জলমগ্ন পাঠশালা-কাজল শাহনেওয়াজ
কবিতা ১ থেকে ৫
কবিতা:০১
জলমগ্ন পাঠশালা
ডাল ঝুঁকে বর্ষার প্লাবিত মগ্নতাকে
ছুঁয়ে ছিলো অলস, মন’র গতিতে দুপুরের
কৃষ্ণ আঙ্গিনায় পার হলো উদাস শামুক
আমাদের জ্যৈষ্ঠ মাস গোড়ালীর ঘাসে
একপা দুই পা করে জলমগ্নতায় অদৃশ্য হলো।
পুকুরের থৈ থৈ কৃষ্ণ কথায় উদের ছায়া
হলো থৈ থৈ থানা হিস্কুল পায়ার আঠালো
খাবায় মগ্ন গ্রাম, নগ্ন দুপুরের পাঠশালা।
যেন অর্ধেক অধ্যরে ভর সরু খালের অন্তর
প্রাকৃতিক বেঞ্চির তরুণ জেদে গেছে
অন্তপ্লাবনে মৃত এক টুনটুনির অনুপম
দেহ দেখে যায় স্রোতের সমতলে
আধপাকা হিজল নামে মাছের সন্ধানে।
ওরা মাছ, ভরা দেশান্তরিত একনন
মানুষের মতো টিনের অধড়োব্য
মোরগের পাশে বদলান করে ভাঙা
বর্ষাকে জোড়া লাগাবো- কি যে দূর
আত্মীয়য়া মানুষ ও মায়ে।মবদ
শিকারীরা এলো, নৌকার হই এ
ছিন্ন হায় ওরা পরিহার করেনি,
ওরা কবু মৎস বিনাশী মাছের
সবজে নীল চোখ ওরা ভালোবাসে,
ওরা জলের ভেতর রূপানী নাছের
খাঁক ভাসবেদে হৃদয়ের ভালে খুলে নেয়।
ধান খেতে বাদামী পালকঅলা
বক কালো নৌকা এথে উড়ে যায়
দলছুট মাছ ও পালক পাশাপাশি অনন-
ক্যাল ডুবে যেতে যেতে নেমে যায়,
চলে যায়, যেন হৃদয়ের কাছে ফিরে আসে।
মুঠোবান্দী নিশিক্ষা পরীর পাশ,
কারা এলো? পানির ঘূর্ণিতে শ্যাওলার
সবুজ চান, কারা এলো? জনমগ্ন
বিবিদের সংসারে কার এলো- পেছনে
হাটে আর করা শিশিরের গল্পে
চোখ খুলে বর্ষা দেখে!
কবিতা:০২
অবাস্তব
কে-গেলো? কে? রেসোয়ে
ক্লীপার ধরে গুড়োনলে?
আয়াশের পথতই পার্থী
কোন? করা পাতা সমাঙ্গের?
পার্কে রাত্রিতে কজনূরের
আকাশ দেখিয়ে নিজেকেই
বলেছিলাম। ঐ দেখো পাহাড়
দেখা যায় ঐ দেখো দূরে
বিরাজ করে কেমন শূন্যতা
অবাস-ব দু’ফোঁটা পানিতে
চোখ হতে উঠেছিলো পায়ের
চটির মাঝখানে নখ যয়ে ঘযে
বলেছিলাম ঐ দেখো নদী,
এই দেখো কি এক বিশাল
চোখ তাকিয়ে এদিকে দুটি
কৃত্রিম হাতে শরীর জড়িয়ে
বিড়বিড় করে এইসব বসেছিলাম।
কে গেলো, কোমাননীয় বৃক্ষের আড়ালে,
কে গেলো জড়োসড়ো হয়ে পথহারা পাথী?
করা পাতা নমাজের।
কবিতা:০৩
কেমন করে বলবো
কেমন করে বলবো আমার
হাতে বীজগণিত আর পার্টীগণিত,
তোমার হাতে ইতিহাসের নোট
আমার গায়ে ধুসর বর্ণের সার্ট
আর কীটনাশকের রঙের চোঙা
প্যান্ট তোমার গায়ে আগুন না
প্রজাপতির মরা রক্ত, মেরুন রঙের?
‘আমরা খুব আজ ব্যক্তিগত চিনাবাদাম
খাবো বাঁক ছাড়িয়ে যেতে যেতে
কুড়োবো খুব মাশরুমের টুপি,
খুঁজে নেবো এমন কিছু ফুল যারা
নিজেরাই অদ্ভুত এবং বলবে সকল কথা!’
‘যেমন’?”
‘যেমন কদম, কদম!
বুকের মধ্যে গোল, নিরেট,
অনুর্বর বর্ষাকালে খুলতে
থাকে প্রাকৃতিক বন্ধন নিজে
এতো সুন্দর তবু ভেসে ভেসে
জীবন কাটায়-”যেমন কদম
একটি বৃত্ত নিজের ভেতর,
একটি গণিত সমস্ত গাছের
অনুভবের নিজস্ব গোলক,
পুরো জ্যামিতিক; জটিল
গতির সন্ধানে সে নিজেই
অনুপস্থিত দ্রুত ঝরে পড়ে
আত্মস্মৃতির ভেতর-‘
কবিতা:০৪
একদা অত্র স্বপ্ন তুমি ও দৃশ্যপট
তুমি বললে বনতুলশী,
আমি বললাম ভুল মাঠের
মাঝে ফুটলো আমার নন্দনেরই ফুল।
মাঠ কুমড়ো নদী ঘেঁষে অবাক করা
চোখ আকাশ থেকে পড়লো বুঝি
অপূর্ব আলোক। সরু ফিতে কার
যে চুলের নিরব অসহায় আমার
বুকের রাস্তা দিয়ে অল্প ঘেঁষে যায়।
পথের পাশে এগিয়ে গেলে অশ্বথের
পাশে ঈশ্বরেরই নাকে মতো মঠ
এগিয়ে হাসে। সবুজ জলাভূমি হেঁটে
বাঁক ফেরালেই দেখি বনতুলশী ঝোপে
তুমি নিরবতার পাখি।
নিজেই বলি বনতুলশী, আবার ভাবি
ভুল মাঠের মাঠে এ যে
আমার নন্দনেরই ফুল।
কবিতা:০৫
থাকতো যদি দীর্ঘকায় পাইন
এখানে থাকতো যদি দীর্ঘকায়
পাইন সমুদ্রের কাছাকাছি
বালিয়াড়ি, ঝাউ এখানে থাকতো
যদি ঘন বন, পাখি কাছাকাছি ঘরবাড়ি,
পরিজন, সেবা কমলালেবুর ঘ্রাণ,
সন্ধ্যার শ্যাম্পেন ছুটন্ত নৌ বিহার,
তীব্র উত্তেজনাএখানে থাকতো
যদি তোমার শরীর ব্যালকনি
বসবাস সারাটা বিকেল চন্দন
সাবানের ঘ্রাণ, আর বোকা মুখ
মনমতো মুহুর্মুহু ইচ্ছার সংগম।
কবিতা ৬ থেকে ১০
কবিতা:০৬
পন্যের বই
গুমটি ঘরে লুকিয়ে ছিলাম
বেশ কয়েকটি রাত বুটের
লাথির ভয়ে শালিখ আর
চড়ুই এসে ব্যঙ্গ করতো
প্রতিটি সকাল ওরা আজকাল
ভয়ই পায় না মেনে নিয়েছে
ফেরারী লোকজন।
বাইরে ঝুলছে তালার গহ্বর
ব্রোঞ্জযুগের নিদর্শনের মতো
দরোজা থেকে এঁকেবেঁকে
ঠিক ভেতরের দিকে
একটি গোপন তক্তপোষ।
সঙ্গে ঝোলার মধ্যে রোগা কাব্যগ্রন্থ,
হলুদ মলাট প্রথম পাতা ছেঁড়া দেশ
এখন উপচে পড়ছে আর্তনাদের
ফেনায় বদ্ধ ঘরে টিনের চালে সেই
শব্দের কাঁপন লাগে।
নিশানা নেই পথের বসে আছেন
যারা বসে থাকার, হাত তুলছেন,
পা তুলছেন খুলে দেবেন
ঈশ্বরের তালা? কারা, তারা কারা?
