Skip to content

ইমাম মাহাদি ও কিয়ামত এর আলামত

পৃ্ষ্ঠা ০১ থেকে ১০

পৃষ্ঠা:০১

আলামতে কিয়ামত

হযরত হুযায়ফা ইব্‌ন আসিফ গিফারী (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা কিয়ামত সম্বন্ধে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় নবী করীম (সাঃ) আমাদের সম্মুখে তাশরীফ আনলেন। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা কি বিষয়ে কথাবার্তা বলছ? আমরা বললাম, কিয়ামত সম্পর্কে। তিনি বললেন, কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না তোমরা দশটি পূর্ব লক্ষন দেখতে পাবে। এরপর তিনি লক্ষণগুলো উল্লেখ করেন যে, এগুলো হল ধোকা দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়, হযরত ঈসা (আঃ) এর অবতরণ, ইয়াজুয-মাজুয এর বহিঃপ্রকাশ, তিনটি ভূমিধসঃ একটি প্রাচ্যে, একটি পাশ্চাত্যে এবং একটি আরব দেশে। অবশেষে ইয়ামান থেকে উত্থিত একটি অগ্নি মানুষদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিমঃকিতাবুল ফিতান) অপর একটি হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, পৃথিবীতে যখন ‘আল্লাহ্’ বলার মত কোন লোক থাকবে না অর্থাৎ ঈমানের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটবে তখনই কিয়ামত সংঘটিত হবে (মুসলিম)।

একটি হাদীসে কেয়ামতের প্রতিচ্ছবি

হাদীস শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে-নাওয়াস ইবনে সাম’আন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সাঃ) ‘দাজ্জাল’ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি কখনও এ বিষয়টিকে অবজ্ঞার সুরে প্রকাশ করলেন, আবার কখনও গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করলেন। এমনকি আমাদের ধারণা হ’ল দাজ্জাল খেজুর বাগানের কোন একস্থানে লুকিয়ে আছে। যখন আমরা তাঁর কাছ থেকে ফিরে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাদের প্রকৃত অবস্থা বুঝে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি হয়েছে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূর (সাঃ)! আপনি সকাল বেলা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। আপনি তা অবজ্ঞাভাবে এবং কখনও গুরুত্ব সহাকরে

পৃষ্ঠা:০২

প্রকাশ করেছিলেন। এতে আমাদের ধারনা হয়েছিল, সম্ভবতঃ ঐ সময়ে খেজুরর বাগানের কোথাও অবস্থা করছে। তিনি বললেন- তোমাদের ব্যাপারে আমি দাজ্জালের ফেতনার খুব একটা আশংকা করি না। যদি আমার উপস্থিতিতে সে আত্মপ্রকাশ করে তবে আমি নিজে তোমাদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়াব। আর যদি আমার অবর্তমানে সে আত্মপ্রকাশ করে তবে প্রত্যেকে নিজেরাই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। আল্লাহ আমার অবর্তমানে তোমাদের রক্ষক। দাজ্জাল ছোট কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট যুবক। তার চোখ হবে ফোলা। আমি তাকে আব্দুল ‘উয্যা ইবনে কাতান’ সদৃশ্য মনে করি। যে ব্যক্তি তার সাক্ষাত পাবে সে যেন ‘সূরা কাহাফের প্রথম আয়তগুলো পাঠ করে। দাজ্জাল সিরিয়া ও ইরাকের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী রাস্তায় আত্মপ্রকাশ করবে। সে তার ডানে ও বাঁয়ে হত্যা, ধ্বংস ও ফিতনা-ফাসাদ ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ অটল ও স্থির হয়ে থাক। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! সে কত সময় পৃথিবীতে বর্তমান থাকবে? তিনি বললেন, চল্লিশ দিন। এর প্রথম দিন হবে, এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হবে এক মাসের সমান এবং তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের এই দিনের মতই দীর্ঘ হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। যে দিনটি এক বছরের সমান হবে সেদিনে কি এক দিনের নামাযই আমাদের যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না বরং অনুমান করে নামাযের সময় ঠিক করে নিতে হবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! পৃথিবীতে দাজ্জাল কত দ্রুত গতি সম্পন্ন হবে তিনি জবাব দিলেন বাতাস তাড়িত মেঘের মত দ্রুতগতি সম্পন্নহবে। সে এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদরেকে নিজের দিকে আহবান করেবে। তারা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তার হুকুমের অনুসরণ করবে। সে আসমানকে নির্দেশ দিবে। আসমান তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। সে যমীনকে হুকুম দিবে এবং যমীন উদ্ভিদ উৎপাদন করবে। তাদের গৃহপালিত জন্তুগুলো বাড়ি ফিরবে। এ গুলোর খুঁজ সুউচ্চ, দূদ্ধের বাঁটগলো লম্বা এবং স্ফীত হবে। অতঃপর সে আর এক সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদেরকে নিজের দিকে – আহবান করবে। তারা তার আহবান প্রত্যাখান করবে। দাজ্জাল তাদের কাছ থেকে চলে যাবে। তারা অতিদ্রুত অজন্মা ও দূভিক্ষের কবলে পতিত হবে।

পৃষ্ঠা:০৩

তাদের হাতে ধন-সম্পদ কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। দাজ্জাল এই বিধ্বস্ত এলাকা দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলবে, তোমাদের গচ্ছিত সম্পদরাজি বের করে দাও। সাথ সাথে সে এলাকার ধন-সম্পদ মধু মক্ষিকার ন্যায় তার অনুসরণ করবে। অতঃপর সে পূর্ণ বয়স্ক এক যুবককে আহবান করবে। কিন্তু সে তাকে অস্বীকার করবে দাজ্জাল তাকে তরবারী দিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। অতঃপর সে ডাকবে এবং টুকরা দুটো চলে আসবে। তার চেহারা তখন প্রফুল্ল ও হাস্যময় হবে। ইত্যবসরে আল্লাহ তা’য়ালা মাসীহ ইবনে মরিয়ম (আঃ)-কে পাঠাবেন। তিনি দামেস্কের পূর্ব অংশে সাদা মিনারের উপরে হালকা জাফরানী (হলুদ) রং-এর কাপড় পরিহিত অবস্থায় ফেরেশতাদের কাঁধে ভর দিয়ে নেমে আসবেন। যখন তিনি মাথা নত করবেন, তখান মনে হবে যেন তাঁর মাথায় মুক্তার মত পানির বিন্দু টপকাচ্ছে। যখন তিনি মাথা উঠাবেন, তখনও তাঁর মাথা থেকে মতির দানার মত ঝরছে বলে মনে হবে। যে কাফেরের গায়ে তাঁ নিঃশ্বাসও লাগবে তা বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। (সাথে সাথে মরে যাবে)। তার দৃষ্টি যত দূর যাবে, তাঁর নিঃশ্বাসও ততদূর পৌঁছাবে। তিনি দাজ্জালকে পিছু ধাওয়া করবেন এবং লুদ নামক স্থানে তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা (আঃ) ঐ সব লোকদের কাছে আসবেন যাদেরকে আল্লাহ দজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ রেখেছেন। তিনি তাদের চেহারা থেকে মলিনতা দূর করে দেবেন, এবং বেহেশতে তাদের যে মর্যাদা হবে, তা বর্ণনা করবেন। ইত্যবসরে আল্লাহ ঈসা (আঃ)-এর কাছে এই মর্মে নিদেশ পাঠাবেন যে, আমি এমন একদল বান্দা পাঠিয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার শক্তি কারো হবে না। তুমি আমার এসব বান্দাকে নিয়ে তৃর পাহাড়ে চলে যাও। এরপর আল্লাহ ইয়াজুজ মাজুজের সম্প্রদায়কে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চ ভূমি থেকে দ্রুত বেগে বেরিয়ে আসবে। তাদের অগ্রবর্তী দলগুলো তাবারিয়া হ্রদের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। তারা এ হ্রদের সব পানি পান করে ফেলবে। তাদের পরবর্তী দলও এ এলাকা দিয়ে অতিক্রম করবে। তারা বলবে, এখানে কোন এক সময় পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) ও তার সংগীরা আল্লাহর কাছে কাতদভারে প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তা’য়ালা তাদের (ইয়াজুজ-মাজুজ) প্রত্যেকের ঘাড়ে এক ধরণের কীট সৃষ্টি করে দিবেন। ফলে তারা সবাই একসাথে ধ্বংস হয়ে যাবে।

পৃষ্ঠা:০৪

এরপর আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) ও তার সংগীগণ পাহাড় থেকে জনপদে নেমে আসবেন। কিন্তু তারা পৃথিবীতে এক ইঞ্চী জায়গাও ইয়াজুজ-মাজুজের লাশ ও এর দূর্গন্ধ ছাড়া খালি পাবে না। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাহাবা আল্লাহর কাছে কাতর ভরে প্রশ্ন করবেন। আল্লাহ তা’য়ালা আল-বুকতী উটের সদৃশ পাখী পাঠাবেন। এসব পাখী যেগুলোকে উঠিয়ে আল্লাহ যেখানে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেবেন, সেখানে ফেলে দেবে। অতঃপর ভূমিকে বলা হবে, তোমরা ফল উৎপাদন কর এবং বরকত ফিরিয়ে নাও। এত বরকত, কল্যাণ ও প্রাচুর্য দেখা দেবে একটি ডালিম খেয়ে পূর্ণ একটি দল পরিতৃপ্তি হবে এবং ডালিমের খোসাটি এত বড় হবে যে, তার ছায়ায় তারা আশ্রয় নিতে পারবে। গবাদি পশুতেও এত বরকত দেয়া হবে যে একটি মাত্র দুধের উটের দুধ হবে একটি বড় দলের জন্য যথেষ্ট। একটি দুধের গাভীর দুধ একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। এই সময়ে আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র হাওয়া প্রবাহিত করবেন। এই বাতাস তাদের বগলের নিচে পর্যন্ত লাগবে ফলে সকল মুমিন ও মুসলমানের রূহ কবজ হয়ে যাবে, শুধু খারাপ লোকেরাই বেঁচে থাকবে। তারা গাধার মত প্রকাশ্যে সহবাস করবে। তাদের বর্তমানেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। (মুসলিম)

ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আরও একটি হাদীস 

মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত খুবই কাছে এসে গেছে। তিনি নিকটবর্তী হওয়ার কতগুলো আলামত জানিয়ে দিয়ে গেছেন। আলামতগুলো ছোট বড় দু’রকমেরই রয়েছে। আলামতগুলোর মধ্যে (১) মানুষ ব্যাপকভাবে ধর্মবিমুখ হবে, (২) বিভিন্ন রকম পার্থিব আনন্দ এবং রং তামাশায় মেতে থাকবে, (৩) নাচ-গানে মানুষ মগ্ন থাকবে, (৪) মসজিদে বসে দুনিয়াদারীর আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হবে। (৫) সমাজে ও রাষ্ট্রে অযোগ্য লোক এবং মহিলা নেতৃত্ব শুরু হবে। (৬) মানুষের মধ্যে ভক্তি, শ্রদ্ধা, স্নেহ ভালবাসা কমে যাবে। (৭) ঘন ঘন ভূমিকম্প হতে থাকবে। (৮) সব দেশের আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেবে। (৯) অত্যাধিক শিলা-বৃষ্টি হবে। (১০) বৃষ্টির সাথে বড় বড় পাথর বর্ষিত হবে। (১১) মানুষের রূপ পরিবর্তিত হয়ে পুরুষ স্ত্রীলোকের ন্যায় এবং স্ত্রীলোক পুরুষের রূপ ধারণ করবে।

পৃষ্ঠা:০৫

কিয়ামতের সময় যখন আরও নিকটবর্তী হবে তখন ইমাম মাহদীর আগমন, দাজ্জালের আবির্ভাব, হযরত ঈ’সা (আঃ)-এর আকাশ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ, ইয়াজুজ-মাজুজের উৎপাত, পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয়, কুরআনের অক্ষর বিলোপ, তাওবার দরজা বন্ধ, দুনিয়া হতে ঈমানদারের বিলুপ্তি ইত্যাদি দেখা দেবে।

ইমাম মাহদী সম্পর্কে আলোচনা

পৃথিবী যখন পাপের অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাবে, মানুষ ধর্ম-কর্ম ভুলে গিয়ে আবার জাহেলী যুগের আচরণ শুরু করবে, তখন এক সময় ইমাম মাহদী জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁর পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম হবে আমেনা। ইমাম মাহদী বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে দুনিয়ার বুকে ইসলামী রাজ্যের পত্তন করবেন। দেশে শান্তি ও শৃখংলা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। বহু অমুসলিম রাজ্য দখল করে তিনি জগতের বুকে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দেবেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর দুনিয়ায় আবার ঘোর দুর্দিন ঘনিয়ে আসবে। আল-মাহদী শব্দের অর্থ হল ‘পথ প্রদর্শিত ব্যক্তি’। এখানে ‘মাহদী’ বলে কিয়ামতের প্রাক্কালে হযরত ঈসা (আঃ) এর অবতরণ ও দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের পূর্ব মুহূর্তে মুসলিম নেতৃত্বের জন্য যে সংস্কারক মনীষীর আবির্ভাবের কথা আছে তাঁকেই বুঝানো হয়েছে। মুহাক্কিক আলিমগণের মতে কিয়ামতের প্রাক্কালে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব সত্য। বহু সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত।

ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের কাল

হযরত ইবন মাসউদ (রাঃ) আরো বলেন, নবী করীম (সাঃ) ইরশ করেছেন, আমার উম্মতের শেষলগ্নে মাহদীর আবির্ভার ঘটবে। তাঁর শাসনামলে আল্লাহ্ তা’আলা প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। ভূমি থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তিনি সকলের মধ্যে প্রয়োজনীয় রসদ সমানভাবে বন্টন করে দিবেন। পশু সম্পদের বৃদ্ধি ঘটবে। পৃথিবীতে এ উম্মত তখন অতি সম্মানের অধিকারী হবে। সাত আট বছর পর্যন্ত এভাবে চলবে। মুদীসে আছে হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ঈসা ইবন মারয়াম (আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন ইমাম মাহদী (আঃ) দেখতে পাবেন যেন তাঁর মাথার চুল থেকে পানি ঝরছে। মাহদী

পৃষ্ঠা:০৬

তখন তাঁকে বলবেন, আসুন এবং নামাযের ইমামত করুন। হযরত ঈসা (আঃ) বলবেন, আপনি নামায পড়াবেন। ইকামত হয়ে গেছে কাজেই আপনিই নামায পড়ান। নবী করীম (সাঃ) ‘বলেন, এ কথা বলে হযরত ঈসা (আঃ) আমার পরবর্তী বংশধরের একজনের পেছনে নামায আদায় করবেন। হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন যে, সে সময় তোমাদের অবস্থা কেমন হবে যখন তোমাদের মধ্যে হযরত ঈসা ইবন মারয়াম (আঃ) অবতরণ করবেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে একজন তোমাদের ইমাম হবেন। এভাবে বহু সহীহ হাদীসে কিয়ামতের পূর্বে মাহদীর আগমণের কথা উল্লেখ আছে। ‘শরহে আকীদায়ে সাকারীনী’ কিতাকে ইমাম মাহদী বিষয়ক হাদীসগুলোকে মুতাওয়াতিরে মা’নুবী বলে আখ্যায়িত কর। হয়েছে। উপরন্ত এ আকীদা পোষণ করাকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল-জামা’আতে: পরিচায়ক বলে গণ্য করা হয়েছে।

ইমাম মাহদীর পরিচয়

ইমাম মাহদী (আঃ) এর পরিচয় কি এ ব্যাপারে ইসনা আশারিয়া শী’আ ও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ইস্না আশারিয়া শী’আদের মতে হাদীসে বর্ণিত মাহদী (আঃ) হলেন তাদের দ্বাদশতম ইমাম মুহাম্মদ ইব্‌দুল হাসান আল-আসকারী। সে ২০৬ হিজরী সন থেকে শত্রুদের ভয়ে ভুগর্ভন্ত একটি গুহায় আত্মগোপন করে আছে। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে আত্মপ্রকাশ করবে এবং পৃথিবীতে ইনসাফের শাসন কায়েম করবে। (নির্বাস, পৃষ্ঠা ৩১৪)। শী’আদের মতে বর্ণিত মাহদী (আঃ) অন্যান্য ইমামদের মত নিষ্পাপ ও সর্বপ্রকার ভুলভ্রান্তি থৈকে রক্ষিত হবেন। পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মতে ইমাম মাহদী (আঃ) সম্পর্কে শী’আদের বর্ণিত পরিচয় সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কারণ সহীহ হাদীসে ইমাম মাহদীর নাম, পিতার নাম, দৈহিক গঠন, আকৃতি, কাজ-কর্ম ইত্যাদির যে বিবরণ পাওয়া যায় তার সঙ্গে কথিত শী’আ ইমামের আদৌ কোন মিল নেই। যেমন শী’আ ইমামের নাম হল মুহাম্মদ ইবনুল হাসান।

পৃষ্ঠা:০৭

হাদীসে বলা হয়েছে মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ ইব্‌ন আবদুল্লাহ। আরো বলা হয়েছে, তিনি কিয়ামতের প্রাক্কালে হযরত ঈসা (আঃ) এর পৃথিবীতে অবতরণ ও দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের সময় আসবেন অথচ শী’আদের দ্বাদশ ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আসকারী হিজরী তৃতীয় শতকেই জন্মগ্রহণ করেছে। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত নবী করীম (সাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদী (আঃ) এর পরিচয় সম্বন্ধে নিম্নোক্ত অভিমত পোষণ করে থাকে। তিনি সাইয়িদ তথা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বংশ থেকে হবেন। শরীরিক গঠন সামান্য লম্বা, দেহ বিশিষ্ট উজ্জল বর্ণের হবে। চেহারার আকৃতি নবী (সাঃ)-এর আকৃতির মত হবে। নাম মুহাম্মদ ও পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ্। মাতার নাম হবে আমিনা। তার মুখে মৃদু জড়তা থাকবে। সে কারণে মাঝে মাঝে মনক্ষুন্ন হয়ে উরুতে হাত মারবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত হবেন।

ইমাম মাহদীর তালাশে মুসলিম বাহিনী

হযরত মাওলানা শাহ রফী ‘উদ্দিন (রঃ) বলেন, মুসলমানদের বাদশাহ শহীদ হওয়ার পর সিরিয়া খৃষ্টানদের দলে চলে যাবে এবং তারপর খৃষ্টান বিবাদমান দু’দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপিত হবে। অবশিষ্ট মুসলমানরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করবে। খৃষ্টানদের আধিপত্য খায়বার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এসময় মুসলমানগণ ইমাম মাহদীর সন্ধান করতে থাকবে। যেন তাঁর নেতৃত্বে আপাতত সমস্যা থেকে মুক্তি ও শত্রুদের হাত থেকে রেহাই লাভ করতে পারে। এ অবস্থা চলাকালীন সময় ইমাম মাহদী মদীনাতেই অবস্থানরত থাকবেন। কিন্তু তিনি যিম্মাদারী অর্পিত হওয়ার আশংকায় মক্কা শরীফ চলে যাবেন। সেখানেও তৎকালের ওলী-আবদালগণ ইমাম মাহদীর সন্ধান চালাতে থাকবে। ইত্যবসরে কতিপয় ব্যক্তি নিজেদেরকে মাহদী বলে মিথ্যা দাবী করতে থাকবে।

দলে দলে লোক ইমাম মাহদীর বাহিনীতে যোগদান যাগদান 

ইতিমধ্যে একদিন রুকন ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝে বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফের মুহূর্তে লোকজন তাঁকে চিনে ফেলবে এবং তাঁর হাতে বায়’আতের জন্য তাঁকে বাধ্য করবে। এ ঘটনার সত্য হওয়ার একটি নিদর্শন হবে এমন যে,

পৃষ্ঠা:০৮

যার পূর্বকার রমযান মাসে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ হবে এবং বায়’আতের মুহূর্তে অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ আসবে যে,هذا خليفةُ اللَّهِ المَهْدِي فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَطِيعُوهُ আওয়াজটি সকলেই শুনতে পাবে। বায়’আতের সময় ইমাম মাহদীর বয়স হবে চল্লিশ বছর। তাঁর খিলাফত গ্রহণের সংবাদ মদীনায় পৌঁছলে মদীনার সৈন্যগণ মক্কায় ছুটে আসবে। সিরিয়া, ইরাক ও ইয়ামানের বুযর্গানেদ্বীন তাঁর সান্নিধ্যে এসে একত্রিত হবেন। তাঁদেরকে নিয়ে তিনি অসংখ্য সেনাবাহিনীর একটি দল গঠন করবেন এবং কা’বা শরীফের মাটির নীচে রক্ষিত ভান্ডার তুলে এনে মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দিবেন। সুন্নী মতে বর্ণিত উপরোক্ত মাহদীর জীবনের সঙ্গে শী’আদের দ্বাদশতম ইমামের জীবনের কোন মিল নেই। শী’আরা অবশ্য তাদের ইমামদের সুদীর্ঘ জীবন কালের কথা-ঘোষণা করেছে এবং তিনি তৃতীয় শতকে জন্ম নিলেও কিয়ামত পূর্বকাল পর্যন্ত বেঁচে আছেন। বলা বাহুল্য এ সকল উক্তি প্রমাণহীন এবং সত্যের অপলাপ বৈ কিছুই নয়।

প্রতারক দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা

হঠাৎ করে এক সময় দুনিয়ায় দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হবে। সে হবে বিধর্মী কাফির। সে অনেক আশ্চর্যশক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী হবে। ইহুদী সম্প্রদায় এবং আল্লাহবিরোধী সম্প্রদায়গণ তার সাথে যোগ দেবে। দাজ্জালের একটি চোখ কানা থাকবে। তার কপালে কাফির কথাটি খোদিত থাকবে। তার সাথে একটি কৃত্রিম বেহেশত এবং একটি কৃত্রিম দোযখ থাকবে। সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করবে আর তার ক্ষমতাবলে সে মানুষকে মেরে ফেলবে আবার তাকে জীবিত করবে। তার এসব কাজ প্রত্যক্ষ করে বহুলোক তার অনুগত হয়ে যাবে। কিন্তু ঈমানদার মুসলিমগণ তার বিরোধিতা করবে যার ফলে তার সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠবে। ইমাম মাহদী তাকে শায়েস্তা করার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে শক্তিশালী দাজ্জালও তার অসংখ্য সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরি হবে। দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ কিয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম আলামত। আরবী ভাষায় ‘দাজ্জাল’ শব্দটি دجل প্রতারণা করা থেকে গৃহীত। সে মতে এর অর্থ হল, প্রতারক, মহাপ্রবঞ্চক।

পৃষ্ঠা:০৯

দাজ্জাল সত্য মিথ্যা, হক এবং বাতিলের মধ্যে চরম প্রতারণা করবে বলেই তাকে দাজ্জাল নামে অভিহিত করা হয়েছে।

দাজ্জাল সম্পর্কে হাদীসসমূহ

দাজ্জাল সম্পর্কে হাদীস গ্রন্থগুলোতে বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে। ইমাম কুরতুবী (রঃ) ‘আতৃতাযকিরা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম (সাঃ) থেকে দাজ্জাল সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। যেমন দাজ্জালের প্রকৃত পরিচয়, আত্মপ্রকাশের কারণ, আত্মপ্রকাশের জায়গা, চেহারার গঠন-আকৃতি, চরিত্র, যাদুকরী কার্যকলাপ, খোদায়ীত্বের দাবী, তার হত্যাকারীর পরিচয়, হত্যার স্থান, কাল, ইত্যাদি সবই নবী করীম (সাঃ)-এর হাদীসে বিদ্যমান রয়েছে। এমন কি দাজ্জাল কি ইব্‌ন সায়্যাদ নামক লোকটি ছিল না অন্য কেউ তাও পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। * হাদীসে দাজ্জালের আকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে যে, তার দেহ স্কুল, বর্ণ লোহিত, কেশ কুঞ্চিত ও বাম চোখ কানা হবে। কানা চোখটি একটি ফুলে উঠা আঙ্গুলের মত দেখাবে (বুখারী)। * দাজ্জালের কপালে আরবী ভাষায় ‘কাফির’ শব্দটি লিখিত থাকবে এবং তা কেবল মু’মিনগণই দেখতে পাবে। (বুখারী) ঞ্চ দাজ্জাল খুরাসান থেকে বের হবে (ইবন মাজা)। * তার বের হওয়ার পূর্বে একাধারে তিন বছর পর্যন্ত ফসল উৎপাদিত না হওয়ার কারণে ভীষণ দুর্ভিক্ষ থাকবে (আহমাদ)। ঞ্চ দাজ্জালের কোন সন্তান সন্ততি হবে না (মুসলিম)। * তার অনুসারীরা হবে ইয়াহুদী। (মুসলিম) * মুনাফিকরাও তার অনুসরণ করবে (আহমাদ)।

দাজ্জাল যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে

দাজ্জাল প্রথমতঃ নিজেকে নবী এবং পরে খোদা বলে দাবী করবে। তারপর পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গা ঘুরে ঘুরে লোকজনকে এ দাবী সমর্থন করতে বাধ্য করবে। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, দাজ্জাল যখন পথে বের হবে তখন তার য বস্তুটিকে আগুন দেখবে Vir সাথে আগুন ও পানি থাকবে। লোকেরা বাহ্যত যে বস্তুটিকে আগুন

পৃষ্ঠা:১০

প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে শীতল পানি আর যে বস্তুটিকে পানি দেখবে সেটা হবে প্রকৃতপক্ষে আগুন (বুখারী)। কোন মুসলিম তাকে রব বলে অস্বীকার করলে সে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তি মহা শাস্তি স্থলে পৌছে যাবে। আর যে তাকে রব বলে স্বীকার করবে দাজ্জাল তাকে পানির মধ্যে নিক্ষেপ করবে। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে জ্বলন্ত আগুন। আল্লাহ্ তা’আলা দাজ্জালকে এ পরিমান শক্তি দান করবেন যে, সে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার পর পুনরায় তাকে জীবিত করতে সক্ষম হবে। তবে একবারের বেশী নয়। কেউ একবার পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার দাজ্জাল, তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। (বুখারী) সে মক্কা ও মদীনা ব্যতিরেকে পৃথিবীর সর্বত্র বিচরণ করবে। মদীনায় প্রবেশের জন্য মদীনার নিকটস্ত প্রস্তরময় ভূখণ্ডে অবতরণ করবে। এ সময় মদীনায় সাতটি প্রবেশ ার থাকবে। কিন্তু দাজ্জাল তন্মধ্যে কোন দ্বার দিয়েই প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না। অবশেষে ফিরে চলে যাবে। (বুখারী) তার দৌরাত্বকাল হবে ৪০ বছর কিম্বা ৪০ দিন। এরপর হযরত ঈসা (আঃ) কর্তৃক দাজ্জাল নিহত হবে (মুসলিম)

হযরত ঈসা (আঃ)-এর পৃথিবীতে অবতরণ (স্থান-কাল ও সময়)

ইমাম মাহদীর সাথে দাজ্জালের যুদ্ধ যখন আসন্ন হবে। ঠিক এমনি সময়ে হযরত ঈসা (আঃ) বাইতুল মুকাদ্দাসে আসরের সময় অবতীর্ণ হবেন এবং তিনি ইমাম মাহদীর সাথে মিলিত হবেন। ওদিকে দাজ্জাল তার বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে মুসলামানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অভিযান করবে। মুসলমানগণও এর মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে। তারা দাজ্জাল বাহিনীর মোকাবেলায় অগ্রসর হবে। উভয় পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে দাজ্জাল হযরত ঈসা (আঃ)-এর হাতে নিহত হয়ে মুসলমানদের বিজয় সূচিত হবে। এরপর ইমাম মাহদী অল্প কিছুদিন জীবিত থাকবেন। তাঁর মৃত্যুর পর হযরত ঈসা (আঃ) মুসলিম সাম্রাজ্যের অধিপতি হবেন। অনেক বছর ধরে তিনি শান্তি ও শৃখংলার সাথে দেশ শাসন করবেন। সব লোক আল্লাহর ইবাদতে এবং সৎকাজে মশগুল হবে। হযরত ঈ’সা (আঃ)-এর মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে লোকগণ আবার অসৎ পথ অবলম্বন করবে।

পৃ্ষ্ঠা ১১ থেকে ২০

পৃষ্ঠা:১১

এবং আল্লাহকে ভুলে যাবে। দেশে পাপের বন্যা প্রবাহিত হতে থাকবে। ধর্মভীরু লোকগণ আবার নানাদিক থেকে অতিষ্ট এবং বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। হযরত ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ প্রসঙ্গে মাওলানা শাহ রফী উদ্দীন (রঃ) লিখেন, দাজ্জাল দামেশক পৌঁছবার পূর্বেই ইমাম মাহদী সেখানে পৌঁছে যাবেন। তিনি দাজ্জালের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকবেন। এ অবস্থায় একদিন আসরের নামাযের আযান হলে লোকজন নামাযের প্রস্তুতি নিতে থাকবে। এমন সময় হযরত ঈসা (আঃ) দু’জন ফিরিশতার কাঁধে ভর করে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন এবং জামি’মসজিদের পূর্ব মিনারে দাঁড়িয়ে সিঁড়ি দেওয়ার জন্য ডাকতে থাকবেন। তখন সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি নীচে অবতরণ করে ইমাম মাহদীর (আঃ) সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ইমাম মাহদী (আঃ) অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সাথে তাঁকে নামাযের ইমামত করতে অনুরোধ জানাবেন। তখন হযরত ঈসা (আঃ) বলবেন, না ইমামত আপনাকেই করতে হবে। আল্লাহ্ তা’আলা এ সম্মান শুধু এই উম্মতকেই দান করেছেন। তারপর ইমাম মাহদী (আঃ) নামায পড়াবেন। আর হযরত ঈসা (আঃ) একজন মুক্তাদী হিসাবে তাঁর পেছনে নামায আদায় করবেন। নামায শেষে ইমাম মাহদী হযরত ঈসা (আঃ)কে বলবেন, হে আল্লাহর নবী। সৈন্য পরিচালনার ভার আপনার উপর অর্পিত থাকল। আপনি নিজ ইচ্ছামতে সমাধা করুন। তিনি বলবেন, সেনাবাহিনীর পরিচালনার দায়িত্ব আপনাকেই পালন করতে হবে। আমি শুধু দাজ্জালকে নিপাত করতেই এসেছি। কারণ তার মৃত্যু আমার হাতেই নির্ধারিত (আলামাতে কিয়ামত)।

