম্মাহ যতদিন তার দীনকে আকড়ে ধরে থেকেছিল, ততদিন তারা মিথ্যার অনুসারীদের উপর বিজয়ী ও প্রভাবশালী ছিল। কিন্তু যখনই তারা সত্যের পথ থেকে দূরে সরতে আরম্ভ করে, তখনই তারা লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার পাত্রে পরিণত হয়।
কামনা আমার শাহাদত: গৌরব ও বীরভূমি আফগানিস্তানে শাহাদত বরণকারী যুবকদের কথা মনে পড়লে আমার নিজেকে ছোটই মনে হয়। কারণ, কয়েক বছর ধরে আমি শাহাদাতের সন্ধান করছি। এই যুবকদের কামনা তিনি পূরণ করেছেন। কিন্তু আমার কামনা আল্লাহর কাছে এখনো প্রত্যাখ্যাত হয়ে আছে। তাই আমার মনে হয়, আমি এখনো আল্লাহর কাছে সম্মানের পাত্র হইনি। যদি আমি তাঁর কাছে সম্মানের পাত্র হতাম, তাহলে এ যুবকদের ন্যায় আমাকেও তিনি শাহাদাতের জন্য নির্বাচিত করতেন।
পৃ্ষ্ঠা ৩১ থেকে ৩৯
পৃষ্ঠা:৩১
হে যুবক ভাইয়েরা! মুজাহিদের অনেক কারামত প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু তারা কারামতের কারণে বিজয় অর্জন করেনি। তারা বিজয় অর্জন করেছে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের কারণে। তাদের আকীদা মানুষের অন্তরে নতুনভাবে জাগ্রত করেছে। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল, পশ্চাৎপদ, দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। তাদেরকে আল্লাহ পৃথিবীর সর্বাধিক সেনাবাহিনীর রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের মোকাবেলা করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত করে আমাদেরকে তাঁর এ কথার সত্যতা দেখিয়ে দিয়েছেন-: كمْ مِنْ فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةٌ كَثِيرَةٌ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ: আল্লাহর হুকুমে অনেক ক্ষুদ্র দল অনেক বড় দলের উপর বিজয় লাভ করেছে। আল্লাহ রয়েছেন ধৈর্যশীলদের সাথে। (বাকারা:২৪৯)
এক যুবক মুজাহিদ ভাইয়ের কারামত: কথা অনেক দীর্ঘ। আমি এখন একজন যুবক মুজাহিদের কারামতের ঘটনা বলে আমার বক্তব্য শেষ করে দেবো। যুবকটির নাম আহমাদ ফাইয। সে পাঞ্জশীরের রণক্ষেত্রে আহত হওয়ার খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন এসে তাকে একটি গাছের খাটে তুলে নেয়। রাস্তা দুর্গম ও উচু নীচু হওয়ায় তারা তাকে রশি দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে নেয় যাতে পড়ে না যায়। রুশ বাহিনী তাদেরকে দেখার পর গুলি করে সবাইকে হত্যা করে। ভাই আহমাদ ফাইয এবারসহ দু’বার গুলিবিদ্ধ হল। গুলিতে তার পেটে ছিদ্র হয়ে যায়। কিন্তু সে তখনো জীবিত। সে বলল, আমি চোখ খুললাম। চোখ খুলে দেখি আমি রশিতে বাঁধা। আমার পা ভেঙে যাওয়ায় নড়াচড়া করা সম্ভব হচ্ছিল না। আর আমার শরীরে বাঁধা রশিগুলোও খোলা সম্ভব হয়নি। তখন আমি বললাম, আল্লাহ! আপনি যেভাবেই হোক আমাকে বাঁচান। বলে আমি আশা ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর জাগ্রত হয়ে দেখলাম রশিগুলো খুলে গেছে। তখন আমি চাইলাম নদীর ওপারে যেতে। নদী ছিল বড় ও প্রবহমান। সুস্থ হলেও আমার পক্ষে এ নদী পার হওয়া সম্ভব ছিল না। আর এখন যেহেতু পেটে ভর দেয়া ছাড়া আমার পক্ষে নড়াচড়া করাও
পৃষ্ঠা:৩২
সম্ভব নয়, সেহেতু এ নদী পার হওয়া তো কল্পনাতীত ব্যাপার। তাই আমি আশাহত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দেখি আমি নদীর ওপারে। এরপর আমি তের দিন পেটে ভর দিয়ে চললাম। আমার কাছে কোন খাবার ছিল না। এ সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দেখতাম যেন আমি এখনই খাবার খাওয়া শেষ করলাম। এরপর আমি আরেকটি নদীর সম্মুখীন হলাম। তখন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি নদীর ওপারে। অতঃপর আরো তের দিন বুকে ভর দিয়ে চললাম। এরপর একটি পরিত্যক্ত ঘর দেখে তাতে প্রবেশ করলাম। সেখানে একটি দুধের খলে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। দুধের