আরবী সকল ভাষার জননী
পৃষ্ঠা ১ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০১
ভাষা ও লিপি সৃষ্টির গোড়ার কথা
কুরআনে১ উল্লেখিত হইয়াছে যে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন ও তাহাকে বাশক্তি দান করিয়াছেন। কথাবার্তা, লিখন ভঙ্গি এবং অনুরূপ বিভিন্ন কায়দা যাহা দ্বারা একজন মানুষ তাহার মনের ভাব প্রকাশ করে তাহাই বাশক্তি। আল্লাহ ইহাকেই মনুষ্য জাতির ২ উপরে তাঁহার সর্বশ্রেষ্ঠদান বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। কোনও বস্তুর নাম করিবার সময়ে বস্তুটির সর্বাপেক্ষা অধিক প্রকৃতি নির্দেশক যাহা অনুমতি হইত তাহার জাতীয় কোনও সামগ্রিক গুণ আবিষ্কার না করিয়া মানুষ কোনও কিছুর নামকরণ করিতে পারিত না। বাশক্তি ব্যতীত কোনও যুক্তি হইতে পারিত না এবং যুক্তি ক্ষমতা ব্যতিরেকে কোন বাশক্তিও হইত না। অতএব, আল্লাহ সর্বপ্রথমেই ধারণা শক্তি ও যুক্তি-ক্ষমতা দ্বারা অলংকৃত করিয়া মানুষ সৃষ্টি করিলেন। যে অসাধারণ যন্ত্রে শব্দের ও চিন্তার খেলা চলে আল্লাহ্ সেই আশ্চর্য শক্তিশালী কণ্ঠ যন্ত্র দান করিয়া মানুষকে অনুগৃহীত করিয়াছেন। মানুষকে চিন্তা করিতেই হয়। চিন্তার প্রথম প্রদর্শনী বাক্য। মানুষ যেমন আল্লাহ্র সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তেমনি বাশক্তি যাহা তাহাকে অন্যান্য সৃষ্টি হইতে পৃথক করিয়া রাখিয়াছে তাহা মানুষের উপরে, আল্লাহ্ প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ মানসিক শক্তি। কথা বলিবার এই সক্ষমতাই মানুষকে ফেরেশতাদেরও উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছে এবং দুনিয়াতে তাহাকে ‘আল্লাহর প্রতিনিধি’ উপাধিতে ভূষিত করিয়াছে।৩ হিন্দু, খ্রীষ্টীয়, মিসরীয় এবং গ্রীদের মধ্যে বাশক্তি জ্ঞান ও শক্তির উৎস বলিয়া বিবেচিত হইত। প্রাচীন সভ্যতাসমূহে ইহাকে (বাশক্তিকে) এই দুনিয়ার সমগ্র সৃষ্টির কারণ বলিয়াও বিশ্বাস করা হইত। ‘তেহুতি’ বা ‘থথ’ ছিল মিসরের দেবতা, যাহার মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশিত হইত। আলেকজান্দ্রিয়ার ধর্মযাজক (Clement of Alexandria) থথের বিয়াল্লিশটি গ্রন্থের নাম করেন যাহাদের মধ্যে প্রেরিত পুরুষ সম্পর্কিত প্রথম দশটি আইন ও দেবতাদের বিবরণ দেয়। নিম্নোক্ত দশটিতে বলি দান ও ভোজ সম্পর্কে নিয়ম-কানুনসমূহ রহিয়াছে। (Encyclopaedia of Religion and Ethics by Hastings, Vol. 2, Page 793 দ্রষ্টব্য)। ‘থ’ বা ‘তেহুতি’ অর্থাৎ বাক্য, চিত্রাক্ষর বা অক্ষরের আবি … এবং জ্ঞানের দেবতা।
পৃষ্ঠা:০২
(New Century Cyclopaedia of Names গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)। যে পর্যন্ত নাম উচ্চারিত হইত না সে পর্যন্ত কোনও সজীব বা নির্জীব পদার্থ অস্তিত্বে আসিত না। ঈশ্বর সমস্ত বস্তুর নাম ঘোষণা করিতেন এবং তাহাদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাহারা অস্তিত্ব পাইত। ঈশ্বরই শব্দ ও লিপি সমূদয়ের গ্রন্থকার। ঈশ্বরের মুখ হইতে যাহাই বহির্গত হইত তাহাই শব্দ সম্পদ হইত। বস্তুত ঈশ্বরই ছিল শব্দ এবং শব্দই ছিল ঈশ্বর । ৪ ব্রাহ্মণগণ ও গ্রীকগণ ভাষার উন্নতি বিরোধী ছিল। গ্রীকগণ বাক্যকে পবিত্র দেবতা (LOGOS) লোগোসের দান বলিয়া মনে করিত। এই লোগোস শব্দটিও আরবী শব্দ লুগাহ (LUGHAH) হইতে উৎপন্ন হইয়াছে এবং ইংরাজী শব্দ ল্যাঙ্গুয়েজ (Language)ও একই মূল হইতেই উৎপন্ন। গ্রীকগণ মনুষ্য জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছিল, পবিত্র দেবতা কর্তৃক যাহারা কথা বলিবার ক্ষমতা দ্বারা অনুগৃহীত হইয়াছিল, একমাত্র গ্রীকগণই এই পর্যায়ভুক্ত হইত এবং বাদবাকী সমস্ত মনুষ্য জাতিকেই তাহারা ‘অ্যাগ্নোসোই’ (Aglossoi) বলিয়া অভিহিত, করিত, অর্থাৎ যাহারা বাক্-ক্ষমতা লাভ করে নাই। একই পদ্ধতিতে জার্মানগণ বাদবাকী মনুষ্য জাতিকে ‘ভিলা’ (Veela) বা ভল্লা (Valla) বলিত, যাহার অর্থ অপরিচ্ছন্ন। কথাবার্তায়, পোষাক-পরিচ্ছদে এবং আচার-ব্যবহারে ভিন্ন জনগণকে অনুসরণ করাকে তাহারা অপমানজনক মনে করিত। মেরু প্রদেশের লোকেরা তাহাদের প্রতিবেশীদিগকে ‘ন্যায়ীমাই’ (Naeemi) অর্থাৎ বোবা মনে করিত। তুর্কীগণ, রুশগণ, স্লোভাকগণ, বুলগেরীয়গণ প্রায় সব জাতিই তাহাদের নিজেদিগকে মুক বলিয়া মনে করিত।
পৃষ্ঠা:০৩
মনুষ্য জাতির প্রাচীনতম ভাষা
মধ্য যুগে এইমত বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, হিব্রু ভাষাই মনুষ্য জাতির প্রাচীনতম ভাষা। (Jewish Encyclopaedia, Hastings, p. 307 দ্রষ্টব্য।) সেন্ট জেরোম (st. Jerom) দামেস্ক শহরে প্রেরিত তাহার পত্রসমূহের একটিতে লিপিবদ্ধ করেন-সমগ্র প্রাচীনকাল দৃঢ়রূপে ব্যক্ত করে যে হিব্রু ভাষা, যাহাতে পুরাতন বাইবেল পুস্তক লিপিবদ্ধ হইয়াছে, তাহাই সমগ্র মনুষ্য ভাষার প্রারম্ভ। (The Science of Language by Max Muller p. 145 দ্রষ্টব্য।) ধর্মীয় স্তোত্র পুস্তকে অরিগেন (Origen) তাঁহার একাদশ ধর্মোপদেশে তাঁহার এমত বিশ্বাস প্রকাশ করিয়াছেন যে মূলতঃ আদমের মাধ্যমে প্রদত্ত হিব্রু ভাষা পৃথিবীর সেই স্থানে বিদ্যমান ছিল যাহা ছিল ঈশ্বরের পছন্দ করা স্থান। (Ibid, p. 146 দ্রষ্টব্য)কোন প্রাচীন গ্রীসবাসী কখনো কোন বিদেশী ভাষা শিখিবার কথা ভাবিতেও পারিত না। কেনইবা সে পারিবে? সে সমস্ত পৃথিবীটাকে গ্রীসবাসীদের এবং বব্বরদের মধ্যে ভাগ করিয়া লইত এবং বর্বর প্রতিবেশীর পোষাক-পরিচ্ছদ বা আচার-ব্যবহার অথবা ভাষা গ্রহণকে সে নিজের অধঃপতন মনে করিত। গ্রীসবাসীগণ বর্ব্বরদিগকে অ্যাগ্লোসোই (Aglossoi) অথবা বাক্যহীন বলিয়া আখ্যায়িত করিত। (The Science of language by Max Muller, 1- 891. দ্রষ্টব্য)।হলেও দেশীয় একজন গ্রন্থকার প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন যে, স্বর্গের ভাষা হলেণ্ডের ভাষাই হইবে (Hermathena Joannia Goropu Becani, Antwerpiae, 1580 দ্রষ্টব্য) এবং সুইডেনবাসীদের মধ্যে একটা প্রচলিত কথা আছে: ‘ঈশ্বর আদমের সঙ্গে কথা কহিয়াছিলেন সুইডেনের ভাষায়, উত্তর পাইয়াছিলেন ডেনমার্কের ভাষায় (অর্থাৎ আদম উত্তর দিয়াছিলেন ডেনমার্কের ভাষায়) আর সর্পটি ইভ-এর (অর্থাৎ হাওয়ার) সঙ্গে কথা বলিয়াছিল ফরাসী দেশের ভাষায়। (Andre Kemp in his work on The Language of Paradise, দ্রষ্টব্য)। পারশ্য ভাষার একটি প্রচলিত কথায় বিবৃত হয় যে, স্বর্গে মাত্র তিনটি ভাষাই জানা ছিল: সর্পটি আরবীতে কথা কহিত এবং আদম ও হাওয়া (Eve) ফার্সীতে কথাবার্তা বলিতেন আর জিব্রাইল আলাপ করিতেন তুর্কী ভাষায়। ছার্ডিন (Chardin) বর্ণনা করেন যে পারশ্যবাসীরা বিশ্বাস করে স্বর্গে তিনটি ভাষা কথিত হইয়াছে, আরবী সর্পের
পৃষ্ঠা:০৪
দ্বারা ইত্যাদি (Ibid, p. 149 দ্রষ্টব্য)। ভাষার সমতুল হিন্দী শব্দ বাক্ এবং হিন্দুগণ ইহাকে ঈশ্বর বলিয়া বিশ্বাস করিত। তাহারা আরও বিশ্বাস করিত যে, সংস্কৃত ঈশ্বরের ভাষা এবং ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য কেহই ইহাতে কথাবার্তা বলিবে না। অতএব তাহাদের পবিত্র লিপিসমূহের ভাষা অনেকের দ্বারাই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ভাষা বা মানুষের প্রাকৃতিক ভাষা বলিয়া গৃহীত হইয়া থাকে। বৌদ্ধগণ দাবী করে যে, মাগধীই সমস্ত ভাষার জননী। (Chips From a German Workshop, Vol. 4, p. 23 দ্রষ্টব্য)। ইহুদী ধর্মশাস্ত্র মতে স্বর্গের অধিবাসীগণ একটি মাত্র ভাষাই বলিত। ৫ ব্যাবিলনের অধিবাসীরা আকাশ বাহিয়া স্বর্গে পৌঁদিবার চেষ্টার বিষয়ে চিন্তা করিত এবং তাহারা একটি গগনস্পর্শী প্রাসাদ তেয়ার করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। দলিল আছেঃ “এবং সমগ্র পৃথিবী ছিল এক ভাষা ও এক বাশক্তির। এবং কালক্রমে যখন তাহারা পূর্ব দিক হইতে পর্যটনে বাহির হইয়াছিল তখন তাহারা সীনার দেশে (Land of Shinar) একটি সমভূমি দেখিতে পাইয়াছিল এবং তাহারা তাহারা একে অপরকে বলিয়াছিল চল, আমরা ইট প্রস্তুত করি এবং সেগুলোকে সম্পূর্ণরূপে পোড়াই। এবং তাহারা প্রস্তরের জন্য ইট পাইয়াছিল এবং চুন, বালি ও জলের মিশ্রণের জন্য চুন পাইয়াছিল। এবং তাহারা বলিয়াছিল চল, আমরা একটি নগর ও একটি গগন- স্পর্শী প্রাসাদ তৈয়ার করি যাহার উচ্চ চূড়া স্বর্গ পর্যন্ত পহুঁছিতে পারে, এবং আমরা একটা নাম ঠিক করি, নতুবা আমরা সমগ্র পৃথিবীর বুকে চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িতে পারি। এবং মনুষ্য সন্তানগণ যে নগর ও গগনস্পর্শী প্রাসাদ তৈয়ার করিয়াছিল তাহা দেখিবার জন্য প্রভু নীচে নামিয়া আসিয়াছিলেন। এবং প্রভু বলিয়াছিলেন, অবলোকন কর, জনগণ এক এবং তাহাদের সকলের একটি ভাষা রহিয়াছে। এবং তাহারা যাহা করিতে মনস্থ করিয়াছে এখন তাহা হইতে কোন বাধাই হইবে না। চল, আমরা নীচে যাই, এবং সেখানে তাহাদের ভাষ্যবিশৃঙ্খল করি যাহাতে তাহারা একে অপরের কথাবার্তা বুঝিতে না পারে।
পৃষ্ঠা:০৫
সুতরাং ইহার আখ্যায়িত নাম ব্যাবেল (Babel), কারণ এই হইতে প্রভু তাহাদিগকে সমগ্র পৃথিবীর বুকে বিদেশে চারিদিকে ছড়াইয়া দিয়াছিলেন।৬ (Genesis XI: 1-9. এইভাবে এই কারণেই, ন্যায় বা অন্যায়ভাবেই হউক, বাইবেলের মতে, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মনুষ্য জাতির একতাকে অপছন্দ করিয়াছিলেন এবং তিনি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছিলেন আর জনগণের ভাষাসমূহে বিভিন্নতা সৃষ্টি করিয়াছিলেন। সে যাহা হউক, এই হইতে ইহা সুস্পষ্ট যে, কোনও এক সময়ে সমগ্র মনুষ্য জাতি একই জায়গায় বাস করিত এবং একই ভাষা বলিত। বর্ণিত পাওয়া যায় যে, আদমের ষষ্ঠ পুরুষানুক্রমের মধ্যে ঈশ্বর তিন শত বৎসর পর্যন্ত পুরাতন বাইবেলের প্রধান ধর্মাধ্যক্ষের সহিত বসবাস করিয়াছিলেন এবং তাহাকে এই ভাষা শিক্ষা দিয়াছিলেন। (Genesis V: 23, 24.)
