অযুর দোয়া ও নিয়ত | ওযুর ফরয | ওযুর সুন্নাত | অযু কি?
পাক-পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো অজু। প্রায় সব ধরণের ইবাদতের জন্য অজু করা ফরজ। আর সবসময় অজু অবস্থায় থাকা আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর সুন্নাতও বটে। হাদিসের মতে অজুর শুরু ও শেষে ফজিলতপূর্ণ একাধিক দোয়া রয়েছে। অযুর দোয়া সম্পর্কে জানার আগে চলুন ওযু কি? সে সম্পর্কে জেনে নেই।
অযু কি?
ওযু হলো আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট চারটি অঙ্গ পানি দিয়ে ধৌত করা। ওযু সঠিক না হলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। তাই সঠিক নিয়মে ওযু করতে হবে।
তাছাড়া বলা যায়, ওযু হলো নামাজের আগে অথবা কোন পবিত্র কাজের আগে শরীর ও মনের পরিশুদ্ধতা গ্রহণ করা। ওযুর ফরজ ৪ টি। আপনি যদি এ চারটি ফরজ মেনে ওযু করতে পারেন তাহলে আপনার সব ধরনের কাজে বরকত আসবে। এর মাধ্যমে শরীর ও মনের পবিত্রতা অর্জন করা যায়।
এতে মন ফুরফুরে থাকে। প্রশান্তি আসে। সকল কাজে মন বসে, সফলতা লাভ করা যায়। তাই কোন পবিত্র কাজ করার আগে ওযু করুন।
চলুন তাহলে ওযু / অজুর দোয়া, নিয়ত ও ওযু করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই।
ওযুর নিয়ত
ওযুর নিয়ত: উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তা’য়ালা।
অর্থ: আমি ওযুর নিয়ত করছি যে নাপাকি দূর করার জন্য বিশুদ্ধরূপে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্য এবং আল্লাহ তা’য়ালা।
অযুর দোয়া
বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম। ওয়াল হামদুলিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলাম। আল ইসলামু হাক্কুন। ওয়াল কুফরু বাতিলুন। ওয়াল ইসলামু নুরুন। ওয়াল কুফরু জুলমাত।
অর্থ: মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ তায়ালার নামে আরম্ভ করছি। আমি দ্বীন ইসলামের উপর আছি। তাই আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা।নিশ্চই ইসলাম সত্য ও কুফুর বাতিল এবং ইসলাম আলো ও কুফুর অন্ধকার।
অজুর শেষের দোয়া
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
বাংলা উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল।’ (মুসলিম, মিশকাত)
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
,مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ : أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ، إِلا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
অর্থ: তোমাদের যে ব্যাক্তি কামিল বা পূর্ণরূপে উযূ করে এই দোয়া পাঠ করবে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর গোলাম ও রাসুল।’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম ২৩৪)
ওযুর ফরয
ওযুর ফরজ ৪ টি। এগুলোর কোনটি বাদ পড়লে অযু হয় না। তাই এগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে। এগুলো হলো –
- সমস্ত মুখমন্ডল কপালের উপরিভাগের চুলের গোড়া হইতে থুতনী পর্যন্ত, এক কর্নের লতি থেকে অন্য কর্নের লতি পর্যন্ত ধৌত করা।
- দুন হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
- মাথার চারভাগের একভাগ মাসেহ করা ( ঘন দাঁড়ি থাকিলে আঙ্গুলী দ্বারা খেলাল করা ফরয )।
- উভয় পা টাখনু গিরা সহ ধৌত করা।
ওযুর সুন্নাত
ওযুর সুন্নাত ১৪ টি। এগুলো হলো –
- নিয়ত করা।
- বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা।
- হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
- উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
- মিসওয়াক করা।
- ৩ বার কুলি করা।
- নাকে পানি দেওয়া তিনবার।
- পুরো মুখমন্ডল তিনবার ধৌত করা।
- দু হাত কনুই সহ তিনবার ধোওয়া।
- সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
- উভয় পা টাখনু সহ তিনবার ধৌত করা।
- পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
- এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
- ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওযুর কাজ গুলো সম্পূর্ন করা।
তাই সকল মুমিন মুসলমানদের উচিত, মনোযোগ সহকারে সুন্নাত অনুসরণ করে সবসময় অজু অবস্থায় থাকা। আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে সবসময় ওযু অবস্থায় থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।