হযরত ঈসা (আঃ)-কে চেনার কিছু নিদর্শন

“মুসনাতে আহমাদ গ্রন্থে হযরত ঈসা (আঃ)-কে চেনার কিছু নিদর্শনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি মধ্যমাকৃতির ও গৌর বর্ণের হবে। শরীরে লালচে দু’টি চাদর জড়ানো থাকবে। দেখতে তাঁকে এমন দেখাবে যেন তিনি এইমাত্র গোসল করে বের হয়েছেন।

পৃষ্ঠা:১২

হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে খৃষ্টানদের ভ্রান্ত ধারণা

হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও অন্যতম “উলুল আযম” পয়গাম্বর। আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন স্বরূপ পিতা বিহীন জন্ম তার। পৃথিবীতে তিনি নির্ধারিত সময় অবস্থান করেন। এরপর তাঁকে জীবিতাবস্থায় সশরীরে আসমানে’ তুলে নেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যু হয়নি। কিয়ামতের প্রাক্কালে উম্মতে মুহাম্মদী হিসাবে পুনরায় তিনি আগমন করবেন। দাজ্জালকে হত্যা করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনা সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের পর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ইন্তিকাল করবেন। কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে এ অভিমত সুস্পষ্ট। কিছু ইয়াহুদী ও খৃস্টান সমাজে এ বিষয়ে চরম ভ্রান্তি বিদ্যমান।

ঈসা (আঃ) সম্পর্কে ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের ধারনা

ইয়াহুদীরা হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে খুবই হীন ধারণা পোষণ করে। তাঁর নবী হওয়া এবং প্রতীক্ষিত মাসীহ হওয়াকে ইয়াহুদীরা বিশ্বাস করে না। তিনি বনী ইসরাইল সমাজে সংস্কার কাজ শুরু করলে ইয়াহুদী স্বার্থবাদী শ্রেণী তাঁকে অস্বীকার করে। তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কুরআনে মজীদে ইরশাদ হয়েছে, يا هُلَ الكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الحَقِّ انما المسيح عيسى بن مريم رسول اللَّهِ وَكَلَمْتُهُ الْقَاهَا إِلَى مَرِيمَ وَرُوحٌ مِنْهُ فَأْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ – “হে কিতাবীগণ। তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করোনা এবং আল্লাহর সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলো না। নিঃসন্দেহে ঈসা ইবন মারয়াম হলেন (প্রতীক্ষিত) মাসীহ্। তিনি আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বাণী। যা তিনি মারয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন এবং তাঁর আদেশ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগণে ঈমান আন।” (৪ঃ নিসা ১৭১ নং আয়াত)

পৃষ্ঠা:১৩

ঈসা (আঃ)কে হত্যার জন্য ইহুদীদের ষঢ়যন্ত্র

ইয়াহুদীদের স্বার্থান্বেষী দলটি তখন হযরত ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে এবং রোমের গভর্ণরের সাহায্য নিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাঁকে আসমানে তুলে নেন। কিন্তু ইয়াহুদীদের দাবী হল, তারা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছে। তাদের এ দাবী ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ মিথ্যা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَكِنْ شُبِّهُ لَهُمْ وَإِنَّ الذَّيْنَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتَّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يُقِينَا بَل رفعه الله الله “ইয়াহুদীরা তাঁকে হত্যা করেনি এবং ক্রশবিদ্ধও করেনি কিন্তু তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার ব্যাপারে মতভেদ করেছিল তারা নিশ্চয়ই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল। এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি বরং আল্লাহ্ তাকে তার নিকট তুলে নিয়েছেন।” (৪ঃ নিসা ১৫৭ নং আয়াত)। তবে ইয়াহুদীদের মধ্যে যারা সত্যপরায়ণ ও সত্যপ্রিয় ছিল তারা হযরত ঈসা (আঃ) এর উপর ঈমান আনে এবং তাকে সকল কাজে আন্তরিক ভাবে সাহায্য করে। পবিত্র কুরআনে তাঁদেরকে ‘হাওয়ারী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র ও হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে উঠে যাওয়ার পর এ দলটিও নানা রকম ভ্রান্ত আকীদার শিকার হয়।

হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র নন

কালক্রমে তাদের মধ্যে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে নানা রকম ভ্রান্ত আকীদার উদ্ভব ঘটে। তারা হযরত ঈসা (আঃ) কে মাত্রাতিরিক্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শণ পূর্বক তাঁকে আল্লাহর পুত্র এবং তিন জনের তৃতীয় খোঁদা ইত্যাকার ভ্রান্ত বিশ্বাসে লিপ্ত হয়। বস্তুতঃ হযরত ঈসা (আঃ) এহেন শিরকী আকীদার দিক্ষা দেননি। এটি তাঁর উপর এক মহা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। 

পৃষ্ঠা:১৪

আল্লাহ বলেন, وَإِذْ قَالَ الله يا عيسى بن مُرْيَمَ أَأَنتُ قُلْتُ لِلنَّاسُ اتَّخِذُونِي وامي الهينِ مِنْ دُونِ اللهِ قَالَ سُبْحَانَكَ ما يكون لي ان ان أقول ما ليس لى بحق – “আল্লাহ্ যখন বলবেন, হে ঈসা ইবন মারয়াম। তুমি কি লোকদেরকে এ কথা বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকেও আমার জননীকে ইলাহ্ রূপে গ্রহণ কর। সে তখন উত্তর দিবে, তুমিই মহিমান্বিত। আমার যা বলার অধিকার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভনীয় নয়।” (৫: মায়িদা১১৬ নং আয়াত)। পরবর্তীকালের খৃস্টানরা ইয়াহুদীদের মিথ্যাচারিতায় প্রভাবিত হয় এবং তারাও হযরত ঈসা (আঃ) এর মৃত্যু ও ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। ইয়াহুদীদের এই অমূলক বিশ্বাসকেই বর্তমানে প্রচার করা হচ্ছে।

হযরত ঈসা (আঃ) এর রাজত্বকাল শাসন ব্যবস্থা ও মৃত্যু

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, পৃথিবীতে অরতরণের পর হযরত ঈসা (আঃ) চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। (আবু দাউদ, মুসনাদে ইমাম আহমদ)। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ঈসা (আঃ) এর কবর সম্পর্কেও জানা যায়। তিনি বলেন, একদা আমি ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। হতে পারে আমি আপনার পরেও জীবিত থাকব। কাজেই আপনি আমাকে অনুমতি দিন যেন আপনার পাশেই আমার কবর হয়। নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন যে, এটি কেমন করে হবে? এখানে তো আমার কবর, আবূ বকর ও উমরের কবর এবং হযরত ঈসা (আঃ) এর কবর। (তরজুমানুস সুন্নাহ্, ৩য় খন্ড) তাছাড়া আরো অন্যান্য হাদীসে হযরত ঈসা (আঃ) এর চল্লিশ বছর কালীন সুশাসনের বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে।

পৃষ্ঠা:১৫

ইমাম মাহদী ও হযরত ঈসা (আঃ) কতৃর্ক দাজ্জাল বাহিনীর ওপর সাড়াসি আক্রমণ হযরত শাহ রফী উদ্দীন (রঃ) তাঁর ‘আলামতে কিয়ামত’ গ্রন্থে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করেছেন। যেমন আসমান থেকে অবতরণের পর ইমাম মাহদী ও হযরত ঈসা (আঃ) দাজ্জাল বাহিনীর উপর আক্রমণ চালাবেন। ভীষণ ও ভয়াবহ যুদ্ধ হবে। অবশেষে ‘লুদ্দা’ নামক স্থানে হযরত ঈসা (আঃ) কর্তৃক দাজ্জাল নিহত হবে। দাজ্জালের সমর্থক ইয়াহুদীরা তখন মুসলিম বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সকল চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবে। এমনকি ইয়াহুদীরা রাতে কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করলে সে জড়বস্তুও উচ্চস্বরে আওয়াজ দিয়ে ইয়াহুদীদের ধরিয়ে দিবে। দাজ্জালের দৌরাত্ম খতম হওয়ার পর হযরত ঈসা (আঃ) ও ইমাম মাহদী (আঃ) বিভিন্ন- অত্যাচার কবলিত এলাকা ভ্রমন করবেন এবং লোকজনকে আখিরাতের উন্নতি সফলতা ও সাওয়াবের সুসংবাদ দিবেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে বৈষয়িক সাহায্য দিয়ে অবস্থার উন্নতি সাধন করবেন।  হযরত ঈসা (আঃ) শুকর বধ করবেন এবং ক্রুশ ধ্বংস করবেন। তিনি কাফিরদের কাছ থেকে কোন কর গ্রহণ করবেন না। ইমাম মাহদী (আঃ) কয়েক বছর পর ইন্তিকাল করলে হযরত ইসা (আঃ) স্বাভাবিক অবস্থায় ওফাত লাভ করবেন।

ইয়াজ্য ও মাজুষ নামক দু’টি অত্যাচারী গোত্রের আবির্ভাব

কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অপর একটি বড় আলামত হল পৃথিবীতে ‘ইয়াজুয-মাজুয’ নামক দু’টি চরম অত্যাচারী গোত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। হযরত ঈসা (আঃ) এর অবতরণের পর এ জাতিদ্বয়ের প্রকাশ ঘটবে। হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন, ইয়াজুয-মাজুয আকৃতিতে মানুষের মতই হবে এবং হযরত নূহ (আঃ) এর পুত্র ইয়াকা এর বংশধর থেকে হবে। (ফাতহুল বারী, ৬ষ্ঠ খন্ড)।

পৃষ্ঠা:১৬

তারা পৃথিবীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দা হবে। তাফসীরে তাবারী গ্রন্থে বর্তমানের আরমেনিয়া ও আযার-বাইজানের পর্বতমালার পাশাতবাগ তাদের আবাসস্থল উল্লেখ করা হয় (তাবারী, ১৬-২)। হযরত যুলকারনাইন কর্তৃক তাদের আগমন পথে সুউচ্চ প্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়ার কারণে তারা সাধারণ লোকালয় পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয় না। কিয়ামতের পূর্বে উক্ত প্রাচীর ভেঙ্গে যাবে। ফলে তারা স্রোতের ন্যায় বেরিয়ে এসে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়বে। ইরশাদ হয়েছে, حتَّى إِذا فتحت يَأْجُوجُ وَمَا جُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ এমন কি ইয়াজুয ও মাজুষকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং তারা প্রতি উচ্চভূমি থেকে ছুটে আসবে (২১: আম্বিয়া ৯৬ নং আয়াত)। পূর্বে তারা লোকালয়ে এসে মানুষের উপর নির্যাতন চালাত ও লুটতরাজ করতে। যুলকারনাইন বাদশাহ্ প্রাচীর নির্মাণ করে তাদের আগমনী পথ বন্ধ করে দেন।

ইয়াজুয-মাজুয সম্পর্কে কোরআন

قَالُوا بَاذَا القَرْنَيْنِ إِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَى إِن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُم سَدًّا – قَالَ مَا مَكَّنَى فِيهِ نشه ربي خَبُوا فَا عَينُونِي بِقُونَ اجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رُدْمًا – أَتُونَى وَبَرَ الْحَدِيدِ حتى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنَ قَالَ انْفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا – قَالَ اتُونِي أَفْرِعُ عَلَيْهِ قِطْرًا – فَمَا اسْطَاعُوا أَنْ يَظْهَرُوهُ وَمَا اسْتَطَاعُوالَهُ نَقْبًا قَالَ هَذَا رَحْمَةً مِن رَبِّي فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ كَا وَكَانَ وَعْدُ ربي حقا وتركنا بعضَهُمْ يَومَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ وَنَفَخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا –

পৃষ্ঠা:১৭

“তারা বলল, হে যুলকারনাইন ইয়াজুয ও মাজুয পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা কি তোমাকে এ শর্তে কর দিতে পারি যে, তুমি আমাদের ও তাদের মাঝে একটি প্রাচীর গড়ে দিবে? যুলকারনাইন বলল, আমার প্রভু আমাকে যে ক্ষমতা দান করেছেন তাই উৎকৃষ্ট ও উত্তম। সুতরাং তোমরা আমাকে কেবল শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে একটি মযবুত প্রাচীর গড়ে দিব। তারপর তিনি বললেন, তোমরা আমার নিকট লৌহপিন্ড সমূহ নিয়ে এসো। অতঃপর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লোহা স্তূপ স্থাপন দু’পর্বতের সমান হল। তখন তিনি বললেন, তোমরা হাপরে দম দিতে থাক। তখন তা আগুনের মত উত্তপ্ত হলে তিনি বললেন, তোমরা গলিত তামা আন আমি তা এর উপরে ঢেলে দিচ্ছি। এরপর থেকে ইয়াজুয ও মাজুয আর সে প্রাচীর অতিক্রম কিংবা ভেদ করতে সক্ষম হল না। ফুযুলকারনাইন বললেন যে, এটি হল আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি এটি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন। আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য। সে দিন আমি তাদেরকে এমতাবস্থায় ছেড়ে দিব যে, একদল অপর দলের উপর তরঙ্গের ন্যায় পতিত হবে এবং সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, তারপর আমি তাদের সকলকে একত্রিত করব” (১৮: কাহফ ৯৪-৯৯ নং আয়াত)।

ইয়াজুজ-মাজুজের আকৃতি প্রকৃতি

ইয়াজুজ-মাজুজ দেখতে মানুষ, তবে স্বভাব হবে চতুষ্পদ জন্তুর মত। দেহের সম্মুখ ভাগ মানুষের ন্যায় এবং পিছনের ও নিম্নের দিক চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়। দুনিয়ার এক সীমান্তে এরা বাস করে। এরা মানুষ, বৃক্ষলতা সব ভক্ষণ করে। এক সময় তারা মানব জাতির উপর অত্যাচার চালাত। হযরত শাহ সেকান্দার, সুদৃঢ় প্রাচীর গেঁথে ইয়াজুজ-মাজুজ জাতিকে মানব এলাকায় আসার পথ বন্ধ করে দেন। ওরা উক্ত প্রাচীর প্রত্যেক দিন জিহ্বা দিয়ে চাটতে থাকে। কিন্তু দেয়াল ভাংতে পারে না। এভাবে কিয়ামতের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত চলবে। কিন্তু হঠাৎ একদিন এ দেয়াল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তখনই ইয়াজুজ-মাজুজ দল স্রোতের ন্যায় মানব এলাকায় ঢুকে পড়বে। তারা সব কিছু খেয়ে ফেলবে। পানির পিপাসায় তারা দুনিয়ার সব সাগর, মহাসাগর, নদী বিল, ইত্যাদির পানি খেয়ে ফেলবে। এভাবে

পৃষ্ঠা:১৮

সারা দুনিয়াকে তারা তছনছ করে ফেলবে। অবশ্যই তারা আল্লাহর হুকুমে সবাই মারা যাবে। ইয়াজ ও মাজয়ের দৌরাত্ম চরম পর্যায়ে পৌছলে হযরত ঈসা (আঃ) মুসলমানদেরকে নিয়ে দু’আ করবেন। ফলে ব্যাপক মহামারী দেখা দিবে। এতে এ অত্যাচারী সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনটি ভয়াবহ ভূমি ধস এবং পৃথিবী ধোয়াচ্ছন্ন হওয়ার ঘটনা হযরত ঈসা (আঃ) এর ওফাতের পর কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে তিনটি ভয়ানক ভূমিধস হবে। একটি পূর্বাঞ্চলে। এ এলাকা সম্পর্কে এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, এটি মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী বায়দা মরুঅঞ্চলে ঘটবে (নিবরাস, পৃষ্ঠা ৩৫২)। ইতিমধ্যে ধোঁয়া সমস্ত পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। ফলে মুসলমানগণ স্নায়ু দুর্বলতা ও সর্দিতে আক্রান্ত হবে আর মুনাফিক ও কাফিররা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকবে। এ অবস্থা চল্লিশ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তারপর পৃথিবী ধোয়ামুক্ত হবে (আলামতে কিয়ামত)।

পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ও তাওবার দরজা বন্ধ 

বিভিন্ন হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে ‘দাব্বাতুল আরদ’ প্রকাশের কিছু পূর্বে কিংবা তার পর পরই সিঙ্গায় ফুৎকারের আগে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয়ের ঘটনা ঘটবে। এ অস্বাভাবিক ঘটনার পর থেকে কোন কাফিরের ঈমান কিংবা ফাসিকের তাওবা কবুল হবে না। ফলে ঈমানদারগণ সতর্কিত হয়ে রাতভর আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করবেন। এই রাতের পর সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয়ে আবার পশ্চিম দিকেই অস্তমিত হবে। পরের দিন থেকে পুনরায় স্বাভাবিকভাবে পূর্ব দিক থেকেই সূর্যোদয় হতে থাকবে। এর কিছু দিন পরেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (নিবরাস, পৃষ্ঠা-৩৫২)

কুরআনের অক্ষর বিলোপ

পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় হতে দেখে আতংকগ্রস্থ মানুষ দেখতে পাবে কুরআনে কোন অক্ষর নেই, শুধু সাদা কাগজই অবশিষ্ট রয়েছে।

পৃষ্ঠা:১৯

তখন তারা তাদের পাপ কার্যের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট তাওবাহ করতে চাইবে। এ সময় এক অদৃশ্য আওয়াযের মাধ্যকে তাদেরকে জানিয়ে দেশা হবে, তোমাদের তাওবাহর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। কারও তাওবাহ আল্লাহ এখন কবুল করবেন না। দাব্বাতুল আরদ নামক অদ্ভুত একটি প্রাণী সম্পর্কে আলোচনা وَإِذَا وَقَع القَوْلُ عَلَيْهِمْ آخَرَ بْنَا لَهُم كَابَهُ مِنَ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُم أَنَّ النَّاسَ كَانُو بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ “যখন ঘোষিত শাস্তি তাদের নিকট আসবে তখন আমি মাটিগর্ভ থেকে এক জন্তু নির্গত করব। এ জন্তু মানুষের সাথে কথা বলবে, এই জন্য যে, তারা আমার নিদর্শনে ছিল সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী”। (২৭: নামল ২৮ নং আয়াত) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে বায়তুল্লাহ্ শরীফের পূর্বদিকে অবস্থিত সাফা পর্বত ভূমিকম্পে ফেটে যাবে এবং সেখান থেকে বিচিত্র আকৃতির এক অদ্ভুত জন্তু বের হয়ে আসবে। এই অদ্ভুত জন্তুটির মুখমন্ডলের আকৃতি মানুষের ন্যায়, পা উটের ন্যায়, ঘাড় ঘোড়ার ন্যায়, লেজ চিলের ন্যায়, নিতম্ব হরিণের নিতম্বের ন্যায়, শিং বহুশাখা বিশিষ্ট হরিণের শিং এর ন্যায় এবং হাত বানরের হাতের ন্যায় হবে। উক্ত জন্তুটি অত্যন্ত বাকপটু হবে এবং উচ্চমানের ভাষায় কথা বলবে। তা সমস্ত শহরে এত দ্রুত গতিতে বিচরণ করবে যে, কেউ তার নাগাল পাবে না। অথচ কোন মানুষ এর নাগালের বাইরেও থাকবে না। তার নিকট হযরত মূসা (আঃ)-এর লাঠি থাকবে। সেই লাঠির দ্বারা সে মু’মিনদের স্পর্শ করবে। এতে তাদের মুখমন্ডল উজ্জল হয়ে উঠবে এবং সকলেই তাদেরকে মু’মিন বলে চিনতে সক্ষম হবে। আর সুলায়মান (আঃ) এর আংটির দ্বারা কাফিরদের নাকের উপর ‘কাফির’ শব্দ শীল করে দেবে। ফলে সকলেই তাদেরকে কাফির বলে চিনতে পারবে (আলামাতে কিয়ামত) দক্ষিণের বায়ু ‘দাব্বাতুল আরদ’ অদৃশ্য হওয়ার পর দক্ষিণ দিক থেকে এক প্রকার বায়ু প্রবাহিত হবে। এই বায়ুর প্রভাবে মু’মিনগণ কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবং এরপর থেকে তারা একে একে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকবেন। তারপর

পৃষ্ঠা:২০

পৃথিবীতে নিগ্রো দলের আধিপত্য কায়িম হবে। তারা কা’বা শরীফ ধ্বংস করবে এবং হজ্জ পালন বন্ধ করে দিবে।মানুষের জীবন থেকে লজ্জা সম্ভ্রম সম্পূর্ণ বিদায় নিবে। রাস্তায়-ঘাটে প্রকাশ্যে যিনা-ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে। মানুষের মধ্যে হানাহানি, মারামারি মাত্রাধিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। দুর্ভিক্ষ, মহামারী, হত্যা, লুণ্ঠন একের পর এক হতে থাকবে। পৃথিবীতে ‘আল্লাহ’ শব্দ বলার মত কেউই আর অবশিষ্ট থাকবে না।

মহা অগ্নিশিখা

সে সময় দক্ষিণ দিক থেকে একটি মহা অগ্নিশিখা প্রকাশিত হয়ে মানুষকে ধাওয়া করতে শুরু করবে। লোকজন অগ্নিশিখার ভয়ে ক্রমে উত্তর দিকে গিয়ে জড়ো হবে। কিয়ামত অতি নিকটবর্তী হওয়ার এটিই হল সর্বশেষ নিদর্শন।

মাহা প্রলয়ের পদধ্বনি (সিঙ্গায় ফুৎকার)

চরম পাপাচার ও অশান্ত, অবস্থায় পৃথিবী কিছুকাল এভাবে চলবে। অবশেষে একদা একটি আওয়াজ শোনা যাবে এই-আওয়াজ ক্রমে মৃদু থেকে ধীরে ধীরে প্রচন্ডতর হতে থাকবে এবং সর্বত্র একই রকম শোনা যাবে এটিই সে শিঙ্গার ফুৎকার। আওয়াজটি কোথা থেকে আসছে তা নির্ণয় করা যাবে না। কিন্তু তার কর্কশ ও রুঢ়তা ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে মানুষ ঘরবাড়ী ছেড়ে মাঠের দিকে ছুটবে। আওয়াজের ভীতিকর অবস্থা বনবাদাড়ের জীব জন্তুদেরকেও মাঠের দিকে নিয়ে আসবে। সমুদ্র স্ফীত হয়ে নিকটবর্তী স্থান সমূহ নিমজ্জিত করে দিবে। পাহাড়গুলো বাতাসের সাথে ধূনিত ভূলোর ন্যায় উড়তে থাকবে। এদিকে সিঙ্গার আওয়াজও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তখন আকাশ ফেটে যাবে। গ্রহ নক্ষত্রগুলো বিক্ষিপ্তভাবে এদিক ওদিক পড়তে থাকবে। এ অবস্থ্য ছয়মাস চলবে। আকাশ, বাতাস, গ্রহ, নক্ষত্র, পাহাড়, পর্বত, সাগর, মহাসাগর সবকিছু সম্পূর্ণ ফানা হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে ফিরিশতাদেরও মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ পাকের আরশ, কুরসী, লাওহ্-কলম, জান্নাত-জাহান্নাম, সিঙ্গা ও রূহ্ সমূহ ব্যতিরেকে সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। ইরশাদ হয়েছে-,

পৃ্ষ্ঠা ২১ থেকে ৩০

পৃষ্ঠা:২১

الْقَارِعَةُ مَا الْقَارِعَةِ وَمَا أَدْرُكَ مَا الْقَارِعَةُ يَوْمَ يَكُونَ النَّاسُ كَالفَرَاشِ المستوتَ وَتَكُونُ الجِبَالُ كَالْعِهْنِ المنفوش – “মহাপ্রলয় কি? মহাপ্রলয় সম্বন্ধে তুমি কি জান। সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। আর পর্বতগুলো হবে ধূনিত রঙ্গীন পশমের মত (১০১৪ কারিয়া ৫ নং আয়াত)

সিঙ্গায় ফুৎকার দানকারী ফেরেশতার পরিচয়

প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত ওয়াহাব (রহ:) বলেন যে, মহান আল্লাহ্ শিংগাকে কাঁচের ন্যায় পরিষ্কার শুভ্র মোতির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এরপর আরশকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি শিংগা গ্রহণ কর। ফলে সে শিংগা গ্রহণ করে। এরপর মহান আল্লাহ্ নির্দেশ প্রদান করে বলেন যে, তুমি হয়ে যাও। ফলে হযরত ইসরাফীল (আঃ) জন্ম লাভ করেন। তখন মহান আল্লাহ্ তাঁকে নির্দেশ দেন, ঐ শিংগা উঠিয়ে নাও। তিনি ঐ শিংগা উঠিয়ে নেন। ঐ শিংগার মধ্যে আসমান ও জমিনের ব্যাপ্তির ন্যায় একটি বিশাল ছিদ্র আছে। হযরত ইসরাফীল (আঃ) ঐ শিংগার মধ্যেই নিজের মুখ রেখে বসে আছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ হযরত ইসরাফীল (আঃ) কে লক্ষ্য করে বলেন (কিয়ামত দিবসে) ফুৎকার দেওয়া ও চিৎকার করা তোমার দায়িত্ব। হযরত ইসরাফীল (আঃ) আরশের’ সামনে আসেন এবং নিজ ডান পা আরশের নীচে রাখেন এবং বাম পা সামনে রাখেন। আর যখন থেকে মহান আল্লাহ্…… কেননা তিনি নিজ দায়িত্বের জন্য অপেক্ষামান আছেন”। (কিতাবুল আযামাহ) অব এব জানা গেল যে, যে শিংগায় ছিদ্রে হযরত ইসরাফীল (আঃ) মুখ রেখেছেন সেটার আকৃতি হল আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানের সমান। এর দ্বারাই অনুমান করা যঅয় যে, হযরত ইসরাফীল (আঃ) এর শরীর কত বড় হবে।

পৃষ্ঠা:২২

মানুষকে প্রথম সিজদাকারী ফেরেস্তা

হযরত যামুরা (রহ: বলেন, “আমার নিকট এ সংবাদ পৌছেছে যে, ‘হযরত আদম (আঃ)কে সর্ব প্রথম হযরত ইসরাফীল (আঃ) সেজদা করেছেন। তারই পরুস্কার স্বরূপ তাঁর কপালে কুরআন শরীফ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে আলী হাতিম)

হযরত ইসরাফীল (আঃ) শিংগায় ফুঁক দেবেন

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সাঃ) “আমি কিভাবে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকব। অথচ শিংগাওয়ালা হযরত ইসরাফীল (আঃ) মুখে শিংগা নিয়ে বসে আছেন এবং নিজ মাথা ঝুঁচিয়ে দিয়েছেন এবং নিজ কর্ণ উৎকর্ণ করে রেখেছেন এবং অধীরভাবে অপেক্ষা করছেন যে, কবে তাকে শিংগায় ফুৎকারের নির্দেশ দেয়া হবে”। সাহাবায়ে কিরাম যে, আরয করেন যে, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ্। তাহলে (সে বিপদের প্রস্তুতির জন্য) আমরা কি করব? জবাবে মহানবী (সাঃ) বললেন যে, তোমরা বলঃ অর্থঃ আমাদের জন্য মহান আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি উত্তম কর্ম বিধায়ক, আমরা তাঁর উপরই ভরসা করি”। (তিরমীযী শরীফ)

ইসরাফীল (আঃ) চক্ষুদ্বয় চমকদার তারার ন্যায়

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সাঃ)” নিঃসন্দেহে ইসরাফীল (আঃ) যে দিন থেকে শিংগায় ফুৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছেন সেদিন থেকেই তিনি প্রস্তুত হয়ে বসে রয়েছেন। তিনি আরশের আশে পাশে এ ভয়ে দেখতে থাকেন যাতে তাঁর পলক পড়ার পূর্বেই চিৎকার দেয়ার (শিংগা ফুৎকারের) নির্দেশ এসে না পড়ে। তাঁর উভয় চক্ষু চমকদার তারা ন্যায়”। (হাকীম ৪৪৫৫৯)

হযরত ইসরাফীল (আঃ) কখনো হাসেন না

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন যে, “আমি জিবরাঈল (আঃ)কে বলালম যে, “হে জিবরাঈল! ব্যাপার কি, আমি তো ইসরাফীল কে কখনো হাসতে দেখি না, অথচ আমার নিকট অন্য যত ফেরেশতাই এসেছেন সকলকে আমি হাসতে দেখেছি”।

পৃষ্ঠা:২৩

জিবরাঈল (আঃ) বলেন যে, “যেদিন থেকে জাহান্নামের সৃষ্টি সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমরা কখনো ইসরাফীল (আঃ) কে হাসতে দেখিনি। (শুআবুল ঈমান বাইহাকী)

পুনরায় সিঙ্গায় ফুৎকার

তারপর সবাই ময়দানে হাশরে গিয়ে উপস্থিত হবে। ইরশাদ হয়েছে, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمواتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ الأمن شاء الله هم نفخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُم قِيامَ يَنظُرُونَ “এবং সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ব্যতিরেকে আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মুর্ছিত হয়ে পড়বে” তারপর আবার সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে সাথে সাথেই তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে। (৩৯ঃ যুমার ৬৮ নং আয়াত)। ময়দানে হাশরে বান্দাদের আমলের হিসাব হবে। নেকী-বদীর ওযন হবে। নেক্কার লোকদের ডান হাতে এবং বদকার লোকদের বাম হাতে আমলনামা প্রদান করা হবে। বিচারের ময়দানে একটি সূক্ষ্ম সেতু থাকবে। একে সিরাত বলা হয়। ঐ সেতু তরবারির চেয়েও তীক্ষ্ণধার এবং পশমের চেয়েও সূক্ষ্মতর হবে। এর উপর দিয়ে সকলকে পথ অতিক্রম করতে হবে। পাপী লোকেরা তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবেনা। তারা হাত-পা কেটে জাহান্নামে পতিত হবে। আর সৎকর্ম পরায়ন লোকেরা আল্লাহর অনুগ্রহে অতি সহজে ঐ সেতু অতিক্রম করতে সক্ষম। হবে। পুলসিরাত অতিক্রম করার পর নেককার বান্দাগন হাওযে কাওসার হতে শরবৎ পান করবেন। একবার যিনি এই শরবৎ পান করবেন তিনি আর কখনো পিপাসিত হবেন না। শরবৎ দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি হবে। (শরহুল আকায়িদ) কিয়ামত ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে পূর্বে যে বিবরণ পেশ করা হয়েছে কুরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। এ ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ القِيمَةِ تَبْعَثُونَ  “তারপর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।” (২৩ মুমিনূন: ১৬ নং আয়াত)