পৃষ্ঠা:০৬
ভাষা সম্পর্কে প্রাচ্য ভাষাবিদদের মতামত
যাহারা ভাষা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাদি করিয়াছেন এবং এই সমুদয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকাদি রচনা করিয়াছেন অধ্যাপক এফ, ম্যাক্সমুলার (Professsor F. Max Muller) এবং প্রাচ্যদেশীয় ভাষাভিজ্ঞ এমন অধিকাংশ পণ্ডিতদের অভিমত যে, পৃথিবীর সমুদয় ভাষাকে তিনটি গোত্রে ভাগ করা যাইতে পারে, যথা-আর্যজাতি (Aryan race), সেমীয় জাতি, (Semitic race) তৃতীয়তঃ জাম্মান (Teutonic) বা মোঙ্গলীয় জাতির (Mongolian race) ভাষা সমুদয়। তাহারা শেষ গোত্রের ভাষাসমূহের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন নাই এবং আর্য ও সেমীয় জাতির ভাষাসমূহেই অধিক মনোনিবেশ করিয়াছেন। তাহাদের অভিমত এই যে, ইংরাজী ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষা সমুদয় এবং গ্রীস ও পারশ্যের প্রাচীন ভাষা ল্যাটিনেরও মত সংস্কৃতই আর্যজাতির ভাষাসমূহের উৎস। তাহারা এই মত পোষণ করেন যে, সমুদয় ভাষার জননী বা প্রকৃত উৎস যেমন করিয়াই হউক বিলুপ্ত হইয়াছিল এবং সংস্কৃত এই মৃত জননীরই মৃত কন্যা, কারণ সংস্কৃত, গ্রীক, জাম্মান, ল্যাটিন ও স্ক্যান্ডেনেভীয় (উত্তর ইউরোপের নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্কের সম্মিলিত প্রাচীন নাম) ভাষার মূল শব্দ একই। ইংরাজী ও জাম্মান ভাষার অভিধানসমূহে এই শব্দসমূহের বুৎপত্তি সংস্কৃত ভাষাতেই সন্ধান করা হইয়াছে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদসমূহ ল্যাটিন ভাষা হইতে ধার করা হইয়াছে। কিন্তু ভাষায় বুৎপত্তিসমূহ ব্যবহারের এই রীতি পৃথিবীর কোন অংশেই বিদ্যমান নাই বা কখনো ইহা হইবেও না। যখনই মানুষ একটি ভাষা আবিষ্কার করিয়াছিল বা আল্লাহ্ তাহাকে ভাষা শিক্ষা দিয়াছিলেন তখন প্রথম শব্দ সমুদয় যাহা রচিত হইয়াছিল বা যাহা ব্যবহৃত হইয়াছিল তাহা ছিল বিশেষ্য সমুদয় (Nouns)। আজ পর্যন্তও পৃথিবীর যে কোন অংশে যেখানেই একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে, সে প্রথমেই যাহা শিখে তাহা নাম সমুদয়। ভাষাবিৎগণ দাবী করেন যে, মনুষ্য জাতিকে একতাবদ্ধ করিবার জন্যই ভাষার সৃষ্টি হইয়াছে। কেহ কেহ মনে করেন যে, মানুষ প্রথমে অঙ্গভঙ্গি আবিষ্কার করিয়াছিল, কারণ, নামসমূহ আকার-ইঙ্গিত দ্বারাও বুঝান যাইত। উদাহরণ স্বরূপ যখন লোকে একটি নেকড়ে বাঘ দেখিত তাহারা তখন ইহার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিত এবং বলিত যে, ইহা আসিতেছে। ইহার বিপরীতে, কাহারো কাহারো অভিমত যে, নাম সমুদয়ই ভাষার প্রধানতম অংশ, সুতরাং লোকে প্রথমে নিশ্চয়ই ‘নেকড়ে বাঘ’ ‘নেড়ে বাঘ’ বলিয়াছে এবং ইহার আগমনের একটি ইঙ্গিতে করিয়াছে। ইস্লামের দৃষ্টিতে যতদূর বলা যায় তাহাতে আল্লাহ্ নিজেই মানুষকে বাশক্তি
পৃষ্ঠা:০৭
সংস্কৃত: ইহার গুপ্ত সন্তান
দিয়াছিলেন এবং মানুষকে প্রথমেই যাহা শিখাইয়াছিলেন তাহা ছিল নাম সমূদয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে নাম সমুদয় শিখাইয়াছিলেন অথবা তিনি তাহাদিগকে নাম সমুদয় আবিষ্কার করিবার ক্ষমতা দিয়াছিলেন (The Quran, 2: 30। একটি শিশুও, যাহা বিশেষ্য সেই “মা” “বাবা” শব্দের দ্বারা তাহার প্রথম কথা বলিবার চেষ্টা করে।
পৃষ্ঠা:০৮
সংস্কৃত সকল ভাষার জননী নহে
অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার (Professor Max Muller) তাহার বিস্ময়কর পুস্তক ‘দি সায়েন্স অব ল্যাঙ্গুয়েজ, ১৮৯১, খণ্ড ১, পৃঃ ২৩৪ (The Science of Language, 1891, Vol. 1, p. 234)-এ বলেন-‘বেদ-এর ধর্মই আর্য জগতের অন্যান্য ধর্ম সমুদয়ের উৎস নহে। সংস্কৃতও সমস্ত আর্য ভাষার জননী নহে। গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার সঙ্গে তুলনামূলকভাবে সংস্কৃত জ্যেষ্ঠা ভগিনী, জননী নহে।’ একই পুস্তকের ৭৭ পৃষ্ঠায় তিনি বলেন, “বেদে অথবা ব্রাহ্মণদিগের পরবর্তী সাহিত্যে আমরা দেখিতে পাই যে, হিন্দুস্থানী ভাষা সংস্কৃত ভাষার কন্যা নহে, সংস্কৃত ভাষাও যাহা হইতে উদাত হইয়াছে সেই একই বংশ হইতে উদ্দাত জীবিত ভারতীয় ভাষাসমূহের ইহা একটি শাখা।” এবং ঐ সকল আর্য ভাষীদিগের প্রতি যাহা প্রযোজ্য তাহা আরবী ভাষীদের প্রতি আরও অধিকতর জোরের সহিতই প্রযোজ্য, কারণ সেমিটিক ভাষার প্রাচীন লিপি সমুদয়, যাহা ব্যাবিলনীয়, ফিনিশীয়, হিব্রু ও আরবী ভাষা রূপে পৃথক করা হইয়াছে তাহা সংস্কৃত বা গ্রীক ভাষার সর্ব প্রাচীন লিপি হইতেও অনেক বেশী প্রাচীনকালের নির্দেশ দেয় বলিয়া আমাদিগকে বিবৃত করা হইয়া থাকে। হিব্রু ভাষা অপেক্ষাও আরবী অধিকতর প্রাচীন। (Ibid, p. 49)
পৃষ্ঠা:০৯
মানব জাতি একটি মাত্র ভাষাই বলিত
সে যাহা হউক, ইহা একটি স্বীকৃত সত্য যে, কোনও এক সময়ে এই পৃথিবীর স্বর্গে একটি মাত্র ভাষাই ছিল এবং সমগ্র মানব জাতি একটি মাত্র তাঘাই বলিত, এবং সেই ভাষাই সকল ভাষার জননী আর নেই মূল হইতেই ল্যাটিন, গ্রীক, সংস্কৃত প্রভৃতি কন্যাগণ উদগত হইয়াছে। হিব্রু আদিম ভাষা নহে। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের কয়েক শতাব্দী পূর্বে ইহুদীদের দ্বারা যে ভাষা কথিত হইত উহারই প্রচলিত নাম হিব্রু। পুরাতন বাইবেল গ্রন্থে হিব্রু শব্দটি নাই। পরবর্তীকালে ইহুদীগণ ইহাকে “পবিত্র ভাষা” হিব্রু বলিত। সুতরাং “হিব্রু ভাষা” কথাটি পুরাতন বাইবেলের সময় পর্যন্ত পশ্চাতেও যায় না। “হিব্রু” শব্দ “ইব্রি” (Genesis 10:11) কিছু আরবী ও আরামা (প্যালেস্টাইনের উত্তর পূর্ব দিকের ভাষা) ভাষা গোত্রের শব্দ দ্বারা গঠিত। (The New Schaff Herzog Encyclopaedia of Religious Knowledge, under the caption Hebrew Language). বাইবেল বিবৃত করে যে, ব্যাবিলন হইতেই ভাষার পার্থক্য শুরু হয়, এবং ইহা ভাষারই পার্থক্য যাহা মনুষ্য জাতির মধ্যে শত্রুতা ও মতানৈক্যের সৃষ্টি করিয়াছিল অথবা জনগণের মধ্যেকার ঝগড়া ও বাদানুবাদ ভাষাসমূহের একটি পার্থক্যের সূচনা করিয়াছিল। আর্য৭ ও পারসিকগণ প্রথমে ভাই ভাই ছিল। পরে তাহাদের মধ্যে বিবাদ ঘটিল: আর্যগণ ঈশ্বরকে “দেব” (ঈশ্বর) নামে ডাকিত আর সেই কারণে পারসিকগণ “শয়তানকে” সেই নাম দিত।
পৃষ্ঠা:১০
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা শব্দার্থের পরিবর্তন ঘটায়: হিন্দু শব্দের অর্থ
“হিন্দু”৮ শব্দটি ভারত বর্ষে একজন ভদ্রলোককে বুঝাইতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পারস্য দেশে এই শব্দটি ব্যবহৃত হইত একজন “চোর” বা “চাকরকে” বুঝাইবার জন্য। ইহা মোটেই বিশ্বয়কর নহে। সে রকম শত শত উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে, যাহা দুই জাতির মধ্যেকার বহুকালের গুপ্ত শত্রুতার এক প্রমাণ। ভারতবর্ষে উর্দু ভাষাতেও (এমন কি বাংলা ভাষাতেও) একই অবস্থা ঘটিতেছে। যদি পাঞ্জাবের মুসলমানগণ তাহাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় “মতলব” (উদ্দেশ্য) শব্দটি ব্যবহার করে তবে শিখ ও হিন্দুগণ শব্দটি বিকৃত করে এবং বলে ‘মতবল।’ তাহারা চাকু (ছুরি)-কে বিকৃত করে এবং বলে ‘কাচু’, “ডেক্চা” (রান্নার হাড়ি)-কে বলে ‘ডেচকা।’ এই রকম বহু সংখ্যক উদাহরণ রহিয়াছে যেখানে হিন্দু এবং শিখগণ শব্দের আকৃতি পরিবর্তিত করিয়াছে শুধু মাত্র এই কারণেই যে মুসলমানগণ ইহা তাহাদের কথাবার্তায় ব্যবহার করে। একজন হিন্দু ইংরেজী অক্ষর এফ (F) বেশ ভালো রূপেই উচ্চারণ করিতে পারে, কিন্তু যখন সে উর্দু অক্ষর ফে (Fe) পায় যাহা ইংরেজীর এফ (F)-এর তুল্য, সে যেমন করিয়াই হউক ‘এফ’ (F) বা ‘ফে’ (Fe) বলিতে অক্ষমতা বোধ করে এবং ইহাকে বলে পেহ্ (phe)। হিন্দু পণ্ডিতগণ ‘লক্ষ্য’ (Lafz) শব্দটির উচ্চারণ নষ্ট করিয়াছে এবং পরিবর্তে বলে “লপহজ” (Laphaj)। মাদ্রাজ প্রদেশে (ভারত বর্ষে) “আয়ার” (Ayar) ও “নায়ার “দের (Nayars) মধ্যে পার্থক্য রহিয়াছে, যাহাকে বলিতে হয় ব্রাহ্মণগণ ও অব্রাহ্মণগণ। একজন আয়ার একজন নায়ারকে অস্পৃশ্যই শুধু মনে করে না, এমন কি একজন নায়ারের ভাষায় কথাবার্তা বলাকেও অপবিত্র মনে করে।