থলেটা যেন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। দুধগুলো পান করে নিলাম। রাতে মুজাহিদরা এ ঘরে ঢুকে একটি রক্তাক্ত ও কর্দমাক্ত আজব প্রকৃতির মানুষ দেখতে পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন আমি ডাক দিয়ে বললাম, আস আমি আহমাদ ফাইয। মুজাহিদরা আমােেক দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কীভাবে বেঁচে গেলে? আমরা তো মনে করেছি তুমি মারা গেছ। এরপর সে তাদেরকে তার ঘটনা খুলে বলল। আহমদ ফাইয এখন মুজাহিদদের সাথে জিহানরত। যেদিনই সে তার মুজাহিদ ভাইদের এ ঘটনা বলেছে, সেদিন রাতে অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ আসে যে, তুমি এটা মানুষকে বলে বেড়াইও না। এটা আমার ও তোমার মধ্যকার গোপন ব্যাপার। আমি এ কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করছি এবং আমার ও তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। এরপর শহীদ আযযাম রহ, এভাবে দোয়া করলেন-: اللهمَّ مَكَّن لِلْمُؤْمِنِينَ فِي الْأَرْضِ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ الْفِرْدَوسَ الأَعْلَى اللهُمَّ أَعِنَّا عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنٍ عِبَادَتِكَ اللهُمَّ أَحْيِنَا سُعَدَاءَ وَامْتِنَا شُهَدَاءَ وَاحْشُرْ فِي زُمْرَةِ الْمُصْطَفَى صَلَّ اللهُمَّ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ اللهُم الْمُرِ الْمُجَاهِدِينَ فِي الْغَانِسْتَانَ وَفِي فَلِيسِطِينَ وَفِي لُبَنَانَ وَفي كل مكان اللهم ارفع رَايَةَ الإِسْلَامِ وَحَكُمُ دَولَةَ القُرْآنِ
পৃষ্ঠা:৩৩
وَاجْعَلْنَا مِنْ جُنُودِ الْقُرْآنِ وَصَلَّي اللهُ عَلَي سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ .: হে আল্লাহ! মুমিনদেরকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করুন। হে আল্লাহ। আমরা আপনার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত ফিরদাউস কামনা করছি। হে আল্লাহ। আমাদেরকে আপনার স্মরণ, কৃতজ্ঞতা ও সুন্দরভাবে ইবাদত করার তাওফিক দিন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে পুণ্যবান জীবন ও শহীদি মৃত্যু দান করুন এবং মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দলভুক্ত করে পুনরুত্থিত করুন। হে আল্লাহ! মুজাহিদদের আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও লোবননসহ সকল স্থানে বিজয় দান করুন। হে আল্লাহ! ইসলামের ঝাণ্ডাকে উন্নত রাখুন, কুরআনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দিন এবং আমাদেরকে কুরআনের সৈনিকদের অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ! আমাদের নেতা মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবীদের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। যুবকদের দ্বারাই কাঙ্ক্ষিত সমাধানে পৌঁছা সম্ভব আল্লাহ তায়ালা বলেন-: أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِنْ دُونِهِ وَمَنْ يُضْلِلِ اللهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ وَمَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُضِلٍ أَلَيْسَ اللهُ بِعَزِيزِ ذِي الْتِقَامٍ وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِي اللَّهُ بِضُرٍ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتٌ رَحْمَتِهِ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ المتوكلون
পৃষ্ঠা:৩৪