পৃষ্ঠা:২৪

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, مِنْهَا خَلَقْنَكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ نَارَةٌ أُخْرَى “আমি মাটি হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব আবার মাটি হতেই পুনর্বার তোমাদেরকে বের করব।” (২০ তাহা : ৫৫ নং আয়াত) কিয়ামত ও পুনরুত্থান প্রসঙ্গে যুক্তি পেশ করে বলা হয় যদি পুনরুত্থান এবং মানুষের কর্ম-কান্ডের প্রতিফল তথা পুরস্কার বা তিরষ্কারকে স্বীকার না করা হয় তবে ভাল মন্দ এবং নেকী-বদীর স্বভাবিক তারতম্য মূল্যহীন এবং মানব-জীবন উদ্দেশ্যহীন হতে বাধ্য। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা এ জগতে মানব জাতিকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে সৃষ্টি করেননি আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,الحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْتُكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمُ البَنَا لَا تُرْجَعُونَ “তোমরা কি মনে করেছ যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?” (২৩ মুমিনুন: ১১৫ নং আয়াত) মরার পর মানুষ পচে-গলে মাটির সাথে মিশে যাবে তখন এ মানুষকে পুনঃরায় কেমন করে জীবিত করা হবে? এ জাতীয় প্রশ্ন করা একেবারেই অবাস্তব। কুরআন মজীদে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,قَالَ مَنْ تُحْيِي العظامَ وَهِيَ رَمِيمٌ قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنْشَاهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقَ عَلِيمٌ … أَوْ لَيْسَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِيقدر على أَن يَخْلُقُ مِثْلَهُم بَلَى وَهُوَ الْخَلَّى العَلِيم সে বলে, অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে যখন তা পচে-গলে যাবে? বল, এর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি তাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্মন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।…. যিনি আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদেরকে অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন। হাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা সর্বজ্ঞ। (৩৬- ইয়াসীন: ৭৮-৭৯৮১)

পৃষ্ঠা:২৫

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,وَاقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِم لَا يُبْعَثُ اللَّهُ مَنْ يَمُوتُ بَلَى وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর শপথ করে বলে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ্ তাকে পুনর্জীবিত করবেন না। কেন নয়, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা অবগত নয়। (১৬ নাহল: নং আয়াত৩৮) পুনরুত্থান দিবস প্রসঙ্গে সৃষ্ট সংশয় নিরসন কল্পে কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা’আলা বহু যুক্তি এবং বাস্তব কিছু ঘটণা উল্লেখ করেছেন। কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা’আলা হযরত উযায়র (আঃ) এবং আসহাবে কাহফের পুনঃজীবিত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন’। এতে এ কথা প্রমাণ করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা যেমনি ভাবে তাদেরকে পুনঃজীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন তেমনিভাবে তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে পুনঃজীবিত করতে সক্ষম। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। গ্রীষ্মকালে যমীন শুষ্ক ও প্রানহীন হয়ে যাওয়ার পর তাতে বৃষ্টির পানি পতিত হলে এর মাঝে জীবন ফিরে আসে। সবুজ-শ্যামলিমায় যমীন নয়নাভিরাম হয়ে যায়। ক্ষেত ও ফসলের সমারোহে কৃষকের মন ভরে উঠে। ঠিক তেমনিভাবে রহমতে ইলাহীর এক বিন্দু বৃষ্টি মাটির নীচে দাফন কৃত লোকদের মাঝেও প্রাণ সঞ্চার করে তাদেরকে পুনরুত্থিত করতে সক্ষম। এ জগত প্রথমে অস্তিত্বহীন ছিল। আল্লাহ্ তা’আলা একান্ত দয়াপরবশ হয়ে এ গুলোকে অস্তিত্ব দান করেছেন। সুতরাং যিনি প্রথমে কোন নমুনা ছাড়া এ জগতকে পয়দা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি কেন একে পুনর্বার পয়দা করতে সক্ষম হবেন না? এতে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্ট জগতের সকলকে পুনর্বার সৃষ্টি করতে সক্ষম। হাদীসেও এ সম্বন্ধে বিশদ বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে। আবু রযীন (রাঃ) বলেন, একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ তা’আলা এ সৃষ্টিকে কেমন করে পূনর্বার সৃষ্টি করবেন এবং সৃষ্টি জগতে এর কোন উপমা বা দৃষ্টান্ত আছে কী? উত্তরে নবী করীম (সাঃ) বললেন, তুমি কখনো শুরু প্রান্তর অতিক্রম করেছো কী? তারপর ঐ ভূমি সতেজ শ্যামল হওয়ার পর তুমি তা পুনঃরায় অতিক্রম করেছো কী? সাহাবী বলেন, আমি বললাম, হাঁ। তখন তিনি

পৃষ্ঠা:২৬

বললেন, এটিই হল পুনর্বার জীবিত করার উপমা বা দৃষ্টান্ত। এ ভাবেই আল্লাহ্ তা’আলা মৃতদেরকে পুনঃরায় জীবিত করবেন। (মিশকাত শরীফ) মুসলিম শরীফের এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, আদম সন্তানের সমস্ত অঙ্গই মাটি খেয়ে ফেলবে। কিন্তু মেরুদন্ডের হাড় অক্ষুন্ন থাকবে। এর থেকেই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পুরঃরায় সৃষ্টি করা হবে। (মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড)

পরজগত সম্পর্কে আলোচনা

আখিরাত বলতে মৃত্যুর পর থেকে অনন্ত কালের দীর্ঘ সময়কে বুঝায়। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কবর, হাশর, হিসাব, পুলসিরাত এবং জান্নাত বা জাহান্নাম সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে আখিরাতের জীবনকে দুটি পর্যায়ে বিন্যাস করা হয়েছে। (২) মুত্যু হতে কিয়ামত পর্যন্ত। (২) কিয়ামত হতে অনন্ত কাল পর্যন্ত যেখানে মৃত্যু ও ধ্বংস কিছুই নেই। (সিরাতুন নবী ৪র্থ খন্ড) প্রথম পর্যায়ের নাম বরযখ বা কবরের জীবন। মৃত্যুর পর মানব দেহ কবরস্থ করা হোক কিংবা সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হোক অথবা আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত করে দেওয়া হোক সবই হবে তার জন্য আলমে বরযখ। আর দ্বিতীয় পর্যায় হল, কিয়ামত, হাশর, নশর তথা অনন্ত কালের জীবন। কিয়ামতের মর্ম হল, জগতে এমন একটি সময় আসবে যখন আল্লাহর নির্দেশে জগতের সব কিছুকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তারপর দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর যখন আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা হবে তখন তিনি আবার সকলকে জীবিত করবেন, সকলেই পুনঃরুত্থিত হয়ে হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। তারপর সকলের থেকে জাগতিক জীবনের আদ্যপান্ত হিসাব গ্রহন করা হবে। হিসাব নিকাশের মানদন্ডে আল্লাহর যে সব বান্দা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে জান্নাতে দাখিল হওয়ার হুকুম দেওয়া হবে। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারবে না তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশের হুকুম করা হবে। বস্তুতঃ জান্নাত-জাহান্নামই হল মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের শেষ অধ্যায়। এ পর্যায় হতেই মানুষ অনন্ত কালের জন্য হয়তো জান্নাতে নয়তো জাহান্নামে অবস্থান করতে থাকবে।

পৃষ্ঠা:২৭

আখিরাতের উপর ঈমান আনয়নের আবশ্যকতা

আখিরাতের বিশ্বাস ইসলামের আকীদা সমূহের মধ্যে অন্যতম। আখিরাতের বিশ্বাস ছাড়া ঈমান সহীহ হয় না। কুরআন মজীদে ঈমানদার লোকদের পরিচয় তুলে ধরে বলা হয়েছে, وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ আর যারা পরকালের উপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। (২ বাকারা: ৪নং আয়াত) আখিরাতের বিশ্বাস ব্যতিরেকে পুন্য ও কল্যান লাভ কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এ পর্যায়ে ইরশাদ হয়েছে,ان البران تولوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمُشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ البَرَ مَنْ امن بالله وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالمليكة والكتب والبين “পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোতে কোন পূন্য নেই কিন্তু পূন্য আছে কেউ আল্লাহ্, পরকাল, ফিরিশতাগন, সমস্ত কিতাব এবং নবীগনের উপর ঈমান আনয়ন করলে।” (২ বাকারাঃ ১৭৭ নং আয়াত) যারা আখিরাতে বিশ্বাস করেনা তারা ভ্রান্ত ও গুমরাহ। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন,ومَنْ يَكْفُرُه بِاللهِ وَمَلَكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّضلالاً بعيدم “এবং কেউ আল্লাহ্, তার ফিরিশৃত্য, তার কিতাব, তার রাসূল এবং পরকালকে প্রত্যাখ্যান করলে সে ভীষণ ভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।” (৪ নিসা: ১৩৬ নং আয়াত) ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও আদর্শের উপর নিজেকে সুদৃঢ় রাখার জন্য আখিরাতের উপর আস্থাশীল হওয়া আবশ্যক। কারন মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন শুরু হবে এবং সে জীবনের পুরস্কার কিংবা তিরস্কার, সফলতা কিংবা ব্যর্থতা ইহকালের কর্মকান্ডের উপরই নির্ভরশীল। এ কথার বিশ্বাসই মানুষকে ইহজীবনে সত্য পথের অনুসারী বানায় এবং আমলে সালিহের পথে উদ্বুদ্ধ করে।

পৃষ্ঠা:২৮

আখিরা বিশ্বাস মানব মনে সত্যের প্রতি আনুগত্য এবং অসত্যের প্রতি বিরাগ ভাবের জন্ম দেয়।কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,الهَكُمُ اللَّهُ وَاحِدٌ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُم مُكَرَهُ وَهُم مستكبرمون –এক ইলাহ তিনিই তোমাদের ইলাহ, সুতরাং যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্য বিমুখ এবং তারা অহংকারী। (১৬ নাহল ২২ নং আয়াত)“আঁখিরাতের বিশ্বাস ব্যতিরেকে ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। এ কারনেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈমানের পরিচয় দিতে গিয়ে আখিরাতের বিশ্বাসের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। বর্ণিত আছে, হযরত জিব্রাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললেন, আমাকে বলুন ঈমান কাকে বলে? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহকে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর ফিরিশতাগনে, তাঁর কিতাব সমূহে, তাঁর রাসূলগনে এবং আখিরাতে বিশ্বাস করবে। আর বিশ্বাস করবে তাকদীরের ভাল মন্দের উপর। “(বুখারী, মুসলিম,)

মৃত্যু ও বরজখের জীবন

মৃত্যু সকলের জন্যই অবধারিত। এতে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। কুরআন ও হাদীসে এ সম্বন্ধে বিশদ বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে। মৃত্যু- চিন্তা মানুষকে আল্লাহমুখী করে, দুনিয়ার অহেতুক হাসি-খুশি হতে নিবৃত রাখে এবং অনন্ত জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ লাভের কাজে বান্দাকে সর্বদা নিয়োজিত রাখে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, -كل نفس ذائقة الموت জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (৩আলেইমরানঃ ১৮৫ নং আয়াত) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,ابنَ مَا تَكُونُوا يُدْرِكُكُمُ المَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشيدة -তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদেরকে নাগালে পাবেই, এমনকি সুউচ্চ, সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও। (৪ নিসাঃ ৭৮ নং আয়াত)

পৃষ্ঠা:২৯

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلْقَيْكُمْ ثُمَّ تَرْدُونَ إِلَى عُلم الغيب والشَّهَادَةِ فَيُبَنَّكُمْ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ – বল, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন কর সেই মৃত্যুর সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই। অতঃপর তোমরা প্রত্যানীত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর নিকট। তখন তোমরা যা করতে এ সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। (৬২ জুমআ ৮ নং আয়াত) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, أكثروا أكثروا ذكر هادم اللذات . – সকল প্রকার স্বাদ বিনষ্টকারী (মৃত্যুকে) তোমরা স্মরণ কর। (মিশকাত শরীফ: ২য় খন্ড) অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, চতুষ্পদ জন্তু যদি তোমাদের ন্যায় মৃত্যু জম্পর্কে জানতে পারত তবে তোমরা তাদের মধ্যে কোন এটিকেও মোটা দেখতে পেতে না। অপর এক হাদীসে আছে, হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন কোন ব্যক্তিকে শহীদানের সঙ্গী করে উঠানো হবে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি দিবারাতে বিশ বার মৃত্যুর কথা স্মরণ করে। মুমিনের উপহার হল মৃত্যু। উপদেশের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট। (আল মুরশিদুল আমীন: ইমাম গাযালী) মরণ উত্তর কালে মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করা হোক বা পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হোক অথবা জালিয়ে ভষ্মীভূত করে দেওয়া হোক সবই হবে তার জন্য আলমে বরযখ। আলমে বরযখ সম্বন্ধে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,ووَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ এবং তাদের সামনে রয়েছে বরযখ, তথায় তারা পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত থাকবে। (২৩ঃ মুমিনূনঃ ১০০ নং আয়াত) এ আলমে বরযখে মৃত ব্যক্তির সাথে কিরূপ আচরণ করা হবে এ সম্বন্ধে হাদীসে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

পৃষ্ঠা:৩০

হযরত বারা ইবন ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদকরেন, (কবরে মুমিন) বান্দার নিকট দুইজন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার রব কে? সে বলে আমার রব আল্লাহ। তারপ্র তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি? সে বলে আমার দীন ইসলাম? তারপর পুনঃরায় প্রশ্ন করেন যে, এই যে লোকটি যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল, তিনি কে? উত্তরে সে বলবে, তিনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। তখন ফিরিশতাগন বলেন, তুমি তা কিরূপে বুঝতে পারলে, সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁকে সত্য বলে সমর্থন করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, এটাই হল, আল্লাহর কালাম اللهالذين آمنوا بالقول الثابت )ারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদেরকে “কর্ডলে সাবিত” (কালিমায়ে শাহাদাত) এর উপর অবিচল রাখবেন) আয়াতের অর্থ। নবী করীম (সাঃ) বলেন, এরপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী এ মর্মে ঘোষণা করবে যে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তাঁর জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাঁর জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরওয়াজা খুলে দাও। সুতরাং তাঁর জন্য দরওয়াজা খুলে দেওয়া হয়। ফলে তার দিকে জান্নাতের স্নিগ্ধকর হাওয়া এবং এর সুগন্ধি বইতে থাকে। তারপর তাঁর কবরকে তাঁর দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কাফিরের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তার শরীরে তার রূহকে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর দুইজন ফিরিশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং জিজ্ঞাসা করেন, তোমার রব কে? সে উত্তরে বলে হায়, হায়, আমি কিছুই জানিনা। তারপর তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি? সে বলে হায়, হায়, আমি কিছুই জানিনা। তারপর তাঁরা পুনঃরায় জিজ্ঞাসা করেন, এই যে লোকটি যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল তিনি কে? এবারও সে বলে হায়, হায়, আমি কিছুই জানিনা। এ অবস্থায় আকাশ থেকে এক ঘোষণাকারী এ মর্মে ঘোষণা করেন যে, সে মিথ্যা বলছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের একটি দরওয়াজা খুলে দাও। (এ নির্দেশ অনুসারে দরওয়াজা খুলে দেওয়া হয়) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, তারপর তার কবরে জাহান্নামের উত্তাপ ও লু’ হাওয়া আসতে থাকে। এরপর তার কবরকে এমন সংকীর্ণ করে দেওয়া হয় যে, তার এক দিকের পাজরের হাড় অপর দিকের পাজরের হাড়ের মধ্যে ঢুকে যায়। অতঃপর তার কবরে একজন

পৃ্ষ্ঠা ৩১ থেকে ৪০

পৃষ্ঠা:৩১

অন্ধ ও বধির ফিরিশতা মোতায়েন করা হয় যার নিকট লোহার একটি হাতুড়ী থাকে। যদি এ হাতুড়ী দ্বারা পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তবে নিশ্চয়ই পাহাড় ধুলিমাটি হয়ে যাবে। এ হাতুড়ী দ্বারা ঐ ফিরিশতা তাকে সজোরে আঘাত করতে থাকে। ঐ আঘাতের আওয়াজ মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সমস্ত মাখলুক শুনতে পায়। আঘাতে ঐ ব্যক্তি মাটি হয়ে যায়। তারপর তার মধ্যে রূহ পুনঃরায় ফেরৎ দেওয়া হয়। (এভাবে বরাবর চলতে থাকে।) (মিশকাত শরীফ) উপরোক্ত হাদীস থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, পূন্যবান রূহ সমূহ দেহ হতে পৃথক হওয়ার পর তাদেরকে জান্নাতের সুখ-শান্তির দৃশ্যাবলী প্রদর্শন করা হয়। অনুরূপ ভাবে অপরাধী রূহ সমূহকে আযাবের কিছু না কিছু স্বাদ গ্রহন করানো হয়। এটা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদাও বটে। শায়খ উমার ইবন মুহাম্মদ নাসাফী (রঃ) তৎপ্রণীত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, কবরে কাফির এবং কোন কোন অবাধ্য মুমিনদেরকে শাস্তি প্রদান করা এবং অনুগত দীনদার বান্দাদেরকে নি’আমত দ্বারা মণ্ডিত করা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,– النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوا وَعَشِيًّا উপস্থিত করা হয় আগুনের সামনে। (৪০ মুমিনঃ ৪৬ নং আয়াত) • আল্লামা তাস্তাযানী (রঃ) এর মতে আয়াতটি কবরের আযাবের সাথে সম্পর্কিত। এ ছাড়াও আরো বহু আয়াত এবং হাদীস এ সম্বন্ধে রয়েছে। ইহজগতে অবস্থান করে আলমে বরযখের বিষয়ে সম্যক ধারনা হাসিল করা অসম্ভব। সে জগতের অনেক কথা মানুষের কল্পনার অতীত। কাজেই মৃত ব্যক্তিকে কেমন করে বসানো হয়, কেমন করে ফিরিস্তা তাকে প্রহার করে এবং কেমন ফরে কবর বড় বা ছোট করা হয় এ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, মানুষ ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের অবস্থায় অনেক কিছু দেখে এবং চীৎকার করে। কিন্তু তার স্বার্শবর্তী ব্যক্তি কিছুই শুনতে পায় না। তাই বলে তো এ কথা বলা আদৌ সমীচীন নয় যে, তুমি কিছুই দেখনি। তোমার স্বপ্ন মিথ্যা। তুমি অবাস্তব কথা বলছো। বরং এ ক্ষেত্রে এ কথা বলাই যথার্থ যে, আমি না দেখলে এবং না শুনলেও তোমার স্বপ্ন সত্য। কবরের আযাবের বিষয়টিও ঠিক অনুরূপই। এতে সন্দেহ এবং সংশয়ের কোন রূপ অবকাশ নেই! 

পৃষ্ঠা:৩২

হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর মৃত্যু কখন কিভাবে হবে

হযরত আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, মহানবী (সাঃ) “শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে ফলে আসমান ও জমিনে যারা আছে সবাই বেহুশ হয়ে যাবে তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন”। (সূরা যুমার আয়াত নং ৬৮) ..তিলাওয়াত করলে সাহাবায়ে কিরাম (রাযিঃ) আরয করেন যে, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! এরা কারা, যাদেরকে মহান আল্লাহ্ ‘ড়যয “তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন” বলে বেহুশ হবে না বলে উল্লেখ করেছেন? জবাবে মহানবী (সাঃ) বললেন “এর দ্বারা জিবরাইল, মীকাঈল, মালাকুল মাউত, ইসরাফিল (আঃ) এবং আরশবহনকারী ফেরেশতা উদ্দেশ্য। যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমস্ত সৃষ্টজীবের রুহ কবয করে শেষ করবেন “তখন মালাকুত মাউত (হযরত ইযরাইল) কে জিজ্ঞেস করবেন, এখন আর কে কে জীবিত আছে? তিনি বলবেন “ইয়া আল্লাহ! আপনার মর্যাদা কতই না বেশী, এখন জিবরাস্টল, মীকাঈল, ইসরাফীল এবং মালাকুল মাউত (আমি যিন্দা আছি)। তখন মহান আল্লাহ বলবেন “ইসরাফীলের জান কবয করে নাও”। তখন মালাকুল মাউত হযরত ইসরাফীল (আঃ) এর জান কবয করে নিবেন। এরপর মহান আল্লাহ্ পুনরায় জিজ্ঞেস করবেন, এখন কে অবশিষ্ট আছে? তিনি বলবেন, পরওয়ারদেগার। আপনার মর্যাদা কতই না বুলন্দ !! এখন জিবরাঈল, মীকাঈল ও মালাকুল মাউত অবশিষ্ট আছে। তখন আল্লাহ্ পাক বলবেন মীকাঈলের রুহও কবয করে নাও। তখন তিনি মীকাঈলের (আঃ) রুহ কবয করে নিবেন; ফলে তিনি সুউচ্চ টিলার ন্যায় আছড়ে পড়বেন। এরপর মহান আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করবেন আর কে যিন্দ্য আছে? তখন তিনি বললেন জিবরাঈল (আঃ) ও আমি (মালাকুল মাউত)। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিবেন হে মাওতের ফেরেশতা। তুমিও মরে যাও! সুতরাং তিনিও মারা যাবেন। এরপর মহান আল্লাহ হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে লক্ষ্য করে বলবেন “হে জিবরাঈল! তুমি ব্যতীত আর কে জীবত আছে”? জবাবে তিনি বলবেন “ইয়া রাব্বুল আলামীন! আপনি চিরঞ্জীব আর জিবরাঈল মরণশীল”। আল্লাহ বলবেন “তার মৃত্যুও অনির্বায” ফলে হযরত জিবরাঈল (আঃ) সেজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং এ অবস্থাতেই তার মৃত্যু হবে।

পৃষ্ঠা:৩৩

(এতটুকু বলার পর) মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, “হযরত মীকাঈলের (আঃ) উপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর ফয়ীলত এতই অধিক যেমন বিশাল টিলার তুলনায় সমতল ভূমি”। (আল ফারইয়াবী) ৩৯

পুনরুত্থান

هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُوْلاً فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ، وَإِلَيْهِ النشور . “তিনিই তোমাদের জন্য যমীনকে অনুগত করে দিয়েছেন, তাই তোমরা তার দিক্ দিগন্তে বিচরণ করতেছ এবং তাঁরই রুযী-রোযগার হতে আহার্য গ্রহণ করতেছ এবং তাঁরই নিকট পুণরুত্থিত হবে।” আল্লাহ তা’আলা সূরা ফাতের-এর নবম আয়াতে পুনঃরুত্থান সম্পর্কে এরশাদ করেনঃ وَاللهُ الَّذِي ارسل الريحُ فَتُسِيرُ سَحَابًا فَسُفْتَهُ إِلَى بَلَدٍ ميت فأحيينا به الأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا طَ كَذلِكَ النشور “এবং আল্লাহই যিনি বায়ু প্রবাহিত করেন, অতঃপর তাকে মেঘমালারূপে উড্ডীন করেন, তারপর আমি তাকে মৃত জনপদের দিকে সঞ্চালিত করি: আর তা দিয়ে আমি যমীনকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করি; এ রূপেই পুনঃরুত্থান হবে।” ময়দানে হাসর সংক্রান্ত বিবিধ বিষয় আরশের ছায়া عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَةٌ بظلهم الله في ظله يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلَهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌ نَشَأَ فِي بالمسجدِ إِذَا خَرَجَ مِنْهُ حَتَّى يَعُودُ اللَّهِ وَ عبادة الله و حلان تقاباً فِي اللَّهِ اجْتَمَعًا عَلَيْهِ وَ تَفْرُنَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهِ خَالِبًا

পৃষ্ঠা:৩৪

فَفَاضَتْ عَبْنَاهُ وَ رَجُلٌ دَعَنْهُ امْرَ أَذَاتُ حَسَبٍ وَ جَمَالٍ فَقَالَ إِلَى أَخَافُ الله وَ رَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ بَينَهُ ( متفق عليه . مشكورة) হযরত আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহপাক সাত প্রকার মানুষকে (হাশরের দিন) স্বীয় আরশের ছায়াতে স্থান দেবেন, যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। সে সাত শ্রেণীর মানুষ হল- (১) আদেল ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। (২) ঐ যুবক যে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। (৩) যারা অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে মসজিদ হতে বের হওয়ার পর পুনরায় মসজিদে ফিরে না-আসা পর্যন্ত (৪) যে দু ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালবাসে এবং আল্লাহর জন্যই পরস্পর বিছিন্ন হয়। (৫) যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে নীরবে অশ্রু ঝরায়। (৬) যে ব্যক্তিকে কোন রূপসী নারী অপকর্মের জন্য আহবান করে এবং সে এই বলে তার আহবান প্রত্যাখ্যান করে যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। (৭) যে ব্যক্তি এমনভাবে কোন দান-সদকা করে যে, তার ডান হাত কি দান করল তা তার বাম হাতও টের পায় না।” (বোখারী, মুসলিম) হাশরে তিন শ্রেণীর মানুষ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةً قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحْشَرُو النَّاسُ يَوْمِ القِيَامَةِ أَصْنَافُ صِفًا مُشَاةٌ وَصْفًا رُكَّبَانًا وَصِفًا عَلَى وجوههم الحديث رواه الترمذي – مشكلة قَالَ الشراح المشاة هم المؤمِنُونَ الَّذِينَ خَلَطُوا عَمَلاً صَالِحًا بسنتها و قالوا في الرُّكْبَانَ هُمُ السَّابِقُونَ فِي الإِيمان

পৃষ্ঠা:৩৫

“হযরত আবু হুরাইরা রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাশরের ময়দানে মানুষ তিন শ্রেণীতে। বিভক্ত হয়ে উঠবে। এক শ্রেণী আসবে পায়ে হেঁটে। এক শ্রেণীর মানুষ আসবে সওয়ার হয়ে। আরেক শ্রেণীর মানুষ (পা ওপরে এবং মাথা নীচের, দিকে করে) মুখের উপর ভর দিয়ে চলতে চলতে আসবে।” (তিরমিজী শরীফ) হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, পায়ে হেঁটে আগমনকারী দলটি হবে ঐ শ্রেণীর ঈমানদার-যারা নেকীও করেছে এবং বদীও করেছে। আর যারা ঈমানে পূর্ণতা অর্জন করেছে তারা সওয়ারীতে আরোহণ করে আগমন করবে। আর কাফের-মোশরেকরা নিজেদের চেহারার ওপর ভর দিয়ে চলতে চলতে আসবে।

হাশর দিবসের পোশাক

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طُويلٍ وَ أَوَّلَ مَن يُكْسَى يَوْمَ القِيَامَةِ إِبْرَاهِيم . ( متفق عليه) في المرقَاةِ إِنَّ الأَوْلِيَا ، يَقُومُونَ مِنْ قُبُورِهِمْ حُفَاةٌ عُرَاةٌ لَكِنْ يلْبِسُونَ اكتفائهم ثم يركبون النون و يَحْضُرُونَ المَحْشَرُ فَيَكُونَ هَذَا الألباس محمولاً على الخلع الإلهيَّةِ وَالْجَنَّةِ عَلَى الطَّائِفَةٍ إِلا صطفانية . “হযরত ইবনে আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে পোশাক পরানো হবে। (এই বক্তব্য দ্বারা এটাই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, অন্য সকলকেও পোশাক পরানো হবে বটে, তবে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে সকলের আগে পরানো হবে)।” (বুখারী, মুসলিম)

পাপীদের ক্ষমা

হাদীসে পাকে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ পাক মু’মিনদের হিসাব গ্রহণের সময় তাদেরকে রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেবেন। বান্দা একেto একে নিজের যাবতীয় গুনাহের কথা স্বীকার করবার পর আল্লাহ পাক বান্দার সমদয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিম্নে পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখ করা হল-

পৃষ্ঠা:৩৬

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الله يدني المُؤْمِنُ فَيُضَعُ عَلَيْهِ كُنفُه به و بستره فَيَقُولُ في اتعرف ذَنْب كَذَا ا تَعْرِفُ ذَنْبُ كَذَا فَيَقُولُ نَعَمَ إِلى رَبِّ حَتَّى قَرَرَهُ بِذُنُوبِهِ وَ رَأَى فِي نَفْسِهِ أَنَّهُ قَدْ هَلَكَ قَالَ سَتَرَتها عليك في الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ اليَوم فيعطى كتاب حسناته . (متفق عليه – مشكورة) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ পাক হিসাব গ্রহণের সময় মু’মিন বান্দাদেরকে নিকটে এনে স্বীয় রহমতের আঙুল দ্বারা আচ্ছাদিত করে বলবেন, অমুক অমুক গুনাহের কথা কি তোমার স্মরণ আছে? বান্দা আরজ করবে, পরওয়ারদিগার! সে গুনাহের কথা আমার নির্ঘাত স্মরণ আছে। আল্লাহ পাক এভাবে একে একে যাবতীয় গুনাহের কথা বান্দার মুখে স্বীকার করিয়ে নেবেন। বান্দা মনে মনে ভাববে, হায়। আর বুঝি আমার রক্ষা নেই, আমি বুঝি শেষ হয়ে গেলাম। এমণ সময় পরওয়ারদিগার ঘোষণা করবেন, হে আমার বান্দা। দুনিয়াতেও আমি তোমার যাবতীয় গুনাহ-খাতা গোপন করে রেখেছিলাম, আজও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। অতঃপর বান্দাকে তার নেকী ও পূণ্যের আমলনামা প্রদান করা হবে।” (বুখারী, মুসলিম)

হাশর মোমেনের জন্য আছান হইবে

عن ابي سَعِيدٍ الْخُدْرِي رَضِي اللَّهَ أَنَّهُ أَتَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قال أخبرني من يقوى على القيام يوم القيامة فقال يُخَفَّفُ عَلَى المُؤْ مِن حَتَّى يَكُونَ عَلَيْهِ كَالصَّلو و المكتوبة . وَفِي رِوَايَة سُئِلِ رَسُولُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ يَوْمٍ كَانَ مَقْدَارِهِ خَمْسِينَ أَلْفَ سنة فقال نحوه – ( رواهما البيهقي)