পৃষ্ঠা ১১ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:১১
একজন আয়ার কখনও একজন নায়ারের ভাষার একটি শব্দও বলে না এবং নায়ারকে তাহার ভাষায় কথা বলিবার অধিকারও দেয় না। ভাষার পার্থক্য বিভিন্ন শব্দই শুধু সৃষ্টি করে না, ইহা বিশিষ্ট আত্মীয়দের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঘটায়। জনগণ যাহারা পুরুষানুক্রমে এক সঙ্গে বসবাস করিয়াছে তাহারা একে অপরের শত্রু হইয়া দাঁড়ায়।
পৃষ্ঠা:১২
ইসলামে মানুষের মর্যাদা
মানুষের মর্যাদা শব্দটি বেদ-এ ‘নাই। পুরাতন বাইবেল (Old Testament)-এ যীশু খ্রীষ্টের প্রচারিত বাণীতে এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে ঈশ্বরের নিজের পছন্দ করা জাতি, উপজাতিসমূহ ও বর্ণ সমুদয় রহিয়াছে। মনুষ্য- ভ্রাতৃত্বের মানুষের ধারণাটি কুরআনে যেমন পাওয়া যায় তাহা ইসলাম ব্যতীত কখনই জীবন্ত হইয়া উঠিত না। আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা আর্য দয়ানন্দ স্বরস্বতী বলেন যে, আর্যাবর্তের বাহিরে সকলেই “মালেখ্যা” (Malekkhas)১০। আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ ঋগ্বেদের প্রমাণ উদ্ধৃত করিয়া লিখেনঃ আর্যাবর্ত ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশই অসুর (Asur) বা মালেখ্যা (Malekkhas) দেশ। আর্য দেশের উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বিন্ধ্যাচল এবং পূর্ব ও পশ্চিমে সমুদ্র (Satyarth prakash samkullan, 8, 1887)। গ্রীকদিগের নিকট তাহাদের সকল প্রতিবেশীই বর্ব্বর। ইহুদীগণ বলে যে, ইহুদীরাই ঈশ্বরের পছন্দ করা জনগণ। আর্যগণ ঘোষণা করে “আর্যস্য অপত্যায়নিতি আর্য্য” (Aryasya apatyayaniti) (ঈশ্বর ঈশ্বরের পুত্র)। ধর্মশাস্ত্রে আছেঃ “তাহাকে (ব্রাহ্ম) অসভ্যদের দ্বারা কথিত ভাষা শিখিতে দিও না।” যীশু খ্রীষ্টের নিকট অ-ইহুদী অসহায় নারী কুকুরের সমান খ্রীষ্টানগণ বিশ্বাস করে যে, হিব্রু ভাষা ছাড়া ঈশ্বর কখনও অন্য কোনও ভাষায় কথা বলেন নাই। ইহুদী, হিন্দু, পারসিক, গ্রীক প্রভৃতি জাতিগণ তাহাদের নিজ নিজ ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা অধ্যয়নকে ধর্ম-পথ ত্যাগের শামিল মনে করিত। মনুষ্য জাতির ইতিহাসে কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যাহা “সর্ব কর্মক্ষেত্রে সর্বজাতির প্রতি এক করুণা” বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে। ইসলাম ব্যতীত প্রত্যেক দেশ জাতি ও ধর্মই দাবী করে যে ইহার ভাষাই ঈশ্বর ও স্বর্গীয় দূতদিগের দ্বারা কথিত একমাত্র স্বর্গীয় ভাষা এবং অন্যান্য ভাষা সমুদয়কে শয়তানের, নরকের বা অস্পৃশ্যের মনে করিয়া ঘৃণা করে। ইহার বিপরীতে কুরআন দাবী করে: এবং তাহার নিদর্শনসমূহের মধ্যে স্বর্গ ও পৃথিবী আর তোমাদের ভাষা ও বর্ণসমূহের বিভিন্নতা রহিয়াছে। উহার মধ্যে যাহাদের জ্ঞান আছে তাহাদের জন্য নিশ্চয়ই নিদর্শনসমূহ রহিয়াছে। এই পংক্তিতে এই সত্যই বুঝান হইয়াছে যে, মনুষ্য জাতির বৃহৎ অংশের ভাষাসমূহের মধ্যে যে বিভিন্নতা দেখিতে পাওয়া যায় তাহা সংঘটিত হয় সেই বিভিন্নতা দ্বারা যাহা পৃথিবীর গঠনে, আবহাওয়ায় আর এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে পরিদৃষ্ট
পৃষ্ঠা:১৩
হয়। কুরআনে ইহাও অনুমোদিত হইয়াছে যে, মনীষীদের বিভিন্ন ভাষা অধ্যয়ন করা উচিত, যেহেতু বিভিন্ন ভাষায় এবং জাতিসমূহের সকল বর্ণের মধ্যেই আল্লাহ্র শ্লোক সমুদয় রহিয়াছে।ইস্লামের বড় বৈশিষ্ট্য এই যে, ইহার অনুসারীদিগকে ইহা বিশ্বাস করিতে হয় যে, ইহার পূর্বে পৃথিবীতে যে সকল মহান ধর্ম বিদ্যমান ছিল তাহা আল্লাহর দ্বারাই ব্যক্ত হইয়াছিল। ইহা এইভাবেই পৃথিবীর ধর্মসমূহের মধ্যে শান্তির ভিত্তি স্থাপন করে। এতদপেক্ষা জোর দিয়া ইহা বলে যে, আল্লাহ্ পয়গম্বরদিগের সহিত তাহাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলিয়াছিলেনঃ “তাহার জাতির ভাষা ব্যতীত আমরা কোনও বার্তাবহ পাঠাই নাই” (কুরআন ১৪৪৪)। তাই পবিত্র কুরআন মতে, আল্লাহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় কথা কহিয়াছিলেন। তদনুযায়ী মুসলমানগণ গ্রীক জাতির দর্শন শাস্ত্র, সংস্কৃত ও পারসিক ভাষার গ্রন্থসমূহ আরবী ভাষায় অনুবাদ করিয়াছিলেন এবং গণিত জ্যোতিষের গ্রন্থসমূহ সংস্কৃত ভাষায় লিখিয়াছিলেন আর কখনও বলেন নাই যে, উহা অস্পৃশ্যদের ভাষা। পয়গম্বর মোহাম্মদ (সা) সকল ভাষা, অধ্যয়নে উৎসাহ দান করিয়া মানব জাতির এক মহা উপকার করিয়াছেন। যে মানব জাতি খারাপ ভাবে বিভক্ত সেই মানব জাতিকে পরস্পরাভিমুখে একতাবদ্ধ করিবার জন্য আল্লাহ “সর্ব জাতির নিকটে এই করুণা” প্রেরণ করিয়াছিলেন। ফলে, পয়গম্বর মোহাম্মদ (সা) এই কথা বলিয়া বিভিন্ন ভাষার প্রতিবন্ধকতা দূর করিয়াছিলেন যে, একটি বস্তুর নামের বিভিন্নতা বস্তুটির বাস্তবতা ও বন্ধু-সত্ত্বার পরিবর্তন ঘটায় না। একটি গোলাপকে যে কোনও নামেই ডাকা হউক না কেন-ইহা ইহার সুমিষ্ট গন্ধ বিতরণ করিতেই থাকিবে। যদিও এই ভূমণ্ডলের বন্ধু সমুদয়ের গঠনে বিস্তৃত বিভিন্নতা রহিয়াছে, তবুও তাহাদিগকে পরিচালনার একই রূপ আইনও রহিয়াছে। এইরূপে, যদিও হাজার হাজার ভাষা১১ রহিয়াছে তবুও তাহাদের সকলের মধ্যে বিশ্বজনীন ঐক্যসূত্রও বিদ্যমান রহিয়াছে।
পৃষ্ঠা:১৪
আর্য ও সেমিটিক ভাষার ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের চেষ্টা অতি অল্পই করা হইয়াছে
আর্য ভাষাসমূহের মধ্যে একতা প্রমাণের জন্য অনেক চেষ্টাই করা হইয়াছে। একই প্রকারে আরবী, হিরু, ক্যালডিয়া বা বেবিলন সংক্রান্ত ভাষা ও আরামা (প্যালেস্টাইনের উত্তর-পূর্ব দিকের) ভাষা সমুদয়ের ঐক্য প্রদর্শনকারী গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যও রহিয়াছে। কিন্তু আর্য ও সেমিটিক (ইহুদী, আরব প্রভৃতি জাতি সম্পর্কিত) ভাষার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য অতি অল্প চেষ্টাই করা হইয়াছে। এইদিকে এমন একটি চেষ্টা মহান আর্শীবাদ স্বরূপ হইবে। কারণ, ইহা মনুষ্য জাতির একতা প্রমাণ করিবে আর চারিদিকে ছড়াইয়া পড়া বিভক্ত মনুষ্য গোষ্ঠীকে একীভূত করিবে।
পৃষ্ঠা:১৫
আরবী ভাষার বিস্তৃত শব্দ ভাণ্ডার রহিয়াছে
আরবী ভাষার এক বিস্তৃত শব্দ ভাণ্ডার রহিয়াছে। ইহার শব্দ সম্পদের সহিত অপর কোনও ভাষার শব্দ সম্পদের তুলনা হইতে পারে না। ভাষাসমূহের সুবৃহৎ স্তূপের মধ্যে আরবী ভাষাই সর্বাপেক্ষা বিস্তৃত। ভারতের দাক্ষিণাত্যের হায়দরাবাদের ‘দা’ইরাত্ আল-মা’আরিফ’ ‘জম্রাহ আল-লুগাহ্’ নামে প্রাচীন আরবী ভাষার একটি শব্দ কোষ পুনর্মুদ্রিত করিয়াছে, যাহার তিনটি বিস্তৃত খণ্ড রহিয়াছে। ভূমিকাটি লিখিত হইয়াছে একজন জার্মান পণ্ডিত কর্তৃক যাহাতে তিনি উল্লেখ করিয়াছেন যে, আরবীই ভূমণ্ডলে সর্বাপেক্ষা বিস্তৃততম ভাষা। ইহার বিশালতা হৃদয়ঙ্গম করা মনুষ্য শক্তি-বহির্ভূত। ‘আল-মুখাসাস্’ (al Mukhassas) নামে ষোল খণ্ডে রচিত একটি গ্রন্থ মিসরে প্রকাশিত হইয়াছে। ‘আরবী শব্দসমূহের দর্শন, বিষয়ে এই গ্রন্থে বিস্তৃত আলোচনা রহিয়াছে। ঘোড়া, উট, তরবারি, মধু, মানুষের আয়ু এবং অনেক জীব জন্তুর নানাবিধ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন নাম তাহাতে রহিয়াছে। পৃথিবীর সকল ভাষাকে এই সমস্ত বস্তুর নাম সরবরাহ করিতে তাই আরবী ভাষাই সক্ষম। মানুষের সুগভীর মানসিক অনুভূতিসমূহের জন্য আরবী ভাষায় বিভিন্ন নাম রহিয়াছে, যেমন ভালোবাসা ও ভাবাবেগ, সন্দেহ ও শত্রুতা, দুঃখ ও বেদনা। বয়স, বর্ণ, উচ্চতা, সৌন্দর্য ও কদর্য, মার্জিত বা