Skip to content

সিহাহ সিত্তার হাদীসে কুদসী

পৃষ্ঠা ১ থেকে ১৫

পৃষ্ঠা-১

হাদীস শাস্ত্রের কথা কুরআন হাদীস এবং হাদীসে কুদসী:কুরআন এবং হাদীসের পার্থক্য ও পৃথক মর্যাদা সুস্পষ্ট। হাদীসের মধ্যে আবার এক ধরনের হাদীস ‘কুদ্‌সী হাদীস’ বলে পরিচিত। সাধারণ ‘হাদীসে নববী’ এবং ‘হাদীসে কুদ্‌সী’র মধ্যে খানিকটা পার্থক্য করা হয়। এ পার্থক্যটা অবশ্য মর্যাদাগত নয়, শ্রেণীগত।

আল কুরআন:প্রথমেই আল কুরআন এবং হাদীসের মধ্যকার পার্থক্য সুস্পষ্ট থাকা দরকার। আল কুরআন হলো, বিশ্বজগতের মালিক মহান আল্লাহর প্রত্যক্ষ কালাম। হুবহু তাঁর নিজের বাণী। এ কালাম জিব্রীল আমীনের মাধ্যমে মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে। এর প্রতিটি অক্ষর আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ। এর একটি অক্ষর পর্যন্ত রদবদল করবার অধিকার স্বয়ং রাসূলেরও ছিলনা। সন্দেহাতীত পদ্ধতিতে কুরআনকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ নিজেই কুরআনকে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

এ মহান কালামের প্রতিটি রাণী সত্য ও অকাট্য। এ কালাম যে আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অনুমাত্র অবকাশ নেই।

পৃষ্ঠা-২

এতে প্রদত্ত তত্ত্ব ও তথ্যের মধ্যেও কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। এ কালাম এক চিরন্তন মু’জিযা। কোনো মানুষের সাধ্য নেই এ কালামের সাথে চ্যালেঞ্জ করবার। অনুরূপ একটি কুরআন বা তার অংশ পর্যন্ত রচনা করার সাধ্য মানুষের নেই।

হাদীস

মানুষের হিদায়াত বা পথ প্রদর্শণের জন্যে আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল নিযুক্ত করেন। আর হিদায়াতের গাইড বুক হিসেবে তাঁর প্রতি নাযিল করেন আল কুরআন। কুরআন মানুষকে পড়ে শুনানো এবং বুঝিয়ে দেবার দায়িত্বও তিনি রাসূলের উপর অর্পণ করেন। সুতরাং কুরআন বুঝিয়ে দেবার জন্যে কুরআনের ব্যাখ্যা দান করাও ছিলো রাসূলের উপর আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব। আর ব্যাখ্যা তিনি নিজের মনগড়াভাবে দেননি। বরং সেটাও দিয়েছেন আল্লাহর নির্দেশেরই আলোকে। এ কারণে রাসূলের উপর কুরআন ছাড়াও আরেক ধরণের অহী নাযিল হয়েছে।

মানুষ কিভাবে কুরআন অনুযায়ী জীবন যাপন করবে? কিভাবে সে তার ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক ও বিভাগ পরিচালনা করবে? আর কিভাবেই বা সে কুরআনের আদর্শে নৈতিক কাঠামো এবং সমাজ কাঠামো গড়ার চেষ্টা সাধনা করবে। এসকল বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাল্লাম নির্দেশনা দান করে গেছেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় এসব বিষয়ে কর্মনীতি কর্মপন্থা অবলম্বন করে বাস্তবে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। জানিয়ে দিয়ে গেছেন। রাসূল হিসেবে আল্লাহর দীন অনুযায়ী জীবন যাপন করবার জন্যে তিনি কুরআন ছাড়াও যে জ্ঞান দান করে গেছেন, যেসব কর্মনীতি কর্মপন্থা জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন এবং বাস্তবে যেসব শিক্ষা প্রদান করে গেছেন, তাই হলো সুন্নাতে রাসূল বা হাদীসে রাসূল। কুরআনে অবশ্য এই সুন্নাতে রাসূল এবং হাদীসে রাসূলকে ‘হিকমাহ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই হিকমাহও যে আল্লাহর নিকট থেকেই নাযিল হয়েছে, সে কথাও স্পষ্টভাবেই বলে দেয়া হয়েছেঃ و أَنْزَلَ الله فَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَفَلْسَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ الله عليل عظيما – (الشام ( ١١٣)

“(হে নবী!) আর আল্লাহ তোমার প্রতি আল কিতাব এবংকিমাহ নাযিল করেছেন। তাছাড়া তুমি যা জানতেনা, তা তোমাকে শিাঙ্গয়েছেন। আসলে তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বিরাট।” [সূরা ৪ আননিসা: ১১৩।

পৃষ্ঠা-৩

তাছাড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলে গেছেনঃ الا إلى أوبيت القرآنُ وَمِثْلَهُ مَقه – (ابوداؤد ، ابن ماجه) “জেনে রাখো, আমাকে আল কুরআন দেয়া হয়েছে আর সেই সাথে দেয়া হয়েছে অনুরূপ আরেকটি জিনিস।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ।

এই ‘হিকমাহ’ এবং ‘কুরআনের অনুরূপ’ জিনিসটা কি? এ যে কুরআন থেকে পৃথক জিনিস, তাতো উপরোক্ত আয়াত এবং হাদীসটি থেকে সুস্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে। মূলত এই হলো সুন্নাতে রাসূল বা হাদীসে রাসূল।১ এই সুন্নাহ এবং হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা, কাজ, সমর্থন ও অনুমোদনের মাধ্যমে উম্মাহকে জানিয়ে, বুঝিয়ে এবং শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, যা আমাদের কাছে এখন সুসংরক্ষিত হয়ে আছে।

কুরআনের অহী এবং হাদীসের অহী: একটু আগেই আমরা স্পষ্টভাবে বলে এসেছি, কুরআন যে সরাসরি মহান আল্লাহর বাণী সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কুরআন আল্লাহ তা’আলার প্রত্যক্ষ অহী। অক্ষরে অক্ষরে তা আল্লাহর অহী। তার ভাষাও আল্লাহর এবং বক্তব্যও আল্লাহর। আর হাদীস। হাঁ, হাদীসও নিঃসন্দেহে অহী। তবে কুরআনের অহীর মতো নয়। এই দুই ধরনের অহীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

কুরআনের অহী পুরোটাই আল্লাহ তা’আলা জিব্রীল আমীনের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। তিনি অক্ষরে অক্ষরে তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুনিয়েছেন। নবী করীম তা অক্ষরে অক্ষরে মুখস্ত করে নিয়েছেন। কুরআনকে হুবহু ধারণ করবার জন্যে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের হৃদয়কে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং তাঁর হৃদয়ে কুরআনকে খোদাই করে দিয়েছেন। জিব্রীলের কাছ থেকে শুনবার পর তিনি তা সাহাবীদের শুনাতেন এবং লিপিবদ্ধ করে নিতেন। সাহাবীরাও সাথে সাথে মুখস্ত করে নিতেন। এ অহীর একটি অক্ষরও পরিবর্তন করার অধিকার নবীর ছিলনা। এ অহীই নামাযে তিলাওয়াত করতে হয়। এ অহীকেই বলা হয় ‘অহীয়ে মাতলু।’ হাদীসের অহীর ধরন এর চাইতে ভিন্নতর। হাদীসের অহী শুধু কেবল জিব্রীলের মাধ্যমেই আসেনি। বরং সেই সাথে স্বপ্ন, ইলকা, ইলহাম অর্থাৎ ইংগিত

পৃষ্ঠা-৪

প্রাপ্তি ও মনের মধ্যে অনুভূতি সৃষ্টির মাধ্যমেও লাভ করতেন। আসলে এ পদ্ধতিতে বিষয়বস্তু অহী করা হতো। ভাষা নয়, তিনি ভাব লাভ করতেন। আর এভাবটিকে তিনি তাঁর নিজের ভাষায় ব্যক্ত করতেন। এ অধিকার তাঁকে দেয়া হয়েছিল। এরূপ অহীকে ‘অহীয়ে গায়রে মাতলু’ বলা হয়। অবশ্য কুরআনের আলোকে রাসূলের ইজতিহাদও হাদীস। ‘মাতলু’ মানে যা রাসূলকে পাঠ করে শুনানো হয়েছে এবং তিনিও হুবহু পাঠ করতে বাধ্য ছিলেন। আর গায়রে মাল্লু মানে-যা পাঠ করে শুনানো হয়নি এবং তিনিই হুবহু পাঠ করে শুনাতে বাধ্য ছিলেননা। হাদীসে কুদসী এবার দেখা যাক হাদীসে কুদসী কাকে বলে। কুদসী ৮-১০ কুদস শব্দ থেকে গঠিত হয়েছে। এ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলোঃ পূত, পবিত্রতা, সাধুতা ইত্যাদি। বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ মিল্টন কাওয়ান তাঁর ‘আল মু’জাম আল লুগাহ আল আরাবিয়া আল মু’আসিরা’-তে কুদ্‌সী ৫১। শব্দের অর্থ লিখেছেন : Holy. Sacred, Saintly, Saint. আল্লামা আবদুর রউফ আল মানাভী তার ‘আল ইত্তেহাফাতুস সুন্নিয়া ফীল ‘হাদীসিল কুদসিয়া’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ القدس هو الطهر، والأرض المقدسة : المطهرة وبيت المقدس منها معروف و تقدس الله : تنزه ، وهو القروس

“কুদ্‌স মানে পূত পবিত্রতা। ‘আরদুল মুকাদ্দাসা’ মানে ‘পবিত্র ভূমি’। বাইতুল মুকাদ্দাস কথাটা সকলের কাছেই পরিচিত। এর মানে ‘পবিত্র ঘর’। আল্লাহ পূত, পবিত্র এবং ত্রুটিমুক্ত বলে তাঁর নাম কুদ্দুস (অতিশয় পূত ও পবিত্র)।” পারিভাষিক দিক থেকে সেইসব হাদীসকে হাদীসে কুদসী বলা হয় যেগুলো বর্ণনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালাকে সম্পর্কিত করা হয়েছে। এই ধরনের হাদীস বর্ণনার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন’ ‘কিংবা জিব্রীল বলে গেছেন’, অথবা ‘জিব্রীলের মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন’, বা ‘আমার প্রভু বলেছেন।’ এ হাদীসগুলোকে হাদীসে কুদসী বলার কারণ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদীসগুলোর বক্তব্য সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলকা, ইলহাম ব্য স্বপ্নযোগে লাভ করেছেন, অথবা জিব্রীল আমীনের মাধ্যমে লাভ করেছেন এবং তিনি নিজের ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন। কুরআনের ভাষা ও বক্তব্য দুটোই আল্লাহর। পক্ষান্তরে হাদীসে কুদসীর বক্তব্য আল্লাহর আর ভাষা হলো সূলের। এসব হাদীসে তিনি নিজের ভাষায় আল্লাহর বক্তব্য বর্ণনা করতেন।

পৃষ্ঠা-৫

আল্লামা মান্যভী তাঁর উক্ত গ্রন্থে হাদীসে কুদসীর সংজ্ঞা সম্পর্কে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারীর নিম্নোক্ত বক্তব্যটিও উল্লেখ করেছেনঃ “হাদীসে কুদসী হলো সেইসব হাদীস, যেগুলো বর্ণনা করেছেন রাবীদের শিরোমনি, বিশ্বস্তদের পূর্ণিয়ার চাঁদ নবী আকরাম (তার প্রতি বর্ষিত হোক চিরশান্তি আর অনুগ্রহ) তাঁর প্রভু মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে, কখনো জিব্রীলের মাধ্যমে, কখনো অহীর মাধ্যমে, কখনো ‘ইলহামের মাধ্যমে এবং কখনো স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত হয়ে। আর তিনি এগুলো বর্ণনা করেছেন নিজের ভাষায়, নিজের কথায়, যেভাবে ইচ্ছে বাক্য রচনা করে।”

এখন এ কথাটি পরিষ্কার হলো যে, অন্যসকল হাদীস আর হাদীসে কুদ্‌স্সীর মধ্যকার পার্থক্য হলো, হাদীসে কুদসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন। এর বক্তব্য তিনি আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেছেন। অবশ্য বর্ণনা করেছেন নিজের ভাষায়। মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করার কারণেই এসব হাদীসকে হাদীসে কুদসী বলা হয়। কারণ আল্লাহর একটি নাম ‘কুদ্দুস।’ কুদ্দুস থেকে কুদসী। আবার কেউ কেউ হাদীসে কুদ্‌সীকে ‘হাদীসে ইলাহী’ এবং ‘হাদীসে রব্বানী’ও বলেছেন। এসব নামে হাদীসগুলোকে মূলত আল্লাহর সাথেই সম্পর্কিত করা হয়েছে।

কুরআন ও হাদীসে কুদসী: হাদীসে কুদসী যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহীর মাধ্যমে লাভ করেছেন, যদিও রাসূল তা আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন, তবু হাদীসে কুদসী কুরআন বা কুরআনের সমতুল্য নয়। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কথা হলো, হাদীসে কুদসীও এক প্রকার হাদীসই মাত্র, হাদীসের উর্ধ্বে নয়। যেহেতু হাদীসে কুদসীতে আল্লাহর বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে, সে কারণে কেউ যদি এরূপ হাদীসকে কুরআনের সমতুল্য মনে করেন, তবে তিনি মারাত্মক ভুল করবেন। কুরআন এবং হাদীসে কুদসীর মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যসমূহ বিদ্যমানঃ ১. অক্ষরে অক্ষরে কুরআনের ভাষা এবং বক্তব্য দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। পক্ষান্তরে হাদীসে কুদসীর বক্তব্য বা বিষয়বস্তুই কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করেছেন, আর ভাষ্য দিয়েছেন রাসূল নিজে। ২. কুরআন কেবলমাত্র জিব্রীল আমীনের মাধ্যমে নাযিল হয়েছে। অথচ হাদীসে কুদসী ইলহাম এবং স্বপ্নযোগেও রাসূল লাভ করেছেন।

পৃষ্ঠা-৬

৩. কুরআন লওহে মাহফুযে সংরক্ষিত এবং সেখান থেকেই নাযিল হয়েছে। কিন্তু হাদীসে কুদসী লওহে মাহফুজে রক্ষিত নয়।

৪. কুরআন পাঠ করা ইবাদত। প্রতিটি অক্ষর তিলাওয়াত করার জন্যে দশটি সওয়াব পাওয়া যায়। হাদীসে কুদসীর তিলাওয়াত ইবাদত নয়।

৫. কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া নামায হয়না। অথচ হাদীসে কুদসীর অবস্থা তা নয়।

৬. কুরআন রাসূলের উপর অবতীর্ণ আল্লাহর এক আশ্চর্য মু’জিযা। এর মতো বাণী তৈরী করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু হাদীসে কুদসীর অবস্থা তা নয়।

৭. কুরআন আল্লাহর ভাষা ও বাণী। পক্ষান্তরে হাদীসে কুদসী মানুষের (নবীর) তৈরী ভাষা ও কথা।

৮. কুরআন অমান্যকারী কাফির হয়ে যায়। কিন্তু হাদীসে কুদসী অমান্যকারীকে কাফির বলা যায় না।

৯. কুরআন নাপাক অবস্থায় স্পর্শ করা যায় না। কিন্তু হাদীসে কুদসীর ক্ষেত্রে এরূপ বিধান নেই।

১০. কুরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু হাদীসে কুদসী শুধু কেবল মানুষের বর্ণনার ভিত্তিতেই সংরক্ষিত হয়েছে।

এ হাদীসে কুদসীর বিশেষত্ব: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস ভান্ডারের মধ্যে হাদীসে কুদসীর একটি আলাদা মেজাজ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ হাদীস পাঠ করার সময় সরাসরি মহামনিব আল্লাহর সাথে মনের সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। এ হাদীস পাঠকালে আল্লাহর পবিত্র জগতের সৌরভ ও শুভ্রতা অনুভব করা যায়। হাদীসে কুদসী অধ্যয়নকালে তাই মন আল্লাহর দিকে দ্রুত ধাবিত হয়। আল্লাহর নিজস্ব পরিবেশের একটা আমেজ যেনো এ হাদীসগুলোতে ছড়িয়ে আছে। তাঁর মহা দাপট, তাঁর মহানুভবতা, দয়া, ক্ষমা এবং মহান গুণাবলীর পরিচয় হাদীসে কুদসীতে মিশে আছে। হাদীসে কুদসী পাঠে বান্দাহর মধ্যেও তীব্র পূত পবিত্রতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয়, মহান আল্লাহর রংগে রঞ্জিত হবার আকাংখা।

পৃষ্ঠা-৭

সুন্নাতে রাসূল ও হাদীসে রাসূলের গুরুত্ব হাদীসের গুরুত্ব:আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে মানুষের জীবন বিধান হিসেবে প্রেরণ করেছেন ‘ইসলাম।’ যে অহীর মাধ্যমে ইসলাম প্রেরিত হয়েছে, তা হলো আল কুরআন। আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল কুরআনের প্রচারক এবং একমাত্র ব্যাখ্যাতা নিয়োগ করেন। সুতরাং আল কুরআন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত আল কুরআনের ব্যাখ্যাই হচ্ছে দ্বীন ইসলামের মূল ভিত্তি। আর তাঁর প্রদত্ত এ ব্যাখ্যার নামই হলো হাদীস বা সুন্নাহ।

সুতরাং হাদীস বা সুন্নাহকে বাদ দিয়ে ইসলামকে কল্পনাই করা যায় না। হাদ এবং দেয়াল ছাড়া শুধু পিলারকে যেমন অট্টালিকা বলা যায় না, তেমনি হাদীস ও সুন্নাহ ছাড়া কেবল মাত্র কুরআন দিয়ে ইসলামের অট্টালিকা পূর্ণাংগ হয়না। যেমন ধরুন, কুরআন পাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন নামায কত রাকায়াত পড়তে হবে এবং নামায কিভাবে পড়তে হবে, তা কুরআন থেকে জানা যায়না। নামায পড়ার এসব নিয়ম কানুন হাদীস থেকেই জানা যায়। এমনি করে কুরআন পাকে এমন অসংখ্য আয়াত আছে, হাদীস ছাড়া যেগুলোর বাস্তব রূপ এবং ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। হাদীস রাসূলের মনগড়া বক্তব্য নয়। কুরআন ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকার অহী তাঁর প্রতি নাযিল হতো।১ মূলত সেগুলোই হাদীস বা সুন্নায় প্রতিফলিত হয়েছে। কুরআন পাকে পরিষ্কার বলা হয়েছেঃوَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى إِن هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى – (النجم : ٣ – ٤)

“তিনি (মুহাম্মদ রাসূল) নিজের ইচ্ছামতো কোনো কথা বলেননা। তিনি যা কিছু বলেন সবই আল্লাহর অহী। “২ এ জন্যেই হাদীসকে বাদ দিয়ে ইসলামের অট্টালিকা নির্মিত হতে পারেনা। হাদীস ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংগ। কুরআন এবং হাদীস উভয়টাই

পৃষ্ঠা-৮

ইসলামী জীবন ব্যবস্থার ভিত। রাসূল প্রদত্ত কুরআন এবং হাদীস উভয়টাকেই সমানভাবে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেনঃ وما أتاكم الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ مَنْهُ فَانتَهُوا – (الحفرة (٢) “রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তোমরা তা গ্রহণ করো। আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন, তা তোমরা পরিত্যাগ করো।”৩ হাদীস ও সুন্নাতের গুরুত্ব সম্পর্কে স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেনঃكرات فيكُمْ أَمْرَيْنِ لَن تَضِلُّوا مَا تَتَكتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّهُ رَسُؤْلِم .ر مؤطا امام مالله – كبر العمال – مكوة ) “তোমাদের কাছে আমি দুটো বিষয় রেখে গেলাম-আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ। এ দুটোকে আঁকড়ে ধরে থাকলে-তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। “৪

সুন্নাহ ইসলামী শরীয়ার দ্বিতীয় উৎস: এ যাবতকার আলোচনায় হাদীসের গুরুত্ব অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। একথা সকলেরই জানা যে, ইসলামের মূল উৎস দুটিঃ পয়লা নম্বর হলো আল কুরআন এবং দ্বিতীয়ত, সূন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথাও আমাদের সকলেরই জানা আছে যে, রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস ভান্ডারের মধ্যেই সন্নিবেশিত রয়েছে তাঁর সুন্নাহ। হাদীসে রাসূল থেকেই জানা যায় সূন্নাতে রাসূল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো স্পষ্টই বলে গেছেন যে, কুরআন এবং সুন্নাতে রাসূলকে আঁকড়ে ধরতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা রাসূলকে একথাও জানিয়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন যেঃ قُلْ إِن كُنتُمْ تَحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحببكم الله – ( آل عمران : ٣١) “হে নবী, বলে দাওঃ তোমরা যদি সত্যি আল্লাহকে ভালবাসে।, তবে আমাকে অনুসরণ করো, তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভাল বাসবেন।” (আলে ইমরান: ৩১)

পৃষ্ঠা-৯

রাসূলের অনুসরণ করতে হলে রাসূলের দিয়ে যাওয়া কুরআনকে গ্রহণ করার সাথে সাথে তাঁর সুন্নাহকেও গ্রহণ করতে হবে। কারণ সুন্নাহ বা হাদীস তো কুরআনেরই ব্যাখ্যাঃ إِنَّا أَنْزَلْنَا الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لَهُمْ مَا نُزَلَ إِلَيْهِمْ – (النحل : 44) “আমি তোমার কাছে যিক্র (কুরআন) নাযিল করেছি, যেনো তুমি তাদের প্রতি যা নাযিল করা হলো, তা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দাও।” (আন নহল : ৪৪) তাছাড়া কুরআনের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট করেই বলে দেয়া হয়েছে যেঃأَطِيعُوا اللهَ وَالرَّسُولَ . “আল্লাহর আনুগত্য করো আর রাসূলের।” (আলে ইমরানঃ ৩২) فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ . “যদি এ আনুগত্য পরিহার করো, তবে যেনে রাখো আল্লাহ এসব কাফিরকে পছন্দ করেন না।” (আলে ইমরানঃ ৩২) আসলে রাসূলের কোনো ফায়সালা অমান্য করবার কোনো অধিকারই কোনো মুমিনের নেইঃ وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَعَى اللهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الخيرة من أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَكُن مَنْ مَثَلاً مُّبِينًا . ( الاحزاب (٣٩) “যখন আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ে ফায়সালা করে দেন, তখন সেই ব্যাপারে কোনো মুমিন পুরুষ বা নারীর নিজস্ব (মতের) কোনো এখতিয়ার থাকে না। আর যে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা অমান্য করবে সে সুস্পষ্টভাবে বিপথগামী হবে।” (আল আহযাব: ২৬) রাসূলের ফায়সালা অমান্য করা যাবেনা, ব্যাপার কেবল এতটুকুই নয়, বরং রাসূলকেই ফায়সালাকারী মানতে হবেঃ الا وركلة لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُعَلِّمُونَ فِيمَا هَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُوا فِي أنفسهِمْ حَرَجًا مِمَّا فَهَيْمَ وَسَلِّمُوا كلهما – (النساء : ٢٥) “তোমার প্রভুর শপথ, তারা কখনো মুমিন হতে পারবেনা যতোক্ষণ না তারা তাদের বিরোধ বিবাদে তোমাকে সালিশ মানবে। শুধু তাই নয়, তুমি যে

পৃষ্ঠা-১০

ফায়সালা দেবে, তাও নিঃসংকোচে গ্রহণ করবে এবং প্রশান্ত মনে মেনে নেবে।” (আননিসা: ৬৫) বাস, রাসূলের আনুগত্য করা, তাঁর সিদ্ধান্ত ও ফায়সালা গ্রহণ করা এবং রাসূলের ইত্তেবা ও অনুসরণ করার অপরিহার্যতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো। কিন্তু কিভাবে? রাসূলকে মানা এবং তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করার পথ কিং এর একমাত্র পথই হলো কুরআনের সাথে সাথে হাদীস পড়তে হবে এবং হাদীসের আলোকে সুন্নাতে রাসূলকে জানতে হবে, মাতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। একজন মুসলিমকে যেমন কুরআন মানতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে, তেমনি কুরআনের পরেই তাকে সত্যিকার মুসলিম হবার জন্যে হাদীস জানতে হবে এবং মানতে হবে।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম বলেছেন, সুন্নাতে রাসূল হলোঃ

১. কুরআনে যা আছে তাই, কিংবা

২. কুরআনেরই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অথবা

৩. কুরআনেই নেই, অথচ মুমিনদের কর্তব্য এমন জিনিস।

এ কারণেই ইসলামী শরীয়ার উৎস হিসেবে হাদীস বা সুন্নাতে রাসূলকে অবশ্যি গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহর ঘোষণা পরিষ্কারঃ وَمَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَل أمام الله – (النساء : (۲۹)

“যে রাসূলের আনুগত্য করলো, সে মূলত আল্লাহরই আনুগত্য করলো।” (আননিসা: ৬৯)

হাদীস কিভাবে সংরক্ষিত হয়েছে?: রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা হাদীস ভান্ডার তিনটি নির্ভরযোগ্য পন্থায় হিফাযত ও সংরক্ষিত হয়ে আসছেঃ

১. উম্মতের আমল ও বাস্তব অনুসরণের মাধ্যমে।

২. লেখা, মুখস্তকরণ ও গ্রন্থাবদ্ধ করণের মাধ্যমে।

৩. শিক্ষাদান ও শিক্ষগ্রহণের মাধ্যমে।

এই তিনটি পন্থায় রাসূলে করীমের সমস্ত হাদীস হিফাযত ও সংরক্ষিত হয়েছে। সমস্ত হাদীস সংকলিত ও সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ার পর বর্ণনা ও বিষয়বস্তুর ব্যাপক পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রকৃত হাদীসের সংগে যেসব ভুল তথ্য ও মনগড়া কথা ঢুকে পড়েছিল সেগুলোকে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে।

পৃষ্ঠা-১১

হাদীস শিক্ষা করা ও প্রচারের নির্দেশ: রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদীস শিখার জন্যে এবং তা অপর লোকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্যে নির্দেশ দিয়ে গেছেন এবং উৎসাহিত করে গেছেন। তিনি বলেছেনঃ تَقْرَ اللهُ امْرَةِ سَمِعَ مِنَّا حَدِيثًا فَحَفِظَهُ حَتَّى يُبَلِّغَهُ غَيْرَةً – “ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ চিরসবুজ ও চিরসুখে তরতাজা করে রাখবেন যে আমার নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করলো, তা সংরক্ষণ করলো এবং তা অপরের নিকট পৌঁছে দিলো”।

হাদীসে রাসূল ও ইসলামী আন্দোলন: আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামী বিপ্লব সংঘটনের জন্যে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। আল কুরআনের মাধ্যমে ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার ব্লুপ্রিন্ট তাঁকে প্রদান করা হয়। সে অনুযায়ী ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্নাংগ বিপ্লব সাধনের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা তাঁকে প্রদান করেন।১ তিনি তাঁর তেইশ বছরের নবুয়্যতী যিন্দেগীতে সেই ব্লুপ্রিন্ট পূর্ণাংগরূপে বাস্তবায়ন করেন। ব্যক্তিগত দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে তিনি তাঁর এ মহান দায়িত্ব পালনের সূচনা করেন। অতঃপর তিরস্কার, বিরোধিতা, নির্যাতনের মোকাবেলা করে ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামের রক্তরঞ্জিত পথ বেয়ে এ মহান বিপ্লবকে সফলতার রূপ দেন। সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর এ পূর্ণাংগ বিপ্লবী প্রচেষ্টার কুরআনী নাম জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’। যার বাংলা নাম ‘ইসলামী আন্দোলন’।

এই মহান বিপ্লবী নেতাকে পুরোপুরি জানতে হলে, কুরআনী ব্লুপ্রিন্টকে তিনি কোন কোন পন্থা ও পদ্ধতিতে তিনি বাস্তবায়িত করেছিলেন বিপ্লবের সেইসব অনিবার্য কার্যবিবরণী জানতে হলে, তাঁর সাহায্যকারী সংগী সাথী বিপ্লবী কাফেলাকে জানতে হলে, সেই কাফেলার সৈনিকদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে তিনি কোন্সব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের পরিস্ফুটন ঘটিয়েছিলেন আর গোটা বিপ্লবকে কোন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পথে পরিচালিত করেছিলেন, সেইসব অমূল্য দলীল প্রমাণ সংগ্রহের জন্যে অবশ্যি গভীরভাবে হাদীস অধ্যয়ন প্রয়োজন।

পৃষ্ঠা-১২

হাদীসের অধ্যয়ন ছাড়া সেই বিপ্লবকে জানা সম্ভব নয়। আর সে বিপ্লবকে না জেনে অনুরূপ ইসলামী বিপ্লব সাধনের কথা কল্পনাও করা যেতে পারেনা। তাই এ যুগে যারাই আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদেরকে অবশ্যি বিপ্লবের ব্লুপ্রিন্ট আল কুরআন অধ্যয়নের সাথে সাথে বিপ্লবের বাস্তব রূপ হাদীসে রাসূলকেও অধ্যয়ন করতে হবে। হাদীস কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা। ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক সৈনিককে তাই কুরআনের মতো হাদীসে রাসূলকেও গ্রহণ করতে হবে বিপ্লবী জীবনের পকেট পঞ্জিকা হিসেবে।

হাদীসের পরিভাষা পরিচয়:হাদীস কাকে বলে?

‘হাদীস’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ কথা, বাণী, সংবাদ, বিষয়, অভিনব ব্যাপার ইত্যাদি। পারিভাষিক ও প্রচলিত অর্থে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ, সমর্থন, আচরণ এমনকি তাঁর দৈহিক ও মানসিক কাঠামো সংক্রান্ত বিবরণকে হাদীস বলে।১ পূর্বকালে সাহাবায়ে কিরামের কথা, কাজ ও সমর্থনকেও হাদীস বলা হতো। অবশ্য পরে উসূলে হাদীসে তাঁদের কথা, কাজ ও সমর্থনের নাম দেয়া হয়েছে ‘আসার’ )اشار( এবং ‘হাদীসে মওকূফ’ )حدیث موقو( এবং তাবেয়ীগণের কথা, কাজ ও সমর্থনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ফতোয়া’ )2 (فتوى

হাদীস ওসুন্নাহ: ‘সুন্নাত’ শব্দের অর্থ হলো কর্মপন্থা, কর্মপদ্ধতি, কর্মনীতি ও চলার পথ। উসূলে হাদীসের পরিভাষায় রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসৃত কর্মপন্থা ও কর্মনীতিকে সুন্নাহ বলা হয়।৩ প্রাচীন উলামায়ে কিরাম হাদীস এবং সুন্নাহর মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য করেননি। অতীতে মুহাদ্দিসগণ উভয় শব্দকে একই অর্থে ব্যবহার করতেন ।৪

পৃষ্ঠা-১৩

তবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য এতোটুকু যে, ‘হাদীস’ হলো রাসূলে করীমের কথা, কাজ, সমর্থন ও পরিবেশের বিবরণ আর ‘সুন্নাহ’ হলো রাসূলে করীমের অনুসৃত সার্বিক নীতি ও কর্মপন্থা। হাদীস ভান্ডারের মধ্যেই ছড়িয়ে আছে সুন্নাতে রাসূল।

হাদীসের সংজ্ঞাগত প্রকারভেদ: হাদীসসমূহকে সংজ্ঞাগত, বর্ণনাগত এবং বিষয় বস্তুগতভাবেও ভাগ করা হয়েছে। সংজ্ঞাতগতভাবে মুখ্যত হাদীস তিন প্রকার (১) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ নিঃসৃত কথা বা বানীকে ‘কওলী (৬, হাদীস বলা হয়। (২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজ, কর্মপন্থা ও বাস্তব আচরণকে ‘ফি’লী (১ হাদীস বলা হয়। (৩) আর তাঁর সমর্থন ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বিষয়গুলোকে বলা হয় ‘তাকরীরী (৬ হাদীস।

হাদীসের বর্ণনাগত প্রকারভেদ: হাদীস বিশারদগণ বর্ণনাগতভাবে হাদীসসমূহকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে ধারাবাহিকভাবে সেগুলো উল্লেখ করা গেলোঃ

খবরে মুতাওয়াতিরঃ সেসব হাদীসকে খবরে মুতাওয়াতির বলা হয়, প্রতিটি যুগেই যে হাদীসগুলোর বর্ণনাকারীদের সংখ্যা ছিলে। এতো অধিক যাদের মিথ্যাচারে মতৈক্য হওয়া স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব।

  • খবরে ওয়াহিদ: সেসব হাদীসকে খবরে ওয়াহিদ বলে, যেগুলোর বর্ণনাকারীদের সংখ্যা মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছায়নি। হাদীস বিশারদগণ এরূপ হাদীসকে তিনভাগে ভাগ করেছেনঃ

১. মশহুরঃ বর্ণনাকারী সাহাবীর পরে কোনো যুগে যে হাদীসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা তিনের কম ছিলনা।

২. আযীযঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোনো যুগেই দুই-এর কম ছিল না।

পৃষ্ঠা-১৪

৩. গরীবঃ যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোনো কোনো যুগে একে এসে পৌছেছে।

  • মারফুঃ যে হাদীসের বর্ণনাসূত্র (সনদ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে হাদীসে মারফু’ বলে।
  • মাওকৃষ্ণঃ যে হাদীসে বর্ণনা পরম্পরা (সনদ) সাহাবী পর্যন্ত এসে স্থগিত হয়ে গেছে তাকে হাদীসে মাওকৃষ্ণ বলে।
  • মাকতুঃ যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত এসে স্থগিত হয়ে গেছে তাকে হাদীসে মাক্কু বলে।
  • মুত্তাসিলঃ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যে হাদীসের সনদ বা বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন থেকেছে এবং কোনো পর্যায়ে কোনো বর্ণনাকারী উহা থাকেনি এরূপ হাদীসকে হাদীসে মুত্তাসিল বলে।

মুনকাতিঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন না থেকে মাঝখান থেকে কোনো বর্ণনাকারীর নাম উহ্য বা লুপ্ত রয়ে গেছে তাকে হাদীসে মুনকাতি বলে।

মুয়াল্লাকঃ যে হাদীসের গোটা সনদ বা প্রথম দিকের সনদ উহ্য থাকে তাকে হাদীসে মুয়াল্লাক বলে।

মু’দালঃ যে হাদীসে ধারাবাহিকভাবে দুই বা ততোর্ধ্ব বর্ণনাকারী উহ্য থাকে তাকে মু’দাল বলে।

  • মুরসালঃ যে হাদীসের সনদে তাবেয়ী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝখানে সাহাবী বর্ণনাকারীর নাম উহ্য হয়ে যায় তাকে হাদীসে মুরসাল বলে।

শাষঃ ঐ হাদীসকে শায বলে যার বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত বটে, কিন্তু হাদীসটি তার চাইতে অধিক বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিপরীত।

  • মুনকার ও মা’রফঃ কোনো দুর্বল বর্ণনাকারী যদি কোনো বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিপরীত হাদীস বর্ণনা করে, তবে দুর্বল বর্ণনাকারী হাদীসকে ‘মুনকার’ এবং বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীর হাদীসকে মা’রূফ বলে।
  • মুয়াল্লালঃ যে হাদীসের সনদে এমন সুক্ষ্ণ ত্রুটি থাকে যা কেবল হাদীস বিশারদগণই পরখ করতে পারেন।

পৃষ্ঠা-১৫

  • সহীহঃ যে হাদীসের সনদে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকে, তাকে সহীহ হাদীস বলেঃ (১) মুত্তাসিল সনদ (২) বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী (৩) স্বচ্ছ স্মরণশক্তি (৪) শাঘ নয় এবং (৫) মুয়াল্লাল নয়।

সনদ ও মতন: প্রত্যেক হাদীস সংকলনকারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরম্ভ করে তাঁর পর্যন্ত বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিক নাম উল্লেখপূর্বক প্রতিটি হাদীস লিপিবন্ধ করেছেন। সুতরাং প্রতিটি হাদীস দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েঃ (১) বর্ণনাকারীদের নামের ধারাবাহিক তালিকা। এটাকেই হাদীসের পরিভাষায় ‘সনদ’ বলা হয়। (২) দ্বিতীয়ত হাদীস অংশ। এ অংশের পারিভাষিক নাম ‘মতন’। আমাদের এ সংকলনে পূর্ণাংগ সনদ উল্লেখ না করে আমরা কেবল সাহাবী বর্ণনাকারীর নামটাই উল্লেখ করবো। কারণ, যেসব মূল গ্রন্থ থেকে আমরা এখানে হাদীস সঞ্চয়ণ করছি, সেসব মূল গ্রন্থে পূর্ণাংগ সনদ মওজুদ রয়েছে।

কয়েকজন প্রখ্যাত হাফেযে হাদীস সাহাবী

১. আবু হুরাইরা আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহুঃ মৃত্যু ৫৯ হিঃ, বয়সঃ ৭৮ বৎসর, হাদীস বর্ণনার সংখ্যা: ৫৩৭৪।

২. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুঃ মৃত্যু ৬৮হিঃ, বয়সঃ ৭১ বৎসর, হাদীস বর্ণনার সংখ্যা: ২৬৬০

৩. উন্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহাঃ মৃত্যু ৫৮ হিঃ, বয়সঃ ৬৮ বৎসর, হাদীস বর্ণনার সংখ্যাঃ ২২১০।

৪. আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুঃ ৭৩ হিঃ, বয়সঃ ৮৪ বৎসর, হাদীস বর্ণনার সংখ্যাঃ ১৬৩০।

৫. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুঃ মৃত্যু ৭৮ হিঃ, বয়সঃ ৯৪ বৎসর, হাদীস বর্ণনার সংখ্যাঃ ১৫৬০।

৬. আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুঃ মৃত্যু ৯৩ হিঃ, বয়সঃ ১০৩ বৎসর, হাদীস বর্ণনার সংখ্যা: ১২৮৬।

৭. আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহুঃ মৃত্যু ৭৪ হিঃ, বয়সঃ ৮৪ বৎসর, হাদীস বর্ণনার সংখ্যাঃ ১১৭০।১

পৃষ্ঠা ১৬ থেকে ৩০

পৃষ্ঠা-১৬

কয়েকজন খ্যাতনামা হাদীস সংকলনকারী:

১. মালিক ইবনে আনাস রঃ (৯৩-১৭৯ হিঃ)। তাঁর শেষ্ঠ অবদান ‘মুয়াত্তা’। এতে সর্বমোট ১৭০০ হাদীস সংকলিত হয়েছে।

২. আহমদ ইবনে হাম্বল রঃ (১৬৪-২৪১ হিঃ)। তাঁর অমরগ্রন্থ ‘মুসনাদে আহমদ’ নামে সুপরিচিত। ত্রিশ হাজার হাদীস সম্বলিত গ্রন্থটি চব্বিশ খন্ডে সমাপ্ত।

৩. মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈ’ল আল-বুখারী রঃ (১৯৪-২৫৬ হিঃ)। ষোল বছর অবিরাম অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি ‘সহীহ বুখারী’ সংকলন করেন। এ গ্রন্থের পূর্ণ নাম হচ্ছেঃ “আল-জামে আস-সহীহ আল মুসনাদ আলমুখতাসার মিন উমূরে রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ওয়া আইয়‍্যামিহি।” এ গ্রন্থে সর্বমোট হাদীস সংখ্যা ৯৬৮৪। কিন্তু পুনরুল্লেখ, সনদবিহীন হাদীস, মুরসাল হাদীস এবং মওকুক হাদীস বাদ দিলে মোট মারফু’ হাদীসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২৩টি।

৪. মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ নিশাপুরী রঃ (২০২-২৬১ হিঃ)। ইনি ইমাম বুখারীর অন্যতম ছাত্র। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলও তার উস্তায ছিলেন। ইমাম তিরমিযী তাঁর ছাত্র। সহীহ মুসলিম তার সুপ্রসিদ্ধ হাদীস সংকলন।

৫. আবু দাউদ আশ আস ইবনে সুলাইমান রঃ (২০২-২৭৫)। তাঁর অমর অবদান সুনানে আবু দাউদ। এতে ৪৮০০ হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে।

৬. আবু ঈসা তিরমিযী রঃ (২০৯-২৭৯ হিঃ)। তাঁর অমর গ্রন্থ সুনানে তিরমিযী।

৭. আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ী রঃ (মৃত্যু ৩০৩ হিঃ)। তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আস-সুনানুল মুজতবা’ ‘নাসায়ী শরীফ’ নামে খ্যাত।

৮. মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মাজাহ রঃ (মৃত্যু ২৭৩ হিঃ)। তাঁর অমর অবদান ‘সুনানে ইবনে মাজাহ’।

উপরোক্ত আটজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসের এই আটখানা সুবিখ্যাত গ্রন্থের মধ্যে ‘মুয়াত্তায়ে মালিক’ এবং ‘মুসনাদে আহমদ’ বাদে বাকী ছয়খানা গ্রন্থ ‘সিহাহ সিত্তাহ’ নামে সুপরিচিত। অবশ্য অনেকেই সুনানে ইবনে মাজাহর পরিবর্তে ‘মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক গ্রন্থখানাকে সিহাহ সিত্তাহর অন্তর্ভুক্ত করেন। আমার মতে এই সাতখানাই বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ।

পৃষ্ঠা-১৭

নির্বাচিত সংকলন: রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস সমূহের সংকলন সম্পাদনা ও যাচাই-বাছাই হয়ে যাওয়ার পর মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন দৃষ্টিভংগি সামনে রেখে এসব সংকলন থেকে নির্বাচিত সংকলন তৈরী করেছেন। এখানে কয়েকটি নির্বাচিত সংকলনের নাম উল্লেখ করা গেলোঃ

১. মিশকাতুল মাসাবীহঃ সংকলন করেছেন অলীউদ্দীন খতীব। এটি খুবই খ্যাতি অর্জন করেছে। এ গ্রন্থটির বংগানুবাদ করেছেন মাওলানা নূর মুহাম্মদ আজমী রঃ।

২. রিয়াদুস সালেহীনঃ এটি সংকলন করেছেন মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাতা ইমাম নববী।

৩. মুনতাকিল আখবারঃ এটি সংকলন করেছেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার দাদা আবুল বারাকাত আবদুস সালাম ইবনে তাইমিয়া। কাযী শওকানী ‘নায়লুল আওতার’ নামে আটখন্ডে এটির ব্যাখ্যা করেছেন।

৪. বুলুগুল মারামঃ এ গ্রন্থটি সংকলন করেছেন বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাতা হাফেয ইবনে হাজর। এ গ্রন্থের আরবী ব্যাখ্যার নাম সুবুলুস সালাম।

ভারত উপমহাদেশেও হাদীসের অনেক নির্বাচিত সংকলন তৈরী হয়েছে। আমাদের এ গ্রন্থটিও অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

পৃষ্ঠা-১৮

হাদীস আরম্ভ

জান্নাত জাহান্নাম ও মানব সৃষ্টি জান্নাত ও জাহান্নামের স্বরূপ: (1) عَنْ أَبِي هُرَيْرَة رمى عَنْ رَسُولِ اللهِ صلعم قَالَ : لَمَّا خَلَقَ اللهُ الْجَنَّةَ وَالنَّارُ أَرْسَلَ جِبْرِيلَ إِلَى الْجَنَّةِ فَقَالَ : أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلى مَا أَعْدَدْتُ لِأَهْلِهَا بَيْهَا كَانَ فَجَاءَ وَنَظَرَ إِلَيْهَا وَإِلى مَا أَعْل الله لِأَهْلِهَا فِيهَا قَالَ : فَرَجَعَ إِلَيْهِ قَالَ فَوَعِزَّتِكَ لا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخلَهَا . كَأَمَرَ بِهَا تخلف بِالْمَكَارِي فَقَالَ الجِعْ إِلَيْهَا فَانظر الى مَا أَعْدَدْتُ لِأَهْلِهَا فِيهَا – قَالَ فَرَجَعَ إِلَيْهَا فَإِذَا مَن حُقَّتْ بِالْمَكَارِهِ – فَرَجَعَ إِلَيْهِ فَقَالَ وَ عِزَّتِكَ لَقَدْ خِلْتُ أَن لَّا يَدْخُلَهَا أَحَدٌ – قَالَ أَذْهَبْ إِلى النَّارِ فَانظُرْ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا أَعْتَدْتُ لِأَهْلِهَا فِيهَا . فَذَهَبَ لَنَظرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ : وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ قَبَل خُلَهَا فَأَمَرَ بِهَا تَحْلَّتْ بِالشَّهَوَاتِ فَقَالَ : ارْجِعْ إِلَيْهَا فَرَجَعَ إِلَيْهَا فَقَالَ وَعِزَّتِكَ لَمَنْ خَشِيتُ أَن لَّا يَنْجُوْ مِنْهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَها – (رواه الترمذي وابو دالود. وقال الترمذي من أحديث حسن صحيح)

১ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। রাসূলে আকরাম

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা জান্নাত ও জাহান্নাম

সৃষ্টি করার পর জিব্রীলকে জান্নাতের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে বললেনঃ যাও, জান্নাত

