আক্বীদা বিষয়ক কতিপয় মাসয়ালা
পৃ্ষ্ঠা ০১ থেকে ০৫
পৃষ্ঠা:০১
বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, আর দরূদ ও সালাম তাঁর রাসূলের প্রতি—– অত্র নিবন্ধে আল্লামা মুহাম্মাদ জামীল যাইনু রচিত “আলআক্বীদা আলইসলামীয়াহ মিনাল কিতাবে ওয়াস্ সুন্নাহ আস্সাহীহাহ” নামক গ্রন্থ থেকে মুসলমানের আক্বীদাহ (ধর্ম বিশ্বাস) বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা প্রশ্নোত্তরে আলোচনা করা হয়েছে। মাসয়ালা গুলি যদিও কিছু সংখ্যক মুসলমানের জানা, তবে দেখা যায় অধিকাংশ মুসলমানের নিকট অজানা রয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি এর দ্বারা পাঠক, লেখক ও অনুবাদককে উপকৃত করবেন। তিনি অতিশয় দাতা ও দয়াবান এবং তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।
পৃষ্ঠা:০২
আমাদের সৃষ্টিরকে উদ্দেশ্য
১। প্রশ্নঃ- আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন?
১। উত্তরঃ আল্লাহ্ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, আমরা যেন তাঁরই ইবাদত করি এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক না করি। দলীলঃ আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ) অর্থঃ “আমি জ্বিন এবং মানুষকে এই জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” (জারিয়াতঃ ৫৬) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো তারা যেন তাঁর ইবাদত করে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক না করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
২। প্রশ্নঃ ইবাদত বলতে কি বুঝায়?
২। উত্তরঃ ইবাদতঃ ইবাদত একটি ব্যাপক নাম, তা বাহ্যিক ও গোপনীয় যাবতীয় কথা ও কাজ যা আল্লাহ্ ভালবাসেন। যেমনঃ দো’য়া, নামায, বিনয় ও দ্বীনতা প্রকাশ ইত্যাদি বুঝায়। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ)
পৃষ্ঠা:০৩
অর্থঃ “আপনি বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী- হজ্জ, আমার জীবন ও মরণ জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।” (আন’আম: ৬২) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ “আমার বান্দার উপর অর্পিত ফরজ আদায় করা অন্য কিছুর মধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জনে ব্রতী হওয়া অপেক্ষা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।” (হাদীসে কুদসী বুখারী)
৩। প্রশ্নঃ ইবাদত কত প্রকার?
৩। উত্তরঃ ইবাদতের অনেক প্রকার রয়েছে তন্মধ্যেঃ দো’য়া, ভয়-ভীতি, প্রত্যাশা, ভরসা, সন্ত্রস্ত হওয়া, আকাঙ্ক্ষা, জবাই করা, মানত করা, রুকু, সিজদা, ত্বয়াফ, ফয়সালা, শপথ করা ইত্যাদি বৈধ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
৪। প্রশ্নঃ আল্লাহ রাসূলগণকে কেন প্রেরণ করেছিলেন?
৪। উত্তরঃ আল্লাহ রাসূলগণকে তাঁর ইবাদতের দিকে আহবান ও শিরক মুক্ত করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَبُوا الطَّاغُوتَ)
পৃষ্ঠা:০৪
অর্থঃ “আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ‘ত্বাগুত” থেকে নিরাপদ থাক।” (নাহাল: ৩৬) (ত্বাগুতঃ আল্লাহ্ ব্যতীত মানুষ যার ইবাদত ও আহ্বান করে থাকে এবং সে তাতে সম্মত থাকে সেই ত্বাগুত) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “..নাবীগণ ভাই-ভাই.. আর তাঁদের দ্বীন এক” (অর্থাৎ প্রত্যেক নাবী আল্লাহর একত্ববাদেরই আহ্বান জানিয়েছেন)। (বুখারী মুসলিম) তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রকার
৫। প্রশ্নঃ প্রভৃত্বে একত্ববাদ বলতে কি বুঝায়?
৫। উত্তরঃ আল্লাহর কার্যাবলীতে তাঁকে একক স্বীকার করা যে, তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, রুযী দাতা, জীবিতকারী, মৃত্যু দানকারী, উপকার সাধনকারী, ক্ষতি সাধনকারী ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ- الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।” (ফাতেহা: ২)
পৃষ্ঠা:০৫
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ- আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক তুমি…।” 4 (বুখারী মুসলিম)
৬। প্রশ্নঃ ইবাদতে একত্ববাদ বলতে কি বুঝায়?
৬। উত্তরঃ সমস্ত ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক স্বীকার করা, যেমনঃ দোয়া, জবাই, মানত, ফয়সালা, নামায, মিনতি করা, ভয়, সাহায্য প্রার্থনা, ভরসা ইত্যাদি। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃوَإِلَهُكُمْ إِلَهُ وَاحِدٌ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ) অর্থঃ “আর তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, তিনি দয়াময় অতি দয়ালু।” (বাকারাহঃ ১৬৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সর্ব প্রথম তাদেরকে যে বিষয়ের দিকে আহবান করবে তা যেন এই সাক্ষ্য দেয়ার উপর হয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন প্রকৃত মাবুদ বা উপাস্য নেই।” (বুখারী মুসলিম) বুখারীর অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ “আহলে কিতাবদেরকে আহ্বান জানাবে যে, তারা যেন আল্লাহর একত্ববাদে ঈমান আনে।”
পৃ্ষ্ঠা ০৬ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০৬
৭। প্রশ্নঃ প্রভৃত্বে ও ইবাদতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের লক্ষ্য কি?
