ইসলামি হিজাব বা পর্দা
পৃষ্ঠা ০১ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০১
সমাজের প্রতি মুসলমানদের কর্তব্যঃ
সম্ভবতঃ আপনারা সবাই লক্ষ্য করছেন যে, আজকাল অনেক দেশের মুসলমানদের মধ্যেই একটি বিশেষ মুসিবত ও ফিতনা প্রসার লাভ করেছে, তা হলো মহিলাদের পর্দাহীনতা। তাঁরা পুরুষদের থেকে পর্দা করছেন না, পর্দাহীনভাবে বাইরে বেরোচ্ছেন এবং শরীরের যে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সৌন্দর্যময় স্থান আল্লাহ প্রকাশ করা নিষেধ করেছেন সে সকল স্থানের আনেক কিছুই তারা প্রকাশ করছেন। নিঃসন্দেহে এই পর্দাহীনতা একটি কঠিন পাপ ও জঘন্য অন্যায়। এ হলো আল্লাহর শাস্তি ও গজবে পতিত হবার অন্যতম কারণ। কারণ পর্দাহীনতার ফলে সমাজে অশ্লীলতা প্রকাশ পায়, অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে, লজ্জা ও সম্ভ্রমবোধ লোপ পায় এবং অন্যায়-অনাচার সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। মুসলমানদের উপর দায়িত্ব হলো তাঁরা নিজেরা আল্লাহকে ভয় করে তাঁর নির্দেশিত পথে চলবেন, উপরন্ত সমাজের অন্য সকলকে বিশেষতঃ নিজেদের অধীনস্থদের আল্লাহর পথে পরিচালিত করবেন। এভাবে আল্লাহর গজব থেকে, তাঁর কঠিন শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবেন তাঁরা। বিশুদ্ধ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেনঃإن الناس إذا رأوا المنكر فلم يغيروه أوشك أن يعمهم الله بعقابه “যখন মানুষেরা অন্যায় দেখেও তা প্রতিরোধ করবে না তখন যে কোন মুহূর্তে আল্লাহর শাস্তি তাদের সবাইকে গ্রাস করবে।” (মুসনাদে আহমদ) মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন কারীমে বলেছেনঃلعن الذين كفروا من بني إسرائيل على لسان داود وعيسى بن مريم ذلك بما عصوا وكانوا يعتدون كانوا لا يتناهون عن منكر فعلوه لبئس ما
পৃষ্ঠা:০২
يصنعون “ইসরাঈল সন্তাদের (ইহুদীদের) মধ্য থেকে যারা কুফরী করেছিল তারা দাউদ ও মরিয়ম পুত্র ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল, একারণে যে তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমা লঙ্ঘন করেছিল। অদের মধ্যে সংঘটিত অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে তারা একে অপরকে নিষেধ করত না। তাদের এই আচরণ ছিল অত্যন্ত অত্যন্ত নিকৃষ্ট!”(সুরা মায়িদাঃ ৭৮-৭৯ আয়াত) মুসনাদে ইমাম আহমদ ওঅন্যান্য হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহ বলেছেন, হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরের আয়াতদুটি তিলাওয়াত করে বলেনঃوالذي نفسي بيده لتأمرن بالمعروف ولتنهون عن المنكر ولتأخذن على يد السفيه ولتأطرنه على الحق أطراً، أو ليضربن الله بقلوب بعضكم على بعض، ثم ليلعنكم كما لعنهم . “মহান আল্লাহর কসম করে বলছি- যাঁর হাতে আমার জীবন তোমরা অবশ্যই সৎকর্মের আদেশ করবে, অসৎকর্ম থেকে নিষেধ করবে, নির্বোধ পাপীকে প্রতিরোধ করবে এবং তাকে সঠিক পথে ফিরে আসতে বাধ্য করবে। যদি তোমরা তা না কর অহলে আল্লাহ তোমাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা ও শত্রুতা সৃষ্টি করে দেবেন এবং তোমাদেরকে অভিশপ্ত করবেন যেমন ইসরাঈল সন্তানদেরকে অভিশপ্ত করেছিলেন।” অন্য একটি সহীহ হাদীসে হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃمن رأى منكم منكرا فليغيره بيده، فإن لم يستطع فبلسانه، فإن لم يستطع فبقلبه، وذلك أضعف الإيمان কেউ যদি অন্যায় দেখতে পায় তাহলে সে তাকে তার বাহুবল দিয়ে পরিবর্তন করবে। যদি
পৃষ্ঠা:০৩
তাতে সক্ষম না হয় তাহলে সে তার বক্তব্যের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করবে। এতেও যদি সক্ষম না হয় তাহলে সে তার অন্তর দিয়ে এর প্রতিকার প্রতিরোধ (কামনা) করবে, আর এটাই হলো ঈমানের দুর্বলতম পর্যায়।” (সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
ইসলামি পর্দা ও তার গুরুত্বঃ আল্লাহ অয়ালা পবিত্র কুরআন কারীমে মহিলাদেরকে পর্দা করতে এবং গৃহে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পর্দাহীনতা, সৌন্দর্য্য প্রদর্শন এবং পুরুষদের সাথে কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর কোমল ও আকর্ষণীয় করতে নিষেধ করেছেন, যেন তাঁরা সকল অশান্তি, অকল্যাণ ও ফিতনার কারণসমূহ থেকে দুরে থাকতে পারেন। আল্লাহ বলেছেনঃ يا نساء النبي لستن كأحد من النساء إن اتقيتن فلا تخضعن بالقول فيطمع الذي في قلبه مرض وقلن قولا معروفا وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الأولى وأقمن الصلاة وآتين الزكاة وأطعن الله ورسوله “হে নবীপত্নীগণ, তোমরা অন্যান্য নারীদের মত নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পর-পুরষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় কণ্ঠে কথা বলবে না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হতে পারে। বরং তোমরা স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। আর সেমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে, জাহেলী যুগের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না। তোমরা সালাত (নামায) কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে।” (সুরা আল আহযাব ৩২-৩৩ আয়াত) এই আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ মহানবীর স্ত্রীদেরকে যারা মুমিনদের মাতৃতুল্য ছিলেন এবং নারীদের মধ্যে সর্বোত্তম ও পবিত্রতম ছিলেন-
পৃষ্ঠা:০৪
তাঁদেরকে পুরুষদের সাথে কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর কোমল ও আকর্ষণীয় করতে নিষেধ করছেন; কারণ এর ফলে যার অভরে অশ্লীলতার বা ব্যভিচারের ব্যাধি রয়েছে সে হয়ত ডেবে বসবে যে তাঁরা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছেন। উপরন্ত তাঁদেরকে গৃহে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বর্বর যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে নিষেধ করেছেন। বর্বর যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের অর্থ হলো মাথা, মুখ, ঘাড়, গলা, বুক, হাত, পা ইত্যাদিকে অনাবৃত রাখা, যেন মানুষ তা দেখতে পায়। এসব অঙ্গ উন্মুক্ত রাখাতে পুরুষদের দৃষ্টিতে নারীর সৌন্দর্য ফুটে ওঠে এবং তাদের মনে কামনার আগুন জ্বরে ওঠে, অম্লীলতা ও ব্যভিচারের দিকে তাদের মন ধাবিত হয়। মুমিনদের মাতা মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর স্ত্রীগণের অতুলনীয় ঈমান, পবিত্রক্স, সততা ও মুমিনদের মনে তাদের প্রতি গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদেরকে এসকল কর্ম থেকে নিষেধ করেছেন। তাহলে অন্যান্য নারীদের এসকল কর্ম থেকে দুরে থাকা কত প্রয়োজন তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই আল্লাহর এ নির্দেশ যে সকল নারীর প্রতি সমানভাবে প্রযোজ্য তা আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি। উপরন্ত আল্লাহ এই আয়াতে বলেছেনঃ “তোমরা সালাত (নামায) কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে।” পর্দার নির্দেশের ন্যায় এসকল নির্দেশও নবীপত্নীগণ এবং অন্যান্য সকল নারীর প্রতি সমানভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহ আরো বলেছেন: وإذا سألتموهن متاعا فسألوهن من وراء حجاب ذلكم أطهر لقلوبكم وقلوبهن “সেমরা যদি নবীপত্নীদের নিকট থেকে কোন কিছু চাও তাহলে পর্দার আড়াল থেকে তা চাইবে। এ বিধান তোমাদের এবং তাঁদের অন্তরকে অধিকতর পবিত্র রাখবে।” (সুরা আল-আহযাব ৫৩ আয়াত)
পৃষ্ঠা:০৫
