ইমানের ৭৭ টি শাখাঃ ইমাম বায়হাকী
পৃ্ষ্ঠা ০১ থেকে ১০
পৃষ্ঠা:০১
ঈমানের শাখাসমূহ
ঈমানের শাখা-১. আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা
আল্লাহর প্রতি ঈমান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَالْمُؤْمِنُونَ كُلِّ مَنَ بِاللَّهِ . অর্থ: “আর মুমিনরা প্রত্যেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে।”(সূরা আল-বাকারা: ২৫৮) আরও বলা হয়েছে- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَمِنُوا بِاللَّهِ. অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করো। (সূরা আন নিসা: ১৩৬) আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। নবী করীম বলেছেন- أُمِرْتُ أَنْ أَقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَمَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي وَمَا لَهُ وَنَفْسَهُ إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللَّهِ . অর্থ: যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এ সাক্ষ্য না দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো যোগ্য ইলাহ নেই’, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে আদিষ্ট হয়েছি। কাজেই যে ব্যক্তি স্বীকার করে নেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো যোগ্য ইলাহ নেই’ সে আমার থেকে তার জীবন ও সম্পদকে নিরাপদ করে নিল। তবে শরীআহসম্মত কোনো কারণ ঘটলে ভিন্ন কথা। আর তার (কৃতকর্মের) হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছেই রয়েছে।” (সহীহ আল বুখারী-১৩৯৯ ও সহীহ মুসলিম-২০)
পৃষ্ঠা:০২
ঈমানের শাখা-২. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছেন। তিনি তাদেরকে নূর (জ্যোতি) হতে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিগতভাবে তারা আল্লাহর অনুগত। তারা কখনও আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হন না, বরং যা আদিষ্ট হয় তা তাৎক্ষণিক পালন করেন। তারা দিবা রাত্রি আল্লাহর তাসবীহ (পবিত্রতা) বর্ণনায় রত, কখনও ক্লান্ত হন না। তাদের সংখ্যা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউ জানে না। আল্লাহ তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার (কর্মের) দায়িত্ব দিয়ে অপর্ণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- كُلِّ مَنَ بِاللَّهِ وَمَلَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ. অর্থ: সকলেই বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। (সূরা আল বাকারা- আয়াত: ২৮৫) জিবরাঈল-এর প্রসিদ্ধ হাদীসে আল্লাহর রাসূল বলেন- أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكِتَابِهِ وَلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدْرِ كُله. ঈমান হল: আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও পুনরুত্থান দিবসের প্রতি এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা। (বুখারী-৫০, মুসলিম-১০)
পৃষ্ঠা:০৩
ঈমানের শাখা-৩. আসমানী কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনা
ঈমানের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শাখা হচ্ছে- ফেরেশতা, আল্লাহ প্রদত্ত কিতাবসমূহ এবং নবী রাসূলগণের উপর ঈমান আনা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَالْمُؤْمِنُونَ كُلِّ أَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ অর্থ: এবং সকল মুমিন- আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাবসমূহ এবং নবীদের উপর ঈমান আনে। (সূরা আল বাকারা: আয়াত-২৮৫) উমর ইবনে খাত্তাব কর্তৃক বর্ণিত হাদীস- যা হাদীসে জিবরাঈল নামে পরিচিত- যেখানে জিবরাঈল-এর এক প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে الْإِيْمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ অর্থ: ঈমান হচ্ছে- আল্লাহ, ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ ও রাসূলগণের উপর ঈমান আনয়ন।’ (বুখারী-৪৭৭৭) কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনার সাথে সাথে আল-কুরআনের উপর ঈমান আনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُوْلِهِ وَ الْكِتَبِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُوْلِهِ وَ الْكِتَبِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ. অর্থ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং সেই কিতাবের (কুরআনের) প্রতিও যা তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। সেই সাথে আগে যেসব কিতাব নাযিল হয়েছিল সেগুলোর প্রতিও। (সূরা। আন-নিসা, আয়াত-১৩৬)
পৃষ্ঠা:০৪
ঈমানের শাখা-৪. রাসূলগণের প্রতি ঈমান
ইহা ঈমানের রুকনসমূহের একটি রুকন, যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। রাসূলগণের প্রতি ঈমান হলো মনে প্রাণে এ দৃঢ় বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ পৃথিবীতে অনেক রাসূল প্রেরণ করেছেন। যাদেরকে তিনি তাঁর রিসালাত প্রচারের জন্য নির্বাচন করেছিলেন। তারা তার রিসালাত পৌছানোর ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কোন ত্রুটিও কোন প্রকার অবহেলা করেন নি। যারা তাঁদের অনুসরণ করবে, তারা হিদায়াত (সঠিক পথ) পাবে। আর যারা তাঁদের অনুসরণ করবে না তারা পথভ্রষ্ট হবে। তারা স্বীয় উম্মাতকে কল্যাণের উপদেশ দিয়েছেন। যা সহ প্রেরিত হয়েছেন তার কোন অংশ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও গোপন না করে স্বজাতির উপর হুজ্জাত (পক্ষ-বিপক্ষের দলীল) কায়েম করেছেন। আমরা যাদের নাম জেনেছি আর যাদের নাম জানতে পারি নাই সকলের প্রতি ঈমান আনব। আল্লাহ তায়ালা বলেন- قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِي مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ . অর্থ: তোমরা বল: আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে তাঁদের পালনকর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে, তৎসমূদয়ের উপর। আমরা তাঁদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী। (সূরা বাকারা- আয়াত: ১৩৬)
পৃষ্ঠা:০৫
ঈমানের শাখা-৫. তাকদীরের প্রতি ঈমান আনা
ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক, সবকিছুই যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত এ কথার উপর ঈমান রাখা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন। قُلْ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ. অর্থ: ‘বলুন, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সূরা আন নিসা: আয়াত-৭৮) সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা এ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, “নবী করীম বলেছেন, একবার আদম ও মূসা -এর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল। মূসা বললেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা। আমাদেরকে বঞ্চিত করেছেন এবং জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছেন। আদম বললেন, আপনি তো মূসা! আল্লাহ তাআলা আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে সম্মানিত করেছেন। লিখিত কিতাব (তাওরাত) দিয়েছেন। আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করেছেন যা আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর আগে নির্ধারণ করে রেখেছিলেন? আদম মূসা-এর উপর বিতর্কে বিজয়ী হলেন। (হাদীসটি সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাকদীর অধ্যায়ে ‘আদম ও মূসা-এর বিতর্ক শিরোনামে উল্লেখ আছে) আল্লাহর রাসূল বলেন- أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكِتَابِهِ وَلِقَائِهِ وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنُ بِالْبَعْثِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدْرِ كُله. ঈমান হল: আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর কিতাব, তার সাক্ষাত, তাঁর রাসূলগণ, পুনরুত্থান এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা।
পৃষ্ঠা:০৬
ঈমানের শাখা-৬. আখিরাতের প্রতি ঈমান আনা
আখিরাত বা পরকালের ব্যাপারে বিশ্বাস রাখাও ঈমানের অংশ, এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ. অর্থ: তোমরা তাদের সাথে জিহাদ কর, যারা আল্লাহ ও পরকালকে বিশ্বাস করে না। (সূরা আত তাওবা: আয়াত- ২৯) হুলাইমী বলেন, অবশ্যই একদিন এই দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে। একদিন একদিন করে মূলত পৃথিবী সেই দিনটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা হঠাৎ করে এসে হাজির হবে। সেই দিনটিকে পাশ কাটানোর কোনো উপায়ই নেই। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম বলেছেন, ‘যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তার শপথ! কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। দোকানদার ও খরিদ্দার কাপড় দর দাম করে মূল্য পরিশোধের আগেই তা সংঘটিত হয়ে যাবে।
পৃষ্ঠা:০৭
ঈমানের শাখা-৭. পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান আনা
মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হবে এ বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেন- زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ لَنْ يُبْعَثُوا قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ অর্থ: অবিশ্বাসীরা ভেবে নিয়েছে তাদেরকে কখনও জীবিত উঠানো হবে না। বলে দিন, হ্যাঁ, অবশ্যই আমার প্রতিপালকের শপথ তোমাদেরকে অবশ্যই পুনরায় জীবন দান করে পুনরুত্থিত করা হবে। (সূরা আত তাগাবুন। আয়াত-৮) অন্যত্রে বলা হয়েছে- قُلِ اللَّهُ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيمَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ولكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ . অর্থ: ‘বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। অত:পর কিয়ামতের দিন পুনরায় তোমাদেরকে একত্রিত করবেন। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা বুঝে না। (সূরা আল জাসিয়া-আয়াত: ২৬) উমর ইবনে খাত্তাব প্রাঞ্জ থেকে বর্ণিত এক সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে- الْإِيْمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَبِالْبَعْثِ مِنْ بَعْدِ الْمَوْتِ وَبِالْقَدْرِ كُلِهِ অর্থ: আল্লাহ, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, নবী-রাসূলগণ, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি তোমার আস্থার নাম হচ্ছে ঈমান।
পৃষ্ঠা:০৮
ঈমানের শাখা-৮. হাশরের ময়দানের প্রতি ঈমান আনা
সকল মানুষকে একদিন কবর থেকে জীবিত করে একত্রিত করা হবে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় (যার নাম হাশরের ময়দান), এ কথার প্রতি বিশ্বাস রাখা হচ্ছে ঈমানের অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেন-يَظُنُّ أُولَئِكَ أَنَّهُمْ مَّبْعُوثُونَ لِيَوْمٍ عَظِيمٍ يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَلَمِينَ . অর্থ: তারা কি চিন্তা করে দেখে না যে, নিশ্চয়ই তারা পুনরুত্থিত হবে। সেই মহাদিবসে। যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সম্মুখে। (সূরা আল মুতাফফিফীন: আয়াত-৪-৬) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর প্রত্ব থেকে বর্ণিত সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে বলা হয়েছে- يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعُلَمِينَ حَتَّى يَغِيْبَ أَحَدُهُمْ فِي رَشْحِهِ. অর্থ: মানুষ বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে। তখন তারা স্বীয় ঘামে হাবুডুবু খাবে। (বুখারী ৪৯৩৮, মুসলিম-২৮৬২)
পৃষ্ঠা:০৯
ঈমানের শাখা-৯. মুমিনের জন্য জান্নাত আর কাফিরের জন্য জাহান্নাম
পরকালীন জীবনে মুমিন এবং কাফিরের আবাসস্থল হবে যথাক্রমে জান্নাত ও জাহান্নাম, এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন- بلى مَنْ كَسَبَ سَيِّئَةً وَ أَحَاطَتْ بِهِ خَطِيئَتُهُ فَأُولَئِكَ أَصْحَبُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خُلِدُونَ . وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحَتِ أُولَئِكَ أَصْحَبُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خُلِدُونَ অর্থ: হ্যাঁ, যে ব্যক্তি পাপ উপার্জন করেছে এবং পাপ তাকে ঘিরে রেখেছেন, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। সেটি তাদের স্থায়ী আবাস। আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ সম্পাদন করেছে, তারা জান্নাতের অধিবাসী। তারা চিরদিন সেখানেই অবস্থান করবে। (সূরা: আল বাকারা-আয়াত: ৮১) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এ থেকে সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ يُقَالُ هُذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللَّهُ تَعَالَى إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ অর্থ: তোমাদের কারও মৃত্যু হলে সকাল সন্ধ্যায় তাকে তার আবাসস্থল দেখানো হয়। জান্নাতী হলে জান্নাতে আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামে। বলা হবে এটিই তোমার আবাসস্থল। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। (সহীহ আল বুখারী-১৩৭৯ ও মুসলিম-২৮৬৬)
পৃষ্ঠা:১০
ঈমানের শাখা-১০. আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকা
আল্লাহ তাআলার প্রতি গভীর ভালোবাসা ঈমানেরই অন্যতম অংশ। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে- وَ مِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّوْنَهُمْ كَحْبِ اللَّهِ وَ الَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ অর্থ: মানুষের মধ্যে এমনও রয়েছে যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাদেরকে সেই রকম ভালোবাসে যেমন ভালোবাসা হয় আল্লাহকে। অথচ যারা ঈমানদার তারা আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। (সূরা আল বাকারা: আয়াত-১৬৫) আনাস থেকে বর্ণিত সহীহ আল বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমের এক হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- ثَلَاثَ مَنْ كُنَّ فِيْهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلَاوَةَ الْإِيْمَانِ مَن كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبُّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ. অর্থ: ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে বর্তমান রয়েছে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পেরেছে।
১. যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে বেশি প্রিয়।
২. কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই অন্যকে ভালোবাসে।
৩. যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দান করেছেন, সে পুনরায় কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে যেমন অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। (বুখারী-১৬, মুসলিম-৪৩)
পৃ্ষ্ঠা ১১ থেকে ২০
পৃষ্ঠা:১১
ঈমানের শাখা-১১. মনে সর্বদা আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকা
মনে সর্বদা আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকাও ঈমানের আরেকটি অংশ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন-فَلَا تَخَافُوْهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِينَ অর্থ: ‘তোমরা যদি প্রকৃত মুমিন-ই হয়ে থাক, তাহলে তাদেরকে নয় আমাকেই ভয় কর। (সূরা আলে ইমরান। আয়াত-১৭৫) فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ. অর্থ: ‘তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় কর। (সূরা মায়েদা। আয়াত-৪৪) وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ অর্থ: আর ভয় কেবলমাত্র আমাকেই কর। (সূরা আল বাকারা। আয়াত-৪০) অন্য জায়গায় আল্লাহ ভীতিকে মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ . অর্থ: তারা সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। (সূরা আম্বিয়া: আয়াত- ২৮) اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ অর্থ: তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো। (সহীহ আল বুখারী-১৪১৭, সহীহ মুসলিম-১০১৬) আনাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيرًا অর্থ: আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। (বুখারী-৪৬২১)
পৃষ্ঠা:১২
ঈমানের শাখা-১২. আল্লাহর প্রতি সু ধারণা রাখা
আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা রাখা এবং তাঁর রহমতের প্রত্যাশী হওয়াও ঈমানের অন্যতম অংশ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- إِنَّ رَحْمَةَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ. অর্থ: অবশ্যই আল্লাহর রহমত সচ্চরিত্র লোকদের অতি নিকটেই রয়েছে। (সূরা আল আ’রাফ-আয়াত: ৫৬) সূরা আয-যুমারে বলা হয়েছে- قُلْ يُعِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيمُ অর্থ: আপনি বলে দিন, (মহান আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের সাথে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছো তারা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়াবান। (সূরা জুমার: আয়াত-৫৩) তবে শর্ত হচ্ছে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির মতো আর কাউকে যেন অনুরূপ সত্তা ও গুণাবলির অধিকারী মনে না করা হয়। ইরশাদ হচ্ছে- জাবির প্রশ্নঃ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম তিন দিন আগে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি- -এর মৃত্যুর لَا يَمُوْتُنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللَّهِ. অর্থ: তোমাদের প্রত্যেকেই যেন মৃত্যুর সময় আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা রেখে মৃত্যুবরণ করে। (সহীহ মুসলিম-২৮৭৭)