৭। উত্তরঃ প্রভৃত্ব ও ইবাদতে একত্ববাদের লক্ষ্য হলো, মানুষ তার প্রতিপালক ও মা’বুদের বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন করতঃ স্বীয় ইবাদতে তাঁর একত্বতা প্রকাশ করবে, স্বীয় কর্মে, আচরণে তাঁর অনুসরণ করবে, অন্তরে ঈমান সু-প্রতিষ্ঠিত করবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর শরীয়তের বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে।
৮। প্রশ্নঃ আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে একত্ববাদ বলতে কি বুঝায়?
৮। উত্তরঃ আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর কিতাবে নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বিশুদ্ধ হাদীসে তাঁর যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন তা প্রকৃত ভাবেই কোনরূপ অপব্যাখ্যা, তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন, তাঁর প্রকৃত গুণ কে নিষ্ক্রিয় করা এবং কোন বিশেষ আকৃতি ধারনা করা ব্যতীত যথাযথ রূপেই বর্ণিত গুণাবলী সাব্যস্ত করা বুঝায়, যেমনঃ তাঁর বর্ণনা ও গুণাবলীর মধ্যে আরশের হওয়া, অবতরণ করা, হাত ইত্যাদি আল্লাহর পরিপূর্ণ শানের উপযোগী পর্যায়ে সাব্যস্ত যা তাঁর বাণী থেকে বুঝা যায়ঃ
পৃষ্ঠা:০৭
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ) অর্থঃ “কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শূরাঃ ১১) আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর আকাশে প্রতি রাতে অবতরণ করেন।” (বুখারী মুসলিম) (আল্লাহ্ অবতরণ করেন তাঁর মহা মহিমতা ও শান অনুপাতে তবে তাঁর কোন সৃষ্টিজীব উক্ত অবতরণের সাথে সাদৃশ্য রাখে না)
সব চেয়ে বড় পাপ
৯। প্রশ্নঃ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কি?
৯। উত্তরঃ বড় শিরক। দলীলঃ আল্লাহ্ তায়ালা লোকমানের (আলাইহিস সালাম) নসীহত বর্ণনা করত: বলেনঃ يا بني لا تشرك بِاللَّهِ إِنَّ الشَّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ) অর্থঃ “আর যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল, হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শরীক করো না, নিশ্চয় শিরক মহা জুলুম।” (লোকমান : ১৩)
পৃষ্ঠা:০৮
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো সবচেয়ে বড়পাপ কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (বুখারী মুসলিম)
১০। প্রশ্নঃ বড় শিরক কি?
১০। উত্তরঃ ইবাদত সমূহের যে কোন ইবাদত আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করা, যেমনঃ) দোয়া, জবাই ইত্যাদি। দলীলঃ আল্লাহ্ তায়ালার বাণীঃ ولا تَدْعُ مِنْ دُونِ الله مَا لا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذَا مِّنَ الظَّالِمِينَ) অর্থ “আর আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য এমন কাউকে ডাকবে না যে তোমার উপকারও করে না, ক্ষতিও করে না, আর যদি তুমি তা কর (ডাক) তবে অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (অর্থাৎ মুশরিকদের) (ইউনুস: ১০৬) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কবীরা গুনাহ সমূহের সবচেয়ে বড় গুনাহ্ হলোঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার নাফারমানী করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।” (বুখারী) ১১। প্রশ্নঃ বড় শিরকের পরিণাম কি?
পৃষ্ঠা:০৯
১১। উত্তরঃ বড় শিরক চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়ার কারণ। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ إلهُ مَن يُشْرِكْ بِالله فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارَ وَمَا للظَّالِمِينَ مِنْ الصار)
অর্থঃ “কেউ আল্লাহর শরীক করলে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন, এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম, আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (মায়েদাহঃ ৭২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করে মৃত্যুবরণ করল সে জাহান্নামে যাবে।” (মুসলিম)
১২। প্রশ্নঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা অবস্থায় সৎকর্ম কাজে আসবে কি?
১২। উত্তরঃ শিরক করা অবস্থায় সৎকর্ম কোন উপকারে আসবে না। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُوْنَ)
অর্থঃ “তারা যদি শিরক করত তবে তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নষ্ট হয়ে যেত।” (আনআম: ৮৮)
পৃষ্ঠা:১০
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেনঃ “আমি শরীকদের শিরক থেকে অনেক দূরে, যে ব্যক্তি তার কৃতকর্মে আমার সাথে অন্যকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শিরককে অগ্রাহ্য করি।” (হাদীসে কুদসী মুসিলম)
বড় শিরকের প্রকারভেদ
১৩। প্রশ্নঃ আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট ফরিয়াদ করব কি?
১৩। উত্তরঃ আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করব না বরং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করব। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ وَالَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللَّهُ مَا يَخْلُقُوْنَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُوْنَ أمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاء وَمَا يَشْعُرُوْنَ أَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ) অর্থঃ “তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।” (নাহালঃ ২০-২১)
পৃ্ষ্ঠা ১১ থেকে ১৫
পৃষ্ঠা:১১
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “হে চিরঞ্জীব, সবার ধারক আমি তোমার রহমত ফরিয়াদ করি।” (তিরমিজী)
১৪। প্রশ্নঃ আমরা কি জীবিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করতে পারি?