এই আয়াতে পুরুষদের থেকে নারীদের সম্পূর্ণ পর্দা করার ৪ আড়ালে থাকার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এখানে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে পর্দার এই বিধান নারী পুরুষ সবার অন্তরকে অধিকতর পবিত্র রাখে এবং অশ্লিলতা ও অর কারণাদি থেকে অদেরকে দুরে রাখে। এথেকে বোঝা যায় যে পর্দাপালন হচ্ছে পবিত্রতা ও নিরাপত্তা, আর পর্দাহীনতা হচ্ছে অপবিত্রতা ও অশ্লিলতা। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেনঃ يا أيها النبي قل لأزواجك وبناتك ونساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن ذلك أدنى أن يعرفن فلا يؤذين وكان الله غفورا رحيما “হে রাসুল, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, আপনার কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন অদের চাদত্রের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তাদেরকে কষ্টপ্রদান করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” (সুরা আল-আহযাব ৫৯ আয়াত) এখানে আল্লাহ সকল মুসলিম রমণীকে তাদের চাদর দ্বারা তাদের মুখ, মাথা, চুল ও অন্যান্য সকল সৌন্দর্যের স্থান ঢেকে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তাঁদের সততা ও পবিত্রতা সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়, ফলে তাঁরা কোন মোহ-কামনা বা কলুষতার মধ্যে জড়িয়ে কষ্ট পাবেন না। উপরের আয়াতের ব্যাখায় হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহ বলেছেনঃ أمر الله نساء المؤمنين إذا خرجن من بيوتهن في حاجة أن يغطين وجوههن من فوق رؤوسهن بالجلابيب ويبدين عينا واحدة “এখানে আল্লাহ মুমিন নারীগণকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা যেন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে নিজেদের চাদর দিয়ে নিজেদের মাথা ও
পৃষ্ঠা:০৬
মুখমণ্ডল ঢেকে নেয়, শধুমাত্র একটা চোখ তারা বাইরে রাখবে।” আল্লাহ আরো বলেছেনঃ والقواعد من النساء اللاتي لا يرجون نكاحا فليس عليهن جناح أن يضعن ثيابهن غير متبرجات بزينة وأن يستعففن خير لهن والله سميع عليم “বৃদ্ধারা, যারা বিবাহের কোন আশা রাখেনা, অদের জন্য এটা অপরাধ হবেনা যে তারা সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে অদের পোষাক খুলে রাখবে। তবে তা থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।” (সুরা নুরঃ ৬০) এ আয়াতে আল্লাহ জানিয়েছেন যে, যৌন অনুভুতি রহিতা বৃদ্ধাদের জন্য- যাদের বিবাহের কোন আশাই নেই তাদের মুখমণ্ডল ও হাত খুলে রাখা অপরাধ হবে না, যদি তারা সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। এর দ্বারা বোঝা গেল যে বৃদ্ধাদের জন্যও সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে মুখ, হাত বা অন্য কোন স্থান থেকে কাপড় সরানো জায়েজ হবে না, বরং তা অপরাধ ৪ পাপ বলে গণ্য হবে। অতএব যদি যুবতী বা অল্পবয়স্ক মেয়েরা অদের মুখ, হাত, মাথা, কাঁধ ইতয়দি খোলা রেখে তাদের রূপ যৌবনের প্রদর্শনী করেন তাহলে তা কত বড় অপরাধ হবে তা সহজেই অনুমেয়। এখানে লক্ষণীয় যে, আল্লাহ বৃদ্ধাদের বহির্বাস খোলার অনুমতি দিয়েছেন এই শর্তে যে তাদের মনে বিবাহের বা সংসার জীবনের বা যৌন জীবনের কোন আগ্রহই থাকবে না। কারণ এ ধরণের বাসনা কোন মহিলার মনে থাকলে তিনি সাজগোজের মাধ্যমে নিজেকে আকর্ষণীয়া করতে সচেষ্ট হবেন, আর সেক্ষেত্রে তার জন্য পর্দার ব্যাপারে সামান্য শিথিলতাও নিষিদ্ধ। সব শেষে আল্লাহ এধরণের অতিবৃদ্ধাদেরকেও পূর্ণ পর্দা পালনে উৎসাহ দিয়েছেন, এতে পর্দার গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে। এদের জন্য যদি
পৃষ্ঠা:০৭
পুর্ণাঙ্গ পর্দা পালন উত্তম হয় অহলে যুবতীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ পর্দা পালন করা এবং নিজেদের সৌন্দর্য আবৃত করে রাখা যে কতবেশী গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয়। পূর্ণ পর্দা পালন তাদেরকে সকল অন্যায়, অম্লীলতা ও অবক্ষয় থেকে রক্ষা করবে। পবিত্র ও কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামে একদিকে যেমন বিবাহের মাধ্যমে স্বাভাবিক যৌনজীবনের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, অপরদিকে বিবাহেতর যৌন সম্পর্ক সৃষ্টিতে প্রলুব্ধ করতে পারে এমন সকল কর্ম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ ব্যভিচার বা বিবাহেতর যৌনতা সমাজকে নিশ্চিত অবক্ষয় ও অশান্তির মধ্যে নিপতিত করে। এর ফলে মানুষ পাশবিকতার নিম্নস্তরে পৌঁছে যায়। স্বাভাবিক দাম্পত্য ও পারিবারিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। সন্তানেরা পিতামাতার স্বাভাবিক স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হয়, ফলে তারা সুষ্ঠ ও সুষম ব্যক্তিত্ব নিয়ে গড়ে উঠতে পারে না, বরং প্রয়োজনীয় মানবিক গুণাবলী থেকে তারা বঞ্চিত থাকে এবং সমাজের জন্য তার দুষ্টক্ষতে পরিণত হয়। এদের সংখ্যাধিক্য মানব সমাজকে পশু সমাজে রূপান্তরিত করে। একারণে ব্যভিচার রোধ না করলে পবিত্র, শালীন ও কনয়ণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আর ব্যভিচারের প্রতি প্রলুব্ধ করতে পারে এমন সকল কর্ম ও আচরণ বন্ধ না করে ব্যভিচার বন্ধ করা আদৌ সম্ভব নয়। এজন্য আল্লাহ পর্দা, দৃষ্টিসংযম ও পবিত্র জীবনের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেনঃ قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك أزكى لهم إن الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن إلا ما ظهر منها وليضربن بخمرهن على
পৃষ্ঠা:০৮
جيوبهن ولا يبدين زينتهن إلا لبعولتهن أو آبائهن أو آباء بعولتهن أو أبنائهن أو أبناء بعولتهن أو إخوانهن أو بني إخوانهن أو بني أخواتهن أو نسائهن أو ما ملكت أيمانهن أو التابعين غير أولى الإربة من الرجال أو الطفل الذين لم يظهروا على عورات النساء ولا يضربن بأرجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن وتوبوا إلى الله جميعا أيها المؤمنون لعلكم تفلحون . “হে রাসুল, আপনি মুমিনদেরকে বলুন, অরা যেন অদের দৃষ্টি সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এর ফলে অরা অধিকতর পবিত্র থাকতে পারবে। তারা যা করে আল্লাহ তা জানেন। আর আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। স্বভাবতই যা বেরিয়ে থাকে তা ছাড়া অদের কোন অলংকার বা সৌন্দর্য যেন তারা প্রকাশ না করে। অরা যেন অদের মাথার কাপড় দিয়ে গলা-বুক আবৃত করে। অরা যেন অদের স্বামী, পিতা, শশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের দাসী, যৌনকামনা রহিত অধীনস্থ নিকট পুরুষ এবং যৌনজ্ঞানহীন ছোট বালক ব্যতীত অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বা অলংকার প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ, সেমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রতয়বর্তন কর, অহলে সেমরা সফলতা অর্জন করতে পারবে।” (সুরা নূর ৩০-৩১ আয়াত) অতএব আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, দৃষ্টিসংযম করা, পর্দা পালন করা ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করা দুনিয়া ও আখেরাতের পবিত্রতা ও সফলতা অর্জনের উপায়। এথেকে দুরে সরে গেলে ধ্বংস ও শাস্তি অনিবার্য। আল্লাহ আমাদেরকে সফলতার পথে চলার তৌফিক দান করুন এবং ধ্বংসের পথ থেকে আমাদের দূরে রাখুন। আমিন।
পৃষ্ঠা:০৯
এখানে আল্লাহ বলেছেন, মানুষ যা কিছু করে তা সবই তিনি জানেন, তাঁর কাছে কিছুই গোপনীয় নয়। এতে মুমিনদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, তাঁরা যেন এমন কোন কর্ম না করেন যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন, আর আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন এমন কোন কর্ম পালনে যেন তাঁরা অবহেলা না করেন। কারণ আল্লাহ তাঁদের দেখতে পান, তাঁদের সকল ভালমন্দ কর্ম সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেনঃ يعلم خائنة الأعين وما تخفي الصدور “চক্ষুর গোপন চাউনি ও অন্তরে যা গোপন আছে তা তিনি জানেন।” (সুরা মুমিন ১৯ আয়াত) তিনি আরো বলেছেনঃ وما تكون في شأن وما تتلو منه من قرآن ولا تعملون من عمل إلا كنا عليكم شهودا إذ تفيضون فيه “তুমি যে কোন কর্মে রত হও, তৎসম্পর্কে কুরআন থেকে যা কিছু আবৃত্তি কর এবং তোমরা যে কার্যই কর সবকিছুতেই আমি তোমাদের পরিদর্শক যখন তোমরা তাতে প্রবৃত (সুরা ইউনুস ৬১ আয়াত ২৪।” বান্দার উপর তো এটাই দায়িত্ব যে সে অর প্রভুকে ভয় করে চলবে, তার মনে সর্বদা এই লজ্জা থাকবে যে, তার প্রভু যেন তাকে কোন অনয়য় কাজে লিপ্ত দেখতে না পান, অথবা তাঁর নির্দেশিত কোন দায়িত্ব পালন থেকে তাকে যেন দূরে না দেখেন।
মেয়েদের সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজঃ উপরের আয়াতে “স্বভাবতই যা বেরিয়ে থাকে” এমন সৌন্দর্য ছাড়া সবকিছু আবৃত করে রাখতে নারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হলো “স্বভাবতই বেরিয়ে থাকা সৌন্দর্য” কি?