হলুদ পাতা থেকে ক্ষণকালের
বিশ্রামের ফাঁকে উর্ধ্বে ওঠে
ক্লান্ত চিলের ডানা গুমোট ঘরে
লতিয়ে ওঠে বুনো ধুন্দুল লতা
মেঝেয় ধানী ইঁদুর
আমার রোগা পদ্যের বই কোথায়
তুমি কই আড়াই হাতের তক্তপোষে
চুপচাপ আজকাল আমি পেতে
আমার জাল শুধুই ভাঙি দিনের
কাঠি, রাতের কংকাল।
কবিতা:০৭
সাইবারনেটিক্স
তুমি এলে ট্রাক্টরের কলকজা
নড়ে ওঠে নি:শ্বাসে কাপে ঘাম
তুমি এলে সাইলেন্সার থেকে
ভকভক ছোটেতুমি থাকো যদি
চুপচাপ ধুলো ও কার্বন জমে
ইনজেক্টরে বুজে যায় থার্মোস্ট্যাট ভাল্ব
তুমি না এলে নড়ে চড়ে ওঠে হিসেবের
গভর্নর, বিন্য তাড়ায় ধানখেতে কালো
ফড়িং পেশী টানটান করে দাঁড়ায়।
কবিতা:০৮
হাইড্রলিক
আমার হাত স্মৃতির পথ চলা
থেকে নেমে এসে কন্ঠরোধ
করছে আমাকেই বিশাল
একজোড়া হাইড্রলিক হাত
ভারী হয়ে উঠছে পা যেন
বহুদিন রোপা আমনের
খেতে দাঁড়িয়ে ছিলাম
হতবিমূঢ় একজোড়া কাদামোজা পরে
আজ আমার চোখে কুয়াশা
অবিকল অঘ্রাণের খামার
বাড়িতে একজোড়া পুকুরেরই মতো
কবিতা:০৯
পরিস্থিতি
আসবে যদি ভাব নিতে তবে পিপা
নিয়ে এস্যে কালো ওয়েল্ডিং গ্লাস
চোখে পরে এসো সীসার জ্যাকেট
পরে এসো মিলিটারি বুট
পায়ে এসো গ্লাভস নিয়ে এসো
বলাতো যায় না কখন কি ঘটে যায়!
কবিতা:১০
রহস্য খোলার রেঞ্চ
হাত থেকে পড়ে গেলো
ইস্পাতের রেঞ্চ ঝনঝন
শব্দ করে মেঝে মেঘলাতে
এমন সময় সোনা গাভী এসে
মুখ দিলো হীরের ঘাসে ওয়ার্কশপে
যন্ত্রপাতির কাছে আমি ঘষে যাই
লোহার কবিতা একা একা
কবে থেকে টুকটাক
ধাতুখন্ডদের সাথে কথা বলি
গল্প বলি নেবুলার বড়ো হয়ে ওঠা
মহাকাশযানের আজীবন একা থাকা
চতুর্মাত্রায় অনন্ত জীবন কোয়ার্ক নাম
ধরে ডাকি, ওগো দরোজা খোলো,
জানালা খোলো আমার কথা শোনো
কিউব, ট্যাপার আর গিয়ারের ফুলেরা
আজ কি যে হলো আমার হাত থেকে
কেন যে পড়ে গেলো ঝন্ন করে রহস্য
খোলার রেঞ্চ সোনার গাভী এসে মুখ
দিলো আমার বাগানের হীরের ঘাসে
অচেনা ধাতুর এক গাভী এসে।
কবিতা ১১ থেকে ১৫
কবিতা:১১
বায়োলজী ক্লাশে
প্যারাফিন ট্রে’র গায়ে পিন দিয়ে গেঁথেছি
হাত পা এইবার যিশুর সাথে আমি ও এই
সোনাব্যাঙ পরস্পরের জীবন বদলাবো।
কবিতা:১২
হাকুরদিয়া
প্রভুর খোঁজে বারুইতলা,
প্রভুর খোঁজে শিমুলহাটি,
মশলাদিয়া পোল পেতেছি
থেকে থেকে ঘুরছে চাকা,
চক্রাকারে ঘোরাই নাকি
প্রভুর খোঁজে যাওয়া
আছড়ে পড়ে ক্রা ক্রা হাড়ি,
বাসন কোসন ঘুরে আসা হাকুড়দিয়া,
চরণ সেবা, শুকনো কাঠের খাট
মাদুর পেতে কলমা পড়া, ঘর
পেরুলো চাঁদ সাধু বাবার কাঁধের
ঝোলায় সবুজ পাকুর,
খেতের ডাটা শাকা
ক্রো ক্রো নীল সমুদ্র করাত
কলের দাঁতে এই জীবনের
আলোর মাংস সংসারের নিত্য প্রয়োজনে
প্রভো প্রভো বৃষ্টি নামো যন্ত্র
পেতে তোমায় চিনে নেই বর্মপরা
সজ্জা ছাড়ো নিশ্বাসের লবণ পেড়ে দাও।
প্রভো প্রভো ফিরে তাকাও ক্রা ক্রা
হাসতে হাসতে আগুনে দাও হাত
তোমার জন্য দেহের মাংস ঘিলুর
শরবত তুলে রাখা আছে প্রোভো
ও ও ও চলো হাকুড়দিয়া যাই।
কবিতা:১৩
কেওয়াটখালি লোকোশেড
রোদের জিহ্ববা বেরিয়ে পড়েছে।
কেওয়াটখালি লোকোশেডে নীল
মোচা রঙের রেল। একটি ডিজেল
বাবুইঞ্জিন টিনের টুপির নিচে
আরাম করছে। ঠেলে ঠুলে ঘাম
ঝরাতে ঝরাতে বয়লার ফেঁটে
যাওয়া কয়লা ইঞ্জিনকে আনা হলো।
ঘি রঙের টুপি পরা ঠিকাদারের লোক
ভুড়ি ফুটিয়ে ছাতা মাথায় গোঁফ নাড়িয়ে
হুকুম দিলো ‘ভাঙো’।
অক্সিজেন শিখা জ্বললো।
কালো রঙের আগুন। ফোঁপালো।
টন টন ইস্পাত। মিটার মিটার পাইপ।
তামা। দস্তা। বিকেল হতে হতে লাইনের
উপর রইলো শুধু চাকা। চারটি। একটি
বাছুর সন্ধ্যের দিকে হাওয়া
খেতে চাকার উপর উঠলো।
কবিতা:১৪
একরামপুরের দুপুর
নদী ও রেললাইনের মাঝামাঝি মহকুমাজেলায়
একসার ওয়ার্কশপের কাছে খালি পিপার পাহাড়।
ঘড়ঘড় শব্দে ধুলো গুড়ে শীতের মধ্যাহ্নে।
এক ঝলক কান্না কাতর নীল আলো গভীর
নলকূপের পাইপে ফিল্টার বদলানো সময়কার
ঝালাই থেকে মাশরুম লিঙ্গের মতো উঠে আসে।
আশেপাশেই এক প্রস্ত শিরিষ সবুজ,
একপ্রস্ত জমানো নি:শ্বাস।
মালা বদল লেনায় দেনায়।
দেশী কারখানায় শুরুর সাথে
হাত ধরাধরি এক পা ছায়ায় ধরে
চৌকো বুনো পাতা এক পা অগ্রগতির