১৪। উত্তরঃ হ্যাঁ! যেসব ক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে সে সব সাহায্যের ফরিয়াদ করা যাবে। আল্লাহ্ তায়ালা মুসা আলাইহিস্ সালামের ঘটনা বর্ণনা করে বলেনঃ فَاسْتَغالَهُ الَّذِي مِنْ شيعَته عَلَى الذي مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوسَى فقضى عليه) অর্থঃ “মুসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য কামনা করল, তখন মুসা তাকে ঘুষি মারল; যার ফলে সে মরে গেল।” (কাসাস : ১৫)
১৫। প্রশ্নঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের সাহায্য প্রার্থনা কি জায়েয?
১৫। উত্তরঃ যে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কোন ক্ষমতা নেই সে ক্ষেত্রে জায়েয নয়। দলীলঃ আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينَ)
পৃষ্ঠা:১২
অর্থঃ “আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (ফাতেহা: ৫) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যখন প্রার্থনা করবে আল্লাহর নিকটই করবে, যখন সাহায্য কামনা করবে আল্লাহরই সাহায্য কামনা করবে।” (তিরমিজী)
১৬। প্রশ্নঃ আমরা জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব কি?
১৬। উত্তরঃ হ্যাঁ যে সব ক্ষেত্রে জীবিত লোক সামর্থ্য রাখে যেমনঃ ঋণ বা কোন বস্তু প্রার্থনা করা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ وتَعَاوَلُوْا عَلَى الْبَرِّ وَالتَّقْوَى) অর্থঃ “সৎকর্ম ও আল্লাহ্ ভীতিতে তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।” (মায়েদাহঃ ২) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ্ ঐ বান্দার সাহায্যে আছেন যে বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।” (মুসলিম) কিন্তু রোগ মুক্তি, হিদায়াত, রুজী ও এধরনের অন্য কিছু আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া যাবে না, কেননা জীবিত ব্যক্তিও এসব ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির মত অপারগ।
পৃষ্ঠা:১৩
ইব্রাহীমের (আলাইহিস সালাম) কথা বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِيْنِ وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْتَقِيْنِ وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَسْفَيْن )অর্থঃ “যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে হিদায়াত করেন। তিনিই আমাকে পানাহার করান এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগ মুক্ত করেন।” (শু’আরা: ৭৮, ৭৯,৮০)
১৭। প্রশ্নঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মানত করা জায়েয কি?
১৭। উত্তরঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মানত করা জায়েয নয়, কেননা আল্লাহ্ তায়ালা ইমরানের স্ত্রীর কথা বর্ণনা করে বলেনঃ رَبِّ إِلَيَّ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّراً )
অর্থঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি মানত করলাম।” (আলে- ইমরান: ৩৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মানত করল সে যেন তাঁর
পৃষ্ঠা:১৪
আনুগত্য করে, আর যে আল্লাহর অবাধ্যতার মানত করল সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।” (বুখারী)
যাদুর বিধান
১৮। প্রশ্নঃ যাদুর বিধান কি?
১৮। উত্তরঃ যাদু কাবীরা গুনার অন্তর্ভুক্ত, কখনো কুফরী হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃولكن الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ) অর্থঃ “বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।” (বাকারাঃ ১০২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সাতটি ধ্বংসাত্বক পাপ থেকে দূরে থাকঃ আল্লাহর সাথে শিরক করা, যাদু….।” (মুসলিম) যাদুকর কখনো মুশরিক কখনো কাফের ও কখনো ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে। তাকে তার কৃত কর্মের কিসাস ভিত্তিক বা শরীয়ত নির্ধারিত বা সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা ওয়াজিব, যাদুকরের কৃত কর্ম নিম্নরূপ হয়ে থাকেঃ কোন কিছু নষ্টকরা, ইন্দ্রজাল বা ভেল্কিবাজি, দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট করা, পরস্পরে বিবাদ সৃষ্টি করা, কৃত অপরাধ গোপন করা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ
পৃষ্ঠা:১৫
সৃষ্টি, কোন জীবন নষ্ট করা, অথবা জ্ঞান শূন্য করে ফেলা ইত্যাদি যা অনেক খারাপ ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে।
১৯। প্রশ্নঃ আমরা গায়েবের ব্যাপারে গণক এবং ভবিষ্যৎ ও গায়েবের খবর দাতাদের বিশ্বাস করব কি?
১৯। উত্তরঃ আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করব না, কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا الله) অর্থঃ “বল, আল্লাহ্ ব্যতীত গায়েব বা অদৃশ্যের খবর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ রাখে না।” (না’মল : ৬৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি গণক বা ভবিষ্যতের খবর দাতার নিকট আসল, সে যা বলল তা বিশ্বাস করল, সে নিশ্চয় মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করল।” (মুসনাদে আহমাদ)
ছোট শিরক
২০। প্রশ্নঃ ছোট শিরক বলতে কি বুঝায়?
২০। উত্তরঃ ছোট শিরক বড় পাপের অন্তর্ভুক্ত, তবে ছোট শিরককারী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে না। ছোট
পৃ্ষ্ঠা ১৬ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:১৬
শিরক কয়েক প্রকার, তন্মধ্যে ‘রিয়া’ বা লোকদেখানো আমল করা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ ربه أحداً
অর্থঃ “—সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।” (কাহফঃ ১১০) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী যে পাপের ভয় পাই তা হলো ছোট শিরকঃ “রিয়া’ (রিয়াঃ তোমার ধারনা হওয়া যে, তুমি কোন আমল করবে সে অবস্থায় তোমাকে যেন মানুষ দেখে)। (মুসনাদে আহমাদ)
২১। প্রশ্নঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয কি? ২১। উত্তরঃ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتَبْعَتُنَّ) “বল, নিশ্চয়ই (পুনরুত্থিত) হবে, আমার প্রতিপালকের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে।” (তাগাবুন : ৭)
পৃষ্ঠা:১৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করল সে অবশ্যই শিরক করল।” (মুসনাদে আহমাদ) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ “কারো যদি শপথ করার প্রয়োজন হয় সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে।” শপথ কখনো নবী বা আউলিয়ার নামে হয়ে থাকে, কেউ যদি ওলীর ক্ষতি করার ক্ষমতা আছে বিশ্বাস করে নাবী বা ওলীদের নামে শপথ করে তবে তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত, কেননা সে যেন উক্ত ওলীর নামে মিথ্যা শপথে ভয় পায় তাই সে তার নামে শপথ করছে।
২২। আরোগ্য লাভের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যায় কি?