পৃষ্ঠা:১৩
আবু হুরায়রা মে থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- يَقُوْلُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا عِنْدَ ظَنِ عَبَدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ حِيْنَ يَذْكُرُونِي অর্থ: আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা ইরশাদ করেন, বান্দা আমাকে যে রকম মনে করে, আমি তার আশে পাশেই থাকি। আর যেখানেই সে আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথেই থাকি। (সহীহ আল বুখারী-৭৪০৫ ও সহীহ মুসলিম-২৬৭৫)
পৃষ্ঠা:১৪
ঈমানের শাখা-১৩. আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা।
ঈমানের একটি শাখা হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা বা তাওয়াক্কুল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন- وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ. অর্থ: ‘যারা মুমিন তাদের তো আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে-وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ. অর্থ: তোমরা কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভরশীল হও, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়িদা-আয়াত: ২৩) যারা সত্যিই আল্লাহর উপর নির্ভর করতে পারে, আল্লাহ তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তার জন্য তো একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর কাজ সমাপ্ত করবেনই। (সূরা। আত তালাক: আয়াত-৩) বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে- في سُوَالِ أَصْحَابِهِ لَهُ عَنِ السَّبْعِينَ أَلْفًا الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُونَ فِيهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ. قَالَ رَسُولُ اللهِ اللَّهِ هُمُ الَّذِينَ لَا يَرْقُونَ وَلَا يَسْتَرْقُونَ وَلَا يَتَطَيَّرُونَ ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ অর্থ: যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব লোক হচ্ছে তারা, যারা ঝাড়ফুক করে না, যাদুটোনা চর্চা করে না, গণক বা জ্যোতিষীদের কথায় বিশ্বাস করে না, এসবের বিপরীতে কেবলমাত্র তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।
পৃষ্ঠা:১৫
ঈমানের শাখা-১৪. রাসূলুল্লাহ-কে ভালোবাসা
নবী করীম-কে ভালোবাসাও ঈমানের একটি অংশ। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- لا يُؤْ مِنْ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ . অর্থ: ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার সন্তান-সন্ততি ও অন্যদের চেয়ে বেশি প্রিয় না হবো। (সহীহ আল বুখারী-১৫, সহীম মুসলিম-৪৪) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস শু থেকে বর্ণিত আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ প্রায় বলেছেন- ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সে ঈমানের প্রকৃত আস্বাদন পেয়েছে। (তার একটি হচ্ছে) যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এর অন্য সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়।’ (বুখারী-১৬, মুসলিম-৪৩) আরেক হাদীসে বলা হয়েছে- ‘এক ব্যক্তি নবী করীম-এর নিকট আগমন করে- বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? রাসূলুল্লাহ বললেন- তুমি সেজন্য কী ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সেজন্য বেশি রোযা অথবা দান সাদকার প্রস্তুতি আমার নেই, আমি কেবল আল্লাহর ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, তুমি যাকে ভালোবাস তাঁর সাথেই তুমি থাকবে।
পৃষ্ঠা:১৬
ঈমানের শাখা-১৫. রাসূলুল্লাহর-কে শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা করা
রাসূলুল্লাহ-কে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা ঈমানেরই অংশ। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন- وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ অর্থ: যাতে তোমরা তাঁকে অর্থাৎ রাসূল এ-কে সম্মান ও মর্যাদা দাও এবং সহযোগিতা করো। (সূরা আল ফাতহ-আয়াত: ৯) একজন মুমিনের নিকট ঈমানের দাবীই হচ্ছে যে সে রাসূল-কে সঠিক সহযোগিতা করবে। আল্লাহ বলেন-فَالَّذِيْنَ آمَنُوا بِهِ وَ عَزَّرُوهُ وَ نَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ. অর্থ: অত:পর যারা তাঁর উপর ঈমান আনায়ন করেছে, তাঁর (অর্থাৎ রাসূলের) প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছে এবং তাঁর সাহায্য সহযোগিতা করছে…. তারাই কল্যাণ লাভ করেছে। (সূরা আরাফ-১৫৭) আরো ইরশাদ হচ্ছে- لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا. অর্থ: তোমরা রাসূলকে নিজেদের মধ্যে ডেকে আনাকে এরূপ মনে করো না, যেরূপ তোমরা একে অপরকে ডেকে আনো। (সূরা আন নূর-আয়াত: ৬৩) এই মর্মে আরো বেশি সূরা হুজুরাতে সতর্ক করা হয়েছে- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُوْلِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ
পৃষ্ঠা:১৭
النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ . অর্থ: হে ঈমানদারগণ ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের চেয়ে বেশি অগ্রসর হয়ে যেও না। আল্লাহকে ভয় কর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী। নিজেদের কন্ঠস্বর নবীর কণ্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু করো না, নবীর সাথে জোরে কথাও বলো না যেমন তোমরা পরস্পরের সাথে করে থাক। এরূপ করলে তোমাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে, তোমরা অনুভবও করবে না।’ (সূরা আল হুজুরাত, আয়াত-১-২)
পৃষ্ঠা:১৮
ঈমানের শাখা-১৬. ইসলামের উপর অটল থাকা
দ্বীন বা ইসলামের উপর অটল থাকা, এটিও ঈমানের অংশ। আক্ষরিক অর্থেই মুমিন, এমন একজন ব্যক্তি, যিনি আগুনে পুড়ে শাস্তি গ্রহণে রাজি হতে পারে, কিন্তু কোনো মূল্যেই ঈমান ত্যাগে রাজী হতে পারে না। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে-
১. যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সবচেয়ে বেশি প্রিয়।
২. যে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তাঁর বান্দাকে ভালোবাসে।
৩. যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তারপর সে কুফুরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। (সহীহ আল বুখারী-১৬ সহীহ মুসলিম-৪৩) ইমাম মুসলিম আনাস থেকে নিম্নোক্ত হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন। একবার এক লোক নবী করীম-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। রাসূলুল্লাহ তাকে এক উপত্যকা পরিমাণ ছাগল দিলেন। সে তার গোত্রে গিয়ে বলতে লাগলো, ‘তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, আল্লাহর শপথ! তিনি বিপুল পরিমাণে দান করেন, দরিদ্রতার ভয় করেন না।’ একথা শুনে এক ব্যক্তি নবী করীম-এর কাছে হাজির হলেন, দুনিয়া অর্জন করা ছাড়া তার আর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু যখন সে ইসলাম গ্রহণ করল তখন দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে দ্বীনই তার কাছে প্রিয় বলে মনে হলো।’
পৃষ্ঠা:১৯
ঈমানের শাখা-১৭. জ্ঞান অর্জন করা
আল্লাহকে চেনার মাধ্যম হচ্ছে জ্ঞান বা ইলম। এই ইলম অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে তিনটি-
১. আল কিতাব বা আল কুরআন,
২. আস সহীহা,
৩. শর্ত সাপেক্ষে ইজতিহাদ।
আল্লাহর কিতাব বা আল কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ-এর হাদীসে ইলম (জ্ঞান) ও আলিম (জ্ঞানী) সম্পর্কে অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আলিমদের সম্পর্কে বলেছেন- إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ অর্থ: আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল আলিমগণই আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা ফাতির-আয়াত: ২৮) অন্য আয়াতে বলেন-شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَئِكَةُ وَأُولُوا الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ অর্থ: আল্লাহ নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ফেরেশতাগণ এবং যারা জ্ঞানী (অর্থাৎ আলিম) তারাও সততা ও ইনসাফের সাথে এই সাক্ষ্য দিচ্ছে। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত: ১৮) আল্লাহর ওহীই যে জ্ঞান সেই সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই বলেন- وَ عَلَيْكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا. অর্থ: ‘তিনি আপনাকে এমন বিষয় জানিয়েছেন যা আপনার জানা ছিল না। মূলত আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বিরাট। (সূরা নিসা-আয়াত: ১১৩)
পৃষ্ঠা:২০
আল্লাহ আরো বলেন-يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَتٍ.অর্থ: তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন। (সূরা আল মুজাদালা আয়াত: ১১) আরেক জায়গায় বলা হয়েছে-هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُواالألباب অর্থ: যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা উভয়ে কি সমান হতে পারে? যাদের জ্ঞান বুদ্ধি আছে নসীহত কেবল তারাই গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার-আয়াত। ৯) ‘সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُؤُوسًا جُهَالًا فَسُئِلُوا فَافْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا. অর্থ: যখন কোনো আলিম থাকবে না তখন মানুষ মূর্খ জাহিলদের নেতা বানিয়ে নেবে। তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে তারা না জেনেই মতামত দিয়ে দেবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং লোকদেরও পথভ্রষ্ট করবে। (সহীহ বুখারী-১০০ ও মুসলিম-২৬৭৩) সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে বলা হয়েছে مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيْهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتِ مِنْ بُيُوتِ اللهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَ سُوْنَهُ بَيْنَهُمْ
পৃ্ষ্ঠা ২১ থেকে ৩০
পৃষ্ঠা:২১
إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَتْهُمُ الْمَلَائِتَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ وَمَنْ بَطَأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ. অর্থ: যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জনের জন্য বের হয় আল্লাহ তার জন্য এর মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। যখন কিছু লোক আল্লাহর ঘরসমূহের কোনো একটিতে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং তার পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকে তখন তাদের উপর প্রশান্তি বর্ষিত হতে থাকে। তাদেরকে রহমতের চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন। আর তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সাথে তাদের কথা স্মরণ (বলাবলি) করতে থাকেন। যার কার্যকলাপ তাকে পিছিয়ে দেবে, বংশমর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম-হাদীস: ২৬৯৯)
পৃষ্ঠা:২২
ঈমানের শাখা-১৮. শিক্ষার প্রসার
শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা এবং বিকাশ ঈমানের অন্যতম শাখা। লোকদের শিক্ষা দান তথা শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ অর্থ: (আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা) লোকদের মধ্যে উহা প্রচার করো, তা গোপন করে রেখো না। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৭) অন্যত্রে বলা হয়েছে- وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوْا إِلَيْهِمْ. ‘অর্থ: তারা নিজ গোত্রে গিয়ে লোকদের সতর্ক করুক। (সূরা আত তাওবা: আয়াত- ১২২) নবী করীম বিদায় হজ্জের দিন লোকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন- الا لِيُبَلِّغَ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ فَلَعَلَّ بَعْضَ مَنْ يُبَلِّغُهُ يَكُونُ أَوْ عَى لَهُ مِنْ بَعْضِ مَنْ سَمِعَهُ. অর্থ: ‘সাবধান! তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগণ অবশ্যই অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে আমার এ কথা পৌঁছে দেবে। এখানকার ব্যক্তিগণ যাদের কাছে আমার কথা পৌঁছাবে, তারা হয়ত উপস্থিত শ্রোতাদের চেয়ে অধিকতর সংরক্ষণকারী হবে। (সহীহ আল বুখারী-৪৪০৬, সহীহ মুসলিম-১৬৭৯) সুনানে আবু দাউদে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত এক হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ فَكَتَمَهُ الْجَمَهُ اللَّهُ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ অর্থ: ‘কাউকে যদি ইলম সম্পর্কিত কিছু জিজ্ঞেস করা হয় এবং সে (জানা সত্ত্বেও) তা গোপন রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে আগুনের লাগাম পরিধান করাবেন। (আবু দাউদ-৩৬৫৮, আত তিরমিযী-২৬৩৯, সহীহ হাসান)
পৃষ্ঠা:২৩
ঈমানের শাখা-১৯. কুরআন মাজীদের সম্মান করা
কুরআন মজীদকে সম্মান করার অর্থ হল কুরআন যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা ও যেসব বিষয়ে আল কুরআন মানুষকে সতর্ক করেছে এবং ভয় দেখিয়েছে সেসব বিষয়ে ভয় করা এবং সতর্ক অবলম্বন করা আর তাকেই বলা হয় আল্লাহভীতি (খাশইয়াতুল্লাহ) বা তাকওয়া (সতর্কতা)। আল্লাহ তাআলা বলেন- لَوْ أَنْزَلْنَا هُذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُتَصَدِّعًا مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ অর্থ: আমরা যদি এই কুরআনকে পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম তাহলে দেখতে পেতে আল্লাহর ভয়ে পাহাড় পর্যন্ত বিদীর্ণ হয়ে যেত। (সূরা আল হাশর-আয়াত: ২১) إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ فِي كِتَبٍ مَكْنُونٍ لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ تَنْزِيلٌ مِنْ رَّبِّ الْعَلَمِينَ. অর্থ: নিঃসন্দেহে এ কুরআন মহাসম্মানিত। কিতাব আকারে (লিখিত) সংরক্ষিত। পবিত্রগণ ছাড়া আর কেউ এটি স্পর্শ করে না। বিশ্বজাহানের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। (সুরা আল ওয়াকিয়া-আয়াত। ৭৭-৮০) সহীহ আল বুখারীতে উসমান ইবনে আফফান হু থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ. অর্থ: ‘তোমাদের মধ্যে মর্যাদাবান বা উত্তম সেই ব্যক্তি যে নিজে আল কুরআন শিখে এবং অপরকে শেখায়।’ (বুখারী-৫০২৭, তিরমিযী-২৯০৭)
পৃষ্ঠা:২৪
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- لا حَسَدَ إِلَّا عَلَى اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ أَتَاهُ اللهُ هُذَا الْكِتَابَ فَقَامَ بِهِ أَنَاءَ اللَّيْلِ وَأَنَاءَ النَّهَارِ وَرَجُلٌ أَتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَتَصَدَّقَ بِهِ أَنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ. অর্থ: দুটি ব্যাপার ছাড়া ঈর্ষা করা ঠিক নয়। একটি হচ্ছে, যাকে আল্লাহ তাআলা এই কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন এবং সে দিনরাত সেই জ্ঞানানুযায়ী আমল (কাজ) করে। অপরটি হচ্ছে, যাকে আল্লাহ তাআলা ধন সম্পদ দান করেছেন এবং সেই ধনসম্পদ সে রাতদিন আল্লাহর পথে খরচ করছে।’)(সহীহ মুসলিম-৮১৫; সহীহ আল বুখারী-৫০২৫, কিতাবুত তাওহীদ)
পৃষ্ঠা:২৫
ঈমানের শাখা-২০. পাক পবিত্রতা অর্জন করা
পবিত্রতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ অর্থ: যখন তোমরা নামাযের জন্য উঠবে তখন তোমাদের মুখমণ্ডল, দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও। তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা গোড়ালীর গিটসহ ধুয়ে নাও। (সূরা আল মায়েদা-আয়াত: ৬) আবু মালেক আল আশ’আরী এ থেকে বর্ণিত, নবী করীম বলেছেন-الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَانِ أَوْ تَمْلَا مَابَيْنَ السَّمَاتِ وَالْأَرْضِ وَالصَّلَاةُ نُوْرٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُوا فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوْ بِقُهَا. অর্থ : পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ওজনদণ্ডের (মিযানের) পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দেবে এবং ‘সুবনাহাল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ’ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দেবে। নামায হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। “সাদকা” প্রমাণস্বরূপ, আর ধৈর্য আলোকময়, আর কুরআন তোমার পক্ষে দলীল হবে অথবা তোমার বিপক্ষে দাড়াবে। তার আমল দ্বারা নিজেকে (আল্লাহর শাস্তি থেকে) রক্ষা করে কিংবা ধ্বংস করে। (সহীহ মুসলিম-২২৩) উল্লেখিত হাদীসের মধ্য থেকে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে হাদীসের পবিত্রতা অর্জনকে অর্ধেক ঈমান বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কারণ ইসলামে পবিত্রা অর্জনকে যতগুরুত্ব দেওয়া হয়েছে
পৃষ্ঠা:২৬
অন্যকোনই আদর্শে পবিত্র তাকে এত বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই। তাই ইসলামে প্রায় সকল গুরুত্ব ইবাদত শুদ্ধও গ্রহণ যোগ্য হওয়া কিম্বা না হওয়া ভিত্তিশীল পবিত্রতা সটিকভাবে হওয়া ও না হওয়ার পর অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জন ছাড়া প্রায় কোন ইবাদতই আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য হয় না। ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য অন্তরের তথা নিয়্যাতের পবিত্রতা ১০০% অপরিহার্য আর দৈহিক পবিত্রতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবশ্যিক। তাই পবিত্রতা অর্জনকে অর্ধেক ঈমান বলা হয়েছে। ইবনে উমর এ থেকে বর্ণিত সহীহ মুসলিমের আরেকটি হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-لَا يُقْبَلْ صَلوةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ. অর্থ: মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া নামায এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের দান কবুল করেন না। (সহীহ মুসলিম-২২৪ পবিত্রতা অধ্যায়)