এবং তার অধিবাসীদের জন্যে তাতে আমি যেসব নিআমত তৈরী করে রেখেছি,

দেখে এসো।’ নির্দেশমতো তিনি গিয়ে জান্নাত দেখলেন আর দেখলেন সেইসব

নিআমতরাজি যা তিনি জান্নাতবাসীদের জন্যে তৈরী করে রেখেছেন। অতপর

তিনি আল্লাহর নিকট ফিরে এসে আরয করলেনঃ হে আল্লাহ! তোমার

ইযযতের কসম! এমন জান্নাতের সংবাদ যেই শুনবে, সে তাতে প্রবেশ না করে

পৃষ্ঠা-১৯

থাকবে না।’ অতপর আল্লাহর নির্দেশে দুঃখ কষ্ট ও বিপদ মুসীবত দ্বারা জান্নাতকে পরিবেষ্টিত করে দেয়া হলো। এবার আল্লাহ বললেনঃ হে জিব্রীল। পুনরায় গিয়ে জান্নাত দেখে এলো আর দেখে এসো সেসব নিআমত যা তার বাসিন্দাদের জন্যে আমি তৈরী করে রেখেছি। জিব্রীল পুনরায় এলেন জান্নাতে। এসেই দেখলেন দুঃখ কষ্ট আর মহাবিপদ মুসীবত দ্বারা জান্নাত পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। তিনি ফিরে এসে বললেনঃ হে আল্লাহ। তোমার ইয্যতের কসম। আমার আশংকা হচ্ছে, কোনো লোকই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। অতপর আল্লাহ বললেনঃ এবার গিয়ে জাহান্নাম দেখে এসো আর দেখে এসো (সেইসব ভয়ংকর শাস্তির ব্যবস্থা) যা তার অধিবাসীদের জন্যে তাতে তৈরী করে রেখেছি।’ তিনি গিয়ে জাহান্নামের (ভয়ংকর) দৃশ্য অবলোকন করলেন এবং ফিরে এসে বললেনঃ হে আল্লাহ! তোমার ইযযতের কসম! যে-ই এ (ভয়ংকর) জাহান্নামের সংবাদ শুনবে সে কখনো তাতে প্রবেশ করতে প্রস্তুত হবেনা।’ অতপর আল্লাহর নির্দেশে কামনা-বাসনা ও লোভ-লালসা দ্বারা জাহান্নামকে পরিবেষ্টিত করে দেয়া হলো। এবার আল্লাহ বললেনঃ হে জিব্রীল। পুনরায় গিয়ে জাহান্নাম পরিদর্শন করে এসো। নির্দেশমতো তিনি গেলেন এবং সেখান থেকে ফিরে এসে আরয করলেনঃ তোমার ইয্যতের কসম খেয়ে বলছি, হে আল্লাহ। আমার আশংকা হচ্ছে সকল মানুষই জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং কেউই তা থেকে রক্ষা পাবেনা।

সূত্র হাদীসটি তিরমিযী, আবু দাউদ এবং সামান্য শাব্দিক পার্থক্যসহ নাসায়ী শরীফে সংকলিত হয়েছে। তিনটি গ্রন্থেই আবু হুরাইরার (রাঃ) সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী এটিকে একটি বিশুদ্ধ হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন। সার কথা হাদীসটির সার কথা হলো এই যে, আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরী করে রেখেছেন। জান্নাতকে পরম সুখ ও আনন্দ এবং সীমাহীন অকল্পনীয় নিআমত দ্বারা পরিপূর্ণ করে রেখেছেন। কিন্তু তাকে চরম দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ মুসীবত দ্বারা তিনি পরিবেষ্টিত করে দিয়েছেন। তার পথ ভীষণ কন্টকাকীর্ণ। তা লাভ করার জন্যে প্রয়োজন কঠিন সাধনা, পরম ধৈর্য ও দৃঢ়তা। জাহান্নামকে বীভৎস ভয়াবহ আযাবের স্থানরূপে তৈরী করে রেখেছেন। কিন্তু লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনা দ্বারা তা পরিবেষ্টিত করে দিয়েছেন। তার পথ বড়ই মনোহরী লোভনীয়। তা থেকে নাজাত পাওয়ার জন্যেও প্রয়োজন কঠোর সাধনা এবং পরম ধৈর্য ও দৃঢ়তা অবলম্বন।

পৃষ্ঠা-২০

শিক্ষা ১. জান্নাতের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এ পথ দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ মুসীবতে ভরপুর। যে ব্যক্তি সত্যিকার মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করতে চায় একদিকে শয়তান প্রতিটি পদে পদে তার পথে ধোকা, ষড়যন্ত্র ও ছলনার জাল বিস্তার করে রাখে। অপরদিকে প্রতিটি কদম তাকে খোদাহীন বস্তুবাদী সমাজ ব্যবস্থার মোকাবেলা করে অগ্রসর হতে হয়। তাই কুরআনে মজীদে এ দুনিয়াকে মুমিনের পরীক্ষাগার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গোটা জীবনই মুমিনকে পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-মুসীবতের এই অবিরাম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।

২. দ্বিতীয় শিক্ষা হলো এই যে, মনোহরী লোভনীয় এই দুনিয়াকে লাভ করার পিছে ছুটবে যে ব্যক্তি, জাহান্নামই হবে তার চিরদিনের আবাসস্থল।

আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টি: (۲) عن أبي هريرة رض عن النبي صلعم قال الخلقَ اللَّهُ آدَمَ وَ قَوْلُهُ سِلَّوْنَ ذِرَاعًا ثُمَّ قَالَ : اذْهَبْ تسلم على أُولئِكَ النَّقْرِ مِنَ الْمَلَائِكَةِ فَاسْتَمِعْ مَا يُحَلُونَ بِهِ فَإِنَّهُ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ – فَقَالَ السَّلامُ عَلَيْكُمْ ، فَقَالُوا : السَّلَامُ عَلَيْكَ وَ رَحْمَةُ اللهِ – فَزَادُوا : وَرَحْمَةُ اللهِ – فَكُلُّ مَنْ يُدْخِلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ أَدَمَ فَلَمْ يَزَلِ الْخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآن – (رواه البخاري ومسلم) ২ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আদমকে সৃষ্টি করেছেন আর তার দেহের উচ্চতা ছিলো ষাট গজ। অতপর আল্লাহ আদমকে বললেনঃ যাও এ ফেরেশতাদলকে সালাম করো। তারা কিভাবে তোমার সালামের জবাব দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শুনো। কেননা এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম (আদান-প্রদান) এর রীতি। অতপর তিনি গিয়ে তাদের বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম।’ জবাবে তারা বললো, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ।’ তারা ‘ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ শব্দটি যোগ করলো। যে ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে হবে আদমের আকার বিশিষ্ট। তবে বনি আদমের উচ্চতা হ্রাস পেতে পেতে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। সুত্র হাদীসটি একই বর্ণনাসুত্রে বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে সংকলিত হয়েছে।

পৃষ্ঠা-২১

ব্যাখ্যা অপরাপর হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত আদম (আঃ) ছিলেন ষাট গজ লম্বা এবং সাত গজ চওড়া। তিনি ছিলেন অপরূপ কান্তিময় সুন্দর। অতপর তাঁর সন্তানদের দৈর্ঘ্য ও সৌন্দর্য কমতে কমতে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। কিন্তু তাঁর সকল বেহেশতবাসী সন্তানই পরকালে তাঁর মতো দৈর্ঘ্য ও সৌন্দর্য লাভ করবে, দুনিয়াতে তাদের রূপ আকৃতি যেরূপই থাকুক না কেন। অপর হাদীস থেকে এটাও জার্নী যায় যে, সকল বেহেশতবাসীর বয়স হবে তেত্রিশ বছর। এটা হচ্ছে হযরত ঈসা (আঃ) এর বয়স। বেহেশতে নারী পুরুষ সবাই সমবয়সী হবে।

এ হাদীস থেকে এ কথা পরিষ্কারভাবে জানা যায় যে, মানুষ কোনো প্রকার বিবর্তনের ফলশ্রুতি নয়। বরঞ্চ সকল মানুষই হযরত আদম (আঃ) এর সন্তান এবং প্রথম থেকেই মানুষ ছিলো জ্ঞানবান ও আল্লাহর সভ্যতম সৃষ্টি। সকলকে সৃষ্টি করার পর রক্ত সম্পর্কের আবেদন (۳) عن أبي هريرة رد عَنِ النَّبِيِّ قَالَ خَلَقَ اللهُ الْخَلْقَ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهُ قَامَتِ الرَّحِمُ فَأَخَذَتْ بِحِقو الرَّحْمَنِ – فقال له : من قالَتْ : هَذَا مَقَامُ الْعَاشِذِ بِكَ مِنَ الْقَطِيعَةِ – قَالَ أَلَّا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكَ وَأَقْطَعَ مَنْ تَطَاعَكَ ؟ قَالَتْ بَلَى يا ريت قال فلاني كلي – (رواه البخاري في كتاب التفسير)

৩ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির কাজ শেষ করার পর ‘রাহেম’ বা ‘রক্ত সম্পর্ক’ আল্লাহ রহমানের ইযার ধরে কিছু আরয করতে চাইলো। আল্লাহ বললেনঃ থামো। সে বললোঃ রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী থেকে আমি তোমার নিকট পানাহ চাই।’ আল্লাহ বললেনঃ যে তোমার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখবে আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখবো, আর যে তোমার সংগে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সংগে সম্পর্ক ছিন্ন করবো, এতে কি তুমি সন্তুষ্ট নও? সে বললোঃ অবশ্যি হে আল্লাহ’। তিনি বললেনঃ এটাই তোমার প্রাপ্য। সূত্র হাদীসটি বিভিন্ন সাহাবীর সূত্রে ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী, ইমাম আবু দাউদ প্রমুখ তাঁদের গ্রন্থাবলীতে সংকলিত করেছেন।

পৃষ্ঠা-২২

ইমাম তিরমিযী এটিকে একটি বিশুদ্ধ হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন। আমরা এখানে হুবহু বুখারীর বর্ণনা উল্লেখ করেছি। ব্যাখ্যা সহজভাবে বুঝবার জন্যে এখানে রূপক উপমার মাধ্যমে আল্লাহ এবং রক্ত সম্পর্কের কথোপকথোনের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। রক্ত সম্পর্কের মর্যাদা ও গুরুত্ব তুলে ধরাই হাদীসটির মূল উদ্দেশ্য। মুসলিম শরীরে ব্যাখ্যাতা ইমাম নববী বলেছেনঃ রক্ত সম্পর্ক অটুট রাখা ফরয। এর ছিন্নকারী আল্লাহর হুকুম অমান্যকারী বলে পরিগণিত। অপর একটি হাদীস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তায়ালা রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারীকে দুনিয়া থেকেই শাস্তি দিতে শুরু করেন।

পৃষ্ঠা-২৩

তাওহীদ-আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই: (1) عن أبي إشكل من الأمراني تسلم أنه لفهد عَلَى أَبِي هُرَيْرَةً وَأَبِي سَعِيدٍ الحذيف رَضِيَ الله تَعَالَى عَنْهُمَا أَنَّهُمَا شَهِدًا عَلَى رَسُولِ الله صلعم قَالَ: إِذْ قَالَ العبد لا إله إلا الله والله أكبرُ يَقُولُ الله عَزَّ وَجَلَّ : صَدَى عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وأنا الله أكبر وإذا قَالَ الْعَبْدُ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ قَالَ : صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِى وَإِذَا قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ قَالَ صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا ولا شريك في وَإِذَا قَالَ : لا إله إلا الله له المُلْكُ وَلَهُ الْحَمْنُ قَالَ صَدَقَ عَبْيى لا إله إلا أنا لي الملك وَلِي الْحَمْدُ وَإِذَا قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ كان صلى عَبْدِي لا إله إلا أنا ولا حول ولا قوة إلا في – (رواه ابن ماجه في سنته باب فضل لا الله الا الله ) ৪ আবু হুরাইরা ও আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ বান্দাহ যখন বলেঃ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই এবং আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।’ তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দাহ যথার্থই বলেছে, ‘আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নাই এবং আমি আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ।’ বান্দাহ যখন বলে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। তিনি এক ও একক।’ তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দাহ সত্যি বলেছে, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই এবং আমি এক ও একক। বান্দাহ যখন বলেঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। তিনি এক ও লা-শারীক।’ আল্লাহ তখন বলেনঃ আমার বান্দাহ ঠিকই বলেছে, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই এবং আমি লা-শারীক। যখন বান্দাহ বলেঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই, তিনি নিখিল সম্রাজ্যের মালিক এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য। তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দাহ যথার্থই বলেছে, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। নিখিল সম্রাজ্যের মালিকও

পৃষ্ঠা-২৪

আমিই আর সমস্ত প্রশংসাও আমারই প্রাপ্য। বান্দাহ যখন বলেঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই আর আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো শক্তি সামর্থও নাই।’ তখন জবাবে আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দাহ সত্য কথাই বলেছে, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ নাই আর আমার ছাড়া কারো কোনো শক্তি সামর্থও নাই।’ সূত্র সুনানে ইবনে মাজাহ থেকে হাদীসটি গৃহীত হয়েছে। ব্যাখ্যা হাদীসটি তাওহীদের ঘোষণা দানকারীর প্রতি মহামহিম আল্লাহর পরম সন্তুষ্টির আবেগময় প্রকাশ ঘটেছে। যে বান্দাই নিষ্ঠার সাথে তাওহীদের কালেমা উচ্চারণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তার বক্তব্যের সত্যতাও যথার্থতা ঘোষণা করেন। বস্তুত, বান্দার জন্যে এর চাইতে সম্মান ও মর্যাদার বিষয় কি হতে পারে যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার কথার সত্যতা ঘোষণা করেন? তার কথার ‘হাঁ’ বাচক জবাব প্রদান করেন? সত্যি এটা মুমিন বান্দাদের এক বিরাট খোশনসীব।

মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ বান্দার বক্তব্যের সত্যতা ঘোষণার অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালার পরম সন্তুষ্টির প্রকাশ। এর অর্থ এটাও যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে অশেষ পুরস্কার দানে ভূষিত করবেন। অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে, বান্দাহ যদি তার এই ঘোষণার উপর মৃত্যুবরণ করে আর তার এই ঘোষণা যদি হয় আন্তরিক, তবে জাহান্নামের আগুন তাকে কখনো স্পর্শ করবেনা। মূলত, অনুরূপ আন্তরিক স্বীকৃতি ও সে অনুযায়ী পুর্ণাঙ্গ আমল দ্বারাই মানুষ জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পেতে পারে এবং চির অধিকারী হতে পারে সীমাহীন নিআমতে ভরা জান্নাতের। (0) عن أبي هُرَيْرَةَ رَم قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلعم : قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي وَالْعَظْمَةُ الارِي فَمَنْ نَازَعَينَ وَاحِدًا مِنْهُمَا فَلَمْتُه في النار – (رواه ابو و الادفي শ্রেষ্ঠত্ব কেবল আল্লাহর ستنه و رواه ايضا امام مسلم صحیحه وابن ماجه في سننه) ৫ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ গর্ব ও অহংকার আমার চাদর। শ্রেষ্ঠত্ব আমার ইযার। যে কেউ আমার এ দুটি জিনিসের একটিও খুলে নেবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’

পৃষ্ঠা-২৫

সূত্র হাদীসটি আবু দাউদ এবং সামান্য শাব্দিক পার্থক্যসহ সহীহ মুসলিম এবং সুনানে ইবনে মাজায় সংকলিত হয়েছে। ব্যাখ্যা হাদীসে উল্লেখিত ‘গর্ব-অহংকার আল্লাহর চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহর ইবার’ উপমা দুইটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। উপমা দুইটি ঠিক এ রকম, যেমন কোনো বীর সম্পর্কে তার গুণগ্রাহীরা বলে থাকেঃ বীরত্বই তার প্রতীক।’ গর্ব-অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্ব শুধু মাত্র আল্লাহর জন্যে। যেসব কারণে মানুষ অহংকার করে এবং শ্রেষ্ঠ হতে চায়, সেগুলো আল্লাহরই দান। সে জন্যে যাবতীয় নিআমতের অধিকারী হওয়ায় মানুষের উচিত পরম দয়ালু দাতা আল্লাহ তায়ালার দরবারে নত হওয়া এবং তাঁরই শোকরিয়া আদায় করা। আল্লাহর কোনো অংশীদার নাই। (4) عَنْ أَبِي هُرَيْرَة لا أَنَّ رَسُولَ اللهم قَالَ : قال الله عَزَّ وَجَلَّ : أَنَا أَغْنَى الشَّرَكَاءِ من الشِّرْكِ فَمَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَاكَ فِيْهِ غَيْرِي فَأَنَا مِنْهُ بَرِى وَهُوَ لِلَّذِي أَفْرَكَ. (رواه ابن ماجه في سنته و امام مسلم في صحيحه) ৬ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এবং তিনি আল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আমি মুশরিকদের শিরক থেকে মুক্ত পবিত্র (অর্থাৎ আমার কোনো শরীক নাই)। যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করলো, যাতে আমার সাথে আর কাউকেও শরীক করা হয়েছে। আমি তার সাথে সম্পর্কহীন। তার সম্পর্ক তার সাথে, যাকে সে শরীক করেছে।’ সূত্র ইবনে মাজাহ, সহীহ মুসলিম। (1) عن أبي هُرَيْرَة عَنِ النَّبِيِّ صليهم قال : كالَ اللهُ تَعَالَى كُلَّ بَنِي ابْنُ أَدَمَ وَلَمْ يكن له ذيك – كانا للذيبة إِيَّايَ فَقَوْلُهُ لَن يُعِيدُنِي كَمَا بَكَافِي وَلَيْسَ أَوَّلُ الْخَلْقِ بِأَهْوَانَ عَلَى مِنْ إِمَادَتِهِ – وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقُوْلَهُ : الْخَدَّ اللهُ وَلَدًا وَأَنَا الْأَحَدُ العمل ثم اليد ولم أولد ولم يكن إن كفوا أحد – ( رواه البخاري في كتاب التفسير من سورة الاخلاص ورواه النساق في سنته في باب “أرواح المؤمنين)

পৃষ্ঠা-২৬

৭ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ (একদল) আদম সন্তান আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, অথচ এমনটি করা তাদের জন্যে উচিত নয়। (কিছু সংখ্যক) আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়, অথচ এ কাজ তাদের জন্যে শোভা পায় না। আমার প্রতি তার মিথ্যারোপ হচ্ছে এই যে, সে বলেঃ আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন বটে, কিন্তু পুনরায় জীবিত করবেন না। অথচ তাকে পুনরায় জীবিত করার চাইতে প্রথমবার সৃষ্টি করা অধিকতর সহজ, ছিলনা। আমাকে তার গালি দেয়া হচ্ছে এই যে, সে বলেঃ আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ আমি এক, একক ও প্রয়োজন শূণ্য। আমি কাউকেও জন্ম দিইনি, এবং কারো ঔরসজাতও আমি নই। আমার সমকক্ষও কেউ নেই। সূত্র সহীহ বুখারী, সুনানে নাসায়ী। ব্যাখ্যা এখানে উদ্ধৃত হাদীস দুইটি প্রকৃত পক্ষে কুরআনের অসংখ্য আয়াতেরই প্রতিধ্বনি মাত্র। কুরআনের অসংখ্য আয়াতে ঘোষণা দেয়া হয়েছেঃ আল্লাহর কোনো শরীক নেই। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তার সমকক্ষ কেউ নেই। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানাদি কিছুই নেই। কারো সাথে বিশেষ সম্পর্কও তাঁর নেই। তিনি বিশ্বজাহানের মালিক ও রব। এ মালিকানা ও রবুবিয়াতে কারো কোনো অংশীদারিত্ব নেই। তিনি মহামহিম সার্বভৌম সত্তা। সকলেই তার অসহায় সৃষ্টি মাত্র। এ সংক্রান্ত কুরআনের কয়েকটি আয়াত এখানে উল্লেখ করা গেলোঃ هُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إلا و في الأرْضِ إله وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ – الحرف : (٤) “আসমানে ও যমীনে তিনি একজনই ইলাহ। তিনি হাকীম ও আলীম।” (যুখরুফ: ৮৪) অর্থাৎ আসমান ও যমীনের ক্ষমতাও সার্বভৌমত্বের অধিকারী তিনি একজনই এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগের জন্যে যে জ্ঞান ও কৌশলের প্রয়োজন সেসবই তাঁর আছে। لا تشريف بالله إن القراف تعلم عظيم – (علمان : ١٣) “আল্লাহর সংগে শরীক করোনা। কারণ নিঃসন্দেহে শিরক অতি বড় যুলুম।” (লোকমান: ১৩)

পৃষ্ঠা-২৭

إن الله لا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَالِلَهَ لِمَن يَشَاءُ وَمَن يُشْرِيهُ باللهِ فَقَدِ افْتَرَى انهما عظيما – (النساء : (1) “মনে রেখো, আল্লাহর সাথে শরীক বানানোর যে পাপ, তা তিনি ক্ষমা করেননা। এছাড়া অপরাপর গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা, মাফ করে দেবেন। বস্তুত যে ব্যক্তি অ্যাল্লাহর সাথে শরীক করে, সে তো উদ্ভাবন করে নিয়েছে এক গুরুতর পাপ।” (আন-নিসাঃ ৪৮) ان الحكمُ إِلَّا لِلهِ أَمَرَ أَلا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ – (يوسف : ٢٠) “নির্দেশ ও হুকুম দানের সার্বভৌম ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। তিনি নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারো আনুগত্য ও গোলামী করো না।” (ইউসুফ: ৪০) وأن المَسَاجِدَ لِلهِ فَلا تَدْعُوا مَعَ اللهِ أَحَدًا – (الجن : (۱۸) “সিজদার স্থানসমূহ কেবলমাত্র আল্লাহর। অতএব আল্লাহ সাথে আর কাউকেও দোয়ায় শরীক করো না।” (আল জ্বিন: ১৮) এ নিখিল জাহানের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক আল্লাহ ( عن أبي هريرة رم كان كان رسول الله صلعم يُؤْذِينِي ابْنُ أَدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرُ وأنا الدَّهْرُ بِيَدِى الْأَمْرُ أَقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ – ( رواه البخاري في كتاب التفسير سورة الجالية ) ৮ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ বলেনঃ আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়। সে সময়-কালকে গালি দেয়। অথচ আমিই সময় কাল। অর্থাৎ আমার হাতেই সবকিছুর পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের সর্বময় ক্ষমতা। দিনরাত্রির আবর্তন আমিই করে থাকি।

পৃষ্ঠা-২৮

কেবল আল্লাহকেই, ভয় করতে হবে: (1) من أنسي بي مايلي رهم أن رسول الله صلعم قَرَاءَ هَذِهِ الْآيَة : هُوَ أَهْلُ التقوى وأهْلُ الْمَغْفِره ” نقال كان الله عز وجل : أَنَا أَهْنَّ أَنْ أَنقَى فَلَا يَجْعَلْ معنى إله الخرَ – فَمَنِ اتَّقَى أَن يَجْعَلَ مَعنى إنها الحركانا أَهْل أَن المقولة. درماه ابن ماجه في سننه) ৯ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করলেনঃ “তিনিই (আল্লাহ তায়ালা) উপযুক্ত সত্তা, যাকে ভয় করা উচিত। আর তিনিই ক্ষমা করার একমাত্র অধিকারী” অতপর তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ আমিই সেই উপযুক্ত সত্ত্বা যাকে বান্দাহ্ ভয় করবে। সূতরাং আমার সাথে যেনো আর কাউকেও ইলাহ বানানো না হয়। যে ব্যক্তি আমার সাথে অপর কাউকেও ইলাহ বানানোকে ভয় করে, তাকে ক্ষমা করে দেয়ার উপযুক্ত সত্তা আমিই। সূত্র সুনানে ইবনে মাযাহ। ব্যাখ্যা আল্লাহ তায়ালা সর্ব শক্তিমান। বিশ্বজাহানের তিনিই মালিক ও শাসক। সবকিছু তাঁরই কুদরতে ক্রিয়াশীল। তিনি মানুষকে চলার পথ নির্দেশ করেছেন। যাতে মানুষের কল্যাণ রয়েছে। সেপথ তিনি মানুষকে বলে দিয়েছেন। সুতরাং তাঁরই ইচ্ছা ও নির্দেশিত পথে চলাই মানুষের কর্তব্য। সব ‘সময় সঠিকভাবে আল্লাহর পথে এবং তারই ইচ্ছানুযায়ী চলতে পারছে কিনা, এ বিষয়ে মানুষকে প্রতিটি মুহূর্ত ভীত সন্ত্রস্ত ও সচেতন থাকা উচিত। আল্লাহর কঠিন শাস্তিকে তার ভয় করা উচিত। আল্লাহ বলেছেনঃ তোমাদের যতোটা শক্তি সাধ্য আছে সে অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো।’ বস্তুত, মানুষের সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে এই তাকওয়া বা খোদাভীতি। আর যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালাই সর্বোত্তম সত্তা যিনি তাদের মাফ করে দিতে পারেন।

পৃষ্ঠা-২৯

আল্লাহ পরম করুণাময় ক্ষমাশীল আল্লাহর রাগের উপর রহমত বিজয়ী: (١٠) عن أبي هريرة رد عن النبي من كان لما خلق الله الخَلْقَ كَتَبَ فِي كِتَابِهِ ويكتب في تقيم وَهُوَ وَضِع عِنْدَهُ عَلَى الْعَرْشِ ” إن رحمين الطيب قضيني”. (رواه البخاري في كتاب التوحيد) ১০ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা যখন গোটা সৃষ্টিকূলকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁর নিকট আরশে রক্ষিত কিতাবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখে রেখেছেনঃ ‘আমার রোষের উপর রহমত বিজয়ী।’ সূত্র সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ। ব্যাখ্যা এ কথার মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তায়ালা পরম করুণাময়। তাঁর কঠোরতার চাইতে তাঁর দয়া অধিক। তাঁর রোষের চাইতে রহমত অধিক। তাঁর শান্তির চাইতে করুণা অধিক। বস্তুত এমনটি না হলে সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যেতো।

আল্লাহ তায়ালা দয়া করে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মেহেরবানী করে তাকে জ্ঞান, বুদ্ধি, যোগ্যতা ও শক্তি সামর্থ দিয়েছেন। তাকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার শক্তি সামর্থ দান করেছেন। কিন্তু মানুষের প্রতি তাঁর এতোসব দান ও নিয়ামতের পরও মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করে, তাঁর আইন ও বিধান অমান্য করে, তাঁর নির্দেশ কার্যকর করেনা, তাঁর নিষেধ করা পথ থেকে বিরত থাকেনা এবং তাঁর মর্জি মোতাবেক জীবন যাপন করে না। এতোসব নাফরমানী সত্ত্বেও তিনি তাদের প্রতিপালন করেন, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করেন, তাদের জীবিকা প্রদান করেন। দুনিয়ার জীবনে তিনি তাদের

পৃষ্ঠা-৩০

অসংখ্য নিয়ামত দান করেন। এটা কি আল্লাহর গযবের উপর তাঁর রহমতের বিজয় নয়? তাঁর এ পরম করুণা ধারার কথা কে অস্বীকার করতে পারে? যেসব মানুষ আল্লাহর পথে চলে, সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর বিধান কার্যকর করার চেষ্টা-সংগ্রাম করে। এসব সত্যপন্থী লোকদের দ্বারাও অনেক সময় ভুলত্রুটি এবং গুণাহ-খাতা হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এদের মধ্যে যাকে চান নিজ গুণে ক্ষমা করে দেন। এটাও তাঁর প্রবল রহমতেরই অনিবার্য স্বরূপ। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল (11) عن أبي هريرة رض قال سبغت اللي صلعم قَالَ : إِنَّ عَبْدًا أَصَابَ ذَنْبًا و رُبَّمَا قَالَ أَصَبْتُ فَالْمِرْنِي فَقَالَ رَبُّهُ أَعْلِم عَبْدِى أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنَبَ وَيَلْقُلُ به ؟ التعريف يعبدي – كم ملك مَا شَاء الله ثُمَّ أَصَابَ ذَنْبًا أَوْ قَالَ أَذْنَبَ البالمقال رب أَذْنَبْتُ أَوْ أَسبك أخَرَ فَاغْفِرْهُ فَقَالَ أَعَلِمَ عَبْدِى أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُلُ يم ؟ تحفَرْتُ لِعَبْدِي – ثُمَّ مَكَ مَا شَاءَ الله ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا وَرُبَّمَا قَالَ أَصَابَ ذنبا – فَقَالَ رَبِّ أَصبك أو أذنبت أخر فالمفرة في فقالَ أَعْلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يغير الرتب وَيَأْخذ به ؟ حضرت لِعَبْدِي كلانا – ( رواه البخاري في كتاب التوحيد و مسلم في باب سعة رحمه الله) ১১ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি

রাসূলে করীম (সঃ)কে বলতে শুনেছি যেঃ আল্লাহর এক বান্দাহ গুণাহ করলো, অতপর দোয়া করলোঃ ‘ওগো রব। আমি গুণাহ করে ফেলেছি, আমাকে মাফ করে দাও।’ জবাবে তার রব বললেনঃ আমার বান্দাহ কি জানে যে তার এমন একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করে থাকেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করে থাকেন? আমি আমার বান্দাহকে মাফ করে দিলাম। অতপর আল্লাহর যতোদিন ইচ্ছা ততোদিন সে এ অবস্থায় থাকলো এবং পুনরায় গুনাহ করে ফেললো। আবারো আল্লাহর দরবারে সে আরয করলোঃ ওগো আমার রব আমি আরেকটা গুনাহ করে ফেলেছি। আমার গুনাহটি মাফ করে দাও।’ তখন আল্লাহ বলেনঃ ‘আমার বান্দাহ কি জানে যে, তার এমন একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফও করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন? আমি আমার বান্দাকে মাফ

পৃষ্ঠা ৩১ থেকে ৪৫

পৃষ্ঠা-৩১

করে দিলাম।’ অতপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী সে কিছুদিন এ অবস্থায় কাটালো এবং পুনরায় গুনাহ করে বসলো। এবারও সে বললোঃ ‘ওগো আমার পরওয়ারদেগার! আমি আরেকটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহটিও মাফ করে দাও।’ তখন তার রুর বলেনঃ ‘আমার বান্দাহ কি জানে যে, তার একজন রব আছেন? তিনি গুনাহ মাফ করেন, আবার গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন। আচ্ছা, আমি আমার বান্দার গুনাহ মাফ করে দিলাম।’ সূত্র সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম। ব্যাখ্যা আল্লাহর কোন বান্দাহ যদি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে চলেন আর পথিমধ্যে আকস্মিকভাবে পদস্খলন হয়ে যায়, আর সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে কেঁদে পড়েন, এমন মুখলিস বান্দাহকে আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন এবং বার বার মাফ করে দেন। কুরআনে আল্লাহ পাক তাঁর খালিস বান্দাহদের লক্ষ্য করে বলেছেনঃ তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, বান্দাহ নিজের উপর যুলম করার পরও যদি আল্লাহকে স্মরণ করে তাঁর নিকট মাফ চায়, তবে তিনি ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালার মহত্বের পরিচয়: عن أبي ذر له عن النبي صلعم فِيهَا رَوَى عَنِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ: يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ العالم على المبنى وجَعَلْتُهُ بينكم محرما – فَلا تَظَالَمُوا يا عِبَادِي علمكم كَانَ إِلَّا مَنْ هَدَيْتَهُ – فَاسْتَهْدُونِي أَهْلِكُمْ – يَا عِبَادِي عَلَكُمْ جَائِعُ إِلَّا مَنْ المَمْتُهُ – فَاسْتَمِعُونَ أَطْعِكُمْ – يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ نَارٍ إِلَّا مَنْ كَسَوْك فَاسْتَكْسُوني اكسكُمْ – يَا عِبَادِى إِنَّكُمْ تُفْطِلُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا اغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا – ما ستغيروني المغير لكم – يَا عِبَادِي الكم لن تبلغوا شرى الشروق ولن تبلغوا تنمي تنتمي – يَا عِبَادِى لَوان الولكم وآخركم والحكم وَجِنَّكُمْ لوا على الفتى قلب رَجُلٍ وَاحِدٍ مِّنكُمْ مَا زَادَ ذَالِكَ فِي مُلْكِى شَيْئًا – يَا عِبَادِى لو أن أولكم وَاخِرَكُمْ وَالسَّكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَحْجَرٍ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِّنكُمْ مَا نقص ذَالِكَ مِنْ مُلْكِى شَيْئًا – يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَأَجْرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ

পৃষ্ঠা-৩২

كانوا في سَمِيْرٍ واحد مسأتوني فافعينك كل إنسانٍ مَسْأَلَكَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا مندِي الأَكمَا يَنقُصُ الْبَحْيَنَا إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ – يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِي أَعْمَالُكُمْ أخمِينهَا لَكُمْ ثُمَّ أَولِينَكُمْ إِيَّاهَا لَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَعْمَلِ اللَّهَ وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذالك علا يلومَنَّ إلا نفسه – درماه مسلم في باب تحريم العلم) ১২ আবুযর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং তিনি আল্লাহ তায়ালা থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ হে আমার বান্দায়া। আমি যুলম করাকে আমার জন্যে হারাম করেছি। তোমাদের পরস্পরের জন্যেও তা হারাম করে দিয়েছি। সুতরাং তোমরা একজন আরেক জনের উপর যুলম করো না। হে আমার বান্দারা। আমি যাকে হিদায়াত করি সে ছাড়া আর সবাই পথভ্রষ্ট। সুতরাং তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাও, আমি তোমাদের হিদায়াত দান করবো। হে আমার বান্দারা। আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ছাড়া তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত। সুতরাং আমারই নিকট খাবার চাও আমি তোমাদের খাবার দেব। হে আমার বান্দারা। তোমরা সবাই নিরাবরণ। তবে সে ছাড়া, যাকে আমি পরিধেয় দান করি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পরিধেয় চাও। আমি তোমাদের পরিধেয় দান করবো। হে আমার বান্দারা। দিনরাত তোমরা গুনাহে লিপ্ত। আমি সকল গুনাহ মাফ করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও। আমি তোমাদের মাফ করে দেবো। হে আমার বান্দারা। আমার কোনো ক্ষতি করার সাধ্য তোমাদের নাই। আর আমার কোনো উপকার করার সামর্থও তোমাদের নাই। হে আমার বান্দারা। তোমাদের পূর্ব ও পরবর্তীকালের সকল মানুষ আর সকল জ্বিন যদি তোমাদের মধ্যকার সবচাইতে পরহেযগার লোকটির মত খোদাভীরু হয়ে যায়, তবে তাতে আমার সম্রাজ্যের কোন বৃদ্ধি বা উন্নতি হবে না।

পৃষ্ঠা-৩৩

হে আমার বান্দারা। আর যদি তোমাদের পূর্ব ও পরবর্তীকালে সকল মানুষ আর জ্বিন মিলে তোমাদের মধ্যকার সবচাইতে পাপী লোকটির মতো খারাপ হয়ে যায়, তবে তাতেও আমার সম্রাজ্যের কোনো প্রকার কমতি বা ঘাটতি হবেনা। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্ব ও পরবর্তীকালের সকল মানুষ আর সকল জ্বিন যদি একত্র হয়ে আমার কাছে (ইচ্ছামতো) চায় আর আমি যদি তাদের প্রত্যেককে তাঁর ইচ্ছানুসারে দান করি তবে শুচাগ্র সমুদ্র থেকে যতোটুকু পানি কমায়, ততোটুকু ছাড়া আমার ভাঙার থেকে কিছুই কমবে না। (অর্থাৎ- আমার ভাণ্ডার সবসময় পরিপূর্ণ থাকে।) হে আমার বান্দারা। তোমাদের আমল আমি গুণে গুণে রেকর্ড করে রাখছি। অতপর তোমাদেরকে পরিপূর্ণ বিনিময় দান করবো। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কল্যাণ লাভ করে সে যেনো আল্লাহর শোকর আদায় করে। আর যার ভাগ্যে অন্য কিছু ঘটে, সে যেনো নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকেও তিরষ্কার না করে। সূত্র হাদীসটি সহীহ্ বুখারী এবং সহীহ মুসলিম থেকে গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও হাদীসটি আবুযর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সূত্রে জামেয়ে তিরমিযী এবং সুনানে ইবনে মাজায় সংকলিত হয়েছে। ব্যাখ্যা হাদীসটিতে আল্লাহর এই বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছেঃ আমি যাকে হিদায়াত দান করি, সে ছাড়া আর সবাই পথভ্রষ্ট।’ এ কথার তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তায়ালা যদি নবী ও কিতাব না পাঠাতেন, তবে সব মানুষই পথভ্রষ্ট থাকতো। তিনি নবী ও কিতাব পাঠিয়ে যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের পথ দেখিয়েছেন। এর আরো একটি অর্থ এই যে, মানুষের নক্সই তাকে তীব্রভাবে গোমরাহীর দিকে আকৃষ্ট ও ধাবিত করে। নক্সের এই দৌরাত্ম্য থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে হিদায়াত লাভের জন্যে যারা আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের হিদায়াত দান করেন এবং হিদায়াতের উপর অটল রাখেন। শিক্ষা এই হাদীসটি থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাইঃ [ক] আল্লাহ বান্দাহর উপর বিন্দুমাত্র যুলম করেননা। তিনি সুবিচারক। [খ] আল্লাহর নীতি অবলম্বন করে বান্দাহরও উচিত যুলম পরিহার করা।

[গ] হিদায়াত ও জীবিকা লাভের জন্য কেবল আল্লাহরই নিকট অবিরত প্রার্থনা করা উচিত।

পৃষ্ঠা-৩৪

[ঘ] আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল। মানুষ গুনাহগার। তাই গুনাহ মাফির জন্যে বিনীত হয়ে আল্লাহর নিকট প্রতিনিয়তই ক্ষমা চাওয়া উচিত।

[৬] মানুষ তার আমল দ্বারা আল্লাহ তায়ালার কোনো কল্যাণও করতে পারেনা আর অকল্যাণও করতে পারেনা।

[চ] মানুষের ভাল বা মন্দ পথে চলাতে আল্লাহর কিছুই যায় আসেনা।

[ছ] আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত সুতরাং তারই নিকট সবকিছু চাওয়া উচিত।

[জ] মানুষের সকল আমলের রেকর্ড রাখা হয়।

[ঝ) মানুষ পরকালের কল্যাণ বা অকল্যাণ লাভ করবে নিজের আমলের ভিত্তিতে।

বান্দাহর প্রতি আল্লাহর মহব্বত: (۳) عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ اللي صلعلم قال إذا أَحَبُّ اللَّهُ الْعَبْدَ نَادَى جِبْرِيلَ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ ثلاثًا فَأَحْبِيبُهُ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ فَيُنَادِي جِبْرِيلُ فِي أَهْلِ السَّمَاءِ : إِنَّ اللهَ يُحِبُّ فَلَانًا تَأْحِبُّرة – فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ – ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقُبُولُ فِي الْأَرْضِ (صحیح بخاری – صحیح مسلم – مؤطا امام مالك – جامع ترمذی)

১৩ আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো বান্দাহকে মহব্বত করতে শুরু করেন, তখন জিব্রীলকে ডেকে বলেনঃ আমি অমুক বান্দাহকে মহব্বত করি, তুমিও তাকে মহব্বত করো।’ তখন জিব্রীলও তাকে মহব্বত করতে আরম্ভ করেন এবং আকাশবাসীকে ডেকে বলেনঃ আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে মহব্বত করেন তোমরাও তাকে মহব্বত করো।’ তখন আকাশবাসীরাও তাকে মহব্বত করতে থাকে। অতপর পৃথিবীতেও (লোকদেরকে) তার প্রতি অনুরাগী করে দেয়া হয়। সূত্র হাদীসটি সহীহ আল বুখারী থেকে সংকলিত হলো। ব্যাখ্যা হাদীসটি মুসলিম শরীফেও সংকলিত হয়েছে। সেখানে উপরোক্ত অংশের সাথে নিম্নোক্ত অংশও রয়েছেঃ এবং আল্লাহ যখন কোনো বান্দাহকে ঘৃণা করতে শুরু করেন, তখন তিনি জিব্রীলকে ডেকে বলেনঃ আমি অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করি, তুমিও তাকে ঘৃণা করো।’ তখন জিব্রীলও তাকে ঘৃণা করতে থাকেন এবং

পৃষ্ঠা-৩৫

আকাশবাসীকে ডেকে বলেনঃ আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, তোমারাও তাকে ঘৃণা করো। তখন তারাও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। অতপর পৃথিবীতেও (লোকদের মধ্যে) তার প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হয়।’ হাদীসে আকাশবাসী বলতে ফেরেশতাদের বুঝানো হয়েছে। এ হাদীস থেকে একথা পরিষ্কারভাবে জানা যায় যে, পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ রয়েছে। এক ধরনের মানুষকে আল্লাহ তায়ালা মহব্বত করেন এবং আরেক ধরনের মানুষকে তিনি ঘৃণা করেন। বস্তুত যারা ঈমান এনে হক পথে চলার সিদ্ধান্ত নেন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকেই ভালবাসেন। আর যারা শিরক, কুফরী, ফিস্ক ও মুনাফেকীতে নিমজ্জিত থাকে আল্লাহ তাদেরকেই ঘৃণা ও অপছন্দ করেন। গোটা কুরআন মজীদে আল্লাহর পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় লোকদের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে।

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাতা ইমাম নববী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ আলেমগণের মতে, বান্দাহর প্রতি আল্লাহর মহব্বতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক বান্দাহর কল্যাণের ইচ্ছা, তাকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করা এবং নিজ নিয়ামত ও রহমত দ্বারা তাকে ভূষিত করা। আর কোনো বান্দার প্রতি আল্লাহর ঘৃণার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক উক্ত বান্দাহর অকল্যাণ ও আযাবের সিদ্ধান্ত। এ হাদীস থেকে আরেকটি জিনিস আমরা জানতে পারছি যে, ঈমানদার স ৎকর্মশীল লোকদের জন্যে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা ও মানুষের অন্তরে মহব্বত ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে দেন। পবিত্র কালামে পাকে একথাটি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছেঃ إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلْ لَهُم الرَّحْمَنُ وُدًّا – ( مريم: (٢٢) “যারা ঈমানদার ও সৎকর্মশীল দয়াময় রহমান তাদের প্রাত (সৃষ্টিকূলের) অন্তরে মহব্বত ও আকর্ষণ পয়দা করে দেন।” (মরিয়মঃ ৯৬)

শেষ রাতের মাগফিরাত: (14) عن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ينزل ربنا تبارك وتعالى كُل لَيْلَةٍ إِلى سَمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْنِي قُلْتُ اللَّيْلِ الْآخِرِ

পৃষ্ঠা-৩৬

فَيَقُولُ مَن يَرْعُوني فَاسْتَجِيبُ لَه ؟ من يسأتني فَأَعْطِيهِ؟ مَنْ يَسْتَغْفِرُونِي فاغفر له ؟ (صحيح البخاري في كتاب الدعوات) ১৪ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের মহান বরকতময় রব প্রতি রাত্রে দুনিয়ার আকাশে আগমন করেন। তিনি আগমন করেন তখন, যখন এক তৃতীয়াংশ রাত বাকী থাকে। তখন তিনি ডেকে বলেনঃ কে আছে আমার কাছে দোয়া করার, আমি তার দোয়া কবুল করবো। কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি তাকে দান করবো। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। সূত্র বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী।

আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন ক্ষমা: (10) عن انس بن مالله ربِّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ، يَقُولُ : قَالَ الله : يَا ابْنَ أَدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجُونَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أَبَانِي بالين أدم تو بنصف اتوبك مكانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرُ كَنِي فَقَرْتُ لَكَ وَلَا أَبَانِي يَا ابْنَ ادم إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقَرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا – ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكَ بِي شَيْئًا. لا تتعلق بقرابها مغفرة – ( رواه التوصلي . وقال الترمذي هذا حديث حسن غريب) ১৫ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ হে বনী আদম! তুমি যতোদিন ক্ষমার আশা নিয়ে আমাকে ডাকতে থাকবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো, যতো গুনাহ নিয়েই তুমি হাজির হওনা কেন। হে বনী আদম। আকাশের মেঘমালা সমতুল্য গুনাহ নিয়েও আমার কাছে ক্ষমা চাইলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। হে আদম সন্তান! যমীন পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার সাথে কোনো প্রকার শিরক না করা অবস্থায় যদি আমার নিকট হাজির হও তবে আমিও সমপরিমাণ মাগফিরাত নিয়ে তোমার নিকট হাজির হবো। সূত্র হাদীসটি জামে তিরমিযী থেকে গৃহীত হয়েছে।

পৃষ্ঠা-৩৭

ব্যাখ্যা আল্লাহ তায়ালার দরবারে বান্দাহর জন্যে ক্ষমার দরজা সদা সর্বদা উন্মুক্ত। বান্দাহ যখনই গুনাহ করে অনুতপ্ত হয় এবং তওবা করে আল্লাহর দিকে। ফিরে যায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। তবে আল্লাহ তায়ালা ময়দানে হাশরে, শিরকের গুনাহ মাফ করবেননা। এছাড়া তাঁর যে কোনো মুমিন বান্দার যেকোনো গুনাহ তিনি ইচ্ছা করলে মাফ করে দিতে পারবেন। সালেহ বান্দাহদের জন্যে অকল্পনীয় উত্তম পুরষ্কার عَنْ أَبي هريرة رضي قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلعم قَالَ اللهُ : أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الظَّالِمِينَ مَالَا عَيْن رأت ولا الان سيعت ولأحْطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ فَاقْرَأْنَا ان هفتم : فلا تعلم نفس ما أخفى لَهُم مِنْ قَرَّةٍ عَيْنٍ جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ – (صحيح بخاری – صحیح مسلم ) ১৬ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেনঃ আমি আমাদের সালেহ বান্দাহদের জন্যে এমনসব নিয়ামত তৈরী করে রেখেছি যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি। কোনো কান কখনো শুনেনি এবং কোনো মানুষের মন কখনো কল্পনা করেনি। (বর্ণনাকারী বলেন) হাদীসটির সত্যতা প্রমাণের জন্যে ইচ্ছা করলে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ে দেখতে পারোঃ “কোনো মানুষই জানে না আমি তাদের জন্যে কিসব চক্ষু শীতলকারী নিয়ামত গুপ্ত রেখেছি। তাদের আমলের বিনিময়ে এগুলো তাদের দান করবো।” সূত্র হাদীসটি সহীহ আল বুখারী থেকে সংকলিত হলো। ব্যাখ্যা মূলত আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তাঁর নেক বান্দাহদের জন্যে যেসব চক্ষুশীতলকারী পরম নিয়ামতসমূহ পুঞ্জীভূত রেখেছেন তা মানুষের কল্পনাতীত। গোটা কুরআন এবং হাদীস ভাণ্ডারে এর প্রাণাকর্ষী বর্ণনা রয়েছে। একটি হাদীসে বলা হয়েছেঃ “বেহেশতের একটি সুই রাখার স্থানও গোটা দুনিয়া এবং দুনিয়ার সব জিনিসের চাইতে উত্তম।”