২২। উত্তরঃ আরোগ্যের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যাবে না, কেননা আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِن يَمْسَسْكَ بخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ) অর্থঃ “আর আল্লাহ্ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই, পক্ষান্ত
পৃষ্ঠা:১৮
রে তিনি যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (আম : ১৭) প্রখ্যাত সাহাবী হুজাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে জ্বর থেকে বাঁচার জন্য হাতে সুতা পরিহিত অবস্থায় দেখেন এবং উক্ত সুতা কেটে ফেলে আল্লাহর এই বাণী পড়েনঃ وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ) অর্থঃ “তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর শরীক করে।” (ইউসুফ: ১০৬)
২৩। প্রশ্নঃ কুনজর থেকে বাঁচার জন্য পুঁতি, কড়ি বা এ ধরনের অন্য কোন বস্তু ঝুলান যায় কি?
২৩। উত্তরঃ কুনজর থেকে বাঁচার জন্য এগুলি ঝুলান যাবে না, কেননা আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بَضُرٌ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ অর্থঃ “আর আল্লাহ্ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই।” (আনআম : ১৭)রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যক্তি তাবীজ-কবচ ঝুলাল সে শিরক করল।” (মুসনাদে আহমাদ)
পৃষ্ঠা:১৯
(তাবীজঃ কুনজর থেকে বাঁচার জন্য পুঁতি বা কড়ি ঝুলান)
ওসীলা ও তার প্রকারভেদ
২৪। প্রশ্নঃ কিসের মাধ্যমে আল্লাহর ওসীলা বা নৈকট্য গ্রহণ করা যায়?
২৪। উত্তরঃ ওসীলা বা নৈকট্য গ্রহণের উপায় দুই ধরণের হয়ে থাকে, (১) বৈধ (২) অবৈধঃ (১) বৈধ ও পালনীয় ওসীলা গ্রহণের উপায় হলোঃ
(ক) আল্লাহ্ তায়ালার নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে
(খ) সৎ কর্মের মাধ্যমে ও
(গ) জীবিত সৎ ব্যক্তিদের দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ ولله الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا ) অর্থঃ “আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, অতএব তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে।” (আ’রাফঃ ১৮০) يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ) অর্থঃ “হে মু’মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর।” (মায়িদাহঃ ৩৫)
পৃষ্ঠা:২০
(অর্থাৎ তাঁর নৈকট্য লাভ কর তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর পছন্দনীয় আমলের মাধ্যমে।) আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “(হে আল্লাহ্!) আমি তোমার নিকট ঐ সমস্ত নামের ওসীলা প্রার্থনা করি যে সমস্ত নামে তুমি নিজের নামকরণ করেছ। (মুসনাদে আহমাদ) রাসূল এবং ওলীদের প্রতি আল্লাহর ভালবাসার ওসীলা এবং রাসূল ও ওলীদের প্রতি আমাদের ভালবাসার ওসীলা গ্রহণ জায়েয, কেননা তাদের ভালবাসাও সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, আমরা এভাবে বলবঃ (হে আল্লাহ্! তোমার রাসূল ও ওলীদের প্রতি তোমার ভাল বাসার ওসীলায় আমাদের কে সাহায্য কর এবং তোমার রাসূল ও ওলীদের প্রতি তোমার ভালবাসার ওসীলায় আমাদের রোগ মুক্ত কর।)”
২। অবৈধ ওসীলা গ্রহণের রূপ হলোঃ মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা, তাঁর নিকট প্রয়োজনীয় বস্তু চাওয়া, যেমন বর্তমানে কতক মুসলিম দেশে তা রয়েছে, তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত, কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
পৃ্ষ্ঠা ২১ থেকে ২৫
পৃষ্ঠা:২১
لا تَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذا مِنَ الظَّالِمِينَ) অর্থঃ “আর আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না যদি তা কর তবে তুমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (অর্থাৎ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে) (ইউনুস: ১০৬) পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম- এর মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ করা, যেমনঃ কেউ বললঃ “হে আল্লাহ্ মুহাম্মাদের মর্যাদার ওসীলায় আমার রোগ মুক্ত কর।” এ ধরনের কথাতেও চিন্তার বিষয় রয়েছে, কেননা সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের ওসীলা করেননি, আর উমার রাসূলের মৃত্যুর পর তাঁর ওসীলা গ্রহণ না করে তাঁর জীবিত চাচা আব্বাসের দোয়ার ওসীলা গ্রহণ করেন। অতএব, উক্ত ওসীলা শিরকের পর্যায়ে যেতে পারে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ কোন ব্যক্তির মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী, যেমনঃ আমীর ও রাষ্ট্র প্রধান মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী। এ হলো প্রকৃত পক্ষে সৃষ্টিকর্তার সাথে সৃষ্টি জীবের সাদৃশ্য স্থাপন। আবু হানীফা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ “আমি সরাসরি আল্লাহর নিকট ব্যতীত অন্যের মাধ্যমে প্রার্থনা করা মাকরুহ মনে করি।”
পৃষ্ঠা:২২
(আর মাকরুহ মহান পূর্ববর্তীগণের নিকট মাকরুহ তাহরিমী (হারাম) বিবেচিত)। (দুররে মুখতার)
দোয়া ও তার বিধান
২৫। প্রশ্নঃ দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করা কি প্রয়োজন?