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্যে যথেষ্ট নয়? তারা আপনাকে তাদের কথিত উপাস্যদের ভয় দেখাচ্ছে। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই। আর আল্লাহ যাকে পথ দেখান, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আল্লাহ কি ক্ষমতাধর ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী ননং, যদি আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন যে, পৃথিবী ও আকাশসমূহ কে সৃষ্টি করেছেন? তাহলে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। এখন তাদের বলুন যে, তোমরা আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে ডাক, তারা কি আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে, সে ক্ষতি দূর করতে পারবে কিংবা যদি আল্লাহ আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করেন, তা কি তারা প্রতিরোধ করতে পারবে? আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ভরসাকারীরা তাঁর উপরই ভরসা করে। ঘুম। ৩৬-৩৮।
কাঙ্ক্ষিত সামাধান কি: তোমাদের পরিচয় হচ্ছে তোমরা কাঙ্ক্ষিত সমাধান কামনা করছ। সে কাঙ্ক্ষিত সামাধান কি যা মানুষ তোমাদের মাধ্যমে পেতে চাচ্ছে? যার কথা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মাঠে-ময়দানে বলে বেড়াচ্ছে? যার জন্য তোমার মন অধীর অপেক্ষা করছে? সংক্ষেপে সমাধান কি এই নয় যে, পৃথিবীতে আল্লাহর আইনের শাসন নতুনভাবে ফিরিয়ে আনা, যার কথা শায়খ বান্না তাঁর দাওয়াতের প্রথম থেকে বলে এসেছেন? খেলাফতের পতনের চার বছর পর শায়খ বান্না যে দ্রুত আন্তরিক প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন, তা খেলাফতের সে প্রাসাদ পুনঃনির্মাণের জন্য যা ধূসর বাঘ মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯২৪ সালের ৪ঠা মার্চ ভেঙ্গে তছনছ করেছিল। সুতরাং আমাদের এ দলবদ্ধ হওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য সে খেলাফতের প্রাসাদের পুনর্নির্মাণই। শায়খ বান্না বলতেন-: أَيُّهَا الإِخْوَانُ لَسْتُمْ حِزْبًا سِيَاسِيًّا. وَلَا جَمْعِيَّةً خَيْرِيَّةً وَلَا هَيْئَةٌ وَضْعِيَّةٌ لِحِزْبٍ مِنَ الْأَحْزَابِ أَوْ هَيْهَةً وَضَعِيَّةً لِغَرَضِ مِنَ الْأَعْرَاضِ أَنْتُمْ نُورُ جَدِيدٌ يَسْرِى فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ فَيُحْيِهَا بِالْقُرْآنِ وَيُبَدِّدُ ظُلُمَاتِ الْجَاهِلِيَّةِ بِنُورِ الْإِسْلَامِ
পৃষ্ঠা:৩৫
যুবক ভাইয়েরা আমার।: তোমরা কোন রাজনৈতিক দল নও, তোমরা কোন সেবা সংগঠনও নও এবং কোন দল বা কোন উদ্দেশ্যের জন্য গঠিত কোন সংস্থাও নও। তোমরা এ উম্মাহর মাঝে চলাচলকারী এক নতুন আলো, যা কুরআন দ্বারা এ উম্মাহকে জীবিত করবে এবং ইসলামের আলো দ্বারা জাহেলিয়াতের অন্ধকারকে দূর করবে। অতএব, শহীদ বান্না ১৯২৮ সালে এ নতুন আলো যাকে ইসমাইলিয়ায় তার পবিত্র আহবানের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল চার বছর পূর্বে ধ্বংস করা খেলাফতের প্রাসাদ পুনর্নির্মাণ করা। হে যুবক ভাইয়েরা। তোমরা আধার সংঘবদ্ধ হও, তোমাদের হুংকারে দেখবে কাফেরদের সিংহাসন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাবে মুহূর্তের মধ্যে; কারণ তোমরা হলে আল্লাহ প্রেরিত শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ সৈনিক। আর তারা হলো মাকড়সার জালের মতো ফুঁ দিলে উড়ে যাবে।
যুবক ভাইদের প্রতি বিশেষ বার্তা: وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَلا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ: উপস্থিত প্রিয় যুবক ভাইয়েরা! আসসালামু আলাইকুম। আজ গোটা পৃথিবীর মানুষ এমন এক সময়ে উপস্থিত হয়েছে যখন সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম জাতি কাফের ইয়াহুদী শয়তানের নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে চিৎকার করে বলছে-: وَمَا لَكُمْ لا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلَ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا.: আজ তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে না? এবং পুরুষ, নারী ও শিশুদের মধ্যে যারা দুর্বল তারা বলে- হে আমাদের প্রতিপালক! এই