রুরাল জনসভায় তানানা নানানা তানা
নানা নানা মাছের বুকের কাছে লেদের
বিছানা উবু হয়ে পা ছোঁড়ে ক্লান্ত ওয়াগন
আত্মনিবেদিত আধো নাগরিক মন
আমার এ সাম্প্রতিকের কান্না ক্রমবিস্ফারিত গতি
– একরামপুরের দুপুর একদিন পাবে পরিনতি।
কবিতা:১৫
গারো ও ইহুদীরা
ভারী যন্ত্র আমি ইহুদীদের পরম কল্যাণে
ভারী সাদাসিধে উচ্চমার্গীয় এক ইন্দ্রিয় যন্ত্র।
মহিলা এবং নিষ্ঠুর আর্তনাদ পছন্দ করি
আর আবিষ্কার করি যে রাস্তায় ভ্রমণে
যাই তা ব্যবহৃত হয়েছে বহুবার।
একমাত্র রাসায়নিক ভাবে অনুভব করে
মহিলার কৌমার্য বিষয়ে দ্বিধাহীন হওয়া যায়
গারোদের সে সুযোগ নেই
বলে ওদের পুরুষেরা গুস্কহীন।
ভারী শিল্প বাঁচে তুলনারহিত ইহুদীদের হাতে।
একেকটি দীর্ঘ অপেক্ষা মহাযুদ্ধ শেষে
উচ্ছৃঙ্খল হয়ে স্বীকার করা ভালো পুরুষ
ও মহিলার মিলনেই ভারীশিল্প বেঁচে থাকে।
কবিতা ১৬ থেকে ২০
কবিতা:১৬
ব্রেনজেন
ড্রেন দিয়ে গড়াচ্ছে ময়লা পানি,
মবিলের কাদা, অজ্ঞাতনামা
আততায়ীর হাতে মৃত পচাগলা শরীর,
পশু হাসপাতালে অপারেশন করা
গরুর ক্ষুর, ভাঙাচোরা গাছের কালো ছায়া।
গড়াচ্ছে ব্যবহৃত কন্ডোম, শিশুপ্লাষ্টিক,
বনেটের টিন বনেদী লোনের টাকার
হিসেবের খাতা মহানর্দমা দিয়ে গড়িয়ে
যাচ্ছে ঐ সবুজ ও লাল
কাপড়ের জাতীয় পতাকা।
কবিতা:১৭
টেরর ছেলেটি বেভাবে বলেছিল
ক্ষত বিক্ষত রাস্তর পিচে হঠাৎ
শ্রাবণ শূন্যমাঠে ট্রান্সফর্মার ঘরে নেই মন।
বহুদিন পর কাঁচা শ্রাবণের বৃষ্টিমালায়
ভিজছে রাস্তার পাশে বসে থাকা পাগলের জটা,
নগ্ন উরু থর থর করে কাঁপছে রেলিঙ বিদ্যুৎ নকশায়।
ভেজা দোকান, হাঁ করা পাট, নিশ্চুপ ফিসফাস উকি
দিচ্ছে সটগান হাতে বিপক্ষ সন্ত্রাস।
এমনি দিনে হোন্ডা এক্সএল এ হাতের ক্ল্যাচ ভীষণ
সন্ত্রস্ত হু হু হাওয়া, নুনে পোড়া কালো চোখ যে
কোন সময় আটকাতে পারে পথ বাঁকা ট্রিগারের
ধাক্কায় ছোটা সীসার চুম্বন।
গতি গতি আরো গতি তীর বেগে চলেছি একাকী
আর্তনাদের গীয়ারে রেখে পা
ভয়ের ওপাড়ে রয়েছে যে সেই মুখ আজ
বৃষ্টিতে ধু ধু করে কেন বুক?
জীবন মৃত্যু কাঁচা পয়সা, ভুল সব সন্ত্রাস
দেখবোই আজ ঐ বাড়ীটার অদ্ভুত চারপাশ।
কবিতা:১৮
হ্রস্বতম জেব্রার রুপকথা
একটি সেতুর সাথে আঁকাবাকা
চাই সতেজ নদী আমি আজকাল
মানতেই পারিনা জানি উড়তে
থাকার স্বপ্ন আসনে যৌন সঙ্গমের
প্রতীকের মুখোমুখি হওয়া যাদের
চিন্তা ভাবনা খুব যথা শুধু তাদের
কবরের উপর নিয়ে বয়ে যায় অশ্বক্ষুর বানি।
কাকের কাছ থেকে শিখেছি আমি
গল্প পড়ার কারনা চরিত্রের নিশ্চিহ্নিকরণ,
উপচানো দৃশ্যের বর্ণনা একটি মোড়াকে
দেখেছি টিকটিকির মতো পোকামাকড়ের
দেশ্য করে সন্ধ্যায় হেঁটে বেড়ায় তেপান্তরে,
তখন ভায় কোনো কাজ থাকে না তখন
তার পিঠে গজায় বেহেশতের নির্মল
দু’টি পাথা নেশা করে সে চলে যায় বদ’র
পৃথিবী ছেড়ে, তার চারপাশে গুঞ্জন করে
ঝিঁঝির নল, জোনাকীর আলেয়া।
একটি হুবরে পোষাকে চিনি যায়
প্রিয় নদী রাশা, গেখ্য এক নম্বয়
একটি ইট বার জন্য কোনো
দিমেন্ট আজো তৈরী হয়নি।
কাঠের পোকার চুনের উপর নিয়ে
হাঁটতে ভালোবাদে খুব ভালোব্যংস ফড়িং
পাতার সবুজ ল্যাট্রিন।
এক টুকরো লোহাকে গরম করা হলে মে
এখন চায় তামার বোয়াম হতে কাঁচের
মার্বেলকে ছেড়ে দিলে যে নিজেকে ভরে পামীর চোখ
লাবণ্য নামের একটি পাখি দেখা যায়
দে প্রকৃত পক্ষে খুব রেখা কিনা মজার
ব্যাপার হচ্ছে পাখিদের জণতে সেই প্রথমে
বোমা বানিয়েছিল যদিও প্রকৃত মাস্তানের
মায়োই ঐ বোমা তার নিজের কাছে কখনো লাগেনি
কোনো কোনো রাস্তার বেজায় দখ দৈনিক
পত্রিকার জলজ্যান্ত হবি হয়ে বেঁচে থাকবে
প্রতিদিন অমরত্বের আজবানে কেউ কেউ
ওভারহেড পানির ট্যাংকির মাথায় উঠে বসে
থাকে কিন’ অমরত্ব নেই বরফ পাহাড়ী
ইয়েতির মতোই স্পষ্ট করে খুঁজে পাওয়া যায় না
মনে হয় যে কোনো কিছু থেকে যে কোনো
সময় যে কোনো কিছু হয়ে হয়ে উঠতে পারে,
শুধু ভার জন্য পরম অপেক্ষা নরকার তখন
খালি লিজটে একজোড়া ঘাট, প্যান্ট, টাই,
জুতো, পার্কার কলম রেখে দিলে ফিরতি পথে
সেই লিফট নামিয়ে আনবে একজন ঈশ্বর
চকচকে টাকের উপর যার চোখ চমকায় হাসতে
হাসতে যে গলা চেপে ধরে লিফটনয়,