পৃষ্ঠা:২৭
ঈমানের শাখা-২১. সালাত (নামায)
দৈনিক পাঁচবার সালাত প্রতিষ্ঠিত করাকে অত্যাবশ্যকীয় (ফরয) করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- إِنَّ الصَّلوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا. অর্থ: নিশ্চয়ই মুমিনদের উপর নামায ফরয করা হয়েছে ওয়াক্ত (সময়) মতো। (সূরা নিসা-আয়াত ১০৩) হাদীসে বলা হয়েছে- إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلوة অর্থ: অবশ্যই একজন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে সালাত (নামায)। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজা যাবির থেকে বর্ণনা করেছেন।) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ র থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ -কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়? জবাবে তিনি বললেন- .الصَّلُوةُ অর্থ: সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা।’ (সহীহ আল বুখারী-৭৫৩৪, সহীম মুসলিম-৮৫) উসমান থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- مَا مِنْ أَمْرِيءٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلَاةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيَحْسِنُ وُضُوْءَهَا وَخُشُوعَهَا وَرُكُوْعَهَا إِلَّا كَانَتْ كُفَّارَةً لَمَّا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوْبِ مَا لَمْ يُؤْتِ كَبِيرَةٌ وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ অর্থ: যখন কোনো মুসলিমের ফরয নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তখন সে যদি উত্তমরূপে ওযু করে এবং একান্ত বিনয়-নম্রতার সাথে রুকু সিজদা আদায় করে তাহলে সে কবীরা গুনায় লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর এরূপ সারা বছরই হতে থাকে। (সহীহ মুসলিম-২২৮)
পৃষ্ঠা:২৮
ঈমানের শাখা-২২. যাকাত
ঈমানের ২২তম শাখা হচ্ছে যাকাত আদায় করা। নামাযের পরই যাকাতের গুরুত্ব। যাকাত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلوةَوَيُؤْتُوا الزَّكُوةَ وَ ذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ . অর্থ: তাদেরকে এছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটিই দ্বীনি স্থায়ী ব্যবস্থাপনা। (সূরা আল বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫) সূরা আত তাওবায় বলা হয়েছে- وَ الَّذِينَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَ لَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيْلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ . يَوْمَ يُحْلَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَرْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُوْنَ অর্থ: আর যারা সোনা রূপা পুঞ্জিভূত করে রাখে, তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ জানিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলো উত্তপ্ত করা হবে। তা দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল, পিঠ ও পার্শ্বদেশে ছ্যাকা দেয়া হবে, আর বলা হবে- এগুলো তো তোমরা নিজেদের জন্য একত্রিত করে রেখেছিলে। এবার এর স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা আত তাওবা-আয়াত: ৩৪-৩৫) অন্যত্র বলা হয়েছে এভাবে- وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا تَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيْطَوَقُوْنَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيمَةِ
পৃষ্ঠা:২৯
অর্থ: আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা কিছু দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে এই কৃপণতা তাদের জন্য কল্যাণকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে, বরং ইহা তাদের অকল্যাণই বয়ে আনবে। যে ধন সম্পদের ব্যাপারে তারা কৃপণতা করে সেই ধন সম্পদ কিয়ামতের দিন বেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। (সূরা ইমরান: আয়াত-১৮০) ইমাম বুখারী আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত এক হাদীসে সংকলন করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِ زَكَاتَهُ مُثْلَ لَهُ مَالَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَع لَهُ زَبِيْبَتَانِ يُطَوَقَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِ مَتَيْهِ (يَعْنِي شِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُولُ . أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ، وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا أَتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَقُوْنَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . অর্থ: যাকে আল্লাহ ধন সম্পদ দান করেছেন কিন্তু তা থেকে যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন সেগুলো দুই চোখের উপর নুকতা বিশিষ্ট বিরাট টাকওয়ালা বিষাধর সাপ তার গলা পেচিয়ে ধরে ছোবল মারতে থাকবে। সেই সাপ কানে শুনবে না। ছোবল মারবে আর বলতে থাকবে- আমি তোমার ধন সম্পদ, আমি তোমার টাকা-পয়সা। তারপর তিনি (সূরা আলে ইমরানের ১৮০ নং আয়াত) তিলাওয়াত করলেন। যার অর্থ- ‘আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা কিছু দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা অবলম্বন করে এবং ধারণা করে এতে তাদের কল্যাণ হবে। না বরং এতে তাদের অকল্যাণই বয়ে আনবে। যে ধন সম্পদের ব্যাপারে তারা কার্পণ্য করে সেই ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিন বেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় পরিয়ে দেয়া হবে।’ (বুখারী: ১৪০৩)
পৃষ্ঠা:৩০
ঈমানের শাখা-২৩. সিয়াম (রোযা)
ঈমানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সিয়াম বা রোযা। সিয়ামের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ. অর্থ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে। যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। (সূরা আল বাকারা-আয়াত। ১৮৩) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- بنِي الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةَ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجَّ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ. অর্থ: পাঁচটি বিষয়ের উপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
১. আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া,
২. সালাত কায়েম করা,
৩. যাকাত আদায় করা,
৪. বাইতুল্লাহ শরীফ হজ্জ পালন করা এবং
৫. রমযানের সিয়াম পালন করা। (সহীহ মুসলিম-২১)
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, নবী করীম বলেছেন- كُنْ حَسَنَةٍ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِأْةِ ضِعْفٍ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَ : إِلَّا الشَّوْمُ فَإِنَّهُ فِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
পৃ্ষ্ঠা ৩১ থেকে ৪০
পৃষ্ঠা:৩১
অর্থ: প্রতিটি নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ থেকে সাতশ’গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।’ আল্লাহ আযযা ও জাল্লা বলেন- ‘রোযার বিনিময় ছাড়া। কারণ রোযা আমার জন্য তাই আমিই তার বিনিময় দিব।’ (তিরমিযী-৭৬৪) আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে বলা হয়েছে- لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ অর্থ: ‘রোযাদারের জন্য দুটো খুশীর সময় রয়েছে। একটি যখন সে ইফতার করে (রোযাপূর্ণ করে), আরেকটি যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে।’ (মুসলিম-১১৫১) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে- لَخَلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ. অর্থ: রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও প্রিয়। (বুখারী-১৯০৪) (যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সারাদিন অনাহারে থেকে মুখে গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে।) এ সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে- الصَّوْمُ جُنَّةٌ অর্থ: ‘রোযা হচ্ছে ঢালস্বরূপ।'(সহীহ মুসলিম-১১৫১)
পৃষ্ঠা:৩২
ঈমানের শাখা-২৪, ই’তিকাফ
ই’তিকাফ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-وَ عَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعُكِفِينَ وَ الرُّكَّعِ السُّجُودِ অর্থ: আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই’তিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। (সূরা আল বাকারা-আয়াত: ১২৫) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আয়েশা থেকে রাসূলুল্লাহ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে-كَانَ يَعْتَلِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ অর্থ: রাসূলুল্লাহর আমৃত্যু রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করেছেন। রাসূল-এর ইন্তিকালের পর তাঁর স্ত্রীগণও রমযানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন। (বুখারী-২০২৬, মুসলিম-১১৭২)
পৃষ্ঠা:৩৩
ঈমানের শাখা-২৫. হজ্জ করা
হজ্জ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا অর্থ: এ ঘরে হজ্জ করা মানুষের কাছে আল্লাহ প্রাপ্য (দাবি)।’ অবশ্য যার সামার্থ্য রয়েছে এ অবধি পৌঁছার। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত: ৯৭) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর প্রশ্ন থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِ الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ . অর্থ: পাঁচটি বিষয়ের উপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
১. আল্লাহ ছাড়া কোনো যোগ্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া,
২. সালাত কায়েম করা,
৩. যাকাত দেয়া,
৪. বাইতুল্লাহর হজ্জ করা এবং
৫. রমযানের রোযা রাখা। (সহীহ আল বুখারী-৮ সহীহ মুসলিম-১৬)
পৃষ্ঠা:৩৪
ঈমানের শাখা-২৬. জিহাদ (সংগ্রাম)
আল্লাহর পথে সংগ্রাম বা জিহাদও ঈমানের অন্যতম অংশ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ অর্থ: তোমরা সংগ্রাম (জিহাদ) কর আল্লাহর জন্য, যে রকম সংগ্রাম করা উচিত। (সূরা আল হজ্জ, আয়াত: ৭৮) অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ অর্থ: তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে এবং কোনো তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে তারা পরওয়া করে না। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত: ৫৪) সূরা আত তাওবায় বলা হয়েছে-قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُوْنَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةٌ অর্থ: যেসব কাফির তোমাদের কাছাকাছি রয়েছে তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, তারা যেন বুঝতে পারে তোমাদের মধ্যে কঠোরতা আছে। (সূরা আত তাওবা-আয়াত। ১২৩) অন্য জায়গায় বলা হয়েছে-يَأَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ অর্থ: হে নবী। আপনি ঈমানদারদেরকে লড়াইয়ের জন্য উৎসাহিত করুন। (সুরা: আল আনফাল-আয়াত: ৬৫) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা র থেকে বর্ণিত হয়েছে।
পৃষ্ঠা:৩৫
রাসূলুল্লাহ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল-أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيْمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُوْلِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِيسَبِيلِ اللَّهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌ مَبْرُورٌ অর্থ: কোন আমলটি উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস। জিজ্ঞেস করা হলো- তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে সংগ্রাম (জিহাদ)। আবার জিজ্ঞেস করা হলো- তারপর কোনটি? তিনি বললেন- মাবরুর হজ্জ (অর্থাৎ কবুল কৃত হজ্জ)।(সহীহ আল বুখারী-১৫১৯, সহীহ মুসলিম-৮৩) সহীহ আল বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা প্রশ্ন থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- لا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُةِ وَسَأَلُوا اللهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَأَصْبِرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ. অর্থ: তোমরা শত্রুর সাথে সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব হয়ো না। আর আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করতে থাক। যখন তোমরা তাদের মুখোমুখি হয়ে যাবে তখন ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রেখো-জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে। অর্থাৎ শত্রুর সাথে যুদ্ধ চেয়ে নিও না। একান্তই প্রয়োজন না হলে যুদ্ধ এড়িয়ে চলবে। কিন্তু যুদ্ধ যদি অনিবার্য হয়ে উঠে কিম্বা শত্রুর পক্ষ থেকে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয় তবে এই সন্ধিক্ষণে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করবে না। বরং ধৈর্যের সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করে লড়াই চালিয়ে যাবে। তার পরাজয় আল্লাহর হাতে। (মুসলিম- ৪৬৪০)
পৃষ্ঠা:৩৬
ঈমানের শাখা-২৭. আল্লাহর পথে পাহারা (মুরাবাতাহ)
আল্লাহ তাআলা বলেছেন- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا. অর্থ: হে ঈমানদারগণ। ধৈর্যের পথ অবলম্বন কর, বাতিলের মোকাবেলায় অটল থাকো এবং শত্রুর মোকাবেলায় সদাপ্রস্তুত থাকো। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত। ২০০) সহীহ আল বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- رباطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا. অর্থ: আল্লাহর পথে একদিন পাহারা দেয়া পৃথিবী এবং তার মধ্যস্থিত সবকিছু থেকে উত্তম। তোমাদের কারও একটি চাবুক রাখতে যে জায়গাটুকু লাগে জান্নাতের সেই জায়গাটুকু গোটা পৃথিবী ও তার মধ্যস্থিত সবকিছু থেকে উত্তম।’ সংগ্রাম (জিহাদ) কিংবা লড়াই (কিতাল)-এর সময় একটি দিন অথবা একটি রাত শত্রুর মোকাবেলায় পাহারায় কাটানো, মসজিদে ইতিকাফে বসে সারাক্ষণ নামাযরত অবস্থায় থাকার চেয়ে উত্তম।
পৃষ্ঠা:৩৭
ঈমানের শাখা-২৮. শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ় থাকা
আল্লাহ তায়ালা বলেন- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا. অর্থ: যে ঈমানদারগণ। যখন কোনো বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও তখন সুদৃঢ় থাকো। (সূরা আল আনফাল-আয়াত: ৪৫) অন্যত্র আরও বলা হয়েছে- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيْتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوْهُمُ الْأَدْبَارَ وَ مَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَةً إِلَّا مُتَحَزِفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيْرًا إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ وَمَأْوَنَهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ . অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন যুদ্ধরত অবস্থায় কাফিরদের মুখোমুখী হবে তখন আর পেছন ফিরে আসবে না। অবশ্য লড়াইয়ের কৌশল অথবা নিজ সৈন্যদের সাথে একত্রিত হতে চাইলে ভিন্ন কথা। যদি কেউ পেছন ফিরে আসে সে যেন আল্লাহর গযব নিয়ে এলো। তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আবাসস্থল হিসেবে তা নিতান্তই নিকৃষ্ট। (আনফাল- ১৫,১৬) অন্যত্র বলা হয়েছে- يَأَيُّهَا النَّبِيُّ حَرْضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ إِنْ يَكُن مِنْكُمْ عِشْرُونَ صْبِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةً يَغْلِبُوا الْفًا. অর্থ: হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহিত করুন। (বলুন) তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন দৃঢ় ব্যক্তি থাকে তাহলে দু’শ জনের মোকাবেলায় বিজয় হবে। আর যদি তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকে তাহলে বিজয়ী হবে হাজার জনের উপর। (সূরা আনফাল-আয়াত: ৬৫)
পৃষ্ঠা:৩৮
ঈমানের শাখা-২৯, গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায়ে বিশ্বাস
যুদ্ধে শত্রুপক্ষের পরিত্যক্ত সম্পদ, ইসলামী পরিভাষায় যাকে ‘গানিয়া’ বা ‘গানিমাত’ বলা হয়, সম্পূর্ণ সম্পদের ২০% রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। সরকার প্রধান কিংবা তাঁর কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে তা গৃহীত হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা- وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمْسَهُ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِي الْقُرْبَى وَ الْيَتَنى وَالْمَسْكِينِ وَ ابْنِ السَّبِيلِ إِنْ كُنْتُمْ أَمَنْتُمْ بِاللَّهِ وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى عَبْدِنَا. অর্থ: আরও জেনে রাখো, গনিমত হিসেবে যা কিছু তোমরা পাবে তার এক-পঞ্চমাংশ (২০%) হচ্ছে আল্লাহর, তাঁর রাসূলের তাঁর নিকটাত্মীয়- স্বজনের এবং ইয়াতিম, অসহায় ও পর্যটকদের জন্য। যদি তোমরা আল্লাহর উপর এবং তিনি তাঁর বান্দার উপর যা কিছু নাযিল করেছেন তার উপর বিশ্বাসী হও। (সূরা আল আনফাল-আয়াত: ৪১) অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- وَمَا كَانَ لِنَبِي أَنْ يَغُلَّ وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيمَةِ. অর্থ: কোনো বস্তু গোপন করে রাখা নবীর কাজ নয়। যে ব্যক্তি কোনো জিনিস গোপন বা আত্মসাৎ করবে সে কিয়ামতের দিন সেই জিনিস নিয়েই উঠবে। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত। ১৬১)