পৃষ্ঠা:৩৭

“হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা তিনি রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে অরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেয়ামতের দিন তো অনেক দীর্ঘ হবে। সে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা কেমন করে সম্ভব হবে? জবাবে তিনি এরশাদ করলেন, মু’মিনদের জন্য তা ফরজ নামাযে দাঁড়িয়ে থাকার মতই সহজ হবে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সুদীর্ঘ কেয়ামত দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সে ক্ষেত্রেও তিনি অনুরূপ উত্তর দিয়েছিলেন।” (মেশকাত)

হাউজে কাউছার

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةً رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ حُرُ ضَى أَبْعَدُ مِن إِبْلَهُ إِلَى عَدْنٍ لَهُوَ اشَدُّ بَيَاضًا مِنْ الثلج و احلى من العسل باللبن ولا نسته أكثر مِنْ عَدُدِ النجوم وانتي لاصة النَّاسَ عَنْهُ كَمَا يَصُدُّ الرَّجُلُ إِبل النَّاسِ عَنْ حوضه قالرايا رسول الله صلى الله عليه وسلم أنكرِ كُنَّا يُؤْمِنَذٍ قَالَ نَعَمْ لَكُم سين . ليْسَتْ لأَحَدٍ مِنَ الأمم تَرِدُونَ عَلَى غُرَاً مُحَجَلِينَ مِنْ أَكْرِ الوُضُوء. (رواه مشيمة) “হযরত আবু হুরাইরা রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার হাউজে কাউছার আইলা হতে আদান পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা অপেক্ষাও বিশাল। তার পানি বরফ অপেক্ষাও সাদা-পরিষ্কার এবং মধু অপেক্ষা সুমিষ্ট। তার পেয়ালার সংখ্যা আকাশের তারকা অপেক্ষা অধিক। যারা আমার (দলভুক্ত) নয়, আমি তাদেকে ঐ হাউজ হতে হটিয়ে দেব-যেমন মানুষ নিজের হাউজ হতে অন্য মানুষের উটকে হটিয়ে দেয়। এ কথা শুনি উপস্থিত ছাহাবীগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে দিন আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন কি? তিনি বললেন হাঁ (আমি তোমাদিগকে চিনতে পারব)। সে দিন তোমাদের মধ্যে এমনস একটি চিহ্ন

পৃষ্ঠা:৩৮

থাকবে যা অন্য কোন উন্মতের মধ্যে থাকবে না। অর্থাৎ তোমরা যখন আমার নিকটে আসবে, তখন তোমাদের চেহারা ও হাত-পা অজুর প্রভাবে চমকাতে থাকবে।” (রাওয়াহু মুশবাহাতুন)

পাপের বিনিময়ে পুণ্য 

عنْ أَبي ذَرِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي لا علم آخِرَ أَهْلُ الْجَنَّةِ دُخُولا وَآخِرَ اهْلِ النَّارِ خروجًا مِنْهَا رُجلٍ يُو تَى بِهِ يَوْمِ القِيامَةِ فَيُقَالُ اعْرِضُوا عَلَيْهِ صِغَارُ ذُنُوبِهِ وَأَرْفَعُوا عَنْهُ كَبَا رَهَا فَتُعْرَضُ عَلَيْهِ صِغَارَ ذَنوبِهِ فَيُقَالُ عَمِلْتُ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا فَيَقُولُ نَعَمْ وَلَا يَسْتَطِيعَانِ يَنْكِرُ وَهُوَ مُشْفِقُ مِنْ كِبَارٍ ذَنُوا بِهِ إِن تَعْرَضَ عَلَيْهِ فَيَقَالَ فَإِنَّ لَكَ مَكَانَ سَيِّئَةٌ حَسَنَةٌ فَيَقُولُ رَبِّ قَدْ عُمِيَتْ أَشْيَا وَلَا أَرَاهَا هُهُنَا وَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضحك حتى بَدَتْ نُوا جده . ( رواه مسلم)“হযরত আবু জর গিফারী রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি নির্ঘাত সে ব্যক্তিকে চিনি যে ব্যক্তি সকলের পরে বেহেশতে প্রবেশ করবে এবং সকলের পরে জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবে। কেয়ামতের দিন তাকে হাজির করে বলা হবে যে, তার ছোট গুনাহসমূহ সামনে পেশ কর এবং বড় গুনাহসমূহ তুলে রাখ (সেগুলো সামনে এনো না)। অতঃপর তার ছোট ছোট গুনাহগুলো সামনে তুলে ধরে বলা হবে, অমুক দিন তুমি এ এ অপরাধ করেছিলে কি? বান্দা তার অপরাধ স্বীকার করবে এবং অস্বীকার করার কোন উপায়ও থাকবে না। বান্দা এ সময় মনে মনে আশঙ্কা বোধ করতে থাকবে যে, এক্ষণি হয়ত আমার বড় বড় গুনাহগুলোও প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এ সময় তাকে বলা হবে “তোমার প্রতিটি গুনাহের বিনিময়ে একটি করে নেকী দেয়া হল। ” এ ঘোষণা শুনে বান্দা বলে উঠবে, আয় পরওয়ারদিগার! আমার তো আরো অনেক বড় বড় গুনাহ আছে যা এখানে দেখতেছি না (অর্থাৎ তার নেকী আমি পাইনি)।

পৃষ্ঠা:৩৯

বর্ণনাকারী বলেন, আমি ক্ষ্য করেছি, এ (বর্ণনা দেয়ার) সময় রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁতসমূহও দেখা যাচ্ছিল।” (মুসলিম, মেশকাত)

শাফাআত

عَنْ أَنَسِي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَن رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهِ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ شَفَا عَنى لأهل الكبا ثر مِنْ أمي . ( رواه الترمذي ) “হযরত আনাস রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার শাফাআত আমার উম্মতের বড় বড় পাপীদের জন্য।” (তিরমিজী, মেশকাত) عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصِفُ اهْلُ النَّارِ فَيَمرَ بِهِمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ فَيَقُولُ الرجل منهم يَا فُلَانُ أمَا تَعْرِ فَنِي أَنَا الَّذِي سَقَيْتُكَ شَرْبَةً قَالَ بَعْضُهُمْ أَنَا ابن وهبت لك . الَّذِي ماجة”হযরত আনাস রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোজখীদের হালাত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, কোন বেহেশতী ব্যক্তি দোজখীদের সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় দোজখীদের একজন বলেয়া উঠবে, হে অমুক ব্যক্তি! তুমি আমাকে চিনতে পার নিঃ (দুনিয়াতে একদিন) আমি তোমাকে এক ঢোক পানি পান করিয়েছিলাম। অন্য এক ব্যক্তি বলবে, আমি তোমাকে একদিন অজুর পানি দিয়েছিলাম। তখন ঐ বেহেশতী লোকটি তার জন্য সুপারিশ করে তাকে বেহেশতে নিয়ে যাবে।” (ইবনে মাজা, মেশকাত)

সুপারিশ বা শাফা’আত

পুনরুত্থান সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। রাসূলুলাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, তখন সূর্য মানুষের অতি নিকটে চলে আসবে। ঘামের সাগরে কোন কোন মানুষ হাবুডুবু খেতে থাকবে। দুঃশ্চিন্তা।

পৃষ্ঠা:৪০

পেরেশানী আর পেরেশানী। কোন আশ্রয় নেই, নেই কোন উপায়। এমনি এক সংকটময় মূহুর্তে নবীকুল শিরোমনি, খাতামুন নাবিয়্যীন, রাহমাতুল লিল্ ‘আলামীন, শাফী ‘উল মুযনিবীন, ইহজগত ও পরজগতের সরদার হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) “লিওয়াউল হাম্দ” নামক পতাকা স্বীয় হস্তে ধারন করে মাথায় শাফা’আতের তাজ পরিধান করতঃ গুনাহগার মানুষের শাফা’আতের জন্য এগিয়ে আসবেন। বস্তুতঃ “শাফা’আত” শব্দটি আরবী। এটা شفع ধাতু হতে উদ্‌গত হয়েছে। এর অর্থ, জোড়া, জড়িত হওয়া, অন্যের সাথে মিলিত হওয়া এবং কারো জন্য সুপারিশ করা। ইসলামের পরিভাষায় মানুষের কল্যান, মঙ্গল এবং ক্ষমার জন্য আল্লাহর দরবারে নবী-রাসূল এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের সুপারিশ করাকে “শাফা’আত” বলা হয়। উম্মতের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে দরবারে ইলাহীতে শাফা’আতের জন্য সর্ব প্রথম উদ্যোগ গ্রহন করবেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁর পূর্বে অন্য কোন নবী ও রাসূল এ কাজ আঞ্জাম দেওয়ার ব্যাপারে কখনো সাহস করবেন না। সর্বাগ্রে আল্লাহর দরবারে এ সুপারিশ করাকে “শাফাআতে কুরা” বলা হয়। আল্ কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, على أن يُبعثكَ رَبِّكَ مَقَاماً مَحْمُودًا”আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে অর্থাৎ প্রশংসিত স্থানে।” (১৭ সূরা বানী ইসরাঈল: ৭৯ নং আয়াত) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সাহাবীগণ বলেছেন যে, “মাকামে মাহমূদ” দ্বারা এখানে “শাফা’আতে কুরা” এর কথা বুঝানো হয়েছে। বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত আনাস (রাঃ) শাফা’আতের ঘটনা সমূহ বর্ণনা করার পর উপরোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করতঃ উপস্থিত লোকদেরকে সম্ভোধন করে বলেছেন, এ তো ঐ “মাকামে মাহমূদ” (প্রশংসিত স্থান) যেখানে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহ্ পাক নবী করীম (সাঃ) এর সাথে ওয়াদা করেছেন। (সীরাতুন্ নবী আল্লামা শিবলী নোমানী (রঃ) ৩য় খন্ড) হযরত ইবন উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক নবীর উম্মত নিজ নিজ নবীর অনুসরণ করবে। তার। বলবে, হে অমুক, (নবী) আপনি সুপারিশ করুন। হে অমুক, (নবী) আপনি সুপারিশ করুন। (তারা কেউ সুপারিশ করতে রাযী

পৃ্ষ্ঠা ৪১ থেকে ৫০

পৃষ্ঠা:৪১

হবেন না) শেষ পর্যন্ত সুপারিশের দায়িত্ব নবী করীম (সাঃ) এর উপর বর্তাবে। আর এ দিনেই আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে মাকামে মাহমুদে (প্রশংসিত স্থানে) প্রতিষ্ঠিত করবেন। উক্ত হাদীস হতে এ কথাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কেই সর্ব প্রথম শাফা’আত কারীর মর্যাদা দান করে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন। (বুখারী শরীফ: তাফসীর অধ্যায়) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবীকে একটি বিশেষ দু’আর অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, এর মাধ্যমে তিনি যে. দু’আ করবেন, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করবেন। সকল নবী তাঁদের দু’আ করে ফেলেছেন। আর আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের শাফা’আতের জন্য রেখে দিয়েছি। (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড) অপর এক হাদীসে রয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূল (সাঃ) এর ঘরে কিছু গোশত (হাদিয়া) আসল। পরে এর বাহুর অংশটি তাঁর সামনে (আহারের উদ্দেশ্যে) পেশ করা হল। বাহুর গোশ্ত তাঁর নিকট খুবই পসন্দনীয় ছিল। তারপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহন করলেন। তারপর বললেন, কিয়ামত দিবসে আমিই হবো সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা কি জান? কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে। একজনের দৃষ্টি সকলকে দেখতে পাবে। সূর্য নিকটবর্তী হবে। মানুষ অসহনীয়, সাধ্যাতীত দুঃখ-কষ্ট ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে, কী দূর্দশায় তোমরা আছ, দেখছনা? কী অবস্থায় তোমরা পৌছেছ, উপলদ্ধি করছনা? এমন কাউকে দেখছনা যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের নিকট তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন। তারপর একজন আরেক জনকে বলবে, চল, আদম (আঃ) এর নিকট যাই। অনন্তর তারা আদম (আঃ) এর নিকট আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মানব কুলের পিতা, আল্লাহ্ স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। এবং আপনার দেহে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা, করার জন্য ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা আপনাকে সিজদা করেছেন। আপনি দেখছেন না, আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না, আমরা কষ্টের কোন

পৃষ্ঠা:৪২

সীমায় পৌছেছি? আদম (আঃ) উত্তরে বলবেন, আজ পরওয়ারদিগার এত বেশী ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন, যা পূর্বে কখনো হননি এবং পরেও কখনো হবেন না আর। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, আমি সে নিষেধ লংঘন করে ফেলেছি, নাফসী, নাফসী, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো নিকট গিয়ে চেষ্টা কর, তোমরা নূহের নিকট যাও। তখন তারা নূহ (আঃ) এর নিকট আসবে, বলবে হে নূহ। আপনি পৃথিবীর প্রথম রাসূল। আল্লাহ্ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি। আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? নূহ (আঃ) বলবেন, আজ আমার পরওয়ারদিগার এত ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, পূর্বেও এমন কখনো হননি আর পরেও কখনো হবেন না। আমাকে তিনি একটি দু’আ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা আমি আমার জাতির বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি। নাফসী; নাফসী, আজ-আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ইব্রাহীম (আঃ) এর নিকট যাও। তখন তারা ইব্রাহীম (আঃ) এর নিকট আসবে। বলবে, হে ইব্রাহীম। আপনি আল্লাহর নবী, পৃথিবী বাসীদের মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ার দিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? ইবরাহীম (আঃ) তাদেরকে বলবেন: আল্লাহ্ আজ এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, পূর্বে কখনো এমন হননি আর পরেও কখনো এমন হবেন না। তিনি তাঁর কিছু বাহ্যিক অসত্য কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। (প্রকৃত পক্ষ্যে এ গুলো মিথ্যা কথা নয়।) বলবেন : নাফসী, নাফসী, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। মূসার নিকট যাও। তারা মূসা (আঃ) এর নিকট আসবে, বলবেঃ হে মুসা! আপনি আল্লাহর রাসূল। আপনাকে তিনি তাঁর রিসালাত ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? মূসা (আঃ) তাদের বলবেন, আজ আল্লাহ্ এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো হননি আর পরেও কখনো হবেন না। আমি তার হুকুমের পূর্বেই এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। নাফসী, নাফসী, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা

পৃষ্ঠা:৪৩

ঈসার নিকট যাও। তারা ঈসা (আঃ) এর নিকট আসবে, বলবে হে ঈসা। আপনি আল্লাহর রাসূল, দোলনায় অবস্থান কালেই আপনি মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেওয়া বাণী যা তিনি মারয়ামের গর্ভে ঢেলে দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা। সুতরাং আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না যে, আমরা কোন অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? ঈসা (আঃ) বলবেন, আজ আল্লাহ্ তা’আলা এতই ক্রোধান্বিত অবস্থায় আছেন যে, এরূপ না পূর্বে কখনো হয়েছেন আর না পরে কখনো হবেন। উল্লেখ্য, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন নাফসা, নাফসী, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট যাও। রাসূল (সাঃ) বলেন, তখন তারা আমার নিকট আসবে। বলবে, হে মুহাম্মদ। আপনি আল্লাহর রাসুল, শেষ নবী, আল্লাহ্ আপনার পূর্বাপর সকল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় আছি এবং আমাদের অবস্থা কি পর্যায়ে পৌছেছে? তখন আমি সুপারিশের জন্য যাব এবং আরশের নীচে এসে ‘পরওয়ার দিগারের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হব। আল্লাহ্ আমার অন্তরকে সুপ্রশস্ত করে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হাম্দ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন-যা ইতি পূর্বে আর কাউকে দেওয়া হয়নি। এরপর আল্লাহ বলবেন, হে মুহাম্মদ। মাথা উত্তোলন করুন। প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গ্রহন করা হবে। অনন্তর আমি মাথা তুলব। বলব, হে পরওয়ারদিগার! উন্মাতী, উম্মাতী (এদের মুক্তি দান করুন) আল্লাহ্ বলবেন, হে মুহাম্মদ। আপনার উম্মতের যাদের উপর কোন হিসাব নেই তাদেরকে জান্নাতের ডান দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরন দিয়েও অন্যান্য লোকদের সঙ্গে তারা প্রবেশ করতে পারবে। রাসূল (সাঃ) বলেন, শপথ সে সত্তার যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজরের দূরত্বের মত অথবা বর্ণনা কারী বলেন মক্কা ও বস্ত্রার দূরত্বের ন্যায় (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড) শাফায়াতের ব্যপারে লোকজন নিরুপায় হয়ে মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে সুপারিশের জন্য দরখাস্ত করলে তিনি বলবেন, হাঁ আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে এ কাজের উপযুক্ত বানিয়েছেন এবং তোমাদের জন্য সর্বপ্রথম সুপারিশ করার একমাত্র অধিকার আমারই। এ বলেই তিনি ইলাহী দরবারের প্রতি

পৃষ্ঠা:৪৪

মনোনিবেশ করবেন। সেদিন আল্লাহ্ তা’আলা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কে একটি বুরাক নিয়ে হাশরের ময়দানে যাওয়ার জন্য হুকুম করবেন। তিনি বুরাক নিয়ে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বুরাকে আরোহন করে উর্ধ্ব-লোকে গমন করবেন। লোকজন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। সেখান থেকে তারা আসমানে একটি নূরানী ঘর দেখতে পাবে এরই নাম হল “মাকামে মাহমুদ”। এখান থেকেই নবী (সাঃ) আরশের উপর আল্লাহর নূরানী তাজাল্লী দেখতে পাবেন। তখন তিনি সাতদিন সিজদায় পড়ে থাকবেন। উম্মতের কোন ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত তিনি মাশ উত্তোলন করবেন না। তখন ইরশাদ হবে, হে মুহাম্মদ। মাথা উত্তোলন করুন। যা প্রার্থনা করবেন কবুল করা হবে। যা সুপারিশ করবেন গ্রহন করা হবে। তারপর তিনি আল্লাহ্ তা’আলার এমন প্রশংসা এবং হামদ করবেন যা ইতি পূর্বে আর কেউ করেনি এবং ভবিষ্যতেও আর কেউ করবে না।-এর পর নবী করীম (সাঃ) বলবেন, হে আমার প্রভু! আপনি হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে আমার সাথে এ অঙ্গীকার করেছেন যে, কিয়ামতের দিন আমি যা প্রার্থনা করব আপনি আমাকে তা প্রদান করবেন। আজ সে ওয়াদা পুরা করুন। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, জিব্রাঈল আপনার নিকট যে সংবাদ পৌছিয়েছে তা সবই সত্য। আজ আপনাকে আমি অবশ্যই খুশী করব এবং আপনার সুপারিশ কবুল করব। সুতরাং পৃথিবীতে যান। আমিও আসছি। বান্দাদের আমলের হিসাব নিয়ে আমি তাদেরকে তাদের কর্মফল যথাযথভাবে প্রদান করব। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) পুনঃরায় বুরাকে আরোহন করতঃ পৃথিবীতে আসবেন। “মাকামে মাহমুদে” গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর নিকট যে সুপারিশ করবেন একেই “শাফা’আতে কুরা” বলা হয়। এর অধিকার একমাত্র তাঁরই। এ শাফা’আতের পরই মানুষের আমলের হিসাব নিকাশ আরম্ভ হবে। হিসাব নিকাশের পর রাসূল (সাঃ) জান্নাতের দরজা খুলে দিবেন এবং তিনি কিছু উম্মতসহ জান্নাতে প্রবেশ করবেন। জান্নাতে যেয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন দেখবেন যে, এ যাবৎ যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে উম্মতে মুহাম্মদীর সংখ্যা মাত্র এক চতুর্থাংশ। তখন তিনি পেরেশান হয়ে পুনঃরায় আল্লাহর দরবারে সাত দিন পর্যন্ত সিজদায় পড়ে থাকবেন এবং উত্তমরূপে

পৃষ্ঠা:৪৫

আল্লাহর প্রশংসা ও হাম্দ করবেন। তখন তাঁকে বলা হবে, চলুন, যার অন্তরে গম বা যবের দানার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবেন তাকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনুন। রাসূলুল্ল্যাহ (সাঃ) এর দেখাদেখি অন্যান্য নবীগনও নিজ নিজ উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ফিরিস্তাদেরকে সাথে নিয়ে জাহান্নামের এক প্রান্তে দাড়িয়ে লোকদেরকে বলবেন, যাদের আত্মীয়-স্বজন জাহান্নামে রয়েছে তারা তাদের বিশেষ নিদর্শনের কথা ফিরিশতাদের খুলে বল, যেন ফিরিশতাগন এ নিদর্শন মুতাবিক তাদেরকে জাহান্নাম হতে উদ্ধার করে আনতে পারে। আত্মীয়-স্বজনরা তাদের বিশেষ পরিচয়ের বিবরণ দেওয়ার পর ফিরিশতাগণ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। এ সময় শহীদগন সত্তর জন, হাফিযগন দশজন এবং আলিমগন তাদের মর্যাদা অনুসারে লোকদেরকে সুপারিশ করে জাহান্নাম হতে উদ্ধার করে আনবেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদেরকে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এবার জান্নাতী লোকদের মধ্যে উম্মতে মুহাম্মদীর সংখ্যা হবে এক তৃতীয়াংশ। এরপর দয়াল নবী পুনঃরায় জাহান্নামের প্রান্তে দাড়িয়ে স্বীয় উম্মতের অনুসন্ধান করবেন। আওয়াজ আসবে, হুজুর! এখনো আমরা বহু জাহান্নামে রয়ে গেছি। আমাদেরকে উদ্ধার করুন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) পুনঃরায় সিজদায় লুটে পড়বেন। তখন তাঁকে বলা হবে, মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শুনা হবে, প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে এবং সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। তখন তিনি বলবেন, হে পরওয়ারদিগার! উম্মতী, উম্মতী। আল্লাহ বলবেন, যান, যে ব্যক্তির অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট থাকবে তাকেও জাহান্নাম হতে মুক্ত করুন। অতঃপর তিনি শহীদ, গুলী, দরবেশ এবং উলামায়ে কিরামকে নিয়ে দোযখের প্রান্তে দাড়িয়ে বলবেন, তোমরা নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনকে জাহান্নাম হতে মুক্ত করে আন। অতএব তারা গিয়ে বহু জাহান্নামীক জাহান্নাম হতে মুক্ত করে আনবে। এবার উম্মতে মুহাম্মদীর সংখ্যা দাঁড়াবে মোট জান্নাতীদের তুলনায় অর্ধাংশ।

পৃষ্ঠা:৪৬

তারপর মহানবী (সাঃ) পুরঃরায় আল্লাহর দরবারে যাবেন এবং পূর্বানুরূপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাঁর প্রশংসা করবেন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন। তখন তাঁকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শুনা হবে। প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে এবং সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। তখন তিনি বলবেন, হে পরওয়ারদিগার! উষ্মতী, উষ্মতী। আল্লাহ বলবেন, যান, যে ব্যক্তির অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও আরো কম পরিমাণ ঈমান পাবেন তাকেও জাহান্নাম থেকে মৃক্ত করুন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাবেন এবং বহু জাহান্নামীকে জাহান্নাম হতে মৃক্ত করে আনবেন। এবার উম্মতে মুহাম্মদীর সংখ্যা অন্যান্য উম্মতের তুলনায় দ্বীগুন হয়ে যাবে। এরপর জাহান্নামে কেবল ঐ সব একাত্ববাদে বিশ্বাসী লোকেরাই বাকী থেকে যাবে-যাদের কোন নবীর সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। এদের সম্পর্কেও নবী করীম (সাঃ) সুপারিশ করবেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, এদের সম্পর্কে সুপারিশ করা আপনার কাজ নয়। বরং তাদের ব্যাপারে আমি নিজেই একটা কিছু করছি। হাদীসে আছে, তারপর আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, ফিরিশতারা সুপারিশ করেছে, নবীগনও সুপারিশ করেছে এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবল মাত্র আরহামুর রাহিমীন-পরম দয়াময়ই বাকী রয়েছেন। এরপর তিনি জাহান্নাম থেকে এক মুঠো তুলে আনবেন। ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে যারা কখনো কোন সৎকর্ম করেনি এবং আগুনে জ্বলে অঙ্গার হয়ে গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতের প্রবেশ মুখের “নাহরুল হায়াতে” ফেলে দেওয়া হবে। তারা এতে এমন ভাবে সতেজ হয়ে উঠবে যেমনভাবে শষ্যঅংকুর স্রোতবহিত পানিতে সতেজ হয়ে উঠে। তারপর তারা নহর থেকে মুক্তার ন্যায় ঝকঝকে অবস্থায় উঠে আসবে এবং তাদের গ্রীবাদেশে মোহরাংকিত থাকবে যা দেখে জান্নাতীগন তাদের চিন্তে পারবেন। এরা হল, “উতাকাউল্লাহ” আল্লাহর পক্ষ হতে মুক্তি প্রাপ্ত। আল্লাহ তা’আলা সৎ ‘আমল ব্যতীতই তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। আর যা কিছু দেখেছো সব কিছু তোমাদেরই। তারা বলবে, হে রব, আপনি আমাদেরকে এত দিয়েছেন যা সৃষ্টি জগতের কাউকে দেওয়া হয়নি। আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, তোমাদের জন্য আমার নিকট এর চেয়েও উত্তম বস্তু

পৃষ্ঠা:৪৭

আছে। তারা বলবে, কি সে উত্তম বস্তু। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, সে হল আমার সন্তুষ্টি। এরপর আর কখনো তোমাদের উপর আমি অসন্তুষ্ট হবো না। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ কথা প্রতিভাত হচ্ছে যে, শাফা’আত দুই প্রকার (১) শাফা’আতে কুরা (২) শাফা’আতে সুগরা। শাফা’আতে কুবরার অধিকার একমাত্র নবী করীম (সাঃ) এর-ই থাকবে। আর শাফা’আতে সুগরার হক নবী, রাসূল, শহীদ, ওলী, হাফিয, আলিম এবং মুমিনদেরও থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে নবীজীর শাফা’আত নসীব করুন। (মুসলিম শরীফ শাফা’আত অনুচ্ছেদঃ ১ম খন্ড)

শাস্তি ভোগের পর

عن ابنى سعيد رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَا أَهْلَ النَّارِ الَّذِينَ هُمْ أَهْلُهَا فَإِنَّهُمْ لَا يُرْوَلَا يُحْبُونَ وَ لكِنْ نَاسٌ مِنْكُمْ أَصَابَتْهُمُ النَّارُ بِذُنُوبِهِمْ ، فَأَمَا تَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى إِمَانَةً جَنَّى إِذَا كَانُوا فَحَمَّاً أَذِنَ بالشَّفَاعَةِ . (رواه مسلم) .. “হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন দোজখবাসীদের মধ্যে যারা প্রকৃত দোজখী (অর্থাৎ- কাফের ও মুশরিক) তারা না. একেবারে মরে যাবে, না ভালভাবে বেচে থাকবে। কিন্তু তোমরা যারা মু’মিন, তাদের একটি অংশ গুনাহের কারণে দোজখে নিক্ষিপ্ত হবে। পরে আল্লাহ পাক মু’মিনদেরকে এক বিশেষ ধরনের মৃত্যু দান করবেন। দোজখের আগুনে জ্বলে-পুড়ে যখন একেবারে কয়লায় পরিণত হবে, তখন আল্লাহপাক সুপারীশকারীগণকে তার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি প্রদান করবেন।” অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, শাস্তি ভোগের পর এ অপরাধীরা যথার্থই মৃত্যুবরণ করবে। কেউ বলেছেন, তাদের জীবণ-প্রদীপ একেবারেই নিভে যাবে না, বরং প্রাণের স্পন্ধন তখনো কিছুটা অবশিষ্ট থাকবে এবং মৃতের ন্যায় পড়ে থাকবে। অর্থাৎ এই অবস্থাকেই মৃত্যুর সাথে তুলনা করে মুরীদার বলে। অভিহিত করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ) 

পৃষ্ঠা:৪৮

বেহেশত-দোজখের মাঝামাঝি

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ يَخْلِصُ الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ فَيَحْبَسُونَ عَلَى قَنْطَرَةِ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَ النَّارِ فَيَقْتَضُ بَعْضَهُم مِن بَعْضٍ مَظَالِم كَانَتْ بَيْنَهُمْ فِي بَيْنَهُمْ فِي الدُّنْيا حتى إِذَا هذبوا و نقوا أذنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ . (رواه البخاري) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমাননরা দোজখ হতে নাজাত পাওয়ার পর বেহেশত ও দোজখের মাঝামাঝি একটি পুলের ওপর আটককৃত হবে। দুনিয়ার জীবনে একে অন্যের যে হক নষ্ট করেছিল, সেখানে তার ক্ষতিপূরণ বিনিময় হবে। পরস্পরের ক্ষতিপূরণ সম্পন্ন ইওয়ার পর তাদেরকে বেহেশতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। (বুখারী, মেশকাত)

অবশেষে আল্লাহর ক্ষমা

عن أبي سعيد رضي الله عنه في حديث طويل قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بعد أن ذكر المرور على الصراط) حتى إذا خلص المؤمنون من النار فو الذي نفسي بيده ما من أحد منكم بأشد مناشدة في الحق قد تبين لكم من المؤمنين لله يوم القيامة لإخوانهم الذين في النار يقولون ربنا كانوا يصومون معنا ويصلون ويحجون فيقال لهم أخرجوا من عرفتم فتحرم صورهم على النار فيخرجون خلقا وخلقا كثيرا ثم يقولون ربنا ما بقى فيها أحد ممن أمرتنا به فيقول ارجعوا فمن وجدتم في قلبه مثقال دينار من خير فأخرجوه فيخرجون خلقا كثيرا ثم يقول ارجعوا فمن في قلبه مثقال

