Skip to content

নীললোহিতের অন্তরঙ্গ - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

পৃষ্ঠা ১ থেকে ১৫

পৃষ্ঠা:০১

১: আমার মেজোকাকার ছেলের বিয়ে, নেমন্তন্ন বাড়ীতে সে কি কেলেঙ্কারী কাণ্ড! মেজোকাকা টালিগঞ্জে নতুন বাড়ী তৈরী করেছেন এবং তাঁর বড় ছেলের বিয়ে, সুতরাং বেশ ধূমধামের ব্যাপার। দিল্লী আর পাটনা আর গৌহাটি থেকে পর্যন্ত আত্মীয়স্বজনরা এসেছেন, গড়্গম্ করছে সারা বাড়ি, আমি কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে অকারণে ব্যস্ত হয়ে খুব কাজ দেখাচ্ছি। গৌহাটির পিসেমশাই চা-বাগানের ম্যানেজার -মানুষকে হুকুম করা তাঁর অভ্যেস-মুতরাং যখন তখন ভরাট গলায় যাকে-তাকে হুকুম করে কর্তৃত্ব দেখাচ্ছেন, মেয়েরা শাড়ি- গয়নার আলোচনায় মুখের ফেনা তুলে ফেলেছে, মেজোকাকা মাংসওয়ালাকে খুব কচি নয়, অথচ চর্বি থাকবে না-এমন পাঁঠার কথা বোঝাচ্ছেন, কুটুমবাড়ির দেওয়া জিনিসপত্রের মাঝখানে মেজো- কাকিমা নৈবেম্ভর ওপরে কিসমিসটির মতন বসে আছেন, এই সময় কাওটা ঘটলো। ছাদে দৈ-মিষ্টি তৈরী হচ্ছে-আমি তার তদারকি করছিলুম, বিকু এসে চুপি চুপি আমাকে বললো, নীলুদা, তুমি ছাড়া আর কেউ পারবে না, তাই তোমাকেই বলতে এলুম, তুমি যদি একটু চেষ্টা করো, মানে ইয়ে। আমি হাসতে হাসতে বললুম, লজ্জা কি বাবাজীবন, বলেই ফেল! কিন্তু আজ তো দেখা হবে না, আজ কালরাত্রি! বিকু বললো, না না, তা নয়, ওর শরীরটা ভালো নেই- আমি সরলভাবে জিজ্ঞেস করলুম, ওর মানে কার?

পৃষ্ঠা:০২

দিক্ বললো ঐ যে, তোমার ইয়ের, মানে শরীরটা ভালো নেই, তাই বলছিলুম কি, মেয়েরা যদি আচারটাচার খানিকটা কমিয়ে। একটু ভাড়াকাটি শুইয়ে দেয় ভরে- এরপর বিষ্ণুর সঙ্গে খানিকটা ঠাট্টা ইয়ারকি করে আমি ওর জইরোধ ঠেলাতে না পেরে নিচে নেমে এলুন, যদি হিংস্র কৌতূহলী মেয়েদের সরিয়ে নতুন বউয়ের একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা করা যায়। ভাগ্যিস এসেছিলুন, তাই আমি সেই কাওটার সাক্ষী হতে উৎসব সাড়ি সরগরম করে হেয়েছিল আর একজন, বড় কাকার মেয়ে ভাদলদিত ছেলে রিন্টু, বয়স মাত্র চার বছর, কিন্তু সে একাই একশো মনের সমান। ফুটফুটে ফর্সা বা, কোকড়া চুল, দেবশিশুর মতন বাড়ি, কিন্তু আসলে একটি এক নম্বরের বিষ্ণু। কখনো যে জানে, কখনো সে একতলায়, কখনো রান্না ঘরে-সব জায়গায় রিন্টু, জরুরি সমস্ত কথাবার্তার মধ্যে রিন্ট এসে গণ্ডগোল উৎপাত শুরু করায়। সর উৎসব বাড়িতেই বোধহয় ঐ রকমের এক একটি বিষ্ণু থাকে। কিন্তু রিন্টুকে বকুনি দেবার উপায় নেই-বড় কাকায় বে আদরের নাতি-ওকে শুধু, বমকালের কাজলদির মুখ ছাদ থেকে নেমে এসে আমি নতুন বউ যে ঘরে বসে আকে সেইদিকে যাচ্ছিলুম, রিন্টু আমার জানা টেনে ধরে জিজ্ঞেস করল, নীলুমানা, ঐ ঘরে ঐ বস্তাটায় কি আছে? সারাদিন ধরে ফিন্টর মুখে ওটা কি, ওটা কেন, ওটা কোথায়-এতবার শুনতে হয় যে আর ধৈর্য থাকে না-হুতণ্ডা। আমি উত্তর না দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিলুম, চিন্টু তবু আমার পিছন পিয়ন আসতে আসতে বলল, বলো না, ঐ বস্তাটায় কি আছে, বলো না? সিঁড়ির পাশে দাঁড়ার যবে অনেক কিছু কিনে রাখা হয়েছে-রিন্ট তারই একটা বক্তা সেগিয়ে বার বার বলছে, বালা না, ওটায় কি আছে। বলো না।

পৃষ্ঠা:০৩

বাধ্য হয়েই সেই বন্ধাটার দিকে এক পলক তাকিয়ে আমি রাগতভাবে উত্তর দিলুম ওটায় চিনি রাখা আছে। যাও এমার খেলতে যাও। রিন্টু আমার জামা ছেড়ে দিল, তারপর বেশ অভিমানী গুরে বললো, আনি ওটার ওপরে হিনি করে দিয়েছি। আমিও ঘুরে দাড়িয়েছি, মেজোকাকাও পাশ থেকে কথাটা। শুনেছেন, ছ’ জনে সমস্বরে জিজ্ঞেস করলুম, অ্যা? কি বললি,রিন্টু বেশ সহজভাবেই সবাইকে শুনিয়ে বললো, আমি ঐ চিনির বস্তার ওপরে হিলি করে দিয়েছি। মাকে ডাকলুম, মা যে আসছিল ন যেন একটা বোমা পড়েছে, এক মুহূর্তের জন্ম সব চুপ। নন্ধুন বউয়ের গয়নার ডিজাইন লক্ষ্য করছিলেন কাজলদি, তিনি যেন মৃত দেখার মতন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন রিন্টুর দিকে। সন্দেহ কি রিন্টুর ভাঙ্গিয়া তখনও ভিজে, আমরা কয়েকজন দাঁড়ার ঘরে ছুটে গেলুম, চিনির বস্তাটা ভিজে জবজব করছে-অনেকক্ষণ চেলে রেখেছিল তো রিন্টু, তাই বেশ অনেকখানি- ব্ল্যাকমার্কেট থেকে সাড়ে চারটাকা দরে কেনা ৫০ কিলো চিনি। মেজোকাকার মুখখানা গুড়ের মতন চট্টচটে হয়ে এলো, তিনি ধণ করে ভসে পড়ে বললেন, একি সাদেশে ব্যাপার, এখন পাওয়া যাবে কিনা আর এতগুলো টাকা-গুফ। মেজোকাকিমার ছুটে এসেছিলেন, তিনি বুদ্ধিমতী, তিনি তাড়াতাড়ি বললেন, চেঁচিয়ে বাড়িশুদ্ধ লোককে শোনাচ্ছো কেন? চুল করো না, কি হয়েছে কি? পঞ্চাশ কিলো চিনির দাম ছশে। পঁচিশ টাকা। প্রথম সমসা, এক্ষুনি অতটা চিনি আবার জোগাড় করা যাবে কিনা। তা ছাড়া

পৃষ্ঠা:০৪

অতগুলো টাকা বাজে খরচ। মেজকাকা অসহায়ের মতন আমার হাত চেপে ধরে বললেন, এখন কি করি বলতো নীলু-এফ- মেজোকাকিমা বললেন, চুপ করো, সারা বাড়ি চেঁচিয়ে শোনাচ্ছো কেন। আমি মেজোরাবিমার মনের ভাব বুঝতে পেরে বললুম, হ্যাঁ, মানে, ছোটছেলের ইয়ে তো খুব পাতলা হয় একটু বাদে উলে খাবে-কেউ টের পাবে না। পিছন থেকে কে যেন বললো, হ্যাঁ, রিন্টু, বলেছে বলেই তো আনরা জানতে পারলুন, যদি না বলতো, কেউ হয়তো টেরও দেঙ্গোকাকা বলে উঠলেন, না, না, না এখন লোকজন জানবেই -শেবে এত আয়োজদের পর ঐসানাক্স ব্যালারের জন্ম বদনাম হবে- হয় স্থন করে পা দেলে কাজলনি ঘরে ঢুকে বললেন, কোথায় যোগ সে হতভাগা ছেলে। মামি আগেই বলেছিলুদ, ও ছেলে নিয়ে শামি, বাস্তবেল। এতে শুধু নেমন্তন্ন গেয়ে গেলেই হতো, তা না- মেজোকাকা বললেন, না, না, ভাজা, তুই ওকে কিছু বলিসনা, * অবোধ শিশু-কাজলছি বললেন, শোনো কাকা, চিনির দামটা আমি দিয়ে। দেবে, তুমি আধার আনিয়ে নাও। -সে কি করা, তুই দাম দিবি কি। ছিঃ। সামান্তা টাকা- মোটের ধামার নয়। ঐ টাকার অগ্নে আমি থারুর কথা শুনতে পারবো না। আমার ঢেলে শাদী, আমার ডেলে খারাপ, আমি শিক্ষা দিতে জানি না- কাজলবি অবস্থাটা আরও ঘোরালো কবে ফেললেন। হঠাৎ অভবত বরে কেঁদে ফেলেন। তারপর রাগারাগি কাছাকাট আরও আমি সেখান থেকে কেটে পড়লুম। ছাদে উঠে জেবি-উদ্ধৃতরাও এববর জেনে গেছে, ভারা উছনের সামনে বলে

পৃষ্ঠা:০৫

মুখ টিপে হাসাহাসি করছে। এত তাড়াতাড়ি কি করে খবর ছড়ায় কে জানে। আর, ছাদের কোণে তিন চারটে বাচ্চার সঙ্গে প্রবল বিক্রমে খেলায় মেতে আাছে মিন্টু। তার কোনো গ্লানি নেই। হঠাৎ আমার হাসি গেল। জর্জ ওয়াশিংটনের গল্প শুনেছিলুম, রাগানের ফুলগাছ কেটে ফেলে বাবার কাছে সেই কথ্য স্বীকার করেছিলেন ঢোলবেলায়, তাঁর বাবা ফুলগায়ের মুখে থেকেও ছেলের সাজন ও সতাবাদিতায়। বেশী খুন্সী হয়েছিলেন। আর নারাযাদিতার অন্তই বোধহয় দিনি’। প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। দিব্য দৃষ্টিতে আমি ডিন্টকে দ্বিতীয় কর্ক ওয়াশিংটন হিসেবে দেখতে পেলুম। কি সবল মুখ করে রিন্টু এখন বলেছিল, আমি চিনিয় বন্ধায় হিসি করেছি। আমাদের পরিবারের একজন পবে প্রেসিডেন্ট হবে এই সম্ভাবনার কথ্য জানতে পারায়-আজ রিন্টুকে নিয়ে আমাদের উৎসর করা উচিত। এর তুলনায় ৪০ কিলো চিনি কিংবা ২২০টা টাকা তো কিছুই না।। কিন্তু তার দেত চললো অনেকক্ষণ। যেদোরাকা আবার টাকা খরচ করে চিনি কিনতে প্রস্তুত, বদনাদের ভয়ে। কাজলধির গো- তিনিই ঐ টাকাটা দেবেন-নইলে শ্বশুরবাড়িতে তাঁর নিন্দে হবে। এড সঙ্গে এলে যোগ দিলেন ছোটমামা। ছোটমামার কেমিস্ট্রীকে দিদিতি ডিগ্রি আছে। তিনি দাবি তুললেন, আবার চিনি কিছুতেই কেনা চলবে না। ব্যবসায়ীরা গরুর হাড় পর্যন্ত ভেজাল নিচ্ছে, আর এ তো সামাজ বাচ্চা ছেলের হিসি। চিনি আল দিয়ে রসগোল্লার রস হবে-অতক্ষণ আগুনের ঝালের পর কোনো ফোসই থাকবে না। এতখানি চিনি নষ্ট হবে? দেশের এইদন্তই উন্নতি হচ্ছে না-যতসব কুসংস্কার। আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বাক্তি অনেকেরই দেখা গেল সাজ গুজবে কবে যেন স্কার ডায়াবিটিস ছিল-তাঁরা বো মিষ্টি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিল-পুরয়া। এতে তাঁদের কিছু যায় আসে না। কাহলদির স্বামী একটু যায়ে এলে এর শুনে প্রথমেই

পৃষ্ঠা:০৬

ফিঈকে ডেকে ঠাস ঠাস করে ছটি চড় কযালেন, প্রেসিডেন্ট-এর বাবা হবার সম্ভাবনা তিনি মনে খানও দিলেন না। খবস্থা যখন চরমে উঠলো, তখন এলেন মোস্তাকাতিয়ার করনের। দেওষর থেকে তিনি দয়া করে এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে। মুড়িওলা বিশাল চেহারা, দেখলে ভয়-ভক্তি হয়। ঐবষ গুরুদেবদের উপকারিতা আমি সেদিন বুঝতে পারলুন। অবস্থা বুঝে বাবস্থা করার বেশ দ্রুত উপস্থিত বুদ্ধি এঁরা ব্যবহার করতে পারেন। তিনি প্রণবে সব ব্যাপারটা গুনলেন, এমন কি ছোটমামার তীর বক্তৃতা পর্যন্ত। তারপর দিরহাক্সে বললেন, ঐ চিনি যদি আমি যাই, তাহলে ভোয়া যাবি তো। শিশু হচ্ছে নারায়ণ, শোন তাহলে একটা গম, বুদাষনে একদিন শ্রীকুফ। গটো মহাভারত কিংবা কোনো পুরাণে যে নেই-তে সপ্তকে আমি নিঃসন্দেহ। গল্পের মূল কথা, অত্বকও নাতি এতদিন যশোদার ননী মাদনে হিনি করে দিয়েছিলেন ভাই দেখে পুরান ঘেয়া প্রকাশ করায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, এখন থেকে শিশুর ইয়েকে যদি কেউ ঘেন্না করে-তাহলে সে আমার। দয়া পাবে না। শুরুদের এ চিনির বক্তায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিয়ে। বলতেন, এ শুদ্ধি, এ শুদ্ধি। 1

চমৎকারভাবে সব নিটে গেল। শুধু ছোটকাকা আমাকে এক পাশে ডেকে দিশক্ষিত করে বললেন, হই বান্নার ঠাকুরদের বলিস, চিনি আবার নতুন করে কেনা হয়েছে। দরকার কি যদি জিজ্ঞের করে তাহলেই বলবি না জিজ্ঞেস করলে কিছু দরকার নেই- বেবার আনাদের বাড়ির রান্নার মধ্যে রসগোল্লাই হয়েছিল। সবচেয়ে ভালো। রসগোল্লার নতুন বহনের স্বাদের প্রশংসা করে। গেলেন নিমন্তিতয়া সবাই। যার আমি। অতক্ষণ পরিবেশন আর খঞ্চ গাড়ির মেয়েদের সঙ্গে করি নাষ্ট করার পর-আমার আবে খাবার। সময় কোথায়? আমি হাটা বসগোল্লা রিন্টুর মুখে বাঁকে দিয়েছিলুম।

পৃষ্ঠা:০৭

২: সেই গড়টা আশা করি সবারই মনে আছে। সেই মহাভারতে, যুদ্ধের পর-ভীম শরশয্যায় বয়েছেন, যুধিষ্ঠির এসে তাঁকে রোজ নানারকম প্রশ্ন করেন-একদিন প্রশ্ন করলেন। দাদামশাই, নারী এবা পুরুষ-এদের মধ্যে কার জীবন বেশী গুদের? (কি সময় কি প্রশ্ন। তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে, ভীম মরতে বসেছেন, তার ওপর পিঠে অতগুলো ভীত বেঁধানো-এ সময় তিনি বললেন নারী পুরুষের। দুখের কথা। তাছাড়া ভীষ্ম, যিনি সারাজীবনে কখনো কোনো নারীকে স্পর্শ করেননি, তিনি ওদের সম্পর্কে কি জানবেন।) কিন্তু দমলেন না ভীয়। বললেন, প্রশ্নটা খুব জটিল বটে, কিন্তু এ সম্পর্কে একটি আখ্যান গায়ে-তার থেকেই এর উত্তর পাওয়া যায়। পাঠকরা গল্পটা নিশ্চয়ই জানেন। আমি সংক্ষেপে আরার মনে করিয়ে দিচ্ছি। পুরাকালে ভজখন নামে এক রাজা ছিলেন ( হাতের কাছে মহাভারত নেই, নামটাম একটু ভূল হতে পারে- কিন্তু ডাতে কিছু যায় আসে না।)-একদিন তিনি শিকারে বেরিয়ে গভীর অরণ্যে হারিয়ে গেলেন। তারপর তুজার্ড হয়ে খুঁজিতে খুঁজতে এক জলাশয়ের কাছে এলেন-সেই পুকুরটা ছিল অপরাদের স্নানের অয়গা-পুরুষের সেখানে আগমন নিষিদ্ধ, ঢাকা তো জানেন না- তিনি যেই পুকুরে নেমেছেন, অমনি তিনি স্ত্রীলোক হয়ে খেলেন। পুরোনো সব কথাও তাঁর মন থেকে যুদ্ধে গেল। অনুন্নয়রা রাজাতে খুকে না পেরে ফিরে গেল, বাজা অজম্বন এক রূপসী রমণী প্রয়ে থেকে গেলেন বনে। জনে এক গরি-কুদারের সঙ্গে দেখা হলো

পৃষ্ঠা:০৮

বাং, বর্ণন থেকে প্রণয়, এসব থেকে বিদার। ঋষির বউ হয়ে আধনে অভাগা গুণে দিন ঝাটাতে লাগলেন তিনি। কয়েকটি ছেলেমেয়েখ হলে।। একদিন মহর্ষি নারদ খুঁজতে খুঁজতে এবে দেখতে পেলেন। তাঁকে নারদ চিনার গায়লেন দিব্যদৃষ্টিতে। তিনি রাজাকে (এখন। ঋষিপাড়ী) মুখিয়ে বললেন যে, তাঁর অভাবে রাজ্য ছারণাকে চাচ্ছে-তাঁর আগের পক্ষের দেগের। ঝগড়াঝাটিতে বন্ধু, হতত্যং তার দিবে স্বাধয়া উচিত। নায়ন মন্ত্রঃপুত জল ছিটিয়ে তাঁকে আরার পুরুষ করে দিবেন। আধর ছোড় ও গব্দের ছেলেমেতে ও স্বামীকে 琛ে。 রাজবানীতে দিতে এসেন রাজা। রাষ্যের প্রয়ন্দোবস্ত করলেন।।।। কিন্তু মনে সুখ নেই তাঁর। নারদকে দেবে রাজা বললেন- আমাকে আরায় এমটী করে দিন, রমণী অবস্থায় দামি যে সুখ ও আদদ পেয়েছি-তার তুলনায় পুরুষের জীবন তুচ্ছ। আমি আধার। সেই পবিত্র সাজানো কিরে যেতে চাই। সত্যি সত্যিই, রাজ ছেড়ে আবার সেই গতির বই হয়ে চলে গেলেন ভঙ্গশ্বন। প্রমাণিত আলো, নারীর জীবনই বেশী হয়েয়। আমি প্রায়ই ভাবি-এখনকার দিনেও, নারী পুরুষের মধ্যে কে বেশী কুণীও এই নিয়ে যদি একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতা আংগু করা যায়, তাহলে বুঝবে গাছড়ি, মেয়েরা আলাময়ী বক্তৃতা দিয়ে আরয় বরমতম করে রাখবেন। প্রায়ই তো মেয়েদের মুখে অম্লযোগ শুনি, আপনাদের ছেলেদের কি মথা। এখন যা খুশি করতে পারেন। জানি, সেই বিতর্ক সমায় মেয়েরা প্রমাণ করে ছাড়বেন- তাঁদের জীবন বিদায় গিড়ঘনামহয়, পুরুষেরা তাঁদের স্বাধীনতা খর্ব কবে জেগোছ ইত্যাদি। পুরষদের জীবনের গুধের প্রমাণ হিসেবে- তারা বলতেন, পুরুষরা যখন যেখানে খুশি যেতে পারে, পুরণরা টাকা উপার্জন করে, তারা দেশ শাসন করে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

পৃষ্ঠা:০৯

এর সব কটার উত্তরই আমি দিতে পারি-মেয়েদের সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে পারবো না, আড়াল থেকে।। আমার ধারণা, সব সভ্যতাই মাতৃভান্ত্রিক। পুরুষরা ক্রীতদাস। মাত্র। তারা নির্বোধের মতন খেটে খেটে মরছে, বিন্তু কুরিয় মজাটুকু সব নিয়ে নেয় মেয়েরা। পুরুষরা টাকা উপার্জন করে -ঠিকই, কিন্তু সেই টাকা খরচ করে মেয়েরা।, অবহেলায়, বিলাসিতায় যা খুলি। পুরুষরা অকারণে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে মরে, তুবন্ত নদীর ওপর ব্রীজ বানানো থেকে শুরু করে প্রাণ তুচ্ছ করে সিংহের সঙ্গে লড়াই পর্যন্ত-পুরুষদের এ সবকিছুই কোনো না কোনো মেয়েকে খুশী করার জন্য। মেয়েরা এতেও খুশী হয়না, অবস্থা ঠোঁট উংলা বলে, এ আর এমন কি, এ তো অনেকেই পাতে। তুমি নিজে আলামা বেশী কি পাবো-তাই দেখাও। এই আলাদা হবার দেখা ধরিয়ে দেওয়াও মেয়েদের অঞ্চতম কৌশল। বেচারা পুরুষরা নদীতে ব্রীজ বানাবার পরেও আবার সমুদ্রে বাঁধ দিতে যায়, সিংহ হাত করার পর মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে। ফরাসীরা বলে, ‘ক্লারশো লা ফার্ম’, মেয়েটাকে খুঁজে আনো-সব দুর্ঘটনার আড়াল থেকে সেই মেয়েটাকে খুজে আনো। দিল্লীতে থাকবার সময় একজন হাইকোর্টের বিচারপতিকে দেখেছিলাম আদালতে কি দোর্দণ্ড প্রতাল তার বিছু বাড়িতে তিনি পাঞ্জাবি না ড্রেসিং গাউন পরবেন-স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া সেটুকু নির্বাচনের স্বাধীনতাও তাঁর নেই। মেয়েযা ইচ্ছে মতন যেখানে সেখানে যেতে পারে না বটে, কিন্তু ইচ্ছে মত যখন তখন যেখানে সেখানে পুরুষদের পাঠাবার ক্ষমতা তাদের। আছে। যাও, পার্ক সার্কাস থেকে নিয়ে এসো মাংস, বাগবাজার: থেকে ইলিশ, বড়বাজার থেকে জর্দা-এসর হুকুম অবলীলাক্রনে বেজবে তাদের মুখ থেকে। পুরুষদের চিন্তা-ভাবনা পারকল্পনা এঙ্গ নিমেষে বদলে দিতে পারে মোচরা। স্বামী ঠিক করেবেন, ময়দানে মিটিং শুনতে যাবেন-স্ত্রী এসে বললেন, ওমা কেকি, আজ

পৃষ্ঠা:১০

এতে আছি গেলে মাগীর বাড়িতে থাবো-তাঁকে কথা দিয়ে ফেলেছি। এক বস্তুর বাড়িতে ভিয়েতনামের যুদ্ধ নিয়ে আমরা তর্কে ময়, দেশ ও শুধিবীর ভূগেনয় নিয়ে বস্তুটি অত্যন্ত চিন্তিত-বস্তু-পরী সামিয়া শুনতেন, রিজভাবে যাই স্কুললেন, তারগর বললেন, মাগো যে, অদ্ভুক্ত হলে কি সিনেমা বাচ্ছ? তোমার বন্ধু তো গুলামভার ম্যানেজার, ফোন করে জাগো মা-এখন টিডিট পাওয়া যাতে কিনা। শিমেছে পৃথিবীর চাসময়ের কথা ফুৎকারে উড়ে গেল, খামরা ডুবে গেলুম, হিন্দী সিনেমার জগতে। আমি মেয়োরত কয়েকট বিশেষ ডুবিশ্বের কথা উল্লেখ করতে চাই। প্রবনেই বলা যায়, মেয়েদের দাড়ি কামাতে ৩য় নং। এটা যে একটা কতবড় সুবিধে-মেয়েরা তা জুতার না। বড় বৃষ্টি যোদ, ছুটির দিন কাজের দিন-এই যে প্রত্যেকদিন গাড়ি কামাবার অন্য একঘেয়েমি-এর হাত থেকে নিয়ায় মৌ পুরুষদের। আমি আয়নার সামনে যেতে হাই না-দিও মাড়ি কামারার সময় আয়নার সামনে মুখ আনতেই হয়-তখন নিজেকে তোড়ি কাটি যোজ। ঠিধ সময় ব্লেড কিনতে ভূলে গেলে, পুরানো গ্রেডে গাল এবার সময় ইচ্ছে করে নিজের প্রথায় এক দোপ যদিয়ে দিই। দাড়ি রাখবো, মাত্র ছ’ তিনদিন কাড়ি না ঘাটগেই মেয়েরা এমন পিষ্টভাবে মুব ঘুরিয়ে নেয়। আর মোনোই হাসি-তেবে মুখ ঘুরিয়ে দের-হারলে আার সে মুখের মেয়েদের আর একটা সুবিধে তাদের শাড়ীর কোনো সাইজ নেই। সেবার শাড়ী ধরত তখন পরতে পারে-নিত্যনতুন বকে সোলাদের অভাব হয় না তাদের। অথচ, বাড়ি থেকে বেরুবার আবে পাংক বাটি নিয়ে আমার প্রতিদিন ইণ্ডিয়া। প্যান্ট কাচা খাতে তো আামা ইতিতি নেই। প্রতি মাবে একবার নাপিতের কাঁচির নীচে বাধ্য পেরেক দিয়ে হয় না মেয়েদের-অথ্য এই ব্যাপারটা আমার কাছে অসীম বিরক্তিকর। মার থাক্। তবে অবশ্ন আমাকে আরও যতবার জন্ম নেবার হুযোগ দেওয়া হবে-আামি পুরুষই হতে চাইবো। কারণ, একটি জিনিস মেয়েরা একেবারেই পাবে না-কিন্তু পুরুষদের যে জনরা আছে। মেয়েরা মেয়েদের ভালোবাসতে পারে না, আমরা পারি। মেয়েদের দোষ মেয়েদেরই শুধু চোখে পড়ে, আমরা ও ব্যাপারে একেবারেই অন্ধ।

পৃষ্ঠা:১১

৩: আমি ভাবছিলুম, আমি কোন দলে? কোলিয়ারির অফিসঘরে বসে আছি। সকালবেলা ভারী ব্রেকফাস্ট খাওয়া হয়েছে। চৌধুরী সায়ের নূর অতিখি-২ৎসা, তাঁর বাড়িতে মাওয়াদাওয়ার এলাহী বন্দোবস্ত। সকালেই চায়ের সঙ্গে ছোট, বেকন, মামালেড আর যাঁটি ক্ষীর খাওয়ালেন, তারপর বললেন, চলুন, আমার সঙ্গে। খনির মধ্যে ভাববেন তো। খনিতে নামার ব‍্যাপারে আমার খুব উৎসাহ। খনি অঞ্চলে বেড়াতে এসে একবার অন্তর ভূগর্ভের অন্ধকার না-দেখার কোনো নানে হয় না। মৃত্যুর পর ােয়া নরকে মানোয়, অতরাং তার আগেই একবার পাড়ালের কাছাকাছি ঘুরে আসা যাক। চৌধুরী সাহের এখানকার চারটে খনির এজেন্ট অর্থ এই বিস্তীর্ণ এলাকার দণ্ডমুণ্ডের বকলন অধিকর্তা। মালিকের অনু- পস্থিতিতে প্রতিনিধি হিসেবে তিনিই এখানকার সব। একদিন আমার এক বন্ধুরে কথায় কথায় বলছিসুম, আমার কিছুদিন খনি অঞ্চলে গিয়ে ধারতে ইথো করে খুব। বস্তুটি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, চলে যা না। আমার এক মাসতুতে। দাদায় আণ্ডারে চারটে গনি আছে, চিঠি লিখে দিচ্ছি, চলে যা। সেই চিঠি নিয়েই এখানে আসা। চৌধুরী সাহেব ব্যস্ত মানুষ, কোলিয়ারি ছেড়ে বাইরে প্রায় যাওয়াই হয় না-অনেকদিন পর গহয়েছ লোক পেয়ে তিনি পুণী। হয়ে ওঠেন। অমায়িক, হাবিবুণী মান্তব-সাহিত্য-শিল্পেও উৎবার আছে, শরীরটাও মঙ্গতে।

পৃষ্ঠা:১২

গাদে নামব সর ঠিকঠাক মাথায় সাদা রঙের হেলমেট পরে নিয়েছি, কোমরেও চওড়া কেন্ট লাগানো, ব্যাটারি-হাতে জোরালো উচ-চৌধুরী সাহেব নিজে আমার সঙ্গে নামবেন, এমন সময় একটা দূরপাল্লার টেলিফোন এলো। চৌধুরী সাহেব বললেন, তা হলে আর একটু বস্তুন, আর এক কাপ চা খেয়ে নিন বরা, আমি টেলিফোনটা সেরে নিচ্ছি। সেই থেকে আরও দেরী হয়ে গেল। টেলিফোন শেষ হয়েছে, এমন সময় আর্দালি এসে খবর দিল, সেই চারজন লোক আবার দেখা করতে এসেছে। ‘সেই চারজন’ শুনেই বিরক্তিতে চৌধুরী সাহেবের মুখ কু ঢকে গেল, বিড়বিড় করে কি যেন বললেন, আদালিকে কিন্তু বললেন, যাও ডেকে নিয়ে এসো। খানার দিকে চোখের এমন একটা হতাশ ইঙ্গিত করলেন, যার অর্থ, আরও খানিকক্ষণ বলতেই হবে। ভেবেছিলুম, হোমরা-চোমরা কেউ হবে, কিন্তু সেই চারজনকে দেখে আমি হতাশ হলুম। চারজন অতি সাধারণ ঘেঁয়ো লোক- একজন ছোকরা আর তিনজন বুড়ো, বুড়োদের মধ্যে একজনের গায়ে ফতুয়া আর চোখে গোল চশমা-নিকেলের ফ্রেম, বাংলা নাটক এবং সিনেমায় গ্রাম্য কুচক্রী বদমাইশদের চেহারা যেমন থাকে সেই রকম তারা এসে বললো, স্নার সেই জমির ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে এলাম। চৌধুরী সাহেবের মুখের বিষক্ত ভঙ্গি তখন সম্পূর্ণ অন্তর্হিত হয়ে গেছে, হেসে বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, বহুন বস্তুন, এই রঘুয়া, বাবুদের চেয়ার দে। চা খাবেন তো খোল চশমা বুড়োট বিগলিতভাবে বললো, না, জার। আপনি ব্যক্ত লোক, বেশী সময় নই করবো না-আমাদের সেই জমিতে জল টাকার ব্যাপারে চৌধুরী সাহের বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, সে সব কথা হবে। আগে হা

পৃষ্ঠা:১৩

খান। ডা থেতে আগরি কি। এই রঘুয়া- আমি এক পাশে চুপ করে বসে সিগারেট ধরালুম। লাফা করলুম দিদয়াল সত্যিই অনেক বদলে গেছে। চৌধুস্ত্রী সাহের তিন হাজার টাকার মতন মাইনে পান, ফুলবাগান সমেত বিশাল কম্পাউচ দিয়ে খাঁর বাড়ি, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্ম হ’খানি মোটর গাড়ি। তাকে কেউ চৌধুরীবাবু বলবে না, বলবে চৌধুরী সাহেব। এই সব সাহেবয়া তো চিরকালই এ ধরনের গেঁয়ো লোকদের তুই-ডুকারি বলে কথা বলেছেন, হারামজাদা, শুয়োরের বাচ্চা-এই সব আদবের সম্বোধন করেছেন। চেয়ারে বসানো? চা খাওয়ানো। স্বপ্ন বলে। মান হয়। শুধু যে চৌধুরী সাহেবই ওদের চেয়ারে বসিয়ে চা খাওয়ানোর জন্ম ব্যস্ত, তাই নয়, ঐ হেঁজিপেডি গেঁয়ো লোকগুলোও দিয় চেয়ারে বসছে একটুও আড়ই বোধ করলো না, অবলীলাক্রমে চুমুক দিলো চায়ের কাপে-একজন আবার আর্দালির দিকে চেয়ে বললে, যার একটু চিনি দাও হে। ঠিক মিঠা হয়নি। বীয়ে শুচ্ছে তা শেষ করে তারা বক্তব্য শুরু করলো। গাঁয়ের অশিক্ষিত অর্ধনগ্ন লোক হলেও তেমনটি আর হাবাগোবা নেই, বেশ অছিয়ে কথ্য বলতে জানে-এমন কি হ চারটে ইংরেজি শব্দও বাবহার করে। রন্ডাস্কটি এই। ওরা কোলিয়ারি সংলগ্ন আমের চায্য। জোলিয়াতির বয়লার থেকে বিষাক্ত গরম জল ওদের জমির ওপর দিয়ে গড়িয়ে গেছে, তাতে জমির ফসলই শুধু নষ্ট হয়নি। জনি একেবারে চাষের অযোগ্য উনর হয়ে গেছে। সেইজন্দ্র ওরা কমপেনসেশন যায়। সেই স্কুল পুকুরে পড়ায় পুকুরের মায়ও ময়ে গেছে। স্বতন্যা ওদের মহা সর্বমাশ, ওরা যাবে কি? খয়া ক্ষতিপূরণ চায়-তার অন্তত নেয়ায় কম নয়। চৌধুয়া সাহেবের বরুনা, গরম জল গড়িয়ে গেছে ঠিকই, সেই জল ফসলের গোড়ায় লাগলে ফসলও মরে যেতে পারে-কিয় এ

পৃষ্ঠা:১৪

জল মোটেই বিষাক্ত নয়, ঐ মূল শিশিতে ভবে ডিষ্টিলুগু ওয়াটার। হিসেবে বেচা যায় পর্যন্ত। সুতরাং জমি নই হয়ে যাওয়ার কথাটা বাজে, পুকুরে মাছ মরে যাবার কথাটা গুজব-এখন ক্যানাল কেটে দেওয়া হয়েছে- এখন সমক্ত জমির ওপর জল হড়ায় না-এবা পুকুর পর্যন্ত পৌঁছতে পৌছুতে জল ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ঐ জলকে বিষাক্ত বলার কোনো মানে হয় না। নিকেল চশমা বুড়ো বললো, না স্নার, জমির দাসগুলো পর্যন্ত একেবারে হলদে হয়ে গেছে। বেই মান মুখে দিয়ে একটা গরু।.. চৌধুরী সাহের ওর বাক্যের মাঝপথেই খামিয়ে দিয়ে বললেন, মরে গেছে তো? গরুটা ঘাস মুখে দিল আর ধপাস করে মরে পড়ে খেল। তাই না? শুনেছি আমি সে গল্প। কিন্ড সেই মরা গরুটা কে দেখেছেন জাপনাদের মধ্যে। কেউ দেখেছে। -মাজা ভার, গদাই- -সদাই বলেছে তো? জানি, তাও জানি। গদাই-এর নিজের কি কোনো গরু আছে। আপনাদের সাবা গাঁয়ে এক মাসের মধ্যে একটাও গরু সর্বেনি-আমি খবর নিয়েছি। গদাই তো বলবেই। সে অমুর পাটির লোক-সে তো চায়ই সব সময় একটা হাঙ্গামা বাধাতে-সে আবার আজকাল লীডার হচ্ছে।। তাহলে আমাদের ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটার এবার একটা ফয়সালা করেন। মুখ থেকে পাইপটা সরিয়ে চৌধুরী সাহেব এবার উঠে দাঁড়ালেন। বেশ আবেগের সঙ্গে বলতে লাগলেন, আপনাদের যদি চায়ের জাত হয়ে থাকে-তবে তার ক্ষতিপুরণ কম্পানি নিশ্চয়ই দেবে। স্থানীয় সোকের অনুবিধে করে কম্পানি ব্যবসা চালাবে না। কিন্তু, আমি একটা করা বলছি শুনুন। এই যে জমি নষ্ট হয়ে গেছে-এ জরুর ছড়াবেন না। ঐ জমি আবার চাষ করুন। আমাদের দেশে এখন আরও খায়ের দরকার। আমি নিবের পকেট থেকে

পৃষ্ঠা:১৫

অপেনাদের বীজ খানের খরচা দিচ্ছি বেয়লারের জল আমি অনায়াসেই অন্তাদিকে ঘুরিয়ে নদীতে ফেলে দিতে পাবি। ভিস্ত আাগদাদেরই চাষের সুবিধের জর ঘন্টায় চারশো গ্যালন করে জল বিনা পয়লায় পাবেন-নেই জল পুকুরে জনিয়ে যদি সেচের কাজে লাগান- -ও জল কেউ ছোঁবে না। সবাই জানে, ওতে বিয় আছে। -বিষ আছে। চলুন আপনাদের সঙ্গে আমি যাচ্ছি-আনি জে আপনাদের সামনে সেই জল খেয়ে দেখানো কেউ মার কিনা-আনারও তো প্রাণের দায় আছে। না কি নেই। গাঁয়ের গোকে আমাদের পাঠিয়েছে, আপনি ক্ষতি পূরণের দাবাটার কথা বলুন সার। জমিতে আর ফসল হবে ন দেখনৎ করে রক্ত গর যার করে ফেরলেও কিছু হবে না- ব্যাপারটা অতায় ঘোরালো। আনি বাইরের লোক, আমার কোনো কথা বলা উচিত নয় বলেই আমি চুপ করে এইলুন। মনে মনে ভাবতে লাগলুদ, খানি কোম্ দলে? কোন পক্ষ আমি সমর্থন করবো। চৌধুরী সাহেব য়ে যুক্তি দেখাচ্ছেন, তা কি পুরো সত্যি? কমপেনসেশনের কথাটা এড়িয়ে গিয়ে তিনি ভার দেখাচ্ছেন যেন কিনি ওদের উপকার খরার জঙ্গই ধাপ্র। কিন্তু কোথাও একটা গোলমাল আছে। কমলেননেশনের টাকা একবার দিলে কি বার বার দিতে হবে। জল সরাবার সত্যিই কি ঋন্ন উপায় আছে? এ কথা ঠিক, চৌধুরী সাহেন কোম্পানির স্বার্থ টেনেই কথা বলবেন। খোল্ডানি তাঁকে দিন হাজার টাকা মাইনে দিচ্ছে-কি এমনি এমনি। লোকজলোকে আপনি বলা, চা খাওয়ানো-এ সবই হয়তো কৌশল, সহজে ভাজ হাসিল করার চেষ্টা। একটা জটিল সংস্থার সহজ মীমাংসা করতে পারসে তিনি মালিকের কাছ থেকে বাহবা পাবেন- সেইজয়ই কি দেশের খায় সনস্তার উল্লেখ করে তার গলার ওরকম আবেগ জুটেছে? আমি চৌধুরী সাহেবের পক্ষে নিশ্চয়ই নই। চৌধুরী সাহেব