বেয়ারা, অবসান।।
খবরের কাগজে খানিকটা করে আঠা
লাগিয়ে দিলেই সত্যিকারের খবর উঠে
আসে খেলার মাঠে আসন খেলা দেখার জন্য
বাইনোকুলার নিয়ে যেতে হয়। নভোমন্ডলের
কোথাও কোনোখানে মানুষ রয়েছে পৃথিবীতে
এসে ওরা যখন জীবন যাপন
করে আমরা ওদের বলি ব্যাঙ।
শহরের ভেতর অনেকগুলো গ্রাম
আছে গ্রামের ভিতর রয়েছে অনেকগুলো
শহর যে একই সাথে এই দুটো দেখতে
পারে তাকেই আমরা বলি আধুনিক।
গর্ভবর্তী গাভীর পেটে নানা রকম জিনিষ
থাকতে পারে সংশয়ের সাবমেরিন,
বিজয়ের চাবিগুচ্ছ, হতাশার তালা
যখন সাবমেরিনে করে একটি বায়ুর
বিজয় ও হতাশা নিয়ে বেরিয়ে আসে
আমরা তাকে বলি জন্মলাত। যে বাহুর
অনেকের মধ্যে থেকে নিজেকে আলাদা
করে দেখাতে পারে তার নাম দেয়া যায়
খাঁড়-সন্ত। তার কাছ থেকে জানা যায় বাঘের
আদি পুরুষ হুহ্য সাপের আদি পুরুষ ঢেউ
ক্রমান্বয়ে এ দুটি প্রাণীর কিছু অংশ কাচের
কাগজ চাপা ও থালাবাসন হয়েছে
যার আরেক নাম মানুষ।
মানুষ ক্রমেই ভ্রুণের মতো একক ঘর
বানাতে চেষ্টা করে মৌমাছির মতো,
পিঁপড়ের মতো যৌথজীবনের চৌকিতে
শুয়ে থাকার মতো পেপার ওয়েটের
মতো চেপে থাকে একটির বদলে
আরেকটি মৌপিঁপড়ের জায়গা বদলের মতো।
তখন তার চেহারা হয় নক্ষত্র মুখো,
নাম বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে শুক্রবারের
দুপুরের মসজিদে জুতোগুলোর মতো
আর আলাদা হয়ে যাবার পর নি:সঙ্গতা
ভীড় করে বিজ্ঞান অকিঞ্চিৎকর হয়ে
যায় এক মিনিটের জন্য মারনাস্ত্র অর্থহীন।
স্বপ্ন সুদুর ও হ্রস্বতম ক্ষুদ্র জেব্রা।
কবিতা:১৯
হেরোইন
তাবুর ভেতর মরা রোদের ঘোর লাগা বিষন্ন
ছেঁড়া পর্দা টগবগে চৌবাচ্চা, উপচে পড়ে
যাচ্ছে সবুজ খেলার মাঠে ট্রেন একা একা
চলেছি আলোর স্টেশন থেকে বৃষ্টির ভেতরে
সবুজ ট্রেনে আজ কামরায় দুলুনি – ঝিরঝির
ঝিরঝিরএকটা হাত নদীর উপর পড়ে আছে,
আরেকটি হাতে নক্ষত্রের বাঁশী কোলের ওপর
টেনে এনেছি বরফের ঘরবাড়ি, মাছের ধনুকের
প্যারাবোলা হঠাৎ জায়গা বদল জুতোর সাথে হাঁস,
চোখের সামনে নিশিন্দা গাছে মোরণের দীর্ঘশ্বাস
কামরার সাথে কোনো এক আয়ুর্বেদিক
ওষুধের আলমারি লতাগুল্ম, ঢেকিশাক,
ফার্নেসে উত্তাপ, শব্দগুলো রঙিন সুতো,
রক্ত ঝরছে, উজ্জ্বল আলোর নিচে ওপেন
হার্ট সার্জারী। দু’হাটুতে মাথা, আত্মদর্শনের
গোলার ভেতর গোলা ধরে আছি শক্ত করে
হলুদ রোদেলা পাখির নখ দিয়ে পড়ো-পড়ো
অমৃতের ডাল। সাদা দেয়াল, শাদা দেয়াল
কিছুটা বেখেয়াল ছবির সারি, ছবি থেকে
গড়িয়ে পড়ছে ঘাম যেন সবুজ ঘাস সোজা
মানুষগুলোর চোখ ভরা কালো সন্দেহ, নির্মম
অবিশ্বাস তুল্যমূল্য, তুল্যমূল্য হিসাব, কালো
পিঁপড়ের সারি ঘাস, শুধু ঘাস আজ বিকেলের
আততায়ী বাড়ি থেকে রাতের
ক্ষয়ে যাওয়া নখের নেবুলা।
কবিতা:২০
জাংশন
কয়েকটা মানুষ স্টেশনের প্লাটফর্মে
অপেক্ষা করছে ট্রেনের জন্য
আপাদমস্তক অন্ধকার অনৈশ্বর্য মেখে।
ওদের জীবনে বাঘের গর্জন নেই,
অপেক্ষা করছে ওরা গভীর রাতের
ট্রেনের হুইসিলের জন্য। কুয়াশা ভেদ
করে আসবে রাজধানী মেইল।
অলস গতিতে পাহারাদার পুলিশ হাঁটছে,
লাগেজভ্যানে ওঠার অপেক্ষায় মুরগীর খাঁচা।
মধ্যবিত্ত যাত্রী সময় কাটানোর প্রয়োজনে
পায়চারী করে এপাশ ওপাশ করছে।
একজোড়া তরুণ তরুণী ওয়েটিংরুমে
সদ্য পরিণয়ের ভবিষ্যৎ কল্পনায় বিভোর।
সিগন্যালে চাঁদ নামে, অসংসারী ব্যর্থজন
একপলক ঘুমের মৃত্যুতে পড়ে থাকে
ওভারব্রীজে ক্লান্তিকে চির অক্লান্ত ভেবে
‘খবর এসেছে কি?” উৎসাহী ভদ্রলোক
ডিউটিরত কর্মচারীর আধোঘুমে তাড়া দেয়।
‘সেদ্ধ ডিম’ হেঁকে যায় হকার যুবক।
জংশন স্টেশনে কয়েকটা মানুষ প্লাটফর্মে
অপেক্ষা করছে ট্রেনের জন্য আপাদমস্তক
অন্ধকার অনৈশ্বর্য গায়ে মেখে।
কবিতা ২১ থেকে ২৫
কবিতা:২১
ভালোবাসার দানো
তোমার নাক, মুখ, চোখ, ঠোঁট তোমার স্তন,
যোনী, নাভী, নখ সব ভালোবাসার সেবা করার
জন্য সব ভালোবাসার ডাক টিকিট,
ভালোবাসার লোমকূপ, ভালোবাসার মুদ্রা।
প্রাকৃতিক আর সব ভোগ্যপণ্যের মতো তুমি;
তোমার জিহ্বার লালায় ক্লোরোফিল, স্তনে
ডায়াজিপাম নাভীতে চালতা ফুলের সৌরভ
সমুদ্রের সূর্যাস্তের মহিমা ঐ তোমার স্লিপারের ঝলকানি।