পৃষ্ঠা:৩৬
জনপদ যার অধিবাসী অত্যাচারী তা থেকে আমাদেরকে অন্যখানে নিয়ে যাও, তোমার তরফ থেকে আমাদের জন্য কোন লোককে আমাদের অভিভাবক পাঠাও এবং তোমার নিকট থেকে আমাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী প্রেরণ কর। প্রিয় যুবক ভাইয়েরা। আজ আফগানিস্তান, চেচনিয়া, বসনিয়া, ইরান, ইরাকসহ গোটা বিশ্বেই আমাদের মা-বোনেরা হারাচ্ছে তাদের ইজ্জত, কেড়ে নিচ্ছে তাদের নিষ্পাপ প্রাণ। এর থেকে মুক্তির পথ একটিই, তা হলো জিহাদ। আল্লাহ তায়ালা বলেন-: وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ فَإِنِ الْتَهَوا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন- এবং তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো যতক্ষণ না অশান্তি দূরীভূত হয় এবং আল্লাহ তায়ালার হুকুমত সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা ক্ষান্ত হয় তবে অত্যাচারীগণ ছাড়া কারো সাথে শত্রুতা নেই।(বাকারা:১৯২) জিহাদ প্রত্যেক শ্রেণীর উপরই ফরয শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর নয়। তবে আজ আমি যুবক ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, তোমরাই পারবে আমাদের মা- বোনদের এ নির্যাতন থেকে মুক্ত করে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে। হে যুবক ভাইয়েরা! তোমরা আরেকবার গর্জে উঠো। জাগিয়ে তোল পৃথিবীর সকল যুবক ভাইদের, জানিয়ে দাও আমরা সিংহের জাতি, আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শে গড়া মুসলিম সেনা। ভেঙে দাও কাফেরদের সিংহাসন, চূর্ণবিচূর্ণ করে দাও তাদের দম্ভ অহংকার, মুক্ত কর মুসলিমদের প্রথম কিবলা, মুক্ত কর আমাদের মা- বোনদের। ফিরিয়ে আনে! ইসলামী খেলাফত। আর এটি যুবক ভাইদের দ্বারাই খুব তাড়াতাড়ি সম্ভব। আজ আমি তোমাদের মাঝে আছি কাল নাও থাকতে পারি। তোমাদের মাঝে আজকের উপস্থিতিই হতে পারে আমার শেষ উপস্থিতি। তাই বলে কাজ থেমে থাকবে না। এ কাজ চলবে চিরকাল যুগ থেকে যুগ ধরে। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক যুবক ভাই শহীদ হয়ে গেছেন। আল্লাহ তাদের জান্নাতে সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমারও মন বলছে অচিরেই আমিও মাওলার দরবারে চলে যাব: ভাই আমি তোমাদের কয়েকটি কথা বলে যাই। কথাগুলো মন দিয়ে শোন। ১. তোমরা তোমাদের ঈমান মজবুত কর।
পৃষ্ঠা:৩৭
২. তোমাদের আমলের পরিধি বাড়িয়ে দাও। বিশেষত বাতের আঁধারে আল্লাহর দরবারে বেশি করে চোখের পানি ফেলে সাহায্য চাইবে। ৩. সততা এবং আমানতদারিতার প্রতি কঠোর হবে। ৪. যুদ্ধের ময়দান থেকে পিছিয়ে আসবে না। ৫. ঐ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত পৃথিবীর বুক থেকে কাফের বেঈমানরা শেষ না হয়। মনে রাখবে, এ যুদ্ধ শুধু নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গোটা বিশ্ব জয়ের যুদ্ধ। হে যুবক ভাইয়েরা! আমি স্বপ্ন দেখি তোমরাই একদিন এ বিশ্ব জয় করবে। তোমরাই একদিন বিশ্বের বুকে কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। সেদিন আসবে। হে তরুণ ভাইয়েরা। এ ধারা অব্যাহত থাকবে যুগ যুগ ধরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম। হে তরুণ ভাইয়েরা। এ দাওয়াত পৌঁছে দিবে বিশ্বের সব যুবক ভাইদের প্রতি, তারা যেন প্রস্তুতি নেয়। কাফের ও ইহুদী বেঈমানরা মুসলিম দেশগুলোর ব্যাপারে গভীর ষড়যন্ত্র করে বেড়াচ্ছে। যে কোন সময় যে কোন দেশে আক্রমণ আসতে পারে। মুসলিম যুবকেরা যেন আল্লাহর এ আয়াতগুলোকে ভুলে না যায়-: وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ: এবং আল্লাহ তায়ালার রাহে যুদ্ধ কর এবং নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত। [বাকারা। ২৪৪।: وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ: এবং তোমরা আল্লাহ তায়ালার রাহে জিহাদ করো তাদের সাথে, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। [বাকরা: ১৯০] আফগান যুবকদের থেকে আমি যা শিখেছি আফগান যুবকেরা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তারা আমাকে শিখিয়েছে ফিলিস্তিনকে ইয়াহুদীদের হাত থেকে ফিরিয়ে আনা সহজ ব্যাপার। শুধু সহজ না, ইনশাআল্লাহ খুবই সহজ। আমি এ ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী। আমাদের