পৃষ্ঠা ১৬ থেকে ৩০

পৃষ্ঠা:১৬

দেখছেন মালিকের স্বার্থ। যে মালিক নিকর্মীভাবে রাজস্থান বা গুজরাটে বসে থেকে মোটা মুনাফা ভোগ করছে। খামি কেন তার পক্ষে যাবো। চৌধুরী সাহেবের আত্মীয় আমার বন্ধু, ভার চিঠি আমি নিয়ে এসেছি-এবং মামি লিখিটিখি শুনে তিনি আমাকে খাতির করছেন। কিন্তু বিনা গুপারিশে যদি আবতুন, উনি আমাকে নিশ্চিত পাত্তাই দিতেন না। আমি একজন সাধারণ লোক-আমি কেন ঐ বুর্জোয়াদের পক্ষে যাবো। আমি কি ঐ গ্রাম্যলোকগুলোর পক্ষে। তাতেও আমার মন সায় দিচ্ছে না। স্পষ্ট বুঝতে পারতি, বয়লারের জলকে বিষাক্ত বলা ওদের ইচ্ছাকৃত গুজব রটনা। গরু মতাত খবরটা মিথ্যে। লোকগুলোর চেহারা দেখলেই বোঝা যায়-ওরা অলন যার মূর্ত। খেটে খাবো শ্রমের যথার্থ মূল্য চাইবো-এ রকম কোনো মনোভাব শুদের নেই। এখানকার জমিতে কঠিন পরিধান করে ফসল ফলাতে হয়-সেই পরিশ্রম এড়াতে চাইছে। গ্রামের সরল, নির্যাতিত চাষা এদের কিছুতেই বলা যাবে না। আবার জমি চাষ করলেই যদি প্রমাণ হয়-জমি নষ্ট হয়নি-সেইষক্ত চাষের কথা তুলতেই চাইছে না। ভাবখানা এই, এজেন্ট সাহেবকে এবার খুব প্যাঁচে পাওয়া গেছে-ওঁর কাচ থেকে যতটা পারা যায় টাকা খিঁচে নিয়ে তারপর পায়ের ওপর পা দিয়ে খাওয়া যাবে। যদি রাজী না হয় ভা হলে আন্দোলন, প্রশ্রমিক ধর্মঘটের ভয় দেখালেই হবে। না, ঐ নিষ্কর্ম। মতলোববাজগুলোর পক্ষ সমর্থন করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কোনো দলেই যেতে পারবো না। মধ্যবিও, মাঝখাদে ঝুলে থাকাই আমার নিয়তি। আমি সাধারণ আমার বুকের মধ্যে একটা অপ্রয়োজনীয় বিবেক আর গুচ্ছের যুক্তি ঠাসা। সুযোগ গেলে, এঐ দুজনই আমাকে লাথি মারবে। ধুত্তোর। এর চেয়ে খনিতে নেমে অন্তভারে ঘুরলে অনেক বেশী ভালো লাগতো।

পৃষ্ঠা:১৭

8: কি যাবেন বলুন। চা না কফি? আমি রীতিমতন চিয়ার ভান করে বললুম, উ. কোনটা খাওয়া যায়। কিছু কি খেতেই হবে।। হটোর একটার যদি না খাই। অর্ণ। হেসে ফেলে বললো, আপনি না খেতে চাইলে কি আপনাকে পানি জোর করে গাওয়াবো। কেন, কিছু খাবেন না কেন? ঠান্ডা কিছু খাবেন? ঠান্ডা মানে। তারাশ আছে। লেমনেড বা কোকোকোলা আনিয়ে দিতে পারি। যা গরম পড়েতে না, না, ওসব নয়। গরমে গরম জিনিসই আমার পছন্দ। আড্ডা, এক কাপ চাই দিন। শুধু চা কিন্তু, না থাক, বরং কফিই করুন। কিংবা ঢা-কোনটা তাড়াতাড়ি হবে? -আপনি কোনটা খাবেন বলুন না। কতক্ষণ আর লাগবে। -আপনাকেই ধানাতে হবে তো? না লোক আছে! তাহলে। ভরব খান না, এই তো বেশ বসে বসে গল্প হচ্ছে। -যা, আপনি ঠিক করে কিছু বলতে পারেন না। হাড়ান চা করে আনছি। আমারও চা খেতে ইচ্ছে করছে। ঋণ্য চা করে আনতে গেল। গরন জল চাপিয়েই তার ফিরে আসার কথা। ভারণর জল গরম হলে আবার গিয়ে চা ভেদাবে। কিন্তু এলো না। আমি উকি মেরে দরজার কাছে দেখলাম, স্বর্ণা হিটারে কেটলি চাপিয়ে কাল ডিস খুচ্ছে। চা বানিয়ে ওর আসতে

পৃষ্ঠা:১৮

আরও চার পাঁচ মিনিট লাগবেই। আমি সতক ক্ষিপ্র পায়ে এগিয়ে গেলাম টেবিলের দিকে। টেবিলের ওপরেই চাবির গোছা পড়েছিল। আলমারির চাবিটা খুঁজে বার করতে একটু সময় লাগলো। তারপর আলমারির পাল্লায় যাতে ক্যাচ ক্যাচ শব্দ না হয়, সেইজক্স খুব সাবধানে নিঃশব্দে আমি আলমারিটা খুলে ফেললাম। এতক্ষণ চা কফির নামে টালবাহনা করতে করতে আসলে আমি মনস্থির করে নিচ্ছিলাম। পাঠক নিশ্চয়ই আমাকে চোর ভাবছেন। তা ভাবুন, কি আর করা যাবে। অবস্থার গতিকে মামুদ কর কি করে। ঝর্ণার সঙ্গে আমার বন্ধু সুকান্তর দিয়ে হয়েছে। বড়রখানেক মাত্র তাও বিয়ের পর মাসখানেকের জরা এরা সাউথ ইন্ডিয়ার বেড়াতে গিয়েছিল, তারপর ঝর্ণা ছ মাস ছিল পাটনায় ওর বাপের বাড়ি। সুতরাং স্বর্ণার সঙ্গে ভালো করে আমার আলাপই হয়নি। এই তে। কয়েকমাস মাত্র ওরা নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গুছিয়ে বসেছে। শুকান্ত যখন বাড়ি থাকে না। সেই সময়টা জেনেই এসেছি। সুকান্ডটা মহা খুরস্কর ছেলে, ও বাড়িতে থাকলে দুবিধে হবে না। এখন ফ্ল্যাটে শুধু বাচ্চ্য চাকর আর ঝর্ণা। কর্ণা শুধু, সুন্দরীই নয়, মনটাও খুব নরম। এই আমার গুযোগ। পাঠক, নিশ্চয়ই আমাকে চোর ছাড়াও অন্ত কিছু ভাংছেন। তা ভাবুন, কি আর করা যাবে। ঝর্ণা চা নিয়ে ফিরে আসার আগেই আমি আরার জায়গায় ফিরে এসে বসেছি। আলমারি যথারীতি বন্ধ। ভাবি অবার টেবিলের ওপর। চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম, অণুদ। অনেকদিন এমন সুন্দর চা খাইনি। ঝর্ণা জিজ্ঞেস করলো, চিনি ঠিক হয়েছে তো? আপনি ককটা।

পৃষ্ঠা:১৯

চিনি খান জানি না। আমি বললাম, একেবারে নিখুঁত হয়েছে। এক একজনের হাতই এমন থাকে যে সেই হাতে চা বানালে কতটা চিনি কতটা হব কার কোনো প্রশ্নই আসে না- বাধারে বাবা। এই কথাটা যে ছেলেরা কত মেয়েকেই বলতে -আপনাকে আগে কেউ এরকম বলেছে! -বলেনি আবার। -কিন্তু কথাটা পুরোনো হয়ে গেছে কি? শুনলে এখনো একটু একটু আনন্দ হয় না। স্বর্ণা হাসলো। প্রবঙ্গ বদলে বললো, আপনার বন্ধুর কাছ থেকে আপনার অনেক গল্প শুনেছি, আগে খুব রেখা হতো আপনাদের হজনের তাই না। কই আপনি তো এ বাড়িতে বেশী আনেন না। সুকায় আর চায় না যে আমরা এখানে বেশী আসি। -ঠিক মুখে বলেনি-কিন্তু এখন নতুনভাবে ঘরটর সাজিয়েছে, সুন্দরী স্ত্রী বাড়িরে-এখন আর ব্যাচিলর আমলের বন্ধুদের কেউ তেমন পছন্দ করে না। মোটেই নয়। ধাড়ান, ও আজ আনুক তো, আজ আপনার ধামদেই ওকে জিজ্ঞেস করবো। ও এক্ষুণি ফিরবে।

-এখন দিরণে। এখন তো সাড়ে চারটে রাজে। হুকান্তর অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে বাড়ে ৫টা সাতটা হয় না? -অল্পদিন তাই হয়, তবে আজ তাড়াতাড়ি ফিরবে। আজ ইভনিং শো-এ একটা সিনেমায় যাবার কথা আছে। হকায় তাড়াতাড়ি গাড়ি ফিরবে শুনে আমি চকল হয়ে উঠলাম ভাড়াবাড়ি উঠে দাড়িয়ে বললাম, তাহলে আমি আজ চলি। আমার একটু কাজ আছে।

পৃষ্ঠা:২০

বর্ণা অবাক হয়ে বললো, এক্ষুণি যাবেন? ওর সঙ্গে দেখা করে যাবেন না? আজ আর না, আর একদিন…

প্রায় দরজার কাছে চলে এসেছি, এই সময় ঝর্ণা আমার হাতের বইগুলো লক্ষ্য করলো। ভিজেস করলো, আপনার কাছে, এগুলো কি বই। গল্পের বই আছে নাকি-অনেকদিন পড়িনি- আমি একগাল হেসে বললাম, ও আপনাকে বলতে ভুলেই গেছি। দেখুন তো কি ভুলো মন আমার। এগুলো আপনাদেরই বেই। শুকান্তকে বলবেন এগুলো আমি পড়তে নিয়ে গেলাম। কণার মুখখানা মুহুতে কাল্যে হয়ে গেল। লীলায়িত হাতে চূর্ণ অলক ঠিক করছিল, হাতখানা রয়ে গেল সেখানেই। বললো, কোথায় ছিল বইগুলো। আমি বিশু মুখের হাসি মুচিনি। বললাম, আলমারিতে, আপনি যখন চা করতে গিয়েছিলেন, তখন আপনাদের আলমারির বইগুলো দেখছিলাম। অনেকদিন ধরেই এই বইগুলো ঝর্ণা বললো, ও কিন্তু বইয়ের আলমারিতে কেউ হাত দিলে রাগ করে। আমাকে ডিউলি বারণ করে দিয়েছে কারুকে বই দিতে- সে কি আর আমি জানি না। শুকান্তর স্বভাব এতদিন বাদে বর্ণা আমাকে বোঝাবে। এমন কি, বইয়ের আলমারির এককোণে ছোট্ট নোটিশ ঝুলিয়ে রেখেছে, “আমার একখানা পাঁজরা চান দিতে বাজি আছি। বই চাইবেন না।” আমি তবু হা হা করে হেসে বললান, আরে, এদর কথা অঞ্চদের। হয়। শুকান্তত সঙ্গে আমার সে রকম সম্পর্কেই নয়। আমরা হস্টেলে এক ঘরে থাকতাম, এক বিচানায় শুয়েছি, এক গ্রেডে হাড়ি কামিয়েছি- সেই মুহূর্তে জুড়ে। মশমশিয়ে দুকান্ড এসে ঢুকলো। আমাকে

পৃষ্ঠা:২১

যেতে বলতে, কি রে, আজকাল পারাই পাই না কেন তোব। বর্ণা এনিয়ে দহ। হুরায় দেয়া মাত্রই বইয়ের কথা স্কুললো না। বৰা মুখোমার কবে বললো আপনি তা হলে আবর একটু বসুন। এষুধিত যাবেন কি?- খানিকটা বাতে সুকান্ত মখন ঘন ঘন আামার হাতের বইগুলোর দিকে তাকাচ্ছে, আমি নিজে থেকেই বললান সুকান্ত, আমি এই কটা বই পড়তে নিদ্ধি, কবে ফেরৎ দেব ঠিক নেই। ভাড়া দিতনি।। অবান্তর ভূৎখানার কালো হবে গেল। স্বর্ণার দিকে একবার ঘামট করে তাকালো। অর্থাৎ, তুমি বুঝি ওকে আলমারি খুলে দিয়েছো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে কঠিনভাবে বললো, দেখি, বি পি এই: আমি সহান্তে বই গুলো এগিয়ে দিলাম। পাঁচখানা বই, গুকান্ত প্রত্যেকটার পারা উল্টে দেখালো, মুখ তুলে আমার চোখে চোখ রায়ব্যে। আমিও তীয় দৃষ্টিকে চেয়ে রইলাম। হট নেকড়ে বাঘ যেন পরস্পরের খপর লাফিয়ে পড়ার জন্ত তৈরী। বর্ণা আমার দিকে তাকিয়ে বললে, আপনি তাহলে আর একই -বা মা পাবো। সঙ্গে যদি আরও কিছু যাবে, তাতেও আপত্তি স্বর্ণ্য ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া মাত্রই আমি সুকান্তকে ডিসকিন বার বলবান, আাধ টায়, দেশী চালাঙ্কি করবি তো বউয়ের সামনে প্রেসটির পাংকচার করে বর্ণা বরে ফেরা মাত্রই পুরাপ্ত অতিশয় উৎসাহ দেখিয়ে বললে। আরে ওর করা আলাব্য। ও যখন যে এই চাইবে দেবে। ও আমার কত সালের বস্তু ওর সঙ্গে আমি সুকান্তর আলমাধি থেকে যে পাঁচবানা বই বেছে নিয়েছি, তার

পৃষ্ঠা:২২

প্রত্যেকটিই আমার। এর মধ্যে একখানা আবার ব্রিটিশ কাউন্সিলের বই, আমাকে টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। হকায় ডুবায়রদের কাছ থেকে বই নিয়ে চিরকাল মেরে দিয়েছে। বেশী পীড়াপিড়ি করলে সুতান্ত মুখ কাচুমাচু করে বলতো, বইগুলো হারিয়ে গেছে। এখন শুকান্ত বিয়ে করেছে। ওর বট আলমারি কিনে সব কষ্ট সাদিয়ে রেখেছে। এখন এই আমাদের পুয়োগ মাঝে মাঝে ওর বাড়িতে এলে চা খাওয়াও বইগুলো ফেরং নিয়ে যাওয়া।

পৃষ্ঠা:২৩

৫: ছেলেবেলায় ইস্কুলে সবাইকেই প্রায় একাটা রচনা লিখতে হয়। তোমাকে যদি এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়, তাহা এইলে তুমি কি করিবে? আমি লিখেছিলুম, আমি ঐ টাকা দিয়ে একটা ছোটখাটো জাহাজ কিনে খোনো একটা দ্বীপ দেখতে যাবো। খুব বকুনি গেয়েছিলুন মাস্যারমশাইয়ের কাছে। কেননা, ঐসব রচনায় লিখতে হয়, টাকা পেলে ইস্কুল বানাবো কিংবা হাসপাতাল করবো কিংবা গরির হাগীকে দান করবো-এই ধরনের। একেই তো আমার বাংলা লেখা খুবই কাঁচা তার ওপর ঐ রকম স্বার্থপর চিন্তা-সেই রচনায় আমি কুড়ির মধ্যে ছয় পেয়েছিলাম মোটে। কুড়ির মধ্যে আঠারো পেয়েছিল শৈবাল, আমারই পাশে বনতো সে। শৈবাল সবিস্তারে প্রচুর আবেগের সঙ্গে বর্ণনা দিয়েছিল, ঐ টাকায় সে তাদের দেশের গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত একটা রাস্তা তৈরী করে দেবে, গ্রামবাসীর অনেক স্থাগ দূর হবে। যাই হোক, আমি এখনো আমার মত বদলাইনি। কিংবা আমার মত বদলাগার সুযোগ দেবার জন্ম কেউ আমাকে এক লক্ষ টাকা দিয়েও দেখেনি। পুতরাং খামি কল্পনা করতে ভালোবাসি যে, ঐ রকম কিছু টাকা পেয়ে গেলে আমি একটা জাহাজ কিনে ফেলদোই-এবং সেই জায়াদে চড়ে নতুন নতুন দ্বীপ দেখতে যাবো। এক লক্ষ টাকার জাহাজ পাওয়া না-যাক, ছোটখাটো স্টিমার বা মোটর ঘোট হলেও আমার চলবে। এক একজন মানুষের জীবনে এক একটা বিশেষ শখ বাকে-আমার শব্দ কোনো জনমানবহীন

পৃষ্ঠা:২৪

দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া। কোনোদিন এই শখটা মিটবে না বলেই কল্পনা করতে বেশী ভালো লাগে। এইজন্তই, ‘পয়ানদীর মাঝি’র হোসেন মিজ্ঞা আমার প্রিয় চরিত্র। গত সপ্তাহে আমার স্কুলের বন্ধু পরিতোষের সঙ্গে বহুদিন পর দেখা। সে বললো, খবর শুনেছিস? -কি খবর?-তুই শুনিসনি এখনো। সব্বাই জানে-শৈবাল লটারির টাকা পেয়েছে। -কোন শৈবাল। -সেই যে ইস্কুলে আনাদের সঙ্গে পড়তো, আমরা বলতাম মোটা

শৈবাল -হাঁ, হ্যাঁ, তাই নাকি? কোন লটারি, কত টাকা? শৈবাল স্কুলে পড়াশুনোয় বেশ ভালো ছেলে ছিল। বাংলায়। ফাস্ট হতো প্রত্যেকবার। কিন্তু সেজন্ত সে এখন বাংলার অধ্যাপক কিংবা সাহিত্যিক হয়নি, কি একটা ওষুদের কম্পানিতে কেমিস্টের চাকরি করে। স্কুলে এর পাশাপাশি বসতাম আমি অথচ বহুকাল ওর সঙ্গে দেখা হয় না। পরিতোষের সঙ্গে শৈবালের এখনো যোগাযোগ আছে। পরিতোষ বললো, চল, শৈবালকে কংগ্রাচুলেশান জানিয়ে আসি। লটারিতে প্রাইজ পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা, স্বণজন্মা সোক: না হলে পায় না। খবরের কাগজে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই লটারির ফলাফলের বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। সদ্যুৎ প্রত্যেক সপ্তাহেই এদেশে একজন নতুন লাখপতি জন্মাচ্ছে। ভারী চমৎকার লাগে ভারতে। এই রকমভাবে ভারতের পক্ষান্ন কোটি লোকই যদি কোনো একদিন লাখপতি হয়ে যায় তাহলে এক অপূর্ব সোবালিঙ্গাদের জন্ম

পৃষ্ঠা:২৫

হবে। আমি লটারির টিকিট কাটি না-কারণ একথা ঠিক জানি, পজাম কোটি লোকের মার সন্ধ্যাই যদি লাখপতি হয়ে যায়-তাহলে আমি তো আব একা বাকি থাকতে পারি না-তাতে দেশের বদনাম হবে। তখন গভর্নমেন্ট থেকে এমনি এমনিই এক লাখ টাকা দিয়ে দেবে মিশ্চয়ই।। কিছু আদি এ পর্যন্ত কোনো কোনো লটারির টাকা পাওয়া সোনকে গুকে দেখিনি। কার্য প্রাইম তো দূরের কথা, একশো টাকার প্রাইজও চেনাগুনো কেউ পেয়েছে বলে শুনিনি। অচেনা লোকরাই এসব পায়। কিন্তু শৈবাল, আমাদেরই স্কুলে পড়তো যে মোটা শৈবাল, লে প্রাইজ পেয়েছে, তাকে একবার চোখে সেবাও শোভ সামলাতে পারলুম না। গেলুম পরিতোষের সঙ্গে। গিয়ে শুনলাম শৈয়াল তখনো অন্বিত থেকে ফেরেনি। শৈবালের স্ত্রী অলতা চেনে পরিতোষকে। সে আমাদের বসতে বললো। শৈবালের যৌন গঞ্জনা, থাকে ছেলেবেলায় চিনতাম, চা দিয়ে গেল। চায়ের সঙ্গে হট ক্রিম জাংকার। আমি আশা করেছিলাম, এসে দেখবে, সাবা গাড়িতে একটা বিরাট হৈ-য়ৈ চলছে, কটুত আত্মীয়-স্বজন এসেছে, দারুল করা যাওয়া। লাখ টাকা প্রাইজ পেয়েও শৈয়াল অন্বিত যাবে-এটাও আল্য বরা যায় না। অধক্ষা আর গড়নার মুখে কোনো চালা উন্নাতের চিও নেই। অজনা আমাদের সঙ্গে দু’চারটে কথা বলে। বিষয়ে চলে গেল। পরিতোষ ফিরছিত করে আমাকে মানালে খহনা এখটা বখাটে তেলেকে বিয়ে করতে চায় বলে-এতে বাড়ি থেকে বেরুতে দেওয়া হয় না। একটু বাসেই শৈবাল এলো বেশ কিছুটা অবাক, খানিকটা দুষ্টও হতো। নিজের করবে, তা ঘেয়েধিক? আমাদের চা পাওয়া যায় গেছে শুনে ও আর বিতীয়বার অনুযোধ করলো না- শুধু নিজের ভক্ত তা দিয়ে বদলে।। অস্তুযোগ করে জানালো,

পৃষ্ঠা:২৬

অফিসে বড় কাজের চাপ, বোজ ওভারটাইম করতে হয়-গাছে শৈবাল খেল অক্ষিগের জামা-কাপড় ছেড়ে আসতে। পরিতোষ আবার জিবভিদ করে বললে, এতগুলো টাকা পেয়েও পৈবাসারা কিরকম কিছু্যুৎ আছে দেখলি? এতদিন বাদে এলাম, দিল বিনা শুকনো চা-বিস্কুট। -বা টাকা পেয়েছে বলেই কি হ’তাকে জড়াবে নাকি। -এড়ানোর কথা হচ্ছে না। চায়ের সঙ্গে হাদী বিঙ্গাড়া আব বন্দেশ দিতে পারতো না? -চুপ, শৈবাল আর অলকা আয়ছে। কথায় কথায় লটারির টাকা পাওয়ার কথা উঠলোই। শৈবাল পেয়েছে হরিয়ানার থেকেও প্রাইত এক দক্ষ টাকা। অবতা রীতিমতন আপশোধ করতে লাগলো, ফার্ন প্রাইজ না-পাওয়ার অগ্ন। ফার্স্ট প্রাইম ছিল পাঁচ লক্ষ টাকা। একবার লাক কেটে গেলে আর কি পাওয়া যায়। অলক, নাকি আগেই ভেবেছির সি গ্রুপের ঐভিউ এবার ভার্স প্রাইজ পাবে-এর মন বলছিল। বি জুপেরই ঐভিয় কিনোছ-বি গ্রুপ থেকেই এবার ভাল্ট খার সেকেন্ড প্রাইজ উঠেছে-কিন্তু ওদেরটাই হয়ে গেল সেকেন্ড। আইজ পারার পুরো কৃতিওটাই অলখ্য নিতে চায়। শৈবাল বিশেষ আপত্তি জানালো না তাতে, মুচকি হাসতে লাগলো। আমি ভিজ্ঞেস করলাম, টাকাটা দিয়ে কি করবি, কিছু ঠিক -অনেকে পরামর্শ দিচ্ছে, ব্যাঙ্কে দিয়ত ডিপোজিটে রাখতে। বিন্তু আমি ভাবছি-আচ্ছা, এ গাড়িটার কত দাম হবে তে -এই বাড়িটা। না, চিক আইডিয়া মেই। -কচু মোটামুটি একটা খান্দার কর-নীচে একটা হ্যাট

পৃষ্ঠা:২৭

আছে। আর আমাদের এটা। আমরা ভাড়া দিত সাড়ে তিনশো করে-প্রত্যেক হাতে এর গুলো টাকা বেরিয়ে যায়। তাই ভাবছিলুন, এই বাড়িটাই বাদ দিনে ফেলা যায়-কিন্তু বাড়িওয়ালা আনি হাজার টাকা দর বাঁকছে। অবতা বললো, আমি বলছি এ বাড়ি কিনতে হবে না। তার চেয়ে বরং লবণ হতে পাঁচ কাঠা জমি কিনে- শৈবাল বললো জমি কিনে নতুন বাড়ি তৈরী করা কম হাঙ্গামা নাকি? আমি অফিস থেকে ছুটি পাবো না-নিজে দেখাশুনো করতে না পারতে সহাই ঠকাবে। তার চেয়ে এ বাড়িটাই ভালো, পজিশনটাও দেন ভালো আছে। কিন্তু আশি হাজার টাকা, টু মায়। আমি ঝাড়মোডুভাবে উত্তর দিলাম, ভাই, বাড়ির দাম সম্বন্ধে আমায় কোনো আইডিয়া নেই। -আশি হাজার যদি কিনতেই লাগে, তারপর কিছু রিপেয়ার সময়েই হবে, তাতে অন্তত পাঁচ হাজার-ধোনটার বিয়ের জন্ম আর দেরী হয় গ্রীক নয়-তারেও কম করে এরপর কিছুক্ষণ আলোচনা চললো, ভাতে বেশ বোঝা গেল, এক লাখ টাকাও শৈবালদের বাজেট কিছুতেই কূলোচ্ছে না। কোনোজমে টেনে টুনে যদি এক লাখ টাকায় বাজেট করতেও পারে, তাহলে পরবর্তী দিনগুলো ওদের বেশ করে-গুষ্টে টানাটানি করে চালাতে হবে। হাতে কিছু থাকবে না। অলকা এরই মধ্যে পাঞ্জাব ও দিল্লীর লটারির স্থ’খনো টিকিট কিনে ফেলেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, শৈষাল, বগলীতে ভোমের সেই দেশের বাড়িটা কি হলো। -সেখানে আর যাই ন্য। রাস্তাঘাট এর খারাপ যে যাওয়াই এত বয়াট। সাড়া আই লড়ে গেলে খরখকে কাদা-কে যাবে সেভাবে। আমার এক কারা খারেন-

পৃষ্ঠা:২৮

ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আদি পরিতোষকে বললাম, ইস্কুলের রচনায় শৈবাল লিখেছিল যে, এক লক্ষ টাকা পেলে ও নিজের। আমের রাস্তা বানিয়ে নেবে। সে কথা ওর এখন একবারও মনে। পড়লো না কিন্তু। পরিতোষ বললো, কি করে রাস্তা বানাবে এখন দেখছিস না, ওর নিজের বাজেটই এতে কুলোচ্ছে না। আমার তো মনে হচ্ছে, এক লাখ টাকা পাওয়ার ফলে বেচারীকে না না-খেয়ে থাকতে হয় শেবে। তারপর পরিতোষ আবার বললো, যে জিনিসটা আমরা এখনো পাইনি সে সম্পর্কে অনেক কিছু কল্পনা করা যায়। যেমন ধর, পণ্ডিত নেহরু এক সময় বলেছিলেন, ক্ষমতা পেলে তিনি সব ব্ল্যাক মারকেটিয়ারদের ধরে ধরে ল্যাম্প পোস্টে ফাঁসিতে ঝোলাবেন। কিন্তু ক্ষমতা পাবার পর দেখলেন, ল্যাম্পপোস্টগুলো ঠিক মজবুত নয়, কিংবা ফাঁসির দড়ি ঠিক মতন পাওয়া যাচ্ছে না-অর্থাৎ এ সেই বাজেটে না কুলোনোর ব্যাপার। আমি মনে মনে ভাবলুম, ভাগ্যিস আমি এগনো এক লক্ষ টাকা পাইনি। তাই দ্বীপ দেখার স্বপ্নটা আমার এখনো অম্লান আছে।

পৃষ্ঠা:২৯

৬: ভদ্রলোককে দেখে আমার বারবার বিভূতিভূখণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ছিল। বিভূতিভূষণ যদি এই লোকটিকে দেখতেন, তাহলে এাঁর কথা খুব সুন্দর ভাবে লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। আমার সে ক্ষমতা নেই। বিভূতিভূষণের একটি গল্প অস্পষ্ট মনে আছে। মুদির দোকানে সামান্স কর্মচারীর কাজ করতো একজন বুড়ো লোক, দোকান টোকান বন্ধ হয়ে যাদার পর স্নান করে শুদ্ধ হয়ে একটা নিঃালা জায়গায় গাছতলায় বসে কবিতা লিখতো। নিজের কবিকার আবেগে চোখ বুজে ঢুলে ঢুলে পড়তো। সেই কবিতায় ধরতে। কোনো মূল্য নেই, বিষ লোকটির অনাবিল আনন্দের দৃপ্তটি বিভূতিভূষণ অপূর্ব সাবে ফুটিয়েছিলেন। নীলমাধবধান সংস্থা এরকম দরিদ্র নন। পরিবেশ, অবস্থা সব কিছুই আলানা। ওঁর সঙ্গে দেখা উড়িয়ার একটি ছোট্ট শহরে। শহর ঠিক বলা যায় না, যদিও বেল স্টেশন আছে, কিন্তু গ্রামই প্রায়। সুযোগ এলামই মাকে মাথে আমি এখানে ওখানে বেরিয়ে পড়ি, সেইরকমই ঘুষতে সুদতে ভজন-এর কাছে সেই ছোট্ট জায়গাটায় গিয়ে পড়েছিলাম। মুপুরবেলা একটা বটগাছের নীচে বাঁধানো গোল বেনীতে বসেছিলাম চুপচাপ, কিছুই করার নেই, ফেরার ট্রেন সেই সন্ধের পর। আায়গাটায় কোনো হোটেলও নেই। বাজারের কাছে গোটা ঘ’এক মায়ের দোকান-সেখান থেকে ছ’দিনের বাসি পাউকটি ও আলুর দম নিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে নিয়েছি। যে-টুকু

পৃষ্ঠা:৩০

ঘুরে টুরে দেখার ছ’ এক ঘন্টার মধ্যেই দেখা হয়ে গেছে, এখন কিছুই করার নেই, বটগাছের ছায়ায় বসে থাকা ছাড়া। স্টেশনের বেকির চেয়ে এ জায়গাটাই ভালে, স্টেশনে বড্ড বাছি ভদন্তন করছিল। মন্দ লাগছিল ন্য বসে থাকতে, একা একটা অপরিচিত জায়গায় গাছ তলায় বসে থাকলে নিজেকে বেশ পথিক পথিক মনে হয়- যেন আমি পায়ে হেঁটে নিরুদ্দেশ যাত্রার পথে গাছের ছায়ায় ৮’ ৮৩ ফিরিয়ে নিচ্ছি। রেল লাইনের ওপারে গোটা কয়েক শিমল গাছ একেবারে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। কোনায় যেন অনেকক্ষণ ধরে একটা মুহু ডাকছে ‘ঠাকুরগোপাল, ওঠো, ওঠো বলে, যুদ্বুর ডাকে নির্জনতা অনেক বেড়ে যায়। কুচোনো বুরির ওপর ফতুয়া পরা, যাতে ঘড়ি-একজন প্রৌঢ় যেতে যেতে ঘনকে দাঁড়িয়ে আনাকে দেখতে লাগলেন। দেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়েই রইলেন, কোনো কথা বললেন না। আমার অস্বস্তি লাগলো, আমি চোখ অল্পদিকে ফেরালাম। খানিকটা বাদে আবার চেয়ে দেখি, তিনি তখন তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। এবার আমি একটু শামুকভাবে হাসলাম। তিনি এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে আলাপ করলেন। -কলকাতার ছেলে মনে হচ্ছে। -কি করে বুঝলেন? -দেখলেই বোঝা যায়। এদিকে কি করতে আসা হয়েছিল? -এমনিই। -এমনিই কেট এখানে আসে। এখানে কি কিছু দেখার আছে মানুষ কোথার কি দেখতে যায়-তা ভারুকে বলে বোঝানো যায় না। যদি বলতাম, বটগাছের তলায় এই বাঁধানো বেদীটাই আমার। দেখতে ভালো লাগছে, শুধু এটা দেখার জমই এখানে আসা যায়-

পৃষ্ঠা ৩১ থেকে ৪৫

পৃষ্ঠা:৩১

তা হলে কি জ্ঞান বিশ্বাস করতেন। এমনি এমনি ঘুরে বেড়ানো বোধহয় অপরাধ-আনি অপরাধীর মতন মুখ করে রইলাম। সন্ধেবেলায় ট্রেন ধরবো শুনে তিনি জোর করে আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। অনেকদিন তিনি কলকাতার কোনো লোকের সঙ্গে কথা বলেন নি। প্রৌড়ের নাম নীলমাধব সিংহ, বাড়িটা বেশ ছিমছাম পরিষ্কার-ললো মাঠের মধ্যে দিয়ে ছেঁটে গিয়ে বেল নিরালায় সাদা একতলা বাড়ি। গেটের সামনে সাদ্য পাথরে লেখ্য আছে, “সবার ওপরে মানুষ সত্য”। নীলমাধব সিংহের পূর্ব পুরুষ এক সময় বাংলা দেশের লোক ছিলেন, শ খানেক বছর ধরে উড়িয়ার ঐ ছোট্ট জায়গাটায় আছেন। নীলমাধবের পিতৃ-পিতাবহ নাড়োয়ারী মহাজনদের মতন চাষীদের টাকা দাহন দিতেন, তারপর প্রচুর গুদে টাকা উসুল করে নিতেন। বংশানুক্রমিক এই ব্যবধাই ছিল, নীলমাধব ওটাকে গুণিত কাজ মনে। করে, নিজে ঐ পেশা পরিত্যাগ করেছেন। এখন তিনি কিছুই বাড়িতে ছটি মাত্র শোক, নীলমাধব আর তাঁর স্ত্রী-সুসাঙ্গিনী ববিয়সী মহিলা-আমাকে দেখে গাড়িত করার কল্প এহন হাঁসফাস করতে লাগলেন যে আমি বিব্রত বোধ করলুম খুব। আমাকে খাওয়াবার অন্ত তক্ষুনি আাত ॥ড়িয়ে দিলেন, কোনো আপত্তি শুনলেন না। বাড়ির ভেতরটা অরুষকে, আসবাবপত্রগুলো বেশ পরিচ্ছন্নভাবে সাজানো, দেখলে বোঝা যায়, এই প্রৌঢ় দম্পতির অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল কোনো কিছুর অভাব নেই। বাড়িতে খবরের কাগজ আসে নং, নীলমাধব আমাকে জানালেন যে গত সাত-আট বছরের মধ্যে তিনি একদিনও কাগজ পড়েন নি। তবে তাঁর ছেলে একটা ব্যাটারির রেডিও পাঠিয়েছে, সেটাই তাঁর বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের অং

পৃষ্ঠা:৩২

আধ ঘণ্টার মধ্যে ওঁদের পারিবারিক ইতিহাস আমার শোনা হয়ে গেল। ওঁদের হাট ছেলে একটি মেয়ে, সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। একজন ছেলে নিম্নীতে চাকরি করেন, অন্তজন রাউরকেল্লার, মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন একটি গুড়িয়া ছেলের সঙ্গে, তারা থাকে ভূবনেশ্বরে। হই ছেলে এবং মেয়ে-জামাই কত পেড়াগিড়ি করেছে এঁদের নিয়ে যাবার অল্প, কিন্তু এঁরা আর কোথাও যেতে চান না। শহরের হৈ-চৈ এঁদের একদম পছন্দ হয় না-এই গ্রামের অতিষ্ট পায়ে চলা যাক। প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি গাছ তাঁর সেনা-এসব ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। এখানকার যায়যজনও ঐ দম্পতিকে খুব ভালোবানে। নইলে, মাঠের মধ্যে বাঁকা গাড়িতে বুড়ো বুড়ি পড়ে রয়েছে, কোনোদিন তো চুরি ডাকাতিও হয় না। তারপরই আমি একটা গিচিত্র ব্যাপার জানতে পারলুম। কাদের আলমারিতে বেশ কিছু বই আছে, অধিকাংশ বই-ই রামায়ণ-মহাভারত জাতীয়। সময় কাটাবার জন্ত সেগুলোতে চোখ বোলাচ্চিলুন, হঠাৎ দেখলাম, আলমারির একটা বার জুড়ে একটাই বউয়ের অনেকগুলি কপি। একখানা নিয়ে পাতা উল্টে বোলান, বইটির নাম “মানুহই ভগবান” লেখকের নাম ‘অরম সেবক’। আমার হাতে বইটি দেখে নীলমাধর একগাল হেসে বললেন, * বইটা আমারই লেখা। চোদ্দ বছর আগে কটক থেকে জাগিয়েছিলাম। জওহরলাল নেহল, বিধান য়ায়, মদনমোহন মালবং, মেঘনাদ সাহা, বাজাগোপাল আচারি-সবাইকে পাঠিয়েছিলাম একখানা করে। অনেকে সার্টিফিকেট দিয়েছে। তোমাকেও 一 কে-হই জওহরলাল নেহল, বিধান রায় ইত্যাদি পেয়েছেন, সে এই একখানি আমারও পাওয়া নিশ্চয়ই ভাগ্যের কথা। সেরকম কুভার্থ মুখ করেই বইটা নিলান। পাতাগুলো লালচে হয়ে গেছে,

পৃষ্ঠা:৩৩

বড় বড় ভাঙা টাইপে চৌষট্টি পাতার বই। আগাগোড়া পচ। লেখ্য খুবই কাঁচা, ভগবান মানুষ হয়ে জন্মায় না, মানুষই আসলে ভগবান-এই কথা প্রমাণ করা হয়েছে। প্রথম আরম্ভ এই রকম: দেহধান জেন তাই পুণ্য দেবালয় পরিচ্ছন্ন যাদিতে তাহে দেবতার অধিষ্ঠান হয়। ই’ লাইন পড়েই ভক্তিভরে বইটি পকেটে রেখে দিচ্ছিলাম। তিনি বললেন, পড়ো না, পড়ো এখনও তো খাবার দেবার দেরী জৌড়ের উদগ্রীর চোবের সামনে আমাকে বইটির সবকটি পৃষ্ঠা পড়তে হলো। আধ্যল ফাঁকি দিয়েছি, সব পড়িনি-পড়া যায় না, পারা উল্টে চোখ বুলিয়ে গেছি মাত্র। কাঁচা লেখা হোক, তবু বিশ্বয়কর নিশ্চিত। কয়েক পুরুষ ধরে বাংলা দেশের বাইরে আছেন, তবু বাংলা ভাষা তুলে না গিয়ে তার চর্চা রেখেছেন তো, এমটাই বা কম কি। নীলমাধব বললেন, আর একখানা লিখছি। তুমি শুনবে একটু? এখানার নাম দিয়েছি, “নব গীতা”। দেশের এই যে সুরবস্থা, এই যে এর চাকলা, তার কারণ মান্নদ এই জন্ম রহয়, এই পৃথিবীর রহস্ত ভুলে গেছে। মানুষকে এই মায়াময় জগতের কথা আবার স্মরণ। করিয়ে দিতে হবে। সব কিছুই যে পূর্ব নির্দিষ্ট, মানুষ শুধু আশা, আর বছর পাঁচকের মধ্যেই “নব টিভা”র রচনা তিনি শেষ করতে পারবেন। তারপর কটক বিংনা বালেশ্বর থেকে জাসিয়ে বিলি করবেন বিনা পয়সায়। আবার পাঠাবেন ইন্দিরা গার্থী জ্যোতি বগ্ন, মোয়ায়জী দেশাই অভৃতিকে। এবং এই বই পড়া মাত্রই সাহার মন বদলে যাবে, সব হানাহানি বিশৃঙ্খল্য গেমে আবে, মান্নবে হাছনে ভাই ভাই হয়ে যাবে। ৰূপধলে সাদা চালের ভাত খেলাম, সঙ্গে মুগের ডাল, বেগুন