২৫। উত্তরঃ দোয়ার জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করার প্রয়োজন নেই, কেননা আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ )
অর্থঃ “আমার বান্দাগণ যখন তোমাকে আমার সমন্ধে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই।” (বাকারা: ১৮৬) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “নিশ্চয় তোমরা নিকটতম সর্বশ্রোতাকে ডাকছ, যিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন।” (মুসলিম) (অর্থাৎ তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে তোমাদের সব কিছু শুনেন ও দেখেন)
২৬। প্রশ্নঃ জীবিত ব্যক্তির নিকটে প্রার্থনা করা জায়েয কি?
২৬। উত্তরঃ হ্যাঁ, প্রার্থনা মৃত ব্যক্তির নিকট নয় জীবিত (উপস্থিত) ব্যক্তির নিকট জায়েয।
পৃষ্ঠা:২৩
আল্লাহ্ তায়ালা রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্মধন করে বলেনঃ واستغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنِ وَالْمُؤْمِنَاتِ) অর্থঃ “আর ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর- নারীদের পাপের জন্য।” (সূরা মুহাম্মাদ: ১৯) তিরমিজী বর্ণীত সহীহ হাদীসে আছেঃ “দৃষ্টি শক্তিহীন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললঃ আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন আল্লাহ্ আমাকে আরোগ্য দেন, তিনি বলেনঃ যদি তুমি চাও দোয়া করব, আর যদি চাও ধৈর্য ধারন করবে তবে তাই তোমার জন্য উত্তম।
২৭। প্রশ্নঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর শাফায়াত বা সুপারিশ কার নিকট চাইতে হবে?
২৭। উত্তরঃ রাসূলের শাফায়াত আল্লাহর নিকট চাইতে হবে। (রাসূলের নিকট নয়) আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ قُلْ الله الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا) অর্থঃ “বল, সকল সুপারিশ আল্লাহরই ইখতিয়ারে—” (যুমার : ৪৪) আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সাহাবীকে শিক্ষা দেন যে বলঃ “হে আল্লাহ্ তাঁকে আমার সুপারিশকারী
পৃষ্ঠা:২৪
নিয়োগ কর” (রাসূল কে আমার সুপারিশকারী বানাও)। (তিরমিজী এবং তিনি উক্ত হাদীসকে হাসন সহীহ বলেছেন) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ “আমি আমার উম্মতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত আমার সুপারিশের প্রার্থনা গোপন রেখেছি। আল্লাহ চাহেতো এই সুপারিশ কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি প্রাপ্ত হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত কোন কিছুকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম)
২৮। প্রশ্নঃ জীবিত ব্যক্তির নিকট কি সুপারিশ চাওয়া যাবে?
২৮। উত্তরঃ জীবিত ব্যক্তির নিকট পার্থিব্য জগতের ব্যাপারে সুপারিশ চাওয়া যাবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ مَنْ يُسْقَعْ شَفَاعَةٌ حَسَنَةٌ يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا وَمَنْ يُسْفَعْ شَفَاعَةٌ سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كَفْلٌ مِّنْهَا ) মঅর্থঃ “কেউ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে—।” (নিসা: ৮৫) (অর্থাৎ তার মন্দ কাজের প্রতিদান পাবে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “সুপারিশ কর প্রতিদান পাবে।” (আবু দাউদ)
পৃষ্ঠা:২৫
সূফীবাদ ও তার ভয়াবহতা
২৯। প্রশ্নঃ সূফী ত্বত্তের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি? ২৯। উত্তরঃ সূফীবাদ রাসূল, সাহাবা ও তাবিয়ীদের যুগে ছিল না কিন্তু তা তার পরবর্তী যুগে ইউনান তথা গ্রীক দর্শন আরবী ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর তা প্রকাশ পায়। ইসলামের সাথে সূফীবাদের বহুক্ষেত্রে বিরোধ রয়েছে, যেমনঃ-
১। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনাঃ অধিকাংশ সূফীগণ আল্লাহ্ ব্যতীত মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করে, অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “দোয়াই হলো ইবাদত।” (তিরমিজী) আর আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত যা সমস্ত কৃতকর্ম নষ্ট করে দেয়।
২। অধিকাংশ সূফীগণ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় স্বত্ত্বায় সর্বস্থানে বিরাজমান, অথচ তা কুরআনের বিরোধী, যেমনঃ বলা হয়েছেঃ الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى) অর্থঃ “দয়াময় ‘আরশে’র উপর সমুন্নত।” (তা-হাঃ ৫) (অর্থাৎ যেমন বুখারীতে এসেছে তিনি উপরে আরশেরও উচ্চে)
পৃ্ষ্ঠা ২৬ থেকে ৩০
পৃষ্ঠা:২৬
৩। কতিপয় সূফী বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর সৃষ্টি জীবের ভিতরে অবতরণ করেন, এমনকি ভ্রান্ত সূফী সম্রাট ইবনে আরাবী (যে সিরিয়ায় কবরস্ত) বলেঃ العبد رب، والرب عبد يا ليت شعري من المكلف “বান্দাই তো রব, আর রবই তো বান্দা, হায় কে আমল করার জন্য আদিষ্ট কিছুই বুঝি না”? এবং তাদের এক তাগুত বলেঃ- وما الكلب والخنزير إلا إلهنا وما الله إلا راهب في كنيسة কুকুর হোক আর শুকুর সেই তো আমাদের মা’বুদ, আল্লাহ্ বলেই বা কি আছে গির্জায় তো পাদরী মওজুদ।”