পৃষ্ঠা:৩৮
কাছে যদি দু’হাজার ফিলিস্তিনী যুবক এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ও যুদ্ধের কৌশল শিখে নেয় এবং তাদের কাছ থেকে গোয়েন্দাদের ভয় দূর হয়ে যায়, তাহলে আমি নিশ্চিত যে, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করা সম্ভব। ফিলিস্তিনীরা যেখানে যায়, সেখানে গোয়েন্দাদের ভয়ে ভীত থাকে। আলহামদুলিল্লাহ! এখানে আমাদের গোয়েন্দা ভীতি দূর হয়ে গেছে। জিহাদ মানুষের মনকে রিযিক ও মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্ত করে।: وَهَانَ فَمَا آبَانِي بِالرِّزَايَا لِإِنِّي مَا انْتَفَعْتُ بِأَنْ أَبَانِي বিপদকে ভয় করা সাজে না কখনো আমার কেননা আমি বিপদকে ভয় করে পাইনি কোন উপকার এখানে এসে আরব যুবকদের অন্তর পরিপক্ হয়েছে ও তাদের হিম্মত উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ও জর্দানের যুবকদের, যারা ইনশাআল্লাহ ফিলিস্তিন মুক্ত করার পবিত্র জিহাদের উপকরণ হবে বলে আশা করছি। আট বছর ধরে আমি এখানকার এ কণ্টকাকীর্ণ ও মিষ্টি পথে অবস্থান করায় ফিলিস্তিনে আমার দেশবাসী বলাবলি করছে, শায়খ আবদুল্লাহ আযযাম আফগান সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। আফগান সমস্যা কি ফিলিস্তিন সমস্যা থেকে গুরুত্বপূর্ণ। হে যুবক ভাইয়েরা। হতে পার তুমি ফিলিস্তিনী, আফ্রিকান, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, ভারত বা বিশ্বের যে কোন দেশের। তোমরা কি জান না, বিশ্বের সকল মুসলিমই ভাই ভাই? তাই এ খবরটি বিশ্বের সকল যুবকদের কানে কানে পৌঁছে দাও যে আজই যুদ্ধের ডাক এসেছে এক্ষুণি এবং এ মুহূর্তেই যার যার অবস্থান থেকে যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। কারণ আজ ইহুদী বেঈমানেরা বিশ্ব মুসলিমদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে। ইসলামকে তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই আর বসে থাকার সময় নেই। আল্লাহর এ আয়াতের দিকে লক্ষ করে দেখুন, সময় হয়েছে কি না? যুদ্ধের প্রস্তুতির ব্যাপারে আল্লাহ বলেন-: وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُهُ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَأَخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لا تُظْلَمُونَ
পৃষ্ঠা:৩৯
আর তোমরা তাদের সাঙ্গে যুদ্ধ করার জন্যে যথাসাধ্য শক্তি অর্জন করবে। (বা প্রস্তুতি গ্রহণ করবে) অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা ভীত সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ তায়ালার শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে। অন্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জানেন। আর তোমরা আল্লাহ তায়ালার পথে যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি একটুও জুলুম করা হবে না। আনফাল। ৬০) তিনি আরো বলেন-: فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَخَلُوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ: মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে বন্দী কর এবং অবরোধ কর এবং সর্বত্র তাদের জন্যে ওঁৎ পেতে থাক। এরপর যদি তারা তাওবা করে এবং নামায আদায় কারে, যাকাত আদায় করে তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতীব দয়াবান। তাওবা: ৫)