বন্য, পুষ্টি সমস্তই আরবী ভাষায় বিভিন্ন নাম পায়। খর্জুর, আঙ্গুর, গরু, ষাঁড় প্রভৃতির ন্যায় সকল বস্তুর জন্যই আরবী ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন নাম রহিয়াছে। ফারার (Farrar) তাঁহার “ওরিজিন অব ল্যাঙ্গুয়েজ” (Origin of Language, p. 85) পুস্তকের ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করিয়াছেনঃ আরবী ভাষায় এক গ্রন্থে সিংহের পাঁচ শত নামের উল্লেখ দৃষ্ট হয়, অপরটিতে সর্পের দুইশত নাম। মধুর জন্য যে শব্দ সমুদয় ব্যবহৃত হয় সে সম্পর্কে একজন প্রাচ্য দেশীয় গ্রন্থকার একটি সম্পূর্ণ গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন। বিষয়টির সমাপ্তি না ঘটাইয়াও তিনি ৮০০ শব্দ গণনা করিয়াছেন। একই গ্রন্থকার দৃঢ়তার সহিত বলেন যে, তরবারির জন্য আরবী ভাষায় কমপক্ষেও ১০০০টি শব্দ রহিয়াছে। অন্যান্যরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন যে, ‘দুর্ভাগ্য’ বুঝাইতে ৪০০ শব্দ আছে। ফ্যান হ্যামার (Van Hammer) ৫৭৪৪টি শব্দ গণনা করেন যাহার সমস্তই ‘উট’ সম্পর্কিত। (Science of Language by F. Max Muller, Vol. 1, p. 526, published in 1891). এই বিষয়টি নিম্নোক্ত উদাহরণের দ্বারা অধিকতরভাবে ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। ‘কাটা’ একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। এই ক্রিয়ার জন্য আরবী শব্দ ‘কাৎ’ (Qat)। যাহা এই কার্য সংঘটিত হইবার নানাবিধ উপায় বিবৃত করে, সেই সমস্ত শব্দের একটি
পৃষ্ঠা:১৬
তালিকা নিম্নে দেওয়া হইল। ইহা উদাহরণ দ্বারা এই সত্যই ব্যক্ত করে যে আরবী ভাষা শব্দ সম্পদের সংগ্রহের দ্বারা সুবিস্তৃতভাবেই সমৃদ্ধ।
ক্বাওা সে ইহা কাটিয়া ফেলে বা ইহাকে যে কোনও আকৃতি দেয়।
ক্বাদ্দা লম্বালম্বিভাবে কাপড় কাটা
ক্বাতা পাশাপাশিভাবে কাপড় কাট
জাদ্দা টুরা টুক্সা করিয়া কাটা
জাথা মূলের দিকে কাটা
জাধদা ক্ষিপ্রগতিতে কাটা
জাঝজা টুক্লা করিয়া কাটা
আধদা ব্যথা দিতে কাটা
হাদধা তাড়াতাড়ি কাটা
কাধদা পার্শ্বসমূহ কাটা
ক্বাসসা একটি লাঠির গ্রন্থি কাটা
জিযাতুন ইহা ভালোভাবে কাটা
জসসা তাহার মুখ দ্বারা কাটা
জাববা কর্তিত পুং লিঙ্গ বা অণ্ডকোষ
দাক্বাকা সূক্ষ্মভাবে কাটা যাহাতে একটি বন্ধু আকারে বা বেড়ে দৈর্ঘের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র হয়।
দাককা্ কর্তিত এবং মসৃণকৃত
বাককা কাটা মাথা
ফাককা কাটিয়া, কমাইয়া পৃথক করা, ফাঁক করিবার জন্য কাটা
শাককা কাটিয়া অর্ধাংশে বিভক্ত করা
হাদ্দা পতনের দ্বারা কাটা
ফাসল দাবী ত্যাগ
কাদ্ধদা কার্যে পরিণত হওয়া
বাততা অঙ্গ বা চুল কাটা
ক্বতবা কাটিবার পর সংগ্রহ করা
শা’ব কাটিবার পূর্বে সংগ্রহ করা
ধরিব ক্ষুদ্র টুক্লা করিয়া কাটা
পৃষ্ঠা:১৭
কাধ কাটা-কাটিবার যন্ত্র কাচিসমূহ
জুরম্ গাছ হইতে ফল কাটা। ভেড়ার বা মেষের লোম
কাটা হাসাদা
ফসল কাটা বক্তৃতায় বাঁধা দেওয়া বা কাটা, কাটিয়া ফেলা,
সারম্ বন্ধুত্বের পরিসমাপ্তি ঘটান
সারিম কাটিবার দৃঢ় ইচ্ছা
আজরাম্ অসুদুদ্দেশ্যে কাটা
তাকুরিজ সদুদ্দেশ্যে কাটা
কাটিবার পর খোলা, এক টুকরা মাংস কাটা
শাহ্ কাটা টুরা সকল
আর্যা’ও একটা কাজ শেষ করা
সাবাত্ কাটা অঙ্গ বা চুল
যে কোনও স্থানে সম্পূর্ণভাবে কর্তিত
সম্পূর্ণরূপে কাটা লেজ, কর্তিত বংশ বা সন্তান-
সন্ততি ভীষণভাবে কাটা। আল্লাহর অথবা আরাধনার জন্য
প্রত্যেক বস্তু হইতে বিচ্ছিন্ন কাটা অথবা কাটা গাছগুলি
বাতাক্ রাগে হাত কাটা বা কামড়ানো। দাঁত দিয়া কাটা
আবাতির জনতার মধ্যে সম্পত্তি বন্টন। একটি প্রয়োজনীয়
আবৃতার জিনিস খুঁজিয়া বাহির করা
বাতাল্ বড় বড় টুকরা করিয়া কাটা, কাটিয়া ফেলা, টুকরা
আধধা টুরা করিয়া কাটা
একই রূপে, আস্তে কাটা, ক্ষিপ্রগতিতে কাটা, সামনের দিকে কাটা, পিছনহইতে কাটা, লম্বায় কাটা, পাশাপাশি কাটা, ইত্যাদি-কাটা পদ্ধতির প্রত্যেক=অবস্থা ও পরিবেশ বিবৃত করিবার জন্য এই সমস্ত কার্যপ্রণালীর একটি করিয়া শব্দ রহিয়াছে। এই একটি মাত্র কাটা কার্যের জন্য অনেক অনেক শব্দ আছে।
আরবী ভাষা ইহার সুবিস্তৃত শব্দ ভাণ্ডার দ্বারা অন্যান্য ভাষাসমূহকেও নিশ্চিত- ভাবেই শব্দ সরবরাহ করিয়াছে। আরবী ভাষায় এমন হাজার হাজার শব্দ রহিয়াছে যেখানে ক্ষুদ্র স্বরবর্ণের পরিবর্তনও শব্দটির ভিন্ন অর্থ প্রদান করে।ভিতরে কাটা বা ইহার মধ্যে ছিদ্র করা।
পৃষ্ঠা:১৮
যথাঃ
গামারাহো অনেক পানি
সালাআম্ অভিনন্দন
সিলাআম্ পাথর
সুলাআম্ হাড়
কালাআম্ ভাষা
কিলাআম্ আঘাত
কুলাআম্ মাটির কাঠিন্য
হারা কালো পাথর
হিরা অত্যন্ত প্রবল তৃষ্ণা
হুরা সতী স্ত্রীলোক
হালাম্ চামড়া রঙ করা
হিল্ল্ম= দয়া
হুম্ যৌন উত্তেজনা
সাবৃত্ শনিবার
সিবৃত্ ঘোড়ার পায়ের নালের ছাপ
সুবৃত্ ঘুমানো বা আরাম করা
কতকগুলো শব্দ আছে যাহা দুইটি বিপরীত অর্থ বহন করে। এই প্রকার শব্দসমূহের এই প্রকার অর্থ বহন করিবার প্রকৃত কারণও রহিয়াছে। যেমন:সারীম-দিন ও রাত্রি উভয়ই বুঝাইবার জন্য ইহা ব্যবহৃত হয়। কারণ এইযে, ইহার প্রকৃত অর্থ কাটা। ইহা এই অর্থে ব্যবহৃত হয় এই কারণে যে দিন রাত্রিকে কাটে আর রাত্রি দিনকে কাটে।আল্-সাআরিখ-অর্থ, বাদী ও বিবাদী উভয়ই। প্রকৃত অর্থ নালিশ করা। এই শব্দটি ব্যবহৃত হয় এই অর্থে যে উভয়ের প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নালিশ করে।রিজাআ’-আশা ও আশঙ্কা উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। কারণ কতকগুলিনির্দিষ্ট অবস্থায় উভয়ই মিশ্রিত থাকে।
পৃষ্ঠা:১৯
যান্-সন্দেহ ও বিশ্বাস উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। কারণ সন্দেহপূর্ণ ব্যাপারে উভয় কারণই বিদ্যমান থাকে। এই বিষয়ে আরবী ভাষায় একটি সম্পূর্ণ গ্রন্থই আছে। উপরে উল্লেখিত উদাহরণগুলি উদ্ধৃত করা হইয়াছে এই জন্য যে, ভাষার এইরূপ যেন অস্বীকার করা না হয়।
পৃষ্ঠা:২০
হাজার হাজার বৎসর পূর্বে ভারতবাসীগণ আরবী ভাষায় কথা বলিত/সংস্কৃত: আরবীর আত্মগোপনকারী সন্তান
অনেক বৎসর আগে মিঃ কারামত হোসেন নামে ভারতবর্ষের এলাহাবাদ হাইকোর্টের একজন বিচারপতি মরহুম কামাল উদ্দীনের (ওকিং মুল্লিম মিশনের প্রতিষ্ঠাতা) অনুরোধে একটি গবেষণা করিয়াছিলেন এবং এই গবেষণার ভিত্তিতে তিনি দাবী করিয়াছিলেন যে, ইংরেজী ভাষায় ১৫,০০০ (পনেরো হাজার) শব্দ আরবী ভাষা হইতে ঋণ গ্রহণ করা হইয়াছে। এই সমস্ত শব্দের অধিকাংশই তাহাদের মৌলিক আকারে ইংরেজী ভাষায় ব্যবহৃত হয়। হাজার হাজার বৎসর পূর্বে ভারতবর্ষের অধিবাসীগণ আরবী ভাষা বুঝিত এবং আরবী ভাষায় কথা বলিত। আরবী ভাষাকে নানা প্রকারে বিকৃত করা হইয়াছিল এবং শত শত ভাষার সৃষ্টি হইয়াছিল যাহা এখন আমরা ভারতবর্ষে দেখিতে পাই। আর্য সমাজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ তাঁহার সত্যার্থ প্রকাশ (Satyarth Parkash) গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন যে, কুরু ও পাণ্ডবগণ গোপনীয় বিষয়সমূহ আরবী ভাষায় আলোচনা করিতেন। পর্বতসমূহ, নদীসমূহ, নগরসমূহ, স্বর্গ, পৃথিবী, আত্মীয়দের নামসমূহ, পদসমূহের নাম সমুদয়, সুখের প্রকাশসমূহ, বিছানা ও চাদরসমূহ, বাড়ী ইত্যাদি শব্দসমূহের জন্য সমুদয় শব্দই ছিল আরবী। অধিকাংশ অবস্থায় একমাত্র বিভিন্নতা ছিল যে, শব্দগুলি যদি ডান দিক হইতে বাম দিকে পড়া হয় তবে তাহারা আরবী ধ্বনি হয়, আর যদি বাম দিক হইতে ডান দিকে পড়া হয় তাহা হইলে সংস্কৃত ধ্বনি শুনায়। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, সংস্কৃতের প্রাচীন ভাষা যাহা ‘নিরুক্ত’ নামে পরিচিত তাহা সংস্কৃত শব্দসমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু সংস্কৃতের পণ্ডিতগণ এই সমস্ত ভাষায় যে ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছে তাহার ঘোরতর বিরোধিতা করেন। অধিকাংশ শব্দের জন্যই তাহারা ঘোরতর বিপরীত ব্যাখ্যা- সমূহ প্রদান করেন। আরবী ভাষায় প্রত্যেক শব্দেরই নির্দিষ্ট দর্শন আর ইহার সহিত সম্পর্কিত শৃঙ্খলাবদ্ধ শব্দ শ্রেণী রহিয়াছে। এই প্রকার শব্দসমূহের একটি তালিকা দেওয়ার পূর্বে, আরবী ভাষা ও পৃথিবীর বাদবাকী ভাষাসমূহের মধ্যে আত্মীয়তা প্রদর্শনের জন্য আমি একটি উদাহরণ দিব। মাতা এবং পিতা শব্দ সকল ভাষাতেই সর্বত্র দৃষ্ট হয় এবং ইহারা কমবেশী একই রূপে উচ্চারিত হইয়া থাকে। বিভিন্ন ভাষায় ‘মা’ কথাটির জন্য যে সমস্ত শব্দ ব্যবহৃত হয়, আসুন, আমরা তাহা আলোচনা করি।