পৃষ্ঠা:১০
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহ- বলেছেনঃ “স্বভাবতই যা বেরিয়ে থাকে” বলতে পোশাকের সৌন্দর্যকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মহিলারা ইসলাম সম্মত পোশাক পত্রে বাইরে বেরোতে পারেন, যে পোশাক সমস্ত দেহ আবৃত করে রাখবে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহ বলেছেনঃ “স্বভাবতঃই যা বেরিয়ে থাকে” বলতে মুখমণ্ডল ও কজি পর্যন্ত হাত বোঝান হয়েছে। একধার দ্বারা কেউ কেউ প্রমান করতে চান যে পর্দানশীন মহিলারা মুখ ও হাতের পাতা খুলে রাখতে পারেন। হযরত ইবনে আব্বাসের উপরোক্ত কথার অর্থ তা নয়। তাঁর কথার অর্থ হলো পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার আগে মেয়েরা সাধারণতঃ মুখ ও হাতের পাতা খুলে রাখতো। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর আল্লাহ মেয়েদের উপর সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজ করেছেন, যা আমরা আগের আয়াতগুলোর আলোচনায় দেখতে পেয়েছি। হযরত ইবনে আব্বাসের কথার অর্থ এই নয় যে পর্দার বিধান নাজিল হওয়ার পরেও মুসলিম মেয়েরা মুখ ও হাত বের করে চলতে পারবে। কারণ হযরত আলী বিন আবু তালহা বর্ণনা করেছেন, হযরত ইবনে আব্বাস বলেছেন: “উপরের আয়াতে আল্লাহ মুমিন নারীগণকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা কোন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে তাদের চাদর দিয়ে মাথা সহ মুখমণ্ডল ঢেকে নেবে এবং শুধুমাত্র একটি চোখ বাইরে রাখবে।” এথেকে স্পষ্ট যে পর্দাপালনকারী মহিলার মুখ বা হাত মখোলা রাখা কোন অবস্থাতেই জায়েজ নয়। অন্য একটি হাদীস দ্বারা হাত ও মুখ খোলা রাখা জায়েজ প্রমানিত করতে চান কেউ কেউ, হাদীসটি সুনানে আবি দাউদে বর্ণিত হয়েছে, এতে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা বলেছেনঃ তাঁর বোন আসমা বিনতি আবু বাকর রাদিয়াল্লাহ আনহয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি
পৃষ্ঠা ১১ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:১১
ওয়া সাল্লামের ঘরে প্রবেশ করেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “হে আসমা, মেয়েরা সাবালিকা হবার পর তাদের মুখমণ্ডল ও কজি পর্যন্ত হাত ছাড়া আর কিছু দেখানো জায়েজ নয়।” এটি একটি দুর্বল সনদের হাদীস, মোটেও নির্ভরযোগ্য নয়। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হিসাবে একে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। কারণঃ প্রথমতঃ এ হাদীসটিকে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছেন খালিদ বিন দুরাইক। তিনি বলেছেনঃ “হযরত আয়েশা বলেছেন”, তিনি একথা বলেন নি যে তিনি নিজে হযরত আয়েশাকে বলতে শুনেছেন। কারণ তিনি জীবনে হযরত আয়েশা থেকে কোন হাদীস শোনেন নি। কাজেই খালিদ বিন দুরাইক ও হযরত আয়েশার মাঝে অন্য একজন মাধ্যম রয়েছেন যার নাম খালিদ উল্লেখ করেন নি। এধরণের হাদীসকে মুনকাতীয় বলা হয়, এবং মুনকাতিয় হাদীস দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য, কারণ অনুল্লেখিত ব্যক্তি কে ছিলেন, তিনি সৎ, সত্যবাদী ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন কিনা তা জানার কোন উপাই নেই। আর একারণেই হযরত আবু দাউদ এই হাদীসটি বর্ণনা করার পরে তার দুর্বলতা ৪ অনির্ভরযোগ্যতা বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয়ত্বঃ এই হাদীসটি খালিদ বিন দুরাইক থেকে বর্ণনা করেছেন কাতাদা “আনআনা” পদ্ধতিতে। মুহাদ্দিনগণ একমত যে কাতাদার “আনআনা” বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। তৃতীয়ত্বঃ কাতাদা থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সাঈদ বিন বশীর নামক এক ব্যক্তি, তিনি ছিলেন একজন দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। উপরের আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট যে এই হাদীসটিকে
পৃষ্ঠা:১২
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লামের বাণী বলে মনে করা বা এর উপর নির্ভর করে মুখ ও হাত খোলার বিধান দেয়া মোটেও সম্ভব নয়। ইতিপুর্বে আমরা দেখেছি আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ “তোমরা যদি নবীপীদের নিকট থেকে কোন কিছু চাও তাহলে পর্দার আড়াল থেকে তা চাইবে।” আমরা পূর্বের আলোচনায় দেখেছি যে, এই বিধান নবীপত্নী এবং সকল মুসলিম নারীর জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এখানে আল্লাহ মেয়েদেরকে পুরোপুরি পর্দার আড়ালে থাকতে বলেছেন, মুখ বা হাত কিছুই দেখাবার অনুমতি দেননি। এ আয়াতের বক্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট, কোন বয়খ্যার অবকাশ রাখেনা। কাজেই আমাদেরকে এই আয়াতের উপর নির্ভর করতে হবে এবং অন্যান্য আয়াত ও হাদীসের ব্যাখ্যা এর আলোকেই করতে হবে।
আঁটসাট ও পাতলা পোষাক হারামঃ ইসলামি হেজাব বা পর্দার প্রথম দিক হল তা মেয়েদের সর্বাঙ্গ আবৃত করে রাখে। দ্বিতীয়ত তা চিলেচালা ও স্বাভাবিক কাপড়ের হবে, পাতলা বা আঁটসাট পোশাক পরতে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম- নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ رب كاسية في الدنيا عارية في الآخرة “দুনিয়ার অনেক সুবসনা সজ্জিতা নারী আখেরাতে বসনহীনা (বলে বিবেচিত) হবে।” (সহীহ বোখারী, মুয়াত্তা, তিরমিযি) তিনি আরো বলেছেনঃ صنفان من أهل النار لم أرهما بعد، نساء كاسيات عاريات مائلات مميلات رؤوسهن كأسنمة البخت المائلة، لا يدخلن الجنة ولا يجدن ريحها، ورجال بأيديهم سياط كأذناب البقر يضربون بها الناس
পৃষ্ঠা:১৩
“দুই শ্রেণীর দোজখবাসীকে আমি এখনো দেখিনি। (অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে সমাজে এদের দেখা যাবে।) একশ্রেণী হল ঐ সকল নারী যারা পোষাক পরিহিতা হয়েও উলঙ্গ, যারা পথচ্যুত এবং অন্যদেরকে পথচ্যুত করবে, এদের মাথা হবে উটের পিঠের চুটির মত ঢং করে বাঁকানো, এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এমনকি জান্নাতের খশবুও তারা পারে না। দ্বিতীয় শ্রেণীর দোজখবাসী হল ঐ সকল পুরুষ যারা সমাজে দাপট দেখিয়ে চলে, তাদের হাতে থাকে বাঁকানো লাঠি বা আঘাত করার মত হাতিয়ার, যাদিয়ে তারা মানুষদেরকে মারধোর করে বা কষ্ট দেয়।” (সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ) এ হাদীসদ্বয়ের আলোকে একথা স্পষ্ট যে পাতলা বা আঁটসাট পোশাক পরিধান করা উলঙ্গতা ভিন্ন কিছুই নয়। এখানে যেমন পর্দা পালনে অবহেলা করা থেকে সতর্ক করা হয়েছে তেমনি মানুষদেরকে কষ্ট দেয়া ও জুলুম করা থেকে কঠিনভাবে সাবধান করা হয়েছে। এদুটি আচরণ সমাজকে কলুষিত করে, মানব সমাজকে পাশবিকতায় ভরে তোলে, তাই এর জন্য রয়েছে কঠিনতম শাস্তি।
অমুসলিমদের অনুকরণ কঠিনতম অন্যায়ঃ কঠিন সামাজিক ব্যাধিগুলোর অন্যতম হলো মুসলিম মহিলাদের মধ্যে অমুসলিম-কাফির মহিলাদের অনুকরণের প্রবণতা। অনেক মুসলিম মহিলা অমুসলিমদের মত সংক্ষিপ্ত ও পাতলা পোশাক পরিধান করেন এবং অদের মত ফ্যাশন ও সৌন্দর্য প্রদর্শনীতে লিপ্ত হন। অথচ মহানবী- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ من تشبه بقوم فهو منهم “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুকরণ করবে সে সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (আবু দাউদ, তাবারানী)
পৃষ্ঠা:১৪
একারণে মুসলিম মহিলাদের জন্য অমুসলিম মহিলাদের মত পোশাক বা সাজসজ্জা সম্পূর্ণ হারায়। অনুরূপভাবে মুসলিম নামধারী হয়েও যে সকল মহিলা আল্লাহর বিধান অমান্য করেন তাঁদের অনুকরণও হারাম। ছোট মেয়েদের ক্ষেত্রেও এব্যাপারে ঢিলেমি জায়েজ নয়। কারণ তাদেরকে ছোট থেকে অমুসলিমদের বা ইসলাম অমান্যকারীদের অনুকরণ করতে ও তাদের মত পোশাক পরতে অভ্যস্ত করলে তারা বড় হয়ে এর বিপরীত অন্য সব পোশাক ঘৃণা করবে। ফলে সুদুর প্রসারী সামাজিক অবক্ষয় ও সমস্যা সৃষ্টি হবে।