তুমি মাদী ঘোড়ার উজ্জ্বল কোমলতায় বর্ণিত
তরুণ মোষের নম্রতায় বাষ্পরুদ্ধ বয়লারের মতো
ছটফটে তোমার তরল চোখ কোয়েলার মতো দুষ্প্রাপ্য,
বিভারের মতো দামী তুমি জানো সারস ও ষাঁড়ের হত্যারহস্য।
শিকার ও শিকারীর মনস্তত্ব শুধু ভাঙচুরের কারসাজি।
সন্ধ্যার শ্যাওড়া কাঁপিয়ে চলাচল তোমার তুমি ভালোবাসার দানো।
মহারাণীর বেতের চেয়ারে রাজসম্রাজ্ঞীর শিরদাঁড়া টান
করে বসে থাকো আনবিক ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে থাকি
সেই দৃশ্য নিয়ে আমিও যে বড়লোকের স্নানের দৃশ্য লুকিয়ে দেখেছি।
কবিতা:২২
একটি বিকল্প কবিতা
উনিশ শো তিরাশি, ১৫ই এপ্রিল, ১লা বৈশাখ আমি একটি লেঅফ ঘোষিত কারখানার সন্ধান পাই। মেশিন পত্র জংধরা, বিষন্ন স্যুইচের সারি মাকড়শার অন্তিম আঁশে ডুবে রয়েছে। শ্যাওলা ছবির কাছে অদ্ভুতভাবে খুলে পড়ে আছে প্রধান গীয়ার। ধাতব লিভারগুলি বাঁকা করে শয়তানের মুখে গুঁজে দেওয়া।
১৬ই এপ্রিল ভাদুরে কন্যা তুমি কি আছো? বলে কম্পিত হাতে প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে দেশলাই ঘষি। শুকিয়ে যাওয়া মবিলের কান্না ছুঁয়ে দেখি, যন্ত্রও মানুষের মতো কাঁদে কি না! ইচ্ছে হয় পাশে বসি। হেলান দিই মনের ভিতর থেকে। আমারও ক্লান্তি
আছে।
২৫শে এপ্রিল
হাতে ক্রু ড্রাইভার, রেঞ্চ, বিদ্যুতমাপার মিটার আমি তরুণ ইঞ্জিনিয়ার। সকাল দশটায়। কাজ করতে করতে লম্বা একটা রেইলের মধ্যে নদী ভেসে ওঠে, সদ্য লাগানো ফ্যান থেকে দূরন্ত হাওয়া, আলোর বাল্ব লাগাতে লাগাতে রোদ-ছায়ার আগমন দেখি। এক কৌটা প্লাস্টিক রঙ হাতে ওঠে, একটি প্রবল একাত্মতা তৈরী হতে থাকে, যতোবার ভিতরের দিকে কাজ করি, ততো গভীরতর ঘ্রাণ পাই, ইচ্ছা হয় আপ্রাণ চেষ্টা করি। চশমার কাঁচ মুছে দেখি সুগন্ধ ভারী, স্নান। ভীরু আর সংরক্ত। ছোট্ট মাত্রা, ক্ষীণ স্ফুরণ। যেন চোখের পাতা সামান্য একটু দোলানো।
২৬শে এপ্রিল
নিজেকে অবসরে বন্দী করে গতকালের কথা ভাবি। সারাদিন বাল্ব জ্বলেছে, ফ্যান ঘুরেছে, একটা মোচা রঙের রেল চোখের সামনে আলোতে ঝিলমিল, উজ্জ্বল মিছিল।
১০ই মে
বৃষ্টির ভিতর ভিজতে ভিজতে ভিতর বাড়ি। অনেকটা গোছানো আঙ্গিনা, ঝকঝকে এপ্রন। নিজেকে মনে হচ্ছে কর্মঠ ও পারঙ্গম। মনে মনে সাফল্যের সাথে কথা বলি। ‘জানো কাল উত্তেজনায় রাতে ঘুমাতে পারিনি।’ ও বলে ‘আমিও।’ মেশিনের কথা কি বিশ্বাস করা যায়?
১৫ই মে
কাজটা আগাচ্ছে। কোনো অংশ বেশ চলনসই সফলতা দেখাচ্ছে। কোনো অংশ এখনো অগম্য। মাঝে মাঝে ফুঁসে ওঠে। দু’একটা স্ক্রু ঢিলে করে দিলাম, কোথাও গ্রিজে মেজে দিলাম। চলচ্চিত্রের দেখতে দেখতে ভবিষ্যতের দিকে হেলিয়ে দিলাম কল্পনার ডানা। অয়েল লাইনের অনেকটা ঠিক হলো। একটু চেক করি। চুমু খেলাম, যেন প্রিয় নারী। অবশ্য ফিরতি চুমু পেলাম। মনে হলো নদীর পাড়। একটা শিশু বট। যৌবনের চুমুর কান্নাইত্যে মনে হয়।
২৬শে মে
হয়তো এই প্রকল্পটিই হবে আমার জীবনের সূচনা পর্বের প্রথম সফলতা। ঘর্মাক্ত হয়ে ফিরে আসতে আসতে দেখি, দুঃখিত হবার সময়গুলো পর্যন্ত নেই। সব উত্তেজনায় থরথর করছে।
২রা জুন
আসলে অতি বিশাল এর কর্মপ্রক্রিয়া। অজস্র জটিল বাসনার পাইপ, আনন্দের সিলিন্ডার, মমতার পিস্টন, আবেগের বিদ্যুৎত্তার, নিয়মের নিরাপদ ভালব বড়ো বড়ো শাফটের হাত, স্প্রীং এর উত্তেজনা, বেল্টের আলিঙ্গন, মিটারের আঁখি। কোনোটা স্মৃতির মতো প্যাঁচানো, কোনো শৈশবের মধ্যে ডুবে যাওয়া। কনভেয়ার বেল্টের গুটিসুটি হেঁটে যাওয়া। এলুমিনিয়ামের শুভ্রতা। পেতলের একটু হলুদ। একটু ছুঁতেই মনে হয় আত্মার সাথে মিশে গেছি।
২৯শে জুন
সব কিছু হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছু একটা সারে গেছে কোথাও। পাঁজরার হাড়ে অদৃশ্য কিছু একটা এসে খিমচে ধরলো। ঝুরঝুর করে নরোম জিনিসগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। মেশিন নিজেই কোনো সহায়তা করছে না। অন্ধকারের দিকে মুখ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। চোখে কাপড় বাঁধবো? আমার জন্য তার বাগানে যে একটি ফুল ফুটেছিল, তাই ভাববো?