পৃষ্ঠা:৩৯
ঈমানের শাখা-৩০. দাসত্ব মোচন করা
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন- فَلَا اقْتَحَمَ الْعَقَبَةَ، وَمَا أَدْرَيكَ مَا الْعَقَبَةُ فَا رَقَبَةٍ অর্থ: কিন্তু সেই দুর্গম-বন্ধুর ঘাঁটিপথ অতিক্রম করার সাহস করেনি। আপনি কি জানেন সেই দুর্গম-বন্ধুর ঘাঁটিপথ কী? কোনো ঘাড় হতে দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত করা। (সূরা আল বালাদ-আয়াত: ১১, ১২, ১৩) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা হাদীসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ বলেছেন- থেকে বর্ণিত এক مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً اَعْتَقَ اللهُ بِكُلِّ عُضُرٍ مِنْهَا وَعُضُوا مِنْ أَعْضَائِهِ مِنَ النَّارِ حَتَّى فَرْجَهُ بِفَرْجِهِ অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দেবে সেই ক্রীতদাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ মুক্তিদাতার প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে হিফাযত করবেন। এমনকি লজ্জাস্থানের বিনিময়ে তার লজ্জাস্থানও। (সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম-৩৬৫৪)
পৃষ্ঠা:৪০
ঈমানের শাখা-৩১. কাফফারা (প্রতিকার)
আল কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী চারটি অপরাধের বিনিময় প্রদানের নাম কাফফারা। অপরাধগুলো হচ্ছে-
১. হত্যা,
২. জিহার (স্ত্রীকে মায়ের কোনো অংগের সাথে তুলনা করা),
৩. শপথ এবং
৪. রমযানের দিনের বেলা স্ত্রীকে নিয়ে বিছানায় যাওয়া।
শরীআহ যে জরিমানা নির্দিষ্ট করেছে তাকে ফিদওয়া বলা হয়। ফিদয়া শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তিই নয় এটি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে।
পৃ্ষ্ঠা ৪১ থেকে ৫০
পৃষ্ঠা:৪১
ঈমানের শাখা-৩২. চুক্তি লংঘন না করা
আল্লাহ তা’আলা বলেন- أَوْفُوا بِالْعُقُودِ অর্থ: ‘তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ কর।’ (সূরা আল মায়িদা-আয়াত: ১) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেন, চুক্তি বলতে এখানে আল কুরআনে যা কিছু হালাল করা হয়েছে, যা কিছু হারাম করা হয়েছে, যা কিছু ফরয করা হয়েছে এবং যে সীমা পরিসীমা বলে দেয়া হয়েছে তার সবকিছুকেই বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ আরও বলেন- يُؤْفُوْنَ بِالنَّذْرِ অর্থ: ‘যারা মানত পূরণ করে।’ (সূরা আদ-দাহর-আয়াত: ৭) সূরা আন নাহল এ বলা হয়েছে- وَأَوْفُوْا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عُهَدْتُمْ وَلَا تَنْقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيْدِهَا. অর্থ: ‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সেই অঙ্গীকার পূর্ণ কর। আর পরিপূর্ণ কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না। (সূরা নাহল-আয়াত। ৯১) সহীহ আল বুখারীতে ইবনে মাসউদ র থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ هُذِهِ غَدْرَةٌ فَلَانٍ অর্থ: কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর একটি পরিচিত ব্যানার থাকবে, সেই ব্যানারই বলে দেবে সে কী ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। (সহীহ বুখারী)
পৃষ্ঠা:৪২
সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন- أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيْهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ অর্থ: চারটি বৈশিষ্ট্য একসাথে যার ভেতর পাওয়া যাবে সে পুরোপুরি মুনাফিক। আর যদি সেই বৈশিষ্ট্যের কোনো একটি বৈশিষ্ট্য কারো মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে মুনাফেকীর একটি চরিত্র রয়েছে বলা যায়, যতক্ষণ না সে তা পরিহার করে।
১. কথা বললে মিথ্যা বলে।
২. চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে।
৩. কাউকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করে না
৪. কারও সাথে ঝগড়া হলে সে বেফাঁস কথাবার্তা বলে।
(সহীহ আল বুখারী, সহীহ মুসলিম)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমের আল জুহানী প্রশ্ন থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহর বলেছেন- إِنَّ أَحَقَّ الشَّرْطِ أَنْ يُؤْلَى بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُونَ অর্থ: যে শর্তের মাধ্যমে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের লজ্জাস্থান বৈধ করে নিয়েছ, তা পূর্ণ করার দিক থেকে সর্বাধি গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার। (সহীহ মুসলিম-৩৩৩৭)
পৃষ্ঠা:৪৩
ঈমানের শাখা-৩৩. আল্লাহর নি’আমাতের কৃতজ্ঞতা
আল্লাহ তা’আলা বলেন- قُلِ অর্থ: ‘বল, প্রশংসা তো কেবল আল্লাহর।’ (সূরা নামল-আয়াত: ৫৯)তিনি আরও বলেছেন- وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوها. অর্থ: যদি আল্লাহর নি’আমাত তোমরা গুনতে চাও তা গুনে শেষ করতে পারবে না। (সূরা ইবরাহীম-আয়াত: ৩৪) আবু যারা থেকে সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ যখন ঘুমাতে বিছানায় যেতেন তখন বলতেন-اللَّهُمَّ بِأَسْبِكَ أَمُوْتُ وَأَحْيَاঅর্থ: হে আল্লাহ! আপনার নামে মৃত্যুবরণ করবো এবং আপনার নামে বেঁচে উঠবো।’আবার যখন ঘুম থেকে জেগে উঠতেন, তখন ববলতেন-الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانِي بَعْدَ مَا أَمَا تَنِي وَإِلَيْهِ النُّشُورُ.অর্থ: সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি মৃত্যুর পর পুনরায় আমাকে জীবিত করেছেন। তাঁর দিকেই একদিন ফিরে যেতে হবে। (সহীহ আল বুখারী) মুসলিমে সুহাইব প্রঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল এর বলেছেন-عَجَبًا لِامْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا الْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاء صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ.অর্থ: মু’মিনের প্রসঙ্গটি খুবই আশ্চর্যজনক। সমস্ত কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া আর কেউ এ কল্যাণ লাভ করতে পারে না। সচ্ছলতার সময় শুকরিয়া জ্ঞাপন করে- এটি তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর অসচ্ছলতায় ধৈর্য ধারণ করে, এও তার জন্য কল্যাণকর।(সহীহ মুসলিম হাদীস-৭২২৯)
পৃষ্ঠা:৪৪
ঈমানের শাখা-৩৪. সত্য অবলম্বন করা
অপ্রয়োজনীয় কথা, মিথ্যা কথা, পরনিন্দা ও পরচর্চা, অশ্লীল কথাবার্তা পরিহার করা একান্ত কর্তব্য। আল কুরআন ও সুন্নাতে রাসূলে এ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। যারা সর্বদা সত্য কথা বলেন তাদের প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন-و الصَّدِقِينَ وَالصُّدِقْتِ وَ الصَّبِرِينَ وَالصُّبِرْتِ وَ الْخَشِعِينَ وَ الخُشِعْتِ وَ الْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقْتِ وَ الصَّائِمِينَ وَ الطَّيْتِ وَ الْحَفِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَفِظْتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّكِرْتِ أَعَدَّاللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرًا عَظِيمًا. অর্থ: সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ রোযাদার নারী, স্বীয় লজ্জাস্থান হিফাযতকারী পুরুষ ও স্বীয় লজ্জাস্থান হিফাযতকারিণী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান। (সূরা আহযাব-৩৫)আরেক জায়গায় বলেছেন-يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّدِقِينَ. অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ সম্পর্কে সতর্ক হও এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো। (সূরা আত তাওবা-আয়াত। ১১৯)
পৃষ্ঠা:৪৫
মিথ্যা পরিহার করতে ও সত্য অবলম্বনে আল্লাহ আরো বলেন।وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ .অর্থ: যারা সত্যসহ উপস্থিত হয়েছে এবং তাকে সত্য বলে মেনেছে তারাই তো মুত্তাকী। (সূরা আয যুমার-আয়াত: ৩২-৩৩)ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হাদীসে, রাসূলুল্লাহর বলেছেন-إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِى إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُحَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا .অর্থ: ‘সত্য নেকীর দিকে পথ দেখায়, নেকী জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোনো মানুষ সত্যের অনুশীলন করতে করতে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। (সহীহ আল বুখারী, মুসলিম-৬৩৩৯)
পৃষ্ঠা:৪৬
ঈমানের শাখা-৩৫. আমানত
কেউ কারও কাছে কিছু আমানত বা গচ্ছিত রাখলে তা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন- إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَتِ إِلَى أَهْلِهَا . অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, আমানতকে তার প্রাপকের কাছে ফিরিয়ে দিতে। (সূরা আন নিসা-আয়াত: ৫৮) অন্যত্র বলা হয়েছে- فَإِنْ آمِنَ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَلْيُؤَذِ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ. অর্থ: যদি একে অন্যের নিকট আমানত রাখে তবে যার নিকট আমানত রাখা হয়েছে তার উচিত অন্যের আমানত ফিরিয়ে দেওয়া। (সবাকারা-২৮৩) আবু হুরায়রা পুত্র থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- أَذِ الْأَمَانَةَ إِلَى مَنِ ائْتَمَنَكَ وَلَا تَخْنُ مَنْ خَانَكَ. অর্থ: তোমার কাছে কেউ কিছু আমানাত রাখলে সেই আমানাত তার কাছে ফিরিয়ে দাও আর কেউ যদি তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে তুমি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।(তিরমিযী-১২৬৪, আবু দাউদ-৩৫৩৫) বুখারী ও মুসলিমে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- ثَلَاثُ مَنْ كُنَّ فِيهِ فَهُوَ مُنَافِقٌ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ اخْلَفَ وَإِذَا تُتُمِنَ خَانَ. অর্থ: তিনটি অভ্যাস যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে সে মুনাফিক। যদি রোযা রাখে, নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম মনে করে তবুও। অভ্যাস তিনটি হলো- কথা বললে মিথ্যা বলে, কাউকে প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করে না এবং তার কাছে কিছু আমানাত রাখা হলে তা খিয়ানত করে বসে। (আহমদ-১০৭০৮, ইবনে হিব্বান-২৫৭)
পৃষ্ঠা:৪৭
ঈমানের শাখা-৩৬. মানুষ হত্যা না করা
মানুষ হত্যা করা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য। মানুষ হত্যা শরীআতে একেবারেই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ অর্থ: কেউ ইচ্ছাকৃত কোনো ঈমানদারকে হত্যা করলে তার পরিণাম জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। (সূরা আন নিসা-আয়াত: ৯৩) আরও বলা হয়েছে- وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ অর্থ: তোমরা পরস্পর খুন খারাপীতে লিপ্ত হয়ো না। (সূরা আন নিসা। ২৯) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন- থেকে سِبَابُ الْمُسْلِمِ فَسُوْقَ وَقِتَالَهُ كُفْرٌ. অর্থ: কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী। (বুখারী-৪৮) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন-أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاءِ . অর্থ: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম মানুষের মধ্যে খুনের বিচার করা হবে। (বুখারী-৬১৬৮, ৬৪৭১, মুসলিম-১৬৭৮) উমর প্রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহর বলেছেন- لا يَزَالُ الْمُؤْمِنُ فِي فُسَحَةٍ مِنْ دِينِهِ مَالَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا. অর্থ: একজন মুসলিম কখনও তার দ্বীনের সীমালঙ্ঘন করে না এবং অযথা রক্তপাত এড়িয়ে চলে, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। (বুখারী-৬৪৬৯)
পৃষ্ঠা:৪৮
ঈমানের শাখা-৩৭, লজ্জাস্থানের হিফাযত করা
ঈমানের অন্যতম একটি শাখা হচ্ছে লজ্জাস্থানের হিফাযত বা অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন না করা। সূরা আল মু’মিনুনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُوْنَ অর্থ: (সফল সেসব মু’মিন) যারা তাদের লজ্জাস্থানসমূহের হিফাযত করে। (সূরা আল মুমিনুন-আয়াত: ৫) লজ্জাস্থানের হিফাযত বলতে যৌনস্পৃহাকে অস্বীকার করা নয়। বৈধপথে যৌন চাহিদা পূরণ করা জায়েয। অবৈধ পথে যৌন চাহিদা পূরণ না করাকে ‘লজ্জাস্থানের হিফাযত’ বলা হয়েছে। এ কথাটি অন্য আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে এভাবে- وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنِّي إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا. অর্থ: তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, কেননা তা অশ্লীল ও মন্দ পথে নিয়ে যায়। (সূরা বনী ইসরাঈল-আয়াত: ৩২) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা ঃ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- لا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَسْرِقُ السَّارِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً ذَاتَ شَرَفٍ يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ. অর্থ: ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত থাকাবস্থায় মু’মিন থাকে না। চুরি করার সময় চোরও ঈমানদার থাকে না। মাদকসেবী মাদক সেবনের সময় মু’মিন থাকে না। এমনকি মানুষের চোখের সামনে লুটেরা যখন লুটপাট করতে থাকে তখন সে ঈমানদার থাকে না। (বুখারী-২৪৭৫, সহীহ মুসলিম-৫৭)
পৃষ্ঠা:৪৯
ঈমানের শাখা-৩৮. অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগ বা দখল না করা অন্যায়ভাবে সম্পদ ভোগ-দখল বলতে বুঝায়, কারো সম্পদ কিম্বা অধিকারকে নিজ দখলে নেওয়া, প্রকৃতভাবে যার ওপর তার অধিকার নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেন- وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَا لَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ. অর্থ: তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ-দখল করো না। (সূরা আল বাকারা-আয়াত: ১৮৮) অন্যত্র বলা হয়েছে- فَبِظُلْمٍ مِنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَ بِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيلِ اللهِ كَثِيرًا ، وَأَخْذِهِمُ الرَّبُوا وَقَدْ نُهُوا عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ অর্থ: তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দেয়ার কারণে ইহুদীদের জন্য হারাম করে দিয়েছি অনেক পূতপবিত্র জিনিস যা তাদের জন্য হালাল ছিল। (তাদের আরও অপরাধ ছিল) তারা লোকদের থেকে সুদ গ্রহণ করতো যা তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল: তারা মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করতো। (নিসা-আয়াত: ১৬০-১৬১) সূরা বনী ইসরাঈলের বলা হয়েছে- وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنْوْا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ অর্থ: মেপে দেয়ার সময় সঠিকভাবে মেপে দেবে এবং ওজন করে দিলে সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। (সূরা বনী ইসরাঈল-আয়াত: ৩৫) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম বিদায় হজ্জের দিন মিনায় বলেছেন-وَإِنَّ دِمَاءَ كُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ. অর্থ: তোমাদের জীবন, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সম্মানকে পবিত্র ঘোষণা করা হলো। (সহীহ আল বুখারী-৬৭)
পৃষ্ঠা:৫০
ঈমানের শাখা-৩৯. হারাম খাদ্য ও পানীয় বর্জন করা
খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের বেলায়ও বাছবিচার করতে হবে। এটি ঈমানের অন্যতম শাখা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَ الْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبْعُ إِلَّا مَا ذَكَيْتُمْ অর্থ: তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে- মৃত পশু, রক্ত, শুকরের গোশত এবং সেসব পশু যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নামে যবেহ করা হয়েছে, যা গলায় ফাঁস লেগে, আঘাত পেয়ে বা উপর থেকে পড়ে গিয়ে বা অন্য পশুর শিঙের আঘাতে অথবা যা কোনো হিংস্র পশু ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে- তবে তা জীবিত পেয়ে যবেহ করলে ভিন্ন কথা- যা কোনো আস্ত ানায় বলি দেয়া হয়েছে। (সূরা আল মায়েদা-আয়াত: ৩) সূরা আন’আমে বলা হয়েছে এভাবে- قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَى مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أَهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ. অর্থ: বল, আমার প্রতি যে ওহী এসেছে তাতে, লোকে যা খায় তার মধ্যে আমি কিছুই হারাম পাইনি, মৃত জন্তু, প্রবাহমান রক্ত ও শুকরের মাংস ব্যতীত। কেননা এগুলো অবশ্যই অপবিত্র অথবা যা অবৈধ, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করার কারণে।’ (সূরা। আন’আম-আয়াত: ১৪৫) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَنِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.