পৃষ্ঠা ২১ থেকে ৩০
পৃষ্ঠা:২১
ভাষার নাম আরবী
পারসিক শব্দ
উম্ম্, উম্মাহাআত্, উম্মাআত্
মাদের মাতা বা মাতৃ
মাত্তের সংস্কৃত
গ্রীক বুলগেরীয়
মাতি রুশীয়
মাতে পোলীয়
মাতের জাম্মান
মুত্তের লিথোনীয়
মোতে ইতালীয়
মাদ্রে স্পেনীয়
মাদ্রে ফরাসী
মেরে ডেনীয়
মোদের সুইডেনীয়
মোদের ইংরাজী
মাদার ওয়েলশ
মাম আইরিশ
আইস্ল্যাণ্ডীয় মাদির
মোধির গলীয়
মাথাইর মাতার
এ্যাংলো-স্যাক্সন মোদের
ল্যাটিন মাতের
জাম্মান মৌতার
মাতে ডাচ্
মোয়েদের
এই উদাহরণটিরই প্রমাণে ইহা সবিশেষভাবেই বিবেচনা যোগ্য যে উপরোল্লেখিত শব্দগুলির মধ্যে ‘ম’ সর্বত্রই বিদ্যমান। ভাষাসমূহের আলোচনায় প্রকাশিত হয় যে এই সমুদয় শব্দের মূল শব্দ ‘মা’ আর ইহা সংস্কৃত ভাষার ‘মাতা’ শব্দেরও মূল। ‘মাতার’ (মা) ও ‘পাতার’ (পিতা) শব্দ বিষয়ে ‘অটো বহলিংক ও ‘রুডলফ্ রথ’ কৃত ‘সংস্কৃত ওয়ার্টার বুক,’ সেন্ট পিটার্সবার্গ,
পৃষ্ঠা:২২
১৮৬৫-১৮৬৮ দেখুন। (see Otto Bohtlingk and Rudolph Roth, Sanskrit Worterbuch, St. Petersburg, 1865-1868.) বলিংক ও রথ বলেনঃ “পা’ ও ‘মা’ সম্ভবতঃ অধিকতর প্রাচীন মৌলিক শব্দের অনুকরণে গঠিত পদের নাম। আর পিতা ও মাতা বুঝাইবার জন্য, যাহা পরবর্তী প্রতিফলনের যুগে ‘পিতৃ’ এবং ‘মাতৃ’ শব্দ গঠনে প্রভাব বিস্তার করিয়াছে। (যাহারা নিজেরা ইন্দো-ইউরোপীয় যুগ পর্যন্ত পশ্চাতে যায়।)” সংস্কৃত ভাষায় মাকে ‘মাতৃ’ বলা হয়। প্রাচ্য ভাষাবিৎ পণ্ডিতগণ মনে করেন যে, ইহার মূল শব্দ ‘মা’, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহে একই শব্দের জন্যও যাহা মূল শব্দ। ইহার বিপরীতে আমার অভিমত এই যে, কোন ভাষাই মূল ভিত্তিক নহে। একটি ভাষার প্রকৃত শব্দসমূহ হইতেছে ইহার বিশেষ্যসমূহ, আর বিশেষ্যসমূহের পরিবর্তনের দ্বারাই একটি ভাষা গঠিত হয়। মূল খুঁজিয়া বাহির করা পণ্ডিতদিগের কার্য। আর ইহা দেখিতে পাওয়া যায় যে, মূলসমূহের অথবা কোনও বিশেষ্যের বুৎপত্তিসমূহের বিষয়ে সকল ভাষার পণ্ডিতদিগের মধ্যেই মতভেদ বিদ্যমান। প্রত্যেক টীকাকার বা ব্যাখ্যাকারের নিজ নিজ অভিমতসমূহ রহিয়াছে। সংস্কৃতের প্রাচীন ভাষাসমূহ ‘নিঘাণ্ডু’ নামে পরিচিত। আর এই সমুদয়ের টীকাকারদিগকে বলা হয় ‘নিরুক্ত আচার্য’। একটি শব্দের ‘ব্যাখ্যা’ বা ‘মূল’ বিষয়ে তাহাদের অধিকাংশই একমত নহেন। ভাষাই ভাষার জন্মদান করে। জাতিসমূহ যখন একে অপরের সহিত মিলামিশা করে অথবা দুইটি জাতির মধ্যে যখন শত্রুতা উপস্থিত হয় তখনই একটি ভাষায় পরিবর্তনসমূহ সংঘটিত হয়ঃ তখন তাহারা আকৃতির বা অর্থের বিকৃতি সাধন করিয়া একে অপরের ভাষার শব্দসমূহ গ্রহণ করে। কতকগুলি শব্দ যখন গ্রহণ করা হয় তখন আবহাওয়া ঘটিত কারণে সঠিকভাবে উচ্চারিত হইতে পারে না। জাপানীরা ‘র’ অক্ষরটি ঠিকমত উচ্চারণ করিতে পারে না এবং সর্বত্র ‘ল’ দ্বারা ইহার স্থান পূর্ণ করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, তাহারা ইউরোপকে ‘ইউলোপ’, ফ্রান্সকে ‘ফ্লাপ’ আর তুরস্ককে ‘তুলঙ্ক’ ইত্যাদি রূপে উচ্চারণ করে। তুর্কীগণ ‘খ’ উচ্চারণ করিতে পারে না এবং ‘হ’ দ্বারা ইহার কাজ চালায়। ইহা পূর্বেই দৃষ্ট হইয়াছে যে ‘মা’ বুঝাইবার জন্য যে সকল শব্দের ব্যবহার হয় তাহাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র হইতেছে ‘উম্ম্’। প্রকৃতপক্ষে এই অক্ষরটি হইতেছে ‘ম’, যাহা বলিতে কষ্ট হয় এবং সেই কারণে উচ্চারিত হইবার জন্য একটি স্বরবর্ণের প্রয়োজন। আরবী ভাষায় প্রত্যেকটি অক্ষরেরই একটি অন্তর্নিহিত অর্থ রহিয়াছে। যেমনঃ
পৃষ্ঠা:২৩
তাউ’আম হাম্মা
ধাম্মা মালের সংগ্রহ
কাহারও সহিত একত্রিত হওয়া প্রত্যেককে ডাকা ও একত্রিত করা কোনও ব্যক্তি যাহাকে ঘিরিয়া প্রত্যেকে
একত্রিত হয় তাম্মা ইমাম দুইয়ের সংযোগআরবী ভাষায় প্রত্যেক শব্দেরই কেবল একটি বিশেষ অর্থই যে রহিয়াছে তাহা নহে, এমন কি স্বরচিহ্নের পরিবর্তন ও শব্দার্থের পরিবর্তন ঘটায়। যেমনঃহামাল (‘হ’ র উপরে ফাতহাহ্ সহ) অর্থ একটি বোঝা যাহা বহন করিতে পারা যায় এবং যাহা গর্ভাশয়েও বহন করা হইতে পারে।হিমাল (‘হ’ নিচে কাস্নাহ সহ) অর্থও একটি বোঝা যাহা বহন করা কষ্টকর, আর যাহা পিঠে বহন করাও হইতে পারে।হুমাল (‘হ’ র উপরে ধাম্মাহ্ সহ) অর্থ একটি বোঝা যাহা বহন করা খুবই দরকার।
ইহা সুস্পষ্ট যে, একটি শিশুর পক্ষে ‘উম্ম্’ শব্দটি উচ্চারণ করা সহজ আর ‘ম’ যাহা একই অর্থ জ্ঞাপন করে তাহাও বলা একটি শিশুর পক্ষে সহজ । একই প্রকার শব্দ হইল ‘মাআ’ যাহার অর্থ ‘পানি’ এবং একটি শিশুর পক্ষে পার্নি অপেক্ষা তাহা উচ্চারণ করা সহজতর।সংস্কৃত শব্দ ‘মাতৃ’ বা ‘মাতা’, যাহা ‘উম্ম্’ আর ‘মাত্রু’ শব্দের একটি পরিবর্তিত ভাষান্তরকরণ, যাহা মহারাষ্ট্রীয় পণ্ডিতদিগের দ্বারা উচ্চারিত শব্দের মত একই প্রকারের এবং যাহা ‘উম্’ শব্দের সমষ্টিবাচক বিশেষ্য ‘উমাহাআত’-এর ভাষান্তর।আরবী ভাষার একবচন ‘উম্’ ‘মা’-এর আর এক ভাষান্তকরণ। ইহাই একমাত্র শব্দ নহে। আরবী ভাষায় এমন শত শত শব্দ রহিয়াছে যাহা সংস্কৃত ভাষা দ্বারা পরিবর্তিতরূপে শোষিত হইয়াছে।ইহা বোধগম্য যে, একটি শিশুর পক্ষে ‘উম্ম্’ উচ্চারণ করা সহজতর। প্রকৃতপক্ষে যে কোনও শব্দ, যাহা ওষ্ঠের ক্ষীণ আন্দোলনের দ্বারা কথিত হইতে পারে তাহা একটি শিশুর দ্বারা সহজেই কথিত হইয়া থাকে। ‘ফাদার’ ‘মাদার’, ‘মাতা’ ও ‘মাদার’ শব্দের মত যে শব্দসমূহ রহিয়াছে তাহা বলিতে VICIEUCING কষ্টই হয়।
পৃষ্ঠা:২৪
আরবী ভাষার অন্যতম আশ্চর্য
আরবী ভাষার অন্যতম আশ্চর্য এই যে, সমষ্টিবাচক বিশেষ্যসমূহ একবচন বিশেষ্যসমূহ হইতে গঠিত হয় না। ইহারু পরিবর্তে আরবী ভাষায় একবচন বিশেষ্যসমূহ সমষ্টিবাচক বিশেষ্যসমূহ হইতে বুৎপত্তি লাভ করে। মানুষ অবশ্য যখন বস্তুসমূহের নামকরণ করিয়াছে তখন তাহার মন অবশ্যই সমষ্টিগত বন্ধুর ও লিঙ্গের বিষয় হৃদয়ঙ্গম করিয়াছে। একটি শিশু এই পৃথিবীতে চক্ষু মেলিবার সঙ্গে সঙ্গেই এই পৃথিবীর সম্পর্কে সমষ্টিগতভাবেই একটি ধারণা গঠন করে। কিন্তু ধীরে ধীরে ও ক্রমান্বয়ে সে ‘বস্তুসমূহকে দুই-এ চিন্তা করিবার’ মূল তত্ত্বের দিকে অগ্রসর হয় এবং প্রত্যেক বস্তুর লিঙ্গ স্থির করিবার পরে সে প্রত্যেক শব্দের জন্য একটি করিয়া অবস্থান নির্দিষ্ট করে। পবিত্র কুরআনের এই শ্লোকের ব্যাখ্যাসমূহের মধ্যে একটি দেওয়া যাইতে পারে এবং ইহা ভালোই খাটে যে, “আদমকে সমষ্টি বাচক বিশেষ্য সমুদয় শিক্ষা দেওয়া হইয়াছিল” (২: ৩১)। ইহার অর্থ এই যে, লিঙ্গসমূহের বিশেষ্যসমূহ স্থির করিবার, গঠন করিবার ও প্রত্যেক বস্তুর নামকরণ করিবার ক্ষমতা মানুষের আছে। একটি নির্দিষ্ট বস্তুর বিষয়ে একটা ধারণা করিয়া মানুষ নামসমূহ দিয়া থাকে। পশু-পক্ষী বা স্বর্গীয় দূত, যাহাই হউক অন্য কোন প্রাণীকেই এই ক্ষমতা দ্বারা পুরস্কৃত করা হয় নাই।
আরবী ভাষায় মাকে ‘উম্ম’১২ বলা হয় কেন? ইহার জন্য আমাদিগকে আরবী ভাষাসমূহের দৃষ্টান্ত দিতে হইয়াছে। যে কোনও বস্তু একটি বস্তুর পুষ্টি সাধন করে আরম্ভ হইতে শেষ পর্যন্ত ইহার উন্নতি বিধান করে তাহাকেই ‘উম্ম্’ শব্দ দ্বারা নির্দেশ করা হইয়া থাকে। যাহারা দাবী করিয়াছেন যে, মাতা বুঝাইবার জন্য বিভিন্ন ভাষার সমুদয় শব্দের মূল ‘মা’ তাহারা কখনো প্রমাণ করিতে পারিবেন না যে, মাতা বুঝাইবার জন্য সংস্কৃত শব্দটির ‘মা’ শব্দের ধারণা বা অর্থ আছে।একজন আরব পশু-পক্ষীর মাতাকে সমষ্টিগতভাবে বলে ‘উম্মাআত’, আর মুন্যয্য জাতির মাতাদিগকে বলে ‘উম্মাহাআত্’। কিন্তু সংস্কৃত ভাষায় এই দুরূহ ও সূক্ষ্ম পার্থক্য রক্ষিত হয় না। ভারতবর্ষে একটি গরুকে বলা হয় ‘গোমাতা’ আর দেশটাকে বলা হইয়া থাকে ‘ভারতমাতা’। তাহাদের মনে মাতা শব্দটির একটি সীমিত অর্থ আছে এবং মাতার ধারণার যে ব্যাপক অর্থ- সমূহ রহিয়াছে তাহা নাই।