আগস্ট
সরাসরি আমার উপর ক্ষেপে উঠছে। কেন আমি হাতে তেলকালি মাখাতে গেলাম! কেন আমার হাতে রেঞ্চ উঠলো? কি দরকার ছিলো পুরনো মেশিনপত্তর সারাবার জন্য যৌবন বাজি ধরার, যখন কিছুই নিশ্চিৎ নয়। আমারও ভালো লাগছে না, শরীরে পূরনো ক্লান্তি এসে নাক গলাচ্ছে। হাত থেকে রেঞ্চ পড়ে যায়, পাওয়ার লাইন ঠিক করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক ধাক্কা পাই। দু’চার দিন যাই না। আবার হঠাৎ করেই যাই। দুপুরে বা বিকেলে বা রাতে বা ভোরে। ক্ষুধার্ত, হতচ্ছাড়া, কদাকার, অপরাধী। আমাকে সে একটি ফুল দিয়েছিল। প্রতারক উপহার, প্রতারক দাতা, সবই প্রতারণা।
অক্টোবর
না আ। আমার হাত পা নখ বিমূর্ত পছন্দ করে না। আমি চাই সুইচণীয়ারে হাত রাখতে, ক্র্য্যাংশাফটের ঘূর্ণন দেখতে, অ্যামিটার দিয়ে বিদ্যুৎ মাপতে। আমি চাই বিশাল মাতৃগীয়ার+বিদ্যুতের বিবাহ। করাত কলের ছেলে, আইসক্রীম ফ্যাক্টরীর মেয়ে। কিন্তু শুধুই শোক। সব ভেঙ্গে পড়ছে। মনে হয় নিজেকে খুলে ফেলে দিই নালায়-ডোবায়। শরীর থেকে পা হাত খুলে, হাত-পা থেকে আঙুল খুলে, আঙুল থেকে নখ খুলে ফেলে দেই নর্দমায়, কানাগলিতে, পুলিশে।
নভেম্বর
যদি বিরহই, তবে কেন প্রতিদিন চেষ্টা করে যাচ্ছি? সামনে গেলেই ওর সমস্ত বিবরণ অস্তিত্বের মাংশের ভিতর আনন্দের তীর ছোঁড়ে।
ডিসেম্বর
হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে তোমার কাছে গেলে উষ্ণতা! তুমি আলাদা ভাবে আর যন্ত্রাংশ নও, সবটুকু মিলিয়ে তুমি। ধাতুর কাঠিন্যে ‘তুমি’ সঙ্গ, তোমার যেন ত্বক রয়েছে, আমার জন্য অনুভূতিতে উত্তাপময়। তোমার যেন চোখ রয়েছে, গোয়েন্দার মতো বেরিয়ে পড়ে আমার পিছুপিছু, শুধুই আমাকে দেখবে বলে। টের পাই সর্বক্ষণ তুমি দেখছো আমাকে, আমার সাথেই থাকছো।
১৯৮৪
কিন্তু তোমাকে নিয়ে কি করবো? পূরনো মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেবো? তোমার সম্পূর্ণতাকে যে আমি আয়ত্বে আনতে পারলাম না। চালু করতে পারলাম না যে। এখন ধরে রাখার সাহস নেই। পেপার ওয়েট হয়ে পড়ে থাকি, মালিকানা পত্র চাপা দিয়ে। কিভাবে সামনে দাঁড়াবো, আমার তো বাস্তব অধিকার নেই। অনধিকারী আমি। ওরা তো তোমাকে ফিরিয়ে নিতে পাগল। ওরা তোমাকে গুদামঘর হিসাবে ব্যবহার করবে। লোক দেখিয়ে লোনের টাকা ধরবে। আর তুমি কিনা বললে, তুমি নাকি আমার হাতে ঠিক হয়ে যাচ্ছিলে, চালু হয়ে যাচ্ছিলে। কিন্তু আমি যে পারছি না, কেন না তুমি আমার হাতে সাড়া দিচ্ছ না আর, আর তুমি ফিরেই যেতে চাও, তুমি নতুন হতে চাও না, উৎপাদনশীলতা চাও না। ঘাস জড়িয়ে জংধরে তালাবদ্ধ হয়ে অসুখী স্ত্রীলোক হয়েই থাকতে চাও। কিছুই ভাঙতে চাও না সাপের বাসা হলেও, কাঁটার মুকুট হলেও।
১৯৮৫
তাই সরে আসি। আমার গলে যেতে ইচ্ছে করে, পচে যেতে। ছিঁড়ে, ভেঙে, চেপ্টে যেতে। শয়তানের কাছে বিক্রি হয়ে যেতে।একদিন রাতে হাঁটতে হাঁটতে কালো নদীর পাড়ে যাই। শয়তানের শনিভোজ। জাহাজের হাড়গোড় মাড়িয়ে, চাঁদ ফাঁকি দিয়ে উপসি’ত হই অন্ধকারের মধ্যে ক্ষার-কাদায় দাঁড়িয়ে থাকতে। সামনে কালো আগুন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি যতক্ষণ না আকাশে অশুভ নির্বান্ধব তারা ওঠে। ততক্ষণে পায়ের মাংশ ক্ষারে ধুয়ে যায়। হাড়ের দুটো কাঠির উপর দাঁড়িয়ে থাকি। গাদের স্রোত
বয়ে যায়… মেরুদন্ডগলা মানুষের বুদবুদ, গলগল করে বেরুনো চিমনিফাঁটা মেয়েলোক ধুয়া, ধাতুক্যান্সার, স্নায়ু যান্ত্রিকীকরণ। কালো ভালোবাসা, কালো দীর্ঘজীবিতা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবি কবে বসবো, বসে বসে ভাবি আর কবে দাঁড়াবো।
ছোট চিন্তা, সংক্ষিপ্ত ভাবাবেগ, নি:শব্দ প্রকাশ।
আমাকে আমৃত্যু এই ক্ষীণ বিস্তারটুকুতেই সাঁতরাতে হবে।
তোমাকে ছেড়ে চলে এলাম, এই জন্য।
কবিতা:২৩
দাঁত
কবরের ভিতর চেনা বলতে শেষ পর্যন্ত রইলো দু’পাটি হাড়ের দাঁত।
এই দাঁতগুলো ছিলো উৎসবে চিবানোর জন্য ভোঁজে ছেঁড়ার জন্য আর লৌকিকতায় মধুর হাসির জন্য ছিলো ঘুম থেকে উঠে দিনের খোলা হা-এর ভিতর লাফিয়ে পড়ার আগে সকালের পানি ও পেষ্টে ধুয়ে ফেলবার জন্য কথা বলতে গিয়ে ভুল হয়ে গেলে জিভ কামড়ানো জন্য চুমুতে সাহায্য করবার জন্য।
আজ বুকের লাল তিল, বুড়ো আঙ্গুলের ডগায় ছোট্ট পোড়াদাগ এমনকি শরতের মসৃন নীলের সদৃশ চার আঙ্গুল কপাল সবই মাটি ও উদ্ভিদের ভালোবাসার বিষয়।
চেনা বলতে রয়ে গেলো অবশেষ দু’পাটি দাঁত।
সাজানো, এলোমেলো, কোণা ভাঙা, একটির ওপর আরেকটি ওঠানো শাদা বা ঘোলা হৈ চৈ করা অথবা নিঃশব্দ।
কবিতা:২৪
আদরা ক’জন শীত ও বর্ষাকালীন শাকসব্জী
আমরা ক’জন শীত ও বর্ষাকালীন শাকসব্জী,
বাংলাভাষা, বামরাজনীতি, বিজ্ঞানের
জয়যাত্রা ভালোবাসি তাই আজ বেছে নিতে হয়