পৃ্ষ্ঠা ৫১ থেকে ৬০
পৃষ্ঠা:৫১
অর্থ: হে ঈমানদারগণ। মাদকদ্রব্য, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারণ তীর এসব শয়তানী কাজ। এসব থেকে বেঁচে থাকো আশা করা যায় যে তোমরা সফলকাম হবে। (সূরা মায়েদা-আয়াত: ৯০) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন-قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَ مَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِالْحَقِّঅর্থ: আপনি বলে দিন, আমার প্রতিপালক অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য, আরও হারাম করেছেন গুনাহ এবং অন্যায়-অত্যাচার। (সূরা আল আ’রাফ-আয়াত: ৩৩)সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আয়েশা প্রো থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ.অর্থ: নেশা সৃষ্টি করে এমন যে কোনো পানীয়ই হারাম।(সহীহ আল বুখারী-৫৫৮৫, মুসলিম-২০০১)পবিত্র হালাল খাদ্য গ্রহণে রাসূল বলেছেন-يأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَبِمَا أَمَرَ الْمُرْسَلِينَ অর্থ: হে লোক সকল! নিঃসন্দেহে আল্লাহ পবিত্র এবং পবিত্র জিনিস ছাড়া তিনি গ্রহণ করেন না। মু’মিনদেরকে তিনি সেই নির্দেশ দিয়েছেন, যে নির্দেশ নবী-রাসূলদের দিয়েছিলেন।
পৃষ্ঠা:৫২
নির্দেশ ছিল-সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে নু’মান ইবনে বশীর থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন-إِنَّ الْحَلَالَ بَيْنٌ وَالْحَرَامَ بَيْنٌ وَبَيْنَ ذَلِكَ مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ فَقَدِ اسْتَبْرَ العَرَضِهِ وَدِينِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشَّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِى يُوْشِكُ أَنْ يَقَعَ فِيهِأَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مُلْكٍ حِتَّى وَحِيَى اللَّهِ فِي الْأَرْضِ مُحَارِمُهُ .অর্থ: হালালসমূহ সুস্পষ্ট, হারামসমূহও সুস্পষ্ট, আর কিছু আছে সংশয়যুক্ত, অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা। যে সংশয়যুক্ত বিষয় এড়িয়ে চলবে সে নিজের সম্মান ও দ্বীনকে নিরাপদ রাখতে পারবে। আর যে সংশয়যুক্ত বিষয়ে জড়িয়ে পড়বে সে প্রকারান্তরে হারামে লিপ্ত হবে। যেমন কোনো রাখাল যদি সংরক্ষিত চারণভূমির প্রান্তসীমায় তার পশু চরায় তাহলে যে কোনো মুহূর্তে তা সীমালংঘন করতে পারে। সাবধান। প্রত্যেক বাদশাহর যেমন একটি সংরক্ষিত চারণভূমি রয়েছে, তেমনি পৃথিবীতে আল্লাহর সংরক্ষিত চারণভূমি হচ্ছে তার নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ।
পৃষ্ঠা:৫৩
ঈমানের শাখা-৪০. পোশাক ও সাজসজ্জা বিষয়ে সতর্কতা
একবার হুযাইফা পানি পান করতে চাইলে এক অগ্নি উপাসক তাঁকে রূপার গ্লাসে পানি এনে দেয় পান করার জন্য। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল-কে বলতে শুনেছি-لا تَلْبِسُوا الْحَرِيرَ وَلَا الذِيْبَاجَ وَلَا تَشْرَبُوا فِي أَنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَا تَأْكُلُوا فِي صِحَافِهَا فَإِنَّهَا لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَلَكُمْ فِي الْآخِرَةَ .অর্থ: তোমরা মিহি কিংবা মোটা রেশমী কাপড় পরবে না, সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করবে না। কারণ এসব দুনিয়াতে তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) জন্য এবং আখিরাতে তোমাদের জন্য। (মুসলিম হাদীস-৫২২৬) সহীহ মুসলিমে ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ الْكِبْرُ مَنْ بَطَرَ الْحَقَّ وَغَمَطَ النَّاسَ.অর্থ: আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন, অহংকার মানুষকে সত্য-বিমুখ করে এবং লোকদের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে। (সহীহ মুসলিম) আবু বুরদা থেকে বর্ণিত, একবার আয়েশা আ একটি পশমী চাদর ও একটি মোটা কাপড়ের পায়জামা দেখিয়ে বললেন, আল্লাহর রাসূল এগুলো রেখে গেছেন। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)আব্দুল্লাহ ইবনে উমর প্রায় বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-لَا يَنْظُرُ اللَّهُ تَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى مَنْ جَزَ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ . অর্থ: যে ব্যক্তি অহংকারবশত পায়ের গোড়ালীর গিঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। (মুসলিম-৫৫৭৪)
পৃষ্ঠা:৫৪
ঈমানের শাখা-৪১. শরীয়াতের আদর্শ পরিপন্থি খেলাধুলা বর্জন করা
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- قُلْ مَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ اللَّهْوِ وَ مِنَ التِّجَارَةِ অর্থ: হে নবী! আপনি তাদেরকে বলে দিন, আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে তা খেলাধুলা ও ব্যবসা বাণিজ্যের চেয়ে অনেক উত্তম। (সূরা আল জুমাআ-আয়াত: ১১) বুরাইদা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ. অর্থ: যে ব্যক্তি পাশা (জুয়া) খেললো সে যেন তার হাত শূকরের গোশত ও রক্তে রঞ্জিত করল। (সহীহ মুসলিম হাদীস-৫৬৯৯)
পৃষ্ঠা:৫৫
ঈমানের শাখা-৪২. আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করা
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطُهَا كُنَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا محْسُورًا. অর্থ: তোমরা (কৃপণতা করে) নিজেদের হাত গলার সাথে বেঁধে রেখো না আবার খোলামেলা ছেড়েও দিয়ো না। তাহলে তোমরা অক্ষম হয়ে যাবে, তিরস্কৃত হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল-আয়াত। ২৯) অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوْا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا. অর্থ: তারা খরচ করলে অপচয়ও করে না আবার কার্পণ্যও করে না বরং তারা এ দুটো অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থান করে। (সূরা আল ফুরকান-৬৭) সহীহ মুসলিমে মুগীরা ইবনে শু’বা প্রশ্ন থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল বলেছেন- তিনটি বিষয় পরিহার করতে।
১. অতিরিক্ত ঠাট্টা মশকরা,
২. সম্পদের অপচয় এবং
৩. ভিক্ষাবৃত্তি। (সহীহ মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৫৬
ঈমানের শাখা-৪৩, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করা
আল্লাহ তা’আলা বলেন-وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ .অর্থ: এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক-৫)আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন- أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا أَتْهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ.অর্থ: এরা কি শুধু মানুষের প্রতি এজন্য হিংসা পোষণ করে যে, আল্লাহ তাদেরকে বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন? (সূরা আন নিসা-আয়াত: ৫৪)আনাস ইবনে মালিক প্র থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- لا تَبَاغَضُوا وَلَا تَحَاسَدُوا وَلَا تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا وَلَا يَحِلُ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ يَلْتَقِيَانِ يَصُدُّ هُذَا وَيَصُدُّ هُذَا وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلَامِঅর্থ: তোমরা পরস্পর ঘৃণা করো না, হিংসা করো না, একজন আরেকজনের পেছনে লেগে থেকো না, আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে থাক। একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে তিন দিনের বেশি কথা না বলা ঠিক নয়, পরস্পর দেখা হলে একজন এদিক আরেকজন ওদিক মুখ ফিরিয়ে নেবে এটি ভালো কথা নয়। দু’জনের মধ্যে উত্তম সেই, যে আগে সালাম দিয়ে কথা বলবে। (সহীহ আল বুখারী)
পৃষ্ঠা:৫৭
আহনাফ ইবনে কাইস বলেছেন- পাঁচটি কথা আমাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত ছিল। কথাগুলো হচ্ছে-
১. হিংসুটের শান্তি নেই,
২. মিথ্যাবাদীর কোনো ভাবমূর্তি নেই,
৩. লোভীকে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই,
৪. কৃপণের কোনো মনোবল নেই এবং
৫. অসৎ লোকের কোনো চরিত্র নেই।
(ইমাম বায়হাকী)
পৃষ্ঠা:৫৮
ঈমানের শাখা-৪৪. কাউকে অপবাদ না দেয়া বা হেয় না করা
আল্লাহ তাআলা বলেছেন- إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَتِ الْغَفِلَتِ الْمُؤْمِنَتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ. অর্থ: যারা পবিত্র চরিত্রের সহজ-সরল মুসলিম মহিলাদের অপবাদ দেয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তারা অভিশপ্ত, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা আন নূর-আয়াত: ২৩) সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা ল্ল থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন-الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يُظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هُهُنَا وَيُشِيرُ إِلى صَدْرِهِ ثَلَثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِي مِنَ الشَّرِ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُةً وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.অর্থ: এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলুম করবে না, তাকে লাঞ্ছিত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। ‘তাকওয়া এখানে’ একথা বলে তিনি তিনবার বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় করে। প্রতিটি মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের জান, মাল ও সম্মান (ক্ষতি করা) হারাম। (সহীহ মুসলিম-৬৩০৯)
পৃষ্ঠা:৫৯
সহীহ আল বুখারীতে আবু যার বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন-لا يَرْمِي رَجُلٌ رَجُلًا بِالْفِسْقِ وَلَا يَرْمِيهِ بِالْكُفْرِ إِلَّا وَارْتَدَّتْ عَلَيْهِ إِنْ لَمْيَكُن صَاحِبُهُ كَذَالِكَ .অর্থ: কেউ যেন কাউকে ফাসিক বা কাফির না বলে। যাকে ফাসিক বা কাফির বলা হলো সে যদি সেরূপ না হয় তাহলে সেই কথা বক্তার উপরই পতিত হয়। (সহীহ বুখারী)
পৃষ্ঠা:৬০
ঈমানের শাখা-৪৫. ইখলাস (একনিষ্ঠতা)
লোক দেখানো কাজ পরিহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করাও। ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আল্লাহ তাআলা বলেন-وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ অর্থ: তাদেরকে এ নির্দেশ ছাড়া আর কোনো নির্দেশই দেয়া হয়নি যে, নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং নির্ভেজাল দ্বীনকে কেবল তাঁরই জন্য নির্দিষ্ট করে নেবে। (সূরা বাইয়্যিনাহ-আয়াত: ৫) সূরা আল কাহাফে আরও সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের কী করা উচিত। বলা হয়েছে- فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّةٍ أحَدًا. অর্থ: কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে, সে যেন আমলে সালেহ (সৎকাজ) করে এবং প্রতিপালকের ইবাদতের সাথে আর কাউকে শরীক না করে। (সূরা আল কাহফ-আয়াত: ১১০) সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল বলেছেন- ‘মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি অংশীদারমুক্ত। কাজেই কেউ যদি আমার জন্য আমল করে এবং তার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করে, শিরকযুক্ত সেই আমলের আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আবু উমরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- ‘ইখলাস (আন্তরিকতা) কী? তিনি বললেন- আল্লাহ ছাড়া আর কারও প্রশংসা না করা।’ সাহল ইবনে সাদা বলেছেন- মুখলেস ব্যক্তি ছাড়া রিয়া (লোক দেখানো ইবাদাত)-এর মর্ম আর কেউ বুঝে না, তেমনিভাবে নিফাকের
পৃ্ষ্ঠা ৬১ থেকে ৭০
পৃষ্ঠা:৬১
(কপটতা) মর্ম কেবল একজন ঈমানদারই বুঝে। আর আলিম (জ্ঞানী) ছাড়া মূর্খতার মর্ম কে আর বুঝবে, যেমন গুনাহর মর্ম আল্লাহর একান্ত বাধ্যগত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই বুঝে না। (ইমাম বায়হাকী) রবী ইবনে খুশাইমার বলেছেন- ‘কোনো কাজের পেছনে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যই না থাকে তবে সেই কাজ অনর্থক।’
পৃষ্ঠা:৬২
ঈমানের শাখা-৪৬. সৎ কাজে আনন্দ ও অসৎ কাজে মর্মহত
উমর ইবনেল খাত্তাব ঃ থেকে বর্ণিত একটি হাদীস ইমাম আবু দাউদ তাঁর সুনানে সংকলন করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন- وَمَنْ سَرَتْهُ حَسَنَتُهُ وَسَاءَتْهُ سَيِّئَتُهُ فَهُوَ مُؤْمِنٌ. অর্থ: যে ব্যক্তি সৎ কাজে আনন্দ পায় এবং মন্দ কাজে মর্মপীড়া অনুভব করে সে মুমিন।
পৃষ্ঠা:৬৩
ঈমানের শাখা-৪৭. তওবা
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ تُوْبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ . + অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে তাওবা কর। আশা করা যায়, তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। (আন নূর-আয়াত: ৩১) অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا.অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি ও সত্যিকার তাওবা। (সূরা আত তাহরীম-আয়াত। ৮) সূরা আয যুমারে বলা হয়েছে- وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ. অর্থ: ফিরে এসো তোমার প্রতিপালকের দিকে এবং তাঁর অনুগত হও, তোমাদের উপর আযাব আসার আগে। (সূরা আয যুমার-আয়াত: ৫৪) রাসূলুল্লাহ বলেছেন- أَنَّهُ لَيْغَانُ عَلَى قَلْبِي وَإِنِّي لَا سْتَغْفِرُ اللَّهَ فِي الْيَوْمِ مِأَةً مَرَّةٍ অর্থ: আমার অন্তরও মাঝে মাঝে ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আমি আল্লাহর কাছে প্রতিদিন একশ’বার ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। (সুনানু আবু দাউদ- ১৫১৭)
পৃষ্ঠা:৬৪
ঈমানের শাখা-৪৮. আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানী করা
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرُ. অর্থ: আপনার প্রতিপালকের জন্য নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। (সূরা আল কাউছার-আয়াত: ২) وَالْبُدْنَ جَعَلْتُهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيْهَا خَيْرٌ অর্থ: আর কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট উটগুলোতে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে গণ্য করেছি। এতে বিপুল কল্যাণ নিহিত রয়েছে। (সূরা আল হাজ-আয়াত: ৩৬) এই সূরার অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- وَ مَنْ يُعَظِمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ . অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের সম্মান করে, তা মূলত অন্তরের তাকওয়া হতেই হয়ে থাকে। (সূরা আল হাজ্জ-আয়াত: ৩২) সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ-কে শিংওয়ালা সাদা দুটো মেষ কুরবানী করতে দেখেছি। তিনি মেষের পাঁজরে হাঁটু রেখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে নিজ হাতে কুরবানী করেছেন। (সহীহ আল বুখারী, মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৬৫
ঈমানের শাখা-৪৯. নেতার আনুগত্য করা
নেতার আনুগত্য করাও ঈমানের অন্যতম দাবি। আল্লাহ তা’আলা বলেন- أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ. অর্থ: তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা নির্দেশ দেবার অধিকারী তাদের আনুগত্য কর। (সূরা নিসা আয়াত-৫৮) আবু হুরায়রা প্রশ্ন থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَمَنْ يُطِيعُ الْأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي وَمَنْ يَعْصِ الْأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِي. অর্থ: যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে প্রকারান্তরে আল্লাহর আনুগত্য করলো, তেমনিভাবে যে আমার অবাধ্যতা করলো সে যেন আল্লাহর অবাধ্য হলো। আর যে আমীরের আনুগত্য করলো সে যেন আমারই আনুগত্য করলো, যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্য হলো সে প্রকারান্তরে আমারই অবাধ্য হলো। (সহীহ আল বুখারী-২৯৫৭) আবু যারা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ তাকে লক্ষ্য করে বলেছেন- يَا أَبَا ذَرٍ اسْمَعْ وَاطِعُ وَلَوْ عَبْدًا حَبْشِيًّا مُجَرَّعَ الْأَطْرَافِ. অর্থ: হে আবু যার! (তুমি আমীরের কথা) শুনবে এবং মানবে। যদি কালো কুৎসিত এবং এবড়ো থেবড়ো মাথাবিশিষ্ট পঙ্গু হাবশী (তোমাদের নেতা) হয় তবুও। (মুসলিম- ১৪৯৯)
পৃষ্ঠা:৬৬
ঈমানের শাখা-৫০. জামা’আতবদ্ধ জীবন যাপন
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوْا. অর্থ: তোমরা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর রশিকে আকঁড়ে ধর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত: ১০৩) আবু হুরায়রা ঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন-مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ ثُمَّ مَاتَ مَيْتَةً جَاهِلِيَّةً.অর্থ: যে ব্যক্তি জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হলো এবং আনুগত্য পরিহার করলো অতপর মারা গেল, তার মৃত্যু হলো জাহেলিয়াতের মৃত্যু।(সহীহ মুসলিম- ৪৮৯২)আরফাজা ইবনে শুরাইহ আল জুহানী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-سَتَكُونُ بَعْدِي هِنَاةٌ وَهِنَاةٌ فَمَنْ رَأَيْتُمُوهُ يُفَزِقُ أَمْرَ أُمَّةٍ مُحَمَّدٍ وَهِيَ جَمِيعٌفَاقْتُلُوهُ كَائِنَا مَنْ كَانَ مِنَ النَّاسِ.অর্থ: অচিরেই আমার পরে একের পর এক বিপদ আসবে অত:পর যাকে তোমরা উম্মাতে মুহাম্মাদীর ঐক্য-সংহতি বিনষ্ট করতে দেখবে এবং জামা’আতের ছিন্নভিন্ন করতে চাইবে তাকে তোমরা হত্যা করবে সে যে কেউ হোক না কেন। (সহীহ মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৬৭
ঈমানের শাখা-৫১. আদল-ইনসাফের সাথে বিচার-ফায়সালা করা
আদল-ইনসাফের সাথে বিচার-ফায়সালা করাও ঈমানের অন্যতম শাখা।আল্লাহ তা’আলা বলেন-وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ অর্থ: তোমরা যখন লোকদের মধ্যে বিচার-ফায়সালা করবে তখন আদল- ইনসাফের সাথে ফায়সালা করবে। (সূরা নিসা-আয়াত-৫৮) আরেক জায়গায় বলা হয়েছে-وَلَا تَكُنْ لِلْخَائِنِينَ خَصِيمًا. অর্থ: হে নবী! আপনি খিয়ানতকারী ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের সমর্থনে বিতর্ককারী হবেন না। (সূরা আন নিসা-আয়াত: ১০৫) সূরা আল হুজুরাতে বলা হয়েছে- وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ অর্থ: তোমরা ইনসাফ কর। আল্লাহ ইনসাফকারী লোকদেরকেই পছন্দ করেন। (সূরা আল হুজুরাত-আয়াত: ৯) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- لَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٍ أَتَاهُ اللهُ مَالاً فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الْحَقِّ وَأَخَرَ أَتَاهُ اللَّهُ حِكْمَةٌ فَهُوَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا. অর্থ: দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারও ব্যাপারে ঈর্ষা করা যায় না।
১. যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা যথার্থ ক্ষেত্রে ব্যয় করার তাওফিক দিয়েছেন।
২. যাকে আল্লাহ হিকমাত দান করেছেন, সেই ব্যক্তি তদানুযায়ী কাজ করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়। (সহীহ আল বুখারী- ১৪০৯)
পৃষ্ঠা:৬৮
ঈমানের শাখা-৫২. সৎ কাজের আদেশ এবং অন্যায়ের নিষেধ
আল্লাহ তাআলা বলেছেন-وَلْتَكُن مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ. অর্থ: তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক থাকতেই হবে যারা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করবে। তারাই সত্যিকারের সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত: ১০৪) আরও বলা হয়েছে-كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ অর্থ: তোমরাই উত্তম উম্মাত, মানুষের কল্যাণে চয়ন করা হয়েছে। এই মর্মে যে, তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজের নিষেধ করবে এবং সেই সাথে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখবে। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত: ১১০) সূরা আত তাওবায় বলা হয়েছে-إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ.অর্থ: অবশ্যই আল্লাহ মু’মিনদের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। (সূরা আত তাওবা-আয়াত: ১১১) সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচ্ছন্ন ও পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে এ কাজ অপরিহার্য। বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় এ দায়িত্ব সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে পালন না করার কারণে আল্লাহ তাদের নিন্দা করেছেন।