পৃষ্ঠা:৩৪

ভাজা ও বাড়িতে তৈরী ঘি। নীলমাধবের স্ত্রী ভারী যন্ত করে খাওয়ালেন। তারপর খাটের ওপর শীতলপাটি বিছিয়ে দিলেন আমার বিশ্রামের জণ্ডা। আর নীলমাধব অল্প খাটে বসে খুলে ধরলেন চারখানি লাল খেরোর খাতা। আমাকে পড়ে শোনাতে লাগলেন তাঁর “নর গীতা”। ওঁর গ্রীও ভক্তিভরে শুনতে লাগলেন। আবেগে কেঁপে কেঁপে উঠছে নীলমাধবের গলা, উৎসাহে অল অল করছে ছানি পড়া চোখ। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হলে এই দৃষ্ণটি কত সুন্দর লিখতে পারতেন। আমি আর কি লিখবো। আসল ব্যাপার যা হয়েছিল, শুনতে শুনতে আমার দারুণ ঘুম পেয়ে যেতে লাগলো। অথচ ঘুমিয়ে পড়াটা খুবই অভদ্রতা। আবার, খাওয়ার পর এ রকম শীদলপাটিতে বলে ঘুম আটকে রাখার শত্রু। সিগারেট খেতে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু এই রকম কৌঢ় ঘৌড়ার সামনে চট করে। পকেট থেকে সিগারেট বার করতেও কিন্তু কিন্তু লাগছে। এক একবার ঢুলুনি আসছে, আর আমি নিজের পায়ে চিমটি কাটছি। জোর করে চোখ টান করে চেয়ে থাকার চেষ্টা করছি। ঘুমটা তাড়াতেই হবে, কেন না, ঐ কবিতার ভাবা যতই দুর্বল আর পুরোনো হোক-এই এক নির্জন গ্রামে একজন প্রৌঢ় একখানি বই লিখে দেশের সব কোলাহল অনাচার খামিয়ে দেবে-এই আশা, এই দৃঢ় বিশ্বাসের দৃপ্তটি সত্যিই দেখার নতন।

পৃষ্ঠা:৩৫

৭: হনুযবেলা অনিমেষের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম। খানিকটা পরে মনে হল, না এলেই ভালো হতো। অনিমেষ একটা ছোট অক্ষিতে চাকরি করে। এক মাড়োয়ারি জম্পানিয় আমদানী-রপ্তানীর শাখা অফিস। ট্রাও বোকে তিন- চারখানা ওর নিয়ে অফিল, দশ-বারজন কর্মচারী, একজন দাড়োয়ারি বড়বাবু, অনিমেহের কাজ ইংরেজিতে চিঠিপত্র লেখা। সূতি ও হাল নাই, শীত, ক্রীম বারোনাব অনিমেষের পায় কোছল জুতো কীতে একটা খোলানো ব্যাগ, পান্ত লাজুক প্রকৃতির। ভেবেছিপুম অনিমেষের অভিবট। নিদ্রিদিলি হবে-এই শীতের মনোরম হপুরে কিছুক্ষণ গল্প করা যাবে। আমি ভুপুরবেলা একাকীর একেবারে সইতে পারি না। আর অনিমেষণ, ভিড়ের মধ্যে যা অনেক বন্ধুর মধ্যে একেবারেই কথা বলতে পারে না-কিন্তু একা-একা দেখা হলে অনেক কথা বলে। ও আমাকে দেখে উচ্ছ্বাসিত মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, আয়, একটু বোস-আমি ততক্ষণে হাতের কাজটা নেয়ে নিই। তারপর। চা পারি তো। চা আনতে পাঠিতে অনিমেষ কি একটা চিঠি শেষ করতে লাগলো। মাসছ এক ওকে দেখিনি, মাত লক্ষ্য করসুন, ওর মুখ চোর যেন কিছুটা শুকিয়ে গেছে। ক্রমশই শুকিয়ে যাচ্ছে-গত সাত-আট বছর বয়ে বেগছি। আামারই সমান বয়েস-তবু ও

পৃষ্ঠা:৩৬

মুখের চেহারা আমার চেয়ে অনেক রুক্ষ, রেখাময়-সারা মুখের মধ্যে নাকটাই এখন বেশী প্রকট। অনিমেষ নিজের জীবনে একজন খাঁটি ব্যর্থ-মাহব। আবি আমার নিজের ব্যর্থতার কথা আমি না, কচিৎ দৈবাৎ যদি নিজের দিকে তাকিয়ে আমি বুকের মধ্যে একটা পরিত্যক্ত পুকুরের সাই দেখতে পাই- সেই ভয়ে আমি একা থাকতে পারি না-ছুটে ছুটে যাই অক্ত মানুষের দিকে-আমি তাদের ব্যর্থতা দেখায় চেষ্টা করি। আমি অনিমেষের অনেকগুলি ব্যর্থতার কথা আমি। ছেলেবেলায় অনিমেষ ছিল আমাদের মধ্যে পড়াশুনোয় সবচেয়ে ধারালো ছেলে, ইংরেজি পরীক্ষায় প্রতিবার ফার্স্ট হতো। আমরা ভানতুম, অনিমেষ এক সময়ে নামকরা ইংরেজির অধ্যাপক হবে। কিন্তু, কি কারণে যেন বি. এ পরীক্ষায় ইংরেজি অনার্সে ফেল করে গেল অনিমেষ, আর ওর পড়াশুনো করাই হল না। মাণিকতলার দিকে বেশ চমৎকার তিনতলা বাড়ি ছিল ওদের, এর বায়া মায়া যাবার কয়েকদিন পরই জানতে পারলুম, সে বাড়ি নাকি অনেকদিন আগেই বিক্রী হয়ে গেছে। অনিমেষরা এখন আছে বরানগরের এক নড়বড়ে ভাড়া বাড়িতে। সংসারে ছোট ভাই-বোন, মাও বিষয়া পিসী-সকলেই পাখির ছানার মতো হং করে আছে, অনিমেষ সারা মাস গুদের মুখে গাধার এনে দেবে। অনিমেষ রয়া নামে একটা মেয়েকে ভালোবাসতে। কলেজ জীবনে। তখন আমরা ভাংতুম, এ অত্যন্ত বিসদৃশ জোড়-অনিয়মদের মতো বুদ্ধিমান ছেলের পাশে ওরকম একটা থোকা অহংকারী মেয়েকে মানায় না। হয়ার ধারণা ছিল যে গুন্দরী, বিশ্ব আসলে একটা পুথি বেড়ালের মতো চেহারা। দেখা হলেই গড়গড় করে যত কথা বলবো-তার একচী ভথাও না শুনলে-পৃথিবীর কিছুই যায় আসে না। অথচ অনিমেষ ছিল রয়াদই স্বস্ত গোপন উন্মাদ। কোনোদিন রয়াকে কিছু বলতে ভরসা পায়নি, যেদিন মুখ ফুটে বললে। যেইদিনই

পৃষ্ঠা:৩৭

প্রত্যাখ্যান-তখনও অনিমেষ বাবাও তিনতলা বাড়ি হারায়নি। রয়া ওরই সমান আর একটি বোকা-পরাশরকে বিয়ে করেছে- এবং এরাই জীবনে বাকসেসফুল দপ্তরে চাকরি নিয়ে ব‍্যা আার পরাশর এখন আছে দুইটসারল্যান্ডে। অনিমেহ আর কোনো মেরের দিকে চোখ তুলে তাকায়নি। কিন্তু এ সবই তো বাইরের ব্যর্থতা। অনিমেধ তার চেয়েও বেশী হেরে গেছে। অনিমেষের চেহারার কোনো খুঁত ছিল না- দীর্ঘ চেহারায় স্বপুরুষই বলা যায়, কিন্তু ক্রমশ ও ভিড়ের যে- ঝোনো লোক হয়ে গেল। কোনোদিন ও কবে দাঁড়ালো না।। প্রথিণীতে ও একটি দারিও আদায় করে নিতে চেষ্টা করলো না। কোনো গণ্যমাক্ত লোকের সঙ্গে পথ দিয়ে যাবার সময় আমি যদি ঘুরে অনিমেসকে দেখি, আমিও হয়তো ওকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে বাবার চেরা করবো। ভিড়ের মধ্যে নিশে থেকেই হয়তো অনিমের একদিন অগোচরে অনুপ্ত হয়ে যেতে চার। অনিমেয় বললো, আর একটু বোর, হয়ে গেছে, আমি চিঠিটা ছাইলে নিয়ে খাদি। এর জামার হাতা ঢল ঢল করছে, মনে পড়লো, এক সময় সৌখিন অনিমেষ সোনার বোতাম বাগহার করতো। ওরা অদিসমবটা ছোট, আরও ছটো চেয়ার আছে-একটি চেয়ারে কোট রাখা, অঙ্কটি খালি। দাত, কিছুক্ষণ নিরিবিলিতে গল্প করা। ভাবে।দিবে এলেও বললে, টাইপিস্ট আসেনি আজ। চিঠিটা জরুরি। ছিল-তা আমি আর কি করবো।নিজেস করলুন, তোর বাড়ির সব কেমন আছে। ও স্মিত হেসে বললো, ভালোই। বুঝতে পারলুন, এই যে ভালো কথাটির সঙ্গে একটঃ ‘ই’ যোগ করে দেওয়া এবং স্মিত হালি-এর পিষনে অন্তত আছে মায়ের

পৃষ্ঠা:৩৮

বাতের বাধা, ছোট বোনটার ঘর, পিসীমার চোখ অপারেশন করাতে হবে-ইত্যাদি। এগুলিরই সংক্ষিপ্ত রূপ, ভালোই। আমি জানি অনিমেষ যবন মরে যাবে তখন মরার ঠিক আগের মুহূর্তে যদি শুকে। জিজ্ঞেস করা হয়, কেমন আছিস, ওর যদি উত্তর দেবার ক্ষমতা থাকে তখন, তবে অনিমেষ নিশ্চিত তখনও বলবে স্মিত হানি হেসে, এই একটু মরে যাচ্ছি আর কি। আবেশ, উত্তেজনা অনিমেষের জীবন থেকে একেবারে অন্তর্ষিত হয়ে গেছে। সুতরাং, কি কথা শুরু করবো। আমি চাই, আলগাভাবে ফিস থেকে গঙ্গা দেখা যায় দেখছি। -হ্যা, মাকে মাঝে জাহাজের বাণীও শোনা যায়। এ বাড়ির ভালে উঠলে দেখা যায় অনেক দূর পর্যন্ত। শীতকালের রোদ্দুরে দাড়িয়ে গঙ্গা দেখতে ভালো লাগে -১ল না, ছাদেই যাই। নাকি, অসুবিবে হবে তোর -নাঃ অসুবিধে কি। চল এই সময়ে ঘরে একটি লোক ঢুকলো। বলে দিতে হয় না, এই সোকটিই এ অফিসের মাড়োয়ারী বড়বাবু সান্ডের দুট হাতে সোনার ব্যান্ডের ঘড়ি। কিন্তু বিশাল ছুঁড়ি ও মুখে পানের দাগ- দশিত পদশব্দ-বড়বাবুর এই চিহ্নগুলিও আছে। লোকটির বাংলা জ্ঞান নিখুঁতি। আমাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অনিমেষকে দিজেন করলো, চ্যাটরকি বন ফেরাল মেটালের সেই চিঠিটা অনিমেম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললে এখুনি পাঠিয়ে সাত। -সেটা তো গতকালই পাঠিয়ে দিয়েছি। আপনি এই করে দিলেন

পৃষ্ঠা:৩৯

-আমাকে এয়েন্টরা ফোন করেছিল-আমি বলতে পারলুম নং আমার প্যাডে লিখে দিয়ে আদবে তো। -আপনিই সই করলেন কিনা- -আমার সাধায় বৃহৎ কাম ঘোরে। একটা চিউঠির কথা মাধায় ভরে রাখলে চলে না। প্যাড আছে কি জন্মে। ডেপুটি কন্ট্রোলারের চিঠিটাও হয়ে গেছে কাল। -না, ওটা আজ লিখেছি। কিন্তু টাইপিস্ট আসেনি। এবার কি কারবারটা ডকে তুলবো। কেন আসেনি কেন? -আপনার কাছ থেকেই ছুটি নিয়েছে গুদলাম- -টাইপিস্ট ছুটি নিয়েভে বলে চিঠি যাবে না? ডেপুটি কন্ট্রোলার সে কথা বুঝবে -হাতে লিখে পাঠাবো। -আমাদের কারবারের কি প্রোয়জ নেই যে হাতে লিখে চিঠি যাবে। চিউঠিটা আমই যাওয়া সরকার। -আমি তো টাইগ জানি না। টাইগ আবার জানা আর না-জানা কি। একটু সময় বেনী লাগবে। বাজে গল্পসন্ন না করে চিঠিটা টাইপ করে ফেলুন। যদি দেরী হয়ে যায়, ওভারটাইন নিয়ে লেবেন। যান। লোকটা আমার পায়ের শব্দ করে চলে গেল। লোকটার অসম্ভব জড়তায় এবা অভরতার আমি খুবই রেগে উঠেছিলুন-কিন্তু গুনিয়ার এক মানুবের বিরুদ্ধে রেগে ওঠার আতে যে বন্ধুর অফিসের বড়বাবু। বিরুদ্ধে আর রাগ দেখিয়ে লাভ কি-এই ভেবে চুল করে বসেছিলান। ঐ বরন বাক্যালাপের পরই আমি চলে যাবার অল্ল উঠে দাড়িয়েছি- অনিমেষ ও সব সন্ন করেও এখানে হানি মুখে চাকরি করবে- বিও আমার এসব নম্র করার দরকারটা কি। কিন্তু অনিমেক আমার হাতটা চেপে ধরে বললো, আর একটু বোস।।

পৃষ্ঠা:৪০

নিজেই পাশের ঘর থেকে টাইপরাইটারটা টাইপরাইটারটা নিয়ে। নিয়ে এলো ঘাড়ে করে। সেটাতে কাগজ পরিয়ে টকাটক্ শুরু করলে।। আমি এই হুপুরবেলা টকাটক শোনার জন্ত আসিনি। একটু অধৈর্য হয়ে বললুম, তুই কাজ কর, আনি চলিয়ে। -বোস, আর এক কাপ চা খেয়ে যা। আমার সত্যিই অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো। অনিমেবদের অফিসে হয়তো এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আমার সামনেই অপমানিত হয়ে অনিমেষ নিশ্চয়ই বেশী গচ্ছিত হয়েছে। এখানে আমার না আস্যই উচিত ছিল। অনিমেষের মুখ কিন্তু মাগের মতই প্রশান্ত, নির্বিকার। থাকতে না পেরে বললুম, তুই জীবনে আর কত সহ্য করবি। মানুষের বাজে এত ছোট হতে হতে তোর আর মহুয়ত্ব কি থাকবে? -কার কাছে ছোট হলুদ। ঐ বাজোরিয়ার কাছে। ওর কাছে আর অপমান হতার কি আছে? ও তো আর বেঁচেই নেই।। -কি বলছিস অনিমেষ টাইপরাইটার থেকে মুব ভুলে সেই রকম স্মিত হেসে বললো, সত্যি ও লোকটা আমার সামনে আর বেঁচে নেই। অনেকদিন আগেই আমি ওর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছি। তারপর আদিই ফাঁসি দিয়েছি ওর। ওর চরম নিবুদ্ধিতা এরং বুনো শুয়োরের মতো গোচাতুনি দেখে আমি ঠিক করেছিলুন, কর আর বাঁচার অধিকার নেই। অনেকদিন আগে, ও যখন আরও বাচালের মতো কথা বলছিল-আমি এই চেয়ারেই বসে থেকে বিচারকের আসবে বসেছিলুম, এর কাদীর হুকুম দিয়েছিলুম শান্তভাবে। তারপর, নিম্নেই উঠে এসে-আমিই তখন জল্লাদ সেজে ওর গলায় দড়ি পরিয়ে ওদে ঝুলিয়ে বিয়েছি। ও তখনও কথা বলে যাচ্ছিল-কিন্তু জানলো না সেই মুহূর্তে এর দাসী হয়ে গেল। তারপর থেকে ওর কোনো কথাই আনার গায় লাগে না। ও তো একটা মড়া-ওর

পৃষ্ঠা:৪১

আয়াত অথার মূল্য বি আমার সবার মুখের দিকে তাকিয়ে ও আধার বললো, দোর অবাক বাবতে! শাস্ত্রে আয়ে, গনি দুর্গ এবং স্মৃতিতই মুতের সময়ে। দেশডিং বা-আমি ওকে নিয়ে সই করেছে-তার প্রখাত ওর দেবে ফেগেছি রলে, যে চিঠি ও মনে থাকে না। ফাইলিন্টকে ছুটি দিয়ে নিতেই স্কুলে গেছে-একি জীবিত মানুষের লক্ষণ? এর কথায় আমার রাধ করবো কি? -চিত, তুই এর বথা অমাপ্ত করতেও পারিস না। কালরাছ থেকে আমি অর্থ গাই। অর্থ মৃতের হাত দিয়ে আপুত আর জীবিদের হাত দিয়ে মাগুক-ভার মূল। একই। তার সঙ্গে মান-এয়ারেঃ প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন যেখানে যদি আমি পরে ভই মাসুম। কিন্তু আমি ওকে ভয় করি না-কারণ, আমি এতে চরম শান্তি দিয়েছি। -তুই এই ভাবে সব মাগ্রহকে দেখিস। -বন। সেদিন গ্রামে একটা পুলিশ ভারী জুতো দিয়ে আমার পা মাড়িয়ে দিল। আমি চেবেছিলাম, সে স্থঃখিত বা লজ্জিত হবে। পাঁচ মিমিষ্ট সময় দিয়েছিলাম। বিছুই হলো না-অক্ষেলও করলো বা। তবে আমি এর একটা পা কেটে ফেলার হুকুম দিলাম। তারপর নিজের বরাত দিয়ে পুচিয়ে পুড়িয়ে সেই ট্রামের মধ্যেই এই একটা পা কেটে দাত দিলাম। ও জানে না। এখনও ওকে দেখি মোড়ের রাখায় লড়িয়ে থাকে সদংগ, কিন্তু ও জানে না- আমার আছে এর একটা পা চিরকালেঃ মতো খোঁড়া-কোনদিন স্বার ধান্যতে মাথার কমতে পারবে না। কলেজে পড়ার সময় রয়া আমাকে অন্তায়াতে অপমান করেছিল। আমি ওকে নির্বাসন ৩৯ দিয়েছি। তা কঠিন সেই মও।-এই তো সেরিন, আমার বাড়িওয়ালা বিষম পাখী ছিল কোনো কথার ভান দিত না। আমি তার আান হুটো কেটে নিয়েছি। লোকটা জানে না-এখনখ মনের

পৃষ্ঠা:৪২

দুষে কাগজ পাকিয়ে কান চুলকোয়, কিন্তু জানে নঃ আমি ওর কনে।। হাটার কেটে নিয়েছি বেধানে ছুটো জজাক্ত গন্ধ আমি স্পষ্ট দামি স্থির দৃষ্টিতে তারিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলুম, অনিমেষের এসর পাগলামির লক্ষণ কিনা। টাইপ সেলিনের ওপাশে-ময়লা। হাকনাট গায় অনিমেষ একবার জোব্বা-পরচুল পরে কঠিন বিচারক হয়ে যাচ্ছে-আবার সে পর-মুতুতে কালো কাপড় পরে খড়লা হাঁকে নিয়ে হয়ে যাচ্ছে নৃশংস জল্লাদ। কে জানে এ সব পাগলামি। কিনা-কিন্তু এই খেলা নিয়ে অনিমেষ শুখেই আছে মনে হল।

পৃষ্ঠা:৪৩

৮: আগে মস্তানি, পিছে পস্তানি। কখাটা নতুন শুনলুন, ভালোই লাগলো। যে লোকটি বললো কখাট, তার দিকে তাকিয়ে রইলুম। খালি গা, কালো তেল চাকে দেন, মুদ্রিত্ব এক পাক কোমরে জড়িয়ে মোটা করে গি’ই বাঁধা। লোকটার হাতে একই। ছোট লাঠি, হাগে ভুলছে। কথাটা ও শাদ্রব উদেশ্যে বলছে বোঝা যায়, নিজেকে সাবধান করছে না। শত্রু অংশ্ব স্তধন অনুপস্থিত। আর একটা নতুন কথাও সেখানে শুনলুন। ‘লাল বল্’। আনতক্ষণ কথাটার মানে বুঝতে পারিনি। দশ বারোজন নারী পুরুষের জটলা, উত্তেজিত চিৎকার, শাসানি, তার মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে, ‘লাল বলট। এই তো এখানে ছিল’, ‘আমি নিজের চোখে দেগেছি লাল বলটা নিয়ে ভেগে গেল’ ইত্যাদি। এতগুলো বয়স্ক লোক সত্যি সত্যিই একটা লাল বল নিয়ে বিচলিত-এটা বিশ্বাস করা যায় না। বাচ্চা ছেলের খেলার জিনিস, চুরির অগাড়া আমি ইন্দ্রনাথকে ভিজেব করলুম, লাল বলটা কি? ইন্দ্রনাথও ঐ একই ব্যাপারে চিন্তা করছিল বোধহয়, হেসে বললো, কি জানি। বুঝতে পারছি না। মাটিত যাওয়ার চাটাইয়ের ওপর হেলান দিয়ে বসেছিলুন হঙ্গনে।। মালদা শহর থেকে আট দশ মাইল হবে, জায়গাটার নান পাণ্ডুয়া।। সেই পাতুয়া-যেখানে রাজা গণেশের রাজধানী দিল, রাজা গণেশের

পৃষ্ঠা:৪৪

ছেলে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে শেষ জালালুদ্দীন নাম নিয়েছিল- তার সমাধিভবন আর রাজ দরবারের ধ্বংসস্তূপ দেখতে গিয়েছিলাম। ঠাঁঠা করছে রোদ, প্রতি পঁচে মিনিট অন্তর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, পিচের রাস্তা এমন চটচটে যে জুতো আটকে যায়-কোনো রকমে চক্কর মেরে আমরা ফিরে এলুম বড় বাঝায়, এগার থেকে কেয় বালুরঘাট যাবার বাদ বা ট্যাক্সী ধরতে হবে। কখন তা পাওয়া যাবে ঠিক নেই। মোড়ের মাথায় একটা ছোট ভায়ের দোকান, সেখানে ছ’ কাল। চারের অর্ডার দিয়ে বালের খোঁজ খবর নিচ্ছিলুম, তা তৈরি করছিল একজন স্ত্রীলোক, সে বলল্যে আগ্রা ভাইয়েরা আপনারা যোদ্দুরে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। আমার ঘরের দাওয়ায় এলে বসুন। মাটর যম, তাই মেয়েটা একটু ঠাণ্ডা, যেখানে আধ-শোয়া হয়ে আমরা হকনে খান মুহুতে মুছতে ঝগড়া শুনতে লাগলুম। এখানে বেই গাল বল নিয়ে আন্দোলন চলছে। যাক্, আমাদের পক্ষে ভালোই তো, সময় কেটে যাবে। অবিলম্বে লাল বলের অর্থ আমরা নিজেরাই বুঝতে পারলুম। বলদকে এখানে বল বলে। কিন্তু লাল রং লাল গরুর বধ্য শুনিনি। মেটে মেটে রঙের গরু হয় বটে। অর্থাৎ মামলাটা গরু ভিতর দিকে মুসলমানদের প্রাচীন বসতি-অদূরে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উন্মান্তদের কলোনি, তার উল্টো দিকে সাঁওতালদের গ্রাম। সুতরাং এলাকাটা যে তপ্ত বিছানা হয়ে থাকবে-তা তো খুবই স্বাভাবিক। আজকের ঝগড়াটা সাঁওতাল আর উদ্বাজদের মধ্যে। মারামারির নিশ্চয়ই অনেক কারণ থাকে-হুপক্ষেরই গরু চুরিটা দেহার ছুতো। উদ্বান্তর। এখানে বিদেশী, কিন্তু পনেরো-কুড়ি বছর কেটে গেছে, অনেকটা শিকড় গেড়েছে, এখন আর সেই আগেকার মতন ভীস্থ

পৃষ্ঠা:৪৫

ভীতু ওয়াপ্রাণী ভাব নেই। এখন তারাও এক কাট্টা হয়ে কষে দাড়ায়, পুরো অধিকার দাবি করে। দূতরা। ডিন পক্ষই এখন সমান সমান-মুসলমান, উদ্বান্ত, দাঁওভাল-এদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বাড়াই বাঁধে, হলক্ষ যখন লড়াই করে-বাকি একপক্ষ তখন চুপ করে থেকে মজা দেবে বেশ বুঝতে পারলুম, আদ সাওয়াল বনাম উত্থাপ্ত একটা ঘোরতর লড়াই বারতে আর দেরী নেই। উদ্বাস্তদের মধ্যে একটা ছেলে, নাম তার লবং, সে শুধু চোর নয়, পুরোপুরি বস্তান। বাবলা গাছে বাঁধা ছিল সাঁওতালদের একটা গরু, সে সেটা শুধু খুলে নিয়ে যায়নি, যাবাওত সময় চেঁচিয়ে বলে গেছে- সাঁওতালরা আবার গরু পুষতে কি? ওরা কুকুর শুদ্ধ। গরু আমাদের ভাজে লাগবে।-কেট একজন তাংক সাবধান করে দিয়েছিল, লখ্য ও গরুতে হাত দিসনি, ওটা হধ্যে মাঝির গরু, হথ্যে মাঝি তুলকালাম করবে নি। লগা নাকি তার উত্তরেও বলেছিল, যা যা। এরকম হ বশটা প্রখো মাঝিকে হাপুর হাটে কিনে বেচতে পারি। বলিষ তাকে বলব ছাড়িয়ে আানকে দেখবো ভার কত হেম্মৎ। লাঙ্গার চরিত্রটা বেশ ইন্টারেছিঃ মনে হচ্ছে। এ নাটকে ভিলেন হিসেবে সে খুব জোরালো। কিন্তু মঞ্চে তাকে দেখা যাচ্ছে না। হমো মাঝিকে দেখলাম, ভিড়ের মধ্যে সে চুপ করে দাড়িয়ে আছে- এই ভর হগুয়েই কিছুটা নেশা করেছে মনে হয়।চোখে রাগ দিয় ঠোটের কোণে ক্ষীণ হাসি-এইসব লোক সত্যিই বিপজ্জনক। খানিকটা শরীর ঠান্ডা হয়েছে, হেলান দিয়ে বসে আমরা হয় বস্তুতে উদগ্রীব বয়ে দেখছি। কখন মারামারি লাগবে। লাগলেই তো পারে-আমরা তাহলে দেখে যোের পারকুন। আমরা স্থজনেই মনে মনে চাইছি। মারামাধিটা ভাড়াতাড়ি লাগুক। আয় মাতামাতি হয়, অধিগ্রতেও হবে-এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কিছুই নেই-মুতবা। এই উত্তেজক দৃশুটা দেখার প্রয়োগ নই করার

পৃষ্ঠা ৪৬ থেকে ৬০

পৃষ্ঠা:৪৬

কোনো মানে হয় না। সাইকেল আছে, ট্রানজিসটার আছে, অনেকের। হাতেই খড়ি, তবু আদিম সমাজ। জমি আর জাতিভেদ নিয়ে লড়াই অনবরত চলবে। সভ্যতা সংস্কৃতি ইত্যাদি যা সব আমরা বলি- সে সবই শহরে ফ্যাশান। হখো মাখি পিছন ফিরে দুর্বোধ্য ভাষায় কি একটা চিৎকার করে। উঠলো। দূর থেকে তার উত্তর ভেশে এলো। সেদিকে আমরা তাকিয়ে দেখলাম। ৫১, এবার জমবে মনে হচ্ছে। জন পনেরো সাঁওতাল জন পায় এগিয়ে এলো, কারুর হাতে ধনুক, কারুর কাঁধে টাঙ্গি-সঙ্গে কয়েকটা শিকারী কুকুর। না সিনেমার দৃষ্ণের মতন। ঠিক নয়, এ সাঁওতালদের খুবই দৈন্ন বৃন্ডক্স-অধিকাংশরই চেহায়। ডিগড়িগে, অয়গুলো প্রথম শ্রেণীর নয় বহুদিন শান গড়েনি। তা হোক-রিফিউজিদেরই না স্বাস্থ্য আর গুপ্ত কত ভালো হবে। এ অঞ্চলে হাত বোমার কুটির শিল্প চালু হয়েছে ভিনা ঠিক জানি না! ছপক্ষ প্রায় সমান সমানই হবে মনে হয়। আর একটাও নতুন গহু শিখলান। বিটকেল। ‘একি ঘিটকেল দেখুন দিনি সাদারা। আমাদেরই বলয়ে। চায়ের দোকানের সেই মালোকটি। তিরিশের হাহাকাছি রয়েল, আঁটে। স্বাস্থা, চোখ হটে। বেশী উজ্জ্বল-জীলোকটিকে দেখলেই বোঝা যায়-শুধু নিজের স্বামীকেই নয়-আশপাশের সকলকে হুকুম করার ক্ষমতা ওর আছে। একটু আগে চায়ের দোকানে এ রকমই তার প্রতলে দেখেছিলাম। দিত এখন বে ভয় পেয়েছে। বারান্দার বাঁশ হতে দাড়িয়ে ফিসফিস করে আমাদের বললো, আনি কারুর সাকে নেই, পাঁচে নেই- আমারই দোকানের সামনে একি খিটকেল শুরু হলো। শুধু মারামারিতেই তো নাটক হয় না-মনস্তত্ব, অমন, নারী চরিত্র-এ-সবও তো থাকনে। এবার সেদিকটা চোখে পড়লো। স্ত্রীলোকটি খুব সংক্ষিপ্তভাবে নিজের অবস্থাটা বুঝিয়ে বললো। ওদের পরিবারটিও উদান্ত। কিন্তু গ্রীলোকটি নিজের বুদ্ধিতে এই উন্নতি

পৃষ্ঠা:৪৭

করেছে। কলোনিতে থেকে চাষবাল করার বদলে সেখান বেরিয়ে এসে এই চায়ের দোকান বানিয়েছে। পাণ্ডুয়াতে প্রায়ই ভ্রমণকারী, আসে- সুতরাং এখানে চায়ের দোকানের উপযোগিতা সে নিজের বুদ্ধিকেই বুঝেছিল। আশেপাশে কোনো চায়ের দোকান নেই-বেশ চালু হয়েছে তার মোবান, পাশে এই মাটির বাড়িটা বানিয়েছে, পিছনে ধান জমি কিনেছে তিন বিথে। তার দোকানে সাঁওতাল, উথাপ্ত, মুসলমান- সবাই মা খেতে আবে। সে নিজের হাতে চা বানায়-সবাই তাকে পুরোদিদি বলে ডাকে। আজ লাল বলবট। চুরি হয়েছে প্রায় তারই দোকানের সামনে থেকে। সাঁওতালরা এবে তাকে জিজ্ঞেসবাদ করছে। সে এখন কি বলবে। একজনের দোবে সরায় দোষ। ঐ হারামজাদা লম্বাটা চোর গুপ্তা, কিন্তু দোষ পড়বে সব রিফিউদ্ভিদের নামে। লথাকে মারকে গেলে অভ রিফিউজিরা দল বেঁধে কথে দাড়াবে অর্থাৎ দাজা হবে সাঁওতাল আর রিফিউজিতে। আর একবার দাঙ্গা শুরু হয়ে গেল-ধাওতালা কি কাকেও মারবে না? সেও তো আসলে ডিফিউমির। এক হাং, এখনই যদি চুপি চুপি পালিয়ে গিয়ে রিফিউজি কলোনির মধ্যে ঢুকে পড়া যার-ভারলে হয়তো প্রাণে বাঁচতে। কিন্তু ব্যাপারটা টের পেলে সাঁওতালরা তো রাগের চোখে প্রথমেই তার দোকান-বাড়ি ভাঙবে। এত সাধের, পরিশ্রমের, কষ্টের গড়া সোকাম। সাঁওতালরা এখনো ভার সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি। আর মরতে, ধোকান-আদ বাঁচাবার অত সে যদি সাঁওতালদের পক্ষ নেয়-চেঁচিয়ে সবার নামে, রিফিউজিদের নামে গালাগালি কায় গেঁচিয়ে, যদি বলে ঐ রিফিউজিরের উচিত শিক্ষাই দেওয়া উচিত রাহলে রয়রো সাঁওতালরা পুষ্ট হবে। বিষ হাজার হোক, বিডিইডিয়া তার ভাত খাই-মাদের নামে ওরকম বলা যায়। আর রিফিউজিরাও এত শক্তিশালী নয়– কথা শুনলে তারাও আজ

পৃষ্ঠা:৪৮

না হোক কাল এবে ঝামেলা করবে না। একি খিটকেল বলুন তো। সত্যি, ‘শিটকেল’ ছাড়া অগ্ন কোন শব্দ দিয়ে ব্যাপারটা বুঝানো যেত না। বন্ধু ইন্দ্রনাথ বললো, খানা নেই এখানে? খানায় খবর দিন না। পুরোদিদির বুদ্ধি কি কম, সে খেয়াল কি তার নেই। চুপি চুপি একজনকে সাইকেল দিয়ে খানায় খবর পাঠিয়েছি কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু তারুর দেখা নেই। দাঙ্গা-হাঙ্গানা শুরু না হলে ই-একজন লোক খুন জখম না হলে-আগে কি কখনো পুলিস আসে। কেট সে রকম দেখেছে কখনো? সাঁওতালদের আলোচনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এবার তারা যুদ্ধে যাবেই বোঝা যাচ্ছে। একজন ডাকলো, এ হুদুরোদিদি, ইদিকে শোন, তু তো দেখেছিস্ উ পালা লম্বাটো— এই সময় পথের দিগন্ত কাঁপিয়ে আমাদের বাস এলো। ইসু, মারামারিটা দেখা হোলো না। ইন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করলুম, কি এই বাসটা ছেড়ে দেবে নাকি? ইন্দ্রনাথ বললো, তুমি বলো কি করবো। আমরা ভূঙ্গনে কেউই মনঃস্থির করতে পারছি না। পরের বাস আবার ভু ঘণ্টা বাদে। এই গরমে আরও ছ ঘন্টা কি অপেক্ষা করা ঠিক হবে? যদি শেষ পর্যন্ত মারামারি না হয়। না আর দেরী করবো না-আমরা হুজনে ছুটে গিয়ে বাবে উঠে বাস একটু দূর যেতেই দেখলাম পথের ওপর আর একটা দঙ্গল। এখানেও কিছু লোয়ের হাতে লাঠি-বোঁটা। এটা রিফিউজিদের দল। পাজামার ওপর হাওয়াই সাট পরা ঐ লোকটাই কি এখা খপাশ থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসতেই এরাও ক্রুদ্ধ চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমরা নেমে পড়ার দুযোগ পেলুম বায়াস উচ্চখাবে ছুটে পালালো। এই সহ মারামারিতে পরের পরের দিন খবরের কাগজে পাঁচ-ব লাইন ধরে বেরোয় মাত্র। নিহতের সংখ্যা দিনের বেশী হলে পনহো- কুড়ি লাইন। কিন্তু রাতে শুবোদিদির মিটবেলের কথা কিছুই খাকে না। কোনো শক্তিমান নাট্যকাহের পথেই শুধু এর অন্তর্ঘ ফোটানো সম্ভব। আমায় যে ক্ষমতা নেই।

পৃষ্ঠা:৪৯

৯: মেয়েদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে, আমার চোখে, যখন তারা বাবল বাতাসের স্রোতের বিপরীত দিকে হাঁটে। হু-হু করছে হাওয়া, চুল এলোমেলো এবং আঁচলটা পিছনের দিকে ডানার মতন উড়দে খাকে, মেয়েরা তখন বদলে যায়, তাদের চোখ মুখ অচেনা মনে হয়। সেই রকম জংক-করা বাতাসের মধ্যে দিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে এক পলক তাকিয়ে বরুণাকেও দামার হঠাৎ পুন্দরী মনে হলো। অজ কোনো সময় মনে হয়নি, একটু পুরুষালি রতনের চেহারা বরুণার, বেশ লম্বা। গায়ের রং ফর্সার কাছাকাছি হলেও রাজপুতানিদের মতন চওড়া হাতের কব্জা এবং নাকটা গুজিয়ার মতন জোড়, আর বোঁচা। অন্ন সময় সুন্দরী মনে হয় না, কিন্তু তখন সেই মুহূতে বরুণাকে মনে হল্যে বত্তিচেল্লির আঁকা বি প্রেসেস’- এর অন্ততনা। আমি বরুণার দিকে পাপ-চোষে আবার তাকালুম। কিছু একটা কথা বলা দরকার, তাই বললাম, দারুণ হাওয়া দিচ্ছে না। বরুণা যেন অন্ত জগৎ থেকে কথা বলছে, সেইভাবে উত্তর দিল, আঃ, আমার ইচ্ছে করে, সমুদ্রের ওপর একটা ছোট ডিঙ্গি নিয়ে। একলা এ-রকম হাওয়ার মধ্যে দিয়ে ভেসে যাই। কথা হচ্ছিল নদীর পাড়ে। পাশেই বিশাল নিষ্প্রাণ দামোদর। ইউনেস্কোর উদোগে একটা প্রোগ্রাম হয়েছিল, গ্রামের অশিক্ষিত চামী-মজুররা কথা বলার সময় কতগুলো শব্দ ব্যবহার করে, সাধু বাংলা তারা কতখানি বোঝে এই সব তথ্য সংগ্রহ করার।

পৃষ্ঠা:৫০

কলেজের কোনো একটা পরীক্ষার পরের ছুটিতে আানি বাই চাল সেই চাকরি পেয়ে যাই। ন’জন ছেলে এবং পাঁচ-জন মেয়ের একটি হল দিলে আমরা আনে গ্রামে খুররুম, ইস্কুল বাড়িতে ক্যাম্প করা হতো। সেই দলের একটি মেয়ে বরুণা, কখন আমরা বর্ধমানের বলানবজ্ঞানে, শক্তিগড় অঞ্চলে। দলের আর চারটি মেয়ে আর চায়শে) মেয়েরই মরন, তারা ছেলেদের থেকে একটু দূরে আলাদা দল মিলে থাকে, লাজুক লতার মতন আড়ে আড়ে চায়, হাসির কথায় চুপ করে থাকে, আবার অভাহণে হানে, অকারণে ভয় পায়, পদে পদে, “হদ কি বিক্রী কাদা, উঃ কি বিচ্ছিরি গন্ধ”। দলের মধ্যে যে- মেয়েটি সবচেয়ে সুন্দরী ছিল-তাকে আমরা ছেলেরা আড়ালে বলডুন, দিল পুঁটুলি, শাড়ি-ব্লাউজে কড়ানো একটা পুটুলির মতনই দেখতে ছিল তাকে। আমাদের বিকাশ মাঝে মাকে মন্তব্য করতো, ইস, সবই যখন লজ্জা, তখন চাকরি করতে আসা কেন? একমাত্র বরুণা ছিল আলাদা, ডাকাবুতো এরনের, অহেতুক লজ্জার বালাই নেই, ছেলেদের সঙ্গে পাশাপাশি হাটছে, ছোটখাটে। খানাখন্দ দেখলে দিব্যি লাফিয়ে পার হচ্ছে, কখনো বা কাদার মধ্যে হাঁটু ডুবিয়ে নীওতালনির মতন হি-হি করে হাসছে। বরুণ্য বলবো, আমি চাকরিটি নিয়েচি কেন জানেন? এই যে বাড়ির রোবরন যাড়াই একা একা বেড়াবার হুযোগ পেলুন। বেড়াতে আমার এত ভালো লাগে। সেই সময় আমার একটা গুরুতর অসুখ ছিল। ঘন ঘন প্রেমে পড়া। ঘন্টায় ঘাট মাইল স্পীডে কোনো গাড়ি ছুটে যাকে, তার জানলায় বসে থাকা কোনো মেয়ের মুখ দেখেও এমন প্রেমে পড়ে যেতুন যে, মনে হতো, একে না গেলে আমি বাঁচবো না। যাতদিন আহারে কচি থাকতো না। স্বতরা। বরুণার সাজে যে আমি প্রেম কতবার চেষ্টা করবো, তাতে আর অশ্চর্য তি। বাকি ছেলেরা যক্ত চারটি নেচের পিছনেই দুরস্তুত, তাদের মুখের একটু হাবি বা