মহিলারা পুরুষদের পোষাক পরবেন নাঃ পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক ব্যবহার করা মেয়েদের জন্য হারাম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ليس منا من تشبه بالرجال من النساء ولا من تشبه بالنساء من الرجال “যে সকল মহিলা পুরুষদের অনুকরণ করে এবং যেসকল পুরুষ মহিলাদের অনুকরণ করে তারা মুসলিম উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (মুসনাদে আহমদ, অরীখে বোখারী) অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ لعن رسول الله الرجل يلبس لبسة المرأة والمرأة تلبس لبسة الرجل “যে সকল মহিলা পুরুষদের পোশাক পরে এবং যেসকল পুরুষ মহিলাদের পোশাক পরে তাদেরকে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম- অভিশাপ দিয়েছেন।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুস্তাদরাকে হাকেম, মুসনাদে আহমদ)
মহিলারা সুবাসিত হয়ে বাইরে যাবেন নাঃ মুসলিম মহিলাদের জন্য পোশাকে বা শরীরে সুগন্ধি, সেন্ট বা
পৃষ্ঠা:১৫
আতর মেখে বাইরে বেরোনো নিষিদ্ধ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ أيما امرأة استعطرت فمرت على قوم ليجدوا ريحها فهي زانية “যদি কোন মহিলা সুগন্ধি মেখে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে, যেন মানুষেরা অর সুগন্ধ অনুভব করে তাহলে সেই মহিলা ব্যভিচারিণী বলে গণ্য হবে।” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, সহীহ ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমিযি, হাকেম, মুসনাদে আহমদ) তিনি আরো বলেছেনঃ إذا خرجت إحداكن إلى المسجد فلا تقربن طيباً “যদি কোন মহিলা মসজিদে নামায়ে আসতে চায় তবে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে।” (সহীহ মুসলিম, আবু উওয়ানা)
ছেলেমেয়েদের মেলামেশা ও ভ্রমণঃ ইসলামে পর্দার অর্থ শুধু ঘরের বাইরে যেতে হলে মেয়েদের সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখাই নয়। বরং পর্দার অর্থ হলো অবক্ষয় ও কলুষতা প্রসার করতে পারে এমন সকল কর্ম ও আচরণ থেকে বিরত থাকা। এজন্য ঘরের মধ্যেও মাহরাম বা নিকটতম আত্মীয় ছাড়া অন্য সবার থেকে পর্দা করতে হবে, নিকটতম আত্মীয় ছাড়া অন্য কারো সাথে একত্রে অবস্থান বা চলাফেরা করা যাবে না। সহীহ হাদীসে রাসুলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ لا يخلون رجل بامرأة إلا كان الشيطان ثالثهما “যখনই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে একাকী অবস্থান করে তখনই শয়তান তাদের সঙ্গী হয়।” তিনি আরো বলেছেনঃ لا يبيتن رجل بامرأة إلا أن يكون زوجا أو ذا محرم
পৃষ্ঠা:১৬
“স্বামী বা মাহরাম (নিকটতম আত্মীয়) ছাড়া কোন পুরুষ কোন মেয়ের সাথে এক ঘরে বা এক বাড়িতে রাত কাটাবে না।” (সহীহ মুসলিম) অন্য হাদীসে তিনি বলেছেনঃ تسافر امرأة إلا مع ذي محرم، ولا يخلون رجل بامرأة إلا ومعها ذو محرم لا “কোন মহিলা তার কোন মাহরাম বা নিকটতম আত্মীয়ের সঙ্গে ছাড়া ভ্রমণ করবে না এবং কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে একত্রে অবস্থান করতে পারবে না, যদি তাদের সাথে ঐ মহিলার কোন মাহরাম বা নিকটতম আত্মীয় উপস্থিত না থাকে।” (সহীহ বোখারী, সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ) এসকল হাদীসের আলোকে স্বামীর আত্মীয় বা বন্ধু, ভগ্নিপতি বা তার আত্মীয় স্বজন, চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, ফুফাতো ভাই বা এধরণের দুরবর্তী আত্মীয়দের থেকে পূর্ণ পর্দা করা, তাদের সাথে একত্রে অবস্থান বা চলাফেরা না করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝতে পারছি। পর্দার এসকল দিকে অবহেলা যেমন আখেরাতে ভয়ানক শাস্তির কারণ, তেমনি পার্থিব জীবনে অবক্ষয়, অবনতি ও কলুষতা প্রসারের অন্যতম কারণ। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল নির্দেশ পূর্ণভাবে পালনের মধ্যেই রয়েছে মুসলমানদের পরকালীন মুক্তি ও পার্থিব জীবনের উন্নতি এবং সফলতা।
নারীসমাজের প্রতি পুরুষদের দায়িত্বঃ আমাদেরকে জানতে হবে, পর্দার বিধান পালন করা যেমন মেয়েদের উপর দায়িত্ব, তেমনি পুরুষদের উপরও দায়িত্ব। উপরন্ত পুরুষদের উপর দায়িত্ব হলো মেয়েদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। যদি মেয়েরা পর্দা পালন না করেন আর পুরুষেরা চুপ থাকেন তাহলে তাঁরাও সমান পাপী হবেন এবং আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হবেন।
পৃষ্ঠা:১৭
নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে মানব সমাজ। নারীদের সংস্কার ও পবিত্রতা ব্যতিরেকে সামাজিক পবিত্রতা অর্জন অসম্ভব। আর অদের পবিত্র জীবন যাপনের ক্ষেত্রে পুরুষদের দায়িত্ব অপরিসীম। কারণ পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে পুরুষেরা মেয়েদের মনমানসিকতা ও চালচলন শুধু প্রভাবিতই করে না বরং নিয়ন্ত্রিত করে। বিভিন্ন যুগে ও সমাজে পুরুষেরা নিজেদের কামনা ও অভিরুচি চরিতার্থ করতে মেয়েদেরকে শালীনতার বাইরে বেরোতে উৎসাহিত করেছে। ফলে সামাজিক অবক্ষয় ঘটেছে, ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পঙ্কিলতা ও অশ্লীলস। বস্তুতঃ নারীর প্রতি পুরুষের এ দায়িত্ব এক কঠিন পরীক্ষা। সামাজিক পবিত্রতা ও মানব জাতির স্থায়ী কল্যাণের জন্য যিনি নিজের কামনা ও বাসনাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নারীজাতিকে শালীনতা ও পবিত্রতার পথে উৎসাহিত করতে পারলেন তিনিই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃما تركت بعدي فتنة أضر على الرجال من النساء “পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে ক্ষতিকর ও কষ্টকর কোন পরীক্ষা আমি রেখে যাচ্ছি না।” (বোখারী, মুসলিম, আহমদ, ইবনে মাজাহ, নাসঈ) অন্য হাদীসে তিনি বলেছেনঃإن الدنيا حلوة خضرة وإن الله مستخلفكم فيها فناظر كيف تعملونفاتقوا الدنيا واتقوا النساء، فإن أول فتنة بني إسرائيل كانت في النساء “এই দুনিয়া হচ্ছে সুন্দর শ্যামল আবাসস্থল, আল্লাহ সেমাদেরকে এখানে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন, তোমরা কে কি কর্ম কর তা তিনি দেখবেন। অতএব তোমরা পার্থিব জীবনের প্রলোভন থেকে এবং নারীঘটিত প্রলোভন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করবে; (কারণ এপথেই সমাজের অবক্ষয় নেমে আসে), যেমন ইহুদীদের মধ্যে প্রথম অশান্তি ও অবক্ষয়
পৃষ্ঠা:১৮
এসেছিল নারীঘটিত কারণে।” (সহীহ মুসলিম) আমাদের সবার উপর দায়িত্ব হলো মেয়েদেরকে পর্দা পালনে উৎসাহিত করা, পর্দাহীনতা থেকে অদেরকে নিষেধ করা। পর্দাহীনতার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। নয়য় ও সত্যের পথে চলতে এবং তার উপর ধৈর্য ধারণ করতে একে অপরকে উপদেশ পরামর্শ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আল্লাহ সবাইকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং কর্ম অনুসারে প্রতিফল প্রদান করবেন। শাসকগোতি, প্রশাসনের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ, আঞ্চলিক প্রশাসকগণ, বিচারকগণ, আলেমগণ, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীগণ ও সমাজের অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দায়িত্ব এসকল বিষয়ে অন্যদের চেয়ে বেশী, তাদের জন্য আশংকাও বেশী। তাদের মধ্যে কেউ যদি দায়িত্ব পালন না করে নিশ্চুপ থাকেন তবে তার পরিণতি হবে কঠিন ও ভয়াবহ। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে অনায় ও অসৎকর্মের প্রতিবাদ করা শুধুমাত্র এদেরই দায়িত্ব। বরং তা সকল মুসলমানের দায়িত্ব। মেয়েদের অভিভাবকদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশী। তাদেরকে এ ব্যাপারে খুবই কড়াকড়ি করতে হবে। যারা এবিষয়ে ঢিলেমি করেন তাদের সাথেও কড়াকড়ি করতে হবে। সহীহ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ما بعث الله من نبي إلا كان له من أمته حواريون وأصحاب يأخذون بسنته ويقتدون بأمره، ثم إنها تخلف من بعدهم خلوف يقولون ما لا يفعلون ويفعلون ما لا يؤمرون فمن جاهدهم بيده فهو مؤمن ومن جاهدهم بلسانه فهو مؤمن ومن جاهدهم بقلبه فهو مؤمن، وليس . وراء ذلك من الإيمان حبة خردل করেছেন, তাঁর উম্মতদের মধ্য থেকে কিছু লোক তার একনিষ্ঠ
পৃষ্ঠা:১৯