পৃষ্ঠা:৪৯

نصف دينار من خير فأخرجوه فيخرجون خلقا كثيرا ثم يقول ارجعوا فمن وجدتم في قلبه مثقال ذرة من خير فأخرجوه فيخرجون خلقا كثيرا ثم يقولون ربنا لم نذر فيها خيرا فيقول الله شفعت الملائكة وشفع النبيون وشفع المؤمنون ولم يبق إلا أرحم الراحمين فيقبض قبضة من النار فيخرج منها قوما لم يعملوا خيرا قط قد عادوا حمما فيلقيها في نهر في أفواه الجنة يقال له نهر الحياة فيخرجون كما تخرج الحبة في حميل السيل فيخرجون كاللؤلؤ في رقابهم الخواتم فيقول أهل الجنة هو ولا ، عتقاء الرحمن أدخلهم الجنة بغير عمل عملوه ولا خير قدموه فيقال لهم لكم ما رأيتم ومثله معه . ( متفقعليه) “হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুলসিরাত অতিক্রমের বিবরণ দানের পর বলেন, মুসলমানরা যখন জাহান্নাম হতে মুক্ত হয়ে যাবে ঐ মহান জালে।। কসম, যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, তখন তারা মুসলমান ভ্রাতাদের জন্য এমনভাবে আবেদন-নিবেদন শুরু করবে যে, দুনিয়াতে কেউ নিজের পাওনা উসুলের জন্যও এতটা করে না। তারা আরজ করবে, আয় পরওয়াদিগার। এরা তো আমাদের সঙ্গে রোযা-নামায ও হজ্ব আদায় করত। আল্লাহ পাক বলবেন, যারা তোমাদের পরিচিত, তাদেরকে (দোজখ হতে) বের করে নিয়ে যাও। তাদের চেহারাতে আগুনের কোন চিহ্ন থাকবে না। এই পর্যায়ে তারা বিপুল সংখ্যক মুসলমানকে দোজখ হতে উদ্ধার করে নিয়ে পুনরায় আরজ করবে, আয় পরওয়ারদিগার। যাদের সম্পর্কে আপনার হুকুম মিলেছে, তাদের একজনও আর দোজখে নেই। অর্থাৎ পরিচিত সকলকেই আমরা তথা হতে বের করে এনেছি। তবে এখনো অন্যান্য বহু মুসলমান দোজখে রয়ে গেছে।

পৃষ্ঠা:৫০

আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা আবার যাও এবং যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণও ঈমান দেখতে পাও, তাদেরকেও বের করে আন। তখন তারা আরো বহু সংখ্যক মুসলমানকে দোজখ হতে বের করে আনবে। আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা আবার যাও এবং যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণও ঈমান দেখতে। পাও তাদেরকেও উদ্ধার করে আন। এবারও তারা বহু সংখ্যক দোজখীকে বের করে আনবে। আল্লাহ পাক আবারও দোজখীদেরকে উদ্ধারের হুকুম দিয়ে বলবেন, যাদের অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমানও দেখবে, তাদেরকেও উদ্ধার করে আন। এ পর্যায়ে আরো বহু সংখ্যক দোজখীকে বের করে আনা হবে। এবার তারা আরজ করবে, পরওয়ারদিগার! ঈমানদার বলতে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। আল্লাহ পাক এরশাদ করবেন, ফেরেশতারা সুপারিশ করেছে, নবীগণ সুপারিশ করেছেন, মু’মিনদের সুপারিশও সমাপ্ত হয়েছে, এখন কেবল আরহামুররাহেমীন ব্যতীতদ আর কেউ অবশিষ্ট নেই। অতঃপর তিনি আপন অতের মুঠি ভুরে এমন সব দোজগীদেরকে বের করে আনবেন, জীব্যন যারা কোন নেক আমল করে নি এবং দোজখের আগুনে গুলে-পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল। দোজখ হতে উদ্ধারের পর তাদেরকে বেহেশতের সামনে অবস্থিত “নাহরুল হায়াত” নামক নহরে নিক্ষেপ করা হবে। গলে বর্ষা-রাত উপকূলীয় উর্বর পলি মাটিতে কোন বীজ বপন করলে যেমন তা পৃষ্ট বদনে অংকুরিত হয়, অনুরূপভাবে তারাও নাইরুল হায়াতে অবগাহন করে অপরূপ রূপলাবণ্যে সৌন্দর্য মণ্ডিত হয়ে রের হবে। তাদের গ্রীবাদেশের বিশেষ চিহ্ন দেখে অপরাপর বেহেশতীগণ বলবে, এরা আল্লাহ পাকের অনুগ্রহপ্রাপ্ত। এরা (পরকালের জন্য) কোন নেক আমল করে মি. কোন ভালাইও করেন নি। আল্লাহ পাক বিনা আমলেই তাদেরকে বেহেশত দান করেছেন। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা কিছু দেখতে পাচ্ছ (বেহেশতের নাজ-নেয়মত) তা তো তোমরা পাবে বটেই, বরং তার দ্বিগুণ পাবে।” (মুত্তাফিকুন আলাইহি) শহীদ আবার দুনিয়ায় ফিরে আসতে চাইবে عن أنس رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من أحد يدخل الجنة يحب أن يرجع الى الدنيا وأن له

পৃ্ষ্ঠা ৫১ থেকে ৬০

পৃষ্ঠা:৫১

ما على الأرض من شيء غير الشهيد، فإنه يتمنى أن يرجع فيقتل عشر مرات لما يرى من الكرامة . (رواه مسلم) আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করে পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না, যদি দুনিয়ার সকল সম্পদও তার লাভ হয়ে যায়। কিন্তু শহীদ এর ব্যতিক্রম। সে নিজের মর্যাদা দেখে দুনিয়ায় ফিরে এসে দশবার নিহত হওয়ার আকঙ্খা করবে। (মুসলিম)

আত্মহত্যাও একটি জুলুম ও মহাপাপ

عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من تردى من جبل فقتل نفسه فهو في نار جهنم يتردى فيها خالدا مخلدا فيها أبدا ومن تحسى سما فقتل نفسه فسمه في يده يتحساه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا ومن قتل نفسه بحديدة فحديدته في يده يجابها بطنه في نار جهنم خالدا مخلدا فيها أبدا – (رواه البخاري) আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল, সে জাহান্নামের আগুনে এভাবে চিরকাল গড়িয়ে পড়তে থাকবে, যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করল, তার এ বিষ তার হাতে থাকবে আর জাহান্নামের আগুনে সে এটা চিরকাল চাটতে থাকবে, আর যে ব্যক্তি কোন অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করল, তার এ অস্ত্রটি তার হাতে থাকবে এবং সে জাহান্নামের আগুনে চিরকাল এটা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। (বুখারী)

পৃষ্ঠা:৫২

ওয়ারিসকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা জঘন্য গুনাহ

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلم: من قطع ميراث وارثه قطع الله ميراثه من الجنة يوم القيامة – (رواه ابن ماجه)আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখবেন। (ইবনে মাজাহ)মজলুম ব্যক্তি জালিমের পুণ্যসমূহ ছিনিয়ে নিয়ে যাবে عن أبي هريرة رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ فليتحلله من عَلَيْهِ وَسَلَّم .منه اليوم قبل أن لا يكون دينار ولا درهم ان كان له عمل صالح اخذمنه بقدر مظلمته وان لم تكن له حسنات اخذ من سيأت صاحبهفحمل عليه – (رواه البخاري)আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার উপর তার মুসলমান ভাইয়ের ইয্যত অথবা অন্য কোন কিছুর হক ও দাবী রয়েছে, সে যেন আজই এর দায় থেকে মুক্ত হয়ে যায়, ঐ দিনটি আসার আগে, যে দিন কোন দীনার ও দিরহাম থাকবে না। তার যদি কোন নেক আমল থাকে তাহলে জুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তার নেক আমল নিয়ে নেয়া হবে। আর যদি তার পুণ্য না থাকে তাহলে তার দাবীদারের পাপরাশি থেকে কিছু পাপ এনে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী)

পৃষ্ঠা:৫৩

অন্যায়ভাবে ভূমি দখলের পরিণাম কী হবে?

عَنْ سَعِيدُ بْنُ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهِ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ ظَلَمَ مَنَ الْأَرْضِ شَيْئًا طَوَّقَهُ مِنْ سِبْعِارضين . (رواه البخاري) সাঈদ ইবনে যায়দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য ভূমিও আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতরে দিন সাত তবক মাটি পর্যন্ত এই ভূমি তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী)

জুলুম আখিরাতে অন্ধকার বয়ে আনবে

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ الظلم ظلمات يَوْمَ الْقِيَامَةِ . (رواه البخاري) عَلَيْهِ ظلمات يَوْمَ الْقِيَامَةِ . (رواه البخاري) আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জুলুম কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকার সৃষ্টি করবে। (বুখারী) কিয়ামতের দিন মুমিন-মুত্তাকীদের সামনে ও ডান দিক দিয়ে একটি নূর ও জ্যোতি ছুটাছুটি করবে। কিন্তু জালিমদের সামনে কোন নূর থাকবে না; বরং তাদের জুলুম কালো আঁধার হয়ে তাদের সামনে ধরা দেবে। হাদীসটিতে এ কথাটিই বলা হয়েছে।

বিপুল পুণ্য নিয়ে এসেও যে নিঃস্ব হয়ে যাবে

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : أتدرون ما المفلس ؟ قالوا المفلس فينا من لا درهم له ولا متاع قال إن المفلس من أمتي من يأتي يوم ن القيامة بصلاة وصيام وزكاة ويأتي قد شتم هذا وقذف هذا

পৃষ্ঠা:৫৪

وأكل مال هذا وسفك دم هذا وضرب هذا فيعطى هذا من حسناته وهذا من حسناته فإن فنيت حسناته قبل أن يقضى ما عليه أخذ منخطاياهم فطرحت عليه ثم طرح في النار. (رواه مسلم)আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা জান, সবচেয়ে নিঃস্ব কে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, আমাদের মধ্যে তো নিঃস্ব ঐ ব্যক্তিই, যার কোন দিরহাম এবং সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিস্বঃ হবে ঐ ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাত নিয়ে আসবে; কিন্তু সে আসবে এই অবস্থায় যে, একে গালি দিয়েছিল, এর উপর অপবাদ দিয়েছিল, এর মাল আত্মসাৎ করেছিল, এর রক্ত ঝরিয়েছিল এবং একে মারপিট করেছিল। অতএব, এই মজলুমকে তার পুণ্য থেকে দিয়ে দেয়া হবে, আবার এই মজলুমকে তার পুণ্য থেকে দিয়ে দেয়া হবে। এভাবে যদি দায় পরিশোধের আগেই তার পুণ্যসমূহ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দাবীদারদের গুনাহ নিয়ে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)

কিয়ামতের দিন সকল দাবীই পরিশোধ করতে হবে

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لتؤدن الحقوق إلى أهلها يوم القيامة حتى يقاد للشاة الجلحاء من الشاة القرناء . (رواه مسلم) আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে সকল দাবীদারের হক আদায় করে দিতে হবে। এমন কি শিংবিহীন ছাগলের দাবীও শিংওয়ালা ছাগলের নিকট থেকে আদায় করে ছাড়া হবে। (মুসলিম) نیا

পৃষ্ঠা:৫৫

জান্নাত

বিচারের পর আল্লাহ্ তা’আলা নেককার লোকদেরকে জান্নাত এবং বদকার লোকদেরকে জাহান্নামে দাখিল করবেন। আর যারা বিচারে সাময়িক ভাবে কিছু শাস্তি ভোগের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে তাদেরকেও তাদের গুনাহের শাস্তি প্রদান করার পর আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত দান করবেন। জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য এবং আল্লাহ তা’আলা পূর্বেই তা সৃষ্টি করে রেখেছেন। কুরআন ও হাদীসে এ সম্মন্ধে বিশদ বিবরণ, বিদ্যমান রয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, للَّذِينَ اتَّقُوا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّةٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجُ مُطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ –“যারা তাকওয়া অবলম্বন করে চলে তাদের জন্য উদ্যান সমূহ রয়েছে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত সেখানে তারা স্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী এবং । আল্লাহর নিকট হতে সন্তুষ্ট রয়েছে। আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।” (৩ আলে ইমরান: ১৫ নং আয়াত) জান্নাতে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে যে নি’আমতরাজি দান করবেন এ সম্বন্ধে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, إِنَّ أَصْحَبُ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شَغَلٍ فَكِهُونَ هُمْ وَأَزْوَاجَهُمْ فِي ظِلال على الأرانكِ مُتَّكِنُونَ – لَهُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ وَلَهُمْ مَا يُدْعُونَ سَلَامٌ قَوْلاً من رب رحيم – “এই দিন জান্নাতবাসীগন আনন্দে মগ্ন থাকবে, তারা এবং তাদের সঙ্গিনীগন সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেথায় থাকবে তাদের জন্য ফলমূল এবং তাদের জন্য বাঞ্চিত সব কিছু। পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবে সালাম।” (৩৬ ইয়াসীন: ৫৫-৫৯ নং আয়াত)

পৃষ্ঠা:৫৬

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, مثل الجنة التي وعد المتَّقُونَ فِيهَا أَنْهُرْ مِن مَا غَيْرِ أَينَ وَأَنهُ من لبن لم يتغير طعمُهُ وَأَنْهُمْ مِنْ خَيْرٍ للَّةٍ لِلشَّرِينَ وَأَنْظُرَ مِنْ عَسَلٍ مصفى ولهم فيها من كل الثمرات ومغفرة من ربهم • “মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্তঃ এতে আছে নির্মল পানির নহর, আছে দুধের নহর-যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পরিশেধিত মধুর নহর এবং সেথায় তাদের জন্য থাকবে বিবিধ ফলমূলও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা।” (৪৭ মুহাম্মদঃ ১৫ নং আয়াত) আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য (জান্নাতে) এমন ‘নি’আমত সমূহ তৈরী করে রেখেছি যা চোখ কোন দিন দেখেনি, কান কোন দিন তা শুনেনি এবং যা মানব হৃদয় কোন দিন কল্পনা করেনি। (মিশকাত শরীফ, ২য় খন্ড) অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জান্নাতীগন জান্নাতে যাওয়ার পর আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, তোমাদেরকে যে নি’আমত সমূহ দেওয়া হয়েছে, তা অপেক্ষা আরো অতিরিক্ত কিছু আমি তোমাদেরকে প্রদান করব কী? উত্তরে তারা বলবে, আপনি আমাদের মুখ মন্ডল উজ্জল করেন নি, আমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করেন নি এবং আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি কী? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, (এ সময় আল্লাহর সত্তার উপর থেকে) পর্দা সরিয়ে দেওয়া হবে। তখন তারা তাঁর (কুদরতী) চেহারার দীদার লাভ করবে। আল্লাহর দীদার অপেক্ষা উত্তম নি’আমত আর কিছুই জান্নাতীদেরকে প্রদান করা হবে না। তারপর তিনি لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ )যারা মঙ্গলজনক কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গল এবং আরো অধিক। (১০ ইউনুস: ২৬ নং আয়াত) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন। আবূসাঈদ এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, জান্নাতী লোকেরা জান্নাতে যাওয়ার পর কোন একজন ঘোষণাকারী এ মর্মে ঘোষণা করবেন যে, এখন থেকে চিরকাল তোমরা সুস্থ থাকবে, বখনো অসুস্থ হবেনা। এখন থেকে চিরকাল জীবিত থাকবে। তোমাদের জন্য আর মৃত্যু নেই। তোমরা সর্বদাই যুবক থাকবে, কখনো

পৃষ্ঠা:৫৭

বৃদ্ধ হবেনা। আর এখন থেকে তোমরা সুখ-সাচ্ছন্দ ও আরাম আয়েশের জীবন যাপন করবে। দুঃখ-কষ্ট কখনো আর তোমাদের নিকট আসবে না। (মিশকাত শরীফ, ২য় খন্ড)প্রাসংগকি ভাষ্য: জান্নাত। মجن। শব্দটি আরবী। ফারসী ভাষায় একে বেহেশত | بهشت( এবং বাংলা ভাষায় স্বর্গ বলে। জান্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ – উদ্যান, বাগান, সুখময় স্থান ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় পার্থীব ক্ষণস্থায়ী জীবনের অবসানের পর মু’মিনের অনন্ত সুখময়, চিরস্থায়ী জীবনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা যে সুসজ্জিত আবাস প্রস্তুত করে রেখেছেন, তাকে জান্নাত বা বিহিশত বলে। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে জাগতিক পাওয়াকে তুচ্ছ মনে করে পারলোক জীবনে সুখের প্রত্যাশায় সৎকর্ম করলে মহান আল্লাহ শেষ বিচারের দিন তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে যে সুখময় চিরস্থায়ী আবাস দান করবেন, তারই নাম জান্নাত। এ প্রসংগে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- إِنَّ الذينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ كَانَ الهُم جنت الفردوس نزلاه خالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حولا অর্থ: যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে, সেখান হতে তারা স্থানান্তর কমেনা করবে না।

জান্নাতের স্তর

জান্নাতের মোট আটটি স্তর রয়েছে, যেমন-১। জান্নাতুল ফিরদাউস ২। দারুল মাকাম ৩। দারুল কা’রাব ৪। দারুস সালাম ৫। জান্নাতুল মাওয়া ৬। দারুন নাঈম ৭। দারুল খুলদ ৮। জান্নাতুল আদন وَبَشِّرِ الذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصلحت أَن لَهُمْ : جنت تجرى من تحتها 

পৃষ্ঠা:৫৮

وأتُوا بِهِ مُتَشَا بِهَا ، وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ ، وَهُمْ فِيهَا خُلِدُونَ  ٢٥ যারা ঈমান আনল এবং সৎ কর্ম করল তাদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাদের ফলমূল খেতে দেওয়া হবে তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে পূর্বে জীবিকারূপে যা দেয়া হয়েছে তো তাই। তাদেরকে অনুরূপ ফলই দেয়া হবে এবং সেথায় তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গীনী রয়েছে, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। বাকারাঃ ২৫ وَقُلْنَا يَادَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الجَنَّة كلا منها رَغَدًا حيثشنتها – وَلَا تَقْربًا هذه الشجرة فَتَكُونَا مِنَ الظَّلِمِين – البقرة :٣٥ এবং আমি বললাম, “হে আদম! তুমি ও তোমার সুঙ্গীনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যথা ইচ্ছা আহার কর, কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়া হলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। -বাকারা ৩৫والذين امنوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الجَنَّة – هُمْ ۸۲ আর যারা ঈমান আনে ও সৎকার্য করে তারাই জান্নাতবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। বাকারা: ৮২ وقَالُوا لَن يدخل الجنة إِلَّا مَن كَانَ هُوَدًا أَوْ نَصْرَى تِلْكَ أَمَا نِيهِم البقرة : ۱۱۱قل هاتوا بُرْهَانَكُمْ إِن كنتم صا دفين. এবং তারা বলে, “ইয়াহুদী বা খৃীষ্টান ছাড়া অন্যরা কখনই জান্নাতে প্রবেশ ‘করবেনা।’ ইহা তাদের মিথ্যা আশা। বল, ‘যদি তোমারা সত্যবাদী হও, তবেতোমরা প্রমাণ পেশ কর। বাকারা: ১১১أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُو الْجَنَّةَ وَلَمَا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ – مَشتَهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءَ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ

পৃষ্ঠা:৫৯

نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبَ – البقرة : ٢١٤ آمَنُوا مَعَهُ مَتى نصر الله – ألا. তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদিও এখনো তোমাদের নিকট তোমাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা আসে নাই? অর্থ সংকট ও দুঃখ ক্লেশ তাদেরকে স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত ও কম্পিত হয়েছিল। এমন কি রাসূল এবং তার সহিত ঈমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিল, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? হ্যাঁ, হ্যাঁ আল্লাহর সাহায্য নিকটেই। বাকারা: ২১৪قُلْ أَو نَبِّئُكُمْ بِخَيْرٍ مِنْ ذَلِكُمْ – لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عندَ عِنْدَ رَبِّ رَبِّهِمْ جنت تجرى بری من تحتها الآن الانْهرُ خَلِدِينَ فِيهَا وَازْوَاج مطهرة ورضوان ورض مِّنَ اللهِ وَاللهبصير بالعِبَادِ . ال عمرن : ١٥রল আমি কি তোমাদেরকে এমন বস্তু থেকে উৎকৃষ্টতর কোন কিছুর সংবাদ দিব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে চলে তাদের জন্য উদ্যানসমূহ রয়েছে। যারা পাদদেশে নবী প্রবাহিত; তথায় তারা স্থায়ী হবে। তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি রয়েছে। আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক- আল্ ইমরানঃ ১৫الْأَنْهُرُ أولَئِكَ خُلِدِينَ فِيهَا وَنِعْمَ أَجْرُ العالمين – آل عمران : ١٣٦ ওরাইতো তারা যাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত। যারা পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তথায় তারা স্থায়ী হবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কতই না চমৎকার (আলরর ইমরানঃ ১৩৬)الله الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنكُم أمْ الله الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنكُم وَيَعْلَمَ الصبرين . ال عمران : ١٤٢ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং – আলরর ইমরানঃ ১৪২তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। যখন আল্লাহ কে ধৈর্যশীল তা এখনো জানেন না? 

পৃষ্ঠা:৬০

لكِنِ الَّذِينَ اتَّقُوا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّتُ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ خُلِدِينَ فِيهَا نُرُلَا مِّنْ عِنْدِ اللَّهِ وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ لِلْأَبْرَارِ – ال عمران : ۱۹۸কিন্তু যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তথায় তারা স্থায়ী হবে; এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে আতিথ্য। আল্লাহর নিকট যা আছে তা সৎ কর্মপরায়ণদের জন্য শ্রেয়। (আলরর ইমরান : ১৯৭) تلكَ حُدُودَ اللهِ . وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلُهُ جَنَّتْ تَجْرِي مِنْتَحْتِهَا الأَنْهُرُ خُلِدِينَ فِيهَا – وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمِ – النساء : ٣ এসব আল্লাহর নির্ধারিত সিমা। কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তথায় তারা স্থায়ী হবে এবং এটা মহা সাফল্য। (নিসা: ১৩)وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ سَنَدْخُلُهُمْ جَنَّكَ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهُرُ خُلِدِينَ فِيهَا أَبَداً – لَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَنَدْخِلُهُمْ ظِلَّا قَلِيلا٥٧যারা ঈমান আনে এবং ভাল কাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করাবে এমন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তথায় তারা চীরস্থায়ী হবে; সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গীনী থাকবে; এবং তাদেরকে চীর স্নিগ্ধ ছায়ায় প্রবেশ করাবে। নিসা : ৫৭والدينُ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ سُنْدُ خِلَهُمُ جُنْتُ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهُرُ خَلِدِينَ فِيهَا أَبَدًا – وَعَدَ اللَّهُ حَقًّا – وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهَ قِيلًا ۱۲۲ এবং যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে প্রবেশ করারে জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য, কে আল্লাহ অপেক্ষা অনেক সত্যবাদী। (নিসা: ১২২)

পৃ্ষ্ঠা ৬১ থেকে ৭০

পৃষ্ঠা:৬১

وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّلِحَتِ مِنْ ذِكْرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْ مِنْ فَارُ لَئِكَ يدخلون الجنة وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا . পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেউ সৎকাজ করলে ও মু’মিন হলে তারা জান্নাতে প্রবিষ্ট হবে এবং তাদের প্রতি অনুপরিমাণও যুলুম করা হবেনা। -নিসাঃ ১২৪ কিতাবীগণ যদি ঈমান আনত ও ভয় করত তাহলে তাদের দোষ অপনোদন করতাম এবং তাদেরকে সুখদায়ক জান্নাতে প্রবেশ করতাম। (মায়িদা: ৬৫) এবং তাদের এ কথার জন্য আল্লাহ তাদের পুরস্কার নির্দিষ্ট করেছেন জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। এটা সৎকর্ম পরায়ণদের পুরস্কার। (মায়িদা: ৮৫) আমি কাউকেও তার সাধ্যাতীত ভার অর্পণ করি না, যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে ওরাই জান্নাতী, সেখানে তাঁরা স্থায়ী হবে। আ’রাফ: ৪২ দেখ, ‘তাদেরই সম্বন্ধে কি তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না। এদেরকে বলা হবে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই। এবং তোমরা দুঃখিত ও হবে না। (আ’রাফ: ৪৯ তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সুসংবাদ দিতেছেন স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, যেথায় আছে তাদের জন্য স্থায়ী সুখ শান্তি। – তাওবা: ২১ আল্লাহ মু’মিন নর-নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জান্নাতের। যার নিম্নদেশে নবী প্রবাহিত হবে, যেথায় তারা স্থায়ী হবে; এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসস্থান। আল্লাহর সন্তুষ্টি সর্বশ্রেষ্ট এবং ওটাই মহা সাফল। তাওবা: ৭২ • আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যেথায় তারা স্থায়ী হবে, এটাই মহা সাফল্য। যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, – তাওবা: ৮৯ আল্লাহ মু’মিনদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, নিধন করে ও নিহত হয়। তাওরাত ইঞ্জিল ও কোরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে

পৃষ্ঠা:৬২

আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতন আরকে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দ কর এবং তাই মহা সাফল্য। ভাওবা: ১১১ যারা মুমিন ও সৎকর্ম পরায়ণ তাদের প্রতিপালক তাদের ঈমানহেতু তাদেরকে পথ নির্দেশ করবেন। এমন সুখ কাননে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত ইউনুসঃ১৯ হবে। যারা মু’মিন সৎকর্মপরায়ণ এবং তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত, তারাই জান্নাতের অধিবাসী তথায় তারা স্থায়ী হবে। – হুদ: ২৩ যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে দাখিল করা হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তথায় তারা স্থায়ী হবে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। তথায় তাদের অভিবাদন হবে “সালাম” (ইব্রাহীমঃ ২৩) মুত্তাকীগণ থাকবেন প্রস্রবন বহুল জান্নাতে। (হিজরঃ ৪৫) তা স্থায়ী জান্নাত। যাতে তারা প্রবেশ করবে; যার পাদদেশে স্রোত-দ্বিনী প্রবাহিত। তারা যা কিছু কামনা করবে সেথায় তাদের জন্য তাই থাকবে। এভাবেই আল্লাহ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে। – নাহল: ৩১ آن যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের উদ্যান। কাহাফ: ১০৭ কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে। তারাতো জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। মারইয়াম: ৬০ স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত তথায় তারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই, যারা পবিত্র। -তা-হাঃ ৭৬ যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রবিষ্ট করবেন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত; আল্লাহর যা ইচ্ছা তা করেন। (হজ্জঃ ১৪ তাদেরকে জিজ্ঞেস কর এটাই শ্রেয়, নাকি ছয়ী জান্নাত। যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকে। এটাইতো তাদের পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তন স্কুল। ফুরকান : ১৫

পৃষ্ঠা:৬৩

পরিণামে আমি ফেরাউন গোষ্ঠীকে বহিষ্কৃত করলাম তাদের উদ্যান রাজি ও প্রস্রবণ থেকে। (শূয়ারা ৫৭) যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করেন তাদের জন্য আছে সুখময় কানন সমূহ। (লুকমান: ৮) যারা ঈমান আনে সৎকর্ম করে তাদের কৃত কর্মের ফল স্বরূপ তাদের আপ্যায়ানের জন্য জান্নাত হবে বাসস্থান। (সাজদাহ) তারা প্রবেশ করবে স্থায়ী জান্নাতে, তথায় তাদের স্বর্ণ নির্মিত কংকন এবং মুক্ত দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং তথায় তাদের পোশাক পরিচ্ছদ হবে রেশমের। (ফাতির: ৩৩) তাতে আমি সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের উদ্যান এবং উৎসারিত করি প্রস্ররবন। (ইংাসিন: ৩৪) নেয়ামতে পূর্ণ বাগানসমূহ। (সাফ্ফাত: ৪৩) হে আমাদের প্রতিপালক। তুমি তাদেরকে দাখিল কর স্থায়ী জান্নাতে। যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের পিতা-মাত, পতি-পত্নি ও সন্তান সন্ততির মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও। তুমিতো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (মুমিন: ৮) যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরেশতা এবং বলে তোমরা ভীত হওনা। চিন্তিত হয়োনা এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। হামিম সিজদা: ৩০ তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মীনীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। (জুখরুফ: ৭০) মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদস্থানে। উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে। (দুখান: ৫১-৫২) তিনি তাদেরকে প্রবিষ্ট করাবেন জান্নাতে। (মুহাম্মদ: ৬) এজন্য যে, তিনি মোমেন পুরুষ এবং মোমেন নারীদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। যেথায় তারা স্থায়ী হবে এবং তিনি তাদের।। পাপ মোচন করবেন। এটাই আল্লাহর দৃষ্টিতে মহা সাফল্য। ফাতাহ ৪৫

পৃষ্ঠা:৬৪

আকাশ থেকে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি এবং তাদ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান ও পরিপক্ক শস্যরাজি।– কাফঃ ৯সেদিন তুমি দেখবে মুমিন নরনারীগণকে তাদের সম্মুখ ভাগে ও ক্ষিণ পার্শ্বে তাদের জ্যোতি প্রবাহিত হবে। বলা হবে আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। তথায় তোমরা স্থায়ী হবে। এটাই মহা সাফল্য। হাদীদঃ ১২ জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতীগণ সমান নহে। জান্নাতীগণই সফলকাম হাশর: ২০

জান্নাতের রূহানী ও জেসমানী নেয়মত সমূহের বিবরণ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ قَالَ اللهُ تَعَالَى اعددت العِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنَ رَأَتْ وَلَا أَذَنْ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ وَأَقْرَأَوْا إِنْ شِئْمُ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌمَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةَ أَعْيُنٍ . (متفق عيه)হযরত আবু হোরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব নেয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি যে, না কোন চক্ষু তা দেখেছে, না কোন কান তা শুনেছে আর না কোন অন্তর তা কল্পনা ও করতে পেরেছে। ইচ্ছা হলে নিম্নের আয়াত তেলাওয়াত করিয়া দেখিতে পার (যে, তাতে কি বলা হয়েছে)।অর্থ: কারো জানা নেই যে, বেহেশতবাসীদের জস্য কি নেয়মত গোপন করে রাখা হয়েছে, যা তাদের চোখ জুড়িয়ে দিবে।

জান্নাতী নারীর রূপ-সৌন্দর্য

عَنْ أَنَسِ رَضِي اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ لَوْ ان امرأَة مِنْ نِسَا أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الْأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا

পৃষ্ঠা:৬৫

والات ما بينهما ولنصيفها عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا . )رواه البخاري) হযরত আনাস রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতবাসীদের কোন একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উকি দিয়ে দেখে, তবে আসমান ও জমিনের সকল কিছুই আলোকিত হয়ে যাবে এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধিতে ভরে যাবে। তার মাথার ওড়না পৃথিবী এবং পৃথিবী মধ্যস্থিত সকল কিছু অপেক্ষা উত্তম ও মূল্যবান। ( বোখারী, মেশকাত)