৪। অধিকাংশ সূফীর ধারনা যে, আল্লাহ্ তায়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর জন্য দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, এ কোরআন বিরোধী আক্বীদা, কোরআনে রয়েছেঃ وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ )
পৃষ্ঠা:২৭
অর্থঃ “আমি জ্বিন ও মানুষকে ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (জারিয়াত: ৫৬) আর আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ وَإِنَّ لَنَا لَلآخِرَةَ وَالْأُولَى) অর্থঃ “আমি তো পরকাল ও ইহকালের মালিক।” (লাইল: ১৩)
৫। অধিকাংশ সূফীর ধারণা আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর নূরের দ্বারা ও সমস্ত কিছু মুহাম্মাদের নূর হতে সৃষ্টি করেন এবং মুহাম্মাদই আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, তাদের এ ধরনের বহু বিশ্বাস কোরআন বিরোধী।
৬। সুফীদের ইসলাম বিরোধী আকীদার মধ্যে আরো যেমনঃ ওলীদের নামে মানত করা, ওলীদের কবরের চারিপার্শ্বে ত্বয়াফ করা, কবরের উপর নির্মাণ কার্য করা, আল্লাহ্ ও রাসূল থেকে বর্ণিত হয়নি এমন বিশেষ পন্থায় জিকির করা, জিকিরের সময় নাচা-নাচি, ধূমপান বা গাঁজা খাওয়া, তাবীজ-কবচ, যাদু, ভেল্কিবাজী, অন্যের মাল নানা প্রতারনায় অন্যায় ভাবে ভক্ষণ এবং তাদের উপর বিভিন্ন ছলনা বাহানা করা প্রভৃতি অনেক ধরনের ভ্রান্ত আক্বীদা রয়েছে।
পৃষ্ঠা:২৮
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের কথার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান
৩০। প্রশ্নঃ আমরা আল্লাহ্ এবং তার রাসূলের কথার উপর কারো কোন কথাকে অগ্রাধিকার দিব কি?
৩০। উত্তরঃ আমরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের কথার উপর কারো কোন কথা অগ্রাধিকার দিব না, কেননা আল্লাহ্ তায়ালা বলেন يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهُ وَرَسُولَهُ )
অর্থঃ “হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রনী হয়ো না।” (হুজরাতঃ ১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টি জীবের আনুগত্য চলবে না।” (মুসনাদে আহমাদ) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ “আমি তাদেরকে দেখছি তারা অতি সত্বর ধ্বংস হয়ে যাবে, (কেননা) আমি বলছিঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন আর তারা বলেঃ আবু বকর ও উমার বলেছে!” (মুসনাদে আহমাদ ও অন্যান্য কিতাব)
৩১। প্রশ্নঃ দ্বীনের ক্ষেত্রে আমাদের মতবিরোধ হলে আমাদের করণীয় কি?
পৃষ্ঠা:২৯
৩১। উত্তরঃ আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আশ্রয় গ্রহণ করব। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بالله وَالْيَوْمِ الآخِرَ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً) অর্থঃ “কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের দিকে, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণ কর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।” (নিসাঃ ৫৯) আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বস্তুই রেখে গেলাম, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এই দুটি বস্তুকে মজবৃত ভাবে ধরে থাকবে কোনক্রমেই পথভ্রষ্ট হবে না, দুটির প্রথম হলোঃ আল্লাহর কিতাব দ্বিতীয় হলোঃ তাঁর রাসূলের সুন্নাত।” (হাদীসটি ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন এবং আল-বানী তাঁর সহীহ জামেতে সহীহ বলেছেন।)
৩২। প্রশ্নঃ কেউ যদি মনে করে তার প্রতি শরীয়তের আদেশ-নিষেধ রক্ষা করা জরুরী নয়, তবে তার বিধান কি? ৩২। উত্তরঃ উক্ত ব্যক্তির বিধানঃ সে কাফের, মুরতাদ এবং মিল্লাতে ইসলাম বহির্ভুত, কেননা ইবাদত একমাত্র
পৃষ্ঠা:৩০
আল্লাহর জন্য। আর তাই কালেমায়ে শাহাদাতের স্বীকারোক্তি। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তব জগতে আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদত না করা হবে “ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়ন হবে না।” আর ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হলো: মৌলিক আক্বীদা- বিশ্বাস, আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিদর্শনাবলী, আল্লাহর শরীয়ত ভিত্তিক ফয়সালা, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন। আর আল্লাহ্ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন সে বিধান ছাড়া হালাল ও হারাম সাব্যস্ত করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত এবং তা যে কোন অবস্থায় তা ইবাদতে শিরক করার সমতুল্যও বটে।
কবর যিয়ারত ও তার আদব
৩৩। প্রশ্নঃ কবর যিয়ারতের বিধান কি? এবং আমরা কেন কবর যিয়ারত করি?