পৃষ্ঠা:৫১

চোখের ঝিলিক দেখনার জন্ম হা-পিত্যেশ করে বলে থাকতো। বরুণাকে ওরা একটু ভর ভয় করতে, ভাঙাড়া বরুণা বেশ লম্ব অল্প ছেলেদের প্রায় সমান সমান-দলের মধ্যে আমি একটু বেশী লম্বা ছিলুম বলে-সামার পাপের বরুণাকে একটু একটু মানাতো। কিন্তু হায় হায়, বরুণার সঙ্গে আমায় এক বিন্দুও গ্রেম হলো না। বলাই বাহুল্য, আমাদের সঙ্গে একজন প্রেড়ে দলপতি ছিলেন- আমরা যে কাদের দঞ্চ এসেছি সেটা সার্থক হচ্ছে কিনা দেখার বদলে-ছেলেরা-মেয়েরা সব সময় আলাদা থাকছে কিনা, এটা লক্ষ্য। রাগাট ছিল যেন তাঁর প্রধান দাচিৎ। আমব্য তাঁকে গ্রান্ত, কাতুন। না, এবং সব থেকে অগ্রায় করবো বরুণা। বরুণ। অনবরক্ত আমাদের মধ্যে চলে আসছে, ঋণ করে যখন তখন হাত এরছে, ইয়ার্কি করে পিঠে কিল, পুকুর পাড়ে পা বুতে গেলে খারে জল ছিটিয়েছে-এমনকি সন্ধের পরও এবে বলেছে, চলুন না, এ গ্রামের শ্মশানটা দেখে আবি। কিন্তু গলার স্বর একটু গাঢ় করে কথা বলতে গেলেই বরুণা চোখ পাকিয়ে বলেছে, এই, ওকি হচ্ছে, জাকানি। ইস, একেবারে পরখর দেখেছি।-না, ওরকম মেয়ের সঙ্গে লেমের কথা বলা যায় না, ওদের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্ব। বরুণার বাড়ির কথা একটু একটু শুনেছিলাম। যৌথ পরিবার, জ্যাঠামশাই বিধম আচারনিষ্ঠ, গোঁড়া বাবা-অধিকাংশ প্রৌঢ় মধ্যবিত্ত যে-একম হয়, কোনো বিষয়েই কোনো জোরালো দতামত নেই, মা বহুকাল হাঁপানিতে পর্য্যাশায়ী, দাদা কাঠের ব্যবসা কেঁদেছে- আরও অনেকগুলো ভাইবোন। অর্থাৎ বরুণাদের বাড়িতে গিয়ে বরুণাকে দেখলে কোনো বৈশিষ্ট্যই দেখতে পেতুন না নিশ্চিত, সব দেয়ের মতনই গুটি গুটি ভালঙ্গ যায়-বাড়ি আসে, নানী-দিদীর সঙ্গে নাইট শো-কে সিনেমা যায়, বাদার বন্ধুরা বাড়িতে এসে সে হবে ঢোকা বারণ। কিন্তু বাড়ির সঙ্গে খুব বোঝাবুঝির পর চাকরি নিয়েছে, আমাদের দলপতি নীতীশ-না ওর কাকার বন্ধু-তিনি ওর

পৃষ্ঠা:৫২

কপুর নয়ত রাখবেন এই পার্থ। বাড়ি থেকে লেই প্রথম আলাদা যেবিয়েতে বলণ, খার চরিত্র আমূল বদলে গেছে, পায়ে পারে এর একতা। বরুণার মধ্যে একটা প্রবল অ্যাডভেঞ্চারের নেশা দেখেড়িলুম। বরুখ্য বলতো, পৃথিবীতে কত জায়গা আছে, আমার ইচ্ছে করে এমা একা ঘুরে বেড়াই। কোনো একটা অচেনা পাহাড়ের চূড়ায় উঠছি, আং ভাবতে যা ভালো লাগে। আমি বললুম, ইস, যেয়ে হয়ে শব কত। বরুণার চোখ ঝলসে উঠতো। ভীর স্বরে বলতো, কেন, মেয়েরা বুঝি পারে না। ছেলেরাই সয় পারে। দেখলুম তো কত ছেলে মেয়েরও আদম। দেখবেন, আমি একদিন আজিকা চলে যাবো, একটা নতুন নদী জিয়া দলপ্রপাত আবিষ্কার করবো। আমি বা-বা-করে হাসতাম। বলতাম, দেখা যাবে। বড় জোর স্বামীর সঙ্গে হই অলপ্রপাত দেখতে যাওয়া কিংবা বাবা-মার সঙ্গে এপারাতাদের নিবেন্ট-এ দেই না। একপা তখন রাগের চোখে হম করে আমার পিঠে এক নিরাশী- সিকা কিল। আত্মব পাহাড়ের উচ্চতা মিসিসিপি নদীর দৈর্ঘ্য এর মুখস্থ ছিল।। হিট ইট সভ্যতার গংসাবশেষ আবিষ্কারের ব্যাপারে একজন সুইডিস মহিলার অভিধানের কথাও আমাকে শুনিয়েছিল। বরুণাও ছেলেমাগুতের মতন কল্পনা করতো, ও নিজেও একদিন মধ্যপ্রাচো কিংবা হিমালয়ের মঙ্গলে বিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলবে।।। সে তার আমাদের দলে বরুণা সত্যিই একটা অ্যাডতেকারের সঙ্গী হয়েছিল। ভরা দামোদরের পাড়ে আদয়া হপুরে এসে থেমেছি। বিধম হাওয়া দিচ্ছে, মেঘলা আকাশ। প্রত্যেকের দশজন করে। প্রার্থীকে ইন্টারভিউ স্বতার কথা, আসবার পথে একটা বাজায় দেখে তা আমরা যেয়ে দেখেছি। শেষ স্টীতের শুকনো যাবোদঃ-বিভ্রাট

পৃষ্ঠা:৫৩

উওড়া-বিদ্ধ বেশির ভাগই বালি দেখা যাচ্ছে, মাঝে মারে জল। আমরা ঠিক করলুম, হেঁটে দামোদর পার হবো। বিভাসাগর মশাই নাকি বর্ষার দামোদর সাঁতরে পার হয়েছিলেন, আামরা শীতের দামোদর হেঁটে রেকর্ড করবো। তখন ‘আওয়ারা’ বইটা সম্ভ বিলিঙ্গ করেছে, আমি আর বিকাশ রাজকাপুরের ভঙ্গিতে হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গুটিয়ে নিলুম। হঠাৎ বরুণা বললো, আমিও যাবো। দলপতি নীতীশ-দা দাঁতকে উঠে বললেন, না, কক্ষনো না, বরুণ্য যাবে না। বরুণা ততক্ষণে আঁচল কোমরে বেঁধেছে, বললো, মাবোই। রীতীশ তা বললেন না বলছি। অনেক জায়গায় কোনর এমন কি বুক জন। বরুণা বললো, তা হোক, দাবি সাঁতার জানি। ঐ তো চাষীর। মেয়েরাও পার হচ্ছে। নীতীশদা বললেন, ওরা ঠিক ঠিকজায়গা চেনে। এক এক জায়গায় দারুণ শ্রোত আছে। বরুণা, যেও না বলছি, তাহলে তোমার বাবাকে আমি নালিশ করতে বাধ্য হবো। বরুণা এবার ঠোঁট উল্টে বললো করুন গে যান, আমার বয়ে গেল। ততক্ষণে বে ঢালু পাড় দিয়ে নামতে শুরু করেছে। প্রথমে বালি, বালির ওপর দিয়ে আমরা তিনজনে ছুটতে সাগলুম। বরুণার শাড়ী হাওয়ায় ফুলে উঠে পত পত করে উড়ছে। খুনীতে ওর মনখানা উদ্ভাসিত হয়। আমারও এমন ভাল লাগছিল যে, আমি লায় মেরে বিকাশকে বাজির ওপর ফেলে দিয়ে হজবে গড়াগড়ি করলুম, বরুণা মুঠোমুঠো বালি আমাদের গায় ছড়ে মারতে লাগলো। পাড়ে দাঁড়িকে বাকি সবাই দেখছে- ওরা ভয়, সভ্য, ওরা মাটিতে গড়াগড়ি দেরার কথা চিড়াই করতে পারে না। একটু পরেই জলের ধায়ার কাছে পৌঁছোলুম। ঠাণ্ডা উলটলে জল- অফাল করে মুখে ছিটোলাম তিনজনেই, তারপর নেমে গড়লাম। বরুবা পাড়িটা হাতে ধরে উচু করে নিল। ক্রমশ ক্রমশ জল হাঁই দাড়াবো-তখন বরুণা শাড়িটা ছেড়ে দিয়ে বলল, বিযুক্ত খে।

সেই জল ছাড়িয়ে আবার বালি-ওপর থেকে বোঝা যায় নাে

পৃষ্ঠা:৫৪

অত চওড়া নদীর খাত। আষায় বালি ছাড়িয়ে জন। এবার জল উক্ত ছাড়িয়ে গেল-ফল ঠেলার বাঁ দাঁ শব্দ, বরুণা আনন্দে একেবারে গল গল করতে, একবার হোঁচট খেয়ে পড়তে গিয়ে আমার হাত চেপে বালো। আমি ওর তাঁর ধরে বললাম, এবার দিই ডুবিয়ে। ও বললো, ইস, আছন না দেখি, আমারও গায় কম জোর নেই।। কোমর। ছাড়িয়ে প্রায় বুক পর্যন্ত ফল। বিকাশ বললো জল আরও বাড়বে নাকি? বরুণা সেকয়া প্রায় না করে উত্তর দিল, এত ভাল লাগছে, আমরা যেন ওপারে কি আছে জানি না যেন একটা নতুন ভাংগায় যাচ্ছি। হাওয়া খুব জোর, অলেও স্রোতের টান লাগল, আর ব্যালান্স রাখা যাচ্ছে না, বিকাশ ভয়ে ভয়ে বললো, হঠাৎ এমায়ার টোয়ার এলো নাকি। আমি কিন্তু সাঁতার জানি না। বলতে বলবেই বিকাশ রমড়ি খেয়ে পড়ল, আমাকে জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো, আমি ললুম, আরে ওকি করছিস। বরুণা বললো, সাঁতার জানেন না তো এলেন কেন। বিকাশ বললো চলো আমরা ফিরে যাই। বরুণ্য বললো মোটেই না। আমার দিকে ফিরে বললো, আপনি তো সাঁতার জানেন, আনুন আপনি আমি দুজনেই যাই। বিকাশ বললো, নিলু, আমাকে আগে এ পাড়ে পৌঁছে দিয়ে যা। আমি পা রাখতে পারছি না। ই চোখ ভরা বিদ্রূপ নিয়ে বিকাশের দিকে, ভাকালো বরুণা। তারপর সাঁতারের ভঙ্গিতে জলে গা ভাসিয়ে দিয়ে বরুণ। বলল, আমি তাহলে একাই চললুম। চাকরিটা ছিল মাত্র তিন সপ্তাহের। শেষ হয়ে যেতে তারপর আর কেউ কারো গোঁজ রাখিনি। শুধু বিকাশের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হয়। কিছুদিন আগে বিকাশ বলছিল, তোর সেই দেবী চৌধুরাণী মার্কা মেয়েটাকে মনে আছে? বরুণা? সেদিন আমাদের এক কলিগের বাড়িতে গিয়ে দেখলুম, তার বউ সেই বরুণ্য। কি চেহারাই হয়েছে। চেনা যায় না-এর মধ্যেই তিনটে বাচ্চা। তার কিছুদিন পর আমিও একদিন বরুণাকে দেখেছিলাম

পৃষ্ঠা:৫৫

হপুরবেলা চলন্ত ট্যাক্সিতে। টাক নাবায় আল-আলু মার্ক। একজন লোক, নিশ্চয়ই বরুণার স্বামী, মুটিয়েছে বলে বরুণার মুখখানাও ভোঁতা ধরনের, সঙ্গে একটা দেড় বছরের ছেলে খুব সম্ভবতঃ হিন্দী সিনেমায় হর্গম পাহাড় কিংবা নির্জন হ্রদের দৃক্ত দেখতে যাচ্ছে। না চেনার কি আছে, এইটাই তো স্বাভাবিক ও সাধারণ ঘটনা! বরুণার কথা আজ আবার মনে পড়ল, কেননা, কাগজে দেখছিলুম আউটি বাঙালী মেয়ে হিমালরে উঠে এটি শৃঙ্গ জয় করেছে। ভাবছি এই খবরটা পড়ে বরুণা খুণী হবে, না গ্রঃখিত হবে।

পৃষ্ঠা:৫৬

১০: বাড়ি থেকে বেরিয়ে কামনা স্বজনের হেবে লুটোপুটি। এক একটা উচ্চারণ করছি আর হাসির দনকে আমাদের শরীর কেঁপে কেঁপে উঠতে। রাস্তার লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে অমিতাভ বললো, জিনিয়াস। ওফ, জিনিয়ায়ই বটে, খানিকটা বাতে, একই সামলে নিয়ে আমরা দুজনেই খুর স্থাপিত হায় পড়লুম। ভারি বীর্যঘাস ফেলে বললুম, বুঝলি অমিত, হেময়দার বাড়িতে আর আসা যাতে না। অনিতাদ বললো, মাধ্য খারাপ। অন্তত পাঁচ-হ বছর না কাটলে আমি আার এ-বাড়ির ধারে কাছে আসছি না।। হেমন্তদা কানপুরে মান আরেক দিলেন, সেখান থেকে ফিরে এযায়ন শুনে যাবি আর অমিতাভ এর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েদিলুম। কিয় ধানপুরে গেলে মানুষ এমন বদলে যায়। হেমন্তদা আমাদের ছেলেবেলার গাঁয়ো। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে দিশে বয়ে গিয়ে আমি যখন অধঃপতনের দিকে বেশ দ্রুত পড়াতে শুরু করেছিবুত হেমন্তদা সেই সময় আমাকে উদ্ধার করলেন। কেনম্বদা তখন অ্যাপ্লায়েড বাইকলজি নিয়ে রিসার্চ করছেন, উত্তর দীপ্তিমান মেহাবা, গুস্পষ্ট বখর-ভিড়ের মধ্যে বাঞ্চলেও হেমন্তদার দিকে সহজেই চোর পড়ে। হেমন্তদা তাঁর বাড়িতে একটা কাঁচি ধাইল করেছিলেন; সেখানে আমাদের ডেকে নিলেন। এগ্রবশ্ববার সান্নিধ্যে এসে আমি মুখ হয়ে গিয়েছিলাম।

পৃষ্ঠা:৫৭

ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য-সবকিছুই হেমন্তদা কত ভালো জানেন, আর কি সরলভাবে আমাদের বুঝিয়ে বলতেন। শিশু ও কিশোরদের মনস্তত্ব বিষয়ে হেমন্তদার নিজস্ব কতকগুলো ধারণা ডিল, সেই অনুযায়ী তিনি আামাদের বিনামূল্যে শিক্ষা দিতেন। সত্যি বলতে কি, আমি অয়ত যথেষ্ট উপকৃত হয়েছিলাম। হেমন্তদাই আমাদের শিগিয়েছিলেন, যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করবে। দিয়ে যা শেষ পর্যন্ত মানতে পারবে না, তা আর কারুর কথাতেই মানবে না-সে তোমায় ঠাকুর্দার বলুক, বা মাস্টারমশাই বলুক বা হেমন্তদাই বলুক। বাড়ির স্টাডি সার্কল বন্ধ ই-এক বছর বাদে অবন্দ্র হেমন্তদার হয়ে গেল, হেমন্তদা বিশ্ববিজ্ঞালয়ের অধ্যাপক হলেন, কিন্তু আমরা কয়েকজন ওঁর অন্তরঙ্গ বয়ে গেলাম। হেমন্তদা বিয়ে করলেন, লতিকা বৌদিকেও আমাদের অনম্ভব ভালো লাগতো। চেহারায় যেমন মানিয়েছে গুজনকে, তেমনি স্বভাবের, লতিকা বৌদির ব্যবহার মধুর কিন্তু ঢাকামি নেই। প্রায়ই বন্ধেবেলা আনয়া হেমন্তদার বাড়িতে আওয়া জম্যভূম, লতিকা যৌদি কড়াইশুঁটি বেটে ডিমের সঙ্গে মিশিয়ে একরকম চপ বানাতেন, তার অপূর্ব স্বাদ, ঘন গন কফি কিংবা চা, এবং ততদিনে আমরা হেনস্তদার সামনে সিগারেট খেতে শুরু করেছি। অমিতাভ বেশ ভালো বশিকরা করতে পারে- পৃথিবীর ফেকোনো বন্ধই তার রসিকতার উপলক্ষ। হতে পারে- দাজ্জার কাঁকে ফাঁকে অমিতাভর রণিকতা শুনে হেমন্তদ্য আর লাতিকা বৌদির বিশুদ্ধ উচ্চহান্ত ধ্বনি এখনো আবার কানে বাজে। লতিকা বৌদির মখন সন্তান হলো, নাসিাংহামে আমরা দেখতে গিয়েছিলাম। কি সুন্দর ফুটফুটে ছেলে।। বিশ্ববিজ্ঞালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে হেমন্তদা বিকিটারি ইনটেলিজেন্স-এর বড় চাকরি নিলেন। সেই সূত্রেই এঁকে ভানপুরে গিয়ে আট মাস থাকতে হলো। কলকাতা ছেড়ে যখন যান, এখন

পৃষ্ঠা:৫৮

ঈদের বাজাটির বয়েগন’ হাস। ফিরে আবার পর আমি আর অমিতাভ দেখা করতে গেলাম। কামপুরে হেমন্তদার যোধহয় তেমন বন্ধু জোটেনি, আড্ডা মারায় শুযোগ দিল না, অফিসের সময় ছাড়া বারাক্ষন যাড়িতেই কাটাতেন। তার ফলে কী সাংঘাতিক পরিবর্তন। হেমন্তদার ছেলেটির বয়েস এখন বছর দেডেক, বেশ স্বাস্থ্যবান, বিয় ভয়ানক একরোখা। অদিতার একটু গাল টিপে আদর করতে গেছে, অমনি প্যা করে শানাই-এর পুরে কেঁদে উঠলো। হেমন্তদা ভাড়ায়াড়ি এলে যেই কোলে তুলে নিলেন, অমনি সঙ্গে সঙ্গে চুপ। হেমন্তয়া যাবরুমে ছিলেন একটু আগে, পা-জামার দড়িটা ভালো করে আঁটেন বি, সেই অবস্থায় ভেলেকে কাঁধে করে ঘুরতে বাচতেন। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ঢেলের কি নাম রাখলেন, হেমক্সয়া। প্রেমন্ত্রণা মুখ ফিরিয়ে জনাব দিলেন, নাম রেখেছি শ্রুতিধর। এমন আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি, তোমায় কি বলবো। যে-কোনো ববা একবার শুনলেই মনে রাখে। দেখবে। বুলবুল, স্বাকু, লিকৃ, সোনা দোদা, বলতো সেই ছড়াটা। জ্যাক অ্যান্ড ফিল, শুয়েন্ট আাগ দি হিলং বলো, বলো? বলো মিন্টু সোনা- ছেলেটা গোল গোল চোখ করে একটুক্ষন তাকিয়ে রইলো। আদরাও উদ্‌গ্রীব, দেড় বছরের ছেলে ইংরিজি ছড়া শোনাবে, এ এক পরমাশ্চর্য ব্যাপার ছেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বিনা নোটিশে আধার শানাই-এর প্যা করলো। হেমন্তদ। দমলেন না। একটু হেসে বললেন, খাৰু, থাক্, আচ্ছা সেই বাংলাটা বলো, ওপারেতে লংকা গাড় রাঙা টুকটুক করে–এইটা বলো, আজ সকালেও যো বললে, কাকু, কাকুরা এসেছেন, শোনাও, কই? ছেলে আবার পার্থームー আমার মনে হলো মেলে ঋতিষয় হতে পারে, কিন্তু কান্নার ব্যাপ্যানটাই তার স্মৃতিতে বাধান হয়ে গেঁথে আছে। অমিতাভ

পৃষ্ঠা:৫৯

বললো, গাত হেমন্তদা, ওর বোধহয় এখন যুক্ত ভালো নেই। হেমন্তারা বললেন, না, না, এই তো একটু আগে হেসে হেলে কত যেসা করছিল। আচ্ছা এইটা ছাখো। হেমন্তদা টাইপরাইটারের ঢাকনাটা খুললেন, ছেলেকে বললেন, শ্রুতিধর বলো তো ‘বি’ কোনটা? ছেলে এবার কোল থেকে ঝুঁকে ঘটাখট টাইপরাইটারের চার পাঁচটা চারি টিপলো, তার মধ্যে ‘বি’ অক্ষরটাও আছে। আমরা বিস্ময়ে হতবাক। হেমন্তদা উদ্ভাসিত মুখে বললেন দেখলে। আশ্চর্য না? খোকন, বলো তো বেড়ালের। ছাত্র কোথায়।ছেলে দেয়ালের দিকে বেড়াল আঁাঁকা ক্যালেন্ডারের দিকে আঙুল।। বাড়িয়ে উং গং বুম বাম সাল্লাল-এই ধরনের কি একটা বললো। আমরা বললুম, সত্যি, কি আশ্চর্য। সারাই যায় না। হেমন্তদা পরিতৃপ্তির হাসি হাসতে হাসতে বললেন, ওর মামা একজন বিরাট ডাক্তার, তিনি তো বলেন, এ ছেলের মধ্যে জিনিয়াসের চিহ্ন আছে। আমি অবশ্ব কথাটা হেসে উড়িয়ে দি। কিন্তু ছেলেটা এমন সব আশ্চর্য আশ্চর্য কাণ্ড করে, এই বয়সের ছেলের পক্ষে ভারাই যায় না সত্যি। দেখবে আর একটা এরপর আমরা দেড় ঘন্টা ছিলুম, অনবরত চলল এইসব, হেমন্তদা ছেলেকে এক একটা অসম্ভব সব ব্যাপার করে দেখাতে বলেছেন, এ বি সি ডি বলা থেকে শুরু করে ভারতনাট্যনের মুক্তা পর্যন্ত, আর ছেলে কখনো মুখ দিয়ে দুর্বোধ্য অাওয়াজ বার করছে শুধু, কখনো কেঁদে উঠেছে তোরস্বরে, কখনো এটা সেটা ভাড়ছে। কোমরের পায়জামার দড়ি আলগা করে বাঁখা, কাঁধে ফেলে-হেমন্তদাকে হান্তাতর দেখাচ্ছে। ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য-এসব প্রবল কোথায় অদৃক্ত হয়ে গেছে, সর্বক্ষণ শুধু ছেলের কথা। যে হেনস্তর) শিশু মনস্তত্বে বিশেষজ্ঞ, যিনি আমাদের যুক্তিবাদী হতে শিখিয়েছিলেন, সেই হেমন্তদাই দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে এমন

পৃষ্ঠা:৬০

আদিখ্যেতা এরছেন-যা দেখে যে-কোন লোকের হানি পাবে। আমরা অতি কষ্টে হাসি চেপে বলে রইলুম। প্রতিকা বৌদিরই অনেক বদল হয়েছে। আমাদের আর চল-উল কিছুই খাওয়ালেন না। চেহারা এবং কথাবার্তা সবই দৌরা হয়েছে। একটু, উনিও হেমন্তবাকে তাল দিতে লাগলেন, ছেলেকে দিয়ে গুড়া। বলবার চেষ্টায় নাকেহাল হলেন, ছেলের যখন কারা ওর মুখখানাও অখন কাঁদো কাঁদে।। ধাইরে বেরিয়ে অমিতাভ আর আমি প্রাণ খুলে হেসে নিখুন। হঙ্গনে ঠিক করলুম, ছেলেটা বেশ বড় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর হেমন্তদার বাড়িতে আসবো না।

সত্যিই চার-পাঁচ বছর আর যাইনি। বঙ্গে খাবার, আমার ঝগড়া হয়ে গেল। কিন্তু এর মধ্যে অমিতাভর প্রায় মুখ দেখাদেনিই বন্ধ অপিরা ছিল আমার বান্ধবী, বেশ ব্যাপারটা জমে উঠেছিল, এক সঙ্গে সিনেমা দেখা, লেকে বেড়ানো টেড়ানো বেশ চলছিল-এই সময় অমিতাভর সঙ্গে ওর আলাপ করিয়ে দিয়েই আমি নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলুম। অমিতাভ চমৎকার রসিকতা করতে পারে, পোষাক পরে সব সময় আধুনিকতম, চলন্ত ডানের জানলা দিয়ে ট্যাক্সি ডেকে নেমে পড়া এর স্বতার। সুতরাং আমার যা নিয়তি- সহ সময় প্রতিযোগিতায় হেরে যাওরা, ব্যর্থ হওয়া-তাই হলো অমিতাভ স্কুল করে অণিভাকে বিয়ে করে ফেললো। ব্যাপারটাকে হাসি মুখে মেনে নেবো-এতখানি স্পোর্টিং স্পিরিট সত্যিই আমার নেই। অমিতাভ, বিশেষ করে গপিতার ব্যবহারে আমি সত্যিই হণে পেরেছিলাম। দিনকতক আনি সিরিয়াসনি দাড়ি রাখার কথাও ভেবেছি। কিন্তু সব স্থঃপর এক সময় পুরোনো হয়ে ফিকে হয়ে যায়। হৃদয়ে সেই ধব পুরোনো নাম পুরোনো দিনের কথা আয় ঢেউ তোলে না। সুতরাং একটা মিউজিক কনফারেলে যখন আমার সঙ্গে

পৃষ্ঠা ৬১ থেকে ৭৫

পৃষ্ঠা:৬১

অমিতাভ আর অপিতার চোখাচোখি হয়ে গেল তখন আর রকে কড় উঠল না। এবং ওরা হয়নে যখন এসে কথা বলতে এলো, আমি মুখ ফেরাতে পারলুম না। এমনকি ওদের বাড়িতে যাবার নেমতন্ত্রও। গ্রহণ করে ফেললুম। ফিটফাট সাজানো সংসার ওদের, স্বানী-স্ত্রী আর একটি আড়াই বন্ধবের মেয়ে। বিয়ের আগে অমিতাভর ঘরটা কি অগোছালোই ২ থাকতো-এখন দেখলে চেনাই যায় না। আরও অনেক কিছু চেনা যায় না। মেয়ের নাম রেখেছে পূর্ণ, বেশ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, ঠান্ডা, কাঁদে না। মুখখানা অপিতার মতনই মিষ্টি। অনিতাক্ত আর আমি অনেক পুরোনো দিনের কথা ঝালিয়ে নিলুত। প্রায় চার বছর দেখা হয়নি। কথার মাকে মাঝে মেয়েটি এনে বাধা দিচ্ছিল। বাচ্চা ছেলে – মেয়েদের কতরকম প্রশ্ন, কতরকম গৌতূহল-যেগুলোর জবাব না দিলে চলে না-গুতরাং বারবার আমাদের কথা বাধ্য পাচ্ছিল। নিজের মেয়ের এসব প্রশ্নে বাবারা হয়তো বিরক্ত হয় না-কিন্তু আবি আর কতক্ষণ সহ্য করবো। বুঝতে পারলুম, ঐ মেয়েকে বাদ দিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। অপিতা কয়েকরার ওকে পাশের ঘরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল-কিন্তু মেয়ে কিছুতেই যাবে না, বাবাকে ছেড়ে সে থাকতে পারে না। হুতয়ার কথার কথা হিসাবে আমি জিজ্ঞেস করলুম, কিরে অমিত, মেয়েকে কোন ইস্কুলে ভর্তি করবি। অমিতাভ বললো, এখুনি কি, মোটে তো আড়াই বছর বয়েল? -বাড়িতে কিছু শেখাচ্ছিস দেখাচ্ছিস? অমিতাভ হো হো করে হেসে উঠে বললে।। না স্কাই। ছড়া শেষানো কিংবা নাচ শেখানো-তারপর বাড়িতে লোকজন এলে জোর করে তাদের সেইসব শোনানো এনব আমার হাতে নেই। আমি বললুম, বাঁচিয়েছিস। -চাখ ভাগ নেয়েটা কি করছে কাগজ পেন্সিল নিয়ে। একটু

পৃষ্ঠা:৬২

কাঁক পেলেই মেয়েটা আপন মনে ছবি আঁকে। আমি হাই তুলে বললুম, তাই তো দেখছি। অমিতায় বললো, আনন্দবাজারে যেসব ‘আঁকা বাঁকা’ বেরোয়, ভায় থেকে পূর্ণ। অনেক ভালো আঁকে। সম্পাদকের কাছে পাঠালে লুফে নেবেন।। আমি উদাসীনভাবে বললাম, পাঠালেই পারিস। তুই দেখবি এর আঁকা কয়েকটা ছবি? -না আমি আার দেখে কি করবো? আমি আট ক্রিটিকও নই, গুধি ছাপার ব্যাপারেও আমার বিন্দুমাত্র হাত নেই। -সেজয় নয়, এমনই ভাব না-বিশ্বাসই করা যায় না, এটুকু মেয়ে অপিতা কাছেই দাঁড়িয়ে চা তৈরী করছিল, বললো, এর এক মামা তো বড় আর্টিস্ট, তারই ছোঁয়া লেগেছে বোধহয় নেখেটার। শুনেছিলাম বটে অমিতাভর এক মামা বোম্বেতে হিন্দী সিনেমার আর্ট ডিরেক্টার। তিনি হলেন গিয়ে বড় আর্টিস্ট। ঢোক গিলে আমি বললাম, যাচ্চাদের অনেক সময় আঁকিবুকি ছবি আঁকায় খোঁজ দেখা যায় বটে-কিন্তু বড় হলে আর ওসব কিছু থাকে না। অমিতাভ অতান্ত নিডিয়াস মুখ করে বললো, না রে, পুর্বার মধ্যে খুব অল্প বয়েস থেকেই ছবির দিকে একটা টান। মানে যখন ওই মাত্র হাঁয়াস বয়েস-তখন এর দিকে একটা পুতুল আার একটা লাল হাঙর লেগিন্সল যাড়িতে দিতে দেখা গেল-ও কিছুতেই পুতুলটা নেবে না, লাল পেন্সিলটাই নেবে।।। আনি জড়িতভাবে বিছুক্ষণ অমিতাভর মুখের দিকে তাকিয়ে ভইলুর। তারপর বললুম, বাল্লাদের সঙ্গে দাঁড়ের খুব মিল আছে জনিস। ওয়াও লাল বা খুদ ভালবাসে। তোর মেয়ে লাল রা বলেই পেন্সিসটা ঘরকে গিয়েছিল, শুধু পেন্সিল দলেই নয়। শুগিরা যপ্তির হাতে বললো, আপনার কথাবার্ড। ঠিক আগের

পৃষ্ঠা:৬৩

নতই আছে দেখছি।-অর্পিতার এই মন্তব্যের ঠিক কি মানে তা বোকা না খেলেও এটুকু বুঝতে পারলাম ও আমার এখাটা মোটের পছন্দ করেনি। কেন না আমার চা-এ ও চিনি দিতে ভুলে গেছে এবং অতি ট্যালটেলে বিশ্বাদ লীকার। এরপর দেড় ঘন্টা ঘরে অমিতাভ আর অপিতা আমাকে ওদের মেয়ের শিল্প প্রতিভা বোঝাবার চেষ্টা করল। ছটো লম্বা আর একটা গোল দাগ দেখিয়ে অসিতা বললে, দেখছেন কি চমৎকার মানুষ এঁকেছে-অনেকটা ওর বড় মামার মত। আর এই দেখুন এই একটা হরিণ। আরও কি খাশ্চর দেবু, ও কখনো পাহাড় দেখেনি-অথচ কি সুন্দর পাহাড়ের ছবি এঁকেছে। অমিতাভ বললো, পূর্বা মস্ত জানোয়ার আঁকরেও খুব ভালবাবে-পূর্ব। কাকামণিকে একটা বাঁদর কিংবা হস্তমান এঁকে দেখাও তো। এই নাও পেন্সিং, নাও আঁকো!-আামি বললাম, কি রে অমিত, ও বাঁদর আবার জন্ম তোর মুখের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে কেন?-এত রসিকতাজ্ঞান ছিল অমিতের, কিন্তু তখন হাসলো না গ্রাহ করলোই না, বললো, আঁকে। মামণি, এঁকে দেখাও। টেকনিকটাই শুধু বদলেছে। ব্যাপারটা সেই একই আছে। দেড় ঘণ্টায় আমি ক্লান্ত বিরক্ত, গলদমর্দ হয়ে উঠলাম। বাইরে বেরিয়ে মনে পড়লো হেমন্তদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি আর অমিত কী রকম ছেবেছিলাম। আজ অমিতের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি হাসতেই পারছি না। সেদিন আমার হটি বিষয়ে উপলব্ধি হলো, এক অপিতাকে বিয়ে না করে আমি খুব জোর বেঁচে গেছি। আর দ্বিতীয়ত, বিয়ে করলেই যদি বাবা হতে হয়-এবং বাবা হলেই যদি হেযগুদা ভিাষা অমিতাভর মতন বোকা হয়ে যেতে হয়-তবে ইহজীবনে আমি সংসারধর্ম কিছুতেই গ্রহণ করছি না।

পৃষ্ঠা:৬৪

১১: বন্ধু চৌরঙ্গীর মোড়ে জড়িয়ে আছি, উত্তর দি দক্ষিণ কোন দিকে বায়োমাতে পান্ধি ব-বেই বয় হয়ে পার হয়ে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে PICK JOY হেসে বলতেন, কি খবর এখন? স্বপন স্বধন  আছি। তারপর আবার তিনি সংসাং তুণ তাই আছি। নিজেই পার্থে একটি চমৎকার প্ল্যান পারি এইদিকে হাত বাড়ালাহ। এলন মহিলার এবং লাশ পয়ী খায় বামা যোধ্যাপি রঙা শাড়ি পরেছেন। का, বঁর এপারে আগেকার তামার পচণার কষ্টকর বিয়াল টপ। হ্যান্ডব্যাগটি দেশ গড়, তার মধ্য থেকে এগ্রোয়েন উকি মারছে। তুমি ঙ্গে গল্প করে মহিলা একটী সেমিফ বেড়াতাড়ি উঠে পড়লেন। কপন আমাকে ক্রিমেন করলো, তাহলে কোন দিকে যাওয়া বাড় দয়ে আয়ে বেশি দি

পৃষ্ঠা:৬৫

-বৌদির খুব বস্তু। আগে আমাদের বাড়িতে দূর আাবতেন- বা লেখিনি। শাল আলোয় সামনে ট্রামটি তখনও ধাড়িয়ে। ট্রাম ভাতি নানা রঙের মহিলা-সেদিকে রাঙ্গিয়ে থাকা যায় না। ট্রামল বালের জামলার একটি গুটি মহিলাদের দেখে অনেক সময় বন্ধক্ষণ কতুম নয়নে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পুরো গাড়িটাই ১১ মহিলাদে জড়ি, লেডিজ ট্রামের দিকে দু-এক পলকের দেশী চোখ বাখতে গেলেই লজ্জা লাগে। সগনের গৌদির বন্ধু জানলার পাপেই বলে ছিলেন ট্রাম বাড়তে তগন আবার সেদিকে চেয়ে হাসিমুখে হাত নাড়লো তারপর স্বপন আনতে আমাকে বললো। চেখাদিতে দিজেল করলুম, কেমন আাচেন? উনি বললেন, ভালো আছি। বলতে পারিস, ‘ভালো’ বধাটার কর হকম মানে হয়, আমি ঠোঁট উল্টে বললুম, কে আনে। -রেবাদিতে দেবে তোর কি মনে হয়-কি আবার মনে হবে? আমি তো ভালো করে দেখিই নির -যা সেসেছিল তাই যগেই। ঐটুকু দেখে যেযাদি সম্পর্কে তোড কি ধারণা হলো বলতো। দেখি তোর অবজারভেশনের ক্ষমতা কি এওম। মেধাবি হবার বলেছেন, ‘ভালো আছি’, সেটা খেয়াল রাশিদ। – স্বরমহিলা চাকরি করেন, সম্প্রতি যোষ হয় প্রমোশন হয়েছে। কাই অর দুর্ণী সুধী ভূ। এটি সন্ধান ৪। বলতে পারবো নং কলে একটি ছেলে আছেই-মেয়ে থাকলে এরোপ্লেন না কিনে পুতুল কিনতেন, উচ্চারণ গুনে যান হল ভদ্রমহিলা বি-এ পাপ, খুব সন্ধার বংস্কৃত কিংবা ফিললফিতে অনাদ ছিল। স্বত্তমহিলার স্বামী অস্ত্রগত, ভদ্রমহিলার শাশুড়ীও এক সঙ্গে পাবেন-পাগুড়ী বই-এর kirit at me ા #

পৃষ্ঠা:৬৬

মাধ্য অগড়ার বদলে কে কতটা ভালো ব্যবহার করতে পারে-তার প্রতিযোগিতা চলে, ভদ্রমহিলার সম্ব বেড়াল পোষার-কিন্তু স্বামীর ইচ্ছে কুকুর, ইনস্টলমেন্টে রেফ্রিজারেটার কিনবেন প্রায় ঠিক করে ফেলেছেন- ভশন হো হো করে হেসে উঠে বললো, তুই আজকাল শখের গোয়েন্দাগিরি করছিস নাকি? আমি ঈষৎ গর্বের পুরে বললুম, কি সব মেলে নি। অন্তত বেভেটি ফাইভ পারসেন্ট।-তুই কি করে জানলি? -মানুষ দেখে স্যাডি করার অভ্যেস করতে হয়। তপন পুনশ্চ হাসতে হাসতে বললো, খুব মানুষ চিনেছিস্। একটাও হেলেনি। ঐ যে বেবাদি পর পর দুর্বার ভালো আছি বললেন, সেটা যক্ষ্যই করিস নি। একবার বলে ভালো খাদি, তাহলে কেউ যখন প্রশ্নের উত্তরে শুধু হয়তো সে সত্যি ভালো নাও থাকতে পারে সবাই তো হার দুঃখের গল্প সব সময় শোনাতে চায় না। কিন্তু চুবার ‘ভালো আছি’ বললে বুদ্ধবি পিছনে অনেক কিছু আছে, সুখ যুঃখের একটা জটিল ইতিহাস, তার মধ্যে কোনটা বেশী কোনটা কম-লে বিষায়ে মনঃস্থির করা যায় না। মানুষ কত রকমে ভালো থাকে জানিন? তোরা সব সময়ে মানুষকে ঢুকে ফেলতে চাই। কিন্তু প্রত্যেৎটা মানুষ আলাদা। রেবাদির জীবনের গল্প শুনলে স্তম্ভিত হয়ে যাবি। শুনবি? রেস্টুরেন্টে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তপন বললো। রেবাদি আমার বৌদির সঙ্গে বরাবর স্কুল-কলেজে এক সঙ্গে পড়েছেন, আমাদের বাড়িতে খুব আলতেন। বৌদি চেষ্টা করেছিলেন, রেবাদির সঙ্গে মানুদার দিরের ব্যবস্থা করতে চাচুদাকে ডিনিন তো? দাদার বস্তু, দুর্গাপুরে চাহুদার পছন্দও হয়েছিল রেবাদিকে, কিন্তু সেই সময় রেবাদি হঠাৎ একটা প্রেম করে ফেললেন।