বেহেশতের সুবিশাল বৃক্ষ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ لَّهَا مِانَةَ عَامٍ وَلَا يَقْطَعَهَا الراكب في في الجنة شجرة بيسيرا. ( متفق عليه) . হযরত আবু হোরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, জান্নাতের একটি বৃক্ষ এমন (সুবিশাল) হবে যে, কোন সওয়ার একশত বৎসর চালিয়েও তা অতিক্রম করতে পারবে না। (বোখারী, মুসলিম)

বেহেশতবাসী ও হুরদের রূপ সৌন্দর্য

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضَى الله عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِزمرة يدخلون الجنة على صورة القيم الجنة على صُورَةِ الْقَيْرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ثُمَّ الَّذِينَبكونهم كاشد و بدر درى فِي السَّمَاءِ أَضَاءَ قُلُوبُهُمْ قُلُوبهمْ عَلَى قَلْبِ رَجُل وَاحِدٍ لاختلافِ بَيْنَهُمْ وَلَا تَبَاعَضَ لِكُلِّ أَمْرِ مِنْهُمْ زَوْجَنَانِ مِنَ الْحُورِالْعَيْنِ يَرَى مَعَ سَوفَهُنَّ مِنْ وَرَاءِ الْعَظمَ وَ اللحم مِنَ الْحُسنِ . (متفق

পৃষ্ঠা:৬৬

হযরত আবু হোরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু হাইতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, বেহেশতে সর্বপ্রথম যেই দলটি প্রবেশ করিবে তাহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল ও সুন্দহুইবে। তাহাদের পরে যাহারা প্রবেশ করিবে তাহারা হইবে আকাশের উজ্জ্বল তারাকার মত জ্যোতির্ময়। তাহাদের সকলের হৃদয় হইবে একটি মানুষের হৃদয়ের মত। পরস্পরের মধ্যে কোন বিরোধ ও হিংসা-বিদ্বেষ থাকিবে না। তাহাদের সকলে দুইজন করিয়া ডাগর নয়না স্ত্রী লাভ করিবে। অতীব সৌন্দর্যের কারণে তাহাদের পায়ের গোছার মজ্জা পর্যন্ত উপর হইতে দেখা যাইবে। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত)

পরিচ্ছন্ন বেহেশত

সেখানে মল-মূত্র ও থুথু থাকবে না

عن جابر رضي الله عنه قَالَ عَلَيْهِ عن جابر رضي الله عنه قَالَ قَالَ وَسَلَّمَ أَنَّ أَهْلُ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونَ فِيهَا وَيَشْرَبُونَ وَلَا يَتَفَلُونَ وَلا يسر كشون ولا يمتخطون (رواه مسلم)হযরত জাবের রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতবাসীগণ সেখানে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করবে, কিন্তু তারা কখনো থুথু ও মল-মুত্র ত্যাগ করবে না। (মুসলিম শরীফ)

জান্নাতের স্থায়ী সুখ

জান্নাতে প্রবেশের পর তথাকার জীবন-যৌবন ও সুখ ভোগ এমনই স্থায়ী হবে যে, তা আর কখনো বিনষ্ট হবে না ও লোপ পাবে না। হাদীসে পাকে বিষয়টি এইভাবে বিবৃত হয়েছে- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُنَادِي مَنَادٍ أَنَّ لَكُمْ أَنْ تَصَدُّوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا وَ إِنَّ لَكُمْ

পৃষ্ঠা:৬৭

لَكُمْ أَنْ تَبُوا فَلا لا تـ تهروا ابدا ان انا لكمخيرا فلا تموتوا ابداً وَ أَنَّ لَكُمْ أن تَنْعَمُوا فَلَا تَبَأَ سُوا أَبَداً . (رواه مسلم) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, (বেহেশতে প্রবেশের পর) জনৈক ঘোষণাকারী বলবে, তোমাদের জন্য এটাই সাব্যস্ত হয়েছে যে, তোমরা চির দিন সুস্থ থাকবে এবং কখনো অসুস্থ হবে না। চিরদিন জীবিত থাকবে এবং কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। অনন্তকাল তোমাদের যৌবন অক্ষুন্ন থাকবে এবং কখনো তোমরা বৃদ্ধ হবে না। চিরকাল তোমরা পরম সুখে থাকবে এবং দুঃখ- কষ্ট কখনো তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না। (মুসলিম শরীফ)

জান্নাতের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত

رَسُولُ الله صلى الله الله عَنْهُ عنه قال قال عن أبي سعيد رضي فَيَقُولُونَ لَبَيِّكَ الْجَنَّةَ فَيَقُولُونَ لَبَيِّكَ عَلَيْهِ رضيتم فيقولون الخير كله في ربنا فَيَقُولُ مَا لَنَا لَا نَرْضَى يَا رَبِّ وَقَدَا عَطَيْنَنَا مَا لَمْ تَعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ إِلَّا أَعْطَيْكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ فَيَقُولُونَ يَا رَبِّ وَ أَيِّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ فَيَقُولُ أَحَلَّ عَلَيْكُمْ رِضْوَ إِني فَلَا أَسْخَطُ بَعْدُهُ أَبَداً . ( متفقعليه ) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক বেহেশতবাসীকে ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসী। তারা জবাব দিবে- আয় পরওয়ারদিগার আমরা হাজির, যাবতীয় খায়ের ও ভালাই আপনরাই হাতে (অর্থাৎ আপনি কি হুকুম। করতেছেন?) আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবে, পরওয়ারদিগার। আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদিগকে এত প্রচুর নেয়ামত দান করেছেন যে, অপর কাকেও এত নেয়ামত দান করেন নি। রাব্বুল

পৃষ্ঠা:৬৮

আলামীন বলবেন, আমি কি তোমাদিগকে তা অপেক্ষাও উত্তম নেয়ামত দান করব? তারা আরজ করবে, হে রব! তা অপেক্ষা উত্তম নেয়মত আর কি হতে পারে? এরশাদ হবে, আমি চির দিনের জন্য তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম এবং আর কখনো অসন্তুষ্ট হব না। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত)

জান্নাতের প্রাসাদ

هريرة رضي الله عنه قُلْتُ يَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم الجنة ما بنائها قال لبنة من ذهب ولينة من فضة و ملاطها المسك الأذفر وحصائها اللؤلؤ و لياقوت وتربتها الزعفران . (رواه احمد والترمذي) হযরত আবু হোরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছেন, হে আল্লাহর রাসূল। বেহেশতের প্রাসাদ কেমন হবে? তিনি ফরমালেন, (বেহেশতের প্রাসাদের) একটি ইট হবে স্বর্ণের এবং অপরটি হবে রূপার। এর সংযোগ উপাদান হবে নির্ভেজাল মেশকের এবং তার কংকর হবে মণি-মুক্তা ও ইয়াকুত পাথরের। আর তার মাটি হবে জাফরানের। (আহমদ, তিরমিজী, দারেমী, মেশকাত)

জান্নাতের বৃক্ষের সোনালী কান্ড

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما في الجنة شجر إلا وساقها من ذهب .. (رواه الترمذي) হযরত আবু হোরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যার কান্ড স্বর্ণের নয়। (তিরমিজী, মেশকাত)

জান্নাতের ঘোড়া

عن بريدة رضي الله عنه أن رجلا قال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هل في الجنة من خيل قال إن الله أدخلك الجنة فلا تشاء

পৃষ্ঠা:৬৯

ان حمل فيها على فرس من ياقوت حمراء يطير بك في الجنة حيث شنت الا فعلت (الحديث) وفيه أن يدخلك الله الجنة يكن لك فيها ما شتهت نفهت نفسك ولدت عينك . ( مشكوة) হযরত বুরাইদা রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করল হে আল্লাহর রাসূল! বেহেশতে ঘোড়া পাওয়া যাবে কি? তিনি বললেন, আল্লাহ পাক তোমাকে বেহেশত দান করার পর তোমার যদি এরূপ ইচ্ছা হয় যে, তুমি লাল ইয়াকুত পাথরের ঘোড়ায় আরোহণ করবে এবং ঐ ঘোড়া তোমাকে ইচ্ছামত ঘুরিয়ে ফিরবে; তবে তোমাকে তাও দান করা হবে। এই হাদীসে আরো বলা হয়েছে আল্লাহ পাক যদি তোমাকে বেহেশত দান করেন, তবে সেখানে তুমি এমন সবকিছু পাবে যা তোমাদের মনে চাবে এবং যা দেখে তোমার চোখ জুড়াবে। ( মেশকাত)

আশি হাজার খাদেম ও বাহাত্তর জন হুর

সর্বনিম্ন শ্রেণীর একজন বেহেশতী আশি হাজার খাদেম ও বাহাত্তর জন প্রাপ্ত হবে। সেই সঙ্গে তারা আরো বিপুল পরিমাণ নাজ-নেয়মত লাভ কররে। عن أبي سعيد الخدرى رضى الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ادنى أهل الجنة الذي له ثما نون الف خادم و اثنتان و سبعون زوجة وتنصب له قبة من لو وزبرجد و ياقوت كما بين الجابية الى صنعا ، وبهذا الاسناد قال ان عليهم التيجان ادني لؤلؤة منها التضيي ما بين المشرق و الغرب . (رواه الترمذي) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ।।

পৃষ্ঠা:৭০

ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, সর্বনিম্ন শ্রেণীর একজন বেহেশতী আশি হাজার খাদেম ও বাহাত্তর জন স্ত্রী পাবে। আর তার জন্য সান্‌ত্ম হতে জাবির নামক স্থানের দূরত্ব পরিমাণ একটি সুবিশাল গম্বুজ নির্মাণ করা হবে। তার উপাদান হবে মুক্তা, জবরদ এবং ইয়াকুত। এ সনদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতবাসীদিগকে এমন মুকুট পরানো হবে যে, তার একটি ক্ষুদ্র মুক্ত পৃথিবীর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্তের মধ্যকার সকল বস্তু আলোকিত করে দিতে সক্ষম। (তিরমিজি, মেশকাত)

বেহেশতে উপাদেয় নহর

عن حكيم بن معاوية رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم از في الجنة بحر الماء بحر العسل و بحر اللبن و الجمرتم تشفق الا نهار بعد . رواه التر مذی)হাকিম বিন মোয়াবিয়া রাজিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতে থাকবে একটি পানির দরিয়া, একটি মধুর দরিয়া, একটি দুধের দরিয়া, একটি শরাবের দরিয়া। আর এ দরিয়াসমূহ হতে বহু নহর প্রবাহিত হবে। (তিরমিজী, মেশকাত)

বেহেশতী হুরদের সঙ্গীত পরিবেশ

عن على رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان في الجنة لمكجتمعا للحور العين يرفعن باصوات لم تسمع الخلائق مثلها يقلن : نحن الجاليات خلا نبيد ونحن الناعمات فلا نبأس

পৃ্ষ্ঠা ৭১ থেকে ৮০

পৃষ্ঠা:৭১

ونحن الراضيات فلا نسخط طوبى لمن كان لنا و كنا له . ( رواه الترمذي ) হযরত আলী রাজিয়াল্লাহু আনহু হাইতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, বেহেশতের ডাগর নয়না হুরগণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমায়েত হইয়া সুমধুর ও সুউচ্চ কণ্ঠে গাহিবে- আমরা চির সঙ্গীনি চিরঞ্জীব আমাদের কোন ক্ষয় নাই নাই বিনাশ আমরা চির সুখী, কোন কষ্ট স্পর্শ করে না আমাদের সতত থাকিব সন্তুষ্ট কখনো হইব না অসন্তুষ্ট সেজন হইবে চির সুখী যাহারা লভিল আমাদের আমরা লভিলাম যাহাদের।

আল্লাহর দীদার

মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়মত হইল আল্লাহর দিদার। জান্নাতে যাওয়ার পর মানুষ সেই নেয়মতও লাভ করিবে। এক হাদীসে আল্লাহর দিদার লাভের বিষয়টি এইভাবে বলা হইয়াছে-عن جرير بن عبد الله رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إنكم سترون ربكم عيانا وفي رواية قال كنا جلوسا عند رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر إلى القمر ليلة البدر فقال إنكم سترون ربكم كما ترى هذا القمر لا تضارون في رؤيته . (متفق

পৃষ্ঠা:৭২

হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, তোমরা তোমাদের, প্রতিপালককে স্পষ্টভাবেই দেখিত পাইবে। অন্য রেয়ায়েতে তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি পূর্ণিমা রজনীর চাঁদের দিকে দেখে বললেন, তোমরা (সকলে এক সঙ্গে) যেমন এ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ এবং তাতে যেমন কারো কোন অসুবিধা হয় না। অনুরূপ আল্লাহ পাককেও দেখতে পাবে। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত)عن صهيب رضى الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال اذا دخل اهل الجنة الجنة يقول الله تعالى تريدون شيئا من النار قال فيرفع الحجاب فينظرون الى وجه الله فما اعطوا شيا احب اليهم منالنظر الى ربهم . (رواه مسيم) হযরত সোহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতবাসীগণ বেহেশতে প্রবেশের পর আল্লাহ পাক বলবেন, তোমরা কি আমার নিকট আরো অধিক কিছু কামনা কর। তারা আরজ করবে, (আয় মাওলায়ে কারীম!) আপনি কি আমাদের চেহারাসমূহ উজ্জ্বল করেনন নি? আপনি কি আমাদিগকে বেহেশতে প্রবেশ করান নি? এবং দোজখের আগুন হতে মুক্তি দান করেন নি? (সুতরাং তার পরও আমাদের চাওয়ার আর কি থাকতে পারে?)রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক স্বীয় পর্দা সরিয়ে ফেলবেন। তখন বেহেশতীগণ রাব্বুল আলামীনের অপূর্ব রূপ- সৌন্দর্য দেখে ধন্য হবে। তাদের মনে হবে যেন আল্লাহর দীদারের মতএমন প্রিয় বস্তু আর কিছুই তাঁরা প্রাপ্ত হয় নেই। (মুসলিম, মেশকাত)عن ابن عمر رضى الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أن أدنى اهل الجنة منز لامن ينظر الى جنانه ازواجه و

পৃষ্ঠা:৭৩

نعیمه و خدمه و سروره مسيرة الف سنة و اكر مهم على الله منينظر الى وجهه غدوة و عشية ) رواه أحمد والترمذي) হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ বলেছেন সর্বনিম্ন শ্রেণীর একজন বেহেশতীকে আল্লাহ পাক এত বিপুল নেয়মত দান করবেন যে, তার বাগ-বাগিচা, স্ত্রীগণ, বিবিধ নেয়মত, সেবক এবং বিবিধ সুখ-সামগ্রী এমন বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পরিব্যাপ্ত থাকবে যে, তা অতিক্রম করতে এক হাজার বৎসর সময় লাগবে। আর সবচাইতে সম্মানিত বেহেশতী হবে ঐ সকল ব্যক্তি যারা সকাল-সন্ধ্যা রাব্বুল আলামীনের দীদার লাভে ধন্য হবে। (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজী, মেশকাত)

জান্নাতবাসীদের প্রতি আল্লাহ পাকের ছালাম

عن جابر رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم بينا أهل الجنة في نعيم اذ سطع لهم نور فعوا رءوسهم فاذا الرب قد اشرف عليه من فوقهم فقال السلام عليكم يا اهل الجنة قال وذلك قال فنظر اليهم و ينظرون قوله تعالی سلام قولا من رب رحيم اليه فلا يلتفتون الى شيء من النعيم ما داموا ينظرون اليه حتى يحتجب عنهم و يبقى نوره . (رواه ابن ماجة) হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, বেহেশতবাসীগণ বিবিধ নাজ-নেয়মতে মশগুল থাকবে। এক পর্যায়ে হঠাৎ তারা সম্মুখে একটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পাবে। তারা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করিবে, এটা যে স্বয়ং রাব্বাল আলামীন তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং বলতেছেন, “আচ্ছালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল জান্নাত”

পৃষ্ঠা:৭৪

(হে বেহেশতবাসীরা, তোমাদের প্রতি ছালাম)। রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিম্নের আয়াতে এটা বলা হয়েছে-سَلَام قَوْلًا مِّنْ رَّبِّ رَّحِيم * অর্থাৎ করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবে ‘ছালাম’। মোটকথা, আল্লাহ পাক নিজ বান্দাদেরকে তাকিয়ে দেখবেন এবং বেহেশতবাসীগণও বিমুগ্ধ নয়নে স্বীয় প্রতিপালকের দীদারে নিমগ্ন থাকবে। যতক্ষণ এ দীদারের সুযোগ থাকবে ততক্ষণ তারা অন্য কোন নেয়ামতের দিকে ফিরেও তাকাবে না। এক পর্যায়ে আল্লাহ পাক পর্দার আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যাবেন। কিন্তু তার পরও তাঁর নূরের ঐজ্জ্য বিরাজমান থাকবে।(ইবনে মাজা, মেশকাত)

জাহান্নাম

অনুরূপ-ভাবে জাহান্নামীদের সম্মন্ধেও কুরআন ও হাদীসে বিস্তারিত বর্ণনা বিদ্যমান আছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِأَيْتِنَا أُولَئِكَ أَصْحُبُ النَّارِ هُمْ فِيهَاخَالِدُونَ – যারা কুফরী করে ও আমার নিদর্শন সমূহকে অস্বীকার করে তারাই জাহান্নামী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। (২ বাকারা: ৩৯ নং আয়াত) জাহান্নামের শাস্তি প্রসঙ্গে অপর এক আয়াতে উল্লেখ রয়েছে,وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَخَلِدُونَ – تَلَفَعُ وُجُوهُهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ – “এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। অগ্নি তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে এবং তথায় তারা থাকবে বীভৎস চেহারায়।” (২৩ মমিনূন: ১০৩-১০৪ নং আয়াত)

পৃষ্ঠা:৭৫

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّنْ نَارٍ – يُصَبُّ مِنْ فَوقِ رُوسِهِمُ الْحَمِيمِ – يَصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودِ – وَلَهُمْ مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمَّ اعْبُدُوا فِيْهَا وَذُوقُوا عَذَابَالحريق – “যারা কুরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোষাক, তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, এর দ্বারা তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে এবং তাদের জন্য থাকবে লৌহ মুদগর। যখনই তারা  -কাতর হয়ে জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে তাতে, আর তাদেরকে বলা হবে, আস্বাদ কর দহন যন্ত্রনা।” (২২ হজ্জঃ ১৯-২০-২১-২২ নং আয়াত)অন্য আয়াতে আছে, إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِابْتِنَا سَوْفَ نُصْلِهِمْ نَارًا كَلَّمَا نُضَجَتْ جُلُودُهُم بَدَّلْنَهُمْ جَلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ – إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا .“যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে অগ্নিতে দগ্ধ করবই, যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই এর স্থলে নুতন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। “(৪ নিসাঃ ৫৬ নং আয়াত) জাহান্নামের শাস্তির কথা আলোচনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, জাহান্নামীদের মধ্যে যে ব্যক্তির আযাব সবচেয়ে সহজ এবং কম হবে তার পায়ে জাহান্নামের দুটি জুতা ও ফিতা পরিয়ে দেওয়া হবে। আর এ অগ্নি-জুতার তাপমাত্রা এত প্রচন্ড হবে যে, চুলার উপর হান্ডির পানি যেভাবে উৎরাতে থাকে ঐভাবে তার মস্তিষ্কও উৎরাতে থাকবে। তার আযাবকে সর্বাধিক কঠিন আযাব বলে ধারণা করা হবে। অথচ তার আশ্বাব হল সবচেয়ে সহজ ও নিম্নমানের (মিশকাত শরীফ, ২য় খন্ড)

পৃষ্ঠা:৭৬

জাহান্নামীদের পানাহারের জন্য যে সব জিনিষ সরবরাহ করা হবে এ প্রসঙ্গে নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, জাহান্নামীদের পান করার জন্য যে পূজ দেওয়াহবে এর এক বালতি যদি দুনিয়াতে নিক্ষেপ করা হয় তাহলে গোটা দুনিয়াবাসী দুর্গন্ধে পুতিঃগন্ধময় হয়ে যাবে। (মিশকাত শরীফ, ২য়খন্ড) যাক্কুম বৃক্ষের আলোচনা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, যদি যাকুমের এক ফোটা দুনিয়ায় পড়ে তবে দুনিয়াবাসীর সকল পানাহার দ্রব্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে যাকে এ যাক্কুম পানাহার করতে দেওয়া হবে তার কি অবস্থা হবে ? (মিশকাত শরীফ, ২য় খন্ড) আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে জান্নাত নসীব করুন এবং জাহান্নাম থেকে হিফাজত করুন। জাহান্নামের স্তরঃ জাহান্নামের ৭টি স্ত রয়েছে। যথা-১. জাহান্নাম )جهنم(; ২১ লাখা (৩, হুতামাহ )8 ; (حطمة. সায়ীর )سعیر(; ৫. সাকার )سقر( : ৬. জামহীম )جحيم(; ৭. হাবিয়াহ )هاوية(وَإِذَا قَبْلَ لَهُ اتَّقِ اللَّهَ أَخَذَتْهُ الْعِزَّةَ بِالْأَثِمِ فَحَسْبُهُ جَهَنَّمَ – وَلَبِئْس٢٠٦المهاد যখন তাকে বলা হয়, ‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার আত্মভিমান তাকে পাপনুষ্ঠানে লিপ্ত করে, সুতরাং জাহান্নামই তার জন্য যোগ্য। নিশ্চয়ই তা নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল। বাকারা: ২০৬قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَى جَهَنَّمَ – جَهَنَّمَ – وَبِئْسَ الْمِهَادِ۱۲ যারা কুফরী করে তাদেরকে বল, ‘তোমরা শীঘ্রই পরাভূত হবে এবং তোমাদেরকে জাহানামে একত্র করা হবে। আর তা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল।أَفَمَنِ اتَّبَعَ رِضْوَ انَ اللَّهِ كَمَنْ بَاءَ بِسَخَطَ مِّنَ اللَّهِ

পৃষ্ঠা:৭৭

وَمَا وَاهُ جَهَنَّمَ – ان : ١٦٢ – وين المشير – ال عمران আল্লাহ যাতে রাজি সে তারই অনুসরণ করে, সে কি তার মত যে, আল্লাহ্ ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং জাহান্নামই যার আবাস। এবং তা কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল। আল্ ইমরানঃ ১৬২مَتَاعٌ قَلِيلٌ – ثُمَّ مَا وَاهُمْ جَهَنَّمُ – وَبِئْسَ الْمِهَادِ – ال এটা সামান্য ভোগ মাত্র: অতঃপর জাহান্নাম তাদের আবাস। আর তা কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল। আল্ ইমরানঃ ১৯৭مَنْ صَدَّ عَنْهُ – وَكَفَى بِجَهَنَّمَ سَعِيرًا . منهم من অতঃপর তাদের কতক তাতে বিশ্বাস করেছিল এবং কতক তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল: দগ্ধ করার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। নিসা : ৫৫ وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا وَغَضَبَ اللَّهِالنساء: عظيما – عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّلَهُ عَذَابًا : কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মোমেনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাতে লা’নত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন। নিসা: ৯৩نتم – قَالُوا أَنَّ الَّذِينَ تَوَفَّهُمُ المَلئِكَةُ ظَالِمَى أَنْفُسَهُمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُم . كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسَعَةً فَتُهَا جُرُوافِيهَا – فَأُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمَ – وَسَاءَتْ مَصِيرًا – نساء : ۹۷ যারা নিজেদের ওপর যুলুম করে তাদের প্রাণ গ্রহণ করার সময় ফিরিশতাগণ বলে ‘তোমরা কি অবস্থায় ছিলে?’ তারা বলে, ‘দুনিয়ায় আমরা অসহায় অবস্থায় ছিলাম’, ‘তারা বলে, ‘দুনিয়া কি এমন প্রশসস্ত ছিলনা যেথায় তোমরা হিজরত করতে। এদেরই আবাসস্থল জাহান্নাম। আর ওটা কত মন্দ আবাস। নিসাঃ ৯৭

পৃষ্ঠা:৭৮

مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلَ وَمَنْ يَشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ . جَهَنَّمَ – وَسَاءتْ . الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ – مصيرا –١١٥ কারো নিকট সৎ পথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মোমেনদের পথ ব্যতিত অন্য পথ অনুসরণ করে তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কতইনা মন্দ আবাস। নিসা: ১১৫ أُولَئِكَ مَا وَاهُمْ جَهَنَّمْ وَلَا يَجِدُونَ عَنْهَا مُحِيصًا – نساء : ١٢١ ওদেরই আশ্রয়স্থল জাহান্নাম, তা হতে তারা নিষ্কৃতির উপায় পাবে না। নিসাঃ ১২১ وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَبِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ أَيْتِ اللهِ يَكْفُرُبِهَا . فِي حَدِيثٍ غيره – انكم وَيَسْتَهْرًا بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُرُإِذَا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللَّهَ جَامِعُ الْمُنْفِقِينَ وَالْكَفِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا – نساء কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহ্র প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তাকে বিদ্রপ করা হচ্ছে তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সাথে বসিওনা। অন্যথায় তোমরাও তাদের মত হবে। মুনাফিক এবং কাফির সকলেই আল্লাহ্ জাহান্নামে একত্র করবেন। নিসা: ১৪০إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا – وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا জাহান্নামের পথ ব্যতিত; সেখানে তারা চীরস্থায়ী হবে এবং এটাই আল্লাহর পক্ষে সহজ। (নিসা: ১৬৯)قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْمُومًا مَدْهُ حُورًا – لِمَنْ تَعَكَ مِنْهُمْ لَا مُلَنَّ

পৃষ্ঠা:৭৯

الاعراف : ۱۸جَهَنَّمَ مِنْكُمْ أَجْمَعِينَ . তিনি বললেন, এ স্থান হতে ধিকৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হয়ে যাও! মানুষের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে নিশ্চয়ই আমি তোমদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব।’ আ’রাফ: ১৮لَهُمْ مِنْ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِنْ فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ ، وَكَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ .١٤ তাদের শয্যা এবং ওপরের আচ্ছাদ, হবে জাহান্নামের। এভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দেব। আরাফ: ৪১ا من الْجِنِّ وَالْإِنْسِ – لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ وَلَقَدْ ذَرَانَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا : بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَذَانَ لَا يَسْمَعُونَ بِهَا – أُولَئِكَ۱۷۹كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَئِكَ هُمُ الْغَفِلُونَ . আমি তো বহু সংখ্যক মানুষকে এবং জিনকে জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তারা বোঝেনা তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তাদ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কর্ণ আছে তাদ্বারা তারা শ্রবণ করে না। এরা পশুর ন্যায় বরং তাদের অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত তারাই গাফিল। আ’রাফঃ ১৭৯إلى فِئَةٍ فَقَدْ يومَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتحيراً !بَاءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ وَمَاؤُهُ جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ . الانفال : ١٦ সেদিন যুদ্ধ কৌশল অথবা দলে স্থান লওয়া ব্যতীত কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে তো আল্লাহর বিরাগ ভাজন হবে এবং তার আশ্রয় জাহান্নাম, আর তা কত-যে নিকৃষ্ট।-আনফালঃ ১৬إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُشْفِقُونَ أَمْوَ الَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ . فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسَرَةٌ ثُمَّ يُغْلَبُونَ ، والذين كفروا الى٣٦جهنم يحشرون .

পৃষ্ঠা:৮০

আল্লাহর পথ থেকে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিরগণ তাদের ধন সম্পদ ব্যয় করে। তারা ধন সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে অতঃপর উহা তাদের মনস্তাপের কারণ হবে, এরপর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে। আনফালঃ ৩৬الله الحبيث من الطيب وَيَجْعَلَ الْخَبِيثَ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ ليميز الله فَيْرٌ كَمَهُ جَمِيعًا فَيَجْعَلَهُ فِي جَهَنَّمَ – أُولَئِكَ هُمُ الْخَسِرُونَ .۳۷ – যাতে পৃথক করেছেন আল্লাহ অপবিত্র নাপাককে পবিত্র ও পাক থেকে। আর যাতে একটির পর একটিকে স্থাপন করে সমবেত স্তূপে পরিণত করেন। অতঃপর সকলকে স্তূপিকৃত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। এরাই ক্ষতিগ্রস্ত।فتوى بِهَا جَبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتَكُو وَظُهُورُهُمْ – هَذَا مَا كَتَرْ ثُمَّ لَا أَنْفُسُكُمْ فَذُقُوا مَا كُنتُمْ تَكْتَرُونَ – التوبه .যেদিন ঐ স্বর্ণ-রৌপ্য জাহান্নামের অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হবে এবং তদ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে, সেদিন বলা হবে, এটাই (সে সম্পদ) যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করবে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জিভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর। তাওবা: ৩৫وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ ائْذَنْ لِي وَلَا تَفْتَنِي الَّا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا ….٤٩ এবং তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে, ‘আমাকে অব্যহতি দাও এবং আমাকে ফিতনায় ফেল না’। সাবধান। এরাই ফিতনাতে পড়ে আছে। জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে বেষ্টন করেই আছে।الَمْ يَعْلَمُوا أَنَّهُ مِنْ يُحَادِدِ اللَّهُ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَجَهَنَّمَ خَالِدًا التوبة : ٦٣فِيهَا ذَلِكَ الْخِزْى الْعَظِيمِ .

পৃ্ষ্ঠা ৮১ থেকে ৯০

পৃষ্ঠা:৮১

এরা কি জানেনা যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করে তার জন্য আছে জাহান্নামের অগ্নি। যেথায় সে স্থায়ী হবে? ওটাই চরম লাঞ্ছনা। তাওবা: ৬৩وَعَدَ اللهُ المُنفِقِينَ وَالمُنفِقَتِ وَالْكُفَّارَ نَارُ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا – هِيَ حَسْبُهُمْ ، وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمُ – التوبة : ٦٨ মুনাফিক নর, নারী ও কাফিরদিগকে আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের অগ্নির, যেথায় তারা স্থায়ী হবে। এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট এবং আল্লাহ তাদেরকে লা’নত করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُتَّقِينَ وَاغْلُظَ عَلَيْهِمْ – وَمَا وَاهُمْ جَهَنَّمُوَبِئْسَ المصير. হে নবী কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও তাদের প্রতি কঠোর হও; তাদের আবাসস্থল হল জাহান্নাম; তা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ يَقْعَدِهِمْ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ وَكَرِهُوا أَنْ يُجَا هُدُوا بأَمْوَ الهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالُوا لَا تَنْفِرُوا فِي الْحَرِّ قُلْ نَار ٨١ যারা পশ্চাতে রয়ে গেল তারা রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে বসে থাকতেই আনন্দ পেল এবং তাদের ধন সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপছন্দ করল এবং তারা বলল, ‘গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়োনা, ‘বল উত্তাপে জাহান্নামের আগুর প্রচন্ডতম।’ যদি তারা বুঝত! তাওবা: ৮১سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا أَنقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ. فَاعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَا وَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوايكسبون .

পৃষ্ঠা:৮২

তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; এরা অপবিত্র এবং তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ জাহান্নাম হবে আবাসস্থল।إِلَّا مَن تَرحِمَ رَبِّكَ ، وَلِذَلِكَ خَلَقَهُمْ ، وَتَمَتْ كَلِمَةٌ رَبِّكَ لَأَمْلَئِن جَهَنَّمَ من الجنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ. هود ١١٩ তবে তারা নয় যাদেরকে তোমরা প্রতিপালক দয়া করেন এবং তিনি তাদেরকে এজন্যই সৃষ্টি করেছেন। ‘আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবই, তোমার প্রতিপালকের একথা পূর্ণ হবেই। হুদ: ১১৯ لِلَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمُ الْحُسْنَى ، وَالَّذِينَ لَم يَسْتَجِيبُوا لَهُ لَوَانٌ لَهُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لاقتدوا بم – أُولَئِكَ لَهُمْ سُوءُ الْحِسَابِ ، وَمَا وَاهُمْ جَهَنَّمَ – وَبِئْسَ۸মঙ্গল তাদের যারা তার প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয় এবং যারা তার ডাকে সাড়া দেয় না, তাদের যদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে তারা সবই তাদের থাকত এবং তার সহিত সমপরিমাণ আরো থাকত তারা মুক্তিপণস্বরূপ তা দিতে প্রস্তুত থাকত। তাদের হিসাব হবে কঠোর এবং জাহান্নাম হবে তাদের আবাস, এটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট আশ্রয় স্থল। রা’দ: ১৮مِنْ وَرَائِهِ جَهَنَّمَ وَيُسْقَى مِنْ مَاءٍ صَدِيدٌ . ابراهيم : ١٦ তাদের প্রত্যেকের জন্য পরিণামে জাহান্নাম রয়েছে এবং প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পুঁজ। ইব্রাহীমঃ ১৬٢٩ জাহান্নামে যার মধ্যে এরা প্রবেশ করবে কত নিকৃষ্ট এ আবাস স্থল। ইব্রাহীম: ২৯

পৃষ্ঠা:৮৩

الحجر : ٤٣وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ . অবশ্যই তোমার (শয়তানের) অনুসারীদের সকলেরই নির্ধারিত স্থান হবে জাহান্নাম। হিজরঃ ৪৩فَادْ خُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ، فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ .* সুতরাং তোমরা দ্বারগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেথায় স্থায়ী হবার জন্য, দেখ অহংকারীদের আবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট। নাহল: ২৯عَلَى رَبُّكُمْ أَنْ يَرْحَمَكُمْ وَإِنْ عُدْتُمْ عَلَيْنَا ، وَجَعَلْنَا جَهَنَّمَ للكفرين حصيرا . সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। কিন্তু যদি পূনরায় তদ্রুপ কর, আমিও পূনরায় তাই করব। জাহান্নামকে আমি করেছি কাফিরদের জন্য কারাগার। -বনী ইসরাইল : ৮مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِنْ يُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ – يَصْلُها مَذْمُومًا مَدْحُورًا . কেউ আসু সুখ সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা এখানেই সত্বর দিয়ে থাকি। পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করে থাকি। সেখায় সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়। -বনী ইসরাইল: ১৮ مِنْهُمْ فَإِن جَهَنَّمَ جَزَاؤُ كم جَزَاء مَوْ فُورًا . تبعكَ قال اذه اذهب فَمَنْ আল্লাহ্ বললেন, চলে যাও, তাদের মধ্যে যারা তোর অনুসরণ করবে জাহান্নামই তাদের সকলের শান্তিপূর্ণ শাস্তি। – বনী ইসরাইল: ৬৩ عرضًا . وعرضنا جهنم يو.

পৃষ্ঠা:৮৪

এবং সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব কাফিরদের নিটক। কাহাফ: ১০০فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَ لَهُمْ وَالشَّيْطَينَ ثُمَّ لَنَحْضَرَ نَهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا . সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালখকের আমি তো তাদেরকে শয়তানদের সহ একত্র সমবেত করবই ও পরে আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই। মারইয়াম : ৬৮ إِنَّهُ مَنْ يَّاتِ رَبَّهُ مُجْرٍ مَا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَى . যে তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে তার জন্যতো আছ জাহান্নাম। সেথায় সে মরবেও না বাঁচবেও না। – তা-হাঃ ৭৪ وَمَنْ يَقُلْ مِنْهُم إِنِّي الأَ مِن دُونِهِ فَذَلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمُ – كَذَلِكَ تجزى الظَّلِمِينَ . তাদের মধ্যে যে বলবে, ‘আমি ইলাহ তিনি ব্যতিত, তাকে আমি প্রতিফল দিব জাহান্নাম। এভাবেই আমি জালিমদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি। আম্বিয়াঃ ২৯انفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ الَّذِينَ خَسروا : وازينه فاوخالِدُونَ . এবং যাদর পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারাই জাহান্নামে স্থায়ী হবে। – মু’মিনুন: ১০৩الَّذِينَ يُحْشَرُونَ عَلَى وُجُوهِهِمْ إِلَى جَهَنَّمَ – أُولَئِكَ شَرَّ ٣٤واصل سبيلاً . যাদেরকে মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামের প্রতি একত্র করা হবে,তাদের স্থান হবে অতি নিকৃষ্ট এবং তারাই পথভ্রষ্ট। – ফুরকান: ৩৪

পৃষ্ঠা:৮৫

পরিশিষ্ট

ইমাম মাহদীর আগমন কেউ অস্বীকার করলে

কোন ব্যক্তি যদি ইমাম মাহদীর আগমনকে অস্বীকার করে এবং এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, ইমাম মাহদী নামে কোন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটবে না। এই ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি? আল্লাহর খলীফা মাহদী সম্পর্কে হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় গ্রন্থের একটি আবূ দাউদ শরীফে বিস্তারিত ও বিশদ বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর নিদর্শনাবলী তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণসহ তাঁর যাবতীয় কার্যক্রমের আলোচনা সেখানে উদ্ধৃত হয়েছে। যে ব্যক্তি ইমাম মাহদীর আবির্ভাবকে স্বীকার করে না, সে এই সব হাদীসের অস্বীকারকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে। এ জাতীয় লোকদের আকীদা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। তাদেরকে প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে সঠিক পথের সন্ধান দেয়া উচিৎ। যাতে করে তারা সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১১১) হযরত ঈসা (আঃ)-এর পুনরাগমন নবী না উম্মত হিসাবে? হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে চতুর্থাকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কিয়ামতের পূর্বে আবার এই বিশ্ববুকে তাঁর পুনরাগমন ঘটবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী। তারপর আর কোন নবী আসবে না। এমতাবস্থায় কিয়ামতের পূর্বে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনে কি শেষ নবীর সর্বসম্মত বিধান লংঘিত হবে না। এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজেকে নবী হিসাবে তখন পরিচয় দিবেন কি না? আর যারা তাঁর অনুসারী হবে তারা কি মুসলমান থাকবে, না কাফের হয়ে। যাবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবা। এ ঘোষণা পবিত্র কুরআনেই দেয়া হয়েছে- رَسُولَ اللهِ وَخَاتَم با أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُ ولكن ما كان محمد ابا ان مل النبيين অর্থাৎ- “মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।” (সুরা আহযাবঃ আয়াত-৪০

পৃষ্ঠা:৮৬

অতএব, কুরআনের এই সুস্পষ্ট ঘোষণার পর যে ব্যক্তি নবুওয়তের দাবীদার হবে, সে প্রকাশ্য কুরআন অস্বীকারকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে। আর কুরআন অস্বীকারকারী কাফের, এতে কোন দ্বিমত নেই। একই অবস্থা হবে ঐ সকল লোকদের ক্ষেত্রে, যারা মিথ্যা নবী দাবীদারদেরকে নবী হিসাবে স্বীকার করে নিবে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে জীবিত আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে- وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَا بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ আর কিয়ামত ঘনিয়ে আসলে তিনি দুনিয়ার বুকে অবতরণ করবেন। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দুনিয়ার অবতরণ করে মানব জাতিকে নিজের নবুওয়তের উপর আস্থা স্থাপনের জন্য আহবান জানাবেন না; বরং তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ধর্মের প্রতি মানব জাতিকে আহবান জানাবেন। তবে হয়তে ঈসা আলাইহিস সালামের নবুওয়ত বাকী এবং সংরক্ষিত থাকবে। قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يلبث الدجال فيكم ماشاء الله ثم ينزل عيسى بن مريم مصدقا بمحمد وعلى ملته اماما مهدياوحكما عدلا فيقتل الدجال الخ – ان عيسى عليه السلام مع بقائه على نبوته معدود في امة النبي صلى الله عليه وسلم ودخل في زمرة الصحابة (رض) وفاته اجتمع بالنبي صلى الله عليه وسلم وهو حي مؤمنا به مصدقا وكان اجتماعه به مرات في غير ليلة الإسراء من جملتها بمكتبه . قال بينا نحن مع النبي صلى الله عليه وسلم إذا رأينا بردا

পৃষ্ঠা:৮৭

ويدا فقلنا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما هذا البرد الذي رأينا واليد قال قد رأيتموه قلنا نعم قال ذلك عيسى بن مريم سلم على إنما يحكم عيسى بشريعة نبينا صلى الله عليه وسلم بالقرآن والسنة قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا ان ابن مریم لیس بینی و بینه نبی و رسول الا أنه خليفتي في أمتي من بعدي، قال الذهبي في تجريد الصحابة عيسى ابن مريم عليه السلام نبي وصحابي فإنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم فهو آخر الصحابة موتا (ত্ববরানী বায়হাক্বী কামেল)এ বিষয়ে হক্কানী উলামায়ে কেরামের পৃথক পৃথক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যেমন- (১) কিতাবুল আ’লাম বি-হুকমি ঈসা আলাইহিস সালাম, আল্লামা সুয়ূতী।(২) আকীদাতুল ইসলাম ফি-হায়াতি ঈসা আলাইহিস সালাম, আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী। এ ছাড়াআল্লামা সুবকীর একটি গ্রন্থ, হাদীসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বজলুল মাজহুদ, ফাতহুল বারী, আইনী ইত্যাদিতে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ খন্ড-১, পৃষ্ঠা-১১২-১১৪) আ’মলনামা প্রত্যেক মানুষের দুই কাঁধে দু’জন ফিরিশতা থাকেন। ডান কাঁধের ফিরিশতা নেক আমলগুলো এবং বাম কাঁধের ফিরিশতা বান্দার বদ আ’মলগুলো লিপিবদ্ধ করেন। এটাকেই আ’মলনাম বলা হয়। ফিরিশতাগণ এই আ’মলনামা নিয়ে সেদিন উপস্থিত হবে। যার পূণ্য কম এবং পাপ বেশি তার আ’মলনামা তার পিছন দিক থেকে বাম হাতে দেয়া হবে।

মীযান 

মানুষের নেক আ’মল ও বদ আ’মল ওজন করার জন্য হাশরের মাঠে মীযান স্থাপন করা হবে। এক পাল্লায় নেক আমল এবং অন্য পাল্লায় বদ আ’মল রেখে

পৃষ্ঠা:৮৮

তা ওজন করা হবে। যার নেক আমলের পাল্লা ভারী ও খারাপ আ’মলের পাল্লা হালকা হবে, সে বেহেশত লাভ করবে। আর যার নেক আমলের পাল্লা হালকা। এবং বদ আমলের পাল্লা ভারী হবে সে দোযখে যাবে।

পুলসিরাত

হাশর ময়দানে বেহেশত ও দোযখ এনে উপস্থিত করা হবে। বেহেশত উঁচু স্থানে আর দোযখ রাখা হবে গভীর নিম্নে। দোযখের উপরে একটি পুল স্থাপন করা হবে সেটিই পুলসিরাত নামে পরিচিত। ঐ পুলের শেষপ্রান্তে বেহেশত অবস্থিত। বেহেশতে যেতে হলে সেই পুলটি পেরিয়ে যেতে হবে। মানুষের নেকি-বদি ওজন এবং হিসাব-নিকাশের পর সকল লোকজনকে বলা হবে, তোমরা এখন নিজ নিজ স্থানে চলে যাও। ফিরিশতাগণ আল্লাহর নির্দেশে বান্দাগণকে পুলসিরাত দেখিয়ে দিয়ে বলবে, এই তোমাদের পথ। এই পুল পেরিয়েই তোমাদেরকে যেতে হবে। কিন্তু সবার জন্য ঐ পুল পার হওয়া সম্ভব হবে না। পাপীরা সেটাকে চুল থেকৈও চিকন দেখতে পাবে। তাদের জন্য সেটি হবে অত্যন্ত ধারালো। তারা ঐ পুলে আরোহণ করা মাত্রই তাদের পদদ্বয় কেটে তারা নিম্নস্থ দোযখে পড়ে যাবে। আর নেককারদের জন্য হবে সুপ্রশস্ত সুগম পথ। তারা তাদের নেকীর তারতম্যানুয়ায়ী কেউবা বিজলীর মত মুহূর্তে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। কেউ বা বায়ুবেগে, আবার কেউ বা দ্রুত দৌড়ে, কেউবা ধীর মন্থর গতিতে হেঁটে হেঁটে পুল পার হয়ে তাদের গন্তব্যস্থল বেহেশতে পৌছে যাবে।

ইমাম মাহদী সম্পর্কে বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী একটি সম্প্রদায়

ইসলামের স্বর্ণযুগে অর্থাৎ হযরত আবূ বকর ও উমর (রাঃ) এর কল্যাণময় যুগে মুসলিম উম্মাহর মাঝে ইসলামী আকীদা ও ইসলামের মৌলিক বিষয়ে তেমন জটিল কোন মতপার্থক্য ছিলনা-একথা সর্বজন স্বীকৃত। তবে তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গণী (রাঃ) এর খিলাফত কালের শেষ যুগে আকীদার ক্ষেত্রে এক নতুন মতাদর্শের উদ্ভব হয়। এখান থেকেই শুরু হয় “শী’আ” সম্প্রদায়ের নব যাত্রা। তাদের প্রথম পর্যায়ের বুনিয়াদ ছিল, খুবই সাদাসিধে এবং অত্যন্ত সরল প্রকৃতির। তাদের বুনিয়াদী কথাটি ছিল হযরত আলী হলেন মহানবীর (সাঃ) চাচাত ভাই। বাল্যকাল হতেই তিনি রাসূল (সাঃ) ও বিবি খাদীজার বিশেষ স্নেহের পাত্র ছিলেন। হিজরতের সময় মহানবী (সাঃ)

পৃষ্ঠা:৮৯

তাঁর আমানত হকদারদের পৌঁছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আলীর হাতেই অর্পন করেন। মদীনাতেও তাঁকে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) গৃহ রক্ষার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। তাঁর সঙ্গে নবী করীম (সাঃ) এর প্রাণাধিক প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমার শাদী হয়। তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি, জ্ঞান-গরিমা, বীরত্ব, বিশ্বস্ততা এবং ইসলাম ও মহানবীর (সাঃ) প্রতি তাঁর খিদমতের স্বীকৃতি স্বরূপ রাসূল (সাঃ) নিজেই তাঁকে মুসলিম ফৌজের নিশান বরদার নিযুক্ত করেন। এমনকি তিনি আলীকে “আমার জন্য মূসার ভাই-এর মত” আখ্যায় ভুষিত করেন। তাই রাসূল (সাঃ) এর তিরোধানের পর তিনিই তাঁর খলীফা এবং স্থলাভিষিক্ত হওয়ার একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি। এরা নিজেদেরকে শী’আনে আলী বা আলীর সমর্থক বলে পরিচয় দিত। কথাগুলো বাহ্যিক দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় হলেও মুলতঃ এ ছিল ইসলামী হিদায়েত এবং নবী করীম (সাঃ) এর শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ ইসলাম গোত্রীয় পার্থক্য ও বংশীয় গর্বের সকল সৌধমালাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করতঃ ইজ্জত সম্মান ও নেতৃত্বের মানদন্ড তাকওয়ার উপর অর্পণ করেছে। কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছেঃأن اكرمكم عندالله اتقاكم “তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যে সর্বাপেক্ষা মুত্তাকী” (৪ঃ হুজুরাত ১৩ নং আয়াত) অর্থাৎ তাকওয়া এবং পরহেযগারীর ক্ষেত্রে সাহাবীদের মাঝে হযরত আবু বকরই ছিলেন সবচেয়ে অগ্রগামী। হযরত আলী সহ সকল সাহাবীই এই বিষয়ে একমত ছিলেন। তাই তিনিই ছিলেন নবী করীম (সাঃ) এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যক্তি। এতদ্বসত্বেও হীন স্বার্থ চরিতার্থের চরম উম্মাদনায় মাতাল হয়ে শী’আ সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের ভ্রান্ত কথাগুলো লোক সমাজে ছড়াতে থাকে অত্যন্ত তড়িৎ গতিতে। মূলতঃ এ ভ্রান্ত আকীদার পেছনে ইন্ধন যোগাচ্ছিল ইয়াহুদী সন্তান মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবন সাবা ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। বস্তুতঃ ইয়াহুদী জাতি পূর্ব থেকেই ছিল ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। ইসলামের জয়যাত্রা দেখে তাদের মনে প্রতিহিংসার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। খাক হয়ে যায় তাদের মন। ইসলামের অগ্রযাত্রা যে করেই হোক রহিত করতে হবে, এ-ই ছিল তাদের একমাত্র ধ্যান। তারা মুসলিম সমাজে অনৈক্যের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আলী প্রেমের আবরণে অবিরাম গতিতে নিজেদের ভ্রান্ত মতাদর্শ প্রচার করতে তাদের এ ষড়যন্ত্র ও কারসাজীর কারণেই বিশৃংখলা সৃষ্টি কারীদের কর্তৃক আক্রান্ত

পৃষ্ঠা:৯০

হয়ে শাহাদাত বরণ করেন তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গণী (রাঃ) এবং পরবর্তীকালে সংঘঠিত হয় জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিস্ফীন-এর মত আত্মঘাতী দুই দুইটি লড়াই। অবশ্য হযরত আলী (রাঃ) তাদের এ কর্মকান্ড অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাকে কুফা থেকে মদীনায় নির্বাসিত করেন। ফলে শী’আ মতবাদ তাকিয়্যার আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।পরবর্তীকালে তাঁরা বহু দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। চরমপন্থী শী’আ সম্প্রদায়ের কতিপয় লোক হযরত আলী (রাঃ) কে উলুহিয়্যাতের মনযিলে পৌছে দেয়। কেউ কেউ তাকে নবীও বলে মনে করে। আবার কেউ কেউ তাকে নবী (সাঃ) হতেও শ্রেষ্ঠ বলে ধারণা রাখে। রাফিযীও শী’আদের একটি চরমপন্থী সম্প্রদায়। হযরত বড় পীর আবদুল কাদীর জীলানী (রাঃ) গুনিয়্যাতুত্তালিবীন এবং শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাঃ) তুহফায়ে ইছনা আশারিয়‍্যায় এবং হযরত মাওলানা মনযুর নু’মানী (রঃ) ইরানী ইনকিলাব ইমাম খোমেনী আওর শী’ইয়্যাত” কিভাবে এদের বিস্তারিত-বিবরণ দিয়েছেন। এদের প্রধান দলটিকে শী’আ ইমামিয়্যাহ বা শী’আ ইছনা আশারিয়‍্যাহ্ বলা হয়। সাধারণতঃ এ ফেকাই বর্তমানে ‘শী’আ নামে আখ্যায়িত এবং এরাই ইরানের বর্তমান বিপ্লবের নায়ক। নিম্নে তাদের কয়েকটি মূলনীতি তুলে ধরা হল। তাদের ধারণা, যেমনিভাবে আম্বিয়ায়ে কিরাম আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত, এমনিভাবে ইমামগণও আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত। নবীগণের মত তারাও সর্ব প্রকার ভুল ভ্রান্তি থেকে পবিত্র এবং মা’সুম। এ সকল ইমামদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী আসে নবীগণের মতই। জীবনের সর্বস্তরে তাদের আনুগত ফরয। শরঈ বিধানকে তারাই কার্যকরী করেন। এমনকি তারা কুরআনে হাকীমের যে কোন বিধানকে প্রয়োজনে রহিত এবং মওকুফ করারও অধিকার রাখেন। আল হুকুমাতুল ইসলামিয়‍্যাহ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, وإن من ضروريات مذهبنا أن لأئمتنا مقاما لا يبلغه ملك مقرب ولا نبي مرسل আমাদের ইমামদের জন্য এমন বৈশিষ্টময় স্থান রয়েছে যে স্থানে কোন নৈকট্য লাভকারী ফিরিশতা এবং প্রেরিত কোন নবী পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনা। তাদের দ্বিতীয় মূলনীতি হল সাহাবায়ে কিরামের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা

পৃ্ষ্ঠা ৯১ থেকে ১০৬

পৃষ্ঠা:৯১

পোষণ করা। শী’আদের কিতাব “রাওযার” মধ্যে ইমাম বাকির থেকে বর্ণিত রয়েছে, كان الناس أهل ردة بعد النبي صلى الله عليه وسلم الا ثلثه فقيل ومن الثلاثة فقال المقداد بن الاسود وأبو ذر الغفاري وسلمان الفارسي رحمة الله عليه وبركاته রাসূল (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর আবুযর, মিকদাদ এবং হযরত সালমান ফার্সী (রাঃ) ব্যতীত হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ) এর হাতে বায়’আত গ্রহণকারী সকল সাহাবীই ইসলাম ত্যাগ করে কাফির বা মুরতাদ হয়ে যায়। অধিকন্তু হযরত আলী (রাঃ)ও যেহেতু প্রথম খলীফার হাতে বায়’আত গ্রহন করেছিলেন, তাই তিনিও শী’আদের এহেন অসন্তোষ থেকে রেহাই পাননি। তাদের তৃতীয় আকীদাটি উপরোল্লিখিত আকীদা থেকেও অধিক জঘন্য ও অত্যন্ত মারাত্মক। এ হল তাহরীফে কুরআন বা কুরআন বিকৃতির আকীদা। শী’আদের ধারণা, বর্তমান কুরআন রাসূল (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআন নয়। এ হল হযরত উসমানের সাজানো কুরআন। এতে বহু যোগ-বিয়োগ হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে মূল কুরআন থেকে “সূরাতুল বেলায়েত” নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। তাই বর্তমান কুরআন অবিকৃত নয়। এ কথ্যটিকে প্রমাণ করে ১২৯২ হিজরীতে মির্জা হুসাইন বিন মুহাম্মদ তাকী নূরী তাবরাসী নামক এক শী’আ আলিম “ফাসলুল খিতাব ফী ইসবাতে তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আবরার” নামক একখানা গ্রন্থ রচনা করে। এ গ্রন্থে সে বিভিন্ন শী’আ আলিম-গবেষকদের শত শত উদ্ধৃতি উল্লেখ করে এ কথা প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, পবিত্র কুরআন আসল কুরআন নয়। আসল কুরআন তো দ্বাদশ ইমামের নিকট কোন এক অজানা গুহায় প্রোথিত আছে। ‘আরফুস শর্যী গ্রন্থে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রঃ) তাদের উক্তি বর্ণনা করেছেন। তারা বলে زاد فيه عثمان ونقص وقيل نقص ولم يزد উসমান (রাঃ) এতে সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। কেউ কেউ বলে বিয়োজন করেছেন। কিন্তু সংযোজন করেন নি। রাসূল (সাঃ) ও তাঁর আদর্শ থেকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে শী’আগণ তাদের জন্মলগ্ন থেকেই অত্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

পৃষ্ঠা:৯২

দাঁড় করায় তারা ইসলামের মুকাবিলায় এক নতুন ধর্ম। প্রচার করতে থাকে তারা নতুন ধর্মের নতুন কলেমা, নতুন উদ্যমে এক অভিনব কৌশলে। জুড়ে দেয় তারা সর্বজন স্বীকৃত কলেমার সঙ্গে আলীউ ওয়ালীযুল্লাহ ওয়াছিয়া রাসুলিল্লাহ অখলিফাতুহু বেলা ফাসলিন” আলী আল্লাহর বন্ধু, রাসূলের অসী ও তাঁর অব্যবহিত পরবর্তী খলিফা শব্দগুলোকে। তাদের কলেমা, لا اله الا الله محمد رسول الله على ولى الله وصى رسول اللهوخليفته بلا فصل এ ছাড়াও শী’আদের আরো বহু ভ্রান্ত আকীদা এবং স্বতন্ত্র মতামত রয়েছে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে এসবের বিস্তারিত এ্যালোচনা সম্ভব নয়। তবে উপরোল্লেখিত চারটি আকীদার উপর চিন্তা করলেই আমরা পরিস্কার ভাবে উপলদ্ধি করতে পারি এবং সুস্পষ্ট-ভাবে জানতে পারি যে, ইসলামের সাথে শী’আ সম্প্রদায়ের পার্থক্য কতটুকু। চিন্তার বিষয় তদের কথাগুলো ইয়াহুদীবাদ অনুপ্রাণিত লোকদের নিকট সমাদৃত হলেও ইলমে ওহীতে বুৎপত্তি সম্পন্ন হযরত সাহাবায়ে কিরাম এবং পরবর্তীকালের বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের নিকট তা কখনো সমাদৃত হয়নি। বরং তারা সব সময়ই এ ফিৎনাকে কঠোর হস্তে দমন করেছেন এবং তাদের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো অত্যন্ত পরিস্কার ভাবে সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন। শী’আদের গোমরাহী এবং ভ্রান্তির কত গুলো কারণ নিম্নে দেওয়া হল।তাদের সম্প্রদায়ের ইমামত সম্পর্কিত মতবাদটি নবী করীম (সাঃ) এর সর্বশেষ নবী হওয়ার বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ এবং ইসলামের চিরস্থায়ী ধর্ম হওয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র ব্যতীত আর কিছুই নয়। এ কারণেই প্রথম যুগ থেকে আরম্ভ করে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তিই নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার হয়েছে, তারা সকলেই নিজ দাবীর সপক্ষে শীআদের ইমামত মতবাদ হতে যুক্তি প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে। মুলতঃ ইসলামের চির দুশমন ইয়াহুদী সম্প্রদায় নবুওয়তের দাবীদারদের জন্য চোরাগলি আবিষ্কার করার লক্ষ্যেই এ ভ্রান্ত আকীদার উদ্ভব ঘটিয়েছে যা কোন ঈমানদার ব্যক্তির জন্য কস্মিন কালেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের “সাহাবা বিদ্বেষ” মূলনীতি একেবারেই ভ্রান্ত, যা কোন আলোচনার অপেক্ষা রাখেনা। কারণ এ

পৃষ্ঠা:৯৩

আকীদার অন্তরালে তারা ইসলামের চিরন্তনতা ও বিশ্বজনীনতাকেই অস্বীকার করতে চাচ্ছে অত্যন্ত কৌশলের সাথে। কেননা তাদের ধারণা মতে রাসুল (সাঃ) এর তিরোধানের পর ইসলাম যেহেতু একদিনের জন্যও টিকে থাকতে পারেনি তাই এ ইসলাম কখনো বিশ্বজনীন এবং চিরন্তন ধর্মাদর্শ হতে পারে না। অধিকন্তু শী’আদের এ ভ্রান্ত আকীদার প্রেক্ষিতে এ কথাও প্রতিভাত হয় যে, রাসূল (সাঃ) ছিলেন একজন অসফল এবং ব্যর্থ মু’আল্লিম (নাউযুবিল্লাহ)। কারণ তিনি যদি এবং স্বার্থক মু’আল্লিম হতেন তাহলে তার সঙ্গ প্রাপ্ত এ সমস্ত লোকেরা কখনো নিজ ধর্ম ত্যাগ করে ইরতিদাদের আশ্রয় গ্রহণ করত না। তাদেরতাহরীফে কুরআন আকীদাটিও অত্যন্ত ঈমান বিধ্বংসী আকীদা। কারণ আজ পর্যন্ত কোন কট্টর কাফিরও যে কথাটি বলতে সাহস পায়নি, শী’আগণ মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট সে কথাটি প্রচার করে নিজেদের বাচালতা এবং মূর্খতারই পরিচয় দিয়েছে। সর্বোপরি এ আকীদা কুরআন হিফাযতের ব্যাপারে ইলাহী প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য এক চ্যলেঞ্জও বটে। এ ধৃষ্ঠতার অভিশাপে আজ পর্যন্ত শী’আ সম্প্রদায়ের কেউ সম্পূর্ণ কুরআনের হাফিয হতে পারছে না। অথচ সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে শত সহস্র নয় বরং লক্ষ লক্ষ হাফিযে কুরআন এ পৃথিবীতে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন কিয়ামত পর্যন্ত। তাদের প্রবর্তিত কলেমা অভিশপ্ত ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই প্রজোয্য। তবে সুন্নী মুসলমানদের জন্য এ কলেমা কোন ক্রমেই প্রজোয্য নয়। কারণ এ কলেমা ঈমান বিধ্বংসী কলেমা। এ কলেমার পাঠক, অনুসারীরাও হলো মুশরিকফির রিসালাত, এরা মুসলমান নয়। সুতরাং ইয়াহুদীবাদে অনুপ্রাণিত শী’আ সম্প্রদায়ের এ পাঁয়তারা এবং হীন চক্রান্ত থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকা এবং কঠোর হস্তে তাদেরকে দমন করা একান্ত ভাবে অপরিহার্য।