পৃষ্ঠা-৩৮

সালাত

নামায অর্ধেক আল্লাহর অর্ধেক বান্দায়: (1) عن أبي هريرة رد عن النبي صلعم قَالَ : مَنْ صَلَّى صَلَاةٌ لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا يام الْقُرْآن نَهى حِدَاحٌ ثَلَاثًا غَيْرَ كَمَامٍ – فَقِيلَ لِأَبِي هُرَيْرَةً : إِنَّا لَكُوْنَ وَرَاءَ الْإِمَامِ. تمال افرأ بها في نفسك – فَإِنِّي سَمِعْتُ اللي من يقولُ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ قَسَمْتُ الصَّلاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي يَصْفَيْنِ وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ – فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ : الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ – قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ حَمِدَ نِي عَبْدِي – وَإِذَا قَالَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ – قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : أَثْنَى عَلَى عَبْدِي – وَإِذَا قَالَ : مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ قَالَ اللهُ مَجْدَنِي عَبْدِى وَقَالَ مَرَّةً فَوَّضَ إِلى عَبْدِي فَإِذَا قَالَ : إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ – قَالَ: هَذَا بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ – فَإِذَا قَالَ : اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ميرانا الدين العمتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ – قَالَ : هَذَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأل – (رواه مسلم و رواه ايضا اما مالك في المؤطا والنسائي والترمذي وابوداود وابن ماجه ১৭ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ‘উন্মুল কুরআন’ (সূরা ফাতিহা) ছাড়া কোন নামায পড়লো, তার সে নামায ত্রুটিযুক্ত অসম্পূর্ণ (এ কথাটি তিনি তিন বার বলেছেন)। শ্রোতাদের পক্ষ থেকে হাদীসটির বর্ণনাকারী আবু হুরাইরাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ আমরা তো ইমামের পিছে নামায পড়ি (আমরা কেমন করে ‘উন্মুল কুরআন’ পড়বো?) তিনি বললেন: নিঃশব্দে মনে মনে পড়বে। কারণ আমি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

পৃষ্ঠা-৩৯

আমি নামাযকে আমার ও বান্দাহর মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি। আর আমার বান্দাহ যা কিছু প্রার্থনা করবে, তাই তাকে দেয়া হবে। বান্দাহ যখন বলেঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিখিল জাহানের রব।’ তখন মহান আল্লাহ বলেন: ‘আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করেছে।’ বান্দাহ যখন বলে: الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ‘তিনি অতিশয় দয়ালু পরম করুণাময়’। তখন মহান আল্লাহ বলেন: ‘আমার বান্দাহ আমার গুণকীর্তন করেছে।’ বান্দাহ যখন বলে: – ماليف يوم الدين ‘তিনি প্রতিদান দিবসের মালিক’। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘আমার বান্দাহ আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছে।’ বান্দাহ যখন বলে: إيَّالَقَ تَعْبُدُ فِي إِيَّالَةَ تَسْتَمِينُ ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।’ তখন মহান আল্লাহ বলেন: ‘এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দাহর মধ্যকার বিশেষ সম্পর্ক ও বিশেষ চুক্তি। আর আমার বান্দাহ যা চাইবে আমি তাকে তা-ই দেবো।’ বান্দাহ যখন বলে: اهدنا القيراط المستقيم صراط الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ ولا الضَّالِّينَ . ‘আমাদেরকে সঠিক সুদৃঢ় পথ প্রদর্শন করো। সেই মনীষীদের পথ যাদের তুমি নিয়ামত দ্বারা পুরষ্কৃত করেছো, যারা অভিশপ্ত নয় এবং পথভ্রষ্ট নয়’ তখন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘এই সবই আমার বান্দাহর জন্যে রয়েছে। আর আমার বান্দাহ যা চাইবে সবই তাকে দেয়া হবে।’

পৃষ্ঠা-৪০

সূত্র হাদীসটি সহীহ মুসলিম থেকে গৃহীত। “প্রত্যেক রাকাআতে ফাতিহা পড়া ওয়াজিব” এই শিরোনামের অধীনে হাদীসটি মুসলিম শরীফে সংকলিত হয়েছে। এছাড়াও হাদীসটি মুআত্তায়ে ইমাম মালিক, জামে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজাহ এবং সুনানে নাসায়ী প্রভৃতি গ্রন্থাবলীতে সংকলিত হয়েছে। ব্যাখ্যা ইমাম নববী বলেছেন: আলেমগণের মতে এই হাদীসে উল্লেখিত সালাত (নামায) মানে সুরা ফাতিহা। কেননা সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায সহীহ হয়না। অর্থগত দিক থেকেও সূরাটি দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমার্ধে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা, গুণাবলী ও মর্যাদার কথা উল্লেখ হয়েছে। আর দ্বিতীয়ার্ধে উল্লেখ হয়েছে বান্দাহর অঙ্গীকার ও প্রার্থনা। এ হাদীসের ভিত্তিতে কিছু কিছু ইমাম বলেছেন, ইমামের পিছেও মুক্তাদীর জন্যে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। আবার অন্য হাদীসের ভিত্তিতে কিছু কিছু ইমাম বলেছেন, ইমাম পড়লেই মুক্তাদীর ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। অন্য কয়েকজন ইমাম বলেছেন, ইমাম যেসব নামাযে সশব্দে কুরআন তিলাওয়াত করেন, সেসব নামাযে মুক্তাদীর শুনাই যথেষ্ট। কিন্তু যেসব নামাযে ইমাম নিঃশব্দে তিলাওয়াত করেন সেসব নামাযে মুক্তাদীও সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। এমতটিই অধিকতর বিশুদ্ধ মনে হয়। নামায হিফাযতকারীর জন্য আল্লাহর জান্নাতের অঙ্গীকার: عَنْ أَبِي تَتَادَةَ رَم قَالَ قَالَ رَسُولُ الله من قَالَ الله تَعَالَى : إِنِّي فَرَضْتُ عَلَى انيك خمس سنواتٍ وَعَهِدْتُ عِنْدِي عَهْدًا : أَنَّهُ مَنْ جَاءَ يُحَافِظُ عَلَيْهِنَّ لوَلَتِهِنَّ أَدْخَلْكَة الجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظُ عَلَيْهِنَّ فَلا عَهْدَ لَهُ عِنْدِي. (سنن ابودازد و این ماجه)

১৮ আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ আমি তোমার উম্মতের জন্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি নিজের নিকট অঙ্গীকার করেছি, যে ব্যক্তি সময়ানুবর্তিতার সাথে নামাযসমূহের পূর্ণ হিফাযতকারী হিসেবে আমার কাছে আসবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ

পৃষ্ঠা-৪১

করাবো। আর যে নামাযসমূহের হিফাযত করবেনা তার জন্য আমার নিকট কোন অঙ্গীকার নেই। সূত্র সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে ইবনে মাযাহ। ব্যাখ্যা আল্লাহ তায়ালা তাঁর পবিত্র কালামে পাকেও সফলতা অর্জনকারী মু’মিনদের একটি বৈশিষ্ট্য এই বলে বর্ণনা করেছেন: وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَواتِهِمْ يُحَافِظُونَ – (المؤمنون : ٩) ‘তারা নিজেদের নামাযসমূহের পূর্ণ হিফাযত করে।’ কিন্তু ‘নামাযসমূহের পূর্ণ হিফাযত করার’ তাৎপর্য কি? এ সম্পর্কে প্রখ্যাত মুফাসসির আবুল আলা মওদূদী (রঃ) লিখেছেনঃ “নামাযসমূহের হিফাযত করার মানে নামাযের নির্দিষ্ট সময় নামাযের নিয়মকানুন, আরকান, বিভিন্ন অংশ এক কথায় নামায সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয় ও প্রত্যেকটি জিনিসের পূর্ণ সংরক্ষণ ও হিফাযত। শরীর ও পরিধেয় পাক পবিত্র রাখা। অযু সঠিকভাবে করা। কখনো বিনা অযুতে নামায না পড়া। সঠিক সময়ে নামায পড়া। সময় অতিবাহিত করে না পড়া। নামাযের প্রতিটি রোকন পূর্ণ স্থিতি ও মনোযোগ সহকারে আদায় করা। কোনো রকমে তাড়াহুড়া করে নামাযের ‘বোঝা’ (৫) নামিয়ে রেখে চলে না যাওয়া। নামাযে যা কিছু পড়বে, তা এমনভাবে পড়া যেনো বান্দাহ তার মালিকের নিকট সবিনয়ে কিছু নিবেদন করছে।

আযান দিয়ে নামায কায়েমকারীর জন্যে ক্ষমা: (۱۹) عَنْ مُلْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ يَقُولُ يَعْجَبُ رَبُّكَ مِنْ رَاعِي قَنَم في رَأْسٍ شَفِيةِ الْجَبَلِ يُوَذِّنُ بِالصَّلاةِ وَيُصَلِّي فَيَقُولُ الله عَزَّ وَجَلَّ أَنظُرُوا إِلَى عَبْدِى هَذَا يُؤذِّنُ وَيُقِيمُ الصَّلاةَ يَخَافُ مِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِي وَادْخَلْتُة الجلة – ( رواه النسائي) ১৯ উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমার রব সেই মেষের রাখালের কাজে খুবই আনন্দিত হন, যে নির্জন পাহাড়ের চূড়ায় আযান দিয়ে নামায কায়েম করে। তার সম্পর্কে তিনি (ফেরেশতাদের) বলেনঃ আমার এই বান্দাহ্র দিকে চেয়ে দেখো, আমার ভয়ে সে (নির্জনে) আযান দিয়ে

পৃষ্ঠা-৪২

নামায কায়েম করছে। আমি আমার বান্দাহকে মাফ করে দিলাম আর আমি তাকে প্রবেশ করাবো জান্নাতে। সূত্র হাদীসটি ইমাম নাসায়ী তাঁর সুনান গ্রন্থে “একাকী নামায আদায়কারীর জন্য আযানের প্রয়োজনীয়তা।” অধ্যায়ে সংকলন করেছেন।ফেরেশতাগণ কর্তৃক আল্লাহর নিকট বান্দাহর নামাযের রিপোর্ট: (۰) عن أبي هريرة رض قال قال اللين ٣ : الْمَلَائِكَةُ يَتَعَاقَبُونَ – مَلَائِكَةُ بِاللَّيْلِ وملائكة بالنَّهَارِ وَيَجْلُوعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَ صَلاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بالو فِيكُمْ – نَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ فَيَقُولُ : كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَقَيْلَهُمْ يَصَلُّونَ – ( رواه البخاري) ২০ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব ফেরেশতা রাত্রে ও দিনে তোমাদের কাছে আসে, তাদের একদল আসে এবং আরেক দল যায়। ফযর ও আসর নামাযের সময় তারা দুইদল একত্র হয়। অতপর (পালা শেষ করে) তোমাদের মাঝে রাত্রি যাপনকারী ফেরেশতারা আকাশে উঠে যায়। তখন তাদের রব তাদের জিজ্ঞেস করেনঃ তোমরা আমার বান্দাহদের কী অবস্থায় দেখে এসেছো? অথচ তিনি তাদের সবকিছুই সর্বাধিক অবগত আছেন। জবাবে ফেরেশতারা বলেনঃ আমরা তাদের নামাযরত অবস্থায় রেখে এসেছি আর গিয়ে দেখেছিলাম তারা নামায পড়ে। সূত্র হাদীসটি সহীহ বুখারীর ‘সালাত অধ্যায়’ ‘সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়” এবং ‘তাওহীদ অধ্যায়ে’ সংকলিত হয়েছে।

এক ওয়াক্তের পর আরেক ওয়াক্ত নামাযের জন্য অপেক্ষা করার মর্যাদা: (۲) عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رد قَالَ : عَلَيْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ الْمَغْرِبُ ترجع من رجع وَعَلبَ مَنْ غَلَبَ فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ وَ مُسْرِنَا قَدْ حَمْزَةَ النَّفْسُ وَقَدْ كَسَرَ عَنْ رُقَبَتْيْمٍ فَقَالَ : أَبْشِرُوا هَذَا رَبَّكُمْ قَدْ فَلَعَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ السَّمَاءِ

পৃষ্ঠা-৪৩

وَيُبَاهِي بِكُمُ الْمَلَائِكَة – يَقُولُ انْظُرُوا إِلى عِبَادِى قَلْ قَضَوْا فَرِيضَةٌ وَهُمْ يَنْتَظِري اخری – (سنن ابن ماجه ) ২১ আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ একদা আমরা রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মাগরিবের নামায পড়লাম। অতপর যারা চলে যাবার তারা চলে গেলো। আর যারা অপেক্ষা করার তারা মসজিদে থেকে গেলো। এমন সময় রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উর্ধ্বশ্বাসে দ্রুত মসজিদ পানে ছুটে এলেন। দ্রুত বেগে আসার কারণে তাঁর হাটু উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল। তিনি এসে (মসজিদে অবস্থানরত লোকদের সম্বোধন করে) বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের রব আকাশে একটি (রহমত ও বরকতের) দরজা খুলে দিয়েছেন। তোমাদের প্রশংসা করে তিনি ফেরেশতাদের বলছেনঃ দেখো আমার বান্দাহদের। তারা একটি ফরয আদায় করে আরেকটি ফরযের অপেক্ষায় রয়েছে। সূত্র সুনানে ইবনে মাজাহ।

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে: (٢) عن أبي هريرة عَنِ النَّبِيِّ – أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ النَّاسُ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ أعمالهم الصلوة – قَالَ يَكُولُ رَبَّنَا جَلَّ وَعَزَّ لِمَلَائِكَتِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ الْخُرُوا فِي صَلوةِ عَبْدِي أَنتَها أَمْ نَقصها ؟ فَإن كانت قائمة كيف لَهُ كَانَةً وَإِن كَانَ انْتَقَصَ مِنْهَا شَيْئًا قال الكروا من لِعَبْدِنى من كنوع ؟ فَإِن كَانَ لَهُ تعوم قَالَ أَتُوا يعبري فريضة من العلويه ثم تُؤْخَذُ الْأَعْمَال على ذلكم – (سنن ابو داؤد والنسائي)

২২ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মানুষের সমস্ত আমলের মধ্যে কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। সবকিছু জানা সত্ত্বেও আমাদের রব সেদিন ফেরেশতাদের বলবেনঃ আমার বান্দাহর (ফরয) নামাযের (রেকর্ড) দেখো, সে কি তা পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছে নাকি কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি রয়ে গেছে? যদি তার (ফরয) নামায নিখুঁতভাবে পাওয়া যায়, তবে পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছে বলে লেখা হবে। আর যদি তাতে কোনো ত্রুটি

পৃষ্ঠা-৪৪

বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তবে আল্লাহ তায়ালা বলবেনঃ দেখো, আমার বান্দাহর কি নফল নামায রয়েছে? যদি নফল নামায পাওয়া যায়, তবে বলবেনঃ আমার বান্দাহর নফল নামায দ্বারা ফরয নামাযকে পূর্ণাঙ্গ করে দাও। অতপর এভাবেই হিসাব গ্রহণ করা হবে প্রতিটি আমলের (যেমনঃ যাকাত, সাওম ইত্যাদি)। সূত্র সুনানে আবু দাউদ ও নাসায়ী।

চাশতের নামাযের মর্যাদা।: (س) عن أبي الأرْدَاء وَأَبِي ذَر را عَنْ رَسُولِ اللهِ عَنِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ : ابن ادم انكم في مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ أَرْبَعَ رَكَعَابٍ أكفلة أخرة – (جامع الترمذي و سنن ابو داؤد)

২৩ আবু দারদা ও আবুযর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ হে আদম সন্তান। দিনের প্রথমার্ধে আমার জন্য চার রাকায়াত নামায পড়ো। এ নামায তোমার দিনের শেষার্ধের জন্য যথেষ্ট হবে। সূত্র জামে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ। ব্যাখ্যা দিনের প্রথমার্ধের এ নামায আমাদের দেশে চাশতের নামায বলে পরিচিত। কোনো কোনো ইমামের মতে এ নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেছেন: চাশতের নামায কমপক্ষে দু’রাকায়াত। উত্তম হলো আট রাকায়াত আর বার রাকায়াত পড়াও জায়েয আছে। সূর্য উদয় হয়ে উপরের দিকে উঠার পর থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত এ নামাযের ওয়াক্ত। তবে দিনের চারভাগের প্রথমভাগে পড়া উত্তম। এছাড়াও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনের ও রাতের বিভিন্ন অংশে, ফরয নামাযের আগে-পরে অনেক (নফল) নামায পড়তেন। ফরয নামাযের পূর্ণাঙ্গতা লাভের জন্য সকলকেই এসব নফল নামায পড়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের অধিক অধিক নামায পড়ার তৌফিক দিন!

পৃষ্ঠা-৪৫

নামায গুনাহের কাফ্ফারা: (٢٤) عَنْ مُعَادِ بْنِ جَبَلٍ كَانَ اخْتَبَسَ عَنَّا رَسُوْلُ اللَّهِ مَن ذَاكَ غَدَامٍ مَنْ صَلَاةِ الطبع على كدْنَا نَتَرَابًا عَيْنَ الشَّمْسِ فَخَرَجَ سَرِيعا فَلُوبَ بِالصَّلوةِ تَصْلَى رَسُولُ اللوم والجوز في علايم فَلَمَّا سَلام دعا بصويه قَالَ لَنَا : عَلَى مَصَالُكُمْ كَمَا أَنكُمْ كم انتقل إلَيْنَا ثُمَّ قَالَ : أَمَّا لِي سَأَحَلِيتُكُمْ مَا حَبَسَنِي عَلَكُمْ إِنِّي قَمْتُ مِنَ اللَّيْلِ فَتَوَكَّلْتُ وَصَلَّيْتُ مَا قُونَ في فَلَعَسْك في صدوق حَتَّى اسْتَتَقَلْتُ . فاذا أنا يرقي تبارك وَتَعَالَى فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ فَقَالَ يَا مُحَمَّلُ : قُلْتُ لَبَّيْكَ رَبَّ – قَالَ فِيمَا يَخْتَهِمُ الْمَلاء الأعلى – قلت لا أدرى – قالها ثلاثا – قَالَ فَرَأَيْتُهُ وَضَعَ كَفَّهُ بين كَيْفَ – حَتَّى وَجَلْتُ بَرْدَ أَنَا مِلِم بَيْنَ قَدْ يَنَ فَتَجَلَّى إِن كُلَّ شَيْءٍ وَعَرَفْهُ فَقَالَ يَا مُحمد : قُلْتُ تَشَيْك رَبُّ – قَالَ فِيمَا يَخْتَصِمُ الْمَلَامُ الْأَعْلَى ؟ قُلْتُ في الْكَفَّارَةِ قَالَ مَا هُنَّ : قُلْتُ مَضى الأفكار إلى الْحَسَنَاتِ وَالْجُلُوسُ فِي الْمَسَاجِدِ بعد الصلوات واسْبَامُ الْوُسُوءِ حِيْنَ الْكَرِيهات – قَالَ فِيمَ ؟ قُلْتُ العَامُ الطَّعَامِ وَلِيْنِ الْكَلام والصلوة بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ كَالِحُونَ – قَالَ سَلَ قُلْتُ اللَّهُمَّ أسئلك بعل الخيرات وتزيد المنكرات وحب الْمَسَاكِينِ وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَوْتَنِي وإِذَا أَرَدْتَ بلحة قوم تتوفني غير مفتون – اسْتَلْكَ حُبَّكَ وَحَبَّ عَمَلٍ يُقْرَبُ إلى حبك . كان رسولُ اللهِ مِن إِنَّهَا حَتَّى كَادُرُسُوْهَا ثُمَّ تَعَلَيْرُها – ( رواه الترمذي)

২৪ মুয়ায বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন ফজর নামাযে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের থেকে অনুপস্থিত পেলাম। এমনকি সূর্যোদয়ের সময় সন্নিকটে এলো। এমন সময় তিনি দ্রুত বেরিয়ে এলেন এবং তাড়াতাড়ি নামায পড়ালেন। সালাম শেষ করে তিনি উচ্চস্বরে আমাদের বললেনঃ তোমরা যেভাবে আছ সেভাবে তোমাদের সারিতে বসে থাক। অতপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ আজ ভোরে যে জিনিস আমাকে তোমাদের থেকে অনুপস্থিত রেখেছে, সে বিষয়ে বলছিঃ আমি রাত্রে উঠে অযু করে আমার জন্যে নির্ধারিত নামায পড়ছিলাম।

 

পৃষ্ঠা ৪৬ থেকে ৬০

পৃষ্ঠা-৪৬

নামাযে আমার তন্দ্রা এলো এবং তা অনেকটা ভারী হলো। এমন সময় আমি আল্লাহ তাবারুক ও তায়ালাকে সর্বোত্তম সূরতে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আমি বললামঃ লাব্বায়েক হে প্রভু। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ উর্ধ্ব জগতে (ফেরেশতারা) কোন বিষয়ে বিবাদ করছে? আমি বললামঃ আমি জানি না। কথাটি তিনি তিনবার জিজ্ঞেস করলেন (এবং আমি একই জবাব দিলাম)। অতপর আমি দেখলাম, আমার দুই কাঁধে তিনি হাত রাখলেন। আমার বুকে আমি তাঁর আঙ্গুলের স্পর্শ অনুভব করলাম। এতে করে আমার কাছে সবকিছু আলোকিত হয়ে গেল। আমি সব কিছু জানতে পারলাম। এবার তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ। আমি বললামঃ লাব্বায়েক হে প্রভু! তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ উর্ধ্ব জগতে (ফেরেশতারা) কোন বিষয়ে বাদানুবাদ করছে? আমি বললামঃ সেসব বিষয়ে, যেগুলো দ্বারা গুনাহ বিদূরিত হয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ সেগুলো কি? আমি বললামঃ

১. যাবতীয় নেক ও উত্তম কাজে এগিয়ে চলা।

২. নামাযের পর মসজিদে অবস্থান করা।

৩. কষ্টের সময়ও অযু করা।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন আর কোন কোন বিষয়ে তারা বিবাদ করছে? আমি বললামঃ

৪. খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে।

৫. কোমল ও নম্রভাবে কথা বলার ব্যাপারে।

৬. গভীর রাত্রে (নফল) নামায পড়ার ব্যাপারে, যখন মানুষ নিদ্রায় নিমগ্ন।

তিনি বললেন প্রার্থনা করো। আমি তখন প্রার্থনা করলামঃ

হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছিঃ

১. উত্তম কাজ করার

২. অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করার

৩. মিসকীনদের ভালবাসার

৪. আমার প্রতি তোমার ক্ষমার

৫. আমার প্রতি তোমার রহমতের এবং

৬. তুমি যখন কোনো কওমকে ফেতনায় ফেলার সিদ্ধান্ত নেবে, তখন

ফেতনায় নিমজ্জিত করা ছাড়াই আমাকে মৃত্যু দান করার। আমি আরো প্রার্থনা করছিঃ

পৃষ্ঠা-৪৭

৭. তোমার মহব্বতের

৮. সেইসব মানুষের মহব্বতের যারা তোমাকে মহব্বত করে এবং

৯. সেইসব আমলকে মহব্বত করার যেগুলো তোমার মহব্বতের নিকটবর্তী করে দেয়।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এগুলো সত্য কথা। এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো এবং শিক্ষা দান করো।

সূত্র হাদীসটি জামে তিরমিযী থেকে সংকলিত হলো।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায কিভাবে ফরয হলো?

(٣٥) عن أنس بني مالك يقول لَيْلَةَ أَسْرِى بِرَسُوْلِ اللهِ عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِن مَسْجِدِ الكَعْبَة إِنَّهُ جَاءَة ثلاثة نفر قبل أَن يُوحَى إِلَيْهِ وَهُوَ نَاهُم فِي المسجد الحرام فقال أولهُمْ أَيُّهُمْ هُوَ فَقَالَ أَوْسَهُمْ هُوَ خَيْرُهُمْ نَقَالَ أَخِرُهُمْ الحدوا الخَيْرَهُم الكاشف الله الليلَة فَلَمْ يَرَهُمْ حَتَّى أَتَوْهُ لَيْلَةُ أُخْرَى فِيْمَا يَرَى قلبه وتنام عَيْنَهُ وَلَا ينام قلبه وكذالك الأنبياء لنَامُ أَعْيُنُهُمْ وَلَا تَكامُ قُلُوبُهُمْ فَلَمْ يُكَلِّمُونَ حَتَّى اخْتَلَمُوا فَوَضَعُوهُ عِنْدَ بِشَرِ زَمْزَمَ فَتَوَلاهُ مِنْهُمْ جبريل فشق جبرييلُ مَا بَيْنَ نَحْرم إلى لبهم عَلَى فَرَّ مِنْ صَدْرِهِ وَجَوْفِهِ نغسله بن عامِ رَمَزَمَ بِيَدِهِ حَتَّى القلى جونَهُ ثُمَّ أَتِيَ بِعَيْبٍ مِنْ ذَهَبٍ بيْهِ لَوْرٌ مِّن ذَهَبٍ مَحْشُوا إِيْمَانًا وَحِكْمَة تَعَشَابِهِ صَدْرُهُ وَلَعَادِيدَهُ يَعْنِي عُرُوقَ خَلْقِهِ ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثم عرج به إلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَضَرَبَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِهَا فَنَادَاهُ أهْلُ السَّمَاءِ مَن هَذا فَقَالَ جِبْرَلِيْكَ قَالُوا وَمَنْ تَعَاكَ قَالَ مَعِي مُحْمنُ قَالَ وَقَدْ بصِيفَ قَالَ نَعَمْ قَالُوا فَمَرْحَبًا بِه وَأَهْلاً يَسْتَبْشِرُ بِهِ أَهْلُ السَّمَاءِ لَا يَعْلَمُ أَهْلُ السَّمَاءِ بِمَا يُريد الله به في الْأَرْضِ عَلى يُعْلِمُهُمْ فَوَجَدَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا آدَمَ فَقَالَ له جبرئيل هذا أبواكَ فَسَلَّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَرَدَّ عَلَيْهِ أَدَمُ وَقَالَ مَرْحَبًا و أَهْلًا بِابَنِي فَنِعْمَ الْإِبْنُ أنك فَإِذَا هُوَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا بِتَهْرَيْنِ يَعْرِدَانِ فَقَالَ مَا هذَانِ الشَّهْرَانِ يَا جِبريل قال هذا النيل والفرانك فلصُرُهُمَا ثُمَّ معى به في

পৃষ্ঠা-৪৮

في السَّمَاءِ فَإذا هو بنهر الخَر عَلَيْهِ فَضرٌ مِنْ تُؤْلُو وَجَبَرْجَرٍ مُعْتَرَبَ يَدَهُ فَإِذَا هو مسلك أَظْفَرُ فَقَالَ مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هُوَ هُذَا الْكَوْفَرُ الَّذِي قَدْ خَبَأَ لَكَ ربك ثم عرج به إلى السمارة الثانية فقالت الملاية لَهُ مِثْلَ مَا قالت له الأولى من هذا قال جبرئيل قالوا وَمَن لعلك قال محمد قال وقل بعثُ إِلَيْهِ قَالَ نَعَمْ قَالُوا مَرْحَبًا بِم وأهلاً ثم عرج به إلى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ وَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ما قَالَتِ الأولى والثانية ثم عرج به إلى الرابعة فَقَالُوا لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ مَر يم إلى السَّمَاءِ الخَامِسَة فَقَالُوا له مثل ذلك ثم عرج به إلى السَّمَاءِ السَّادِسَةِ العوانة مغل دية ثم عوام يم إلى الشمال الشايعة لكانوا لَهُ مِثْلَ ذلك عن سكار فيها أنبياء من سَمَّاهُمْ فَأَوْعَيْتُ مِنْهُمْ إِدْرِيسُ فِي الثَّانِيَةِ وَهَارُوتُ في الرابعة وأخر في القامة لم تحفظ إسْتَه وَ إِبْرَاهِيمُ فِي السَّادِسَاء وَمُوسَى في التابعة الفصيل كلام الله فَقَالَ مُوسَى رَبِّ، ثم أَن أَنْ يُرْنَعَ عَلَى أَحَدٌ ثُمَّ علا به قول ذيق بما لا يغله إلا الله عَلى جَاءَ سِدْرَة الْمُنْتَهَى وَدَنَا الْجَبَّارُ رَب الْعِزَّةِ فَتَدَى حَتَّى كَانَ مِنْهُ قَابَ قَوْسَيْن أو اللى فأوحى اللهُ إِلَيْهِ فِيْمَا يُوْحِى الله خَمْسِينَ صَلوةٌ عَلَى امين كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ كُم هَبَا حَتَّى بَلَغَ مُوسَى فَالمُتَسَبَة مُوسى فَقَالَ يَا مُحَمَّلُ ماذا عهد إلي رجلك قال فهد إِلَى خَمْسِينَ صَلوةٌ كُلَّ يوم وليلة قال إن أختك لا تستطيع ذلك ما رجع فَلْيُخَفِّفَ عَنْكَ رَبُّكَ وَمَنْهُمْ كالتليت اللي من إلى جبرائيل كَانَة يَسْتَشِيرة في ذي فَأَشَرَ إِلَيْهِ جِبْرَئِيلُ أَن لهم إن شلت فعلا بم إلى الكبار كمال وهو مكانة يَا رَبِّ خَلِفَ عَنَّا فَإِنَّ أَمْنِي لا تستطيع هذا توقع عنه عشر صلوات ثم رجع إلى مُوسَى فَاخْتَسَبُهُ فَلَمْ يَزَلْ يردد مولى إلى رَبِّهِ حَتَّى صَارَتْ إِلَى خَمْسٍ صَلَوَابٍ ثُمَّ اخْتَسَبَةِ مُوسَى عِنْدَ الْخَمْسِ لكَانَ يَا مُحَمَّدُ وَاللهِ لَكن رَا وَدْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ الويش عَلَى أَدْنَى مِنْ هَذَا فَضْعُموا وتركوه مأملُكَ الْعَافُ أَجْسَادًا وَقُلُوْبًا وَأَبْدَانَا وَأَبْصَارًا وَأَسْمَانَا فَارْجِعْ  فَلْيُكَينَ منك رب كل ذيك يلتفت اللي من إلى جبريلَ لِهشِيرَ عَلَيْهِ ولا يكره ذيق

পৃষ্ঠা-৪৯

جبريل فَراعَة عِندَ الْقَامِةِ فَقَالَ يَا رَبِّ إِنَّ النِي مُعَفَاهُ أَجْسَادُهُمْ وَ قلوبهم وَاسْمَعُهُمْ وَأَبْرَانَهُمْ فَخَلفَ عَنَّا فَقَالَ الْجَبَّارُ يَا مُحَمَّدُ قَالَ لَبَّيْكَ و سَعْرَيْكَ قَالَ إِنَّهُ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ تَرَى كَمَا فَرَضْتُ عَلَيْكَ في أَمَ الْكِتَابِ وَ هِى حمل عليك ترجع إلى موسى نكال كَيْفَ فَعَلْتَ فَقَالَ خَلْفَ عَنَّا فَكُلُّ حَسَنَةٍ يغفر أَمْثَالِها لمن هم في أم الكتاب أعطانا بِكُلِّ حَمَلَةٍ غَيْرَ أَمْثَائِهَا قَالَ مُوسى كن والله روادت بني إسرائيل على أدنى من ذيق فلوكون ارجع إلى رتلك اليمين خللك أَيْا كَانَ رَسُولُ اللهِ – يَا مُوسَى قَل والله استخينيك مِن رَّبِّي مِمَّا الحليف إليه قال كافية بسم الله فاسْتَيْقَنَا وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ .

الخرجه البخاري في كتاب التوحید و روای ايضا مسلم والنسائي وابن ماجه)

২৫ আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কা’বার মসজিদ (অর্থাৎ

মসজিদে হারাম) থেকে সফর করানো হয়েছিলো। ঘটনাটি হলো, ‘নবী সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (মি’রাজ সম্পর্কে) অহী প্রেরণের আগে তাঁর কাছে

তিনজন ফেরেশতা আসলেন। সেসময় তিনি মসজিদে হারামে ঘুমিয়েছিলেন।

তাদের (ফেরেশতাদের) প্রথমজন বললেনঃ তিনি কে (যাকে আমরা খুঁজে

ফিরছি)? মাঝের জন বললেনঃ তিনিই এদের সবার মধ্যকার উত্তম ব্যক্তি।

শেষজন তখন বললেনঃ তাহলে তাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তিকেই নিয়ে চলো।’

ঐ রাতের ঘটনা এতোটুকুই। সেরাতে তিনি আর তাদের দেখতে পেলেননা।

অবশেষে তাঁরা অন্য এক রাতে এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

হৃদয় দিয়ে তা দেখলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ ঘুমিয়ে

পড়তো, কিন্তু হৃদয় ঘুমাতোনা। এভাবেই সব নবীদের চোখ ঘুমায়। মন

ঘুমায়না। এ রাতে তাঁরা (ফেরেশতারা) কোন প্রকার কথাবার্তা বললেননা। বরং

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে যমযম কুপের পাশে

রাখলেন। এবার জিবরাঈল তাঁর কাজ বুঝে নিলেন। জিবরাঈল তাঁর নবী

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গলা থেকে বক্ষস্থল পর্যন্ত চিরে ফেললেন এবং

তাঁর বক্ষ ও পেট থেকে সমুদয় বস্তু বের করলেন। তারপর নিজ হাতে যমযমের

পানি দ্বারা ধুয়ে তাঁর পেট পবিত্র করলেন। এরপর সোনার একটি তশতরী আনা

হলো, যাতে ঈমান ও হিকমতে পূর্ণ সোনার একটি পাত্র ছিলো। তাদ্বারা তাঁর

পৃষ্ঠা-৫০

বক্ষ ও কন্ঠের ধমনিগুলো পূর্ণ করলেন এবং জোড়া লাগিয়ে দিলেন। এরপর

তাঁকে নিয়ে পৃথিবীর আসমানের দিকে আরোহণ করলেন এবং একটি দরজাতে

নাড়া দিলেন। এতে আসমানবাসীরা ডেকে জিজ্ঞেস করলোঃ কে? তিনি

(জিবরাঈল) বললেন, জিবরাঈল। তাঁরা বললো, আপনার সাথে কে? তিনি

বললেন, আমার সাথে মুহাম্মদ। তাঁরা বললো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে?

জিবরাঈল বললেন, হাঁ। তখন আসমানবাসীরা বললো, মারহাবা। স্বাগতম। তাঁর

আগমনে আসমানবাসীরা খুব আনন্দ অনুভব করতে শুরু করলো। আল্লাহ

তা’আলা পৃথিবীতে কি করতে চাচ্ছেন, তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো

পর্যন্ত তাঁরা জানতে পারেনা। দুনিয়ার আসমানে তিনি আদমকে দেখতে পেলেন।

জিবরাঈল তাঁকে বললেন, তিনি আপনার (আদি) পিতা। তাঁকে সালাম দিন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সালাম দিলেন। আদম তাঁর সালামের

জবাব দিলেন এবং বললেন, মারহাবা। স্বাগতম হে বেটা। কতো উত্তম বেটা

তুমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার আসমানে দু’টি নহর প্রবাহিত

হচ্ছে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, হে জিবরাঈল। এ দু’টি সরু নহর কি?

জিবরাঈল বললেন, এ দুটি নহর নীল ও ফোরাত নদীর উৎসধারা। এরপর

জিবরাঈল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাথে করে এ আসমানেই ঘুরে

বেড়ালেন। তিনি একটি নহর দেখতে পেলেন। এর ওপর ছিল মোতি এবং

পান্নার তৈরী একটি মহল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত

ডুবিয়ে দেখলেন। তা ছিল অতি উত্তম মিল্ক। তিনি বললেন, হে জিবরাঈল!

এটি কিং জিবরাঈল বললেন, এটি হাউযে কাউসার, যা আপনার রব আপনার

জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। এরপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে

সাথে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে গেলেন। প্রথম আসমানের ফেরেশতারা তাঁকে

(জিবরাঈল) যা যা বলেছিল এরাও তা-ই বললো। তাঁরা জিজ্ঞেস করলো, কে?

তিনি বললেন, জিবরাঈল। তাঁরা বললো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন,

মুহাম্মদ। তাঁরা বললো, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ।

তাঁরা বললো, তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মোবারকবাদ ও

স্বাগতম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাথে নিয়ে তিনি

তৃতীয় আসমানে গেলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানের ফেরেশতারা যা যা

বলেছিলো, তৃতীয় আসমানের ফেরেশতারাও তাই বললো। তারপর তাঁকে

সাথে নিয়ে তিনি চতুর্থ আসমানে গেলেন। তাঁরাও তাঁকে পূর্বের মতোই বললো।

অতপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গেলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো

পৃষ্ঠা-৫১

বললো। এবার তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানে গেলেন। সেখানেও ফেরেশতারা তাঁকে পূর্বের মতো বললো। সর্বশেষে তিনি তাঁকে নিয়ে সপ্তম আসমানে গেলেন। সেখানেও ফেরেশতারা তাঁকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললো। বর্ণনাকারী বলেন, প্রত্যেক আসমানেই নবী আছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। এরমধ্যে আমি যা মনে রাখতে সক্ষম হয়েছি তা হলো, দ্বিতীয় আসমানে ইদ্রীস, চতুর্থ আসমানে হারুন এবং পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী আছেন আমি যাঁর নাম মনে রাখতে পারি নাই। ষষ্ঠ আসমানে আছেন ইবরাহীম এবং আল্লাহ তা’য়ালার সাথে কথা বলার বিশেষ মর্যাদার কারণে মূসা আছেন সপ্তম আসমানে। সেই সময় মূসা বললেন, হে রব! আমি চিন্তাও করি নাই যে, আমার চাইতে উর্ধেও অন্য কাউকে উঠানো হবে। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরো উর্ধে নিয়ে যাওয়া হলো। এ স্থান সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ-ই জানে না। অবশেষে তিনি “সিদরাতুল মুনতাহায়” উপনীত হলেন। এখানেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ এসে তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হলেন। এতো নিকটবর্তী হলেন যেমন মুখোমুখী রাখা দু’টি ধনুকের রশি অথবা তার চাইতে অধিক নিকটে। তখন আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অহী দিলেন যাতে তাঁর উম্মতের প্রতি রাত ও দিনে পঞ্চাশবার নামায পড়ার নিদের্শ ছিলো। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করে মূসার কাছে পৌঁছলে মূসা তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মদ। আপনার রব আপনাকে কি আদেশ করলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাত ও দিনে পঞ্চাশবার নামায পড়ার আদেশ করলেন। মূসা (আঃ) বললেন, আপনার উম্মত এটা পালন করতে সক্ষম হবেনা। তাই আপনি ফিরে যান যাতে আপনার রব আপনার ও আপনার উম্মতের জন্য এ আদেশকে হালকা করে দেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলের প্রতি তাকালেন যেন তিনি এ ব্যাপারে তার পরামর্শ চাচ্ছেন। জিবরাঈল তাঁকে ইশারা করে বললেন, হাঁ আপনি যদি চান তবে যেতে পারেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আবার মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কাছে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্বের জায়গায় দাঁড়িয়ে বললেন, হে রব। আমাদের জন্য নামাযের নির্দেশ হালকা করে দিন। কেননা আমার উম্মত এ নির্দেশ পালন করতে সক্ষম হবেনা। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা দশ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসার (আঃ) কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে

পৃষ্ঠা-৫২

থামালেন। এভাবে মূসা তাঁকে তাঁর রবের কাছে ফেরত পাঠাতে থাকলেন। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামায অবশিষ্ট থাকলো। পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকতে মূসা তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মদ, আল্লাহর কসম! আমি আমার কওম বনী ইসরাঈলের কাছে এর চেয়েও কম পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা দুর্বল হয়ে তাও পরিত্যাগ করেছিল। আপনার উম্মত তো শারীরিক, মানসিক, দৈহিক, দৃষ্টি শক্তি ও শ্রবণ শক্তির দিক দিয়ে আরোও দুর্বল। তাই আপনি ফিরে যান এবং আপনার রবের নিকট থেকে আরো কম করে আনুন। প্রতিবারই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিররাঈলের প্রতি তাকাতেন। পঞ্চমবারে ও জিবরাঈল তাঁকে নিয়ে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে রব। আমার উম্মতের শরীর, মন, শ্রবণ শক্তি ও দেহ দুর্বল সুতরাং আমাদের প্রতি (নামাযের) এ নির্দেশকে আরো হালকা করে দিন। তখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বললেন, হে মুহাম্মদ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন হে রব! আমি হাযির! আমি তোমার দরবারে পুনঃপুনঃ হাযির। আল্লাহ বললেন, আমার নিকট বাণীর কোন রদবদল হয়না। আমি তোমাদের প্রতি যা ফরয করেছিলাম তা উন্মুল কিতাব অর্থাৎ ‘লওহে মাহফুযে’ লিপিবদ্ধ আছে। প্রত্যেক সৎ কাজের নেকী দশগুণ। উম্বুল কিতাব বা ‘লওহে মাহফুযে’ নামায পঞ্চাশই লিপিবদ্ধ থাকলো। শুধু তোমার ও তোমার উম্মতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসার কাছে ফিরে আসলে মূসা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি করেছেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য হালাকা করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে দশটি করে সওয়াব দিয়েছেন। মূসা বললেন, আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের নিকট এর চাইতেও কম পেতে চেয়েছি। কিন্তু তারা তাও পরিত্যাগ করেছিলো। আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান, যাতে তিনি আবারও আপনার জন্য হ্রাস কল্প দেন। এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মূসা, আল্লাহর কসম। আমি আমার রবের কাছে বার বার গিয়েছি। তাই এখন যেতে লজ্জাবোধ করছি। এবার মূসা বললেন, তাহলে আল্লাহর নাম নিয়ে এখন অবতরণ করুন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন। দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে অবস্থান করছেন। সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ আল বুখারীর কিতাবুত তাওহীদে সংকলন করেছেন। এছাড়াও অনুরূপ হাদীস মুসলিম, নাসায়ী এবং ইবনে মাজাতে সংকলিত হয়েছে।

হাদীসটির প্রেক্ষাপটঃ এ হচ্ছে মূলত মিরাজের রাত্রের ঘটনা। হিজরত করার কিছুকাল পূর্বে মক্কায় থাকাকালে নবী করীমের মি’রাজ সংঘটিত হয়। এর পূর্বেও মুসলমানদের উপর নামায পড়ার নিদের্শ ছিলো। তবে এ সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করে দেয়া হয়। কুরআন মজীদের সূরা বনী ইসরাঈলের প্রথম দিকেই মিরাজের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মিরাজ সংক্রান্ত আরো অনেক হাদীস রয়েছে। শুধু এই একটি হাদীস থেকেই মিরাজের বিস্তারিত ঘটনা জানা সম্ভব নয়।

পৃষ্ঠা-৫৩

সাওম :- সাওমের উচ্চ মর্যাদা

(۳) عَنْ أَني هريرة رضي الله تَعَالَى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ وَ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ أَدَمَ يقامت الحملة بغفر أنتابها إلى سبع ماتَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ تَعَالَى إِلَّا القَوْمَ لمائة في وَأَنَا اجْزِى بم – يَدْعُ شَهْوَكَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي لِلصَّائِمِ فَتَرْحَنَانِ فَرحَةٌ عند نظرم وَتَرْحَةٌ مِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ وَلَهُنَرْفُ حَمِ القَائِمِ أَطْيَبُ عِندَ اللهِ مِنْ رِنج الْمِسْكِ ، وَالصِّيَامُ جُنَّةً وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْضِتْ وَلَا يَصْحَبُ فَان سابة لحد أو قائلة للين إلى إسرة صائم – (بخاری، مسلم)

২৬ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেক নেক আমল দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ বলেছেনঃ তবে রোযা ব্যতিত। কারণ (বান্দাহ) আমারই জন্যে রোযা রাখে। আমিই এর প্রতিফল দান করবো (অগণিত প্রতিফল)। সে আমারই জন্যে নিজ প্রবৃত্তি দমন করে এবং খানা-পিনা পরিত্যাগ করে। রোযাদারের জন্যে দুটি বড় আনন্দ রয়েছে। একটি আনন্দ ইফতারের সময় আর অপরটি তার রবের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। রোযাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষাও অধিক সৌরভময়। রোযা হচ্ছে একটি ঢাল স্বরূপ। সুতরাং তোমাদের কেউ যেনো রোযা রাখার দিন অশ্লীল কথা না বলে এবং নিরর্থক শোরগোল না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় কিংবা তার সঙ্গে ঝগড়া ও মারামারি করতে উদ্ধত হয়, তখন যেনো সে বলেঃ আমি একজন রোযাদার।

পৃষ্ঠা-৫৪

সূত্র হাদিসটি গৃহীত হলো সহীহ বুখারী ও মুসলিম থেকে। ব্যাখ্যা ‘আমারই জন্যে রোযা রাখে’ মানে শুধুমাত্র আমারই নির্দেশ পালন করার জন্যে আন্তরিকভাবে রোযা রাখে। রোযাদার লোক দেখানোর উদ্দেশে। রোযা রাখে না। বস্তুত রোযা বান্দার প্রতি আল্লাহর এমন একটি নির্দেশ, যা সঠিকভাবে পালন করা হলো কিনা তা কেবল আল্লাহই খবর রাখেন। সুতরাং এতো গোপনে রোযা রাখার মানেই হলো বান্দাহ শুধু তার মা’বুদের উদ্দেশ্যেই রোযা রেখেছে।

বান্দাহ সমস্ত ইবাদতই তো আল্লাহর জন্যে করে থাকে। অথচ আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে রোযাকে কেন তার নিজের জন্যে বলে আখ্যায়িত করেছেন? ইমাম নববী বলেনঃ এর জবাবে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা

যায়। তাঁদের মতের বিভিন্নতা নিম্নরূপঃ [ক] কারণ বান্দাহ রোযা দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করে না। কাফিররা সিজদা, দান-সদকা এবং যিকির আযকার দ্বারা তাদের উপাস্যদের

ইবাদত করে বটে, কিন্তু কোনোকালেও তারা রোযা দ্বারা তাদের উপাস্যদের ইবাদত করেনি।

[খ] যেহেতু রোযা এমন এক গোপন ইবাদত, যাতে রিয়া বা প্রদর্শনীর কোনো সুযোগ নেই। অথচ নামায, হজ্জ, যুদ্ধ, দান-খয়রাত প্রভৃতি ইবাদতে প্রদর্শনীর অবকাশ থাকে।

[গ] যেহেতু রোযা দ্বারা নিজেকে রোযাদার প্রমাণ করার কোনো সুযোগ থাকে না।

[ঘ] যেহেতু রোযা পানাহার ত্যাগ করায়। আর পানাহার না করা আল্লাহ তায়ালার সিফাতসমূহের অন্যতম।

[৫] যেহেতু রোযা দ্বারা বান্দাহ অধিক নেকী ও পুরস্কার (জাযা) লাভ করবে।

[চ] যেহেতু সবরের মাধ্যমে রোযা অত্যন্ত মহিমান্বিত ইবাদত। এসব কারণেই আল্লাহ তায়ালা রোযাকে তারই বলে আখ্যায়িত করেছেন।