পৃষ্ঠা:২৫
মাতা শব্দটির মত আর একটি শব্দ আছে যাহা ভাষার একটি উৎস এবং তাহা হইতেছে পিতা, যাহা সকল ভাষায় কমবেশী একই প্রকারে উচ্চারিত হইয়া থাকে, যেমন ইংরেজী, জার্মান এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় ভাষায়, সংস্কৃত, পারসিক ইত্যাদি। যেমন পিতা, এবং এই সকল শব্দের মূল ‘পা’, এবং ভাষা- সমূহের অনুসন্ধানের আদর্শ অনুযায়ী এই সকল শব্দের মূলসমূহের এক হওয়া উচিত। নিঃসন্দেহভাবে, এই শব্দের জন্য সংস্কৃত ভাষায় একটি মূল আছে, যাহা হইতেছে ‘পা’১৩। কিন্তু এই মূল ‘পা’ পিতার ধারণার দার্শনিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম নয়। এই মূল সম্পর্কে আমার আপত্তি একই প্রকারের; যেমন ‘মাতৃ’ শব্দের মূল ‘মা’ ধরাতে আমার আপত্তি আছে। ভাষা কখনও মূল সমূহের দ্বারা গঠিত হয় না-হয় বিশেষ্যসমূহ দ্বারা। ইহা পণ্ডিতদিগের কার্য, যাহারা শব্দ- সমূহের পরিবারের মধ্যে সাধারণ গুণনীয়কসমূহ খুড়িয়া খুঁজিয়া বাহির করিতে প্রায়াস পান এবং এইভাবে মূলসমূহ স্থির করেন। কিন্তু মূলসমূহ হইতে তাহারা কখনও একটি নূতন ভাষা তৈয়ার করিতে পারেন না।সে যাহা হউক, পিতা শব্দটির দার্শনিক ব্যাখ্যা নিম্নরূপঃ “তিনি যিনি একটি সন্তানের জন্মদান করেন, এক ব্যক্তি যিনি অপর ব্যক্তির উপর পৈতৃক তত্ত্বাবধান খাটান, পিতৃতুল্য একজন তত্ত্বাবধায়ক বা যোগানদার, নিকটবর্তী পুরুষ তত্ত্বাবধায়ক।”‘এক ব্যক্তি যে যোগান দেয়’-এর সংস্কৃত শব্দ পিতা নহে তবে ‘গণিত্র’। তবু শব্দটির মধ্যে আত্মিক পুষ্টির ধারণা একেবারেই থাকে না। ইহা এই রকম যেন কেহ বলিয়াছে যে, ‘ফিডার’ (feeder) হইতে ‘ফাদার’ (father) বুৎপত্তি লাভ করে। অর্থাৎ এক ব্যক্তি যিনি আমাদিগকে রুটির যোগান দেন। কিন্তু এইরূপ বিবৃতিসমূহ লঘু-চিত্ততা। ‘পা’ শব্দটি আত্মিক খাদ্য দিবার অর্থ বহন করে না, এমন কি ইহা নিকটতম পূর্ব পুরুষকেও বুঝায় না। পিতার আরবী শব্দ ‘আব’১৪ যাহা খুবই ছোট একটি শব্দ। প্রকৃতপক্ষে পিতার ধারণা প্রকাশ করিবার জন্য পৃথিবীর সকল ভাষার মধ্যে ইহাই সর্বাপেক্ষা ছোট শব্দ। এই
পৃষ্ঠা:২৬
শব্দটির মূল ‘ব’ এবং ইহার অগ্রে থাকার জন্য ইহার একটি স্বরবর্ণের প্রয়োজন, যাহাতে ইহা বলিতে সহজ হয়। আরবী ভাষায় ‘আব্’ মূল নহে তবে বিশেষ্য। সংস্কৃত ভাষায় পিতা শব্দের মূল ‘পা’ এবং ইহা ‘আর’-এর একটি বিকৃত রূপ, কারণ সংস্কৃত ভাষার ‘প’ আরবী ভাষায় লিখিলে ‘ব’-তে পরিবর্তিত হয়। আর আর্য জনগণ ‘ব’কে ‘প’তে পরিবর্তিত করে।আরবী ভাষা ‘আব’ শব্দটি ব্যাখ্যা করে সেইমত এক ব্যক্তিকে যিনি জন্মদান করেন, যিনি সৃষ্টি, বৃদ্ধি, অথবা প্রকাশের উৎস। পয়গম্বর মুহাম্মদ (সা)-কে মু’মিনদের বাবা বলা হয়। কারণ তিনি সকল বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক শিক্ষার ও ক্রমবিকাশের উৎস।
পৃষ্ঠা:২৭
পরিশিষ্ট (ক) হিন্দু শিরোনামে প্রবন্ধ হিন্দু
ধর্ম সম্প্রদায়ের নাম প্রায় ধর্ম প্রবর্তক হইতে হয়। বুদ্ধ হইতে বৌদ্ধ ধর্ম, যীশু খৃষ্ট হইতে খৃষ্টান, মহম্মদ হইতে মুসলমান ধর্ম। হিন্দু ধর্ম-এই নাম কোথা হইতে আসিল।হিন্দু শব্দ বেদে নাই, পুরাণে নাই, উপপুরাণে নাই, প্রাচীন সংস্কৃত কাব্যে, নাটকে, কোষে, অভিধানে নাই, অথচ হিন্দু বলিতে বৈদিক, পৌরাণিক, তান্ত্রিক, শাক্ত বৈষ্ণব, সকল ধর্মই বুঝায়। এই নামকরণ কেমন করিয়া হইল? জগতের অপর প্রধান ধর্মসমূহে ও হিন্দু ধর্মে মৌলিক প্রভেদ এই যে, অপর ধর্মের ন্যায় হিন্দু ধর্ম কোন ব্যক্তি বিশেষ কর্তৃক স্থাপিত হয় নাই। কোন বিশেষ অবতার বা কোন বিশেষ ঋষি এই ধর্ম প্রচলন করেন নাই। বেদে দেবতা অনেক, ঋষিও বহুসংখ্যক। নানা মুনির নানা মত, পরস্পর বিরোধী মতের সমন্বয় এই হিন্দু ধর্মে। পিতামহ বেদান্তমতে অদ্বৈতবাদী, তাহার পুত্র যাজ্ঞিক বৈদিক, পৌত্র পৌরাণিক পৌত্তলিক, অথচ তিন পুরুষ একান্নে এক গৃহে বাস করে, কোনরূপ বিরোধ বা মনোমালিন্য নাই। বৃহস্পতির ন্যায় ঋষি বেদ রচয়িতদিগকে গালি দিতেন। গৌতম বলিতেন ঈশ্বর আছেন তাহার প্রমাণ নাই। চার্বাক ঘোর নাস্তিক, কিন্তু ইঁহাদের কাহাকেও কোন ধর্ম সম্প্রদায় হইতে বাহির করা হয় নাই। ধর্মযাজনের স্থানে গমন করিবারও কোন নিষেধ ছিল না। এক ঘরে করা আধুনিক প্রথা এবং উহা সমাজের শাসন। অতি প্রাচীনকালে আর্যদিগের ধর্ম সম্প্রদায়ের যে কোন স্বতন্ত্র নাম ছিল এরূপ বিবেচনা হয় না। আর্য ধর্ম, সনাতন ধর্ম প্রভৃতি অপেক্ষাকৃত আধুনিক নাম। হিন্দু শব্দ আদৌ সংস্কৃত নয়। কোন সংস্কৃত ধাতু হইতে এই শব্দ উৎপন্ন হয় নাই। অভিধানে দেখিতে পাই হিব্রু ভাষায় ভারত বর্ষের নাম হন্দ অর্থ গৌরবান্বিত রাজ্য। জেন্দ ভাষায় হিন্দব। গ্রীক ভাষায় হন্দকোশ, ইন্দিকোস (Indikos) ও ইণ্ডিণ্ডস্ (Indios)। পার্সীদিগের ধর্মগ্রন্থ বেত্তিডাডে (Vendidad) হপ্ত হিন্দুর (সপ্তনদী) উল্লেখ আছে। এই প্রদেশ পঞ্জাব। এই প্রদেশ এককালে ইরানের অন্তর্গত ছিল। প্রাচীন পারস্য ভাষাতেও হিন্দব শব্দের ব্যবহার দেখিতে পাওয়া যায়। পারসী (ফারসী) ভাষায় হিন্দু শব্দ অর্থে কৃষ্ণবর্ণ। মিসরের দক্ষিণে ইথিওপিয়া (Ethiopia), সে দেশের অধিবাসীরা কাফ্রী। হিন্দু বলিতে এককালে তাহাদেরও বুঝাইত। হাফিজের প্রসিদ্ধ গজলে আছে-
পৃষ্ঠা:২৮
অগর আঁ তুর্ক শিরাজী বদস্তারস্ দিলে মারা। বখালে হিন্দু ওয়শ বক্সাম্ সমরকন্দো বোখোরা রা। যদি শিরাজ নগরবাসী ঐ তুর্কী তাহার হস্তে আমার হৃদয় গ্রহণ করে, (তাহা হইলে) তাহার চর্মের কৃষ্ণ চিহ্নের (তিলের) বিনিময়ে আমি সমরকন্দ ও বোখারা নগরদ্বয় দখল করিব।হিন্দুকুশ পর্বত ফারসী ভাষায় হিন্দকোহ, হিন্দ অর্থে কালো, কোহ অর্থে পর্বত, কৃষ্ণ পর্বত। হিন্দোস্তান, হিন্দুস্থান, যে দেশে হিন্দু নামক কৃষ্ণ বর্ণ জাতি বাস করে। এইরূপ গুলীস্থান-ফুলের দেশ, তুর্কীস্তান-যে দেশে তুর্কীরা বাস করে, আরবীস্তান-যে দেশে আরব্য জাতি বাস করে, কুদ্দীস্তান-যে দেশে কুর্দ্ধগণ বাস করে।হিন্দু শব্দ ঘৃণাব্যঞ্জক। ইরানী ও মোগলেরা গৌরবর্ণ, ভারতবাসী কৃষ্ণবর্ণ বলিয়া তাহাদিগকে ঘৃণা করিত। ইংরাজীতে নিগর (Nigger) শব্দের যে অর্থ, পারসীতে হিন্দু শব্দেরও প্রায় সেই অর্থ। কেহ আমাদিগকে নিগর বলিলে আমরা রাগ করি, কিন্তু হিন্দু বলিয়া পরিচয় দিতে আমরা গৌরব অনুভব করি। হিন্দু শব্দে যে শ্লেষ, কালে তাহা আমরা ভুলিয়া গিয়াছি। যেকালে আর্য জাতি ভারতে আগমন করেন সে কালে হিন্দু নামে কোন জাতি ছিল না, হিন্দু ধর্ম নামে কোন ধর্ম ছিল না, হিন্দু শব্দ কেহ জানিত না। পূর্বেই বলিয়াছি কোন প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে হিন্দু শব্দ দেখিতে পাওয়া যায় না। আর্য, অনার্য, শক, কোল, ভিল্প, অনেক জাতির উল্লেখ আছে কিন্তু হিন্দু শব্দ কোথাও নাই। থাকিবার কথাও নয়, কেননা সংস্কৃত ভাষায় হিন্দু শব্দ নাই। বিদ্যাপতি (১৪৬০ খৃষ্টাব্দ, পৃঃ ৭৪, বাংলা সাহিত্যের কথা, ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ) তাঁহার পদাবলীতে রাজা শিবসিংহকে “হিন্দুপতি” বলিয়াছেন। তখন মুসলমানী আমল, দেশের লোক হিন্দু মুসলমান দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। শ্রী নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত।(মাসিক “বঙ্গবাণী”, ৫ম বর্ষ, আষাঢ়, ১৩৩৩, প্রথমার্জ, ৫ম সংখ্যা: কলিকাতা)।
পৃষ্ঠা:২৯
পরিশিষ্ট-(খ) মূল ইংরেজী প্রবন্ধ
(Arabic: The mother of all languages).