পৃষ্ঠা:৬৭

রেবাদি নিউসেক্রেটারিয়েটে চাকরি করেন-একদিন বৃষ্টির দিনে এক ভদ্রলোক এঁকে ট্যাক্সি করে বাড়ি পৌঁছে দিতে চাইলেন, সেই থেকে আলাপ আর প্রেম, হ’ মাসের মধ্যে ভদ্রলোকের সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়ে গেল। রেবাদির স্বামীকে দেখতে খুব অগুরুব, চান্নদার চেয়ে অনেক ভালো ঠিকা, কিন্তু বৌদি তবু ছঃখিত হলেন। চামুদ। কত বড় চাকরি করেন, আর কি ভালো মানুষ-তার তুলনায় প্রায় একটা অচেনা-অজানা লোককে বিয়ে করা-কিছু প্রেম ইজ প্রেম-কে আর কি বলবে। বিয়ের পর রেবাদি আমাদের বাড়িতে আন্য কমিয়ে দিলেন। একদিন আমার সঙ্গে ডালহৌদিতে দেয়া রেবাদি একগাদা গয়না গায়-দাহী শাড়ি, সেদিনও আমি জিজ্ঞেন করেছিলাম, দেবাদি কেমন আছেন। রেবানি হালি ভাসি। মুখে বলেছিলেন, চালো আছি ভাই (একবারই ভালো আছি রলেছিলেন, সেদিন হবার নয়) তোমার বৌদিকে বলো বারো একদিন- একদন সময়ই পাচ্ছি না- বৌদি বলতেন, হেবা একেবারে নিয়ে করে গদগদ-এর স্বামী নাকি ওকে ছাড়া এক মুহূত থাকতে পারে না-সব সময় মাথায় করে রেখেছে-রেবা বাপের বাড়ী যাবারও সময় পায় না। তপন সিগারেট ধরিয়ে বলল, এরগর পর পর ওমকাবার জন্ত তৈরি থাক। রেবাদির জীবনের সাত। ঘটনাগুলোই এমন অবিশ্বাস্ত যে একটুও বানাতে হয় না। কিছুদিন পরে রেবাদিকে দেখলাম আবার আমাদের বাড়িতে আসছেন, গৌদির সঙ্গে দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কথা বলছেন, খুব সুখ শুকনো। কিছু বলেন নি, তারপর কোর্টে মামলা বৌদি তখন আমাদের ওঠার পর জানতে -হ্যাঁ, ঘটনাটা এই রেবাদির বিয়ের আট ন-মাস পর একদিন একজন অপরিচিত মহিলা এঁকে টেলিফোন করেন। স্তিমি

পৃষ্ঠা:৬৮

বাসেন যে, তিনি অনেক কষ্টে রেবাদির অফিসের ঠিকানা খোয়াড় কয়েছেন, তেণাদির বঙ্গে রায় দেখা করার বিশেষ দরকার-রোগবিত্রই উপতাদের স্বপ্ন। দেখা করে ভক্রমহিলা বললেন, তিনি বেবাদিত স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী। বেবাদির স্বামী একজন অত্যন্ত বম্পর এং বদমাইস থেকে। রেবাদিত সাবধান হওয়া উচিত। রেবাদি হিপ্তার করলেন না। খুব ভালো বোর, বখার প্রমাত কি? তিনি জোর দিয়ে বললেন, না, তাঁর স্বামী তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন-ভদ্রমহিলার নরমহিলা কি চান! ভদ্রমহিলা বললেন, তিনি কিছুই চান না। কিন্তু বেবাদির স্বানী ভালো ব্যবহার করেন-এটা তাঁর কাছে অবিষাক্ত মনে চলে। লোকট কি গতিাই তাহলে বদলে গেছে। লোকটি কি বাড়ি কামাবার আগে খুর বার দেয়ার জর স্ত্রীর পিঠে খুব যবে রবিঙ্গতা করে না। লোকটি কি সাড়ায়াত বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে বাড়ীতে মর গেয়ে হয়। করার ভগ্ন স্ত্রীকে রান্না ঘরে শুতে বাধ্য করে না লোকটি কি স্ট্রীয় টাকা নিয়ে মাঝে মাঝেই চার-পাঁচ দিনের অল্প বাড়ি থেকে অন্নাপষ্ঠিত থাকে না। লোকটি কি চাবুক দিয়ে ভরমহিলা তেণাদিত হাত চেপে ধরে বললেন, আপনি বলুন সে ভালো হয়ে গেছে, তাহলেই আমি খুশী হব। আমি আর কিছু চাই না আমার কোনো স্বার্থ নেই। এর সঙ্গে আমার কোন সম্পর্কই নেই-এক বছর আগে এর সঙ্গে আমার সেপারেশন হবে গেছে। চেরাদি অখন আর কি করবেন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে শুয়ে পড়লেন, তোরণঃ অজ্ঞান হয়ে গেলেন। প্রত্যেকটি কথাই সত্যি। বিয়ের একমাস পর থেকেই লোকটি খর চেয়েও আরও ঢের বেশী অত্যাচার করতে। রেবাদি একখা বাজকে বলতে পারেন না-কারণ তিনি নিজেই ফোর তবে বিয়ে করেছেন-সেইজক্স দিদি যাইতে হানি-বুী থাকবেন। সবার

পৃষ্ঠা:৬৯

সামনে নিয়েকে গুণী দেখাতে চাইতেন। তপনের গল্প শুনতে শুনতে আমার নমে পড়লো, ভদ্রমহিলার সুধ। বেশ উৎফুর মুখে তিনি বলেছিলেন, ভালো আছি। সেটা সবটাই অভিনয়? তাহলে তো দিমি কাননবালা বিবো ইনক্রিজ বাংমিানের চেয়েও বড় অভিনেত্রী। না সবটাই অভিনয় হতে পারে না। কিন্তু দুবার বলেছিলেন-লে বোধহয় অন্তরকম ভালো খাকা। তপনকে জিজ্ঞেস করলুম, বেবাদি তখন কোর্টে মামলা করলেন। তপন বললো, শোন না। জনপ্রিয় উপপ্তাসিকরা নভেলে যাত স্টান্ট দেন-অনেক সত্যি ঘটনায় তার চেয়ে অনেক বেশী চমক থাকে। অদ্ভুত ধরনের সামাজিক গন্ডগোল শুধু বিলেত- আমেরিকাতেই হয় না-কলকাতাতেও সহায় ঘটছে। রেহাছি কোর্টে কেস করতে বাধ্য-কারণ লিগাল পেপারেশানের পর দু’ বছরের মধ্যে দিয়ে করা এদেশে দেখাইনি। লোকটা তাই করেছে। কোর্টেও জজ রায় দিলেন বিয়েটা সম্পূর্ণ অসিদ্ধ। আইনও, লোকটির সঙ্গে রেবাদির যে বিয়ে হয়েছে-সেটা মানা হবে না। কিন্তু- তপন আমার চোকে চোখ রেখে বলংলা, বিষ বেবাদি তখন পাঁচ নাদের প্রোসনেন্ট। সেই অভ্যত শিশুটির দন্ড আদালত থেকে কোনো নির্দেশই দেওয়া হলো না। তাহলে সেই সন্তানটির পিতৃপরিচয় কি হবে? এই অবস্থায় যা স্বাভাবিক সবাই সেই পরামর্শটি দিয়েছিল রেবাদিকে, কিন্তু রেযাদি তা কিছুতেই মানতে চাইলেন না। কোর একটা অনুমান ঠিক, রেবাদির মেয়ে হয়নি, ছেলেই হয়েছে, রেবাদির ছেলের বয়স এখন চার বছর-ভারী সুন্দর ছেলেটা। কিন্তু এরপর তোকে যা বলবে, শুনলে ভোর সত্যিই অবিশ্বাা মনে হবে, ভাববি হয়তো রূপকথা কিবো আরব্যেপেজাধ কিন্তু এর প্রতিটি বর্ণ সত্যি। আমি নিজে দাক্ষী খাছি, আমি

পৃষ্ঠা:৭০

রেবাদির ছেলের অন্নপ্রাশনে নেমতন্ত্র থেকে গিয়েছিলাম। বিরাট ধূমধাম করে অন্নপ্রাশন হয়েছিল- বেবাদির স্বামীর নেই প্রথম পক্ষের স্ত্রী, তাঁর নাম অনুগুয়া, তিনি কিন্তু ঐ লোকটিকে প্রেম করে বিয়ে করেন নি। তাঁর বাবা দোয়াগুনেই অমন চমৎকার চেহারার ছেলে, তখন ইনকামট্যা অদিলে ভালো চাকরিও করতো-খুধ নিতে গিয়ে ধরা পড়ে চাকৰি গেছে-বেশ জাঁকজমক করে বিয়ে দিয়েছিলেন। অতিকষ্টে পা বছর অনুসূয়াদি থাকতে পেরেছিলেন স্বামীর সঙ্গে-তারপর তাঁর মন ও শরীর দুই-ই ভেঙে পড়ে। রেবাদির ছেলে হবার পর তিনি হঠাৎ এলে একদিন বললেন, তোমার ছেলেতে আমায় দিয়ে দাও, আামি ওকে নিয়েই থাকবো। তোমার তো বয়েস কম- তোমার হয়তো আবার কারুর সঙ্গে ভার টাব হতে পারে-কিন্তু আমার জীবনে আর কিছুই নেই, আমি ঐ ছেলেটাকে নিয়ে তবু বাঁচতে পারি। বেবাদি যেলেকে একেবারে দিয়ে দিতে কিছুতেই বাকী নন। অনেক সন্দা অপমান সত্ত্বেও তিনি ঐ ছেলেকে পৃথিবীতে এনেছেন। সুবয়া একটা অল্প ব্যবস্থা হোল। অমৃন্ময়াদি বেশ বড়লোকের মেয়ে, কিন্তু তিনি বাড়ি ছেড়ে রেবাদির সঙ্গে একসঙ্গে থাকেন এখন ছেলেকে সব সময় দেখতে পাবার জন্ম। আমি উদের, বাড়িতে গিয়েছিলাম-অনুসূয়াবি আর বেবাদি অবিকল ই-বোন কিংবা হই সগীর মত চমৎকার মিলেমিশে আছেন-খুব ভাব ওঁদের, কখনো সতের অমিল হয় না-অহুহুয়ারি তাঁর বাড়ি থেকে মাসে আড়াইশো টাকা পান-রেবাদি চাকরি করেন-পুতরাং বেশ সান্ধক এঁদের য়েলেটির যদিও পিতৃ-পরিচর নেই-কিন্তু তাকে এঁরা রাজপুয়ের মতন যন্ত্রে রেখেছেন। রেবাদি সধহ্য সেজে থাকেন লোকে জানে এঁর স্বামী বিদেশে আছে। বন এঁরা যে-ভাবে আছেন- ভায়েও বব মিলিয়ে বেশ ভালো থাকার বলে-তবে চুবার ‘ভালো আছি’ বলার মতন ভালো থাকা, তাই না?

পৃষ্ঠা:৭১

১২: এই সময়টায় ওদের দেখলেই চেনা যায়, বৈশাৎ, কৈায়, আষাঢ়, শাহণ এই চার মাসে ভাংলা দেশে যে হাজার হাজার মেয়েত্ব দিয়ে হয়ে গেল, এখন এই শরৎকালে ভানের দেখলেই বোঝা যাবে- তারা অল্প সব মেয়ের চেয়ে আশায়া। তাহা মহকুমারী নয় তাবা এখনও গিয়ী নয়, তারা নতুন বট। তাদের পা এখন পৃথিবীর মাটি ছোঁর কি ছোঁয় না। তাদের মাথার সিঁথির মিশ্বর বড় বেশী গাঢ়, সিথি ছড়িয়ে চুলের মধ্যেও জড়ানো বিশ্বরের গুঁড়ো-সেই সংজ মুখের একটা অরুণ আতা সব সময়। হাতের সোনার গয়না। অঙ্গনের চেয়ে বেশী বঙ্কতে, এখন প্রত্যেকদিন তারা এক একটা নতুন শাড়ী পরে রাস্তায় বেরোয়, পায়ের চট জোড়াও নতুন, ব্লাউজ নতুন। অর্থাৎ নতুন বউদের সংই নতুন। গায়ের চামড়াও নতুন রং ধয়েছে মনে হয়, ঠোঁটে নতুন রকমের হাসি, পাশের। নতুন গোরটর দিকে মাঝে মাঝে চোরা চায়নি-এইসব নিলিয়ে শুদের আলাদা করে চেনা যায়। এই লগনশায় আমার চেনা পাঁচটি মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। দু’জন নেমন্তন্ন করেছিল, আর তিনজন স্কুলে হেরে দিয়েছিল। তা নেমন্তন্ন করুক যার না করুক, প্রত্যেকের বিয়ের দিনই আনি বিষন্ন বোধ করেছি। সত্যিরখা বলতে কি, প্রগিণীর যাবতীয় কুমারী মেয়ের বিদায় সংবাদেই আমি করি। যেমন, পৃথিবীতে তো প্রতিদিন ব্যক্তিগত ক্ষতি অনুভব, অবাধ্য শিশু থেকে বৃদ্ধ

পৃষ্ঠা:৭২

বাকির মৃত্যুহলে, কিন্তু কোনো কুমারী মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনলে। আমি আমার মুখে দারুণ শেলের আঘাত পাই। মনে হয়, পৃথিবীর পক্ষে এ ক্ষতি অপুরণীয়। যাই হোক, যে পাঁচজনের বিয়ে হয়ে গেল, তাদের মধ্যে দুজন। বিয়ের পরই চলে গেল কলকাতার বাইরে, একজন শিলা আর অঞ্চগুন মাদ্রাজ সুতরাং আমার চোখে তাদের কুমারী জীবনের ছবিই জেগে রইলো। বাকি তিনজনের মধ্যে রন্তার বিয়ে হয়েছে এক যনেদী পরিবারে-তার সঙ্গে দেখা হবার সম্ভাবনা কম। দেখা করায় জন্ম আনি যে খুব উদগ্রীব-তাও তো নয়, আমি তো আর এক সঙ্গেই সব কুমারীর ব্যর্থ প্রেমিক হতে পারি না। ওরা কেউ আমার প্রেমিকা ছিল না, কিংবা গামাকে প্রেমিক হবার সুযোগ দেয়নি, তবু ওদের বিবাহ-জনিত আমার যে বিষন্নতা, সেটা একটা অন্তরকম ব্যাপার-খানি তার ব্যাখ্যা করতে পারবো না। হিমার সঙ্গে ছ’বার দেখা হলো এর মধ্যে। স্নিগ্ধার বরটি বেশ নাহসমুহস, মুখে একটা বিগলিত হাসি, তার পাশে মিয়া যেন হাওয়ায় উড়ছে। চাঁপা রঙের বেনারসীর আঁচল হাওয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে আনতে জিয়া হঠাৎ আমাকে দেখতে পেয়ে গবাচিতভাবে উচ্ছপ হয়ে বললো, আরে আপনি? কি খবর? বিয়েতে আসেন নি কেন। প্রিয়া স্থলে গেছে যে ও আমাকে নেমন্তন্নই করেনি, কিন্তু সেরা তো মনে করিয়ে দিতে পারি না এখন। তাই আমাকে লাজুক মুখে বলদে হলো, না, হয়ে, খুর স্থঃখিত, খুব যাবার ইচ্ছে চিল, কিন্তু একটা বিশেষ কাছ-   হিয়া তার বরের দিকে দিয়ে বললে, এএ যে টু মামী, মাগীকে মনে আছে জো! যিনি সেই বৌভাতের দিনে একটা। কই মার পাড় শান্তিপুরী শাড়ী পরে এলেছিলেন, সেই যে আসানসোলে ওঁর বাড়িতে যাদার জন্ম আমাদের নেমন্তন্ন করেছেন-

পৃষ্ঠা:৭৩

ভার দেওরের ছেলে নীলুদা, আমাদের সঙ্গে একবার সিয়েটার করেছিলেন। নীলুদা আসবেন একদিন আমাদের বাড়িতে, নিষ্ট আলিপুরের ও ব্লক, এ সপ্তাহে না, সামনের মাসে একদিন-আমরা হায়দারাবাদে হনিমুনে যাচ্ছি (এই সময় একটু মুচকি হাসি) ফিরে এলে তারপর,- মিয়ার কি বদল হয়েছে এই ক’দিনে। আগে হিয়া ছিল খুব শান্ত ধরনের মেয়ে, বেশী কথা বলতো না, কখনো জোরে শব্দ করে হাসেনি-বিয়ের এক মাসের মধ্যেই হিয়া অজস্র কথায় উচ্ছ্বসিত। একাই সর কিছু বলে যাচ্ছে, হায়দারাবাদে হনিমুনের করা, নিউ গালিপুরে শুদের ফ্ল্যাট কত সুন্দর, ‘এর অফিস থেকে শিগগিরই গাড়ি দিচ্ছে-জিয়া যেন তার গয়নার ঐশ্বর্য এবং শাড়ীর জৌলুবের সঙ্গে সঙ্গে কায়দা আামাকে দেখিয়ে, স্নাবো, আমার স্বামীও কত ভালো লোক-তোমার মতন একটা রোগা যার কালো চেহারার বাউন্ডুলের তুলনায় আমার স্বামী কিরকম অপবান রেবতা।আশ্চর্য মেয়েদের মনস্তর। আমি কি কোনোদিন ডিয়ার পানিপ্রার্থী ছিলাম? কক্ষনো না। তাহলে আমার কাছে ওর এত স্বামীগর্ব করে কি লাভ? বুঝি হিসেয় আমার বুক ফাটিয়ে আনন্দ পেতে চায়। কিন্তু এই ফাটা বুক আর কত ফাটবে? পূরবী আবার অন্তরকম। পূরবীর একটু একটু দুর্বলতা ছিল আমার সম্বন্ধে আমিও তাতে খানিকটা প্রশ্রয় দিয়েছি। কোনো কোনো নয় গোধূলিতে বারান্দার বেলিংয়ে হেলান দিয়ে পূরবী যার আমি স্বপ্ন স্বরে কথা বলেছি। শুধু কথাই, তাঁর বেশী আর এগোয়নি। যেসব স্থান পূরবীর ভালো লাগত্যে, সেগুলো আমার। প্রিয়। হাজারীবাগের ক্যানারি হিল থেকে দেখা সূর্যাস্ত আমার। ভালো লেগেছিল, পূরবীর সঙ্গে তো মিলে গেল। কোথাও ভিড়ের। মধ্যে আমাকে দেখলে পুরণী এগিয়ে এবে আমার সঙ্গে কথা বলতো, কখনো বা হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতো ভিড় থেকে আড়ালে। তবে

পৃষ্ঠা:৭৪

সেই রকমই এক নয় গোদিকে পূরবীর সঙ্গে আমার দেখা হলো রাগবিহারীর মোড়ে। বিয়ের পর পুরণীকে এই প্রথম দেখলাম। সিইবের আদ্রাহ তার মুখখানি আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। খুবণীর স্বামী ছিল না, পাশে যে মেয়েটি-সে বোধহয় তার এনদ বা ঐয়তম কিছু, আমার সঙ্গে চোখাচোখি হলো পূরবীর-সঙ্গে সঙ্গে তাগ বিধিয়ে নিল-একটা কথাও বললো নয়, না-চেনার ছঙ্গিতে চাপ গেল। আমি আমার ঠোঁটের উন্নত কথা ফিরিয়ে নিলাম। শাড়ি পুরণীতে অভিনন্দন জানাতে যাচ্ছিলাম-কি ক্ষতি হতো সুকণীর-একটা কথা বললে। পূরবী কোনোদিনই তো এমন আড়ই তাম্বারগ্রাছ মিল না। কিন্তু একটী মেয়ে, কুমারী অবস্থায় যার সঙ্গে আমি কোনোদিন একটা কথাও বলিনি, নতুন বিবাহিতা হিসেবে স্বাকে যেদিন দেখলাম, সেদিন আমি এক মুখ হেসে তাকিয়ে রইসান তার নিতে, বললাম, আছে, বাং করে হলো? মেয়েটি ইবার না বিয়ে লাজুকদাতে হাসলো। মেয়েটির বঙ্গে আমার কোনোদিন আলাপই হয়নি, আমি তার নামও জানি না। মেয়েটিও আমার নাম জানে না। দীর্ঘ তিন বরং মৌলালির মোড়ে একটা অফিসে আমি চাকরী করতাম- প্রতিদিন ঠিক দশটা বেজে দশে যাসে উঠতাম শ্ল্যামবাজার থেকে। রামমোহন লাইব্রেরির সামনে থেকে মেয়েটি। প্রত্যেকদিন পকে লেগেছি, প্রত্যেকদিন রামমোহন লাইব্রেরির স্টপ এলে আমি যোগটির ক্ষর উকি মেরে দেখতাম। একটু কালো, ছিপছিপে এপ্রধাতা লাবণ্যমাশ্য স্থাৎ মেয়েটিকে প্রত্যেকদিন দেখা এমন অভোস যায় গিয়েছিল এস এম আহদিন ওকে না দেখলে চিন্তিত হয়ে পড়তাম। মেয়েটিও দেখতে। নিশ্চয়ই আমাকে-আমি দরকার সামাম খুলন্ত অংস্থা থেকে নেমে দাড়িয়ে মেয়েটির অন্ত জায়গা করে চিতাম। এক একদিন তরাকটরকে চেঁচিয়ে বলেছি, বোঝকে,

পৃষ্ঠা:৭৫

রোককে, জেনানা জায়। যেন খামারই কোনো সাথীয়া। ভিত কোনোদিন একটাও কথা হয়নি।

আজ মেয়েটিকে নতুন সিংঃপরা ও নতুন বেনারসী-পরা চেহারায় সিনেমা হলের সামনে দেখে আচরকা আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, আরে! বাঃ। কবে হলো। মেয়েটি লাকৃতভাবে মুখ নিচু করলে।তারপর আবার মুখ তুলে বললো, গত মাসের সাত তারিখে। মেয়েটি খাবার হাসলো, আমিও হাসলাম। জীবনে আর আমাদের কোনো কথা হবে না-শুধু এক অলত অনাবিল গুণীর বিনিময় হয়ে গেল।

পৃষ্ঠা ৭৬ থেকে ৯০

পৃষ্ঠা:৭৬

১৩: বললুন, তোমার কপালের টিপটা ব্যাকঃ। মেয়েটি বললো যাঃ, মোটেই না। বলার সময় মেয়েটি হাসেনি। বরা যখন ‘মাঃ’ বললো, সেটা পোনালো ছোট্ট ভ্রমরের মতো। আমি এমনও খরয়োগে শুর অসন্ধিতে তাকিয়ে আছি, সম্মোহনকারীর ভঙ্গিতে। চোখ সগিয়েই মুহুস্বরে টেনে টেনে ঘরের সন্তান্ত লোকেরা যাতে ঠিক শুনতে না পায় এমনভাবে বললুন, আমি এ পর্যন্ত যত সুন্দরী মেয়ে দেখেছি, সফলেরই কপালের দিপ ব্যাকা হয়। কখনোই ঠিক মাঝবানে বসে না। মেয়েটি মুখ নিচু করলো। আমার এই গুকি একটু অপ্রত্যক্ষ বলে মুখ নিচু করতেই হয়।এ সময়ে। কোনো উত্তর দেওয়া যায় না। আমি তখনও দ্বিধায় তুলছি। আর একটু কি বলবো। ঠিক আমার যা মনের কথা। কিন্তু বলার বিপদও আছে-এক এক সময় অতিফল এর সারাপ হয়। কবু আদিও মুখ নিচু করে বললুম, কেন ঠিক হয় না আনো। কেন? এবার মেয়েয়ী স্পারই হাসলো। উত্তর শোনার প্রতীক্ষায় যে-রকম হাসতে হয়। বললুম, কারণ, পুন্দরী মেয়েরা যখন আয়নার সামনে। টিপ পরতে যায়, তখন তারা নিজের মুখ সবচেয়ে নিবিড়ভাবে দেখে। গ্লো- পাউডার মাধ্য কিংবা চুল আচড়ানোর সময় আয়নার দাঁড়ানোর সঙ্গে এর তুলনাই হয় না। অম্ল সব সময়ই তারা আলগাভাবে দেখে, কিংবা দেখে সারা শরীর-অথবা ব্লাউজের হাতাটা কুঁচকে

পৃষ্ঠা:৭৭

গেছে কিনা, কানের পাশে শাউডারের দাগ-এই সব। কিন্তু শুধু মুখখানা-সম্পূর্ণ মুখও নয়, দুই চোখ, নাকের সামার অংশ, ঈশ্বরের কবিতার খাতার মতো নির্মল ওপাল (এইটা বলার সময় আমি টুক করে একটু হেসে নিলুম)-মুখের যেটুকু সবচেয়ে সুন্দর আশ, মেয়েরা সেটা দেখতে পায়। দেখে অবাক হয়ে যায়, হাত কেঁপে যায়, ঠিক জায়গায় টিপ ববে না। পৃথিবীর কোনো সুন্দরী মেয়ের এ পর্যন্ত বসেনি, আমি খানি। টিপ পরতে গিয়ে প্রত্যেক মেয়েই একবার করে নাবিসাস হয়ে যায়। অবশ্য খুব গভীর হয়ে পেলেও শুনেছি কোনো কোনো মেয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে এরকম নিবিড়ভাবে নিজেকে দেখে। কিন্তু তাদের কথ্য আমি ঠিক জারি না। এবার মেয়েটি কাচের গ্লাস ভান্ডার মতন বেশ জোরে হেশে উঠলো। বললো, ইস, বাকি সব সুন্দরীদের কথাই কেন জেনে বসে আছেন। খুব চালিয়াতি, না। আমিত বেশ জোরে হাসলুন। আমার বিশদ কেটে গেল। মনের ভেতরটা খুব পরিষ্কার এবং ভালো লাগতে লাগলো। না, এইভাবে কোনো গল্প শুরু করতে যাচ্ছি না। এ গল্পের এখানেই শেষ এবা কোনো ক্রমশ নেই। আমি আমার একটি। তোই বিপদমুক্তির ইতিহাস জানালুন। আমার জীবনটাই বিপদে করা, প্রত্যেক পায়ে পায়ে আমাকে বিপদের হাত থেকে সাবধান হয়ে চলতে হয়। তার মধ্যে একটা বিপদ, কোনো নারী বা বালিকার অলের প্রশংসা করাত পর তার মুখের কথা শুনে আমার কি অবস্থা হবে আমি সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। এ জয় শারীরিক নয়। মেয়েটি আমাকে চপেটাঘাত করবে, না তার ব্যায়ামগীর দাতা এলে আমার স্বাক্ত মুচড়ে বেতে, বা তার স্বামী বা হবুখামী এলে আমার সামনে রাখে নাকভাড়ার আওয়াজ করছে এরকম কোনো আশঙ্কার কারণ আমার নেই। আমার স্বতি

পৃষ্ঠা:৭৮

নির্লোভ আমার আশঙ্কা মেয়েটির উত্তর যদি আমার মনঃপুত না হয়। আসলে জপের চেয়েও রূপসীর মুখের ভাষারই বোধহয় আমি বেশী তরু। যাকে আগে সুন্দর মনে হয়েছিল, অনেক সময় তার মুখের উত্তর শুনে আমার তাকে কুৎসিত মনে হয়েছে। অখড়, রূপ দেখলে প্রাশংসা বা স্ততি না করেও পারি না। প্রশংসার ভাষা এমন কিছু কঠিন নয়-আমি যদিও একটু কাঁচা-তবে অনেকেই খুব সুন্দর পুরুচিসম্মতভাবে প্রশংসা করতে জানে। কিন্তু সবচেয়ে শক্ত প্রশাসার উত্তরে কি বলা হবে-সেই ভাষা। প্রশাসার উত্তরে চুপ করে থাকা উচিত নয়, সেটা দৃষ্টি কটু, তাহলে মনে হবে, অহংকার কথাটা গ্রাহ্যই করা হয় না। আবার অশংসায় বিগলিত হয়ে পাওয়া-মুখে-শোর। গলায় উত্তর শুনলেও গা অলে আমি প্রায়ই ভাবি, কোনো নবীন লেখককে যখন কোনো প্রবীণ লেখক প্রশাসা করে, তখন নবীনটি কি করবে? চুপ করে বসেও থাকতে পারে না, হে-হে ধরনের হাসতেও পারে না-তা হলে সেই সময়্যাট নিশ্চঃই তার খুবই অস্বস্তি বা সংকটের সময়। অবশ্ব, আমায় এ ভাবনা নেই-কাজ রো ঘই ভাষার মতন, কারণ। এরকম সৌভাগ্য আমার এ পর্যন্ত হয়নি, অদূর ভবিষ্যতে এমন সম্ভাবনাও নেই যে, আগে থেকে রিহার্সাল দিয়ে নেবো।।

তবে প্রশাসার সময় সবচেয়ে অরুচিকর জিনিষ, প্রশংসার উত্তরে প্রতি প্রশংসা। থামি যদি ভারুকে বলি আপনার অমুক ব্যাপারটা খুব ছন্দও তার উত্তরে যদি শুনি, আপনারাও কো অমুকটা আ-হা-হা-তাহলেই আমার গা রি-রি করে। নেমতন্ন- বাড়িতে কোনো একটা রান্নার প্রশংসা করলেই তার পাতায় সেই পদ আরও খানিকটা এনে ঢেলে দেওয়া হয়- এই নিয়মটি যেমন কুৎসিত। একমাত্র মেয়েধাই, অধিকাংশ মেয়েরাই জায্যভাবে প্রশংসা গ্রহণ করতে জানে। কারণ, মেয়েদের ক্ষেত্রে ঐ প্রতি-প্রশংসা করার

পৃষ্ঠা:৭৯

ব্যাপার নেই। একট পুরুষ যদি একটি নারীর ওপের প্রশংসা করে উন্মুক্ত গলায় তার উত্তরে কোনো নারীই পুজবের রূপের প্রশংসা করবে না। কারণ মেয়ের। কানে রূপের প্রশংসা তাদের সব সময়ই প্রাপ্য তাদের দাবি-কিন্তু প্রশংসা পাবার জয় কোনো পুরুষকে অনেক যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। তা ভাড়া মেয়েদের প্রশংসা। হয় নিন্দাঞ্চলে-অর্থাৎ ব্যাজস্ততি। অন্নপূর্ণা যেমন তাঁর স্বামী বম্পর্কে বলেছিলেন, কোনো গুণ নাই তার কপালে আগুন। এখনও সব মেয়েরাই এ রকম ভাষা ব্যবহার করে। কোনো মেয়ে যদি কোনো ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে দাড়ি না কামানোই বুঝি স্টাইল হয়েছে আজকাল? কি বিশ্রী খোঁচা খোঁচা দাড়ি- ঠিক কয়েদীর মতো চেহারা হয়েছে।তাহলেই বুঝতে হবে মেয়েটি আসলে ছেলেটির মুখের প্রশংসা করছে। ব্যাজস্ততি ছেলেরা সহ্য করেও বোঝে, মেয়েরা সন্তই করতে পারে না। আবার সোজাগুজি জুতিতে ছেলেরা একেবারে হতভম্ব হয়ে যায়, নাক-চোখ পর্যন্ত গোল হয়ে সারা মুখ গোল হয়ে যায়, কোনো কথাই বলতে পারে না। কিন্তু মেয়েরা গ্রহণ করতে পারে, হলের প্রশানা শুনে মেয়েরা আরও রূপলী হয়ে ওঠে সেই মুহূর্তে। মনে করা যাক্, একটি সাহেনী কায়দার নেমন্তন্ন বাড়িতে এক মহিলার সঙ্গে আমার দেখা হল। তিনি একটি কোঁকড়ানো ভূলভাটা জামা পরেছেন। মহিলার কপালের ছ’ পাশে চূর্ণ চুল জংলী ফুলের মতো জরক বেঁধে আছে। ঘুরতে ঘুরতে তাঁর সামনে এসে আমি দাঁড়ালুম হয়তো। আমি অনেক কথা বলতে পারতুম, কেমন আছেন, অমুকের সাঙ্গ কি দেখা হয়, অমুক ফিল্ম দেখেছেন কি না, অমুক লেখকের লেখা-ইত্যাদি অনেক বাজে কথা। কিন্তু যে কথাটা আমার প্রথমেই ননে এলো, এক মিনিট দ্বিধা করে আমি সেই কথাই বললাম, আপনার জামার সঙ্গে আপনার সুন্দর চুল- অথরা আপনার সুন্দর চুলের সঙ্গে আপনার জামা-মংকার

পৃষ্ঠা:৮০

মানিয়েছে। মনে হচ্ছে, ভিড়ের মধ্যেও আপনি আলাদা। মহিলা মুখ টিপে হেসে বললেন, আপনাকে কি আমি ধস্তাবাদ দেবো? আমি আঁতকে উঠলুদ। মেয়েদের মুখ থেকে খন্ড্যবাদ শুনলে আমার মনে হয়, কেউ যেন আমার শরীরে গরম লোহার শিক্ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর এই সাহেবী কায়দার নেমশুয়ে বক্তবাদের ছো মহিলা বললেন, এসব জায়গায় যক্সবাদ দেওয়াই রেওয়াজ। কিন্তু আপনাকে আমি কিন্তু এরুবাদ জানাবো না। এই বলে তিনি মুখের চাপা হাসিটুকুই রেখে দিলেন কিছুক্ষণ। আমার বিশদ কেটে গেল। আমার নিতান্ত ভাগ্যদোষে এবং ঘটনাওয়ারায় প্রারই কিছু কিছু সাহেব মেমের সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়। সাহেব-মেমদের সঙ্গে কথাবার্তায় কমা ফুলস্টপের মতো প্রায়ই বিষ্ণুরাদ’ বসিয়ে যেতে হয় আমি সব সময় সজাগ থাকি। কিন্তু পারতপক্ষে আমি মেমসাহেবদের এড়িয়ে যাই, কথাবার্তা দিশেষ বলি না। যদি বা কখনো পাকে চক্রে কথা বলতেই হয়, কিছুতেই কোনো মেঘের রূপের প্রশংসা করি না কখনো। কারণ জানি রূপের প্রশংসা শুনলে কোনো মেমের মুখে লজ্জার আভা আসবে না, অর্ধস্ফুট হাসি দেখা দেবে না মুখের একটি রেখাও না বাঁশিয়ে তিনি বলবেন, বারাজ ধন্তয়াদ। তারপরই আবার অন্ত কথা। আমার কাছে এ জিনিস ভয়কের। সুতরাং মেমসাহেবদের রূপের প্রশংসা আমার মুখ দিয়ে বেরয় না। আর সত্যিকারের রূপসী দেমসাহেবদের মধ্যে ক’জন আছে কে জানে-আমার তো একটিও চোখে পড়েনি। এ কথাটাও আমি সুযোগ পেলেই কোনো বাঙালী মেয়েকে জানিয়ে দিই।

পৃষ্ঠা:৮১

১৪: রামায়ণের রাবণ সীতাহরণের চেয়েও বড় অন্তায় কাজ করেছিলেন একটি। তখনকার ক্ষত্রিয়-ধর্ম অনুযায়ী রূপসী নারীহরণ হয়তো। খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। তা ছাড়া, সীতা হরণের প্রধান সার্থকতা, ঐ ঘটনাটি না ঘটলে রামায়ণ এরকম একটি মহৎ কাব্য। হয়ে উঠতে পারতো না। কিন্তু তাসণ সন্ন্যাসীর স্বপ্নবেশে সীভাবে হরণ করতে গিয়েছিলেন কেন? সব হয়বেশই যখন তিনি ধরতে পারতেন-তখন রামের জয়য়েশে গন্ডি পার হলেই পারছেন। ভাষণ সন্ন্যাসীর হস্তবেশ এবার পর থেকেই মাধুর আর কোনো সন্ন্যাসীকে ঠিক বিশ্বাস করে না। সব সন্ন্যাসীকেই প্রথমে জণ্ড সন্ন্যাসী বলে ভাবে। সাধুসন্ন্যাসীদের সম্পর্কে আমার একটু হবলতা আছে। আমার একেবারেই ধর্ম-বিশ্বাস নেই, দাস্তিকগু নাস্তিক যাকে বলে, কিয় সন্ন্যাসীর জীবন আমাকে আকৃষ্ট করে। কোথাও শিকড় গাড়ে নি, কোনো আসক্তি নেই, সব কিছু ছেড়ে এই বিশাল বিশ্বে একা হয়ে গেছে এই সব মানুষ। গেরুয়া রাটার মধ্যেও খানিকটা ঔদাসীন্ডের ছোঁয়া আছে। অবশ্য চেলাচামুণ্ডা বা ভক্তদের মাজখানে বলে থাকেন যে-সব সাধু তাঁদের সম্পর্কে আমি উৎসাহহীন। কিংবা কলকাতায় যে-সব বিখ্যাত সাধু বা মোহস্ত মাঝে মাঝে এসে ওঠেন-আর তাঁর বাড়ির সামনে বড় লোক ভরুদের গাড়ির লাইন লেগে যায় তাঁদের সম্পর্কেও আমার মনোজাব ব্যক্ত না করাই শ্রেয়। আমার ভালো লাগে একা একা ভ্রাম্যমাণ সন্ন্যাসীদের-

পৃষ্ঠা:৮২

একটু উয়াও হয়, মনের কোনো একটা ইচ্ছে উকি মারে-আমিও ওদের মতন বেরিয়ে পড়ি। জানি, খুনী কিংবা চোর-ডাকাতয়াও সন্ন্যাসীর ছয়বেশে ঘোরে। কিংবা অনেক সাধুই আসলে গেরুয়া পরা ভিখারি। অর্থাৎ সেই হায়ণের হয়তেশ। তবু প্রথম দেখলেই কোনো সাধুকে আমার রন্ড হিসেবে ভাবতে ইচ্ছে করে না, প্রথমে আমি তাদের বিশ্বাস করতেই চাই। ট্রেনের খাড় ক্লাস কামরায় একদল ছেলে একজন সাধুকে ক্ষেপাচ্ছিস। এই সাধুটির বয়েস বেশী নয়, তিরিশেষ কাছাকাছি, খুবই অপরান। সত্যিকারের গোরবর্ণ যাকে বলে, টিকোলো নাক- করে বাড়ি ও জটার বহর আছে। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে, কোনো সিনেমার নায়ক বোধ হয় শুটিং-এর গুরু সাধু সেজেছে। যা অবশ্য নয়, আশেপাশে কোনো ক্যামেরা নেই-তা ছাড়া সন্ন্যাসীর মুখে যে নির্মল ঔদাসীন্ত কোনো খুব শক্ত। সাবুটি কোন জাত নয়, বেশ দুর্বোধ্য হিন্দীতে এথা সন্ন্যাসীই মনে হচ্ছিল। নায়কের পক্ষে তা আনা বোঝা যায় না। তবে বাঙালী বলছিল। ওকে আমার খাঁটি একটি ছেলে তাকে বললো, ইস, গা দিয়ে গাঁজার বিটকেল গন্ধ বেরুচ্ছে। এই যে সাধু বাবা, একটু সরে বসো না। সাবু ছেলেটির কথা শুনতে পেল না। স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। -কি বাধা, ভগ্ন করে দেবে নাকি। -ওসব এঁটেলু এগানে ছাড়ো। সাধু হয়েছে। হেঁটে যেতে পারো না। -গাঁজা গাঁজা থাকে তো বার করো। -বাড়িটা আসল বো? -টেনে ঢাখ না।