পৃষ্ঠা-৫৫

তাড়াতাড়ি ইফতার করা (۳) عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ، قَالَ الله فر وجل : تَحَبُّ عِبَادِى إِلَى أَفعلهم نظرا – (رواه الترمذي ، وقال الترمذي هذا حديث

حسن غریب)

২৭ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (রোযাদারের মধ্যে) আমার অধিকতর প্রিয় বান্দাহ হলো তারা, যারা (সূর্য ডুবার) সাথে সাথে তাড়াতাড়ি ইফতার করে।

সূত্র হাদীসটি ইমাম আবু ঈসা তিরমিযীর জামে তিরমিযী থেকে গৃহীত হলো। এটি ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের অন্যতম। যদিও এ গ্রন্থটি ‘জামে’ তবু সুনানে তিরমিযী বলেই এটি অধিক খ্যাত।

পৃষ্ঠা-৫৬

ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ ইনফাকের মর্যাদা

(۳۸) عن ابي هو يرة ريم أَنَّ رَسُولَ اللهِ ٣ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَنَّ أَنْفِقُ الْفِق عَلَيْكَ وَقَالَ بعد الله ملانى لا يَعْيشها تفقَةٌ سَخَاءُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَقَالَ أَرَأَيْكُمْ مَا أَنْفَقَ مُثلُ خَلَقَ السَّمَاء وَالْأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَغْضِ مَا فِي بَدِهِ وَكَانَ عرشه على المَاءِ وَبِيَدِهِ الْمِيزَانُ يُخْفِضُ وَيَرْفع – ( رواه البخاري في كتاب

التفسير من سورة الهود)

২৮ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ বলেনঃ (হে আমার বান্দাহ) তুমি (আমার পথে) দান করো, তাহলে আমি তোমাকে দান করবো। কারণ আল্লাহর ভাণ্ডার পরিপূর্ণ ও অফুরন্ত। দিনরাত অনবরত খরচ করলেও তা খালি হয়না। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ না, যেদিন আল্লাহ আকাশ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে কত রাশি রাশি ব্যয় করে আসছেন? কিন্তু এতে তাঁর ভাণ্ডারের কোনো নিয়ামতে সামান্যতম কমতিও আসেনি। তাঁর আরশ পানির উপর। তাঁর মুষ্টিবদ্ধে (রিযিকের) মীযান। যেদিকে চান তিনি সেদিকে তা ঝুঁকিয়ে দেন এবং যার জন্যে ভালো মনে করে তা উপরে তুলে নেন।

সূত্র হাদীসটি সহীহ আল বুখারীর তাফসীর অধ্যায় থেকে গৃহীত হলো। ব্যাখ্যা ‘আরশ’ রূপক শব্দ। “তাঁর আরশ পানির উপর” মানে তিনি নিখিল জগতের মালিক ও অধিপতি। নিখিল সম্রাজ্যের নিরংকুশ বাদশাহ। রিযিকের বাগডোরও তাঁরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রিযিক দান করেন। আর যার জন্যে ভালো মনে করেন তার রিযিক সীমিত করে দেন। সুতরাং আল্লাহর পথে অধিক দান করাই বান্দার কর্তব্য।

পৃষ্ঠা-৫৭

জিহাদ ও শাহাদাত মুজাহিদের মর্যাদা

من عن أبي هريرة قال سَمِعْتُ رَسُولَ الله مَن يَقُولُ مَثَالُ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَنْ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِهِ كَمَثَلِ السَّائِمِ الْقَائِمِ وَتَوَكَّلَ اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِ في سبيله بأن يكونان أن يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ أَوْ يُرْجِعَة سَالِمًا مَعَ أَجْرٍ أَوْ عَلِيْة

( رواه البخاري)

২৯ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর পথে জিহাদকারী (অবশ্য আল্লাহই ভালো জানেন তাঁর পথে সত্যিকার জিহাদকারী কে) এমন রোযাদারের ন্যায় যে অবিরাম রোযা রাখে এবং অবিরাম নামায আদায় করে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর পথে জিহাদকারীর ব্যাপারে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যে, সে মৃত্যুবরণ করলে তাকে জান্নাত দান করবেন। অথবা তাকে জিহাদে বিজয়ী করে নিরাপদে পুরষ্কার কিংবা গনীমতসহ ফিরিয়ে আনবেন।

সূত্র হাদীসটি সহী আল বুখারীর কিতাবুল জিহাদ থেকে গৃহীত। ব্যাখ্যা এখানে অবিরাম রোযা রাখা ও নামায পড়া দ্বারা নফল রোযা ও নফল নামায বুঝানো হয়েছে। বুখারী শরীফেরই জিহাদ অধ্যায়ের আরেকটি হাদীস থেকে জানা যায় যে, একজন লোক এসে রাসূলে খোদার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট আরয করলোঃ আমাকে এমন কোনো আমলের কথা বলে দিন যা জিহাদের সমকক্ষ।” জবাবে তিনি বললেনঃ না এমন কোনো কাজ নেই যা জিহাদের সমকক্ষ হতে পারে। তবে হাঁ মুজাহিদরা যখন জিহাদে রওয়ানা হয়ে যাবে, তখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করে নামাযে দাঁড়িয়ে যাও, অবিরামভাবে নামায পড়তে থাকো। কোনো বিরতি দিও না। ক্রমাগত রোযা

পৃষ্ঠা-৫৮

রাখতে থাকো, মাঝখানে বিরতি দিও না।” (জবাব শুনে) লোকটি বললোঃ এমনটি করতে কে সক্ষম?” একবার রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ ওগো আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম মানুষ কে? তিনি বললেনঃ সে মু’মিন, যে তার জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।” আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেনঃ মুজাহিদের ঘোড়া রশিতে বাঁধা অবস্থায় যখন ঘাস খেতে থাকে, তখনো তার জন্যে নেকী লেখা হয়ে থাকে। এসব হাদীস থেকে জিহাদের উচ্চ মর্যাদা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়। “শাহাদাতের আকাংখা

(۳۰) عن أبي هريرة رض عن الكي – قال التتب الله لعن الخريج في سبيله

لا يُخْرِجُهُ إلا إنسان في وَتَصْدِيقُ بِرُسُلي أن أرْجِعَة بِمَا كَانَ مِنْ أَجْرَارٌ فَنِيْمَةٍ

أوْ أَدخِلَة الْجَنَّةَ وَلَوْلا أَنْ أَحلَّ عَلَى أُمَّتِي مَا تَعَلْتُ خَلْقَ عَرِيَّةٍ وَلَرُودْتُ أَنِّي أفتَلَ فِي سَبِيلِ اللهِ ثُمَّ أَحْيَا ثُمَّ اقْتَلَ ثُمَّ لَحْيَا ثُمَّ أقتل – ( رواه البخاري) ৩০ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলে খোদা, সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেনঃ

আমার প্রতি ঈমান এবং রাসূলের স্বীকৃতিই যাকে আল্লাহর পথে জিহাদে বের

করেছে, আমি তার ব্যাপারে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি যে, আমি তাকে পুরস্কার

কিংবা গনীমতসহ ফিরিয়ে আনবো কিংবা শাহাদাত দান করে জান্নাতে প্রবেশ

করাবো।’ আমার উম্মতের জন্যে যদি কষ্টকর না হতো তবে আমি কোন (ছোট

খাটো) যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ না করে থাকতামনা। আমার প্রবল আকংখা আমি

আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই। আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হয়ে যাই।

আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হয়ে যাই।

সূত্র হাদীসটি সহীহ আল বুখারীর কিতাবুল জিহাদ থেকে গৃহীত।

শহীদরা আবার শহীদ হতে চায়

(31) عَنْ مَسْرُوقٍ قَالَ سَأَنْتَ أَوْ سَأَلْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ

قال أمَا إِنَّا قَدْ سَأَلْنَا مَنْ ذَالِكَ فَقَالَ أَرْوَالَهُمْ فِي جَوْفِ عَيْرٍ خُضْرٍ لَهَا الْكَادِيلُ

পৃষ্ঠা-৫৯

تعلقة بالعرشِ تشرع من الْجَنَّةِ حَيْثُ شاءت كم تَأْوِى إِلى تِلْكَ الْكَنَادِيلِ فَاطَّلع إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ إِعِلامَة لكل من تَشْتَهُونَ شَيْئًا . قَالُوا أَتَى شَلِي تَحْتَهى وَنَحْنُ تشرح مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شِئْنَا – فَفَعَلَ ذَا بِهِمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا رَأَوْ أَنَّهُمْ لَمْ ركوا من أن يُسْأَلُوا قَالُوا يَا رَبِّ تُرِيدُ أَن تَرُدَّ أَرْوَاحَنَا فِي أَجْسَادِنَا حَتَّى تُقْتَلَ في سبيلك مرة أخرى فَلَمَّا رَأَى أَنْ لَيْسَ لَهُمْ حَاجَةٌ تركوا – (مسلم، لزمني)

৩১ “আর যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছে, তোমরা তাদের মৃত বলোনা, তারা তো জীবিত, তাদের রবের নিকট থেকে তারা রিযিক প্রাপ্ত হয়।” মাসরুক বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে উক্ত আয়াতের তা ৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছেনঃ এ আয়াতের তাৎপর্য সম্পর্কে আমরাও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছেনঃ শহীদদের রূহগুলোকে সবুজ পাখীর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ওদের জন্যে রয়েছে আরশের সাথে ঝুলন্ত বাসা। তারা বেহেশতের যেখানে ইচ্ছে ঘুরে বেড়ায়। তারপর আবার সেই বাসাগুলোতে ফিরে আসে। অতপর তাদের রব তাদের নিকট আবির্ভূত হয়ে জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমরা কি আমার নিকট কিছু চাও?” জবাবে তারা বলেঃ ওগো আমাদের রব! আমরা তোমরা নিকট আর কি চাইব, আমরা তো গোটা বেহেশতে যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াই? তাদের রব তিনবার তাদেরকে একই প্রশ্ন করতে থাকেন। তারা যখন দেখলো তিনি বার বার তাদেরকে একই প্রশ্ন করছেন তখন তারা আরয করেঃ ওগো আমাদের রব! আমাদের একান্ত আকাংখা এই যে, তুমি আমাদের রূহগুলোকে আমাদের দেহে প্রবেশ করিয়ে আমাদেরকে পূনরায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দাও, যাতে আমরা আবার তোমার পথে শহীদ হতে পারি’ কিন্তু যেহেতু তাদেরকে আর পৃথিবীতে পাঠানোর প্রয়োজন নাই এবং তারা এছাড়া আর কিছু কামনাও করছে না, তাই তিনি তাদেরকে আর অধিক জিজ্ঞাসা না করে ওখানে ছেড়ে দেন।

পৃষ্ঠা-৬০

বেহেশতবাসীদের শাহাদাতের, কামনা (س) عن أنس بن مالك رد قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ وَ يُؤْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ الله عَزَّ وَجَلَّ يَا ابْنَ أَدَمَ كَيْفَ وَجَرْتَ مَنْزِلَكَ ؟ فَيَقُولُ أَي رَبِّ خَيْرَ مَنْزَلٍ فَيَقُولُ مَن وَتَمَن . فَيَقُول أَسَائِل أن ترد في إلى الدُّنْيَا فَأَقْتَلُ فِي سَبِيْلِكَ عَشَرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ – (رواه النسائي ) ৩২ আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা একজন বেহেশতবাসীকে ডেকে এনে বলবেনঃ হে আদম সন্তান। তুমি (বেহেশতে) তোমার আবাস কেমন পেয়েছ? সে বলবেঃ হে আমার মালিক! উত্তম নিবাস!” তখন আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি প্রার্থনা করো, তোমার ইচ্ছা বাসনা ব্যক্ত করো।” সে বলবেঃ হে মালিক আমার! তোমার নিকট আমার আকাংখা ও প্রার্থনা হচ্ছে এই যে, তুমি আমাকে বার বার পৃথিবীতে পাঠাও। আমি দশবার তোমার পথে শহীদ হয়ে আসি।” সেখানে শাহাদাতের মর্যাদা অবলোকন করেই সে এই আকাংখা ব্যক্ত করবে। সূত্র হাদীসটি সুনানে নাসায়ী থেকে গৃহীত হলো। যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদের মৃত বলোনা

(س) عن جَابِرِي عَبْدُ اللهِ رَبِّ يَقُولُ لَمَّا قَبْلَ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ عَمْرُو بْن حَرَامٍ يوم أحد قال رَسُولُ اللهِ يَا جَابِرُ الا الخيرُكَ مَا قَالَ اللهُ لِأَبِيكَ – كُنتُ بَلَى قَالَ ما علم الله أَحَدًا إِلَّا مِن وَرَاءِ حِجَابٍ وَلم أَبَاكَ كِنَاهَا فَقَالَ يَا عَبْدِي وَنَ على أخطاك قال كمييني فأقتل قيلة كابية – قَالَ إِنَّهُ سَبَقَ مِنَى أَنَّهُمْ إِلَيْهَا لا يرجعون – قال يارب لأبلغ مين وراني كأنزل الله عَزَّ وَجَلَّ هُذِهِ الْأَيام : ولا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ لَتِلُوا فِي سَبِيلِ اللهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ……. الآية كلها – (رواه ابن ماجه والترمذي)

পৃষ্ঠা ৬১ থেকে ৭৫

পৃষ্ঠা-৬১

৩৩ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত লাভ করার পর রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে বললেনঃ হে জাবির! আল্লাহ তোমার পিতার সঙ্গে কি কথাবার্তা বলেছেন, আমি কি তোমাকে সে সংবাদ দেবনা? আমি বললাম অবশ্যি হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আল্লাহ তায়ালা কখনো কারো সাথে আড়াল বিহীন অবস্থায় কথা বলেননা। কিন্তু তোমার পিতার সঙ্গে তিনি আড়াল বিহীন অবস্থায় কথা বলেছেন। তিনি তাকে বলেছেনঃ হে আমার বান্দাহ! তুমি আমার নিকট তোমার আকাংখা ব্যক্ত করো, আমি তোমাকে দান করবো।” জবাবে তোমার পিতা বলেছেনঃ হে প্রভু! তুমি আমাকে জীবিত করে পৃথিবীতে পাঠাও, যাতে করে আমি আবার তোমার পথে নিহত হয়ে আসতে পারি।” কিন্তু আল্লাহ বলেছেনঃ আমার পক্ষ থেকে এ ফায়সালা হয়ে গেছে যে (মৃত লোকেরা) আর পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারবে না। তখন তোমার পিতা আরয করেনঃ হে আমার প্রভু! তবে আমার (এই সুখের) অবস্থা পৃথিবীর লোকদের জানিয়ে দাও।” ফলে আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করলেনঃ

“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা তাদের মৃত মনে করোনা। তারা তো জীবিত। তাদের রবের নিকট থেকে তারা রিযিক পাচ্ছে। আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে যা কিছু দান করেছেন, তা পেয়ে তারা সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত। আর যে সব ঈমানদার লোক তাদের পিছনে পৃথিবীতে রয়ে গেছে এখনো তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি, তাদের জন্যে কোন ভয় ও চিন্তা নাই জেনে তারা সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত। “১

সূত্র হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাহ থেকে গৃহীত হলো।

ব্যাখ্যা হাদীসে বলা হয়েছেঃ জাবিরের পিতার সঙ্গে আল্লাহ আড়াল বিহীন অবস্থায় কথা বলেছেন। এ কথাটি অনেকে স্বীকার করেননা। কারণ কুরআনের

একটি আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা আড়াল বিহীন অবস্থায় কোনোমানুষের সঙ্গে কথা বলেননা। অবশ্য হাদীস ব্যাখ্যাতাগণ এখানে ‘আড়ালবিহীন’ এর অর্থ করেছেন মাধ্যমবিহীন। এ অর্থ করলে হাদীসটিতে আর কোনো সংশয় থাকেনা।

পৃষ্ঠা-৬২

আল্লাহর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে লড়াই করা: ريس عن عبد الله بن مَسْعُومٍ من اللي – عمال يحلى الرَّجُلُ أَحَدًا بِيْلِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ ياري هذا التمني – فيقول الله العليم كتلته – فَيَقُولُ فتلكة يتكونَ الْعِزَّةُ لك فَيَقُولُ فَإِنَّهَا فِي – وَيَجِلُ الرَّجُلُ أَحَدًا بيد الرجلِ فَيَقُولُ إِنَّ هَذَا قَتَلَنِي فَيَقُولُ اللَّهُ له يم فكلكه . فيقول يتكون العزة لثلاث فَيَقُولُ إِنَّهَا لَيْسَتْ لِفُلانٍ فَيَبُو باقيه – (رواه النسائي)

৩৪ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ (কিয়ামতের দিন) এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির হাতে ধরে (পাকড়াও করে) আল্লাহর নিকট এনে বলবেঃ হে প্রভু! এই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছিল। “আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেনঃ তুমি তাকে কেন হত্যা করেছিলে? সে বলবেঃ হে আল্লাহ আমি তাকে হত্যা করেছিলাম যাতে করে পৃথিবীতে তোমার ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তখন আল্লাহ বলবেনঃ (হ্যাঁ) কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব আমারই জন্যে। (অতপর তাকে ছেড়ে দেবেন)। এরপর আরেক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির হাত ধরে পাকড়াও করে এনে বলবেঃ হে প্রভু এই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছিল। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেনঃ তুমি কেন তাকে হত্যা করেছিলে? সে বলবেঃ অমুকের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে। তখন আল্লাহ বলবেনঃ না কর্তৃত্ব তার জন্যে নয়। অতপর তার অপরাধের জন্যে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সূত্র হাদীসটি সুনানে নাসায়ী থেকে গৃহীত হলো। আল্লাহর প্রতি আকর্ষণে জিহাদের পথে ফিরে আসা।

روس من عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُورٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ عَجِبَ رَبُّنَا مِنْ رَجُلٍ هذا في سَبِيلِ اللهِ فَانْهَزَمَ – فَعَلِمَ مَا عَلَيْهِ فَرَجَعَ حَتَّى أَمْرِيقَ دَمُهُ فَيَقُوْلُ اللَّهُ لعالى لملا يكيم : أَنْظُرُوا إِلى عَبْدِي رجع رَهْبَةً فِيْمَا عِنْدِي وَ شَفَقَةٌ مِمَّا عِنِينَ حَتَّى أَمْرِيق دَمة – ( رواه ابوداؤد)

পৃষ্ঠা-৬৩

৩৫ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের প্রভৃ ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে এসে ভয় পেয়ে পিছে হটে যায়। অতপর সে পিছে হটার অপরাধ এবং আল্লাহর পথে জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করার মর্যাদা ও পুরষ্কারের কথা উপলব্ধি করে জিহাদের ময়দানে প্রত্যাবর্তন করে শহীদ হয়ে গেলো। আল্লাহ এ ব্যক্তি সম্পর্কে ফেরেশতাদের ডেকে বলেনঃ দেখেছো, আমার বান্দাহ আমার পুরষ্কারের আকর্ষণে জিহাদের ময়দানে ফিরে এসে আমার পথে রক্ত দিয়েছে।”সূত্র আবু দাউদ।

পৃষ্ঠা-৬৪

পারস্পরিক সম্পর্ক: এক দ্বীনি ভাইয়ের সঙ্গে আরেক দ্বীনি ভাইয়ের সাক্ষাতের মর্যাদা ريس عن أبي هريرة رد عن النبي صلعم أَنَّ رَجُلًا زَارَ أَخَالَهُ فِي قَرْيَةٍ أخرى مارك الله عَلَى مَنْ رَجَتِهِ مَلَكًا . قال أين تريل ؟ قَالَ أَرِيدُ أَها في في علوم العربية – قال هل لك عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرَبُّهَا ؟ قَالَ لَا غَيْرَ أَنِّي أَحْبَبْتُهُ فِي اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ – (صبح مسلم)

৩৬ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি তার (দ্বীনি) ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে অন্য পাড়ায় রওয়ানা করে। আল্লাহ তার গন্তব্য পথে একজন ফেরেশতাকে (মানুষের বেশে) অপেক্ষমান রাখেন।লোকটির পথ অতিক্রমকালে ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করেঃ আপনি কোথায় যাচ্ছেন? লোকটি বললোঃ ও পাড়ায় আমার একজন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করার জন্যে যাচ্ছি। ফেরেশতা জিজ্ঞাসা করলোঃ তার সাথে কি আপনার কোনো স্বার্থগত বিষয় জড়িত রয়েছে, যা হাসিলের জন্যে আপনি যাচ্ছেন?” লোকটি বললোঃ না তা নয়। আমি তার সাথে শুধু এ জন্যেই সাক্ষাত করতে যাচ্ছি যে, আমি কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাকে ভালোবাসি।” ফেরেশতা বললোঃ তবে শুনে রাখুন। আমি আল্লাহর দূত হিসেবে আপনার নিকট এসেছি, আল্লাহ আপনাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছেন যে তিনি আপনাকে ভালবাসেন, যেমনি আপনি আল্লাহর জন্য আপনার সেই দ্বীনি ভাইকে ভালবাসেন।

পৃষ্ঠা-৬৫

→ আল্লাহর জন্যে ভালোবাসার পুরস্কার:(يس) عن أبي هريرة رضي قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهم إن اللهَ يَقُولُ يَوْمِ الْقِيَامَةِ: أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلانِي ؟ الْيَوْمَ أَهْلُهُمْ في علي يوم لا ظل الا ظلي – (رواه مسلم)

৩৭ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা ডেকে বলবেনঃ (পৃথিবীতে) যারা আমার শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে পরস্পরকে মহব্বত করেছে তারা কই? আজকে আমি তাদেরকে আমার ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবো। আজ আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই।” সূত্র হাদীসটি ইমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজের সহীহ মুসলিম থেকে গৃহীত হলো।

(۳۸) عن ابن إِدْرِيسَ الْقَوْلَا فِي قَالَ : الخَلْك منجل ومشق لادا على شابي بَرالُ الدُّنَايَا وَإِذَا النَّاسُ مَعَهُ – إِذِ اخْتَلَفُوا فِي شَيْيِي اسْتَدُوهُ إِلَيْهِ وَعَدَاوة من قَوْلِيم فَسَأَلْتُ عَنْهُ – دَقِيلَ هَذَا مُعَادُ بْنُ جَبَلٍ فَلَمَّا كَانَ الْقَرُ مَجْرَتُ توجدته من سبقني بِالنَّهْجِير – و وجدكة يعني قَالَ فَانْتَظرك حَتَّى قطى علاقه كم جِئْتُهُ مِن قَبْلِ وَجْهِم تَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ ثُمَّ مُلْكَ وَاللهِ إِلَى لَأُحِبُّكَ لله – فقال : الله ؟ فقلت : الله – قال: الله ؟ فقلت : الله – فقال : الله القلتُ: الله – فقال : الله ؟ تكنتُ : اللهِ – فَاحْلُ بِحَبْرٍ رِدَانِي فَحَبَدَنِي إِلَيْهِ وَقَالَ : أَبْشِرْ نَانِي سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ – يَقُولُ : قَالَ الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى : وَجَبَ تَحَبَّين المثلهاتينَ في وَالْمُتَجَالِسِينَ في وَالْمُتَرا وَرِيْنَ فِي وَالْمُتَبَادَلِينَ فِي –

( مؤطا امام مالك )

৩৮ আবী ইদরীস খাওলানী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি একবার দামেশকের মসজিদে প্রবেশ করে দেখি এক যুবক। সৌষ্ঠব, সৌন্দর্য ও সুভাষণে চমৎকার। সব লোকেরা তাঁর কাছে জড়ো হয়ে আছে। তারা যেকোনো বিষয়ে মতভেদ করছে, তা মীমাংসার জন্যে তাঁর কাছে পেশ করছে এবং তার বক্তব্য

পৃষ্ঠা-৬৬

দ্বারা সেটার সঠিকত্ব জেনে নিচ্ছে। আমি তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হলো, ইনি মুয়ায ইবনে জাবাল। পরদিন একেবারে প্রত্যুষে আমি শয্যা ত্যাগ করে তার কাছে এলাম। এসে দেখি তিনি আমার আগেই শয্যা ত্যাগ করে সালাত আদায় করছেন। আবু ইদ্রিস বলেন, আমি তার সালাত শেষ করার অপেক্ষায় থাকলাম। অতপর তিনি সালাত শেষ করলে আমি তাঁর সামনে দিয়ে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর বললামঃ আল্লাহর কসম, আমি অবশ্য অবশ্যই আল্লাহর উদ্দেশ্যে আপনাকে ভালবাসি।” তিনি বললেনঃ আল্লাহর উদ্দেশ্যে? আমি বললামঃ হাঁ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে! তিনি বললেনঃ আল্লাহর উদ্দেশ্যে? আমি বললাম জী হাঁ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে। তিনি আবারও বললেন! আল্লাহর উদ্দেশ্যে? আমি বললাম ‘অবশ্যি আল্লাহর উদ্দেশ্যে।’ এবার তিনি আমার চাদরের কাছা ধরে টেনে আমাকে তাঁর একেবারে নিকটে নিয়ে গিয়ে বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ করো। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাবারুক ওয়া তা’আলা বলেছেন, “আমার ভালবাসার জন্যে যারা পরস্পরকে ভালবাসে, আমার সন্তুষ্টির জন্যে যারা বৈঠকে মিলিত হয়, আমাকে খুশী করার জন্যে যারা একে অপরের সাথে দেখা করে এবং আমার রেজামন্দির উদ্দেশ্যে যারা একে অপরের জন্যে অর্থ ব্যয় করে, তাদের জন্যে আমার ভালবাসা ওয়াজিব হয়ে গেছে।” সূত্র হাদীসটি ইমাম মালিক ইবনে আনাসের মু’আত্তা থেকে সংকলন করা হলো।

روس من الحعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ، يَقُولُ : قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْمُتَحَابُّونَ فِي جَلانِي لَهُمْ مَنَابِرٌ مِنْ نُورٍ يَغْبِطُهُمُ الكَبِيُّونَ وَالشُّهَدَاء – (ترمذي) ৩৯ মুয়ায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে যারা পৃথিবীতে একে অপরকে ভালবেসেছে, তাদের জন্যে আমি নূরের মিম্বর তৈরী করে রাখবো। তাদের দেখে নবী এবং শহীদদের ঈর্ষা হবে।” সূত্র ইমাম আবু ঈসা তিরমিযীর জামে তিরমিযী থেকে হাদীসটি সংকলন করা হলো। অনুরূপ হাদীস ইমাম মুসলিমের সহীহ মুসলিমেও উল্লেখ আছে।

পৃষ্ঠা-৬৭

অক্ষম ঋণ গ্রহীতাকে ক্ষমা করে দেয়া:(4) عن حديقة بي قال قال رسول الله – اللب الْمَلائِكَةُ رُوح رجل متنكان قبلكم فقالوا : أَعْمِلْتَ مِنَ الخَيْرِ شَيْئًا ؟ قال : لا قَالُوا تَل كر . قَالَ كُنتُ أَدَا مِنَ النَّاسَ فَأْمُرُ فَشَيَانِي أَن يَنْظُرُوا الْمُعْسِرَ وَيَتَجُورُوا عَنِ الْمُوسِرِ قَالَ قَالَ

الله عَزَّ وَجَلَّ تَجَوَّرُوا عَنْه – ( رواه مسلم)

৪০ হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্বেকার কোনো এক ব্যক্তির রূহের সঙ্গে ফেরেশতারা সাক্ষাত করে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করেঃ তুমি কি কোনো ভালো কাজ করে এসেছো? সে বললোঃ না, আমি কোনো ভাল কাজ করে আসিনি। তারা বললোঃ স্মরণ করে দেখো। সে বললোঃ আমি মানুষকে ঋণ প্রদান করতাম। অতপর আমার কর্মচারীদের ঋণ আদায়ের জন্যে পাঠানোর সময় বলতামঃ যাদের অসুবিধা আছে তাদের সময় বৃদ্ধি করে দিও আর যারা অক্ষম তাদের মাফ (মওকুফ) করে দিও।” (একথা শুনে) আল্লাহ ফেরেশতাদের বললেনঃ আমার বান্দার জন্যেও দোযখ মওশুফ করে দাও।” সূত্র সহীহ মুসলিম জনসেবা

(11) عن أبي هريرة رد قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ، أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ القِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِيتُ قلم تعد في قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أَعُودُ لَكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ ؟ قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَن عَبْدِي مُلا نا مَرِضَ فَلَمْ تَعْدْ ) ! أَمَا عَلِمْتَ إِنَّكَ تو عدة توجد كني مِنْدَة : يا ابن ادم اسْتَطْعَمْلكَ فَلَمْ تُظمِنينَ قَالَ يَا رَبِّ وكَيْفَ أَلْهِمُ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ ؟ قَالَ أَمَّا عَلِسْتَ إِنَّهُ اسْتَطْمَتِكَ عَبْدِي ثلاث قلم كظومه ؟ أما عَلِيْفَ إِنَّكَ لَوْ أَنه لَوَجَرْتُ ذَالِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ ادم اسْتَسْتَيْنَ فَلَمْ تَسْلِنِي – قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ اسْتَيْكَ وَأَنتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ كان استشكلك عبدى ثلاث كلم تسلم – أما فلمْتَ إِنَّكَ لَوْ سَقَيْنَهُ لَوَجَدْكَ

ذالك عندي (رواه مسلم )

পৃষ্ঠা-৬৮

৪১ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন বলবেনঃ হে বনি আদম! আমার অসুখ করেছিল, অথচ তুমি তো আমার সেবা করোনি। সে বলবেঃ ওহে মাওলা! আপনি তো নিখিল জগতের রব, আমি কি করে আপনার সেবা করতে পারি? তিনি বলবেনঃ তোমার কি স্মরণ নেই যে, আমার অমুক বান্দাহর অসুখ করেছিল, কিন্তু তুমি তার সেবা করোনি? তুমি কি জান না, তুমি যদি তার সেবা করতে তবে অবশ্যি তার নিকট আমাকে পেতে? হে বনি আদম! তোমার নিকট আমি আহার্য চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে আহার্য দান করোনি। সে বলবেঃ হে আমার মালিক। আপনি তো রাব্বুল আলামীন, আপনাকে কেমন করে আমি আহার্য দান করতে পারি? তিনি বলবেনঃ তোমার কি স্মরণ নেই, আমার অমুক বান্দাহ তোমার নিকট আহার্য চেয়েছিল অথচ তুমি তাকে আহার্য দান করোনি? তুমি কি জান না, তুমি যদি তাকে আহার্য দান করতে তবে অবশ্যি আমাকে তার নিকট পেতে? হে বনি আদম! আমি তোমার নিকট পানি পান করতে চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানি পান করতে দাওনি। সে বলবেঃ ওগো প্রভু। তুমি তো রাব্বুল আলামীন, তোমাকে পান করানো কি আমার জন্যে সম্ভব? তিনি বলবেনঃ আমার অমুক বান্দাহ তোমার নিকট পানি চেয়েছিল, অথচ তুমি তাকে পানি পান করাওনি, তুমি যদি তাকে পানি পান করাতে তবে এর পুরস্কার অবশ্যি আমার নিকট পেতে। সূত্র সহীহ মুসলিম।

ব্যাখ্যা ‘আমার অসুখ হয়েছিল’, ‘আমি আহার্য চেয়েছিলাম’, ‘আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম’-এই মানবীয় বৈশিষ্ট্যগুলো কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা নিজের প্রতি আরোপ করবেন বনি আদমকে মর্যাদা দানের জন্যে। ‘তবে অবশ্যি তার নিকট আমাকে পেতে’ মানে তবে অবশ্যি একাজের প্রতিদান ও পুরস্কার আমার নিকট পেতে।

এ হাদীসটিতে জনসেবার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অনেকগুলো হাদীসে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদের রোগীর সেবার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ইয়াতীম, মিসকীন প্রভৃতি দরিদ্রদের পানাহার করানোর বিষয়ে বহু হাদীস ছাড়াও স্বয়ং কুরআন পাকেও তাকীদ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজীদে নেক্কার লোকদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ ويَعْمِدُونَ الطعام على حُبِّهِ مِسْكِيْنا وَنَشِيمًا وَأَسِيرًا إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ الله لا تُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاء وَلَا شَكُورًا – “আর তারা আল্লাহর ভালোবাসায় মিসকীন, ইয়াতীম এবং কয়েদীদের খাবার খাওয়ায় এবং (তাদের বলে) আমরা কেবল আল্লাহরই জন্যে তোমাদের খাওয়াচ্ছি। তোমাদের কাছে আমরা না কোনো প্রতিদান চাই আর না কৃতজ্ঞতা।” আদ-দাহারঃ ৮-৯/

পৃষ্ঠা-৬৯

১০ আল-কুরআন: কুরআন সাত পদ্ধতিতে পড়া যায়

(1) عن أبي ابْنِ لَعَبٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ – كَانَ عِنْدَ أَخَاهُ بَنِي فِقَارٍ فَأَنَا أَجِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلامُ ثَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَأْمُرُكَ أن تقرى امتلك القرآن على حرب كل أسأل الله معالماكة وَمَغْفِرَتُهُ وَإِنَّ أُستى لا تطيقُ خَالِكَ – ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَة فقال : إِنَّ الله عَزَّ وَجَلَّ يَأْمُرُكَ أَن تُقْرِى أمتكَ الْقُرْآنَ عَلَى حَرْقَيْنِ – قَالَ أَسْأَلُ الله معاناكة ومَغْفِرَكَهُ وَإِن أُمَّتِي لا تُطِيقُ دَاية – ثُمَّ جَاءَةُ الثَّائِقَةُ فَقَالَ فقال إن الله يأمولة أن تقرى المشاة القرآن على فَلَقَةِ أَحْرُفٍ كَانَ أَسْأَلُ اللهَ مُعَا قائه ومغفركة وان التي لا تطيق ذابلة – ثم جاءها الرابعة فَكَانَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَنَّ بأمراة أن تقرى المثلة القران على سبعة أحرف – فَأَيُّمَا حَرْبٍ فَرَأَوْا عَلَيْهِ فَقَدْاضائها – (اخرجه النسائي)

৪২ উব্বাই ইবনে কায়াব থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বনী গিফার গোত্রের আদাতের নিকট ছিলেন। এমন সময় তাঁর নিকট জিব্রীল (আঃ) এলেন। এসে তিনি বললেনঃ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে একটিমাত্র পাঠ রীতিতে কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিচ্ছেন।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা শুনে বললেনঃ আমি আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আমার উম্মতের জন্যে এটা অত্যন্ত কঠিন হবে।’ অতপর জিব্রীল দ্বিতীয়বার এসে বললেনঃ আল্লাহ দুইটি পাঠরীতিতে আপনার উম্মতকে কুরআন পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বললেনঃ আল্লাহর করুণা ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আমার উম্মত এতোটা সামর্থ রাখে না। অতপর জিব্রীল তৃতীয়

পৃষ্ঠা-৭০

বার এসে বললেনঃ আল্লাহ আপনার উম্মতকে তিন পদ্ধতিতে কুরআন পাঠ করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি, আমার উম্মত এতোটা সামর্থ রাখে না। অতপর জিব্রীল চতুর্থবার ফিরে এসে বললেনঃ আল্লাহ আপনার উম্মতকে সাত রীতিতে কুরআন তিলাওয়াতের অনুমতি দিয়েছেন। এই সাত প্রকারের যে কোনো প্রকারে তিলাওয়াত করলেই কুরআন পাঠের হক আদায় হয়ে যাবে। সূত্র হাদীসটি গৃহীত হয়েছে সুনানে নাসায়ী থেকে।

ব্যাখ্যা কুরআনের সব শব্দই সাত রীতিতে পাঠ করা যায়না। বরঞ্চ কিছু কিছু শব্দ সাত পদ্ধতিতে পড়া যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিরক্ষর ও বৃদ্ধদের সুবিধার্থে আঞ্চলিক রীতিতে কুরআন তিলাওয়াতের অনুমতি প্রদান করা হয়।

সাহিবুল কুরআন:(٤٣) عَنْ أَبِي سَعِيدِ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله صلعم يقال لصاحب القرآن إذا دخلَ الْجَلَةَ اقْرَأْ وَاسْخَرْ فَيَقْرًا وَيَصْعَدُ بِكُلِّ أَبَةٍ دَرَجَةحَتَّى يَفْرًا آخِرَ شَمي مكه – (سنن ابن ماجه)

৪৩ আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে প্রবেশ করলে কুরআনের সাথীকে বলা হবেঃ পাঠ করো এবং আরোহণ করতে থাকো। অতপর সে পাঠ করতে থাকবে এবং একেকটি আয়াত দ্বারা একেকটি স্তর (দরজা) অতিক্রম করতে থাকবে। এভাবে সে নিজের সাথের (অর্থাৎ নিজের জানা থাকা) সবই পাঠ করবে। সূত্র সুনানে ইবনে মাজা থেকে হাদীসটি গৃহীত হলো।

ব্যাখ্যা সাহিবুল কুরআন বা কুরআনের সাথী বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি কুরআনকে নিজের জীবন চলার পথের সাথী হিসেবে গ্রহণ করেছে। প্রতিনিয়ত কুরআন পাঠ করে এবং কুরআন নির্দেশিত পথে জীবন যাপন করে। কোনো প্রকার পার্থিব স্বার্থের মোকাবিলায় কুরআনকে জলাঞ্জলি দেয় না, বরঞ্চ কুরআনের মোকাবেলায় সবকিছু জলাঞ্জলী দিতে প্রস্তুত হয়। কুরআনই তার

পৃষ্ঠা-৭১

১১ যিকর: যিকর এর মর্যাদা: (6) عن أبي هريرة ما قَالَ قَالَ رَسُولُ الله – : إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةُ يَطْرُقُونَ فِي الطري يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ – فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا بَلْ كروى الله تَنادُوا هَلَبُوا إلى حَاجَتِكُمْ قَالَ فَيَحْلُونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا قَالَ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ – مَا يَقُولُ عِبَادِي ؟ قَالَ يَقُولُونَ : يُسَبِّحُونَكَ وَيَلْبَرُونَكَ وَيَحْمَرُونَ وَ يُعَجِلُونَفَ – فَيَقُولُ هَلْ رَأَوْلِي كل تَهْلُولُونَ : لا وَاللهِ مَا رَأَوْلكَ . فَيَقُولُ 3 كيف تو راولي ؟ قال : يقولون تو راولك كانوا أهل كلك عبادة وأكل تلك النجيدا وتحيينا والقر تشبيها – قَالَ فَيَقُولُ فَمَا يَسْأَلُونَنِي ؟ قَالَ يَقُولُونَ يَسْأَتُؤكله الجلة – كان يقول وهلْ رَأَوْهَا ؟ قَالَ يَقُولُونَ وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا قَالَ فَيَقُولُ لَهُ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا – كان يقولُونَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَلَّ عَلَيْهَا حِرْصًا وَأَشَدَّ لَهَا كَلَبٌ وَأَعْظَمَ هِيْهَا رَغْبَةً . قَالَ فَبِمَا يَتَعُودُونَ ؟ قَالَ يَقُولُونَ مِنَ النَّارِ قَالَ يَكُولَ وَهَلْ رَأَوْهَا ، قَالَ يَقُولُونَ لا والله يارب مَا رَأَدْهَا . قَالَ يَقُولُ فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا قَالَ يَقُولُونَ لَو رَأَوْهَا كانوا اقل ملها قرارًا وأقل لَهَا مَحالَةٌ قَالَ فَيَقُولُ الشهدكم أني قد المقرت لهم . قال يقول ملك مِنَ الْمَلَائِكَةِ : مِيْهِمْ ثَلَاثَ لَيْسَ مِنْهُمْ – إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ قَالَ هُمُ الْجَلَسَاء لَا يَخْفَى بِهِمْ جَلِيْكَهُمْ . (بخاری : باب فضل الله تعالی)

পৃষ্ঠা-৭২

৪৪ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার একটি ফেরেশতা দল আছে, যারা পথে পথে যিকরকারীদের সন্ধান করে বেড়ায়। যখনই তারা মহামহিম আল্লাহর যিক্ররত কোনো লোকের সন্ধান পায়, সাথীদের ডেকে বলেঃ এদিকে এসো! তোমাদের প্রয়োজনের দিকে এসো। তখন তারা সবাই দৌড়ে এসে নিজেদের ডানা দিয়ে যিন্ত্রকারীদের পরিবেষ্টন করে। তাদের এই পরিবেষ্টনের ধারা উর্ধাকাশ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়। তাদের রব তাদের কাছে জানতে চান যদিও তিনিই সর্বাধিক জ্ঞাত আমার দাসগুলো কী বলছে।” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন ফেরেশতারা জবাব দেয়ঃ তারা তোমার পবিত্রতা ও ত্রুটিহীনতা (তাসবীহ) প্রকাশ করছে, তোমার শ্রেষ্ঠত্ব (তাকবীর) ঘোষণা করছে, তোমার প্রশংসা (তাহমীদ) উচ্চারণ করছে এবং তোমার শ্রেষ্ঠতম মর্যাদার (তামজীদ) কথা ঘোষণা করছে।” তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ওরা কি আমাকে দেখেছে?’ ফেরেশতারা জবাব দেয়ঃ ‘না, আল্লাহর কসম, ওরা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেনঃ ওরা যদি আমাকে দেখতে পেতো, তখন ওদের অবস্থা কেমন হতো?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন ফেরেশতারা জবাব দেয়ঃ আপনাকে দেখতে পেলে, তারা আপনার কঠোর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতো। আপনার মর্যাদা প্রকাশে চরমভাবে লিপ্ত হতো। অত্যাধিকভাবে তাসবীহ উচ্চারণ করতো। তিনি জানতে চানঃ ওরা আমার কাছে কী চায়?’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফেরেশতারা জবাব দেয়ঃ তারা আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছে।’ তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ওরা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফেরেশতারা জবাব দেয়ঃ না, হে প্রভু, আপনার শপথ! তারা জান্নাত দেখেনি।’ তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ জান্নাত যদি ওরা দেখতে পেতো, তবে ওদের অবস্থা কেমন হতো?’ তারা জবাব দেয়ঃ জান্নাত দেখতে পেলে তারা তার জন্যে আরো চরম লোভাতুর হতো, অতিমাত্রায় তলবগার হতো এবং পরম সম্মোহনে নিমজ্জিত হতো।’ তিনি জানতে চানঃ তারা কোন্ জিনিস থেকে আশ্রয় চাইছে?’ ফেরেশতারা বলেঃ তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয়

চাইছে।’ তিনি জিজ্ঞেস করেন ওরা কি কখনো জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেঃ না, আল্লাহর শপথ, তারা কখনো তা দেখেনি।’ তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ দেখলে তাদের অবস্থা কী রকম হতো। তারা জবাব দেয়ঃ দেখলে তা থেকে তারা চরমভাবে পলায়ন করতো এবং সাংঘাতিক ধরনের ভীত হয়ে পড়তো।’ তখন আল্লাহ বলেনঃ আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি ওদের ক্ষমা করে

পৃষ্ঠা-৭৩

দিলাম।’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন একজন ফেরেশতা বলে, এদের একজন লোক আছে, সে আসলে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সে অন্য কোনো কারণে এখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেনঃ এরা এমন মজলিসের লোক, যে মজলিসের কাউকেও বঞ্চিত করা হয় না।’ সূত্র হাদীসটি বুখারী থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও সামান্য শাব্দিক পার্থক্যসহ হাদীসটি মুসলিম এবং তিরমিযীতে আবু হুরাইরার রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ব্যাখ্যা যিক্র | ذکر শব্দটি কুরআন এবং হাদীসে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনঃ অন্তরে স্মরণ করা, পারস্পরিক আলোচনা করা, আনুগত্য করা, হেক্ষ্য করা, উপদেশ দান করা, কথা বর্ণনা করা, গুণ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা, নামায পড়া ইত্যাদি।

হাদীসে বলা হয়েছে ফেরেশতারা ‘আহলু যিক্র )امل الكر( ‘কে সন্ধান করে বেড়ায়। ‘আহলুষ যিকর মানে যিন্ত্রকারী বা যিন্ত্রকারীগণ। এরপর বলা হয়েছে, তারা যখনই কোনো যিক্ররত কওমকে পেয়ে যায়। ‘কওম’ শব্দটি এক ব্যক্তিকেও বুঝায় এবং দলকেও বুঝায়। মুসলিমের বর্ণনা ‘আহলুয যিক্র’ এর স্থলে ‘মাজালিসুর্য’ যিকর مجالس الذكر বলা হয়েছে। এর অর্থ যিকরের সভা, বৈঠক, বা মজলিস। সুতরাং আল্লাহ এবং ফেরেশতাদের এই বক্তব্য যিন্ত্রকারী এক ব্যক্তির জন্যেও প্রযোজ্য, একাধিক ব্যক্তির দল ও সমষ্টির জন্যেও প্রযোজ্য এবং সভা বৈঠক ও মজলিশের জন্যেও প্রযোজ্য।

এখন যিক্র শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য অনুযায়ী হাদীসের বক্তব্যের অর্থ দাঁড়ায়, ফেরেশতারা ঐসব লোকদেরকে খুঁজে বেড়ায় এবং আল্লাহ তায়ালাও ফেরেশতাদের ঐসব লোকদের ব্যাপারেই জিজ্ঞেস করেন এবং ক্ষমা ঘোষণা করেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে কিংবা সামষ্টিকভাবে আল্লাহ তাআলাকে অন্তরে স্মরণ করে, তাঁর গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা প্রকাশ করে, তাঁর বিষয়ে পরস্পরকে উপদেশ দেয়, তাঁর বাণী পাঠ করে ও হিফ্য করে, তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর জন্যে নামায পড়ে। আল্লাহ তাআলা যিক্র সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলেছেনঃ

পৃষ্ঠা-৭৪

وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُم ذكرو الله – (ال عمران (١٣٥) “আর তাদের (মুত্তাকীদের) অবস্থা হলো, যখনই তাদের দ্বারা কোনো ফাহেশা কাজ হয়ে যায়, কিংবা নিজেদের উপর নিজেরা কোনো জুলুম করে বসে, সাথে সাথে তাদের (অন্তরে) আল্লাহর কথা যিকর (স্মরণ) হয়……। (আলে ইমরানঃ ১৩৫) فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالاً أَوْ زَنْبَانًا ، فَإِذَا أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَمَا عَلَيْكُمْ – (البقرة : ٣٣٩) “ভয়ের সময় পদাতিক কিংবা আরোহী যে কোন অবস্থায় নামায পড়ো আর নিরাপত্তা বিরাজিত হলে সেইভাবে আল্লাহর যিক্র করো (নামায পড়ো)। যেমনটি তিনি তোমাদের শিখিয়েছেন।” (আল-বাকারা: ১৩৯) فاذكروني أذكركم – (البقرة : ١٥٣) ‘আমার যিক্র (আনুগত্য) করো, আমি যিকর (জেযা) দেবো।’ (আল-বাকারা: ১৫২) ماذكرو الله كذكركم آباءكم – (البقرة : ٢٠٠) “অতপর আল্লাহর সম্পর্কে পারস্পরিক যিক্র (আলোচনা) করো, যেমনটি করে থাকে। নিজেদের বাপ দাদাদের সম্পর্কে।” আল বাকারা: ২০০/ هَدُوا مَا أَتَيْنَكُمْ وَالأَكْرُوا مَا فِيهِ – (البقرة : ٦٣) “আমি যা তোমাদের দিয়েছি, তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। আর তার ‘মধ্যে যা আছে তা যিকর (হিফয) করো।” (বাকারা: ৬৩) هُدًى وذكرى الأولِي الْأَلْبَابِ – (المؤسى : ٥٤) “এটা বুদ্ধি বিবেকসম্পন্ন লোকদের জন্যে হিদায়াত এবং যিক্র (উপদেশ)।” (মুমিনঃ ৫৪)

এভাবে আলোচনা করলে দেখা যাবে, কুরআন মজীদে এইসব অর্থে ধিক্র শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অতপর আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং কুরআন মজিদেই অধিক অধিক যিক্র করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ। يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذكرو اللهَ ذِكْرًا كَثِيرًا – (الاحزاب : (1)

পৃষ্ঠা-৭৫

“হে ঈমানদাররা! আল্লাহকে যিক্র করো অধিক অধিক যিত্র।” [আহযাব : ৪১] যিকিরকেই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বলেছেনঃ و لذكر الله أكبر – (العنكبوت (١٥) “আর অবশ্যি আল্লাহর যিক্র সর্বশ্রেষ্ঠ।” (আনকাবুত : ৪৫। যিকিরের মধ্যেই রয়েছে, সাফল্য এবং মুক্তি। وَاذْكُرُ اللهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ – (الجمعة: (١٠) ‘আল্লাহকে বেশী বেশী যিক্র করো, সম্ভবত তোমরা সফলতা অর্জন করবে।” [জুমআঃ ১০/ইসলামী বিপ্লব সফল হলে যে যিক্র করতে হয়(10) عن عائلة رد كالت كان رسول الله – يكثرُ مِنْ قَوْلِ : سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ اسْتَغْفِرُ الله وأتوبُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ أَنَاكَ تَكْثِرُ مِنْ قَوْلِ سُبْحَانَ اللهِ و بِحَمْدِهِ اسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ مُقَالَ خَبَرَنِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ أَنِّي سَأَرَى علامةفي أَسْنِي فَإِذَا رَأَيْتُهَا أَكْثَرْتُ مِن قَوْلٍ : سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ اسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُإِلَيْهِ – فَقَدْ رَأَيْتُهَا : إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ – وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِيْاللهِ أَفْوَاجًا فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ ثوابا – ( رواه مسلم في كتابالصلوة باب ما يقال في الركوع والسجود)৪৫ আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কথাগুলোর অধিক অধিক যিকর করছিলেনঃسُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ اسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ –“আল্লাহ তাঁর সমস্ত প্রশংসাসহ অতিশয় পবিত্র, সমস্ত ত্রুটির উর্ধ্বে। আমিআল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন (তওবা)করছি।”এ অবস্থা দেখে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওগো আল্লাহর রসূল।আপনাকে যে একথাগুলো অধিক অধিক উচ্চারণ করতে দেখছিঃ

পৃষ্ঠা ৭৬ থেকে ৯০

পৃষ্ঠা-৭৬

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ اسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ .জবাবে তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রভু আমাকে সংবাদ দিয়েছেন, অচিরেই আমি আমার উম্মতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাবো। যখন তা দেখতে পাবো। তখন যেনো এই কথাগুলো অধিক অধিক উচ্চারণ করিঃ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ .

সে নিদর্শনটি আমি দেখেছি। (তাই একথাগুলো অধিক অধিক উচ্চারণ করছি)। সেটি হলোঃ “যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে এবং তুমি দেখতে إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ وَالفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللهِ أَفْوَجًا نَسَبع بحمد ربك واستغفرة إنه كان توابا – والنفس পাবে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে, তখন তুমি তোমার রবের হামদসহ তাসবীহ করো। আর তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি বড়ই তওবা গ্রহণকারী।” [সূরা আন নসর আল্লাহ যিন্ত্রকারীর সাথী হয়ে যান

(1) عن أبي هريرة رضي الله عَنْهُ عَنِ اللبِي عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَعَلَّمَ قَالَ : إِنَّ الَهُ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ : أَنَا مَعَ عَبْدِي إِذَا هُوَ ذَكَرَنِي ، وَتَكَر كيف في شفتاه . و الخرجه ابن ماجة في سننه باب فضل الذكر ج ۲ ص ۲۱۸ فقال :

৪৬ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আমার বান্দাহ যখন আমাকে স্মরণ করে, যখন আমার কথা আলোচনার জন্যে তার দুঠোট নড়ে ওঠে, তখন আমি তার সঙ্গী হয়ে যাই।সূত্র হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাহ’র ‘যিকিরের মর্যাদা’ অধ্যায়ে সংকলিত হয়েছে।

পৃষ্ঠা-৭৭

১২নেক আমলের মর্যাদা ও প্রতিদান:সুধারণা ও আল্লাহর পথে চলার সুফল

) حل لها الخمر بن حَفْسٍ حَلَّ لَنَا الْأَعْمَال سَمِعْتُ أَبَا صَالِحٍ عَنْ أَبي هريرة وهمقال : قال النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَقُولُ الله تعال : أَنَا عِنْدَ كَي عَبْدِن فِي ، وَأَنَا عنه إِذا ذَكَرَنِي فَإِن ذكرني في نفسه ذكركة في تفسينى وَإِنَّهُ ذَكَرَنِي فِي مَلَامٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ ، وَإِن تَقَرَّبَ إِلَى بِشِبْرٍ ، تَكَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِن تَقَرَّبَ إِلَى ذِرَاهَا، تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاهَا وَإِنْ أَكَافِي يَمْشِي اكيكه هرولة – ذكره البخاري أيضاً في كتاب التوحيد)

৪৭ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমার বান্দাহ্ আমার সম্পর্কে যেরূপ ধারণা করে আমি তার জন্যে ঠিক সেরকম। সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি। সে যদি আমাকে মনে মনে স্মরণ করে, আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। সে যদি আমাকে জনসমষ্টিতে স্মরণ করে, আমি তার চাইতে উত্তম দলের সামনে তাকে স্মরণ করি। সে যদি আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক গজ এগিয়ে যাই। সে যদি আমার দিকে এক বাহু এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে দুই বাহু এগিয়ে যাই। সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।

গ্রন্থসূত্র সামান্য কমবেশী শব্দসহ হাদীসটি বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী এবং ইবনে মাজাতে গ্রন্থাবদ্ধ আছে। এখানে বুখারীর বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ হয়েছে। অবশ্য বুখারীর ও তিরমিযীর বর্ণনা হুবহু একই রকম।

পৃষ্ঠা-৭৮

ব্যাখ্যা আল্লাহ’ সম্পর্কে যে যেরকম ধারণা পোষণ করে, আল্লাহ তার জন্যে সেরকম। অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহর ব্যাপারে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, তিনি তার যাবতীয় নেক কাজ কবুল করবেন, সেজন্য তাকে পুরস্কৃত করবেন, তার অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তার তওবা কবুল করবেন, তাহলে সে অবশ্যি আল্লাহকে সেরকম পাবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি আল্লাহর ব্যাপারে এসব ধারনা পোষণ না করে, তবে সে আল্লাহকে তার ধারণা মতোই পাবে।

বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, এ হাদীসের ভিত্তিতে কেউ যদি মনে করে আমি যতোই গুনাহ করবো তওবা করলে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দেবেন আর এ ধারণার ভিত্তিতে সে যদি গুনাহ করতে থাকে আর মুখে মুখে তওবা করতে থাকে, তাহলে সেব্যক্তি মারাত্মক ভুল করবে। কারণ মু’মিনের পক্ষে আল্লাহর ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করার সুযোগ নাই। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাথে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে, আল্লাহ কেবল তার তওবাই কবুল করে থাকেন। আর এমন তওবাকারী কখনো গুনাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না।

‘সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সাথে থাকি’। একথার অর্থ হলো, বান্দাহ যখন আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ তখন তাকে রহম করেন, কল্যাণ দান করেন, সাহায্য করেন এবং সুপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহর দিকে এগিয়ে যাওয়া মানে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহকে অধিক থেকে অধিকতর অনুসরণ করা। আর আল্লাহর বান্দাহর দিকে এগিয়ে আসা মানে বান্দাহকে রহমত ও করুণা দ্বারা সিক্ত করা, সঠিক পথে পরিচালিত করা, সত্য পথে চলতে সাহায্য করা এবং আল্লাহর বিধান অনুসরণ করার জন্যে মনের মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টি করে দেয়া। মূলত, এভাবেই দাস মনিবের নৈকট্য অর্জন করে।

চিন্তা ও আমল: (۴۸) كل لنا أبو معمر ، حَل لَنَا قَبْلُ الْوَارِي ، حَدَّتَنَا جَعَلَ أَبُو مُلْمَانَ ، حَالَنَا أَبُر رجاء العطارد في عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنْهُمَا عَنِ اللَّبِي عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَعَلَّمَ فِيمَا يروى من رسم هر رجلٌ قَالَ : قَالَ إِنَّ الله كتب الْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ

পৃষ্ঠা-৭৯

ذالك فَمَنْ هُم بِحَسَنَةٍ فلم يُعْمَلُهَا كَتَبَهَا الله له عِندَهُ حَسَلَةٌ كَامِلَة فَإِن هُو هم بِهَا فَعيلها ، كتبها الله لَهُ مِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمَائَةٍ ضِعْف إلى المعاني كثيرة ومن هم بستنة تلم يَعْمَلُها كتبها الله له عِندَهُ حَسَنَة كامنة كان كو هُم بِهَا فَعَمِلَها كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً – (اخرجه البخاري في كتاب الرقاق جلد 8 ص (۱۰۳)

৪৮ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর প্রভু (আল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁর প্রভু (আল্লাহ) বলেনঃ আল্লাহ নেক ও বদ আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করেছেন। তারপর সেগুলো বয়ান করে দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তি যখন একটি নেক আমলের কথা চিন্তা করলো অথচ তখনো আমল করেনি, আল্লাহ এ সময় সে ব্যক্তির জন্যে তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকী লিখে রাখেন। কিন্তু যখন সে একটি নেক আমলের কথা চিন্তা করলা এবং তার আমলও করলো, তখন আল্লাহ এ ব্যক্তির জন্যে নিজের কাছে দশ থেকে সাতশ’ এবং সাতশ’ থেকে অসংখ্যগুণ নেকী লিখে রাখেন। পক্ষান্তরে যেব্যক্তি একটি বদ আমলের কথা চিন্তা করেছে, কিন্তু তা আমল করেনি, তার জন্যে তিনি নিজের কাছে একটি পূর্ণ নেকী লিখে রাখেন। আর যখন সে একটি বদ আমলের কথা চিন্তা করলো এবং সে অনুযায়ী আমলও করলো, তখন তার জন্যে একটি মাত্র গুনাহ লিখে রাখেন।

সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ বুখারীর ‘কিতাবুর রিকাক’-এ সংকলন করেছেন। শিক্ষা এ হাদীস থেকে মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের কথা জানা গেলো। আমরা জানতে পারলাম ১. পাপের চিন্তা করে তা থেকে বিরত থাকলেও একটি নেকী পাওয়া যায়। ২. একটি নেকীর চিন্তা করলেও একটি নেকী পাওয়া যায়। ৩. নেক আমলের চিন্তা করে তা সম্পন্ন করলে অসংখ্য নেকী পাওয়া যায়। কমপক্ষে দশটি নেকী তো পাওয়া যায়ই।

পৃষ্ঠা-৮০

সৎ লোকদের পুরষ্কার: (19) عن أبي المريرة رضي الله عنه قال : قال رسولَ اللَّهِ عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمُ يقُولُ الله : أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِينَ مالا عين رأت ولا أذن سمعت وَالأَخطر على قلب بشرٍ، وَافَرَأَوْا إِن شِئْتُمْ : فلا تعلم نفس کا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةٍ أَعْيُنٍ جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ، و في الجنة شجرة يَسِيرُ الرَّاكِبُ في ظِيْهَا مِائَةَ عَامٍ لَا يَقْطَعُهَا. وافْرَأَوا إِنْ شِئْتُمْ : وَقِلَّ مَمْدُودٍ وَ مَوْضِع سوط فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا واقْتَرَأَوْا إِن شِفَتُمْ : فَمَن رُجْزِحَ فِي النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيا الا متاع الغرور – ( وأخرجه الامام ابو عيسى الترمذي وقال حديث حسن صحيح)

৪৯ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার নেকার বান্দাহদের জন্যে এমনসব সামগ্রী তৈরী করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি। যা কোনো কান কখনো শুনেনি। যে সম্পর্কে কোনো মন কখনো কল্পনা করেনি।’ (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ) এ প্রসংগে তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের এই আয়াতটি পড়ে দেখতে পারোঃ “কোনো মানুষই জানেনা, আমি তাদের জন্যে কিসব চোখ জুড়ানো সামগ্রী লুকিয়ে রেখেছি। তাদের আমলের বিনিময়ে এগুলো তাদের দান করবো। জান্নাতে এমন একটি গাছ আছে, একজন আরোহী একশ বছরেও তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না। তোমারা ইচ্ছে করলে, এ প্রসংগে এই আয়াতটি পড়ে দেখতে পারোঃ “জান্নাতে রযেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী ছায়া আর ছায়া।২ জান্নাতের একটি সুই রাখার পরিমাণ স্থানও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের চাইতে উত্তম। এ প্রসংগে তোমরা ইচ্ছে করলে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ে দেখতে পারেঃ “মূলত সে ব্যক্তিই সাফল্য অর্জন করবে, যে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে ঢুকিয়ে দেয়া হবে জান্নাতে। ৩ সূত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী। তিনি বলেছেন, এটি হাসান সহীহ হাদীস। এছাড়া হাদীসটি কিছুটা সংক্ষিপ্তাকারে বুখারীতেও বর্ণিত হয়েছে। অন্যান্য সহী গ্রন্থেও বর্ণিত হয়েছে।

পৃষ্ঠা-৮১

ব্যাখ্যা হাদীসে বলা হয়েছে নেক লোকদের জন্যে এমন সব পুরস্কার তৈরী করে রাখা হয়েছে, যা কোনো চোখ দেখেনি। কোনো কান শুনেনি এবং কোমো অন্তর কল্পনা করেনি। এখানে দুটি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়ঃ

১. না দেখা, না শুনা কোন অচিন্তনীয় সামগ্রী পুরস্কার হিসেবে পেয়ে কি মানুষ খুশী হবে?

২. অদেখা, অশুনা, অকল্পনীয় সামগ্রী কি মানুষ সুখকরভাবে ভোগ ব্যবহার করতে পারবে?

প্রশ্ন দুইটির জবাব হলো, আল্লাহর অসাধ্য কিছুই নেই। সেসময় তিনি জান্নাতবাসীদের চিন্তাশক্তি, শ্রবণ শক্তি এবং দৃষ্টি শক্তির দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে পারেন। অদেখা অকল্পনীয় পুরস্কার পেয়ে তখন তারা তা চিনতে পারবে, বুঝতে পারবে এবং পুরো মাত্রায় স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। কুরআনে একস্থানে বলা হয়েছে, দুনিয়ার জীবনের সামঞ্জস্যপূর্ণ জিনিস তাদের দেয়া হবে। তবে স্বাদ হবে। ভিন্ন এবং চমৎকার। এই সামঞ্জস্যের কারণেও তখন তাদের নিজ নিজ পুরস্কারের মর্যাদা এবং ভোগ ব্যবহার উপলব্ধি করতে কোনো অসুবিধাই হবেনা। সর্বোপরি কথা হলো, যে আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীর নিয়ামত ভোগ ব্যবহার করার উযুক্ত ইন্দ্রিয় দান করেছেন, তিনিই আখিরাতের জীবনের নিয়ামত ভোগ ব্যবহার করার ইন্দ্রিয়ও তাদের দান করবেন। এটা তাঁর জন্যে মোটেও অসাধ্য নয়।

আল্লাহ্র প্রিয়ভাজন ব্যক্তির মর্যাদা:(0) عن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ عَلَى اللَّهِ اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ الله عز وجل قال : من عادى في وَلِيًّا ، فقد أذنتُهُ بِالْحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَى عَبْدِنِ يعني أَحَبُّ إِلى مِمَّا المُتَرَضتُ عَلَيْهِ ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَى بِالتَّوَافِلِ عَلَى أَحِبَّهُ لماذا أحببته كنت سمعة الذي يُسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَبَلَهُ الْين يَبْطِلُ بِهَا ، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَني لا فعِيلَهُ وَلَئِنِ اسْتَعَادُني

১. সূরা আস সাজদা, আয়াতঃ ১৭।

২. সুরা ওয়াকেয়া, আয়াতঃ ৩০।

৩. সূরা আলে ইমরান আয়াতঃ ১৮৫।

পৃষ্ঠা-৮২

الأميل له وما كر انك من غنى أنا كاملة ترا دنى عَنْ نَفْسٍ عَبْدِي الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ ، وَأَنا أكثرة مساءلة – ( الخرجه البخاري في كتاب الرقاق)

৫০. আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ যে আমার ওলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার সবচাইতে প্রিয় হলো, আমার দাসরা আমার ফরয করা বিধানসমূহ পালনের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে। আর যখন তারা আমার নৈকট্য লাভের জন্যে নফলও আদায় করতে থাকবে, তখন আমি তাদের ভালবাসতে থাকবো। আর আমি যখন কাউকেও ভালবাসি, তখন আমি তার শ্রবণেন্দ্রীয় হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার দৃষ্টি শক্তি হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে স্পর্শ করে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে চলে। সে যখন আমার কাছে কিছু চায়, আমি অবশ্যি তাকে দান করি। সে যখন আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি অবশ্যি তাকে আশ্রয় প্রদান করি। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে নির্দ্বিধায় করে ফেলি, কিন্তু আমার দাস মু’মিনের জীবন সম্পর্কে কিছু করার ক্ষেত্রে আমার মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থাকে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে। অথচ আমি অপছন্দ করি তার সায়ংকালকে।

সূত্র হাদীসটি গৃহীত হয়েছে ইমাম বুখারীর ‘সহীহ আল বুখারীর কিতাবুর রিকাক’ (মর্মস্পর্শী বাণী অধ্যায়) থেকে। অন্যান্য সহী গ্রন্থেও এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ব্যাখ্যা এ হাদীসে আল্লাহ তাঁর ওলী বলতে কাদের বুঝিয়েছেন, তা একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার। কারণ আমাদের দেশে, ওলী শব্দটি শুধুমাত্র একটি বিশেষ শ্রেণীর লোকদের জন্যে প্রযোজ্য মনে করা হয়। আসলে এরূপ ধারণা।

পোষণ করা সম্পূর্ণ ভুল। ওলী মানে, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক, কর্তৃত্বশীল, বন্ধু, প্রিয়জন। কুরআনে বলা হয়েছে। اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا –

‘আল্লাহ মু’মিনদের ওলী’ উপরোক্ত সব অর্থেই আল্লাহ মু’মিনদের ওলী।

পৃষ্ঠা-৮৩

পক্ষান্তরে আলোচ্য হাদীসে এবং কুরআনেও মু’মিনদেরকে আল্লাহর ওলী বলা হয়েছে। সূরা ইউনুসে বলা হয়েছেঃ الا إن أولياء الله لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَذْكُونَ لهم البشرى في الحيرة الدنيا وفي الآخرة لا تَبْدِيلًا لِكَلِمَاتِ اللهِ ذَالِكَ هُوَ القوْزُ الْعَظِيمِ – (يونس: ٣ – ٦٤)

“শোনো! যারা আল্লাহর ওলী, যারা ঈমান এনেছে, তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করেছে, তাদের কোনো ভয় এবং দুশ্চিন্তার কারণ নেই। পৃথিবী ও পরকাল উভয় জীবনে তাদের জন্যে রয়েছে পরম সুসংবাদ। আল্লাহর বাণী অপরিবর্তনীয়। এ সাফল্যই সবচাইতে বড় সাফল্য।” (সুরা ইউনুস: ৬২-৬৪) আলোচ্য হাদীস এবং কুরআনের এই আয়াতটি থেকে আল্লাহর ‘ওলী’র যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাহলোঃ

১. তাঁকে মু’মিন হতে হবে।

২. তাকওয়ার নীতি অবলম্বনকারী হতে হবে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর ভয়ে তাঁর নিষেধ করা কাজ থেকে বিরত থাকবেন এবং তাঁকে ভালবেসে তাঁর আদেশ পালন করবেন। তিনি বিবেকবান হবেন। আল্লাহর কোনো হুকুম লংঘন করতে গেলেই তার বিবেক তাকে দংশন করতে শুরু করবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর হুকুম পালন করলে মনে প্রশান্তিবোধ করবেন।

৩. আল্লাহর ধার্যকৃত (ফরয) বিধান ও হুকুমসমূহ পুরোপুরি এবং যথাযথ পালন করবেন। কোন্টি ত্যাগ করে কোন্টির প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করবেন, এক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করবেন।

৪. অধিক অধিক নফল আদায়কারী হবেন।

৫. উপরোক্ত সকল কাজ করবেন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্যে। কেবলমাত্র মহামনিব আল্লাহকে পাবার জন্যে।

এই হলো আল্লাহর ওলীর পরিচয়। কোনো মু’মিনের আল্লাহর ওলী হবার অর্থ, আল্লাহর প্রিয়জন, প্রিয়ভাজন হওয়া। আল্লাহকেই নিজের একমাত্র অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক, কর্তৃত্বশীল এবং বন্ধু বানিয়ে নেয়া। সকলের চাইতে এবং সবকিছুর চাইতে আল্লাহকে অধিক ভালবাসা। পরকালের জবাবদেহী ও শাস্তির ভয়ে ব্যাকুল থাকা। আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে পরিপূর্ণভাবে নিজে মানা এবং সমাজে তা প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রাণান্তকর চেষ্টা সাধনা চালিয়ে যাওয়া।

কোনো ব্যক্তি যদি সত্যিই এ পর্যায়ে পৌছুতে পারেন, তবেই আল্লাহ তার চোখ, কান, হাত, পা হয়ে যান। এর অর্থ সেব্যক্তি তার ইন্দ্রিয় নিচয় দ্বারা কেবল আল্লাহকেই অনুভব করবে। কেবল আল্লাহর চিন্তাই করবে। কেবল আল্লাহর কাজই করবে। কেবল আল্লাহর পথেই চলবে।

যদি তিনি এ পর্যায়ে পৌছুন, তবে আল্লাহ তার সাহায্যকারী হয়ে যান। তার শত্রুরা আল্লাহর শত্রু হয়ে যায় এবং তার শত্রুদের বিরুদ্ধে আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান।

পৃষ্ঠা-৮৪

১৩ অসুখ বিসুখ ও আপনজনের মৃত্যুতে সবর অন্ধত্বে সবর অবলম্বনের পুরষ্কার:(٥١) عن أنس بن مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : إِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ : إِذا الكَلَيْك عَبْدِي بِحَبِيبَلَيْهِ فَصَبَرَ عوضته مِنْهُمَا الْجَنَّةَ – (اخرجه البخاري في كتاب الطب باب فضل من ذهب بصري

৫১ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’লা বলেছেনঃ আমি যখন আমার কোনো (মুমিন) বান্দাহকে তার চোখ দুটি অন্ধ করে দিয়ে পরীক্ষায় ফেলি, তখন যদি সে সবর অবলম্বন করে, তবে এর বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করবো।” সূত্র হাদীসটি সহী আল বুখারীর ‘চিকিৎসা’ অধ্যায় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। (٥٣) قَالَ : يقول الله عزّ وَجَلَّ مَنْ أَذْهَبْتُ حَبِيْبَلَيْهِ ، وَصَبَرَ وَاخْتَسَبَ ،لَمْ أَرْضَ لَهُ فَوَابًا إِلَّا الْجَلة – الخرجه الترمذي وقال الترمذي رحمه الله : حديث حسن صحيح )

৫২ অনুরূপ হাদীস তিরমিযীতেও বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি যার চোখ দুটি নিয়ে নিয়েছি আর সে সবর করেছে এবং আমার কাছ থেকে পুরস্কারের আশা করেছে, আমি তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোনো পুরস্কারে সন্তুষ্ট হইনা।” সূত্র হাদীসটি সুনানে তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।

পৃষ্ঠা-৮৫

জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ: (٥٣) عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ مَادٌ مَرِيئًا وَمَعَهُ أَبُو هُرَيْرَةً مِنْ وَعَلدٍ كَانَ بِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ : أَبْشِرْ فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ هي كاري ، أسلكها عَلَى عَبْدِي الْمُؤْمِين فِي الدُّنْيَا لِتَكُونَ حَقَّهُ مِنَ النَّارِ فِي الْآخِرَةِ. ل اخرجه ابن ماجة في سننه في باب الحمى .

৫৩ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার জনৈক জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির শুশ্রুষা করতে আসেন। তাঁর সংগে ছিল আবু হুরাইরা। এসে তিনি রোগীটিকে বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ জ্বর আমারই আগুন। দুনিয়ায় তা আমি আমার মুমিন বান্দাহর উপর চাপিয়ে দিই। এ (জ্বরের) আগুন তার পরকালের জাহান্নামের আগুন থেকে ঘাটতি হবে।”

অসুখ বিসুখে আল্লাহর কৃতজ্ঞ থাকার মর্যাদা:(٥٠) عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ : إِذَا مَرِضَ الْعَبْلُ بَعْثُ اللَّهُ تَعَالَى إِلَيْهِ تَلْكَيْنِ فَكَانَ الخُيرا مَاذَا يَقُولُ لعواده ؟ لان موادًا جَاءُوهُ حَمِدَ اللهُ وَأَفَتَى عَلَيْهِ رَفَعَا الله إلى الله عز وجل وَهُوَ امْكُمُ فَيَقُولُ لِعَبْدِي عَلَى إِن تَوَلَّيْتُهُ أَنْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ وإن أنا شفيكة أن أبولَ لَهُ نَحْمَّا خَيْرًا مِنْ تَحْمِهِ وَمَا خَيْرًا مِنْ دَنِيهِ وَأَنْ أَكْفُرُ هنه شبكاته – الخرجه الإمام مالك في الأوطا، باب ما جاء في فضل المريض)

৫৪ আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ বান্দাহ যখন রোগাক্রান্ত হয়, তখন আল্লাহ তার কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠান। তাদের জিনি বলে দেনঃ গিয়ে দেখো, সেবক, শুশ্রুষাকারী ও দর্শকদের সাথে সে কী ধরনের কথা বলে?’ অতপর তারা এসে যদি দেখতে পায় যে, সে আল্লাহর প্রশংসা করে, তাঁর শোকর আদায় করে এবং তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে, তখন তারা এই কথাগুলো মহিমাময় আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয়। অবশ্য আল্লাহ নিজেই অধিক জানেন। তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের বলেনঃ আমার উপর এই বান্দাহর এ অধিকার বর্তাল যে, আমি তাকে মৃত্যু দান করলে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর

পৃষ্ঠা-৮৬

যদি আরোগ্য দান করি, তবে তার শরীরের এই মাংসের পরিবর্তে উত্তম’ মাংস তার শরীরে দান করবো। বর্তমান রক্তের চাইতে উত্তম রক্ত দান করবো এবং তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেবো।” সূত্র হাদীসটি সংকলন করা হলো ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ‘আল মুআত্তা’ গ্রন্থের ‘রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মার্যদা’ অধ্যায় থেকে।

প্রিয়জন হারা মুমিনের পুরষ্কার:(0) عن أبي هريرة رضي اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولُ اللهِ عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَكُونُ الله تَعَالَى : مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاء إِذا فَيَفْكَ صَلِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا كم اختشبه إلا الجنة – الخرجه البخاري، قال القسطلاني رحمه الله تعالى: والحديث من افراد البخاري إلى لم يخرجه مسلم في صحيحه )

৫৫ আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ বলেনঃ আমি যখন আমার কোনো মুমিন বান্দাহর প্রিয়জনকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিই, অতপর সে আমার কাছে আশা পোষণ করে, তার প্রতিদান আমার কাছে জান্নাত।” সূত্র হাদীসটি গৃহীত হলো সহীহ আল বুখারী থেকে। কাসতালানী বলেছেন, সহীহ বুখারীতে যেসব হাদীস এককভাবে বর্ণিত হয়েছে, এটি সেগুলোরই একটি হাদীস। অর্থাৎ সহীহ মুসলিমে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়নি।’

সন্তানহারা বাবা মার জন্য সুসংবাদ: (٥٦) عن أبي موسى الأشعري ربي الله عله أن رَسُولُ اللَّهِ عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ ، قال الله لا يكتم : فَمَقْكُمْ وَلَدَ عَبْدِهِ ؟ فَيَقُولُونَ : نَعَمْ فَيَقُولُ تَبَعْتُمْ لَمَرَةً فَزَادِهِ ؟ فَيَقُولُونَ : لَهُمْ فَيَقُولُ مَاذَا قَالَ عَبْدِي ؟ فَيَقُولُونَ حَمِلكَ وَاسْتَرْجَعَ فَيَقُولُ الله ابنوا لعبون بينا في الجنَّةِ وسموه بيت الكمي. الخرجه الدوري رحمه الله تعالى من ابواب الجنائز قال ابو عيسى الترمذي رحمه الله حديث حسن غریب)

পৃষ্ঠা-৮৭

৫৬ আবু মুসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো বান্দাহর সন্তান মারা যায়, আল্লাহ ফেরিশতাদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন: তোমরা কি আমার দাসের সন্তানের জান কবজ করেছো?’ তারা বলেঃ ‘জী-হা।’ তিনি বলেন, তোমারা কি তার কলিজার টুকরার জান কবজ করেছে? তারা বলে জী-হা! আল্লাহ তখন জিজ্ঞেস করেনঃ সেসময় আমার দাস কি বলেছে? তারা বলেঃ হে আল্লাহ, তারা তোমার হাম্দ (প্রশংসা) করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলেছে। তখন আল্লাহ তাদের নির্দেশ দেনঃ আমার এই দাসটির জন্য জান্নাতে একটি মনোরম ঘর তৈরী করো আর সেই ঘরটির নাম রাখো বাইতুল হাম্দ- প্রশংসার ঘর।

সূত্র ইমাম তিরমিযী তাঁর সুনানে তিরমিযীতে হাদীসটি সংকলন করেছেন জানাযা পরিচ্ছেদে। ইমাম তিরমিযী বলেছেন হাদীসটি হাসান গরীব।১ 00 من الي المريرة وهي الله منه في النبي على اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِن مُسْلِيِّيْنِ يَمُوتُ بَيْنَهُما فلاشة أولاد ، لم يَبْتَقُوا الْخَلْفَ إِلَّا أَدْخَلَهُمَا اللَّهُ بِفَضْلِ رحْمَتِهِ إِيَّاهُمُ الْجَنَّةَ قَالَ يقال لهم الخُلُوا الْجَنَّةَ فَيَقُولُونَ حَتَّى يَدْخُلَ آبَاؤُنَا فَيَقُولُ ادْخُلُوا انتم وأبا لكم – (و الخرج النسائقي في سننه في باب “من يتوق له ثلثة اولاد)

৫৭ আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামথেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ কোনো মুসলিম বাবা মার জীবদ্দশায় যদি তাদের তিনটি নাবালেগ সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ দ্বারা তাদের দু’জনকেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সন্তানগুলোকে কিয়ামতের দিন বলা হবে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ ওরা বলবেঃ আমাদের বাবা মা প্রবেশ করা ছাড়া আমরা প্রবেশ করবো না।’ তখন আল্লাহ বলবেনঃ যাও তোমরা এবং তোমাদের বাবা মা সবাই প্রবেশ করো।

১ গরীব সেই হাদীসকে বলা হয়, যার সূত্রের (সনদের কোনো এক পর্যায়ে একজন মাত্র রাবী (বর্ণনাকারী) হাদীসটি বর্ণনা করেন। উক্ত রাবী যদি বিশ্বস্ত এবং মেধাবী হন তবে এতে হাদীস জয়ীক হয়না।

পৃষ্ঠা-৮৮

সূত্র হাদীসটি ইমাম নাসায়ী তাঁর সুনানে নাসায়ীর ‘যার তিনটি সন্তান মারা যায়’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।

মৃত বাবা মার জন্যে সন্তানের দোয়ার মর্যাদা: (٥٨) عن ابي هريرة رضي الله عنه عن اللي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الرجل لترفع درجنة في الْجَنَّةِ فَيَكُولُ إلى هذا ؟ فَيُقَالُ بِاسْتِغْفَارِ والدة الله – (الحرجه ابن ماجة في سننه في باب بر الوالدين)

৫৮ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা উঁচু হতে থাকবে। সে বলবেঃ কি কারণে আমার মর্যাদা বাড়ছে? তখন তাকে বলা হবেঃ তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছে বলে তোমার মর্যাদা বাড়ছে।’ সূত্র ইমাম ইবনে মাজাহ তাঁর সুনানে ইবনে মাজাহর ‘পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার’ পরিচ্ছেদে হাদীসটি সংকলন করেছেন।

ব্যাখ্যা মৃত পিতা মাতার জন্য সন্তানের দোয়া কাজে আসে। এ কথাটি অপর একটি হাদীসে স্পষ্ট ভষায় বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ মানুষ যখন মরে যায়, তখন তার আমলও ছিন্ন হয়ে যায়। তবে তিনটি নেক আমল তার আমলনামায় যোগ হতে থাকে। এই তিনটির মধ্যে একটি হলোঃ أَوْ وَلَد صَالِحٌ من هوا ته – (رواه مسلم) “এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া, যে তার জন্য দোয়া করবে।” (মুসলিমঃ আবু হুরাইরা) অর্থাৎ বাবা মা যদি সন্তানদের দীনদার বানায়, সৎ ও চরিত্রবান করে পড়ে তোলে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে শিখিয়ে যায়, তবে তাদের মৃত্যুর পর এরূপ সন্তানের দোয়ায় জান্নাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।। পিতামাতার মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য দোয়া করা সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন বাবা-মার জন্য এভাবে দোয়া করোঃ رَبِّ رَحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا – “প্রভু। আমার বাবা-মার প্রতি সেইভাবে রহম করো, যেমন করে ছোটবেলা থেকে তাঁরা আমাকে পরম দয়া ও মমতার সাথে প্রতিপালন করেছেন।”

পৃষ্ঠা-৮৯

১৪ উম্মতের জন্য রাসূলুল্লাহর মমত্ব উম্মতের জন্য প্রিয় নবীর দোয়া ও কান্নাকাটি: (٥٩) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بنِ الْعَاصِ رَضِيَ الله عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ عَلَى اللهِ عَلَيْهِ وسلم كلا قول الله تعالى فِي إِبْرَاهِيمَ عَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَعَلَّمَ رَبِّ إِنَّهُنَّ اطالى كثيرا من الناس لمن ليعين لانه مني ……. الامية ” وقال بيتى صلى الله عليه وسلم : إِن تَعْد بهم فَإِنَّهُمْ عِبادك وإن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَقَالَ اللهم التي … أمين وبكى فقال الله فزَّ وَجَلَّ : يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ إلى تحمل ورَبُّكَ أَعْلَمُ فَسَلَهُ : مَا يُبْكِيكَ ؟ فَأَناهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلامُ فَسَأَنَّهُ لاخبرة رسول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَا فالتوهُوَ أَعْلَمُ ! فَقَالَ اللهُ تَعَالَى يا جبريل الأحب إلى مُحَمَّد فَقُلْ إِنَّا سَتَرْجِيكَ فِي أَمَتِكَ وَلَا نَسُواق. الخرجه مسلم في صحيحه من كتاب الايمان)

৫৯ আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র কুরআন থেকে আল্লাহর এই বাণীটি পাঠ করলেন, যাতে নিজ উম্মত সম্পর্কে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের এই বক্তব্য উল্লেখ আছেঃ প্রভু। এই মূর্তিগুলো অসংখ্য মানুষকে বিপথগামী করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে, কেবল সেই আমার দলভুক্ত। আর কেউ আমার কথা অমান্য করলে তুমি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”১ তারপর নিজ উম্মত সম্পর্কে ঈসা আলাইহিস সালামের এ বক্তব্য কুরআন থেকে পাঠ করলেনঃ প্রভু, তুমি যদি তাদের শান্তি দাও, তবে তারা তো

পৃষ্ঠা-৯০

তোমারই দাস। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দাও, তবে তাও তোমার অসাধ্য নয়। কারণ তুমি তো মহাপরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী। ২ এ দুটি আয়াত পাঠ করার পর তিনি মহান আল্লাহর দরবারে দুটি হাত উঠিয়ে বললেনঃ ওগো আল্লাহ! আমার উম্মত… আমার উম্মত এবং অনেক কাঁদলেন। তখন মহান আল্লাহ জিব্রীলকে বললেন, হে জিব্রীল মুহাম্মদের কাছে যাও। তাকে জিজ্ঞেস করো সে কী কারণে কাঁদছে। অথচ আল্লাহই সর্বাধিক জানেন, তিনি কেন কাঁদছেন। জিব্রীল আলাইহিস সালাম এসে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সবকিছু জানালেন। অথচ আল্লাহ নিজেই সবকিছু জানেন। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন ফিরে যাও মুহাম্মদের কাছে। গিয়ে তাকে বলোঃ আমি অচিরেই তোমাকে তোমার উম্মতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট করবো। তোমার মনে ব্যথা দেবো না।” সূত্র ইমাম মুসলিম তাঁর সহী মুসলিষের ঈমান অধ্যায়ে হাদীসটি বর্ণনা’ করেছেন।

পৃষ্ঠা ৯১ থেকে ১০৫

পৃষ্ঠা-৯১

১৫তাওবা, ক্ষমা ও আত্মহত্যা- বান্দাহর তাওবায় আল্লাহর খুশী:(٢٠) عن أبي هريرة رضي الله عنه عن رسول على اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: قال الله عَزَّ وَجَلَّ أنا عند امي مبين في وأنا مَعَهُ حَيْثُ يَذْكري – وَاللهِ اللهُ أَفْرَح بلوية عبدو من أحدكم بعد خالية بالفلاةِ وَمَنْ تَقَرَّبَ إِلَّا هِبْرًا لَقَرْيَكَ الله ومن تقرب إلى دراما تقربت اليه باعا وَإِذا أَقْبَلَ إِلَى يَنهِي أَقْبَلَكَ إِلَيْهِ أمريكا – ( اخرجه الإمام مسلم في صحيحه من كتاب التوبة )

৬০ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ বান্দাহ্ আমার সম্পর্কে যেরূপ ধারণা করে, আমি তার জন্য ঠিক সেরকম। সে যখনই আমাকে স্মরণ করে, আমি তার সংগী হয়ে যাই। আল্লাহর শপথ, তোমাদের কেউ কোনো নির্জন ভূমিতে তার হারানো ঘোড়া খুঁজে পেলে যতোটা খুশী হয়, বান্দাহ তাওবা করলে আল্লাহ তার চাইতে অনেক বেশী খুশী হন। সে আমার দিকে এক বিষত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক বাহু এগিয়ে যাই। সে আমার দিকে এক বাহু এগিয়ে এলে আমি তার দিকে দুই বাহু এগিয়ে যাই। সে আমার দিকে হেঁটে এলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।” সূত্র হাদীসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসিলমের ‘তাওবা অধ্যায়ে’ বর্ণনা করেছেন।

পৃষ্ঠা-৯২

ব্যাখ্যা তাওবা মানে ফিরে আসা। ইসলামের পরিভাষায় তাওবা মানে কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানের দিকে ফিরে আসা। তাওবা করার নিয়ম হলোঃ

১. নিজের কৃত অপরাধ উপলব্ধি করা ও স্বীকার করে নেয়া।

২. অপরাধের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া।

৩. আল্লাহর শাস্তির ভয়ে অশ্রুপাত করা।

৪. বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

৫. ভবিষ্যতে আর অপরাধ না করার ওয়াদা করা এবং এ জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া।

৬. আল্লাহর রহমত ও সাহায্য কামনা করা।

৭. কিছু কাফফারা প্রদান করা। যেমন- নফল নামায পড়ে নেয়া, কিংবা কয়েকটি নফল রোযা রাখা, অথবা অর্থ সম্পদ দান করা।

এই হলো প্রকৃত তওবা। মহান আল্লাহর চরম শান্তির ভয়ে ভীত হয়ে এবং তাঁর পরম ক্ষমা ও দয়ার আশায় আশান্বিত হয়ে যিনি যতোটা আন্তরিকতা ও খুলুসিয়াতের সাথে এই কাজগুলো করবেন তিনি ততোটা আল্লাহর নৈকট্যে এগিয়ে যাবেন এবং আল্লাহও তার চাইতে দ্রুততর বেগে তার দিকে এগিয়ে আসবেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাহর দিকে এগিয়ে আসার অর্থ হলো, তিনি তাঁর দাসের প্রতি দয়া, ক্ষমা ও করুণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। এ যাবত যে ক’টি কথা আলোচনা করলাম, সে সম্পর্কে কুরআনের একটি আয়াত খুবই প্রাসংগিক। আল্লাহ বলেনঃ

তারা হলো এমন লোক যে, তাদের দ্বারা যখনই কোনো অশ্লীলতা ঘটে যায়, কিংবা যখনই তারা নিজেদের উপর কোনো যুলম করে বসে, তখন তখনই তারা আল্লাহর কথা স্মরণ করে আর নিজেদের অপরাধের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। কারণ, আল্লাহ ছাড়া গুণাহ মাফ করতে পারে এমন আর কে আছে? অতপর জেনে বুঝে তারা এসবে আর লিপ্ত হয় না। এ ধরনের লোকদের প্রতিদান নির্দিষ্ট আছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের প্রতিদান হলো তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা আর জান্নাত, যে জান্নাতের

পৃষ্ঠা-৯৩

নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবহমান। তারা চিরদিন সেখানে থাকবে। যারা সৎ কাজ করে তাদের পুরস্কার কতই না উত্তম। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৫-১৩৬/

ক্ষমা পাওয়ার জন্যে দীনি ভাইদের মাঝে সুসম্পর্কের গুরুত্ব: (۱) عن أبي هريرة رضى الله عَنْهُ أَنَّ رَسُولُ اللهِ عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لفتح أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْإِكْتَنِي وَ يَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لَا يُشْرِكَ بِاللَّهِ هيم إلا رجلا كانت بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْكامُ فَيُقَالُ أَنْظُرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يصالها أَنْظِرُوا هَلَيْنِ حَتَّى يَفْعَلِهَا الْظِرُوا مُدَّيْنِ حَتَّى يَصْعَلِها . ) اخرجه مسلم باب النهي عن الفحشاء)

৬১ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সোমবার এবং বিষ্যুদবারে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। অতপর এমন প্রত্যেক বান্দাহর গুণাহ মাফ করে দেয়া হয়, যে আল্লাহর বিন্দুমাত্র শিরক করেনি। তবে ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয়না নিজ দীনি ভাইয়ের সাথে যার সম্পর্ক ভালো নয়। তাদের সম্পর্কে বলা হয় “সংশোধন হওয়া পর্যন্ত এদের সময় দাও।” “সংশোধন হওয়া পর্যন্ত এদের সময় দাও।” সংশোদন হওয়া পর্যন্ত এদের সময় দাও।” সূত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমের ‘আন নাহি আনিলফাহশা’ অনুচ্ছেদে।

□ আত্মহত্যকারী জান্নাত পাবেনা

(۲) عن جندب بن عَبْدِ اللهِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : كَان

فيمن كان فيتكم رجل به جزع تجرع فاعل سكينا فخر بِهَا بَدَهُ لَمَّا رَقَا السلام عبدي بنفسِهِ حَرَّكَ عَلَيْهِ الْجَنَّة. حتى مارك ، قال الله تَعَالَى بَادَرَني

(الخرجه البخاري)

পৃষ্ঠা-৯৪

৬২ জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেনঃ তোমাদের পূর্বেকার এক উম্মতের কোনো এক ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাতের যন্ত্রণায় সে অধৈর্য হয়ে পড়ে এবং একটি ছুরি দিয়ে হাত কেটে দেয়। ফলে রক্ত ক্ষয় হয়ে লোকটি মারা যায়। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ “আমার বান্দাহ নিজের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করেছে। আমি তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দিলাম।” সূত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী তাঁর সহী আল বুখারীতে।

পৃষ্ঠা-৯৫

১৬ রাসূল [সাঃ] ও খাদীজা [রাঃ] রাসূলুল্লাহর প্রতি সালাত ও সালাম: () عن عبد الله بن أن طلحة عن أبيه رضي الله عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاء ذات يوم وَالْبُشْرَى فِي وَجْهِهِ فَقُلْنَا إِنَّا لَنَرَى الْبُشْرَى فِي وجولة قلَالَ إِنَّهُ أَتَانِي الْمُلك لَكَانَ يَا مُحَمَّدُ أَمَا يُرْضِينَهُ أَنَّهُ لَا يَعْلَي عَلَيْكَ أَحَدَّ إِلَّا صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَفْرًا ، وَلَا يُسْلِمُ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلَّا عَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَفْرًا ؟ الخرجه النسائي رحمه الله في سننه)

৬৩ আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা তাঁর পিতার কাছ থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদের মাঝে এলেন। তাঁর মুখমন্ডলে ছিল সুসংবাদের আভা। আমরা বললামঃ আমরা আপনার মুখমন্ডলে সুসংবাদের আভা দেখতে পাচ্ছি।’ তিনি বললেনঃ আমার কাছে একজন ফেরেশতা এসেছিলেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বলে গেলেন:

14“হে মুহম্মদ। এ সংবাদ কি আপনাকে খুশী করবে না যে, কেউ যদি আপনার প্রতি একবার সালাত পাঠায়, আমি তার প্রতি দশবার সালাত পাঠাই। আর কেউ যদি আপনার প্রতি একবার সালাম পাঠায়, আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাই।” সূত্র হাদীসটি গৃহীত হলো ইমাম নাসায়ীর সুনানে নাসায়ী থেকে। ব্যাখ্যা সালাত )صلوۃ( মানে কারো দিকে মুখ ফেরানো, দৃষ্টিদান, দয়া,অনুগ্রহ, ক্ষমা, দোয়া প্রার্থনা। বান্দাহর প্রতি আল্লাহর সালাত পাঠানোর অর্থ

পৃষ্ঠা-৯৬

বান্দাহর প্রতি দৃষ্টিদান করা, তাকে দয়া, ক্ষমা করা ও অনুগ্রহ করা। রাসূলের প্রতি সালাত পাঠানোর অর্থ আল্লাহর কাছে তাঁর প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণের জন্যে দোয়া করা। খাদীজার (রা) প্রতি আল্লাহর সালাম প্রেরণ: (1) عن أبي هريرة رحى الله عَنْهُ قَالَ الَى جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ النَّبِيِّ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ هَذِهِ خَدِيجَة فَر اللَّهُ مَعَهَا إِنَاهُ فِيهِ إدام أو طعام أو شراب فإذا هي أنضال فاقتراً عَلَيْهَا السَّلَامَ مِنْ رَّبِّهَا وَمِين وبشرها بيت في الْجَنَّةِ مِن قَصَبٍ لا صَعَب فِيهِ وَلَا نَصب – (اخرجه البخاريفي كتاب المناقب)

৬৪ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার জিব্রীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন। এ সময় তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল। ঐ যে একটি পাত্রে করে তরকারী বা পানাহারের জিনিস নিয়ে খাদীজা আসছেন। তিনি আপনার কাছে পৌঁছলেই তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছাবেন। আর তাকে জান্নাতে মুনিমুক্তা খচিত একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দিন। সেখানে কোনো শোরগোলও থাকবেনা আর কষ্ট-ক্লেশও থাকবেনা।” সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ আল বুখারীর ‘কিতাবুল মানাকিব’- এ বর্ণনা করেছেন।

প্রেক্ষাপট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হেরা গুহায় অবস্থান করতেন, তখন প্রায়ই তিনি একাধারে কয়েকদিন সেখানে থেকে যেতেন। এসময় খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা পায়ে হেঁটে গিয়ে সেখানে তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন। উল্লেখ্য, তাঁদের বাড়ী থেকে পাহাড়টি ছিল তিন মাইল দূরে। খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহা এই তিন মাইল পথ খাবার নিয়ে পায়ে হেঁটে যেতেন। শুধু তাই নয়, জগদ্দলময় ঐ পাহাড়ের সেই উঁচু গুহাটি পর্যন্ত তিনি উঠে খাবার দিয়ে আসতেন। মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, প্রথম অহী নাযিল হবার পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুদিন সেখানে গিয়েছেন এবং এসময়ই একদিন খাদীজা সেখানে খাবার নিয়ে গেলে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সালামপ্রাপ্ত হন।

পৃষ্ঠা-৯৭

১৭মৃত্যু ও হাশর: আল্লাহর সাক্ষাত লাভের আকাংখা

(10) عن أبي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَحَبُّ هَبْدِي لِقَانِي أَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ وَإِذَا كَرِهُ لِقَانِي كَرِمْتُ لقارة – أخرجه البخاري في كتاب التوحيد ، عن ابى هريرة بلفظ صريح في نسبته إلى الله تعالى فيكون نشا على انه حدیث قدسی –

৬৫ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যখন আমার কোনো দাসের প্রাণের আকাংখা হয় আমার সাক্ষাত লাভ, তখন আমিও তার সাক্ষাতকে ভালবাসি। আর যখন কেউ আমার সাক্ষাতকে অপছন্দ করে, তখন আমিও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করি।”সূত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ আল বুখারীর ‘তাওহীদ’ অধ্যায়ে। মুমিন মৃত্যুকে ভালবাসে (٦٦) من البادة بن السَّامِيتِ رَضِيَ الله عَنْهُ عَنِ اللَّبِي عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال : من لَحَبُّ لِقَاءَ الله أحب الله لقاءة ومن كرة لقاء التوكيرة الله لكارة كالك عاشقه او بعض أَزْوَاجِهِ إِنَّا لَتَكْرَهُ الْمَوْتَ قَالَ لَيْسَ ذَالِهِ وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَة الْمَرْك بَشِّرَ بِرِضْوَانِ اللهِ وَكَرَامَتِهِ فَلَيْسَ شَنى أَحَبُّ إِلَيْهِ مِمَّا أَمَامَهُ فَأَحَبَّ لكاءَ اللهِ وَأَحَبُّ اللهُ لِقَاءَةُ وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا حَضِرَ بَشِّرَ بِعَذَابِ اللهِ – الخرجه البخاري في كتاب الرقاق)

পৃষ্ঠা-৯৮

৬৬ উবাদা ইবনে সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করাকে ভালবাসে, আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করাকে অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন। একথা শুনে আয়েশা অথবা তাঁর কোনো একজন স্ত্রী বললেনঃ ‘আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করি!’- এ কথার জবাবে তিনি বললেনঃ না, ব্যাপার তা নয়। বরং মুমিনের যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন তার সম্মুখের জিনিসটির চাইতে প্রিয়তর কোনো জিনিস আর থাকেনা। তখন সে আল্লাহর সাক্ষাত লাভের আকাংখায় উদ্বেলিত হয়ে উঠে। তখন আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন। কিন্তু কাফিরের অবস্থা ভিন্ন রকম। তার যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, তখন তাকে আল্লাহর আযাবের সুসংবাদ (1) দেয়া হয়।” সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারীর সহীহ আল বুখারীর কিতাবুর রিকাকে বর্ণিত হয়েছে। হাশর ময়দানে আল্লাহর ঘোষণা (۶۷) عن جابر أتى ابن عبد الله الانصاري رضى اللهُ عَنْهُمَا عَلَى ابْنِ أَنَيْسٍ رَبِّي الله عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ يَحْشُرُ اللهُ الْعِبَادُ مُهادِيهِمْ بِي يَسْمَعُهُ مَنْ بَعْدَ كَمَا يَسْمَعُهُ مَنْ قَرُبَ أَنَا الْمَلِكُ أَنَا اللَّيَّان الخرجه البخاري في كتاب التوحيد)

৬৭ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইবনে উনাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের হাশর (একত্র) করবেন। অতপর উচ্চস্বরে তাদের ডাকবেন, যা দূরের লোকেরাও ঠিক তেমনি শুনতে পাবে, যেমনি শুনতে পাবে কাছের লোকেরা। ডেকে তাদের বলবেনঃ “আমিই একমাত্র সম্রাট। আমি প্রবল পরাক্রান্ত, ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী।” সুত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী তার সহীহ আল বুখারীর ‘তাওহীদ’ অধ্যায়ে।

পৃষ্ঠা-৯৯

আল্লাহর বিচার:১৮ আল্লাহর আদালত

(۶۸) من أين هريرة رضي قال سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ عَلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ اله أول النَّاسِ يُقضى يوم الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتَشْهِد فَأَبِي بِهِ لَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فقرتها ، قال كما علق بينها ؟ كان قائلتُ فيك حتى استشهدت كان : كذبت ولكنك قائلت لأن يقال : جَرى، فقد قيل : قم أمرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى الْقِي فِي النَّارِ ورجل العلم العلم وعلمة وقرأ القرآن ناجى به فعرفه نعمه تعرفها كان كما تملك فيها ؟ قال تعلمتُ العِلم وعلمته وقرأت فيك القرآن كان كذب ولكنك تعلمت العِلْمُ لِيُقَالَ عَالِم وقرأت القرآنَ لِيُقَالُ : هُوَ قَارِي فَقَدْ بيل ثم أمر به فسحب على وَجْهِهِ حَتَّى الْقِتَى فِي النَّارِ وَرَجُلٌ وَشَعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وأفكاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالَ كله فأتى به فعرفه نعمه فعرفها قَالَ فَمَا عَمِلْكَ فِيهَا قال ما تركت من سَبِيلٍ تُحِبُّ أن تنقل فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيْهَا لَله قال كن بت و تكلة تعليك بهلال : هو جواد مقد فهل كم أمر به تَصْحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ القباني في النار (الخرجه مسلم في صحيحه في الجهاد)

৬৮ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন সবার আগে এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে, যে শহীদ হয়েছিল তাকে সামনে আনা হবে। তার প্রতি আল্লাহর যতো অনুগ্রহ ছিল সেগুলো তাকে জ্ঞাত করানো হবে। সে পরিষ্কার বুঝতে পারবে, এসব অনুগ্রহ তার উপর করা

পৃষ্ঠা-১০০

হয়েছিল। তাকে বলা হবে, এতসব অনুগ্রহ লাভ করেও তুমি কেমন আমল করেছিলে? সে বলবেঃ আমি তোমার পথে প্রাণপণ লড়াই করেছি। এমনকি শহীদ পর্যন্ত হয়েছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যে বলেছো। তুমি বরং লড়াই করেছিলে এ জন্যে যে, লোকেরা যেনো তোমাকে ‘বীর’ বলে। এই সুনাম তো পৃথিবীতে পেয়েছই। অতপর তার ব্যাপারে ফায়সালা দেয়া হবে এবং উপুড় করে নিয়ে গিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর আনা হবে এমন এক ব্যক্তিকে, যে জ্ঞান শিক্ষা লাভ করেছিল, মানুষকে শিক্ষাদান করেছিল এবং সে কুরআনও পড়েছিল। তাকে যেসব নিয়ামত দান করা হয়েছিল সেগুলো তাকে চিনিয়ে দেয়া হবে। সে সবই চিনতে পারবে। তাকে বলা হবে, তুমি নিজে সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে কেমন আমল করেছিলে? সে বলবেঃ আমি ইলম হাসিল করেছি, মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার পথে কুরআন পড়েছি।’ আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যে বলেছো। বরঞ্চ, তুমি তো জ্ঞানার্জন করেছো, যেন তোমাকে জ্ঞানী বলা হয়। কুরআন পাঠ করেছো, যেন তোমাকে কারী বলা হয়। এসব উপাধিতে দুনিয়ার লোকেরা তোমাকে ডেকেছে। অতপর তার ব্যাপারে ফায়সালা দেয়া হবে এবং উপুড় করে নিয়ে গিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতপর এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, যাকে আল্লাহ তা’আলা অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য দান করেছিলেন, দান করেছিলেন সব ধরনের ধনমাল। তাকে যেসব অনুগ্রহ দান করা হয়েছিল, সেগুলো চিনিয়ে দেয়া হবে। সে সবগুলোই চিনতে পারবে। তখন তাকে বলা হবে, এসব অনুগ্রহ লাভ করে তুমি কি ধরনের আমল করেছিলে? সে বলবেঃ যেসব পথে খরচ করলে তুমি খুশী হও এমন প্রত্যেকটি পথেই আমি তোমাকে খুশী করবার জন্যে অর্থ ব্যয় করেছি। “আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যে কথা বলেছো, বরং তুমি তো এসব কাজ এ কারণে করেছো যেন তোমাকে ‘দানবীর’ বলা হয়। পৃথিবীতে লোকেরা তোমাকে এ গুণে ভূষিত করেই ফেলেছে (সুতরাং তোমার কাংখিত পুরস্কার তো তুমি পেয়েই গেছো।) তারপর তার ব্যাপারে ফায়সালা দেয়া হবে এবং উপুড় করে নিয়ে গিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সূত্র হাদীসটি গৃহীত হলো ইমাম মুসলিমের সহীহ মুসলিম গ্রন্থের ‘জিহাদ’ অধ্যায় থেকে।

পৃষ্ঠা-১০১

কিয়ামতের দিন সবাই আল্লাহর সম্মুখীন হবে

(۲۹) من عدي بن خَالِمٍ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ بَيْتًا أَنَا عِنْدَ اللَّبِي عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أَكلة رجل لشكا إلَيْهِ القَالَةَ ثُمَّ أَناهُ آخَرُ نَشَكَا إِلَيْهِ قَطعَ الشَّهِيلِ فَقَالَ يَا عَين هل رأيت الجيرة ؟ لنك لم أَرَهَا وَقَدْ أَنبِلْتُ عَنْهَا كَانَ فَإِنْ كَانَتْ بِلكَ حَيَاةٌ لتَرَينَ التلوينة ترتيل من الْعِيرَةِ حَتَّى تعرف بِالكَعْبَةِ لَا تَشَافُ أَحَدًا إِلَّا الله كلك فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِي فَأَيْنَ دُعَارُ عَنِي الَّذِينَ سَعْرُو الْبِلَادَ ؟ وَلَئِن خَالَفَ بِلك حياة لتفتيحن كنوز كشرى قلت : كسرى بن هرمز ؟ قَالَ كِسْرَي بَنْ هُرْمُزَ وَ لَيْن ظائف بلا حياة لقرين الرجل يخرج منه كله من ذهبٍ أَوْ يَقَةٍ يَطْلُبُ مَن يَقْبَلُهُ مِنْهُ فَلا يَجِدُ أَحَدًا يَقْبَلُهُ مِنْهُ وَلْيَلْقَين الله أحَدُكُمْ يَوْمَ يَلْقَاهُ وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانَ يُرْجِمُ لَهُ فَلْيَقُونَنَّ لَهُ ألم أبعث إِلَيْكَ رَسُولاً فَيُبَلِّقَلَهُ ؟ فَيَقُولُ بلَى فَيَقُولُ الله أعطاك مالاً ووَلَدًا وَأَفْضِلُ عَلَيْكَ ؟ فَيَقُولُ عَلَى فَيَنظُرُ عَنْ يَمِينِهِ فلا يرى إِلَّا جَهَلمَ وَيُنْظُرُ عَنْ يَسَارِهِ فلا يرى إِلَّا جَهَنَّمَ قَالَ عَدِيٌّ سَمِعْتُ النَّبِيِّ على الله عليه وسلَّمَ يَقُولُ القُوا النَّارُ وَلَوْ بِشِقِّ شَرَةٍ فَإِن لَمْ نَجِن شِي تَمْرَةِ لكلمة طيبة – قال علي كى رضي الله عنه فرانك الطعِينَة ترشيل مِنَ الْجِهْرَةِ حَتَّى تَعوف بِالكَعْبَةِ لَا تَخَافُ إِلَّا الله وكنتُ فِيْمَنِ افْتَتَه كنوز كسْرَى بْنِ مُرَارُ وَلَئِن طَالَهُ بِكُمْ حَيَاةُ لَتَرُونَ مَا قَالَ اللي أبو القاسم على الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُخْرِجُ مِلْ كَلِيهِ المخرجه البخاري في كتاب المناقب باب علامات النبرة في الاسلام)

৬৯ আদী ইবনে হাতিম রাদিয়াল্লাগু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এসময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এলো। সে তাঁর কাছে ক্ষুধার অভিযোগ করলো। অতপর আরেক ব্যক্তি এলো। সে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই ইত্যাদির কথা জানালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে

পৃষ্ঠা-১০২

আদী! তুমি কি কখনো হিরা শহর দেখেছো? আমি বললামঃ জী-না, আমি কখনো হিরা শহর দেখিনি। তবে সে শহরের খবর আমার জানা আছে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও, তবে অবশ্যই দেখতে পাবে একজন মহিলা হিরা শহর থেকে দীর্ঘ পথ একা ভ্রমণ করে এসে কা’বা তাওয়াফ করছে। এ দীর্ঘ পথে সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় করবেনা।’ আমি মনে মনে ভাবলামঃ তখন তাঈ গোত্রের ডাকাতগুলো তাহলে কোথায় যাবে, যারা এখন বিভিন্ন শহরে ফিৎনার অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আরো বললেনঃ তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও, দেখবে, তোমরা অবশ্যি পারস্য সম্রাটের (কিসরার) সমস্ত ধনাগার বিজয় করবে।’ আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি এই কিসরা ইবনে হরমুযের কথাই বলছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কিসরা ইবনে হরমুযের কথাই বলছি। তুমি যদি দীর্ঘজীবী হও, দেখতে পাবে, এক ব্যক্তি অঞ্জলি ভরা সোনারূপা নিয়ে বের হবে, যেন সেগুলো কেউ গ্রহণ করে। কিন্তু সেগুলো গ্রহণ করার মতো একজন লোকও সে খুঁজে পাবেনা। কিয়ামতের দিন তোমাদের একেকজন এমনভাবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে যে তার মাঝে আর আল্লাহর মাঝে কোনো দোভাষী থাকবেনা। আল্লাহর কথাগুলো তাকে বুঝিয়ে দেবার জন্যে কোনো দোভাষীর প্রয়োজনই হবে না। তখন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেনঃ আমি কি তোমাদের কাছে একজন রাসূল পাঠাইনি? সেকি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দেয়নি?’ সে তখন স্বীকৃতি দিয়ে বলবেঃ জী-হা। তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমি কি তোমাকে ধন সম্পদ আর সন্তান সন্তুতি দিইনি? তাছাড়া তোমার প্রতি কি আরো অনেক অনুগ্রহ আমি করিনি?’ তখন সে স্বীকৃতি দিয়ে বলবেঃ জী-হাঁ। তখন সে তার ডান দিকে তাকাবে। সে দিকে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। অতপর বাম দিকে তাকাবে। এদিকেও জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না।

আদী বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ অর্ধেক খেজুর দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। অর্ধেক খেজুরও যদি দান করতে অসমর্থ হও, তবে একটি উত্তম কথা দিয়ে হলেও জাহান্নাম থেকে নিজেকে বাঁচাও।আদী বলেনঃ পরবর্তীকালে আমি এক রমণীকে দেখেছি, তিনি হিরা থেকে একা সফর করে এসে কা’বা তাওয়াফ করেছেন এবং এ দীর্ঘ সফরকালে তিনি

পৃষ্ঠা-১০৩

আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ভয় পাননি। আর আমি ঐসব লোকদেরও একজন ছিলাম, যাদের হাতে কিসরা ইবনে হরমুষের ধনাগার বিজয় হয়েছে। তোমরা যদি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকো, তবে আল্লাহর নবী আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেই ভবিষ্যত বাণীরও বাস্তবতা দেখতে পাবে যে, এক ব্যক্তি অঞ্জলি ভরা সোনারূপা নিয়ে বেরিয়েছে…।

সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ আল বুখারীর ‘কিতাবুল মানাকিব’ এ বর্ণনা করেছেন। (۷۰) عن أبي هريرة رضي الله عنه قَالَ : قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ القيامة ؟ قال هل كماروك في راب الشَّمْسِ في الظهيرة لَيْسَفَ فِي سَحَابَة ؟ قَالُوا لا ، قَالَ نَهَل تَخَارُوْنَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةِ الْبَدْرِ لَيْسَ فِي سَحَابَةٍ ؟ قَالُوا لَا قَالَ والين نفسي بيده ، لا تشاؤون في رؤية ربكم الاكمَا تُشَارُوْنَ فِي رُؤْهَا أَحَدٍ هِمَا مان فيلقى العبد فيقول أن قل أنتم أكرمك ؟ وأسودك وأزوجك واسجر لله العمل والإيل وأدرك تراس وتربع ؟ فيقول بلى قَالَ فَيَقُولُ أفظنت أكلك خلاق ؟ فيقول لا فَيَقُولُ فَاني السابق كما تسيبنى ثُمَّ يَلْعَى الثَّانِي فَيَقُولُ أَن قُلْ الم الرمل وأسودك وأزوجك وأسفر لك الحمل والإيل ؟ وَأَدْنَك كراس والريع نيقولا : بلى أى رَبِّ فَيَقُولُ الطلت أنك خلاقى ؟ فَيَقُولُ لَا تَيَقُولُ إِنِّي أَحْسَاكَ لَمَّا نَسِيتَنِي ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِي فَيَقُولُ لَهُ مِثْلَ ذلك فَيَقُولُ يَا رَبِّ أَمَنتُ بِلكَ وَبِكِتَابِ وَ بِرُسُلِكَ وَصَلَّيْتُ وَصُمْتُ والصدقت وَ يَشْنِى بِخَيْرِ مَا اسْتَطَاعَ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ: الآن تَبْعَثُ شَاهِدَنَا عَلَيْك ويتفكر في تقيم من ذَا الَّذِي يَشْهَدُ عَلَى ؟ فَيُخْتَمُ علَى فِيْهِ وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ وَلَحْمه وعظامه : انطقي تنطِقُ فَخْلُهُ وَلَحْمُهُ وَمِقَاتَهُ عليه وذلك ليَعْدِرُ مِنْ نَفْسِهِ وَذلك الْمُنَافِقُ وَذَلِكَ الَّذِي يَسْخَطا اللهُ عَلَيْهِ. ( رواه مسلم)

৭০ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। একদল লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলোঃ হে আল্লাহর

পৃষ্ঠা-১০৪

রাসূল, কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাবো?’ জবাবে তিনি তাদের বললেন: ‘মেঘমুক্ত দুপুরে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়?’ তারা বললোঃ ‘জী-না’। তিনি পুনরায় তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ মেঘমুক্ত রাত্রে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো অসুবিধা হয়?’ তারা বললোঃ ‘জী-না।’

এবার তিনি তাদের বললেনঃ কসম সেই সত্তার, আমার জীবন যার মুষ্টিবদ্ধে, তোমাদের প্রভুকে দেখতে তোমাদের তেমনি কোনো অসুবিধাই হবেনা, যেমনি অসুবিধা হয়না মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য কিংবা চাঁদ দেখতে। তিনি বলেছেন, অতপর আল্লাহ তাঁর এক বান্দাহকে সাক্ষাত প্রদান করবেন। তাকে তিনি বলবেনঃ হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নাই? তোমাকে নেতৃত্ব কর্তৃত্ব দেই নাই? স্ত্রী দেই নাই? ঘোড়া আর উটকে তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন করে দেই নাই? আমি কি তোমাকে ধনসম্পদ এবং ঘরবাড়ী গড়ার সুযোগ দেইনি? সে বলবেঃ জী-হা, দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতপর আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আমার সাথে সাক্ষাত করতে হবে বলে কি তুমি চিন্তা করেছিলে? সে বলবেঃ না। আল্লাহ বলবেনঃ যাও, আমিও তোমাকে ভুলে থাকলাম, যেভাবে তুমি

আমাকে ভুলেছিলে। অতপর দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে তিনি সাক্ষাত দেবেন। তাকেও তিনি বলবেনঃ হে অমুক! আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি? সরদার বানাইনি? স্ত্রী দিইনি? ঘোড়া এবং উটকে তোমার অধীন করে দিইনি? সম্পদ এবং ঘরবাড়ী গড়বার সুযোগ দিইনি? সে বলবেঃ হে প্রভু! জী-হাঁ। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেনঃ তুমি কি আমার সাথে সাক্ষাত করতে হবে বলে ভেবেছিলে? সে বলবেঃ না। তখন আল্লাহ বলবেনঃ যাও আমিও তোমাকে ভুলে থাকলাম, যেভাবে তুমি আমাকে ভুলে থেকেছিলে।

পৃষ্ঠা-১০৫

অতপর তিনি তৃতীয় এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত প্রদান করবেন। তাকেও একই ধরনের কথা জিজ্ঞেস করবেন। সে বলবেঃ প্রভু! আমি তোমার প্রতি, তোমার কিতাবের প্রতি এবং তোমার রাসূলদের প্রতি ঈমান এনেছি। সালাত আদায় করেছি। রোযা থেকেছি। যাকাত দিয়েছি, দান করেছি। এভাবে সে সাধ্যানুযায়ী নিজের উত্তম ও প্রশংসনীয় গুণাবলীর কথা উল্লেখ করবে। তখন তাকে বলা হবেঃ এখন আমার সাক্ষী তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। সে মনে মনে ভাববেঃ কে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে?

অতপর তার মুখ মোহর করে (Seald up) দেয়া হবে এবং তার উরু, মাংস এবং হাড়কে বলা হবে, কথা বলো। তখন তার উরু, মাংস এবং হাড় তার আমল সম্পর্কে বক্তব্য রাখবে।…. এ ব্যক্তি হলো মুনাফিক। এর উপর হবেন আল্লাহ অসন্তুষ্ট। সুত্র হাদসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমের ‘যুহদ’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।: (۷۱) عن أنس بن مالله رضي الله عَنْهُ قَالَ : كنَّا عِندَ رَسُولِ اللَّهِ عَلَى اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسْمِكَ فَقَالَ هَلْ كُل رُونَ مِمَّ أَضْحَكَ ؟ قُلْنَا : الله وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ مِن مُخَاطَبَةِ الْعَبْدِ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَقولُ يَا رَبِّ ألم الجرْنِي مِنَ الظُّلْمِ ؟ قَالَا يَقُولُ: بَلَى قَالَ فَيَقُولُ فَإِنِّي لَا أَجِيزُ عَلَى نَفْسِي إِلَّا شَاهِدًا بَني قَالَ فَيَقُولُ كَفَى بِالْمُسِكَ الْيَوْمُ شهيدا و بالكرام الكابيين شهودا . قَالَ فَيُخْتَمُ عَلَى فِيْهِ لَيُقَالُ لِأَرْكَانِيهِ انْطَقَى قَالَ مُتَنطِقُ بِأَعْمَالِهِ قَالَ ثُمَّ يُعَلى بَيْنَهُ وَبَيْنَ الكلام ، قَالَ فَيَقُولُ بُعْدًا لكن وسحنا تعلكن كنت أنامل .

৭১ আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ছিলাম। আমি দেখলাম, তিনি হাসলেন। অতপর বললেনঃ তোমরা কি জানো আমি কেন হাসছি?

পৃষ্ঠা  ১০৬থেকে ১২০

পৃষ্ঠা-১০৬

আমরা বললামঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি বললেনঃ দাস ও তাঁর মহান মনিবের কথোপকথনে আমি হাসছি। দাস বলবেঃ প্রভু, তুমি কি আমাকে যুলম থেকে বাঁচাবে না? তিনি বলেন, অতপর তার মহামনিব আল্লাহ বলবেনঃ হাঁ। তিনি বলেন, অতপর সে বলবেঃ তবে আমি আমার পক্ষ থেকে একজন সাক্ষী ছাড়া অপর কোনো সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে অনুমতি দেবোনা। তিনি বলেন, আল্লাহ বলবেনঃ আজকে তোমার সাক্ষীই যথেষ্ঠ আর সম্মানিত লেখকরাও সাক্ষী আছে।

তিনি বলেনঃ অতপর তার মুখ মোহর করে দেয়া হবে এবং তার অংগ প্রত্যংগকে বলা হবেঃ ‘কথা বলো’। তিনি বলেনঃ অতপর তার অংগপ্রত্যংগ তার আমল সম্পর্কে বক্তব্য রাখবে। (পৃথিবীতে সে যা কিছু করেছিল, তারা সবই হুবহু বলে দেবে)। তখন বান্দাহ্ এবং এই বক্তব্যের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি হবে। তিনি বলেনঃ তখন সে বলবেঃ তোমরা দূর হও, তোমরা ধ্বংস হও। পৃথিবীতে তোমাদেরই জন্যে আমি যুদ্ধ করেছিলাম। সূত্র হাদীসটি সহীহ মুসলিম থেকে গৃহীত হলো।

কাফির হলে নবীর বাপও ছাড়া পাবেনা: (۳) عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي على اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَلْقَى إبراهيم أباه أور يوم القيامة وعلى وجه اثر فكرَةً وَخَبَرَهُ فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ الم أقل لك : لا تَعْمِنِنِي فَيَقُولُ أَبُوهُ : كَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيكَ فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ : يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْ عَني أَن لا تُخْزِينِي يَوْمَ يُبْعَلُونَ وَأَنَّى خِزى الْخَزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَد فَيَقُولُ الله تعالى إلى حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِينَ ثم يقال يا إبْرَاهِيمَ ، مَا تَحْتَ رِجْلَينة تبنظر، فإذا هر بديد منقطع فيُؤْخَذُ بِقَوْتِيهِ لَيْلقَى فِي النَّارِ

পৃষ্ঠা-১০৭

৭২ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেনঃ কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম তার পিতা আযরের সাক্ষাত পাবেন। এসময় আযরের মুখমন্ডল থাকবে কালিমাযুক্ত এবং ধূলোমলিন। ইব্রাহীম তাকে বলবেনঃ আমি কি আপনাকে বলিনি যে আমার কথা অমান্য করবেননা। তার পিতা বলবেনঃ আজ আর তোমার কথা অমান্য করবো না।

তখন ইব্রাহীম আল্লাহকে বলবেনঃ প্রভু, আপনি তো আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, পুনরুত্থানের দিন আপনি আমাকে অপমানিত করবেননা। রহমত থেকে বঞ্চিত আমার পিতার অপমানের চাইতে বড় অপমান আমার জন্যে আর কি হতে পারে? আল্লাহ বলবেনঃ আমি তো কাফিরদের জন্যে জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবেঃ ইব্রাহীম। তোমার পায়ের নিচে কি? তখন তিনি তাকিয়ে দেখবেন, সেখানে (তার পিতার স্থানে) সারা শরীরে ঘৃণ্য রক্তমাখা একটি শবখোর জানোয়ার পড়ে আছে। তখন তার পায়ে ধরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ আল বুখারীর কিতাবুল আম্বিয়াতে উল্লেখ করেছেন।

পৃষ্ঠা-১০৮

১৯ বিদআতী ও দীনত্যাগীরা জাহান্নামে যাবে: নবী বিদআতীদের রক্ষা করতে পারবেন না

(۷۳) عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَنَا تراكم على الْحَوْضِ ، وَلَيُرْفَعَنَّ مَعنى رِجَالٌ مِنْكُمْ ثُمَّ لَيُخْتَلِجُنَّ دُونِي فَأَقُولُ يَارَةٍ أصحابي فيقال : إنلك لا كذرى ما أحدثوا بخذلك – الخرجه البخاري ، رحمه الله تعالى في باب الحوض)

৭৩ আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমি তোমাদের সবার আগেই হাউজে কাউসারে উপস্থিত হবো। সেখানে আমার সাথী তোমাদের কিছু লোককে চেনা যাবে। কিন্তু তাদেরকে আমার সামনে থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। তখন আমি আল্লাহকে ডেকে ফরিয়াদ করবোঃ প্রভু! এরাতো আমার সাথী (এদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন?)। জবাবে আমাকে বলা হবেঃ তুমি জাননা, তোমার মৃত্যুর পর এরা দীনের মধ্যে কিসব অভিনব (বিদআত) জিনিস শামিল করে নিয়েছিল। সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ আল বুখারীতে সংকলন করেছেন। দীনের খেলাফ আমলকারীদের পরিণাম

(٧٤) عَنْ أَسْمَاء بنت أبي بكر رضي الله عنهما قالَتْ : قَالَ اللَّى عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم : إلي عَلَى الْحُوضِ ، حَتَّى أَنْظُرَ مَن يَرِدُ عَلَى مِنْكُمْ وَسَيُؤْحَد ناس مين

পৃষ্ঠা-১০৯

دوني ، لأقول ، يا رب مني ومن أمتي ، ليقال من شعريت ما همو بغل لك والله ما برخوا يرْجِعُونَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ – ( والخرجه البخاري من اسماء بنت ابي بكر)

৭৪ আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন:আমি হাউজে কাউসারের পাশে অবস্থান করবো। আমি দেখতে পাবো তোমাদের কে কে আমার কাছে আসছে। এসময় হঠাৎ একদল লোককে আমার কাছ থেকে পাকড়াও করে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। তখন আমি আল্লাহকে বলবোঃ প্রভু, এরা তো আমার লোক। আমার উন্মতের লোক। (এদের নিয়ে যাচ্ছো কেন?) তখন আমাকে বলা হবেঃ তুমি কি জানো, তোমার মৃত্যুর পর এরা কি কর্মটা করেছে? আল্লাহর কসম, এরা দীন ত্যাগ করে পিছনে ফিরে গেছে। সূত্র হাদীসটি সহীহ আল বুখারী থেকে গৃহীত হলো। মুরতাদরা জাহান্নামী:

(0) عن أبي هريرة رضي الله عَنْهُ عَنِ النَّبِي عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَيْنَ أنا فاهم فإذا أمرة ، حَتَّى إِذَا فَوَلَتُهُمْ ، الخريج رَجُلٌ مِنْ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَقَالَ هَلَم فَقُلْتُ : أَين ؟ قَالَ : إِلى النَّارِ وَاللهِ قُلْتُ وَمَا شَأْتُهُمْ ؟ قَالَ إِنَّهُمُ ارْكَدُّوا بملك عَلَى أَدْبَارِهِمُ الْمُهْتَرى ، ثُمَّ إِذَا امْرَةً حَتَّى إِذَا عَرَفْتُهُمْ ، خَرَجَ رَجُلٌ مِنْ بَيْنِي وَبَيْنِهِمْ فنان : علم فلك : أين ؟ قَالَ إلى الكارِ والله ملك : مَا شَالَهُمْ ؟ قَالَ إِنَّهُمُ ارشد ذا بشر لك على أدْبَارِهِم القهقرى فلا أناة يخلص مِنْهُمْ إِلَّا مِثْلُ عَمَلِ النَّعَمِ – الخرجه البخاري ايشاعى الى هريرة)

৭৫ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি (হাউজে কাউসারের নিকট) দাঁড়ানো থাকবো। হঠাৎ একদল লোক দেখতে পাবো। এমনকি তাদের চিনতেও পারবো। এসময় আমার এবং তাদের মাঝখান থেকে এক ব্যক্তি বেরিয়ে আসবে। সে বলবেঃ ‘ঐ দিকে যাও’। আমি জিজ্ঞেস করবোঃ ‘কোথায়?’ সে

পৃষ্ঠা-১১০

বলবেঃ ‘আল্লাহর কসম, জাহান্নামের দিকে’। আমি জানতে চাইবোঃ কেন তাদের কি হয়েছে?’ সে বলবেঃ ‘আপনার পরে এরা দীন ত্যাগ করে পিছে হঠে গেছে। এরপর আরেক দল লোক দেখতে পাবো। এমনকি তাদের চিনতেও পারবো। তখন আমার ও তাদের মাঝখান থেকে এক ব্যক্তি বেরিয়ে আসবে। ‘সে বলবেঃ ‘এসো।’ আমি জিজ্ঞেস করবোঃ ‘কোথায় তাদের নিয়ে যাও?’ সে বলবেঃ ‘আল্লাহর কসম, জাহান্নামে।’ আমি-জানতে চাইবোঃ ‘তাদের কী হয়েছে?’ সে বলবেঃ ‘আপনার পরে তারা দীন আগ করে পিছে, হঠে গেছে।’ এভাবে আমি দেখতে পাৰো, কেবল সামান্য সংখ্যক লোকই নাজাত পাবে। বাকীদের জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। সূত্র হাদীসটি সহীহ আল বুখারী থেকে গৃহীত হলো।

পৃষ্ঠা-১১১

২০ শাফায়াত: মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ্র শাফায়াত

) عن انس ابن مالك رضي الله عنه أن النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كان: يجمع الله المؤمنين يوم القيامة كلية ، فيقولون : لو استطعنا إن رَبَّنَا حَتَّى يريحنا من مكاننا هذا فيأتون آدم فَيَقُولُونَ : يَا أدم اما تَرَى النَّاسَ ؟ خلله الله بيده وأسجد لله مَلَائِكَتَهُ وَعَلَيْكَ أَسماء كل شي السلع لَنَا إِلَى رَبِّنَا حَتَّى يريكا من مكاننا هذا فيقول : تسمك مكالة ويَذْكُرُ لَهُمْ خَطِيئة التي أَصَابَ ولكن الكوا لزما لانه أول رسول بعثه الله إلى أهلي الانمي ، فَيَأْكونَ نُوحًا فَيَقُولُ تنت هناكمْ وَيَذْكر خطيئته التي أَصَابَ وَلَكِنِ الدُّوا إِبْرَاهِيمَ خَلِيلَ الرَّحْمَنِ فيأتون إبراهيم فيقول : لست هناكم ذيل كثر الخطابها التي أصابها ولكن الحلوا المتوسلی، عبرا آتاه الله الشَّوْرَاة وَكَلمَة تعليما نيأتون موسى فيقول : تست ملاكم وتذكر لهم خطبته التي أصاب، والكِي السَّوَاعِيسَى عَبْدَ اللَّهِ وَرَسُولَهُ و كلمته وروعة ، فيأتون عيسى فيقول : لست هناكم ولكي التَّوْا مُحَمَّدًا عَلَى الله عليه وسلم : عَبْدًا فَفِرَلَهُ مَا تَكَلَّم مِن ذَنْبِهِ وَمَا كَأَخَرَ ، فَمَا تَرْنَنِي فَا تعليق نا ستا دين على ترق فهوذَتُ إِن عليه فإذا تأيك رَبِّي وَقَعْتُ سَاجِدًا فَهَدَ قَنِي مَا شَاءَ الله أَن يَدْعَى ثُمَّ يُكان في ارفع محمدا وقل يسمع وَسَلْ لَعْطَهُ وَاقْنَع شَفَعْلاحمر وفي بمحامة علميتها ، لم الشمع فبعد إِن حَدًّا لانيتهم الجلة قم ارجع فاذا رايت ولي ولعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُني ما شاء اللهُ أَنْ يَدْعَنِي ، ثُمَّ يُقَالُ

পৃষ্ঠা-১১২

انفع تكلم وكن يسمع وعن الفكة وافتح لكم الأحمل رق وحماية ملكيتها ربي ثمَّ اشْفَعُ فَيَكل في حَدًّا فَادْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَرْجَعُ مَاذَا رَأَيْتُ رقي وقعت سَاجِدًا ليدلني ما شاء الله ان يدعين ، ثُمَّ يُقَالُ ارْفَعْ مُحَمَّدُ قُلْ يشفع وسكن لفظة والشمع الشيع لأجمل رقي بِمُحَامِنَ عَلَمِنِيْهَا رَبِّي ثُمَّ الجمع نيكل في حدا – فانيلهم الجنة ثم ارجع فأقول يَا رَبِّ مَا بَقِيَ فِي النَّارِ إِلَّا مَنْ حبسة القرآن ووجب عليه الخلود – كل اللى على الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَخْرُجُ مين النار من قال : لا اله الا الله وكان في قلبو من الظهر ما يزين شعيرة شم تحريم من النار من قال : لا إله إلا الله وكان في قليهِ مِنَ الْخَيْرِ مَا بَرِكَ بَرَةً ثُمَّ يخرج من النار من قال : لا اله الا الله وكان في قلبه مَا بَرَكَ مِنَ الْخَيْرِ ذرة – الخرجه البخاري في كتاب التوحيد) …

৭৬ আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজ আমরা যেভাবে একত্র হয়েছি, ‘ঠিক এভাবেই মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন মুমিনদের একত্রিত করবেন। তখন তাঁরা বলবেঃ কতইনা ভালো হতো যদি কেউ আমাদের রবের কাছে আমাদের জন্যে সুপারিশ করতো, যাতে করে এ স্থান থেকে বের করে আমাদের আরামদায়ক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তারা আদমের কাছে আসবে। এসে বলবেঃ হে আদম! আপনি কি মানুষের দূরাবস্থা দেখছেন না? আল্লাহ তা’আলা

তো আপনাকে তাঁর নিজগুণে তৈরী করেছেন। ফেরেশতাদের দিয়ে আপনাকে সিল্পনা করিয়েছেন। অছাড়া আপনাকে তিনি শিখিয়েছেন, সবকিছুর নাম। আপনি মহান প্রভুর দরবারে আমাদের জন্যে সুপারিশ করুন, যাতে তিনি আমাদের এ অবস্থা দূর করে আরাম দান করেন।’ তাদের বক্তব্য শুনে আদম বলবেনঃ আমি এ কাজের উপযুক্ত নই।’ এ প্রসংগে তিনি নিজের কৃত গুণাহের কথাও উল্লেখ করবেন। তিনি তাদের আরো বলবেনঃ তোমরা বরং নূহের কাছে যাও। কারণ পৃথিবীতে তিনিই আল্লাহর পয়লা রাসূল।’ তখন তারা নূহের কাছে এসে একই আবেদন করবে। নূহ বলবেনঃ এ কাজের উপযুক্ত আমি নই। এ প্রসংগে তিনি নিজের কৃত গুণাহের কথাও উল্লেখ করে বলবেন? তোমরা বরং আল্লাহর-বন্ধু

পৃষ্ঠা-১১৩

ইব্রাহীমের কাছে যাও। তখন তারা ইব্রাহীমের কাছে এসে একই। নিবেদন করবে। তাদের বক্তব্য শুনে ইব্রাহীম বলবেনঃ আমি এ কাজের যোগ্য নই। এ প্রসংগে তিনি নিজের কৃত গুণাহের কথ্য উল্লেখ করবেন এবং তাদের বলবেয়ঃ তোমরা বরং মূসার কাছে যাও। তিনি আল্লাহর সেই দাস, যার কাছে তিনি তাওরাত পাঠিয়েছিলেন এবং যার সাথে তিনি সরাসরি কথাবার্তা বলেছিলেন। তখন তারা মুসার কাছে এসে একই আবেদন করবে। মুসা বলবেনঃ তোমাদের এ কাজের যোগ্য আমি নই। এ প্রসংগে তিনি নিজের কৃত অপরাধের কথা বলবেন। আরো বলবেন, তোমরা বরং আল্লাহর দাস ঈসার কাছে যাও। তিনি তো আল্লাহর রাসুল, তাঁর কালেমা এবং তাঁর রূহ। তখন তারা ঈসার কাছে এসে একই কথা বলবে। ঈসা বলবেনঃ তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত আমি নই। তোমরা বরং মুহাম্মদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন একজন দাস, যার আগে পরের সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। তখন তারা সবাই আমার কাছে এসে একই আবেদন করবে। আমি তাদের বক্তব্য শুনে রওয়ানা করবো প্রভুর কাছে। প্রভুর কাছে উপস্থিত হরার জন্যে অনুমতি প্রার্থনা করবো। আমাকে তখন তাঁর সামনে হাযির হবার অনুমতি দেয়া হবে। আমি আমার প্রভুকে দেখার সাথে সাথে সিজদায় অবনত হয়ে পড়বো। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন আমাকে এ অবস্থায় থাকতে দেবেন। অতপর আমাকে বলা হবেঃ হে মুহাম্মদ, মাথা উঠাও। বলো, তোমার কথা প্রনা হবে। চাও, প্রার্থিত বন্ধু দেয়া হবে। সুপারিশ করো, সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে। তখন আমি আমার প্রভুর প্রশংসা করবো। সেসব প্রশংসা যা তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। অতপর আমি সুপারিশ করবো। আর এ ব্যাপারে আমার জন্যে একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। তখন আমি সুপারিশ মঞ্জুরকৃতদের জান্নাতে পৌঁছে দেবো। তারপর আবার ফিরে আসবো এবং আমার প্রভুকে দেখামাত্র সিজদায় লুটিয়ে পড়বো। আল্লাহ যতোক্ষণ চাইবেন এভাবেই আমাকে ফেলে রাখবেন। অতপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ। মাথা উঠাও। বলো, তোমার কথা শুনা হবে। প্রার্থনা করো, দান করা হবে। সুপারিশ করো সুপারিশ কবুল করা হবে। তখন আমি আমার প্রভুর প্রশংসা করবো, যেভাবে প্রশংসা করতে তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। অতপর আমি সুপারিশ করবো এবং আমার জন্যে সুপারিশ করবার একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তখন আমি সুপারিশকৃতদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবো। পুনরায় ফিরে আসবো। আর যখনই আমার প্রভুকে

পৃষ্ঠা-১১৪

দেখবো তার সম্মুখে সিজদায় লুটিয়ে পড়বো। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন, এভাবেই আমাকে রেখে দেবেন। অতপর বলা হবেঃ উঠো হে মুহাম্মদ, বলো, তোমার কথা গুনা হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। তখন আমি ঠিক সেইভাবে আমার প্রভুর প্রশংসা করবো, যেভাবে তিনি আমাকে প্রশংসা করতে শিখিয়ে দিয়েছেন। অতপর আমি সুপারিশ করবো। তবে আমার জন্যে সুপারিশ করবার সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তখন আমি সুপারিশকৃতদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেখো। অতপর আবার ফিরে এসে বলবোঃ প্রভু! এখন কেবল তারাই দোযখে রয়ে গেছে, যাদেরকে কুরআন সেখানে আঁটকে রেখেছে এবং চিরদিনের জন্যে যাদের উপর দোযখ সাব্যস্ত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন প্রত্যেকেই দোযখ থেকে বেরিয়ে আসবে, যে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’

বলে ঘোষণা দিয়েছিল এবং যার অন্তরে একটি যবের ওজন পরিমাণ কল্যাণও ছিল। পুনরায় জাহান্নাম থেকে এমন প্রত্যেকেই বেরিয়ে আসবে, যে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’ বলে ঘোষণা দিয়েছিল এবং যার অন্তরে একটি গমের দানা পরিমাণ ঈমান ছিল। এরপরও এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে, যে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’ বলে ঘোষণা দিয়েছিল এবং যার অন্তরে একটি অনু পরিমাণ ঈমান বিদ্যমান ছিল। সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ আল বুখারীর কিতাবুত তাওহীদে বর্ণনা করেছেন। ব্যাখ্যা হাদীসে শাফায়াত প্রসংগে কথা এসেছে। কিন্তু হাদীসের এই ক’টি কথা দ্বারা শাফায়াত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়। অথচ শাফায়াত সম্পর্কে আমাদের সমাজে ব্যাপক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। তাই এখানে শাফায়াত সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করা জরুরী মনে করছি। শাফায়াত প্রসংগে কুরআনে ব্যাপক আলোচনা এসেছে। কুরআনের বাণী থেকে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। শাফায়াতের মুশরিকী ধারণাঃ জাহেলী যুগের মুশরিকরা আল্লাহকে বিশ্বাস করতো। তবে তারা মনে করতো মানুষ সরাসরি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেনা। এজন্যে তারা নবী, আলেম, পীর প্রভৃতি মনিষীদের মৃত আত্মার

পৃষ্ঠা-১১৫

কাছে দোয়া প্রার্থনা করতো। তাদের নামে মূর্তি তৈরী করে নিয়ে সেগুলোর পূজা অর্চনা করতো। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য ছিলঃ مَا تَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُكْرِبُونَا إِلى اللهِ ونفى – (الزمرة (٣) ‘আমরা তো কেবল এ জন্যেই তাদের পূজা অর্চনা করি এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেবে।’ * [সূরা যুমার: ৩] و يقبلان من أذن اللهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنفَعُهُمْ وَيَلولُونَ هَؤُلَام شَفَعُونَا : جلد الله – (پرنس : ۱۸)