সাহায্যকারী ও সঙ্গী হয়েছেন, যারা তার সুন্নাত আঁকড়ে ধরেছেন এবং তাঁর দেখানো পথে চলেছেন। পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে এমন সব লোক দেখা দেয় যারা মুখে যা বলে কর্মে তা করে না, আর যে সকল কাজ তাদেরকে করতে বলা হয়নি সে সকল কাজ তারা করে। (মুমিনদের দায়িত্ব হলো সর্বশক্তি দিয়ে এধরণের লোকদের প্রতিরোধ করা।) যে ব্যক্তি বাহবল দিয়ে অদের সাথে যুদ্ধ-জিহাদ করবে সে মুমিন, যে ব্যক্তি বাকশক্তি ও বক্তব্যর মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিহাদ করবে সেও মুমিন। যে ব্যক্তি অন্তর দিয়ে অদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদ করবে সেও মুমিন। এর বাইরে আর শরিসার দানা পরিমাণ ঈমানও নেই।” (সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ) এ হাদীসের আলোকে আমরা বুঝতে পারছি যারা পর্দার ব্যাপারে চিলেয়ি করেন তাদের সাথে কড়াকড়ি করা ও তাদের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া আমদের ঈমানী দায়িত্ব। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁর দ্বীনকে জয়যুক্ত করেন, আমাদের শাসক ও নেতৃবৃন্দকে সততা ও যোগ্যতা দান করেন, অদের দ্বারা অন্যায় ও ক্ষতির পথ রোধ করেন এবং ন্যায় ও সত্যকে বিজয়ী করেন। অদেরকে সৎ ও যোগ্য সহচর ও পরামর্শদাতা দান করেন। প্রার্থনা করি, আল্লাহ আমাদেরকে, সকল মুসলিমকে সে সকল কর্ম করার তৌফিক দান করেন যে সকল কর্মে দেশ, জাতি ও সকল মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও প্রার্থনা কবুলকারী। তিনিই আমাদের একমাত্র সহায়ক ও অবলম্বন। আল্লাহ তাঁর বান্দা ও রাসুল হযরত মুহম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর বংশধর, সঙ্গী ও অনুসারীদের উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করেন। ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
পৃষ্ঠা:২০
একজন জাপানী মহিলার দৃষ্টিতে ইসলাম ও পর্দা
বোন “খাগুলা” একজন জাপানী নাগরিক। তিনি বর্তমানে রিয়াদস্থ জাপানী দুতাবাসে কর্মরত তাঁর স্বামীর সাথে রিয়াদে অবস্থান করছেন। গত ২৫/১০/১৯৯৩ তারিখে তিনি সৌদি আরবের আল-কাসীয় প্রদেশের কেন্দ্র “বুরাইদা” শহরের ইসলামি কেন্দ্রের মহিলা বিভাগে আসেন এবং ইসলাম ও পর্দা সম্পর্কে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ইংরেজী ভাষায় একটি লিখিত প্রবন্ধ পড়ে শোনান। পরে উপস্থিত বোনেদের সাথে আলোচনা ও মত বিনিময় করেন। তাঁর মূল প্রবন্ধটির বঙ্গানুবাদ এখানে পেশ করা হল।
পৃষ্ঠা ২১ থেকে ৩০
পৃষ্ঠা:২১
আমার ইসলাম
স্কুাসে অবস্থান কালে আমি ইসলাম গ্রহণ করি। ইসলাম গ্রহণের পুর্বে আধিকাংশ জাপানীর ন্যায় আমিও কোন ধর্মের অনুসারী ছিলাম না। ক্লাসে আমি ফরাসী সাহিত্যের উপরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর লেখাপড়ার জন্য এসেছিলাম। আমার প্রিয় লেখক ও চিন্তাবিদ ছিলেন সাঁর্তে, নিৎশে ও কামাস। এদের সবার চিন্তাধারাই নাস্তিকতাভিত্তিক। ধর্মহীন ও নাস্তিকতা প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও ধর্মের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। আমার অভ্যন্তরীণ কোন প্রয়োজন নয়, শুধুমাত্র জানার আগ্রহই আমাকে ধর্ম সম্পর্কে উৎসাহী করে সেলে। মৃত্যুর পরে আমার কি হবে তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা ছিল না, বরং কিভাবে জীবন কাটাব এটাই ছিল আমার আগ্রহের বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে আমার মনে হচ্ছিল আমি আমার সময় নষ্ট করে চলেছি, যা করার তা কিছুই করছি না। ঈশ্বরের বা স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকা বা না থাকা আমার কাছে সমান ছিল। আমি শুধু সত্যকে জানতে চাইছিলাম। যদি স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকে সহলে তার সাথে জীবন যাপন করব, আর যদি স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে না পাই তাহলে নাস্তিকতার জীবন বেছে নেব, এটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে আমি পড়াশুনা করতে থাকি। ইসলাম ধর্মকে আমি ধর্তব্যের মধ্যে আনিনি। আমি কখনো চিন্তা করিনি যে এটা পড়াশোনার যোগ্য কোন ধর্ম। আমার বন্ধমূল ধারণা ছিল যে, ইসলাম ধর্ম হল মুর্খ ও সাধারণ মানুষদের একধরণের মুর্তিপুজার ধর্ম। কত অজ্ঞানই না আমি ছিলাম! আমি কিছু খৃষ্টানের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করি। তাদের সাথে আমি বাইবেল অধ্যয়ন করতাম। বেশ কিছুদিন গত হবার পর আমি স্রষ্টার
পৃষ্ঠা:২২
অস্তিত্বের বাস্তবতা বুঝতে পারলাম। কিন্তু আমি এক নতুন সমসয়র মধ্যে পড়লাম, আমি কিছুতেই আমার অভত্রে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছিলাম না, যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম যে স্রষ্টার অস্তিত্ব রয়েছে। আমি গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু বৃথাই চেষ্টা, আমি শুধু স্রষ্টার অনুপস্থিতিই অনুভব করতে লাগলাম। তখন আমি বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যয়ন করতে শুরু করলাম। আশা করছিলাম এই ধর্মের অনুশাসন পালনের এবং যোগাডয়সের মাধ্যমে আমি ঈশ্বরকে অনুভব করতে পারব। খৃষ্টানধর্মের ন্যায় বৌদ্ধধর্মেও আমি অনেক কিছু পেলাম যা সত্য ও সঠিক বলে মনে হল। কিন্তু অনেক বিষয় আমি বুঝতে বা গ্রহণ করতে পারলাম না। আমার ধারণা ছিল, ঈশ্বর বা স্রষ্টা যদি থাকেন তাহলে তিনি সকল মানুষের জন্য এবং সত্য ধর্ষ অবশ্যই সবার জন্য সহজ ও বোধগম্য হবে। আমি বুঝতে পারলাম না, ঈশ্বরকে পেতে হলে কেন মানুষকে স্বাভাবিক জীবন পরিত্যয়ণ করতে হবে। আমি এক অসহায় অবস্থায় নিপতিত হলাম। ঈশ্বরের সন্ধানে আমার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কোন সমাধানে আসতে পারল না। এমতাবস্থায় আমি একজন আলজেরীয় মুসলিমের সাথে পরিচিত হলাম। তিনি স্কুাসেই জন্মেছেন, সেখানেই বড় হয়েছেন। তিনি নামাজ পড়তেও জানতেন না। তার জীবনযাত্রা ছিল একজন সত্যিকার মুসলিমের জীবনযাত্রা থেকে অনেক দুরে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস ছিল খুবই দৃঢ়। তার জ্ঞানহীন বিশ্বাস আমাকে বিরক্ত ও উত্তেজিত করে তোলে। আমি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। শুরুতেই আমি পবিত্র কুরআনের এক কপি ফরাসী অনুবাদ কিনে আনি। কিন্তু আমি ২ পৃষ্ঠাও পড়তে পারলাম না, কারণ আমার কাছে তা খুবই অদ্ভুত মনে হচ্ছিল।
পৃষ্ঠা:২৩
আমি একা একা ইসলামকে বোঝার চেষ্টা ছেড়ে দিলাম এবং পারিস মসজিদে গেলাম, আশা করছিলাম সেখানে কাউকে পার যিনি আমাকে সাহায্য করবেন। সেদিন ছিল রবিবার এবং মসজিদে মহিলাদের একটি আলোচনা চলছিল। উপস্থিত বোনেরা আমাকে আন্তরিকতার সাথে স্বাগত জানাবেন। আমার জীবনে এই প্রথম আমি ধর্মপালনকারী মুসলিমদের সাথে পরিচিত হলাম। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, নিজেকে তাঁদের মধ্যে অনেক সহজ ও আপন বলে অনুভব করতে লাগলাম, অথচ খৃষ্টান বান্ধবীদের মধ্যে সর্বদায় নিজেকে আগন্তক ও দুরাগত বলে অনুভব করায়। প্রত্যেক রবিবারে আমি আলোচনায় উপস্থিত হতে লাগলাম, সাথে সাথে মুসলিম বোনেদের দেওয়া বইপত্র পড়তে লাগলাম। এসকল আলোচনার প্রতিটি মুহূর্ত এবং বইএর প্রতি পৃষ্ঠা আমার কাছে ঈশ্বরের প্রতয়দেশের মত মনে হতে লাগল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি সত্যের সন্ধান পেয়েছি। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল, সেজদায় রত অবস্থায় আমি স্রষ্টাকে আমার অত্যন্ত কাছে অনুভব করতাম।
আমার পর্দা
দু বছর আগে যখন স্থালে আমি ইসলাম গ্রহণ করি তখন মুসলিম স্কুলছাত্রীদের ওড়না বা ঋর্ফ দিয়ে মাথা ঢাকা নিয়ে ফরাসীদের বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। অধিকাংশ ফরাসী নাগরিকের ধারণা ছিল, ছাত্রীদের মাথা ঢাকার অনুমতি দান সরকারী স্কুলগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষ রাখার নীতির বিরোধী। আমি তখনো ইসলাম গ্রহণ করিনি। তবে আমার বুঝতে খুব কষ্ট হত, মুসলিম ছাত্রীদের মাথায় ওড়না বা অর্ফ রাখার মত সামান্য একটি বিষয় নিয়ে ফরাসীরা এত অস্থির কেন। দৃশ্যতঃ মনে হচ্ছিল যে, স্কুাসের জনগণ তাদের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা, বৃহৎ শহরগুলোতে
পৃষ্ঠা:২৪
নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি আরব দেশগুলো থেকে আসা বহিরাগতদের ব্যাপাত্রে উত্তেজিত ও স্নায়ুপীড়িত হয়ে পড়েছিলেন, ফলে তাঁরা তাঁদের শহরগুলোতে ও স্কুলগুলোতে ইসলামি পোষাক দেখতে আগ্রহী ছিলেন না। অপরদিকে আরব ও মুসলিম দেশগুলোতে মেয়েদের মধ্যে, বিশেষ করে যুবতীদের মধ্যে ইসলামি হিজাব বা পদার দিকে ফিরে আসার জোয়ার এসেছে। অনেক আরব বা মুসলিম, এবং অধিকাংশ পাশ্চাত্য জনগণের কাছে এটা ছিল কল্পনাতীত; কারণ তাদের ধারণা ছিল যে পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রসাত্রের সাথে সাথে পর্দা প্রথার বিলুপ্তি ঘটবে। ইসলামি পোশাক ও পর্দা ব্যবহারের আগ্রহ ইসলামি পুর্নজাগরণের একটা অংশ। এর মাধ্যমে আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠীসমূহ অদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট, অর্থনৈতিক ও ঔপনিবেশিক আধিপত্যের মাধ্যমে যে গৌরব বিনষ্ট ও পদদলিত করার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করা হচ্ছে। জাপানী জনগণের দৃষ্টিতে মুসলমানদের পুরোপুরি ইসলাম পালন একধরণের পাশ্চাত্য বিরোধিতা ও প্রাচীনকে আঁকড়ে ধরে রাখার মানসিকতা, যা মেজি যুগে জাপানীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তখন তারা প্রথম পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে আসে এবং পাশ্চাত্য জীবনযাত্রা ও পোশাক পরিচ্ছদের বিরোধিতা করে। মানুষ সাধারণত ভালমন্দ বিবেচনা না করেই যে কোন নতুন বা অপরিচিত বিষয়ের বিরোধিতা করে থাকে। কেউ কেউ মনে করেন যে, হিজাব বা পর্দা হচ্ছে মেয়েদের নিপীড়নের একটি প্রতীক। তাঁরা মনে করেন, যে সকল মহিলা পর্দা মেনে চলে বা চলতে আগ্রহী তারা মুলতঃ প্রচলিত প্রথার দাস। অদের বিশ্বাস, এ সকল মহিলাদেরকে যদি তাদের ন্যাক্কারজনক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করা যায় এবং তাদের মধ্যে নারীমুক্তি আন্দোলন ও স্বাধীন চিন্তার আহ্বান সঞ্চারিত করা যায় তাহলে
পৃষ্ঠা:২৫
তারা পর্দাপ্রথা পরিত্যাগ করবে। এ ধরণের উদ্ভট বাজে চিন্তা শুধু তাঁরাই করেন যাদের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা খুবই সীমাবদ্ধ। ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবিরোধী চিন্তাধারা তাঁদের মনমগজ এমনভাবে অধিকার করে নিয়েছে যে তাঁরা ইসলামের সার্বজনীনতা ও সার্বকালীনতা বুঝতে একেবারেই অক্ষম। আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিশ্বের সর্বত্র অগণিত অমুসলিম মহিলা ইসলাম গ্রহণ করছেন, যাদের মধ্যে আমিও রয়েছি। এদ্বারা আমরা ইসলামের সর্বজনীনতা বুঝতে পারি। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলামি হিজাব বা পর্দা অমুসলিমদের জন্য একটি অদ্ভুত ও বিস্ময়কর ব্যাপার। পর্দা শুধু নারীর মাথার চুলই ঢেকে রাখে না, উপরন্ত আরো এমন কিছু আবৃত করে রাখে যেখানে তাদের কোন প্রবেশাধিকার নেই, আর এজন্যই তাঁরা খুব অস্বস্তি বোধ করেন। বস্তুতঃ পর্দার অভ্যন্তরে কি আছে বাইরে থেকে তাঁরা অ মোটেও জানতে পারেন না। প্যারিসে অবস্থান কালেই, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমি হিজাব বা পর্দা মেনে চলতাম। আমি একটা স্কার্ফ দিয়ে আমার মাথা ঢেকে নিতাম। পোশাকের সংসে মিলিয়ে একই রঙ্গের ঋর্ষ ব্যবহার করতাম। হয়ত অনেকে এটাকে নতুন একটা ফ্যাশন ভাবত। বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থানকালে আমি কাল বোরকায় আমার সমস্ত দেহ আবৃত করে রাখি, এমনকি আমার মুখমণ্ডল এবং চোখও।
পৃষ্ঠা:২৬
যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ) আদায় করতে পারব কিনা, অথবা পর্দা করতে পারব কিনা তা নিয়ে আমি গভীরভাবে ভেবে দেখিনি। আসলে আমি নিজেকে এ নিয়ে প্রশ্ন করতে চাইনি; কারণ আমার ভয় হত, হয়ত উত্তর হবে না সূচক এবং অতে আমার ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত বিঘ্নিত হবে। পররিসের মসজিদে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমি এমন এক জগতে বাস করেছি যার সাথে ইসলামের সামান্যতম সম্পর্ক ছিল না। নামাজ, পর্দা কিছুই আমি চিনতাম না। আমার জন্য একথা কল্পনা করাও কষ্টকর ছিল যে আমি নামাজ আদায় করছি বা পর্দা পালন করে চলছি। তবে ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা আমার এত গভীর ও প্রবল ছিল যে ইসলাম গ্রহণের পরে আমার কি হবে তা নিয়ে আমি ভাবিনি। বস্তুতঃ আমার ইসলাম গ্রহণ ছিল আল্লাহর অলৌকিক দান। আল্লাহ আকবার! ইসলামি পোশাক বা হিজাবে আমি নিজেকে নতুন ব্যক্তিত্বে অনুভব করলাম। আমি অনুভব করলাম যে আমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়েছি, আমি সংরক্ষিত হয়েছি। আমি অনুভব করতে লাগলাম আল্লাহ আমার সঙ্গে রয়েছেন। একজন বিদেশিনী হিসাবে অনেক সময় আমি লোকের দৃষ্টির সামনে বিব্রত বোধ করতাম। হিজাব ব্যবহারে এ অবস্থা কেটে গেল। পর্দা আমাকে এ ধরণের অভদ্র দৃষ্টি থেকে রক্ষা করল। পর্দার মধ্যে আমি আনন্দ ও গৌরব বোধ করতে লাগলাম, কারণ পর্দা শুধু আল্লাহর প্রতি আমার আনুগত্যের প্রতীকই নয়, উপরন্ত তা মুসলিম নারীদের মাঝে আন্তরিকতার বাঁধন। পর্দার মাধ্যমে আমরা ইসলাম পালনকারী মহিলারা একে অপরকে চিনতে পারি এবং আন্তরিকতা অনুভব করি। সর্বোপরি, পর্দা আমার চারপাশের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় আল্লাহর কথা, আর আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে
পৃষ্ঠা:২৭
আল্লাহ আমার সাথে রয়েছেন। পর্দা আমাকে বলে দেয়ঃ “সতর্ক হও! একজন মুসলিম নারীর যোগ্য কর্ম কর।” একজন পুলিশ যেমন ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে অধিক সচেতন থাকেন, তেমনি পর্দার মধ্যে আমি একজন মুসলিম হিসেবে নিজেকে বেশী করে অনুভব করতে লাগলাম। আমি যখনই মসজিদে যেতাম তখনই হিজাব ব্যবহার করতাম। এটা ছিল আমার সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক ব্যাপার, কেউই আমাকে পর্দা করতে চাপ দেয়নি। ইসলাম গ্রহণের দুই সপ্তাহ পরে আমি আমার এক বোনের বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য জাপানে যাই। সেখানে যওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, স্থালে আর ফিরে যাব না। কারণ ইসলাম গ্রহণের পর ফরাসী সাহিত্যের প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। উপরন্ত আরবী ভাষা শেখার প্রতি আমি আগ্রহ অনুভব করতে লাগলাম। মুসলিম পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ প্রথকভাবে একাকী জাপানের একটি ছোট্ট শহরে বসবাস করা আমার জন্য একটা বড় ধরণের পরীক্ষা ছিল। তবে এই একাকীত্ব আমার মধ্যে মুসলমানিত্বের অনুভূতি অত্যন্ত প্রখর করে তোলে। ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলাদের জন্য শরীর দেখানো পোশাক পরা নিষিদ্ধ, কাজেই আমার আগের মিনি-ঋর্ট, হাফহাতা ব্লাউজ ইত্যাদি অনেক পোশাকই আমাকে পরিত্যয়ণ করতে হল। এছাড়া পাশ্চাত্য ফ্যাশন ইসলামি হিজাব বা পর্দার পরিপন্থ, এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে নিজের পোশাক নিজেই তৈরী করে নেব। আমার এক পোশাক তৈরীতে অভিজ্ঞ বান্ধবীর সহযোগিতায় আমি দু সপ্তাহের মধ্যে আমার জন্য পোশাক তৈরী করে ফেললাম। পোশাকটি ছিল অনেকটা পাকিস্তানি সেলোয়ার-কামিজের মত। আমার এই অদ্ভুত পোশাক দেখে কে কি ভাবল তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই নি।
পৃষ্ঠা:২৮
জাপানে ফেরার পর ছমাস এভাবে কেটে গেল। কোন মুসলিম দেশে গিয়ে আরবী ভাষা ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করার আগ্রহ আমার মধ্যে খুবই প্রবল হয়ে উঠল। এ আগ্রহ বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হলাম। অবশেষে মিসরের রাজধানী কাইব্রোতে পাড়ি জমালাম। কাইব্রোতে মাত্র একব্যক্তিকেই আমি চিনতাম। আমার এই মেজবানের পরিবারের কেউই ইংরেজী জানত না। আমি একেবারেই পাথারে পড়লাম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, যে মহিলা আমাকে হাত ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলেন তিনি কাল কাপড়ে (বোরকায়) তাঁর মুখমণ্ডল ও হাত সহ মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢেকে রেখেছিলেন। এই ফরশন (বোরকা) এখন আমার অতি পরিচিত এবং বর্তমানে রিয়াদে অবস্থানকালে আমি নিজেও এই পোশাক ব্যবহার করি। কিন্তু কায়রোতে পৌঁছেই এটা দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হই। স্থানে থাকতে একদিন আমি মুসলমানদের একটা বড় ধরণের কনফারেলে উপস্থিত হয়েছিলাম এবং সেখানেই আমি সর্বপ্রথম এ ধরণের মুখঢাকা কালো পোশাক দেখতে পাই। রং বেরঙের ঋর্ষ ও পোশাক পরা মেয়েদের মাঝে তাঁর পোশাক খুবই বেমানান লাগছিল। আমি ভাবছিলাম, এই মহিলা মুলতঃ আরব ট্রেডিশন ও আচরণের অন্ধ অনুকরণের ফলেই এরকম পোশাক পরেছেন, ইসলামের সঠিক শিক্ষা তিনি জানতে পারেননি। ইসলায় সম্পর্কে তখনো আমি বিশেষ কিছু জানতাম না। আমার ধারণা ছিল, মুখ ঢেকে রাখা একটা আরবীয় অভ্যাস ও আচরণ, ইসলামের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কাইরোর ঐ মহিলাকে দেখেও আমার অনেকটা অনুরূপ চিন্তাই মনে এসেছিল। আমার মনে হয়েছিল, পুরুষদের সাথে সকল প্রকার সংযোগ এড়িয়ে চলার যে প্রবণতা এই মহিলার মধ্যে রয়েছে তা অস্বাভাবিক। কালো পোশাক পরা বোন আমাকে জানালেন যে, আমার নিজে