পৃষ্ঠা:৮৩

সন্ন্যাসীটিকে নিয়ে একটা তাণ্ডব শুরু হয়ে গেল। কেউ তার। চুল দাড়ি টেনে দেখতে লাগলো, কেউ তার খোলা হাতড়াতে লাগলো, কেউ তাকে ঠেলে সিট থেকে মাটিতে বলাতে চায়। সাধুট শান্ত ধরনের, রেগে উঠছে না, স্থর্বোধ্য হিন্দীতে কি যেন বলছে আর মাঝে মাঝে হাত জোড় করছে। আমার কষ্ট হচ্ছিস। শুর জন্ম। তবে, রেলের কামরায় আট-দশটি ছেলে মিলে আজকাল। যদি কিছু কাণ্ড শুরু করে, তার তো কোনো প্রতিবাদ করা হয় না। তবু আমি মুহু গলায় বললুম, আহা থাক্ না, বেচারী চুপচাপ বসে আছে- একজন ছেলে বললো, ডঃউটি’তে যাচ্ছে, তা আবার সীটে বসা কেন। আর একজন বললো, আপনি চুল দেরে থাকুন। আপনার বঙ্গেজ কোনো কথা বলেছি।। আমাকে চুপ করেই যেতে হলো। আট দশটি ছেলের মধ্যে অন্তত চার আমি দৃঢ় নিশ্চিত যে, ঐ পাঁচজন নিজেরা টিকিট কাটেনি। তবে, আজকাল নিজেরা একটা অল্লায় করেও অল্লদের সে সম্পর্কে অভিযোগ জানানো যায়। মনে মনে বললাম সাধুবাবা, কি আর করা যাবে, সব রাবণের দোষ। এঐ ছেলেগুলোও নিশ্চয়ই আসলে খারাপ নয়। থেকে ফেরার পথে একটু আমোদ করছে। আমোদটা যে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সেটুকু খেয়াল নেই। ঐ ছেলেগুলোর প্রত্যেকের সঙ্গে যদি আলাদাভাবে দেখা করা যায়, নিশ্চয়ই দেখবো ভজ, বুদ্ধিমান ছেলে। আমারই মতন মধ্যকিছু ঘরের ছেলে তো, আমার চেয়ে আর আলাদা কি হবে। একা একা এরা প্রত্যেকেই সহজ সাধারণ কিন্তু একটা দঙ্গল হলেই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন একজন আর একজনকে টেক্কা দিয়ে খারাপ হতে চায়। খারাপ হওয়াই আজকালকার ফ্যাশান, নইলে বন্ধুদের কাছে মান থাকে না।।।

পৃষ্ঠা:৮৪

কোথায় কোন পাড়ায় কবে হুটো পাথী ছেলে চাঁবা দিতে বাজা হয়নি যাল ওয় ভরলোককে ছুরি মেরেছিল, তারপর থেকে চাঁদা আদায়কারী ছেলেদের সম্পার্কেই মানুষের একটা বিশ্রী ধারণা হয়ে গেছে। এঐ ছেলে ছটও আসলে হয়বেশী রাবণ। নইলে, পাড়ায় বয়াই মিলে চাঁদা দিলে পূজো হবে, ববাই মিলে আনন্দ করবে- এইটাই তো স্বাভাবিক। বহুকাল ধরে এ রকম চলছে, লোকে তো কখনো আগরি করেনি। করে কারুর বেশী চাঁদা দেবার অপুবিতে থাকলে ভিবো না দিতে চাইলে মারধোর করার নিয়ম ছিল না। রাধম যে ছেলে হটে। মারলো, কারা আবহাওয়া বদলে দিল। ঐ ছেলে ভুটো আসলে ভরা ভিনতাইবাজ, ভরা চাঁদা আদায়কারীর হয়বেশ ধরলো। বেন? সরাসরি ছুরি দেখিয়ে কেড়ে নিলেই পারতো। রাবণের মতন আর একটা অন্তায় করলে। বলে করা সময় চাঁদা আদায়কারীদের ওপর কলঙ্ক দিয়ে গেল। এখন কেউ হালা চাইতে এলেই লোকে সন্দেহ করে, দিতে চায় না। আর ওরাও দেখেছে, মোহ ভরা কিংবা ভয় দেখানোই সহজ পথ-ফলে সম্পর্কী। এর বিশ্রী হয়ে গেল। তেজমাসী হন্তদন্ত হয়ে এলে চোখ গোলগোল করে বললেন, জানিস, সেই মেয়েটাকে আজ আবার দেখলাম ল্যানসডাউন বোডের মোড়ে- দিক্ষেত করলাম, কোন মেয়েটা। সেই যে সেদিন এসে কাঁদছিল। কি পাজী। কি পাজী। আজও হিয় সেই এক মাল তু’ এর আগে মেয়েটি আমাদের বাড়ির দরজার কাছে বলে কাময়িল। বছর পঁচিশেক বয়েস চেহারা, দেবলে মোটামুটি ভদ্র পরিবারেরই মনে হয়। শুধু কেঁদেই চলেছে, জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলতে চায় না। আহার সেজমানী যেমন রাষ্ট তেমনি দয়ালু। কথায় কথায় লোকের ওপর রেখে ওঠেন-আমার ওপর তো

পৃষ্ঠা:৮৫

অনধবতই রেগে আছেন। আবার লোকের স্থঃগ কষ্ট শুনলে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন মনটা এক নরম। মেহমানী প্রথমে রাগ করে বলছিলেন, এই, তুমি এখানে বসে কাঁদছো কেন কাঁদবার মার জায়গা পাওনি?

মেয়েটি আস্তে আস্তে তার দুঃখের কথা বললো। কাল রাত্তিরে তায় বাবা মারা গেছেন। মায়ের খুব অণুখ। তিনটে ছোট ছোট ভাইবোন। পাড়ার ছেলেরা তার বাবার মৃতদেহ দাহ করার অন্ত উয়োগ করছে, কিন্তু ওদের বাড়িতে একটাও টাকা নেই। পাটনায় কাকা থাকেন, ডাকে টেলিগ্রাম করা হয়েছে, তিনি যদি টাকা পাঠান কিংবা আসেন ভর পরিবারের মেয়ে। কারুর কাছে টাকা চাইতেও পারছে না। তার কানের মূল ছটো বাঁধা রেখে যদি গোটা সঞ্চাশেক টাকা দিই। মেয়েটিকে দেখে সন্দেহ করার কোনো উপায় নেই। ভাষাড়া আমাদেরও তো মাসের শেষে প্রায়ই কোনো টাকা থাকে না এক টাকা ছ’ টাকা দিয়ে কাজ চালাতে হয়। তখন যদি কোনো ২ঘটনা ঘটে। এরা যাক্, মাসের শেষ রবিবারের সকালে? তা হলে তো আমাদেরও টাকার জন্ম- টাকার জন্ত চুল বাঁধা নেবার কোনো প্রশ্নই ওঠে না সেজোমাসীরই তখুনি চোখ ছলছল করতে শুরু করেছে পড়াক করে দিয়ে দিলেন পঞ্চাশ টাকা। বললেন, দারও যদি কিছু দরকার হয়, ভাল এসো-

কাল আর আসেনি, কোনোদিন আসেনি। হ’ মাস বাদে। মেয়েটিকে নেই একই গল্প বলতে শুনেছেন আর একটা বাড়িতে -সেই কাল বাবা মারা গেছে, পাটনায় কাকাদে টেলিগ্রাম, কানের খুল বারা দেওয়া। সেফমাসী বেগে আগুন। ব্লাডপ্রেসার বেড়ে। গিয়ে সেজদাসী না অজ্ঞান হয়ে যান।

মেয়েটি রাবণের মতন ওরকম ভুল করলো কেন? এরপর

পৃষ্ঠা:৮৬

সত্যিই যদি আর কাজর বাবা মারা যাবার পর হঠাৎ বিপদে পড়ে সাহায্য চায় তখন তার সত্যিকারের পুঃখের মুহূর্তেও তো সোকে তাকে যেগে তাড়া করে যাবে। কেউ বিশ্বাস করবে না। ঐ মেয়েটির। বাবা হ’ মাস ধরে প্রত্যেকদিন মারা যেতে পারে না, টেলিগ্রাম। গৌছুতে যতই দেরী হোক, ছ’ মাস লাগে না-তবুও মেয়েটির সত্যি সত্যি সংসারে অভাব আছে নিশ্চয়ই। অনেক পথ আছে। এরকম মিথ্যে গল্প কিন্তু ভিক্ষে করার তো বলায় ফল হলো এই সত্যিই যে ভিক্ষুক নাঃ, অথচ হঠাৎ বিপদে পড়েছে-সেও আর সাহায্য পাবে না। হয়বেশ খরার আগে এগুলো ভেবে দেখা নিশ্চয়ই উচিত। হাবণেরও উচিত ছিল।

পৃষ্ঠা:৮৭

১৫: এসা নায়ী কোনো মেয়েকে আমি চিনি না। কখনো এই নামেক কোনো জীবিত দেয়ের বসাও শুনিনি। কিন্তু প্রত্যেকটা নামের সঙ্গেই কল্পনার একটি মুখ থাকে। পুরতাং এলা যদি কোনো দেরের নাম হয়, তবে তার মুখচানি কেমন দেখতে হবে-বে সম্পর্কে আমার কল্পনায় একটি স্পষ্ট ছবি দিল। শামলী নামের যদ মেয়ের সঙ্গেই আাদার দেখা হোক-রী নাম শুনলেই আমার ছোট পিসীমার কথা মনে পড়ে। সাধারণত একটু কালো মেয়েদেরই নাম রাখা হয় শ্যামলী-কিন্তু আমার শ্রামলী পিসীমা ছিলেন বপএলে বলী। বড় বেশি কর্মা। একটু লম্বাটে, ডিম দ্বাদের মুখ, নাকে একটা মুক্তোর নাকছাবি-কষায় কথায় লুটোপুটি হতেন। ্যামলী পিসীমা মারা গেছেন অনেকদিন আগে, কিন্তু এখনও কোনো সপ্রতিভ, আধুনিকা মেয়ের সঙ্গে আলাপ হলে যদি শুনি তার নাম শ্রাবলী, তবুও আমার সেই হাস্তমুখী ফসা শিসীমার মুখখানাই প্রথমে মনে পড়ে। অল্পক্ষণের অন্তই যদিও পরক্ষণে সেই মুখ ভুলে সম্মুখবর্তিনীর প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়ি। মুতদের বেশী মনে রাখতে নেই। এমনকি ইন্দিরা নামটি শুনলেও আমার ইন্দিরা গান্ধীর মুখ মনে পড়ে না। ভবানীপুরে থাকার সময় আমাদের পাশের বাড়িকে। একটি ইন্দিরা নামের মেয়ে থাকতো-তেরো-চোদ বছর বয়েস, খানিকটা কালোর দিকে-বৃষ্টিভেজা মাটির মতন গায়ের রং, ঢলঢলে চোখ ছুটি-একটু বোকা বোকা-বিক গলার মাওয়াজটা বিল

পৃষ্ঠা:৮৮

শুভলক্ষ্মীর চেয়েও হরেল্য। ইন্দিয়াও বেঁচে নেই, টাইফয়েডে হঠাৎ মায়া গিয়েছিল। এখনকার মেয়েদের মধ্যে ইন্দিরা নামটা শোনা। আর মা তেমন, তবু, কোথাও টাইফয়েড অণুগটার কথা শুনলেই ইন্দিরার মুখটা মনে পড়ে এক পলক। মৃতদের মুখচ্ছবি স্মৃতিতে। সহজে মরে না। একটা পাটিতে একটি মেয়ের অপূর্ব নাম শুনেছিলান। খুব কায়দার পার্টি, বিলিতি দাফনার সঙ্গে নাচেরও বাবস্থা ছিল, ছিল চার প্রকার পশুপাখির মালে, ছিল তিন প্রকার লঘু ও কড়া মদ। আমার যে-কোনো আনন্দ উৎসবই ভাল লাগে, দিশি-বিলিতি যে- কোনো সঙ্গীত-নৃত্যই ভালো লাগে, এফ-মাবে সম্পর্কে যো কথাই নেই। শুধু ভালো লাগছিল না, উপস্থিত কিছু ছেলেমেয়েদের। আজকাল একদল গোকা ছেলেমেয়ে তৈরী হয়েছে, বাঙালী হয়েe যারা নিজেদের মধ্যে সিজিন ইংরেজিতে কথা বলতে ভালবাসে পার্টিতে সেই রকম বোকা চেলেমেয়ের দলই ছিল বেশী। তাদেরই মধ্যে। একটি মেয়ে, শাড়ি পরেছে স্কার্টের ধরনে আাঁট ভাবে পেঁচিয়ে, শিক্ষল করা চুল, মুখখানা অকমকে ভাবে মাজা, নিশ্চিত লরেটো হাউল গা খোনো মিশনারি কলেজে পড়া মেয়ে, মুধ দিয়ে ধাতব ইংরেজির পর ফুটছে। মেয়েটিকে দেখতে ভালো, অর্থাৎ তার শরীরখানি সমান্তণাতিক-সুতরাং তার সাজসজ্জা যাই হোক- ভাতে কিছু যায় আসে না-আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়েছিলাম। একদৃষ্টে। মিশনারি স্কুল-কলেজে পাড়া ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে একটা উদ্ভট ব্যাপার আমার মনে পড়ছিল। সর্বত্যাগী সহ্যানী -সন্ন্যাসিনীয়া-যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালায়-যারা নিজের দেশ-সংসার- প্রতিষ্ঠা ছেড়ে এসে এদেশের ছেলেমেয়েদের লেখা পড়া শেখানোর কাজে আত্মনিয়োগ করেছে-তাদের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েও এই সব হোলমেয়ের। বেশির ভাগই এমন উৎকট রকমের বোঝা আর চালিয়াৎ হয় কি করে? কি এর সামাজিক ব্যাখ্যা। হঠাৎ –

পৃষ্ঠা:৮৯

আমার ইচ্ছে হলো ও মেয়েটির নাম জানতে হবে। নাম না জানলে কোনো মেয়ের ছবি সম্পূর্ণ হয় না। ভিড় ঠেলে আমি আস্তে আস্তে মেয়েটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কাছাকাছি গিয়ে দাড়ালে আলাপ হবেই। হলোও তাই, আর একটি ছেলে আমার সঙ্গে মেয়েটির আলাপ করিয়ে দিল। মেয়েটির নাম শুনে আমি চমকে উঠলুম। কিছুই বুঝতে পারলুম না। মেয়েটির নাম আাটাবেজা। ভাটাবেড়া বটআচারিয়া। এ আবার কি অদ্ভূত নাম। মেয়েটি স্পষ্টতই বাঙালী, ঠোঁটের ভক্তি দেবলেই বাঙালী চেনা যায়-অতই ইংরেজি কায়দা দেখাক। একবার মনে হলো, মেয়েটির মা বাঙালী, গাব্য হয়তো অক্ত মেশের অন্ত জাতের সোক। কিন্তু কোন জাতের মেয়েদের এমন বিদঘুটে নাম হয়। আমার অথতি কাটলো না। এক বাঁকে মেয়েটিকে একটা একলা পেয়ে আমি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালুম, মুখের ভাব বেশ কঠোর করে-আপনি টাপনি নয়, সরাসরি তুমি সম্বোধন করে দ্বিজেন বরগুন, তোমার নামটা কি? ঠিক বুঝতে পারিনি তখন।

মেয়েটি চমকে আমার দিকে তাকালো, এক অনুপল আমার চোখে চোখ রাখলো, কি জানি ভয় পেলো কিনা-কিন্তু পরীবের সজাগ ভঙ্গি সাবলীল কবে পরিষ্কার কৃষ্ণনগরের ভাষায় বললো, আমার নাম জাতবেনা ভট্টাচার্য। আমার দাদামশাই এই নাম রেখেছিলেন- আমি জিজ্ঞেস করলুন, আাতবেদা মানে কি? মেয়েটি এবার রহস্ত্যময়ীর মতন হেসে বললো, আপনি বলুন না। আপনি আনেন না! খুব আনমুজুয়ার নেম, তাই না? আামি স্থল কুঁচকোল্গুন। সত্যিই জাতবেদা কাটার মানে আমি জানি না, আগে কখনো শুনিনি। আন্দাকে মানে তৈরী করা যায়। সংস্কৃত শব্দ, মাঝখানে বা শেবে বোধহয় একটা বিসর্ব থাকার কথা। যে বেদ নিয়ে জন্মেষে। জয় থেকেই যে জ্ঞানী।

পৃষ্ঠা:৯০

এই রকমই কিছু একটা হবে। জিজ্ঞেস করলুম, তোমার দাদামশাই এই নাম রেখেছিলেন? মেয়েটি আমার ইংরেজিতে ফিরে গেছে। বললো, ইয়েন, জাউস হোয়াট মাই মাদার টোল্ড মী। আই হার্ডলি রিমেম্বার হিজ ফেন দো- হঠাৎ আমার হাসি পেল। কি অদ্ভুত বৈপরীত্য। ভট্টাচার্য: ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, ভট্টাচার্য যখন-পুজারী, পুরোহিতের বাশ হতরাও বিচিত্র নয়, দাদামশাই ছিলেন সংস্কৃতজ্ঞ ও ঐতিহ্নবাদী। তারপর পৃথিবীতে কত ওলোট-পালোট হয়ে গেছে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ কত সংসারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে, পুরুত বংশের মেয়ে এখন প্রাণপণে মেন হবার চেষ্টা করছে-কিন্তু দায় হয়েছে দাদামশাইয়ের চাপিয়ে দেওয়া ঐ নামটা। এমনই নাম যে, সংক্ষেপে জাটা কিংবা বেড়া করলেও প্রতিমধুর হয় না। আহা বেচারা। এফিডেবিট করে নামটা বদলে দিতে পারে না। এই তো কিছুদিন খ্যাগে র‍্যাকয় নামে এক ভদ্রলোক এফিডেফিট করে বাল্মীকি হয়ে গেলেন। সেই থেকে কোনো উদ্ভট বিষম, উল্টোপাল্টা ব্যাপার দেখলেই আমার ঐ মেয়েটির কথা মনে পড়ে। বিয়ারের একটি গ্রাম্য রাস্তায় একটি গামছা-পরা লোকের হাতে হাত-ঘড়ি দেখেও আমার জাতবেদার কথা মনে পড়েছিল। কিন্তু এলার কথা আলাদা। এলা নায়ী কোনো মেয়েকে আমি এ পর্যন্ত দেখিনি, তবু ঐ নামের মুখখানি আমার কল্পনায় স্পষ্ট আঁকা আছে। একদিন সেই সুখ আমি বাস্তবে দেখতে পেলাম। দেখে আকস্মিক খুশির ছোয়ায় অভিভূত হবার বদলে অকারণ ভয়ে আমার বুক যুবছর করছিল। অনেকদিন বাদে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কলেজ স্ট্রীট কফিহাউসে। হপুরবেলা আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। এমন সময় পাশের টেবিলে

পৃষ্ঠা ৯১ থেকে ১০৫

পৃষ্ঠা:৯১

এল্য এসে বসলো। এলা তার সত্যিকারের নাম কিনা জানি না- কিন্তু অবিকল আমার কল্পনায় বাবা সেই দূব। রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’ এককালে আমার অত্যন্ত প্রিয় বই ছিল, সেই চার অধ্যায়ের নায়িকা এলং, সেই কোমল তেজস্বিনী প্রণয়িনী, অঙ্ক অর্থাৎ অতীন বাকে দেখে বলেছিল। ‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলেন। আমার সর্বনাশ।’ এই সেই এলাং, আজ সশরীরে, স্নপুরবেলা কফিহাউসে। চায়ের দোকানে এলার হঠাৎ চলে আসার বর্ণনা আছে চার অধ্যায় উপড়াবে। কিন্তু এ যে বাস্তব কফিহাউস। একটা অজানা ভয়ে আমার বুক ভুরভুর করতে লাগলো। একটা টেবিলে একজন যুবক একা বসেছিল, আর দুট মেয়ের সঙ্গে সেই এলা এসে বসলো সেই টেবিলে। কল্পনায় যে-রকম ছিল, অবিকল সেই রূপ। আমার ঠিক সামনে। অল্প মেয়েদের তুলনার একটু বেশী লম্বা, রোগাও নয় খুলও নয়, বল ধপে ফর্সা রা, শাদা রঙের শাড়ি, কোথাও প্রসাবনের কোনো চিহ্ন নেই-কিন্তু একটা চিত্তব এই জড়িয়ে আছে সর্বাঙ্গে। ধারালো নাক, ধারালো চোখ- তবু মুখে কোনো কঠোরতা নেই। পাতলা ঠোঁট হখানি, শুট্টু চিবুক। টেবিলের ওপর হাত রেখে তার ওপর চিবুক, হাসিমুখে কথা বলবে। ঠিক তাই। ভূত দেখলে যে-রকম ভয় করে, কল্পনার মুভিকে বাস্তবে দেখলে সেইরকম ভয় হয়। ভর-ভয় চোখে মেয়েটির দিকে আমি চেয়ে রইলুম। গুরন্ত ইচ্ছে হলো, উঠে গিয়ে ঐ টেবিলে মেয়েটিকে ভিজ্ঞেস করি, আপনার নাম কি এলা? যদি না-ও হয়, তবু আপনি এলা-আপনি আমাদের টেবিলে এসে একটু বসুন। কিভ

পৃষ্ঠা:৯২

পরক্ষণে মনে হলো, একথা বলার কি অধিকার আছে আমার। আমি তো অন্ত নই। আমি একটা এলেবেলে লোক। আমি আগে থেকেই ওর ঐ রূপ কল্পনা করে রেখেছিলুম, তাতে এর কি যায় আসে। বিশ্বাসই বা করবে কেন?বন্ধুদের সঙ্গে কথা আর জমছে না, অক্তমনঙ্গভাবে হ’-ব্য করে আমি ঘনঘন চেয়ে দেখছি মেয়েটিকে। ক্রমশ আমার জয় বেড়ে যাচ্ছে। ভয়ে প্রায় কাঁপছি তখন। আমি এত ভয় পাচ্ছি কেন? বার বার নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তরটা খুঁজে পেলাম। যদি আমার কল্পনার ছবিটা হঠাৎ কঢ়ভাবে ভেঙে যায়-সেই ভয়। যদি দেখি মেয়েটি গোপনে নাক খুঁটিছে কিংবা ওর হাসির আওয়াজ বিশ্রী কিংবা ঐ ছেলেটির সঙ্গে ও কোনো বদ রসিকতা করে তাহলে আদি জীবনে চরম আঘাত পাবো। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে: যদি আমার চোখে পড়ে খর ঘাড়ে ময়লা কিংবা কনুই-এর কাছে শুকনো। চামড়া-ভাও আমি সঙ্গ করতে পারবো না। ঐটুকু ত্রুটিও আমার।অকস্মাৎ আমি উঠে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের বললুম, চলি রে। সঙ্গে সঙ্গেই-মেয়েটির দিকে আর একবারও না তাকিয়ে-কফি হাউস থেকে বেরিয়ে এলাম। আমার কল্পনায় এলা চির রূপসী থাক। তাকে আমি নই হতে দিতে পারি না।

পৃষ্ঠা:৯৩

১৬: ছেলেবেলার মা বলতেন, অচেনা ছলে কখনও স্নান করিসনি। দলের আবার চেনা অচেনা কি, সব জলই তো সমান। আসলে, মা হয়তো বলতেন, আচেনা পুকুরে। পুকুর বা পুষ্করিণী কথাটা কি বে-জায়গার মধ্যে জল খাবে সীমাবদ্ধ আয়তনের নাম, না সেই জলটুকুরই নাম, আমি ঠিক জানি না। তবে, কোনো অচেনা জায়গার গিয়ে পুকুরে জান করতে, কোনো রোগের ভয়ে নয়, বা সাঁতার জ্ঞানের অভাবে নয়-আমি পূর্ববাংলার নদী-নালার দেশ থেকে প্রায় সাঁতারে এসেছি কলকাতা-পুতরাং ডুবে মরার ভয় নেই, কিন্তু তবু যেকোনো অজানা পুকুরে জান করতে, বিশেষত যদি আকারে একটু বড় এবং থলের রং কালো হয়, আমার ভয় ভয় করে মনে হয় পুকুরের ঠিক মাঝখানে কোনো অজ্ঞাত চরিত্রের অতিকায় প্রাণী লুকিয়ে আছে। সেই জন্তর চেহারাটা কল্পনা করতে পারি না বলেই ভয়ে আরও গা সমুদ্রম্ করে। জানা শত্রুর চেয়ে অজানা শত্রু হাজারগুণ বেশী ভরাবহ। কোনো মানুষকে একবার অপয়া বলে ঘোষণা করলে যেমন আর সে অপবাদ কখনো ঘোচে না, যে-কোনো অঘটনের কোনো-না-কোনো সূত্রে সেই লোকটি দায়ী হয়ে যায়, সেই রকম। পুকুর সম্বন্ধেও একবার ‘রাজুনে’ বা সর্বনেশে নাম হটে গেলে, সে কলম আর মুছে ফেলার কোনো উপায় নেই। এমন কোনো দিঘি বা পুষ্করিণী নেই, যেখানে ছএিকটা মানুয় বা বাচ্চা ডুবে মরেনি, মানুষ তো কত রকমভাবেই মরে, পুকুরে ডুবে মরার মধ্যে

পৃষ্ঠা:৯৪

এমন আশ্চর্য কি আছে, তবু পাড়ার কোনো প্রাজ্ঞ পিসীমা যদি উচ্চারণ করে ফেলেন, ‘ও পুকুরটা বাকুতে, প্রত্যেক বছর একটা করে মানুষ নেয়- তা হলে ভৎক্ষণাৎ সে কথা রটে যাবে, এবং স্থান পেয়ে যাবে ইতিহাসে। উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্কের পুকুর সম্পর্কে আমরা ছেলেবেলায় গুজব শুনেছি, এর মধ্যে কি একটা অদ্ভুত প্রাক্ট আছে, যা প্রতিবছর ছটো করে বাচ্চা ছেলে খায়। একবার নাকি কুড়ি হাত লম্বা একটা বিষট অত্ত জল থেকে উঠে এসে লোকজনকে ভাড়া করে আধার জলে নেমে যায়। অবস্তা, যে জয় আমরা দেখিনি, দেখেছে এমন লোকের সঙ্গেও দেখা হয়নি, কিন্তু প্রতি বছর এখনও হটো করে ছেলে মরছে ঠিকই। যাই হোক আমাদের আগের বাড়িতে একটা বেশ বড় পুকুর।। ছিল। আান্ত পুকুরটা ঠিক বাড়িতে নয়, এবং বাড়িটাও আমাদের নয়। করপোরেশনের এলাকা একটু ছাড়িয়ে, কোনো ধনী জমিদারের। একদা যে আমোদ-বাগানবাড়ি ছিল, এখন বৈঞ্চদশায় সেটাতে অনেকগুনি ফ্ল্যাট বানানো, তারই একটাকে আমরা ছিলাম। বাড়ির পাশে একটা সীহীন বাগান, সেখানে ছ’ একটা দুর্লভ- জাতীয় ফুলগাছের বঙ্গে অজস্র আগাহার খোল, তার ওপাশে পুকুর -এররা চারদিক পাঁচিল ঘেরা ছিল নিশ্চিত, এখন দূরের রাস্তার গাড়োয়ান গাড়ি থামিয়ে বলনজোড়াকে এ পুকুর থেকে জল খাইয়ে নিয়ে যায়।। সারা গ্রীষ্মকালটা ওখানে স্নান করতাম। জল বেশ হাল্কা ও ঠান্ডা, তা ছাড়া শ্বাওলা ছিল না, একবার সাঁতার কেটে এপার-ওপার হয়ে এলে শরীর ঝরঝরে হয়ে যেতো।।

সেই পুকুরটা সম্পর্কে হঠাৎ একবার অপয়া বা সর্বনেশে বদনাম আটে গেল। একটা ১৪:১৪ বছরের ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ফেলে পুকুরের মাঝখান থেকে একডুবে মাটি খুলতে গিয়েছিল। যখন কেসে উঠলো, হাতে মাট নেই, কিন্তু কপাল ও নাক জুড়ে

পৃষ্ঠা:৯৫

অনেকখানি ভাই।, ছেলেটা কোনোমতে পাড়ে দাঁতরে এসে অভধানি রক্ত ক্ষরণের পর অবশ হয়ে পড়ল্যে। নিশ্চয়ই কোনো ইটের টুকরো বা গভাল বা পাখরে গেগে-ভিত্ত লোকে অন্তরকম বন্দেহ করলো। বিশেষত, ত্রিলোচনবাবু, যিনি প্রত্যেকদিন ঐ পুকুরের একগলা দলে দাঁড়িয়ে গঙ্গান্তানের স্তব পড়তেন, ঈষৎ গম্ভীরভাবে বললেন, এ পুকুরটার দেখে আছে হে। আমি অনেকদিন থেকেই লক্ষ্য করছি। কুমীর বা তড়ণ না-ওয়া লুকোতে পারে না, জানান দেয়ই। এসব আগেকার দিনের জমিবাবরের ব্যাপার- কত সোককে মেরে হয়তো পুঁতে রেখেছিল এই পুকুরেই। নইলে, সেদিন একটা মরা শালিক ভাবছিল কেন। পুকুরে কেউ কথনর মরা পাখি দেখেছে এর আগে। ত্রিলোচনবাবুর বলার ভঙ্গি এমন, যে, শুনলেই বিশ্বাস করতে মন চায়। বিশেষত শেষের কথাটা। সত্যিই কয়েকদিন আগে। পুকুরে একটা মস্তা শালিক ভাবছিল। কি রকম যেন শুকনো। ধরনের মরা, শরীরে কোনো আঘাত নেই, অর্থাৎ কেউ উড়ন্ত পাখিটাকে মারেনি। তাহলে কি আপনিই মরে পড়েছিল? খাজ পর্যন্ত, কোনো স্বাভাবিকভাবে মুত পাখি আমি দেখিনি। প্রেমেন্দ্র মিত্রের সেই গল্প চড়ুই পাদিরা কোথায় যায়?’ বন্ধবার ভেদেছি। বাড়িতে কত চড়ুই পাখি, ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধে, অথচ একটা মরা চড়ুই, স্বাভাবিকভাবে হার্ট ফেল করে বাধক্যে ঘরা, কোনোদিন বাড়িতে দেখিনি। মরার আগে সর পাদিয়াই কোন এক অনির্দিষ্ট দেশে চলে যায় নততে এরপর ঐ পুকুরে স্নানার্থীদের সংখ্যা যত কমতে লাগলো, তত বাড়তে লাগল গুজব। কে নাকি, মন্ময়ে একলা যাটে গিয়ে দেখেছে জলের নাওখান থেকে অসংখ্য বুড়বুড়ি উঠছে। আরেকজন সত্যিই দেখেছে একটা কোন বিশাল প্রাণী গুলের মধ্যে থেকে যাপাদাপি করছে। অসম সাহসিনী মাজাদী-বই এসব শোনা সত্ত্বেও হালতে

পৃষ্ঠা:৯৬

হাসতে সাঁতরে পুকুর পার হতে গিয়ে পায়ে ক্ল্যাম্প হবে-এবং তার ধারণা কেউ তার পা টেনে ধরেছিল। আমাদের নীচের ফ্ল্যাটে থাকতো তপন, পোর্ট কমিশনে কাজ করে, ক্রিকেট খেলা চেহারা, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত ও মুর্গীর মাংস রান্না ওর জীবদের এই হট মাত্র মেশা, একদিন আমাকে ডেকে বললো, কি আপনি যে আর পুকুরে স্নান করতে আসেন না, আপনিও ভয় পেলেন নাকি। স্বীকার করতে লজ্জা হল, তবু সত্যিই আমি ভয় পেয়েছিলাম। পুকুরটা আমার কাছে আবার কি রকম অচেনা হয়ে গেছে। পুরোনো কালো ফল, সারাদিন আজকাল আর স্নানার্থীদের দাপাদাপি থাকে না বলে শান্ত ও গম্ভীর, দেখলেই আমার কি রকম। রহস্তময় যেন মনে হয়। আমাদের বারান্দা থেকে দূরে পুকুরট। একটু একটু দেখা যায়। একদিন পড়ন্ত বিকেলে সেদিকে তাকিয়ে। চমকে উঠেছিলাম। কিছুই দেখিনি, তবু চমকে উঠেছিলাম। কিছু একটা দেখবো এই প্রত্যাশা, অথবা অযৌক্তিক অলৌকিকের প্রতি আমার গোপন বিশ্বাস জন্মানোর লজ্জাতেই চমকে উঠেছিলাম হয়তো। কাঁধে তোয়ালে, বাশ দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে তপন আমাকে বললো, আত্মন, নেমে আগুন। আমি বললুম, না, এখন বর্ষা নেমে গেছে, ঐ জন্তই আর পুকুরে যেতে ইচ্ছে হয় না আর কি। যাঃ, এ আর কি এমন বর্ষা। আসুন, নেমে আগুন। আমি তো বয়েছি, ভয় কি শেবের কথাটাই আমার আত্মাভিমানে আঘাত দিল। যেতে হল। পুকুরে যাবার পথে তপন সম্ভ দেখা কি যেন একটা সিনেমার গল্প বলতে লাগলো আমায়, জলে নেমেও সেই গল্প, কখন যে আমরা পুকুরটাকে স্কুলে থেকে জান সেরে উঠে এলান খেয়ালই নেই এই রকম পর পর তিন দিন গেলাম, নির্দোষ, সরল জল, কোথায়

পৃষ্ঠা:৯৭

কোনো রহস্ত নেই, আমরা হজন যুবক স্নান সেরে আসি। বদিক আমরা দুজনেই হয়তে। মনে মনে লজ্জিত হয়ে ছিলাম একটা ব্যাপারে, আগে একবার অন্তত পুকুরটা সাঁতরে পার হয়ে আসতাম, এখন মাঝখান পর্যন্তও যাই না।এরপর কয়েকদিন যাইনি, তিনদিন প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি, স্থান না করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে খিচুড়ি খাবার দিন। হঠাৎ শুনতে পেলাম, তিনদিন ধরে তপন বাড়ি নেই। বাড়ির লোক কিছুই জানে না কোথায় গেছে। মেঘ সরে গিয়ে চতুর্থ দিনের রোদে আমরা তপনের জন্ডা সত্যিই ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। এরকম না বলে কয়ে সে তো কোথাও যাবে না। ত্রিলোচনবাবু বলবেন, পুলিশে খবর দাও হে, আর পুকুরে জাল ফেলো। পুলিশে খবর দেওয়া হল, পুকুরে জাল ফেলতে হল না। তার আগেই তপনের মৃতদেহ ভেসে উঠলো। জলে ফুলে বীরৎস চেহারা। সেই প্রথম আমি মৃতদেহ দেখলাম, যাকে আমি জীবন্ত অবস্থায় চিনতাম। আমাদের পরিবারে তখনও কোনো মৃত্যু আসেনি। পুলিশ খুব পুলিশী কায়দায় জিজ্ঞেসবাদ করতে লাগলো সকলকে, প্রথমেই ত্রিলোচনবাবুকে, আমরা সবাই বিযন অস্বস্তিতে রইলাম। এ কি ধরনের মৃত্যু তপনের, যাতে ওর সম্পর্কে শোক করার বদলে আমাদের নিজেদের সম্বন্ধেই উদ্বিগ্ন হতে হচ্ছে। অবশ্য, বেশীক্ষণ এ রকম রইলো না, তপনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল সকালে, বিকালের দিকে তপনের যৌদি বুক শেলফের পিছন থেকে চিঠিটা খুঁজে পেলেন। চিঠিটায় দিনদিন আগের তারিখ দেওয়া, বোধ হয় ঝড়ে উড়ে পড়ে গিয়েছিল টেবিল থেকে। সেই মামুলি এবং অতি প্রয়োজনীয় চিঠি, ‘আমার মৃত্যুর জন্ত কেউ দায়ী নয় আমরা সকলে নিশ্চিন্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ তপনের সম্বন্ধে সত্যিকারের ছঃখিত হতে শুরু করলাম। যদিও তপনের রুচির প্রশংসা করতে পারিনি আমি, মরতে হলে কত ভদ্র উপায় আছে, ঘুমের ওবুব, তার বদলে

পৃষ্ঠা:৯৮

অমন বিষ্ঠীভাবে ডুবে মরা। ভাহাড়া ডুবলোই বা কি করে, অমন ভালো সাঁতার জানতো। যাই হোক, এর পর পুকুরটা সম্বন্ধে বদনাম কেটে যাওয়া উচিক দিল, আরণ ওর মৃত্যুর স্বপ্ন অলের খোনো ঘোষ নেই। তা ছাড়া, জলের মধ্যের মদেরা কয় তো আর ওকে দিয়ে চিঠি লেখায় নি। বিত পুকুরটা হয়ে গেল সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। কেউ আর ওর ধারও। মাড়ায় না, নাভাব জানা সত্ত্বেও তপন ডুবে মরলো কি করে, এ বংস্তই সকলকে ভয় দেখায়।। অথ্য, খুব সহজ। হয় রূপন গলায় ভারী কিছু বেঁধে নিয়েছিল, তিনদিন পর সেটা ছিঁড়ে যেদে মৃতদেহ ভেসে ওঠে। অথবা অথাৎ আার একটা কথা আমার বায়বার মনে হতে লাগলো, হয়তে। কপন খোঁকের নাখায় পুকুরের মাওখানে ডুব দিয়ে দেখতে গিয়েছিল -কেন যেই ছেলেটার নাক ও কপাল কেটেছিল-তারপর মনে তা থাকার জন্মই হয়তো দম আটকে যায়, কিংবা কিছুতে জামা- খাগড় জড়িয়েল-কি জানি। আমার এই দ্বিতীয় সন্দেহটার তথ্য ই’এষজনকে বলতেই ভাষা ভৎক্ষণাৎ মেনে নিল এবং এটাই মুখে যুগে ছড়িয়ে গেল যে, পুকুরের মাঝখানে একটা ভয়য়র কিছু খাছে- তপন সেটাই স্কুল দিয়ে দেখতে গিয়ে মারা যায়। উল্টে সামিই তখন প্রতিবাদ করে বলি, তা হলে তপন চিঠি লিখলো কেন? কেউ সে কথা শোনে না। পুকুরটা সম্পর্কে চরম তুর্নাম জড়াবার অঞ্চ বাছি হলাম আমিই। অপনের মৃত্যু আমাকে সাহসী করে দিয়েছিল। পুকুতাটা সম্বন্ধে সং কুতামারই তখন অবিশ্বাস করতে শুরু করেছি। অতদিনের শুকুর-এর নায্য আবার জন্ম-জানোয়ার কি থাকবে? থাকলে কেউ না কেউ দেখতোই। বড়জোর মাঝখানে কোনো বাঁশ বা পাথরের টুকরো পোঁতা আছে। আমার ইচ্ছে হয় এক একবার, আমিও খুব খারাপ সাঁতার জানি না, সাবধানে একবার ওখানে