৩৩। উত্তরঃ মহিলা ব্যতীত শুধু পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত সাধারণত মুস্তাহাব। কবর যিয়ারতের কিছু উপকারীতা ও কতিপয় আদব রয়েছেঃ
পৃ্ষ্ঠা ৩১ থেকে ৩৫
পৃষ্ঠা:৩১
১। জীবিতদের জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ গ্রহণ ও নসীহত স্বরূপ যে, নিশ্চয় অচীরেই সে মৃত্যু বরণ করবে অতএব, সে সৎকর্মে ব্রতী হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন তোমরা যিয়ারত কর।” (মুসলিম) মুসনাদে আহমাদ ও অন্য কিতাবে একটি বর্ণনায় এসেছেঃ “কবর যিয়ারত তোমাদেরকে পরকাল স্বরণ করিয়ে দিবে।”
২। আমরা মৃতদের জন্য ক্ষমা চাইব, এমন করব না যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের নিকট প্রার্থনা করব বা তাদের কাছে দোয়া কামনা করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে কবরস্থানে গিয়ে কী বলতে হবে তা শিখিয়ে দিয়েছেনঃ ( السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ ، أَسْأَلُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ ) অর্থঃ “হে মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ তোমাদের প্রতি সালাম, ইন্শাআল্লাহ্ আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্যই মিলিত হবো, আমি আল্লাহর নিকট আমাদের ও
পৃষ্ঠা:৩২
তোমাদের জন্য নিরাপত্তা কামনা করছি।” (মুসলিম) (অর্থাৎ আজাব থেকে নিরাপত্তা)
৩। কবরের উপরে বসা ও তার দিক হয়ে নামায পড়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কবরে তোমরা বসো না ও তার দিক হয়ে নামায আদায় করো না।” (মুসলিম)
৪। কবরস্থানে কোরআন মাজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তোমরা তোমাদের ঘর-বাড়ী কে কবরস্থান বানিয়ে নিও না, কেননা যে ঘরে সূরা বাকারা পড়া হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে।” (মুসলিম) উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, কবরস্থান কোরআন তিলাওয়াতের স্থান নয়, পক্ষান্তরে বাড়ীতে কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবা থেকে কোন প্রমাণ নেই যে, তাঁরা মৃতদের জন্য কোরআন পড়েছেন বরং তাঁরা মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যখন মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন, তার নিকট দাঁড়িয়ে বলতেন: “তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার সুদৃঢ়
পৃষ্ঠা:৩৩
হওয়ার জন্য দোয়া কর কেননা এখন সে জিজ্ঞাসিত হবে।” (হাকেম)
৫। কবরে বা মাজারে পুষ্পমালা (ফুল) অর্পণ করা যাবে না, কেননা তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ করেননি, বরং তা খৃষ্টানদের অনুকরণ, পক্ষান্তরে আমরা যদি উক্ত পুষ্পোস্তবকের মূল্য ফকীর- মিসকীনকে দেই তবে তাতে মৃত ব্যক্তি ও ফকীর-মিসকীন উপকৃত হবে।
৬। কবর পাকা প্লাষ্টার, ও পেইন্ট, উঁচু করা এবং কবরে নির্মাণ কার্য করা নিষেধ কেননা হাদীসে আছেঃ “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কবরে নির্মাণ কাজ ও প্লাষ্টার করতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম)
৭। প্রিয় মুসলিম ভাই মৃত ব্যক্তির নিকট দোয়া কামনা ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা থেকে সতর্ক থাকুন, কেননা তা বড় শিরক। মৃতগণ কোন কিছুর সামর্থ্য রাখে না বরং এক আল্লাহকেই ডাকুন, তিনিই সর্ব শক্তিমান ও দোয়া কবুলকারী।
পৃষ্ঠা:৩৪
কবরে সিজদা ও ত্বয়াফ করা
৩৪। প্রশ্নঃ কবরে সিজদা ও সেখানে জবাই করার বিধান কি?
৩৪। উত্তরঃ কবরে সিজদা ও জবাই করা জাহেলী যুগের মূর্তিপুজা তুল্য এবং বড় শিরক, কেননা সিজদা ও জবাই করা ইবাদত আর ইবাদত এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো জন্য হতে পারে না, যে ব্যক্তি তা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করল সে মুশরিক। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شريك له وبذلكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ) অর্থঃ “বল, নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী- হজ্জ, আমার জীবন আমার মৃত্যু, সমস্ত জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত, তাঁর কোন শরীক নেই, এরই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলমান।” (আনয়াম: ১৬২ ১৬৩) আল্লাহ্ তায়ালা আরো বলেনঃ إلا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَالْحَرْ )
পৃষ্ঠা:৩৫
অর্থঃ “আমি অবশ্যই তোমাকে (হাউজে) কাওসার দান করেছি, সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর এবং জবাই কর।” (কাওসার: ১-২) এছাড়াও বহু আয়াত রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, সিজদা ও জবাই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত আর তা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে করা বড় শিরক।
৩৫। প্রশ্নঃ ওলীদের কবরের চারিপার্শ্বে ত্বয়াফ করার বিধান কি? ওলীদের উদ্দেশ্যে জবাই অথবা মানত করার বিধান কি? ইসলামের দৃষ্টিতে ওলী কে আর জীবিত বা মৃত ওলীদের নিকট দোয়া প্রার্থনা কি জায়েয?