‘তারা আল্লাহ ছাড়া এমনসব জিনিসের পূজা উপাসনা করে যা তাদের না কোনো ক্ষতি করতে পারে আর না কোনো উপকার। অরা বলে এরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্যে সুপারিশকারী।” [সূরা ইউনুস: ১৮] □যালিম এবং অপরাধীদের জন্যে শাফায়াতকারী হবেনাঃ যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর হুকুম পালন করাকে তোয়াক্কা করেনি। রাসুলের পথে চলার ধার ধারেনি। ইসলামের সাথে শিরক, জাহেলিয়াত এবং বিদআতের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্যে কোনো সুপারিশকারী হবেনা। এ ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা সুস্পষ্টঃ

ما للطالبين من حميم ولا شفيع يطاع – المؤسى : ١٨) “যালিমদের জন্যে সেদিন না কোনো বন্ধু থাকবে আর না কোনো শাফায়াতকারী যার কথা শুনা হবে।” [মুমিন: ১৮] و ما ترى معكم للعاؤكم الذين وعنكم أنهم منكم شركوكم لكن تقطع بينكم – (الانعام: ٩٤) “(কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন) এখন তো তোমাদের সাথে তোমাদের সেই শাফায়াতকারীদের দেখছিনে, যাদের ব্যাপারে তোমরা ভেবেছিলে যে তোমাদের কার্যসিদ্ধির ব্যাপারে তাদেরও অংশ আছে।” আল আনআম: ৯৪)

পৃষ্ঠা-১১৬

لَيْسَ لَهُم مِن اريه وفي ولا شفيع – (الانعام: (٥) “সেখানে (হাশর ময়দানে) তাদের জন্যে আল্লাহ-ছাড়া না কোনো সাহায্যকারী বন্ধু থাকবে আর না কোনো শাফায়াতকারী।” (সূরা আল আনআম : ৫১] কিছু লোক তাওহীদ পরিহার করে এবং শিরক জাহিলিয়াত এবং বিদআতের পথে চলেও নিজেদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ মনে করে। তারা দুনিয়াতে কিছু জীবিত ও মৃত ব্যক্তিকে দোয়া-ও নজর নিয়াষের মাধ্যমে খুশী করার চেষ্টা করে। এইসব লোকদের সম্পর্কে তারা ধারণা পোষণ করে যে, কিয়ামতের দিন এরা সুপারিশ বা শাফায়াত করবে, তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখবে। তাদের এ ধারণা যে কতটা ভ্রান্ত তা কুরআনের আয়াত থেকেই বুঝা গেলো।

আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে নাঃ তবে কিয়ামতের দিন আম্বিয়ায়ে কিরাম এবং আল্লাহর কিছু সংখ্যক নেক বান্দাহ সুপারিশ করতে পারবেন। এ সুপারিশের ক্ষেত্রেও কতিপয় অপরিহার্য শর্ত এবং নিয়ম বিধিষদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে, খয়লা বিধান হলো, সেখানে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশই করতে পারবেনা। এমনকি সুপারিশ: করার সাহসই কারো হবেনা। কুরআন পরিষ্কার বলে দিচ্ছেঃ يوم يلوم الروع والسلالة منا لا يتكلمون إلا من أذن لَهُ الرَّحْمَنُ وَ قَالَ صوابا – (النيا : (٣٠)

“সে দিন রূহ [জিব্রীল] এবং ফিরিশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। টুশব্দটি কেউ করতে পারবেনা। তবে পরম দয়াবান যাকে অনুমতি দেন, সে পারবে। আর ‘সে যা বলবে ঠিক ঠিক এবং যথার্থ বলবে।” [সূরা আন নারা: ৩৮] من الذي يشفع عنده إلا بإذنه – (البقرة : ٢٥٥) “তাঁর সামনে সুপারিশ করতে পারে এমন কে আছে? তবে তিনি অনুমতি দিলে আলাদা কথা।” (আল বাকারা: ২৫৫)

পৃষ্ঠা-১১৭

لا ينيكون الشفاعة إلا من الخل عند الرحمن عهدًا – ( مريم : (۸۷) “সেদিন কেউ, সুপারিশ করতে সমর্থ হবেনা। তবে যে করুণাময়ের নিকট থেকে অনুমতি পাবে তার কথা আলাদা।” মরিয়ম: ৮৭] يوم يأس لا تكلم نفسي إلا بإدينه والبقرة. “সেদিন [কিয়ামতের দিন যখন আসবে, তখন টুশব্দটি করার ক্ষমতাও কারো থাকবে না। তবে আল্লাহর অনুমতি পেলে আলাদা কথা।” (সূরা হুদ: ১০৫]

আয়াতগুলো থেকে বুঝা গেল, সেদিন যে ভয়ংকর অবস্থা হবে, তাতে সবাই আত্মচিন্তায়ই পেরেশান থাকবে। অপরের জন্যে সুপারিশ করবার চিন্তা করবে কোত্থেকে? তবে আল্লাহ তা’আলা নবীগণকে সুপারিশ করবার অনুমতি দেবেন। কেবল অনুমতি পাবার পরই তারা সুপারিশ করবেন। হাদীস থেকে জানা যায়, তাও সব নবীই আত্মচিন্তায় এতোটা ব্যস্ত থাকবেন যে, সুপারিশ করবার সাহস করবেননা। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর অনুমতি পেয়ে সুপারিশ করবেন। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো নবীও সুপারিশ করতে পারবেনা। অন্য লোক তো দূরেরই কথা। তবে হাদীস থেকে জানা যায়, কিছু উচ্চ পর্যায়ের নেক লোককেও আল্লাহ সুপারিশ করবার অনুমতি দেবেন।

সুপারিশ কাদের জন্যে করা হবেঃ যারা সুপারিশ করার জন্যে অনুমতি পাবেন, তারা কিন্তু নিজের ইচ্ছামতো যার তার জন্যে সুপারিশ করতে পারবেননা। তারা কেবল এমন লোকদের জন্যেই সুপারিশ করতে পারবেন, যারা সামগ্রিকভাবে নিজেদের গোটা জীবনকে আল্লাহর মর্জি মুতাবিক চালিয়েছে। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই ছিল তাদের জীবনের উদ্দেশ্য। তবে আল্লাহর পথে চলতে গিয়েও কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি তাদের হয়ে গেছে, কিংবা গুণাহর কাজ তারা করেছে, কিন্তু ধারবার তওবা করে সংশোধন হয়েছে। অতপর এখন অল্পের জন্যে আটকা পড়ে গেছে। আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর পথে চলা কোনো লোক যদি এরূপ অল্পের জন্যে আঁটকা পড়ে যায় আর আল্লাহ যদি চান যে, এ ব্যক্তিটির ব্যাপারে সুপারিশ করা হোক, তবে কেবল এরূপ লোকদের জন্যে অনুমতি প্রাপ্তরা সুপারিশ করতে পারবেঃ لا يَشْفَعُونَ الأبي الفضى وهُم مِن خَشْيَيه تفيقون – (الانبياء : ۲۸)

পৃষ্ঠা-১১৮

“তারা কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবেনা। তবে কেবল সেইসব লোকদের জন্যেই সুপারিশ করতে পারবে, যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ’ রাজি হন। তারা তো তাঁর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে।” আল আম্বিয়া: ২৮] তাও আবার সুপারিশ করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি কোনো কথা বলতে পারবেনা। বলতে হবে কেবল বাস্তব ও সঠিক কথাটিঃ لا يتكلمون إلا من أذن الله الرحمن وكان صوابا – النيا: (۳۸) “তারা টুশব্দটিও করতে পারবেনা। তবে সে পারবে যাকে আল্লাহ অনুমতি দান করবেন। আর সে ঠিক ঠিক এবং যথাযথ কথাই বলবে।” [সূরা আন নাবা: ৩৮]

ঠিক ঠিক এবং যথাযথ কথা বলবে মানে ন্যায়সংগত কথা বলবে। অন্যায় বলবেনা। দুনিয়ায় নিঃসঙ্কোচে যারা পাপ করে গেছে তাদের জন্যে সুপারিশ করবেনা। যালিমের জন্যে সুপারিশ করবেনা। শিরক ও বিদআতপন্থীদের জন্যে সুপারিশ করবেন।। পরের হক বিনষ্টকারীর জন্যে সুপারিশ করবেনা। বরঞ্চ নবীরা এদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্যেই সুপারিশ করবেনঃ و قال الرَّسُولُ يُرَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذا القران مهجورا – (الفرقان : ٣٠)

“আর রসুল বলবেঃ হে আমার প্রভূ। আমার জাতির লোকেরা এই – কুরআনকে উপহাসের বন্ধু বানিয়েছিল।” (আল ফুরকানঃ ৩০]বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ প্রভৃতি গ্রন্থের বহু কয়টি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুস্পষ্ট সাবধান বাণী রয়েছে। তিনি বলেছেন, আমার পরে যারা দীনের মধ্যে নতুন নতুন নীতি পদ্ধতি চালু করবে তাদেরকে হাউজে কাউসারের নিকট থেকে হটিয়ে দেয়া হবে। আমি বলবো, প্রভু এরা তো আমার উম্মত, আমার অনুসারী। তখন আমাকে বলা হবে, তোমার মৃত্যুর পর ওরা. কিষব নতুন নতুন জিনিস চালু করেছে, তাতো তুমি জানোনা। এরপর আমিও তাদের তাড়িয়ে দেবো। বলবোঃ “দূর হয়ে যাও।” তাছাড়া অনুমতি পাবার পর নবীরা অত্যন্ত বিনীতভাবে সুপারিশ করবেন। যেমন ঈসা আলাইহিস সালাম বলবেনঃ إِنْ تُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادَكَ وَإِن تَغْفِرْهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (المائدة : ) ‘আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন, তবে তারা তো আপনারই দাস (শাস্তি তাদের ভোগ করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই)। আর যদি তাদের ক্ষমা করে দেন তবে আপনি তো মহাপরাক্রমশালী মহাকুশলী।” [আল মায়িদা: ১১৮]

পৃষ্ঠা-১১৯

২১শাস্তির পর মুক্তি:শান্তি ভোগের পর কিছু লোক মুক্তি পাবে: (۷۷) عن أبي هريرة أن نانا قالوا الرسول الله عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُولَ اللهِ من نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ عَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ تُضَارُّونَ يدوية القمر ليلة الْبَدْرِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ هَلْ تُشَارُونَ فِي الشَّمْسِ لَيس دونَهَا سَحابٌ قالوا لا يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ يَجْمَعُ الله النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ مَن كان يعبر شَيْئًا للمتبعة فيَتَّبِعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الشَّمْسُ الشَّمْسَ وَيَتَّبِعُ من كان يخبل القمر القمر ويَتَّبِعُ مَن كَانَ يُعْبُدُ الطواغيت العلو الميت وتبقى هَذِهِ الْأُمَّةِ فِيهَا مُناهِلُوهَا فَيَأْتِهِمُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى في التوراة غير صورة التي يُعْرِمُونَ فَيَقُولُ أَنَا رَبِّكُمْ فَيَقُولُونَ نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ هَذَا مَكَانُنَا على تأتينا ربنا فإِذا جَاءَ رَبُّنَا عَرَفْنَاهُ فَيَأْتِهِمُ الله تَعَالَى فِي صُورَتِهِ الَّتِي يُعْرِفُونَ فَيَقُولُ أَنَا رَبِّكُمْ فَيَقُولُونَ أَنتَ رَبُّنَا فَيَتَّبِعُونَهُ وَيُضْرَبُ القِرَاء بَيْنَ ظَهْرَى جَهَنَّمَ مأكون أنا وأم في أوله من يُجِيرُ ولا يتكلم يَوْمَليل إلا الرُّسُلُ وَدَعْوَى الرُّسُلِ يَوْمَهُني اللهم سلم سلم وفي جهلم كالب مثل شوك السَّعْرَابِ هَلْ رَأَيْكُمُ السَّعْدَانَ قَالُوا لعم يا رَسُولَ اللهِ قَالَ فَإِنَّهَا مِثْلُ شَواكِ السَّعْدَانِ غير أَنَّهُ لَا يَعْلَمُ مَا قَدْرُ مِنها إلا الله تحقق النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ قَبلَهُمُ الْمُؤْمِنُ بَى بِعَمَلِهِ وَمِنْهُمُ الْمُجَارَى حَتَّى ينجى حَتَّى إِذَا فَرح اللهُ مِنَ الْقَضَامِ بَيْنَ الْعِبَادِ وَأَراد أَن يُخْرِجُ بِرَحْمَتِهِ من أراد مِنْ أَهْلِ النَّارِ أَمَرَ الْمَلَائِكَةَ أَن يُخْرِجُوا مِنَ النَّارِ من كان لا بشرية بالله

পৃষ্ঠা-১২০

شَيْئًا مِمَّن أَباد الله تعالى أن يَرْحَمُهُ مِمَّن يَقُولُ لا إله إِلَّا اللهُ فَيُعْرِفُونَهُمْ فِي النار يغرقونهم يأتي السجود لا كل النار من اني آدَمَ إِلَّا أَخَرَ السُّجُودِ حرم الله على النار الي تأكل أثر الشُّهُورِ فَيُخْرَجُونَ مِنَ النَّارِ وَقَدِ امْتَحَنَا لَيُعَبُّ عَلَيْهِمْ مَاءُ الْحَيَاةِ لَيَنْبُتُونَ مِنْهُ كَا كتبتُ الْعِيَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ ثُمَّ يَفْرُ الله تعالى مينَ الْقَاءِ بَيْنَ الْعِبَادِ وَيَبْقَى رَجُلٌ مُقْبِلُ بِوَجْهِهِ عَلَى النَّارِ وَهُوَ أَخِرُ أَهْلِ الْجَنَّةِ دخول الجنة فيقول أنى رَبِّ اصْرِف وجهى عَنِ النَّارِ فَإِنَّهُ قُلْ تَشَبَنِي رِيحُهَا وَأَعْرَفين ذَكَاؤُهَا قَبلْ هُوَ الله ما شاء الله ان يزهرة كم يقول الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى هَلْ عَسَيْتَ ان تملك دينك بلا أن تسأل غيرة فَيَقُولُ لا أسألك غيرَة وَيُعْطِي رَبَّة من عهود و مَوَاثِينَ مَا شَاءَ الله ليضرت الله وجهَهُ عَنِ النَّارِ فَإِذَا أَقْبَلَ عَلَى الْجَنَّةِ وَرَأَهَا سكت ما شاء الله أن يسكنت كم يقول أى رَبِّ فَلمْنِي إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ الله له البس قل أعطيت الهودك ومواليقك لا كسائي غَيْرَ الَّذِي أَعطيك ويلك يا ابن آدم ما أعد ذلك البنوك أى رب وهذا هو الله حتَّى يَقولُ لَهُ فَهَلْ مَسه إن أعطيكلة ذالك ان تسأل غيرة فيقول لا وهاتك فَيُغطى رَبَّهُ مَا شَاء الله من مهور و مَوَالِينَ فَيُقَدِّمُهُ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَإِذَا قَامَ عَلَى بَابِ الْجَنَّةِ الْمُهَلَبُ له الجنة فرأى ما فيها مِنَ الْخَيْرِ وَالشَّرُورِ فَيَسْكُتُ مَا شَاءَ الله أن يسكنت السميقول أني رَبِّ أَدْخِلْنِي الْجَنَّة فيقول الله تباركة وتَعَالَى لَهُ أَلَيْسَ قُلْ أَفْعَلَيْتَ مُهْرَدَكَ و الموالية أن لا تَسْأَلُ خَيْرَ مَا أَفويْتَ وَتِلْكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْذِ اللَّهُ فَيَقُولُ أَلَى رَبِّ لا اكنت احلى خليك فلا يزال يذكر الله على يفح الله تَبَارَكَ وَتَعَالَى مِنْهُ فَإِذَا فتحات الله منه كان الدخل الجنة علا دخلها على الله له تمله فينال ربة ويكنى على أن الله ليذكرنا من كذا وكذا حَتَّى إِذا انقطعت بِهِ الْأَمَانِي قَالَ اللهُ تَعَالَ ذَابلة لك وملكة مكة قَالَ فَطَاء بن يزيد وأبر سعيد الحزين مع أني شريرة لا يرد عليه منْ حَدِيثِهِ شَيْئًا حَتَّى إِذا حَدَّق أبو هريرة أن الله كان الالية الرَّجُلِ وَمِثْلُهُ مَنة

পৃষ্ঠা  ১২১থেকে ১৩৫

পৃষ্ঠা-১২১

قال أبو سعيد وعشرة التقاليه مله يا أبا هريرة قال أبو هريرة كا خيفك إلا قوله ذيك الله وملكه عمة كل أبو سعيد الشهد الي حفظت من وسول الله على الله عليه وسلم قولة ذيلة تلك وفكرة الشابة كان أبو مريرة وذلك الرجل آخر أهْلِ الْجَنَّة دكر لا الجنة – (رواه مسلم)

৭৭ আ’তা ইবনে ইয়াযীদ লাইসী থেকে বর্ণিত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আমহু তাঁকে অবহিত করেছেন যে, কিছু সংখ্যক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, হে আল্লাহর রাসূল, কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাবো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাতের চাঁদ দেখতে তোমাদের কি কোনরূপ অসুবিধা হয়? তারা বললো, না, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি আবার বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনরূপ অসুবিধা হয়। সবাই বললো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ঐরূপ স্পষ্টভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা সমস্ত মানুষকে একত্রিত করে বলবেনঃ যারা (পৃথিবীতে) যে জিনিসের ইবাদাত করেছো তারা সেই জিনিসের অনুসরণ করো। সুতরাং যারা সূর্যের পূজা করতো, তারা সূর্যের সাথে থাকবে। যারা চাঁদের পূজা করতো তারা চাঁদের সাথে থাকবে। আর যারা (তাগুতের) খোদাদ্রোহীদের পূজা করতো তারা খোদাদ্রোহীদের সাথে একত্রিত হয়ে যাবে। অবশিষ্ট থাকবে শুধু আমার এ উম্মত। তাদের মধ্যে থাকবে মুনাফিকরাও। অতপর আল্লাহ তা’আলা, তাদের কাছে এমন আকৃতিতে আবির্ভূত হবেন যে, তারা তাকে চিনতে পারবেনা। তিনি বলবেনঃ ‘আমি তোমাদের প্রভু, তারা বলবে, “নাউযুবিল্লাহি মিনকা (তোমার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই)। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রব আমাদের কাছে না আসেন, ততক্ষণ আমরা এখানেই অবস্থান করবো। যখন আমাদের রব আসবেন, আমরা তাঁকে চিনতে পারবো। অতপর আল্লাহ তা’আলা এমন আকৃতিতে তাদের সামনে আবির্ভূত হবেন যে, তারা সহজেই তাঁকে চিনতে পারবে। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রভু। তারাও বলবে, হাঁ, আপনিই আমাদের প্রভু। অতপর তারা সবাই তাঁকে অনুসরণ করবে। এ সময় জাহান্নামের ওপর পুল বা সাঁকো স্থাপন করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমিও আমার উম্মতই সর্ব প্রথম তা

পৃষ্ঠা-১২২

অতিক্রম করবো। সেদিন রাসূলগণ ছাড়া অন্য কেউ কথা বলতে সাহস পাবেনা। আর রাসূলগণের দোয়া হবেঃ “আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম”। হে আল্লাহ, নিরাপদে রাখো, শাস্তি দাও। আর জাহান্নামের মধ্যে সা’দান গাছের কাটার মতো আংটা রয়েছে। তোমরা কি সা’দান গাছ চিন? তারা বললো, হাঁ, আমরা সা’দান গাছ দেখেছি, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেনঃ ঐ আংটাগুলো দেখতে সা’দান গাছের কাঁটার মতই, তবে এতো বড় যে, বিরাটত্ব সম্পর্কে আল্লাহই জানেন। ঐ আংটাগুলো দোযখের মধ্যে লোকদেরকে তাদের পাপ কাজের দরুন ছোবল’ দিতে থাকবে। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার (গুনাহগার) লোকও থাকবে। তারা অতপর এর ছোবল থেকে রক্ষা পাবে। অতপর মহান আল্লাহ যখন বান্দাহদের বিচার ফায়সালা সমাপ্ত করবেন’ এবং নিজের রহমত ও অনুগ্রহে কিছুসংখ্যক লোককে দোযখ থেকে মুক্ত করার ইচ্ছা করবেন এদের মধ্যে যারা আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করেনি তাদেরকে দোযখ থেকে বের করার জন্যে তিনি ফেরেশতাদের আদেশ করবেন। আল্লাহ তা’আলা যাদেরকে এভাবে অনুগ্রহ করবেন এরা হচ্ছে এমন লোক, যারা এ সাক্ষ্য প্রদান করেছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’। ফেরেশতারা দোযখের মধ্যে তাদেরকে চিনতে পারবেন। তাঁরা তাদেরকে সিজদার চিহ্ন দেখেই সনাক্ত করবেন। একমাত্র সিজদার চিহ্ন বা স্থান ব্যতীত এসব বনী আদমের দেহের সবকিছুই দোযখের আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। বস্তুত আল্লাহ তা’আলা সিজদার চিহ্নসমূহ আগুনের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। অতএব তারা অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় কালো কয়লার মতো হয়ে দোযখ থেকে বের হবে। অতপর তাদের দেহের ওপর ‘আবে হায়াত’ (জীবনদানকারী পানি) চালা হবে। এখান থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে উঠবে, যেমন বীজ ভেজা মাটিতে আপনা আপনি অঙ্কুরিত হয়ে বেড়ে ওঠে। এরপর আল্লাহ তা’আলা বান্দাহদের বিচার কায়সালা শেষ করবেন। এরপর একটিমাত্র লোক অবশিষ্ট থাকবে। তার মুখ দোযখের দিকে ফেরানো থাকবে। সে হবে সবশেষে জান্নাত লাভকারী। সে বলবে, হে আমার প্রভু, দোযখের দিক থেকে আমার মুখটি ফিরিয়ে দিন। দোযখের দুর্গন্ধ আমাকে অসহ্য কষ্ট দিচ্ছে এবং এর অগ্নিশিখা আমাকে একেবারে দগ্ধ করে ফেলেছে। সে এ অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার মর্জিমাফিক তাঁর কাছে দোয়া করতে থাকবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি যা চাও তা যদি তোমাকে দিই, তাহলে আরো কিছু চাইবে কি? সে বলবে, না। আমি এছাড়া আর কিছুই তোমার কাছে চাইবোনা। সে তাঁর মহা পরাক্রমশালী আল্লাহু তা’আলাকে তাঁর ইচ্ছানুসারে এ

পৃষ্ঠা-১২৩

মর্মে আরো অনেক ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি দিতে থাকবে। তখন আল্লাহ তা’আলা তার মুখ দোষরের দিক থেকে ফিরিয়ে দেবেন। যখন সে বেহেশতের দিকে মুখ করবে এবং বেহেশত দেখবে তখন আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুক্ষণ নীরব থাকবে। অতপর বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত গৌছিয়ে দিন। তার কথা শুনে আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, তোমাকে যা দেয়া হবে, তাছাড়া আর কিছুই চাইবেনা। আফসোস হে আদম সস্তান। তুমি কি. সাংঘাতিক, ওয়াদা ভঙ্গকারী, বড়ই অকৃতজ্ঞ সে আবার “হে আমার প্রভু” বলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলাকে ডাকতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ তাকে বলরেনঃ এটা যদি তোমাকে দেয়া হয়, তাহলে তুমি পুনরায় আর কিছু চাইবে কি? সে বলবে, তোমার ইজ্জতের কসম, এছাড়া আমি আর কিছুই চাইবোনা। তারপর সে এ মর্মে আল্লাহ তা’আলাকে প্রতিশ্রুতি দিতে থাকবে এবং আল্লাহও তাকে জান্নাতের দরজার কাছে এগিয়ে- দেবেন। যখন সে জান্নাতের দরজায় দাঁড়াবে, তখন তার দরজা খুলে যাবে এবং সে তার মধ্যকার আরাম-আয়েশ ও আনন্দের প্রাচুর্য দেখতে পাবে, আর আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন, সে ততক্ষণ নীরব নিশ্চুপ থাকবে। তারপর বলবে, হে আমার রব, আমাকে জান্নাত দান করো। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি এ মর্মে ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি দাওনি যে, আমি যা দেবো তা ব্যতীত অন্য আর কিছুই চাইবেনা? আফসোস হে আদম সন্তান, তুমি বড়ই ধোকাবাজ। সে বলবে, হে আমার প্রভু, আমি তোমার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা হতে চাইনা। সে আবার আল্লাহকে ডাকতে থাকবে। তার অবস্থা দেখে আল্লাহ হাসবেন। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ যখন হাসবেন, তখন বলবেনঃ যাও ঠিক আছে জান্নাতে প্রবেশ করো। সে জান্নাতে প্রবেশ করলে, আল্লাহ তাকে বলবেনঃ এবার আমার কাছে চাও। সে তার রবের

কাছে চাইবে ও আকাংখ্য প্রকাশ করবে। এমনকি আল্লাহ তা’আলা তাকে স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলবেনঃ, এটা ওটা চাও। যখন তার আকাংখা শেষ হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেনঃ এসবই তোমাকে দেয়া হলো এবং তার সাথে অনুরূপ্ত আরো দেয়া হলো। বর্ণনাকারী আতা ইবনে ইয়াযীদ বলেছেন, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহ যখন ও হাদীসটি বর্ণনা করলেন, আবু সাঈদ খুদরীও রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি আবু হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত এ হাদীসের কোনো অংশের প্রতিবাদ করেননি। অবশেষে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন বর্ণনা করলেন যে, মহা ক্ষমতাবান আল্লাহ লোকটিকে বলবেন, এসবই তোমাকে দেয়া হলো এবং এর সাথে অনুরূপ্ত পরিমাণও দেয়া হলো’, তখন আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আবু হুরাইরা! ‘এসবই তোমাকে দিলাম এবং এর সাথে আরো দশগুন দিলাম’ এটা স্মরণ রেখেছি। তখন আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে, ‘এসবই তোমাকে দিলাম এবং অনুরূপ আরো দশগুণ দিলাম,’ কথাটি মনে রেখেছি। অতপর আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ঐ লোকটি জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ ব্যক্তি।

সূত্র হাদীসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেছেন।

পৃষ্ঠা-১২৪

২২ মৃত্যু হত্যা:এ মৃত্যুকে হত্যা করা হবে:

(۷۸) عن أبي هريرة رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ عَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يُؤْتَى بِالْمُوْتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُوْقُل عَلَى الصِّرَاطِ فَيُقَالُ : يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ فَيُطْلِحُونَ خَائِفِينَ ، وَجِلِينَ أن يخرجوا من مكانهم الذي هُمْ فِيْهِ ، ثُمَّ يُقَالُ : يَا أَهْلَ النَّارِ فَيَطَّلِعُونَ مُسْتَبْهِرينَ فَرِحِينَ أَن يَخْرُجُوا مِن مكانِهِمُ الَّذِي هُمْ فِيْهِ فَيُقَالُ هَلْ الفرقُونَ هَذَا ؟ قالوا لقسم ، هذا التوك قال فيُؤْمَرُ بِهِ فَهَلْ بَعُ عَلَى الصِّراط مستم يكان الفريقين كلاهما خُلود فِيمَا تَجِدُونَ لَا مَوْتَ فِيهَا أَبَدًا – الخرجه ابن ماجه في سنده باب صفة النار)

৭৮ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন (বিচার ফায়সালা শেষ হয়ে যাবার পর) মৃত্যুকে এনে সিরাতের (পথ) উপর দাঁড় করানো হবে। অতপর ডাকা হবেঃ ‘হে জান্নাতবাসী।’ ডাক শুনে তারা ভীত হয়ে উপস্থিত হবে। তাদের অবস্থান থেকে তাদের বের করে দেয়া হয় কি না এ ভয়ে তারা কাঁপতে থাকবে। তারপর ডাকা হবেঃ ‘হে জাহান্নামবাসী!’ ডাক শুনে তারা সুসংবাদ পাবার আশায় উপস্থিত হবে। তাদের মন এ আশায় আনন্দিত হয়ে উঠবে যে, হয়তো কষ্টের অবস্থান থেকে তাদের বের করে আনা হবে। অতপর মৃত্যুর প্রতি ইংগিত করে বলা হবেঃ তোমরা কি একে চেনো? তারা বলবেঃ হাঁ, এ হলো মৃত্যু। তিনি বলবেনঃ অতপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং পথের উপর মৃত্যুকে জবাই করা হবে। তারপর উভয় পক্ষকে বলা হবেঃ তোমরা যে যেই আবাস পেয়েছো সেখানে চিরদিন থাকো। তোমাদের আর কখনো মৃত্যু হবে না।

পৃষ্ঠা-১২৫

সূত্র হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তাঁর সুনানে ইবনে মাজাতে সংকলন করেছেন। চিরদিনের জান্নাত চিরদিনের জাহান্নাম

(٧) لماذا أدخل الله أمل الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ وَأَهْلَ النَّارِ النَّارَ قَالَ أَتِي بِالْمَومِ لَيُولَك هى الشورِ الَّذِي بَيْنَ اهْلِ الْجَنَّةِ وَأَهْلِ النَّارِ ، ثُمَّ يُقَالُ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ فَيَخْلِعُونَ خَائِفِينَ ، ثُمَّ يُقَالُ يَا أَهْلَ النَّارِ فَيَطَّلِعُونَ مُسْتَبْرِينَ يَرْجُونَ الشَّفَاعَة فَيُقَالُ الأَهْلِ الْجَنَّةِ وَأَهْلِ النَّارِ هَلْ تَعْرِفُونَ هَذَا ؟ فَيَقُولُونَ هَوَالَاهِ ، وَهُوَ لاءِ قد عرفْنَاهُ هُوَ الْمُوْمِكَ الَّذِي وَكُلُّ بِنا فَيُضْجَعُ فَيُلْبَهُ ذَبْهَا عَلَى السُّورِ الَّذِي بَيْنَ الجنة والنار ثم يلك يا أَهْلَ الْجَنَّةِ لخلود لا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ خُلود لا موت – ( الخرجه الترمذي ، قال الترمذي رحمه الله حدیث حسن صحيم)

৭৯ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ যখন জান্নাতবাসীদের জান্নাতে এবং জাহান্নামবাসীদের জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দেবেন, তখন মৃত্যুকে আনা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামবাসীদের মাঝখানে অবস্থিত দেয়ালের উপর রাখা হবে। তখন জান্নাতবাসীদের ডাকা হবেঃ ‘হে জান্নাতবাসী।’ ডাক শুনে তারা ভয়ে ভয়ে উপস্থিত হবে। অতপর জাহান্নামবাসীদের ডাকা হবেঃ ‘হে জাহান্নামবাসী।’ ডাককে তারা সুসংবাদ ভেবে হাজির হবে। তারা শাফায়াতের আশা করবে। অতপর জান্নাত ও জাহান্নামবাসীদের বলা হবেঃ তোমরা কি একে (মৃত্যুকে) চিনো? তারা উভয় দিকের লোকেরাই বলবেঃ আমরা চিনতে পেরেছি। এ হলো সেই মৃত্যু, যাকে আমাদের উপর নিযুক্ত করা হয়েছিল। অতপর তাকে চিৎ করে শুইয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী দেয়ালের উপর চিরতরে জবাই করে দেয়া হবে। এরপর ডেকে বলা হবেঃ হে জান্নাতবাসী। চিরদিন জান্নাতে থাকো, আর মৃত্যু হবেনা। হে জাহান্নামবাসী। চিরদিন জাহান্নামে থাকো, আর মৃত্যু হবেনা। সূত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী।

পৃষ্ঠা-১২৬

২৩ জাহান্নাম ও জাহান্নামবাসীদের অবস্থা:জাহান্নামের চাহিদা পূর্ণ হবেনা

(1) عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال اللي عَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ عَلَّم تَحَاجَّتِ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتِ النَّارُ : أَو ثِرْتُ بِالْمُتَكَبِرِينَ وَالْمُتَجَبْرِينَ وَقَالَيَ الْجَنَّةُ مَانِي لَا يَدْخُلُنِي إِلَّا مُعَنَاهُ النَّاسِ وَسَقَطَهُمْ ؟ قَالَ الله تَبَارَكَ وَتَعَالَ لِلْجَنَّةِ أَنْتِ تحتي أَرْحم بالك من أَشَاء مِنْ عِبَادِى وَقَالَ لِلنَّارِ إِنَّمَا أَنْتِ عَلَا فِي أَقْلِبُ بِهِ مَنْ انكاء من عبادي وليكل واحدة منهما ملؤها فأَما النَّارُ فَلَا تَمْلَى حَتَّى يضع رجله فتقول لما له فما له كاله تمتلي و بهروى بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ ولا يظلم الله عز وجل من خلقه أحدا وانا انجلة فإن الله عَزَّ وَجَلَّ يُنْشِئُ الله لها خلقا – ( الخرجه البخاري رحمه الله تعالى في كتاب التفسير)

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ৮০ করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম বিবাদে লিপ্ত হয়। জাহান্নাম বলেঃ ‘সব দাম্ভিক আর অত্যাচারীদের জন্যে আমাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।’ জান্নাত বলেঃ ‘আফসোস, আমার এখানে কেবল দুর্বল আর নগন্য লোকেরাই প্রবেশ করবে।’ তখন আল্লাহ তাবারুক তা’আলা জান্নাতকে বলেনঃ ‘তুমি আমার রহমত। আমার দাসদের যাকে চাই তোমার দ্বারা রহমত আপ্লুত করবো।’ এরপর তিনি জাহান্নামকে সম্বোধন করে বলেনঃ ‘তুমি আমার আযাব। আমার দাসদের যাকে চাইবো, তোমাকে দিয়ে শাস্তি দেবো।’ মূলত জান্নাত জাহান্নাম উভয়েই নিজ নিজ সীমা অনুযায়ী পরিপূর্ণ হবে। তবে যেতো মানুষই ঢুকানো হবে) জাহান্নামের চাহিদাপূর্ণ হবেনা। অবশেষে আল্লাহ জাহান্নামের উপর

পৃষ্ঠা-১২৭

স্বীয় পা রাখবেন। তখন সে বলবেঃ ব্যস ব্যস ব্যস। আর কেবল তখনই সে পূর্ণ হবে এবং নিজের এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলিত হয়ে সে সংকুচিত হয়ে আসবে। আল্লাহ তাঁর কোনো সৃষ্টির প্রতি যুলম করবেননা। আর জান্নাতকে পূর্ণ করবার জন্য আল্লাহ নতুন নতুন সৃষ্টি করবেন। সূত্র হাদীসটি ইমাম বুখারীঃ তাঁর সহীহ আল বুখারীর কিতাবুত তাকসীরে সংকলন করেছেন। ব্যাখ্যা পৃথিবীতে আল্লাহর প্রিয় বান্দাহরা আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহের উপর সন্তুষ্ট থাকে। আল্লাহ তাদের যা-ই দিয়েছেন, সেটার উপর তুষ্ট থাকে, এ জন্যে পরকালে জান্নাতও তাদের নিয়ে তুষ্ট থাকবে। আল্লাহ সেখানে তাদেরই সেবার জন্যে হুর সৃষ্টি করবেন।

কিন্তু সমস্ত জাহান্নামী লোকদের ঢুকানোর পরও জাহান্নাম তুষ্ট হবেনা। তার চাহিদা পূর্ণ হবেনা। যারা জাহান্নামে যাবে, তাদের চরিত্র বৈশিষ্ট্যও ঠিক অনুরূপ। তারা পৃথিবীতে যতোই ভোগের সামগ্রী লাভ করুক না কেন, তাদের আরো চাই, কেবল আরো চাই। তাদের চাওয়ার শেষ নেই। যতোই পায় তাদের চাহিদা পূর্ণ হয়না। এভাবে চাইতে চাইতেই তারা কবরে গিয়ে পৌঁছে। শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে জাহান্নামে। জাহান্নামের অবস্থাও হবে তাদেরই মতো। যতো মানুষই ঢুকানো হবে, তার চাহিদা মিটবে না। কুরআনে বিষয়টিকে এভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করবেনঃ هل الثلات – (۵ : ۳۰) “তোমার পেট কি ভরেছে?” [সুরা কাফ: ৩০] জবাবে জাহান্নাম বলবেঃ هل من مريد – (۳۰۵) “আরো আছে কি? আরো চাই।” [সুরা কাফ: ৩০] জাহান্নামের উপর আল্লাহর ‘পা রাখা’ কথাটা রূপক অর্থে বলা হয়েছে মানুষকে বুঝানোর জন্যে। অন্যথায় আল্লাহ তো নিরাকার। তাঁর তো হাত পা বলতে কিছু নেই।

পৃষ্ঠা-১২৮

জাহান্নামের অভিযোগ: (۸) عن أبا الترتيرة رضي الله عنه يقول قال رسول الله عَلَى اللهِ عَلهُو وسلم الملكي النَّارُ إِلى رَبِّهَا فَقَالَتْ : رَبِّ أَلَى بَعْضِي بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِتَفْعَيْنِ نفس في المنام ونفس في الشيف فأخذ ما تجدون مِنَ الْخَيْرِ وَأَشَدَّ مَا تَجِدُونَ من الأنهرير – الخرجه البخاري في كتاب بدء الخلق) ৮১ আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করে বলেঃ প্রভু, আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে দুটি নিঃশ্বাস ছাড়বার অনুমতি দেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর অপরটি গরমকালে। এখন তোমরা সে কারণেই শীতের তীব্রতা আর গরমের প্রচন্ডতা পেয়ে থাকো। সুত্র হাদীসটি ইমাম বুখারী তার সহীহ আল বুখারীর ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়ে সংকলন করেছেন। এ জাহান্নামবাসীদের দূরাবস্থা

(۸۳) عن أبي الدعاء رضي الله عنه قال قال رسول اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلم يلقى على أهلِ النَّارِ الْجُوعُ فَيَعْدِلُ مَا هُمْ فِيهِ مِنَ الْعَذَابِ فَيَسْتَفِيتُونَ فَيُقَالُوْنَ بالطعام من طريع لا يُنينُ وَلَا يُغْنِي مِن جمع فَيَسْتَغِيثُونَ بِالطَّعَامِ فَيُغَالُونَ بطعام في نفسة ، فَيَذْكُرُونَ أَنَّهُمْ كَانُوا يُجِيرُونَ الْقُصَصَ فِي الدُّنْيَا بِالشَّرَابِ ليستفيلُونَ بِالطَّرَابِ فَيُرْفَعُ إِلَيْهِمُ الْحَمِيمُ بِكَلالِيبِ الْحَدِيْنِ فَإِذَا دَنَتْ مِنْ وَجُرْمِهِمْ شَوَتْ وَجُوهَهُمْ فاذا دخلت بلونهم قطعت ما في بُطُونِهِمْ فَيَقُولُونَ ادْعُوا حزنة جهلم تيلرثون ألم كله كأبيكم وسلكم بِالْبَيِّنَاتِ ؟ قَالُوا بَلَى قَالُوا : فَادْعُوا وَمَا دُهَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَللٍ قَالَ فَيَقُولُونَ : ادْعُوا مَالِنَا فَيَقُولُونَ يَا مَالِكُ لِيَقْضِ مَلَيْنَا ركلة كان فيجيبهم اككم مَاكِلُونَ : قَالَ الْأَعْمَشُ : تَبْنْتُ أَنَّ بَيْنَ دَمَانِهِمْ و بَيْنَ إِجَابَةِ مَالِك ألف عامٍ قَالَ فَيَقُولُونَ ادْعُوا رَبُّكُمْ فَلا أَحَدَ خَيْرٌ مِنْ رَبِّكُمْ

পৃষ্ঠা-১২৯

فيقولون : ربنا قلبت عَلَيْنَا شِقْوَكنَا وَكُنَّا نَرْنَا طَالبَيْنَ رَبَّنَا الْخَرَجْنَا مِنْهَا فَإِنْ قدنَا فَانَّا ظَالِمُونَ ، قَالَ فَيُجِيبُهُمُ الحَسَلُوا فيها ولا تُكَلِّمُونَ فَعِنْدَ ذَلِكَ يَبسُوا مين كل خير وعند ذلك يأخُدُونَ فِي الرَّفِيرِ وَالْحَسْرَةِ وَالْوَيْلِ الخرجه الترمذي في باب صفة طعام أهل الشار)

৮২ আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসীদের চরমভাবে ক্ষুধার্ত করা হবে। তাদের ক্ষুধা আর জাহান্নামের আযাব উভয়টাই হবে সমান’ কষ্টদায়ক। এ ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারা খাবার প্রার্থনা করবে। অতপর তাদের শুষ্ক কাঁটাযুক্ত খাদ্য দেয়া হবে। এতে তাদের স্বাস্থ্যেরও কোনো কল্যাণ হবেনা আর ক্ষুধাও নিবৃত হবেনা। সুতরাং তারা পুনরায় খাবার প্রার্থনা করবে। অতঃপর চরম আঠাযুক্ত খাদ্য তাদের দেয়া হবে-যা তাদের কণ্ঠদেশে অটিকে যাবে। (অর্থাৎ বেরও করতে পারবে না এবং ভিতরেও ঢুকাতে পারবেনা)। এতে করে তাদের স্মরণ হবে যে, দুনিয়ায় থাকতে তারা মুখ ভরে শরাব নিয়ে কন্ঠদেশে গরগরা করত। তখন তারা পানি পান করতে চাইবে। এতে করে লৌহ গলানো তরল উত্তপ্ত পদার্থ তাদের পান করতে দেয়া হবে। এগুলো তাদের মুখের কাছে নিতেই মুখমন্ডল ঝলসে যাবে। পেটে যাওয়ার সাথে সাথে পেটের নাড়িভুড়ি ছিদ্র হয়ে পড়ে যাবে। তখন তারা বলবেঃ জাহান্নামের রক্ষীদের ডাকো। তারা এসে বলবেঃ তোমাদের রাসূলগণ কি তোমাদের কাছে হক ও বাতিলের সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ নিয়ে যাননি? (তারা কি বেহেশতে যাওয়ার পথ এবং জাহান্নামের ভয় দেখাননি)। তারা জবাব দেবেঃ হ্যাঁ। জাহান্নাম রক্ষীরা বলবেঃ তবে তোমরা আর্তনাদ করতে থাকো। তোমাদের হাহাকারের কোনই জবাব মিলবে না। তখন তারা জাহান্নামের প্রধান রক্ষীকে ডেকে বলবেঃ হে জাহান্নামের মালিক। আল্লাহর কাছে আমাদের জন্যে মৃত্যু চেয়ে নিন। তিনি এসে জবাব দেবেনঃ এখানেই তোমাদের থাকতে হবে। (বর্ণনাকারী আ’মাশ বলেনঃ আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে, প্রধান রক্ষী কর্তৃক তাদের জবাব এনে দিতে এক হাজার বছর সময় লাগবে) তখন তারা আল্লাহকে ডাকবে এবং বলবেঃ আল্লাহর চাইতে উত্তম আর কেউ নেই। তারা ফরিয়াদ করবেঃ হে আমাদের প্রত দুনিয়াতে আমরা পাপ করেছি। আমরা ভ্রান্ত পথগামী ছিলাম। হে প্রভু! আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করুন। পুনরায় যদি আমরা বিপথগামী হই তৰে নিশ্চয়ই আমরা যালেম বলে গণ্য হবো। তখন আল্লাহ জবাব দেবেনঃ চরম নিরাশা নিয়ে তোমরা এখানেই থাকো তোমাদের মুক্তির ব্যাপারে আর কোনো কথা তোমাদের সংগে হবেনা। এ জবাবের পর তারা সমস্ত কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে যাবে। অগ্নিশিখা, আর চরম দুঃখ ও ধ্বংসের মধ্যে তারা তখন নিক্ষিপ্ত হবে। সূত্র হাদীসটি ইমাম তিরমিযী তাঁর সুনানে তিরমিযীতে বর্ণনা করেছেন।

পৃষ্ঠা-১৩০

২৪ জান্নাতবাসীদের শাস্তি সুখ ও আনন্দময় জীবন- তারা আল্লাহর চির সন্তোষ লাভ করবে

(۸۳) حَذَفَنَا مُعَادُ بن أَسَدٍ ، أَخْبَرَنَا عَبْد الله الحبرنَا مَالِكُ بْن أَنَسٍ عَن زَيْدِ بْنِ أسْلَمَ عَنْ عَطَامٍ مَن يَسَارٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ على اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الله يَقُولُ الأهْلِ الْجَنَّةِ : يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ يَقُولُونَ تبيلة ربنا وسعديك فَيَقُولُ : هَلْ رَفيكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ وَمَا نَنَا لَا تَرْفَى وَقد أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تَعْطِ أَحَدًا مِن خَلْقِكَ ؟ فَيَقُولُ أَنَا أَعْطِيْكُمْ أَفْضَلُ مِنْ يدق قالوا يا رب والى شى و أفضل من ذلك ؟ فَيَقُولُ أَول عَلَيْكُمْ رِضوا في كلا اشقة عليكم بعدة أبدا – ( والخرجه البخاري ايضا في كتاب التوحيل – باب لام الرب مع أهل الجنة)

৮৩ আবু সায়ীদ খুদরী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জান্নাতবাসীদের সম্বোধন করে বলবেনঃ হে জান্নাতবাসী। তারা জবাব দেবেঃ লাব্বায়েকা ওসাদাইকা হে আমাদের বর। তিনি বলবেনঃ তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছো? তারা বলবেঃ হে আমাদের মালিক। আমরা কেন সন্তুষ্ট হবোনা? আপনি তো আমাদের এতো দিয়েছেন, যা আপনার অন্য কোনো সৃষ্টিকে দেননি।’ তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমি এর চাইতেও উত্তম জিনিস তোমাদের দান করবো। তারা বলবেঃ ওগো আমাদের মনিব। এসবের চাইতেও উত্তম জিনিস আর কি হতে পারে? তিনি বলবেনঃ তোমাদের প্রতি আমার সন্তোষ ও রেজামন্দি চিরস্থায়ী করে দিলাম। আর কখনো আমি তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবোনা। সূত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী

পৃষ্ঠা-১৩১

এ জান্নাতবাসীরা আল্লাহর দীদার লাভ করবে: (ع) حلال مبيد الله بن مُرَبِّي مَيْسَرَة خَلقي عبد الرَّحْلَى ابْنُ مَهْدِي حَل كنَا حَمَّادُ بن سَلَمَةَ عَنْ ثَابِتِ البُنَانِي عَن عَبْدِ الرَّحْلِي بن أبي ليلى من الهَيْبٍ رضي الله عنه في النبي صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا دَخَلَ أمل الجلة الجنة كان يقول الله تبارك وتعالى : كريل من شَيْئًا أَنيل كم القولون الم كيفى وجوهنا ؟ ألم للملك الجملة والنقنَا مِنَ النَّارِ ؟ قَالَ تَخَتُ الْحِجَابُ فما المكلوا كي أَحَبُّ إِلَيْهِمْ مين النظر إلى ربهم – و الخرجه الامام مسلم رح واخرجه مسلم برواية أخرى بهذا الاستاد وزاد فيها ثم ثلا هَذِهِ الْآيَةَ : الَّذِينَ أحْسَلُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ )

৮৪ সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন বেহেশতবাসীগণ বেহেশতে প্রবেশ করবে, তখন মহাকল্যাণময় আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ তোমরা আরো অতিরিক্ত কিছু কামনা করো কি? তারা বলবে, আমরা এর চেয়ে অধিক আর কি কামনা করতে পারি? আমাদের মুখমন্ডল কি হাস্যোজ্জ্বল করা হয়নি? আমাদেরকে কি জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়নি এবং (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্তি দেয়া হয়নি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অতপর আল্লাহ তা’আলা আবরণ উন্মোচন করবেন। তখন বেহেশতের অধিবাসীদের কাছে আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় জিনিস আর কিছুই হবেনা। সূত্র হাদীসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমে সংকলন করেছেন। হাদীসটি তিনি অপর একটি সূত্রেও বর্ণনা করেছেন। সে বর্ণনায় একথাটিও আছেঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ যারা পৃথিবীতে ইহসান পর্যায়ের কাজ করেছে, তাদের জন্যে ইহসানই রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে আরো অধিক।

পৃষ্ঠা-১৩২

চিরন্তন নূর আর বরকত: (۸۵) عن جَابِرِ بنِ عبدِ اللهِ رَضِيَ الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم – بينا الفل الجَنَّةِ فِي تَعِيهِهِمْ السَمعَ لَهُمْ نُورٌ فَرَقَعُوا وَلَا وَسَهُمْ ، فَادًا الرب كل الشرف عَلَيْهِمْ مِنْ فَوْقِهِمْ تَقَالَ: السَّلامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ قَالَ وذلك قول الله: سلام قولا من رب العيم قال : فَيَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَيَشْكُرُونَ إِلَيْهِ فلا يلتفتون إلى شيءٍ مِنَ الشَّهِيمِ مَا دَاسُوا يَنظُرُونَ إِلَيهِ حَتَّى يُحْجَبَ عَلَهُم ويبقى لورهُ وَبَرَكتُهُ عَلَيْهِمْ فِي دِيَارِهِمْ – لو الخرجه ابن ماجة في سننه) ৮৫। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতবাসীরা তাদের নিয়ামতরাজি উপভোগে নিমগ্ন থাকবে। হঠাৎ উপর থেকে তাদের প্রতি নূর বিকীর্ণ হবে। মাথা উঠিয়ে তাকাতেই তারা দেখতে পাবে উপর দিক থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাশরীফ এনেছেন। অতপর তিনি বলবেনঃ আসসালামু আলাইকুম হে জান্নাতবাসীরা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এটাই হচ্ছে কুরআনের নিম্নোক্ত বাণীর তাৎপর্যঃ ‘দয়াময় রবের পক্ষ থেকে

তাদের প্রতি সালাম দেয়া হবে।’ নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতপর আল্লাহ তাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন এবং তারাও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে। যতক্ষণ তারা আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকবে ততোক্ষণ কোনো নিয়ামতের দিকে তাদের দৃষ্টি থাকবেনা। অতপর আল্লাহ ও তাদের মধ্যে অন্তরাল সৃষ্টি করে দেয়া হবে। কিন্তু তাদের উপর এবং তাদের ঘর-দোরে আল্লাহর নুর ও বরকত স্থায়ী হয়ে থাকবে। সূত্র হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে ইবনে মাজাহতে সংকলন করেছেন। তাছাড়া অনুরূপ হাদীস মুসলিম, তিরমিযী এবং নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে। কেউ চাইলে জান্নাতে কৃষি কাজ করতে পারবে (٨٦) عن أبي الهريرة رضي الله عنه الله النبي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم كان يوما يُحَدِّثُ وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَ الله رَجُلاً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اسْتَلانَ

পৃষ্ঠা-১৩৩

ربة في الزرع مُقَالَ أَوْ لَسْتُ فِيْمَا شِئْتُ ؟ قالة : ال، ولكن أحب أن الزرع – لأسرع وبدر مبادر الطرف نباشه واستراليا واسْتِعْمَادُهُ وَتَكْرِيرُهُ أَمْثَالَ الجِبَالِ فَيَقُولُ الله تعالى وكلك يا ابن آدم فَإِنَّهُ لَا يُشْبِعَاكَ شَوْا فَقَالَ الْأَعْرَابِ يا رسول الله لا كمن هَذَا إِلَّا تُرْشِيَا أَوْ أَنْصَارِها فَإِنَّهُمْ أَصْحَابُ زَرْعٍ فَأَمَّا تَعْنُ فلسنا أصحاب زرع فضيلة رسول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . و الخرجه البخاري في كتاب التوحيد )

৮৬ আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত। একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাবার্তা বলছিলেন। এ সময় তাঁর কাছে একজন বেদুঈনও উপস্থিত ছিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জান্নাতবাসী এক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কৃষি কাজ করবার অনুমতি চাইবে। তিনি তাকে বলবেনঃ তুমি যা কিছু চাও তা কি পাওনা? লোকটি বলবেঃ জী-হাঁ পাই। তবে আমি কৃষি কাজ করতে ভালবাসি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাকে অনুমতি দেবেন। সে তাড়াহুড়া করবে এবং বীজ বপন করবে। অতপর চোখের পলকেই চারা অংকুরতি হবে। বৃদ্ধি পাবে এবং ফসল ফলবে। ফসল কাটবে এবং পাহাড়ের মতো ফসলের স্তূপ হবে।

তখন আল্লাহ বলবেনঃ হে আদম সন্তান এগুলো তুমি নিয়ে যাও। কারণ কোনো কিছুতেই তো তোমার চাহিদা মিটে না। এবার বেদুঈনটি বলে উঠলোঃ হে আল্লাহর রাসূল। আপনি দেখতে পাবেন লোকটি হয়, কুরায়েশ, নয়তো আনসার। কারণ কৃষি কাজ তো তারাই করে! আমরা তো কৃষি কাজ করিনা। বেদুঈনটির কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন। সূত্র হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী তার সহীহ আল বুখারীর কিতাবুত তাওহীদে।

পৃষ্ঠা-১৩৪

জান্নাতের বাজার: (۸۷) عن سعيد بن المسيب أنه لقينى أبا الهونيرة فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةً رَضِيَ الله عنْهُ : أَسْأَلُ أَن يجمع بيني و بيتك في سوقِ الْجَنَّةِ فَقَالَ سَعِيدُ أَفِيهَا عُوْن؟ قال لعم الْخَبَرَنِي رَسُولُ الله صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِذَا خَلَوْهَا ترثوا فِيهَا بِفَضْلِ الْمَالِهِمْ ثُمَّ يُولدتُ لَهُمْ فِي مِقْدَارِ يَوْمِ الْجُمْعَةِ مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا فَيَرُورُونَ رَبَّهُمْ وَيُبْرُرُ لَهُمْ عَرْقهُ وَيَتَبَدَّى لَهُمْ فِي رَوْضَةٍ مِنْ رِيَانِي فَجَنَّةِ تتوضع لهم منابر من نورٍ وَمَنَابِرُ مِن ذَهَبٍ ومَنَابِرُ مِنْ فِضَّةٍ وَيَجْلِسُ ادْنَاهُمْ وَمَا فِيهِمْ مِنْ دَدنى على اللبان المسلم والكانُوْرِ وَمَا يَرَوْنَ أَن أَصْحَابُ الكراسي أَفْضَلُ مِنْهُمْ مَهْلنا قال أبو هريرة قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ وَهَلْ شوى ربنا ؟ قال : نعم قال هل تشعَارُونَ فِي رُوهَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرَ لَيْلَةَ الْبَدْرِ النا لا قال كذالك لا تَمارُونَ في رؤية ديكم ، ولا يبقى فِي ذَلِكَ الْمُجْلِسِ رَجُلُ إِلَّا حَافَرَة الله مكاثرة حتى يقول الترحيل منهم با فلان بن مُلَابٍ ، الذكرُ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا فيذكر بِبَعْض الكاريه في الكنها فيقول يا رب العلم تغفرني ؟ فَيَقُولُ : على السكة تغفري بلهف بلا منوتية مَاءٍ قَبَيْنَمَا هُمْ عَلى ذَلِكَ عَشِيلَهُمْ سَحَابَةٌ مِنْ لوقهم فأنظرت عليهِمْ طيبا لم يجدنا مِثْلَ ريحه شَيْا قَط وَيَقُونَ رَبَّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَوْمُوا إِلَى مَا أَعْلَدْتُ لكم مِنَ الْكَرَامَةِ فَخُذُوا مَا اشْتَهَيْتُمْ فَنَاتِي شوقا قل حَقَّتْ بِهِ الْمَلَائِكَة ما تم تنظرِ الْعُيون إلى مثله ، ولم تسمع الأذان و لم يخطر على القلوب فَيُحْمَلُ لَنَا مَا اشْتَهَيْنَا لَيْسَ يُبَاعُ فِيهَا وَلا يُشترى وفي ذيله السري يلاقى أهْلُ الْجَلاةِ بفسهُمْ بَعْضًا قَالَ فَيُقبل الرجل ذُو الْمَنْزِلَةِ المرئية ليل من هو دونه وَمَا فِيهِمْ دَنِي فَيَرُونَهُ مَا يَرَى عَلَيْهِ مِنَ اللباس فما يَنْقَفِي آخِرُ حَدِيثِهِ حَتَّى يَتَخَيَّلُ إِلَهُو مَا هُوَ أَحْسَنُ مِنْهُ وَذَلِكَ أَنَّهُ لَا يَنْبَغِن لأحد أن يُحْزَنَ فِيهَا ثم تنصرف إلى منارتنا فينلقانَا أَزْوَاجَنَا فَيَقَلْنَ مَرْحَبًا

পৃষ্ঠা-১৩৫

و اهلا از چلْفَ وَإِن بِكَ مِنَ الْجَمَالِ أَفْضَلَ مَا فَا رَقْتَنَا عَلَيْهِ فَيَقُولُ : إِنَّا جَالَنَا اليوم ربنا الجَبَّارُ وَيَحُلْنَا أَن يَنقَلِبُ بِمِثْلِ مَا القلبنا – الخرجه الترمذي في ستنه)

৮৭ প্রখ্যাত তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে মুসাইয়্যেব থেকে বর্ণিত। তিনি একবার আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেনঃ আমি প্রার্থনা করছি, আল্লাহ তা’আলা আমাকে আর তোমাকে যেনো জান্নাতের বাজারে একত্র করে দেন। একথা শুনে সায়ীদ জিজ্ঞেস করলেনঃ জান্নাতে কি বাজার থাকবে? আবু হুরাইরা বললেনঃ হাঁ থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সংবাদ দিয়েছেনঃ জান্নাতবাসীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন নিজ নিজ আমলের মর্যাদা অনুযায়ী তাদের সমাদর করা হবে। অতপর পৃথিবীর জুমআর দিনের (শুক্রবারের) পরিমাণে তাদেরকে আল্লাহর দর্শন লাভ করতে যাবার অনুমতি দেয়া হবে। অতএব তারা আল্লাহর দর্শন লাভ করবে। আল্লাহ তাঁর আরশকে তাদের দৃষ্টিগোচরে আনবেন এবং তাদেরকে দর্শন দেবার জন্যে জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগানে আত্মপ্রকাশ করবেন। তাদের বসার জন্যে নূর, স্বর্ণ ও রূপার মিম্বর পরিবেশন করা হবে। মর্যাদা অনুসারে তারা সেগুলোতে উপবেশন করবে। তাদের মাঝে কেউ নিম্ন হবেনা। তবে আমলগত মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা নিম্ন ব্যক্তিও মিল্ক এবং কর্পূরের ঢিলায় উপবেশন করবে। তবে ঢিলায় উপবেশনকারীরা চেয়ারে উপবেশনকারীদেরকে নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করবেনা।

আবু হুরাইরা বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ‘ওগো আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখবো?’ তিনি বললেনঃ ‘হাঁ, অবশ্যি দেখবে। সূর্য এবং পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে?’ আমরা বললামঃ জী-না। তিনি বললেনঃ ঠিক তেমনি তোমরা তোমাদের প্রভুকে যে দেখবে, তাতে কোনো সন্দেহ থাকবেনা। সেই মজলিশে এমন একজনও থাকবেনা, যে, আল্লাহর সাথে মুখোমুখি কথা বলবেনা। এমনকি আল্লাহ তাদের একজনকে সম্বোধন করে বলবেনঃ হে অমুকের পুত্র অমুক। তোমার কি মনে আছে যে, অমুক দিন তুমি এরূপ এরূপ কথা বলেছিলে? অতঃপর আল্লাহ পৃথিবীতে তার কতিপয় ওয়াদা ভঙ্গের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। তখন সে

পৃষ্ঠা  ১৩৬থেকে ১৪৮

পৃষ্ঠা-১৩৬

বলবেঃ প্রভু, আপনি কি আমাকে ক্ষমা করে দেননি? আল্লাহ বলবেনঃ হাঁ, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমার ক্ষমার কারণেই তো আজ তুমি এই বিরাট মর্যাদায় উপনীত হয়েছো। এমতাবস্থায়ই তাদের উপর একখন্ড মেঘ আসবে। মেঘটি তাদের প্রতি এমন সুগন্ধি বর্ষণ করবে, যার বিন্দুমাত্র সুগন্ধি তারা কখনো পায়নি। তখন আমাদের মহান প্রভু বলবেনঃ উঠো, এসো, দেখে যাও তোমাদের জন্যে কি সম্মানিত জিনিস আমি তৈরী করে রেখেছি। তোমাদের যা মন চায় গ্রহণ করো। অতপর আমরা একটি বাজারে যাবো। বাজারটি ফেরেশতারা ঘিরে রাখবে। সে বাজারে এমনসব জিনিস থাকবে, যেমনটি চোখ কখনো দেখতে পায়নি, কান কখনো শুনতে পায়নি এবং অন্তর কখনো কল্পনা করেনি। সেখান থেকে আমাদের মন যা যাইবে, তাই আমাদের দেয়া হবে। তবে সেখানে বিকিকিনি হবেনা। এ বাজারেই জান্নাতবাসীরা পরস্পরের সাক্ষাত পাবে।

তিনি বলেনঃ সেখানে উঁচু মর্যাদার লোকেরা নিম্ন মর্যাদার লোকদের সাক্ষাত পাবে। অবশ্য সেখানে কেউ নিজেকে নিম্ন মনে করবেনা। নিম্ন ব্যক্তির কাছে উঁচু ব্যক্তির পোষাক ভাল মনে হবে। কথা শেষ না হতেই আবার তার ধারণা হবে, না আমার পোষাকের চাইতে তার পোষাক ভাল নয়। এর কারণ হলো, জান্নাতে কারো দুঃখ পাবার এবং মন খারাপ করবার কোনো অবকাশ রাখা হয়নি। অতপর আমরা স্ব স্ব গৃহে রওয়ানা করবো। আমাদের স্ত্রীরা আমাদের অভ্যর্থনা জানাবে। তারা বলবেঃ মারহাবা, স্বাগাতম। আপনি এমন রূপ সৌন্দর্য নিয়ে ফিরেছেন, যা যাবার কালে আপনার মধ্যে ছিলনা। তখন সে বলবেঃ আজ আমরা আমাদের শক্তিমান প্রভুর মজলিশে বসেছি। ফলে আমরা যা নিয়ে ফিরেছি তার উপযুক্ত হয়েছি। সূত্র হাদীসটি ইমাম তিরমিযী তাঁর সুনানে তিরমিযীতে সংকলন

পৃষ্ঠা-১৩৭

২৫আখিরাতের কুরআনী চিত্র: মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে এযাবত বেশ কিছু হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। এ জীবনটা হলো আখিরাত বা পরকালীন জীবন। এখানে যে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোতে পরকালীন জীবনের বিস্তারিত চিত্র প্রতিফলিত হয়নি। কুরআনে পরকালীন জীবন বা আখিরাত সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা এসেছে। আমরা এখানে কুরআনের আলোকে পরকালীন জীবনের একটি নাতিদীর্ঘ চিত্র পেশ করছি। আশা করি, উপরোক্ত হাদীসগুলোর সাথে এ চিত্রটি পাঠকদের উপকারে আসবে।

আখিরাত কি?‘আখিরাত’ ইসলামের একটি পরিভাষা। প্রত্যেক মুসলমানের নিকট শব্দটি তার নিজ নামের মতোই পরিচিত। আখিরাতের ধারণা হচ্ছে এই যে, মৃত্যুর পর মানুষের জীবনে আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত মানুষের রূহ আলমে বরযখে অবস্থান করে। একদিন এই গোটা বিশ্বজাহান ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। সেদিনটির নাম হবে কিয়ামতের দিন- ইয়াওমুল কিয়ামাহ। সকল মানুষকে সেদিন পুনরুত্থিত করা হবে। সকল মানুষকে একস্থানে একত্রিত করা হবে। এ মহাসম্মেলনের নাম হবে ‘হাশর’। সেখানে আল্লাহ তা’আলা তাঁর আদালত কায়েম করবেন। প্রত্যেক মানুষের পার্থিব জীবনের আমল পরিমাপ করা হবে। এ পরিমাপের জন্যে সকল মানুষের পার্থিব কর্মতৎপরতা রেকর্ড করা হচ্ছে। অতপর বিচারে পার্থিব জীবনে যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত বান্দা ছিল বলে প্রমাণিত হবে তাকে চিরস্থায়ী মহাসুখের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর যে বিদ্রোহী বলে প্রমাণিত হবে, তাকে নিদারুণ শাস্তির স্থান জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে।

পৃষ্ঠা-১৩৮

এই হচ্ছে আখিরাত সংক্রান্ত ধারণা। এ ধারণাসহ আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, মুসলমানদের ঈমানের মৌলিক অংগ। আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাসী ব্যক্তি মুসলিম নয়। কুরআন হাদীসে, বিশেষ করে কুরআনে পরকাল সৃষ্টির যৌক্তিকতা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। অসংখ্য মনীষী যুক্তি, প্রমাণ ও উদাহরণ পেশ করে পরকালের প্রয়োজনীয়তার কথা সুপ্রমাণিত করেছেন। প্রত্যেক মুসলিম জানেন, পরকাল তার নিজের অস্তিত্বের মতোই বাস্তব ও মহাসত্য। এখানে কোনো প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা না করে, কুরআনের আলোকে আখিরাতের একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র অংকন করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

আখিরাতের সূচনা আখিরাতের জীবন কখন থেকে শুরু হবে? মূলত মৃত্যু পরবর্তী জীবনই আখিরাতের জীবন। সেই হিসেবে যারা ইহকাল ত্যাগ করেছেন, তারা সকলেই পরকালে পা দিয়েছেন। তাদের আখিরাতের জীবন শুরু হয়ে গেছে। কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত মানুষ পরকালে প্রবেশ করতে থাকবে। মৃত্যু পার্থিব জীবন থেকে পরকালীন জীবনে পা বাড়াবার মাধ্যম হলো মৃত্যু। মৃত্যুই মানুষকে পরকালের দিকে টেনে নিয়ে যায়। দুনিয়ার জীবন কেট ধরে রাখতে পারেনা। মরণকে বরণ করতেই হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ كل نفس ذائقة الموت – (العنكبوت : به “প্রতিটি জীবকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।” [সূরা ২৯ আনকাবুত : ৫৭) قل إن الموت الذي تفرون منه فانه عليكم – الجمعة (م) “হে নবী, এদের বলে দাওঃ যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছ, সে তোমাদের নাগাল পাবেই।” (সূরা ৬২ জুমুয়া: ৮] أينما كلكم يدرككم الشريف ولوكنكم في برنج عشيرة – (النساء: (٢٠)

পৃষ্ঠা-১৩৯

“তোমরা যেখানে যে অবস্থায়ই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের ধরবেই। যতো মজবুত কিল্লার মধ্যেই তোমরা অবস্থান করো না কেন।” (সূরা ৪ আন নিসা: ৭৮)। অতপর কুরআন আরো বলেছে যে, মৃত্যু কোনো ব্যক্তির ইচ্ছানুযায়ী তার সুবিধে মতো সময় এবং পছন্দনীয় স্থানে আসবে না। বরঞ্চ তা আসবে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী তাঁরই নির্ধারিত সময় ও স্থাচ্ছে।

و ما كان ينفسٍ أَن تَكون إِلا بلدي الوكتاب تؤجلاً – ال سوال : ١٥٥) “কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারবেনা। মৃত্যুর সময়টাতো নির্দিষ্টভাবে লিখিতই রয়েছে।” (সূরা ৩ আলে ইমরান: ১৪৫)وما كلينى نفس يأتي أَرْضِ تموت – اللمان : (٣٥) “কোন প্রাণীই জানে না কোথায় এবং কিভাবে তার মৃত্যু হবে।” (সূরা ৩১ লোকমান: ৩৪)। আবার নেক্কার এবং বদকার লোকদের মৃত্যু এক রকম হবেনা। নেক্কার লোকদের মৃত্যু হবে আনন্দময় এবং সুসংবাদবহ। পক্ষান্তরে বদকার লোকদের মৃত্যু হবে যন্ত্রণাদায়ক দুসংবাদবহ। কালামে পাকে এরশাদ হচ্ছেঃ ولَوْ تَوَى لا يلونَ الَّذِينَ كَفَرُوا المَلائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهُهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ و ذوقوا عَذَابَ الْحَرِيقِ – ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِالام العبيد. (الاتقال : ٥ – ٥٠) “ফেরেশতারা যখন কাফিরদের জান কবয করে, তখনকার অবস্থা যদি দেখতে পেতে। জান কবয়ের সময় ফেরেশতারা তাদের মুখমন্ডল এবং পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে থাকে আর বলতে থাকেঃ যাও, এবার আগুনে জ্বলবার শাস্তি ভোগ করোগে। এ হলো তোমাদের নিজেদের হাতের। কামাই করা শান্তি। আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করেননা।” [সূরা আনফালঃ ৫০-৫১/ تكَيْفَ إِذَا تَوَقتُهُمُ الْمَلائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أسخط الله وكرهوا وقوانة لأحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ – (محمد : ۲۸ – ۳۲)

পৃষ্ঠা-১৪০

“জান কবয করবার সময় ফেরেশতারা যখন তাদের মুখে-পিঠে আঘাতে হানতে থাকবে, তখন তাদের কী অবস্থা হবে। তাদের এমন অবস্থা তে। এ কারণে হবে যে, তারা সেইসব পথের অনুসরণ করেছে, যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছে আর তারা আসলেই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার কাজটি অপছন্দ করেছে। তাই তিনি তাদের সমস্ত কর্মকান্ড নিষ্ফল করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মদ: ২৭-২৮] এই তো গেল বদকার লোকদের মৃত্যুর সময়কার করুণ অবস্থা। কিন্তু নেককার লোকদেরকে মৃত্যুর ফেরেশতারা এসে সালাম করবে। পরবর্তী জীবনের সুখ আনন্দ ও পুরস্কারের সুসংবাদ শুনাবেঃ الَّذِينَ الوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلامُ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الجنة بِمَا كُنتُمْ العملون – (النحل: ۳۲)

“সেসব লোক, ফেরেশতারা যাদেরকে পবিত্র জীবনের অধিকারী অবস্থায় ওফাত দান করতে আসে, তাদেরকে বলেঃ তোমাদের প্রতি সালাম, শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যাও জান্নাতে প্রবেশ করো তোমাদের আময়ের বিনিময়ে।” [সূরা আন নহল: ৩২। আলমে বরযখ মৃত্যু থেকে কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত মানুষের রূহ যে জগতে অবস্থান করে তাকে বরযখ জগত বা আলমে বরযখ বলে। বরযখ শব্দের অর্থ পর্দা বা যবনিকা। অর্থাৎ এ জগতটার অবস্থান যবনিকার অন্তরালে। এ জগতটাকে ‘ট্রানজিট ক্যাম্প’ বলা যেতে পারে। এখানে মানবাত্মা কিয়ামতের পুনরুত্থানের জন্যে অপেক্ষমান থাকে। এ জগত সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছেঃ و مِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَلُونَ – (المؤمنون : ١٠٠) “আর এইসব (মরে যাওয়া) লোকদের পেছনে রয়েছে একটি বরযখ যা পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে।” [সূরা ২৩ আল মুমিনুনঃ ১০০) আল কুরআন এবং হাদীসে নববীর ভাষণ অনুযায়ী বরযখ জগতেও শান্তি ও শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আল্লাহর হুকুম অমান্যকারীদের এখান থেকেই শান্তি আরম্ভ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে অনুগত বান্দাহদের জন্যে এখানেও সুখ শান্তির ব্যবস্থা রয়েছে। বরযখকে হাদীসে ‘কবর’ বলা হয়েছে।

পৃষ্ঠা-১৪১

রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “প্রত্যেক ব্যক্তির কবর হবে হয়তো জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান কিংবা জাহান্নামের গহবরসমূহের একটি গহবর।” [জামে তিরমিযী: আবু সাঈদ খুদরী। কিয়ামত-হাশর-আদালত অতপর একদিন গোটা বিশ্বজাহান ধ্বংস হয়ে যাবে। কুরআন এ প্রলয়ের নাম দিয়েছে কিয়ামত এবং ‘সাআত’। এ সম্পর্কে আল কুরআন যে ধারণা পেশ করেছে, তাহলোঃ ইস্রাফীল ফেরেশতা সিংগায় ফুঁ দেবার অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রথম ফুঁ আসমান যমীনে অবস্থিত সমস্ত সৃষ্টিকে প্রকম্পিত করে দেবে। দ্বিতীয় ফুঁতে সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অতপর আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে একটু ধাক্কা মতো দেবেন। এ ধাক্কার শব্দে সমস্ত মৃতই নিজস্থান থেকে পরিবর্তিত যমীনের বুকে উঠে আসবে। কুরআন কিয়ামতের ব্যাপক এবং ভয়াবহ চিত্র অংকন করেছে। আমরা এখানে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করে দিচ্ছিঃ ما ينظرون إلا منيكة واحدة فأخذهُمْ وَهُمْ يَحْمِلُونَ ريس ، وي

“তারা যে জিনিসের অপেক্ষায় রয়েছে তা এক প্রচন্ড শব্দ ছাড়া আর কিছু নয়। তারা ঝগড়ায় লিপ্ত থাকা অবস্থাতেই তা তাদেরকে আঘাত হানবে।” [সূরা ৩৬ ইয়াসীন : ৪৯)يُسْأَلُ أَيَّانَ يَوْمُ القِيامَةِ فَإِذا بَرِقَ الْبَصَرُ وَخَسَفَ الْقَدْر وجمع الشمس والقمر (القيامة : 1-4) “তারা জানতে চাচ্ছে, কিয়ামতের দিনক্ষণটি কখন আসবে? যখন চক্ষু বিস্ফোরিত হবে, চাঁদ নিষ্প্রভ হয়ে যাবে এবং সূর্য চাঁদ একাকার হয়ে যাবে।” [সূরা ৭৫ কিয়ামাহঃ ৬-৯)ولية في الصورِ فَإِذَاهُم مِنَ الْأَجْنَا إِلى رَبِّهِمْ يُسلون . “(পরবর্তী) সিংগায় ফুঁক দেয়ার শাথে সাথে তারা কবর থেকে তাদের রবের নিকট দৌড়ে যাবে।” [সূরা ৩৬ ইয়াসীন: ৫১/

পৃষ্ঠা-১৪২

يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ منزلها فيهم أنت من ذِكْرَهَا إِلى رَبِّكَ مُنْتَهَهَا. “লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামতের নির্দিষ্ট ক্ষণটি কখন উপস্থিত হবে। তার নির্দিষ্ট সময় বলা তো তোমার কাজ নয়। তোমার রব পর্যন্তই এই জ্ঞান সীমাবদ্ধ।” (সূরা ৭৯ আন নাযিয়াত: ৪২-৪৪)। আয়াতগুলো থেকে একথা পরিষ্কার হলো যে, কিয়ামত অবশ্যি অনুষ্ঠিত হবে। সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। যমীনকে পরিবর্তিত ও সুসমতল করে দেয়া হবে এবং সেখানে সব মানুষকে একত্রিত করা হবে। আর এটাকে বলা হয় – হাশর। সেদিনটি কবে আসবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।

এই পরিবর্তিত যমীনের উপর আল্লাহ দুনিয়ার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তকার সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। এ হবে এক মহাসম্মেলন বা হাশর। এখানে আল্লাহ তাঁর আদালত বসাবেন। সমস্ত মানুষের বিচার করবেন। সেদিন সমস্ত ক্ষমতা গুটিয়ে তিনি নিজ মুষ্টিবদ্ধ করবেন। সেদিন সমস্ত মানুষ নিজের মুক্তির ব্যাপারে চরম দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত হবে। সংরক্ষিত রেকর্ডের ভিত্তিতে সকল মানুষের প্রতি আল্লাহ পূর্ণ ন্যায়বিচার করবেন। কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ যুলুম করবেননা। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার যাবতীয় আমলের সংরক্ষিত রেকর্ড (আমলনামা) পড়তে দেয়া হবে। অনুগত বান্দাহদের আমলনামা সম্মুখ থেকে ডান হাতে দেয়া হবে। অমান্যকারীদের আমলনামা পেছন থেকে বাম হাতে দেয়া হবে। পাপীদের অংগ-প্রত্যঙ্গ এবং যমীন সেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। সেদিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউই কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবেনা, প্রত্যেকেই নিজ নিজ মুক্তির চিন্তায় থাকবে ব্যস্ত। সেদিন নেক্কার লোকদের মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল তরতাজা। আর পাপীদের চেহারা হবে স্নান। সেখানে পাপীরা থাকবে চরম খরতপ্ত আযাবের মধ্যে আর নেক্কাররা থাকবে আল্লাহর আরশের ছায়াতলে। নেক্কাররা রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রদত্ত হাউজে কাউসার থেকে পান করবে সুপেয় শরবত। আল্লাহর ইনসাফের দন্ড থেকে সেদিন কেউ বঞ্চিত হবেনা। প্রত্যেককেই তার আমল অনুযায়ী বিনিময় ও পুরস্কার দেয়া হবে। অতপর পাপীদের নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামে আর নেক্কারদের নিয়ে যাওয়া হবে জান্নাতে। এ যাবত হাশর ও বিচার সম্পর্কে যা কিছু বললাম, তা মূলত আল কুরআন প্রদত্ত ধারণারই সংক্ষিপ্ত রূপ। এই বিষয়ে কুরআন পাকে অনেক আয়াত

পৃষ্ঠা-১৪৩

রয়েছে। এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সবগুলোর উদ্ধৃতি দেয়া সম্ভব নয়। তবে সূরা যুমার থেকে খানিকটা উদ্ধৃতি দিচ্ছিঃ ولية في الكتور تسيل من في السماوي ومن في الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللهُ ثُمَّ نَفِعَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَام يَذْكُرُونَ . وَأَشْرَقَ الْأَرْض بنور رَبَّهَا وَوُضِعَ الْكِتَاب و جاتي بالبين والشهداء واللى بيتهم بالعلي وهم لا يُظْلَمُونَ ، وَ وَقبَتْ كُل تني كا هَمِلتُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَا يُفْعَلُونَ – وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِن جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَا وَمَا تتصف أبوابها وقال لَهُمْ خَزائتها ألَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلُ مِنْكُمْ يَتْلُونَ عليكم بار ديكم ويلي كذلكم بقاء يومكم هذا ……. قيلَ ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خالدين فيها قبل ملوى المكترين – وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا على إِذا جَاءَ مَا ليصف أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَرَكتُهَا سَلَامُ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خالدين – (الزمر: ٢٥ – ٦٨) “আবার (দ্বিতীয়বার) শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। তখন আকাশ ও যমীনে অবস্থিত সকলেই মরে যাবে। তবে যাদের আল্লাহ জীবিত রাখতে চান তারা ছাড়া। পরে শেষবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং সহসাই সকলে দেখতে শুরু করবে। পৃথিবী তার খোদার নূরে ঝলমল করে উঠবে। আমলনামা সামনে এনে রাখা হবে। নবী রাসূল ও সকল সাক্ষীদের উপস্থিত করা হবে। লোকদের মধ্যে যথাযথভাবে সত্যসহকারে ফায়সালা করা হবে। তাদের উপর কোনো যুলুম করা হবেনা। প্রত্যেককেই সে যা আমল করেছে তার বিনিময় পুরোপুরি দেয়া হবে। লোকেরা যা কিছু করে আল্লাহ ত্য খুব ভালভাবেই জানেন। অতপর যারা কুফরী করেছিল, তাদের দলে দলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছুবে তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে। জাহান্নামের কর্মচারীরা তাদের বলবেঃ

তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে কি এমন বাণীবাহকরা আসেনি, যারা খোদার আয়াতসমূহ তোমাদের গুনিয়েছেন এবং তোমাদের একথা বলে ভয় প্রদর্শন করেছেন যে, আজকের এই দিনটি অবশ্যই তোমাদের সামনে আসবে? বলা হবে: “জাহান্নামের দরজাসমূহ দিয়ে প্রবেশ করো। এখন চিরকাল এখানে তোমাদের থাকতে হবে। এটা হঠকারী

পৃষ্ঠা-১৪৪

লোকদের জন্য খুবই খারাপ জায়গা। আর যারা নিজেদের খোদার নাফরমানী থেকে বিরত ছিল, তাদের দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত তারা যখন সেখানে পৌঁছে যাবে, জান্নাতের দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তখন তার ব্যবস্থাপকরা তাদের বলবেঃ সালাম-শান্তি বর্ষিত হোক তোমাদের প্রতি। খুব ভালভাবেই তোমরা থাকবে। প্রবেশ করো এই জান্নাতে চিরকালের জন্য।” [সুরা ৩৯ যুমার: ৬৮-৭৫)

জান্নাত ও জাহান্নাম: আদালতে আখিরাতের বিচারে যারা দুনিয়ায় আল্লাহর অনুগত হয়ে জীবন যাপন করেছিল বলে প্রমাণিত হবে, তাদের দান করা হবে জান্নাত। জান্নাত এক অফুরন্ত সুখ, সম্ভোগ ও আনন্দের স্থান। জান্নাতবাসীদের সেখানে দান করা হবে সীমাহীন নিয়ামত। চিরদিন ও চিরস্থায়ীভাবে তারা সেখানে থাকবে। সেখানে তাদের ঘটবেনা মৃত্যু, থাকবেনা রোগ শোক। সেখানে যা তাদের ইচ্ছে হবে, যা তারা দাবী করবে, সবই তাদের দেয়া হবে। পক্ষান্তরে, সে দিনের বিচারে যারা দুনিয়ায় আল্লাহর সমস্ত নিয়ামত ভোগ করেও তাঁর মর্জির বিপরীত চলেছিল বলে প্রমাণিত হবে, তাদের নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামের আগুনে। সীমাহীন কষ্ট আর আযাবের স্থান এই জাহান্নাম। চরম কষ্ট ভোগ করেও সেখানে তাদের মৃত্যু ঘটবেনা। আল্লাহ বলেনঃ انا تفكلى الكافرين سليل واهلالا تو سَمِيرًا – (الزهرة في “কাফিরদের জন্যে আমরা শিকল কন্ঠগড়া এবং দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন তৈরী করে রেখেছি। (সূরা ৭৬ আদ দাহার: ৪। إِنَّ جَهَنَّمَ كَالف مِرْصَادًا – لِلطَّافِينَ تَابًا – لا بِلِينَ بَيْهَا أَحْقَابٌ لَا يَدَّ وقُونَ بَيْهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابٌ إِلَّا حَمِيْنا وعشانا – (النباء : ٣٥ (٢)“জাহান্নাম একটি ঘাঁটি, খোদাদ্রোহীদের ঠিকানা। তাতে তারা অবস্থান করবে যুগ যুগ ধরে। সেখানে তারা ঠান্ডা ও পানোপোযোগী কোনো জিনিসের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেনা। সেখানে তাদের খাদ্য হবে উত্তপ্ত পানি আর ক্ষতের ক্ষরণ।” [সূরা ৭৮ আন নাবা: ২১-২৫)

পৃষ্ঠা-১৪৫

وَالَّذِينَ اسلُها وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَن مِنْهُمْ جَلْبٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ بِبَيْهَا أَبَنا – ( النساء (۱۳۳) “যারা ঈমান ও নেক আমল নিয়ে হাজির হবে, তাদের আমরা এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার নিচে দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহমান। আর সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” (সূরা ৪ আন নিসা: ১২২)।وأصحاب الشمالي ما أشكابُ الشِّمَالِ فِي سَمُومٍ وَحَمِيمٍ وَعِلٍ مِّنْ يَحْمُوْمٍ لَا بارد ولا كريم …… ثم إنكم أيها القانون المُكَذِّبُونَ لَا يلونَ مِن شَجَرَةٍ مِن وقوم فَمَا يَلُونَ مِنْهَا الْجُطُونَ فَشَرِبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ قَارِبُونَ شَرْبَ الْهِيمِ.

“আর বাম হাতের লোকদের জন্যে রয়েছে চরম দুর্ভাগ্য। লু হাওয়ার প্রবাহ, টগবগ করা ফুটন্ত পানি আর কালো কালো ধুয়ায় থাকবে তারা আচ্ছন্ন। তা না সুশীতল হবে আর না শাস্তিপ্রদ। হে পথভ্রষ্ট অমান্যকারীর দল। অবশ্যি তোমাদের যাক্কুম বৃক্ষ খেতে হবে। তা দিয়ে “ভর্তি করবে তোমাদের পেট। আর পিপাসার্ত উটের ন্যায় পান করবে উপর থেকে টগবগ করা ফুটন্ত পানি।” [সূরা ৫৬ ওয়াকিয়া: ৪১-৫৫) والسابقون الشابلون أوليات المقربون في جلب اللعيم ….. على مرر ترفنونه تتَّكِئِينَ عَلَيْهَا مُتَقَابِلِينَ – يَكون عَلَيْهِمْ ولدان معتدون بأكواب وأباريق ولاس من تعني – لا يُصل لمونَ عَنْهَا وَلا يُنْزَقُونَ وَفَاكِهَا مِمَّا يَتَخَيَّرُونَ وَلَهُم طيرٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ – وَحُوْرٍ عَيْنٍ الأَمْثَالِ اللُّؤْتُو المكتوب ….. في بذر محمود وظلم القوم وهل ممدود وماء منكوب ونايمة كثيرة – لا مأكوعة ولا ممنوعه و تروس تَرْقُونَةٍ إِنَّا أَنخَانَهُنَّ الشَاةِ – فَجَعَلْنَهُنَّ أَبْكَارًا شُرْبًا أفرايا – (الواقعة : ٣٠ – ١٠)“আর (নেক কাজে) অগ্রবর্তী লোকেরাই নিকটবর্তী লোক। তাদের অবস্থান হবে নিয়ামতে ভরা জান্নাতে।.. হেলান দিয়ে মুখোমুখি বসবে

পৃষ্ঠা-১৪৬

তারা মণিমুক্তা খচিত আসনসমূহে। আর চিরন্তন বালকেরা তাদের মজলিশে প্রবহমান ঝর্ণার সূরা, পানপাত্র আর হাতলধারী সূরা-ভান্ড এবং আবখোরা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে। তা পান করলে তাদের মাথা ঘুরবেনা, লোপ পাবেনা তাদের বিবেক বুদ্ধি। আর তারা তাদের সম্মুখে রকম বেরকমের সুস্বাদু ফল পেশ করবে। যেন যেটা পছন্দ সেটাই তুলে নিতে পারে। তাছাড়া পাখির গোশতও সামনে রাখবে, যেন পছন্দসইটি তুলে নিতে পারে। আর তাদের জন্যে রয়েছে আয়ত নয়না হর। তারা হবে পরম সুশ্রী সুন্দরী লুকিয়ে রাখা মুক্তার মতো। …. তাদের সেখানে হবে কাঁটাহীন কুল গাছ, থরে থরে সাজানো কলা, বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী ছায়া আর সদা প্রবাহমান পানি। সেখানে পাওয়া যাবে অফুরন্ত অবারিত বিপুল ফল আর ফল। সেখানে থাকবে তাদের জন্যে উঁচু উঁচু আসন। তাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করবো আমরা বিশেষভাবে সম্পূর্ণ নতুন করে। কুমারী করে বানানো হবে তাদের। স্বামীদের প্রতি হবে তারা পরমাসক্ত। বয়সে হবে সমকক্ষ।” [সূরা ৫৬ আল ওয়াকিয়া: ১০-৩৮)

জান্নাত ও জাহান্নামে কারা যাবে? জান্নাতে ও জাহান্নামে কারা যাবে, পূর্ববর্তী আলোচনা থেকেও তা অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে। এখন এখানে সরাসরি কুরআনের কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করতে চাই, যেগুলোতে জান্নাত ও জাহান্নামে কারা যাবে সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছেঃ كانا من على وأثر الحيوة الدُّنيا لان الجَحِيمَ مِنَ الْمَاوَى وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى كَانَ الْجَنَّةَ فِي الْمَاوَى – “যারা দুনিয়ায় খোদাদ্রোহীতা করেছে এবং দুনিয়ার জীবনকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে, দোষখই হবে ভাদের পরিণাম। আর যারা খোদার সম্মুখে দাঁড়াতে হবে বলে ভর করেছিল এবং প্রবৃত্তিকে বিরত রেখেছিল খারাপ কামনা বাসনা থেকে, তাদের ঠিকানা হবে জান্নাত।” [সূরা ৭৯ আন নাবিয়াত: ৩৮-৪১]

পৃষ্ঠা-১৪৭

من تنتلكم بالأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً . الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيُوةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسِبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِلُونَ صُنْعا – أولئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَاءِ؟ تكيف أعمالهم – “আমলের দিক থেকে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত লোক কারা তা কি তোমাদের জানাবো? এরা হচ্ছে তারা যাদের চেষ্টা সাধনা দুনিয়ার জীবনে ভ্রষ্ট পথে চালিত হয়েছে। কিন্তু তারা মনে করেছিল যে, তারা খুব ভাল কাজ করছে। এসব লোকেরাই তাদের প্রভুর নিদর্শনসমূহ এবং (পরকালে) তার সাক্ষাত লাভকে অস্বীকার করেছে। তাই তাদের যাবতীয় আমল পন্ড হয়ে গেছে।” (সূরা ১৮ আল কাহাফ: ১০৫) “পরকালের সেই মহান সুখ ও শান্তির আবাস আমরা তাদের জন্যেই তৈরী করে রেখেছি যারা পৃথিবীতে দর্প, হঠকারিতা ও দাম্ভিকতা পরিহার করে চলে আর বিরত থাকে বিপর্যয় সৃষ্টি থেকে।”

জান্নাত ও জাহান্নামে কারা যাবে এ বিষয়ে কুরআন মজীদে ব্যাপক বিস্তীর্ণ বিবরণ রয়েছে। তার সংক্ষিপ্ত সার হচ্ছে এই যে, যারা নিজেদের জীবনকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করেছে, আল্লাহর দাস ও অনুগত বান্দাহ হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেছে এবং তাঁর বিধান অনুসরণের ব্যাপারে তাঁর রাসূলকে অনুসরণ করেছে, তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী। পক্ষান্তরে, যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করেনি, শয়তান, নফস ও মানব সমাজের দাসত্ব করেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেনি তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী। আদর্শ সমাজ গঠনে পরকালীন চিন্তার গুরুত্ব বস্তুত কোনো সমাজের মানুষ যদি পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং পরকালীন কল্যাণ অকল্যাণের কথা চিন্তা করে জীবন যাপন করে, তবে সে সমাজ একটি আদর্শ মানব সমাজে রূপান্তরিত না হয়ে পারেনা। কোনো ব্যক্তি যদি তার ব্যক্তি জীবনে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, পরকালে আল্লাহর আদালতে

পৃষ্ঠা-১৪৮

হাযির হতে হবে বলে বিশ্বাস করে, জাহান্নামের কঠিন শাস্তির কথা যদি সদা তার হৃদয়কে ভীত-কম্পিত করে তোলে, জান্নাতের লোভ ও আকর্ষণ যদি তার হৃদয়কে সদা প্রভাবিত করে রাখে তাহলে সে আল্লাহর অনুগত আদর্শ বান্দা না হয়ে পারেনা। তার দ্বারা মানুষের অনিষ্ট হতে পারেনা। মানুষের প্রতি যুলম হতে পারেনা। এ ব্যক্তি নিজের কল্যাণের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হতে বাধ্য। দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হবার পরিবর্তে পরকালে প্রতিষ্ঠিত হবার ব্যাপারে সে থাকবে অধিক ব্যস্ত। তার মধ্যে থাকবেনা কোনো প্রকার অহংকার, হঠকারিতা, উচ্ছৃংখলতা, অনৈতিকতা। আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিকে সে করবে সম্মান এবং যত্ন। এমন ব্যক্তি দ্বারা কেবল ভাল আর কল্যাণই আশা করা যায়। যেকোন কাজ বিশ্বস্ততার সাথে পালন করার ব্যাপারে তার উপর নির্ভর করা যায়।

প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের ব্যক্তিদের দ্বারা যদি গঠিত হয় কোনো সমাজ, নিঃসন্দেহে সে সমাজ হবে এক মহান আদর্শ উচ্চমানের সংস্কৃতবান সমাজ। এ ধরনের সমাজই সকল বিবেকবান মানুষের কাম্য। আর সেরূপ সমাজ গঠন করা ঐসব ঈমানদার খোদাভীরু লোকদের দ্বারাই সম্ভব, পরকালের মুক্তির চিন্তা যাদের মনমগজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।

 

Home
E-Show
Live TV
Namaz
Blood
Job