পৃষ্ঠা:৯৯

ডুব দিয়ে দেখে আসি, ওখানে কি আছে, তারপর শোকের স্কুল ভেঙে দি। তার বদলে আমরা ও বাড়ি ছেড়ে দিলাম। আমিই উয়োরী হয়ে খুব তাড়াতাড়ি খোঁজাখুঁজি করে, অমন খোলামেলা বাড়ি ছেড়ে চলে এলাম আহার করপোরেশন এলাকার মধ্যে। বাড়ির লোক অবাক হয়ে গিয়েছিল আমার ব্যাস্ততা দেখে, কিন্তু আমি সত্যিই ওবানে থাকতে চাইনি আর। জলের চহমা জানতে আমার। আর ইচ্ছে হয় না। এখন করপোরেশনের কলের চিরছিরে ভাগই আমার ভালো লাগে

* বাড়িতে শেষ ক’দিন আমার ইচ্ছে হয় পুকুরে স্নান করতে। মা দিতেন না কিছুতেই। অথচ, কুসংস্কার মেনে একটা নিরীহ পুকুরে স্থান না করার কি মানে হয়। আমি মাঝে মাঝে সন্ধেবেলা শুরুর-পাড়ে যেতাম। বাঁধানো ঘাটের ওপর বসে সিগারেট ধরাতাম। পুকুরের যেখানটায় তপনের দেহটা ভেসে উঠেছিল সেদিকে তাকালে কি রকম বিক্রী উদাসীন লাগতো। হঠাৎ একদিন কান্নার শব্দ। দেখি ঘাটের পাশে মাঠের ঘাসে বসে একটি যুবতী মেয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তখন সন্ধের আবছা অন্ধকার। মেয়েটি বোধ হয় আমাকে দেখতে পায়নি। আমি তৎক্ষণাৎ সে জায়গা ছেড়ে উঠে এলাম, মেয়েটির মুখ দেখার চেষ্টাও না করে।

নিম্নক ভদ্রতা বোধে চলে আসিনি। ভয়ে। ভয় হয়েডিল, মেয়েটিকে যদি কোনো কারবে চিনতে পেরে যাই, যদি হঠাৎ মনে। পড়ে তপনের মৃত্যুর সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক তা হলেই তো। মহামুশকিল। পুকুরের জলের বহস্তোয় বদলে চোখের দলের রহম নিয়ে তখন আমাকে আবায় মগ্ন হতে হবে। তা ছাড়া মেয়েটি যদি বলে, আপনি বিশ্বাস করেন, পুকুরের মাঝখানে কি আছে এটা জানার জন্মই শুধু তপন মরেছে। আপনি একবার ডুব দিয়ে দেখে আসুন না। সর্বনাশ, এই রহস্য কিংবা রহক্স উন্মোচন করতে

পৃষ্ঠা:১০০

১৭: না ফিজেস করলেন, হ্যাঁরে, কাল শান্তাদের বাড়িতে গিয়েছিলি? আমি বই হাতে, অন্তমনস্ক, তবু সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ। সিড়িতে পায়ের শব্দ পেয়েই বুঝেছিলাম মা আসছেন আমার ঘরে এবং এসে এই প্রশ্নটাই জিজ্ঞেন করবেন। মা তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন, কি বললো শান্তা। বইয়ের যে পাকার একেবারে শেষ লাইনে এসে চোখ গমকে আাছে, প্রতরা। সেই লাইনটা না পড়ে উত্তর দেওয়া যায় না। শেষ করে, বইটা মুড়ে রেখে চোখ স্কুলে উত্তর দিলাম, পাজামাসীর সঙ্গে দেখাই হলো না। বড় মেসো আর শান্তামাসী টালিগজ গেছেন শুনলাম, বাড়িতে আর কেউই নেই, ছোটকু বাথরুমে ছিল, আর নবনীতাকে দেখলুম তার প্রাইভেট টিউটর পড়াচ্ছে-তখন ওর সঙ্গে কথা বলা যায় না। তাই আমি বেশীক্ষণ না দাঁড়িয়ে চলে এলাম। আমার একটা কাজ ছিল। -শান্তার শাশুড়ি ছিল না। -দেখলাম না তো। -আজ তাহলে একবার জাস্ ততক্ষণে আমি আবার বইটা খুলেছি, পরের পাতার প্রখম লাইনে চোখ নিবন্ধ, উত্তর দিলাম, হাঁ, দেখি যদি পারি তো একবার যাবো আজ আবার -পান্ডার টেলিফোনটা খারাপ-আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে পারছি না, তুই একটু জিজ্ঞেস করে আসিস আাছ, এর কি মাত

পৃষ্ঠা:১০১

সেই বুঝে- -যাবে। যাবো, বলছি তো সময় গেলে আজ যাবো আছ যে যাবো ৪। বহুক্ষণ আগে থেকেই আমি ঠিক কয়ে রেখেছি, সিড়িতে যার পায়ের শব্দ পেয়েই-যত কাজই থাক আজ যাবো। কেননা, কাল আমি সত্যিই যাইনি। ওটা মিথ্যে কথা। শান্তামালীর দেয়ে নবনীতার সঙ্গে আমাদের পাশের বাড়ির দেবনাথের বিয়ের সমৃদ্ধ মা প্রায় ঠিকঠাক করে ফেলেছেন দেবনাথের যাবার চিনির বল আছে, দেবনাথ নিজেও জার্মানি থেকে এক ব্যাপারে ডিগ্রী নিয়ে এসেছে, বেশ লম্বা চওড়া হেহারা তার। খুবই হগাত্র যাকে বলে। এ নিয়ে হলে শাস্তাবাসীও আনন্দে আটখানা হবে, আমারও আনন্দের কারণ আছে, জাকারিন দিয়ে চা খেয়ে গেছে দিত তেতে। হয়ে গেল, এ বিয়ে হলে নবনীতার শ্বশুরবাড়ি গেলে নিশ্চরই চিনি দেওয়া চা খাওয়া যাবে সব সময়। * গাড়িকে নিশ্চয়ই প্ররোকদিন প্রতিরারের হাতেই চিনি সেরিন সন্ধেবেলা এর কাজ ফেলে শান্তানাসীয় বাড়িতে গেলুম। শান্তাহাবী বাড়ি ছিলেন, সদাই বাড়ি হিলেন, শাস্তানাসী এই সম্বন্ধের কথা শুনে খুব খুীনবনীতাকে আমি বিয়ের কথা বলে রাগালুম। আমার আগের দিন না আধায় কোন ক্ষতি হয়নি, নায়ের কাছে আামার মিথ্যে কথা বলাটা ধরা পড়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। লাথ কথা না হলে বিয়ে হয় না। মা-মাসীতে এখন এত কথা হবে যে আগের দিন আমি গিয়েছিলুন কি যাইনি-সে প্রসঙ্গই উঠবে না। কিন্তু আমায় দিশ্যে কথায় একটু খুঁত রয়ে গেল। শাস্তামালীর বাড়িতে এর আগে গিয়েছিলাম মাস ছয়েক আগে, সেদিন অয়দ্ধতি সবাই বসে গল্প করছিল, এমন সময় বি এশে নবনীতাকে বললো, দিদিমণি তোমার মাস্টারমশাই এসেছেন।

পৃষ্ঠা:১০২

আজদার মাঝপথে নবনীতাকে উঠে যেতে হলো, শুনলাম পরীক্ষার আগের চার মাস ওকে ওদের কলেজের একজন অধ্যাপর বাড়িতে পড়াচ্ছেন-নবনীতা বরাবরই ইংরেজিতে একটু কাঁচা। সেদিন উতি দেবে দেখেছিলাম, আমারই বয়েসী অ্যাংরি ইয়ংম্যান টাইপের এক ছোকরা ওর সেই অধ্যাপক সুতরাং, মায়ের কাছে মিথ্যে কথা বলবার সনৎ, পরিবেশ ফোটাতে আমার বিশেষ অসুবিধে হয়নি। শাস্তানাদীর ভাসুরের ক্যান্সার হয়েছে, তাঁকে দেখতে প্রায়ই এঁরা টালিগকে যান। পুরতা। শাজামাসীর টালিগঞ্জে যাওয়ার কথা শুনলে মা অবিশ্বাস কররেন না। ছোটকুর স্বভাব অফিস থেকে ফিরেই ঘন্টাখানেক বাথরুমে কাটানো -দিমে তিন চারবার চান করা ওর বাতিক। আর সন্ধেবেলা নবনীতার অধ্যাপক তো পড়াতে রোগই আসে। শান্তামামীর শাশুড়িও প্রায় রোজ বিকেলেই মহানিয়াগ মঠে বখততা শুনতে যান। সুতরাং বইয়ের দিকে মনোযোগ দেবার অভিলায় আমি চট করে মিথ্যে কথাটা বানিয়েছিলাম। তবু একটা খুতি রয়ে গেল। পরের দিন শান্তামাসীর গাড়িতে গিয়ে কথায় কথায় জানতে পারা গেল, দিন পনেরো আগে নবনীতার সেই অধ্যাপককে নাকি ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নধীন অধ্যাপকটি উগ্র আধুনিক এবং উচ্চত, বাড়ির সবার সামনে সিগারেট খায়, এমনকি ওয়া শাস্তামাসীর বর অর্থাৎ আমার জবরদস্ত বড় মেসোর কাছে সে নাকি দেশলাই চেয়েছে-এই অপরাধে ওয়ে চাকরি গেছে। শাস্তামাদী আমায় দিজ্ঞেস করলেন আমি বুড়ো গুড়ো ধীর স্থির: সার কোনো অধ্যাপককে জোগাড় করে দিতে পারি কিনা। মায়ের কাছে আমার মিথ্যে কথাটায় এই একটা খুঁক থেকে গেল-নরদীয়া প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে। তা ধারণে, আসস কাজটা তো ঠিকঠাকই হচ্ছে-সামাজ একটা মিথ্যে কথার কি আসে যায়।

পৃষ্ঠা:১০৩

কিন্তু মায়ের কাছে এঐ মিথ্যে কথাটা আমি কেন বললুম। যদি বলতুম, না মাং, ভাল শান্তামাধীদের গাড়িতে যেতে পারিনি, আজ যাবো-ডাঃলে কি এমন ক্ষতি হতো। মাছ তিন দিন ধরেই যেকে বসছিলেন, আমি রোজই যাবো যাবো করে পাশ কাটাচ্ছিলুম, পুতয়াং তিন দিনের দিন ঐ মিথ্যে কথা এবং চতুর্থ দিনের দিন সত্যিই যাওয়া। কিন্তু তৃতীয় দিনেও ঐ মিথ্যেটা না বলাই তো আমার উচিত ছিল। তবু কেন? -তারপর ইন্দ্রনাথ স্টেশনের গ্ল্যাটফর্মে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। -ভাই নাকি। তারপর? -প্লাটফর্মে বিশের লোকজন নেই, কয়েকটা ছোকর। একদিকে জটলা অরছিল-তাদের চেহারাও বিশেষ পুবিধের নয়-ইন্দ্রনাথের শরীর আমার পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়-মাখায় জল ছেটানো দরকার-অথচ ওকে ফেলে রেখে যেতে পারছি না। -কেন, তাতে কি হবে। -ইন্দ্রনাথের পকেটে চার হাজার টাকা ছিল, ও আমাকে আগেই বলেছিল-পুতরাং ওকে একা ফেলে যাওয়া, আর সেই ছোকরাগুলোর রকমসকম -তখন কি করলি। -ইন্দ্রনাথের ওপর চোখ রেখে একটু দূরে ঘোরাঘুরি করে অভিওঠে একটা কুলিকে দেখতে পেলুম, ছোট স্টেশন তো কুলিটাকে দিয়ে এল আনালুন এক বালতি-তারপর পৌনে ছ’ ঘন্টা বসে থাকার পর পরের ট্রেন যখন এলো বন্দ্রনাথ এবং আমার-হঙ্গনের বন্ধু এমন একজনকে ঘটনাটা শোনাচ্ছিলাম। ঘটনাটি সবই সত্যি। ইন্দ্রনাথের একদিন সত্যিই খুব শরীর খারাপ হয়েছিল এবং অম্লান হয়ে গিয়েছিল রাত্রিবেলার

পৃষ্ঠা:১০৪

সাটফর্মে। কিন্তু বলার সময় কেন যে একটু বদলে গেল-কিছুই বুঝি না। ইন্দ্রনাথ বলেছিল ওর পকেটে বেড় হাজার টাকা আছে। দেড় হাজার টাকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবু সেটাকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা বলার ইচ্ছে আমার কেন হলো, আমি নিজেই জানি না। পরের ট্রেন এসেছিল আধঘন্টা বাদে-আমি সেটাকে বাড়িয়ে করলুম পৌনে হ’ ঘন্টা। কেন? এমন কি আধঘণ্টার বদলে এক ঘণ্টা কি হ’ ঘন্টাও নয়, পৌনে হ’ ঘণ্টা। ঘটনাটাকে বেশী গুরুত্ব দেবার জন্ম এই মিথ্যের অবতারণা? পকেটে দেড় হাজার টাকা নিয়ে নির্জন প্ল্যাটকমে এক বন্ধুর অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাই তো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা-তাকে আরও বাড়িয়ে আমার লাভ কি। তাহলে কি, সবসময় বা ঘটে-তারই পুনরুক্তি করতে একঘেয়ে লাগে বলেই এইসব নির্দোষ মিথ্যে বলতে সাধ হয়? -রতনটা একেবারে বাজে ছেলে। কোনো কথা দিয়ে কথা বাণে না-বড়বৌদি বললেন। অফিসেও কেউ ওকে গ্রাহ করে না শুনেছি। মুখেই শুধু লম্বাচওড়া কথা, কাজের বেলা কিছু না-এবার ছোটবৌদি। পারিবারিক মহলে আমার মামাতো ভাই রতনের খুব নিন্দে হচ্ছিল। আমার ঠিক সহ্য হচ্ছিল না। রতনকে আমার খুব ভালো লাগে, চমৎকার দিলখোলা মানুন, সরলভাবে হা-হা করে হাসে, কি চমৎকার গান গায়। রতনের দায়িত্বজ্ঞান একটু কম, সময়ের ঠিক হাথে না, কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না-বিয় একই মানুষ ভালো গান গাইবে, আবার সময়েরও ঠিক রাখার আদর্শ দায়িত্বপালন। কবে-এতটা আশা করা যায় না। রতনের আমি ভক্ত। পুতরাং আমি প্রাণপণে বৌদিদের নিন্দের প্রতিবাদ করতে লাগলুন। কিন্তু বৌদিরা এসব গান টানের দিকেই যাচ্ছেন না। শুধু ঐ দায়িত্ব

পৃষ্ঠা:১০৫

জানটার ওপরই সব জোর। তখন আমি বললুম, রতনের দায়িত্বজ্ঞান নেই কে বললো। গত বস্তুত সেই যে আমরা পুরী গেঞ্জাম- রতনই বে। আামাদের বাড়ি ঠিক করে দিল। বড় বৌদি বললেন, রতন বাড়ি ঠিক করে দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি না। আমি বললুম, সত্যিই। বাতনের কথাতেই তো আমরা দাঁয়া না গিয়ে পুরী গেলুম। দরুন বাড়ি ঠিক করে। তেরে বলেছিল-আমিও প্রথমটায় ঠিক বিশ্বাস করিনি-কিন্তু রতন এর এক বস্তুতে চিটি লিখে যেদেছিল-স্বান্বিাবে চমৎকার বাড়ি দাড়া লাগলো না-এমন কি পৌঁছে দেখলুম আমাদের শুক্ত খাবার দাদার রেডি। ররনের অফিসের ম্যানেজারের বাড়ি-

-সত্যি বলছো। রতনের নিলে ঘানাবার জন্ম হতনের দায়িত্বজ্ঞানের এই স্বাধিনীটা বলার প্রেরণ। আমার ভেতর থেকেই কে যেন আমায় দিয়ে দিল। ঘটনার কাঠামোটা তো সত্যিই। আমরা ঠিকই পুরী গিয়েছিলাম, রক্তন ছিল আমাদের সঙ্গে-ঠিক করেছিলাম কোনো হোটেলে থাকবো। কিন্তু স্টেশনেই রতনের অফিসের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা হলো-তিনি কলকাতায় ফিরছেন সপরিবারে। তিনিই উৎসাহিত হয়ে বললেন, স্বর্ণদ্বারে একটা বাড়ি তিনি অ্যাডভাল টাকা নিয়ে ছ’মাসের অল্প ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু বিশেষ কারণে এক মাসের পরই তিনি ফিরে যাচ্ছেন-সুতরাং সেই বাড়িতে আমরা অনায়াবে একমাস থাকতে পারি। বাকি আশটা রং চড়ানো হলোও হরনের জন্মই তো আমরা বাড়িটা পেয়েছিলাম। ছোট বৌদি বললেন, সত্যি, রতন পুরীতে বাড়ি জোগাড় করে দিতে পারে নাকি-আমার দাদা-বৌদি পুরী যাবেন বলেছিলেন- তা হলে এরনকে বলতে হবে কে)। আমার মামায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সর্বনাশ, এদিকটা তো আমি ভেবে দেখিনি। আজ বিকেলেই রতনের কাছে ছুটতে

পৃষ্ঠা ১০৬ থেকে ১২০

পৃষ্ঠা:১০৬

হবে। রতনের প্রশংসা করতে গিয়ে আমিই তার বিপদের কারণ ঘটালুম। এইসব অকারণ মিথ্যে অকারণেই অনেক সময় ধরা পড়ে যায়। প্রথম ঘটনায় আবার ফিরে আসি। শান্তামাসীর বাড়ীর টেলিফোন আবার ঠিক হয়ে গেল, আমার আর দায়িত্ব রইলো না কিছুই। নবনীতার বিয়ে আমার মায়ের উদ্ভোগেই প্রায় ঠিকঠাক। এমন সময় একদিন মা ট্যাক্সিতে আসতে আসতে দেখলেন, কলেজের রাস্তায় নবনীতা আরও দুটি মেয়ে এবং তিনটি ছেলের সঙ্গে খুব হাসি-গল্প করছে। এতে মনে করার কিছু নেই-আজকালকার কলেজের মেয়েরা বাইরে ছেলেদের সঙ্গে মিশবে, গল্প করবে-এ তো স্বাভাবিক। মা বাড়ি ফিরে হাসতে হাসতেই বললেন, নবনীকে রাস্তায় দেখলুম, খুব বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছে, আমি আর ডাকিনি! তারপর মা শান্তামাসীকে ফোন করলেন-এ কথা সেকথা সাত কাহনের পর মা জিজ্ঞেস করলেন, নবনীতা বাড়ি ফিরেছে কিনা। ফিরেছে শুনে মা টেলিফোনেই ফিসফিসিয়ে বললেন, ঢাখ শান্তা, নবনীকে যখন মাস্টার এসে পড়ায়-তখন তোরা সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে যাস্ না! আজকালকার ছেলেমেয়ে-যতই ভালো হোক-নবনী অবশ্য সোনার টুকরো মেয়ে-কিন্তু বলা তো যায় না-কখন কি বিপদ হয়ে যায়-খবরের কাগজে যা এক একখানা মাঝে মাঝে বেরোয়। -শান্তামালী অবাক হয়ে বললেন, নবনীকে তো এখন আর কেউ পড়ায় না। -কেন, এই যে নীলু দেখে এলো গত সোমবার? -গত সোমবার? অসম্ভব! -হ্যাঁ, নীলু নিজের চোখে দেখে এসেছে-সেই মাস্টার নবনীকে পড়াচ্ছে, তোরা তখন টালিগঞ্জে গিয়েছিলি- তারপর কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। আবার সেই দৃশ্য,

পৃষ্ঠা:১০৭

আমি আমার ঘরে, হাতে বই, আমার সামনে রাশিয়া, আমেরিকার মতন হই বিশাল শক্তি, মা আর মাসীমা। শান্তমাসী: নীলু, তুই নিজের চোষে দেখেছিলি। মাঃ তুই না দেখে থাকলে কর শুধু কেন মিথ্যে কথা বললি? আমি আর কি উত্তর দেব্যে। কোনো যুক্তি নেই, কোনো উদ্দেশ নেই-আমি যে এমনিই বলেছিলাম-সে কথা তো ওঁদের বলা যায় না। সুতরাং বোকার মতন ফ্যালফ্যাল করে হাসতে হাসতে বললুম, কি যে হয়েছে। তোমরা, একটু ইয়ারিও যোয় না।

পৃষ্ঠা:১০৮

১৮: বৈষ্ণু রক্ষিত নামে একজন লোক কেইনগর থেকে কলকাতায় আসছিলেন তাঁর ভগ্নিপতির বাড়িতে। ট্রেনে ওঠবার আগে চার টাকার সরপুরিয়া-সরভাজা কিনে নিয়েছেন দিদি জামাইবাবুর জন্ম। কলকাতায় তো আর দুধ-ক্ষীরের জিনিসপত্র পাওয়া যায় নং, তাই কেষ্টনগরের নামকরা মিষ্টি নিয়ে চলেছেন ওদের খুণী করছে। ব্যাপারটার শুরু এইখান থেকে। বেচু রক্ষিত মিষ্টির হাঁড়িটা বাছের ওপর সুটকেশ-বিছানার পাশে সুকিয়ে রেখে নিশ্চিন্তে ঘুম দিয়েছেন। এক ঘুনে কলকাতা। শিয়ালদা স্টেশনে পৌছেই ধড়মড় করে উঠে প্রথেমেই তিনি খোঁজ নিয়েছেন মিষ্টির হাঁড়ির। না, কেউ চুরি করেনি, কেউ গোলেওনি। কিন্তু হাঁড়িটার ওপর ছটো নীলরঙের ডুমো ডুমো মাতি বসে আছে। ওরা সেই কেইনঘর থেকেই হাঁড়িয় মধ্যে রসের খোঁজ পেয়ে হাঁড়ির গায়ে লেগে আছে। বিরক্ত হয়ে বেচু রক্ষিত হাতের ঝাপটায় মাছি গুটোকে তাড়িয়ে বললেন, যাঃ যা। মাছি হটো একটু জন জন করে উড়লো আশেপাশে, তারপর হাতের কাপটার ভয়ে দূরে দূরে রইলো। গাড়ি থেকে নেমে কাগালে বতবন্ধি মোড়া বেজিং, বাঁ-হাতে টিনের শুটকেশ ও ডান হাতে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে বেডু রক্ষিত শেয়ালদা স্টেশন থেকে এবং আমাদের এই কাহিনী থেকে বেরিয়ে গেলেন। কেষ্টনগরের সেই নীল ডুমো মাজি হটো ভন ভন করে ওড়াউড়ি শুরু করে পরস্পাকে বললো, এ আবার কোথায় এলুম বে? চল ভালো করে আগে জায়গাটা দেখে নেওয়া যাক। এই বলে,

পৃষ্ঠা:১০৯

হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে তারা বেশ খানিকটা উচুতে উঠে গেল। মাছি হট যুবক ও যুবতী। ত্বক মাছিটি একটু চালিয়াৎ গোছের, সে বললো, বুঝেছি, এ জায়গাটার নাম নবদ্বীপ। যুবতী মাজিনী বললো, কি করে বুঝলে। -একবার নবীশের এক মাধিনীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, সে বলেছিল, গৎ, নবদ্বীপে একেবারে -বুঝেছি, নেই কে মাহিনীটাকে পেয়ে তুমি আমাকে ছেড়ে ভ্যান করতে হবে না। যাই হোক, ওরা দু’জনে উচু থেকে খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেই বুকে দেকলো, গরা জলকাতা শহরে এসেছে। কেইনগরের আসল অধ-ক্ষীর খাওয়া মান্ডি তো, বৃদ্ধি বেশ পরিষ্কার। কলকাতা শহরকে চিনতে পেরে ওরা একেবারে আজবাদে আটখানা। মাহি মাহিনীকে কালো, আর ঋগড়া করিননি। আজ জীবনটা সার্থক হলো। কলকাতা শহরের ক্ষত দাম শুনেছি, কোনোদিন কি স্বপ্নেও ভাবতে দেয়েছিলুম এখানে আসতে পারবো। কেউনগয়ের বিটি খেয়ে খেয়ে মুখ পড়ে গেছে, এখানে ওসব মিষ্টি-দিষ্টির পাট নেই, এখানে খুব ভালো ভালো নোংরা, আস্তাকুড় আর জঞ্জাল আছে।। মাতিনী বললো, ডাবো না নীচে, কত মাছি বিসৃর্গিস করছে। কত দেশ থেকে মাদি আাবে এখানে-ভাখো, রাস্তা-ঘাট একেবারে ভরা। কিন্তু নীচে নেমে এলে দেখলো, একটাও নাহি নেই, সব মানুষ। মাতি হটো খুব মুস্কিলে পড়লো, সারা শহরে আর একটাও মাছি নেই, এমন কি মশা কিংবা পিঁপড়ে এইসব ছোট ভাতের প্রাণীও নেই। সব মানুষ। কলকাতার আকাশে মাত্র এই ছটো মাছি, অনেক লোক ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।

পৃষ্ঠা:১১০

একটা বাচ্চা ছেলে বললো, বাবা, ও হটো কি চড়ুই পাখির বাচ্চা। বাবা উত্তর দিলেন, না, ওদের বলে মাড়ি, মফস্বল থেকে হঠাৎ এদে পড়েছে বোধ হয়। এই নিয়ে কাগজে একটা চিঠি লিখতে হবে তো। সব কটা রাস্তা ধপধপে করুষকে, কোথাও এক হিটে ময়লা নেই, কোথাও অজাল জমে নেই, মাছি ছটো পড়লো মহামুস্কিলে। ঝাড়দারেরা অনবরত রাস্তা সাফ করছে, ধুয়ে দিচ্ছে, নোংরা সমবার কোনো সুযোগই নেই। এ কি আর কেক্ট্রনগর, ময়রার দোকানের সামনের ভাতা ভাঁড়গুলোতে বা বস জমে থাকে তাতেই কত মাছির বাধার চলে যায়। বাড়বাররা দিনে মাত্র হবার দাঁড় দেয় কি না দেয়। আর এ কলকাতা শহর, এখানে প্রত্যেক দোকানে কাচের বারণ দিয়ে জিনিসপত্র ঢাকং প্রত্যেক বাড়ির লোকেরা মুখ বন্ধ টিনের বাকলের মধ্যে ময়লা জমা রাখে, যেখররা অনবরত এসে সেগুলো পরিষ্কার করে নিয়ে যাচ্ছে মাছি মাহিনীকে বলবো, শেষকালে কি এখানে এসে না খেয়ে মরবো নাকি। মাহিনী বললো, চল নং, মাছের বাজারে যাই, বেখানে তো মাছের কানকো নাড়িছুড়ি ফেলবেই। ঘুরতে খুবতে এলো মাছের বাজারে। মাছের বাজার ধোয়া- সাফ, কিন্তু নেই, মাছওলা মেধুনীয়া বসে বলে কীর্তন গাইছে গোল করতাল বাজিয়ে। নিরাশ মাহিনী সঙ্গী মাছিকে বললো, আম জাদের সময় হলে রাস্তায় অন্তত হ’একটা আমের খোসা ঠিকই পড়ে থাকতো। ক্ষিতে পেয়ে মাছির শরীর প্রবল হয়ে গেছে, তার গলার আওয়াজ এখন কনভনের বরলে পিনপিন, সে বললো, এ শহরকে কিছু বিশ্বাস নেই। তাও হরবো সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার কবে ফেলে। আমের সময় না হোক, কলার তো সময়। রাস্তায় একটাও ডলার। -সত্যিই। এ শহরের লোকেরা কলা খায় না নাকি?

পৃষ্ঠা:১১১

-খাদে না কেন? বোধ হয় খোসা গুচ্ছ যায়। -মাহিদের স্বঞ্চ একটু দয়ামায়াও নেই। ঘুরতে ঘুরতে এলো একটা বিরাট বাড়ির সামনে, থাকে দলে; বাইটার্স বিল্ডিং। মাছি মাছিনী একেবারে বেপরোয়া হয়ে গেছে, ভালো ভালো ময়লার বদলে ওরা এখন শুরু-কফ খেতেও রাজী সেখানে গিয়েও ওরা অবাক। মাছি মাজিনীকে বললো, হ্যাছে, কলকাতার বদলে কি আমরা ভুল করে বিলেতে চলে এলুম। মাহিনী বললো, সত্যি মানুষগুলো এমন নিষ্ঠুরও হয়। রাইটার্স বিচিায়ের কোষাও এক ভিটে ময়লা নেই, দেয়ালে পানের দিক নেই, সিঁড়ির পাশে সিকি নেই, আলুর দমের ঝোল মাখানো একটি শাল পাড়াও নেই পর্যন্ত। বকষকে তকতকে সব কিছু, লোকগুলো নিশেদে কাজ করে মাঝে মাঝে উঠে বুতুটুকু ফেলার জন্ত বারান্দায় গিয়ে যুক্ত না করে বাথরুমে গিয়ে ঢুকছে, আবার বেরিয়ে এসে সযন্তে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। এরা কি মানুষ? মানুষ এমন হৃদয়হীন হয়। মাছি বললো, হল, এখানকার মানুষেরা কিছুতেই ময়লা খাকতে দেবে না বুঝেছি। দেখি কোথায় এমন জায়গা আছে কি না- যেখানে মানুষ নেই, সেখানে যদি আপনি আপনি ময়লা-টয়ল) কিছু থাকে। কিন্তু কলকাতার লোক এমন বোকা নয় যে, ফাঁকা জায়গা স্নানতে দেবে। কোথায় মানুষ নেই। মাঝে মাঝে পার্ক- নয়বান তাও মামুন দখল করে রেগেছে, সব জায়গা মানুষ রবে বলে পাহারা দিচ্ছে, যাতে কেউ কিছু নোংরা না করে ফেলে। নাঃ, মাছি ছটো ভাবলো, মানুষকে আর বিশ্বাস নেই। এবার জয়-জানোয়ারের খোঁজ করা যাকু। হ্যাবে, এ শহরে কি বেড়াল ছানা মরে না। কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে নাই তাদের মরা দেহগুলো কোখায় যায়। রাস্তায় একটাও তো নেই। মোয়ের গাড়ির মোষের বীরে যা পর্যন্ত নেই, ব্যাপার কি। মাছি মাহিনীকে

পৃষ্ঠা:১১২

বললো, বুঝলি, এ সবই আমাদের না খাইয়ে মারবার বড়যন্ত্র। মাহিনী বললো, চল, প্রাণ থাকতে থাকতে এ শহর থেকে। পালাই। আমাদের কেইনগত এর থেকে ঢের ভালো ছিল। এই অম্লই এ শহরে মিষ্টি বন্ধ করেছে, বুঝলি? যাতে আার। কোনো জায়গা থেকে মাছি না আসে। মিষ্টির গন্ধ পেলে দেশ- বিদেশ থেকে মাছি তো আসতোই। -মিষ্টিকে চাইছে। একটু শয়া জঞ্জালও রাখতে নেই আমাদের জন্ম। চারপাশের এত বড় বাড়ি মাঝখানে একটু ফাঁকা মতন জায়গা। ভাল করে ওরা লক্ষ্য করে দেখলো, ঠিক ফাঁকা নয়, ছোট ছোট স্বরের মতন। মাধিনী আহলাদে বললো, চল, ঐখানে যাই, ঐ ছোট ছোট ঘরগুলো নিশ্চই মানুবের নয়, ভমানে জয়রা থাকে। অন্তরা তো নিজেদের ময়লা লুকোতে পারবে না। ওপর থেকে নীচে নেমে এল্যে খাবার। কোথায় জন্তু- জানোয়ার। একটা বস্তি-এখানেও মানুষ। আর কি আদর্শ বস্তির আদর্শ মানুষ। পরিষ্কার নিকানো খরগুলো, অনেক ঘরের সাদনে আবার আয়না দেওয়া, পরিচ্ছন্ন আবহাওয়া, নর্দমা দিয়ে যে জল বইছে, তা পর্যন্ত পরিষ্কার। ছোট ছোট ছেলেরা পর্যন্ত। নাকের সিক্রি ফেলে রাস্তা নোংরা করার বদলে নিজের সিজি নিজেই খেয়ে ফেলছে। -মাহিনী, আজ আর বাঁচার আশা নেই। -এই নাকি কলকাতা। এই শহরের এত নাম ডাক। পূর্ব পুর -শুজব। মাছি-সমাজে যে বলে কলকাতা একেবারে স্বর্গের মতন, যেখানে সেখানে ময়লা-নোংরা ছড়ানো, এবার বুঝবি তে সব গুজোর। কলকাতা না দেখেই কলকাতা বন্ধা বিলেত না গিয়েই বিলেত ফেরৎ।

পৃষ্ঠা:১১৩

বিকেলের দিকে মাছি হটো একেবারে করপোরেশনের অফিসে গিয়ে উপস্থিত। স্বয়ং নগরপালের ঘরে গিয়ে তাঁর নাকের সামনে জন স্বন করতে লাগলো। নগরপাল আংকে উঠে বললেন, কি। আমার শহরে মাদি! তাজ্জব কাণ্ড। কে কোথায় আছিস। একদল লোক ছুটে এলো, সবাই মিলে তাড়া করতে লাগলেন, মাছি দুটোকে। কোথা থেকে ছুট্টো উটকো মাছি শহরে ঢুকে পড়েছে, এই নিয়ে কলকাতার নামে কলঙ্ক রটে যাবে। খবর আমার কাগজে বেরিয়ে যায়। মারো মারো। কাল না’ত্র মাছি ভুটো কিন্তু ভয় পেয়ে বেরিয়ে গেল না। নগরপালের কাছাকাছি উড়তে লাগলো। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ওরা একেবারে সুমধু সারাদিন কোথাও একটু বসারও জায়গা পায়নি, গায়ের সেই চিরুণ। নীল রং মলিন হয়ে গেছে, গলার আওয়াজ প্রায় শোনাই যায় না, করা মরীয়া হয়ে নগরপালের মুখের সামনে ঘুরে ঘুরে কাতরভাবে। অভিযোগ জানাতে লাগলো, অন্তায়। এ আপনার অল্লায়, বিদেশ বিস্তৃত্ব থেকে দু’একটা পোকা-মাছি এখানে বেড়াতে এলে-তাদের কড় আপনি কোনো ব্যবস্থাই রাখেননি। শহরের কোনো একটা।। জায়গায় অন্তত একটুখানি ময়লা তাদের জন্ম রাখা উচিত ছিল। সারা শহর ঘুরে দেখলুম, কোথাও এক হিটেও ময়লা নেই। এ আপনার অন্তায়। আমাদের মেরে ফেলতে চান। এ রকম করলে কলকাতায় বেড়াতে আসবে কি করে, অ্যা? আমরা আর কতখানি খাবো, অন্তর এক বন্ধি ময়লাও যদি রাখতেন-

পৃষ্ঠা:১১৪

১৯: জামাটা পিজে গেছে, কলারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে আশ, কাঁধের পাশে সামান্ত ফাটতে শুরু করেছে, ডান হাতের কনুই-এর। কাছটায় একবার শেলাই করা, তবু জামাটা ফেলতে মায়া হয়। নীল-সাদায় ডোরাকাটা আমার জামাটার বয়েস পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। এবার ওকে তোরজের নীচে নির্বাসন দেবার কথা, কিংবা আগামী। বছরের দোল খেলার অন্ত জমিয়ে রাবা, কিংবা বাসনওয়ালীদের রুক্ষ হাতে সমর্পণ করলেও হয়, কিন্তু কিছুতেই জামাটাকে বিদায় দিকে আমার ইচ্ছে করে না, নরম মোলায়েম স্পর্শ দিয়ে সে আমার শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে ডায়িং-ক্লিনিং-এ পাঠালে পাড়ে এর সর্বস্বান্ত হয়ে যায়, তাই আমি ওকে নিজেই সাবধানে বাড়িতে কেচে নিই। এখন শীতকাল কোর্ট বা সোয়েটারের নীচে পরলে ওর ছেঁড়া আশ আর তেমন চোখে পড়ে না, কিন্তু বুকের কাছাকাছি থাকে। জামাটাকে বিসর্জন দেওয়া মানেই তো কত স্মৃতি নষ্ট করা। অনেক জামা-কাপড়ের মধ্যে কোনো একটার প্রতিই অনেক সময় বেশী মায়া পড়ে গত পাঁচ বছরে আমার কত দামা ছিঁড়লো। হারালো-কিন্তু এই নীল-সাদায় জোরাকাটা জামাটাই আমার প্রাণের বন্ধু।মনে পড়ে পাঁচ বছর আগে নতুন এই জামাটা কিনে জনতায় বেড়াতে গিয়েছিলুম। রামপুরহাট থেকে বাসে যাবার পথে প্রবন শীতের অবসন্ন আলোর সন্ধ্যায় কোনো একটা কারণে হতাৎ আমার

পৃষ্ঠা:১১৫

খুব মন খারাপ হয়ে যাবার পর চোখে পড়েছিল ছোটখাটো হ’ চারটে পাহাড় অবোলা হুন্থর মতন রাস্তার খুব কাছেই দাড়িয়ে আছে। আমি হিমালর অভিযাত্রী সংঘের সদস্ত কোনোদিনই হবো না, কিন্তু গ্রামই আমার কোনো পাহাড় চূড়ায় উঠতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে কোনো পাহাড়ের শিখরে একা উঠে উড়িয়ে দিই আমার নিজস্ব পতাকা। সেদিন হাতের কাজেই গরুগুলো চমৎকার শান্তশিষ্ট পাহাড় দেখে আমার খুব লোভ হচ্ছিল। এই নীল-সাদা জোড়াকাটা ভাদাটাকে আমি সেদিন পতাকা করে উড়িয়েছিলাম। সেই বাসে চারজন প্রেসিডেন্সি কলেজের যাত্রী ছিল। তি অধমকে তথ্য আর খুনগুটি হাসি তাদের, কার না ইচ্ছে হয় ওদের অজে একটু ভাব জমাতে, সংক্ষিপ্ত প্রবাবের দিনগুলো রঙ্গরসে ভহাতে। কিন্তু আমি হেরে গেলুম, যেমন অমেক খেলাতেই হেরে যাই। যাস ছাড়ার আধ ঘন্টার মধ্যে একটি মেয়ের ভ্যানিটি ব্যাগ পড়ে গিয়েছিল, আমি শশব্যক্তে সেটা স্কুলে দিয়ে ভূমিকা। পর্যন্ত সেরে যেগেছিলুম। মেয়েটি আমার দিকে মূহু হেসে বলেছিল, হক্তবাদ। আরও আড়াই ঘন্টা এক সঙ্গে যেতে হবে-মাঝপথে ওদের অঞ্চ যা এনে দিয়ে কিংবা অল্প কোনো ছলে ওদের সঙ্গে আলাপ জমাবার পরিকল্পনায় মশগুল ছিলুম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি হেরে গেলাম। মেয়ে চারটি তাদের কাচ ভাঙা কণ্ঠস্বরে প্রেসেডেন্সি ভলেফ লেকে সাঁতারের ক্লাব, নিউ মার্কেটে কোন্ কোন চিত্রাভিনেত্রীকে নিয়মিত দেখা যায়, এই সব আলোচনায় বিভোর হয়েছিল। আমি মন দিয়ে ওদের কথা শুনছিলুম, ওদের মুখের রেখায়, হাসির ভঙ্গি, শাড়ির ভাঁজ-এবং মেয়েদের আরও যা-যা দেখার শুধু তাই বেখছিলুম, তখন জানালার বাইরে তাকাইনি, পাহাড় কিংবা শুঙ্গল দেখিনি, প্রকৃতি দেখার সময় ভিল না। চোখের সামনে জ্যান্ত প্রকৃতি থাকতে কে আর বন-জঙ্গল দেখতে