এলোমেলো জীবনযাপন, লম্বাচুল, অনিশ্চয়তা
হাতে তুলে নিই হেরোয়িন গুড়া, সুই ও সিরিঞ্জ,
নাজু ওয়ার্ক্সের সিস্টেম, পাতিরাম, বয়রার চরশ
আমরা ক’জন ইটের রাস্তার উপর পিচ দিতে
ভালোবাসি তাই মরাখোলা যাই
খুঁজে বের করি দাগীলোক সূর্যাস্তের দৃশ্য ছেড়ে
বেড়ার ঘরে বসে থাকি
আমাদের কাছে কৃষক শব্দের মূল অর্থ ‘কৃশ’,
মাস্তান ‘বিদ্রোহী অসহায়তা’
তরুণীরা ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলে ভুল করে, বলি,
বিছানায় য্যও তোমাদের অন্ধকার খুব ভালো আছে,
শুকতারা ভালো আছে, ছাদ আজো ভালোবাসে
শিউ-চন্দ্রিমা হাত যাও, আর দেরী করো না,
শুতে যাও খুকু।
আমার কখনো পালকিবাহক, ঝিকঝিক
লা লা করে পুরনো গ্রামের আলপথে বাউল রমা-
পারুলের সংসারে যেতে ভালোবাসি চিলে কোঠা
ছেড়ে মাটি-কোঠা খুঁজি, ভালোবাসি কবিতা
তাই সমস- কুৎসিতের উপর প্রবল ঘৃণা উগরে
দিয়ে হা হা করে হাসতে হাসতে অপ্রকৃতস্ত হয়ে যাই।
কবিতা:২৫
নিশার ভাষা
নিশা পুকুরে মাছ চাষ করে। এজন্য নানা রকম পুস্তিকা
পড়ে সারের মাত্রা আর মাছের খাবারের পরিমান স্বাস্থ্য
সম্মত করে। নিশা মাছ ভালোবাসে ভোদরের চেয়ে বেশি তীব্রভাবে।
একদিন অর্ক এসে বলে, নিশ্য, আমি তোমার পুকুরে মাছ
ধরতে চাই। নিশা তখন খৈল গুলে দিচ্ছে পানির সাথে।
পুকুরে সবুজ প্লাংকটন তাছাড়া তেমন কোনো গাছপালা নেই পাড়ে।
নিশা মাথা তুলে অর্কের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার বড়শি ক’
নম্বরের, গভীর মাছ ধরা যায়? এইসব আলাপ হবার পর আর
একদিন অর্ক নিশার চুলের ভেতর হাত বুলিয়ে দেয় পুকুর মিলিয়ে
গিয়ে একটি সমুদ্র কিছুক্ষণ চোখ জুড়ে থাকে নিশার মাছেরা
স্বাধীনতা ভোগ করতে ঘুরে আসে অনেক রকম অভিজ্ঞতার কাছে।
অর্ক একদিন ন্যাংটা পাগল ও বোবা ছেলেকে পরস্পরের দিকে
তাকিয়ে থাকতে দেখে। বোবা ছেলেটির পরনে হলুদ ইজের।
বোবা ছেলেটি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বো বো করতে করতে
বাড়িতে বড় বোনের কাছে ফিরে যায়। নিশা ছেলেটির বড় বোন,
সে তার ভাইকে খুব বোঝে।
এমন দিনে অর্ক নিশার কাছে এলে নিশা ইঙ্গিতে, নিঃশব্দে,
অর্কের সাথে কথা বলে, অনুভূতি জানায়- নাকের উপর
কয়েকবিন্দু ঘাম মানে তোমার অপেক্ষা, চিবুক কম্প্রমান,
গলার ভাঁজ ক্রমেই বড় হচ্ছে- মানে আমি কিছু গাছপালার চাষ
করেছি তোমাকে দরকার।
একটি বেনে দোকানের সামনে নিশাকে দেখে অর্ক একদিন
জিজ্ঞেস করে কি নিশা, খাবার কিনতে এসেছো? নিশা হাত
তুলে সদ্য কেনা বটি দেখালো। অর্ক দেখে ওখানে বহু বর্ণ রক্ত।
আরেক যুবকের সাথে হেঁটে গেলে নিশা রাণীঘাটের দিকে।
কবিতা ২৬ থেকে ৩০
কবিতা:২৬
নিশা নিঝুম পুকুরে মাছ চাষ করে। আর ভাবে এইসব।
মাছেরা নিশার চোখের দিকে তাকিয়ে তাদের মাছদৃষ্টিতে
তাকিয়ে সব বোঝে তারপর নিশার হাত থেকে
খাবার নিয়ে নিজেদের বৈদগ্ধের বাড়ি ফেরে।
অতনু
আমারও ইচ্ছা করে তোমাকে অতনু করে লুকিয়ে
রাখি ভবিষ্যতের পাখিদের সাথে একটি অবধারিত
ঝর্ণা ও তার বুনোগাছ হয়ে সাধুদের ভালোবাসা পাই
পানি মাকড়শা করে ছেড়ে দিই নদীর টেবিলে,
তুমি চরের শ্যাওলা দেখে আসো
সারাদিন বৃষ্টি হলে মেঘ ফাঁকি দিয়ে উণবিংশীয়
রাঢ়দেশে যাই। নেচে গাই আষাঢ় বন্দনা।
অশ্বঘোষের সখীদের গল্প বলি
বৌদ্ধদের নির্বাণ প্রস’তির ঘরে নিজের চর্বিতে মোম
জ্বেলে রম্ভীণ করে তুলি সেই অন্ধকার নিরুত্তাপ
দেওয়ালগুলিকে।
কবিতা:২৭
দুই
বাগানের মৌলিক সংখ্যাকে তবু সুগন্ধ ২ দিয়ে বিভাজন
করেছি অনেকবার। দেখেছি ২ একটি মৌলিক সুর।
২ একজন গাণিতিক সাধু ২ হলো সব রকম অমরতার
তোরণের প্রধান দারোয়ান। অনন্ত সময় এসে হঠাৎ চমকে
ওঠে ভুলচুক হয়ে পড়ে যন্ত্রের, ২ এ এসে ঋতু পরিবর্তন ঘটে।
বিপরীত শক্তির মধ্যে গতির দুরন্ত সৈনিক ২ ২
হলেই একক অদ্বিতীয় ঈশ্বরফুল ঝরে পড়ে।
দিগন্ত রেখা থেকে ফুলের রেণুতে আমাদের আলোচ্য
দুই সুগন্ধ সুবাতাস হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। আখখেতের
আলের উপর দাঁড়ানো খাকি রঙের শেয়ালের
লেজে মধুপুরের গারোপল্লীর উঁচু শিরিষের ডালে
গাছবানরের মাতৃক্রোড়ে দুই, পঞ্চাশোর্ধ সুন্দরীর
কাঁচা-পাকা চুলের ঢেউয়ে বিষন্ন সন্যাসিনী, উন্মাদের অংক কষা।
ময়মনসিংহ শহরের পেট ঘেঁষে যেতে যেতে পোষা
ব্রহ্মপুত্রের আঁকাবাঁকায় হঠাৎ স্তব্ধ দুই দুই হাঁটুর ভাঁজে,
মোরগের রানে, রাজহাঁশের গ্রীবায়, দুই আমার
নদীমাতৃক গয়না নৌকার চোখ, দুই সর্বত্র।।
দুই হলেই লুকোচুরি, দুই এ আনন্দ
দুই হলেই পরিষ্কার স্বচ্ছতা।
দুই মানেই বহু যেমন স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি
সকলের স্বাধীনতা।
কবিতা:২৮
কন্যাকে
অনেকটা শাদা জুতো মোঘলাই ব্যারাকের
সার সার গুহ্য ট্রেনচ সাপ ঢেউ গান!