পৃষ্ঠা:২৯
তৈরী পোশাক বাইরে বেরোনোর উপযোগী নয়। আমি তাঁর কথা মেনে নিতে পারিনি। কারণ আমার বিশ্বাস ছিল, একজন মুসলিম মহিলার পোশাকের যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা সবই আমার ঐ পোশাকে ছিল। তবুও আমি ঐ মিশরীয় বোনের মত ম্যাক্সি ধরণের কাল রঙের বড় একটা কাপড় কিনলাম (যা গলা থেকে পা পর্যন্ত আবৃত করে)। উপরন্ত একটি কাল ধিমার অর্থাৎ বড় ধরণের শরীর জড়ানো চাদরের মত ওড়না কিনলাম যা দিয়ে আমার শরীরের উপরিভাগ, মাথা ও দুবাহ আবৃত করে নিতাম। আমি আমার মুখ ঢাকতেও রাজী ছিলাম, কারণ দেখলাম তাতে বাইব্রের রাস্তার ধুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার বোনটি জানালেন, মুখ ঢাকার কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ধুলো থেকে বাঁচার জন্য মুখঢাকা নিষ্প্রয়োজন। তিনি নিজে মুখ চেকে রাখতেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে তা ঢেকে রাখা আবশ্যক। মুখঢেকে রাখা যেসকল বোনেদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল কাইরোতে তাঁদের সংখা ছিল খুবই কম। কাইব্রোর অনেক মানুষ কাল খিমার বা ওড়না’ দেখলেই বিরক্ত বা বিব্রত হয়ে উঠতেন। পাশ্চাত্যধাঁচে জীবনযাপনকারী সাধারণ মিশরীয় যুবকেরা এ সকল খিমারে ঢাকা পর্দানশীন মেয়েদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলতেন। এদেরকে তাঁরা “ভগ্নীপণ” বলে সম্বোধন করতেন। রাস্তাঘাটে বা বাসে উঠলে সাধারণ মানুষেরা এদেরকে বিশেষ সম্মান ও ভদ্রতা দেখাতেন। এসকল মহিলারা রাস্তাঘাটে একে অপরকে দেখলে আন্তরিকতার সাথে সালাম বিনিময়
পৃষ্ঠা:৩০
করতেন, তাঁদের মধ্যে কোন ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও। ইসলাম গ্রহণের আগে আমি অর্টের চেয়ে প্যান্ট বেশী পছন্দ করতাম। কাইব্রো এসে লম্বা ঢিলেঢালা কালো পোশাক পরতে শুরু করলাম। শীঘ্রই আমি এই পোশাককে পছন্দ করে ফেললাম। এ পোশাক পরে নিজেকে অত্যন্ত ভদ্র ও সম্মানিত মনে হত। মনে হত আমি একজন রাজকন্যা। তাছাড়া এ পোশাকে আমি বেশ আরাম বোধ করতাম, যা পান্ট পত্রে কখনো অনুভব করিনি। খিমার বা গুড়না পরা বোনদেরকে সত্যিই অপূর্ব সুন্দর দেখাত। তাদের চেহারায় এক ধরণের পবিত্রতা ও সাধুত্ব ফুটে উঠত। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক মুসলিম নারী বা পুরুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর নির্দেশাবলী পালন করে এবং সেজন্য জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে। আমি ঐ সকল মানুষের মানসিকতা মোটেও বুঝতে পারি না, যাঁরা কয়থলিক সিস্টারদের ঘোমটা দেখলে কিছুই বলেন না, অথচ মুসলিম মহিলাদের ঘোষটা বা পর্দার সমালোচনায় তাঁরা পঞ্চমুখ, কারণ এটা নাকি নিপীড়ন ও সন্ত্রাসের প্রতীক! আমার মিশরীয় বোন আমাকে বলেন, আমি যেন জাপানে ফিরে গিয়েও এই পোশাক ব্যবহার করি। এতে আমি অসম্মতি জানাই। আমার ধারণা ছিল, আমি যদি এ ধরণের পোশাক পরে জাপানের রাস্তায় বেরোই তাহলে মানুষ আমাকে অভদ্র ও অস্বাভাবিক ভাববে। পোশাকের কারণে তারা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। আমার কোন কথাই তারা শুনবে না। আমার বাইরে দেখেই তারা ইসলামকে প্রত্যাখান করবে। ইসলামের মহান শিক্ষা ও বিধানাবলী জানতে চাইবে না।
পৃষ্ঠা ৩১ থেকে ৩৮
পৃষ্ঠা:৩১
আমার মিশরীয় বোনকে আমি এ যুক্তিই দেখিয়েছিলাম। কিন্তু দুমাসের মধ্যে আমি আমার নতুন পোশাককে ভালবেসে ফেললাম। তখন আমি ভাবতে লাগলাম, জাপানে গিয়েও আমি এ পোশাকই পরব। এ উদ্দেশ্যে আমি জাপানে ফেরার কয়েকদিন আগে হালকা রঙের কিছু ঐ জাতীয় কিছু পোশাক এবং কিছু সাদা খিষার (বড় চাদর জাতীয় ওড়না) তৈরী করলাম। আমার ধারণা ছিল, কালর চেয়ে এগুলো বেশী গ্রহণযোগ্য হবে সাধারণ জাপানীদের দৃষ্টিতে। আমার সাদা খিমার বা গুড়নার ব্যাপারে জাপানীদের প্রতিক্রিয়া ছিল আমার ধারণার চেয়ে অনেক ভাল। মুলতঃ আমি কোনরকম প্রত্যখ্যান বা উপহাসের সম্মুখীন হইনি। মনে হচ্ছিল, জাপানীরা আমার পোশাক দেখে আমি কোন ধর্মাবলম্বী তা না বুঝলেও আমার ধর্মানুরাগ বুঝে নিচ্ছিল। একবার আমি শুনলাম, আমার পিছনে এক মেয়ে তার বান্ধবীকে আস্তে আস্তে বলছে, দেখ একজন বৌদ্ধ ধর্মযাজিকা।
পৃষ্ঠা:৩২
একবার ট্রেনে যেতে আমার পাশে বসলেন এক আধবয়সী ভদ্রলোক। কেন আমি এরকম অদ্ভুত ফ্যাশানের পোশাক পরেছি তা তিনি জানতে চাইলেন। আমি অকে বললাম, আমি একজন মুসলিম। ইসলাম ধর্মে মেয়েদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন তাদের দেহ ও সৌন্দর্য আবৃত করে রাখে। কারণ তাদের অনাবৃত দেহসুষমা ও সৌন্দর্য পুরুষদেরকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। সাধারণতঃ পুরুষদের জন্য এ ধরণের উত্তেজনা সংযত করা কষ্টকর তাই সমসয় সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক, আর এ সকল সমস্যা থেকে দূরে রাখার জন্য ইসলামে মেয়েদেরকে এ ফয়শনের পোশাক পরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মনে হল আমার কথায় তিনি অত্যন্ত প্রভাবিত হলেন। ভদ্রলোক সম্ভবত আজকালকার মেয়েদের যৌন উদ্দীপক ফয়শান মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর নামার সময় হয়েছিল। তিনি আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে নেমে গেলেন এবং বলে গেলেন, তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল ইসলাম সম্পর্কে আরো কিছু জানার, কিন্তু সময়ের অভাবে পারলেন না। গরমকালের রৌদ্রতপ্ত দিনেও আমি পুরো শরীর ঢাকা লম্বা পোশাক পরে এবং “খিয়ার” দিয়ে মাথা চেকে বাইরে যেতাম। এতে আমার আব্বা দুঃখ পেতেন, ভাবতেন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি দেখলাম রৌদ্রের মধ্যে আমার এ পোশাক খুবই উপযোগী, কারণ এতে মাথা ঘাড় গলা সরাসরি ব্রোদের তাপ থেকে রক্ষা পেত। উপরন্ত আমার বোনেরা যখন হাফপ্যান্ট পরে চলাফেরা করত, তখন ওদের সাদা উরু দেখে আমি অস্বস্তি বোধ করতাম। অনেক মহিলা এমন পোশাক পরেন যাতে তাদের স্তন ও নিতম্বের আকৃতি পরিষ্কর ফুটে উঠে। ইসলাম গ্রহণের আগেও আমি এধরণের পোশাক দেখলে অস্বস্তি বোধ করতাম। আমার মনে হত এমন কিছু অঙ্গ প্রদর্শন করা হচ্ছে যা ঢেকে রাখা উচিত, বের করা উচিত নয়। একজন
পৃষ্ঠা:৩৩
মেয়ের মনে যদি এসকল পোশাক এ ধরণের অস্বস্তিবোধ এনে দেয় অহলে একজন পুরুষ এ পোশাক পরা মেয়েদেরকে দেখলে কিভাবে প্রভাবিত হবেন তা সহজেই অনুমান করা যায়। প্রিয় পাঠিকা হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, শরীরের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক আকৃতি ঢেকে রাখার কি দরকার? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আসে আসুন একটু ভেবে দেখি। আজ থেকে ৫০ বৎসর আগে জাপানে মেয়েদের জন্য সুইমিং স্যুট পরে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা অশ্লীলতা ও অন্যায় বলে মনে করা হত। অথচ আজকাল আমরা বিকিনি পত্রে সাঁতার কাটতে কোন লজ্জাবোধ করি না। তবে যদি কোন মহিলা জাপানের কোথাও টপলেস প্যান্টি পরে শরীরের উর্দুভাগ সম্পূর্ণ অনাবৃত করে সাঁতার কাটেন অহলে লোকে তাঁকে নির্লজ্জ বলবে। আবার দক্ষিণ স্কুান্সের সমুদ্র সৈকতে যান, দেখতে পারেন সেখানে সকল বয়সের অসংখ্য নারী শরীরের উর্দুভাগ সম্পূর্ণ অনাবৃত করে টপলেস পত্রে সানবাথ বা ব্রৌদ্রস্নান করছেন। আরেকটু এগিয়ে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে যান, সেখানের অনেক সৈকতে নুভিস্ট (নগ্নবাদী) দেরকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে রৌদ্রস্নানে রত দেখতে পারেন। যদি একটু পিছনে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন মধ্যযুগের একজন বৃটিশ নাইট তাঁর প্রিয়তমার জুতার দৃশ্যতে প্রকম্পিত হয়ে উঠতেন। এথেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, নারীদেহের গোপন অংশ, বা ঢেকে রাখার মত অংশ কি সে ব্যাপারে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনশীল। এখানে আমার প্রশ্নঃ আপনি কি একজন নুভিস্ট বা নম্নবাদী? আপনি কি সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে চলাফেরা করেন? যদি আপনি নুভিস্ট না হন তাহলে বলুন, যদি কোন নুডিস্ট আপনাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ “কেন আপনি আপনার স্তন ও নিতম্ব ঢেকে রাখেন, অথচ মুখ ও হাতের ন্যায়