ARABIC: THE MOTHER OF ALL LANGUAGES
Sanskrit: Its Incognito Offspring By ABDUL HAQUE VIDYARTHI
“In the history of the human race, the Qur’an is the only book that has proved to be a ‘mercy to all nations’ in all spheres of activity. Every country, nation and religion except Islam claims that its language is the only heavenly language. spoken by God and the angels, and despises other languages by considering them of Satan, Hell or of the untouchables.” It is stated in the Qur’an that God created man and gave him the power of speech. The power of speech includes all the various forms in which one expresses oneself, viz., speaking. writing, gestures and the like. God has declared this to be greatest Gift He has bestowed on mankind.2 Man could not name anything without first discovering some general quality that seemed at the time the most characteristic of the object to be named. Without speech there could be no reason and without reason there could be no speech. So first God created man or a being endowed with conception and the ability to reason. Man was favoured with wonderful vocal organs which form an extraordinary instrument on which words and thoughts are played. Man is made to think. The first manifestion of thought is speech. As man is the best of God’s creation, in the same way the power of speech is the highest faculty bestowed on man by God which distinguishes him from the rest of the creation. It was the ability to speak that gave man a preference
পৃষ্ঠা:৩০
over the angels and he was given the title of God’s vicegerent on earth, 3 Among the Hindus, Christians, Egyptians and Greeks the power of expression is believed to be the source of wisdom and strength. In ancient civilization it was also believed to be the cause of all the creations on this earth. Tehuti or Thoth, the well-known deity of Egypt, was the medium through whom the will of God was revealed. Clement of Alexandria enumerates forty-two “Books of Thoth”, of which the first ten are those of the prophet, deal with the law and of gods. The following ten contain regulations regarding sacrifices and feasts (Encyclopaedia of Religion and Ethics by Hastings, vol. 2. p. 793). Toth or Tehuti means inventor of speech or hieroglyphics or letters…. and the God of wisdom (New Century Cyclopaedia of Names). No animate or inaniamate object came into existence until its name was uttered. God called out the names of all things, and as their names were called they came into existence. God is the author of words and scriptures. Whatever came out of God’s mouth became the words “Indeed God was word and word was God.”4 The Brahmins and the Greeks were against the development of the language. The Greeks considered speech to be the gift of the Holy Ghost (Logos). The word Logos itself is derived from the Arabic word Lughah and the English word “Langugage” is derived from the same root. The Greeks divided mankind into two groups, viz., those who had been blessed by the Holy Ghost with the ability to speak; the Greeks were the only people who came in this group; and they termed the rest of mankind Aglossoi, meaning those who were deprived of the power of speech. In the same way the Germans called the rest of mankind as veela or valla, that is to say, unclean. They considered it derogatory to follow other
পৃষ্ঠা ৩১ থেকে ৪০
পৃষ্ঠা:৩১
people in speech, dress or manners. The poles believed their neighbours to be nacemi, i. e., dumb. The Turks, Russians, Slovaks, Bulgarians-nearly all antions considered themselves to be dumb. In the Middle Ages it was a prevailing opinion that Hebrew was the primitive speech of mankind (Jewish Encyclopaedia, Hastings, P. 307). St. Jerome in one of his epistles to Damascus writes: The whole of antiquity, affirms that Hebrew, in which the Old Testament is written, was the beginning of all human speech” (The Science of Language by Max Muller, p. 145). Origen in his eleventh homily on the Book of Numbers, expresses his belief that the Hebrew language, originally given through Adam, remained in that part of the world which was the chosen portion of God (Ibid., p. 146).No ancient Greek ever thought of learning a foreign language. Why should he ? He divided the whole world into Greeks and Barbarians, and he would have felt himself degraded by adopting either the dress or the manners or the language of his Barbarian neighbours. Greeks called the Barbarians Aglossoi, or speechless (The Science of Language by Max Muller, 1891).
A Dutch author tried to prove that the language in heaven would be Dutch (Hermathena Joannia Goropii Becani, Antwrepiae, 1580). And there is a saying amongst the Swedish: “God spoke to Adam in Swedish, answered in Danish and the serpent spoke to Eve in French” (Andre kemp in his work on The language of paradise).A saying in persian states that only three Languges are known in Heaven: the seprent spoke in Arabic, Adam and Eve spoke in persian, and Gabriel conversed in Turkish. Chardin relates that the Persians believe three languages have been spoken in paradise, Arabic by the Serpent, etc. (Ibid., p. 149). The equivalent of speech in Hindi is Vak, and Hindus believe it to be a deity. They further believe that Sanskrit is a language of God and except for the Brahmins no one should converse in
পৃষ্ঠা:৩২
So the language of their sacred writings is by many people taken either for the most ancient language or for the natural language of mankind. Budhists claim Magadhi is the mother of all languages (Chips From a German Workshop, vol. 4, p. 23). According to Jewish doctrines the inhabitants of Heaven only spoke one language. The Babylonians thought of trying to reach Heaven by climbing through the skies, and so they started building a tower! It is recorded: And the whole earth was of one lannguage and of one speech. And it came to pass, as they journeyed from the east that they found a plain in the land of Shinar, and they dwelt there. And they said one to another, Go to, let us make brick, and burn them thoroughly. And they had brick for stone, and lime had they for mortar. And they said, Go to, let us build in a city and a tower, whose top may reach unto heaven, and let us make us a name, lest we be scattered abroad upon the face of the whole earth. And the Lord came down to see the city and the tower, which the children of men builded. And the Lord said, Behold, the people is one, and they have all one language. And this they begin to do; and now noting will be restrained from them, which they have imagined to do. Go to, let us go down, and there confound their language, that they may not understand one another’s speech. Therefore the name of it called Babel, because the Lord did there confound the lanaguage of all the earth, and from thence did the Lord scatter them abroad upon the face of all the earth. “(6) (Genesis xl: 1-9.)
পৃষ্ঠা:৩৩
Thus for this very reason, whether rightly or wrongly, according to the Bible, God Almighty disliked the unity of the human race and He descended from Heaven and created differences in the languages of the people. However, it is evident from this that at some time the whole human race lived at one place, and spoke one language. It is reported that God lived with Enoch in the sixth generation of Adam for three hundred years and taught him this language. (Genesis v: 23, 24.)
পৃষ্ঠা:৩৪
The Opinions of Orientalists about speech
Professor F. Max Muller and most ot the Orientalists who have done considerable research on languages and have written considerable volumes on the subject are of opinion that languages of the world can be divided nito three groups, viz., the languages of the Aryan race, of the Semitic race and thirdly the Teutonic or Mongolian race. They have not given much importance to the last group of languages and have given considerable attention to the languages of the Aryan and Semitic race. (They are of opinion that Sanskrit is the source of the languages of the Aryan race, such as English and other European languages and also of latin, the ancient languages of Greece and Persia.) They hold that the true source of mother of all these languages somehow became extinct and Sanskrit is the deceased daughter of this deceased mother, because roots of Sanskrit, Greek, German, Latin and Scandinavian anguages are the same. In English and German dictionaries the derivations of these word have been traceed in Sanskrit, but scientific terms have been borrowed from Latin. But in no part of the world has it been the practice, nor will it ever be, to use derivations in speech. Whenever man invented a speech or God taught him a speech, the first words that were constructed or used were nouns. Even today, wherever a child is born in any part of the world, the first thing he learns is names. Linguists claim that language was created to unite mankind. Some think that man first invented gestures, because names could be conveyed by signs even. For instance when people saw a wolf, they only pointed towards it and said that it was coming. Contrary to this some are of the view that names are the foremost part of speech, therefore people must have spoken “wolf, wolf” first and made a sign of its coming. So far as the view of Islam is concerned, God Himself gave man the power of speech and the first thing He taught man wasnames. God Almighty taught the names to man or He gave them the power to invent names (The Qur’an, 2: 30). A child also makes its first attempt to speak with the words “mummy” and “daddy”, which are nouns.
পৃষ্ঠা:৩৫
Sanskrit is not the mother of all languages
Professor Max Muller in his wonderful book, The Science of Language, 1891, vol. 1, p. 234, states: “The religion of the Veda is not the source of all other religions of the Aryan world. Nor is Sanskrit the mother all the Aryan languages. Sanskrit as compared with Greek and Latin is an elder sister, not a parent.”On page 77 of the same book he states: “Hindustani is not the daughter of Sanskrit, as we find it in the Veda or in the later literature of the Brahmanas; it is a branch of the living speech of India…. springing from the same stem from which Sanskrit sprang. And what applies to those Aryan speakers applies wit even greater force to the Arabic speakers, because the earliest monuments of Semitic speech, differentiated as Babylonian,Phoenician, Hebrew and Arabic, go back, we are told, farbeyond the earliest documents of Sanskrit or Greek. Arabic is more primitive than Hebrew (Ibid., p. 49).However, it is an admitted fact that at some time there was only one language in this earthly heaven and all the people spoke only one language, and that language was the mother of all languages, and from that origin sprang the daughters -Latin, Greek, Sanskrit, etc. Hebrew is not the primitive language. Hebrew is the usual name of the language spoken by the Israelites up to a few centuries before the birth of Jesus. The term Hebrew is not in the Old Testament. In later times the Jews called it Hebrew, “the holy language.” The phrase “Hebrew language” therefore does not go back to the Old Testament. The Hebrew word “Ibri” (Genesis 10: 11) comprises of a number of Arabic and Aramaic stocks (The New Schaff Herzog Encyclopaedia of Religious knowledge, under the caption Hebrew language).
পৃষ্ঠা:৩৬
The Bible relates that difference in language started from Babylon (Genesis 11:1-9), and it was the difference in language that created enmity and dissension in the human race or that quarrels and disputes among people started a difference of languages. At first the Aryans and Persians were brothers. Then they fell out the Aryans called God by the name Dev (God), and the Persians, therefore, called Satan by that name.
পৃষ্ঠা:৩৭
Enmity between different communities causes changes in the meanings of words.
The word “Hindu” was used for a gentleman in India but in Persia this word was used for a thief or a slave. This is nothing surprising. Hundreds of instances like that can be given, which are a proof of long-hidden enmity between the two nations. The same thing is happening with Urdu in India. If the Muslims in the punjab use the word matlab (purpose) in their everyday speech, the Sikhs and Hindus distort the word and say matbal. They also distort chaqoo (knife) and say kachoo; and call a degcha (cooking utensil) as dechka. There are numerous instances where Hindus and Sikhs have changed the shape of a word just because the Muslims use it in their speech. A Hindu can pronounce the English letter F very well, but when he come across the Urdu alphabet fe, which is the equivalent of F in English, he somehow feels unable to say F or Fe and makes it phe. The Hindu pandits have spoilt the prounciation of the word lafz and say laphaj instead. In the Madras province (India) there is division between Ayar and Nayars, that is to say Brahmins and non-Brahmins. An Ayar not only considers a Nayar to be an untouchable, but he also considers it unclean to speok the language of a Nayar. An Ayar never utters a word of a Nayar’s language and doss not give the Nayar a right to speak his language. Difference in language does not give rise to different words only, but is also strains harmonious relations. People who have lived togther for generations become each other’s enemies.
পৃষ্ঠা:৩৮
Human dignity in Islam
The word dignity of a human being is untraceable in the Vedas. In the Old Testament in the Gospels and other scriptures there are castes, tribes colours chosen by God Himself. The idea of mankind of the brotherhood of man as found in the Qur’an, would never have sprung into life without Islam. Arya Dayand Sarasvati, founder of Arya Samaj, says that outside the Aryavarata all are the malekkhas. (6a) Savami Dayananda, founder of the Arya Samaaj, on the authority of Rigveda, writes: “Excluding Aryavarata all the countries of the world are Asur and malekkha countries.” In the north of Arya desha (Arya country) is the Himalaya, in the south Vindhiachal, and on the east and west is the ocean (Satyarthprakash Smullan 8, 1887). To the Greeks all their neighbours are Barbarians. Jews say only the Israelites are the chosen people of God. Aryas Declare Aryasya aptayaniti Ayra (God is the son of God). It is in Dharma Shastra: “Let him (Brahama) not learn a language spoken by Barbarians.” To Jesus Christ the non-Israelite humble woman was equal to a dog Christians believe that God never spoke in any language save Hebrew. The Jews, Hindus, Persians, Greeks, etc., considerdd the study of languages other than their own equivalent to forsaking the path of their religion.In the history of the human race, the Qur’an is the only book that has proved to be a “mercy to all the nations” in all spheres of activity. Every country, nation and religion except Islam claims that its languages is the only heavenly language, spoken by God and the angels, and despises other lanaguages by considering them of Satan, Hell or of the untouchables. Contrary to this the Qur’an claims:”And among His signs is the creation of the heavens and the earth, and the diversity of your tongues and colours. In that surely are signs for those who possess knowledge.” (30: 21)
পৃষ্ঠা:৩৯
In this verse the fact is explained that the diversity in languages that is found in the vast sections of humanity is caused by the diversity that is found in the structure of the earth, the weather, and this whole universe. It has also been recommended by the Qur’an that scholars should study the different languages, as there are verses of God in different languages and in all colours of nations.The great characteristic of Islam is that it requires its followers to belive that all the great religions of the world that prevailed before it were revealed by God. It thus lays down the basis of peace among the religions of the world. More than this, it emphasizes that God spoke to prophets in their respective languages: “We have not sent any messenger but it the langauges of his nation” (The Qur’an, 14: 4). Hence according to the Holy Qur’an, God spoke in different languages of the world. Accordingly Muslims translated Greek philosophy, Sanskrit and persian books into Arabic and wrote in Sanskrit language books on astronomy, and never said that language was of the untouchables. The prophet Muhammad has done a great service to humanity by encouraging the study of all languages. God sent this “mercy to all nations” to gather together the whole human family, which is badly split up. Consequently, the prophet Muhammad ended the barriers between different languages by saying that different name for a thing do not change the reality and properties of that thing. A rose may be called by any name it will continue to give its sweet fragrance. Although there is a vast difference in the make up of the things in this universe, still there are uniform laws governing them. In the same way, although there are thousands of languages, still there is a universal thread in them all.
পৃষ্ঠা:৪০
Attempts are being made to prove unity amongst various groups of languages
Numerous attempts have been made to prove the unity in the Aryan languages. In a like manner, there is considerable literature showing the similarity of Arabic, Hebrew, Chaldean and Aramaic languages. But very little effort has been made to prove the affinity between Aryan and Semitic languages. An effort in this direction will be a great blessing for it will prove the unity of the human race and unify the scattered and divided sections of humanity.