পৃষ্ঠা:৬৯
বলা হয়েছে-لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَاءِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ . ذلِكَ بِمَا عَصَوْا وَ كَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ .لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ . অর্থ: বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের প্রতি দাউদ ও মারইয়াম এর পুত্র ঈসার মুখ দিয়ে অভিশাপ করা হয়েছে। কারণ তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং খুব বাড়াবাড়ি করত। তারা একে অপরকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করত না। তারা যা করত তা ছিল অত্যন্ত নিকৃষ্ট কর্মনীতি। (সূরা আল মায়েদা-আয়াত: ৭৮-৭৯) আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيْرُهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيْمَانِ অর্থ: তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় কাজ দেখে সে যেন হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগ করে) বন্ধ করে দেয়। যদি না পারে তাহলে যেন বাক্য ব্যয়ে করে। যদি তাও না পারে তবে মনে মনে ঘৃণা করবে। এটি হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে নিচের স্তর। (সহীহ মুসলিম- ১৮৬) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন-مَا مِنْ نَبِي بَعَثَهُ اللَّهُ فِي أُمَّةٍ قَبْلِي إِلا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُونَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُوْنَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوْفٌ يَقُولُونَ مَا لَا يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لَا يُؤْمَرُوْنَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ
পৃষ্ঠা:৭০
مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الْإِيْمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ অর্থ: আমার পূর্বে কোনো জাতির কাছে যে নবীকেই প্রেরণ করা হয়েছিল, তাঁর সহযোগিতার জন্য তাঁর উম্মাতের মধ্য থেকে একদল সাহায্যকারী সাথী থাকতো। তারা তাঁর সুন্নাত (নিয়মনীতি)-কে আঁকড়ে ধরতো এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলতো। এদের পর এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটলো, যারা বলতো ঠিকই কিন্তু তারা তা আমল করতো না। এমন কাজ করতো যার নির্দেশ তাদেরকে দেয়া হয়নি। তাই এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে যে হাত দিয়ে (অর্থাৎ শক্তি প্রয়োগ করে) জিহাদ (সংগ্রাম) করবে সে মু’মিন। যে মুখ দিয়ে এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে সে মু’মিন। যে অন্তর দিয়ে এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে সেও মু’মিন। এরপর একটি সরিষা দানা পরিমাণ ঈমানের স্তরও আর নেই। (সহীহ মুসলিম হাদীস-১৮৮) নবী করীম-এর স্ত্রী যয়নব প্র বলেছেন, একদিন রাসূল ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠলেন। মলিন মুখ। তিনবার বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তারপর বললেন, আরবদের জন্য ধ্বংস, দ্রুত মন্দ তাদের গ্রাস করতে আসছে। ইয়াজুজ-মাজুজের দেয়াল আজ এতটুকু ছিদ্র করে ফেলেছে। একথা বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গলী ও মধ্যমা গোল করে ধরে দেখালেন। একথা শুনে যয়নাব বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমাদের মধ্যে এত সৎ লোক থাকার পরও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বললেন- হ্যাঁ, যখন দুর্নীতির বিস্তৃতি ঘটবে।(সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
পৃ্ষ্ঠা ৭১ থেকে ৮০
পৃষ্ঠা:৭১
ঈমানের শাখা-৫৩. সৎ কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ অর্থ: তাকওয়া ও নেক কাজে তোমরা পরস্পর একে অপরের সহযোগিতা করো। তবে পাপ ও সীমালংঘনমূলক কাজে পরস্পর সহযোগিতা করো না। (সূরা আল মায়িদা-আয়াত। ২) আনাস ইবনে মালিক এর থেকে সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- انْصُرْ أَخَاكَ عَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ انْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُومًا فَكَيْفَ انْصُرُهُ ظَالِمًا فَقَالَ تَمْنَعُهُ مِنَ الظُّلْمِ فَذَلِكَ نَصْرُكَ إِيَّاهُ. অর্থ: তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম (অত্যাচারী) হোক কিংবা মাযলুম (অত্যাচারিত)। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মাযলুমকে সাহায্য করার ব্যাপারটি তো বুঝলাম কিন্তু যালিমকে সাহায্য করবো কিভাবে? রাসূল বললেন, যুলুম (অত্যাচার) থেকে বিরত রাখাই হচ্ছে যালিমকে সাহায্য করা। (সহীহ বুখারী-৬৯৫২)
পৃষ্ঠা:৭২
ঈমানের শাখা-৫৪. লজ্জাশীলতা
সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ঞ্জে থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ দেখলেন, এক ব্যক্তি তার ভাইকে লাজুক স্বভাবের জন্য তিরস্কার করছে, دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الْإِيْمَانِ . fafa Te অর্থ: ‘তাকে ছেড়ে দাও। মনে রেখো লজ্জা ঈমানের অংশ।’ (আবু দাউদ-৪৭৯৭) ইমরান ইবনে হুসাইন এর থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন-إِنَّ الْحَيَاءَ لَا يَأْتِي إِلَّا بِخَيْرٍ অর্থ: লজ্জাশীলতা (শুধু) কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না। (বায়হাকী) আবু সাঈদ খুদরী বলেছেন-كَانَ النَّبِيُّ أَشَدَّ حَيَاءٌ مِنْ الْعَذْرَاءِ فِي خِدْرِهَا وَكَانَ إِذَا كَرِهَا شَيْئًا عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهِ অর্থ: রাসূলুল্লাহ কুমারী মেয়ের চেয়েও লাজুক ছিলেন। যখন তিনি কোনো কিছু অপছন্দ করতেন তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখেই বুঝতে পারতাম। (বুখারী হাদীস-৬১০২) সহীহ আল বুখারীতে ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন-نَ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلامِ النُّبُوَّةِ الْأَوْلَى إِذَا لَمْ تَسْتَحْ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَঅর্থ: পূর্বের নবীগণ মানুষকে শিষ্টাচার শেখানোর যেসব কথা বলতেন, তার প্রথম কথাই ছিল-যদি তোমার লজ্জাই না থাকে তাহলে তুমি যা খুশী তাই করতে পার। (সহীহ আল বুখারী হাদীস-৬১২০)
পৃষ্ঠা:৭৩
ঈমানের শাখা-৫৫. পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا. অর্থ: পিতা-মাতার সাথে ইহসান করো। (তথা সদাচারণ করো) (সূরা বাকারা-আয়াত: ৮৩) وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا. অর্থ: আমি মানুষকে উপদেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার সাথে ইহসান (সদাচরণ) করার জন্য। (সূরা আহকাফ-আয়াত: ১৫) সূরা বনী ইসরাঈলে বলা হয়েছে- وَ قَضَى رَبُّكَ إِلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أَن وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ، وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَارَبَّيْنِي صَغِيرًا. অর্থ: তোমার রব (প্রতিপালক) ফায়সালা করে দিয়েছেন, যে তাঁর ইবাদত ছাড়া আর কারও ইবাদাত করা যাবে না। পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তোমাদের মাঝে যদি তাদের কোনো একজন কিংবা উভয়ে বৃদ্ধাবস্থায় থাকে তাহলে তুমি তাদেরকে উহ্ পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে তিরস্কার করবে না বরং তাদের সামনে বিশেষ মর্যাদার সাথে কথা বলবে। সারাক্ষণ বিনয় ও নম্রতার সাথে তাদের সামনে নত হয়ে থাকবে। আর এই দু’আ করবে- ‘হে আমার প্রতিপালক। তাদের প্রতি সে রকম রহম করুন যেমন করে বাল্যকালে আমাকে প্রতিপালন করেছেন। (সূরা বনী ইসরাঈল-আয়াত: ২৪-২৫)
পৃষ্ঠা:৭৪
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ দে বলেছেন, আমি নবী করীম মার-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ। أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا قَالَ ثُمَّ أَنْ قَالَ بِنْ الْوَالِدَيْنِ قَالَ ثُمَّ أَيِّ قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ. অর্থ: আল্লাহর কাছে কোন কাজটি সবচেয়ে পছন্দনীয়? তিনি বললেন, সময় মতো নামায পড়া। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করা। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা।(বুখারী হাদীস-৫৯৭০)
পৃষ্ঠা:৭৫
ঈমানের শাখা-৫৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা
আল্লাহ তাআলা বলেছেন-فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِعُوا أَرْحَامَكُمْ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَتَهُمْ وَأَعْلَى أَبْصَارَهُمْ. অর্থ: তোমাদের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় কি, যে তোমরা (ক্ষমতা পাওয়ার পর) মুখ ফিরিয়ে নেবে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহর লানত, তাদেরকেই আল্লাহ অন্ধ ও বধির করে দিয়েছেন। (মুহাম্মদ-২২-২৩) অন্যত্র বলা হয়েছে- الَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ هُمُ الْخَسِرُونَ ম অর্থ: (বিপথগামী তো তারা) যারা আল্লাহর সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং যা অবিচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে আর পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। প্রকৃতপক্ষে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আল বাকারা-আয়াত: ২৭) আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন-مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ وَيُنْسَأَلَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ. অর্থ: ‘যে ব্যক্তি চায়- তার রিযিকের প্রশস্ততা হোক এবং আয়ু বেড়ে যাক তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা। (সহীহ বুখারী-৫৯৮৬) যুবাইর ইবনে মুতয়িম থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন-لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِع يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ অর্থ: আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ আল বুখারী হাদীস-৫৯৮৪)
পৃষ্ঠা:৭৬
ঈমানের শাখা-৫৭. সচ্চরিত্র
ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ এবং বিনয়ের সবগুলো দিকই সচ্চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। আর সচ্চরিত্র ঈমানের অন্যতম শাখা। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ. অর্থ: হে রাসূল! আমি আপনাকে সর্বোচ্চ চরিত্র মাধুর্য দিয়ে সৃষ্টি করেছি। (সূরা আল কলম-আয়াত: ৪) অন্যত্র বলা হয়েছে- وَالْكُظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ. অর্থ: যারা ক্রোধকে হজম করে এবং অন্যদের ক্ষমা করে দেয় আল্লাহ এ ধরনের নেক লোকদেরকেই ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত: ১৩৪) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ এবং নির্লজ্জ ছিলেন না। বরং তিনি বলতেন- অশ্লীলভাষী إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا. অর্থ: তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে সচ্চরিত্রবান। (সহীহ আল বুখারী; সহীহ মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে- إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَى أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا. অর্থ: তোমাদের মধ্যে যে সচ্চরিত্রবান সেই আমার কাছে অধিক প্রিয়। আয়েশা থেকে বর্ণিত- مَا خَيْرَ رَسُولُ اللهِ لا بَيْنَ أَمْرَيْنِ إِلَّا أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ إِثْمًا فَإِنْ كَانَ إِثْمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللَّهِ لَا لِنَفْسِهِ إِلَّا أن تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ اللَّهِ فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ بِهَا.
পৃষ্ঠা:৭৭
অর্থ: রাসূলুল্লাহ-কে দুটো বিষয়ের কোনো একটি গ্রহণের সুযোগ দিলে এবং তা গুনাহর বিষয় না হলে, তিনি সর্বদা অপেক্ষাকৃত সহজটিকে গ্রহণ করতেন। আর যদি তা গুনাহর বিষয় হতো তবে সকলের চেয়ে তিনি আরও বেশি দূরে অবস্থান করতেন। তিনি ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনও কারও থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে তিনি শুধু মহান আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন। (সহীহ আল বুখারী হাদীস-৩৫৬০) (আবু বকর আল বায়হাকী বলেন) সচ্চরিত্র বলতে মূলত আত্মার বিশুদ্ধতা বুঝানো হয়েছে। প্রশংসনীয় কাজ করা, সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা এসব সচ্চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। সচ্চরিত্রের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার অন্তরকে সৎ কাজের জন্য খুলে দেন। অসৎ কাজ থেকে হিফাযত করেন। তখন সে আল্লাহর নির্দেশ মেনে আনন্দ পায়, নফল ইবাদতের প্রতি উৎসাহ বোধ করে। হারাম কাজ তো দূরের কথা মুবাহ কাজও সে পরিহার করে চলতে সচেষ্ট হয়। যখন দেখে আল্লাহর বান্দারা তাঁর ইবাদাতের পথ ভুলে বিপথে চলে যাচ্ছে তখন তাদেরকে সতর্ক করে এবং সুসংবাদ দেয়। আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে প্রার্থনা করে না, কিছু চায় না। অন্যের প্রয়োজন পূরণ করতে সদা সচেষ্ট থাকে। অসুখ-বিসুখে দেখাশুনা করে। সফরে যেতে কিংবা সফর থেকে ফিরে আসতে সে তার সঙ্গী সাথীকে ফেলে আসে না। মোটকথা ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন এবং পারিবারিক জীবনে সর্বদা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি মতো চলার চেষ্টা করে। সচ্চরিত্রের কিছু কিছু বিষয় মানুষ জন্মগতভাবেই পেয়ে থাকে আবার অনেক বিষয় চেষ্টা সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। এ অর্জনের উপায় দুটো। এক, ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা এবং দুই. সেই ইলম অনুযায়ী আমল বা কাজ করা।
পৃষ্ঠা:৭৮
ঈমানের শাখা-৫৮. অধীনস্থদের সাথে সদাচরণ
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَ بِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَ اليتنى وَ الْمَسْكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْنِي وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْঅর্থ: তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তাঁর সাথে আর কাউকে অংশীদার মনে করো না। পিতামাতার সাথে সদাচরণ করো, নিকটাত্মীয়, ইয়াতিম, মিসকীনদের প্রতিও। নিকটতম প্রতিবেশীর প্রতি এবং দূরতম প্রতিবেশীর প্রতি, চলার সাথী এবং পথিকের প্রতি, সেই সাথে তোমাদের অধীনস্থ দাসদাসীর প্রতিও দয়া অনুগ্রহ প্রদর্শন করো। (সুরা নিসা-আয়াত: ৩৮) মারুর ইবনে সুয়াইদ বলেছেন, আমি আবু যার ও তার এক ক্রীতদাসকে একই রকম পোশাক পরা দেখে কারণ জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, إِنِّي سَابَبْتُ رَجُلًا فَشَكَانِي إِلَى النَّبِيِّ اللهِ فَقَالَ فِي النَّبِيُّ ﷺ أَعَيَّرْتَهُ بِأَمِّهِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ إِخْوَانَكُمْ خَوَلُكُمْ جَعَلَهُمُ اللهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ وَلَا تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَإِنْ كَلَفْتُمُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَأَعِيْنُوهُمْ. অর্থ: আমি একবার এক লোককে তিরস্কার করেছিলাম, সে আমার বিরুদ্ধে আল্লাহর রাসূল নয়-এর কাছে অভিযোগ করেছিল। রাসূল আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, তুমি কি তাকে তার মায়ের ঘোষণা দিয়ে। তিরস্কার করছো? অতঃপর বলেন মনে রেখে তোমার ক্রীতদাস সেও তোমার ভাই, আল্লাহ তাকে তোমার অধীনস্থ করেছেন। তাই তুমি যা খাবে তোমার ভাইকেও তাই খেতে দেবে। তুমি যা পরবে তোমার ভাইকেও তাই পরাবে। তাকে দিয়ে সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করাবে না। যদি করাও তুমিও তার কাজে সাহায্য করবে। (বুখারী হাদীস-২৫৪৫: সহীহ মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৭৯
ঈমানের শাখা-৫৯. ক্রীতদাসের উপর মনিবের অধিকার
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর প্লে থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا نَصَحَ لِسَيْدِهِ وَأَحْسَنَ عِبَادَةَ رَبِّهِ فَلَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ অর্থ: যখন কোন যে দাস তার মনিবের কল্যাণ কামনা করবে এবং সেই সাথে তার প্রতিপালকের ইবাদাত যথাযথভাবে পালন করবে তার জন্য দুইবার পুরস্কার রয়েছে। (সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম) জারির ইবনে আব্দুল্লাহ গুঞ্জ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- أَيُّمَا عَبْدٍ أَبَقَ فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ. অর্থ: যে দাসই পলিয়ে যায় তার থেকে (আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের) যিম্মাদারী (দায়-দায়িত্ব) শেষ হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস-১৩৩) অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- الْعَبْدُ الْأَبِيُّ لَا يَقْبَلُ اللَّهُ مِنْهُ صَلَاتَهُ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَى مَوَالِيْهِ. অর্থ: পলাতক দাস যতক্ষণ পর্যন্ত তার মনিবের কাছে ফিরে না আসবে ততক্ষণ তার নামায আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। (সুনানে আবু দাউদ)
পৃষ্ঠা:৮০
ঈমানের শাখা-৬০. সন্তান ও অধীনস্থদের অধিকার দেওয়া
সন্তান ও পরিবার পরিজনের নেতা হচ্ছে পুরুষ ব্যক্তিটি। তার কর্তব্য হচ্ছে অধীনস্থদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা, দ্বীনি নির্দেশনা মোতাবিক তাদের পরিচালনা করা এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَ الحِجَارَةُ. অর্থ: হে ঈমানদারগণ! নিজেকে ও পরিবার পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম-আয়াত: ৬) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাসান বসরী (রহ) বলেছেন, কর্তা ব্যক্তিটির উচিত তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশ মতো চলতে বলা এবং কল্যাণমূলক শিক্ষা দান করা। এটা কর্তার প্রতি তাদের নায্য অধিকার। আলী আর বলেছেন- তাদেরকে ইলম ও আদব কায়দা শিক্ষা দেয়া। আনাস থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন- مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ অর্থ: যে ব্যক্তি দুটো মেয়েকে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করলো সে আর আমি কিয়ামতের দিন এ রকম হবো। এ কথা বলে তিনি তাঁর আঙ্গুল মিলিয়ে দেখালেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস-৬৮৬৪)
পৃ্ষ্ঠা ৮১ থেকে ৯০
পৃষ্ঠা:৮১
ঈমানের শাখা-৬১. দ্বীনি কারণে পরস্পর সম্পর্ক বজায় রাখা ও সুদৃঢ় করা
দ্বীনি সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য পারস্পরিক মহব্বত, সালাম বিনিময়, মুসাফাহা ইত্যাদির প্রচলনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন- يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَ تُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا . অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমার বাড়ির মালিককে সালাম না দিয়ে এবং তার অনুমতি না নিয়ে কারও ঘরে প্রবেশ করো না। (আন নূর-আয়াত। ২৭) আবু হুরায়রা এ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْ ءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ. অর্থ: যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ। তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন না হও। আবার (সত্যিকার) মু’মিনও হতে পারবে না যতক্ষণ একে অপরকে ভালো না বাসবে। আমি কি তোমাদেরকে বলবো না, কোন জিনিস তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবে? তা হচ্ছে একে অপরকে সালাম দেয়ার প্রচলন করা।(সহীহ মুসলিম হাদীস-২০৩) সহীহ আল বুখারীতে বলা হয়েছে, একবার কাতাদা আনাস -কে জিজ্ঞেস করলেন- كَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِي أَصْحَابِ النَّبِيِّ اللَّهِ فَقَالَ نَعَمْ.