বিকেলের রাস্তা রাস্তা পড়েছে বাধা ছড়া
টানাটানি দুটি কুকুরে হৈ চৈ কুয়াশা পড়েছে
ঢুকে এই শীত এই শীত আসছে মটর শুটি
মাটির ঢেলায় শে অন্তরা বাইরে এসে বড়ো হও।
কবিতা:২৯
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিরিল
শরৎকাল
ঘিরথির করে কাঁপছে শরৎযন্ত্র শিশিরের আঘাতে
সারারাত চলেছে, তাই হিমায়িত নলে কুয়াশা
গাছপালার নাক-মুখ থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে।
বিশাল থার্মোফ্লাক্স থেকে গলা বের করে বেরিয়ে
আসছে নদীর ঐ পাড়ের সূর্য হঠাৎ দাঁড়ি কামাতে কামাতে।
কবিতা:৩০
অনেককলি লেক
কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের পাশ দিয়ে গেলে বর্ষাকালে
ধাঁড়ের গোবরের গন্ধ এসে ঝাপটা দেয় কিছুদুরে শহীদ
মিনার এর ওভারহেড পানির ট্যাংক দুটি ভাই ওরা
কিছুকাল হাত ধরে আছে ঐ দিকে তাকালে আকাশ
দেখা হয়ে যায়। লেকের পাশে চুপচাপ বসে থাকলে
পাশাপাশি কোথাকার অনেকগুলি লেকের কথা মনে হয়।
কবিতা ৩১ থেকে ৩৫
কবিতা:৩১
কর্মস্ট্রলার পাশে রেললাইন
আমাদের এখানে কর্মশালার পাশ দিয়ে দিগন্তের
মাফলার হয়ে রেললাইন চলে গেছে বহুদূর।
আসামের নুড়িখন্ড আর গর্জন কাঠের স্লিপারের
উপর দিয়ে। দীর্ঘজীবী দিনের হাতে এইটুকু অবকাশ
আমাদের কর্মমুখর গবেষণা খামারের ভেতর।
কবিতা:৩২
জরিপ
নারকেল গাছগুলো সাক্ষী সেই সব
দুপুরে কি করেছি আমি একরাশ
অবিন্যস্ত ভাবনার উড়োখুড়ো চুল উড়িয়ে
মুখশুকনো সঙ্গীদের সাথে পুরনো
ব্রহ্মপুত্রের সীসারঙ পানির উপর থেকে
উঠে আসা রোদ নিয়ে টি.এস.সি’র দোতলায়,
বোটানিকেল গার্ডেনে বৃষ্টিভেজা অন্তরীণ
অবস্থাগুলোকে কি সব ভেবে লুকিয়ে
ফেলেছি বর্তমান থেকে শাদা কাগজের
স্তুপ তা জানে জানে লেকব্রীজের তারাগুলো,
গভীর রাতের কাছে আমার আকুল অন্বেষণ,
কি খুঁজেছিলাম ধুলোর সাথে মিশে যেতে চেয়ে
ঐ সব নির্জন মুহূর্তগুলোয় –
কবিতা:৩৩
লেফব্রীজ
বাস্তবে লেকব্রীজ নিচে তার পানিছায়া সামান্য বাতাসের রাতে ঝাউয়ের পাতায় পুরনো দিনের জন্য সে কি শো শো উচ্ছ্বাস মায়া! খেজুরে অশ্বথে যুগল জোড়াঞ্জলী কান্নার নির্জন রাতে গাছগুলো পঙ্গু ঘোড়ার পিঠে বিপন্ন অশ্বারোহী।
কবিতা:৩৪
বাল্বদুর
প্রতি সন্ধ্যায় দেখি তাকে হেঁটে হেঁটে হারিয়ে যেতে,
চলে যায় কোথায় যেন লাল টানেলের করিডোর
ঠেলে প্রেমিক প্রেমিকার মাঝ দিয়ে লাইব্রেরীর
কাঁচ ভেদ করে এলামন্ডার উজ্জ্বল হলুদ পাপ
ছুঁয়ে সে যেন কোনো এক অসীম বলবান
শক্তিশরীর হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় খোঁড়াতে
খোঁড়াতে। এইতো ছিলো সে এই অন্ধকারে,
খুঁটে খাচ্ছিল ভিটামিন, শর্করা, সেলুলোজ,
খনিজ কিছু কিছু পরক্ষণেই সিমেন্টের
ঢেউ ভেদ করে অন্যদিকে রাজপথে খুট
খুট করে হাঁটছে একাকী একা একা সারারাত
মাঠময় ঘুরে ঘুরে হাঁটে, দু’এক কদম
থমকে দাঁড়ায় লেভেল ক্রসিংয়ে, দূর থেকে
দেখে নতুন স্টেডিয়ামের হংশবলাকা ছাদ,
ধীরে ধীরে হাঁটে হাঁটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে আহত করা
অপারেশন শেখার গিনিপিগ ঘোড়া রাত
শেষে পেরিয়ে যায় খুঁত গাছ,
আকাশের তারাদের দিকে।
আরো একবার ফিরে আসে যেন
ভালোবাসার লোভ হয় অপারেশন ঘরে…
কবিতা:৩৫
লিরিকগুচ্ছ
ছেলেটি ও মেয়েটি
ছেলেটি পড়েছে
তারপুলিন শ্লোগানে বসে
গেছে গলা- ছেলেটি কি
চায় আজ নিজের কাছে?
মেয়েটি যে নিষ্ফলা!
কবিতা ৩৬ থেকে ৩৯
কবিতা:৩৬
ভালোবাসার ক্ষুধা
আসলে ভালো করে তোমাকে খাওয়াই হয়নি
তাই ভালোবাসার চোঁয়া ঢেকুর উঠছে
তোমাকে বলেছিলাম, আরেকটু ঠোঁটের
ভাত আর ঘাড়ের ব্যঞ্জন দাও অগ্নি দেখালে
জোড়া কবুতর উড়ে যাওয়া মুঠো মুঠো গম
দানা বরাদ্দ ওদের জন্য, আমার জন্য নয়
আমার যে রয়েছে ভালোবাসার ক্ষুধা,
আর্তনাদ, ঈর্ষা ও পরাজয়।
কবিতা:৩৭
ফাকি
যা দিয়েছো সব কি তোমার ভালোবাসার দান
এসব ভেবে দিনরাত হয়রান হয়তো কিছু ফাঁকিও
আছে বন বাদাড়ের মতো ওরা যতো ঘন জমাট শুন্য কি নয় ততো?
কবিতা:৩৮
শংকা
দিন দিন কেবল শংকা বাড়ে তোমাকে নিয়ে আছো
কি নেই তুমি কি ঠিক আগের মতোই চুলে আটকে
গেলে সরু চিরুনী আমার কথা ভেবে
খামাখাই শংকায় ভরে ওঠো’?
কবিতা:৩৯
মৃত্যু আজ লম্বা হয়ে শুয়ে আছে মৃতদেহ ছেড়ে
কি প্রচন্ড ভাবেই না পরপর ফুটে উঠে মিলিয়ে
যাচ্ছে চোখের সামনেই ইটের দেয়াল যোগ আর
বিয়োগের খেলা ভালোবাসা উড়ছে হাওয়ায়, ঝিমলাট্টু,
ক্রোধ, হিংসা, জুরজুর গন্ধ মুখ থুবরে পড়ে থাকা খাটে
চড় চড় করে মধ্যাহ্নের সূর্য গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে মা বারান্দায়
, বোন ডুবে যায় ইজিচেয়ারে
অসম্ভব ভূতগ্রস’তা দেয়ালের মাঝখান থেকে একটি ইট
খুলে নিয়ে গেছে আজ? কাল? গত জন্মে?
রোমকূপের ভেতর দিয়ে কখন যে ঢুকে বসে আছে
কেবলই হাতছানি দেয় কেবলই পিছু পিছু ডাকে কেবলই
চতুর্দিকে জমকালো করতালি উজ্জ্বল আলোর শেডে
বনবন করে ঘুরছে, ঘুরছে সে নচিকেতা লম্বা,
তার দৃশ্যহীন শরীর দৃশ্যময় কখনো অদৃশ্য তন্তু
মৃত্যু আজ লম্বা হয়ে শুয়ে আছে মৃতদেহ ছেড়ে।