পৃষ্ঠা ৪১ থেকে ৫০
পৃষ্ঠা:৪১
Arabic has an extensive vocabulary. No language can compare with it in the wealth of its words
In the huge mass of languages. Arabic is the most extensive. The Da’irat al-Ma’arif of Hyderabad, Deccan, India, has re-printed an old lexicon of Arabic named Jumhurah al-Lughah, which consists of three comprehensive volumes. The introduction has been written by a German scholar, in which he states that Arabic is the most extensive language in the world. It is beyond human power to comprehend its vastness. A book has been published in Egypt called al- Mukhassas which consists of sixteen volumes. There is a detailed discussion in this book on the “philosophy of the Arabic Words.” There are different names for the various characteristics of the horse, camel, sword, honey, human age and of the numerous animals. Arabic is capable of supplying names for all these things to all the languages of the world. Arabic has a different name for every stage of human emotions, e.g., love and passion, jealousy and enmity. distress and pain. The age, colour, height, beauty and ugliness, cultivated or wild growth, all find different names in Arabic. There is a different name in Arabic for all varieties of things like the date, grapes, cow, ox, etc. Farrar writes in his Origin of Languages, p. 85: “In Arabic a work is mentioned on the 500 names of the lion, another on the 200 names of the serpent.” An Eastern author has written a whole book on the words used for honey. He counted 800 without exhausting the subject. The same author maintains that in Arabic there are at least 1,000 words for sword. Others maintain that there are 400 to signify misfortune. Van Hammer counts 5,744 words al relating to the camel (The Science of Language by F. Max Muller, vol. 1. p. 526, published in 1891). This point is further explained by the following example. To cut is an infinitive. The Arabic word for this verb is Qat’. A list of all
পৃষ্ঠা:৪২
those words follows which describes all the various ways in which this action takes place. This illustrates the fact that Arabic is extensively rich in vocabulary.
Qatta he cut it out or shaped it any manner.
Qadda cut cloth is lengthwise.
Qata cut cloth in breadth.
Jadda cut into pieces.
Jatha cut at the roots.
Jadhdha cut swiftly.
Jazza cut in pieces.
Adhdha cut to cause pain.
Hadhdha cut quickly.
Qadhdha cut out sides.
Qassa cut a knot of a stick.
Jizzatun cut it in a good manner.
Jassa cut with his mouth.
Jabba cut off penis or testicles.
Daqqa cut finely that a thing became smal in size or diameter as compared with length.
Dakka cut and smoothen.
Bakka cut off head.
Fakka to separate by cutting, deducting, cutting to make a gap.
Shaqqa to divede in half by cutting.
Hadda get cut by fall.
Fasl severence of claim.
Qadha to be executed.
Batta to cut limb or hair.
Qataba to collect after cutting.
Sha’b to collect before cutting.
Dharib to cut into bits.
পৃষ্ঠা:৪৩
Qardh cut-scissors the tool to cut.
Jurm cut fruit off tree, cut off the
Hasada cut crops.
Sarm wool of the sheep.
Sarim to interrupt or cut a speech. Cut through.
Cut off friendship. determination to cut.
Ajram cut for cvil purpose.
Taqriz cut for noble purpose.
Sharh cut a work.
Abza’o cut limb or hair.
Sabat cut off completely in any place.
Batak tail cut off entirely. Cut off progeny.
Abatir cut off severely. Cut off from everything for the sake of God or worship.
Abtar cut or lop trees.
Batal Azudacut or bite hand in wrath. Cut by teeth.
Adhdha cut property amongst a people.
Fadhdha Cut out a useful thing.
Bassa cut into enormous pieces. Cut off. Cut to pieces.
Shakka cutting in or making hole in it.
In the same way, to cut slowly, to cut swiftly, to cut in front, to cut from behind, to cut in length, in breadth, etc.-all these modes of action have a word to describe every condition and situation in the process of cutting. There are numerous words for this single action of cutting. Arabic with its vast vocabulary must have given words to other lanaguages.
পৃষ্ঠা:৪৪
There are thousands of words in Arabic where a change in the short vowel gives a different meaning to the word. For example:
Ghamaraho abundant water.
Ghimrah concealed enmity.
Ghumrah ignorant.
Salaam greetings.
Silaam stone.
Sulaam bone.
Kalaam speech.
Kilaam wound.
Kulaam hardness of the earth.
Harra- black stoney.
Hirra acute thirst.
Hurra chaste woman.
Halam to colour the hide.
Hilm Kindness.
Hulm sexual excitement.
Sabt Saturday.
Sibt imprint of horse shoe.
Subt sleeping or relaxing.
There are some words which contain two opposite meanings. There is a genuine reason for such words to carry such meanings. For example.Sareem. It is used both for day and night. The reason is that its real meaning is to cut. It is used in this sense because the day cuts the night and the night cuts the day.Al-Saarikh. Means both plaintiff and defendants. The real meaning is to complain. This word is used as both complain against each other.Rijaa’. Is used for both hope and fear. Because in certain cases both are intermixed.Zann. Is used for both doubt and belief. Because in doubtful matters both factors are present.
পৃষ্ঠা:৪৫
There is a whole book in Arabic on this subject. The aforementioned examples have been cited that these aspects of the language might not be ignored.Many years ago Mr. Karamat Husain, a Judge of the Allahabad High Court, India, at the request of the late Khwaja, kamal-ud-Din (founder of the Woking Muslim Mission) made a research and on the basis of this claimed that 15.000 words in English have been borrwed from Arabic. Most of these words are used in English in their original form. Thousands of years ago, the inhabitants of India spoke and understood Arabic. Arabic was disfigured into various forms and gave rise to the hundreds of languages we now find in India. The founder of the Arya Samaj movement, Swami Dayanand, has stated in his book. Satyarth Parkash, that the Kurus and Pandwas discussed confidential matters in Arabic. The words for mountains, rivers, towns, heaven, earth, names of relations, names of posts, exclamations of happiness, bedding and coverings, house, etc., are all in Arabic. The only difference in most cases is that if the words are read from right to left they sound Arabic, and if they are read from left to right they sound Sanskrit. There is no doubt that old lexicons of Sanskrit which are known by the name of Nirukt do give explanation of Sanskrit words. But the scholars of Sanskrit strongly differ about the explanations given in these lexicons. They give strong and contradictory explanations for most of the words. In Arabic every word has a definite philosophy and a chain of words related to it. Before a list of such words is given, I will give an example to show the relation between Arabic and the rest of the languages of the world. The words for mother and father are common to all languages and they are pronounced in more or less the same way. Let us make a study of the words used for mother in different languages.
Arabic Persian
Sanskrit Umm.
Mader. Mata or Matr.
পৃষ্ঠা:৪৬
Greek Matter.
Bulgarian Mati.
Russin Mate.
Polish Mater.
German Mutter.
Lethonian Mote.
Ltalian Madre.
Spanish Madre.
Portuguese Madre.
French Mere.
Danish Moder.
Swedish Moder.
English Mother.
Welsh Mam.
Irish Mathir.
Icelandich Modhir.
Gaelic Mathair
Zend Mater.
Anglo-Saxon Moder.
Latin Mater.
German Muotar.
Slavonic Mate.
Dutch Moeder,
পৃষ্ঠা:৪৭
In Sanskrit mother is called Matr. Orientalists think that its root is Ma, which is the root for the same word in all Indo-European languages. Contrary to this, my opinion is that no language is based upon roots.The real words of a language are its nouns, and by changes in the nouns a language is formed.To search out roots is the work of scholars, and it is evident that there is a difference of opinion amongst the scholars of all languages regarding the roots or derivations for any noun. Every commentator has his own views. The old lexicons of Sanskrit are known as Nighantu, and the commentators on these are called Nirukt Acharya. Mostly they disagree in the explanation or root of a word.Language begets language. Changes in a language occur when nations mix with cach other or when enmity takes place between two nations; then they adopt words of each other’s language after deforming them in shape or meaning. Some words when adopted cannot be pronounced properly because of climatic conditions. The Japanese cannot pronounce the letter “r” properly and in all places replace it with “L”. For example they pronounce Europe as Eulope, France as Flance, and Turkey as Tulky, etc. The Turks cannot pronounce kh and substitute it by h.
It has already been observed that of all the words used to denote mother, the smallest of them is “Umm”. In fact this letter is “m”, which is diffcult to utter and therefore needs a vowel in order to be pronounced. In Arabic every letter has a significance. For example:
Tau’am
Hamma Dhamma
Tamma Imam
conjunction of two. collection of goods. get toghter with some one. call and collect every one. one around whom every one collects.
পৃষ্ঠা:৪৮
Not only does every word have a special meaning, but the change of vowel signs affects the meaning of the word.For example: Hamal (with Fathah on h) means a burden which can be carried and which may have to be carried in the womb. Himal (with kasrah on h) means a burden which is difficult to carry and which may have to be carried on the back. Humal (with dhammah on h) means a burden which is very essential to be carried. It is obvious that it is easy for a child to utter the word Umm, and m which conveys the same sense is easy to utter for a child. A similar word is maa’, which means water, and which is considerably easier for a child to say than water. The Sanskrit word matri or mata, which is an altered version of Um and matru, which is the same word as pronounced by the Mahrashtra pandits and which are distorted versions of Umahaat, which is the collective noun of UmIn Arabic singular Um is another version of ma. This is not the only word. In Arabic there are hundreds of words that have been absorbed by Sanskrit in an altered form.It is understandable that it is easier for a child to utter Umm. In fact any word which can be spoken by a slight movement of the lips is easily spoken by a child. Words like father, mother, mata and madar, are words which are comparatively diffcult to be spoken.One of the wonders of the Arabic language is that collective nouns are not formed from singular nouns. Instead, in Arabic singular nouns are derived from collective nouns. Whenever man musthave given names to objects, his mind must have conceived collective things and gender. A child as soon as it opens its eyes in this world forms a conception about the world collectively. But slowly and gradually he comes towards the principle of “thinking things in twos, and after determining the gender for every object he fixes a place for
পৃষ্ঠা:৪৯
every word. One of the interpretations can be given to this verse of the Holy Qur’an, and which fits it very well, that “Adam was taught collective nouns.”(2:31) It means that man has the ability to determine nouns of genders and form and give a name to every object. Man gives names by conceiving an idea about a certain object. No other creature has been gifted with this ability, whether animals or angels.Why is mother called Umm in Arabic ? For this we have to refer to the Arabic lexicons. Any being which nourishes a thing improves it from beginning to end, and is referred to by the word Umm. Those people who have claimed that the root of all the words in different languages for mother is ma, can never prove that the Sanskrit word for mother has the conception or meaning of ma.An Arab calls the mother of an animal in its collective form as Ummaat, and the mothers of human beings as Ummahaat. But this subtle and delicate difference is not observed in Sanskrit. In India a cow is called Go-mata, and the country itself is called Bharat mata. In their mind the word mata has a limited meaning and not the comperhensive meanings contained in the conception of mother.Like the word for mother, there is another word which is a source of language, and that is father, which is pronounced in more of less the same manner in all languages, i.e., English, German, and various European languages, Sanskrit, persian, etc, e.g., father, and the root of all these words is pa, and according to the princples of investigation into languages, the roots for these words should be one. Undoubtedly, there is a root for this word in Sanskrit, i.e., pa. But this root is unable to give the philosophic interpretation of the conception of father. My objection to this root is the same as the one I have for ma being the root of matri. 2 Language is never formed
পৃষ্ঠা:৫০
by roots but by nouns. It is the job of scholars who follow to dig out the common factors in the family of words and thus determine the roots. But they can never make a new language from roots.However, the philosophical explanation of father is as follows: “He who begets a child, one who exercises paternal care over another, a fatherly protector or provider, the nearest male protector.The Sanskrit word for “one who provides” is not pita but Ganitr. Still, the conception of spirrtual nourishment is not contained in the word at all. It is just as if someone has said that father is derived from feeder, meaning one who provides us with bread. But such statements are frivolous. The word pa does not contain the meaning of giving spiritual sustenance nor does it mean “the nearest male ancestor”. The Arabic word for father is ab, which is a very short one. In fact it is the smallest word in all the languages of the world to express the idea of father. The root of this word is b, and it needs a vowel to precede it so that it becomes easy to speak. In Arabic ab is not the root but the noun. The Sanskrit root for father is pa, and this is a distorted form of ab, because p of Sanskrit changes into b when written in Arabic and the Arya people convert b into p.The Arabic lexicon explains the word ab as one who begets, who is the source of creation, improvement or manifestation. The prophet Muhammad has been called the father of Mu’minun because he is the source of spiritual instruction and development for all the believers.(Extract from The Islamic Review, January, 1957. Contributor, Moulana Abdul Haque Vidyarthi is a Scholar both of Islam and Sanskrit who has translated the vedas in to Vrdu.)
সমাপ্ত