পৃষ্ঠা:৮২
অর্থ: নবী করীম-এর সাহাবাগণ কি পরস্পর মুসাফাহা করতেন? তিনি বললেন- হ্যাঁ, করতেন। (সহীহ মুসলিম) আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلالِي الْيَوْمَ أَظِلُّهُمْ فِي ظِي يَوْمَ لا ظل الا ظلي . অর্থ: মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, আমার জন্য যারা অপরকে ভালবাসতো তারা কোথায়? আমি তাদেরকে আমার আরশের ছায়ায় স্থান দেবো। আমার ছায়া ব্যতীত আজ আর কোনো ছায়া নেই।(সহীহ মুসলিম হাদীস-৬৭১৩)
পৃষ্ঠা:৮৩
ঈমানের শাখা-৬২, সালামের জবাব দেয়া
আল্লাহ তা’আলা বলেন- وَإِذَا حُيَيْتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا. অর্থ: কেউ যখন যথাযোগ্য সম্মানের সাথে তোমাদেরকে সালাম দেবে তোমরা আরও উত্তমভাবে তার জবাব দাও। অন্তত: অনুরূপভাবে তো দিতেই হবে। (সূরা আন নিসা-আয়াত। ৮৬) আবু সাঈদ আল খুদরী প্রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন-إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ بِالطَّرْقَاتِ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُنْ تَتَحَدَّثُ فِيهَا فَقَالَ فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلَّا الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ قَالُوا وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ غَضُ الْبَصَرِ وَلَفُ الْأَذَى وَرَدُّ السَّلَامِ وَالْأَمْرُ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّهْرُ عَنِ الْمُنْكَرِ অর্থ: তোমরা রাস্তার মধ্যে বসো না। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। না বসে তো আমাদের চলে না, আমরা সেখানে বসে পরস্পর কথাবার্তা বলি। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন, ঠিক আছে রাস্তার পাশে যখন বসবেই তখন রাস্তার হক আদায় করবে। তারা জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তার হক আবার কী? তিনি বললেন- দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, কারও কষ্টের কারণ না হওয়া (অর্থাৎ কাউকে বিরক্ত না করা), সালামের জবাব দেয়া, সৎ কাজের নির্দেশ এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা।(বুখারী হাদীস-৬২২৯)
পৃষ্ঠা:৮৪
ঈমানের শাখা-৬৩. অসুস্থ ভাইয়ের খোঁজ-খবর নেয়া
বারাআ ইবনে আযিব গল্প থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ আমাদেরকে সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন- أَمَرَنَا بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ وَاتَّبَاعِ الْجَنَازَةِ وَتَشْمِيْتِ الْعَاطِسِ وَابْرَارِ الْقَسَمِ أَوِ الْمُقْسِمِ وَنَصْرِ الْمَظْلُومِ وَاجَابَةِ الدَّاعِي وَافْشَاءِ السَّلَامِ وَنَهَانَا عَنْ خَوَاتِيْمَ أَوْ عَنْ تَخَتُم بِالذَّهَبِ وَعَنْ شُرْبِ بِالْفِضَّةِ وَعَنِ الْمَيَاثِرِ وَعَنِ الْقَيْنِ وَعَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ وَالْإِسْتَبْرَقِ وَالدِّيْبَاجِ অর্থ: তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, রোগীর খোঁজ-খবর নিতে, জানাযার সাথে যেতে, হাঁচিদাতার হাঁচির জবাব দিতে, শপথ পূরণ করতে, মযলুমের সাহায্য করতে এবং দাওয়াত কবুল করতে, সালামের বিস্তার ঘটে। আর নিষেধ করেছেন, সোনার আংটি, সোনা রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, মায়াসির (এক প্রকার নরম রেশমী কাপড়), কাসসী (রেশম মিশ্রিত মিসরী এক জাতীয় কাপড়) ব্যবহার করতে, মিহি রেশমী কাপড়, মোটা রেশমী কাপড় এবং খাঁটি রেশমের তৈরি কাপড় পরতে।(সহীহ আল বুখারী, হাদীস-৫৫১০ সহীহ মুসলিম, হাদীস-৫২১৫। সুনানু আবু দাউদ) ছাওবান থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে-عَائِدُ الْمَرِيضِ فِي خُرْفَةِ الْجَنَّةِ يَرْجِعُঅর্থ: যদি কেউ অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দেখতে যায় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল সংগ্রহ করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৮৫
ঈমানের শাখা-৬৪, জানাযা ও দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করা
আবু হুরায়রা বলেছেন- কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীমحَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَةُ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتَّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ অর্থ: এক মুসলিমের উপর আরেক মুসলিমের পাঁচটি হক (অধিকার) রয়েছে, সালামের জবাব দেয়া, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার সাথে চলা এবং দাওয়াত কবুল করা। (সহীহ আল বুখারী হাদীস-১২৪০; সহীহ মুসলিম) ছাওবান কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন-مَنْ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فَلَهُ قِيرَاطٌ فَإِنْ شَهِدَ دَفْنَهَا فَلَهُ قِيرَاطَانِ الْقِيْرَاط مِثْلُ أحد . অর্থ: যে ব্যক্তি জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করবে তার জন্য এক কীরাত আর যে দাফনেও শরীক হবে তার জন্য দুই কীরাত। এক কীরাত (নেকী) উহুদ পাহাড় সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হাদীস-২২৩৯)
পৃষ্ঠা:৮৬
ঈমানের শাখা-৬৫. হাঁচিদাতার হাঁচির জবাব দেয়া
আবু মুসা আশআরী থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন-إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَحَمِدَ اللهَ فَشَيْتُوْهُ فَإِنْ لَمْ يَحْمَدِ اللَّهَ فَلَا تُشَمِّتُوهُঅর্থ: তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে তার জবাবে তোমরা ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে আর যদি সে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ না বলে তাহলে তোমরাও ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে না। (সহীহ মুসলিম-৭৬৭৯)
পৃষ্ঠা:৮৭
৬৫.. কাফির মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখা
ঈমানেকদের এলেছেন সাথে বন্ধুত্ব না করাটাও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহلا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَفِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ . ذلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ ثُقْبَةً অর্থ: মু’মিনগণ যেন ঈমানদারদের পরিবর্তে কাফিরদেরকে নিজেদের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষকরূপে গ্রহণ না করে। যে এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর কোনও সম্পর্ক থাকবে না। অবশ্য তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য এরূপ করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত: ২৮) অন্য জায়গায় কাফিরদের সাথে সম্পর্ক রাখা তো দূরের কথা তাদের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে-يَأَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنْفِقِينَ وَاخْلْتُ عَلَيْهِمْ. অর্থ: হে নবী! কাফির এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে য আর তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন করুন।(সূরা আত তাওবা-আ আরও বলা হয়েছে- نُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُوْنَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ অর্থ: হে ঈমানদার লোকেরা। লড়াই করো সে যারা তোমাদের কাছাকাছি রয়েছে। তারা যেন কঠোরতা দেখতে পায়। (সূরা আত তাওবা-আয়া অর্থ কুফর এ ধরে হবে। (সু
পৃষ্ঠা:৮৮
সূরা আল মুমতাহিনা-এ বলা হয়েছে-لذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدْوَى وَ عَدُوٌّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُوْلَ وَ إِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَ ابْتِغَاءَمَرْضَاتِيঅর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আমার পথে সংগ্রাম করার জন্য এবং আমার সন্তোষ লাভের আশায় বের হয়ে থাকো তাহলে আমার ও তোমাদের যারা শত্রু তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো কিন্তু যে সত্য তোমাদের কাছে এসেছে তা মেনে নিতে তারা অস্বীকার করেছে। রাসূল ও তোমাদের নির্বাসিত করার যে আচরণ তারা শুরু করেছে তা এজন্য যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো। (সূরা আল মুমতাহিনা-আয়াত। ১)এতো গেল দূর সম্পর্কীয় কাফিরদের কথা। এবার বলা হয়েছে যাদের সাথে রক্তের বন্ধন রয়েছে তারাও যদি কুফরী করে, তাদের সাথে বন্ধুত্বসূলভ সম্পর্ক না রাখার জন্য। ইরশাদ হচ্ছে-يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا أَبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوالْكُفْرَ عَلَى الْإِيْمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّلِمُونَ.: হে ঈমানদাররা। নিজের পিতা এবং ভাইও যদি ঈমানের চেয়ে কে বেশি ভালোবাসে তাদেরকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। যে ব্যক্তি নর লোকদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে সে যালিম হিসেবে গণ্য ‘রা আত তাওবা-আয়াত: ২৩)
পৃষ্ঠা:৮৯
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-إِذَا لَقِيتُمُ الْمُشْرِكِينَ فِي الطَّرِيقِ فَلَا تَبْدَءُ وَهُمْ بِالسَّلَامِ وَاضْطَرُّوهُمْإِلَى أَضْيَقِهَا.অর্থ: তোমরা যদি রাস্তায় চলার সময় কোনো মুশরিককে দেখ তাহলে প্রথমে তাদের সালাম দেবে না। বরং তাদেরকে রাস্তার এক পাশ দিয়ে চলতে বাধ্য করবে। (সহীহ মুসলিম)আবু সাঈদ বলেছেন- কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূলلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِي وَلَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا.অর্থ: মুত্তাকী ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায় এবং ঈমানদার ছাড়া কেউ যেন তোমার সাথী না হয়।(হাফিয সুয়ূতী এ হাদীসটি জামিউস সগীর নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে হিব্বান এবং হাকিম নিজ নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।)উল্লেখ্য যে অমুসলিমদের সাথে আন্তরিকভাবে বন্ধুত্ব রাখা যাবে না যদিও সে নিকট আত্মীয় হয়। তবে তাদের সাথে সদাচারণ করা যাবে বাহ্যিক সুসম্পর্কও রাখা যাবে যদি ঈমান না আনলেও সে ইসলাম তথা মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করে না। ঘৃণাও করে না বরং সুযোগে সহযোগিতা করে।
পৃষ্ঠা:৯০
ঈমানের শাখা-৬৭. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ
আল্লাহ তাআলা বলেছেন-وَ بِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَنى وَ الْمَسْكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِঅর্থ: পিতা মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো, নিকটাত্মীয়, ইয়াতিম ও মিসকিনদের প্রতি এবং প্রতিবেশী আত্মীয়ের প্রতি, আত্মীয়ের প্রতিবেশীর প্রতি, চলার সাথী ও পথিক-মুসাফিরদের প্রতি। (সূরা আন নিসা-আয়াত: ৩৬) ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ (র), কাতাদা, কালবী, মুকাতিল ইবনে হিব্বান এবং মুকাতিল ইবনে সুলাইমান আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন- প্রমুখ এ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْلِبي وَالْجَارِ ذِي الْقُرْلِبي বলতে তোমার ও অন্যান্য প্রতিবেশীর মধ্যে যে বা যারা অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে রয়েছে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর- لجَارِ الْجُنُبِ وَالْجَارِ বলতে অপেক্ষাকৃত দূরের প্রতিবেশী বা প্রতিবেশীর প্রতিবেশীকে বুঝানো হয়েছে। وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ বলতে সফরসঙ্গী এবং বন্ধুকে বুঝানো হয়েছে। আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং ইবরাহীম নাখঈ (র) বলেছেন-وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ বলতে স্ত্রীকে বুঝানো হয়েছে। সাঈদ ইবনে যুবাইর সে-এর অভিমতও অনুরূপ। আয়েশা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন-زَالَ جِبْرِيلُ يُؤْصِيْنِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِثُهُمَا অর্থ: জিবরাঈল এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এমন উপদেশ দিতে থাকলেন, ভাবলাম হয়তো তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন।(সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
পৃ্ষ্ঠা ৯১ থেকে ১০৪
পৃষ্ঠা:৯১
ঈমানের শাখা-৬৮. অতিথি আপ্যায়ন বা মেহমানদারী
আবু শুরাইহ আল আদাবী প্রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল যখন এ হাদীসটি বলেছেন তখন আমার দু’কান তা শুনেছে এবং দু’চোখ তা দেখেছে। তিনি বলেছেন-مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ قَالَ وَمَا جَائِزَتُهُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ وَالضَّيَافَةُ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ فَمَا كَانَ وَرَاءً ذلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْليصمت অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তার উচিত সাধ্যমত অতিথি আপ্যায়ন করা। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, সাধ্যমত কথার তাৎপর্য কী? তিনি বললেন, একদিন একরাত। মেহমানদারী সর্বোচ্চ তিন দিন। এর বেশি যদি কেউ করে সেটি তার বদান্যতা। তিনি আরও বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তার উচিত ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা। (সহীহ আল বুখারী হাদীস-৬০১৯; সহীহ মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৯২
ঈমানের শাখা-৬৯. দোষ গোপন রাখা
আল্লাহ তাআলা বলেন-إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌفي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ অর্থ: যারা চায় ঈমানদারদের মধ্যে নির্লজ্জতা বিস্তার লাভ করুক তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।(সূরা আন নূর-আয়াত: ১৯) ইবনে উমর থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল বলেছেন-الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةٍ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَزَجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ অর্থ: এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে না তার উপর যুলুম করতে পারে আর না তাকে শত্রুর হাতে তুলে দিতে পারে। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয় আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের একটি কষ্ট দূর করে দেয় এর বিনিময়ে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কষ্টসমূহ থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন। (সহীহ বুখারী-২৪৪২; মুসলিম)
পৃষ্ঠা:৯৩
ঈমানের শাখা-৭০. বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخُشِعِينَ. অর্থ: তোমরা নামায ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। তবে কাজটি বেশ কঠিন কিন্তু যারা আল্লাহর জন্য নিবেদিতপ্রাণ তাদের জন্য অবশ্য কঠিন নয়। (সূরা আল-বাকারা। আয়াত-৪৫) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-وَبَشِّرِ الصُّبِرِينَ الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رْجِعُونَ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَاتٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ رَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُالْمُهْتَدُونَ অর্থ: যারা ধৈর্য ধারণ করে সুসংবাদ তাদের জন্য। যখন তাদের উপর কোনো মুসিবত পতিত হয় তখন তারা বলে- আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে বিপুল অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হবে। প্রকৃতপক্ষে এরাই সঠিক পথে রয়েছে। (সূরা আল বাকারা-আয়াত: ১৫৫-১৫৭ সূরা আয যুমারে বলা হয়েছে- إِنَّمَا অর্থ: যারা ধৈর্যশীল তাদের জন্য রয়েছে এমন বিনিময় যার কোনো হিসেবই নেই। (সূরা আয যুমার-আয়াত: ১০)সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু সাঈদ আল খুদরী এ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে- أَنَّ نَاسًا مِنَ الْأَنْصَارِ سَأَلُوا رَسُولَ اللهِ ﷺ فَلَمْ يَسْأَلُهُ أَحَدٌ مِنْهُمْ إِلَّا أَعْطَاهُ حَتَّى نَفِدَ مَا عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُمْ حِيْنَ نَفِدَ كُلُّ شَيْءٍ انْفَقَ بِيَدَيْهِ مَا