পৃষ্ঠা:৩৪
স্তন ও নিতম্বও তো শরীরের স্বাভাবিক অংশ?” তাহলে আপনি কি বলবেন? এ পশ্নের উত্তরে আপনি যা বলবেন, আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি ঠিক সেকথাই বলব। আপনি যেমন শরীরের স্বাভাবিক অংশ হওয়া সত্ত্বেও স্তন ও নিতম্বকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করেন, আমরা মুসলিম নারীরা মুখমণ্ডল ও হাত ছাড়া সমস্ত শরীরকে গোপনীয় অঙ্গ বলে মনে করি, কারণ মহান স্রষ্টা আল্লাহ এভাবেই আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এজন্যই আমরা নিকটাত্মীয় (মাহরায়) ছাড়া অন্যান্য পুরুষদের থেকে মুখ ও হাত ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে রাখি। আপনি যদি কোনকিছু লুকিয়ে রাখেন তাহলে তার মূল্য বেড়ে যাবে। নারীর শরীর আবৃত রাখলে তার আকর্ষণ বেড়ে যায়, এমনকি অন্য নারীর চোখেও তা অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। পর্দানশীন বোনেদের কাঁধ ও গলা অপূর্ব সুন্দর দেখায়, কারণ তা সাধারণতঃ আবৃত থাকে। যখন কোন মানুষ লজ্জার অনুভূতি হারিয়ে নগ্ন হয়ে রাস্তাঘাটে চলতে থাকেন, প্রকাশ্য জনসমক্ষে পেশাব, পায়খানা ও যৌনতা করতে থাকেন, তখন তিনি পশুর সমান হয়ে যান, তাঁকে আর কোনভাবেই পশু থেকে পৃথক করা যায় না। আমার ধারণা, লজ্জার অনুভূতি থেকেই মানব সভ্যতার শুরু। অনেক জাপানী মহিলা শুধু ঘর থেকে বেরোতে হলেই মেকাপ ও সাজগোজ করেন। ঘরে তাঁদেরকে কেমন দেখাচ্ছে তা নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামান না। অথচ ইসলামের বিধান হল, একজন স্ত্রী বিশেষভাবে স্বামীর জন্য নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষনীয় করে রাখতে সচেষ্ট হবেন। অনুরূপভাবে একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষনীয় করতে সচেষ্ট হবেন। উপরন্ত লজ্জার সহজাত অনুভুতি এদের সম্পর্ক আরো আনন্দময় ও মনোরম করে তোলে। আপনারা হয়ত বলবেন, পুরুষদেরকে উত্তেজিত না করার উদ্দেশ্যে
পৃষ্ঠা:৩৫
আমাদের মুখ ও হাত ছাড়া বাকী পুরো শরীর ঢেকে রাখাটা বাড়াবাড়ি এবং অতি-সতর্কতা। একজন পুরুষ কি শুধুমাত্র যৌন আগ্রহ নিয়েই একজন নারীর দিকে তাকান? একথা ঠিক যে সব পুরুষই প্রথমেই যৌন অনুভূতি নিয়ে নারীকে দেখেন না। তবে নারীকে দেখার পর তাঁর পোশাক ও আচরণ থেকে পুরুষের মনে যে যৌন আগ্রহ সৃষ্টি হয় তা প্রতিরোধ করা তাঁর জন্য খুবই কষ্টকর। এ ধরণের আবেগ নিয়ন্ত্রণে পুরুষেরা বিশেষভাবে দুর্বল। বর্তমান বিশ্বের ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের পরিমান দেখলেই আমরা একথা বুঝতে পারব। নারী-পুরুষের সম্মতিমুলক ব্যভিচার বৈধ করার পরও পাশ্চাত্যে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও যৌন অত্যাচারের ঘটনা ধারণাতীতভাবে বেড়ে চলেছে। কেবলমাত্র পুরুষদের প্রতি মানবিক আবেদন জানিয়ে এবং তাঁদেরকে আত্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে আমরা ধর্ষণ ও যৌন অতয়চার বন্ধ করতে পারব না। হিজাব বা ইসলামি পর্দা ছাড়া এগুলো রোধের কোন উপায় নেই। একজন পুরুষ নারীর পরিধানের মিনি-ঋর্টের অর্থ এরূপ মনে করতে পারেনঃ “তুমি চাইলে আমাকে পেতে পার।” অপরদিকে ইসলামি হিজাব পরিশ্বরভাবে জানিয়ে দেয়ঃ “আমি তোমার জন্য নিষিদ্ধ।” কাইব্রো থেকে জাপানে ফিরে আমি তিন মাস ছিলাম। এরপর আমি আমার স্বামীর সাথে সৌদি আরবে আসি। শুনেছিলাম যে, সৌদি আরবে সব মেয়েকে মুখ ঢাকতে হয়, তাই আমার মুখ ঢাকার জন্য ছোট একটা কাল কাপড় বা নিকাব আমি সাথে করে এনেছিলাম। রিয়াদে পৌঁছে দেখলাম এখানের সব মহিলা মুখ ঢাকেন না। বিদেশী অমুসলিম মহিলারা শুধু দায়সারাভাবে একটা কাল গাউন পিঠের উপর ফেলে রাখেন, মুখ, মাথা কিছুই ঢাকেন না। বিদেশী মুসলিম মহিলারা অনেকেই
পৃষ্ঠা:৩৬
মুখ খোলা রাখেন। সৌদি মহিলারা সবাই মুখ সহ সমস্ত দেহ আবৃত করে চলাফেরা করেন। রিয়াদে এসে প্রথমবার বাইরে বেরোনোর সময় আমি “নিকার” দিয়ে আমার মুখ ঢেকে নিই। বেশ ভাল লাগল। আসলে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এতে কোন অসুবিধা বোধ হয় না। বরং আমার মনে হতে লাগল যে, আমি একটি বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছি। কোন মুল্যবান শিল্পকর্ম চুরি করে নিয়ে গোপনে দেখে যেমন আনন্দ পাওয়া যায় ঠিক তেমনি আনন্দ অনুভব করছিলাম আমি। অনুভব করলাম, আমার এমন একটা মুল্যবান সম্পদ রয়েছে যা দেখার অনুমতি নেই সবার জন্য। রিয়াদের রাস্তায় একজন মোটাসোটা পুরুষ এবং তার সাথে সর্বাঙ্গ কালো বোরকায় আবৃত একজন মহিলাকে দেখে একজন বিদেশী হয়ত ভাববেন যে, এই দম্পতির মধ্যের সম্পর্ক হচ্ছে অতয়চার ও নিপীড়নের, মহিলাটি অতরচারিত এবং তাঁর স্বামীর দাসীতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বোরকাপরা এ সকল মহিলাদের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরা নিজেদেরকে চাকর-বরকন্দাজের প্রহরাধীন সম্রাজ্ঞীর মত ডাবেন। রিয়াদের প্রথম কয়েক মাস আমি আমার নিকাব বা মুখাবরণ দিয়ে শুধু চোখের নিচের অংশটুকু চাকতায়, চোখ ও কপাল খোলা থাকত। শীতের পোশাক বানাতে যেয়ে আমি একটা চোখঢাকা নিকার বানিয়ে নিলাম। এবার আমার সাজ পুরো হল, আর আমার শান্তি ও তৃপ্তিও পূর্ণতা পেল। এখন আমি ভিড়ের মধেও অস্বস্তি বোধ করিনা। যখন চোখ খোলা রাখতাম তখন মাঝেমাঝে হঠাৎকরে কোন পুরুষের সাথে চোখাচোখি হলে বিব্রত হয়ে পড়তাম। কাল সানগ্লাসের মত চোখ ঢাকা নিকারের ফলে অপরিচিত পুরুষের অনাহুত চোখাচোখি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
পৃষ্ঠা:৩৭
একজন মুসলিম মহিলা তাঁর নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজেকে আবৃত করে রাখেন। অনাত্মীয় পুরুষের দৃষ্টির অধীনস্থ হতে তিনি রাজি নন। তিনি চান না তাদের উপভোগের সামগ্রী হতে। পাশ্চাত্যের বা পাশ্চাত্যপন্থি যে সকল মহিলা তাঁদের শরীরকে পুরুষদের সামনে উপড্রোণের সামগ্রী রূপে তুলে ধরেন তাঁদের প্রতি একজন মুসলিম নারী করুণা বোধ করেন। বাইরে থেকে হিজাব বা পর্দা দেখে এর ভিতরে কি আছে অ বোঝা আদৌ সম্ভব নয়। বাইরে থেকে পর্দা ও পর্দানশীনদের পর্যবেক্ষণ করা, আর পর্দার মধ্যে জীবন কাটান দুটো সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। দুটি বিষয়ের মধ্যে যে গ্যাপ রয়েছে সেখানে নিহিত রয়েছে ইসলামকে বোঝার গ্যাপ। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ইসলাম একটি জেলখানা, এখানে কোন স্বাধীনতা নেই। কিন্তু আমরা, যারা এর মধ্যে অবস্থান করছি, আমরা এত শান্তি, আনন্দ ও স্বাধীনতা অনুভব করছি যা ইসলাম গ্রহণের আগে কখনোই করিনি। পাশ্চাত্যের তথাকথিত স্বাধীনতা পায়ে ঠেলে আমরা ইসলামকে বেছে নিয়েছি। একথা যদি সত্যি হত যে, ইসলাম মেয়েদেরকে নিপীড়ন করেছে, তাদের অধিকার খর্ব করেছে, তাহলে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান সহ বিভিন্ন দেশের অগণিত মেয়ে কেন তাদের সকল স্বাধীনতা ও স্বাধিকার তরণ করে ইসলাম গ্রহণ করছে? আমি আশা করি সবাই বিষয়টি ভেবে দেখবেন। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা বা ভ্রান্ত পূর্বধারণার কারণে যদি কেউ অন্ধ না হন তাহলে তিনি অবশ্যই দেখবেন একজন পর্দানশীন মহিলা কি অপূর্ব সুন্দর। তাঁর মধ্যে ফুটে উঠেছে স্বগীয় সৌন্দর্য, দেবীত্বের ও সতীত্বের আভা। আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদায় উদ্ভাসিত তাঁর চেহারা। অত্যাচাত্রের বা নিপীড়নের সামান্যতম কোন চিহ্নই আপনি তাঁর চেহারায়
পৃষ্ঠা:৩৮
পাবেন না। এটা জ্বলন্ত সত্য, কিন্তু তারপরও অনেকে তা দেখতে পান না। কেন? সম্ভবতঃ তাঁরা ঐ ধরণের মানুষ যারা আল্লাহর নিদর্শন দেখেও, জেনেও অস্বীকার করেন। প্রচলিত প্রথার দাসত্ব, বিদ্বেষ, ভ্রান্তধারণা ও স্বার্থের অন্বেষণ যাদেরকে অন্ধ করে ফেলেছে। ইসলামের সত্যকে অস্বীকার করার এছাড়া আর কি কারণ থাকতে পারে?