পৃষ্ঠা:১১৬

চায়। হঠাৎ ওদের মধ্যে একজন তার হাতের কব্জী তুলে বললো, ইস, ঘড়িটা বোধ হয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনুরাধা, তোর গড়িতে কটা বাজে রে? চারটি মেয়েরই হাতে ছোট ফুলজ্বলে ঘড়ি, কিন্তু দেখা গেল চারজনের খড়িতে চাররকম সময়। তাই তো স্বাভাবিক। ওরা তন্ত্রী, ওরা যুবতী ও সৌভাগ্যবতী-ওরা চারজনই আলাদা আলাদা সময় ভোগ করবে-ভাই তো স্বাভাবিত। কিন্তু ওরা সাটক সমর জানার জন্ম ব্যস্ত হয়ে উঠলে। ওরা সময় নিয়ে কলহ করে। কালহরণ করতে লাগলো। অনুবাবার ধারণা তার বড়িটাই ঠিক, কিন্তু রুচিরা বলছে তার ঘড়ি রেডিও মেলানো। পরিমিতার বৃঢ় বিশ্বাস তার অড়ি কখনো এক সেকেণ্ডর গ্রো-ফাস্ট হয় না- আর দময়ন্তীর ঘড়ি তো গেমেই আছে-খুকু খুকু শব্দও নেই। মোইয়াই ওদের পরস্পরের ঘড়িতে পাঁড় থেকে আধ ঘন্টা সময়ের তফাৎ। শেষ পর্যন্ত তার ঘড়িতে ঠিক সময়-তা জানার জন্ম ওরা পৃপ্তিরের মধ্যে বাজি রাখলে।। কাচরা বললো, অণ্ড কাকর ঘড়িতে ভাগ তাহলে কটা বাজে। মেয়েদের সবচেয়ে কাছের সীটে আামি ববে আছি। আমার ফুলহাতা নীল-সাদা ডোরাকাটা জামাটায় কজি পর্যন্ত বোতান আটা। ওরা আমার দিকে আলতোভাবে তাকিয়ে পরোক্ষে প্রশ্ন করলো, কটা বাজে। কিন্তু আামার সঙ্গে ঘড়ি নেই, আমি ঘড়ি হাতে দিই না। সময়কে অত নিখুঁতভাবে জানার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আলোর যেমন সাতটা রং, সেই রকম ভোর, সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধে, রাত্রি, গভীর রাত্রি-এই সাতটা বেলা আমি খালি চোখে দেখতে পাই-এতেই আমার কাজ চলে যায়। কিন্তু মেয়েগুলোর সঙ্গে আলাপ করব এই তো দুযোগ। গড়ি নেই শুনলে ওরা কি আর আমায় পাত্তা দেবে? আমার বেশ-ভূমা দেখে ওরা ধরেই নিয়েছে-আমার যখন চোখ, কান, নাক সবই

পৃষ্ঠা:১১৭

ঠিক আছে-তখন হাতে খড়িও আছে-ভাই তো থাকে। সুতরাং আমি স্মাট হবার জন্ত বললুম, আপনাদের ঘড়ির সময়গুলো যোগা করে চার দিয়ে ভাগ দিন-তাহলেই ঠিক সময় পেয়ে যাবেন। মেয়েদের কোনো উত্তর দেবার সুযোগ না দিয়েই আমার পাশের। সাঁট থেকে একজন যুবা বলে উঠলো-এখন ঠিক চারটে ধেছে সাতচল্লিশ। যুবকটি আজিন গোটানো কঞ্চি উঁচু কবে গড়িটা। চোখের সামনে তুলে ধরেছে-ঘড়িটার চেহারাই এমন ইম্প্রেসিভ যে দেখলেই মনে হয়-ওরকম ঘড়ি সময় দিতে পারে না। যুবকটি তবুও তার সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করলো, কী রে বরুণ, তোর ঘড়িতে কট্য বাজে। সঙ্গী উত্তর দিল, ঠিক ঐ চারটে বেজে যাতচল্লিশই। রুচিয়া সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো, দেখলি, বলেছিলাম না, আমারটাই- যুবক হজমের নিখুঁত গোশাক, চুল ও জুত্যে সমান ঝকৎকে এবং ওদের হাতে সঠিক সময়। ভরাই জিতে গেল। যুবাদ প্রজনের একজন এঐ মেয়েদের মধ্যে একজনের দিকে তাকিয়ে বললো, টাচ্ছা, আপনি কি প্রশান্ত-র বোন। সেই মেয়েট সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভাসিত মুখে বললো, হাঁ, আপনি আমার দাদাকে চেনেন বুঝি। যুবকটি বললো, হাং চিনি, মানে আপনার বাবার এক বন্ধু আমার খুব বন্ধু, সেই হিসেবে একবার আমার বস্তুত নাম সিদ্ধার্থ মিত্র। রুচিরা। বলে উঠলো, ও, সিদ্ধার্থ-মা। হ্য, হ্যাঁ সব মিলে এরপর আর কথার অভাব হয় না-যুবক গুটির সঙ্গে মেয়ে চারটি প্রচুর ভাব বিনিময় করতে লাগলে।।। আমি একেবারে হেরে গেলুম। আমার দিকে ওরা ফিরেও চাইলো না। বিষণ্ণ মুখে আমি প্রকৃতি দেখা শুরু করলুম জানলা দিয়ে। সূর্য সবে ডুবছে, ডিমের কুসুম-লাল একদিকের আকাশ। চওড়া পথে শুধু আমাদের যাসটা একমাত্র ছুটছে, মাঝে মাঝে ধাবমান গাছ, দূরে-কাছে ই-একটি টিলা। খারাপ হলেই প্রকৃতিকে

পৃষ্ঠা:১১৮

বেশী ভাল লাগে সন্দের নেই। মেয়ে চারটিকে ক্রমশ আমার অনন্ত লাগতে লাগলো-মনে হলো, হালক। প্রগলভ, ফণ্ডকে মেয়ে সব-সময়ের মর্ম বোঝে না-তবৃদ্ধ হাতে গড়ি পরা চাই। আর ক্রমশই আমি পথের পাশের নীরব দৃশুে যুদ্ধ হয়ে যেতে লাগলুম। বাল খামলো এক জায়গায়। চা খেতে নেমে আমি কন্ডাক্টরকে ফিজেন করলুম, এরপর আরও বাদ আছে? সে বললে, অনেক অনেক। সেই বাসটা যখন আবার হাড়লো-আমি আর তাতে উঠলুম না। আস্তে আস্তে পথ ছেড়ে মাঠের মধ্যে হাঁটতে লাগলাম। বাল ককের মেশানো জমি, সদনে আর মহয়। গাছ এরিক ওদিক ছড়ানো। নির্জনতা এখানে গগনস্পর্শী। কাছেই একটা খুব ছোট পাহাড়, পাহাড় নয়, টিলা কিংবা চিবিও বলা যায়-আমি সেটার দিকে এগিয়ে গেলাম মনের ভেতরটা বিষন ভারী, বিজ্ঞতা আর অভিযান ভাল বেঁধে আছে। সেই নির্জন প্রান্তরে একাকী ফাড়িয়ে মনে হল যেন সারা জীবনটাই বঞ্চিত হয়ে গেছি। অথচ কি জন্ম? বাসের মধ্যে চারটি ঝকঝকে মেয়ে আমার সঙ্গে কথা না বলে আর যুজনের সঙ্গে কথা বলেছে, সেই জন্ম। অসম্ভব অবাস্তব এই বিষয়তা-সামান্ত একটা জিনিসও না পেলে-সারা জীবনের সমস্ত না পাওয়া হাথ এসে ভিড় করে। ডিসাটার পাখরগুলো খাড়া এবং মম্বণ-একটাও গাছ বা লতা নেই। কিন্তু খাঁজ রয়েছে অনেক, বেশী উচুও নয়। একবার সামান্স পা পিছলে বাক্কা খেতেই ধারালো পাথরের খোঁচায় কদুই-এর কাছে জামাটা ছিঁড়ে গেল। ইস, নতুন জামা। আর একটা হাথ বাড়লো। যুক্তিসংগত ভাবে পর্যাপ্তভাবে আজ করার সময়।

পৃষ্ঠা:১১৯

কিন্তু টিলাটার ওপরে যখন উঠে দাড়ালাম, সর বদলে গেল। বুবের মধ্যে এক ধরনের নিঃবঙ্গতা আছে। কিন্তু প্রাকৃতিক নিঃসঙ্গতা এর বিশ্বাস যে তার রূপ: অ রকম। টিলার ওপর গাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত দেয়া যায়, সাঁওতাল পরগণার আকাশ ও প্রান্তর। দূরের গ্রামে ছ’ চারটি ফুটকি ফুটকি আলো-এছাড়া পাতলা জল মেশানো ছাই রঙে ভরে গেছে দশদিক। টিলার ওপর খানি এক। দাড়িয়ে কিন্তু একটুও নিঃসঙ্গ মনে হলো না। মনে হলে। এই পাহাড় এই আাকাশ ও ভূবিস্তার-এই বুনো ঝিঝির ডাক • হাওয়ার খেলা-এ সবই যেন আমার। আমি এদের সম্পূর্ণ ভাবে ভোগ করতে পারি। আমি জীবনে অনেক খেলায় হেরে গেছি-কিন্তু আমি একটা পাহাড় ক্ষয় করেছি। এই পাহাড় চূড়ার আমার পতাকা উড়িয়ে দিতে হবে। পকেটে একটা রুমাল পর্যন্ত নেই, আমি তখন আমার নীল-সাদা ডোরাকাটা জামাটা খুলে পভাষার মরন উড়িয়ে আপন মনে বলেছিলাম, এই পৃথিবীতে বেঁচে খাকাটা বড় নবুব। যে যাই বলুক, নামান হংগ কর মিলিয়ে বড় আনন্দেই বেঁচে আছি। হে সময়, আমাকে আর একটু সময় দাও।

পৃষ্ঠা:১২০

২০: শিলচয় থেকে লামডিং পর্যন্ত, এরকম খারাপ ট্রেন লাইন ভারতবর্ষে আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। কামরাগুলো যেমন নোংরা তেমনি ছোট ট্রেন, অনিয়মিত চলাচল, অস্বাস্থ্যকর, আর ভিড়ের কথা না বলাই ভালো। ফাঁসি থেকে নিপুর আসার সময় প্রায় এই রকম হাসহ ট্রেন যাত্রার অভিজ্ঞতা আমার একবার হয়েছিল, কিন্তু আসামের ট্রেনের অবস্থা আরও খারাপ। তবে, শিলচর থেকে সামডিং পর্যন্ত এমন অপূর্ব সুন্দর পথ আর কোথাও আছে কিনা সন্দের সমতলভূমি ছাড়িয়ে পাহাড়ের বেজে এসে ঢোকার পর ট্রেনের কামরা থেকে একবার বাইরে তাকালে মাত্র চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না। ছ’ পাশে কি আদিম অন্ধকার বন, মনে হয়, ঐ সব পাহাড়ী জঙ্গলে কোনদিন কোন মানুষের পায়ের ছাপ পড়েনি, সভ্যতার জন্মের আগে থেকে ঐ সব অঙ্গলে অন্ধকার। বাসা বেঁধে আছে হর্দায় সরল স্বাস্থ্যবান পাহাড়ী নদী, নামও তার কি একন, খাটিংগা। বেশ আস্তে আস্তে চলে ট্রেন, অসাধা কর্ণার রূপর ব্রিজ, মাঝে মাঝে ছোট্ট ছোট্ট স্টেশন। নিরভিমান ছিমছাম স্টেশন, পাহাড়ের গায় খাপ খাইয়ে নিয়েছে, একটি বা ছুটে লোক ওঠে নামে। স্টেশনের নাম এই রকম হারাংগাজাও। এইসব শব্দ শুনলেই বুকের মধ্যে রোমাঞ্চ হয়। আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে হাফলং বান্ধিলাম। ট্রেনের কামরায় এত ভিড় যে বলবার জায়গা তো দূরের কথা, ভালো করে দাড়াতেও পারছি না সোজা হয়ে। সব জায়গায় মালপত্র ঠাধা, তারই মধ্যে

পৃষ্ঠা ১২১ থেকে ১৩২

পৃষ্ঠা:১২১

শিশু, বৃদ্ধ, অনুস্থ নারী, এমন কি ভূজন খুনী আসামী পর্যন্ত-পুলিশ তাদের হাত কড়া দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরাও যে কত জাতের বায়াসী, অসমীয়া, পাঞ্জাবী, মাড়োয়ারী, মাদ্রাজী আার আঠারো কেন পায়াড়ী জাত। দরজার কাছে মেঝেতে মালপত্র পেতে তার ঋগর বসে আছে পাঁচট খাসিয়া যুবতী, গাড়-উজ্জল রঙের স্কার্ট পরা, হাতে চওড়া ব্যান্ডের ঘড়ি, চোখে সান গ্লাস-দেখলে ভারতীয় বলে মনেই হয় না, অনেকটা স্প্যানীশদের মতন লাগে। আসামে ট্রেনে চাপলে একবার না একবার নিজের দেশের কথা মনে হবেই। এর রকমের চেহারা।, এক রকমের জাত ও ভাষা অথচ সবাই এক দেশের মাহব, এটা অবিশ্বাস্ত মনে হয়। একধাও মনে হয়, এদের সবাইকে কে এক করে দেলাবে। মেলাবার কোন মূলমন্ত্র কি সত্যি আছে। রেলের কামরায় প্রায় কেউই কারুর সঙ্গে কথা কাকর সঙ্গে কারুর মিল নেই। বিশেষত পাহাড়ের আচুষরা সমতলভূমির মানুষদের বিশ্বাস করে না। কারণও আছে তার। তার একটা প্রমাণ দামি নিজেই। দেখলাম।

আসাদের আয় সর্বত্র রাইফেল হাতে মিলিটারির আনাগোনা।। এমন কি ট্রেনের জানলা দিয়ে তাকালে মাঝে মাঝে চোখ পড়ে, মারুণ নির্জন পাহাড়ী জঙ্গলে ঝর্ণার ওপর কোনো সেতুর পাশে। সাব-মেশিনগান হাতে একজন সৈনিক দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। স্বাবোটাজের ভয়। ঐ সৈনিকটির জন্ম মায়া হয়, ওর মতন নিঃসঙ্গ আর কি কেউ আছে? ট্রেনের কামরাগুলোতেও মিলিটারির অভাব নেই। তাদের জয় আলাদা রিজার্ভড কম্পার্টমেন্ট তো রয়েছেই, সাধারণ যাত্রী- কামরাতেও তাদের আনাগোনা। রাইফেল কাঁধে একজন বিশাল চেহারার গাজানী দৈনিক আমাদের কামরায় খুংছিল, হঠাৎ সে আমাদের সামনের একটি পাহাড়ী যুবককে এসে বললো, তোমার

পৃষ্ঠা:১২২

ভালপত্র কোথায়। খুলে দেখাও। আমরা ছাড়িয়েডিলান, যুবকটি বসবার জায়গা পেয়েছিল। ছিপছিপে চেহারার সুদর্শন তরুণ, বয়েস তেইশ-চল্লিশ, যে নাগা কি লুবাই কি বাসিয়া কি বাহাড়ী তা চেনার ক্ষমতা আমার নেই। তার হাবভাব ইওরোপীয় ধরনের, তার পোশাক, গায়ের বা যার শরীরের গড়ন দেখলে ভারভীরের বদলে স্প্যানীশ বা কোনো ল্যাটিন জাত বলেই মনে হয়, শুধু হয়ত নাকের উচ্চতায় একটু তারতম্য হবে। যুবকটি বললো, তার সঙ্গে একটি গুটকেশও বেডিং আছে। কিন্তু অনেক মালপত্তরের নীচে চাপা পড়া, এধন বার করা মুস্কিল। কথাটা মর্মে মর্মে যে সত্যি, তা আমরাও বুঝতে পারছিলাম। অত ভিড়ে সব মালপত্র একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে, হঠাং কিছু একটা বার করা সত্যিই দারুণ ঝড়াটের ব্যাপার। সৈনিকটি তবু কঠোর ভাবে বললো, নং, খুলে দেখাও। যুরকাটি তখন পকেট থেকে তার পরিচয় পত্র বার-করলো। সে কি একটি সরকারি চাকরি করে-এটা দেখেও আাশা করি তাকে দেড়ে দেওয়া হবে।

সৈনিকটি বললো, ওসর জানি না, মালপত্র খুলে দেয়াও। -দামি যে-স্টেশনে নামবো সেখানে প্ল্যাটফর্মে যদি খুলে দেখার হলে হবে।। -না, এক্ষুনি বেখাতে হবে। যুবকটির মুখে তখন রাগ, ঘৃণ্য না অভিমান-কিংবা দিনটেই মেশানো। কিন্তু সে ধৈর্য হারালো না। অতি কষ্টে সে তার সুটকেস ও রেডিং টেনে বার করলো, খুললো। আমরাও উকি মেরে দেখলাম, তার সুটকেসে নিছক প্যান্ট-রাট ঘরে থরে সাজানো, এছাড়া একটি অর্ধ-সমাপ্ত মদের বোতল ও একটি বাইবেল। নিষিদ্ধ। কিংবা ভয়াবহ কিছুই নেই। তবু সৈনিকাট ছাড়লো না, তার

পৃষ্ঠা:১২৩

দেভিওে খোলালো, সেখানে শুধু বিছানা। সৈনিকটি তখন চলে গেল অদুদিকে। ব্যাপারটা আমাদের সবারই খারাপ লেগেছিল। আমি যুবকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ আপনার বাক্স বিছান। খুলতে বললো কেন? সে কোন উত্তর না দিয়ে অক্ষদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলো। তার ঠোঁটে একটা তেফী অবজ্ঞার ভঙ্গি। সে আমাদের আত্মীয়। মনে করে না। তবু আমার কৌতূহল গেল না। আনি তখন ভিড় ঠেস্টুেলে পাঞ্জাবি সৈনিকটির কাছে গিয়ে নিরীহ গলায় জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, আপনি ঐ লোকটির বাক্স-বিছানা খুলে দেখাতে বললেন কেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, সৈনিকটি যা উত্তর দিল, তাও খুব অযৌক্তিক নয়। বে বললো, বুঝতেই তো পারছো, সামরিক দিক থেকে আসামের গুরুত্ব করখানি। কেউ কোনো বন্দুক-পিত্তল বা এক্সাম্লাসিভ নিয়ে যাচ্ছে কিনা, সেটা চেক করতে হয়। আর কারুকে না করে শুধু ঐ ছেলেটিকেই বললে কেন? ট্রেনের সমস্ত যাত্রীর সমস্ত মালপত্র তো আর সার্চ করা সম্ভব নয়। তাই বেছে বেছে হঠাৎ এক একজনকে বলতে হয়- যাতে অন্তরাত ভয় পেয়ে যায়। -কিন্তু ঐ পাহাড়ী ছেলেটিকেই শুধু বললে কেন? আমাকেও তো বলতে পারে -তারও কারণ আছে। বিদ্রোহী নাগা আর মিজোদের মতন। অস্ত্র কোনো পাহাড়ী হঠাৎ হয়তো হঠকারীভাবে সশস্ত্র। বিদ্রোহ শুরু করতে হবে। সেইজক্ত আমাদের সব সময় চেক করতে হয়। সৈনিকটির যুক্তির সারবত্তা আছে। কিন্তু ঐ পাহাড়ী ঢেলেটির

পৃষ্ঠা:১২৪

দিক থেকে। সে নির্দোষ। সে ভাবলো, তার নিজের দেশে তার ইচ্ছে মতন চলা-ফেরার স্বাধীনতা নেই। অথচ অন্ত প্রবেশের লোকেদের আছে। একজন বাঙালী বা মাদ্রাজী আসামে যেমন খুশী ঘুরে বেড়াতে পারে, কিন্তু আসামের আদি আধিবাসী হয়েও তাকে পুলিশের হাতে হয়রান হতে হবে। -যার সঙ্গে তার চেহারায়, ব্যবহারে, ভূমায় ঐ পাঞ্জাবী সৈনিকটি কোনো মিল নেই- তাকে সে কখনো নিজের দেশবাসী এবং বন্ধু বলে মনে করতে পারবে-এরপর। যাক গে, আসামের সমস্ত্য নিয়ে মাথা ঘামাবো, সারবান মাথা আমার নয়। ও নিয়ে দিল্লীর লোকেরা মাথা ঘামাক। হাফলং-এ গিয়ে পৌছলাম আমরা। ছবির মতন সুন্দর জায়গা, ভারী নির্জন। কলকাতার মাছব কলকাতা ছেড়ে বেশীদিন কোষাও থাকতে পারে না-তবু ছ’-একটা জায়গায় গেলে মনে হয়, এখানে। সারা জীবন থেকে গেলে মন্দ হয় না। নিয়ক মনে হওয়াই যদিও। হাফলা সেই রকম জায়গা। তবে, হাফলং-এর স্থানীয় অধিবাসিরা ভ্রমণার্থীদের সঙ্গে দেশে না। দূরে দূরে পাহাড়ে গরীব পার্বত্য-জাতিদের গ্রাম, শহরের লোকেরা সবাই প্রায় খৃষ্টান, ইংরেজি পোশাক ও দাবা, ইওরোপীয় ধরনের জীবনযাত্রা। তাদের সঙ্গে যেচে কথা বলতে গেলে, ভারা ভর আড়ইকায় দু’একটা উত্তর দেয়, তারপর এড়িয়ে যায়। কারুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় না। প্রায়ই মনে হয়, বিদেশের কোনো শহরে এসেছি। দু’-চারটে বাঙালীর দোকান আছে অবন্ত, তবে তে রকম দোকান তো বিলেতেও আছে। এক বিকেলে আমরা বন্ধুরা বেড়াতে বেড়াতে একটু দূরে চলে গেছি। হঠাৎ বৃষ্টি এলো। বৃষ্টি মানে কি, সে এক সংঘাতিক ব্যাপার, বৃষ্টির বদলে আকাশের ভারপ্রপাত্র বললেও হয়। দিক দিগন্ত ভাসিয়ে দিচ্ছে বৃষ্টিতে।

পৃষ্ঠা:১২৫

খোয়াও বাড়াবার জায়গা নেই, একটা বন্ধ দোকান ঘরের সামনে আমরা আাধায় নিয়েছি, তবু বৃষ্টির ছাট আমাদের ভিজিয়ে দিকে। আধ ঘন্টা এক ঘন্টা কেটে গেল, তবু বৃষ্টির সেই সমান যোজন এভাবে আর ধাঁড়িয়ে থাকা যায় না। অনেকক্ষণ বাদে, সুবে বৃষ্টির মধ্যে একিন ছাতা মাথায় দিয়ে একটী মেয়ে খালয়ে। তারে আসতে দেখলান, একটি যুবতী পাহাড়ী মেয়ে, ঘাট পরা, রূপসী-যোগ্য অহংকারী মুখ-ভক্তি। সে আমাদের দিকে একবারও তাকালো না, আমাদের পাশ দিয়ে থেকে গেল একটা রাস্তায়, বোঝা যায়, কাছেই তার বাড়ি। আমাদের এক বন্ধু বেপরোয়া হয়ে সেই বৃষ্টির মধ্যে ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে ইংরেজিতে বললে। জাখো, আমরা একদম ভিজে যাচ্ছি, তোমাদের বাড়িতে একটু বসতে দেবে? মেয়েটি প্রথমে কথাটা বুঝতে না পেরে কুরু কুঁচকে বললো, কি? তারপর আবার শুনে বললো, ইয়েস অফকোর্স। নিছক বিলিতি ভরতা। কোনো আন্তরিকতা নেই, বিখ্যাত ভারতীর আতিথ্যের কোনো ব্যাপার নেই। আমরা ছুটতে ছুটতে মেয়েটির সঙ্গে তাদের বাড়ির বারান্দায় উঠলাম। একজন বৃদ্ধ শোক কঠোর মুখ নিয়ে বেরিয়ে এলো, মেয়েটি তাকে নিজেদের ভাষায় কি বলে চলে গেল বাড়ির মধ্যে। রদ্ধাট আমাদের রীতিমত জেরা করলো কিছুক্ষণ, তারপর বারান্দায় বসবার অনুমতি দিয়ে ভেতয়ে চলে গেল। বারান্দায় একটা কাঠের বেক পাতা। সেখানেও এসে স্বস্তি নেই, রীতিমত হুসেন আপটা লাগছে। যদিও তখন মে মাস, দেশ শীত করতে শুরু করেছে। উকি দিয়ে দেখলাম, বারান্দার পরেই ওদের প্রয়িাজন, সেখানে রীতিমত সোফা-কোঁচ পাতা, নীগুপ্তরের সৃতি। পুরো বাড়িটাই বিলিতি ধরনের। আমাদের চেধারা খুব একটা হাড়-হাভাতের মত নয়-তবু আমাদের ভেতরে

পৃষ্ঠা:১২৬

বসতে দেওয়া হলো না। খানিকটা বাদে একটি যুবক এলো বাড়ির ভেতর থেকে, আবার আর এক গ্রন্থ জেরা। বৃষ্টি তখন আরও বেড়ে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত আমাদের ভেতরের ঘরে বসতে দেওয়া হলো বটে, কিন্তু কোনো আন্তরিকতা নেই। চা-ফা খাওয়ানো তো দূরের কথা। আমরা মনে মনে বলতে লাগলুম, আমরা কোনো দোষ করিনি, আমাদের পূর্ব-পুরুষরা যত দোষ করেছে, তার জন্ত আমরা ক্ষমা চাইছি, আমাদের বন্ধু হিসেবে নাও। কিছুই হলো না, ওরা আমাদের বিশ্বাস করে না।

পৃষ্ঠা:১২৭

২১: কিরকমভাবে তালা খুলতে হয়। ভালা খোলার মাত্র ছ’রকম স্বাভাবিক উপায় আছে। বন্ধ তালার সামনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে নির্দিষ্ট চাবি বার করে টুক করে খুলে ফেলা। অথবা যদি চাবি হারিয়ে যায়, তবে ছোট তালা হলে, ডান হাতের মুঠোয় তালাটাকে চেপে ধরে-কব্জিতে সমস্ত দোর এনে কই করে ভেঙে ফেলা উচিত। আছ, তালাটা যদি বেশ বড় হয়, একটা লোহার রড তালাটার মধ্যে ঢুকিয়ে মটাং করে ভেঙে ফেলা যায়। তালা খোলার এই দুই রীতি। কিন্তু, অনেক মানুষ দেখেছি যারা এরকম সহজ পথে যেতে। চায় না। ঘন ঘন তালার চাবি হারিয়ে ফেলে বড় বেশী ব্যস্ত আর উদভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তলোটাকে ভাঙার কথা মনেও পড়ে না। আশেপাশের বাড়ির সকলের কাছ থেকে চাবির থোকা নিয়ে আসে। হয়তো, জড়ো হলো পঞ্চাশটা চাবি, প্রত্যেকটা পরের চাবি এক এক করে চেষ্টা করা হচ্ছে নিজের তালায়। এতে কখনো তালা খোলে। আমার বিশ্বাস হয় না। তবে শুনেছি, কারুর কারুর ক্ষেত্রে খুলে যায়। কেউ কেউ আরও উৎকট কান্ড শুরু করে দেয়। তালার ছোট গর্তের মধ্যে একটা ছোটো পেরেক কিংবা লোহার তার ঢুকিয়ে খুব কায়দায় নাড়াচাড়া শুরু করে। এতেও নাকি তালা খোল। সম্ভব। ছেলেবেলা, বিশ্বনাথ নামে একটি ছেলের কথা শুনতাম-যে নাকি চারি হারানো তালায় পেরেট ঢুকিয়ে অনায়াসে খুলতে পারতো। সে ছিল পরোপকারী ছেলে, কারুর বাড়িতে এরকম

পৃষ্ঠা:১২৮

ভালা-সঙ্কট হলে ডাক পড়তো বিশ্বনাথের। একদিন ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সত্যিই তুমি পেয়েক ঢুকিয়ে তালা খুলতে পারো? -হু। লাজুক হেসে বিশ্বনাথ বলেছিল। -যে-কোনো তালা? তখন আমি বাগ্রভাবে প্রশ্ন করি, সে তালাগুলো পরে আবার লাগানো যায়? ঠিক ঠাক থাকে? মাঃ। তা আর যায় না। খারাপ হয়ে যায়। -আশ্চর্য! যদি খারাপই হয়ে যায় তবে তুমি আর কই করে খুলতে যাও কেন? ভেঙে ফেললেই তো হয়। ফেললেই তো হয়। সেটাই তো সোজা। -কি করবো, সবাই যে খোলাকেই চায়। কেউ ভারতে চায় না। দেখবেন, সকলের বাড়িতে ছ চারটে তালা থাকে-যেগুলো দেখতে ঠিকই আছে, কিন্তু ভেতরের কলকজা খারাপ। তাছাড আমারও প্রত্যেকবারই মনে হয়, এবার বোধহয় না-খারাপ করেই খুলতে পারবো। এ জীবনে কার না ছ’ একবার কালার চাবি হারিয়েছে। ঢাবির মতো সামান্তা জিনিস কখনো কখনো হারাতে বাধ্য। চেনা-শুনোদেক মধ্যে, যারা ব্রাহ্মণ-কাদের দেখেছি, পৈতের সঙ্গে চারি বেঁধে রাখে। সময়ে। তাদেরও চাবি হারায়। অতি ধাবধানীদের বার বার। হারায়। আমার একটা অদ্ভুত স্বভাব আছে, যখন কোনো নতুন নায়ী পুরুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, মনে মনে আমি যখন তাদের চরিত্র ও স্বভাবের পরিমাল করি, তখন প্রথমেই ভাবি, এর যদি কখনো চারি হারিয়ে যায়, কি উপায়ে খোলার চেষ্টা করবেন? ভেয়ে কেরা পাশের বাড়ি থেকে চাবির থোকা চেয়ে আনঃ না বিশ্বনাথের মতো কারুকে ঢেকে পেরেক নাড়াচাড়ার কৌশল জানতে আমার খুবই

পৃষ্ঠা:১২৯

ইচ্ছে হয়। অথচ, মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করতে পারি না। প্রথম পরিচয়ে অনেক কিছু দিজেল করা যায়-কোথায় চাকরি, অমুকের সঙ্গে চেনা আছে কিনা। বাড়ির সামনের রাস্তায় জল দাঁড়ায় কিনা, প্রেসিডেন্ট জনসনের বৃদ্ধি সম্পকে তাঁর কি মত, সর্ষের তেল পাওয়া গেলেও আর বাদাম তেলের অভ্যেস ছাড়া উচিত না অনুচিত- এ সবই জিজ্ঞেস করতে পারি-কিন্তু সবচেয়ে জরুরী প্রশ্নটা কিছুতে জিজ্ঞেস করতে পারি না-চাবি হারিয়ে গেলে আপনি কি করেন? অথচ এ প্রশ্নের উত্তর জানা না হলে, একটা লোকের চরিত্র সম্পর্কে আমার কিছুই জানা হয় না, সব সময় আমি বিষম অস্বস্তি বোধ করি। ভাবি খোলার চরিত্র দেখে মানুষ চিনতে আমার ভুল হয় না। বিশ্বনাথের ছোট বেলা থেকেই আমার ভুশ্চিন্তা ছিল। ওর পরোপকারী সরল মুখ দেখে আমার ভয় হতো, বুঝতে পারতুম বিশ্বনাথ ভুল করছে। আর আমার ছোটমাসী। আমাদের আত্মীয়- অঙ্গনের মধ্যে তিনিই প্রথম এম-এ পাশ মেয়ে। যেমন তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, তেমন খুসীর হৈ-হল্লা করতে ভালোবাসতেন ছেলেবেলায়, অর্থাৎ আমার ছেলেবেলায়,-উনি তখন কলেজে পড়েন। ছোটমাসীর একটা চামড়ার হুটকেশ ছিল-তার মধ্যে বে কি অমূল্য সম্পদ থাকতো কানি না। কিন্তু প্রায়ই সে শুঁটকেশের তালার চাবি হারাতো। আমি দানা মশাইর বাড়িতে যেতাম মাঝে মাঝে-গিয়েই শুনভূম, ছোটমাসী চাবি হারিয়ে বাড়ি মাথায় করেছেন। জামা-কাপড় ছড়িয়ে বইপত্র এলোমেলো করে ছোটমাসী চাবি খুঁজছেন। সে ভাবি যে পাওয়া যাবে না সকলেই জানে-কোনদিন পাওয়া যায়নি। আমাকে দেখলেই বলতেন ছোটমাসী, এই নীলু, চট্ট করে তালাটা থেকে দে’ছো।-ছোটো টিপ-তালা, ভাঙতে এমন কিছু শারীরিক শক্তি লাগে না। এমন অনেকবার ভেঙেছি। প্রায়ই ছোটমাসী বাড়ি ফেরার পথে নতুন তালা-চাবি কিনে আনতেন। একদিন আমি ঐ রকম সময়ে উপস্থিত হয়েছি। ছোটমাসী সাজগোজ করে

পৃষ্ঠা:১৩০

কোথায় বেরুবেন, হঠাৎ চারি খুঁজে পাচ্ছেন না। যথারীতি, আমার ওপর ভাঙার হুকুম হলো। আমি তালাটা হাতে নিয়ে, ছোট মাসীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললুম, প্রায়ই যখন হারায়, তখন তুমি তালা লাগাও কেন? ছোট মাসী মুখ ভোচে বললেন, ইস, বাক্স খোলা রাখি আর কি। সেই মুহূর্তে ছোট মাসীর মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয়েছিল, ছোটমাসী জীবনে দুষ্ট হবেন না। কেন মনে হয়েছিল জানি না, কিন্তু এঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ভয় হয়েছিল। তালা ভাঙার পর বাক্স খুলে ভেতরে কি আছে কোনদিন আমাকে দেখতে দেননি। কিন্তু, তখন আমি প্যান্ডোরার বাক্সের গল্প মন্ত্রন পড়েছি। আমার মনে হয়েছিল, বাক্স বন্ধ করে যা উনি আটকে রাখতে চাইছেন, তার নাম প্যান্ডোরার সেই ‘আশা’। হঃখ-দুর্দশা- কষ্ট-হতাশা আগেই বাক্স থেকে বেরিয়ে এসে এঁকে ঘিরে ধরেছে। তখন ওঁর মুখ কিন্তু বিষম হাসি-খুসি থাকতো। ছোট মাসীর জীবন সুখের হয়নি। ঔর স্বামী স্বনামধন্ত পুরুষ, নিউ আলিপুরে প্রাসাদোপম বাড়ি, দেবশিশুর মতো ছটি ছেলেমেয়ে, নতুন মোটরগাড়ি। তবু ছোটমাসীকে দেখলে না ভেবে পারি না। উনি জীবনে সুখ পাননি। ছোটমাসীর এক ছেলেকে দেখতুম, প্রায়ই গলির মোড়ে দাড়িয়ে থাকতে। তারপর জিজ্ঞেস করতুম, কিরে পরেশ, দাড়িয়ে আছিস কেন? পরেশ বলতে, চাবিওলা খুঁজছি। রুন ধান শব্দ পুরোনো চাবিওলা কলকাতার রাস্তা দিয়ে যেতো -রাবা প্রায়ই চাবি হারিয়ে ফেলতেন, আশেপাশের সব বাড়ির ঢাবি লাগিয়ে চেষ্টা করার পরও না খুললে, পরেশ দাড়িয়ে থাকতো রাজায়। ডুগ্নিকেট চাবি বানাবে চাবিওলা ডেকে। অসীম বৈষ ছিল পরেশের-দাড়িয়েই থাকতো। আমরা তখন হয়তো ক্যারাম খেলছি কিংবা টেনিসবলের গলি-ক্রিকেট, পরেশ তবু দাঁড়িয়ে।

পৃষ্ঠা:১৩১

বঙ্গভূম, যা না, তালাটা ভেকে কেল। পরেশ যেতো না। চাবিওলা সাঙ্গ নিয়ে বাড়ি ফিরতো। দানতুম পরেশ জীবনে উন্নতি করবে। করেছে। ওর বাবার অর্ডার সান্নাইয়ের ব্যবসায়ে পরেশ আজ মেরুদণ্ড। লক্ষ লক্ষ টাকার খেলা করে। পাড়ার চূর্গাপুজোয় চাঁদা দেয় পাঁচশো টাকা, ঠাকুমার নামে হাসপাতালে দান করেছে এক লক্ষ। ব্যাঙ্কের লকারের চাবি পরেশ নিশ্চিত হারায় না। আর, পেরেকের কৌশল জানা বিশ্বনাথ, একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়ায়। হঠাৎ বেরিবেরিতে ওর একটা চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, অ্য চোখেও কম দেখে। ভাতে চাবি থাকলেও বিশ্বনাথ আজকাল তালা খুলতে পারে না-চোখে দেখে না বলে, চাবিটা গর্তে ঢোকাতে কিন্তু এ পর্যন্ত লিখে মনে হয় হয়তো আমার ভুল হচ্ছে। হয়তো, এসব যোগাযোগ কার্য-কারণহীন। মনে পড়লে, অনেকের ভাবির বিয়ে অনেকগুলো চাবি থাকে-কিন্তু সব চাবির তাল। থাকে না। মেয়েদের আঁচলে যতগুলো চাবি বাঁধা থাকে-সরই তালা খোলার নয় অনেক মেয়ের নাকি তালা খোলার দরকারই নেই-এমনিই দাঁচলে বা কোমরে ঢাবির থোকা ঝোলানো নতুন কায়দা। অনেক ছেলেও যে হাতে চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে যায়-সেসব কিসের চাবি। আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছি। কিন্তু, মাত্র একটি ছেলের কথা না বললে চলবেই না। তার তালা-খোলার স্বভাব দেখে আমি শিউরে উঠেছি। গরের দরজায় তালা বন্ধ, সে চাবি হারিয়েছে। সে তালা ভাঙলো না, পাশের বাড়ি থেকে চাবির গোছা চাইলো না, পেরেক ঘোরালো না। বারান্দায় একটা ভূ-ডাইভার ছিল, সে তাই দিয়ে দরজার যে কড়া হটোর সঙ্গে তালা লাগানো-বেটাই খুলতে লাগলো। আমি বললুম, এ কি করছো, এ তো তালা খোলা নয়, ঘর ভাতা।

পৃষ্ঠা:১৩২

সে বললো, কিছুই ভাঙছি না। শুধু ঘরে ঢুকছি। দরজার কড়া ছটো পরে আবার লাগিয়ে দিলেই হবে। আমি বললুম, তালাটা তো তখনও লেগেই থাকবে। পরে ত ভারতেই হবে -সে পরে দেখা যাবে। এখন তো ঘরে ঢোকা যাক্। তালা না ভেতেও বন্ধ ঘরে ঢোকার যে এরকম উপায় তার মনে এলো, তা দেবে আমি হতবুদ্ধি হয়ে যাই। ছেলেটির চব্বির বা ভবিয়াৎ সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারি না।

Home
E-Show
Live TV
Namaz
Blood
Job