৩৫। উত্তরঃ মৃত ওলীদের উদ্দেশ্যে জবাই করা বা মানত করা বড় শিরক। আর ওলী বলা হয়ঃ যে ব্যক্তি অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর বন্ধুত্ব লাভ করেছে, অতঃপর শরীয়তের পক্ষ থেকে যা সে আদিষ্ট তা আঞ্জাম দেয় এবং যা থেকে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকে, যদিও তার কোন কেরামতী প্রকাশ পায়নি, সে ওলীর অন্তর্ভুক্ত। ওলীদের বা অন্যদের নিকট থেকে মৃত্যুর পরে দোয়া প্রার্থনা জায়েজ নয়, জীবিত সৎ ব্যক্তিদের নিকট দোয়া চাওয়া জায়েয। কবরের চতুর্পার্শ্বে ত্বয়াফ করা জায়েয নয় বরং তা একমাত্র কা’বা শরীফের জন্যই। কেউ যদি
পৃ্ষ্ঠা ৩৬ থেকে ৩৯
পৃষ্ঠা:৩৬
কবরবাসীর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ত্বয়াফ করে তবে তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি উক্ত ত্বওয়াফ দ্বারা কেউ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য করে তবে তা হবে জঘন্যতম বিদয়াত, কেননা কবর ত্বওয়াফের জন্য নয়, না সেখানে নামায আদায় করা যাবে যদিও তা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়।
আল্লাহর পথে দাওয়াতের বিধান
৩৬। প্রশ্নঃ আল্লাহর পথে দাওয়াত এবং ইসলামের জন্য কাজ করার বিধান কি?
৩৬। উত্তরঃ আল্লাহর পথে দাওয়াত প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব, কেননা প্রত্যেককেই আল্লাহ্ কোরআন ও হাদীসের তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কর্তৃক উত্তরসূরী বানিয়েছেন। আর প্রত্যেক মুসলমানই আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার ও তার আনুসঙ্গিক কর্ম আঞ্জাম দেয়ার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশে ব্যাপক ভাবে জড়িত। আল্লাহ্ তায়ালা আদেশ করেন: ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ )
পৃষ্ঠা:৩৭
অর্থঃ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে ওহী বা জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে এবং সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান কর।” (নাহাল: ১২৫) আল্লাহর বাণীঃ وَجَاهِدُوا فِي اللَّهَ حَقَّ جَهَادِهِ) অর্থঃ “তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত।” (সূরা হাজ্জ ৪ ৭৮) অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সার্বিক ভাবে জিহাদে অংশ নেয়া যেন কোন সমর্থবান ব্যক্তি তার কোন অংশ বাদ না রাখে। বিশেষ করে বর্তমান যুগে ইসলামের কাজ করা, আল্লাহর পথে দাওয়াত ও তাঁর পথে জিহাদ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে বরং প্রত্যেক মুসলমানের ঘাড়ে তা আবশ্যকীয় ভাবে চেপে গেছে। অতএব, এর থেকে বিমূখ ব্যক্তি বা অলসতাকারী আল্লাহর নিকট পাপী-গুনাহগার বলে বিবেচিত হবে।
৩৭। প্রশ্নঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর কবর বা অন্য নাবী এবং সৎ ব্যক্তিদের কবর স্পর্শ করা এমনিভাবে মাকামে ইব্রাহীম, কাবা ঘরের দেয়াল-গেলাফ এবং দরজা স্পর্শ করার বিধান কি?
পৃষ্ঠা:৩৮
৩৮। উত্তরঃ কবর স্পর্শ করার ব্যাপারে আবুল আব্বাস রাহেমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন: উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত, যে ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর কবর বা অন্য কোন নাবী বা সৎ ব্যক্তিদের কবর যিয়ারত করবে সে যেন উক্ত কবর স্পর্শ ও চুম্বন না দেয়। দুনিয়াতে জড় পদার্থের মধ্যে হাজারে আসওয়াদ (কাল পাথর) ব্যতীত কোন বস্তু চুম্বন দেয়া বৈধ নয়। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু হাজারে আসওয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলেন: “আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, ক্ষতিও করতে পারবে না উপকারও করতে পারবে না, অতএব, আমি যদি রাসূলুল্লাহকে চুম্বন দিতে না দেখতাম তবে আমি চুম্বন দিতাম না।” আর চুম্বন দেয়া ও স্পর্শ করা শুধুমাত্র বায়তুল্লাহর (কাবা শরীফের) কোণের জন্য খাস অতএব আল্লাহর ঘরের সাথে সৃষ্টি জীবের ঘরের তুলনা করা যাবে না। ইমাম গাযযালী রাহেমাহুল্লাহ্ বলেনঃ “কবর স্পর্শ করা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অভ্যাস।”
পৃষ্ঠা:৩৯
মাকামে ইব্রাহীমের ব্যাপারে হযরত কাতাদা বলেনঃ “তারা মাকামে ইব্রাহীমের নিকট নামাযের জন্য আদিষ্ট তা স্পর্শ করার জন্য আদিষ্ট নয়।” ইমাম নবভী বলেনঃ “মাকামে ইব্রাহীম চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে না, কেননা তা বিদয়াত।” কাবা ঘরের অন্যান্য অংশ সম্পর্কে আবুল আব্বাস বর্ণনা করেনঃ ইমাম চতুষ্ঠয় ও অন্যান্য ইমামদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন দ্বীমত নেই যে, রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ ও হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন ও স্পর্শ করা ব্যতীত অন্য দুই কোণ এবং কাবা শরীফের অন্য অংশ চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ ব্যতীত আর কোন কিছু স্পর্শ করেননি। অতএব, যদি উক্ত দুই কোণ ব্যতীত কাবার অন্য কোন অংশ স্পর্শ ও চুম্বন জায়েয না হয় অথচ তা হলো মূল অংশ তবে কাবা শরীফের গেলাফ, দরজা ও মক্কা-মদীনা মসজিদের দরজা সমূহ স্পর্শ ও চুম্বন দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
সমাপ্ত