পৃষ্ঠা:৯৪
يَكُن عِنْدِي مِنْ خَيْرٍ لَا أَدْخِرُهُ عَنْكُمْ وَإِنَّهُ مَنْ يَسْتَعِفَ يُعِفَهُ اللَّهُ وَمَنْ يَتَصَبَرُ يُصَبْرُهُ اللهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ وَلَنْ تُعْطَوْا عَطَاءٌ خَيْرًا وَأَوْسَعَمن الصبر.অর্থ: আনসারদের কতিপয় লোক রাসূল নয়-এর কাছে সাহায্য চাইলো, যেই তার কাছে চাইলো তিনি তাদেরকে দিলেন। এমনিভাবে দিতে দিতে যা ছিল তার কাছে তা শেষ হয়ে গেল তার কাছে যাহা ছিল দিতে দিতে যখন সমুদয় শেষ হয়ে গেল। তখন তিনি তাদেরকে বললেন-যা আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে জমা করে রাখি না। যে এমন গ্রহণ করা থেকে নিজেকে পবিত্র রাখতে চায় আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করতে চায় আল্লাহ তাকে ধৈর্য দান করেন। যে ব্যক্তি কারও মুখাপেক্ষী হতে চায় না, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে দেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম আর প্রশস্ত কোনো কিছু কাউকে দেয়া হয়নি। (সহীহ আল বুখারী হাদীস-৬৪৭০। সহীহ মুস আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেছেন-آتَيْتُ النَّبِي ا وَهُوَ يُوْعَكُ وَعْدًا شَدِيدًا فَقُلْتُ إِنَّكَ لَتُوْعَكُ وَعْدًا شَدِيدًا وَذَلِكَ أَنَّ لَكَ أَجْرَيْنِ قَالَ أَجَلْ وَمَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصِيبُهُ أَذًى إِلَّاحَانَتْ عَنْهُ خَطَايَاهُ كَمَا تَحَاتُ وَرَقُ الشَّجَرِ অর্থ: একবার আমি রাসূলুল্লাহ -এর কাছে গেলাম তাঁর কঠিন অসুস্থ অবস্থায়। (অত:পর আমি তাকে স্পর্শ করলাম, দেখলাম, তিনি ভীষণ অসুস্থ) বললাম, আমার মনে হয় আপনার অসুস্থতা অনেক বেশি আর এজন্য আপনি অধিক প্রতিদান পাবেন। তিনি স্বীকার করলেন এবং বললেন, আশা করি আমি এজন্য দ্বিগুণ পুরস্কার পাবো। তারপর বললেন, কোনো মুসলিমের উপর বিপদ মুসিবত কিংবা অসুস্থতা তার গুনাহ মাফের কারণ ছাড়া আসে না। গাছের শুকনো পাতা যেমন ঝরে যায় তেমনিভাবে মুমিনের কষ্টের কারণে তার গুনাহগুলোও ঝরে যায়।(সহীহ বুখারী হাদীস-৫৬৬১)
পৃষ্ঠা:৯৫
ঈমানের শাখা-৭১. দুনিয়ার মোহমুক্তি (যুহুদ) ও পরিমিত আশা
দুনিয়ার নশ্বরতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً فَقَدْ جَاءَ أَشْرَاطُهَا.অর্থ: এরা কি শুধু কিয়ামতের অপেক্ষায় রয়েছে যে, সহসা তা তাদের উপর এসে পড়বে? তার নিদর্শন তো এসেই পড়েছে। (সুরা মুহাম্মদ-১৮) আনাস ইবনে মালিক এবং সাহল ইবনে সা’দ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ لَهَاتَيْنِ وَأَشَارَ بِأَسْبُعَيْهِ السَّبَابَةِ الْوُسْطَىঅর্থ: আমি এবং কিয়ামত এরূপ দূরত্বে, একথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দুটো একত্রিত করে দেখালেন। (সহীহ আল বুখারী। মুসলিম) রাসূলুল্লাহ আরও বলেছেন- نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ অর্থ: আল্লাহ প্রদত্ত দুটো নিয়ামাত অধিকাংশ মানুষকেই বিভ্রান্ত করে ছাড়ে। একটি সুস্বাস্থ বা সুস্থতা অপরটি অবকাশ। (সহীহ বুখারী, জামি আত তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) আবু সাঈদ থেকে বর্ণিত। নবী করীম বলেছেন-إِنَّ الدُّنْيَا حُلُوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَكَانَتْ فِي النِّسَاءِ.অর্থ: ‘নিঃসন্দেহে দুনিয়া খুবই আকর্ষণীয় ও সবুজ শ্যামল। আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিনিধি বানিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন। তিনি দেখতে চান তোমরা কী করো। কাজেই তোমরা দুনিয়া এবং নারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। বনী ইসরাঈলের বিপর্যয় শুরুই হয়েছিল নারী দিয়ে। (মুসলিম-৭১২৪)
পৃষ্ঠা:৯৬
ঈমানের শাখা-৭২. আত্মসম্মানবোধ
আল্লাহ তাআলা বলেন-يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَ قُوْدُهَا النَّاسُ وَالحِجَارَةُ .অর্থ: হে ঈমানদারগণ! নিজে বাঁচো এবং অধীনস্থদের বাঁচাও সেই আগুন থেকে যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা আত তাহরীম-আয়াত: ৬)সূরা আন নূরে বলা হয়েছে-قُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ .অর্থ: হে নবী! আপনি মু’মিন মহিলাদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।(সূরা আন নূর-আয়াত। ৩১) আবু হুরায়রা প্রাঞ্জ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَغَارُ وَإِنَّ الْمُؤْمِنَ يَغَارُ وَغَيْرَةَ اللَّهِ أَنْ يَأْتِي الْمُؤْمِنُ مَا حَرَّمَ عَزَّوَجَلَّ عَلَيْهِঅর্থ: আল্লাহরও আত্মসম্মানবোধ আছে এবং মু’মিনেরও আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। আল্লাহর আত্মসম্মানে তখনই বাধে যখন একজন মু’মিন এমন কাজে লিপ্ত হয় যা তিনি হারাম করেছেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসিলম) উম্মু সালামা থেকে বর্ণিত আরেক হাদীসে বলা হয়েছে- كَانَ عِنْدَهَا وَرَسُولُ اللهِ لا فِي الْبَيْتِ فَقَالَ لِأَخِي أَمِّ سَلَمَةَ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أَبِي أُمَيَّةَ إِنْ فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الطَّائِفَ غَدًا فَإِنِّي أَدُلُّكَ عَلَى بِنْتِ غَيْلَانَ
পৃষ্ঠা:৯৭
فَإِنَّهَا تُقْبِلُ بِأَرْبَعٍ وَتُدْبِرُ بِثَمَانٍ، قَالَ فَسَمِعَهُ رَسُوْلُ اللَّهِ ﷺ فَقَالَ لايَدْخُلُ هَؤُلَاءِ عَلَيْكُمْ.অর্থ: রাসূলুল্লাহর বাড়িতে থাকা অবস্থায় একদিন এক নুপংসুক (হিজড়া) বাড়িতে এসেছিল (নপুংসক বিধায় সে অন্দর মহলেও প্রবেশ করতো)। সে উম্মু সালামা -এর ভাই আব্দুল্লাহকে বললো, আগামীকাল যদি তায়েফ বিজয় হয় তাহলে তুমি গায়লানের কন্যাকে আয়ত্তে নেবে। তার এমন অবস্থা যে পেটে চারটি ভাঁজ পড়ে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ পরিবারকে বলে দিলেন, তোমরা আর কখনও তাকে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে দেবে না। (সহীহ আল বুখারী; সহীহ মুসলিম-৫৮১৯) আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেছেন- الْخِيرَةُ مِنَ الْإِيْمَانِ وَإِنَّ الْمِذَاءَ مِنَ النِّفَاقِ অর্থ: আত্মসম্মানবোধ সৃষ্টি হয় ঈমান থেকে আর লৌকিকতা সৃষ্টি হয় মুনাফিকী থেকে। (বায়হাকী)
পৃষ্ঠা:৯৮
ঈমানের শাখা-৭৩. অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করা
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَشِعُوْنَ وَالَّذِينَ هُمْ عَنِاللَّغْوِ مُعْرِضُونَ .অর্থ: মু’মিনরা তো সফল হয়ে গেছে। তারা নামাযে বিনয়ী এবং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করে চলে। (সূরা আল মু’মিনুন-আয়াত: ১,২,৩) অন্যত্র বলা হয়েছে-وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا. অর্থ: আর তারা মিথ্যার সাক্ষী হয় না। কোনো অর্থহীন বিষয়ের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলে ভদ্র মানুষের মতোই অতিক্রম করে।(সূরা আল ফুরকান-আয়াত: ৭২) وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ. অর্থ: তারা যদি অর্থহীন কিছু শুনতে পায়, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আল কাসাস-আয়াত: ৫৫) আলী প্রশ্ন থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ হয় বলেছেন- مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَالَا يَعْنِيْهِ.অর্থ: ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে একজন মু’মিন অপ্রয়োজনীয় বিষয় পরিত্যাগ করবে।
পৃষ্ঠা:৯৯
ঈমানের শাখা-৭৪, বদান্যতা ও দানশীলতা
আল্লাহ তাআলা বলেছেন- وَ سَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ অর্থ: তোমরা আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুতগতিতে চল, যার বিস্তৃতি আসমান জমিনের সমান। যা মূলত মুত্তাকীদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। যারা সচ্ছল বা অসচ্ছল উভয় অবস্থাতেই নিজেদের সম্পদ খরচ করে। (সূরা আলে ইমরান-আয়াত। ১৩৩, ১৩৪) অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- الَّذِيْنَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَ يَكْتُمُونَ مَا أَتَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاعْتَدْنَا لِلْكَفِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا. অর্থ: তাদেরকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং অন্যদেরও কার্পণ্য করতে নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ নিজ দয়ায় যা দান করেছেন তা লুকিয়ে রাখে। এরূপ অকৃতজ্ঞ লোকদের জন্য আমি অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি। (সূরা আন নিসা-আয়াত: ৩৭) وَمَنْ يَبْخَلُ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَفْسِهِ অর্থ: যে কৃপণতা করে সে প্রকৃতপক্ষে নিজের সাথেই কৃপণতা করে। সূরা আল হাশর-এ বলা হয়েছে- (সূরা মুহাম্মদ-আয়াত ৩৮) وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.
পৃষ্ঠা:১০০
অর্থ: যাদের অন্তর সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই প্রকৃতপক্ষে সফল। (সূরা হাশর-আয়াত। ৯. সূরা আত তাগাবুন-আয়াত। ১৬) আবু হুরায়রা বলেছেন- কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلَانِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُولُ الْآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا. অর্থ: প্রতিদিন দু’জন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলতে থাকেন-‘হে আল্লাহ যিনি অন্যকে দান করেন আপনিও তাকে দান করুন। আর যে কৃপণতা করে আপনি তাকে দান করা থেকে বিরত থাকুন’।(সহীহ বুখারী হাদীস-১৪৪২)
পৃষ্ঠা:১০১
ঈমানের শাখা-৭৫. ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করা
জারির ইবনে আব্দুল্লাহ প্লেটু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-مَنْ لَا يَرْحَمُ النَّاسَ لَا يَرْحَمُهُ اللهُ تَعَالَى অর্থ: যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র নয় আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।(সহীহ বুখারী। সহীহ মুসলিম) আবু হুরায়রা প্রশ্নঃ থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম বলেছেন-جَعَلَ اللهُ الرَّحْمَةَ مِائَةَ جُزءٍ فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ جُزْءًا وَأَنْزَلَ في الْأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا فَمِنْ ذَلِكَ الْجُزْءِ يَتَرَاحَمُ الْخَلْقُ حَتَّى تَرْفَعَالْفَرَسُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أَنْ تُصِيبَهُ. অর্থ: ‘আল্লাহ তা’আলা দয়াকে একশ ভাগে ভাগ করে নিরানব্বই ভাগ নিজের জন্য রেখে এক ভাগ গোটা সৃষ্টি জগতের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। সেটুকু দয়ার কারণে সৃষ্টি জগত একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে এমনকি ঘোড়া সতর্কতার সাথে তার পা রাখে যেন নবজাতক বাচ্চার উপরে গিয়ে তা না পড়ে। (সহীহ বুখারী হাদীস-৬০০০: সহীহ মুসলিম আব্দুল্লাহ ইবনে আমর প্রশ্নহ থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম বলেছেন- مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَلَمْ يَعْرِفْ حَقَّ كَبِيْرِنَا فَلَيْسَ مِنَّ .অর্থ: আমাদের মধ্যে যারা ছোট তাদের প্রতি যে দয়া করে না এবং আমাদের মধ্যে যারা বড় তাদেরকে যথাযথ সম্মান করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম: সুনানে আবু দাউদ)অন্য হাদীসে ইমামত সম্পর্কে বলা হয়েছে-‘তোমাদের মধ্যে যে বেশি বয়স্ক সেই ইমাম হবে।’
পৃষ্ঠা:১০২
ঈমানের শাখা-৭৬. নিজের যা পছন্দ অপরের জন্য তাই পছন্দ করা
নিজের জন্য যা পছন্দ অপরের জন্য তাই পছন্দ করা এবং যে জিনিস নিজের অপছন্দ অপরের জন্যও তা অপছন্দ করা, এমনকি কারও যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য কষ্টদায়ক কোনো বস্তু রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়াও ঈমানের অন্যতম অংশ।আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ বলেছেন-الْإِيْمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاعَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةً مِنَ الْإِيْمَانِ অর্থ: ঈমানের ষাটটি কিংবা সত্তরটি শাখা রয়েছে, তার মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হচ্ছে ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই’- এ কথার স্বীকৃতি দেয়া আর সর্বনিম্ন স্তরের শাখা হচ্ছে-রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। লজ্জাও ঈমানের অংশ। (সহীহ বুখারী: সহীহ মুসলিম, হাদীস-১৬২) আনাস বলেছেন- থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাসূল لَا يُؤْمِنْ أَحَدَكُمْ حَتَّى يُحِبُّ لَا خِيْهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ অর্থ: তোমরা ততক্ষণ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ তোমার জন্য যা পছন্দ করো তোমার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ না করবে। (সহীহ বুখারী)
পৃষ্ঠা:১০৩
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল্লা বলেছেন-بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُنِمسلم অর্থ: আমরা নামায প্রতিষ্ঠা করবো, যাকাত আদায় করবো এবং প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনা করবো এই শর্তে রাসূলুল্লাহ-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। (সহীহ বুখারী হাদীস-২৭১৫। সহীহ মুসলিম) ভালোবাসো যাহা তোমার জন্য তাহা অপরের জন্য মন্দ যাহা তোমার নিকটে তাহা অপরের জন্য।
পৃষ্ঠা:১০৪
ঈমানের শাখা-৭৭. পরস্পর সংশোধন
আল্লাহ তাআলা বলেন-لَا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّنْ نَّجُونَهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحَ بَيْنَ النَّاسِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ أَجْرًا عَظِيمًا.অর্থ: লোকদের গোপন শলাপরামর্শে কোনো কল্যাণ থাকে না, তবে কেউ যদি কাউকে দান খয়রাতের উপদেশ দেয় কিংবা কোনো ভালো কাজের জন্য অথবা লোকদের পরস্পরের কাজকর্ম সংশোধনের নিমিত্তে কাউকে কিছু বলা হয় তা অবশ্যই ভালো কথা। আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য যে এরূপ করবে আমরা তাকে খুব বড় প্রতিফল দেবো। (আন নিসা-আ: ১১৪) আরেক জায়গায় বলা হয়েছে-إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ.অর্থ: মুমিনগণ তো পরস্পরের ভাই। অতএব তোমার ভাইদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথাযথভাবে পূর্ণগঠিত করে দাও (হুজুরাত-আ: ১০) উম্মু কুলসুম বিনতে উকবা বলতে শুনেছি- বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ-কেلَيْسَ الْكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ فَيَنْمِي خَيْرًا أَوْ يَقُولُ خَيْرًا.অর্থ: ‘পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কেউ যদি অসত্য কথাও (সহীহ বুখারী হাদীস-২৬৯২। সহীহ মুসলিম) বলে তবে সে মিথ্যাবাদী নয়। তিনি আরও বলেন, আমি কোনো বিষয়ে তাকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনিনি শুধু তিনটি ক্ষেত্রে ছাড়া-
১. যুদ্ধের সময়,
২. পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এবং
৩. স্ত্রীর মনোরঞ্জনের (কিংবা অভিমান ভাঙার) জন্য। (বুখারী; সহীহ মুসলিম)