উক্ত ভ্রান্ত সম্প্রদায় সম্পর্কে মনীষীদের বক্তব্য

গুনিয়্যাতুত্তালিবীন নামক গ্রন্থে বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জীলানী (রঃ) বলেন, শী’আ সম্প্রদায়ের কয়েকটি নাম রয়েছে। শী’আ: এ সমস্ত লোকেরা যেহেতু হযরত আলীর অনুসরণ করে এবং তাকে অন্যান্য খলীফাদের উপর প্রাধান্য দেয়, তাই তাদেরকে শী’আ বলা হয়  রাফিযীঃ যে সমস্ত লোক হযরত আবুবকর ও হযরত উমরের খিলাফতকে স্বীকার করে না এবং অধিকাংশ সাহাবীদেরকে মান্য করেনা তাই তাদেরকে

পৃষ্ঠা:৯৪

রাফিযী বলা হয়। মূলতঃ শী’আদের ধর্ম ইয়াহুদী ধর্মের সাথে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রখ্যাত ইমাম শা’বী (রঃ) বলেন, নবী বংশের সাথে শী’আদের মহব্বত ইয়াহুদীদের মহব্বতের মতই। ইয়াহুদীরা দাবী করে যে, হযরত দাউদ (আঃ) এর বংশধর ব্যতীত অন্য কেউ ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। ইয়াহুদীরা যেমনিভাবে মুসলমানদেরকে হত্যা করা বৈধ মনে করে তেমনি ভাবে শীআগণও অন্য মুসলমানদেরকে হত্যা করা হালাল মনে করে। ইহুদীরা যেমন তাওরাতের ভেতর পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছে, শী’আরাও কুরআন শরীফের সাথে অনুরূপ আচরণের প্রয়াস পেয়েছে। তাদের বিশ্বাস, বর্তমান কুরআন রাসূল (সঃ) এর উপর অবর্তীর্ণ কুরআন নয়। ইয়াহুদীরা হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে বৈরীভাব পোষণ করে, শী’আ সম্প্রদায়ের মধ্যেও কোন কোন দল হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে অনরূপ বৈরীভাব পোষণ করে। কারণ তাদের ধারণা, হযরত জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর ওহী যথাস্থানে পৌছাতে ভুল করেছেন, (নাউযুবিল্লাহ।) তিনি ভুলবশতঃ হযরত আলীর নিকট ওহী না পৌছিয়ে ওহী পৌছিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নিকট। মোট কথা, তারা হল মিথ্যাবাদী। মিথ্যা বলাই তাদের অভ্যাস। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন। (গুনিয়্যাতুত্তালিবীন) ইমাম তায়মিয়ার অভিমত: শী’আ মতবাদের প্রথম ও প্রধান প্রবর্তক হলো একজন ইয়াহুদী মুনাফিক ব্যক্তি। শী’আদের মৌলিক বিশ্বাস হল, নবী করীম (সাঃ) হযরত আলীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রেখে গেছেন। এতে আর সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। হযরত আলীই হলেন ইমামে মা’সুম। যে ব্যক্তি তার সঙ্গে বিরোধিতা করবে সে কাফির। তাদের ধারণা মতে, মুহাজির এবং আনসার সাহাবীগণ নবী করীম (সাঃ) এর সিদ্ধান্তকে গোপন রেখে ইমামে মা’সুম হযরত আলীর সাথে কুফরী করেছিল এবং তারা স্বীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য ধর্ম ও শরী’আতকে পরিবর্তন করেছে। এমন কি অবশেষে চরম বাড়াবাড়ি এবং জুলুমের আশ্রয়ও গ্রহণ করেছে। পাঁচ- দশজন ব্যতীত সকলেই তারা কাফির। শী’আগণ নিজেদের দল ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধাচারণকারী সকল ব্যক্তিকেই কাফির বলে মনে করে। যে সমস্ত ইসলামী

পৃষ্ঠা:৯৫

দেশে তাদের আকীদার প্রাধান্য নেই সে সমস্ত দেশকে তারা কাফির রাষ্ট্র বা দারুল কুফর বলে মনে করে, তাদের মতে তারা মুশরিক এবং খ্রীষ্টান রাষ্ট্র থেকেও অধিক নিকৃষ্ট। এ কারণেই তারা মুসলমানদের পরিবর্তে ইয়াহুদী, খৃস্টান এবং মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখে এবং তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বর্তমানে তারা ইসলামী রাষ্ট্র আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে বিমুখ হয়ে যে সব দল বিদ’আতের রাস্তা অবলম্বন করেছে, নিঃসন্দেহে শী’আ সম্প্রদায় তাদের মাঝে সর্বাধিক গোমরাহ এবং পথভ্রষ্ট। এ জন্য সর্ব সাধারণের নিকট এ জামা’আতই সুন্নাহ বিরোধী জামাআত হিসাবে পরিচিত। তাই সাধারণ লোক সুন্নীদের বিপরীতে শী’আ ছাড়া অন্য কিছুই বুঝেনা। যখন কেউ বলে যে, আমি একজন সুন্নী তখন তার উদ্দেশ্য এই থাকে যে, আমি শী’আ নই। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, শী’আ সম্প্রদায় খাওয়ারিজ সম্প্রদায় হতেও নিকৃষ্টতর। খারিজীরা আর কিছু না হোক সত্যবাদী, কিন্তু শী’আরা মিথ্যা বলার ব্যাপারে সুপ্রসিদ্ধ। খারিজীরা ইসলামে প্রবেশ করে পরে ইসলাম থেকে বের হয়ে গিয়েছে, আর শী’আরা দুর থেকেই ইসলামকে ছুড়ে মেরেছে। (ফাতওয়ায়ে ইবনে তায়মিয়া) মুজাদ্দিদে আলফে ছানীর অভিমতঃ শী’আরা হযরত নবী করীম (সাঃ) এর সাহাবীদেরকে গালি গালাজ এবং অভিসম্পাত করাকে নিজেদের ধর্ম এবং ঈমানের অংগ বলে সাব্যস্ত করেছে- যা আমানত ও দিয়ানতদারীর সম্পূর্ণ পরিপন্থী। যে সমস্ত বিদআতী দল নিজেদের বিদ’আতের কারণে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তন্মধ্যে খারিজী ও শীআ সম্প্রদায়ই সর্বাধিক দূরে ছিটকে পড়েছে। শী’আ বা রাফিযীদের বারটি দল রয়েছে। সকলেই নবী করীম (সাঃ) এর সাহাবীগণকে কাফির এবং খোলাফায়ে রাশিদীনের প্রতি অভিসম্পাত করাকে ইবাদত বলে মনে করে। অবশ্য শী’আদের এ সব দল নিজেদের জন্য রাফিযী শব্দটি ব্যবহার করেনা। কারণ হাদীস শরীফে রাফিযীদের প্রতি তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সর্ব প্রকার কুফরী কার্যকলাপ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রতি কাফির শব্দ ব্যবহার করলে যেমন তারা ক্ষেপে যায় শী’আ-রাফিযীদের অবস্থাও তাই। এদিক থেকে রাফিয়ীদেরকে হিন্দুদের সাথেও তুলনা করা যায়।

পৃষ্ঠা:৯৬

শী’আরা রাসূল (সাঃ) এর বংশধরকেও নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি হিসাবেই বিবেচনা করে। তারা নবী বংশকে হযরত আবুবকর ও হযরত উমরের শত্রু বলে মনে করে। তাদের বক্তব্যঃ হযরত আলী ত্রিশ বছর পর্যন্ত তাকিয়্যা করতঃ হযরত আবুবকর, উমর ও উসমান (রাঃ) এর সাথে মুনাফিকী সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং তাদের প্রতি অবৈধ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। শী’আদের এ বক্তব্য একেবারে অমূলক এবং অবাস্তব। এ যেন হযরত আলীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ। আল্লাহ পাক তাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করুন। (মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী) শাহ আব্দুল আযীয (রঃ) এর অভিমতঃ শী’আদের ধোকা এবং প্রতারণার মধ্যে এ কথাও বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য যে, তারা বলেঃ আহলুস্ সুন্নাতের অভিজাত ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের ইমাম পবিত্র কুরআন শরীফের মাঝে বহু রদবদল করেছে, বাদ দিয়েছে তারা এমন অনেক সূরা এবং অনেক আয়াত,যার মাঝে নবী বংশের ফাযায়েল, শ্রেষ্ঠত্ব, তাদের ভালবাসা, তাদের অনুসরণ এবং বিরোধিতার প্রতি চরম নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান ছিল। এমনকি এ আয়াত ও সূরাগুলোতে বিরুদ্ধাচারণকারীদের নাম, তাদের প্রতি অভিসম্পাতের কথাও পরিষ্কার ভাবে বর্ণিত ছিল। এ কারণেই এ সমস্ত কথাগুলো তাদের কাছে খুব অপছন্দ লাগে। মূলতঃ নবী বংশের প্রতি ক্রোধ ও বিদ্বেষই তাদেরকে এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। সুরা “আলাম নাশরাহ” থেকে বিলুপ্ত আয়াত এবং কুরআন শরীফ থেকে বিলুপ্ত সূরায়ে বিলায়েতই আমাদের সামনে এ বিদ্বেষের চির সাক্ষর হয়ে আছে। (তুহফায়ে ইছনা আশারিয়া) আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা ও বিশ্বাসঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ই হলেন সর্বশেষ নবী এবং সর্বশেষ রাসূল। তার পর আর কোন নবী নেই। সমস্ত জ্বীন ও মানুষ এবং সারাবিশ্ব জাহানের জন্য হল তার নবুওয়ত। তাই এ উম্মতের জন্য নয়া কোন নবী প্রেরণেরও প্রয়োজন নেই। ঠিক এমনি ভাবে এখন কোন নিষ্পাপ ইমামের অভ্যুদয়েরও কোন দরকার নেই। সাহাবীগণের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণে এবং তাদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ঐক্যবদ্ধ। আমাদের আকীদা, আম্বিয়ায়ে কিরামের পর সাহাবীগণই হচ্ছেন সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট এবং মুমিনদের মধ্যে সর্বোত্তম। আমরা আশারায়ে মুবাশশারা তথা বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী সম্পর্কে বেহেশতী হওয়ার এবং কল্যাণের সাক্ষ্য দেই।

পৃষ্ঠা:৯৭

নবী পরিবার এবং রাসূল (সাঃ) এর আযওয়াজে মুতাহহারাতের মর্যাদ। এবং সম্মানের আমরা স্বীকৃতি দান করি। তাদের প্রতি আমরা ভালবাসা পোষণ করি। ইসলামে তাদের মর্যাদা বহু উর্ধ্বে। সাহাবীগণ মা’সুম নন, কিন্তু আমরা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত তাদের সকলের আদালত ও গুনাহে কবীরা থেকে মুক্ত থাকার এবং তাদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার কথা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করি। তাদের পরস্পরের ভেতর যে সমস্ত বিবাদ সংঘঠিত হয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা মন্তব্য করা থেকে বিরত এবং সতর্ক থাকার আকীদা পোষণ করি। রাসূল (সাঃ) এর তিরোধানের পর হযরত আবুবকর হচ্ছেন যোগ্য খলীফা। এর পর হচ্ছেন যথাক্রমে হযরত উমর, হযরত উসমান ও হযরত আলী (রাঃ)। খিলাফত আলা মিনহাজিন্ নবুয়্যাত বা নববী আদর্শে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত এখানেই শেষ হয়ে যায়। হযরত আবুবকর ও হযরত উমর যথাক্রমে এ উম্মতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। আমরা সাহাবীগণের কেবল সদালোচনা করতে পারি। তারা আমাদের ধর্মীয় নেতাএবং পথপ্রদর্শক। তাদের সমালোচনা করা, তাদের দোষ বর্ণনা করা হারাম এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আমাদের জন্য ওয়াজিব। সহীহ হাদীসে আছে, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,لا تسبوا أصحابي فوالله الذي لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهباما أدرك مد أحدهم ولا نصيفه আমার সাহাবীদেরকে তোমরা মন্দ বলো না। তাদের সমালোচনা করোনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর পথে ব্যয় করে তথাপিও সে সাহাবীদের মধ্যে কারো এক মুদ্দ (প্রায় এক কিলো) বা অর্থ মুদ্দের পরিমাণ দানের সমান হতে পারবেনা। (মিশকাত: ২য় খন্ড) আমরা বিশ্বাস করি, কুরআন শরীফ আল্লাহর কালাম। এর মর্ম ও শব্দ সব কিছু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ পরিপূর্ণ একটি কিতাব। আমাদের আক্বীদাঃ কুরআন শ্বাশ্বত, চিরন্তন এবং কুরআন মাখলুক নয়। একে অগ্র-পশ্চাৎ কোন দিক থেকেই বাতিল স্পর্শ করতে পারে না। এ কিতাব সরুল প্রকার তাহরীফ, মানুষের পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও পরিমার্জন থেকে মুক্ত এবং সংরক্ষিত। এতে তাহরীফ হয়েছে বলে যদি কেউ বলে তবে সে ঈমানের গড়িভুক্ত নয়।انا نحن نزلنا الذكر وانا له لحافظون 

পৃষ্ঠা:৯৮

নিশ্চয় আমিই নাযিল করেছি এ যিকর (আলকুরআন) আর আমিই এর সংরক্ষক। (১৫ হিজরঃ ৯নং আয়াত) তিনি আরো বলেছেন, قَرَأْنَهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ فَإِذَا قَرَأْتُهُ .بيانه তা সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি, তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর, তারপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই। (৭৫ সূরা কিয়ামাঃ ১৭,১৮,১৯ আয়াত)মনের বিশ্বাস এবং ঈমান ও আকীদার বিশুদ্ধতার উপরই আল্লাহর উবুদিয়্যাত এবং দাসত্ব নির্ভরশীল। যদি কারো আকীদায় ত্রুটি এবং ঈমানের মধ্যে বিচ্যুতি থাকে তাহলে তার কোন ইবাদতই কবুল হবেনা। ঈমানের বিশুদ্ধতা ‘তাওহীদ, রিসালাত, ঈমান বিল গায়ব এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার উপরই নির্ভরশীল। এ বিশ্বাস হতে হরে অত্যন্ত নিরঙ্কুশ এবং একেবারে নির্ভেজাল। আমাদের আকীদা, যেমনিভাবে আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাতের উপর ঈমান আনা ব্যতিরেকে কারো ঈমান গ্রহণ যোগ্য নয়, অনুরূপ ভাবে রাসূল (সাঃ) এর রিসালাত ও নবুওতের উপর ঈমান আনা ব্যতিরেকেও কারো ঈমান গ্রহণ যোগ্য নয়।

ইহ ও পরকালের হাকীকত

দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষ মুসাফিরের মত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার কাঁধে হাত রেখে বললেনঃ দুনিয়াতে এমনভাবে থাক যে, তুমি একজন প্রবাসী মুসাফির অধবা একজন পথচারী। (বুখারী)

ধন-সম্পদ একটি পরীক্ষার বস্তু

কা’ব ইবনে ইয়ায (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক উম্মতের, জন্যই একটি পরীক্ষার বস্তু থাকে, আর আমার উম্মতের পরীক্ষার বস্তু হচ্ছে অর্থ-সম্পদ। (তিরমিযী)

পৃষ্ঠা:৯৯

অর্থ-সম্পদের সঠিক ব্যবহার দ্বারা মানুষ কল্যাণ ও পুণ্য অর্জন করতে পারে। আবার এর দ্বারা মানুষ আল্লাহ বিমুখ ও আখিরাত থেকে উদাসীন হয়ে যায়। এ জন্যই এটাকে পরীক্ষার বস্তু বলা হয়েছে। সম্পদ বৃদ্ধির লোভ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আদম সন্তানের জন্য যদি সম্পদে ভরা দুটি প্রান্তরও হয়ে যায় তবুও সে তৃতীয় আরেকটি কামনা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড় অন্য কোন কিছুই ভরতে পারে না। তবে যে আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হয়, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন। (বুখারী, মুসলিম) একজন মানুষের তার সম্পদে আসল অংশ কতটুকু? আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ বলে, আমার মাল, আমার সম্পদ। অথচ তার সম্পদের মধ্যে কেবল তিনটি (খাতে ব্যয় করার) সম্পদই হচ্ছে তার আসল (১) যা সে খেয়ে ফেলল এবং শেষ করে দিল, (২) যা পরিধান করল এবং পুরাতন করে ফেলল (৩) যা দান করে দিল এবং (আখিরাতের জন্য) সঞ্চয় করে রাখল। এর বাইরে যে সম্পদ রয়েছে তা সে লোকদের জন্য রেখে চলে যাবে। (মুসলিম) সম্পদ কম থাকলে হিসাবের ঝামেলাও কম হবে মাহমূদ ইবনে লাবীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তান দু’টি জিনিসকে অপছন্দ করে, অথচ তার জন্য এগুলো ভাল। (১) মৃত্যুকে সে অপছন্দ করে অথচ মুমিনের জন্য ফিতনার চেয়ে মৃত্যুই তাল,(২) অর্থ-সম্পদ কম হওয়া সে অপছন্দ করে, অথচ সম্পদ কম হলে আখিরাতে হিসাবও কম এবং সহজ হবে। (মুসনাদে আহমাদ) আশা ও ভয়ের সমন্বয় আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক যুবকের কাছে গেলেন, যখন সে মৃত্যুর সাথে সাক্ষাত করতে

পৃষ্ঠা:১০০ 

যাচ্ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি নিজেকে কি অবস্থায় মনে করছ? সে উত্তর দিলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহর রহমতের আশা করছি, আবার নিজের গুনাহের জন্য ভয়ও পাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এমন মূহূর্তে যার অন্তরে এ দু’টি জিনিস একত্রিত হয় তাকে আল্লাহ আশার বস্তুটি দান করে থাকেন আর যে জিনিসটি থেকে সে ভয় পায় সেই জিনিস থেকে আল্লাহ তাকে নিরাপদ করে দেন। (তিরমিযী)আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণে যারা ব্যস্ত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের প্রবৃত্তিকে অনুগত’ রাখে এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করে যায়। আর নির্বোধ সেই ব্যক্তি, যে কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর নিকট (মুক্তির) আশা করে বসে থাকে। (তিরমিযী) আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম! আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ কেবল এতটুকুই যে, তোমাদের কেউ সমুদ্রে তার আঙ্গুলটি চুবিয়ে নিল। এবার সে দেখুক, এ আঙ্গুল কতটুকু পানি নিয়ে এসেছে। (মুসলিম) সাহল ইবনে সা’দ (গ।খঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ আল্লাহর নিকট দুনিয়ার মূল্য সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়াটা যদি আল্লাহর নিকট একটি মশার ডানার মতও মূল্যবান হত, তাহলে তিনি কোন কাফিরকে এ থেকে এক চুমুক পানিও পান করতে দিতেন না। (আহমাদ, তিরমিযী) দুনিয়া বিমুখ ব্যক্তির মর্তবা আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন মানুষকে দেখ যে, তাকে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি এবং কম কথা বলার গুণ দান করা হয়েছে তখন তোমরা তার সংস্রবে যাও। কেননা, তার প্রতি হিকমত তথা রহস্য জ্ঞান অবতীর্ণ করা হয়। (বায়হাকী)

পৃষ্ঠা:১০১

আল্লাহর খাঁটি বান্দার পরিচয়

মু’আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাকে ইয়ামন পাঠিয়েছিলেন, তখন (উপদেশ দিয়ে) বলেছিলেনঃ সাবধান। ভোগ বিলাসে লিপ্ত হয়ো না। কেননা, আল্লাহর বান্দারা ভোগ-বিলাসী হয় না। (মুসনাদে আহমাদ)

কিধরণের রিযিক কাম্য?

আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ করেছেনঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ পরিবারকে তুমি জীবন ধারণের উপযোগী রিযিক দান কর। (বুখারী, মুসলিম) দুনিয়া মুমিনের জন্য কয়েদখানা আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া মুমিনের জেলখানা আর কাফিরের জন্য বেহেশত। (মুসলিম) জেলখানায় মানুষ যেমন নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারে না, বরং কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা ও নির্দেশানুযায়ী চলতে হয়, তদ্রুপ দুনিয়ায় মুমিন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু করতে পারে না, তাকে আল্লাহর বিধানের অধীন হয়ে থাকতে হয়। অনুরূপভাবে জেলখানায় কেউ সুখে থাকলেও নিজেকে সুখী মনে করে না, বরং মুক্ত হয়ে বাড়ীতে ফিরে আসতে চায়। তদ্রপ মুমিন ব্যক্তি দুনিয়ার সুখকে প্রকৃত সুখ মনে না করে সে জান্নাতের সুখের প্রত্যাশায় থাকে।

দুনিয়ার প্রতি মন লাগালে

আবু মুসা আশ’আরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দুনিয়াকে ভালবাসবে সে নিজের আখিরাতের ক্ষতি করবে। আর যে ব্যক্তি তার আখিরাতকে ভালবাসবে সে নিজের দুনিয়ার ক্ষতি করবে। অতএব, তোমরা ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার উপর স্থায়ী আখিরাতকে অগ্রাধিকার দাও। (মুসনাদে আহমাদ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাচুর্য পছন্দ করেননি আবূ উমামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার প্রতিপালক মক্কার প্রান্তরকে আমার জন্য/in সোনা বানিয়ে দিতে প্রস্তাব করেছিলেন। আমি বললাম, হে আমার প্রতিপালক।

পৃষ্ঠা:১০২

আমি এটা চাই না; বরং আমি একদিন পেট ভরে খাব, আরেকদিন উপোস করব। যে দিন উপোস করব, সে দিন তোমার কাছে কান্নাকাটি করব এবং তোমাকে (বেশী করে) স্মরণ করব। আর যে দিন পেট ভরে খাব সে দিন তোমার প্রশংসাবাদ করব এবং তোমার শোকরগুযারী করব। (আহমাদ, তিরমিযী)অল্প রিযিকে তুষ্ট থাকলে আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে অল্প রিযিক পেয়ে তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তা’আলা তার পক্ষ থেকে অল্প আমলে খুশী থাকেন। (মুসনাদে আহমদ) মৌলিক প্রয়োজন পুরণ হয়ে গেলে মানুষের আর অন্য কিছু দাবী করা চলে না উসমান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানের জন্য-এই (চারটি) জিনিস ব্যতীত অন্য কোন কিছুর হক ও অধিকার নেই। (১) বসবাসের ঘর, (২) লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড়, (৩) শুকনো (অথবা মোটা) রুটি এবং(8) পানি। (তিরমিযী) দুনিয়ার বেলায় নিজের চেয়ে নিম্নস্তরের লোকদেরকে দেখবে আবূর্যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয়তম বন্ধু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে সাতটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।(১) দরিদ্র মিসকীনদেরকে ভালবাসতে এবং তাদের কাছে থাকতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। (২) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন আমার নিম্নস্তরের লোকদেরকে দেখি এবং আমার উপরের স্তরের লোকদেরকে যেন না দেখি(৩) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখি, যদিও তা দূরের সম্পর্ক হয় (অথবা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যায়,)

পৃষ্ঠা:১০৩

(৪) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন কারো কাছে কোন কিছু সওয়াল না করি। (৫) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন সত্য বলে যাই, যদি তিক্তও হয়, (৬) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আল্লাহর হুকুমের বেলায় কোন ভৎসনাকারীর তিরস্কারকে ভয় না করি। (৭) তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন বেশী করে ” লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পড়ি। কেননা, এ বাক্যগুলো আরশের নীচের ভাণ্ডার থেকে আগত। (মুসনাদে আহমাদ)

কোন নাফরমান বান্দার প্রাচুর্য হলে

আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি কোন পাপাচারী ব্যক্তির নিয়ামত দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ো না। কেননা, তুমি জান না,সে তার মৃত্যুর পর কী বিপদের সম্মুখীন হবে। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে তার জন্য এমন ঘাতক রয়েছে, যার মৃত্যু নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে ঘাতক দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য জাহান্নামের আগুন। (শরহুস সুন্নাহ)

বান্দার হক সমূহ

জালিমের সহায়তা করাও জঘন্য অপরাধ

আউস ইবনে শুরাহবীল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জালিমের সহায়তার জন্য পা বাড়ায়, অথচ সে জানে, লোকটি জালিম, সে ইসলাম থেকে (অর্থাৎ ইসলামের শিক্ষা থেকে) বের হয়ে গেল। (বায়হাকী)

হত্যা ও খুন মহাপাপ

বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার চাইতে দুনিয়াটা ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লার নিকট অনেক তুচ্ছ ব্যাপার। (ইবনে মাজাহ)

মজলুমের বদ দু’আ লেগে যায়

ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয (রাযিঃ)-কে ইয়ামন প্রেরণ করলেন। তিনি তাকে বললেনঃ মজলুমের দু’আকে ভয় করবে। কেননা, এর মাঝে ও আল্লাহর মাঝে কোন অন্তরায় থাকে না। (বুখারী)

পৃষ্ঠা:১০৪

কারো কোন পাত্র ভেঙ্গে ফেললে আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের এক স্ত্রীর ঘরে অবস্থানরত ছিলেন। এমন সময় অন্য এক স্ত্রী জনৈকা পরিচারিকার হাতে একটি পাত্রে করে কিছু খাবার পাঠালেন। প্রথমোক্ত স্ত্রী পরিচারিকার হাতে থাপড় মারলেন এবং পাত্রটি ভেঙ্গে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রটি জোড়া লাগিয়ে এতে খাবার তুলে নিলেন এবং বললেনঃ “তোমরা সবাই খাও”। এই বলে তিনি পরিচারিকাকে পাত্রসহ আটকিয়ে রাখলেন। এভাবে সবাই খাওয়ার কাজ শেষ করে নিল। এবার তিনি একটি আস্ত ও নিখুঁত পাত্র ফেরত দিলেন এবং ভাঙ্গা পাত্রটি (এই ঘরে) রেখে দিলেন। (বুখারী) কারো হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করাআবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন-মুমিনুকে হত্যা করার ব্যাপারে সামান্য কথা দিয়ে সাহায্য করল, সে মহান আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার কপালে লিখা থাকবেঃ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। (ইবনে মাজাহ)

জিহাদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

জিহাদে নারী ও শিশু হত্যা নিষেধ

ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করে দিলেন। (বুখারী)

ইসলামে জিহাদের মূলনীতি

আবূ ওয়ায়েল (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাযিঃ) পারস্যবাসীর নামে নিম্নোক্ত পত্র লিখেনঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের পক্ষ থেকে পারস্য সম্প্রদায়ের (নেতা) রুস্তম ও মিহরানের প্রতি। হিদায়েত অনুসরণকারীদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর আমরা তোমাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। যদি ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার কর তাহলে বশ্যতা স্বীকার করে জিযিয়া প্রদান কর। কেননা, আমার সাথে এমন লোক রয়েছে,

পৃষ্ঠা:১০৫

যারা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াকে এমন ভালবাসে, যেমন পারস্যবাসীরা মদকে ভালবাসে। হিদায়েত অনুসরণকারীদের উপর শাস্তি বর্ষিত হোক। (শরহুস সুন্নাহ) অন্যায় কাজে বাধা প্রদান ঈমানী দায়িত্ব আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় কাজ দেখলে সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিহত করে। সে যদি এতটুকু শক্তি না রাখে তাহলে মুখে প্রতিবাদ করবে, আর এটাও যদি করতে না পারে তাহলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এটা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতম পর্যায়। (মুসলিম) আল্লাহর বাণী তথা দ্বীনকে সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টাই জিহাদ আবূ মূসা আশ’আরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর পথে জিহাদ কোনটি? কেননা, আমাদের কেউ তো ক্ষোভের কারণে যুদ্ধ করে, আবার কেউ গোষ্ঠী-প্রীতির কারণে যুদ্ধ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার দিকে মাথা তুললেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি কেবল এ কারণে মাথা উঠালেন যে, প্রশ্নকারী লোকটি দাঁড়ানো ছিল। এবার তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করে যে, আল্লাহর বাণী সমুন্নত হোক, সেই হচ্ছে আল্লাহর পথের মুজাহিদ। (বুখারী)

জিহাদের ফযীলত

আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর পথের মুজাহিদের দৃষ্টান্ত হল-আর আল্লাহই ভাল জানেন, কে তার পথে জিহাদ করে-ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে সর্বদা রোযা রাখে ও নফল নামাযে দাঁড়িয়ে রাত কাটায়। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর পথে জিহাদকারীর জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি তাকে (শহীদী) মৃত্যু দিয়ে জান্নাতে দাখিল করবেন অথবা নিরাপদে পুণ্য অথবা গণীমতসহ বাড়ীতে ফিরিয়ে আনবেন। (বুখারী) জিহাদ না করে যে মারা যায় আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ না করে এবং অন্তরে জিহাদের ইচ্ছা না রেখে মারা গেল, সে নিফাকের একটি চরিত্র নিয়ে মারা গেল।

পৃষ্ঠা:১০৬

খাঁটি অন্তরে যে শাহাদত কামনা করে

সাহল ইবনে হুনায়ফ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর নিকট শাহাদত কামনা করল, আল্লাহ তা’আলা তাকে শহীদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন। সে যদি নিজের বিছানায়ও মারা যায়। (মুসলিম)

শহীদী মৃত্যুতে কষ্ট নেই

আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শহীদ ব্যক্তি মৃত্যুর কষ্ট কেবল এতটুকুই অনুভব করে, তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে। (তিরমিযী, নাসায়ী)

মুখের দ্বারাও জিহাদ করা যায়

আনাস (রাযিঃ) সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের সম্পদ দিয়ে, জীবন দিয়ে এবং মুখ দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর। (আবূ দাউদ, নাসায়ী)

আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তফোঁটা

আবু উমামা (রাযিঃ) সূত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় কোন জিনিস আর নেই। (১) আল্লাহর ভয়ে নিগর্ত অশ্রু ফোঁটা, (২) আল্লাহর পথে প্রবাহিত (মুজাহিদের) রক্তের ফোঁটা। আর চিহ্ন দু’টি হচ্ছে (১) আল্লাহর পথে আঘাতের চিহ্ন, (২) আল্লাহ নির্ধারিত কোন ফরয আদায়ের চিহ্ন। (তিরমিযী)

সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ

উকবা ইবনে আমির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তীরান্দাজী শিখে তা ছেড়ে দিল সে আমাদের কেউ নয়- অথবা বলেছেন, সে নাফরমানী করল। (মুসলিম)

সমাপ্ত

Home
E-Show
Live TV
Namaz
Blood
Job